ভয়ানক ভৌতিক গল্প ৪

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৪

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৪: হুজুরের কাছ থেকে এতটুকু জেনেছি যে সেটা কোন অশুভ আত্মা এবং তার থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কিন্তু এখনো আমি জানি না কেন এটি আমার পিছু নিয়েছে? কি বলতে চায় সে আমাকে?

বেঁচে থাকার পরীক্ষা

সারাদিন আমার টেনশনে কেটে গেছে। এখন রাত বারোটা।

আর মাত্র ১ ঘন্টা পর আমি কবরস্থানে যাব। আল্লাহ তুমি আমাকে রক্ষা করো।

টং টং টং…..

দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১টা বেজে গেছে।

মনে মনে ভাবছি, এখন শুধু আমার ১৪ টা বাজার বাকি।

আল্লাহ জানে, আজকে কপালে কি আছে।

আমি তাবিজটা হাতে নিয়ে এবং ফল কাটার একটা ছুরি নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম।

দরজা খুলতেই,

ওমাগো….! এটা কি? এত অন্ধকার কেন বাহিরে? আমার তো এখনি রুহ বাহির হয়ে যাচ্ছে।

যাইহোক, পরে মোবাইলটা বের করে ফ্লাশ লাইট অন করলাম।

ফ্লাশ লাইটের আলো দিয়ে মসজিদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। মসজিদের পাশে যেতেই শরীরটা কেমন যেন শিরশির করে উঠলো। আমার হাঁটু বিজলি স্পিডে কাঁপতেছে।

এত রাতে এখানে আমার আসা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু এমন কিছু ঘটনা ঘটার পরে এই জায়গায় এত রাতে আমার উপস্থিতি আমার কাছে অনেক ভয়াবহ।

কিন্তু নিজেকে সুরক্ষা করতে আমাকে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আস্তে আস্তে গুটি গুটি পায়ে আমি কবরস্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যতই আমি কবরস্থানের দিকে যাচ্ছি, ততই শরীর কেমন যেন ভার হতে লাগলো। নিজের ওজনটা নিজের কাছে একটু বেশি মনে হতে লাগল। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতেছি ধীরে ধীরে। কিন্তু ভিতরে ভয় রাখলে চলবে না, হুজুর বলেছিল ভয় পাওয়া যাবে না।

মোটেও আমি ভয় পাব না, যতই যা কিছু হয়ে যাক।

কবর স্থানের ভুত

কবরস্থানের সামনে যেতেই দেখতে পেলাম সেই নতুন কবরটি।

কিছুদিন আগে আমাদের এলাকায় একজন মুরুব্বি মারা গিয়েছিল।

উনি একটু অস্বাভাবিক ভাবে মরেছিল।

পুকুরে গোসল করতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায় এবং দম আটকে পানির নিছেই মারা যায়।

পরের দিন সকালে পানি থেকে ভাসমান হয় সেই মানুষ।
মুখ ফোলা, পুরো দেহ পচে গিয়েছিল।

আমি দেখতে গেছিলাম, কিন্তু এত ভয়ঙ্কর ছিল যে তখনই আমার নাড়িভুঁড়ি এক হয়ে গিয়েছিল।

এখন আমি সেই মানুষটির কবরে এই তাবিজটি পুঁতে রেখে আসতে হবে। নতুন কবর একমাত্র এইটাই।

আস্তে করে কবরস্থানের গেটের দরজা ধাক্কা দিলাম।
দরজা খোলার সাথে সাথে একটা অদ্ভুত আওয়াজ করে উঠল।

অনেক সময় টিভির মধ্যে ভুতের মুভি দেখি, সেখানে দরজা খোলার সময় যে রকম একটা ভয়ঙ্কর আওয়াজ হয়ে থাকে, ঠিক সেই একই রকম আওয়াজ কবরস্থানের দরজা খোলার সাথে সাথে হয়েছে।

সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। মনের মধ্যে সাহস নিয়ে যেই আমি কবরস্থানে পা রাখলাম, তখনই মনে হতে লাগল আমার পিছন থেকে কেউ একজন দৌড়ে এসে এই আমাকে জড়িয়ে ধরবে।

কিন্তু পিছনে তো আমি তাকাচ্ছি না। একটু গোমড়া হয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছি। ভাবলাম, ধীরে ধীরে করলে হবে না।

রাত ৩ টা বাজার আগে করতে হবে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১ টা পঁয়তাল্লিশ বাজে।

২ টা বাঁজতে বেশিক্ষণ সময় নেই।

তারপরে আরো একঘন্টা। এই কিছুক্ষণের মধ্যেই কবরের মধ্যে তাবিজ পুতে তারপর মাটি সংগ্রহ করে আমাকে যেতে হবে।

আমি সে কবরস্থানের পাশে গিয়ে যখনি কবরের মাটিতে হাত দিলাম,

তখনি কবরের ভিতর থেকে একটা পঁচাগলা হাত মাটি ফেটে উঠে আসলো।

আমি হাতটা দেখে এক লাফে পিছনে দুই তিন হাত চলে গেছি, মাটির মধ্যে এখনো বসে রয়েছি আমি। হাত কবর থেকে উপরে উঠে আবার নিচে নেমে গেল।

ভূতুড়ে পরিবেশ এবং সাহস

আমার কলিজা শুকিয়ে যেন কাট হয়ে গেছে।

কিন্তু আমাকে ভয় পেলে চলবে না। হুজুর বলেছে আমাকে ভয় দেখাবে শুধু, অন্য কিছু করতে পারবো না।

আমি আবার উঠে কবর স্থানের মধ্যে হাত দিলাম, তখনি অদ্ভুতভাবে এমন জোরে বাতাস বইতে লাগলো যেন আমাকে সহ উড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে।

বাতাসের আওয়াজ আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল। গাছের ডালপালাগুলো এমনভাবে পিটাপিটি করছে যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

বাতাসে আমার চোখ মুখে বালি ভরে গেছে।

চোখের মধ্যে ময়লা ঢুকার কারণে চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না।

তারপরেও আন্দাজ করে কবরটা অনেকটুকু গর্ত করলাম চুরি দিয়ে। তাবিজটা ভিতর রেখে উপরে মাটি দিয়ে দিলাম। এখনো বাতাসটা অনেক জোরে বাইছে।

আমি যতই আমার কাজ শেষ করতে চাই, ততই বাতাসের গতি যেন বেড়েই যাচ্ছে।

তাবিজটি ভিতর রেখে উপরে মাটি দিয়ে ঢেকে দিচ্ছি।

তখন যেটা ঘটল সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

কবরস্থানের ভিতর থেকে আবারো আর একটা পচা গলা হাত বাহির হয়ে আমার হাত চেপে ধরলো।

এত জোরে ধরেছে যে আমি নড়াচড়া করার শক্তি পাচ্ছি না।

হালকা একটু দাড়িয়ে কোনরকম সেই পচা হাতে এমন জোরে লাথি মারলাম, হাতটা কবরস্থানের ভিতর থেকে ছিড়ে উঠে আসছে।

এখনো আমার হাতটা ধরে আছে। আমি ভিতরে ভিতরে ভয়ে প্রায় মরার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছি।
তবুও শেষ সময়টুকুতেও লড়াই করে বাঁচবো বলে হার মানলাম না।

আমি আমার হাতসহ নিয়ে একটা দেওয়ালের কবরস্থানের পাশে গিয়ে অনেক জোরে আঘাত করলাম।

সাথে সাথে হাতটি আমার হাতটা ছেড়ে নিচে পড়ে গেল।

আমি আবার সে কবরস্থানের সামনে গিয়ে দুই মুঠো মাটি হাতে নিয়ে কবরস্থান এর দরজা বরাবর দৌড় দিলাম।

এমন সময় কবরস্থান থেকে আরেকটা পচা গোলা হাত আমার পা চেপে ধরলো।

আমি সাথে সাথে দুই পল্টি খেয়ে পড়ে গেলাম।

পিছনে না তাকিয়ে আবার এক লাফে উঠে কবরস্থান থেকে বাহির হয়ে গেলাম।

কি অবাক ব্যাপার, আমি কবরস্থান থেকে বাহির হওয়ার সাথে সাথে আবার পরিবেশ নিস্তেজ হয়ে গেছে।

কদম গাছে হাড়ি বাঁধা

চারদিকে এমন ঠান্ডা পরিবেশে হয়ে গেছে যেন একটু আগে কোন কিছুই হয়নি।

কিন্তু আমি ভিতর থেকে যেন বৈশাখী ঝর অনুভব করেছিলাম।

এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হবে না ভেবে আবার বাসার দিকে আসতে লাগলাম।

পকেট থেকে মোবাইলটা বাহির করে দেখে অবাক হয়ে গেলাম।

এমা…!

০২:৪২ বাজে? এতটা সময় কিভাবে হয়ে গেল? আমার মোবাইল কি আমার আগেই দৌড়ে নাকি।

যাই হোক, রাত ৩ টা বাজার আগে আমাকে বাসায় গিয়ে হাড়ির মধ্যে মাটিগুলো রাখতে হবে।

তাই আমি আরো দ্রুতগতিতে বাসার দিকে এগোতে লাগলাম।

বাসায় গিয়ে একটি হাঁড়ি নিয়ে তার ভিতরে মাটি গুলো রেখে দিলাম।

হাড়ির উপরে একটা পলিথিন দিয়ে দড়ি নিয়ে ভালোভাবে বেঁধে দিলাম।

এরপর হাঁড়িটা হাতে নিয়ে আমাদের বাগানে চলে গেলাম।

অন্য দিন আব্বুর চোখে আড়াল করার জন্য এই বাগানে আমি সিগারেট খাই।

কিন্তু আজকে আমি এই বাগানে আসার সাথে সাথে আমার মনে হতে লাগল আমার বাগানটা আমার শত্রু।

যেন বাগানটা ইতিমধ্যেই আমাকে খেয়ে ফেলবো। আমি কিছু না ভেবে চারপাশে দেখছি।

এমতবস্তায় বাগানের উত্তর পাশে একটা কদম গাছ দেখলাম। সেখানে একটা ডালে হাড়িটা দড়ি দিয়ে বেঁধে দিলাম।

তারপর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলাম,

যাক ভালই ভালই কাজটা শেষ করে ফেলেছি। এখন শুধু সকালে এসে হাঁড়িটা ভেঙ্গে ফেলবো।

তারপর আমি পিছনে তাকাতেই শরীরের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে গেছে। মাথার চুল গুলো খাড়া হয়ে গেছে। আমার হাত পা সবই কাপতেছে। চিৎকার ও দিতে পারছিনা।
কথা বলার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছি।

কারণ আমি এখন আমার সামনে সেই অশুভ আত্মাকে আবিষ্কার করলাম।

অশুভ আত্মা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। উনার এতই ভয়ঙ্কর চেহারা..সেই চেহারা দেখলে যে কেউ হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে।
আমি মনে মনে ভাবছি এই বুঝি আমিও হার্ট অ্যাটাক করে ফেললাম।

তখনই অশুভ আত্মাটা আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে অনেক ভয়ঙ্কর গর্জন করে বলে উঠলো। চলবে…

পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৫

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *