এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৩

এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৩ – এলিয়েন মানবের গল্প | Alien Story

এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৩ – এলিয়েন মানবের গল্প: প্রযুক্তি টিমের সকলকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শ্রাবণ তার স্নেহাকে নিয়ে পালিয়ে আসে। অন্তত স্নেহার শরীর ত্যাগ করেছে তাইসন, এটাই শ্রাবণের কাছে অনেক আনন্দের বিষয়। এখন যেভাবে হোক তাইসনকে শেষ করতে হবে।

অস্থির সময়কাল

স্নেহাকে একজন ভাল ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে৷ স্নেহা সুস্থ হওয়ার পর সেই ডাক্তারকে চিরদিনের জন্য গায়েব করে দিতে হবে। পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে স্নেহা একজন খলনায়ক। স্নেহাকে নিজের কাছে অত্যন্ত গোপন করে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রাবণ।

হাতের মুঠোয় সব কিছু পেয়েও যেন হুট করে ফসকে গেল।

অনেকটা আফসোস নিয়ে বর্ণ এবং ন্যাশ তাদের বাসায় ফিরে আসলেও একেবারে যে হতাশ ছিল তারা তেমনটা নয়। স্নেহার পাশে পরে থাকা ছোট্ট উজ্জ্বল বক্সটাকে ঘিরে সকল উত্তেজনা কাজ করছে বর্ণ ন্যাশ তুরাণ এবং জহির আংকেল এর। জহির আংকেল গায়ে মোটা কম্বল পেঁচিয়ে দূর থেকে কচ্ছপ এর মত উঁকি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন সব কিছু। গায়ে কম্বল দেয়ার অবশ্য একটা কারণ ও রয়েছে।

বক্সে যদি বম্ব থাকে, আর সেটা যদি ব্লাস্ট হয় তবে এই একমাত্র কম্বলই তাকে বাঁচাবে। এমনটাই ধারণা তার। বক্সে বম্ব থাকতে পারে এরকম একটা সন্দেহ বর্ণের ও ছিলো। ন্যাশ তার রোবোটিক হাত থেকে লেজার রশ্মি বের করে ভালো ভাবে স্কান করে দেখে ভিতরে ব্লাস্ট হতে পারে তেমন কিছুই রাখা নেই। কিন্তু স্নেহার এরকম অজ্ঞান হয়ে পরে থাকার সাথে এই বক্সের অবশ্যই কোন না কোন সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং খুলে দেখাটাও অতিব জরুরি হয়ে গেল।

এদিকে শ্রাবণ অনেক খুঁজে এবং অনেকগুলো টাকা অফার করে একজন ভালো মানের মেয়ে ডাক্তারকে বাসায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। তার তত্বাবধানে বেশ কিছু ঘন্টা পরই জ্ঞান ফিরে আসে স্নেহার। চোখ মেলে শ্রাবণকে দেখা মাত্রই হাসি মুখে শুভ সকাল জানায় স্নেহা। হাতে ভর দিয়ে উঠতে গিয়ে স্নেহা বুঝতে পারে তার সমস্ত শরীর প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা হয়ে আছে। উঠে বসার মত এক ফোঁটা শক্তিও অবশিষ্ট নেই তার গায়ে। শ্রাবণের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে স্নেহা জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে তার? সে বিছানায় কেন তার পাশেই বা ডাক্তার বসে আছে কেনো!

শ্রাবণ বুঝতে পারে, তাইসন যতদিন স্নেহার মস্তিষ্ক দখল করে ছিলো, ততদিনে যা ঘটেছে তার কিছুই মনে নেই স্নেহার।

প্রযুক্তি টিমের অনুসন্ধান

স্নেহার পরিবারের সবাইকে যে মেরে ফেলা হয়েছে খুব সতর্কভাবে শ্রাবণ তা এড়িয়ে যায়। তবে শ্রাবণের ভিতরকার খারাপ সত্তাকে শ্রাবণ নিজেই অনেক আগে মেরে ফেলেছিলো।

চাইলেও মিথ্যে কথা বলা এখন তার দ্বারা সম্ভব হবে না।

সুতরাং বিচক্ষনতার সাথে শ্রাবণ স্নেহার প্রশ্নের ছোট ছোট উত্তর দেয়।

ডাক্তার মেয়েটি ভয়ে অনেকটা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। স্নেহার চেহারা দেখেই সে চিনে ফেলেছে তাকে। তবে স্নেহা এবং শ্রাবণের কথোপকথন শুনে অনেকটা আশ্বস্ত হয় সে, নিজেও অনুধাবন করতে পারে, স্নেহা খারাপ কোন কিছু দ্বারা হয়ত পজেস্ট ছিলো। শ্রাবণের ইশারা পেয়ে ঘুমের মেডিসিন সিরিঞ্জ এর মাধ্যমে পুষ করে স্নেহাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। তাকে আস্তে আস্তে সময় নিয়ে ফুল রিকভারি করাতে হবে।

এদিকে বর্ণ ন্যাশ জহির আংকেল এবং তুরান দরজা জানালা বন্ধ করে বক্স খোলার সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে বক্সের যে সিকিউরিটি লক ছিল তা খোলা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। দায়িত্ব গিয়ে পরে ন্যাশের ঘাড়ে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ন্যাশই বক্সটা ওপেন করবে এবং বাকি সবাই একটু দূরে অবস্থান করে পর্যবেক্ষণ করবে সব কিছু। শক্তিশালী লেজার রশ্নি দিয়ে ন্যাশ প্রথমে বক্সের সিকিউরিটি লক কেটে ফেলে। এরপর আস্তে আস্তে বক্সের ঢাকনা সরায়। সাথে সাথেই ঘটে খুব বড় ধরণের এক অঘটন।

দিনের আলো গিয়ে বক্সের ভিতরে পরতেই দেখা যায় ছোট একটা ধোঁয়ার কুন্ডলী, বলের মত হয়ে বক্সের ভিতরে এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে চলেছে।

ন্যাশ বক্সটি ওপেন করতেই হুট করে লাফিয়ে উঠে ন্যাশ এর নাক থেকে শরীরের ভিতরে ঢুকে যায় সেটি। বর্ণ তুরাণ এবং জহির আংকেল সব কিছুই স্পষ্ট ভাবে দেখতে পান। ন্যাশ সাথে সাথে লাফিয়ে উঠে ফ্লোরে গড়াগড়ি দিয়ে ছটফট করতে থাকে। তুরাণ দৌড়ে ন্যাশ কে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যেতে শুরু করলে, বাঁধা দেয় বর্ণ। কি ঘটেছে তা বর্ণ খুব ভাল করেই বুঝে ফেলেছে। আপাতত জহির আংকেলকে ও তুরাণকে সাথে নিয়ে এক ছুট দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে।

শ্রাবণ বেশ কিছুরাত বাসার বাইরে গিয়ে মানুষদের দেহ থেকে এনার্জি শোষন না করার ফলে আস্তে আস্তে নিজের ক্ষমতার উপর কন্ট্রোল চলে আসতে থাকে।

তাইসনের উপর আক্রমণ

শ্রাবণের এতদিন একটা দুর্বলতা ছিলো। স্নেহার জন্য সে তাইসনের উপর হামলা করতে পারতো না। কিন্তু এখন তো স্নেহা তার কাছে। শ্রাবণ সিদ্ধান্ত নেয় তাইসনের উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই ওর উপর জোরালো আক্রমণ চালাবে সে। কিন্তু শ্রাবণের বিন্দুমাত্র ও ধারণা ছিল না তাইসন এখন কি পরিমাণ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ন্যাশ একাই শ্রাবণের সাথে ফাইট করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। যদিও ন্যাশের কাছে শ্রাবণ কখনোই হারতো না। তবুও এ লড়াই অনেক দূর পর্যন্ত আগাতো।

পৃথিবীতে ন্যাশ চাইলে একনিষ্ঠ কর্তৃত্ব করতে পারে সেরকম ক্ষমতা তার একার মাঝেই আছে। তার উপর এখন তার দেহে আশ্রয় নিয়েছে ডার্ক ডেভিল তাইসন। তাইসনের নিজের শক্তির সাথে সাথে এখন রয়েছে ন্যাশের অত্যাধুনিক শক্তিশালী প্রযুক্তি। তাইসনকে থামানোর চেষ্টা করা এখন শুধু কষ্টসাধ্য ই হবে না, প্রাণঘাতীও বটে।

ডাক্তার মেয়েটার আনা ঘুমের মেডিসিন সিরিঞ্জে ঢুকিয়ে তার নিজের গায়েই জোর করে প্রবেশ করিয়ে দেয় শ্রাবণ। স্নেহা ও ডাক্তারকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে শ্রাবণ দরজা আটকে বাইরে নেমে পরে। উদ্দেশ্য তাইসনকে খুঁজে বের করা। সেদিন রাতে অবশ্য বেশি কষ্ট করতে হয় নি শ্রাবণকে। তাইসন ন্যাশের শরীরে ভর করে বেশ বিধ্বংসী হয়ে উঠে। রোবোটিক হাত থেকে মিনি মিসাইল ছুড়তে থাকে আশেপাশের বাড়ি ঘর গুলোতে। বড় বড় লম্বা দালান কোঠার ভীত কেঁপে উঠে।

সবাই নিজের জীবন বাঁচাতে উঠেপরে দৌড়ে বিল্ডিং এর বাইরে নেমে আসে। আর তখন ই তারা কালো ধোঁয়ার কুয়াশার মাঝে হারিয়ে ফেলে নিজেদেরকে। চিরজীবনের জন্য। মাঝ রাতে অনেক দূর থেকেও শোনা যায় ন্যাশের মিসাইলের আওয়াজ। সে শব্দ অনুসরণ করেই শ্রাবণ সামনে আগায়।

বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পরে গন্তব্যে পৌঁছে দেখতে পায় সেদিন যে ছেলেটা তার গলা চেপে ধরে মারতে চেয়েছিল, সেই ছেলেটি ই আজ তাইসনের ধারক দেহে পরিণত হয়েছে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে বিদ্ধস্ত হওয়া মিলিটারিদের গাড়ি এবং ট্যাংক হাত দিয়ে মিসাইল এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লেজার রশ্মী বের করে এসব ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল সে। হঠাৎ সেখানে শ্রাবণ উপস্থিত হওয়ায় তাকে দেখে নিষ্ঠুর হাসি হাসে তাইসন।

শ্রাবণ বনাম প্রযুক্তি টিম

অনেক দিন পর যেন বাগে পেয়েছে তাকে। অনেকটা হাওয়ায় ভাসার মত করে ভেসে শ্রাবণের কাছ থেকে বেশ দূরে চলে যায় সে। তারপর শ্রাবণের উপর চালাতে থাকে আগ্নেয়াস্ত্র এর আক্রমণ। শ্রাবণের দেহ আক্রমণে ক্ষত বিক্ষত হলেও মুহূর্তের মাঝেই পুনরায় হিলিং হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সমস্যাটা বাঁধল তখনই যখন ন্যাশ এর মাইক্রোবট গুলো শ্রাবণকে আস্তে আস্তে ঘিরে ফেলতে শুরু করে। অতি ক্ষুদ্রাকার হওয়ায় সে খেয়ালই করে নি তাকে অনেক অতি ক্ষুদ্রাকার রোবট গুলো ঘিরে ফেলেছে।

যখন রোবট গুলোর মাথা থেকে তীব্র আলোর ঝটকা এসে শ্রাবণের গায়ে লাগে, তখনই নিজের চোখ চেপে মাটিতে বসে পরে শ্রাবণ। এর উপর আবার ন্যাশ এর ছোড়া শক্তিশালী মিসাইলে তার দেহ টুকরো টুকরো অংশে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। আলোর তীব্রতায় শ্রাবণের ভেতরকার পয়জন কিং এর শক্তি লাঘব হয়ে যায়। ন্যাশের আক্রমণের প্রভাবে শ্রাবণের শরীর ধ্বংস হতে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ ঘটে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ন্যাশের মাইক্রোবট এর তীব্র আলো কোন এক অন্ধকারে ঢাকা পরে যায়।

এক টুকরো অন্ধকার এসে শ্রাবণকে উজ্জ্বল আলো থেকে আড়াল করে ফেলে। নিজের ভিতরে পুনরায় শক্তি ফিরে পায় শ্রাবণ। যদিও তখন তার ভেতরকার পয়জন কিং জেগে উঠলেও শুধুমাত্র কোনরকমের পালিয়ে বাঁচার মত শক্তি অবশিষ্ট ছিল তার। সে এক সেকেন্ড ও দেরী করেনা। ছুটে পালিয়ে যায় দূরে কোথাও।

ন্যাশ বুঝতে পারে এটা কার কাজ। বর্ণ এন্টি টর্চ ব্যবহার করে বাঁচিয়ে দিয়েছে শ্রাবণকে। ভীষণ রাগে জোর গলায় হুংকার দিয়ে ন্যাশ বলতে থাকে, বর্ণ তুমি আশেপাশে কোথাও লুকিয়ে আছ সে ব্যাপারে আমি একেবারেই নিশ্চিত। আমি তোমাকে এই মূহুর্তে খুঁজে বের করে খুন করবো। দেখি তোমাকে কে রক্ষা করে।

শ্রাবণ তার রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত দেহ টেনে হিঁচড়ে এগিয়ে নিচ্ছে কোন রকমে। পরিপূর্ণ রিকভারির করতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে তার।
হাঁটতে হাঁটতে বাসার দিকে আগানোর সময় কারো গায়ে ধাক্কা খেয়ে আহত শরীর নিয়ে মাটিতে আছড়ে পরে যায় সে।

ক্লান্তি এবং যন্ত্রনায় চোখ বুজে আসে শ্রাবণের।

পিট পিট করে তাকিয়ে দেখতে পায়, সে যার সাথে ধাক্কা খেয়েছে, সে অত্যন্ত সুন্দরী একজন মেয়ে। গায়ে সেনাবাহিনীর পোশাক পরিধান করা। এ পোশাকে তাকে আরো মানানসই লাগছে। বুকের উপরের ব্যাজে লেখা রয়েছে অলিভিয়া।

এরপর শ্রাবণের দিকে নিজের ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে অলিভিয়া সুমিষ্ট কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

ডু ইউ নিড এনি হেল্প?

শ্রাবণ কোন উত্তর দিতে পারে না। অলিভিয়ার হাতে নিজের রক্তাক্ত হাত রেখেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

চলবে…

পরের পর্ব- এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৪ – এলিয়েন মানবের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *