অন্ধকার – Voyonkor bhuter golpo

অন্ধকার – Voyonkor bhuter golpo: লাশ টাকে ব্যাগ থেকে বের করা হয়ে। কিন্তু নাড়ি ভুড়ি গুলো ব্যাগেই রয়ে যায়। ইমারজেন্সি ফোন কল করে ফরেনসিক বিভাগ এর দুজন কর্মকর্তাকে খবর পাঠিয়ে হাইওয়েতে আনা হয়। তারা এসে কোন রকম লাশের পেট টার ভেতরে সমস্ত নাড়ি ভুড়ি গুলো ভরে দ্রুত সেলাই করে দেয়।


পর্ব ১

আজ সকালেই খবর এলো, হাইওয়ের পাশেই আরেকটা লাশ পাওয়া গেছে। এই লাশ টাও নাকি একজন যুবতীর। সকাল সকাল যদি এইসব খবর পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় সারাদিন মাটি। ইদানীং লাশের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আজ গিয়ে দেখি লাশের কি অবস্থা?

বেলা ১ টা,

মুক্তিনগর হাইওয়ে,

মনে হচ্ছে দু’দিন আগেই খুন করা হয়েছে একে।

পঁচা গন্ধে সামনে এগুনো যাচ্ছে না। লাশ দেখবো কি করে? কন্সটেবল হাফিজ তার দুই তিন জন সহকারী নিয়ে ব্যাগটা খুলতে থাকে। ব্যাগ খোলার পর লাশের অবস্থা দেখেই একজন সেখানেই গড় গড় করে বমি করে দেয়। হাফিজ তাকে দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। সামনে এগুতেই দেখি, লাশের অবস্থা ভয়াবহ। ভেতরের নাড়ি ভুড়ি গুলো বের করা। পুরো লাশ টাই উলঙ্গ। দুই হাতের কনুই পর্যন্ত নেই।

গলার নিচ থেকে পেট অবদি ফাঁড়া। ফুসফুস আর কিডনি গুলো মিসিং। চোখ গুলো বের করে নেয়া হয়েছে। পুরো মুখ টাই যেন ছুরি দিয়ে ফালা ফালা করে রাখা হয়েছে যাতে কেউ না চিনে।

এ যাবত যত গুলো লাশ এসেছে তার মাঝে এ লাশ টাই সব থেকে বেশি বিদঘুটে আকৃতির আর ভয়াল অবস্থার স্বীকার।
কন্সটেবল হাফিজ এসে পাশে দাঁড়িয়ে লাশ টাকে ভালোভাবে দেখতে বলে সামনে এগিয়ে যায়। হাফিজ বেশ সাহসী, গত এক মাসে এমন লাশ দেখতে দেখতে প্রায় সব টাই নিজের মাঝে ধারণ করে নিয়েছেন।

পুরো শরীর শিউরে উঠছে বার বার। কোন সাইকো এইভাবে মেয়ে গুলোকে খুন করে?

লাশ টাকে ব্যাগ থেকে বের করা হয়ে। কিন্তু নাড়ি ভুড়ি গুলো ব্যাগেই রয়ে যায়। ইমারজেন্সি ফোন কল করে ফরেনসিক বিভাগ এর দুজন কর্মকর্তাকে খবর পাঠিয়ে হাইওয়েতে আনা হয়। তারা এসে কোন রকম লাশের পেট টার ভেতরে সমস্ত নাড়ি ভুড়ি গুলো ভরে দ্রুত সেলাই করে দেয়। লাশ টাকে সোজা ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ময়নাতদন্ত করতে হবে।

কারণ ময়নাতদন্ত করেই হয়তো কিছু না কিছু জানা যাবে। পুরো লাশ টা উলঙ্গ হওয়ায় লাশের সাথে কিছুই পাওয়া যায় নি।

পুরো মাথা ধরে গেছে লাশ টা দেখে।

এমন পাশবিক ভাবে কেউ কাউকে খুন করতে পারে? তবে একটা জিনিস আছে এই কেইস টায় আর তা হচ্ছে, আগের সমস্ত কেইসের সাথে এই কেইসটাও অনেকটাই মিল। এইসব টাই ভেবে নিচ্ছে মস্তিষ্ক।

দুপুর ৩ টা,

মুক্তিনগর ক্রাইম ব্রাঞ্চ,
ফাইল গুলো নাড়াচাড়ায় ব্যস্ত ক্রাইম ব্রাঞ্চের উর্ধ্বতন কর্মকতা ক্রাইম অফিসার মোঃ শেখাওয়াত হোসেন। আগের ফাইল গুলোর সাথে আজ নতুন আরেকটা ফাইল যুক্ত হলো। উপর মহল থেকে প্রেশার ক্রিয়েট করা হচ্ছে, কে এই সাইকো যে এইভাবে মানুষ খুন করে যাচ্ছে তাও একটার পর একটা।

আগের ৬ টা কেইসে ৬ টাই এমন বিশ্রী ভাবে খুন করেছে। যার মধ্যে ২ টা ছেলের এবং বাকি ৪ টা মেয়ের আর আজকের টাও মেয়ে আর এ নিয়ে মোট ৭ টা খুন। আর এদের প্রত্যেকেরই বয়স ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে। বার বার গবেষণা করেও কি যেন বার বার মিস করছে শেখাওয়াত। হুট করেই অফিসার শেখাওয়াতের ফোনে ফোন আসে। কিন্তু ফোনের শব্দ যেন তার কান অবদি পৌঁছাতে পারছে না।

কন্সটেবল হাফিজ এসে পাশে দাঁড়িয়ে ডাকে শেখাওয়াতকে। এদিকে হাফিজের কথায় ধ্যান ভেঙে যায় শেখাওয়াতের।

~ কিছু বলবে হাফিজ?

~ ফোন বাজে স্যার।
হাফিজের হাতের ইশারায় ফোনের দিকে নজর দেয় শেখাওয়াত। এতটাই চিন্তিত সে যে তার নিজের টেবিলে নিজের সামনে ফোন বেজে যাচ্ছে অথচ তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সবার আগে ফোনে হাত দেয় সে।
~ হ্যালো,
~…………
~ ওকে, আমি আসছি এক্ষুনি।

শেখাওয়াত হাফিজকে গাড়ি বের করতে বলে নতুন কেইসের ফাইলটা গুছিয়ে নিচ্ছে।
~ স্যার আমরা কোথায় যাচ্ছি?

~ ল্যাবে যেতে হবে।
~ ওকে স্যার।

ফরেনসিক ল্যাব, ডক্টর নিহাশ হতাশ হয়ে শেখাওয়াতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

শেখাওয়াত বুঝে গেছে ডক্টর নিহাশ কেন এতটা হতাশ। কারণ এর আগের ৬ টা লাশ তিনিই ময়নাতদন্ত করেছেন এবং তার রিপোর্ট অনুযায়ী সব গুছিয়ে দিয়েছেন।

তবে এইবার তিনি অত্যন্ত চিন্তিত। তার এই চিন্তা থেকে শেখাওয়াতও চিন্তিত।
~ ডক্টর নিহাশ কি বুঝলেন এইবারের টায়?

~ কে এই সাইকো? আমি তাকে একবার শুধু দেখতে চাই অফিসার।
~ সিরিয়াস কিছু কি?

~ পুরোটাই সিরিয়াস, যে এই কাজ টা করেছে তার পুরো মস্তিষ্ক টাই অসুস্থ সাথে বিকৃত। নয়তো এমন কাজ কেউ সুস্থ মস্তিষ্কে করতে পারে না।

মি। তা ডক্টর কি বুঝলেন?

~ যথা সম্ভব দু’দিন আগে খুন হয়েছে কারণ লাশ আস্তে আস্তে পঁচতে আরম্ভ হয়েছে। কিন্তু শরীরে কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। শুধু পেট, মুখ, আর হাতের কনুই তো একদমই নেই। কিডনি নেই, সেই সাথে কলিজাও মিসিং। বুঝাই যাচ্ছে সে অত্যন্ত ক্ষোভ নিয়ে খুন টা করেছে। কারণ বাকি লাশ গুলোর থেকে এই লাশ টা বেশ খানিকটা বিশ্রী। আমি এটাই বুঝলাম না যে, কেউ এইভাবে মানুষ খুন করে?

~ এটাই ভাবছি ডক্টর, এটা কোন সাইকো।

~ এটা বের করার দায়িত্ব আপনার এবং আপনার ডিপার্টমেন্টের। তবে একটা কথাই বলবো একে জলদি খুঁজে বের করুন।

~ ডক্টর একটা প্রশ্ন করতে চাচ্ছিলাম।
~ বলুন,

~ খুনের আগে মেয়েটার সাথে কি ফিজিক্যাল কিছু?
~ ইউ মিন টু সেক্স অর রেইপ?

~ ইয়েস,
~ এই লাশের সাথে এমন কিছুই হয় নি। তবে যেভাবে খুন করা হয়েছে তাতে বুঝা যাচ্ছে প্রচুর ক্ষোভ নিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে।

ল্যাব থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসেছে অফিসার শেখাওয়াত। মাথায় একটাই চিন্তা এমন ঘৃণ্য অপরাধ কে করতে পারে? কে আছে এর পেছনে? কিসের জন্যে এইভাবে মানুষগুলোকে মারছে।

প্রতিদিনের মত ক্লান্তিকর পরিশ্রম শেষে বাড়ি ফিরে শেখাওয়াত। বাড়ি এসেই সোফায় বসে আছে সে। মাথায় শুধু একটাই চিন্তা কাজ করছে তার, খুন খুন আর খুন। কে করছে এই খুন, কার কি লাভ হচ্ছে এই খুন করে? কার এত শত্রুতা হতে পারে এত মানুষের সাথে যে এভাবে মানুষ গুলোকে খুন করছে?

শেখাওয়াতের সামনে পানির গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নারীটি এক নজরে দেখছে শেখাওয়াতকে। আজকাল তার কাছে এই পুরুষটিকে চরম আকারে ভালো লাগে। শেখাওয়াত দেখতে যেমন সুন্দর তেমন উচ্চতা তার সাথে তেমন বডি ফিটনেস। যে কোন নারীকে গিলে খাওয়ার মত ক্ষমতা রাখে সে। তবে তার যেই কাজ সে নারী গিলে খাওয়া দূরে থাক কোন নারীর দিকে তাকানোরই সময় নেই তার।

অপরদিকে শেখাওয়াত কারো হাতে থাকা চুড়ির শব্দ পেয়ে মাথা তুলে তাকায়। সে মাথা তুলে তাকাতেই তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুমকে দেখতে পায়। পানির গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। ঝুমকে দেখলেই তার মাথায় যেন বাজ পড়ে আর শরীরে ৪৪০ এর বদলে ৮৮০ ভোল্টেজের কারেন্ট লাগে। সে ঝুমকে তেমন দেখতেই পারে না। দেখতে পারে না বললে ভুল হবে সে ঝুমকে আসকারা দেয় না। ঝুম তার খালার ননদের মেয়ে।

এখানে পড়াশোনা করে বিধায় তার বাসায় থাকে সে। শেখাওয়াতের বাসায় শেখাওয়াত, তার বাবা এবং তার মা থাকেন। আর বাড়তি লোক বলতে ঝুম থাকে।

ঝুম তার কার্যকলাপে বুঝাতে চায় সে শেখাওয়াতকে চায়। যতবার বুঝাতে এসেছে শেখাওয়াত পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে গেছে। ঝুম মাঝে মাঝে বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করে, যা শেখাওয়াত একদম নিতে পারে না।

সেদিন রাস্তায় জোর করে শেখাওয়াতের গাড়িতে গিয়েছে। আর শেখাওয়াত ও~কে ওর কলেজের সামনে নামিয়ে দেয়ার সময় কিছু মেয়ে যেন তাকে গিলে খাচ্ছিলো। এইসব বেলাল্লাপনা তার একদমই পছন্দ না। শেখাওয়াত একটা জিনিসই বুঝে আর তা হচ্ছে কাজ। সে তার কাজকে বেশি ভালোবাসে।

তাই এইসবে ফিরে তাকায় না।
এই মুহুর্তে ঝুম তার খুব কাছে এসে বসে গিয়ে পানির গ্লাসটা তার দিকে এগিয়ে দেয়। ঝুমের এমন কান্ড দেখে শেখাওয়াতের মাথা আরও খারাপ হয়ে যায়। এমনিতেই কেইসের টেনশন বাড়ছে সেই সাথে কে এত এত মানুষ খুন করছে তার টেনশন আর এখন বাসায় এর টেনশন। মেজাজ এমনিতেই খারাপ তার। ঝুমের এমন আহ্লাদীপনা দেখে শেখাওয়াত বলে উঠে,

~ যেদিন আমি তোমাকে টেনে এক থাপ্পড় দিবো সেদিন বুঝবে আমি কি জিনিস। বেয়াদবির একটা সীমা আছে, তুমি তো দেখছি সব সীমা ধীরে ধীরে অতিক্রম করছো। একবার দুইবার তিনবার, বার বার বিরক্ত করা বন্ধ করো। এখানে যেই কাজে এসেছো সেই কাজ করো। গায়ে পড়া স্বভাব ত্যাগ করো।

এই বলে শেখাওয়াত নিজে রুমে চলে যায়। যাওয়ার সময় পেছন ফিরে ঝুমের উদ্দেশ্যে বলে যায়,
~ আর হ্যাঁ, খবরদার যদি আমার রুমের দরজায় নক করেছো তো। নয়তো থার্ড ডিগ্রি টর্চার আরম্ভ করে দিবো। এই বলে দিয়ে গেলাম।

রুমে এসে সোজা বিছানায় গা এলিয়ে দেয় শেখাওয়াত। মাথায় তার একটাই চিন্তা ঘুরছে, এত নোংরাভাবে কে খুন করতে পারে? আর এই খুনের পেছনে কি এমন রহস্য লুকায়িত আছে যার পর্দা সে এখনও ভেদ কর‍তে পারছে না। কে সেই পিশাচ যে সকলের মাঝে থেকে এইভাবে একের পর এক ঘৃণ্য অপরাধ করে যাচ্ছে।


পর্ব ২

রুমের চারপাশ টায় রক্ত। যেন এখানে রক্তের শ্রোত বয়ে যায় প্রতিনিয়ত। দেয়ালের একপাশে লেগে আছে কিছু নাড়ি ভুড়ির অংশবিশেষ। আরেকপাশে এক জোড়া চোখ পড়ে আছে। মনে হচ্ছে খুবলে তুলে ফেলা হয়েছে চোখ জোড়া। এক কোণায় কয়েকটা আঙ্গুল পড়ে আছে। রুমের অবস্থাই বলে দিচ্ছিলো মনে হচ্ছে এখানে পাশবিক ভাবে মানুষ খুন করা হয় প্রতিনিয়ত।

কিছু কিছু জিনিস এমন ছিল যার দিকে চোখ তুলে তাকানোর মত না। পুরো রুম জুড়ে দুর্গন্ধ আর পঁচা নোংরা গন্ধ। শেখাওয়াত নাকে কাপড় চেপে পুরো রুম টা পর্যবেক্ষণ করছিলেন।

এমন সময় কন্সটেবল হাফিজ চিৎকার করে ডাকায় তার কাছে ছুটে গিয়ে যা দেখা গেলো তাতে আত্মা কেঁপে উঠেছে শেখাওয়াতের। একটা গোটা মাথা পড়ে আছে চোখ গুলো খুলে ফেলা হয়েছে, জিব টা নেই। মাথার উপরের অংশ টা ফাঁরা, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল যে এর থেকে মগজটা আলাদা করে তুলে ফেলা হয়েছে।

এ কি অবস্থা এই জায়গার আশপাশ টা। বিশ্রী নোংরা রক্তের গন্ধ, মানুষ পঁচা গন্ধ। কবে উদঘাটিত হবে এই মৃত্যুর রহস্য। নাকি এ কোন অশরীরী কিছু?

শেখাওয়াত যেন ভাষা হারিয়ে ফেলছে। কোন কথাই মুখ থেকে বের করছে না সে। হাফিজ কয়েকবার ডাকার পর শেখাওয়াতের হুশ আসে। তখন সে হাফিজকে নির্দেশ দেয় যেই লোক তাদের এই রুমের সন্ধ্যান দিয়েছে সেই লোককে হাজির করানোর জন্যে। কন্সটেবল হাফিজও শেখাওয়াতের কথা অনুযায়ী কাজ শুরু করে দেয়।
সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে বসে সবার সাথে নাস্তা করছিল শেখাওয়াত।

সেই সময়েই হাফিজ তাকে ফোন করে এই খবর দেয়। অফিসে পৌঁছেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে এই ঠিকানায়। আর এখানে এসেই দেখে বর্বরতা’র এক নতুন দৃশ্যায়ন।

সেখান থেকে অফিসে এসে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে শেখাওয়াত। সে শুধু অপেক্ষায় আছে কখন সেই লোকটি আসবে। এমন সময় হাজিফ সেক লোকটাকে নিয়ে এসে উপস্থিত হয় শেখাওয়াতের রুমে।

লোকটা বেশি বয়স্ক না হলেও মধ্য বয়স্ক। আধা পাকা চুল তার। লোকটার চোখ মুখে ভয়ের ছাপ। বেশ অবাক হয়ে সে শেখাওয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটাকে অভয় দিয়ে শেখাওয়াত তাকে চেয়ারে বসতে বললেন। লোকটা তখন শেখাওয়াতের কথা মত চেয়ারে বসেন।

শেখাওয়াত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর লোকটাকে উদ্দেশ্য করে কিছু প্রশ্ন করে। কিন্তু লোকটা এতটাই ভয় পেয়ে যান যে তিনি কিছুই বলেন নি। তখন শেখাওয়াত তাকে অভয় দিয়ে আরও ভদ্র ভাবে কথা বলেন।

~ দেখুন আংকেল, আপনি আমার বাবার মত। ধরতে গেলে বাবা~ই। আপনি এখানে খবর দিলেন। এখন যদ আপনি আমার সাথে কো~অপারেট না করেন তাহলে তো খুনীকে ধরতে পারবো না। আপনি তো এই এলাকারই মানুষ। হয়তো শুনেও আসছেন যে এ যাবত ৭ টা খুন হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাথে কো~অপারেট করুন আংকেল।

শেখাওয়াতের কথা শুনে লোকটা তখন বললো,
~ আমি প্রায় সময়ই এই রাস্তা দিয়ে বাজার যেতাম। রুমটা অনেক আগে থেকেই এখানে বানানো ছিল। সব সময় তো তালা দেয়া থাকে। শুনেছি এ বাড়ির মালিক জায়গা দখল করার জন্যে যেমন তেমন করে এখানে এই এক রুম তুলে বিদেশ চলে গেছেন।

~ আপনি কি এখানে স্থানীয়?
~ আমার বাসা আরেকটু ভেতরে। তবে এই রাস্তা দিয়েই আসা যাওয়া।

~ কি দেখেছিলেন আজ সকালে যদি বলতেন?

~ প্রতিদিন বাজারে যাওয়ার সময়ই গন্ধ পেতাম। প্রথম প্রথম ভাবতাম ময়লার গন্ধ, কারণ পাশেই ময়লা ফালার ডাস্টবিন।
~ তারপর?

~ প্রতিদিনের মত আজকেও বাজারে যাচ্ছিলাম হুট করেই নাকে আরও বিশ্রী গন্ধ আসে, তারপর একটু এগিয়ে যেতেই গন্ধটা আরও প্রবলভাবে নাকে লাগে। এত গন্ধ যে সেখানেই বমি চলে আসে আমার। তবুও এগিয়ে যেতেই দেখি সেই মাথাটা। আমার রুহ কেঁপে উঠছে, আল্লাহ হুয়াকবার কি দেখলাম এটা আমি। সাথে সাথে বাসায় গিয়ে থানায় ফোন দিলাম। কিন্তু আমাকে এখানে ধরে আনার কারণ বুঝলাম না আমি।

~ ধরে আনা হয় নি আপনাকে আংকেল, শুধু জিজ্ঞাসা করার জন্যে ডাকা হয়েছে। আচ্ছা আংকেল, এইযে বাজারে যেতেন আবার বাজার করে ফিরতেন এর মাঝে কাউকে দেখেছিলেন কি ওই রুমের আশেপাশে।

~ নাহ নাহ এমন কাউকেই তো দেখলাম না আজ পর্যন্ত। তা আপনারা রুমের ভেতর গিয়েছিলেন তো, কি দেখলেন।

~ যা দেখেছি তা বললে আপনি স্থির থাকতে পারবেন না আংকেল। ধন্যবাদ আপনাকে অনেক কিছু বলার জন্যে। আপনি এখন আসতে পারেন।

~ আচ্ছা তাহলে আসি আমি।
~ জ্বি অবশ্যই, আসসালামু আলাইকুম

~ ওয়ালাইকুম আসসালাম।
এই বলে লোকটা চলে গেল। শেখাওয়াত আবারও ভাবনায় পড়ে যায়। তার মানে এই রুমেই ওই নর পিশাচ এই কাজ করতো। আর কাজ শেষ হয়ে গেলে লাশ গুলোকে যেখানে সেখানে ফেলে দিত। শেখাওয়াত ভাবছে আর ভাবছে। এরই মঝে ডক্টর নিহাশের ফোন পেয়ে ধ্যান ভাঙে তার।

~ হ্যাঁ ডক্টর, বলুন।

~ শেখাওয়াত, মাথার খুলি টা এক নারীর,
~ what?
~ yes, চোখ জোড়া মিসিং, জিহবা কেটে নেয়া হয়েছে।

~ oh my god!
ওহ হ্যাঁ, most important part is মগজ নেই। মগজ বের করে নেয়া হয়েছে।
~ how is this possible doctor?

~ i don’t know .
ফোন রেখে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে শেখাওয়াত। কিছু মাথায় আসছে না তার। এভাবে কে খুন করে যাচ্ছে একের পর এক। কে এইসব করে যাচ্ছে সবার আড়ালে।

বাসায় ফিরে নিজের রুমের বারান্দায় কফি খাচ্ছে আর সিগারেট ফুকছে শেখাওয়াত। মাথায় তার একটাই চিন্তা। কে এই সাইকো কিলার তা খুঁজে বের করতে হবে। হুট করেই কারো অস্তিত্বের জানান পায় শেখাওয়াত। পাশ ফিরে তাকাতেই ঝুমকে দেখতে পায় সে। ঝুম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে শেখাওয়াতের সামনে।

ঝুমকে দেখেই শেখাওয়াতের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তখন ঝুমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই শেখাওয়াত বলা শুরু করে,

~ আমি একটা জিনিস বুঝি না, তুমি কেন আমার পেছনে এইভাবে পড়ে আছো। সমস্যা টা কি তোমার ঝুম?

ঝুম এক দৃষ্টিতে শেখাওয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। শেখাওয়াতকে বেশ লাগে তার কাছে। বিশেষ করে শেখাওয়াতের বডি টা। হট আর ড্যাসিং পারসোনালিটি আছে তার মাঝে। যা ঝুম কেন যে কোন মেয়েকেই টানবে। ঝুমের চোখ মুখের অবস্থা দেখেই শেখাওয়াত বাকিটা বুঝে যায়। এই মুহুর্তে শেখাওয়াতের রুমে শেখাওয়াতের কাছে এসে ওইভাবে তাকানোর অর্থ শুধু একটাই দাঁড়ায়।

তবে সেই অর্থ কেন অর্থের অ অবদিও যেতে চায় না শেখাওয়াত। নারী দেহের প্রতি তার লোভ কোন কালেই ছিল না। প্রেম ভালোবাসা সংসার বউ কিংবা প্রেমিকা এইসব থেকে সে বহু দূরে। আর তাছাড়া সে যে কাজ করে তাতে কর্মরত থেকে কোন ভাবেই এইসব সম্ভব হয়ে উঠে না তার জন্যে।

ঝুম মেয়েটা বার বার শেখাওয়াতের কাছ থেকে অতিরিক্ত আশা করে। কিন্তু শেখাওয়াত তার এই আশার উপর কখনোই আলোর আভাস দেয় নি। ঝুম ইদানিং বেশ কয়েকদিন যাবতই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে তবে তা সকলের আড়ালে।

হাতে থাকা সিগারেট টা ফেলে দিয়ে নিজের রুম যেতে নিলে শেখাওয়াতকে আটকে দেয় ঝুম। ঝুম নিজের হাত দিয়ে শেখাওয়াতের সামনে বাঁধা দিয়ে দাঁড়ায়। যা দেখে শেখাওয়াতের মেজাজ গরম হয়ে যায়।
~ সমস্যা কি তোমার?

শেখাওয়াতের এমন প্রশ্ন শুনে ঝুম হাত সরিয়ে শেখাওয়াতের একদম কাছে চলে যায়। টি~শার্ট খামছে ধরে শেখাওয়াতের খুব কাছে চলে যায় ঝুম। শেখাওয়াতের নজর তখন দরজার কাছে চলে যায়। কারণ তার ধারণা এই মুহুর্তে যদি তার মা অথবা বাবা এই অবস্থায় তাদের দু’জনকে দেখে তাহলে সব থেকে লজ্জায় পড়বে সে। কিন্তু না ঝুম অত্যন্ত প্রখর বুদ্ধিমতি। সে ঢোকার সময় দরজা লক করেই রুমে ঢুকেছে।

শেখাওয়াত নিজেকে শান্ত রাখে এইভেবে যে এখন সে চিৎকার চেঁচামেচি করলেও লাভ হবে না। ঝুম তো যাবেই না উল্টো তার বাবা মা শুনতে পাবে। তাই নিজেকে শান্ত রেখেই বলছে।

~ হয়েছে টা কি ঝুম?

শেখাওয়াতের কথা শুনে ঝুম শেখাওয়াতের একদম কাছে চলে আসে আর বলে,
~ I Love You .

ঝুমের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে শেখাওয়াত।
~ এই মেয়ে, পাগল হয়েছো নাকি রাত দুপুরে।

~ I Love You .
~ shut up,
~ I Want You at that moment .
~ what?
~ I Want You at that moment, please .

শেখাওয়াতের মেজাজ তখন চরমে উঠে যায়। ধাক্কা দিয়ে ঝুমকে দূরে সরিয়ে দেয় সে। তারপর দেয়ালের সাথে চেপে ধরে সে ঝুমকে।

~ মাথায় যে অবশিষ্ট স্ক্রু ছিল, তাও খুলে পড়ে গেছে নাকি। গর্দভ মেয়ে কোথাকার, শান্তি দিবা না তুমি আমায় তাই না শান্তি দিবা না। গায়ে পড়া অভ্যাসটা চিরকালেও যাবে না তোমার।

~ আমি আপনাকে ভালোবাসি আর কত ভাবে বললে আপনি বুঝবেন?

~ আমি একবারেই তো বলে দিয়েছিলাম যে এইসব ভালোবাসা আমার দ্বারা সম্ভব না কানে যায় না তোমার।

~ নাহ যায় না আমি ভালোবাসি তোমাকে, ব্যাস আর কিছু জানি না আমি জানতেও চাই না।

~ লজ্জা করে না তোমার, হ্যাঁ লজ্জা করে না। কেমন মেয়ে তুমি, রাত একটা বাজে একজন পর পুরুষের রুমে ঢুকেছো তুমি। এই কথা টা আমার বাবা মা জানলে কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছো তুমি? নিজেকে কেমন ত স্বস্তা বানাচ্ছো কেন আমার সামনে? কি কারণে বানাচ্ছো এতটা স্বস্তা, হ্যাঁ?

~ খুন, চোর, ডাকাত এইসবের মাঝে থাকতে থাকতে আপনি মানুষ না রোবট হয়ে গেছেন। তাই আমার ভালোবাসাটা আপনার চোখে পড়ে না।

~ shut up, বেরিয়ে যাও এই মুহুর্তে। বের হও আমার রুম থেকে এক্ষুনি।

আজ শেখাওয়াত অতিরিক্ত করে ফেলেছে ঝুমের সাথে। ঝুমের চোখের পানি শেখাওয়াতকে গলাতে পারে নি।

শেখাওয়াত রাগে ফেটে যাচ্ছে। আর ঝুম এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে শেখাওয়াত তাকে কি কি বলেছে। ঝুমের স্তব্ধতার মাঝে শেখাওয়াতও চুপচাপ। ঝুম যখন আস্তে করে বের হয়ে যাচ্ছিলো শেখাওয়াত তখন বলে উঠে,
~ কোন ভদ্র আর রুচিশীল মেয়ে কখনও এইভাবে নিজেকে অন্যের কাছে বিকিয়ে দিতে আসে না।

তুমি আজ এখানে নিজেকে নিলাম কর‍তে এসেছিলে, এতেই বোঝা যায় তোমার রুচি কতটা ভালো আর তুমি কতটা ভালো। নিজেই এসে নিজের পরিচয় দিয়ে গেলে।

শেখাওয়াতের কথা শুনে ঝুমের পা আটকে যায় সেখানেই।

পেছন ফিরে সেও উত্তর দিয়ে যায়,
~ এমন যেন না হয় এই রুচিহীণ মেয়েটার লাশ বুকে নিয়ে আপনাকে আবার কাঁদতে না হয়।

এই কথা বলে ঝুম রুম থেকে বের হয়ে যায়। ঝুম বের হওয়ার সাথে সাথে শেখাওয়াত আর এক সেকেন্ড দেরি করে নি দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দেয়। শেখাওয়াত তখন লাইট অফ করে দিয়ে শুয়ে পড়ে। আর শুতে শুতে ঝুমের উপর জমে থাকা সমস্ত রাগ নিজের মুখ দিয়েই উগলে দেয় সে।

পরদিন সকাল বেলা,
সবাই নাস্তার টেবিলে নাস্তা খেতে বসেছে। শেখাওয়াতও সেখানে উপস্থিত আছে।

এমন সময় ঝুমও সেখানে উপস্থিত হয়।

শেখাওয়াত আড় চোখে একবার ঝুমের দিকে তাকায়। ঝুমের চোখ নাক মুখ অসম্ভব রকম ফুলে আছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারা রাত কেঁদেছে সে। শেখাওয়াতের মা ঝুমের দিকে তাকিয়ে এমন হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঠান্ডা লেগেছে বলে কথাটা ঘুরিয়ে নেয় ঝুম।

তখনই শেখাওয়াতের বাবা শেখাওয়াতকে বলে ঝুমকে গাড়িতে করে তার ভার্সিটি অবদি পৌঁছে দিতে। বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান শেখাওয়াত তাই আর না করে নি তবে ঝুম আপত্তি জানিয়ে দেয়। সে একই যাবে বলে দেয়। এতে অবশ্য শেখাওয়াতের কিছু আসেও নি আর যায়ও নি।

সে বরং আরও শান্তি পেয়েছে। এমন সময়ই শেখাওয়াতের ফোনে ফোন আসে। কন্সটেবল হাফিজের ফোন দেখে দ্রুত ফোন রিসিভ করে শেখাওয়াত।

~ হ্যাঁ, হাফিজ বলো।
~ স্যার, হাইওয়েতে আজকেও একটা বস্তা পাওয়া গেছে। রক্তে ভেজা গন্ধ আর পঁচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে নাকি। ওইখানকারই একজন ট্রাফিক পুলিশ ইনফর্ম করলেন। আপনি কখন আসবেন স্যার?
~ এক্ষুনি বের হচ্ছি আমি।

এটা বলেই ফোন কেটে দিয়ে সামনে থাকা গ্লাসের পানিটুকু খেয়েই শেখাওয়াত সোজা বের হয়ে যায়। ডানে বামে আর কোথাও তাকায় নি সে। আরেকটা লাশের খবর হয়তো এখন পাওয়া যাবে। আরেকটা ভয়াল লাশের মুখোমুখি হয়তো হতে হবে তাকে এখন। যার দূর দূর অবদি কোন প্রমাণ এখনও তার হাতে আসে নি।


পর্ব ৩

সকাল ১০ টা হাইওয়েতে পৌঁছে যায় শেখাওয়াত। সে পৌঁছানোর আগেই হাফিজ সেখানে টিম নিয়ে পৌঁছে গেছে। শেখাওয়াতের আসার অপেক্ষায় ছিল সবাই। তাই কেউ বস্তায় হাত দেয় নি। শেখাওয়াত সেখানে গিয়ে পারমিশন দেয়ার পর হাফিজ দুইজনকে বলে বস্তা খোলার জন্যে।

তাদের বস্তা খুলতে বলে হাফিজ শেখাওয়াতের পাশে এসে দাড়ায়। হাফিজ কিছু বলতে চায় শেখাওয়াতকে তাই পাশে এসে দাঁড়ায় সে। হাফিজের কাছে এসে দাঁড়ানো দেখে শেখাওয়াত বুঝে যায় হাফিজ নিশ্চয়ই কিছু বলতে চায়। তাই নিজেই হাফিজকে বলে,
~ কিছু বলবে হাফিজ?

~ জ্বি স্যার,
~ বলো কি বলতে চাও?

~ এইভাবে আর কতদিন স্যার। চারদিকে শুধুই লাশের খেলা, একটার পর একটা খুন তাও এত বাজে ভাবে।
~ বুঝতে পারছি না হাফিজ, এই প্রথম আমার নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। এইভাবে একটার পর একটা খুন হচ্ছে। এ নিয়ে ৮ম লাশ পাওয়া গেল। ৮ জন মায়ের বুক খালি হয়ে গেল।

~ স্যার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই খুনীকে ধরতে হবে যাতে আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়।

এমন সময় দুইজন তাদের ডাক দেয় লাশ দেখার জন্য। তাদের ডাকে শেখাওয়াত আর কন্সটেবল হাফিজ সামনে এগিয়ে যায় লাশ দেখার জন্যে। শেখাওয়াত আর হাফিজ অবাক হয়ে চেয়ে থাকে লাশের দিকে। শেখাওয়াত নিজেকে সামলে নিলেও হাফিজ আৎকে উঠে।

লাশটাকে পুরো বিকৃত করে দেয়া হয়েছে। মাথা নেই, শুধু দেহটা আছে আবার দেহ থেকেও লাভ নেই। হাতের কনুই পর্যন্ত নেই, পায়ের গোড়ালি নেই। পুরো দেহটাই এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়েছে যাতে চিনা না যায়। ঝলসে যাওয়ার কারণে বুঝা যাচ্ছে না দেহ’তে কাপড় ছিলো কিনা। কিন্তু যতটুকু বুঝা যাচ্ছিলো তাতে দেখা গেছে এই লাশটাও পুরোটা ফাঁড়া হয়েছে। লাশটা দেখে শেখাওয়াত মিনিট দুয়েক চোখ বন্ধ করে রাখে।

কতটা নির্মম ভাবে মেরেছে মানুষটাকে। হাফিজকে বলে লাশ ল্যাবে পাঠিয়ে দেয় শেখাওয়াত। আর এদিকে অফিসে গিয়ে শেখাওয়াত মিসিং ডায়েরি গুলো কালেক্ট করে মুক্তিনগর মডেল থানা থেকে। ইদানিং কোন মিসিং ডায়েরি হয়েছে কিনা তাই~ই জানতে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে শেখাওয়াত। ঘেটে ঘুটে জানতে পারে এই পর্যন্ত মোট ৮ জনের লাশ পাওয়া গেলো যার মাঝে ৫ জনের মিসিং ডায়েরি হয়েছিল।

আর এই ৫ জনের মিসিং ডায়েরি গুলো দুইদিন পর কিংবা তিন দিন পর পর করা হয়েছে। আর ডায়েরি করার ১ সপ্তাহ কিংবা ২ সপ্তাহ পরই এদের বিকৃত লাশগুলো যেখানে সেখানে পাওয়া গেছে।

মাথা কাজ করছে না শেখাওয়াতের। কিছু তো আছে যা তার চোখে ধরা দিচ্ছে না। কিছু তো আছে যা তার চোখে পড়ছে না। কিন্তু কি সেটা, কি আছে এমন? এরই মাঝে হাফিজ উপস্থিত হয় তার কেবিনে।
~ স্যার?

~ হ্যাঁ হাফিজ বলো।
~ ল্যাব থেকে ফোন এসেছে এক্ষুনি যেতে হবে সেখানে।

~ গাড়ি বের করো।
~ জ্বি স্যার।

ডক্টর নিহাশ আর শেখাওয়াত সামনাসামনি বসে আছে তাদের সাথে হাফিজও আছে। ডক্টর নিহাশ সমস্ত কাগজ পত্র ঘাটছে। শেখাওয়াত তখন সামনে বসা। এমন সময় শেখাওয়াতের ফোন আসে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে বাড়ি থেকে ফোন। তার মা ফোন করেছে তাকে।

শেখাওয়াত এই খুনের কারণে এতই ডিস্টার্ব যে কারো সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। মোবাইল টা সাইলেন্ট করে ডক্টর নিহাশের সাথে কথা শুরু করে দেয় সে।

~ গতকাল যার মাথাটা ওই রুম থেকে পেয়েছিলেন আর আজ যেই বডিটা ল্যাবে এসেছে মাথা এবং দেহ একজনেরই।

~ What!
~ yes, পুরো বডি এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়েছে। যাতে না চেনা যায়।
~ উফফফফ,
~ yes,

~ ডক্টর লাশ টা কি মেয়ের?
~ of course মেয়ের। বয়স আনুমানিক ২১/২২ হবে।
~ ওহ,

~ তার থেকেও important কথা আছে একটা।
~ কি?

~ টানা তিন দিন যাবত মেয়েটাকে rape করা হয়েছে। আর তারপর এইভাবে খুন করা হলো। এত ক্ষোভ নিয়ে খুন করেছে যা বুঝাই যাচ্ছে।

কথা টা শুনে হাফিজ অনেকটা অস্বস্তি অনুভব করে। সেই সাথে শেখাওয়াতও তবে এটা কাজের জায়গা এখানে এইসব থাকবেই আসবেই এটাই স্বাভাবিক।

অন্যদিকে আরও কিছু জরুরী কথা বলে শেখাওয়াত আর হাফিজ ল্যাব থেকে বের হয়ে যায়। ল্যাব থেকে বের হতে হতে শেখাওয়াত মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে প্রায় ২৫+ মিসড কল। কিছু মিসড কল তার মায়ের কিছু মিসড কল তার বাবার। এত ফোন দেখে শেখাওয়াত একটু ঘাবড়ে যায়। সাথে সাথে ফোন করে বাসায় সে।

ফোন করে যা শুনতে পায় তাতে আর এক সেকেন্ডও সে ঠিক থাকতে পারে নি। এখানের কেইস সামলাতে তার পরাণ যায় অন্যদিকে আরেক ঝামেলায় পড়েছে সে এখন। গাড়ি ঘুরিয়ে সোজা বাসায় যায় সে।

বাসায় এসে পায়চারি করছে শেখাওয়াত। শেখাওয়াতের বাবা মা দুজনেই সোফায় বসে আছেন। শেখাওয়াতের মাথা এমনিতেই গরম তার উপর এখন আবার এইসব।

~ বার বার বলেছিলাম এই মেয়েকে পাত্তা দিও না এত। দিও না পাত্তা এই মেয়েকে। শুনেছো তোমরা আমার কথা? বিকাল ৪ টা বাজে আর এই মেয়ে গায়েব।

এটা কোন কথা? ফোন টা পর্যন্ত বন্ধ তার। এখন ফোন ট্রেস করতে হবে। আমি তোমাদের আগেই বলেছিলাম যে আমি একটা important case এ ফেসে গেছি। না পারছি সমাধান করতে না পারছি নিজে বের হতে। কিন্তু বাড়তি ঝামেলা থাকবেই। চারদিকের অবস্থা তেমন ভালো না আর তার মাঝে এই মেয়ের ঝামেলা।
ঘটনা হচ্ছে ঝুমকে পাওয়া যাচ্ছে না।

সেই যে ১০ টায় বাসা থেকে বের হয়েছে আর এখন বিকাল ৪ টা বাজে। ফোন টাও বন্ধ তার। শেখাওয়াতের বাবা মা দিক বিক ভেবে না পেয়ে ছেলেকে সবটা জানায়। শেখাওয়াতের আর কোন ভাই বোন নেই, নিজেদের কোন মেয়ে নেই বলে শেখাওয়াতের বাবা মা ঝুমকে বেশ আদরে রাখেন। তাই তাদের এত চিন্তা আর তাছাড়া কিছু হয়ে গেলে ঝুমের বাবা মাকে কি করে মুখ দেখাবে তারা।

এদিকে শেখাওয়াতের মাথায়ও অনেক চাপ। তার উপর এখন এইসব, সে সহ্য করতে পারছে না। শেখাওয়াত তখন আরও বিড় বিড় করে বলে,

~ আরও তোল্লায় দেও তাকে তোমরা। এইসব মেয়েদের তোল্লায় দিলে এরা মাথায় চড়ে বসে। পরের মেয়েকে নিয়ে কিসের এত মাতামাতি বাবা। আর মা তোমাকেও বলি এতই যখন মেয়ের শখ তখন একটা মেয়ে ছোট বেলায় পালক আনলে না কেন? এখন পরের মেয়ের জন্যে আমাদের ঘুম হারাম।

শেখাওয়াতের বাবা মা বুঝতে পেরেছে তাদের ছেলের মাথা অনেক গরম হয়ে আছে। তাই তারাও চুপচাপ বসে আছে। এমন সময় শেখাওয়াত ঝুমের ফোন নাম্বার হাফিজকে দিয়ে বলে দ্রুত কন্ট্রোল রুমে পাঠানোর জন্য। কিন্তু এই কথা বলার আগেই ঝুম বাসার দরজা অবদি পৌঁছে যায়। ব্যাস, ঝুমকে দেখে শেখাওয়াতের মেজাজ আরও তুঙ্গে উঠে যায়। ঝুম বাসায় এসে দাঁড়ানোর সাথে সাথে শেখাওয়াত শুরু করে দেয়।

~ ওই যে এসে গেছে, দেখো দেখো তোমাদের আদরের মেয়ে এসে গেছে। তা আসুন আসুন, ভেতরে আসুন। কোথায় ছিলেন এতক্ষণ আপনি?

শেখাওয়াতের মেজাজ গরম দেখে শেখাওয়াতের মা উঠে গিয়ে ঝুমের কাছে যায়। আদর করে করে ঝুমকে জিজ্ঞেস করে যা শেখাওয়াতের একদম পছন্দ হয় নি।

আর ঝুম শেখাওয়াতের মায়ের সব কথার উত্তর একটা ছোট্ট লাইনেই শেষ করে দেয় আর তা হচ্ছে, “বান্ধবীর বাসায় ছিলাম মোবাইলে চার্জ ছিল না”এই বলে শেখাওয়াতের মা বাবার থেকে অনুমতি নিয়ে সোজা ভেতরে নিজের রুমে চলে যায়। শেখাওয়াতের মুখের উপর এইভাবে কথা বলাটা শেখাওয়াত মানতে পারে নি। সোজা সেও ভেতরে চলে যায় ঝুমের রুমে।

শেখাওয়াতের ভেতরে যাওয়া দেখে শেখাওয়াতের বাবা মা উভয়েই বেশ চিন্তিত হয়ে যান। কারণ আর কেউ না জানুক তারা তো জানে তাদের ছেলে কতটা ক্ষিপ্ত মেজাজের। রাগের বশে মেয়েটাকে আবার চড় থাপ্পড় না দিয়ে বসে।

শেখাওয়াত সোজা ঝুমের রুমে ঢুকে যায় বিনা অনুমতিতে। ঝুম তখন ব্যাগ টা রেখে গা থেকে ওড়না টা সরিয়ে ফ্যান টা ছেড়ে দিয়ে ফ্যানের নিচে দাঁড়ায়।

শেখাওয়াত তখন সোজা রুমে গিয়ে ঝুমের কাঁধে হাত দিয়ে ঝুমকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। এইভাবে আচমকা ঘুরানোতে একটু ঘাবড়ে যায় ঝুম। কিন্তু যখন শেখাওয়াতকে তার সামনে দেখে তখন সে বাম হাত দিয়ে নিজের ওড়না টা নিতে চায়। ঝুমের এমন আচরণে শেখাওয়াতের মেজাজ আরও খারাপ হয়। নয়তো যেই ঝুম রাতের অন্ধকারে তার কাছে গিয়েছিল সেই ঝুম এখন তার সামনেই থাকতে চাচ্ছে না।

~ সোজা হয়ে দাঁড়াও, আর বলো কোথায় ছিলে?
~ বান্ধবীর বাসায়।

~ ফোন বন্ধ ছিলো কেন?
~ চার্জ ছিলো না।

~ এই বাড়ির কিছু নিয়ম আছে ভুলে গেছো নাকি?
~ আমি কোন নিয়ম ভেঙেছি বলে আমার মনে হচ্ছে না।

~ কাল থেকে সোজা কলেজ আর তারপর বাসা, মনে যাতে থাকে।
~ আমি কখন কোথায় যাবো তা নিশ্চয়ই আপনাকে বলতে হবে না।

~ টেনে এক থাপ্পড়ে গালের সব দাত ফেলে দিবো, বেয়াদব কোথাকার।
~ থাপ্পড় কেন, মেরেই ফেলুন না।

শেখাওয়াত আর কোন কথা বাড়ায় নি। সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে অফিসে চলে যায়।
রাত ৮ টা নাগাদ শেখাওয়াত তার অফিসে বসে আছে। সমস্ত কাগজ পত্র এলোমেলো করে দেখছে শেখাওয়াত।
কোথাও একটা ঘাপলা আছে। কাদের টার্গেট করা হচ্ছে, কেন করা হচ্ছে।

কিসের জন্যে এত ক্ষোভ সবার প্রতি। অবশেষে সমস্ত যোজন বিয়োজন করার পর আসল কিছু তথ্য শেখাওয়াতের হাতে আসে। আর এমন কিছু তথ্য তার হাতে আসে যা একটা কেইস অপর কেইসের সাথে মিলিত তার সব জটলা প্রায় অর্ধেকটা খুলে দেয়। খুনীর টার্গেট ১৮~২৫ বছরের ছেলে এবং মেয়ে। তবে মেয়েদের টার্গেট একটু বেশি করা হয়। এবং খুনী তার টেস্ট অনুযায়ী খুন করে।

এইসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে করতে রাত ১১ টায় আসল ক্লু তার হাতে ধরা পড়ে। এখন শুধু কাল সকালের অপেক্ষা। শেখাওয়াত তার পাওয়া প্রথম ক্লু অনুযায়ী প্রথম ধাপে কাজ শুরু করবে।


পর্ব ৪

রাত ১ টা নাগাদ শেখাওয়াত বাসায় পৌঁছায়। এত রাতে কেউ সজাগ থাকবে না ভেবে ভিষণ ইতস্তত হচ্ছিলো শেখাওয়াতের। আজ সত্যিই একদম দেরি হয়ে গেছে তার।

এত রাতে বাসায় ডোরবেল বাজানো ঠিকও হবে না। বাবা মা দুজনেই বয়স্ক মানুষ। কিভাবে ডোরবেল বাজাবে সেই চিন্তায় খানিকটা দাঁড়িয়ে যায় শেখাওয়াত। কিন্তু নাহ, শেখাওয়াতকে বেশি সময় দাঁড়াতে হয় নি। তার আগেই ঝুম এসে দরজা খুলে দেয়। এই মুহুর্তে ঝুমের দরজা খোলা দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে যায় শেখাওয়াত। সে তো ভেবেছিল যে হয়তো ঝুমও ঘুমিয়ে গেছে।

পরে পরে ভেবে চিন্তে দুইয় দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেললো। ঝুম ঘুমায় নি, হয়তো জানালা দিয়ে দেখেছে তার গাড়ি বাসার ভেতর ঢুকেছে তাই ডোরবেল দেয়ার আগেই ঝুম এসে দরজা খুলে দেয়। টেবিলের উপর খাবার সব সাজানোই ছিল। তবুও ঝুম একবার জিজ্ঞেস করে নেয়,
~ আপনি খাবেন তো এখন?

ঝুমের প্রশ্নে শেখাওয়াতের পা জোড়া আটকে যায়। ক্ষুধাও লেগেছে প্রচুর তার। হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে শেখাওয়াতও নিজের রুমে চলে যায়। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে তারপর সোজা ডাইনিং রুমে চলে যায়। শেখাওয়াত যাওয়ার আগেই ঝুম সব সার্ভ করে দেয় যাতে শেখাওয়াতের কিছু চাওয়া না লাগে। টেবিলে খাবার সার্ভ করার ব্যাপারে শেখাওয়াত বরাবরই একটু খুতখুতে স্বভাবের।

শেখাওয়াতের মায়ের বেলাতেই সেইম কেইস করে শেখাওয়াত। তবে খাবার সার্ভের ব্যাপার টা ঝুম বেশ ভালো পারে। আর শেখাওয়াত এটা মানেও যে টেবিলে খাবার সার্ভ করার কাজে ঝুম বেশ এক্সপার্ট। শেখাওয়াত কোন কথা না বলেই খেতে বসে যায়। ঝুম তখন বাকি খাবার গুলো সরাচ্ছিলো।

খাবার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ঝুমের দিকে শেখাওয়াতের দৃষ্টি বেশ ভালো ভাবেই যাচ্ছিলো। শেখাওয়াত খেয়াল করে ঝুম আর আগের মত তার দিকে তাকায় না। আগের মত কথা বলে না। আগের মত শেখাওয়াতের কাছে আসে না। মুখ চোখের অবস্থাও ভালো না ঝুমের।

তবে কি সে রাতে শেখাওয়াতের বলা কথা গুলো ঝুমকে আঘাত করেছিল? শেখাওয়াত বরাবরই কাজ পাগল মানুষ। যা একবার শুরু করে তা শেষ না হওয়া অবদি তার শান্তি হয় না। কিন্তু, তাই বলে এইভাবে কোন মেয়ের সাথে ব্যবহার করাটাও তার ঠিক হয় নি। ঝুমের মন মানষিকতা এখন কেমন আছে তা জানার জন্যে ঝুমের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। আর শেখাওয়াত সেই কাজ টাই করেছে।

ঝুমকে উদ্দেশ্য করে শেখাওয়াত বলে,
~ বাবা মা খেয়েছে?

শেখাওয়াতের প্রশ্ন ঝুম রান্নাঘর থেকেই শুনতে পেয়েছে। ঝুম বরাবরই ছোট শব্দে কথা বলে। তার কন্ঠস্বর এমনিতেই ছোট, এভাবেই কথা বলে সে ছোট বেলা থেকে। রান্নাঘর থেকে উত্তর দিলেও তা শেখাওয়াতের কান অবদি এসে পৌঁছাবে না। তাই রান্নাঘরের কাজ সেড়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়েই উত্তর দেয়।

~ হ্যাঁ, খেয়েছে।
~ তুমি খেয়েছো?
শেখাওয়াতের পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর দেয়া ঝুম প্রয়োজন করে নি তাই উত্তরয়া স্কিপ করে যায় সে। ঝুমের কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে শেখাওয়াতও আর তেমন কথা বলে নি। খাওয়া শেষ হয়ে গেলে উঠে চলে যায় সে। আর ঝুমও এটো প্লেট বাটি যা ছিল রান্নাঘরে নিয়ে রেখে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

রুমে এসে শেখাওয়াত ভাবছে ঝুম অনেকটা চুপ হয়ে গেছে। কেমন জানি হয়ে গেছে। সাধারণত ঝুম এমন মেয়ে না তবুও হিসাব মেলাতে পারছে না সে। আর আজ বিকেলে ঝুমের রুমে এইভাবে বিনা অনুমতিতে ঢুকে গিয়ে ও~কে ইচ্ছামত ঝেড়ে আসা টাও উচিত হয় নি তার।

তবে একটা জিনিস শেখাওয়াত লক্ষ্য করেছে আর তা হচ্ছে শেখাওয়াতের কোন কথার পরিপ্রেক্ষিতে ঝুম একটা কথাও বলে না আজকাল। সেদিন রাতের পর থেকে শেখাওয়াতের সামনেও আসে না তেমন। এইসব ভাবতে ভাবতেই সিগারেটে আগুন ধরায় শেখাওয়াত।

মাথা ঘাড় দুটোকেই নাড়া দিয়ে উঠে সে। আপাতত ঝুম বাদ, এখন একটাই লক্ষ্য খুনীকে ধরা। কাল সকাল বেলা জায়গামত পৌঁছাতে হবে। টার্গেট কর‍তে হবে তাকে যার চোখের সামনে এত কিছু হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে অথচ সে এখনও চুপচাপ বসে আছে। কি করে বসে আছে এটাই দেখবে শেখাওয়াত কাল। এইসব ভাবতে ভাবতে আর সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ব্যালকনির দিকে যায় শেখাওয়াত। শেখাওয়াতের ফ্ল্যাটে ড্রইংরুমের সাথে বেশ বড় সড় একটা ব্যালকনি আছে।

সেখানে প্রায় ৩০ আইটেমের ফুলের গাছ সারি সারি করে লাগানো। এইসব ফুল গাছের পরিচর্যা ঝুমই করে থাকে। তার ফুল অনেক প্রিয়, তাই সে এই বাসার ব্যালকনিটাকেই তার নার্সারি বানিয়ে ফেলেছে। শেখাওয়াতের রি মুহুর্তে ব্যালকনিতে যাওয়ার একটাই উদ্দেশ্য, সে এই নিস্তব্ধতার মাঝে নিজের মস্তিষ্কে এই খুনগুলোর পুরো মজলিশটা সাজাতে চেয়েছিল।

কিন্তু আফসোস তা আর হলো না। কারণ সেখানে ইতোমধ্যে আরেকজনের উপস্থিতি আগে থেকেই ঘটে গিয়েছে। শেখাওয়াত ব্যালকনির দরজা থেকেই দেখতে পেয়ে যায় সেখানে ঝুম দাঁড়িয়ে আছে।
ব্যালকনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে।

চাঁদের আলো আর রাস্তার লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো ঝুমকে। শেখাওয়াত তখন টাউজারের পকেট থেকে মোবাইল বের করে ঘড়ি দেখে। ঘড়িতে তখন ২ টা বেজে ১৫ মিনিট। এত রাতেও ঝুমের চোখে ঘুম নেই। সে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে ওড়না ছিল না তার।

এত রাতে কেউই সজাগ থাকবে না এই বাসায় হয়তো এটা ভেবেই আর ওড়না নেয় নি গায়ে সে। কিন্তু সে তো আর জানতো না এই মুহুর্তে শেখাওয়াতও এইখানে এসে উপস্থিত হবে।

এদিকে সিগারেটের স্মেল নাকে আসতেই ঝুম পেছন ফিরে তাকায়। আর শেখাওয়াতকে সেখানে দেখতে পায়। শেখাওয়াতকে এই সময়ে এখানে দেখতে পেয়ে একটু বিচলিত হয়ে পড়ে ঝুম। বিচলিত বললে ভুল হবে, সে থতমত খেয়ে গেছে। একে তো এত রাতে এখানে তার উপর আবার গায়ে ওড়না নেই শেখাওয়াত তো প্রশ্নের ঝুঁড়ি নিয়ে থাকে সব সময়। তাই এই সময়ে শেখাওয়াত মানে সে শেখাওয়াত নয় সে প্রশ্নের একটা বক্স।

ঝুম শেখাওয়াতকে অনেকটা এড়িয়ে গিয়ে চলে যায় নিজের রুমে। শেখাওয়াতও তেমন কিছু আর বলে নি। শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে সিগারেট ফুকছে।

পরদিন,
সকাল ১১ টা,
স্থান ~ মুক্তিনগর মডেল কলেজ
শেখাওয়াত এবং তার টিম এই মুহুর্তে সেই কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে অবস্থান করছেন। প্রিন্সিপাল স্যার তার চেয়ারে বসা এবং অপরপাশের চেয়ারে শেখাওয়াত বসা। একটার পর একটা প্রশ্ন করা হচ্ছে প্রিন্সিপাল নন্দন কুমার দাশকে। কিন্তু তিনি ব্যাপারটাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাচ্ছেন।

শেখাওয়াত তখন আরও পেঁচিয়ে ধরে নন্দন কুমার দাশকে। তখন সে মুখ খুলতে বাধ্য হয়। তখন শেখাওয়াত বলে,
~ এ যাবত টোটাল খুন ৮ টা। যেই ৮ জনকে খুন করা হয়েছে তার মধ্যে ৫ জনই এই কলেজের স্টুডেন্ট অথচ আপনি এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ গোপন করে গেছেন। কেন?

~ দেখুন অফিসার, তারা এই কলেজের স্টুডেন্ট এটা ঠিক তবে তারা কেউ কলেজ থেকে গায়েব হয় নি।
~ আরে আশ্চর্য তো, এই কলেজ থেকে গায়েব হয় নি তবে এই কলেজের স্টুডেন্ট তো তারা। আপনি পুরো কলেজের কাছ থেকে এটা লুকিয়ে গেছেন।

~ আমার এই কলেজে সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার স্টুডেন্ট। আমি যদি এই খুনের কথা জানিয়ে দিতাম তাহলে আমার কলেজ অফ হয়ে যেতো আর আমি বার বার বলেছি যে ওরা আমার কলেজ থেকে গায়েব হয় নি। হয়েছে অন্য কোথাও থেকে।

~ আপনার মাঝে মনুষ্যত্বই নেই, আপনি কলেজ নিয়ে ভাবছেন আরে মানুষ বেঁচে থাকলে তো আপনার কলেজ চলবে ঠিক মত।

~ এইসব নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।

~ ফার্স্ট ইয়ারের তিন জন সেকেন্ড ইয়ারের দুইজন। যার মাঝে ৪ জন মেয়ে আর ১ জন ছেলে। নেক্সট টার্গেট যদি থার্ড ইয়ারের কোন স্টুডেন্ট কিংবা ফোর্থ ইয়ারের কোন স্টুডেন্ট হয় তখন কি করবেন আপনি?

~ দেখুন অফিসার খুনী যাতে আর খুন করতে না পারে সেদিক দেখবেন আপনি।এটা আপনার ডিউটি।
~ আমি আমার ডিউটি টা খুব ভালো মত বুঝি। কিন্তু মিষ্টার নন্দন কুমার দাশ আর একটা স্টুডেন্ট যদি মিসিং হয় তার দ্বায় ভার আপনার।

~ আশ্চর্য আমার কেন হতে যাবে?

~ আপনি যদি এখন সবাই সতর্ক করতেন তবে সব স্টুডেন্টরা সতর্ক হয়ে যেতো। কিন্তু আপনি আপনার কলেজের রেপুটেশনের জন্যে সবটা চেপে যাচ্ছেন। আপনি আরেক অপরাধ করছেন মিষ্টার নন্দন কুমার দাশ।
~ anyway, i’m busy right now . please you can go .
~ ok, এই মুহুর্তে যাচ্ছি কিন্তু পরবর্তীতে আপনাকে আবারও বিরক্ত করতে পারি।

শেখাওয়াত প্রিন্সিপাল নন্দন কুমারের কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। এক নজরে পুরো ক্যাম্পাসটায় চোখ বুলিয়ে নেয় সে। ক্যাম্পাসের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ৫ জন মেয়ের দিকে নজর যায় শেখাওয়াতের। যার মাঝে হলুদ সালোয়ার কামিজ পরিধান করা মেয়ের দিকে তার চোখ অনায়াসেই পড়ে যায়।

চোখের সানগ্লাস টা খুলে আরেকটু ভালো করে তাকায় মেয়েটির দিকে সে। ঠোঁটের কোনে হালকা মুচকি হাসি দিয়ে শেখাওয়াত সেই ৫ জন মেয়ের কাছে যায়। মেয়েগুলো তখন নিজেদের মাঝে কথা বলায় ব্যস্ত ছিল। শেখাওয়াত সামনে এগুচ্ছে আর সেই ৫ জন মেয়ের মাঝে থাকা হলুদ ড্রেস পরা মেয়ের দিকে তাকাচ্ছে। ওই ৪ জনের মাঝে সেই একমাত্র মেয়ে যে এইখানে থেকেও নেই।

মনে হচ্ছিলো তার শরীর এখানে পড়ে আছে কিন্তু তার ভাবনা অন্যকোথাও।
শেখাওয়াত কাছে গিয়ে সেই মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে,
~ রোজ ক্যাম্পাসে আসো কেন? এইভাবে আড্ডা দেয়ার জন্যে?

শেখাওয়াতের কথা শুনে মেয়েগুলো বেশ চমকে যায় আর সব থেকে বেশি অবাক হয় হলুদ ড্রেস পরা মেয়েটা। শেখাওয়াতের দৃষ্টি তখনও সেই হলুদ রঙের ড্রেস পরা মেয়েটির দিকে। চোখের সামনে এই রকম একজন ড্যাসিং পারসোনালিটির হ্যান্ডসাম পুরুষ দেখলে যে কোন মেয়ের মাথা ঘুরে যায়। এক্ষেত্রে সেই ৪ টি মেয়েরও ব্যাতিক্রম ঘটে নি।

এদিকে শেখাওয়াতের এমন প্রশ্ন শুনে হলুদ রঙের ড্রেস পরা মেয়েটি সোজা উল্টো দিকে হাটতে শুরু করে যা শেখাওয়াতের ভালো লাগে নি। ওই মেয়েদের এক্সিউজ মি বলে সেই মেয়েটিকে গিয়ে আটকায় শেখাওয়াত।
~ ঝুম দাঁড়াও।

তার মানে হলুদ রঙের ড্রেস পরা মেয়েটি আর কেউ না ঝুম ছিল। শেখাওয়াতের প্রখর দৃষ্টি ঝুমকে পাতাল থেকেও খুজে বের করতে পারে আর এটা তো মাত্র ক্যাম্পাস। ঝুম শেখাওয়াতের কথায় তেমন পাত্তা দেয় নি। আর ঝুমের থেকে পাত্তা সেটা শেখাওয়াতও আশাও করে না।

তবুও শেখাওয়াত ঝুমকে প্রশ্ন করে,
~ ক্যাম্পাসে গল্প করা আর আড্ডা দেয়ার জন্যে আসো নাকি?

~ এটা আমার কলেজ এখানে নিশ্চয়ই আপনার বাসার নিয়ম কানুন চলবে না।
~ বাবা মায়ের টাকা পয়সা আর আমার বাসার অন্য এইভাবেই ধ্বংস করছো?

~ Mind your language .
~ Mind ing my language but ক্লাস রেখে বাহিরে আড্ডা দেয়া টা কি উচিত?
~ আমার ক্লাস শেষ, আমি কিছুক্ষণ পরেই বাসায় চলে যাবো।

~ কিছুক্ষণ পর কেন? সেদিন কি বলেছিলাম যে কলেজ ক্লাস আর বাসা।

~ আপনি কে হোন আমার? আমিই বা কে হই আপনার? কেন এত তদারকি করছেন আমার ব্যাপারে? আর আমি শুনতেই বা যাবো কেন?

~ কোন সমস্যা হলে তো তোমার বাবা মাকে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে তাই না?
~ আশা করি দিতে হবে না।

ঝুমের কথা শুনে শেখাওয়াত মুচকি হেসে সানগ্লাসটা পরে নেয়। ঝুম তখন প্রশ্ন করে,
~ আপনি এই কলেজে কি করেন?

~ আমার যখন যেখানে কাজ পড়ে সেখানেই তো যেতে হয়। এ আর নতুন কি?
~ কলেজে কাজ?

~ কেন থাকতে নেই বুঝি?

~ ওয়েট, গাড়িতে উঠো। আমি বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাবো।

~ ধন্যবাদ, এতটা না করলেও চলবে আমার জন্যে।

~ চুপচাপ গাড়িতে উঠো নয়তো ক্রিমিনালদের যেভাবে টানতে টানতে গাড়িতে তুলি ঠিক সেইভাবেই তোমাকেও তুলবো। No No, তুলিতে বাধ্য থাকিবো, এই আর কি।

এই মুহুর্তে শেখাওয়াতকে এক সেকেন্ডের জন্যেও সহ্য হচ্ছে না ঝুমের। কিন্তু শেখাওয়াতের টেম্পারেচার সম্পর্কে ঝুম আগে থেকেই অবগত। তাই আর বেশি ঝামেলা করে নি। শেখাওয়াত বলার সাথে সাথে সোজা গিয়ে গাড়িতে বসে যায় সে। হাফিজ অফিসের গাড়িতে করে আর শেখাওয়াত তার গাড়িতে করে ঝুমকে নিয়ে রওনা হয় বাসার উদ্দেশ্যে।

আধা ঘন্টা পর,
ঝুমকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে শেখাওয়াত সোজা অফিসে চলে যায়। সেখানে আর দুজনের মাঝে একটা কথাও হয় নি।

বিকাল ৫ টা বেজে ৩৫ মিনিট,
অফিসে শেখাওয়াত সব কাগজ পত্র আবারও ঘাটাঘাটি করছে। কিন্তু হুট করেই হাফিজ শেখাওয়াতের রুমে প্রবেশ করে।

~ স্যার,
~ জ্বি, কিছু বলবে হাফিজ?

~ স্যার এক জোড়া দম্পতি এসেছে।

~ অফিসে?
~ জ্বি
~ ভেতরে নিয়ে আসো।

হাফিজ বাহিরে গিয়ে তাদের ভেতরে নিয়ে আসে। শেখাওয়াত তখন কাজ করছিল, এরই মাঝে একজন ভদ্রলোক আর একজন ভদ্রমহিলা হুমড়ি খেয়ে পড়ে শেখাওয়াতের সামনে। তাদের দেখে শেখাওয়াত বেশ চমকে যায়।
~ স্যার, স্যার?

~ জ্বি বলুন,
~ স্যার?
~ আগে বসুন, তারপর বলুন কি হয়েছে?

~ স্যার আমার ছেলে গত দুইদিন আগে নিখোঁজ হয়েছে। মডেল থানায় কমপ্লেইন করতে গেলাম তারা এখানে পাঠালো।

ভদ্রলোকের কথা শুনে শেখাওয়াতের মনের সন্দেহ আরও গাঢ় হয়ে যায়। তার মানে আরেকটা খুনের আগাম হদিস পেয়ে গেলো শেখাওয়াত। দুইদিন আগে নিখোঁজ হয়ে গেছে জানা নেই কবে আর কোথায় আর কি অবস্থায় তার লাশ টাও পাওয়া যাবে।


পর্ব ৫

কোথাও একটা গন্ডগোল আছে। হুট করে আরেকটা ছেলের এইভাবে গায়েব হয়ে যাওয়া দেখে বড় বেশি টেনশন হচ্ছে শেখাওয়াতের। ছেলেটার সমস্ত ডিটেইলস নিয়ে চারদিকে খবর পাঠানো হয়ে গেছে।

আর সেই রুমটার চারপাশে পাহাড়া বসিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে কোন রূপ অঘটন ঘটে যাওয়ার আগেই সেই ছেলেটাকে উদ্ধার করতে পারে তারা।

কায়সার মাহমুদ ছেলের নাম। মুক্তিনগর মডেল কলেজে বাংলায় স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্র সে। আবারও সেই মুক্তিনগর মডেল কলেজ। শেখাওয়াত যা অনুমান করেছিল ঠিক তাই~ই হচ্ছে। কায়সারের বাবাকে শেখাওয়াত প্রথম থেকে শুরু করে একদম কায়সার মিসিং হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সব জিজ্ঞেস করছে আবারও।
~ আপনার ছেলে কি সেদিন কলেজে গিয়েছিল?

~ না স্যার।
~ তবে? কি হয়েছিল সেদিন? দেখুন মিষ্টার মাহমুদ কিচ্ছু লুকাবেন না। লুকালে আপনাদেরই লস হবে।
~ স্যার ও গত এক সপ্তাহ যাবত কলেজেই যায় নি। বাসাতেই তো ছিল।

~ তাহলে গায়েব হলো কি করে?
~ স্যার গত পরশুদিন ও বাসাতেই ছিল। কিন্তু, রাত আনুমানিক ৭ টা কি সাড়ে ৭ টা হবে আমি ও~কে ফার্মেসিতে পাঠিয়েছিলাম এক পাতা ঔষধ আনার জন্য।

~ তারপর?
~ তারপর আর ঘরে ফিরে নি স্যার। তারপর আমার ছেলেটা আর ঘরে ফিরে নি।

~ আপনি সেইখানে যান নি আই মিন ফার্মেসির কাছে যান নি বা কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন নি।

~ স্যার আমি ওর দেরি দেখে সাথে সাথে গিয়েছিলাম সেখানে। ফার্মেসির হারুন ভাই আমার পরিচিত লোক। তিনি বললেন, কায়সার মেডিসিন নিয়ে বেরিয়ে বাসার দিকে এসেছে। কিন্তু না স্যার, ও তো বাসাতেই আসে নি স্যার।
~ সেখানে আর কেউ ছিল না?

~ স্যার আমাদের কলনিতে ৮ টার পর পরই সব চুপচাপ হয়ে যায় স্যার। তেমন কেউই ছিল না।
~ যত দ্রুত সম্ভব আমরা আপনার ছেলেকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো।

~ আমরা সারাজীবন আপনার কেনা গোলাম হয়ে থাকবো স্যার।

~ ছি ছি কি বলছেন এসব। এটা আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য দুটোই। আপনারা আসুন।

কায়সারের বাবা মাকে শান্ত করে শেখাওয়াত পাঠিয়ে তো দিল কিন্তু সে কি পারবে তাদের সন্তানকে ফিরিয়ে এনে দিতে। মিষ্টার এবং মিসেস মাহমুদ চলে যাওয়ার পর শেখাওয়াত হাফিজকে ডেকে নিজের কেবিনে আনে।

~ আমি আর কোন রিস্ক নিতে চাই না হাফিজ। ওই রুমটায় আজ নয় কাল আবারও কাউকে নৃশংস ভাবে খুন করা হবে। আমাদের সবাইকে সাবধান হতে হবে।

~ জ্বি স্যার, আমি ইতোমধ্যে সেখানে লোক লাগিয়ে দিয়েছি।

~ হাইওয়েতেও চার জন লোক নিয়োগ করে দেও। কারণ খুনী খুন করে সেই লাশটা যাতে আমাদের চোখে পড়ে সেজন্য লাশকে হাইওয়েতে এনে ফেলে রাখে। তাকে আর এটা করতে দেয়া যাবে না। সেখানেও লোক লাগাও হাফিজ।
~ ওকে স্যার।

শেখাওয়াত সব ব্যবস্থা করে ফেলে। শহর থেকে বের হতে যতগুলো বড় রাস্তা পড়ে সব গুলো রাস্তায় পুলিশ নিয়োগ করে দিয়েছে। সকল নদীবন্দর গুলো তেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোথাও ঝামেলা দেখলেই যাতে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে পারে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সেই সাথে কায়সারকে খুঁজে বের করার পুরো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে শেখাওয়াত।

এইসব করতে করতে কখন যে রাত আড়াইটা বেজে গেছে শেখাওয়াতের খবরও নেই। বাসায় এসে দরজা খোলা পায় সে। মেইন দরজা খোলা পেয়ে ক্ষনিকের জন্যে ভয় পেয়ে যায় সে। ক্রাইম ব্রাঞ্চের একজন বড় অফিসার সে। রোজ রোজ খুন খুনী লাশ এইসব নিয়ে থাকতে হয় তাকে।

কিন্তু সমস্যা যখন নিজের পরিবারের দিকে আসে তখন তেমন তেমন অফিসারও অসহায় হয়ে যায়। শেখাওয়াত দ্রুত ঘরে ঢুকে যায়। সোফায় ঝুমকে বসে থাকতে দেখে শেখাওয়াত আরও অবাক হয়। রাত প্রায় পৌনে তিনটা আর ঝুম এখনও সজাগ। তার মানে ঝুমই দরজা খুলে বসে ছিল এখানে।

শেখাওয়াত দরজা লাগিয়ে ঝুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজের সামনে এইভাবে শেখাওয়াতকে দেখে ঝুম চুপ করে থাকে। হাতে থাকা ম্যাগাজিন টা বন্ধ করে নিজের রুমে চলে যেতে নিলে ঝুমের বাম হাত টা শক্ত করে ধরে শেখাওয়াত ৷ তার হাতটা শেখাওয়াতের এইভাবে ধরা দেখে থমকে যায় ঝুম। ঝুমের শরীর টা অনেকটা তুলোর মত তুলতুলে। গায়ের রঙ ফর্সা না হলেও উজ্জ্বল শ্যামলা রঙের। চোখ গুলো খুব সুন্দর যেন আর্ট করা। ঠোঁটটাও ঠিক তেমন, উপরের ঠোঁট টা চিকন আর নিচের ঠোঁট টা মাঝারি মোটা।

ঝুমের একটা বিশেষত্ব আছে যা শেখাওয়াতের বেশ ভালো লাগে আর তা হচ্ছে, ঝুম কখনও অতিরিক্ত সাজে না। যেখানেই যায় অনেকটা সিম্পল ভাবে যায়। এই মেয়েটাও যে তার প্রেমে পড়তে পারে কখনও সে ভাবেও নি।
প্রথম প্রথম ঝুমের এমন ছেলেমানুষী শেখাওয়াতকে অনেক পেইন দিতো কিন্তু সে রাতের পর থেকে শেখাওয়াতের কাছ থেকে ঝুম অনেকটা দূরে সরে গেছে।

ঝুম এতই দূরে সরে গেছে শেখাওয়াতের জন্যে তার মনে থাকা সমস্ত অনুভূতি গুলো এখন আর বাহিরে প্রকাশিত হয় না। আগে ঝুমের ছেলেমানুষী শেখাওয়াতকে পেইন দিতো আর এখন ঝুমের এই নিশ্চুপতা আর নীরবতা শেখাওয়াতকে পেইন দেয়। হ্যাঁ বড্ড বেশি পেইন দেয়।

শেখাওয়াত ঝুমের হাতটা তখনও ছাড়ে নি। এইভাবে অন্যের কাছে বাঁধা হয়ে থাকতে ঝুমের অসহ্য লাগছে। তাই কিছুক্ষণ নিজেই চেষ্টা করে হাতটা ছাড়াতে কিন্তু পারে নি। তাই বাধ্য হয়েই সে শেখাওয়াতকে বলে,
~ হাতটা কি ছাড়বেন না?
~ যদি না ছাড়ি।

~ আপনাকে এইসবে মানায় না।
~ কোন সবে?
~ রুচিহীণ নারীর কাছে আর যাই হোক আপনার মত রুচিশীল পুরুষ যেতে পারে না, তাই না?
ঝুম খুব শান্ত গলায় শেখাওয়াতকে সেদিন রাতের পালটা জবাব দিয়ে দেয়। শেখাওয়াত তখন ঝুমের দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দেয়। তারপর হালকা টানে ঝুমকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
~ এইভাবে মেইন দরজা খুলে বসে ছিলে কেন?

~ এমনি।
~ এমনি নাকি আমার অপেক্ষায় ছিলে?
~ এমনিতেই হাওয়া খাচ্ছিলাম।
~ ব্যালকনিতে আজ হরতাল পড়েছে নাকি?

ঝুম শেখাওয়াতের সাথে কথায় না পেরে চুপ করে থাকে। আর শেখাওয়াত এই চুপচাপের ফায়দা নেয়।
~ এইভাবে মাঝ রাতে দরজা খুলে রাখবে না আর। চারপাশের অবস্থা ভালো না।
~ অবস্থা বুঝে আমার কি কাজ?

~ ঝুম, এইবার বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্ত। সব কথায় প্যাচ লাগাচ্ছো কেন?
~ আপনি যা যা বলেছেন আগে এবং পরে আমি সব টাই মেনে নিয়েছি। এখন আর এখানে বাড়াবাড়ির কিছু নেই তো। হাতটা ছাড়ুন, লাগছে আমার।

শেখাওয়াত ঝুমের হাতটা ছেড়ে দেয়। ঝুম দুই কদম এগিয়ে গিয়ে আবার পেছনে ফিরে তাকায়।
~ আপনার জন্য কি খাবার সার্ভ করবো?
~ দরকার নেই আমি খাবো না।
~ আচ্ছা।

এই বলে ঝুম নিজের রুমে চলে যায়। সত্যিই মেয়েটা বদলে গেছে। সেদিন রাতে শেখাওয়াতের বলা কথা গুলো আজ ঝুমকে পাল্টে দিয়েছে অনেকটা। আর ঝুমের এই পাল্টে যাওয়াটা শেখাওয়াত মেনে নিতে পারছে না। তবে কি শেখাওয়াতের মন টাও ঝুমের দিকে ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে।

দুই দিন পর,
আজ দুইদিন যাবত পরিস্থিতি পুরো চুপচাপ। সব দিক দিয়ে শান্ত এবং চুপচাপ। তবে চুপচাপ থাকাই কিন্তু ঝড়ের পূর্বাভাস। শেখাওয়াত তখনও কায়সারকে খুঁজতে ব্যস্ত। কিন্তু কোথাও পায় নি। একটা ক্লু প্রয়োজন তার, যেই ক্লুয়ের দ্বারা সে সামনে এগুতে পারে। চোখের সামনে সব কিছু নীট এন্ড ক্লিন কিন্তু চোখের অগোচরে হয়ে যাচ্ছে সব থেকে বড় ক্রাইম। কিছুই বুঝতে পারছে না শেখাওয়াত। শেখাওয়াত আবারও অন্ধকারে ঢিল মারবে। সোজা পৌঁছে যায় মুক্তিনগর মডেল কলেজে। যেহেতু কায়সার সেই কলেজের ছাত্র তাই শেখাওয়াতের টার্গেট সেই কলেজটাই।

স্থান ~ মুক্তিনগর মডেল কলেজে
দুপুর ১২ টা বেজে ২৯ মিনিট,
শেখাওয়াত প্রিন্সিপাল নন্দন কুমার দাশের সামনে। নন্দন কুমার বেশ ইজিলি বসে আছে চেয়ারে। শেখাওয়াত খুব ভালো মত পর্যবেক্ষণ করছে তাকে।

~ আপনি কি জানেন আপনার কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্র কায়সার মাহমুদ আজ ৫ দিন যাবত নিখোঁজ।
~ আমার কলেজ থেকে তো নিখোঁজ হয় নি।

~ আমার তো আপনাকে এখন সন্দেহ হচ্ছে মিষ্টার দাশ।
~ দেখুন অফিসার, লিমিটের মাঝে থাকুন। আপনি কাকে কি বলছেন?
~ আপনার কাউকে সন্দেহ হয় কিনা বলুন তো?

~ নাহ আমার কাউকে সন্দেহ হচ্ছে না।
~ ওকে, তাহলে আপনার কলেজের স্টুডেন্টই কেন মিষ্টার দাশ?
~ I don’t know .

~ দেখুন মিষ্টার দাশ এইভাবে এড়িয়ে গেলে আরও মায়ের বুক খালি হবে, প্লিজ কো~অপারেট।
~ দেখুন অফিসার এই পুরো কলেজের ভার টা আমার উপর। আমি খুব ব্যস্ত এই কলেজের ব্যাপারে। এইসব ছোট খাটো ব্যাপারে আমাকে জড়াবেন না প্লিজ।

~ আরে আশ্চর্য তো আপনি আমাদের যা জানেন তা বলবেন তো তাই না?
~ আমি যদি জানতাম অবশ্যই আপনাকে বলতাম। এইভাবে বসে থাকতাম না অফিসার, আফটার অল এরা আমার স্টুডেন্ট। আমারও কিছু দায়িত্ব আছে।

~ কেমন দায়িত্ব আপনি পালন করছেন তা তো দেখতেই পাচ্ছি আমি।
প্রিন্সিপাল নন্দন কুমার দাশের সাথে কথা বলার মাঝেই শেখাওয়াতের ফোনে ফোন আসে। শেখাওয়াত ফোন ধরতেই হাফিজ ভাঙা কন্ঠে বলে উঠে,

~ স্যার,
হাফিজের এমন ভাঙা কন্ঠ শুনে শেখাওয়াতের আত্মাটা কেঁপে উঠে। হাফিজ কখনও এইভাবে কথা বলে না। আজ বলছে তার মানে কিছু একটা হয়েছে।

~ Anything wrong হাফিজ?
~ স্যার আমরা হয়তো আরেকটা প্রাণকেও বাঁচাতে পারলাম না।

~ মানে?
~ স্যার মুক্তিনগর রেলওেয়ের পাশে একটা ট্রলি ব্যাগ পাওয়া গেছে।

~ What?
~ জ্বি স্যার, স্টেশন থেকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে স্যার। ব্যাগটা থেকে রক্ত পড়ছে, আমি ডিরেক্ট এখানে এসে গেছি। আপনি দ্রুত আসুন, আপনি আসলেই ব্যাগে হাত দেয়া হবে।

হাফিজের কথা শুনে শেখাওয়াত নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। সামনে বসে থাকা প্রিন্সিপাল নন্দন কুমার দাশকে উদ্দেশ্য করে বলে,
~ মিষ্টার দাশ, আপনার কলেজ হয়তো আরেকটা তাজা প্রাণ হারালো।
এই বলে শেখাওয়াত বেরিয়ে যায়। গন্তব্যস্থল মুক্তিনগর রেলওয়ে স্টেশন। সেখানে হয়তো আরেকটা লাশ শেখাওয়াতের জন্য অপেক্ষা করে আছে। না জানি সেখানে আর কোন বিকৃত অবস্থায় লাশ দেখতে হবে তাকে।


পর্ব ৬

আধা ঘন্টার মধ্যে শেখাওয়াত স্পটে পৌঁছে যায়। সাথে নিয়ে এক বুক হতাশা। জানা নেই এই লাশ টা কার? জানা নেই আবার কোন মায়ের বুক খালি হলো? জানা নেই এই লাশ টা কি সেই ছেলের যাকে খুঁজে বের করার জন্যে আজকে ২ টা দিন শেখাওয়াত রাত দিন পুরো এক করে দিয়েছিল।

স্পটে পৌঁছেই অর্ডার দিয়ে দেয় ব্যাগ খোলার। রেলওয়ে স্টেশনের কাছে প্রায় ২০০+ লোক উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে ব্যাগের মাঝে কি আছে তা দেখার জন্যে। ব্যাগটা যেখানে রাখা আছে তা থেকে শুরু করে প্রায় অনেকটা জায়গা জুড়ে কাটা তারের বেড়া দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে যাতে বাহিরের কেউ এখানে না আসতে পারে।

কন্সটেবল হাফিজ শেখাওয়াতের পারমিশন পেয়ে কাজ শুরু করে দেয়। দুজন লোক দিয়ে ব্যাগটা খোলায়। ব্যাগ খোলার সাথে সাথে হাফিজ উফফ নামক একটা শব্দ করে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

শেখাওয়াত এগিয়ে গিয়ে আৎকে উঠে। যেই দুজন লোক ব্যাগটা খুলেছে তারাও কুকড়ে যায়। এইভাবে কেউ কাউকে?
শেখাওয়াতের কথায় লাশটাকে ব্যাগ থেকে নিচে নামানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে সাদা কাপড় বিছিয়ে লাশের একেকটা অংশ রাখা হয়। অংশ, হ্যাঁ লাশের অংশ, শরীরের অংশ। দুটো হাত কাটা, দুটো পা কাটা, গলাটাও কাটা, গলার নিচ থেকে শুরু করে নাভির নিচ পর্যন্ত ফাঁড়া। নাড়িভুঁড়ি গুলো বের করে একপাশে রেখে দেয়া।

মাথাটা কেটে লাশের নিচে রাখা হয়েছে। চোখ নেই আর মাথাটাও ফাঁড়া। হয়তো মগজ বের করে নেয়া হয়েছে। পুরো বডিটায় মা’রের চিহ্ন ৷ কেন যেন মনে হচ্ছে খুন করার আগে ইচ্ছামত মারা হয়েছে। সব মিলিয়ে এক বিভৎস লাশ।

তবে এইবারের লাশ টা অন্য রকম। চেহারা নষ্ট করা হয় নি। না~ই করা হয়েছে এসিড প্রয়োগ। একদম নিখুঁত ভাবে চোখ দুটো তুলে ফেলা হয়েছে। অন্ততপক্ষে এইবারের লাশটা কার তা সনাক্ত করা যাবে। ব্যাগটার কোনায় ছোট্ট একটা প্যাকেট। শেখাওয়াত প্যাকেট টা তুলে এপাশ ওপাশ চেয়ে প্যাকেট টা খুলে। সেখানে একটা চিরকুট আর একটা আইডি কার্ড। আইডি কার্ড বলতে স্টুডেন্ট আইডি।

যাতে স্টুডেন্টের ছবি সাথে নাম শ্রেণী সব থাকে আর কি। শেখাওয়াত স্টুডেন্ট আইডি কার্ড টা দেখার সাথে সাথে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলেন। কারণ স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের এই মানুষটাকে সে বাঁচাতে পারে নি।
নাম : মোহ. কায়সার মাহমুদ

বিভাগ : বাংলা
শ্রেণী : স্নাতক ২য় বর্ষ
কলেজ : মুক্তিনগর মডেল কলেজ
হ্যাঁ, এটা কায়সারের লাশ। কায়সারকে শেখাওয়াত বাঁচাতে পারে নি।

এত চেষ্টার পরেও শেখাওয়াত কায়সারকে তার মায়ের বুকে ফিরিয়ে আনতে পারে নি। আইডি কার্ডে কায়সারের ছবি দেখে বড্ড বেশি মায়া হচ্ছিল শেখাওয়াতের। শেখাওয়াত একবার ছবির দিকে তাকায় তো একবার লাশের দিকে তাকায়। লাশটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে চরম যন্ত্রণা নিয়ে মরেছে ছেলেটা। এটাও বুঝা যাচ্ছিলো যে ও~কে খুব কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে।

শেখাওয়াতের হাতে থাকা আরেকটি চিরকুট টি সেটাও খুলে শেখাওয়াত। যাতে খুব স্পষ্ট লিখা আছে,
hello officer,

আপনার সাথে আমার টক্কর টা বেশ মজার। শুনেছি পাগলা কুত্তার মত আমাকে খুঁজছেন আপনি। এই প্রথম আমার এইভাবে লুকোচুরি খেলতে খুব মজা লাগছে।

জানেন তো আমি ছোটবেলায় অনক লুকোচুরি খেলতাম। আহারে, ছেলেটাকে খুঁজে বের করার জন্যে কত কি করলেন, কিন্তু কি হলো, পারলেন না তো বাঁচাতে আর না পারলে আমাকে ধরতে। Man to Man খেলে মজা নেই। লুকোচুরি ভাবে খেলি তাতেই মজা, কি বলেন? By the way কায়সারের চেহারা নষ্ট করি নি আপনার কথা ভেবেই।

ভাবলাম বেচারার জন্য এত কিছু করলেন, ওর লাশটা দেখে অন্তত নিজেকে শান্তনা দিতে পারবেন। অবশ্য আপনি তো সব রাস্তা নদীবন্দর সব কিছুতে পাহাড়া বসিয়ে রেখেছেন আফসোস রেলওয়ে স্টেশনের কথা ভুলে গেছেন। naughty officer, bad officer শুধু শুধুই আমার পেছনে লাগে। দুষ্টু একটা, তুমি আমায় যত খুঁজে বের করার প্ল্যান করবে আমি তত ভয়ানক হয়ে উঠবো। নেক্সট টার্গেট হচ্ছে, নাহ বলবো না। বলবো না বলবো না বলবো না আমি বলবো না আমি বলবো না।

চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলতে আমার বেশ লাগে নাহ নাহ খেলতে না লাশ নিয়ে খেলতে, মানুষ নিয়ে খেলতে, মেয়ে মানুষ খেলতে বেশ লাগে। ওদেত চিৎকার গুলো শুনে আমি শান্তি পাই। আহা আহা আহা, তোমার সাথেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেললাম। আর চ্যালেঞ্জও দিলাম খুঁজে বের করো আমায়। টা টা বাই বাই।

চিরকুটের লিখাটা পড়ে শেখাওয়াত পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়। এর লিখার স্টাইল আর ভাষা প্রয়োগ একদম সাইকোদের মত। তবে ইংলিশ টাও তার বেশ ভালো জানা। শেখাওয়াত আপাতত চিরকুট নিজের কাছে রেখে দিয়ে কায়সারের লাশ ল্যাবে পাঠিয়ে দেয় এবং সেই সাথে কায়সারের বাবা মাকেও inform করে দেয়।

সেই সাথে শেখাওয়াত সোজা অফিসে চলে যায়। বাকি কাজ গুলো সেখান থেকেই করবে সে।
স্থান ~ মুক্তিনগর ক্রাইম ব্রাঞ্চ,

সময় বিকেল ৫ টা,
অফিসে এসে অনেক চিন্তায় পড়ে যায় শেখাওয়াত। খুনী সরাসরি তাকেই চ্যালেঞ্জ করে বসলো। তাও এইভাবে চিরকুট দিয়ে। আসলেই খুনী তাকে একটা বড় সড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে হাফিজ শেখাওয়াতের কেবিনে এসেছে।

~ স্যার?
~ হ্যাঁ হাফিজ বলো।
~ কায়সারের লাশ তার পরিবারের কাছে দেয়া হয়েছে।

~ রিপোর্ট?
~ কাল সকালে পাওয়া যাবে।

~ বডি পার্ট গুলো?
~ স্যার সেইগুলো সেলাই করে কোন রকম জোড়া দেয়া হয়েছে।
~ ওকে।

~ স্যার, আমরা কি এখনও কিছু করতে পারবো না?
হাফিজের প্রশ্নের কোন উত্তর নেই শেখাওয়াতের কাছে।

সে কি করবে না করবে কিছুই ভেবে উঠতে পারছে না।

রাতের বেলায় শেখাওয়াত ঘুমিয়ে ছিল। সারাদিনের খাটুনির পর চোখ টা মাত্রই লেগে এসেছে তার। হুট করেই ফোন বেজে উঠে তার। ফোনের শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় শেখাওয়াতের। শোয়া থেকে উঠে বসে ফোন হাতে নেয় শেখাওয়াত। ঘড়িতে তখন সাড়ে তিন টার মত বাজে, এইসময় হাফিজের ফোন।

অত্যন্ত অবাকের সাথে ফোন রিসিভ করে সে। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে হাফিজ বলে উঠে,
~ স্যার স্যার আপনি এক্ষুনি হাইওয়ের সামনে চলে আসুন।

~ anything wrong হাফিজ?

~ স্যার আরেকটা লাশ পাওয়া গেছে।
~ what? এত রাতে?

~ জ্বি স্যার।
~ খবর দিলো কে?
~ ট্রাফিক পুলিশ স্যার।
~ তারা কি করে এত রাতে? লাশ রেখে যাওয়ার পরে খবর পায় তার আগে কি তারা ঘুমায় নাকি?
~ স্যার দ্রুত আসুন।

~ এক্ষুনি আসছি আমি, তুমি সেখানে ডিরেক্ট পৌঁছে যাও।
~ জ্বি স্যার।
~ ওকে,

শেখাওয়াত দ্রুত রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। সোজা মুক্তিনগর হাইওয়েতে পৌঁছে যায় সে। সেখানে একটা বস্তা পড়ে আছে। শেখাওয়াতের অনুমতি পেয়ে দুইজন কন্সটেবল বস্তাটা খুলে। বস্তা খোলার পর লাশটাকে বের করে দেয়। একজন যুবতী নারীর বডি। পুরো উলঙ্গ অবস্থায় আছে লাশ টা।

পুরো বডিতে নখের দাগ, শরীরের এমন কোন অংশ নেই যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে মেয়েটাকে বুঝা যাচ্ছে। তবে এই লাশটার কোথাও কাটা ছেড়া নেই। অন্ধকারে চেহারা ভালো মত বুঝা যাচ্ছে না। তার জন্যে লাশের মুখের উপর টর্চ লাইট মারে শেখাওয়াত।

টর্চ লাইটের আলো পড়তেই শেখাওয়াতের মাথা ভিমড়ি খেয়ে উঠে। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় তার। জায়গা থেকে নড়ে উঠে শেখাওয়াত। শেখাওয়াত আর এক মিনিটও অপেক্ষা করে নি, ছুটে লাশটার কাছে চলে যায়। লাশ টাকে বুকের মাঝে চেপে ধরে রাখে সে।

~ ঝুম, এই ঝুম। চোখ খুলো, ঝুম এই ঝুম।
ঝুম ঝুম বলে চিৎকার করতে থাকে শেখাওয়াত।

লাশ টা যে ঝুমেরই ছিল। পাগলের মত চিৎকার করছে শেখাওয়াত। শেষ রক্ষা কর‍তে পারে নি শেখাওয়াত, অন্ধকারে বিলীন হয়ে গেলো তার ঝুম। ঝুমের মাথাটা নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে রাখে শেখাওয়াত। তখনই নিজের হাতে ভেজা কিছু অনুভব করে সে।

হাতটা সামনে নিয়ে এসে দেখে রক্ত, এখনও চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে মাথা থেকে ঝুমের। ভালো মত খেয়াল পর বুঝতে পারে ঝুমের মাথাটা অনেকখানি কাটা। ভেতর থেকে মগজ টা তুলে নেয়া হয়েছে। শেখাওয়াত তখন আরও জোরে চিৎকার করে উঠে।

~ ঝুম, এই ঝুম। চোখ খুলো না প্লিজ, ঝুম।
ঝুমকে স্পর্শ করতে করতে ঝুমের হাতে একটা কাগজ পায় শেখাওয়াত। ঝুমের হাতের সাথে কাগজ টা রশি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। শেখাওয়াত বাঁধন খুলে কাগজের ভাজ টা খুলে। কাগজের ভাজ টা খুলতেই শেখাওয়াত দেখতে পায়,
officer,

নেক্সট টার্গেট টা হেব্বি টেস্টি ছিল। পুরো টা খেয়েছি। প্রতিটা অংশ খুবলে খুবলে খেয়েছি। নেক্সট টার্গেট টা যে এত্ত মজার হবে ভাবিই নি আমি। শুনেছি তোমার খুব কাছের মানুষ সে, তাই যতটা নিংরানোর নিংরে নিয়েছি আমি। তবে হ্যাঁ, মাথার অংশ টা আমার প্রয়োজন ছিল, সেটা না হলে আবার আমার হয় না তাই নিয়ে নিলাম। তুমি এইভাবেই হারতে থাকবে আর আমি এইভাবেই সব গিলতে থাকবো।

তুমি কিছুই করতে পারবে না অফিসার শেখাওয়াত।
good bye .
শেখাওয়াত তখন আরও জোরে চিৎকার করে উঠে,
~ ঝুম,
শেখাওয়াত ঝুম বলে লাফ দিয়ে উঠে। নিজের চারপাশ টা ভালো করে দেখে নেয় শেখাওয়াত। শেখাওয়াত তখন নিজের রুমে নিজের খাটেই বসা ছিল সে। পুরো শরীর ঘেমে গেছে তার।

মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তার। শেখাওয়াত তার হাতের কাছে থাকা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে পানিটুকু খেয়ে নে। এত ভয়ানক একটা স্বপ্ন দেখেছে সে তাও আবার ঝুমকে নিয়ে। শেখাওয়াত কোন রকম দৌড়ে গিয়ে ঝুমের রুমের কাছে চলে যায়। দরজা খোলা থাকায় সে ঝুমের রুমে ঢুকে যায়। ঝুম তখন গভীর ঘুমে মগ্ন।


পর্ব ৭

ঝুমের ঘুমিয়ে থাকা শান্ত চেহারা দেখে একটু নিশ্চিন্ত হয় শেখাওয়াত। ঘুমের মাঝে ঝুমকে বেশ লাগে। মনে হচ্ছিলো যেন কোন এক শান্ত মায়াবী কন্যা ঘুমিয়ে আছে।

এই প্রথম ঘুমন্ত অবস্থায় ঝুমকে দেখছে সে। এর আগে কখনও ঝুমকে দেখার সুযোগ এবং ইচ্ছা কোন টাই ছিল না তার। ঝুমের রুমে থাকা দেয়াল ঘড়িতে শেখাওয়াতের নজর যায়। ঘড়িতে প্রায় ৩ টার মত বাজে। এত রাতে ঘুম টা এইভাবে ভেঙে যাবে ভাবে নি সে।

শেখাওয়াতের সামনেই ঝুম নাড়াচাড়া দিয়ে সোজা থেকে পাশ ফিরে শোয়। চুলের কিছু অংশ ফ্যানের বাতাসে ঝুমের মুখের উপর উপর পড়ে।

এই অবস্থায় ঝুমকে বেশ লাগছিল। ঠিক যেন ঘুম দেশের কোন এক মায়াবী ঘুম পরীর মত। শেখাওয়াত নিজের মনের অজান্তাতেই ঝুমের মুখ থেকে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। অন্যদিকে ঝুমের ঘুম খুব পাতলা। কিছু একটার আভাস পেলেই ঝুমের ঘুম ভেঙে যায়। নিজের শরীরে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে সাথে সাথে ঝুম চোখ খুলে ফেলে। সামনে কাউকে বসে থাকতে দেখে চাপা স্বরে চিৎকার করে উঠে সে।

~ ও মাগোও, কে?
ঝুমের মুখে এমন শব্দ শুনে শেখাওয়াত হালকা হেসে দেয়। আর ঝুম এইভাবে অন্ধকারে কাউকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসে যায় ঝুম। আবছা আলোর ছটাকে খুব ভালো ভাবেই শেখাওয়াতের চেহারাটা চিনতে পারে ঝুম।
~ আপনি এখানে, এত রাতে কি করেন?

ঝুমের চেহারাটা তখন দেখার মত ছিল। কেমন একটা ভয় ভয় চেহারা নিয়ে মেয়েটা তাকিয়ে আছে শেখাওয়াতের দিকে। নাকের নিচে ঠোঁটে উপরের অংশে ঘাম লেগে গেছে। এই অবস্থাতেও ঝুমকে বেশ লাগছিলো যা অবাক নয়নে শেখাওয়াত দেখছে। শেখাওয়াতের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে আবারও ঝুম বলে উঠে,
~ আপনি এইখানে কি করেন?

~ দেখলাম তুমি কি করো?
~ কি সব অবান্তর প্রশ্ন করেন?

~ অবান্তর কোথায় হলো?

~ এত রাতে আমার ঘরে কি করেন আপনি, এখন আপনার বাবা মা দেখবে না? এখন ভাববে না তাদের ছেলের একটা সম্মান আছে?

ঝুম সুযোগ বুঝে কোপ মেরে দেয় সেদিন রাতে শেখাওয়াতের বলা কথা গুলোর উপর ভিত্তি করে। শেখাওয়াত ঝুমের এই কথা শুনে অনেকটা রাগান্বিত হয়ে যায়। আর সাথে সাথে ঝুমের হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে আর ঝুম যেই বালিশে শুয়েছিল সেই বালিশেই শুইয়ে দেয় ঝুমকে।

~ একদম চুপ ওকে! দেখতে এসেছি তোমাকে, তার জন্যেচেত কিছু শুনাতে হবে না।
~ হাত ছাড়ুন আমার লাগছে।

~ কথা বলার আগে ভাবো না কেন যে এই কথা বলার জন্য তোমার লাগতে পারে।
~ সেদিন রাতে আপনি ভেবেছিলেন? যা মুখে এসেছে তাই বলেছেন। আমি ভুলি নি কিন্তু?
~ ঝুম এইবার বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু।

~ কোন টা বাড়াবাড়ি, হ্যাঁ কোনটা বাড়াবাড়ি?
~ ফাইযলামি না করে চুপ করে শুয়ে থাকো।

~ আপনি যান এখান থেকে।

~ যদি না যাই?

~ আমি নিজেই চলে যাবো এখান থেকে।

~ চুপ, একদম চুপ। ঘুমিয়ে যাও, আর হ্যাঁ কাল থেকে কলেজ যাবে না কিছু দিন।
~ কেন যাবো না? আমি একশো বার যাবো কলেজে তাতে আপনার কি?

~ ঝুম এইবার মা’র খাবা কিন্তু।

~ মারুন, কে মানা করেছে। মারুন, সমস্যা নাই তো।

শেখাওয়াত আর কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়। আর ঝুম সেখানে বালিশ চেপে কেঁদে দেয়। কারণ সে যে এখনও ভালোবাসে শেখাওয়াতকে।

স্থান ~ মুক্তিনগর ক্রাইম ব্রাঞ্চ
সময় ~ বেলা ১২ টা
শেখাওয়াত পুরো ঘটনা গুলোতে আরও একবার তার প্রখর দৃষ্টি দেয়। কোথা থেকে ঘটনার শুরু হয়েছে, কোথায় গিয়ে শেষ হচ্ছে। হুট করেই একটা চরম সত্যি শেখাওয়াতের হাতে লাগে আর তা হচ্ছে, মুক্তিনগর মডেল কলেজের স্টুডেন্ট ছিল বেশি। আর সেখানেরই স্টুডেন্ট টার্গেট করা হয় বেশি।

ওই কলেজের মোট ছয়জন শিক্ষার্থীর খুন হয়। যার মধ্যে চার জন মেয়ে আর কায়সার সহ দুইজন ছেলে। আরেকটা ক্লু শেখাওয়াতের হাতে লাগে। সাথে সাথেই হাফিজকে খবর দেয় শেখাওয়াত। হাফিজও দৌড়ে শেখাওয়াতের কেবিনে আসে। হাফিজ আসার সাথে সাথেই শেখাওয়াত হাফিজকে দরজা বন্ধ করার আদেশ দেয়। আর হাফিজও আদেশ অনুযায়ী দরজা আটকে দেয়।

শেখাওয়াত হাফিজকে দেখিয়ে বলা শুরু করে। আর যা বলা শুরু করে তা শুনে হাফিজ পুরো চমকে যায়।
~ স্যার এটা কি করে সম্ভব?

~ সম্ভব হাফিজ সব সম্ভব। কথায় আছে না পিরিতি কাঠালের আঠা। এইবার বুঝলে।
~ আর বাকি তিনটা?

~ সেইগুলোও এইগুলোর সাথেই জড়িত হাফিজ।

~ তাহলে নেক্সট টার্গেট?
~ আমি যদি ভুল না হই আর আমার অনুমান যদি সঠিক হয় নেক্সট টার্গেট এখনও ওই বিভাগেরই ওই বর্ষেই আছে।
~ স্যার সব তো বুঝলাম, এইবার তাহলে আমাদের মিশন শুরু করতে হবে তাই তো স্যার।
~ অনুমান যদি ঠিক হয় নেক্সট টার্গেটকে সে আরও নৃশংসভাবে খুন করবে হাফিজ।

~ কি বলছেন স্যার আপনি?
~ yes,
~ তবে কি আমরা কিছুই করতে পারবো না স্যার?
~ সে আমায় চ্যালেঞ্জ করেছে হাফিজ, বুঝতে পারছো তুমি? চ্যালেঞ্জ করেছে আমায় সে। তার মানে সে অনেক কিছু ভেবে রেখেছে। সে জানে আমি তাকে এত সহজে ধরতে পারবো না, তাই সে চ্যালেঞ্জ টা করেছে।

~ তাহলে স্যার এখন কি করবেন?

~ Never mind, আমিও তার মতই খেলবো হাফিজ, আমিও তার মতই খেলবো। আপাতত কায়সারের পরিবারের সাথে কথা বলবো। হিসেব মত সেদিন রাতে কায়সার মোবাইল নিয়ে বের হয় নি। অতএব তার মোবাইল এখন বাসাতেই পাওয়া যাবে আর বাকি ডিটেইলস গুলোও পাওয়া যাবে।

~ ওকে স্যার,
~ আমি সজ সন্ধ্যায় কায়সারের বাসায় যাবো হাফিজ।

~ ওকে স্যার।


পর্ব ৮

কায়সারের বাসায় এসে কায়সারের রুমের সব কিছু ভালো মত সার্চ করে শেখাওয়াত। শেখাওয়াতের চাকরি জীবনে শেখাওয়াত যতটুকু পেরেছে নিজের টা নিজেই করেছে। অন্যের উপর কখনও নির্ভর করে নি সে। খুব ভালো মত পর্যবেক্ষণ করে সে পুরো রুমটা। শেখাওয়াত কায়সারের মোবাইল টা যখন হাতে নেয় তখন পুরো মোবাইল ঘাটা শুরু করে।

এক পর্যায়ে সে মোবাইল সহ আরও কিছু জরুরী কাগজপত্র নিয়ে যায় সাথে করে। এদিকে, ছেলের মোবাইল নিয়ে যাবে বলে মিষ্টার মাহমুদ শেখাওয়াতওকে বাঁধা দিয়ে বলে,

~ স্যার, আমার ছেলের একমাত্র স্মৃতি এটা। এটাও নিয়ে যাবেন?
~ দেখুন একেবারে নিয়ে যাচ্ছি না, কিছু ডাটা কালেক্ট করেই হাফিজকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবো।
~ ডাটা? কিসের ডাটা স্যার?

~ তেমন কিছু না, পুরোটা দেখেই তবে বুঝতে পারবো।
~ স্যার দিয়ে যাবেন ফোন টা। আমার ছেলেটাকে তো আর ফেরাতে পারলাম না, আমাদের একলা করে দিয়ে চলে গেলো সে।
~ আফসোস করা ছাড়া আর কিই বা করতে পারি বলুন।

~ স্যার, আমি চাই সেই খুনীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় খুজে বের করুন যাতে আর কোন বাবা মাকে এইভাবে সন্তান হারা হতে না হয়।

~ চেষ্টার ত্রুটি রাখবো না।
~ ওকে স্যার।
~ আসছি, ভালো থাকবেন।

শেখাওয়াত তখন কায়সারের বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছ অবদি হেটে আসার সময় শেখাওয়াতের বার বার মনে হচ্ছিলো কে যেনো তাকে পেছন থেকে ফলো করছে। শেখাওয়াত বার কয়েক পেছনে তাকিয়েওছে কিন্তু কাউকেই দেখতে পায় নি। কাউকে দেখতে না পেয়ে শেখাওয়াত গাড়িতে উঠে অফিসে দিকে রওনা হয়।

কায়সারের পুরো মোবাইল টা সার্চ করে শেখাওয়াত। গ্যালারিতে থাকা প্রতিটা জিনিস চেক করে সে। সব গুলো ফোল্ডার ভালো কত দেখার পর একটা ফোল্ডারের দিকে নজর যায় তার। শেখাওয়াত ফোল্ডারে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু পারে নি। কারণ ফোল্ডারটায় প্রাইভেসি দেয়া। শেখাওয়াত অনেক গুলো পিন নাম্বার দিল আন্দাজ করে যার একটাও ঠিক হয় নি।

অবশেষে শেখাওয়াত খুব ভাবনাচিন্তা করে kayesar পুরো নাম টা বসিয়ে ওকে তে ক্লিক করে। it’s a miracle, লক টা খুলে যায়। আর লক খুলার সাথে সাথেই শেখাওয়াত সেই ফোল্ডার টায় নজর দেয়। সেই ফোল্ডারে প্রায় ২০০+ ছবি যা কায়সার গ্যালারি থেকেও সে আলাদা ফোল্ডার করে সেখানে প্রাইভেসি লক করে রেখে দিয়েছে। বিগত এক ঘন্টা যাবত চেষ্টার পর শেখাওয়াত তার এই কেইসের মূল হদিস পায় আর সেই সাথে খুনীর নেক্সট টার্গেটও পায়।

কায়সারের সোসাল মিডিয়া একাউন্ট তখন অন ছিল। শেখাওয়াত সেটারই ফায়দা তুলে। কায়সারের সোসাল মিডিয়ার একাউন্ট পুরো টা চেক করে শেখাওয়াত।

সে যা সন্দেহ করেছিল ঠিক তাই তাই হয়েছে। পুরোটা মিলে গেছে তার ভাবনার সাথে। ব্যাস, এইবার শেখাওয়াত তার প্রথম চাল দিবে। এতে করে সবার আড়ালে লুকিয়ে থাকা সেই ঘৃণ্য অপরাধী একটুর জন্যেও চিন্তায় পড়ে যাবে। তার খেলা একটু হলেও বিঘ্নিত হবে। ব্যাস, এটাই চাইছে শেখাওয়াত। শেখাওয়াওতের এইসব চিন্তার মাঝেই ফোন আসে তার মোবাইলে।

~ হ্যালো,
~ স্যার,
~ হ্যাঁ বলুন।

~……………..
~ What?
সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ৩০ মিনিট,
স্থান ~ মুক্তিনগর রেলওেয়ে হকার্স মার্কেট,

শেখাওয়াতের গাড়িটা সোজা এসে ব্রেক করে তার পায়ের কাছে। এইভাবে গাড়ি এসে পায়ের কাছে ব্রেক করায় স্তম্ভিত হয়ে যায় সে। মেজাজ এত্ত পরিমাণ খারাপ হয়েছে তার যা ধারণার বাহিরে।

~ এই কে রে, কোন লাট সাহেবের বেটা আসছে। চোখটা খুলে হাতের তালুতে নিয়ে গাড়ি চালায় নাকি। মানুষ যায় নাকি গরু ছাগল যায় খেয়াল করে না। হুটহাট গাড়ি চালায়। বেয়াক্কেল কোথাকার।

ইতোমধ্যে ইচ্ছেমত গালাগাল খেয়ে অবশেষে বেচারা শেখাওয়াত গাড়ি থেকে নামে। আর শেখাওয়াত গাড়ি থেকে নেমে আসার সাথে সাথে আরেকজনের বুকের কাঁপ শুরু হয়ে যায়। শেখাওয়াত তার চেহারা দেখেই বুঝে যায় তাকে দেখে মানুষটার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে, তার উপর না দেখেই এত গুলো গালমন্দ করে দিয়েছে।

শেখাওয়াত আশেপাশে তাকিয়ে সানগ্লাস টা চোখ থেকে খুলে হাতে নিয়ে তার সামনে এগিয়ে আসে। তারপর সুন্দর করে ডাক দেয়,
~ ঝুম, তুমি এখন এই মুহুর্তে এখানে কি করো?

শেখাওয়াতের এই কথা শুনে ঝুম চোখ মুখ খিচে দাঁড়িয়ে থাকে। কারণ ঝুম জানে শেখাওয়াতের এমন স্বরে কথা বলা মানে ঝুমকে টাইট দেয়া। তবে ঝুমের সাথে থাকা মেয়েগুলো খুব ভালো করেই খেয়াল করছিল শেখাওয়াতকে। চোখের সামনে এমন হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং পারসোন থাকলে যে কোন মেয়েই পিছলে যেতে পারে। তারাও নানান রকম ভাবে ভঙ্গিমা করছিল যাতে শেখাওয়াতের দৃষ্টি তাদের উপর যায়।

কিন্তু শেখাওয়াতের নজর ঝুমের দিকেই। আর ঝুম সে তখনও আরেকদিকে নজর করে তাকিয়ে আছে। ঝুমকে উদ্দেশ্য করে শেখাওয়াত আবারও বলে,

~ excuse me madam, look at me . এইযে আমি এইদিকে, এইদিকে লক্ষ্য করুন।
~ কি হয়েছে, আপনি এখানে কি করেন?

~ হাওয়া খেতে এসেছি, যেমন টা তুমি খাচ্ছো এইখানে এই মুহুর্তে।
~ আমি এখানে আছি আপনাকে কে বললো?

~ তোমাকে না করেছিলাম এইভাবে হুটহাট বের না হওয়ার জন্য, কেন বের হয়েছো।
তখন ঝুমের সাথে থাকা মেয়েগুলোর মাঝে একটা মেয়ে বলে উঠে,
~ হ্যালো, একটু এইদিকেও লক্ষ্য করুন, আমরাও আছি কিন্তু।

~ আছেন তো দেখলাম, তবে যাকে দেখার জন্য এলাম আগে তাকে দেখি।
~ ওহ হো তাহলে রোড সাইড রোমিও।
~ ফুল টাইম রোমিও হতে দোষ কোথায়?

~ দোষ নেই তো, তবে ঝুমের হয়তো আপত্তি আছে।
~ ওর আপত্তি ধার কে ধারছে শুনি।

ঝুমের এই মুহুর্তে বিরক্ত লাগতে শুরু করে দিয়েছে। শেখাওয়াতের এইভাবে কথা বলা তার কাছে সব থেকে বেশি বিরক্ত লাগছে। ঝুম ভিষণ রেগে যায়। আর রেগে গিয়ে বলে,
~ আজকে কি ডিউটি শেষ হয়ে গেছে যে এখানে এসেছেন ডিউটি করতে।

ঝুমের কথা শুনে শেখাওয়াত মুচকি হেসে ঝুমের দিকে চেয়ে আছে।


পর্ব ৯

ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি তার নিজের আপন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। গাড়িতে তখন ঝুম আর শেখাওয়াত। দু’জনেই চুপচাপ আছে পুরো রাস্তা। শেখাওয়াত তার মত করে গাড়ি চালাতে ব্যস্ত আর ঝুম চুপ থাকায় ব্যস্ত। শেখাওয়াত ঝুমকে জোর করে নিয়ে আসাতে ঝুমের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। শেখাওয়াতের উপর তার প্রচুর রাগ হচ্ছে এই মুহুর্তে।

~ আপনি কি শুরু করেছেন, হ্যাঁ?
~ কি শুরু করলাম আবার?

~ এইভাবে আমাকে জোর করে আনলেন কেন?

~ তোমাকে না বার বার করে বলেছিলাম বাসা থেকে বের না হতে বের হও কেন?
~ আপনার তাতে কি?

~ মুখে মুখে একদম তর্ক করবা না বলে দিলাম।
~ আপনি ইদানীং অতিরিক্ত করেন আমার সাথে।

~ ধাক্কা একটা দিয়ে একদম ফেলে দিবো গাড়ি থেকে, চিনো তুমি আমায়?

~ ধাক্কা দিয়ে দেখেন একবার, আমি পড়লে একা পড়বো না আপনাকে নিয়েই পড়বো।
~ বাহ বাহ, এই কয়েকদিনে বেশ ঝাঝালো হয়ে গেছো তো।

~ ঝাঝ আগে থেকেই ছিল শুধু দেখাই নি, তাই বলে ভাববেন না আমি কিছু বুঝি না। আমার জীবন আমি যেভাবে খুশী সেভাবে চলবো আপনার কি তাতে?
~ ঝুম অতিরিক্ত করছো কিন্তু?

~ আপনি অতিরিক্ত করছেন আমি না।

~ কাল থেকে আমি তোমাকে কলেজে দিয়ে আসবো এবং আমিই নিয়ে আসবো। মনে যাতে থাকে কথাটা।
~ কখনও না,
~ আমার অনুমতি ছাড়া তুমি বাসার বাইরে পা রাখো কিভাবে আমি দেখবো।

শেখাওয়াত আর ঝুমের মাঝে হালকা পাতলা ঝগড়া হয়ে যায়। ঝুম যতই জেদ ধরবে শেখাওয়াত ততই ঝুমকে আটকাবে এই মুহুর্তে এটাই শেখাওয়াতের মনে চলছে। এরই মাঝে ঝুম আবারও বলে উঠে,
~ আমি দেখবো আপনি আমায় কি করে আটকান

ঝুমের কথা শুনে শেখাওয়াত এইবার রেগে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে গাড়িটা এক সাইডে ব্রেক করে সে। ঝুমের বাম হাতে চেপে ধরে বলে,

~ আমি যে মানুষটা একরকম বেখাপ্পা টাইপ তা খুব ভালো করে জানো নিশ্চয়ই। সো চুপচাপ থাকবে ওকে।
শেখাওয়াত তার প্রসেস অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছিলো। অনেকটা সফল হয়েছিল কিন্তু শেখাওয়াত এটা ভুলে গিয়েছিল তার উপরেও কেউ একজন নজর রাখছিল প্রতিনিয়ত। মাঝে মাঝে মনে করলেও পাত্তা দেয় নি সে।
অন্যদিকে, ঝুমকে প্রতিনিয়ত কলেজে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা পুরো টাই শেখাওয়াত নিজে করতো। লোক দেখানো প্রেম যাকে বলে শেখাওয়াত ঠিক তাই তাই করলো ঝুমের সাথে।

কিন্তু খুনী যে শেখাওয়াত থেকেও ৫ কদম এগিয়ে তা হয়তো শেখাওয়াতের জানা ছিল না। শেখাওয়াত ভেবেছিল সে একটা দিক অন্তত করতে পেরেছে। একটা জীবন অন্তত বাঁচাতে পেরেছে। কিন্তু নাহ, তা ছিল শুধুই বেখেয়ালিপনা। আসল কাজ তো ঘটা এখনও বাকি ছিল।

তিন দিন পর,
সময় ~ সকাল ১১ টা,

শেখাওয়াত তার অফিসে কাজ করে করছে। এমন সময় টেলিফোনে ফোন আসে, শেখাওয়াত রিসিভ করার পর,
~ হ্যালো মুক্তিনগর ক্রাইম ব্রাঞ্চ?

~ বলছি, বলুন।
~ মুক্তিনগর মডেল থানা থেকে, ইন্সপেক্টর জাকির বলছিলাম।
~ অফিসার শেখাওয়াত বলছি মুক্তিনগর ক্রাইম ব্রাঞ্চ।

~ আসসালামু আলাইকুম স্যার।

~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, বলুন কি বলবেন?
~ স্যার হাইওয়ের ওপাশে যে জঙ্গল টা আছে সেখানে একটা বস্তা পাওয়া গেছে।
~ কখন?

~ আজ ভোরে। কাঠ মিস্ত্রী ফারুক সে লোক পাঠিয়েছিল জঙ্গলে গাছ কাটানোর জন্য। আর তার পাঠানো লোকরাই সেই বস্তা পায়।

~ তারপর?
~ স্যার, বস্তা থেকে পঁচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বলে তারা আর সাহস পায় নি এগোতে। তাই সোজা থানায় চলে আসে।
~ আপনারা গিয়েছিলেন সেখানে।

~ স্যার, এই মুহুর্তে আমি স্পটেই আছি। আর এটা আমার নম্বর। আমি আরও কয়েকবার ফোন করেছিলাম কিন্তু রিসিভ হয় নি তাই এই নাম্বারে ফোন করলাম স্যার।

~ ওকে, তা কি বুঝলেন দেখে?

~ স্যার, উপরমহল থেকে খবর পেলাম এই কেইস আপনি সামলাচ্ছেন। এখন আপনি যদি স্পটে আসতেন?
~ ওকে, আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।
~ ওকে স্যার।

শেখাওয়াত ততক্ষনে অনেক অবাক। কি ব্যাপার তার যেটা করার প্রয়োজন ছিল সে তো সেটা করে ফেলেছে তবে আবার কার লাশের খবর এসেছে। কিছুক্ষন চিন্তা করার পর শেখাওয়াত হাফিজকে ডেকে নিজের কেবিনে আনায়।
~ জ্বি স্যার,
~ আমাদের একবার বের হতে হবে হাফিজ।

~ ওকে স্যার। কিন্তু কোথায় যাবেন স্যার?
~ হাইওয়ের পাশে থাকা জঙ্গলে।

~ ওখানে তো একমাত্র কাঠ সংগ্রহ কারীরা ছাড়া আর কেউই যায় না স্যার।

~ ভুলে যাও কিভাবে হাফিজ, পরিত্যাক্ত জায়গাই যে খুনীর সব থেকে বেশি পছন্দের হয়।
শেখাওয়াতের ইংগিতেই হাফিজ সব বুঝে যায়। তার মানে আরও একটা? কিন্তু এটা কি করে সম্ভব হয়। কৌতূহল নিয়েই হাফিজ শেখাওয়াতকে প্রশ্ন করে,

~ সেটাই তো বুঝতে পারছি না। কি থেকে কি হয়ে গেলো, কি করে হলো, আর কিভাবেই বা হলো।
~ স্যার এই তিন দিনে কি তাহলে?

~ হতে পারে, ভুলে গেলে কি করে হবে যে সে আমায় চ্যালেঞ্জ করেছে।
~ পাক্কা সেয়ানা সে স্যার।

~ বাকিদের নিয়ে রওনা দেও, আমি বের হলাম, কেমন?
~ জ্বি স্যার।

প্রায় ২৫ মিনিট পর শেখাওয়াত সেই জায়গায় পৌঁছে যায়। শেখাওয়াত সেখানে পৌঁছানোর আগেই মডেল থানার পুলিশরা জায়গাটাকে আটকে দেয় যাতে করে বাহিরের কেউ প্রবেশ করতে না পারে। শেখাওয়াত যাওয়ার সাথে সাথে মডেল থানার কর্মরত কিছু পুলিশ শেখাওয়াতকে সালাম দিয়ে উঠে।

শেখাওয়াতও সালাম নিয়ে চোখের সানগ্লাস টা খুলে স্পটে প্রবেশ করে। তার পর পরই ইন্সপেক্টর জাকিরকে দেখে শেখাওয়াত বলা শুরু করে,

~ বস্তা কবে নাগাদ রাখা হয়েছে জানতে পেরেছেন কিছু?
~ স্যার ওদের ধারণা আজ ভোরেই হয়তো কেউ রেখে গেছে।

~ Open it .
~ ok sir .
শেখাওয়াতের অনুমতি পেয়ে জাকির এবং হাফিজ সব বাকিরা বস্তার মুখ খুলতে থাকে। শেখাওয়াতের প্রথম খটকা, বস্তাটা আগের তুলনায় বেশ বড় মনে হচ্ছিলো দুই থেকে তিন টা বস্তাকে কেটে জোড়া দিয়ে তারপর একটা বানানো হয়েছে। দ্বিতীয় খটকা, বস্তাটা দেখে মনে হচ্ছে এর ভেতর,

ইতোমধ্যেই হাফিজ”স্যার”বলে ডাক দিয়ে উঠে। হাফিজের ডাক শুনে শেখাওয়াত সামনে এগিয়ে যায়। সামনে এগিয়ে যাওয়ার পর তার প্রথম এবং দ্বিতীয় দুটো খটকাই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়ে যায়। অবস্থা দেখে অটোমেটিক তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,
~ oh my god .

শেখাওয়াত বস্তার সাইজ দেখেই বুঝে গিয়েছিলেন। আর তাই সত্যি হলো। জোড়া খুন, এইবারে তো শেখাওয়াতকে আরও বড় চ্যালেঞ্জ করে দিলো খুনী তাও জোড়া খুন করে।

দেখেই বোঝা যাচ্ছে একটা ছেলে একটা মেয়ে। লাশগুলোর অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে তাকানো যাচ্ছিলো না। দুটো লাশেরই কনুই পর্যন্ত নেই, পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত নেই। চোখ নেই, মাথার মগজ তুলে নেয়া হয়েছে।

নাক কাটা, কান কাটা, দাত গুলো মনে হচ্ছে কোন লোহা দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে, জিহবা কেটে নেয়া হয়েছে আর সব থেকে ভয়ানক যেটা তা হচ্ছে দুটো লাশেরই অর্থাৎ ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই স্তন গুলো কেটে নেয়া হয়েছে, তার থেকে ঘৃণ্য হচ্ছে দুটো লাশের গলা থেকে নাভি অবদি ফাঁড়ার পর এক লাশের নাড়িভুঁড়ির সাথে অন্য লাশের নাড়িভুঁড়ি গুলোকে গিট দিয়ে রাখা হয়েছে।

এইসব মনে হয় না একজন সুস্থ মানুষ করতে পারে একমাত্র বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ ছাড়া। লাশ গুলো থেকে পঁচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছিলো। শেখাওয়াত তখনই অর্ডার করে লাশ গুলো একটা আরেকটা থেকে আলাদা করে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোর জন্যে।

শেখাওয়াতের আদেশ পেয়ে লাশ গুলোকে একটা আরেকটা থেকে আলাদা করার ব্যবস্থা করা হয়। আর এদিকে শেখাওয়াত ডক্টর নিহাশকে ফোন করে,

~ হ্যালো শেখাওয়াত।

~ ডক্টর নিহাশ, দুটো লাশ পাঠাচ্ছি, লাশ দুটোর পুরো ডিটেইলস আমার চাই।
~ এইবার কি তবে জোড়া খুন?
~ হ্যাঁ,

~ ওকে পাঠিয়ে দিন।

~ ওকে।
এইবার শেখাওয়াতের ভয়টা অন্য কোথাও হতে থাকে। ও যা করেছে তার থেকে অনেক পারফেক্টলি ভাবে খুনী তার কাজ করেছে। এমন সময় ইন্সপেক্টর জাকির শেখাওয়াতকে বলে,
~ স্যার একটা চিরকুট পেলাম লাশের সাথে।

চিরকুটের কথা শুনে শেখাওয়াত চিরকুট টা হাতে নেয় আর দেখে সেখানে লিখা আছে,

~ তুমি তোমার মত খেলেছো আর আমি আমার মত। আফসোস দু’জনকে একসাথে গিলে নিলাম আর তুমি টেরও পেলে না। বড্ড বেশি মায়া হয় তোমার জন্যে। নেক্সট টার্গেট আবার তোমার আপন কেউ যেনো না হয়। চ্যালেঞ্জ করেছিলাম আমায় খুঁজে বের করো অফিসার, খুঁজে বের করো, good bye .

চিরকুট টা পড়ে শেখাওয়ার রীতিমতো ভিমড়ি খেয়ে উঠে। নিজের মন থেকেই বেরিয়ে আসে,
~ নেক্সট টার্গেট ঝুম নয়তো?


পর্ব ১০

সর্বদিক বিবেচনা করে শেখাওয়াত যখন তার চিন্তাচেতনাকে সব কিছুর উর্ধ্বে নিয়ে গেছে তখন অন্ধকারে এক ছটাক আলোর রশ্মি হয়ে সামনে আসে নতুন আরেক রহস্য। যার উদঘাটন করা অতি আবশ্যক ছিল শেখাওয়াতের জন্যে। অন্যদিকে, জোড়া খুনের রিপোর্ট হাতে পেয়ে ডক্টর নিহাশ শেখাওয়াতকে ল্যাবে ডেকে পাঠায়। ডক্টরের ফোন পেয়ে শেখাওয়াত সোজা ল্যাবে চলে যায়। আর সেখানেই সে সব জানতে পারে।

~ হ্যাঁ ডক্টর, বলুন। রিপোর্ট আর লাশ কি বলে?

~ who is this busturd?
~ anything wrong?

~ of course, এইভাবে কেউ কাউকে খুন করে।

~ আমি সেটাই ভাবছি ডক্টর, সেটাই ভাবছি আমি।

~ এতটা জঘন্য ভাবে কেউ কাউকে এইভাবে কিভাবে খুন করে, Oh my god .
~ আমায় চিঠি দিয়ে খুন গুলো করে যাচ্ছে সে।

~ আপনাকে তো তাহলে চ্যালেঞ্জ করে দিলো।

~ অবশ্যই, সে বলেও দিয়েছে যে সে চ্যালেঞ্জ করেছে আমাকে।

~ তাহলে নিঃসন্দেহে ধরে রাখুন খুনী আপনাকেও অবজার্ভ করছে।

~ I know it, anyway কি বুঝলেন?

~ মেয়েটাকে টানা দুইদিন rape করার পর গত দুইদিন আগে খুন করা হয় আর ছেলেটাকে একই সময়ে মানে গত দুইদিন আগেই খুন করা হয়েছে।

~ কতটা জঘন্য হতে পারে, একে পেলে আমি?
~ অফিসার আরেকটা কথা,
~ what?
~ এদের প্রত্যেককে হাই ডোজের ড্রাগস দেয়া হয়েছে, তারপরই খুন করা হয়েছে।
~ কে এইভাবে খুন করছে কিসের স্বার্থেই বা খুন গুলো করছে?

~ সেটাই তো বুঝতে পারছি না। কোন সুস্থ মানুষ এইভাবে খুন করতে পারবে না, আর লাশ গুলোর কি বিকৃত অবস্থা করছে সে।
~ ওকে ডক্টর আমি আছি।

~ ওকে, নিজেকেও সাবধানে রাখবেন।
~ আমার বেঁচে থাকা এখন অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। আমি তার চুল টা পর্যন্ত বাঁকা কর‍তে পারছি না ডক্টর, আসছি।
এই বলে শেখাওয়াত ল্যাব থেকে বেরিয়ে যায়। আর ডক্টর নিহাশ এক হতাশার নিশ্বাস ছাড়ে।

এদিকে, ইদানিং ঝুম অনেক বেশি অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে। শেখাওয়াতের কথা সে কানেই নেয় না। কেন নেয় না এটা সে~ই একমাত্র বলতে পারে। বিভিন্নভাবে সে শেখাওয়াতকে এভোয়েড করে চলে। শেখাওয়াতের ধারে কাছে ঘেষে না সে। শেখাওয়াত যদি বলে বাম তাহলে সে করবে ডান, যদি বলে সোজা পথে হাটো সে উল্টো পথে হাটবে।

শেখাওয়াত তার অফিসে কাজ করছে তখনই তার মোবাইলে ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই তার মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায়।
~ What?

~ জ্বি স্যার, এইমাত্র দেখলাম।
~ হয় এ মরবে নয়তো আমায় মারবে। ওকে খেয়াল রাখো আমি দেখছি কি করা যায়।

লাইন কেটে শেখাওয়াত কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখে। এই মুহুর্তে তার ঝুমকে গলায় চাপ দিয়ে মেরে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। মেয়েটা কোন কথা শুনে না তার। এখানে এত গুলো কাজ রেখে সে আবার ঝুমে কাছ অবদি পৌঁছাতে পারবে না। হয় কাজ অফ রাখতে হবে নয় তাকে ছাড় দিতে হবে।

ঝুমের উপর চরম মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার। বার বার নিষেধ করার পরেও এই মেয়ে। আজ একটা বিহিত করেই ছাড়বে সে। চুপচাপ গাড়ি নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যায় শেখাওয়াত। আজকের জন্যে সব কাজ অফ তার। আজ শুধু ঝুমকে শায়েস্তা করবে সে। গাড়ির স্পিড যতটুকু বাড়ানো যায় পুরো টা বাড়িয়ে দিয়েছে শেখাওয়াত। যতটা দ্রুত ঝুমের কাছে পৌঁছানো যায়।

ঝুম তখন তার বান্ধবীদের সাথে কলেজের বাহিরে ফুচকা খাওয়ায় ব্যস্ত। ঠিক ওই সময়ে শেখাওয়াত গিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। গাড়ি থেকে নেমে সোজা গিয়ে ঝুমের সামনে দাঁড়িয়ে ঝুমের হাত থেকে ফুচকার প্লেট টা এক টানের সাথে মাটিতে ফেলে দেয় সে।

শেখাওয়াতের এমন কান্ড থেকে ঝুমের চোখ একটা চারটা আর দুইটা আটটা হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় সেই সাথে ঝুমের সাথে থাকা তার বান্ধবীদের দষা আরও খারাপ হয়ে যায় কারণ ওই মুহুর্তে শেখাওয়াত প্রচন্ডরকম রাগান্বিত অবস্থায় ছিল। এইসব দেখে ফুচকাওয়ালা বেচারাও ভিমড়ি খেয়ে যায়।

তবে এইসবের মাঝে ঝুম অনেক বেশি লজ্জা পায় তার বান্ধবীদের সামনে। এখানে রীতিমতো তাকে ছোট করা হয়েছে বলে তার ধারণা। সবার সামনে শেখাওয়াত এইভাবে তাকে ছোট করবে তা ভাবে নি। রাগে দুঃখে দু’চোখ বেয়ে তার পানি গড়িয়ে পড়ছে তবে এই মুহুর্তে শেখাওয়াতের সেদিকে কোন খেয়াল নেই তার মেজাজ প্রচন্ডরকম খারাপ হয়ে আছে। আর ঝুম, সে একটা টু~শব্দও করে নি।

শেখাওয়াত পারছে না এখানেই ঝুমকে ঠাটিয়ে চড় বসিয়ে দেয় শুধু পাবলিক প্লেস বলে বেঁচে গেছে সে। শেখাওয়াত ঝুমের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ ঘড়ি ধরা ঠিক ২০ সেকেন্ড দিলাম চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে উঠবে তুমি। এই ২০ সেকেন্ড ওভার সাথে সাথে যদি আমার কথার নড়চড় হয় আমি তোমায় ডিরেক্ট শুট করতে বাধ্য হবো ঝুম। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও তুমি। এই মুহুর্ত থেকে তোমার ২০ সেকেন্ড শুরু হলো।

শেখাওয়াতের কথায় পুরো থ হয়ে যায় ঝুম। সেই সাথে অবাক হয় বাকিরাও। বেচারা ফুচকাওয়ালাও ভয় পেয়ে যায়। শেখাওয়াতের কথায় ঝুম আর দেরি করে নি, সে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে যায়। শেখাওয়াত পকেট থেকে ৫০০ টা বের করে ফুচকাওয়ালাকে দিয়ে বলে,

~ প্লেট আর পড়ে যাওয়া বাকি ফুচকা গুলোর দাম সেই সাথে এদের ফুচকার গুলোর দাম দিয়ে গেলাম, রাখুন এটা।
আর এইযে আলালের ঘরের দুলালিরা চুপচাপ খেয়ে বাসায় যান। আর নেক্সট টাইম ঝুমকে নিজেদের এইসব ফুচকা পার্টিতে ইনভোলভ করবেন না।

এই বলে শেখাওয়াত চলে যায়। শেখাওয়াতের কথাগুলো শুনে বাকি মেয়েগুলো পুরো বেকুব হয়ে যায়। এইসব কি বলে গেলো সে এ নিয়ে তাদের মাথায় হাত। আর তাদের এই অবস্থা দেখে ফুচকাওয়ালা বলে,
~ মামা, তাড়াতাড়ি খান। টক আর দিমু নি?

ফুচকাওয়ালার কথা শুনে তাদের মধ্যে এক মেয়ে বলে,
~ আরে রাখেন তো মামা আপনার টক। এই লোক এসে তো আমাদেরকেই টক বানিয়ে দিয়ে চলে গেলো। বেচারি ঝুমের সাথে যে এর কি শত্রুতা বুঝি না, আশ্চর্যরকম লোক একটা।

অন্যদিকে,
গাড়িতে চুপ করে বসে আছে ঝুম সেই সাথে শেখাওয়াতও দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে। ঝুমের এত পরিমাণ রাগ হয়েছে যে রাগের চোটে মস্তিষ্কের কোষ গুলো ফেটে যাচ্ছে তার। সে শুধু হাতে হাত চেপে খিচে বসে আছে কখন বাসায় যাবে আর কখন সে এইসবের জবাব চাইবে। আর শেখাওয়াত, আজ সারাদিনের কাজকর্ম সব অফ রেখেছে। বাসায় পৌঁছানোর পর্যন্ত নিজেকে ঠিক রাখছে সে। আজকে বাসায় গিয়ে কেয়ামত করবে সে।
জনমকার শিক্ষা দিবে আজ সে ঝুমকে।

গাড়ির স্পিড পুরো হাই করে দেয় শেখাওয়াত। শেখাওয়াতের এইসব কার্যক্রম দেখে ঝুম গাড়িতেই চেঁচিয়ে বলে,
~ আরও জোরে স্পিড বাড়ান, যাতে বাসায় যাওয়ার বদলে উপরে যেতে পারি। নাটক শুরু করে দিছে আমার সাথে। নাটক করে এখন নাটক।

ঝুমের কথা শুনে শেখাওয়াতের মেজাজ এতটা খারাপ হয়ে যায় যে ঝুমের কথার সাথে সাথে সেও চিৎকার উঠে,
~ চুপ, একদম চুপ। বাসায় যাই আগে, তারপর দেখাচ্ছি আমি কি জিনিস। সেই অবদি একটু অপেক্ষা করো শুধু তুমি।

এইবলে আর একটা কথাও বলে নি শেখাওয়াত। ঝুমও আর কিছু বলে নি। গাড়ি এসে বাসার সামনে দাঁড়ায়। শেখাওয়াত ঝুমকে নিয়ে দরজার সামনে যেতেই দেখে ঘরের দরজায় তালা। এটা দেখে তার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। দরজার পাশে থাকা ফুলের টবটায় এক লাথি মারে সে। তারপর মোবাইল বের করে তার মায়ের নাম্বারে ফোন করে সে।

~ হ্যালো, কোথায় তোমরা? দরজায় তালা কেন?
~ আমরা তো তোর ছোট খালার বাসায় এসেছি, কেন কিছু হয়েছে? তুই কি বাসায় এসেছিস নাকি?
~ তোমরা কখন আসবে?

~ বিকেল অথবা সন্ধ্যা হবে। ঝুমের কাছে একটা চাবি আছে ও এলে ওই চাবি দিয়েই ঢুকতে পারবে কিন্তু তুই এখন বাসায় গেলি। আমরা কি চলে আসবো?

~ আসা লাগবে না থাকো, আমি একটা কাজে এসেছিলাম। চলে যাবো কিছুক্ষণ পর।
~ আচ্ছা।

লাইন কেটে ঝুমের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ তালা খুলো দ্রুত।
শেখাওয়াতের কথা শুনে ঝুম চাবি নিয়ে তালা খুলতে যায়। কিন্তু তালার হোলে সে চাবিই ইন করতে পারছে না। এত পরিমাণ হাত কাঁপছে তার। তার এই কাঁপুনি দেখে শেখাওয়াত চাবি কেড়ে নিয়ে নিজেই তালা খুলে ঝুমকে এক ধাক্কায় ঘরের ভেতর নিয়ে যায়। আর তারপর দরজা আটকে দেয়।

শেখাওয়াতের এমন আচরণ দেখে ঝুম হাতে থাকা ব্যাগটা সেখানেই ফেলে দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে নিজের খাটে বসে পড়ে। মিনিট দুয়েক পর শেখাওয়াত তার রুমে আসে। এসেই ঝুমকে এক ঝটকায় দাঁড় করিয়ে ফেলে সে। আর ঝুমও তখন চেঁচানো শুরু করে।

~ এই খবরদার এইভাবে আমায় ধরবেন না। আমি আপনার কোন কর্মচারী না যে এইরকম ব্যবহার করবেন। অনেকদিন যাবত সহ্য করেছি আর না। বহুত হয়েছে, আজ আন্টি আংকেল আসলে তাদের বলে আমি কাল বাসায় চলে যাবো। গুষ্টি কিলাই পড়াশোনার, আর পড়তে হবে না আমার।

ঝুমের এমন কথা শুনে শেখাওয়াত তার রাগকে আর কন্ট্রোল করতে পারে নি আর রাগের বশে সে সেটাই করে ফেলে যেটা করা তার উচিত হয় নি। ঝুমের গালে ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয় শেখাওয়াত। আর ঝুম চড় খেয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ে। শেখাওয়াতের রাগ তখনও কমে নি, তার ইচ্ছে হচ্ছিলো আরও কষে দুটো থাপ্পড় ঝুমের গালের বসিয়ে দিতে। আর ঝুম কাঁদতে কাঁদতে আরও চেঁচামেচি করে,

~ আপনি আমাকে মারলেন? কেন মারলেন আমাকে আপনি? আপনাকে এই সাহস কে দিয়েছে? who are you, কেন মারলেন আমায়, কেন মারলেন বলেন? বলেন কেন মারলেন?

এইসব বলতে বলতে ঝুম শেখাওয়াতের কলার চেপে ধরে। আর শেখাওয়াত ঝুমের হাত দুটোকে নিজের আয়ত্ত্বে আনার চেষ্টা চালাতে থাকে। এদিকে, শেখাওয়াতের ফোনও একাধারে বাজতে থাকে।


পর্ব ১১

অনেক্ষণ ধস্তাধস্তির পর এক সময় শেখাওয়াত ঝুমের সাথে না পেরে ঝুমকে আঁকড়ে ধরে। নিজের বুকের মাঝে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে ঝুমকে সে। শেখাওয়াত যখন ঝুমকে জড়িয়ে ধরে তখন ঝুমের সব ছটফটানি কোথায় যেন পালিয়ে যায়। ঝুম যেন একদম চুপ হয়ে যায়। যেন তার সব কিছু শান্ত হয়ে যায়। কিছুটা সময় চুপ করে থেকে মাথা তুলে সরে যেতে চাইলে শেখাওয়াত ঝুমকে আরও আঁকড়ে ধরে।

~ কি করে বুঝাই তোমাকে আমি ঝুম, কি করে বুঝাই যে তোমার সামনে বিপদ। আমি আর যাই করি না কেন বা আর যাই কিছু ঘটে যাক না কেন আমি তোমাকে হারাতে পারবো না। এটা কেন বুঝো না তুমি ঝুম, কেন বুঝো না?

শেখাওয়াতের কথার আগা মাথা কিছুই ঝুমের মাথায় ঢুকছে না। শেখাওয়াত কি বলছে এইসব। ঝুম তখন আরেকটু নড়ে গিয়ে বলে,
~ আমার দম আটকে আসছে ছাড়ুন আমায়।

শেখাওয়াত ঝুমের কথা শুনে ঝুমকে ছেড়ে দেয়। তারপর ঝুমকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। তখনও ঝুমের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। শেখাওয়াত ঝুমের গালে নজর দেয় আর দেখতে পায় তিন টা আঙ্গুল উলে আছে ঝুমের গালে। জেদের বসে থাপ্পড় টা একটু জোরেই পড়ে যায় ঝুমের গালে। থাপ্পড়ের দাগটা একদম স্পষ্ট হয়ে আছে তার গালে। বিকেল অবদি যদি থাকে তাহলে তো ঝুমকে অনেক প্রশ্ন করবে তার বাবা মা।

মেয়েটার প্রতি এখন খুব মায়া হচ্ছে তার। শেখাওয়াত আরেকটু কাছে যায় ঝুমের। শেখাওয়াতের এইভাবে কাছে আসা টা ঝুমের কাছে একটু অদ্ভুত লাগে। কিন্তু আরও অদ্ভুত লাগে যখন ঝুমের গালে শেখাওয়াত চুমু দেয়।

শেখাওয়াত চুমু দেয়ার সাথে সাথে ঝুম যেন নড়ে উঠে। একটু দূরে সরে যেতেই শেখাওয়াত আবারও ঝুমকে নিজের কাছে টেনে নেয়।
~ অন্যান্য সময় তো নিজেই আসতে কাছে, হুট করে কি হলো?

~ আমি তো খারাপ মেয়ে, রুচিহীণ মানুষ, আমি নিজেই তো সরে গিয়েছি আপনি কেন আসলেন আবার।
~ কখন যে ভালোবেসে ফেলেছি সেটা কি বুঝো না তুমি?

শেখাওয়াতের এমন কথায় ঝুম থ হয়ে যায়। ভালোবাসে সে তাও ঝুমকে, এই কথা শুনে ঝুমের যেন মাথা ঘুরে উঠে। ঝুম যেন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শেখাওয়াতের। আর শেখাওয়াত তখন ঝুমের চোখের পানি গুলো মুছে দেয় আর বলে,

~ হ্যাঁ, ভালোবাসি তোমাকে আমি এতে অবাক হওয়ার মত কিছু নেই। আগে তোমার ভালোবাসায় বিরক্ত হতাম কিন্তু যখন থেকে তুমি আমায় বিরক্ত করা ছেড়ে দিয়েছো তখন থেকে আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি।
শেখাওয়াতের কথা গুলো শুনে যেন ঝুমের কান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। কি বলে আজ শেখাওয়াত? ঝুম তখন বলে উঠে,

~ থাক থাক, আর ভালোবাসি বলে ভুলাতে হবে না। আমি সবটাই বুঝি, শুট করে দিবো, মেরে ফেলবো, আবার থাপ্পড়ও দেয়ে সে কিনা আবার ভালোবাসে। সে ভালোবাসতে পারে না। সে শুধু ভালোবাসে তার কাজকে। আর কিছুই না।

ঝুমের কথা শুনে মুচকি হেসে দেয় শেখাওয়াত। তবে সেটা ছিল ক্ষনিকের হাসি। শেখাওয়াত তখনই হাসি থামিয়ে ঝুমকে নিজের দিয়ে ঘুরিয়ে বসায় আর বলে,

~ ঝুম, এইদিকে দেখো। কিছু কথা বলি শুনো। আমি বলতে চাই নি তবুও বলি, শহরে একের পর এক খুন হয়ে যাচ্ছে ঝুম। কিন্তু আমি এখনও খুনী অবদি পৌঁছাতে পারছি না।

শেখাওয়াতের মুখে খুনের কথা শুনে ঝুমের বুকটা কেঁপে উঠে। কারণ এর আগে এইসব খুন খারাবি সে শুনে নি। খুব কৌতুহল নিয়ে ঝুমের মুখ থেকে বেরিয়ে যায়,
~ খুন?

এইবার শেখাওয়াত পুরো বিষয়টা ঝুমকে খুলে বলে,
~ হ্যাঁ, খুন। যার মধ্যে তোমার কলেজের স্টুডেন্টই বেশি।
~ কিহ,
~ হ্যাঁ ঝুম। কেন এই খুন, কিসের জন্য এই খুন একটু হলেও ধরতে পেরেছি কিন্তু খুনী অবদি পৌঁছাতে পারছি না এখন পর্যন্ত।

~ কিসের জন্য এত খুন?
~ বাংলা বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র কায়সার মাহমুদকে চিনো?
~ নাহ, আমার ডিপার্টমেন্ট তো আলাদা আর আমি তো ফাইনাল ইয়ার।
~ ছেলেটাকে জঘন্য ভাবে খুন করা হয়েছে। অথচ তোমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল এইসব কিছুই গায়ে লাগাচ্ছেন না।

~ ওয়েট ওয়েট, কায়সার যদি খুন হয় অবশ্যই কলেজে জানানো হতো।
~ শুধু কায়সার না ঝুম, প্রথম বর্ষের এবং দ্বিতীয় বর্ষের মিলিয়ে স্টুডেন্ট গুলো খুন হয়েছে।
~ কিহ?

~ হ্যাঁ, তাই তো আমায় তোমায় নিয়ে ভয় ঝুম।

~ আমাদের কলেজের স্টুডেন্ট খুন হচ্ছে অথচ পুরো কলেজ এমন ভাবে আছে যেন কিছুই হয় নি।
~ প্রিন্সিপাল নন্দন কুমার দাশ সে সব জানে কিন্তু কো~অপারেট করছে না সে আমার সাথে।

~ আপনি কি কোন হদিস পাচ্ছেন না খুনের?
~ তুমি জানো ঝুম, যে খুন করছে সে আমায় চিরকুট দিয়ে যাচ্ছে।

~ কিহ, কিসের চিরকুট?
~ হ্যাঁ, প্রথম ৬ টা লাশের পর সে টের পেয়েছে আমি তাকে খুজছি। আর সেও খুব সূক্ষ্মভাবে খুন করছে। আমায় চ্যালেঞ্জ করেছে যাতে আমি তাকে ধরে দেখাই।

শেখাওয়াতের কথা গুলো ঝুম খুব মনযোগ দিয়ে শুনে। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঝুম বলে,
~ ওয়েট ওয়েট, সে আপনাকে চিরকুট দেয়?

~ হ্যাঁ, লাশের সাথে।
~ তার মানে সে আপনাকে অবজার্ভ করছে।
~ এটা ডক্টর নিহাশও বলেছে।
~ ডক্টর নিহাশ?

~ ফরনেসিক ল্যাবের ডক্টর, এইসব বডি সে নিজেই তদন্ত করছে।

~ ওকে, খুনী যেহেতু চিরকুট দেয় তবে সে আপনাকে চিনে। আর খুনের মধ্যে বেশিরভাগই যদি কলেজের স্টুডেন্ট হয় তবে খুনী কলেজেই আছে।

ঝুমের কথায় শেখাওয়াতের মাথায় যেন বাজ পড়ে। শেখাওয়াত ভাবতেই পারছে না এটা ঝুম বলছে। ওর মাথায় হুট করেই এই ভাবনা টা চলে এলো যা এতদিনে শেখাওয়াতের মাথায় আসে নি।

~ What!
~ yes, খুনী কলেজেই আছে। এক কাজ করতে পারবেন?

~ কি?
~ চিরকুটের লিখা গুলো কি হাতে কলমে লিখা নাকি প্রিন্টেড।

~ হাতে কলেমে।
~ that’s great, আমি লিখা গুলো দেখতে চাই। কারণ আমার ডিপার্টমেন্টে প্রায় অনেকের হাতের লিখা আমি দেখেছি, বুঝতে পারবো আমি।
~ Are you sure?

~ of course .
ঝুমের কথা গুলো শুনে আর ঝুমের নলেজ দেখে শেখাওয়াতের মাথায় অন্য চিন্তা চলে আসে। ঝুমকে আরও কিছু বললে হয়তো ঝুম আরও কিছু বলতে পারে। কারণ ঝুমের প্রখর বুদ্ধি এতক্ষণে ধরে ফেলেছে সে। সেই বিশ্বাস থেকেই ঝুমকে আরও কিছু বলে শেখাওয়াত।
~ ঝুম?

~ হ্যাঁ,
~ The most important part of this case,
~ What?
~ লাশ গুলো থেকে কিছু কিছু অংশ মিসিং।

~ যেমন?
~ হাতের কনুই অবদি থাকে না, পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত থাকে না, চোখ তুলে নেয়া হয়, আর সব থেকে আশ্চর্যের জিনিস, মাথার মগজ তুলে নেয়া হয়।
~ এ তো দেখি সাইকো?

~ হ্যাঁ, মেয়েগুলোকে আগে rape করা হয় তারপর খুন করা হয়।
~ আচ্ছা কিছুক্ষণ আগে বললেন যে একটা ধারণা করতে পেরেছেন যে কেন খুন গুলো হয়, ওটা কি আমায় বলা যাবে?

শেখাওয়াত একটু ভালো করেই নজর করে ঝুমের দিকে। কিছুক্ষণ আগে যে মেয়েটা এত রেগে ছিল, থাপ্পড় খেয়ে কান্নাকাটি করলো আর এখন সেই মেয়েই সব কিছু জানতে চায়। ঝুমের মাঝে অনেকটা বাচ্চা স্বভাব লুকায়িত কিন্তু সে নিজেকে অনেকটা বড় ভাবে এডাল্ট ভাবে। শেখাওয়াত মুচকি হেসে ঝুমের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় তারপর ঝুমের দু’গালে আলতো করে ধরে বলে,

~ ব্যাথা পেয়েছো, তাই না?

~ ব্যাথা পাওয়ার জন্যই তো দিলেন।
~ সরি, আসলে তোমায় নিয়ে ভয় হয় আমার প্রচুর।
~ পাছে আমায় না খুন করে ফেলে সেই ভয়ে?
ঝুমের কথা শুনে শেখাওয়াতের ভেতরটা কুকড়ে যায়। মুহুর্তের মাঝেই ঝুমকে জড়িয়ে নেয় শেখাওয়াত।
~ এইসব বলো না ঝুম, লাশ গুলো এতটাই বিভৎস রকমের যে এখানে তোমাকে কল্পনা করলেও আমার গলা অবদি আটকে যায়।

~ রুচিহীন নারীর জন্যে এতটা চিন্তা?
~ এই নারী টা ছাড়া আমার যে আর এক মুহুর্ত চলে না।
~ ভালোবাসেন আমায়?

~ এখনও মুখে বলতে হবে, কাজে বুঝো না তুমি? তুমি তো এতটাও বোকা নও ঝুম।
~ আমি বোকা, বড্ড বোকা। বোকা না হলে কি আর এই কাজ পাগল পুরুষকে মনে ধরে আমার।

এরই মাঝে শেখাওয়াতের ফোন টা আবারও বেজে উঠে। শেখাওয়াত ফোন হাতে নিতেই লাইন কেটে যায়। লক্ষ্য করে দেখে ফোনে প্রায় ১০ মিসড কল উঠে আছে। তার মানে ফোন টা আরও আগে থেকে বেজে যাচ্ছিলো।
শেখাওয়াত ঝুমকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল তাই সে এদিকে খেয়াল করে নি। মডেল থানার ইন্সপেক্টর জাকির এর ফোন। শেখাওয়াত পালটা ফোন করতে করতে ঝুমকে হাতে ইশারা দিয়ে চুপ থাকতে বলে। আর এদিকে জাকিরও ফোন রিসিভ করে।

~ আসসালামু আলাইকুম স্যার,
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম,

~ what?
রাগের মাথায় শেখাওয়াত তখন হাতে থাকা মোবাইল এক আছাড় মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। শেখাওয়াতের এই অবস্থা দেখে ঝুমও চাপা স্বরে চেঁচিয়ে উঠে।
~ শেখাওয়াত?


পর্ব ১২

শেখাওয়াতের এমন আচরণ দেখে ঝুম নিজেও ভড়কে যায়। এতক্ষণ তো ভালোই ছিল কিন্তু হলো কি এখন? ঝুম কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই শেখাওয়াত ঝুমকে আঁকড়ে ধরে। ঝুম প্রশ্ন করতে বাধ্য হয়,
~ কি হয়েছে শেখাওয়াত?

ঝুমের প্রশ্নে ঝুমকে আরও আঁকড়ে শেখাওয়াত। উত্তরে সে বলে,

~ মানে? কাকে বাঁচাতে পারেন নি।
~ ঝুম আমাকে বের হতে হবে, তুমি দরজা খুলবে না।

~ দাঁড়ান, এইযে শুনুন।
শেখাওয়াত আর এক মিনিটও দাঁড়ায় নি সেখানে। সোজা বাসা থেকে বেরিয়ে যায় সে। শেখাওয়াত বের হওয়ার পর পরই ঝুম দরজা আটকে দেয়।
দুপুর তিন টা,

স্থান~ মুক্তিনগর মডেল থানার পেছনে
শেখাওয়াত স্পটে পৌঁছে গিয়েই দেখে ৫০ কেজির প্লাস্টিকের একটা বস্তা পড়ে আছে। সাদা বস্তাটা লাল হয়ে আছে রক্তে। শেখাওয়াতকে দেখে ইন্সপেক্টর জাকির এগিয়ে আসেন আর বলেন,

~ স্যার আজকে সকাল ১২ টার দিকেই একটা মিসিং কমপ্লেইন আসে থানায়। আর এখন এই বস্তা।
~ থানার কাছে বস্তা রেখে যায় আর কেউ দেখেই নি। কি করেন আপনারা?

~ স্যার থানার সামনে হলে কথা ছিল কিন্তু এটা সম্পূর্ণ উল্টো দিক।
~ বস্তা কে দেখেছে?

~ স্যার এই লোক দেখেছে এবং দেখেই এসে থানায় জানিয়েছে।

ইন্সপেক্টর জাকির এই লোক বলে একজন লোকের দিকে ইশারা করে। শেখাওয়াতও লোকটার দিকে তাকায়। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছিলো ততটা চালাক চতুর না। শেখাওয়াত লোকটা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইন্সপেক্টর জাকির জানান লোকটার একটা চায়ের দোকান আছে থানার সামনে। মূলত এই দিকের মানুষজন তার চায়ের দোকানেই বসেন। আর থানাতেও চা দেয় তিনি। জাকির বলার পরে শেখাওয়াত লোকটাকে প্রশ্ন করে।

~ আপনার দোকান তো থানার সামনে, তাই না?
~ জ্বে স্যার,
~ তো আপনি এখান দিয়ে আসলেন কেন?

~ স্যার আমার বাসা তো এইদিক দিয়াই যায়। আমি এই পথেই আসা যাওয়া করি স্যার।
~ ওহ আচ্ছা।

কথার মাঝে ইন্সপেক্টর জাকির এগিয়ে এসে বলেন,
~ স্যার উনি নিরীহ মানুষ, দিন এনে দিন খায়। আর অনেকটা বোকা স্বভাবের, এইসবের মাঝে না টানাই ভালো মনে হয়।

~ ওকে, ছেড়ে দিন তাহলে আর এইটা খেলার ব্যবস্থা করুন।
~ ওকে স্যার।

বস্তা খোলার ব্যবস্থা করা হয় আর এদিকে শেখাওয়াত আজকের মিসিং কমপ্লেইন টা চেক করে। মিসিং কমপ্লেইনে যার নামটা ছিল তা দেখে শেখাওয়াত আঁতকে উঠে। শেখাওয়াত একবার বস্তার দিকে তাকায় আবার ডায়রির দিকে তাকায় যেখানে নাম টা লিখা ছিল।

বস্তা খোলার পর দুইজন কর্মকর্তা মধ্যে একজন কর্মকর্তা চেঁচিয়ে উঠে”আল্লাহ রে”বলে। তার চেঁচানো শুনে শেখাওয়াত আর ইন্সপেক্টর জাকির বস্তার দিকে এগিয়ে যায়। এগিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি দেখার সাথে সাথে ইন্সপেক্টর জাকির নিজের চোখ বন্ধ করে”oh my god”উচ্চারণ করে উঠেন। শেখাওয়াত যেন একদম স্তব্ধ হয়ে আছেন এইসব দেখে। আরেকটা লাশ বিভৎস লাশ, একটা মেয়ের লাশ। শেখাওয়াত হতাশ, খুব হতাশ। চাকরি জীবনে সব থেকে খারাপ যাচ্ছে তার এইদিন গুলো। নিজেকে খুব অকৃতকার্য মনে হচ্ছে।

তার চোখের সামনে দিয়ে এত এত খুন হচ্ছে। এত এত তাজা প্রাণ নীরবে শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ সে কিছুই করতে পারছে না। শেখাওয়াত লক্ষ্য করে লাশটার দিকে।

এইবারের লাশটাও আগের লাশগুলোর মত উলঙ্গ। পুরো বডিটা ফালা ফালা করে কাটা। চোখ নেই, নাক নেই, কান নেই, স্তন উধাও, গলা থেকে নাভি পর্যন্ত শুধু কাটা ছেড়া। সব থেকে বিশ্রী ব্যাপার হচ্ছে, নাভি থেকে আরেকটু নিচের প্রাইভেট অংশটা এমন ভাবে জখম করা যা দেখলেও সবাই আঁতকে উঠবে।

মনে হচ্ছিলো মেয়েটা কোন এক পশুর সামনে পড়েছিল আর সেই পশুটা তাকে ভক্ষণ করেছে এইভাবে। চোখে পানি এসে যায় শেখাওয়াতের। শেখাওয়াতের হাতে থাকা মিসিং ডায়রিতে নজর দেয় সে। সেখানে লিখাছিল কোচিং এ গিয়েই মিসিং হয়। আর এখানে লাশের সাথে ব্যাগ পাওয়া যায়। শেখাওয়াত সবার আগে ব্যাগ চেক করে। ব্যাগে বাংলা ডিপার্টমেন্টের দুইটা বই রাখা আছে। দুইটা খাতা আর সেই সাথে কলেজ আইডি কার্ড।

যাতে নাম শ্রেনী ক্লাস সব লিখা আছে। শেখাওয়াত যেই ভয় টা পেয়েছিল আজ তা হলো। শেখাওয়াত হাফিজকে ফোন করে।

২০ মিনিটের মধ্যে হাফিজ স্পটে পৌঁছে যায়। হাফিজকে দেখে শেখাওয়াত কলেজ আইডি কার্ডটা তাকে দেয়। কলেজ আইডি কার্ড দেখে হাফিজের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সাথে সাথে সে শেখাওয়াতের দিকে তাকায় আর বলে,

~ স্যার?
~ এত কিছু করেও বাঁচাতে পারলাম না।

~ স্যার এটা কি করে সম্ভব হলো?
~ বুঝতে পারছি না আমি কিভাবে কি হয়ে গেলো। গতকালও তো আমি,
~ এত কিছুর পরেও কিভাবে এটা হয় স্যার, আমার মাথায় কিছুই আসছে না স্যার।
এমন সময় ইন্সপেক্টর জাকির শেখাওয়াতকে ডাক দেয় আর বলে,
~ স্যার লাশের শরীরে এটা পাওয়া গেছে।

শেখাওয়াত নজর করে দেখে কালার পেপারের একটা খাম যা রক্তে ভেজা। শেখাওয়াত খামটা হাতে নিয়ে খুলতেই হলুদ রঙের একটা চিরকুট পায় যার অর্ধাংশে রক্ত লেগে আছে। শেখাওয়াত চিরকুট টা খুলে নিজের চোখের সামনে মেলে ধরে। চিরকুটে লিখা ছিল।

শ্রদ্ধেয় অফিসার,
তোমার সাথে আমার বনে না তাই বলে কি প্রেম দিবো না। তা কি করে হয়? যাকে এত কিছু করে প্রটেক্ট করলে আজ সে আমার ভক্ষনের শিকার। এটাকে খাওয়ার তেমন সুযোগ পাই নি তবুও যতটা পেরেছি খেয়েছি। বাকিটা তোমার রিটার্ন গিফট। কিচ্ছু কর‍তে পারবে না তুমি অফিসার। এক এক করে এভাবেই শেষ হবে সবাই। তুমি কিছুই কর‍তে পারবে না। আমায় খুঁজে বের করো অফিসার, খুঁজে বের করো আমায়।

শেখাওয়াত পুরো চিরকুট টা পড়ে। পড়ার পর শেখাওয়াতের মুখ থেকে একটা শব্দই বের হয়।
~ ঝুম?


পর্ব ১৩

রাতের বেলা ক্লান্ত শরীরে শেখাওয়াত বাসায় ফিরে আসে। আজ মন এবং শরীর কোন টাই ভালো নেই তার। শরীর যেমন তেমন মন ভালো না থাকলে কিছুই যে ভালো লাগে না। শেখাওয়াতের অবস্থা দেখে ঝুম ভয়েও আর কথা বলে নি। শেখাওয়াত নিজ থেকেই ঝুমকে বলে,

~ আমায় এক গ্লাস পানি খাওয়াও তো।
শেখাওয়াতের কথায় ঝুম দৌড়ে গিয়ে পানি নিয়ে আসে। শেখাওয়াত একবারেই সব টুকু পানি খেয়ে শেষ করে নেয়। গ্লাস টা ঝুমের দিকে এগিয়ে দেয়, ঝুম গ্লাসটা নিতে নিতে বলে,

~ টেবিলে খাবার দিবো?

~ নাহ, বাবা মা কি ঘুমিয়ে গেছে?
~ হ্যাঁ,

~ তুমি ঘুমিয়ে পড়ো, যাও।
~ কি হয়েছে জানতে পারি?
~ আমি রুমে গিয়ে ফ্রেস হচ্ছি, তুমি ১০ মিনিট পর রুমে এসো।

~ আচ্ছা।
শেখাওয়াত উঠে নিজের রুমে চলে যায়। আর ঝুমও হালকা কিছু খাবার প্লেটে নিয়ে শেখাওয়াতের রুমের দিকে যায়।

ঝুম রুমে গিয়ে দেখে শেখাওয়াত চুল মুছছে। তার মানে এখন আবার গোসল করেছে। শেখাওয়াতের চুল মোছা দেখে ঝুম বলে উঠে,

~ এই রাতের বেলা গোসল?
~ হ্যাঁ, গোসল না করলে ঘুমাতে পারবো না। রাতের বেলায় গোসল যেন অভ্যাস হয়ে গেছে আমার।
~ ঠান্ডা লাগলে?

~ তুমি আছো তো, সমস্যা কি।
~ খেয়ে নিন।
~ খাবার আনলে কেন, খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না আমার।
~ অল্প করে এনেছি, খেয়ে নিন। আর তখন কোথায় চলে গেলেন?

প্রশ্ন করতে করতে ঝুম খাবার প্লেট টা শেখাওয়াতের সামনে রাখে। শেখাওয়াত খাটে বসতে বসতে ঝুমকে পুরো ঘটনার বিস্তারিত বলে যা শুনে ঝুমের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
~ কে এই জানোয়ার? যে এইভাবে খুন করে।

দুইদিন পর,
শেখাওয়াত ঝুমকে কলেজে পৌঁছে দিতে ঝুমের কলেজে যায়। গাড়ি থেকে নেমে ঝুমকে নিয়ে একদম সে ঝুমের ডিপার্টমেন্ট অবদি চলে যায়। তখনই ঝুম বলে,
~ কেন শুধু শুধু আসতে গেলে?
~ একা একা আর ছাড়তে চাচ্ছি না।

~ দিন দিন রশিক হয়ে যাচ্ছো দেখছি।
~ তোমার জন্যে হতে হচ্ছে, কি আর করার।

~ বড্ড বেশি বলো তুমি।
~ কাছে আসো তো দেখি।

~ কেন?
~ আদর করে দেই।
~ মাথা ঠিক আছে তোমার?

~ এতদিন ঠিক ছিল না এখন ঠিক হয়েছে।

~ সবাই দেখছে সরো, অফিসে যাও।
~ এখন কার এই মর্ডান যুগে ওপেন লিপ কিস করলেও কেউ তাকায় না ম্যাডাম।
~ যাবে কিনা তুমি?

~ আচ্ছা এইদিকে আসো কথা আছে।
এই বলে শেখাওয়াত ঝুমকে এক পাশে নিয়ে যায়। দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ঝুমকে সে।
~ কি দেখছো এইভাবে তুমি?

~ চোখ দুটো অসাধারণ সুন্দর, ঠোঁট গুলো মায়া ভরা।
~ তা এখন চোখ, ঠোঁটের প্রশংসা করা হচ্ছে।
~ একটা কথা ভেবেছি।

~ কি শুনি?
~ বিয়ে করবো, খুব তাড়াতাড়ি।

~ বাহ খুব ভালো, তা আমায় দাওয়াত করো, তোমার বাসর সাজিয়ে দিয়ে আসবো।
~ কাকে বিয়ে করবো তা তো জিজ্ঞেস করলে না?

~ বিয়ে করবে তুমি, আমি কেন জিজ্ঞেস করবো।
~ আচ্ছা শুনো কানে মুখে একটা কথা বলি।

ঝুম নিজের কান টা শেখাওয়াতের দিকে এগিয়ে দিলে শেখাওয়াত নিজের মুখ টা ঝুমের কানের কাছে নিয়ে গিয়ে কথাটা বলে দেয়। আর ঝুম সাথে সাথে দুই চার টা ঘুষি থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় শেখাওয়াত।

~ অসভ্য দেখেছি তোমার মত দেখি নি। ফাযিল কোথাকার যাও এখান থেকে।

~ যা বললাম সত্যি বললাম কিন্তু।
~ তুমি খুব খারাপ।
~ আজ নতুন জানলে?
~ ফাযিল কোথাকার, যাও অফিসে যাও।
এই বলে আশেপাশে চেয়ে শেখাওয়াতের কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে দেয় ঝুম। ঝুমের এমন আচরণে শেখাওয়াত অবাক হওয়ার চাইতে খুশি হয় বেশি। শেখাওয়াত ঝুমকে চেপে ধরে ঝুমের কপালেও চুমু দিয়ে দেয়। তারপর ঝুমকে ক্লাসে দিয়ে শেখাওয়াত সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়। সিড়ি দিয়ে নামার পর এদিক ওদিক চেয়ে চোখে সানগ্লাস দিয়ে হালকা মুচকি হেসে কলেজ গেইট থেকে বেরিয়ে যায়।

অনুমান এবং আন্দাজ সঠিক হলে শেখাওয়াত যা ভেবেছে ঠিক তাই হবে।


পর্ব ১৪

এক সপ্তাহ পর,

অন্ধকার ঘর, প্রচন্ডরকম মাথা ভার নিয়ে চোখ মেলে ঝুম। চোখ মেলে চারদিকে তাকায় সে। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। চোখে যে তার এখনও নেশা কাজ করছে। কোন রকম উঠে বসে মাথার দু’পাশ টা চাপ দিয়ে ধরে রাখে ঝুম। যতদূর মনে আছে কলেজ থেকে বাসায় আসবে বলে সি এন জিতে উঠেছিল সে। কিন্তু সি এন জি তে তো সে একাই ছিল, তবে সে এখানে কিভাবে?

হিসাব মেলাতে পারছে না ঝুম তার উপর মাথায় প্রচুর যন্ত্রণা হচ্ছে। হঠাৎ কিছু গন্ধ নাকে আসে তার, এতক্ষণ মাতাল অবস্থার জন্যে গন্ধ পায় নি সে কিন্তু এখন স্পষ্ট পাচ্ছে। এতটা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারপাশ থেকে যে ঝুমের রীতিমতো বমি আসছে। রুমের এক কোণায় ছোট একটা জানালা।

যার ফাঁক ফোকর দিয়ে আলো আসছে হালকা পাতলা। ঝুম উঠে দাঁড়ায়, দেয়াল হাতরে হাতরে এগিয়ে যায় একপাশ থেকে আরেকপাশে। কিছু দূর যেতেই পায়ের সাথে কি যেন ঠেকে তার। সেই ছোট জানালার আলো দিয়ে যা কিছু দেখা যায় ঝুম উপুর হয়ে বসে জিনিসটা হাতে নিয়ে তুলে।

জিনিসটার সাইজ হাত দিয়ে ছুঁয়ে অনুমান করার চেষ্টা করে সে। বুঝতে না পেরে অন্ধকার ঘরে থাকা একটু আলো আসার সেই জানালার কাছে যায় ঝুম। আলোর দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে ধরে সে। আর যা দেখতে পায় তাতে তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। তার হাতে সেই মুহুর্তে একটা আঙ্গুল ছিল। কারো হাতের কাটা আঙ্গুল। আরেক হাত দিয়ে মুখ চেপে চাপা চিৎকার করে উঠে ঝুম।

এই প্রথম সে এইসব দেখছে বলে মাথা ভিমড়ি দিয়ে উঠে তার। ছুড়ে ফেলে দেয় আঙ্গুলটা সে। হুট করেই কানে বাজে কে যেন আরেক রুমে গুন গুন করে গান গাচ্ছে। খুব একটা স্পষ্ট শুনতে পারছে না তবে কেউ একজন গুন গুন করছিল তা বেশ ভালো মত বুঝতে পারছে। ক্রমশ গুন গুন শব্দটা আরও কাছে আসতে থাকে। ঝুম বুঝে যায় হয়তো এইদিকেই আসছে। ঝুম আর সময় নষ্ট করে নি।

ঠিক যেই জায়গা থেকে উঠে এসেছিল ওই জায়গাতেই গিয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

হুট করেই রুমের দরজাটা খুলে যায়। ঝুম তখনও চোখগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে নি, হালকা চোখে তাকিয়ে ছিল এটা দেখার জন্য যে কে গান গাইতে গাইতে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ঝুমের ভাবনার মাঝেই রুমের মধ্যে একটা টর্চের আলো পড়ে। টর্চের আলো দেখেই ঝুম চোখ বন্ধ করে ফেলে।

গুন গুন শব্দ করতে করতে এক জোড়া পা সেই মুহুর্তে রুমের ভেতর প্রবেশ করে। এক জোড়া পা রুমে ঢুকেই ঝুমের শরীরে টর্চলাইট তাক করে। ঝুমের শরীরের একদম পায়ের নখ থেকে মাথার চুল অবদি লাইট দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে সে। ঝুম শুধু একবার চোখ খোলার জন্য অপেক্ষা করে আছে।

কে এই শয়তান তা দেখার জন্যে। কিন্তু চোখ খুললেই মারা পড়বে সে এই মুহুর্তে। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে চুপ করে চোখ বন্ধ করে অজ্ঞানের নাটক করা ছাড়া এই মুহুর্তে সে আর কোন রাস্তা দেখতে পাচ্ছে না।

এক জোড়া পা সেই মুহুর্তে ঝুমের দেহের সামনে উপুর হয়ে বসে। খুব কাছে আসাতে গানের গুন গুন শব্দটা একদম স্পষ্ট হয়ে ঝুমের কানে লাগে।
তুমি এসেছিলে পরশু

কাল কেন আসো নি
তুমি কি আমায় বন্ধু
কাল ভালোবাসো নি
কাল কেন আসো নি

কাল ভালোবাসো নি
গান টা একদম স্পষ্ট শুনতে পায় ঝুম। গান টা গুন গুন করে গেয়ে এইবার সে কথা বলতে শুরু করে,
~ উফফ উফফ উফফ অফিসারের প্রেমিকা/প্রেয়সী/ভালোবাসার মানুষ/ আর অফিসারের প্রাণ ভ্রমরা এখন এখানে পড়ে আছে, আমার শিকার হয়ে।

ভাবছি এটার কয় পিছ করবো? পুরোটাই পিছ পিছ করে পাঠাবো নাকি আমার যতটুকু লাগবে ততটুকু রেখে বাকিটা পাঠাবো।

এই বলে সে খুব ভালো করে ঝুমের দিকে চেয়ে থাকে। ঝুমের একদম কাছে নিয়ে ঝুমের হাতে নিজের নাক ডুবায়।
~ আহহহ, এত সুন্দর ঘ্রাণ। তাহলে খেতে কেমন হবে এখন বুঝা দায়।
ঝুমের খুতুনিতে ধরে ঝুমকে ডাকতে থাকে সে,

~ এই ঝুম, আর কত ঘুমাবা? উঠো, আমি তোমাকে খাবো, খেতে চাই তোমাকে। যেভাবে সবাই পাকা আম চটকে চটকে খায় ঠিক সেইভাবেই চটকে চটকে খাবো। উঠো তাড়াতাড়ি, উফফ!

এতটা বিশ্রী ভাষায় সে কথা গুলো বলছিল যে ঝুমের ভেতরটা নড়ে উঠছে৷। পুরো গা ঘিন ঘিন করা শুরু করে দিয়েছে তার। কিভাবে এতটা নোংরা কথা বলতে পারে মানুষ। এটা কি মানুষ নাকি জানোয়ার।

হুট করেই এক মেয়ে কন্ঠ ভেসে আসে পাশের রুম থেকে। মেয়েটা চিৎকার করে কাঁদছে আর বার বার বলছে, “আমায় ছেড়ে দেন, দয়া করে আমায় ছেড়ে দেন”মেয়ের কন্ঠস্বর শুনে সে জিদ করে উঠে ওই রুমে যায়।
যাওয়ার সময় দরজা লক করে যায়। দরজা লক করার সাথে সাথে ঝুম দৌড়ে গিয়ে দরজার কাছে যায়। দরজার ওপাশ থেকে শুধু চাপা স্বর ভেসে আসছে। মেয়েটা চিৎকার করছে চাপা স্বরে। দরজার ফাঁক দিয়ে ঝুম বার বার দেখার চেষ্টা করছিল যে কি হচ্ছে ওই রুমে। একটু পর সেই ব্যাক্তি বিশ্রী ভাষায় গালাগাল শুরু করে দেয়। তারপর ধস্তাধস্তির শব্দ আসতে থাকে। ঝুম বহু চেষ্টার পর দরজার বাম দিকের ফাঁক দিয়ে দেখতে পারে ওই রুমে ঘটে
যাওয়া বিশ্রী ঘটনা। মেয়েটাকে পুরো উলঙ্গ করে রাখা হয়েছে। আর তারপরই শুরু হয় ওই জানোয়ারের পৈশাচিক অত্যাচার, যে অত্যাচার করে সে নিজেই পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করছে। ঝুম দেখা মাত্রই নিজের মুখটা দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে আর দৌড়ে গিয়ে সেই স্থানে চলে যায় যে স্থানে সে শুয়ে ছিল।
ওপাশ থেকে
মেয়েটার আর্তনাদ শুনা যাচ্ছে, যা খুব বেদনাদায়ক ছিল। ঝুম ফুপিয়ে কেঁদে উঠে আর নিজের কান দুটো নিজের দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে।

পাশের রুমে মেয়েটা ব্যাথায় চিৎকার করে কাঁদছে আর জানোয়ারটা মেয়েটাকে বিশ্রী ভাষায় গালাগাল দিচ্ছে। মেয়েটা কে কোথায় থাকে কিছুই জানে না ঝুম এমন কি সে মেয়েটার চেহারাও পুরোপুরি ভাবে দেখে নি, না দেখেছে ওই জানোয়ারটার চেহারা। ঝুম আর পারছে না এত বিভৎস আওয়াজ শুনতে। বার বার শেখাওয়াতকে ডাকছে সে।

কিছুক্ষণ পর মেয়েটার চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। ঝুম তখন আবারও দরজার কাছে দৌড়ে যায়। দেখে মেয়েটা বিছানায় পড়ে আছে আর একটা লোক প্যান্ট শার্ট পরছে। ততক্ষণে হয়তো মেয়েটার সম্ভ্রমটুকু লুটে নেয়া শেষ ওই পিশাচটার। তারপর দরজা খুলে কোথায় যেন চলে গেলো সে। আর ঝুম তখন দেয়ালের পাশ ঘেষে বসে কাঁদতে থাকে।

~ তুমি কোথায় শেখাওয়াত, কিছুক্ষণ পর হয়তো আমাকেও এইভাবে? তুমি কোথায়? প্লিজ আমায় বাঁচাও। আমাকেও হয়তো টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলবে তুমি কোথায় শেখাওয়াত?

হুট করেই নিজের ফোনের কথা মনে পড়ে যায় ঝুমের। কিন্তু নিজের ফোন টাও নেই এইখানে। সে হয়তো ফোন টা সরিয়ে দিয়েছে। আশেপাশে হাতড়ে দেখছে যদি নিজের ব্যাগটা পায়।

কিন্তু হাতড়ে ব্যাগ খুঁজতে গিয়ে পায় অন্য কিছু অনেকটা”কেচো খুড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে যাওয়ার মত”। সরু সরু নরম কি জানি হাতে লাগছে তার। ভালোমতো দেখতে পারছে না কিছুই সে। নাকের কাছে নিতেই বিশ্রী গন্ধে গা গুলিয়ে যায় ঝুমের। জিনিসগুলো হাতে নিয়ে আবারও জানালার কাছে ছুটে ঝুম। নিজের হাতের দিকে খেয়াল করাতে ঝুম দেখতে পায় তার হাতে কিছু রক্তমিশ্রিত নাড়িভুঁড়ি।

এইসব দেখে ঝুম চিৎকার করে উঠে। ভাগ্য ভালো ছিল খুনী তখন স্থানে ছিলেন না। হাত থেকে এইসব ফেলে দিয়ে নিজের হাতটা ভালো মত জামায় মুছতে থাকে। কেঁদে দেয় ঝুম, কাঁদতে কাঁদতে বলে,

~ আল্লাহ আমি যদি একটুও সওয়াব করে থাকি তো আমায় এইভাবে মরণ দিও না আল্লাহ।

আল্লাহ পাক এমন বিশ্রীভাবে মরণ দিও না আমায়। কারো হাতে এইভাবে মরতে পারবো না আমি।
দেয়ালের সাথে নিজেকে চেপে ধরে কাঁদতে থাকে ঝুম।

~ শেখাওয়াত, প্লিজ আমায় এখান থেকে নিয়ে যাও।
অন্যদিকে,
শেখাওয়াত পাগলা ঘোড়ার মত এদিক সেদিক খুঁজে বেড়াচ্ছে ঝুমকে। যা ভেবেছিল ঠিক তাই তাই হয়েছে। ঝুমকেও নিয়ে গেছে সে। এদিকে ঝুম গায়েব হওয়ার খবর শুনে ঝুমের বাবা মা আর শেখাওয়াতের খালা খালু সবাই শেখাওয়াতের বাসায় চলে আসে। ঝুমের মা সব শুনে বার বার মূর্ছা যায়।

ঝুমের বাবার বুকের ব্যাথা উঠে যায়। তাদের একটা মাত্র মেয়ে ঝুম। দুই ছেলের পর ঝুম হয়েছিল। ঝুমের দুই ভাই শেখাওয়াতের সাথে মিলে তন্ন তন্ন করে পুরো শহর খুঁজে বেড়াচ্ছে নিজের বোনকে।

ঝুম যেই রুমে থাকতো সেই রুমে গিয়ে শেখাওয়াতের মা পুরো রুম টায় চোখ বুলায়। তার কানে যেন এখনও বাজছে ঝুমের কথাগুলো। চোখের সামনে যেন এখনও ঝুম ভাসছে। ঝুমের একটা জামা বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে শেখাওয়াতের মা ফুপিয়ে কেঁদে উঠেন। মেয়েটা এতদিনে তাদের সবার মন কেড়ে নিয়েছে।

শেখাওয়াতের বাবা এমন সময় রুমে আসেন। নিজের স্ত্রীকে এইভাবে কাঁদতে দেখে নিজের মনকে আর শান্ত রাখতে পারেন নি তিনি। তাই কাছে গিয়ে বলেন,
~ শেখাওয়াতের মা, কেঁদো না। ভরসা রাখো শেখাওয়াতের উপর। সে ঠিক খুঁজে নিয়ে আসবে ঝুমকে।
~ ঝুমের যদি কিছু হয়ে যায় কিভাবে মুখ দেখাবো আপাকে আমি আর কিভাবেই বা মুখ দেখাবো ঝুমের বাবা মাকে।
~ নিজেকে দোষী ভাবছো কেন? ঝুম তো রাস্তা থেকে কিডন্যাপ হয়েছে বাসা থেকে নয়। এটা ঝুমের বাবা মা বুঝবেন, আর তারা তো এতটাও অবুঝ না। তাই নিজেকে দোষী ভেবো না। ছেলের উপর ভরসা রাখো।

~ শেখাওয়াত এত চেষ্টা করেও খুনীকে ধরতে পারে নি, তাহলে কি এইবার খুনীর টার্গেট আমাদের ঝুম।

~ আহহ, শেখাওয়াতের মা কি সব যে বলো। আল্লাহ আল্লাহ করো, নফল নামাজ পড়ো যাতে ঝুমের কিছু না হয়।
সন্ধ্যা ৬ টা,
চারপাশ টায় আলো কমে গেছে। পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার বিরাজ করছে। ওপাশের রুমেও আর সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। ঝুম যে উঠে দরজা অবদি যাবে সেই রাস্তাও আর খুঁজে পাচ্ছে না সে। কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার শব্দ তার কানে আসে। আর তার পরেই আবারও সেই চিৎকার শুনা যায়। তার মানে জানোয়ারটা আবারও মেয়েটাকে,

ঝুম নিজের দু’কান বন্ধ করে শুধু কেঁদে যাচ্ছে অবিরত। মুখে অনবরত আল্লাহর নাম নিচ্ছে ঝুম।
~ আল্লাহ পাক, আমার সম্ভ্রম আর আমার প্রাণ তোমার হাতে। আল্লাহ পাক আমি বাঁচতে চাই। একটু পর হয়তো আমাকেও? শেখাওয়াত আমায় বাঁচাও, আমায় নিয়ে যাও এখান থেকে।

উপরে আল্লাহ পাক, আর নিচে ঝুম এই বিপদের মাঝে। ওদিকে এক মেয়ের সব শেষ হচ্ছে। আর অন্যদিকে শেখাওয়াত আর যাই হোক না কেন ঝুমকে কিচ্ছু হতে দিবে না এইভেবে ঝুমকে খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাকিটা এখন পরিস্থিতি উপর ভরসা করা ছাড়া আর উপায় নেই।


পর্ব ১৫

রাত হয়তো অনেক হয়েছে। আজ কেন জানি ভোর হচ্ছেই না। খুব তৃষ্ণা পেয়েছে ঝুমের। গরমে, ঘামে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তার। ঘামে পুরো শরীর শ্যাতশ্যাতে হয়ে গেছে, মাথার চুল গুলো উসখো~খুসকো হয়ে গেছে। দুই হাটু উপুর করে দেয়ালের একদম কর্ণারে বসে কাঁদছে ঝুম। প্ল্যান তো এমন ছিল না তাদের। প্ল্যান টা হুট করেই পালটে গেলো আর এমন ভাবেই পালটে গেলো যে ঝুম কিছুই করতে পারলো না।

এমন সময় রুমের দরজা খুলে কেউ একজন আসে। এসেই টর্চ লাইটের আলো ঝুমের চোখে মুখে মারে। টর্চের আলো চোখে মুখে পড়াতে ঝুম চোখ মুখ আড়ালে করে নিজের দুই হাত দিয়ে।

লোকটা ক্রমশ এগিয়ে আসছে ঝুমের দিকে। লোকটা যতটা এগিয়ে আসছে তার গুন গুন শব্দটাও স্পষ্ট হচ্ছে ঝুমের কানে। লোকটা ঝুমের সামনে হাটু গেড়ে বসে আর বলে,

~ হ্যালো ঝুম সোনা, অবশেষে তোমার ঘুম ভেঙেছে তাহলে।
এইবার কন্ঠস্বর টা খুব পরিচিত মনে হয় ঝুমের। অবাক হয়ে যায় কন্ঠস্বর শুনে সে। চোখ থেকে হাত সরিয়ে যখন তার চেহারা দেখতে পায় তখনই ঝুমের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।

~ আপনি?
ঝুমের মুখ থেকে আপনি শব্দটা শুনে সে হো হো করে হেসে উঠে। তারপর বলে,
~ মেয়ে এবং ছএ উভয়পক্ষেরই একই রিয়েকশন হয় যখন আমার চেহারা দেখতে পায়, হা হা।

~ তার মানে এইসব আপনি করছেন?

~ হ্যাঁ, খুব মজা তোমাদের মতো মেয়েদের খেতে ৷ আহহহ,
লোকটা এত বাজে ভাবে ইংগিত করছিল যে ঝুমের আর সহ্য হয় নি সাথে সাথে থু থু মেরে দেয় লোকটার মুখের উপরে। ঝুমের থু থু ছিটানোতে লোকটার মাথা গরম হয়ে যায় আর সাথে সাথে সে ঝুমের গলায় চেপে ধরে। এত জোরেই চেপে ধরে যেন ঝুমের শ্বাসটাই বের হয়ে যাচ্ছে। হাত পা ছুড়তে থাকে ঝুম। ঝুমের এমন হাত পা ছুড়াছুঁড়ি থেকে লোকটা চিৎকার করে উঠে।

~ আমার মুখে থু থু দিলি কেন।
এই বলে সে ঝুমের গলা থেকে হাত সরিয়ে ঝুমের হাতে এক কামড় বসায়। কামড়ের যন্ত্রনা এতটাই তীব্র ছিল যে ঝুম আল্লাহ গো বলে চিৎকার করে উঠে। ঝুমের চিৎকার শুনে লোকটা বলে,
~ এইভাবেই কামড়ে কামড়ে খাবো আমি তোকেও।

লোকটার কথা শুনে ঝুম কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলে,
~ জানোয়ার তুই দোয়া কর শুধু, আমি যদি এখান থেকে বের হতে পারি তো তোকে শেষ করে ফেলবো। তোর এই ভালো মানুষির মুখোশটা আমি টান দিয়ে খুলে ফেলবো। তোর এই চেহারার ভেতর যেই পিচাশটা আছে তাকে সবার সামনে টেনে বের করবো আমি।

ঝুমের কথা শুনে লোকটা ঝুমকে ঠাটিয়ে চড় মারে। এত জোরেই চড় টা মারে যে চড় মারার পর ঝুম উপলব্ধি করতে পারে যে তার নাক বেয়ে তরল পদার্থ গড়িয়ে পড়ছে। ঠিক হয়ে না বসতেই আরেকটা চড় মেরে দেয় সে ঝুমকে। ঝুম ফ্লোরে শুয়ে পড়ে আর মাকে ডাকতে থাকে।

~ ও মা, মা। আমায় নিয়ে যাও এখান থেকে। ও মা, আমায় নিয়ে যাও।

ঝুমের এই আকুতি শুনে লোকটা মাতালের মত হাসতে থাকে। আর এদিকে ঝুমের শরীর যেন অসার হয়ে যাচ্ছে। লোকটা ঝুমের চুলের মুঠি ধরে ঝুমের থুতুনিতে হাত দিয়ে বলে,

~ তোর পেয়ারের শেখাওয়াতকে ডাক। যে জোর করে চেপে চুমা দেয় আর তুইও তো দেস। ডাক ডাক তারে ডাক। আমি এখন তোকে খাবো, খুবলে খুবলে খাবো, তখন সে কি করবে, হ্যাঁ।

এই বলে লোকটা ঝুমের গলায় আরেকটা কামড় বসায়। কামড়ের ব্যাথায় ঝুম মাগো বলে চেঁচিয়ে উঠে। তারপর লোকটা ঝুমকে মেঝেতে ফেলে দিয়ে ওই রুমে চলে যায়। ঝুম আর কিছুই বলতে পারছে না, নিস্তব্ধ হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে সে।

লোকটা ওই রুমে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সেই রুমে থাকা মেয়েটা আরও চিৎকার শুরু করে। ঝুম চিৎকার শুনে কোন রকম উঠে দরজার কাছে যায়।

দরজার সেই ফাঁকে চোখ রাখে সে। চোখ রাখার পর ঝুমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। ঝুমের চারপাশটা যেন ঘুরছে।

ঝুমের চোখের সামনে ওই রুমের মেঝেটা রক্তে ভরে যায়। লোকটা ততক্ষণে মেয়েটাকে জবাই করে ফেলেছে। মেয়েটার মুখ থেকে জিবটা বেরিয়ে গেছে অর্ধেক। চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ঝুম নিজের মুখটা দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে। ঝুম জানে যে, এখন যদি সে চিৎকার করে তবে তাকেও এখনই জবাই করে ফেলা হবে।

ঝুমের মাথা ঘুরিয়ে উঠে। এই প্রথম সে নিজ চোখের সামনে মানুষ জবাই হতে দেখেছে। তার মন তখন একটা কথাই বলতে থাকে, “আল্লাহ পাক তোমার দুনিয়ায় আশরাফুল মাখলুকাত রুপে এখনও শয়তান বসবাস করে”চোখ বেয়ে তার পানি ঝরনার মত বেয়ে পড়ছে। একটা তাজা প্রাণ তার চোখের সামনে শেষ। ঝুম আবারও উঁকি দেয় সেই ফাঁক দিয়ে।
উঁকি দেয়াটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার জন্যে। ঝুমের চোখের সামনে একটা চা~পাতি দিয়ে ওই মেয়ের দেহটা ফালা করতে শুরু করে সেই জানোয়ারটা। ঝুম যেন চোখে মুখে ধোঁয়া দেখছে। নাভি পর্যন্ত ছিড়ে ফাঁক করা হয় দেহটাকে। তারপর হাত ঢুকিয়ে কলিজাটা বের করে আনে লোকটা।

কলিজাটা হাতে নিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে লোকটা কলিজায় কামড় বসায় আর তা দেখে সাথে সাথে ঝুম বমি করে দেয় সেইখানেই। ছিহ, কতটা খাচ্ছর হতে পারলে কাচা রক্তমিশ্রিত কলিজায় কামড় বসায় তাও একজন মানুষ হয়ে অন্য মানুষের কলিজা এইভাবে কামড়ে খেতে পারে।

দরজার ফাঁকটা যেন আরও বড় হয়ে যায় ঝুম সব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। লোকটা হাতের কনুই পর্যন্ত কাটে সেই সাথে পায়ের গোড়ালি পর্যন্তও কেটে ফেলে। আঙ্গুল গুলোকে আলাদা আলাদা করে কেটে কাচা আঙ্গুল গুলোকে দাঁতের নিচে ফেলে কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে সে। ঝুমের মুখ থেকে বের হয়ে আসে,

~ ইন্না~লিল্লাহ, এ তো মানুষ না। এ তো মানুষরুপী পিশাচ/রাক্ষস যে মানুষকেই খায়। ইয়া মাবুদ তার মানে ওই সব লাশের অংশ এর পেটে। কিন্তু সামনে থেকে দেখে কখনও বুঝতেই পারি নি এ এমন।

ঝুম আবারও উঁকি দিলে দেখতে পায় লোকটা একটা চিকন ছুরির মাথা দিয়ে ওই মেয়ের চোখ গুলো খুলে ফেলেছে। তারপর পানি দিয়ে একটা একটা করে দু’চোখই গিলে ফেলে অনেকটা পানি দিয়ে ঔষধ গিলে ফেলার মত। এটা দেখে ঝুম নিজের মুখ চেপে ধরে চাপা স্বরে”নাউজুবিল্লাহ”নামক শব্দ করে।

লোকটা তখন নিজের শরীরের আড়মোড়া ভেঙে মাথার কাছে গিয়ে বসে আর তারপর মাথার মাঝখান বরাবর একটা কোপ দেয়। আর তারপর আরেকটা চিকন কাচির সাহয্যে মাথার মগজটা বের করে একটা গ্লাসে রাখে।

তারপর সেই গ্লাসে পানি নিয়ে চামচ দিয়ে নাড়িয়ে শরবতের মতো গুলে খেয়ে ফেলে। এটা দেখে ঝুম আবারও গড় গড় করে বমি করে দেয়। এই মুহুর্তে একটু পানির প্রয়োজন তার। দুইবার বমি করে তার খুব তৃষ্ণা পেয়েছে। ভয়ের চোটে দরজায় সে টোকাও দিবে না।

ঝুম ছুটে গিয়ে দেয়ালের কোনায় চেপে বসে আছে। শেখাওয়াতকে তার খুব প্রয়োজন, এই মুহুর্তে খুব প্রয়োজন তার শেখাওয়াতকে। এই নরপিশাচকে ধরিয়ে দেয়াটাও খুব প্রয়োজন। ঝুমের জানা নেই ঝুম এখান থেকে আদৌ বেঁচে ফিরবে কিনা। ইতোমধ্যে হাত আর গলায় প্রচুর ব্যাথা করছে তার।

জানোয়ারটা এতই জোরে কামড় দিয়েছে যে ঝুম গলায় সেই কামড়ের স্থানে হাত দিয়ে দেখে জায়গাটা বেশ অনেকটাই ছিলে গেছে। হাতের ক্ষতস্থানেও আরেক হাত দিয়ে উপলব্ধি করে যে তার হাতটাও জখম হয়েছে।

হু হু করে কেঁদে দেয় ঝুম এইভেবে যে, আজ না হয় কাল ঠিক একই ভাবে তার উপরও পাশবিক অত্যাচার শুরু হবে আর তারপর তাকেও এইভাবে টুকরো টুকরো হতে হবে। হতে হবে এক জানোয়ারের খাদ্য।

~ শেখাওয়াত আমি হয়তো তোমাকে আর দেখতে পাবো। আর হয়তো ভালোবেসে কাছে টানতে পারবো না। শেখাওয়াত তোমাকে আমি দেখতে চাই। প্লিজ আমায় নিয়ে যাও,
অন্যদিকে,
হুট করেই শেখাওয়াতের হাতটা টেবিলের কোনায় লেগে কেটে যায়। কাটার সাথে সাথে রক্ত বের হতে থাকে। তাজা রক্ত গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে”ঝুম”বলে আওয়াজ করে উঠে শেখাওয়াত। দু’চোখে তার পানি গুলো টল টল করছে। ঝুমকে যে করেই হোক তার ফেরাতেই হবে। ঝুমের শরীরে একটা আঁচড় সে লাগতে দিবে না।

এইসব ভাবছে আর পাগলের মত ফাইল গুলো এলোমেলো করে দেখছে শেখাওয়াত। এমন সময় হাফিজ আসে কেবিনে।
~ স্যার?

~ বলো হাফিজ।
হাফিজ বুঝে যায় শেখাওয়াত এখন তার নিজের মাঝে নেই। এতদিন তো অন্যের লাশের চেহারা দেখতে হয়েছিল শেখাওয়াতকে। জানা নেই এখন হয়তো নিজের আপন মানুষটার চেহারা তাকে দেখতে হবে। হাফিজের কন্ঠ ধরে আসছিল, তবুও সে বলে,
~ স্যার আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।

~ পারছি না, একদম ভরসা করতে পারছি না আমি। আল্লাহ পাক চাইলে এতদিনে আমি খুনীকে ধরতে পারতাম। কিন্তু পারলাম না। আমি কায়সারকে বাঁচাতে পারি নি। আমি কায়সারের ভালোবাসাকেও বাঁচাতে পারি নি আর এখন আমার সেই মানুষটাও তারই কাছে বন্দী। আমি কি করে ভরসা রাখবো হাফিজ।

~ স্যার আমরা তো সিউরিটি দিতে পারছি না যে ঝুম ম্যাডাম তার কাছেই আছে।
~ তার কাছেই আছে এটাই সিউর হাফিজ আর আমি যে কোন মূল্যে ঝুম অবদি পৌঁছাবোই।
~ ইনশাআল্লাহ স্যার,

~ হাফিজ মডেল কলেজের সামনে যাবো গাড়ি বের করো।
~ ওকে স্যার।
এই বলে শেখাওয়াত অফিস থেকে বের হয়ে যায়। গন্তব্যস্থল মডেল কলেজের সামনের এরিয়া। আর এদিকে অন্ধকারে একটু একটু মৃত্যুর দিকে পা বাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা ঝুম একটু বাঁচার চেষ্টা করছে। মনে মনে আল্লাহ পাক আর শেখাওয়াতকে ডাকতে থাকে ঝুম।

একটু বাঁচতে চায় সে, ফিরে যেতে চায় এই অন্ধকার থেকে আলোর মাঝে তার ভালোবাসার মানুষের বুকে।


পর্ব ১৬

পুরো রাতটা খুব ভয়ে ভয়ে পার করে ঝুম। কখন জানি তাকেও এইভাবে শেষ হতে হয় সেই ভয়েই তার আত্মা বার বার কেঁপে উঠে। এই মুহুর্তে শেখাওয়াতের মুখটা বার বার মনে পড়ে ঝুমের। শেখাওয়াতকে খুব প্রয়োজন তার এই মুহুর্তে। শেখাওয়াতের সেই খোলা বুকটা তার খুব প্রয়োজন যাতে মাথা লুকাবে সে নিজের। তার মুখ দিয়ে বার বার শেখাওয়াতের নামটাই উচ্চারিত হচ্ছে।

অন্যদিকে,
শেখাওয়াত পুরো শহর যেন পারে না ওলট পালট করে ফেলে। তার ঝুমকে চাই, যেন কোনো ভাবেই তার ঝুমকে চাই। জীবিত অবস্থায় তার চাই ঝুমকে।

এত কিছুর মাঝে খবর আসে আরেকটা বস্তা বন্দী লাশ পাওয়া গেছে। নিজের রুহ টা আর সাথে ছিল না শেখাওয়াতের। এইবারের লাশ টা ঝুমের নয়তো? সব কাজ ফেলে আগে সেই স্থানে পৌঁছায় শেখাওয়াত।

আজ শেখাওয়াত নিজেই বস্তা খুলছে। কাউকে হাত লাগাতে দেয় নি সেই বস্তায়। আজ প্রথমবারের মতো কন্সটেবল হাফিজ এবং ইন্সপেক্টর জাকির এতটা অসহায় অবস্থায় দেখছে শেখাওয়াতকে। শেখাওয়াত কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না কিন্তু তার মনে যে ঝড় উঠেছে এটা একমাত্র সে~ই জানে। চোখের পানি গুলো হাত দিয়ে মুছে বস্তার বাধন খুলে। পুরো বস্তা উন্মুক্ত করে খুব ভালো করে লাশটার দিকে তাকায় শেখাওয়াত।

লাশের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ইন্সপেক্টর জাকির এবং কন্সটেবল হাফিজও আঁতকে উঠে। লাশটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে শেখাওয়াত চোখের পানি ছেড়ে দেয়। শেখাওয়াতের এমন আচরণে ইন্সপেক্টর জাকির এবং কন্সটেবল হাফিজ শেখাওয়াতের কাছে গিয়ে তাকায় ভরসা দেয়।

সে সময় জাকির বলেন,
~ স্যার, এটা ম্যাডাম না।

জাকিরের কথায় শেখাওয়াত কান্নার মাঝেও হালকা স্মিত হেসে বলে,
~ নাহ জাকির, এটা ঝুম না।

~ আলহামদুলিল্লাহ, স্যার আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন একটু।
এরই মাঝে হাফিজ বলে,
~ স্যার লাশটা ম্যাডামের গায়েব হওয়ার পরে পাওয়া গেলো।

তবে কি এইবার ম্যাডামকে?
হাফিজ এই কথা বলার সাথে সাথে জাকির হাফিজকে চোখের ইশারা করে থেমে যাওয়ার জন্য। শেখাওয়াতের কানে যেন হাফিজের বলা কথাটা বার বার বারি খাচ্ছে। এর পরের লাশটা সে আর আসতে দিবে না। তার ঝুমকে সে এই অবস্থায় দেখতে পারবে না।

এদিকে,
পুরো একটা দিন পার হয়ে যায়। ঝুমের পেটে কিছুই পড়ে নি। এক ফোঁটা পানিও না। একটু পানির জন্য সে ছটফট করেছে তবুও পানি পায় নি। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি টুকু নেই তার। চোখ বন্ধ হয়ে আসে বার বার।
এরই মাঝে সেই জানোয়ার হুট করেই রুমের মধ্যে পা রাখে।

সেই একইভাবে গুন গুন শব্দ করে গান গাচ্ছে সে। জানোয়ার টাকে দেখেই ঝুমের কলিজায় কামড় পড়ে ৷ হয়তো এখন সময় গেছে ঝুমের, এই জানোয়ারের খাদ্য হবার। ঝুমের দিকে তার একেক পা এগিয়ে আসা যেন ঝুমকে বলে দিচ্ছে ঝুম শেষ। ঝুম বার বার তাকে বলছিল যে তাকে ছেড়ে দিতে।

ঝুমের এমন অবস্থা দেখে জানোয়ারটা তখন হো হো করে হাসে আর তার হাসি দেখে ঝুমও বলে,
~ আল্লাহ না করুক আমাকেও যদি তুই ওদের সবার মতো শেষ করে দেস তবে শেখাওয়াত যে তোর কত টুকরো করবে তুই ভাবতেও পারছিস না, জানোয়ার কোথাকার।

ঝুমের কথা শুনে সে আর ঠিক থাকতে পারে নি। ঝুমের চুলের মুঠি ধরে ঝুমকে মেঝেতে ঠেসে ধরে রাখে। ব্যাথায় ঝুমও কেঁদে দেয়। এমনিতে তার শরীরে কোনো শক্তি নেই তার উপর এমন ভাবে চেপে ধরায় ব্যাথা পায় সে। ঝুমের কান্না দেখে সে বলে,

~ খুন তো তোকে আমি এমনিতেও করবো, দেখে এলাম তোর পেয়ারের অফিসার তোকে তন্ন তন্ন করে খুঁজছে। সে যতক্ষণে তোর খোঁজ পাবে ততক্ষণে তুই ভোগের সামগ্রী হয়ে যাবি।

জানোয়ারটার কথা শুনে ঝুম লাফিয়ে উঠে। চোখ গুলো বড় বড় করে বলে,
~ যতবার মেরেছিস, আরও মার আমাকে তুই। যতবার মারবি ততবার খাতায় লিখে রাখিস। একবার শুধু একবার শেখাওয়াতের হাতে ধরা পর তোকে সব সুদে আসলে ফেরত দিবে।

~ আমায় আগে খুঁজে বের করুক তারপর তো আসল সুদের হিসাব হবে। আগে তোকে শেষ করি।
~ এত গুলো তাজা প্রাণ তুই শেষ করছিস, জানোয়ার কোথাকার।

~ তুইও তো শেষ হবি, একে একে সব শেষ হবে। ভালোবাসার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারবে না।

~ তুই কেমন মায়ের গর্ভে হয়েছিলি, জানোয়ার কোথাকার, মানুষ হয়ে মানুষ খাস।

এই কথা বলে ঝুম মুখে হাত দিয়ে ফেলে। রাগের বশে এমন কথা মুখ দিয়ে বের করে ফেলে যা বের করা উচিত হয় নি তার। ঝুমের এই কথা শুনে সে পাগলের মতো হয়ে যায়। ঝুমকে আরও চেপে ধরে আর বলে,
~ তোকেও খাবো, কামড়ে কামড়ে খাবো।

জানোয়ারটা তখন ঝুমের উপর চেপে উঠে। ঝুম তখন চিৎকার করে শেখাওয়াতকে ডাকে। আর ওইদিকে জানোয়ারটা ঝুমের ডান হাতে আরেকটা কামড় বসিয়ে দেয়। ঝুম আল্লাহ গো বলে চিৎকার করে উঠে।

কামড়ের যন্ত্রণাটা এতটাই বেদনাদায়ক ছিল যে যে ঝুম আর সহ্য করতে পারে নি। ঝুমের গা থেকে ওড়নাটা টেনে খুলে নেয় সে। তারপর ঝুমের সেলোয়ারের ফিতায় হাত রেখে সেলোয়ারের ফিতায় টান দিয়ে খুলে ফেলে সে। ঝুম তখন অসহায় অবস্থায় কেঁদে যাচ্ছে।


পর্ব ১৭

হুট করেই রুমের দরজা খুলে যায়। সামনে শেখাওয়াতকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখে ভেতরে থাকা মানুষটার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। শেখাওয়াতের পেছনে হাফিজ এবং জাকির দাঁড়িয়ে আছে।

শেখাওয়াত আর একটা সেকেন্ডও অপেক্ষা করে নি। রিভালবারটা সোজা তাক করে ভেতরে থাকা মানুষটার দিকে।
তার সামনে এইভাবে রিভালবার তাক করা অবস্থায় শেখাওয়াতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার পেটে কামড় পড়ে যায়। শেখাওয়াত ঘরের ভেতর ঢুকে এদিক সেদিক কোথাও তাকায় নি, সোজা মানুষ টার সামনে গিয়ে তার কপালের মাঝ বরাবর রিভালবার ঠেকায় ৷

~ ট্রিগার টিপলে ৪ ইঞ্চি বুলেট টা সোজা তোর মাথার ভেতর দিক দিয়ে গয়ে মাথার পেছন দিক দিয়ে বের হবে। সিদ্ধান্ত নে কি করবি, মরবি নাকি,
ওদিকে,

ঝুম নিজের সর্বোচ্চ শক্তি টুকু প্রয়োগ করছে যাতে কোনো উঁচু নিচু হয়। আর ওই অমানুষ কিছু করতে না পেরে এলো পাথারি ঝুমকে থাপড়ে যাচ্ছে। ঝুম থাপ্পড়ের আঘাত তো সহ্য করে যাচ্ছে তবে কোনো খারাপ কিছু যাতে তার সাথে ঘটে না যায় তার সম্পূর্ণ চেষ্টা করছে সে।

একে তো গরম তার উপর দুই দিনের না খাওয়া শরীর। বিশেষ করে ওইসব নোংরা জিনিস দেখেছে, তবুও ঝুম মনের দিক থেকে ভেঙে পড়ে নি। নিজেকে যথেষ্ট স্ট্রং রেখেছে আর বার বার মা’র খাওয়ার সত্ত্বেও নিজের সম্মানে যাতে আঘাত না আসে সেদিকে খেয়াল রাখছে সে।

আর অমানুষটা নিজের পাওনাটুকু না পেয়ে আরও ক্ষেপে যায়। তার যে ঝুমকে চাই, ঝুমের সঙ্গে সহবাস যে তাকে যে করেই হোক করতে হবে, কিন্তু সে পারছে না। এর জন্যে মেজাজ তার প্রচুর খারাপ হয়ে যায়। যার জন্য সে ঝুমকে মারতে থাকে।

দু’জনের ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে কেউ একজন পেছন থেকে গুলি করে আর সেই গুলির নিশানাটা একদম লোকটার হাতে গিয়ে লাগে আর সে মেঝেতে বসে পড়ে ঝুমকে ছেড়ে দিয়ে। গুলির শব্দে ঝুম নিজেও আঁতকে উঠে এবং চিৎকার দিয়ে উঠে। অন্ধকার ঘরে আলোর আশা নিয়ে ঝুমের সামনে শেখাওয়াত দাঁড়িয়ে আছে।

হালকা আলোয় শেখাওয়াতের মুখটা দেখে ঝুম যেন তার কলিজায় পানি ফিরে পায়।

ঝুমের শরীরে সেই শক্তিটুকু~ই নেই যে সে উঠে গিয়ে শেখাওয়াতের সামনে দাঁড়াবে। সেখানেই শুয়ে আছে ঝুম, চোখে পানির স্রোত আর ঠোঁটের কোনে হালকা হাসি দিয়ে শেখাওয়াত নামটা একবার উচ্চারণ করে ঝুম। ততক্ষণে হাফিজ আর জাকির মিলে মেঝেতে পড়ে থাকা শয়তানটাকে শক্ত করে ধরে।

শেখাওয়াত ঝুমের কাছে দৌড়ে গিয়ে ঝুমকে জড়িয়ে ধরে। শেখাওয়াতকে পেয়ে শেখাওয়াতের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ঝুম। চিৎকার করে কেঁদে দেয় ঝুম। ঝুমের অবস্থা~ই বলে দিচ্ছিলো জানোয়ারটা ঝুমকেও? শেখাওয়াত ঝুমকে নিজের বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে রাখে। ঝুম শেখাওয়াতকে পেয়ে বলে উঠে,

~ এই সেই জানোয়ার শেখাওয়াত, এই সেই, আমি নিজের চোখে দেখেছি। এই জানোয়ারটাই মানুষ খায়। আমাকেও মেরে ফেলতে চেয়েছে শেখাওয়াত।

ঝুমের কথা শুনে হাফিজ আর জাকির ধরে রাখা সত্ত্বেও সে চিৎকার করে উঠে,
~ এই ঝুম, খুন করে ফেলবো আমি তোকে।

আজ তোর জন্য আমি ধরা পড়ে গেলাম। খুন করে ফেলবো তোকে আমি।

তার কথা শুনে ঝুম শেখাওয়াতকে আরও আঁকড়ে ধরে। ঝুমকে এইভাবে বলার জন্যে শেখাওয়াতের পায়ের রক্ত মাথায় চড়ে যায়। ঝুমকে ছেড়ে দিয়ে তার গলা চেপে ধরে শেখাওয়াত।

~ চ্যালেঞ্জ করেছিলি না, নেহ তোর ১৬ কলা পূরণ করে দিলাম। ধরে ফেললাম তোকে, এইবার আমিও দেখবো তোকে তোর কোন বাপ বাঁচায়।

ঝুম তখন উঠে বসে। আর শেখাওয়াতকে উদ্দেশ্য করে জোরে জোরে বলে,
~ শেখাওয়াত, ও কে জানো? আমি বলেছিলাম খুনী কলেজেই আছে। এই সেই খুনী শেখাওয়াত, যে কিনা ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের ডিপার্টমেন্ট হেড খসরু সাহেব।

~ what?
~ হ্যাঁ, এই সেই জানোয়ার। সে কলেজের স্টুডেন্টদেরকেই বেশিরভাগ টার্গেট করেছে।

শেখাওয়াত হাফিজকে বলে এই রুমে থাকা জানালা খুলে দিতে। হাফিজ জানালা খুলে দিলে সেই আলোয় শেখাওয়াত সেই প্রফেসরকে দেখতে পায়। শেখাওয়াত এতটাই অবাক হয় যে সে তার নিজের মাঝেই ছিল না।

কারণ সে যেদিন প্রিন্সিপাল নন্দন কুমার দাশের সাথে কথা বলছিল সেদিন এই প্রফেসর সেখানে কিছু সময়ের জন্যে উপস্থিত ছিলেন। শেখাওয়াতের মুখ থেকে অটোমেটিকলি বের হয়ে যায়,
~ Oh my god, তার মানে তুই~ই সেই আসল কালপ্রিট!

~ হ্যাঁ, আমিই সেই, যাকে খুঁজে বের করতে এত বড় অফিসারের এতদিন লেগে গেল।
~ প্রিন্সিপাল নন্দন কুমার দাশও এর সাথে জড়িত, তাই না?
তখন ঝুম বলে,

~ নাহ শেখাওয়াত, প্রিন্সিপাল স্যার তো জানে~ই না যে তার কলেজে এমন মানুষ রূপী নরপিচাশ আছে। কলেজে যেই যেই ছেলে মেয়েদের মাঝে সম্পর্ক আছে এই জানোয়ার তাদের তাদের টার্গেট করেছে।
খসরু তখন হেসে হেসে বলে,

~ তোকেও তো টার্গেট করেছিলাম বেঁচে গেলি একটুর জন্য। কেউ কারো সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে পারবে না। যে যে সম্পর্ক করবে তাকে এইভাবেই মরতে হবে।

তখন শেখাওয়াত হেসে বলে,
~ তোকে যে আমরা টার্গেট করেছিলাম সেটা তুই বুঝলি না। আমার কলেজে যাওয়, ঝুমের সাথে অন্তরঙ্গ ভাবে মেশা, এই সবটাই ছিল অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে মারার মতো। কিন্তু আমি তো ভাবি নি যে মেইন শয়তান তুই।

ভেবেছিলাম কলেজের কোনো স্টুডেন্ট হবে, কিন্তু রাঘব বোয়াল যে তুই এটা কল্পনাতেও আনতে পারি নি। তবে একটুর জন্য প্ল্যান টা মিস হয়ে যায় যার জন্য আমার ঝুমকে এতটা সহ্য করতে হলো।

ঝুম তখন চিৎকার করে বলে,
~ ও~কে আমি খুন করে ফেলবো। খুন করে ফেলবো আমি তোকে। শেখাওয়াত ওই রুমটা সার্চ করো। ওইখানে সে গতকালকেও একটা মেয়েকে খুন করেছে আমি নিজের চোখে দেখেছি। আর জানো তুমি শেখাওয়াত, এই শয়তানটা মানুষের কলিজা, মগজ এইগুলো খায়।

ঝুমের কথা শুনে জাকির খসরুকে ইচ্ছামতো থাপড়াতে থাকে। ঝুম তখন শেখাওয়াতকে বলে,
~ ও~কে এখানেই শেষ করে দেও শেখাওয়াত। ও যতজনকে টুকরো টুকরো করেছে তুমি এর শরীরকেও তত টুকরো করো যাতে পরবর্তীতে কেউ এই নোংরা কাজ করতেও দুইবার ভাবে।

শেখাওয়াত তখন খসরুকে ঘুষি মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। শেখাওয়াত ঝুমকে জড়িয়ে ধরে দাঁড় করায়। তখন ঝুমের সেলোয়ারে নজর যায় শেখাওয়াতের। ঝুম ঠিকমতো দাঁড়ড়াতে পারছিল না। শেখাওয়াত ঝুমকে দেয়ালের সাথে হালকা চেপে ধরে ঝুমের সেলোয়ারের ফিতায় গিট দিয়ে দেয়। ঝুমের অবস্থা দেখে শেখাওয়াতের চোখে পানি এসে যায়। ঝুমকে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ তুমি ঠিক আছো তো?
~ হ্যাঁ, ঠিক আছি আমি। কোনো ক্ষতি কর‍তে পারে নি সে আমার। আমি তাকে কোনো ক্ষতি করতে দেই~ই নি।
ঝুম তখন শেখাওয়াতকে আঁকড়ে ধরে রাখে আর নিজের মাথা শেখাওয়াতের বুকে রাখে। ফুপিয়ে কেঁদে দিয়ে বলে,
~ আমার খুব ক্ষুধা লাগছে, আমি দুইদিন কিচ্ছু খাই নাই। এক ফোঁটা পানিও আমায় খেতে দেয় নি এই কুত্তারবাচ্চা। একটু পানি খাবো আমি শেখাওয়াত, একটু পানি খাবো।

ঝুমের কথা শুনে জাকির দৌড়ে বাহিরে যায় আর গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে এসে শেখাওয়াতের দিকে এগিয়ে দেয়। পানির বোতলের মুখটা খুলে শেখাওয়াত ঝুমের দিয়ে এগিয়ে দিতেই ঝুম পানির বোতলটা কেড়ে নিয়ে ঢক ঢক করে সব টুকু পানি শেষ করে ফেলে। ঝুমকে এই অবস্থায় দেখে শেখাওয়াতের বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠে। তারপর ঝুমকে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে বাহিয়ে নিয়ে আসে শেখাওয়াত।

আজ দুই দিন পর বাহিরের আলো দেখছে ঝুম। চোখে যেন সব কিছু ঝাপসা হয়ে ভাসছে। ঝুমকে দেখে শেখাওয়াত চমকে যায়।

চোখ মুখ চুলের অবস্থা খুব ভয়াবহ। গাল সহ পুরো মুখ ফুলে আছে আর দুই গালে আঙ্গুলের ছাপ। বুঝাই যাচ্ছে যে থাপ্পড় মারা হয়েছে। তারপর শেখাওয়াতের নজর যায় ঝুমের ঘাড়ে যেখানে কামড়ের দাগ ভেসে আছে।

হাতের দিকে তাকায় তখন সে, দুই হাতে একই অবস্থা। ঝুম বলে আওয়াজ দিতেই ঝুম তার দিকে তাকায়।

ঝুম তাকাতেই ঝুমের নাকের নিচটায় নজর দেয় শেখাওয়াত। রক্ত শুকিয়ে আছে সেখানে, শেখাওয়াতের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে খসরু তার ঝুমকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। সেখানেই শেখাওয়াত ঝুমকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয় আর খসরু বলে চেঁচিয়ে উঠে।

খসরুকে তখন হাফিজ আর জাকির সহ বাকিরা ধরে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছিলো। শেখাওয়াতের ডাক শুনতে পেয়ে খসরু পেছনে ফিরে শেখাওয়াতের দিকে তাকাতেই শেখাওয়াত রিভালবারের ট্রিগার চেপে এক সাথে ৫ টা বুলেট ছুড়ে দেয় খসরুর বুকে। এমন ঘটনায় সবাই থতমত খেয়ে যায়।

খসরু তখন ঝুম আর শেখাওয়াত সহ বাকি সবার সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন শেখাওয়াত বলতে থাকে,
~ আমার ঝুমের শরীরে তুই যেই যন্ত্রণার চিহ্ন এঁকে দিয়েছিস আর সমস্ত নিরীহ প্রাণ গুলোকে যেই অসহ্য কষ্ট দিয়েছিস তার শাস্তি স্বরুপ তোকে মৃত্যু দিলাম আমি। তোর শাস্তি কোনো আদালতে না এখানেই ঘোষিত হলো আর তা আমি ঘোষণা করলাম।

হাফিজ, ডিপার্টমেন্টে খবর পাঠাও, খুনী পালিয়ে যাওয়ার সময় এনকাউন্টারে খুন হয়েছে।
শেখাওয়াতের কথা শুনে হাফিজ জোরে বলে উঠে,

~ ইয়েস স্যার। কুত্তারবাচ্চার জন্য এই শাস্তিটাও কম হয়ে গেছে। দরকার ছিল একেও টুকরো টুকরো করা।
ওদের কথার মাঝেই ঝুম জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে শেখাওয়াতের বুকে। শেখাওয়াত তখন হক চকিয়ে উঠে। আর চিৎকার করে ডাকতে থাকে,

~ ঝুম, এই ঝুম। ঝুম উঠো, ঝুম।


পর্ব ১৮

বিছানায় শুয়ে আছে ঝুম। জ্ঞানহীন অবস্থায় শুয়ে আছে সে। ঝুমের পাশেই বসা শেখাওয়াত। এখন শুধু জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছে শেখাওয়াত। ডক্টর এসে দেখে গেছে ঝুমকে। না খেয়ে থাকার জন্য বি.পি লো হয়ে গেছে। ঝুমের আরেকপাশে ঝুমের বাবা মা এবং শেখাওয়াতের বাবা মা বসা।

ঝুমের মা বার বার মেয়ের মুখের দিকে তাকায় আর কাঁদে। দুইদিনের না খাওয়া চেহারার দিকে যতবার তার চোখ যায় ততবার~ই কেঁদে দেন তিনি। শেখাওয়াত ঝুমের হাত ধরে ঠায় বসে আছে যা সবার চোখেই লাগে।

শেখাওয়াতের বাবা মা~ও ব্যাপার টা লক্ষ করেন। তবে এই সময়ে এইসব কিছু না বলা~ই শ্রেয় মনে করছেন সবাই।

এমন সময় ঝুমের মা বলেন,

~ কিভাবে মারছে আমার মেয়েটাকে। ওইটাকি আদৌ মানুষ ছিল নাকি জানোয়ার ছিল \

ঝুমের মায়ের কথা শুনে ঝুমের দিকে তাকিয়ে থাকা শেখাওয়াতের মন হু হু করে উঠে। একটুর জন্য প্ল্যানের গড়মিল হওয়াতে আজ ঝুমের এই পরিস্থিতি।

সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর ঝুমের জ্ঞান ফিরে। চোখ মেলে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল সে। আশেপাশে নিজের আপনজন এবং শেখাওয়াতকে দেখতে পেয়ে মনের ভয় তার অনেকটাই কেটে যায়। ঝুমের চোখ মেলা দেখে শেখাওয়াত ঝুম বলে উঠলে সবাই ঝুমের দিকে তাকায়। ঝুমের মা এক মিনিট দেরি না করে ঝুমকে নিজের বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে। মা’কে দেখতে পেয়ে ঝুমও আবেগী হয়ে যায়। অন্যদিকে শেখাওয়াতের মা~ও ঝুমের কাছে আসেন।
শেখাওয়াতের মা’কে দেখে ঝুম তাকেও জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। শেখাওয়াতের মা আর এক মুহুর্ত দেরি না করে প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে আসে। প্লেটে খাবার দেখে ঝুম বলে,

~ আমি আগে ভাত খাবো মা, আমার খুব ক্ষুধা লাগছে। আজকে অনেকগুলো ভাত খাবো আমি।

মেয়ের এমন কথায় ঝুমের মা হু হু করে কেঁদে উঠে। যেই মেয়ে তার খুব কম খাবার খেতো সেই মেয়ে আজ ক্ষুধার যন্ত্রণায় বলে অনেক ভাত খাবে। পেটের ক্ষুধা বড় ক্ষুধা। যার টা কেবল সেই~ই বুঝে।

ঝুমের মা নিজের হাতে তুলে মেয়েকে খাইয়ে দেয়। ভাতের লোকমা গুলো মুখের মধ্যে দেয়া মাত্র~ই ঝুম গিলে ফেলে। সবাই হা হয়ে ঝুমের দিকে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছিলো ঝুম ভাত না কোনো খনি পেয়েছে। ঝুমের এমন আচরণ দেখে শেখাওয়াতের চোখ বেয়ে আপনা আপনি পানি পড়ে যায়। এই সময়ে ঝুমের বাবা আর ভাই
শেখাওয়াতের কাছে গিয়ে হাজারো ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তাদের মতে, শেখাওয়াতের জন্যেই তারা তাদের মেয়েকে জীবিত অবস্থায় পেয়েছে। শেখাওয়াত সেই মুহুর্তে আর কিছুই বলে নি কারণ সে বলার মতো অবস্থায় নেই। তার নজর বার বার ঝুমের দিকেই যাচ্ছে। সে ভাবছে যদি ঝুমের বলা সেই রাতের কথাটুকু সত্যি হয়ে যেতো? আজ যদি সে ঝুমকে হারিয়ে ফেলতো? ঝুমের যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো? তখন শেখাওয়াতের কি হতো?

সে যে ঝুমকে ভালোবেসে ফেলেছে। খুব ভালোবাসে সে ঝুমকে, ঝুমের কিছু হতে দিবে না সে।

ঝুমের বাবাকে”আমি একটু আসছি”বলে শেখাওয়াত নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে যায়।

শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। মনে তার একটাই ভাবনা আরেকটু দেরি হলে তো খসরু নামের জানোয়ারটা তার ঝুমকে। এইভেবে বাথরুমের দেয়ালে এক ঘুষি মারে শেখাওয়াত।

এক ঘন্টা পর,
শেখাওয়াত একটু রেস্ট নিয়ে ঝুমের রুমে যায়। ঝুম তখন গোসল করে এসে বসেছে মাত্র। শেখাওয়াত ঝুমের বসে থাকা দেখে রুমের ভেতরে আর যায় নি। ঝুমকে দেখে চলে আসতে নিলেই ঝুম বলে,
~ রুমের ভেতরে আসবে না? বাহির থেকেই চলে যাবে?

ঝুমের কথা শুনে শেখাওয়াত ঝুমের দিকে তাকায়। ঝুমকে এখন অনেকটা স্নিগ্ধ লাগছে। পুরো পবিত্র একজন নারীর মতো লাগছে তবে ঝুম আগেও পবিত্র ছিল এখনও পবিত্র~ই আছে। হালকা স্মিত হেসে শেখাওয়াত ভেতরে আসে।

~ কেমন আছো এখন তুমি?
~ আমি ভালো আছি,
~ সত্যি ভালো আছো তো?

~ তুমি আছো তো, ভালো থাকবো না কেন, বলতে পারো?
~ খুব কষ্ট হয়েছিল, তাই না?
~ সত্যি বলতে, কামড়ের যন্ত্রণা গুলো খুব কষ্টের ছিল।

ঝুম এই কথা বলা মাত্র শেখাওয়াত ঝুমকে জড়িয়ে ধরে। ঝুমকে এইভাবে জড়িয়ে ধরায় ঝুমও একটু অবাক হয়। তবে কথা আর বাড়ায় নি সে। ঝুমকে ছেড়ে দিয়ে ঝুমের ঘাড়ে আর দুই হাতে কামড়ের অংশ গুলোতে মলম দিয়ে দেয় শেখাওয়াত। মলম লাগাতে লাগাতে শেখাওয়াত ঝুমের দিকে তাকায় আর ঝুমও শেখাওয়াতের দিকে তাকায়। তারপর কোনো এক কৌতূহল নিয়ে দুজনেই হেসে দেয়।
২ সপ্তাহ আগে,

সেদিন শেখাওয়াত আর ঝুম মিলেই প্ল্যানিং করেছিল যে তারা এমন কিছু করবে যাতে খুনীর চোখে ঝুম আঁটকে যায়। কারণ শেখাওয়াত ঝুমকে এমন কিছু ইনফরমেশন দিয়েছিল সেখানে শেখাওয়াতকে প্ল্যানিং করার কথা ঝুম নিজে বলে। সেদিন রাতে ঝুমের ঘরে আসে শেখাওয়াত। তারপর শেখাওয়াত এক এক করে ঝুমকে সব বলতে শুরু করে।

~ কি বের করলেন?
~ ঝুম খুনী এই পর্যন্ত যতজনকে খুন করেছে তাদের প্রত্যেকের রিলেশন আছে।

~ what!
~ হ্যাঁ, তোমাকে যেই কায়সারের কথা বলেছিলাম আমি মনে আছে?

~ হ্যাঁ।
~ কায়সার তার~ই ক্লাসমেট মৌ নামের একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে ছিল। আর সেদিন যে আমি হুট করেই চলে গেলাম। সেদিন মৌয়ের লাশ পাওয়া যায়।
~ হায় আল্লাহ।

~ কায়সারকে আগে মারা হয়েছিল। অনেক যোগ বিয়োগ করে আমি এটাই বের করেছিলাম যে খুনীর টার্গেট যারা সম্পর্কের মাঝে আছে তারা। আমি মৌকে পুরো প্রটেকশন দিয়েছিলাম। কিন্তু মৌ সেদিন আমায় না জানিয়ে একা বাসা থেকে কলেজ যায়। ক্লাসও করে কিন্তু বাসায় আর ফিরে যায় নি। দুইদিন পর মৌয়ের লাশ পাওয়া যায়।

কিছুদিন আগে জোড়া খুন হয়েছে। আর আমি খবর নিয়ে জেনেছি, এই দুইজন রিলেশনে ছিল। আর সব থেকে আশ্চর্যের কথা হচ্ছে ওই দুইজন কিন্তু মুক্তিনগর মডেল কলেজের স্টুডেন্ট। তুমি কি এটা জানো ঝুম, সে আমাকেও বলেছে পরবর্তী টার্গেট হতে পারে আমার পরিচিত কেউ।

~ চিরকুট গুলো এনেছেন?
ঝুমের কথায় শেখাওয়াত চিরকুট গুলো ঝুমের হাতে দেয়। ঝুম খুব ভালো ভাবে দেখে কিছুই ধরতে পারে না।
~ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

~ অনেকটা পেঁচানো হাতের লিখা।
~ প্রফেশনাল পর্যায়ের হাতে লিখা।

~ হ্যাঁ,
তখন ঝুম আরও কিছু ভেবে শেখাওয়াতের দিকে তাকায়। ঝুমের তাকানোতেই শেখাওয়াত বুঝে যায় ঝুম কিছু একটা ভাবছে,
~ তুমি কি কিছু ভাবছো?

~ খুনী কলেজের~ই কেউ।
~ এতটা সিউর হচ্ছো কিভাবে?

~ বুঝতেছেন না কেন, এটা সিউরভাবেই বুঝা যাচ্ছে। খুনী কলেজেই আছে, আর এইবার খুনীকে ফাঁদে আমিই ফেলতে পারি।
~ কিভাবে?
~ actually শুধু আমি না আপনাকেও থাকতে হবে।

~ থাকলাম।
~ তবে কাল থেকে কলেজেই হবে আমাদের প্রেমের কাহিনী।

~ হা হা হা।
সেখান থেকেই তাদের প্ল্যানিংয়ের শুরু। প্রথম পর্যায় সাকসেস হলেও প্ল্যানিংয়ের দ্বিতীয় পর্যায় টাই কাজ করে নি। কাজ করার আগেই বাজি উলটে যায়। সেদিন ঝুম কলেজে একা~ই গিয়েছিল, কথা ছিল সেদিন শেখাওয়াত নিজে ঝুমের আড়ালে থাকবে কিন্তু শেখাওয়াতের কাজ পড়ে যাওয়ায় শেখাওয়াত ঝুমকে বাসায় চলে আসতে বলে। আর ঝুমও শেখাওয়াতের কথা মোতাবেক চলে আসতে চায়। আর সেখান থেকেই ঝুমকে সরিয়ে ফেলা হয়।

বর্তমান,

কথা গুলো ভেবে দু’জনেই হেসে দেয়। সেই সময়ে শেখাওয়াত ঝুমের কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে দেয়। ঝুম তখন শেখাওয়াতকে বলে,
~ আমি যে সেখানে আছি, বুঝলে কি করে?

~ বড় বড় ক্রিমিনালও মাঝে মাঝে ভুল করে ঝুম, খসরুও ভুল করেছে। তোমায় সে নিজে অপহরণ না করে অন্য সি এন জি ওয়ালাকে দিয়ে অপহরণ করিয়েছে। আর আমি সেই পর্যন্ত পৌঁছে গেছি।

~ খোঁজ পেলে কি করে?
~ কলেজের সামনে ফুচকাওয়ালার কাছ থেকে জানলাম তুমি সেদিন সি এন জি~তে উঠেছিলে। সেখান থেকে সি এন জি স্ট্যান্ড, আর সেখান থেকে সি এন জি~র নাম্বার আর সি এন জি~র ড্রাইভার অবদি পৌঁছে গিয়েছিলাম। আর এরপরেই সেই জায়গায় পৌঁছে যাই।

~ আরেকটু দেরি হলে আমার লাশটা পেতে।
ঝুমের কথা শুনে দ্রুত এসে ঝুমকে জড়িয়ে ধরে শেখাওয়াত।

~ এই কথা আর বলবে না। আমার ঝুমকে যে চোখ তুলে চাইবে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে আমি দুইবার ভাববো না।
~ খসরুকে মেরে ফেলা টা কি ঠিক হলো?

~ খুনীকে বাঁচিয়ে রাখতে নেই, বেঁচে থাকলে সে আরও মানুষের প্রাণ নিতো।

~ তাও ঠিক।

~ আগামীকাল তোমার কলেজে যাবো, প্রিন্সিপাল নন্দন কুমার দাশের সাথে শেষ কথাটা বলার জন্য।
ঝুম এগিয়ে এসে শেখাওয়াতের হাতটা আঁকড়ে ধরে নিজের হাত দিয়ে।


পর্ব ১৯ (অন্তিম)

দুই দিন পর,
সকাল ১১ টা বেজে ২০ মিনিট

স্থান ~ মুক্তিনগর মডেল কলেজ
পুরো কলেজেই স্তব্ধতা বিরাজ করছে। কারণ এতক্ষণে ব্রেকিং নিউজে সবটা খোলসা করে দেয়া হয়েছে। সেখানে স্বয়ং শেখাওয়াত নিজে সম্পূর্ণ ঘটনার বর্ণনা দেয়। সেই সাথে সাক্ষী স্বরুপ ঝুমও উপস্থিত ছিল। মিডিয়া সেখানে নিজে গিয়ে সবটা দেখে আসেন এবং সেই অনুযায়ী রিপোর্ট তৈরি করে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়।

পরিষ্কার ভাবেই খবরে মুক্তিনগর মডেল কলেজের নাম উঠে আসে। স্টুডেন্টসহ সমস্ত ডিপার্টমেন্টের প্রফেসররা একাধারে অবাক এবং ভীত হয়ে পড়েন। তারা ভাবছেন যে, খুনী তাদের~ই সাথে এতদিন মিলেমিশে থেকে তাদের আড়ালে এমন জঘন্য সব কার্যক্রম চালিয়ে গেছে।

অন্যদিকে প্রিন্সিপাল নন্দন কুমার দাশের মাথা লজ্জায় নিচু হয়ে গেছে। তার এতদিনে তিল তিল করে গড়ে ওঠা সম্মান, নিজ কলেজ নিয়ে গর্ব করা সব এক লহমায় শেষ হয়ে গেছে। কয়েক জায়গা থেকে তাকে ফোন করে বাঁকা কথাও শুনিয়েছে অনেকেই। যার জন্য সে অত্যন্ত রকম খারাপ মন~মানষিকতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন।

শেখাওয়াত এবং ঝুম প্রিন্সিপাল নন্দন কুমার দাশের সামনে থাকা চেয়ারে বসে আছে। সেই সাথে সমস্ত ডিপার্টমেন্টের প্রফেসররা পাশে বসে আছেন। আর তার থেকেও বড় ব্যাপার প্রিন্সিপালের রুমের সামনে বাহিরে স্টুডেন্টরা ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে।

নন্দন কুমার দাশ লজ্জায় মাথা তুলে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছেন না শেখাওয়াতের সাথে। কারণ এই শেখাওয়াত~ই বার বার তার কাছে সাহায্য করেছিল। তখন যদি শেখাওয়াতের সাথে কো~অপারেট করতো তাহলে আর এইভাবে আরও কয়েকটা প্রাণ এমন অকালে ঝরে যেতো না।

কিছুক্ষণ সবার মাঝে নিস্তব্ধতা বিরাজ করে। সবার মাঝে কফি বিতরণ করা হয়, শেখাওয়াত কফির মগে চুমুক দিয়ে প্রিন্সিপালের দিকে তাকায়।

~ পুরো খবরটাই হয়তো দেখেছেন আপনি, তাই না?

শেখাওয়াতের কথায় প্রিন্সিপাল সাহেব শেখাওয়াতের দিকে তাকান। তারপর বলেন,
~ হ্যাঁ, দেখলাম সব টা।

~ কী বলেছিলাম আমি আপনাকে? বলেছিলাম একটু সাহায্য করুন আমায়, একটু কো~অপারেট করুন আমার সাথে। আপনি যদি একটু কো~অপারেট করতেন তাহলে হয়তো আজ কয়েকজন স্টুডেন্টকে আমি বাঁচাতে পারতাম। কিন্তু আপনি করলেন না, আপনি তো আমার সাথে কথা বলতেও নারাজ ছিলেন।

এখন দেখলেন তো কী হয়ে গেলো। প্রবাদে একটা কথা আছে, “ঘরের শত্রু বিভিষণ”এইখানে এই প্রবাদটা খেটে গেলো। আপনার কাছে থেকে কোনো রকম সাহায্য না পেয়ে অসহায় হয়ে আমি ঝুমের সাহায্য নিতে বাধ্য হলাম। আর ফল স্বরুপ দুটো দিন টানা যন্ত্রণা করতে হয়েছিল ঝুমকে।

তারপর শেখাওয়াত এক পাশে বসে থাকা সব প্রফেসরদের দিকে তাকায় আর বলে,
~ খসরু নামের জানোয়ারটা ঝুমকে খেতে পর্যন্ত দেয় নি। এত অত্যাচার করেছে যে মেয়েটা দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে নি। সময়ের একটু হের ফের হলেই সারাজীবনের জন্য আমিও আমার ঝুমকে হারিয়ে ফেলতাম।

হয়তো তার লাশ টাও আমায় কোনো এক বস্তা থেকে বের করতে হতো কাটা ছেড়া অবস্থায়।

এই কথা শুনার পর কিছু কিছু প্রফেসর চোখ বন্ধ করে ফেলে।

প্রিন্সিপাল সাহেব শেখাওয়াতের সব কথা শুনে তারপর নিজের মুখ খুলেন,
~ দেখুন অফিসার, প্রথমত আমি কল্পনাতেও আনি নি যে খুনী আমার কলেজেরই প্রফেসর হবে। আমার কাছে আমার কলেজের সম্মান অনেক ছিল। দীর্ঘ ২০ বছর আমি এই কলেজে প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত আছি। আমি আমার সর্ব দিক দিয়ে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা এবং কঠো পরিশ্রম দিয়ে এই কলেজ দাঁড় করিয়েছিলাম।

ভেবেছিলাম আমি এই কলেজেকে একটা ভালো পজিশনে নিয়ে যেতে পারবো অথচ আজ সব শেষ। আপনি যখন এসেছিলেন তখন আমি কথা আমলে নেয় নি তা ঠিক। কিন্তু তারও একটা বিশেষ কারণ ছিল আর তা হচ্ছে সম্মান, গৌরব। কিন্তু আজ সব শেষ অফিসার, আজ সব শেষ।

প্রিন্সিপাল নন্দন কুমার দাশের কথা শুনে সবাই আরও নিশ্চুপ হয়ে যায়। তখন তিনি আরও বলেন,
~ স্বার্থ আমিও দেখেছি অফিসার, আমার স্বার্থ ছিল শুধু এই কলেজের ভালো পজিশনে যাওয়া। এছাড়া আর কিছুই না অফিসার।

প্রিন্সিপালের কথা শুনে শেখাওয়াত নড়ে চড়ে বসে। তারপর সেও বলে,
~ আমি বুঝি স্যার, আমি বুঝতে পারি। তবে আর ভয় নেই। আমি তাকে ধরার পরেও সে পালাতে চেয়েছিল তাকে আটকানোর চেষ্টা অনেক করা হয়েছিল কিন্তু আফসোস, সে কারো কথা শুনে নি তাই এনকাউন্টারে শেষ করে দেয়া হলো।

~ ভালো করেছেন অফিসার, খুব ভালো করেছেন। হাতি যখন পাগল হয় তখন তাকে মেরে ফেলা~ই উচিত নয়তো সে দ্বিতীয়বার হামলা করতে দুইবার ভাবে না।

~ এইজন্যই তো শেষ করে দিয়েছি, না রইলো পাগল হাতি আর না থাকলো তার আক্রমনের ভয়।

কিছুক্ষণ কথা বলে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শেখাওয়াত প্রিন্সিপালের রুম থেকে বের হয়ে আসে। আর নিজের সাথে ঝুমকেও নিয়ে বের করে নিয়ে আসে। শেখাওয়াত যখন প্রিন্সিপালের রুম থেকে বের হয়ে আসে তখন সব মেয়েদের নজর যেন শেখাওয়াতের দিকেই ছিল। শেখাওয়াতকে পারছে না তারা গিলে খাচ্ছে।

তবে ঝুমের এইসব নিয়ে কখনও অভিযোগ ছিল না আর নেই~ও কারণ সে ভাবে সে বিশেষ কেউই শেখাওয়াতের কাছে যার জন্য শেখাওয়াত সব কিছুই করতে পারে। সে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী ভাবে কারণ সে এমন একজন নারী যে কিনা হাজারো নারীকে সাইডে রেখে শেখাওয়াতের আপন হতে পেরেছে।

তিন দিন পর,

শেখাওয়াত বাসায় তার বাবা মা এবং ঝুমের বাবা মায়ের কাছে ঝুম এবং তার বিয়ের কথা তুলে। শেখাওয়াতের বাবা মায়ের এই প্রস্তাবে না করার প্রশ্ন~ই ছিল না কারণ তারা ঝুমকে এতদিন ধরে নিজেদের কাছে রেখে বুঝে নিয়েছে ঝুম~ই তাদের ছেলের বউ হওয়ার যোগ্য মেয়ে। অন্যদিকে, ঝুমের বাবা মায়েরও আপত্তির কারণ ছিল না কারণ ছেলে তাদের চোখের সামনেই। আর তাছাড়া যেই ছেলের জন্য আজ তারা তাদের মেয়েকে ফিরে পেয়েছে সেই ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে পেরে তারাও নিশ্চিন্তমনে থাকতে পারবেন।

উভয়পক্ষের সম্মতিতে বিয়ের দিন~ক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। খুশী ঝুমও খুশী শেখাওয়াত। ঝুম খুশী কারণ সে তার ভালোবাসাকে পেয়েছে আর শেখাওয়াত খুশী তাকে যে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে তার ভালোবাসাটুকু বুঝে সেই ভালোবাসার সম্মান রক্ষা করতে পেরেছে এই কারণে।
রাত ২ টা,

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ঝুম, বাহিরের খোলা আকাশ দেখছে সে। আজ যে সে ভীষণ খুশী, তার যে বিয়ে ঠিক হয়েছে। আকাশে আজ আবারও চাঁদ উঠেছে। রাতের অন্ধকারের মাঝে এবং চাঁদের আলোয় চারদিক আলোকিত হয়ে গেছে আজ। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য আপন মনে দেখছে সে। এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত ঘটে শেখাওয়াতের। চাঁদের আলোয় ঝুমের চেহারাটা বড় বেশি মায়াবী লাগছিল। ঝুমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সে।

এদিকে, নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেরে ঝুমও পাশ ফিরে তাকায়। শান্ত নজরে সে তার শেখাওয়াতকে দেখতে থাকে। তখনই শেখাওয়াত বলে,
~ কী দেখছো এইভাবে?

~ তোমায় দেখছিলাম।
~ আমার মাঝে কি আছে যে এইভাবে এক নজরে দেখতে হচ্ছে।

তারপর আর কিছু বলে নি ঝুম। শেখাওয়াতের এমন কথায় শেখাওয়াতকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে সে। ঝুমের এইভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে শেখাওয়াতও ঝুমকে নিজের বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে। তখন ঝুম বলে,

~ আমরা খুব ভালো থাকবো দেখো তুমি, খুব ভালো থাকবো আমরা। সব অন্ধকার কেটে গেছে, সব অন্ধকার কেটে গেছে। এখন শুধু আলোর মাঝে আমরা সবাই ভালো থাকবো।

ঝুমের এই কথায় শেখাওয়াত যেন আরও শক্ত করে ঝুমকে আঁকড়ে ধরে। আর হালকা হাসি দিয়ে বলে,
~ ভালোবাসি,
শেখাওয়াতের মুখ থেকে এই কথা শুনে ঝুমও বলে ওঠে,

~ ভালোবাসি।
হ্যাঁ, অন্ধকার কেটে গেছে, একটা গাঢ় অন্ধকারের পর এখন আলোর দেখা মিলেছে, সেই আলোয় হয়তো সবাই ভালো থাকবে এখন। ঠিক এমন সময় শেখাওয়াতের মোবাইলে ফোন আসে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে ইন্সপেক্টর জাকির ফোন করেছে। শেখাওয়াত ফোন রিসিভ করে।
~ হ্যাঁ, জাকির সাহেব বলুন।

~…………………..
~ what? আবারও একটা বস্তা পাওয়া গেছে!
শেখাওয়াতের কথা শুনে ঝুম চোখ-ভ্রু কুচকে শেখাওয়াতের দিকে তাকায়।

লেখা – আফরোজা আক্তার

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “অন্ধকার – Voyonkor bhuter golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – জলপদ্ম – Bonyo premer golpo full

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *