নিঝুম বিকেল (শেষ খণ্ড) – ভয়ের ভৌতিক গল্প

নিঝুম বিকেল – ভয়ের ভৌতিক গল্প: ঈশিকা অবাক হয়ে শুভ্রের দিকে তাকালো, অদ্ভুত মায়াবী চোখ, এ চোখের ভাষা বুঝা বড্ড কঠিন, নাকের ডগায় রাগ যেনো সর্বক্ষণ লেগেই আছে। এ মূহুর্তে উনার ভয়ার্ত চেহারা দেখে বড্ড হাসি পাচ্ছে ঈশিকার।


পর্ব ১৩

~ শুভ্রের কথা শুনে, ভয় লাগছে, এতো এতো ভয় একদম কলিজা শুকানোর ভয়। ভয় পেয়ে একদম জমে যাচ্ছে ঈশিকা।
ঈশিকা মনে মনে ভাবছে,”সত্যিই কি উনি এমন কিছু করতে চলেছেন যার কারনে নিজেকে আজ বলিদান করতে হবে একজন পুরুষের কাছে।”

“রাতের আকাশে কী আর তাঁরা দেখা হবে না, জীবন খানা কী অন্ধকারে ছেয়ে যাবে ঈশিকার।
ঈশিকা ভাবছে আর ঘামছে।

~”না, এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না”ঈশিকা মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো।

দরকার পড়লে এই শুভ্রকে খুন করে দেবো তবুও নিজেকে লাঞ্চিত হতে দেবোনা।”

~ হঠাৎ ঈশিকার সামনে তুড়ি বেজে উঠে, ঈশিকা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে

শুভ্র। সত্যি সত্যি গায়ের সমস্ত কাপড় খুলে দাঁড়িয়ে আছে শুধু প্যান্ট আছে। জানালা দিয়ে দমকা বাতাসে শুভ্রের চুল গুলো লাগামহীন ভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে।

অদ্ভুত সৌন্দর্যে ঈশিকার বুকের ভেতর যেনো মোহ এসে দানা বাঁধছে। বুকের ভেতর যেনো জলতরঙ্গ খেলা করছে। এ~ তো এ~ তো সৌন্দর্যে যে কোনো মেয়ে ভুল করে হলেও নিজের সর্বনাশ করে বসবে।

সাত সাগরের ঢেউয়ে হৃদয় যেনো উতালপাতাল শুরু করছে ঈশিকার। ঈশিকার গাঁয়ের সমস্ত লোমশ দাঁড়িয়ে গেলো, আজ কী তাহলে সত্যি নিজেকে উৎসর্গ করে দেবে এই সুদর্শন যুবকের বুকে।”
~ ঈশিকার মনে যদিও মোহ কাজ করছে বিবেক বলে কিছু একটা মস্তিষ্কে বারবার জানান দিচ্ছে।

ঈশিকা এবার ভরকে গেল। ঈশিকা তো পারছেনা জোরে চিৎকার দিতে। তাঁর কারণ হলো ঈশিকা মনে মনে যতই নিজেকে শক্তিশালী মনে করুক না কেনও দিনশেষে প্রতিটি মেয়েই পুরুষ শক্তির কাছে অবলা।”

“ঈশিকা শুভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখলো,”বিধাতা প্রচন্ড মনযোগ দিয়ে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ গড়েছেন শুভ্রের।

তুষারের ন্যায় শুভ্রতার ছোঁয়া লেগে আছে, যেমন তাঁর সুদর্শন চেহারা, তেমনি তাঁর দেহের গঠন, এ যেনো এক অদ্ভুত নীলা দর্শন। সে যা~ ই হোক বিয়ের আগে যে কোনো পুরুষ মানুষকে দেখা হারাম, ঈশিকা সেটা মনে মনে করেই নিজের চোখ কে সংযত রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, স্যার একি করছেন?
আপনি এভাবে কেন?

আমার ভীষণ রকম অস্বস্তি লাগছে।”
~ শুভ্র চরম অস্থিরতা নিয়েও ঈশিকার দিকে তাকিয়ে বললো,”কেন?”
আমার মতো সুদর্শন ছেলে যে প্রতিটি মেয়েরই কাম্য, আমি যে প্রতিটি মেয়ের কামনা বাসনার চাঁদ।”

এতো অস্বস্তি লাগার কী আছে আমি আর তুমিই তো তা~ ও এই বদ্ধ রুমে।
কেউ আসবে না জানবে না, আমাদের এই লীলাখেলা।
তোমার জন্য এক পায়ে খাড়া, তোমায় ছাড়া কাটে না মোর বেলা।”

ষ্টুপিড গার্ল, ভেবেছ কী, তোমাকে নিয়ে প্রেম লীলায় মাতিয়ে থাকবার জন্য এই বদ্ধ রুমে আবদ্ধ রয়েছি।
আমার একটা কাজ করে দিতে হবে তোমায়?
~ ঈশিকা অজান্তেই আবারো চোখ বুলিয়ে শুভ্র কে দেখতে লাগলো।

ঈশিকা এবার বুঝতে পারলো শুভ্র শুধু সুন্দর ‘ই’ এই সুন্দরের মাঝেও আছে চরম রকম অসভ্যতা।
যেনো উনার ভেতেরে হাজারো রকম সুপ্ত অসভ্যতা বাসা বেঁধে আছে।

ঈশিকা বুঝতে পারছে না, শুভ্র কেন’ই’ বা ঈশিকা কে ডেকেছে, তাও এই অবস্থায়।”

~”শুভ্র ঈশিকা কে বলতে শুরু করলো,
“আমার উপর এভাবে তাকিয়ে গরুর রচনা পড়া শেষ হলে তোমাকে কী কাজ দিয়েছি সেটা তারাতাড়ি শেষ করো।”
~ ঈশিকা না চাইতেও লজ্জা পেলো।

এতো এতো লজ্জা ঈশিকার তো ইচ্ছে করছে সাত সাগরের নিচে তলিয়ে যেতে, আকাশের হলুদ পাখি হয়ে লুকিয়ে যেতে।
ঈশিকা দৃষ্টি সংযত রেখে বললো,”সরি স্যার আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি তা তো আমার জানা নেই।”

~ “তোমার জানা না থাকলেও আমার জানা আছে।”শুভ্র ঈশিকার হাতে কিছু একটা দিয়ে বললো,”এই নাও এটা আমার পুরো শরীরে মেখে দাও, সাবধান নিচে যেনো না পড়ে।”

~ ঈশিকা, শুভ্রের হাত থেকে শিশি টা নিজের হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো।

ঈশিকা কালো শিশি টা কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেও কিছুই বুঝতে পারলোনা।”

~ শুভ্র, ঈশিকার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বললো,”এটা বিষের শিশি না যে তোমাকে খাইয়ে আমি মেরে ফেলবো।”
“পুরো শরীরে ভালো করে লাগিয়ে দাও, দেখো আবার আমার শরীরের উপর নজর দিও না। পরে নয়তো পুরো শরীরে ফোসকা পড়ে যাবে।”

~ ঈশিকা ভয়ে ভয়ে শিশির ঢাকনা খুলে তরল জাতীয় তেল নিজের হাতে নিলো। কিন্তু এখন হলো আরেক বিপর্যয়।

শুভ্রের খালি শরীরে টাচ করতে বিবেকে ভীষণ বাধছে। টাচ করবে কী করবে না এ নিয়ে ভীষণ ভাবনায় ডুব দিলো ঈশিকা।”

“শুভ্র এবার সত্যি সত্যি রেগে গেলো,”হোয়াট হ্যাপেন্ড, আমাকে টাচ করলে কী তোমার নরম হাত গরম হয়ে যাবে?

তোমাকে আর দিতে হবে না আমি নিজেই করে নিতে পারবো।”
~ ঈশিকা ভীষণ রকম ভয় পেয়ে গেলো।

মনে মনে ভাবলো, জান বাঁচান ফরজ কাজ। তাই ঈশিকা সাতপাঁচ না ভেবে
শুভ্রের পিঠে তেল মালিশ করতে লাগলো।
তেলটা কিসের, ঈশিকা ভেবেও কিছুই বুঝতে পারেনি কিন্তু তেলটা থেকে ভীষণ রকম সুগন্ধি আসছে, একদম মনমাতানো সৌরভ ঈশিকা কখনো পায়নি।

ঈশিকার চোখ বার~ বার শুভ্রের উদোম পিঠে গিয়ে ঠেকছে।
যেখানে প্রচুর নিষেধাজ্ঞা থাকে ঐ জিনিস টার প্রতিই মানুষের চরম আগ্রহ কাজ করে।
ঈশিকার বেলাও তাই হয়েছে।

শুভ্রের নরম পিঠে গরম হাত দিয়ে মালিশ করে যাচ্ছে ঈশিকা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হারিয়ে যাচ্ছে ঈশিকার মন।
~ ছয়, সাত মিনিট মালিশ করার পর, শুভ্র ঈশিকা কে থামিয়ে দিলো। থামিয়ে শুভ্র অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
ওকে, নাউ ইউ ক্যান গো।”

~”ঈশিকা কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় শুভ্র চরম বিরক্তি নিয়ে ঈশিকা কে থামিয়ে বললো,”প্লিজ আমি এখন কিছুই শুনতে চাই না, তুমি যেতে পারো।”

“আর শুনো তুমি এতোক্ষণ ধরে আমার কী সেবা করেছো, বুক ফুলিয়ে বাহিরের কাউকে বলতে যেওনা।”

এমনকি তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ড কেও না। শুভ্র তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে ঈশিকা কে আবারো বলতে লাগলো,
বুঝতো সবি, এমন এমন ভাব করে বসে থাকো যেনো তুমি কবি।”
বাহিরের লোকের কাছে এই ঘটনাটা বললেও তোমার যে খুব একটা সুনাম হবে না সেটা বেশ বুঝতেই পারছো।”
“মাইন্ড ইট।”

“ঈশিকা শুভ্রের কথাগুলো কান দিয়ে শুনছে, আর গরম বাতাস বের করছে। কিন্তু চোখের পলক ফেলছেই না।

ঘন পাপড়িতে ভরা মায়াবী চোখ বিশিষ্ট লোকটা কিভাবে এতো টা হীনমন্যতা নিয়ে কথাগুলো বলতে পারলো, ব্যাপারটা ঈশিকা কে বেশ ভাবাচ্ছে।”

~”এই মায়াবী ভরা ব্যাক্তির দুচোখে তাকালেই যেনো দুনিয়ার সব ভুলে একাকার হয়ে যেতে ইচ্ছে করে ঈশিকার। কিন্তু লোকটার কথাগুলো অন্তরকে বেশ জ্বালায় ঈশিকার।

, এ~ তো এ~ তো জ্বালা করে যেনো দুনিয়ার বিষাক্ত সাপের ছোবল থেকেও বিষাদময়। ঈশিকার মন বেশ ভাবাচ্ছে কেমন অদ্ভুত লোক, কাজ করিয়েও সামান্যতম ধন্যবাদ দিতেও উনি কুন্ঠিত বোধ করেন কিপ্টে কোথাকার।”

~ ঈশিকা নিজেকে বহুকষ্টে সংযত রেখে বললো,”স্যার আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন,
এই বদ্ধ রুমে কী হয়েছে, না হয়েছে, আমি ঢাকঢোল পিটিয়ে কাউকে বলতে যাবো না।”

এই ব’লে ঈশিকা শুভ্রের রুম প্রস্থান করলো।

ঈশিকা এমনিতেও কাউকেই বলতোই না। স্যারকে মালিশ করে দিয়েছে, ব্যাপারটা কেউ শুনলে যে অনেক জগন্য ভাববে ঈশিকা তা বেশ ভালোই বুঝে।মনে মনে নিজেকেই নিজে গালি দিলো।”
~”নিজের ক্যাবিনে গিয়ে দরজাটা আটকে বসে রইলো ঈশিকা।
মনটা বেশ ভার আজ।”

~”অণু হাতের কাজ শেষ করে ঈশিকার ক্যাবিনে এসে অনেকক্ষণ দরজা নক করে করলো।

কিন্তু না ঈশিকা কোনো সাড়া দেয়নি।
অণুও আর বিরক্ত না করে চলে গেলো।”

~”ঈশিকা বসে বসে ভাবছে স্যারের এমন কী হলো যে, স্যার শেষ পর্যন্ত আমাকে দিয়েই তেল মালিশ করালো।
স্যার কী আমাকে অপমান করবার জন্য প্লেনটা করেছেন?

আজ একটু না~ হয় লেট হয়েছে,
সেজন্য বুঝি এই জগন্যতম কাজটা করাতে পারলেন স্যার।”
~”ছিঃ”

“ব্যাপারটা ভাবলেই কেমন বিচ্ছিরি দেখায়।
আসলে সব পুরুষ ‘ই’ এক
শত~ শত বাহানা দিয়ে মেয়েদের দিয়ে শরীর ছোঁয়ানোর চেষ্টা মাত্র।
কিছুকিছু শিক্ষিত লোকের মধ্যেও যে নরপশু বিরাজমান তা স্যারকে দেখেই আজ বুঝা গেলো।

কথাগুলো ঈশিকা নিজে নিজে ভাবছে
আর অস্ফুটে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে।”
~”নিঝুম বিকেলে ক্লান্ত মনে
অবলীলায় পিপাসার্ত মন।

গোধূলিলগ্নে বার~ বার বুঝিয়ে দিলো,
কে আপন, কে পর।”

~”নারী পিপাশু পুরুষ সমাজে
নারীদেরকে আরো বেশি কঠোর হতে হবে।
তা না হলে, শত~ শত পুরুষ নারীদের কে নির্লিপ্ত ভাবে অসৎ কাজে লাগাবে।”

~ “ঈশিকা কিছু একটা ভেবে মুখে প্রশান্তির হাসি রেখা টানলো।”
~ “সকল কাজ শেষ করে বসে রইল। এদিকে বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। শুভ্রের অস্থিরতাটা আগের চেয়ে একটু কমেছে।
শুভ্র পোশাক পরিধান করে বের হয়েছে।”

“বাসায় তাড়া ছিলো, তাই অণু আজ একটু আগেই বের হয়েছে।”
“ঈশিকার কপাল আজ আসলেই খারাপ।

আসার সময়ও গাড়ি পায়নি, যার কারনে স্যারের কাছেও আজ লাঞ্চিত হতে হলো। এখন আবারো বাসায় ফিরবার সময় টেক্সি পাচ্ছে না। না জানি বাসায় গিয়েও কার না কার হাতে অপদস্ত হতে হয় ইশিকা কে?

ঈশিকা মনে মনে ভাবছে, আজ কোন অলক্ষির মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছি, আল্লাহ জানে।”

“২০~ ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে করতে ঈশিকার পা ব্যাথা হয়ে আসলো কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই পেলো না।”
~”দূর থেকে কেউ একজন ইশিকা কে অবলোকন করছে, আর বেশ মজা নিয়ে হাসছে।”

~ ইশিকার সামনে হঠাৎ গাড়ি এসে থামলো।”
“ঈশিকা তো বেশ ভয় পেয়ে গেলো।
ভয় পেয়ে একদম স্ট্রোক করবার মতো অবস্থা।ঈশিকার প্রাণ টা যেনো একটুর জন্য রক্ষা পেলো।”

~”গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে চোখের সানগ্লাস নামিয়ে, সুদর্শন হিরোর মতো ছেলেটা কে বললো,
“কাম অন ইন ম্যাম, যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে?”
~”ঈশিকাও বেশ অবাক হলো।

এমন সময় এমন কেউ আসবে, এমনটা কখনো আশা করে নি ঈশিকা।

ঈশিকাও আর কোন উপায় না পেয়ে সাতপাঁচ না ভেবেই গাড়িতে উঠে বসলো।”

“সুদর্শন ছেলে টা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঈশিকা কে নিয়ে চলে গেলো।”
~ আর এদিকে দূর থেকে অবলোকন করা ব্যাক্তি ফুলে একদম বেলুন।
আরেকটু হলেই বেলুন ফেটে যাবে। রাগে হাত দিয়ে নিজের চুল নিজে মুঠো করে ছিঁড়ছে।

শুধু পারছে না গাড়ি নিয়ে আসা ছেলেটা কে কাঁচা চিবিয়ে খেতে।
খেলেও যেনো কম হবে, আগুনে পুড়িয়ে কয়লা করে ফেললেই যেনো মনটা ক্ষান্ত হবে তখুনি।”

“দূর থেকে অবলোকন করা ব্যাক্তিটি কিছু একটা ভেবে নিজেকে শান্ত করে।

গাছের শেকড়ের সাথে পা দিয়ে জোরে একটা লাথি মারে।
ব্যাথা পেয়ে আহ্ করে উঠে।

~ কিন্তু
“এ ব্যাথা কঠিন ব্যাথা নয়, তোমার ছেয়ে
যে ব্যাথা বহিছে হৃদয়ে।

জ্বালিয়ে দেবো সবি, পুড়িয়ে দেবো সবি
তপস্যায় আছো শুধু তুমি”
“আজ আমি ব্যাথিত হৃদয় নিয়ে ফিরছি প্রিয়, ব্যাথিত হৃদয়ের দাগটা ভালবাসার ছোঁয়াতে তোমাকেই মুছে দিতে হবে ঈশিকা। তুমি আছো শুধু অন্তরে, ভালোবাসার গভীরে। ঘুরেফিরে আসতেই হবে এ বক্ষে।
তুমি আমার চাঁদের তারা, রঙধনুর সাত রং, তোমাকে নিয়ে পাড়ি দেবো অবলীলার বাসর।

জোনাকির আলোতে তোমাকে দেখে হাজারো বছরের তৃষ্ণা মেটাবো আমি।

আজ যে ব্যাথা দিয়েছো এই গহীন হৃদয়ে, এ ব্যাথার ভাগ তোমাকেও নিতে হবে মায়াবতী।

গহীন হৃদয় থেকে স্রষ্টার কাছে চ্যালেঞ্জ করলাম।”
“ভালো থেকো তুমি
আসবো আমি ফিরে
বার~ বার তোমায় ঘিরে।”

~ চারপাশ টা কেমন যেনো খাঁ খাঁ করছে।
মাথার ভিতরটা কেমন গিজগিজ করছে ঈশিকার।
কেমন যেনো অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে। এতো খারাপ কেন বোধ হচ্ছে ঈশিকার তা বোধগম্য নয়।

~ পাশে একজন সুদর্শন যুবক বসে আছে, তাতে ঈশিকার কোন রকম মাথা ব্যাথা নেই।

ঈশিকার বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। চোখের পলকের সাথে সাথে যেনো গাড়ি চলছে, তবুও এ পথের যেনো শেষ ই হচ্ছে না। ঈশিকা গাড়িতে মাথা গুঁজে বসে আছে, যেনো একটু হলেও স্বস্তি বোধ হয়।

~ গাড়ি চালানো ছেলেটি ঈশিকা কে বললো,”এই যে ম্যাম আপনার কী খুব খারাপ লাগছে, মনে হচ্ছে আপনি অনেক টায়ার্ড।”
আচ্ছা আপনি কী খুব অবাক হয়েছেন?
মনে মনে নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি আপনার পিছু নিয়েছি কি~ না?
~ হা হা হা
আসলে তা নয়,”ঐ দিকে একটু জরুরী কাজ ছিলো, আসার পথেই আপনার সাথে দেখা।”

“তাই ভাবলাম আপনি যদি আবারও লেট করেন, বাসায় গিয়ে হয়তো বকুনি খেতে হবে।”

ঈশিকা মনে মনে বললো,”শুধু বকুনি না,
“মাথায় হয়তো আজ কোনো চুল ই থাকবেনা, আম্মা সবকটা ছিঁড়ে ফেলবে।”

তখনতো জামাই বাড়ি গিয়ে টাকলু মাথার জন্য একের পর এক খোঁটা শুনতে হবে শাশুড়ি ননদীনির।”
ঈশিকা নিশ্চিন্ত মনে ফারহান কে জবাব দিলো, যেনো কিছুই ভাবছে না ঈশিকা।

ঈশিকা রিলাক্স মুডে জবাব দিলো”আসলে তা নয়, বাসায় হয়তো সবাই খুবি টেনশন করছে।”
ঈশিকা কথাগুলো এমন ভাব ধরে বললো,”যেনো বাসায় ফিরলেই ওকে ওর মা কোলে নিয়ে আদর দিয়ে ঘুম পারাবে।

ফারহান ঈশিকার কথা শুনে কিছু একটা ভেবে বললো, ওকে ম্যাম।
আপনি ঘড়ি টা একটু ভালোভাবে চেকিং করে নিন, আমি ঠিক আপনাকে ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি।

ঈশিকা ঠিক করে ঘড়িটা দেখে নিলো।
ফারহান ঈশিকা কে বললো,”ম্যাম আপনি দয়া করে চোখটা বন্ধ করুন।”

কেন?
~ ফারহান ঈশিকার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেঁসে জবাব দিলো,”আসলে কেউ চোখ খোলা রাখলে আমি দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করতে পারি না।”

এখন আপনি যদি তারাতাড়ি বাসায় যেতে চান, তাহলে চোখ বন্ধ করুন।”

“আর যদি না যেতে চান তাহলে খোলা রাখুন আপনার ইচ্ছা।
“ঈশিকা ভাবলেশহীন ভাবে ফারহানের দিকে তাকিয়ে ঠিক আছে বলে চোখ বন্ধ করলো। ঈশিকা ভয়ার্ত চোখে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বললো, শুনুন দ্রুত গতিতে পৌঁছাতে গিয়ে না জানি আবার পঙ্গু হসপিটালে পৌছিয়ে দেন।”

ফারহান অট্টহাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে প্রস্তুতি নিলো।
ওকে ম্যাম তা দেখা যাবে।
কিন্তু দশ মিনিট পর, এখন তো চোখ বন্ধ করুন।
“ঈশিকা চোখ বুঁজে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বসলো। মাথাটা আরাম করে রাখলো।”

গাড়ি কি চলছে, না~ কি হাওয়ায় ভাসছে
“কিছুই বুঝা যাচ্ছে না, কানে শুধু শোঁশোঁ বাতাসের ধ্বনি ভেসে আসছে ঈশিকার।”

“ঈশিকা চোখ দুটি খুলতেও পারছেনা।”
“তাঁর কারণ হলো, ফারহানের কাছে ওয়াদা বদ্ধ।”
ঈশিকা ফারহানের কাছে ওয়াদা করেছে যে, যা~ ই হয়ে যাক কিছুতেই ঈশিকা চোখ খুলবে না।”

“চোখ বুজা অবস্থায় ঈশিকার হঠাৎ অনূভুত হলো, কালো অন্ধকারে কালো হুডি পরিহিত বিশাল লম্বা কেউ একজন ঈশিকার সামনে দু~ হাত পেতে আছে।

ঈশিকা ভীষণ ঘামছে, ঘেমে একদম একাকার, হুডি পরিহিত লোকটা যখন ঈশিকার খুব কাছাকাছি চলে আসছে, ঈশিকা ভয় পেয়ে একপা দু’পা করে পিছাতে লাগলো, একসময় ঈশিকা থেমে গেল, হুডি পরিহিত লোকটা ঈশিকার হাত ধরতে যাবে যখুনি, ঠিক তখুনি”ঈশিকা চোখ খুলে অবাক!”
“তা~ ও ভীষণ রকম অবাক।”

“ফারহান গাড়ি থেকে বের হয়ে ঈশিকার দরজা খুলে বললো, প্লিজ কাম ম্যাম।

বাই দ্যা ওয়ে, প্লিজ ঘড়িটা চেকিং করে নিন, কতো মিনিটের মধ্যে পৌছালাম আমরা?”

“ঈশিকা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো দশ মিনিট পুরোপুরি পারও হয়নি।”
“তার আগেই বাসায় পৌঁছে গেলো।”
এটা কী সত্যি পসিবল!

ঈশিকার মাথার ভেতর থেকে কালো হুডি পরিহিত লোকটির ব্যাপারটা এখনো সরেনি, মাথা অলরেডি হ্যাং মেরে আছে, তা রিফ্রেশ করবে কিভাবে সেটাই জানা নেই ঈশিকার।

এখন আবার নতুন কৌতুহল শুরু হলো
১ঘন্টার পথ কিভাবে ১০ মিনিটে পৌছানো যায়?

“সে যা~ ই হোক ঈশিকা এ ব্যাপারটা নিয়ে মাথাটা আর বেশি ঘোলা করতে চায় না।”

ঈশিকা গাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে
ফারহান কে বাসায় যেতে বললো।

কিন্তু ফারহান কাজের বাহানা দিয়ে বললো, আরেকদিন, আবার দেখা হবে।

ঐ পর্যন্ত ভালো থাকবেন।
বিধাতা চাইলে আবার দেখা হবে।

ঈশিকাও ফারহান কে বেশি কিছু বলে নি তার কারণ হলো, সবকিছুর আগে কাজ, আর ফারহান কে দেখেই বুঝা যায় অনেক বিজি মানুষ, আর বিশাল বিত্তবানও বটে। বিত্তবানদের এমনি তেও অনেক কাজ থাকে।
ঈশিকা আর বেশি বারাবাড়ি না করে
ফারহান কে হাসিমুখে বিদায় জানালো।

কিন্তু মনের মধ্যে একটা খুট খুঁটে রয়েই গেলো।
ঈশিকা মনে মনে বললো,”সে যা~ ই হোক বাসায় তো ঠিকভাবে আসা হলো, তা~ ও সুস্থ শরীরে।”

“ভালোই হয়েছে, চোখ বুজে ছিলাম, হয়তো এ~ তো জোরে ড্রাইভ করেছে যে, ভয় পেয়ে বেঁহুশ হয়ে যেতাম।”

সকল চিন্তা ঝেড়ে ফেলে ঈশিকা ভয়ে ভয়ে কলিং বেল চাপ দিলো।
“বেল বাজানোর সাথে সাথে কেউ এসে ধপাস করে দরজা খুলে দিলো।”

“সবাই মনে হয় ঈশিকার জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।”

বাসার সবাই যেনো নিরবতা পালন করছে।
ঈশিকার জন্য ঈশিকার মায়ের যদিও অনেক টান, কিন্তু কোনো অন্যায়ে ঈশিকা কে তিনি কখনো পশ্রয় দেন না।
আজও তাই হলো।

“পাখি দরজা খুলে দিয়ে একপাশে এসে দাঁড়ালো।”
ঈশিকার মা ঈশিকা কে সেই রকম ঝাড়তে লাগলো।
তাঁর কারণ হলো, উনি চান না ঈশিকা কোনো প্রবলেমে পড়ুক।
ঈশিকা যতোক্ষণ বাহিরে থাকে, উনার অবস্থা খুবি খারাপ হয়ে যায়, একদম নাজেহাল। নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে উনি কেবলই ঈশিকা কে নিয়ে ভাবতে থাকেন।

তাঁর কারণ টা ঈশিকার অজানা।
“ঈশিকা মনে করে, ঈশিকাএকমাত্র মেয়ে তাই হয়তো মায়ের এতো টা টান।


পর্ব ১৪

~ কিন্তু মাঝেমধ্যে এ~ ই টান বিরক্তির উত্তেজনাও নিয়ে আসে ঈশিকার।
“এইতো এখন ঘরভর্তি মানুষের সামনে ঈশিকা কে টানের ছলে অপদস্ত হতে হচ্ছে।”

“মা হয়তো এমনি, তাই ঈশিকা সব মুখ বুজে সয়ে যাচ্ছে।”
~ যাক অবশেষে নানি জান এসে ঈশিকা কে শেষ বাঁচা বাঁচিয়ে দিলো।”

“নয় তো কি যে হতো।”
সে যা~ ই হোক বাঁচাতো গেলো।
এই ভেবে ঈশিকা নিজের রুমে চলে গেলো।

আর এদিকে ঈশিকার মায়ের কান্না এখনো থামানো যাচ্ছেই না।
ঈশিকার নানি অনেক কিছু বলে উনাকে বুঝাতে চাইছেন, কিন্তু উনার যেনো কিছুতেই বুঝ মানতে মন চাইছে না।

পুরোনো কোনো একটা ভয় উনাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
~”ঈশিকার মায়ের কথা শুনে ঈশিকার নানি জানও দরদর করে ঘামতে শুরু করলো। ঈশিকার নানি জান তারাতাড়ি এসে নিজের মেয়ের মুখ চেপে ধরে বললো, জাহানারা( ঈশিকার মায়ের নাম)
যা বলেছিস আর বলিস না, কেউ শুনতে পাবে।দেয়ালেরও কান আছে।”

আম্মা তুমি কী বলো, সবাই যখন জিজ্ঞেস করবে তখন আমরা কী জবাব দিব বলো।

আমি কিছুই চাই না, আমি শুধু আমার ঈশিকা কে চাই।

“ঈশিকা হঠাৎ কিছু একটা নিতে আসছিলো, মায়ের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মায়ের কান্না শুনতে পেলো।
ঈশিকার বুকের ভেতর টা চ্যাৎ করে উঠলো।”
~”মা তো মা
নেই যার তুলনা।”
~ কী ব্যাপার মা তুমি এখনো কাঁদছো।

“ঈশিকার কথা শুনে ঈশিকার মা কান্না থামিয়ে পলকহীন চোখে তাকিয়ে রইলো।মায়ের কাছে ঈশিকা যেনো সেই ছোট্ট সোনামণি টা।”
ঈশিকা দৌড়ে গিয়ে ওর মা’কে জড়িয়ে ধরে বললো,”মা জানো তুমি না হাসলে, তোমাকে একদম কিউটি, বিউটি দজ্জাল শ্বাশুড়িগুলোর মতো দেখায়। প্লিজ একটু হাসো না?

“ঈশিকার মা দু~ হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, আমি চাই তোর ভাগ্যে যেনো একজন ভিলেন শ্বাশুড়িই জোটে, যার ভয়ে বাসায় লেট করে না ফিরতে পারিস।”

ওকে মা নো প্রবলেম, এখন তুমি একটুখানি হাসো, শাশুড়ী ভিলেন হোক সমস্যা নেই, কিন্তু আমার মা ভিলেন না হলেই হলো।
ঈশিকার নানি জান বলে উঠলো,”তোর মা ভিলেন না হোক, আমি কিন্তু আছি, তোর আর তোর জামাইয়ের মধ্যে ভিলেন হয়ে এন্ট্রি নেব।”

ঈশিকা নানির কানে কানে বললো,”ওরে বুড়ী তুমি এন্ট্রি নিলেও প্রবলেম নেই, তোমার এখন যে বেইল নেই।

তোমাকে আমি সতীন বানাতেও রাজি আছি।””আমি খাটের উপরে থাকবো, আর তুমি থাকবে খাটের নিচে তেলাপোকাগুলোর সাথে। বলো যদি রাজি তাইলে ডাকমু কাজী।

“তুমি বুড়ো মানুষ তোমার দিকে যে আমার জামাই তাকাবেনা সেটা আমি নিশ্চিন্ত। তাই এ ব্যাপারে আমার কোনো ভয় নেই।”
“তবে খুবি ভালো হবে আমরা যখন ব্যাস্ত থাকবো, আমাদের জন্য রান্নার জন্য একজন তো লাগবে।

সেটা না হয় তুমিই হলে।”সতীনকাঁটা+কাজের বেটি হয়ে এন্ট্রি নিবে।”
“ওরে আল্লাহ তুই এ~ ই আশায় ঘুম মারছিস, তবে রে।”
ঈশিকাও এক ভোঁদৌড় লাগালো একদম
রুমে। ঈশিকা হাঁপাতে হাঁপাতে ওয়াশরুমে গেলো।

“ঈশিকা ফ্রেশ হয়ে মাথা আঁচড়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো।”
ঈশিকার মন চায় আজ নেচে বেড়াতে, পরী দের মতো ডানা লাগিয়ে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াতে।

ঈশিকা আয়নায় তাকিয়ে শুভ্র রঙের একটি স্টোন টিপ কপালে দিলো, যেনো চারদিকে শুভ্রতার ছোঁয়া ছুঁয়ে দিলো।
“ঈশিকা চুল গুলো মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।”

“প্রকৃতিতে যেনো আজ মুগ্ধতার
ছোঁয়াছুঁয়ি, পাখিদের সমাহার, সন্ধ্যার আকাশে অন্ধকার এসে ভিড় জমিয়েছে, মনের আকাশে ইচ্ছে ঘুড়ি রা উড়ে বেড়াচ্ছে।”

“হঠাৎ করে ঈশিকার মনে হলো, ফারহানের কথা।”
কি করে পারলো ফারহান তা~ ও এ~ তো দ্রুত, এক ঘন্টার পথ মাত্র দশ মিনিটে পাড়ি দিতে!

ঈশিকা তো ফারহান কে বাসার এড্রেস টাও দেয়নি, ফারহান তাহলে এড্রেস টা জানলো কিভাবে?

অফিস যাওয়ার সময় তো ঈশিকা মাঝপথ থেকে ফারহানের গাড়িতে উঠেছিল, এড্রেস জানার অবকাশ তো রাখেনি ঈশিকা।
“না কিছুতেই ভাবতে পারছেনা, ভাবতে ভাবতে মাথাটা যেনো ধরে যাচ্ছে তবুও ভাবনার যেনো রেশ কাটতে চাইছে না।”

“কেউ একজন ঈশিকাকে মুগ্ধ নয়নে দেখছে, এ যে হাজার বছরের তৃষ্ণা, যাকে শত দেখায়ও তৃপ্ত হবে না চক্ষুদ্বয়।”
পলকহীন গহীন চোখে তাকিয়ে হাজারো মিনতি যেনো এ চোখে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছেনা।

“ঈশিকা আবার সেই মনমাতানো মিষ্টি সুভাস টা পেলো। এই সুভাস কোনো পারফিউম বা ফুলেরও নয়, আলাদা সুভাস যার সুভাসে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে বার~ বার”ঈশিকা মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বললো, আপনি এসেছেন, আমি খুবি খুশি হলাম। আপনি জানেন আমি খুব খুব মিস করছিলাম শুধু আপনাকে।

কী ব্যাপার কথা বলছেন না কেনও। আপনি কী আজ কথা বলবেন না। অভিমান হয়েছে বুঝি। এই দেখেন কান ধরলাম, প্রমিজ করলাম আপনাকে রাগানোর মতো কোনো কথা বলবো না।
~”অনেকক্ষণ হয়ে গেলো কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছে না।”

চুপ থাকা ব্যাক্তি মনে মনে এটুকুই বললো,”
তুমি তো আমার রাণী মিতালী, মনের পিঞ্জিরার আকুতি, আমার পবিত্র ছোঁয়া, যার ছোঁয়ায় পেতে দিশেহারা মন, তোমাকে চাই সারাক্ষণ।,”ভেবোনা প্রিয় আমি অভিমান করেছি, তোমাকে ঠিকই নিজের করে নিয়েছি।”

“আগের জনমে পায়নি ব’লে এবারো পাবো না, এমন টা আর হবে না।”

“ভালো নাই প্রিয় তুমি বিহীন
বুক ছিঁড়ে আসে ক্রন্দন”
“তোমাকে নিয়ে ভেসে যাবো হিজল তলায়
সঁপে দেবো আমার প্রাণভোমরা।

~ “ঈশিকা বেশ কিছু সময় ব্যালকনিতে কাটিয়ে রুমে চলে আসে।

ঈশিকার আজ বেশ ভালো লাগছে, তাই হসপিটালের কাগজপত্র গুলো নিয়ে বসলো। অফিসের কাজগুলো শেষ করতেই হবে আজ ঈশিকা কে। তাঁর কারণ হলো একে তো অফিসে লেট করা, তাঁর উপর আজ আবার নতুন স্যারের এন্ট্রি।
তাই পানিশমেন্ট হিসেবে বাড়তি কাজ হিসেবে অনেক গুলো ফাইল ধরিয়ে দিয়েছে শুভ্র।”

~”ঈশিকা মনে মনে ভাবছে কি কপাল নিয়ে যে আসলাম, আগের স্যারটা কতো ভালো ছিলো, আর এখন আসছে একটা লাল হনুমান, কথায় কথায় চোখ রাঙায়।

চোখ দেখলেই ভয়ে চুপসে যা~ ই, আর কিছু বলার অবকাশ ই রাখে না।

আচ্ছা জন্মের পর কি উনার নানি উনার মুখে একটুও মধু দেয়নি।
হসপিটালে এসে এমন ঢং করে যেনো উনি রাজপুত্র।যেনো উনি একাই একশো। উনার পারসোনালিটি দেখে যেনো সবাই ফিদা হয়ে নাচানাচি করবে।”

“ঈশিকার নানি এসে দেখলো ঈশিকা বিড়বিড় করে কি যেনো আওড়াচ্ছে।”

“নানি জি জিজ্ঞেস করলো, কিরে সতীন কাকে এভাবে গালি দিচ্ছিস?
“তোকে আবার কেউ প্রেমের প্রস্তাব দেয় নিতো।”
“শুন এখন কিন্তু প্রেমের সময় নাই বুঝলি তো।”

“এখন তোর ভরা যৌবন, যৌবনে যতো তারাতাড়ি বিয়ে করা যায় ততো ভালো, তাঁর কারণ হলো এসময় বিয়ে করলে জামাইয়ের মর্মও বুঝবি, সংসারে সুখেরও অভাব থাকবে না।”

“তোর নানা জির কথা আর কি বলবো~”
~ হয়েছে হয়েছে নানীজি আমি আর শুনতে চাই না, তোমার আর নানাজির আদর, সোহাগের কথা।

“এসব শুনলে আমার মনে হয়, তুমি আর নানা বাসর ঘরে বাসর করছো, আর আমি খাটের নিচে ভিলেন হয়ে এন্ট্রি নিয়েছি।”
“আচ্ছা আচ্ছা তোকে আর ভিলেন হতে হবে না।”

তোর মা কাজ করছে, তাই আমার মতো বুড়ি কেই তোর জন্য খাবার আনতে হলো।”

এখন খেয়ে নে, না খেয়ে খেয়ে যে হারে বাতাসি হচ্ছিস, আল্লাহ জানে বাসরে নাতজামাই তোকে দেখার আগেই না জানি উধাও হয়ে যাস।”
“ঈশিকা ভ্রু নাচিয়ে খেতে খেতে বললো, আহা বুড়ী এ~ তো টেনশন কেন, তোমার জামাইটার জন্য, তুমি তো আছোই, তুমি সামলাবে।”
হয়েছে হয়েছে এখন খেয়ে শেষ কর।

খেতে খেতে আমাকে বলতো, যাকে নিয়ে এতো টেনশনে ছিলি সে কেমন?

“ঈশিকা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে নানীর দিকে তাকালো।”
নানীজি বললো, আরে ভুলে গেলি নাকি রে, নতুন স্যারের কথা বলছি।

নিশ্চয়ই খুবি ভালো, তোকে নিশ্চয়ই অনেক আদর করে।
“আদরের কথা শুনে বিষম খেলো ঈশিকা।”
ঈশিকা মনে মনে বললো, আদর না ছাই, উনি যেভাবে তাকায় যে কেউ হজম হতে মিনিট পাঁচেকও লাগবে না।

“কি যে বলো নানীজি আমি কি ছোট উনি আমাকে আদর দিবে, আর উনার বয়স কতো জানো?”

নানীজি অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,”কেনো রে আমার চাইতেও বুঝি বেশি?”

আরে না কী যে বলো, এই মনে করো ২৭/২৮ হবে!
“ওহ্ বুঝছি তাইলেতো টাটকা জোয়ান।”
“তা তোর কেমন লাগে বলনা বইনা!”
ঈশিকা ভাবনার ভঙ্গিতে থেকে বললো,”একদম রাবণের মতো।”
“যা কী বলিস এগুলো, আমি হলে তো, আমার পেছন পেছন ঘুরাইতাম।”

তুই একটা ফুটা বেলুন, ফোলালেও ফুলতে চাস না। দোয়া করছি শীঘ্রই তোর জীবনে এমন কেউ আসুক, যাকে দেখা’র জন্য সারাক্ষণ চটপট করতে থাকিস, মনের মধ্যে তার নাম সারাক্ষণ নিতে থাকিস, তাকে ভালোবাসার জন্য হাজারো বাহানা খুঁজিস।”

“হয়েছে কুঁজো বুড়ী অনেক দোয়া করেছো, আরো দোয়া থাকলে বলো ডিব্বা পুরিয়ে রেখে দেবো।”

“মজা করো না সতীন, ভালোবাসার আগুনে জ্বলেপুড়ে যখন ছাই হয়ে যাবে তখন বুঝবে এই বুড়ির কদর।কদরে কদরে করবে তখন স্মরণ, থাকবো না আমি আজীবন, দেখবো না তোমার রম্য।”
“মজায় মজায় ঈশিকার দু~ চোখ ভিজতে শুরু করলো।”
বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো।

ইচ্ছে তো করছে নানীজি কে জড়িয়ে ধরে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে, কেঁদে কেঁদে নানি জি কে ভাসিয়ে দিতে। চোখের পানিতে ডুবে যাক এ বুড়ী, হয়ে যাক আজ সমাধি এই কুঁজো বুড়ির সাথে আমারি।
ঈশিকা সত্যি সত্যি নানীজি কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
“নানি জিও ঈশিকা কে বুকে জড়িয়ে কোমলভাবে হাত দিয়ে আরো কাছে টেনে নিলো।

নানীজির এ জড়িয়ে ধরার মধ্যে আছে যেনো হাজারো আকুলতা, মনের মধ্যে বইছে ব্যাকুলতা। বুকের নিশ্বাস টা যেনো আজ বড্ড ভারি হয়ে আছে।

“নানীজি যেনো কিছু বলতে চায় ঈশিকা কে।”

~ ঈশিকা নানীজি কে বললো,”দিন দিন বুড়ী তুমি কিন্তু কুজো হয়ে যাচ্ছো।”
আমি কিন্তু আগের রূপ বিবিটা কে~ ই চাই।
(রূপ বিবি ~ নানীজির নাম)

ঈশিকা নানীজি কে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,”নানীজি আমি হারাতে চাইনা তোমাকে, আমার বড্ড অবেলায়।”
তোমাকে আরো কোটি বছর পেতে চাই।

তোমার দুষ্টু মিষ্টি কথার প্রেমে পরতে চাই।
“পাগলি সতীন আমার, তোকে আর আমার নাতজামাই কে জ্বালানো ছাড়া এতো তারাতাড়ি মরছি না বুঝলি তো।”

ভাবছি দাঁতগুলো লাগিয়ে আসবো তোদের হসপিটালে গিয়ে।
ঈশিকা ভ্রু নাচিয়ে বললো,”কেন?”

“কেনো আবার তোর কী হিংসা হয়, দাঁত লাগালে বেশি সুন্দর লাগবে বলে?”

ওরে বাবা তা হবে কেন? ঈশিকা নানি কে ধাক্কা দিয়ে বললো,”রহস্য কী বুড়ী আবার কুঁড়ি হতে চায় না~ কি মন?”

হইলেও আমি হবো তোকে এতো ভাবতে হবে না। আর শোন মরলেও ভূত হয়ে ফিরে আসবো, তোর জামাই কেও ভালোবাসবো চিন্তা করিস না।
“ঈশিকা হাসিতে ফেটে পড়লো।”
~”নানীজি চলে গেলো।”

“দু’জনের দুষ্টু মিষ্টি কথা শুনে কেউ একজনও খুব হাসছে, হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, কিন্তু এই গড়াগড়ি কেউ দেখছে না।”
কিছুক্ষণ পর সবকিছুতেই যেনো নিরবতা বিরাজ করছে, নেই কোনো কোলাহল, নেই কোনো অস্হির মনের আকুতি।

“ঈশিকা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, রাত্রি তখন তিনটে ছুঁইছুঁই।
ঈশিকার দু’চোখে স্বপ্নবিলাস খেলে যাচ্ছে।

অচেনা এক রাজকুমার শুভ্র রঙের পায়জামা, পাঞ্জাবি পরিহিত, চোখে তার অদ্ভুত মায়াবী হাসি, রক্তিম ঠোঁট, ঠোঁটের পাশে কালো তিল, অদ্ভুত আকুতি ভরা চাহুনি, যে চাহনিতে মনের ভেতরের রঙধনুরা খেলতে শুরু করেছে, মায়া ভরা চাহনিতে বুকের বাঁপাশে যেনো চিনচিনে ব্যাথা, যে ব্যাথা নিয়েও মরে যেতে রাজি যদি সে একটি বার হাত টুকু ধরে বলে,

“যাবে সখি আমার সনে,
রাখিবো তোমায় হৃদয়মাঝে,
দুঃখ দেবো না কোনো কালে
ভেসে যাবো ভালোবাসার সাগরে।”

“রাজপুত্র দাঁড়িয়ে যখন ঈশিকার হাতে হাত বাড়িয়ে দিলো, ঈশিকাও চরম আনন্দে আপ্লূত হয়ে হাতে হাত রেখে সানন্দে গ্রহণ করলো।”
“এ যে চরম চাওয়া, পরম পাওয়া, যার হয়না তুলনা।”

ঈশিকা কে পরম যত্নে নিজের রাজমহলে নিয়ে গেলো। ঈশিকার আগমনে হাজার হাজার দাস দাসীরা ফুল ছিটিয়ে স্বাগতম জানালো। এসব দেখে ঈশিকা মুচকি হাসলো।”

“ঈশিকা যখনই মুখ তুলে তাকালো তখনই সব অন্ধকারে ছেয়ে গেলো।”

“পরক্ষণেই ঈশিকার সেই হাসি বিলীন হয়ে গেলো।”
“মনে তিক্ততার আবছায়া নেমে এলো।”
“ঈশিকা বুঝতে পারলো, এতোক্ষণ ঈশিকা স্বপ্ন দেখছিলো।”
“রাজকুমার”!
~ ইশ

“রাজকুমারের চেহারাটাই তো মনে নেই ঈশিকার।”
“ঈশিকা বার~ বার চেষ্টা করছে সেই মায়াভরা মুখের আদল খানা খুঁজতে।”

~ কিন্তু হায়!
“ঈশিকা সব ভুলে একাকার।

ক্লান্ত মন নিয়ে ঈশিকা জানালা দিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশের পানে তাকালো।
চাঁদের বুড়ীটার দিকে তাকালো।

চাঁদের বুড়ীটাও যেনো আজ ঈশিকার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে লাগলো।
চুপিচুপি যেনো বলছে, কিরে তুই কী তোর প্রাণভোমরাটা কে মনে রাখতে পারিসনি।”
~ ছিহ!

“এতোটাই ঠুনকো তোর প্রেম, নিজের ভালো~ লাগা কেও মনে রাখতে পারিসনি।”

“এ~ সব কথায় ঈশিকা যেনো নিজের কাছেই নিজে ছোট হলো।
ঈশিকা মনে রাখবেই বা কিভাবে, যাকে ঈশিকা ঠিকভাবে দেখেই নি, যার সাথে বাস্তব জীবনে দেখা পর্যন্ত মেলেনি, যার হাতে হাত রাখা হয়ইনি, যার নাম পর্যন্ত জানেনি, তাহলে?”

তুমি বলো চাঁদ বুড়ী, কিভাবে রাখবো মনে আমি। আমার মন কী কোন মেশিন যে, চাইলেই মনে রাখতে পারবো তাকে।
তুমি আমাকে বলো, কিভাবে মেলবে তার দেখা, কোথায় খুঁজবো তাঁকে,?

“চাঁদ বুড়ী চোখের ইশারায় বলে যায়,”মনের কিনারায় আছে সে, লোকচক্ষুর আড়ালে, খুঁজে নে, তুই তাঁকে।”

“ঈশিকা যেনো কিছু একটা বুঝতে পেরেছে। মিষ্টি হাসি দিয়ে চাঁদ বুড়ী কে বিদায় জানিয়ে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে প্রিয়তমের জন্য প্রার্থনা জানালো।

ঈশিকা চায় তার রাজকুমার কে মনেপ্রাণে, শয়নেস্বপনে, জাগরণে।”
“ঈশিকা আজ আর লেট করতে চায় না, তাই তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিলো হসপিটালে যাবে বলে।

আজ যাতে লেট না হয় গাড়ির জন্য, তাই রাস্তায় আগে এসে দাঁড়িয়ে থাকলো।”

“ঈশিকা এদিক~ সেদিক তাকাতেই, রেড কালারের অসম্ভব সুন্দর একটি গাড়ি দ্রুত গতিতে আসতে লাগলো।”
“গাড়িটি ঈশিকার সামনে এসে থামলো।

মিনিট দুয়েকের মধ্যে গাড়ির কাঁচ নামানো হলো।”
“ব্যাক্তটি কে দেখা মাত্রই ঈশিকার গলা শুকিয়ে গেলো, হাত পা ঠান্ডা হতে লাগলো, মাথার উপরের আকাশটা ঘুরতে লাগলো।”
“এই~ যে আর কেউ নয়, স্বয়ং শুভ্র স্যার।

প্রতিক্ষণ কে অশুভ্র করতে মোটেও যার সময় লাগে না।”
ঈশিকা বেশ বিরক্তি নিয়ে শুভ্র স্যারের দিকে তাকালো।
“শুভ্র গাড়ির দরজা টা খুলে দিলো।

হাত দিয়ে ইশারায় জানালো গাড়িতে উঠতে।”

“ঈশিকা যেনো স্বপ্ন দেখছে, কল্পনায় করতে পারছেনা যে শুভ্র গাড়িতে উঠতে বলছে।”

“শুভ্র গাড়ির হর্ণ এমন জোরে বাজালো, ঈশিকা ঝাঁঝালোভাবে কেঁপে উঠলো।”
ঈশিকা আর কোন উপায় না দেখে গাড়িতে উঠে সামনের সিটে গিয়ে বসলো।”

“কেউ কারোর সাথে কথা বলছে না, ফিনফিনে নিরবতা।

ঈশিকার কেমন যেনো লাগছে, প্রকৃতিও যেনো আজ লজ্জা পাচ্ছে।
বাতাসে ঈশিকার চুল বার~ বার শুভ্রের মুখে দোলা দিচ্ছে।”

শুভ্র বিড়বিড় করে কি যেনো বলছে, সামথিং কিছু ঈশিকার কানে আসলো।

ওহ্ গড, মানুষ যেমন লাগামহীন তার চুল গুলোও তেমন।
“ঈশিকাও বলতে শুরু করলো,
হুহ্, উনাকে কেউ যেনো বলছে সেঁধিয়ে এনে অপমান করতে।

“( মনে মনে)
আমার যেনো পা নেই, উনার গাড়ি ছাড়া আমি যেনো যেতে পারিনা।
শুভ্র চিৎকার দিয়ে বললো”ডাফার কোথাকার।”
ঈশিকা যেনো আকাশ থেকে পরলো।

ঈশিকা কিছুই করেনি, তবুও অপদার্থের মতো অপমানিত হয়ে যাচ্ছে।

“শুভ্র গাড়ি থামিয়ে কয়েক ধাপ ঝাড়ি মেরে
ঈশিকার কাছে আসলো। সিট বেল্ট টা টান দিয়ে বাঁধতে লাগলো।
ভয়ে ঈশিকার হাত, পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। একপা দিয়ে আরেক পা চেপে ধরে রেখেছে।

শুভ্র এতো কাছে আসাটা ঈশিকার যেনো আর সহ্য হচ্ছে না।
শুভ্রের গরম নিঃশ্বাসে ঈশিকার যেনো সবকিছু বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।

বুকের ভেতরের সেই চিরচেনা ব্যাথাটা শুরু হতে লাগলো।
ঈশিকা হাত দিয়ে বুক টা চেপে ধরলো।

শুভ্র চোখ তুলে ঈশিকার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”সমস্যা কী।”

ঈশিকা মুখ টা কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে বললো,”সামান্য বুক ব্যাথা।”
“বুক ব্যাথা শুনে শুভ্র যেনো অদ্ভুত ভাবে দরদর করে ঘামতে শুরু করলো।
শুভ্র কে অনেক হতাশ দেখাতে লাগলো।”

“ঈশিকা অবাক হয়ে শুভ্রের দিকে তাকালো, অদ্ভুত মায়াবী চোখ, এ চোখের ভাষা বুঝা বড্ড কঠিন, নাকের ডগায় রাগ যেনো সর্বক্ষণ লেগেই আছে, এ মূহুর্তে উনার ভয়ার্ত চেহারা দেখে বড্ড হাসি পাচ্ছে ঈশিকার।”

~ ইশ্!
“ঈশিকা যদি এখন প্রাণ খুলে হাসতে পারতো খুবি ভালো হতো।
কিন্তু কি করা যাকে নিয়ে হাসবে সেই এখন পাশে। তাই ঈশিকা ভাবলো

হসপিটালে নিজের ক্যাবিনে গিয়ে প্রাণ খুলে হাসবে। এবার যা~ ই হয়ে যাক।”

“শুভ্র গাড়ির বক্স থেকে কিসের বোতল যেনো বের করে ঈশিকার সামনে বাড়িয়ে দিলো।”

ঈশিকা ভয়ার্ত চোখে ইশারা করলো যে, নিজে খেতে পারবেনা, বুকে ভীষণ ব্যাথা।

ঈশিকা নিজে জানেইনা এই ব্যাথা যে কতো টা ভয়ার্ত, যে ব্যাথার পেছনে আছে অনেক রহস্য।

এ রহস্য বেদ করে আদৌও কী জানতে পারবে ঈশিকা।”
শুভ্র ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পরম যত্নে নিজ হাতে ঔষধ টা খাইয়ে দিলো, ঔষধ বললে ভুল হবে, বোতলে আছে কী ঈশিকা নিজে জানেইনা।

তবুও ঈশিকা ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।
ঔষধের স্বাদ যেনো অমৃত।

ঔষধ খেতে যে এতো টা মজাদার এটা না খেলে জানতোই না ঈশিকা। যেনো মায়ের হাতের রান্না কোনো এক অমৃত।

দুজনের মধ্যে আর কোন কথা হয়নি।
শুভ্রও মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো।

“আর এদিকে ঈশিকার মনে হাজারো প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।
জীবন যেনো স্বপ্নময় এক পাতালপুরী তে গিয়ে ঠেকছে।
মহাকাল যেনো খুব কাছাকাছি, হাতছানি দিয়ে ডাকছে, অনেক প্রশ্নের উত্তর দিবে বলে।”
~”হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো।”

“শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে, ঈশিকার দরজা খুলে দিলো।”
ঈশিকাও কোনো কথা না বাড়িয়ে, শুভ্রের জন্য ওয়েট না করে হসপিটালের ভেতর চলে আসলো।

“আর এদিকে কেউ বাসায় এসে সব ভেঙে তছনছ করে ফেলছে, আজ একটাই লক্ষ্য, সব ভেঙে দিবে, পুরো পৃথিবী এক করে ফেলবে। জোরে হুংকার ছেড়ে বলতে শুরু করলো ঈশিকা আমি তোমাকে চাই সারাজীবনের জন্য চাই, হারাতে চাইনা কখনো।

আমার সমাধি তেই তোমার সমাধি।

তোমাকে আমি শীঘ্রই নিজের করে পেতে চাই। এ জনমে পেয়েও হারাবো না আর।

এই বলে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।”

“ডোন্ট ক্রাই মা’ই সান
আমি আছি ভেবোনা তুমি। কতো কাল পর পেয়েছো দেখা, মিছে হতে দেবো না তোমার ভালোবাসা।

পিতা হয়ে তোমাকে আর ব্যাথিত দেখতে চাই না আর।
যতদ্রুত সম্ভব ঈশিকা কে নিজের করে নাও, এই বলে দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরলো।”

“আর এদিকে ঈশিকা বেশ কিছুক্ষণ আরামের ঘুম দিলো।
অনেক দিন পর যেনো ভালো ঘুম ঘুমালো।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো অফিস ছুটির সময় হয়ে গেছে।”
অণু এসে দরজা নক করলো।

ভেতরে এসে ঈশিকা কে বললো,”কিরে বাসায় যাবি নাহ?”
“ঈশিকা জবাব দিলো যাবো না তো কী করবো, তোর শ্বশুরবাড়ি থাকবো?”

অণু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”আর শ্বশুরবাড়ি, আমার ক্রাশ ই তো আসে নি আজ।

“তোর ক্রাশ মানে?”
“নতুন স্যার, ডক্টর শুভ্র!”
“ঈশিকা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, আসেনি মানে?
“আমি আর উনি তো ব’লে থেমে গেলো ঈশিকা ~”


পর্ব ১৫

কিছুক্ষণ আগেই তো ইশিকার সাথে ছিলো শুভ্র, কিন্তু এখন আবার কোথায় গেলো? কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ইশিকা। ইশিকা নিজের ক্যাবিনে বেশ কিছুক্ষণ পায়চারি করলো, এমন সময় পিয়ন এসে ডেকে বললো, স্যারের ক্যাবিনে যেতে হবে।

শুভ্র ডাকছে শুনে ইশিকার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।
ইশিকা নিজেকে নিজে শান্ত করে মনে মনে বললো, এতো ভয়ের কি আছে, উনি তো বনের বাঘ, ভাল্লুক কিছুই না।

বুকে সাহস নিয়ে ইশিকা দ্রুত শুভ্রের রুমে এগিয়ে গেল।
“ভয়ে নক করা ছাড়া ক্যাবিনে প্রবেশ করে ফেলে ইশিকা।”
শুভ্র ইশিকার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।

ষ্টুপিড তোমার কি আক্কেল বলতে কিছুই নেই পারমিশন ছাড়াই প্রবেশ করে ফেলো?

ইশিকা রুম থেকে বের হয়ে আবার পারমিশন নিয়ে প্রবেশ করে।
“ঈশিকার ভয়ার্ত মুখ খানা দেখে শুভ্রের একটু হলেও মায়া হলো।
শুভ্র কোমল স্বরে জিজ্ঞেস করলো, ব্যাথাটা কি কমেছে?”

ব্যাথার কথা শুনে ঈশিকা যেন আকাশ থেকে পরলো।এদিক সেদিক ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে, অবাক চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো।
“শুভ্র চেচিয়ে উঠলো, এমনভাবে তাকিয়ে আছো, যেন ব্যাথাটা আমার।

~ ইশিকার কোন সাড়া না পেয়ে শুভ্র আবারও চেঁচাল,
কথা কি কানে যাচ্ছে না তোমার?

শুভ্রের চিৎকারে ঈশিকার ঘোর কাটলো।

ইশিকা তো ভেবে পাচ্ছে না, ইশিকার ব্যাথার কথা এখনো মনে রেখেছে শুভ্র।

ইশিকা মুখটা ভারী করে জবাব দিলো, না একনো কমেনি।
শুভ্র, হন্তদন্ত হ’য়ে ঈশিকার কাছে খুব কাছে এসে হাত ধরলো।
একে অন্যের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
শুভ্রের কাছে আসাটা ঈশিকার যেনো সহ্য হচ্ছে না।
ভয়ে ইশিকা চোখ বন্ধ করে, বার~ বার ঢোক গিলতে থাকে।

“ইশিকার ভয় পাওয়া দেখে শুভ্র আরো এগোচ্ছে।এগোতে এগোতে খুব কাছে চলে এসে, থেমে গেলো শুভ্র, ইশিকার ভয়ার্ত মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।

ইশিকা যেভাবে ছিলো ঠিক একইভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।
ভয়ে ভয়ে চোখ খুললো। ইশিকা

তাকিয়ে দেখলো শুভ্র ল্যাপটপে বসে স্বাভাবিক ভাবেই কাজ করছে।
“শুভ্র ইশিকার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো চেয়ার টেনে বসতে। শুভ্র এমন ভাব নিচ্ছে যেন এতোক্ষণ কিছুই হয় নি।”
ইশিকাও ভীরু মনে চেয়ার টেনে বসলো।
“শুভ্র তরল পানীয় গ্লাসে ঢাললো।

ইশিকার সামনে হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললো খেয়ে নাও।”
ইশিকা নাক উঁচু করে এমন ভাব নিলো এটা খেতে পারবে না।
শুভ্র চোখ গরম করে বললো, এটা খেয়ে নাও তোমার বুক ব্যাথা কমে যাবে। এটাতে এমন কিছু দেয়নি যে, বাঁদরের মতো নাক উঁচু করতে হবে।

উঁহু
আমার যেন কতো শখ উনার এসব আজগুবি ঔষধ খেতে।
উনি ট্যাবলেট রেখে কেনও যে এসব তরল ঔষধ দিচ্ছেন সেটাই বুঝতে পারছি না।

ইশিকা মনে মনে বললেও মুখে কিছুই বলেনি।

শুভ্রের দিকে তাকিয়ে ঢকঢক করে পুরো গ্লাস খালি করে ফেললো।
ইশিকা খেয়ে বুঝতে পারলো, বেশ মজাদার শরবত। কতোদিন পর যেন অমৃত পান করলো।

এই শরবত আগে কোথাও খেয়েছে মনে হচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছেনা ইশিকা।

“শুভ্রের কাছে ইশিকা কে বেশ চিন্তিত মনে হলো।
শুভ্র ইশিকা কে জিজ্ঞেস করলো, সব ঠিক আছে তো। ঔষধ টা খেয়ে এমন ভাব নিচ্ছো, যেন তোমার মাথা ঘুরছে।

আমার এতো শখ নেই যে তোমাকে মাথা ঘুরাঘুরির ঔষধ খাওয়াবো।
আর তোমার মাথা যে প্রতিনিয়ত ঘুরাঘুরি করে তা বেশ ভালোই জানি আমি।”

ঔষধটা বেশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে ইশিকার। ঔষধটা খাওয়ার দু মিনিট পরই ইশিকার বুক ব্যাথা গায়েব।
ইশিকা ভাবতে পারছে না, এই আজগুবি ঔষধটা স্যার কোথায় পেলো?

সে যাই হোক আমারতো বেশ উপকার হলো।
~”ইশিকা শুভ্র কে ধন্যবাদ দিতে যাবে, এমন সময় শুভ্র ইশিকার দিকে তাকিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো, তোমার ক্যাবিনে যাও, এখন তো বেশ রিলাক্স আছো গিয়ে নিজের কাজে মন দাও।”
ইশিকার মুখের কথা মুখেই রয়ে গেলো।

শুভ্রের রুম থেকে বের হয়ে দ্রুত গতিতে নিজের রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে মন খারাপ করে বসে রইল।

অণু এসে বকবক করেই যাচ্ছে।

অধিকাংশ বকবকানি শুভ্র কে নিয়ে।
“এবার ইশিকা বেশ রেগে গেলো।
চুন্নি কোথাকার তোর কি আর কাজ নেই, সারাক্ষণ ঐ এক ভাঙা রেকর্ড, শুভ্র শুভ্র।

উনি শুভ্র না ছাঁই। কথায় কথায় আমাকে অপমান করে জানিস তুই কিছু?

অণু অবাক হয়ে বললো, তুই নিশ্চয়ই এমন কিছু করেছিস যাঁর কারণে উনি তোকে অপমান করে।

বিশ্বাস কর আমাদের সাথে তো খুবই ভালো আচরণ করে।
“ইশিকা চোখ ফাঁকিয়ে অণুর দিকে তাকালো, তাকিয়ে বললো, হুম তোদের শুভ্র স্যার তো আমার আগের জন্মের শত্রু ছিলো, তাই আমাকে দেখলেই, উনার খুন করতে ইচ্ছে করে। আমিও কম কিছু না বুঝলি।

তোদের স্যারের সিল্ক চুলগুলো ছিঁড়ে যদি ত্যানা ত্যানা না করেছি তখন বলিস?

ইশিকার কথা শুনে অনু হাসিতে বেশ গড়াগড়ি খেলো।
হয়েছে হয়েছে চল ভীষণ খিদে পেয়েছে রে, ক্যান্টিনে যাবো।
তোর আজ এতো ত্যাজ যে, যে কেউ দেখলেই ঝলসে যাবে।
চল তোকে কোল্ড কফি খাওয়াবো।

ইশিকা ক্যান্টিনে গিয়ে, একের পর এক কোল্ড কফি খেয়েই যাচ্ছে।
আজ এই কফির উপরেই যেন শুভ্রের দেওয়া সকল অপমানের শোধ নিচ্ছে।

“কেউ এসে কোল্ড কফির মগ নিয়ে ভেঙে ফেললো।
যা দেখে ইশিকা ও অণু দু’জনই একে অপরের দিকে নির্বিঘ্নে তাকিয়ে রইলো।
কেউ যেন কিছুই বুঝতে পারছেনা।

“সামনের লোকটা আর কেউ নয়, এ যে শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে।
শুভ্র ইশিকার দিকে এমনভাবে তাকালো, যেন চোখ দিয়ে খিলে খাবে।
ডাফার কিছুক্ষণ হলো, বুক ব্যাথা কমেছে, আর এখুনি কোল্ড কফি গিলছো?

তা~ ও এক কাফ নয়, পরপর সাত, আট কাপ।
তোমার কি আক্কেল বলতে কিছুই নেই।

ইচ্ছে করছে থাপ্পড় লাগিয়ে সবগুলে দাঁত ফেলে দিতে,
অণু কিছু একটা বলতে যাবে, শুভ্র চিৎকার করে এক ধমক লাগালো ভয়ে অণুর কান্না চলে আসলো।
ইশিকাও বেশ ভয় পেয়ে গেলো।

এতো এতো ভয়, ভয়ে একদম থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
ভয়ে ইশিকার মুখ চোয়াল সব শক্ত হয়ে যাচ্ছে। দাঁতের সাথে দাঁত লেগে যাচ্ছে। ইশিকা কে এই অবস্থায় দেখে অণু চিৎকার দিলো,
“শুভ্র ইশিকার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব।
ডাফার হলোতো এবার।

শুভ্র ইশিকা কে পাঁজ কোলে করে হসপিটালের বেডে নিয়ে গেল।ইশিকার মুখে তারাতাড়ি অক্সিজেন মাস্ক লাগালো।
অণুও নিস্তব্ধ হয়ে শুভ্র কে সব এগিয়ে দিচ্ছে।

অণু বুঝতে পারেনি, ইশিকা এতোগুলো কোল্ড কফি খাবে, আর খেলেও যে এই অবস্থা হবে।

“শুভ্র যথেষ্টভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ইশিকার শ্বাসকষ্ট যেন খুব শীঘ্রই ঠিক হয়ে যায়।

শুভ্র নিজের ক্যাবিনে চলে গেলো।
অণুও বিশেষ কিছু কাজে আটকে গেলো।

“এদিকে ইশিকার হাত ধরে কেউ একজন কাঁদছে, ভীষণ কাঁদছে।
কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে অদৃশ্য অবয়বের।

তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না, বিশ্বাস করো, যদি পারতাম, সব কষ্টগুলে আমি নিয়ে নিতাম।

ইশিকার হাত টা বুকের মাঝখানে রেখে অদৃশ্য অবয়বটা আবারও বলতে লাগলো, লক্ষীবউ বিশ্বাস করো, এ বুকে শুধু তুমি থাকো, আর কেউ নয়।

আমার বুকের উষ্ণ আবেশে যদি তোমার ঠান্ডার প্রকোপ চলে যেতো, তাহলে এই এখুনি বুকে জড়িয়ে নিতাম।

জানো লাজুকপরী রাগ করলেনা তোমার নাকটা একদম লাল টমেটো দেখায়, ইচ্ছে তো করে খেয়ে পেলি।

অদৃশ্য অবয়বটা ইশিকা কে বুকে জড়িয়ে নিলো, এ যেন হাজার বছরের সাধনা, যাকে পাওয়ার জন্য, একশত বছর অপেক্ষা।

এই দিনটা পাবো বলে কতো তপস্যা করেছি, যদি তুমি জানতে তাহলে নিজেকে আর দূরে রাখতে না ইশিকা
অদৃশ্য অবয়বটির চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে।

“হঠাৎ কারো চোখের জলে জেগে যায় ইশিকা। কান সজাগ তবুও চোখ মেলে তাকাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ইশিকার।

ইশিকা হালকা হালকা বুঝতে পারছে, কেউ একজন ইশিকার হাত গভীরভাবে ধরে রেখেছে। ইশিকারও অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে, এ ছোঁয়া যেন খুব পরিচিত।

যেন হাজারো বছরের পুরনো গভীর ছোঁয়া।
যাকে শুধু দেখা’র অপেক্ষা।

ইশিকা বহুকষ্টে, চোখ পিটপিট করে তাকালো। তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলো না।

হতাশায় বুক টা ডুকরে উঠলো ইশিকার।
ইশিকা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো,
হাতে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ে আছে।

ইশিকা এবার বুঝতে পারলো, নিশ্চয় কেউ একজন এসেছিল।
কিন্তু কাঁদলো কেন সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।

~ অণু ইশিকা কে নিতে আসলে, শুভ্র সরাসরি জানিয়ে দেয়, ইশিকার এ অবস্থায় বেশি প্রেসার নিয়ে বাসায় ফেরাটা ঠিক হবে না। তার ছেয়ে ভালো শুভ্র ইশিকা কে পৌঁছে দিবে।

“গাড়ির ভেতর ক্লান্ত শরীর নিয়ে, মাথাটা হেলান দিয়ে বসে আছে ইশিকা।

ইশিকা আর শুভ্র দুজনেই নিরব। দু’জনের মুখে কোন কথা নেই।”
“মাঝপথে গাড়িটা থামালো শুভ্র।

ঝড় বৃষ্টির কোন আবেশ নেই, তবুও রাস্তার মাঝখানে ইয়া বড় গাছ পরে আছে।

যার কারণে গাড়ি যেতে পারছে না।

ইশিকা গাড়ি থেকে নামেনি, গাড়িতেই বসে রইল।শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে গাছটা সরানোর চেষ্টা করতে লাগলো।”
“জানালার বাহিরে তাকালো ইশিকা।
সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে আসছে।

নিভু নিভু আলোতে চারপাশ টা ভীষণ রকম সুন্দর লাগছে। মন যেন অজানায় হারিয়ে যাচ্ছে।

দূরে অদ্ভুত এক আলোকরশ্মি দেখতে পেলো ইশিকা। তীর্যক আলোকরশ্মি তে ঘন জঙ্গল অনেক আলোকিত দেখাচ্ছে।
ইশিকা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।

কথা বলার বোধশক্তি যেন হারিয়ে ফেললো।
ইশিকা ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে দেখলো, ভীষণ রকম বড় একটা সাপ একটা লাশকে ঠুকরে গিলে ফেললো।

এগুলো দেখে ইশিকা চিৎকার দিয়ে শুভ্র কে ডাকলো।
ইশিকার ডাকে ভয় পেয়ে শুভ্র দৌড়ে আসলো।

ইশিকা শুভ্রের হাত চেপে ধরলো। হাত দিয়ে ইশারা করে, দূরের সাপটা কে দেখালো।

“শুভ্র নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।


পর্ব ১৬

“শুভ্র দূর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ইশিকার দিকে তাকিয়ে বললো, কোথায়?
আমি তো কিছুই দেখছিনা।”

শুভ্রের কথা শুনে ইশিকা ভয়ে ভয়ে আবার তাকালো।
আসলেই তো কিছুই তো আর দেখা যাচ্ছে না।

ইশিকার বুক টা এখনো কাঁপছে, ভয়ে কলিজাটা ধুকপুক করছে।
ইশিকা গাড়ির ভেতর থেকে দৌড়ে এসে শুভ্র কে জড়িয়ে ধরলো।
“শুভ্র কোমল আবেশে ইশিকা কে জড়িয়ে নিলো, নিজের বক্ষহৃদয়ে।”

“ইশিকা বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই ছিলো।
ভয়টা কেটে গেলে হঠাৎ শুভ্র কে ছেড়ে দূরে এসে দাঁড়ালো। শুভ্রের চোখের দিকে তাকাতেই পারছে না ইশিকা।
একে তো সেই ভয়, আরো পাচ্ছে লজ্জা।

শুভ্র কে জড়িয়ে ধরবে এমনটা কখনো ভাবেনি ইশিকা।
শুভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে, গাড়িতে উঠে বসলো।”
~ ইশিকাও দেরি করেনি, মাথাটা নিচু করে গাড়িতে বসলো।
“শুভ্র দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে ব্যাস্ত।

~ এদিকে ইশিকা শুভ্র কে জড়িয়ে ধরার ভাবনা নিয়ে ভাবতে ব্যাস্ত।
এই প্রথম কোন পুরুষের সান্নিধ্যে নিজেকে জড়িয়েছে ইশিকা। আর কিছুই ভাবতে চায় না এ নিয়ে।

“কিছুক্ষণের মধ্যে ইশিকার বাসায় পৌঁ গেল।শুভ্র ইশিকার হাত ধরে খুব যত্ন করে গাড়ি থেকে নামালো।”

~ ইশিকা কে ঘর পর্যন্ত দিয়ে আসলো।
সবাই তো শুভ্র কে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসলো।
“টিয়া তো রিতীমত শুভ্র কে গিলছে।

টিয়ার অবস্থা দেখে ইশিকা মুচকি মুচকি হাসছে।

ইশিকা মনে মনে বললো, মেয়েটা এতো আবেগি যাকে দেখে তাকেই গিলতে থাকে।

পারছে না শরবত বানিয়ে খেয়ে ফেলতে।”

ইশিকা ভুল করে শুভ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেই হা হয়ে গেল।
এতো সুন্দর কোন মানুষ হয়।

আসলেই তো স্যার খুবি মায়াবী পুরুষ।

যার মুখে আছে অতুলনীয় মায়া, চোখে আছে ঘোর লাগানো নেশা, এ যে যেকোন নারী মন স্বর্বশান্ত করতে যথেষ্ট।

যে কোন নারী যে, তার দিকে ব্যাকুল হয়ে তাকাবে সেটাই তো স্বাভাবিক।

আসলে টিয়ার কোন দোষই নেই, দোষ তো এই মানুষটার, আর একে যে বানিয়েছে স্বয়ং তাঁর।

যে কেউ ইচ্ছা করলেও তার চোখকে সংযত রাখতে পারবে না।
তাঁর চোখ যে স্বর্বশান্ত হতে বড্ড ব্যাকুল হবে সেটাই স্বাভাবিক।
~ নানীজির ডাকে ইশিকার ঘোর কাটলো।

কিরে ইশিকা দাঁতের ডাক্তার হতে গিয়ে চোখ হারালি নাতো?
আমার কিন্তু খুব সন্দেহ হচ্ছে
নানি এতোটা হিসহিসিয়ে বলছে যে, যা শুভ্রের কান পর্যন্তও পৌঁছে গেলো।

“শুভ্র ইশিকার দিকে তাকিয়ে বললো, ওকে নিজের খেয়াল রেখো এখন আসি।

নাস্তা করতে সবাই বলাবলি করলেও শুভ্র কাজের বাহানা দিয়ে চলে গেলো।

এদিকে ইশিকার ঘোর যেন কাটাতেই চাইছে না।

“ইশিকা দ্রুত গতিতে নিজের রুমে গেল। লম্বা একটা হট শাওয়ার নিলো।

রুমে এসে শরীরটা খাটে এলিয়ে দিলো।
ভীষণ ক্লান্ততা এসে ভর করেছে শরীরে। তাঁর উপর আবার কোল্ড কফি খেয়ে শরীর খারাপ হয়েছে।

ইশিকা কাঁথা টেনে শরীরে মুচড়ে নিল।
হঠাৎ সেই কথাটা মনে পরলো।

দূরের অবয়বটার কথা। সাপটা কি ভয়ংকর আস্ত একটা লাশের মানুষ খেয়ে হজম করে ফেললো।
ছিহ কি জগন্য।

মনে হলেই গা ঘুলিয়ে আসছে ইশিকার।
ইশিকার মনে পরলো, যদি সাপটা ইশিকা কেও খেয়ে পেলে তখন, তখন কি হবে?

ইশিকা যে ঐ দৃশ্যটা দেখেছে, যা আর কেউ দেখেনি, এমনকি শুভ্রও নয়।

~”এদিকে কেউ একজন ভীষণ অস্থির, ইশিকাকে কাছে পাওয়ার জন্য।

কতো প্রতিক্ষার পর ইশিকা কে আবার ফিরে পেয়েছে।
ইশিকার তসবিরেট দিকে তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। সেই আগের মতো মায়া ভরা কাজল কালো আঁখি, গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট দু’টি, মেঘেদের মতো ছন্দ মাতানো কেশ, আমাকে এখনো পাগল করে বেশ।

জানো ইশিকা আমি তোমাকে এখনো আগের ইশিকা কেই চাই, যে সামান্য কিছু নিয়েই অভিমান করবে, অভিমানে গাল দু’টো লুচির মতো ফুলিয়ে রাখবে, আর আমার সাথে দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায় মেতে উঠবে, আর আমি সুযোগ বুঝেই গাল দু’টো টেনে দিব।

জানি আমি খুব জানি, মনেমনে আমাকে খুঁজছ ঠিকই, কিন্তু কি করবো বলো, আমিও যে কিছু নিয়মে বাঁধা, এই বাঁধা টা অতিক্রম করেই খুব শীঘ্রই আবারও বউ করে নিয়ে আসবো আমার কাছে, আমার এই হৃদয়ে।

যে তোমার পিছু নিয়েছে, তাঁকে আর আমি রেহাই দেবো না দেখে নিও। আগে দিয়েছি বলে এবারও তা হবে এমনটা আর কখনো হবে না। ও আমার হাত থেকে একবার বাঁচতে পারলেও এবার আর বাঁচতে পারবে না। অদৃশ্য অবয়ব টা, নিজের হাত মুঠো করে মুখ চোয়াল শক্ত করে, মুখে রাজ্য জয়ের হাসি হাসলো।

অদৃশ্য অবয়ব টা চোখের পানি মুছে, দুহাত দিয়ে ইশিকার তসবিরে পরম যত্নে হাত বুলাতে লাগলো।

যেন সত্যি সত্যি ইশিকা কে, অনুভব করতে পারছে।

আজ তোমার এই তসবির বুকে রেখে ঘুমবো, জানো, আজ কতো যুগ আমি ঘুমাই না, এ বুকে এখনো ব্যাথা, তোমাকে কাছে পাওয়ার ব্যাথা। যদি বুক টা ছিঁড়ে একটি বার দেখাতে পারতাম তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্বাস করতে।
হঠাৎ কারো হুংকারে অদৃশ্য অবয়বটার ঘোর ভাঙে।

“কেউ হাত তালি দিয়ে তিরস্কার জানালো।
প্রথম অবয়ব টা চারদিকে তাকিয়ে যাকে দেখলো, প্রচন্ড জোরে হুংকার ছাড়লো।

তুই আবার এসেছিস?
তোকে একবার ছেড়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু এবার আর ছাড়বো না বুঝলি।

এর আগে তুই আমার ইশিকা কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিলি।

কিন্তু দেখ, মহান একজন আছেন, যিনি সর্বকালের জন্য ইশিকা কে আমার ভাগ্যে লিখে রেখেছেন। এবার চাইলেও তুই আর পারবি না।
বিধাতা না চাইলে কেউ পারবে না কেড়ে নিতে।

~ দ্বিতীয় অবয়বটা প্রচন্ড জোরে তিরস্কারের হাসি হাসলো।
ভালোই বলেছিস তুই, তোর বিশ্বাস কে বলিদান করি আমি।
ইশিকা কে এবার আমি~ ই বিয়ে করবো দেখিস।

জোর করে হলেও করবো, ও যদি আমার না হয়, তাহলে আর কারোর হতে দেবো না।

আগের বারের মতোই এবারও ওকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবো।
“প্রথম অবয়ব টা দৌড়ে এসে দ্বিতীয় অবয়বটার গলা টিপে ধরলো।
তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।

তুই যে চোখে আমার ইশিকার দিকে তাকিয়েছিস ঐ চোখ আজ উপরে ফেলবো, বলে প্রথম অবয়ব টা দ্বিতীয় অবয়বটা কে ওয়ালের সাথে জোরে ধাক্কা মারলো। দ্বিতীয় অবয়বটার মাথা ফেটে গরগর করে রক্ত বের হতে লাগলো।

~ প্রথম অবয়বটা দ্বিতীয় অবয়বটার দিকে এমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো, যেন এখুনি চোখ দিয়ে ঝলসে দিবে।

“দ্বিতীয় অবয়বটা রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলো, তুই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবি, আমি ইশিকা কে ঠিক বিয়ে করে নেব।

তুই আমার কিচ্ছু করতে পারবিনা বলে হাহাহাহা করে হাসতে লাগলো, পুরো ঘরটায় যেন কেঁপে উঠল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্বিতীয় অবয়বটা ভ্যানিস হয়ে গেলো।

প্রথম অবয়বটার রাগ যেন কমছেই না।
ইশিকার তসবির টার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
খুব মজা পাচ্ছো, আমাকে রাগান্বিত দেখে।

আমার রাগ এখনো কেউ দেখেনি, এমনকি তুমিও না, তুমি শুধু আমার বুঝতে পারছো।
আমার ভাগ্যে শুধুই তুমি আর কেউ নয়।

লাজুক পরী ভেবেছ কি, আগের বারের মতো এবারও ফাঁকি দেবে?
হাহাহাহা
না এমনটি আর হবে না।

বহুযুগ পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি, ঐ জালিম কে আমি এবার শেষ করেই ছাড়বো। ওর কারণে তোমার মৃত্যু হয়েছিল, কিন্তু এবার ওর মৃত্যু তোমার সামনেই হবে।

ওকে কঠিন মৃত্যু দেবো, ওর মৃত্যুতে সবাই হাসবে, সবাই শান্তি পাবে।
আর তোমার আত্মার শান্তি হবে।

এতোকাল তোমার আশায় প্রহর গুনেছি যার কারণে প্রতিশোধ নিতে পারিনি আমি।

কিন্তু এখন তো তোমায় পেয়েছি, আর শুধু কাছে পাওয়া’র অপেক্ষা।
তাও খুব শীঘ্রই হবে।

তুমি চাও বা না চাও তুমি শুধু আমারি, জীবনে, মরণে।
ইশিকার তসবির টায় প্রথম অবয়বটা গভীরভাবে চুমু খেলো। তসবির টা বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

শান্তির ঘুম, আজ মনে আর নেই দুঃখ, নেই কোন আহাজারি। আজ পাখিরাও ঘুমিয়ে পড়ুক আদর মাখা স্পর্শে।

ভয়ে ভয়ে ইশিকার রাতটা পার হলো।
খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সবার সাথে নাস্তা করে নিল ইশিকা। ইশিকা

টিয়ার সাথে অনেকক্ষণ ধরে দুষ্টুমি করলো।
হটাৎ কলিং বেল বেজে উঠল।

টিয়া বকবক করে দরজা খুলতে গেলো।
~ ইশিকাও ভাবছে এই সকাল সকাল কে আসলো।
“টিয়া দরজা খুলে দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
টিয়া হা হয়ে তাকিয়ে মুখ ফস্কে বলেই ফেলল, এ যে রাজপুত্র এসেছে।

“কে আসছে বলে এগিয়ে আসলো ইশিকা। দেখবার জন্য কে এসেছে।

এসে যাকে দেখলো পুরোপুরি অবাক।

পর্ব ১৭

ইশিকা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলো, ফারহান এসেছে।
ফারহান কে আগের চেয়ে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। ফারহান ছেলেটা দিন দিন যেনো নিজেকে সুন্দর বানাতে ব্যাস্ত। ফারহানের মুখে মিষ্টি হাসি দেখে ইশিকাও মিষ্টি করে হাসলো।

“ইশিকা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ফারহান আপনি এখানে?
অনেক দিন পর আপনার সাথে দেখা হলো।
কোথায় ছিলেন বলুন তো?

ফারহান মুচকি হেঁসে জবাব দিলো, ধীরে ম্যাম ধীরে। এতো প্রশ্ন করলে কিভাবে জবাব দেবো বলোতো?
ইশিকা এবার বেশ লজ্জা পেলো।

ঠিক আছে বলে ফারহান কে নিয়ে ভেতরে আসলো।
“ফারহান ভেতরে এসে আরাম করে বসলো।”
ফারহান ঠোঁট দু’টো চেপে রেখে কিছুক্ষণ দম নিয়ে ইশিকা কে বলতে লাগলো

এতোদিন আমি একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজে আটকে পড়েছিলাম, যাঁর জন্য তোমার সাথে দেখা হয়নি। তাছাড়া তোমাকে বলে যেতেও ভুলে গেছি।

সরি বলে ফারহান কানে ধরলো।
“টিয়া তো রীতিমত হা হয়ে ফারহানের কথা শুনছে, আর পাগল হচ্ছে।এমনভাবেই তাকিয়ে আছে, যেন এমন সুন্দর মানুষ জীবনে আর দেখেনি।”

ফারহানের কান্ডে ইশিকা হাহাহা করে হেঁসে ফেললো।
ইশিকা মনে মনে বললো, আচ্ছা ফারহান ছেলেটা এতো পাগল কেন।
সামান্য কয়েকদিনের পরিচয়ে উনি কতটা
আন্তরিক, উনার কান্ড দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

“ফারহান ইশিকার দিকে ধীর গতিতে এগোতে লাগলো। এগিয়ে এসেও থেমে গেল।

ফারহান ইশিকা কে দু~ চোখ দিয়ে দেখছে, একদম গভীরভাবে। যে চোখের চাহনিতে আছে অব্যাক্ত কথা।”

“ফারহানের এমন তাকানোতে ইশিকার বেশ অস্বস্তি লাগছে।
ফারহানের এমন তাকানোর অর্থ ইশিকা কিছুই বুঝতে পারছেনা।”
ফারহান নিজ থেকেই বললো, এতো সকাল সকাল আসাতে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছো?

আসলে তোমার আর তোমার ফ্যামিলির সাথে একটু ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিলো।

“ইশিকা মনে মনে ভাবছে, ফারহান সাহেবের কি এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা, যা বলার জন্য সকাল সকাল আসতে হলো।”
ইতিমধ্যে ফ্যামিলির সবাই এসে হাজির।
সবাই ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।

ফারহান এতোটাই সুন্দর, যে কেউ দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে।
ইশিকার চাঁচি এসে নিজ থেকেই ফারহানের সাথে কথা বলা শুরু করলো। এমন কথা শুরু করলো, কথা যেন থামছেই না।
“ফারহানও খুব মিশুক ভাবে কথা বলে যাচ্ছে, যেন সবাইকে খুব করে চেনে।”

সবাই একসাথে নাস্তা করে নিল।
খুব মনোযোগে কথা বলছে সবার সাথে।

কিছু বলতে গিয়েও যেনো বলতে পারছে না সবাইকে।
“ইশিকা একটু পর পর ফারহানের দিকে তাকাচ্ছে। ফারহান কি বলতে এসেছে, তা নিয়ে বড্ড ভাবাচ্ছে ইশিকার মনকে।”

ফারহান মুখ ফুটে বলেই দিলো, ইশিকা কে বিয়ে করতে চায়,
“ফারহানের কথা শুনে ইশিকা যেনো স্তব্ধ, চারপাশের সকল কোলাহল বন্ধ হয়ে যেনো সব নিরবতায় ছেয়ে গেছে।
ইশিকা মুখে টুঁশব্দটি করবারও ভাষা নেই।

ফারহান যে এমন একটা প্রস্তাব দিবে ইশিকা কখনো ভাবেইনি,
ইশিকার ফ্যামিলি ফারহানের কথায় রাজী হলো, পুরোপুরি কথা দিতে পারেনি, তাঁর কারণ হলো, ইশিকার ফ্যামিলি ফারহানের বিষয়ে কিছুই জানে না।

তাই তাঁরা খুঁজ নিয়ে বাকিটা পরে ফাইনাল জানাবে বলে দিয়েছে।

“সবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে, ফারহান ইশিকা কে নিয়ে একাকি কিছু কথা বলার জন্য, বাগানে গেলো।

ফারহান অনেক ইতস্তত বোধ করে বলতে লাগলো, ইশিকা আমি কিভাবে শুরু করবো জানিনা, তবে এটুকু বলবো, তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছি, ঐদিনই নিজের মনে গেঁথে নিয়েছি।

জানি না পাবো কিনা, তবুও সর্বক্ষণ তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি।
কি করবো বলো, আমার দু’চোখে যে শুধু তোমারি স্বপ্ন।
ফারহানের কথাগুলো ইশিকা মন দিয়ে শুনছে, তবুও কোথায় যেন একটু কমতি আছে বুঝতে পারছেনা।

ইশিকা চোখ তুলে ফারহানের দিকে তাকালো, গোল্ডেন কালারের একটা পাঞ্জাবি পড়েছে ফারহান, সিল্কি চুলগুলো বাতাসে বেশ উড়ুউড়ু করছে, মায়াবী চোখ, যে কোন মেয়ের কোমল হৃদয়কে স্পর্শ করবার জন্য যথেষ্ট।

ইশিকার কোন রিলেশন নেই, এমনকি সেইভাবে কাউকে ভালোও লাগেনি, শুধু একজনকে ভালো লেগেছিল, তবে তাঁকে পাওয়ারও কোন নিশ্চয়তা নেই, তাঁর কারণ হলো, সে কী আদৌও আছে, তাও জানা নেই ইশিকার।

ফারহান ইশিকা কে আবারও জিজ্ঞেস করলো, তোমার ফ্যামিলি যদি রাজি থাকে, তাহলে তোমার কোন আপত্তি নেই তো?
“ইশিকা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে, নিজের বিবেকের সাথে পরামর্শ করে জবাব দিলো, না, আমার কোনো আপত্তি নেই।”
ইশিকার মুখ থেকে কথাটা শুনে ফারহানের দুচোখ খুশিতে ভরে গেলো।

ইশিকার দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ জানালো।
ফারহান ইশিকার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে, খুশিমনে চলে গেলো।

ইশিকাকে এ ব্যাপারটা বড্ড ভাবাচ্ছে, কেন ভাবাচ্ছে তা জানা নেই ইশিকার।]

এভাবে প্রায় দুদিন কেটে গেলো।
ইশিকার ফ্যামিলি ফারহানের সম্পর্কে পুরোপুরি খোঁজ নিয়ে জেনেছে।

তাঁরা বেশ খুশি, একপায়ে খাঁড়া, ইশিকা কে বিয়ে দেওয়ার জন্য।
এমন ছেলে তাঁরা কখনো হাত ছাড়া করতে চায় না।
“ফ্যামিলি যেহেতু রাজি, এদিকে ইশিকাও রাজি।

জীবনে কিছু ছেলেকে ইশিকার কাছে ভালো লেগেছে, যাকে বলে চোখের ভালো লাগা। শুধু একজন কে~ ই ভালো লেগেছিল মন থেকে সেই অদৃশ্য অবয়ব কে, কিন্তু সেই যে একবার কথা হলো আর দেখা পেলো না তাঁর।

তবুও যেন খুব খুব করে অনুভব করে যাচ্ছে তাঁকে।
যাকে বলে
“মনে মনে প্রেম
চোখে চোখে কথা
হৃদয়ে হৃদয়ের স্পর্শ।”

তাই ইশিকা আর নিষেধ করেনি, তাছাড়া ফারহান তো ভালো ছেলেই।
ইশিকার সাথে যতোদিন দেখা হয়েছিল, ইশিকা তাই বুঝেছে।
ফারহানের ফ্যামিলির সাথে কথা বলে ইশিকার ফ্যামিলি বিয়ের ডেট ফিক্সড করে ফেলেছে।

আজ দু’দিন পর হসপিটালে এসেছে ইশিকা।

অণু তো সেই কতোক্ষণ ধরে ঘ্যানঘ্যান করছে, এই ইশিকা কিরে তুই এতো নিরব কেন বলতো।সেই কতোক্ষণ ধরে মুখটা পেঁচার মতো বানিয়ে রেখেছিস। আচ্ছা বলনা কি হয়েছে তোর?
এ~ ই দু’দিন আসিসনি কেন?

~ ইশিকা অণুর কথায় কোন কর্ণপাত করেনি, কাজ করেই যাচ্ছে।
~ অণু আবার বলতে শুরু করলো, আচ্ছা তুই এমন ভাব নিচ্ছিস যেন কেউ প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে।

“অণুর এ কথায় ইশিকা ড্যাবড্যাব করে তাকালো।
প্রেম নয়, বিয়ে।

ইশিকার কথায় অণু যেন আকাশ থেকে পরলো। অবাক চোখে তাকালো।

“অণুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশিকা ফারহানের পুরো বিষয়টি খুলে বললো, একদম প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত।
অণু কি বলবে বুঝতে পারছেনা।

ইশিকার কাঁধে হাত রেখে বললো, আচ্ছা তুই কি ওকে পছন্দ করিসনা, না~ কি জোর করে বিয়ে করছিস? শুন জোর করে কোন কিছুই ভালো হয় না। সবকিছুতে জোর চললেও মনের সাথে কখনো জোর করিসনা।

~ ইশিকা লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, বলতে লাগলো, আসলে ব্যাপারটা তা নয়।

তুই নিজেও জানিস কাউকেই আমার পছন্দ নেই, তাছাড়া, ফারহান ছেলেটাও বেশ ভালো, আমার ফ্যামিলিও ওকে পছন্দ করেছে।
তাই আমিও আর না করিনি।

তবে কেন জানি আমার কিছুই ভালো লাগছে না।

আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কেউ একজন আছে, যাকে আমি সর্বক্ষণ মিস করি, যাকে অনুভব করতে পারি, কিন্তু, তাকে দেখতে পাইনা।যাঁর ঘ্রাণে প্রতিনিয়ত মাতোয়ারা হয়ে থাকি, তবুও বুঝতে পারি না।

ইশিকার আজ বলা যেন শেষই হচ্ছে না।একদমে কথাগুলো বলে শেষ করলো।

অণু দুহাত দিয়ে ইশিকার হাত ধরে বললো, এতো চিন্তা করিসনা, যদি কেউ থেকেও থাকে তোর বিশ্বাস কখনো নষ্ট হবে না। সে নিশ্চয়ই আসবে, তাঁর আসাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। মিলিয়ে নিস তখন আমার বলা কথাগুলো।

“অণুর কথাগুলো ইশিকার হৃদয়ে গিয়ে লাগছে।
মনপ্রাণ যেনো উচ্ছ্বাসে হত~ বিহবল।
যাকে ধরে রাখতে পারছে না, তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইশিকা।
শেষ পর্যন্ত আর পারেনি, অণুকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে ফেললো।

“অণু ইশিকার কষ্টটা বুঝবার চেষ্টা করছে, ইশিকা যে, তাঁর প্রাণের প্রিয় বান্ধবী।
কিছু কিছু বান্ধবী আছে আত্মার অস্তিত্ব, যাকে সব কিছু বলা যায়, তেমনি ইশিকাও অণুর স্পন্দন।

“কারো ডাকে ইশিকার কান্না থামলো।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো, পিয়ন ডাকছে।
পিয়নের বলা কথায় ইশিকা ভয় পেয়ে গেলো।

পর্ব ১৮

“পিয়নের কথায় দরদরিয়ে ঘামতে লাগলো ইশিকা।”
ইশিকা বুঝতে পারছেনা, হসপিটালে আসতে না আসতে কেন ডেকেছে?

ইশিকা পিয়ন কে চোখ দিয়ে ইশারা করলো চলে যেতে।
“অণুকে পরে কথা হবে বলে, ইশিকা শুভ্রের রুমে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো।

যাওয়ার আগে চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে নিলো।

এবার আর ভুল করেনি ইশিকা, দরজা নক করেই ভেতরে এসেছে।
“এসির ফারেনহাইট খুব বাড়ানো, রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে ইশিকার গায়ের লোম কাঁটা দিয়ে উঠলো।
ইশিকা তাকিয়ে দেখলো, শুভ্র চেয়ারে হেলান দিয়ে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে।

যেভাবে বসা ছিলো, ঐরকম থেকেই শুভ্র জিজ্ঞেস করলো, এই দু’দিন আসোনি কেন?

“শুভ্রের কথা শুনে ইশিকার কথার স্বর যেনো বের হতে চাইছে না।
ইশিকা শীতল কন্ঠে আমতাআমতা করে জবাব দিলো, আসলে বাসায় একটু আঁটকে পরেছিলাম।

“শুভ্র শান্ত কন্ঠে বলতে লাগলো, কেন তুমি কি বিয়ের পাত্রী যে জোর করে আঁটকে রেখেছে। তুমি কি ছোট খুকি যে, যা বলবে তাতেই রাজি হয়ে যাবে।

শুভ্র স্যার কি সব জেনে গেলো, কিন্তু কিভাবে, ইশিকার মাথায় চিন্তার উদয় হলো।
শুভ্র বলতে লাগলো, অবাক হচ্ছ নিশ্চয়ই, এতোসব কিভাবে জানলাম?

শুভ্রের কথায় ইশিকার বেশ রাগ লাগছে, শুভ্র স্যার এমন কে যে, উনি আমার সাথে এভাবে কথা বলবে।

আমি কি স্যারের খাই না পড়ি, মনে মনে বেশ কষ্ট পেলো ইশিকা।
“ইশিকার কোন সাড়া না পেয়ে, শুভ্র মুখ ঘুরালো।

শুভ্রের এমন ভয়ংকর চেহারা দেখে ইশিকার বক্ষ ভয়ে মূর্ছা গেলো।
শুভ্রের এমন রূপ দেখে ইশিকার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো।

শার্টের হাতাগুলো উপরে ভাঁজ করা, চুলগুলো বেশ উসকো খুসকো শুভ্র’র, চেহারাটায় আগের মতো মায়াবী ভাবটা নেই, চোখ গুলো এমন লাল হয়ে আছে, যে কাউকেই যেন ঝলসে দিবে।
ইশিকা এক ঢোক গিলে নিরবে দাঁড়িয়ে রইলো।

শুভ্র এগিয়ে এসে ইশিকার হাত চেপে ধরলো।
এতোটাই জোরে চেপে ধরেছে, ব্যাথায় ইশিকা আহ করে উঠলো।
কিন্তু শুভ্র’র ছাড়বার কোন নাম নেই।

ইশিকা চোখ তুলে তাকিয়ে শুভ্রকে দেখছে।
চেহারায় বেশ রাগ উন্মোচিত হয়েছে শুভ্র’র।
কিছুই বুঝতে পারছেনা ইশিকা, শুভ্র এতটা রাগান্বিত কেন? ইশিকা ভাবছে
রাগের পেছনে কি কারণ থাকতে পারে?

ব্যাথায় ইশিকার হাত জ্বলে যাচ্ছে, ইশিকা আর সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলো,
প্লিজ স্যার ছাড়ুন, আমার লাগছে।

শুভ্র নেশা ভরা চাহনিতে ইশিকার দিকে তাকিয়ে বললো
“কেন লাগবে তোমার, আমারও লেগেছে, ঠিক এখানে, বুকের মাঝখান টায় দেখো তাকিয়ে। যখন শুনেছি, তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এতোক্ষণ তো বেশ উচ্ছ্বাস মনে আওড়াচ্ছিলে তোমার বিয়ে অণুর কাছে।
তা তোমার হবু স্বামী কি করে?

রাস্তায় রাস্তায় ফেরীগিরি করে না~ কি, না দিন রাত এক করে নাইট ক্লাবে কাটায়।
কতো মেয়ের সাথে যে শুয়েছে, তাঁর হিসেব কি তুমি রেখেছো?
ইশিকা আর সহ্য করতে পারেনি কথাগুলো, চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
ছিহঃ

আপনি এতটা জগন্য তাতো জানতাম না।
শুভ্র নেশা ভরা চাহনিতে ইশিকা কে বলতে লাগলো, কেন আগে জানলে কি মাথায় উঠে বসে থাকতে?
“শুভ্রের কথাগুলো ইশিকার গায়ে গিয়ে লাগছে, বুকে কাঁটার মতো বিঁধছে।

স্যারকে ইশিকা একটু রাগান্বিত জানতো, তাই বলে এক নাম্বার লুচু উনি ভাবতে পারছেনা।

শুভ্র কাছে আরো কাছে, এগিয়ে এসে থেমে গেল, ইশিকার হাত কোমলভাবে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, একে অপরের নিশ্বাসে মন মন প্রাণ উচ্ছ্বসিত হচ্ছে, শুভ্রের নিশ্বাস ইশিকার বুকে এসে আঁটকে যাচ্ছে।

শুভ্র আদরমাখা কন্ঠে বলতে লাগলো, প্লিজ ইশিকা একটা কথা রাখবে আমার।
“ইশিকা অবাক চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, জ্বি বলুন।
তুমি আমাকে শুভ্র বলেই ডাকবে।

যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছ প্লিজ বিয়েটা করোনা।
ইশিকা হাত ঝেড়ে শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরালো, শুভ্রের চোখে কঠিনভাবে তাকিয়ে বলতে লাগলো, কেন? আপনার
প্রবলেম কোথায়?

আমি তো কাউকে পছন্দও করিনা, তাহলে কেন নিষেধ করবো?
“আমার জন্য।”শুভ্র শীতল কন্ঠে বলে উঠলো,
~ ইশিকা হা হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, মানে?
~ মানে টা খুবি সহজ, তুমি বিয়েটা বন্ধ করবে আর আমি তোমাকে বিয়ে করবো।

আমি তোমাকে চাই, চাই, এবার তা যেভাবেই হোক।
“ইশিকা বেশ রাগান্বিত হয়ে বলতে লাগলো, না আমি বিয়ে ক্যানসেল করছি, না আপনাকে বিয়ে করছি।

আর যতটুকু আশা করেছেন তা ভুলে যান।
আপনার জন্য মেয়ের অভাব হবেনা।
আমার চেয়েও ভালো মেয়ে পাবেন।

শুভ্র হাতদুটো আলতো করে ইশিকার গালে রাখলো।
রেগে যেওনা রাগলেনা নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারি না, তুমি হয়তো তা জানো না।

তুমি জানো না তুমি আমার এই হৃদয়ের কোথায় থাকো? সিন্ধু পেরিয়ে হলেও তোমাকে আমি ছিনিয়ে নিব।

চোখ বন্ধ করলেই তোমার স্পর্শ পাই, আর চোখ মেলে তোমাকেই পেতে চাই।
শুভ্র আপনি যতটুকু বলেছেন, তাঁর অর্থ কি তা কি একটি বার ভেবে দেখেছেন।
হুট করেই কি কাউকে ভালোবাসা যায়?

“ইশিকার কথায় শুভ্র বেশ রেগে গেলো, রেগে গিয়ে গ্লাসের টেবিলটার সাথে, সজোরে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে থাপ্পড় দিলো, সাথে সাথে, হাত কেটে রক্ত পরতে লাগলো।

শুভ্রের হাত থেকে রক্ত পরতে দেখে ইশিকা হাত ধরতে লাগলো।
শুভ্র অভিমানে দূরে সরে দাঁড়ালো। চোখ দিয়ে ইশারা করলো শুভ্রকে স্পর্শ না করতে।

ইশিকা কিছু একটা বলতে যাবে শুভ্র
রাগান্বিত হয়ে ইশিকা কে রুম থেকে বের করে দিলো।

ইশিকা কাঁদতে কাঁদতে শুভ্রের ক্যাবিন থেকে বের হয়ে গেল।
দৌঁড়ে নিজের ক্যাবিনে চলে আসলো।
ইশিকা ক্যাবিনে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
চেয়ারটায় মাথাটা হেলিয়ে কাঁদতে লাগলো।

মনে মনে একটাই ভাবনা শুভ্র স্যার কিভাবে পারলো এতটা অপমান করতে।

এতো অপমান ইশিকা আর কারো কাছ থেকে পায়নি।
স্যারের সাথে ইশিকার পরিচয়টায় বা কয়দিনের, এ কয়েকদিনে স্যার কিভাবে ভালোবাসতে পারে, ইশিকার মাথায় এসব চিন্তা খেলে যাচ্ছে।
শুভ্র যখন ইশিকার হাতটা খুব তীক্ষ্ণভাবে ধরেছিল, ইশিকার তখন মনে হয়েছিল, স্যারের কোন আক্রোশ আছে, স্যার নিশ্চয় আমার প্রতি কোন কিছু নিয়ে ক্ষোভ, নয়তো স্যার এমনটা করতেই পারতনা।

ইশিকা ভাবছে, শুভ্রের মায়া ভরা চাহনিটা কিছু একটা বলতে চেয়েছে, হয়তো তা অজানা ইশিকার।
ইশিকা আজ বেশি একটা কাজ করেনি।

ইশিকা হসপিটাল থেকে একা~ একা বের হয়ে বাসায় চলে গেলো।
বাসায় এসে অণু কে ইনফর্ম করলো।
অণু জিজ্ঞেস করলেও ইশিকা কিছুই বললোনা।

ইশিকা বাসায় এসে কারো সাথে টুঁশব্দও করেনি।
মন খারাপ করে শুয়ে রইলো।
মাথায় হাজারো চিন্তা গিজগিজ করছে ইশিকার।
না পারছে বলতে, না পারছে সহ্য করতে।

“টিয়া এসে জানালো, বিয়ের সকল কিছু ঠিক হয়ে গেছে।
ইশিকা এ ব্যাপারে কোন কথা বলেনি।
টিয়া কিছুক্ষণ বকবক করে চলে গেলো।
“বিয়ে নিয়ে ইশিকার কোন মাথা ব্যাথা নেই।”
শুভ্রের বিষয়টা ইশিকা কে বেশ করেই ভাবাচ্ছে।

নিঝুম রাত, ইশিকা গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়ালো।মৃদুমন্দ বাতাসে মনটা কেমন কেমন যাতনা পূর্ণ, চারদিকে তাকিয়ে দেখলো, ঘুটঘুটে অন্ধকার।
কোথাও কোন আলোর ঝলকানি নেই।

শুভ্র যে এমনটা করবে ইশিকা কখনো চিন্তাও করেনি।
ইশিকা কে শুভ্র ভালোবাসে সেটা প্রকাশ করতে শুভ্র খুব বেশি দেরি করে ফেলেছে।

ইশিকা মনে মনে বলছে, স্যার যদি আর কয়েকটা দিন আগেও জানাতো তবুও ভাবতো ইশিকা, কিন্তু এখন যে আর কিছুই ভাববার অবকাশ নেই।

রাত্রিটা কোন রকম নির্ঘুমে কাটিয়ে দিলো ইশিকা।
দু চোখ বুঁজে ছিল, তবুও ঘুম আসেনি।

আর যা~ ই হোক ঘুমকে কখনো জোর করে আনা যায় না।
ইশিকা সকালে নাস্তা করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রেডি হয়ে গেলো।
দরজা খুলে যাকে দেখলো, ভয়ে ইশিকার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল।

পর্ব ১৯

~ ইশিকার বুক ধুকপুক করছে, শুভ্রকে দেখে। গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র। শুভ্রকে এতো সকাল দেখতে পেয়ে ইশিকা ভীষণ অবাক। ইশিকার মাথায় নানানরকম প্রশ্ন এসে ভিড় করছে।
ধূসর কালারের পাঞ্জাবিতে শুভ্রর চেহারায়
যেনো ধূসরতা খেলে যাচ্ছে।

বাতাসে চুল গুলো উড়ে এসে শুভ্রের কপাল ছুঁইছুঁই করছে, শুভ্র’র দু’চোখে আজ যেন অজানা এক মায়া এসে খেলে যাচ্ছে, রক্তিম ঠোঁটগুলো কে গোলাপের পাপড়ির ন্যায় মনে হচ্ছে।

ইশিকা বার~ বার চোখ সংযত করতে গিয়েও যেন পারছে না।
কি যেন এক মায়া এসে গেঁথে যাচ্ছে, শরীরে যেন এক অস্থির মায়া খেলে যাচ্ছে ইশিকার।

শরীরে আলাদা অনূভুতি যেন কড়া নাড়ছে।
ইশিকার মস্তিষ্ক বার~ বার বিবেকের সাথে যুদ্ধ করে কিছু একটা জানান দিচ্ছে, কিন্তু ইশিকা এই অদম্য হৃদয়কে যেন বেঁধে রাখতে পারছে না, কিছুতেই না।

“শুভ্র ইশিকা কে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।”
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে শুভ্রের সামনে দাঁড়ালো ইশিকা।
কথা বলতে গিয়েও যেন বলতে পারছে না। গলায় যেন আঁটকে যাচ্ছে।

বেশ সাহস নিয়ে বলেই ফেললো, স্যার আপনি এখানে, তা~ ও এতো সকাল সকাল?
“শুভ্র মুগ্ধ নয়নে ইশিকা কে দেখছে, ইশিকা কে যতটা দেখছে, ততোটাই যেনো কম হচ্ছে।”

শুভ্রের এমন নিরবতা দেখে, ইশিকা গলাটা ঝেড়ে আবার জিজ্ঞেস করলো, স্যার এদিকে কি আপনার কোন কাজ ছিলো?
ইশিকা যদিও সিউর শুভ্রের এদিকে কোন কাজ নেই তবুও পরিস্থিতি সামলাতে কথাটুকু জিজ্ঞেস করা।

শুভ্র তবুও কোন প্রতিউত্তর করলোনা।
ইশিকা ভেবে পাচ্ছেনা, শুভ্র কেন জবাব দিচ্ছে না, শুভ্র সেই এক ধ্যানেই ইশিকার দিকে তাকিয়ে আছে।
মুখে কোন সাড়া দিচ্ছে না।
“ইশিকার এবার মনে পরলো, স্যার তো ঐদিন নাম ধরে ডাকতে বলেছে,
ইশ

কি ভুলটাই না করলাম।
স্যার হয়তো অনেক রেগে গেছেন।

ইশিকা ভেবেই পাচ্ছে না, শুভ্র বললে কি হবে, স্যারের কি পাখা গজিয়ে যাবে, না~ কি উনি শ্রেষ্ঠ মানব হয়ে যাবে, শুভ্র বলাতে।
বহু চড়াই~ উতরাই পার করে, ইশিকা শুভ্র বলে ডেকে উঠলো।
শুভ্র আপনি কিছু বলছেন না কেন?

“শুভ্র এবার মুখে মলিন হাসি ফুটিয়ে ইশিকার হাত ধরলো। শুভ্রের ছোঁয়ায় ইশিকার মনে যেন অজানা এক শান্তি এসে দোলা দিলো।”

এক ঠোঁট দিয়ে আরেক ঠোঁট আলতো করে ভিজিয়ে শুভ্র বলতে লাগলো, হুম এদিকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ ছিলো। ভাবছি
এখন থেকে ইম্পর্ট্যান্ট কাজগুলো আর ফেলে রাখবো না, সময়েরটা সময়মতো করে নেব।

“ইশিকা মনে মনে হাসলো, স্যার কি এতোটাই বোকা যে, আমার জন্য আসবে।

আমিও না দিন দিন বুদ্দু হয়ে যাচ্ছি। কি~ না কি ভেবেছি।
ইশিকা শুভ্রের হাত থেকে হাতটা সরিয়ে গুটিয়ে নিলো।
নিজেকে রিলাক্স মুডে এনে শুভ্রকে বললো, স্যার হসপিটালেই তো যাবেন, চলেন তাহলে একসাথেই যা~ ই।”

শুভ্রও ইশিকার কথায় সম্মতি জানিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
ইশিকা আজ আর কোন ভুল করেনি, সিট বেল্ট ঠিক করে বেঁধে নিলো।

“শুভ্র ইশিকার দিকে তাকিয়ে, মুচকি হাসি হাসলো।
এ হাসিতে যে ইশিকার জন্য কি অপেক্ষা করছে, ইশিকার তা জানা নেই।”

ইশিকাও পুরনো সব ভুলে মিষ্টি করে হাসলো।
ইশিকার শরীরটা আজ কেমন যেন ক্লান্ত লাগছে। ইশিকা গাড়ির সিটে মাথাটা হেলিয়ে দিলো।

শুভ্র আড়চোখে একটু পর পর ইশিকার দিকে তাকাচ্ছে।
গাড়িতে হেলান দিতে দেখে শুভ্র জিজ্ঞেস করলো, কোন প্রবলেম?
তুমি ঠিক আছে তো ইশিকা?

“ইশিকা মুখে কথা না বলে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক বুঝালো।
শুভ্র ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো।

ইশিকায় একমাত্র জানে, কেমন যেনো খারাপ লাগছে।
ফারহান কে বিয়ে করবে, এ নিয়ে ইশিকা বেশ দ্বিধান্বিত।
ইশিকার কোন কিছুই ভাবতে ভালো লাগে না। অদৃশ্য সেই অবয়বটার জন্য আজও অপেক্ষায় আছে ইশিকার মন।

অদৃশ্য অবয়বটা এখনো যদি এসে বলে, ইশিকা তুমি ফিরে এসো, ইশিকা কোন দিক বিচার না করেই ফিরবে হয়তো।

কিন্তু শুভ্র’র কথায় ইশিকা কেন যেন রাজি হতে পারছে না।
হয়তো বিবেক বলে কিছু একটা বাঁধা দিচ্ছে।
হয়তো এমনটাও হতে পারে, অদৃশ্য অবয়বটা আসলেও ফিরিয়ে দিতে হবে।

ফিরিয়ে দেওয়ার কথা মনে করে দু~ চোখ অশ্রু জলে ভিজে আসলো ইশিকার।
ইশিকা চোখ বন্ধ করে ফেললো।
“কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি থেমে গেল।

ইশিকা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো, অজানা, অচেনা এক জায়গা। ভয়ে আঁতকে উঠল ইশিকা। স্যার কোথায় নিয়ে আসলো ইশিকা কে।
নিভুনিভু চোখে চারদিকে তাকিয়ে বুঝবার চেষ্টা করলো।

চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখছে কোন সাইনবোর্ড আছে কি~ না?
ইশিকা যা দেখলো, কলিজা পর্যন্ত কেঁপে উঠল।
সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা,
“কাজি অফিস”

ড্রাইভিং সিটে তাকিয়ে দেখলো শুভ্র নেই।
ইশিকা এবার আরো বেশি চিন্তিত হয়ে গেল। স্যার কেন এখানে নিয়ে আসলো?

শরীরটা যেন বেদম খারাপ লাগছে ইশিকার।
ইশিকা আর চোখ খুলে থাকতে পারলোনা টলতে টলতে পরে গেল।


“ঘন্টা খানিক পর অস্থির মনে নিভু নিভু চোখে তাকালো ইশিকা।
শরীরটা এখনো খারাপ লাগছে।

তবুও শক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো ইশিকা।
চোখ ঘুরিয়ে দেখলো, দু’জন মেয়ে ম্যাম ম্যাম বলে কি যেন বলে যাচ্ছে।

ইশিকা গভীর মনোযোগ দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে।
মাথার মগজে কি যেন এসে ধাক্কা দিচ্ছে।
ইশিকা এবার বুঝলো মেয়েগুলো টিকলি পড়বার জন্য একনাগাড়ে বলেই যাচ্ছে।

কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছেনা, টিকলি পড়তে বলবে কেন?
ইশিকা নিজের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো, ইশিকার পড়নে গোন্ডেন কালারের, শিপন মারবেল জর্জেটের লেহেঙ্গা, দু~ হাত ভর্তি চুড়ি।
ইশিকা ভেবেছে, হয়তো ভুল দেখছে,
ইশিকা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

নিজেকে নিজে দেখে ইশিকার চোখ চড়কগাছ। লেহেঙ্গা পরিহিত, মাথায় ঘোমটা দেওয়া, সম্পূর্ণ বউ সাঁজে সাজিয়েছে ইশিকা কে।ইশিকা নিজেকে নিজে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো, সাঁজে কোথাও কোন কমতি রাখেনি।

মেয়েগুলো এখনো ম্যাম ম্যাম বলেই যাচ্ছে,
ইশিকা মুখ ফিরিয়ে দু’জনের দিকে তাকালো।

ম্যাম প্লিজ টিকলি টাই বাকি, স্যার যদি এসে দেখে আপনার সাঁজে কোন খুঁত আছে, তাহলে আমরা আর আমাদের বাড়তি পেমেন্ট পাবনা।
স্যার বার~ বার বলে গেছেন, আপনাকে যেন উনার মনের মতো করে সাজিয়ে দিই।
স্যার শব্দটা শুনে ইশিকার বুকটা কেঁপে উঠল।

“মেয়েগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে ইশিকা বুঝতে পারলো, মেয়েগুলো খুব অসহায় হয়েই কথাগুলো বলছে।”
তাই ইশিকাও সাজে কোন খুঁত রাখেনি, পরে যা করার করবে, টিকলি টা পড়লে তো আর খসে যাবে না শরীর।

তাই ইশিকা কোন রকম ঝামেলা না করেই টিকলিটা পরে নিলো।
মেয়েগুলো সাঁজ কমপ্লিট করে চলে গেলো।

একা সাজঘরে আয়নার সামনে বসে আছে ইশিকা।
বসে বসে ভাবছে, এমন করে সাজানোর অর্থ কি?
কিছুই যেন মাথায় আসছে না ইশিকার।
এদিকে কেউ একজন রুমে প্রবেশ করলো।

দরজার খটাখট শব্দে, ইশিকার বুক টা কেঁপে উঠল।
ইশিকা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, এ যে আর কেউ নয়, স্বয়ং শুভ্র স্যার।

মুহুর্তেই ইশিকার কাছে দুনিয়াটা উল্টে গেল।
চোখে যেন ঝাপসা দেখছে সব, পৃথিবীটা যেনো এখুনি বিলীন হওয়ার অপেক্ষা।

ইশিকা আর কিছু ভাবতে না পেরে দৌড়ে, শুভ্র’র পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে হু হু করে কেঁদে ফেললো।
কেন স্যার কেন করলেন এমনটা, আমাকে কেন নিয়ে আসলেন এখানে।

আপনার মনে যদি এতোটাই নোংরামি থাকতো, তাহলে আগে কেন বললেন না?

সমাজে কি করে মুখ দেখাবো বলেন?
শুভ্রের মুখে কোন কথা নেই।
নিরব হয়ে সবকিছু সহ্য করে যাচ্ছে।

“ইশিকার কান্নার বেগ যেন আরো বেড়ে গেলো। শুভ্র ইশিকার চোখের পানি মুছে দিতে গেলে ইশিকা শুভ্র কে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো, ডোন্ট টাচ মি,
আপনার ঐ নোংরা হাতে আমাকে স্পর্শ করবেন না।

কিভাবে পারলেন আমার বিয়ে ঠিক হওয়া সত্বেও আমাকে একা রুমে নিয়ে আসতে।

আপনি জানেন না বিয়ের আগে সকল সম্পর্ক হারাম?
তাহলে কেন করলেন?

শুভ্র নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি।
ইশিকার হাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
ব্যাথায় ইশিকার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরলো।
কি বলতে চাইছিস তুই, একা রুম মানে?

আমি এই এখন আসলাম, দু’জন মেয়ে জাস্ট তোকে সাজিয়ে গেছে।
আর তুই যা না তা~ ই বলে অপমান করে যাচ্ছিস।

তোকে আজ আমি দেখে নিব বলে, শুভ্র যা বললো, ইশিকা কাঁদতে কাঁদতে, ফ্লোরে গড়িয়ে পরলো।

পর্ব ২০ (অন্তিম)

~ ইশিকা শুভ্রের বাবার কথা ভাবছে,
শুভ্রের বাবা হচ্ছে ইশিকার স্যার। ইশিকা মনে মনে ভাবছে, স্যারের বাবাও জানতেন ব্যাপারটা, উনার সম্মতি ছিলো, পুরো ব্যাপারটায়?
ইশিকা তখুনি বুঝতে পেরেছে, যখন দেখেছে, শুভ্রের বাবা শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে ওয়েলকাম জানালো।

ইশিকা মনে মনে দু’জনকে ধিক্কার জানালো। কিন্তু কেন করলো, দু’জন এমনটা ইশিকা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
“এদিকে ইশিকা ভেবেই পাচ্ছেনা, শুভ্রের দীদা ইশিকা কে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো কেন?

ইশিকার কাছে সব যেন এক অদ্ভুত রহস্য মনে হচ্ছে।
শুভ্র দীদা কে জড়িয়ে ধরে আদুরে স্বরে বলতে লাগলো, কি দীদা শুধু নাতবউ কে আদর করলে হবে?
আমাকে কে করবে?

“হতচ্ছাড়া ছাড় আমাকে, আমার মিষ্টি নাতবউটার জন্য কতোদিন অপেক্ষা করেছিলাম জানিস?

তোকে কত করে বলেছিলাম, তারাতাড়ি বিয়ে কর, বিয়ে কর, কিন্তু তুই শুনেছিস আমার কোন কথা?

আজ থেকে তুই বাদ, আমার সব আদর এই মিষ্টি নাত বউয়ের জন্য।”

“ওহ্হ
শুভ্র মুখটা ভারী করে জবাব দিলো, শোধ নিচ্ছ তাহলে?
ঠিক আছে রাগ করলাম।

ইশিকার দিকে তাকিয়ে শুভ্র অভিমানী স্বরে বললো, কারো ভালোবাসা দরকার নেই আমার।”

দীদা শুভ্রের কান ধরে বললো, ওরে আমার আদরের বিড়াল ছানারে, যখন মিষ্টি বউয়ের আদর সোহাগ পাবে, তখনতো এই বুড়িকে ভুলে যাবে?

শুভ্র ইশিকার দিকে তাকিয়ে, দুষ্টু হাসি হেসে দীদা কে জড়িয়ে ধরে, বলতে লাগলো, ওরে আমার বুড়ী ডার্লিংরে, আর কারো আদর পেলেও তোমাকে ভুলবো না, এবার তোমার সতীন রাগ করুক আর না করুক।

“দীদা শুভ্রকে হাত দিয়ে মাথায়, আশীর্বাদ করলো, বেঁচে থাক দুজন, হাজার বছর, দু’জনের ভালোবাসাগুলো পূর্ণতা পাক।”
ইশিকা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দু’জনের দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা গুলো দেখছে, আর নিজের নানীজির কথা মনে করছে।

নানীজির কথা মনে করে ইশিকার চোখ ভিজে উঠলো।
ইশিকার মন খারাপ দেখে, শুভ্র, দীদা কে ইশারা করে ইশিকা কে দেখালো।

দীদা ইশিকার দিকে তাকিয়ে, কিছু একটা বুঝতে পেরে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, মন খারাপ করিসনা নাতবউ, জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিন জিনিস উনিই একমাত্র নির্ধারণ করেন এতে কারো হাত নেই।
মা~ বাবার জন্য মন খারাপ করছিস?

মোটেও তা করবিনা। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
দীদা শুভ্রকে উপরে যেতে বললো।

“শুভ্র বাধ্য ছেলের মতো উপরে যেতে লাগলো।
যাওয়ার সময় শুভ্র শান্ত চাহনিতে ইশিকার দিকে এক নজর দেখে নিলো।

দীদা ইশিকার কাঁধে হাত রেখে বললো, নাতবউ আমার চোখের দিকে তাকা।
ইশিকা ভালো মেয়ের মতো তাকালো।
শুভ্রের দীদাকে ইশিকার খুব খুব ভালো লেগেছে।

উনি যে পুরনো দিনের মানুষ বুঝায় যায় না, উনার কথাগুলো ভীষণ ভালো লাগে ইশিকার কাছে, একদম নানীজির মতো।
দীদা যে বেশ বুদ্ধিসম্পন্ন দেখেই বুঝা যায়।
নানীজির কথা মনে পড়ে ইশিকা শুভ্রের দীদাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।

“শুভ্রের দীদা ইশিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো, চিন্তা করিসনা নাতবউ, আমার নাতিটা এতো টাও খারাপ নয়, দেখবি, তোকে এতো এতো আদর দিবে একদম মাথায় তুলে রাখবে। আদর পেয়ে দেখবি তুই সবকিছু ভুলে যাবি।

সারাদিন তুই বলতেই পাগল থাকবে দেখিস তুই। যেদিন তোকে হসপিটাল দেখেছে ঐদিন থেকেই তোর জন্য পাগল, তুই হয়তো বুঝতে পারিসনি, কিন্তু ও অনেক ভালো মানুষ দেখবি, ওকে ভালোনা বেসে থাকতেই পারবি না।

তখন তোর নিজেরই ইচ্ছে করবে কারণে অকারণে আমার নাতির বুকে ঝাপিয়ে পড়তে।

ইশিকা মনে মনে বিদ্রুপ হাসি হাসলো। দীদা আমি কখনোই পারবো না তোমার নাতিকে ভালোবাসতে, কারণ, ওকে যা দেখছো, পুরোটাই ওর খোলসের আবরণ, ও হচ্ছে ভদ্র ধারী মানুষ কিন্তু ভেতরে পুরো শয়তানি।

ও আমার কাছ থেকে আমার মা~ বাবা, ভাইয়ের খুশি কেড়ে নিয়েছে ওকেও আমি ভালো থাকতে দেবো না।

কথাগুলো ইশিকা মনে মনে বললেও প্রকাশ করেনি।
নিরবে দীদার কথাগুলো শুনলো, কিছুই বুঝতে দেয়নি দীদা কে।
“দীদা হঠাৎ বলে উঠলো, কিরে নাতবউ কথা বলছিস না কেন?
আমার নাতিটাকে কী মনে মনে গালি দিচ্ছিস?

ইশিকা ভয় পেয়ে ঢোক গিললো, কিছুতেই ভেবে পারছেনা, ইশিকার মনের কথা দীদা কিভাবে বুঝলো।

তাহলে কি ইশিকা জোরে বলে ফেললো, নাতো তাওতো না।
তাহলে?

“দীদা ইশিকা কে চিন্তিত দেখে বলে উঠলো, চিন্তা করতে হবে না, কিভাবে আমি তোর মনের কথা বুঝলাম তাই~ না?
আসলে শুভ্র দাদু ভাই যেভাবে তোকে বিয়ে করেছে, তা যে কারোর ই বুঝবার কথা।

তুই মনে মনে গালি দে ইচ্ছে মতো দে, ওর ঐটাই প্রাপ্য।
তবে শুন ভালোবাসার কাছে সবই হার মানে বুঝলি নাতবউ।
এখন আর এসব নিয়ে ভাবিসনা, কি ভারী কাপড় পরেছিস বলতো?
ঘেমে একদম একাকার চলতো আমার সাথে, তোকে মনের মতো সাজিয়ে দেবো।

যাতে তোর বর তোকে দেখলেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে।
যাতে পুরো রাতটা তুই একটু শান্তিতে কাটাতে পারিস।

দীদা ইশিকার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগলো।
“শুভ্রের দীদার কথা শুনে ইশিকা বেশ লজ্জা পেতে লাগলো, দীদার বয়স বাড়লেও এখনো রোমাঞ্চ কমেনি, দেখেই বুঝা যায়।
নিজের সৌন্দর্যকে এখনো ধরে রেখেছে।

দীদা ইশিকার হাত ধরে বললো, কি এতো ভাবছিস বলতো, চল আমার সাথে চল, কাপড়টা পাল্টে নিবি।

দীদা ইশিকা কে নিয়ে নিজের রুমে গেল, বেশ সাজানো, গুছানো, ইশিকা ভাবতেই পারছেনা, একজন বয়স্ক মহিলা এতোটা সৌখিন হয় কিভাবে, আল্লাহ জানে বাকি সদস্যগুলো কেমন?
দীদা ইশিকার হাতে লালের মধ্যে গোল্ডেন পাড়ের একটা শাড়ি তুলে দিলো।

ইশিকা শাড়িটা দেখেই বুঝে নিল, দীদা যেমন সৌখিন, তেমনি তাঁর পছন্দও।

ইশিকা শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
ইশিকা ওয়াশরুম থেকে বের হলে, দীদা ইশিকা কে নিজ হাতে সাজিয়ে দিলো।

দীদা একটা গহনার সেট ইশিকা কে পড়িয়ে দিলো।
কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, গহনাটা একবার দেখা’র পর বার~ বার দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।

এই গহনার সেঁটে নিশ্চয়ই অজানা এক রহস্য লুকিয়ে আছে, যা ইশিকার অজানা।

ইশিকার মাথাটা হঠাৎ ঝিমঝিম করতে লাগলো। ইশিকা মাথাটা চেপে ধরলো।

ইশিকা আহ বলে চিৎকার করে উঠলো।
“দীদা তড়িঘড়ি করে শুভ্রকে ডেকে নিয়ে আসলো।
শুভ্র হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো।
রুমে প্রবেশ করে দেখলো, ইশিকা মাথাটা চেপে ধরে রেখেছে।
শুভ্র ইশিকা বলে ডাকলো।

ইশিকা কোন সাড়া দিলোনা।
সাড়া দিবেই কিভাবে, তীব্র ব্যাথায় চোখ থেকে পানি পরেই যাচ্ছে।
“শুভ্র কিছু একটা বুঝতে পেরে ইশিকার মাথাটা আলতোভাবে উপরের দিকে উঠালো।

ইশিকার মুখটা দেখে শুভ্রের ভীষণ কষ্ট লাগলো।
ইশিকা কে আবার ডাকলো, কি হয়েছে প্লিজ বলো, মিষ্টি বউ আমার, তোমার কষ্ট যে আমারও কষ্ট, একটিবার বলো, দেখবে তোমার সব ব্যাথা দূর করে দেব।

ইশিকা, চোখ বন্ধ করে শুধু এটুকুই বললো, পারছিনা আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না, মাথাটা যেনো ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার।
“শুভ্র ইশিকার দিকে তাকিয়ে দেখলো, ইশিকার মুখটা রক্তের ন্যায় লাল বর্ন ধারণ করেছে। শুভ্র, করুন চোখে দীদার দিকে একনজর তাকালো।

দীদা ইশারা করে শুভ্রকে কিছু একটা করতে বলে চলে গেল।
“শুভ্র মনে মনে কিছু একটা পড়ে ইশিকার কপালে ফুঁ দিলো।
সাথে সাথে ইশিকা বেহুঁশ হয়ে গেল।

শুভ্র ইশিকার কপালে আলতো করে চুমু খেলো।বেশ কিছুক্ষণ ইশিকার হাত ধরে বসে ছিলো। দীদাকে ইশিকার কাছে বসিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

ঘন্টাখানেক পর ইশিকার হুঁশ ফিরলো।
ইশিকা তাকিয়ে দেখলো, দীদা ইশিকার মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

ইশিকার কাছেও খুব ভালো লাগছে।
ইশিকা দীদা বলে ডেকে উঠলো। ইশিকা দীদাকে জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছিল আমার?

“দীদা হাসি ফুটিয়ে বলতে লাগলো, তেমন কিছু না, হয়তো এই কয়েকদিন একটু কম খেয়েছিলি তাই অসুস্থ হয়ে পরেছিস।এখন তুই আমার নাতবউ হয়ে চলে এসেছিস আর কোন চিন্তা নেই, এখন উঠে বস, এই স্যাুপটা খেয়ে নে।
ইশিকাও বাধ্য মেয়ের মতো উঠে বসলো।

খেতে খেতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনে করতে লাগলো।
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা উঠেছিল, শুভ্র এসেছিল, তারপর বাকিটা ইশিকার অজানা।

দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইশিকা কে কেউ একজন পর্যবেক্ষণ করছে।

“এদিকে ইশিকার মায়ের অবস্থা খুবি খারাপ।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে লাগলো কিন্তু ইশিকার কোন খবর নেই।
অণু কেও কল করা হয়েছে, কিন্তু কেউ ইশিকার খবর জানে না।
ইশিকার নানীও বেশ চিন্তিত।

ইশিকার মা, ইশিকা বলে বলে কেঁদেই যাচ্ছে।
কিন্তু ইশিকার না আছে কোন খবর, না করতে পারছে ফোনে যোগাযোগ।

মোবাইলটাও বন্ধ দেখাচ্ছে।
এরপর ইশিকার নানী ইশিকার মা’কে যা বললো, ইশিকার মায়ের কান্না একদম বন্ধ হয়ে গেলো।

লেখা – আফরিন ইভা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “নিঝুম বিকেল – ভয়ের ভৌতিক গল্প ” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – নিঝুম বিকেল (১ম খণ্ড) – ভয়ানক ভৌতিক গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *