এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৫

এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৫ – এলিয়েন মানবের গল্প | Alien Story

এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৫ – এলিয়েন মানবের গল্প: অলিভিয়া মেয়েটির মধ্যে একধরনের মুগ্ধতা আছে যেটা আমাকে আকর্ষিত করছে। যাই হোক আমাকে সবার আগে তাইসনকে শেষ করতে হবে। এটাই এখন আমার প্রথম ও প্রধান কাজ।

নতুন জীবন ও ভাবনা

এই মেয়ে সমস্যা কি! পাগলের মত হাসছো কেনো!

সরি ফর দ্যাট। ডু ইউ নিড এ ড্রেস?

হুম। আমার খুব তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এখানেই অপেক্ষা করুন। আমি ফিরে আসার আগ পর্যন্ত।

অলিভিয়া কাত করে রাখা সিমেন্ট এর মোটা পাইপটির ভেতর থেকে বের হয়ে চলে যায়। শ্রাবণ সেখানে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে। তার মনে একটা ব্যপার ই বার বার ঘুরপাক খাচ্ছিলো তা হল ডাঃ সাদিকা যদি পুলিশে ইনফর্ম করে তবে খুব বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে শ্রাবণকে।

স্নেহাকে তো দেখা মাত্রই গুলি করে শরীর ঝাঝরা করে দেয়া হবে। স্নেহার ব্যপারে খারাপ কিছু ভাবতে একদম ই ভাল লাগছে না শ্রাবণের। সে বাসায় যাওয়ার জন্য মনে মনে ছটফট করতে থাকে।

বেশ কিছুক্ষণ পরে অলিভিয়া ফিরে আসে ফাহদের জন্য নতুন পোশাক নিয়ে৷ শ্রাবণ চেঞ্জ করার সময় দেখতে পায় অলিভিয়া ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

শ্রাবণ ধমকের সুরে বলে,

এই মেয়ে ওদিকে ফিরো! আমি চেঞ্জ করব। অলিভিয়া একটু ভ্রু কুচকে মুচকি হাসি দিয়ে পিছনে ফিরে বসে। শ্রাবণ খুব তাড়াতাড়ি করে নিজের ড্রেস বদলে নেয়। একদম শ্রাবণের গায়ের মাপের ড্রেস। এত ফিট ড্রেস কিভাবে অলিভিয়া ম্যানেজ করলো সেটা নিয়ে আপাতত চিন্তা করার সময় শ্রাবণের নেই।

কোন রকম ড্রেস গায়ে চাপিয়ে এক দৌড়ে সে পাইপ থেকে বের হয়ে গেলো।

শ্রাবণের ধারা

বাইরে হঠাৎ ই মেঘ জমতে শুরু করেছে। আকাশের আলো কমে আসছে ক্রমশই। কালো কালো দানবের মত মেঘে ছেয়ে গিয়েছে চারদিক। দুড়ন্ত ঝড়ো হাওয়ায় শুকনো ধুলোবালি উড়ে এসে অলিভিয়ার গায়ে লাগছে।

বেগুনী রং এর চুল গুলো প্রচন্ড বাতাসের সাথে সাথেই ফুরফুরিয়ে উড়োউড়ি করছে। শান্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে বাতাসের গায়ে নাক পেতে ঘ্রাণ নেয় অলিভিয়া। বৃষ্টির আগে বাতাসের দেহ থেকে একটি তীক্ষ্ণ ঘ্রাণ পাওয়া যায়। ঘ্রাণটা তার অনেক ভালো লাগে। ছোট্ট একটি বালিকার মত দু হাত দুদিকে ছড়িয়ে খোলা বাতাসে চুল উড়িয়ে নাচতে মন চাইছে তার। সব কিছু চাইলেই তো আর সম্ভব হয় না। অলিভিয়ার মনে কোন প্রকারের দুঃখ না থাকলেও বৃষ্টির আগে প্রকৃতির সাথে সাথে যেন তার মনটাও অকারণেই খারাপ হয়ে যায়। দু হাত দিয়ে হাঁটু জড়িয়ে ধরে মাথা নিচু করে বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকে অলিভিয়া।

প্রথমে টুপ টুপ করে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পরে। অলিভিয়া পাইপের ভেতরে বসে বাইরের দিকে তার সরু আংগুলের হাত বারিয়ে দেয়। আংগুলের ডগায় বৃষ্টির কনার মৃদু আঘাত বেশ উপভোগ্য মনে হয় তার কাছে। মনে মনে ভাবে শ্রাবণ হয়ত এখন বুনো মোষের মত রাস্তার বুকে পা ফেলে দৌড়ে চলেছে বাসার উদ্দেশ্যে। নিজে নিজেই খিক খিক করে হাসি দেয় দৃশ্যটি কল্পনা করে।

টিপ টিপ বৃষ্টি দেখতে দেখতেই ঝুম বৃষ্টিতে রূপ নিল। চার দিকে প্রচন্ড বাজ পড়া এবং বৃষ্টির শো শো শব্দ তে প্রচন্ড ঘুম পায় অলিভিয়ার। বৃষ্টির ছিটে এসে গায়ে লাগার সাথে আবার বইছে ঠান্ডা বাতাস। একটু শীত শীত করছে তার। বিড়ালের মত গুটিসুটি মেরে চোখ বুজে শুয়ে থাকে সে। সময়টায় ভীষণ একাকীত্বে ভুগতে হচ্ছে অলিভিয়াকে। বৃষ্টির ঝুম ঝুমে শব্দে কেউ একজন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে না থাকলে মনের তৃপ্তি পূর্ণতা পায় না।

অনেকটা দুশ্চিন্তা নিয়ে পাগলের মত দরজার কলিংবেলের সুইচ টিপে চলছে শ্রাবণ। বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে গিয়েছিল সে। চাবি হারিয়ে ফেললেও হাত দিয়ে তালা ভেংগে ফেলতে বেশি বেগ পেতে হয় নি তাকে। তালার সাথে সাথে এখন দরজাটাও ভেংগে ফেলতে মন চাচ্ছে তার। ভেতর থেকে দরজা লক করা। এতবার নক করার পর ও দরজা খুলছে না কেউ।

এদিকে ঝুম বৃষ্টির কারণে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় কলিং বেল বাজছিল না। বৃষ্টির শব্দের আড়ালে ঢাকা পরে যাচ্ছিলো শ্রাবণের দরজায় নক করার শব্দও। স্নেহার সাথে গল্প করতে করতে নেইল কাটার দিয়ে স্নেহার বেড়ে ওঠা হাত পায়ের নক কেটে দিচ্ছিলো ডাঃ সাদিকা।

স্নেহার কাছে শ্রাবণ

নিজের আপন বোনের মত অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে স্নেহাকে সেবাযত্ন করে চলেছিলেন তিনি। শ্রাবণের দরজায় টোকা দেয়ার আওয়াজ ক্রমশই বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে স্নেহা এবং সাদিকা দুজনেই শুনতে পায় সে শব্দ।

সাদিকা অতি সাবধানে এগিয়ে যায় দরজার দিকে। বাইরে শ্রাবণকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনেকটা নির্ভার হয়েই দরজা খুলে দেয় সাদিকা। দরজা খোলার সাথে সাথে হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ঢুকে শ্রাবণ। সাদিকাকে উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে স্নেহা কোথায়? ও কেমন আছে?
সাদিকা অত্যন্ত শান্ত ভাবে উত্তর দেয়, স্নেহা আগের থেকে অনেকটা ই ভালো আছে। ও ওর জায়গায় ই আছে। কিন্তু আপনার কি হলো! সেটা বলুন! শ্রাবণ উত্তর দেয়, আমার কি হবে। আমি সব সময় ই ভালো থাকি।

শ্রাবণ দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দেখে স্নেহা বিছানার উপরে বসা অবস্থায় রয়েছে। শ্রাবণ কে দেখে শুকনা একটা হাসি দেয় সে। জিজ্ঞেস করে কোথায় গিয়েছিলো শ্রাবণ।

শ্রাবণ উত্তর দেয়, বিশেষ একটা কাজে৷

স্নেহার শরীর কেমন আছে জিজ্ঞেস করলে স্নেহা জানায় আগের থেকে অনেকটাই ভালো আছে সে, ডাঃ সাদিকা তাকে আপন ছোট বোনের মত সেবা যত্ন করেছে। গোসল করিয়ে দিয়েছে, খাইয়ে দিয়েছে। স্নেহার সাথে কথোপকথন এর ফাঁকে শ্রাবণের হঠাৎ চোখ যায় বিছানার উপরে পরে থাকা সাদিকার ফোনের উপরে। তার মানে লুকিয়ে রাখা সত্ত্বেও সাদিকা খুঁজে পেয়েছে ফোনটি।

কোন ধরনের নতুন ট্রাপে ফেলেনি তো আবার! সাদিকার মোবাইল ফোনটি হাতে নেয় শ্রাবণ। ডায়াল প্যাডে ট্রিপল জিরো নম্বর টি উঠানো দেখে মাথা থেকে দরদর করে ঘাম ছুটতে থাকে শ্রাবণের। এমার্জেন্সি মিলিটারি হেল্প নম্বর। সাদিকা কি তাহলে সব কিছু ফাঁস করে দিল! ডায়াল লিস্ট চেক করে শ্রাবণ। না সেখান থেকে ট্রিপল জিরো নম্বর এ ডায়াল করা হয় নি। ব্যালেন্সও চেক করে সে। আগে যে পরিমাণ ব্যালেন্স ছিলো ফোনে সেটাই অপরিবর্তিত রয়েছে। শ্রাবণ বুঝতে পারে, ডাঃ সাদিকা এমার্জেন্সি নম্বর এ ফোন করতে গিয়েও করে নি৷

মায়াবী শক্তির খোঁজে

ডাঃ সাদিকার উপরে পজেটিভ চিন্তা আসে শ্রাবণের। সে ঠিক করে স্নেহার ব্যপারে সব কিছু খুলে বলবে সাদিকাকে। তাহলে আর তাকে হত্যা করার প্রয়োজন হবে না। ডাঃ সাদিকা তিন কাপ চা নিয়ে এসে রুমে প্রবেশ করে৷ চারদিকে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির মাঝে ছোট খাট আলাপ আলোচনা করতে করতে চায়ের কাপে চুমুক দেয় তিনজনই। তিনজনের কেউ কারো আপন না হলেও শ্রাবণ অনুভব করে তারা তিনজন একই পরিবারের সদস্যের মত।

এদিকে শ্রাবণ যখন হাসিঠাট্টায় মেতে আছে।

অলিভিয়ার পাইপে ততক্ষনে পানি এসে ঢুকেছে। কাচুমাচু হয়ে শুয়ে থাকা অলিভিয়া উঠে বসে। পানির ভিতরে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় ও তো নেই তার। অবশ্য শ্রাবণের শার্ট এ একটা ট্রাকিওশান বসিয়ে দিয়েছিল সে। চাইলেই লোকেশন ট্রাক করে শ্রাবণের বাসায় চলে যেতে পারে, কিন্তু সেটা তার করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আবার এরকম জমে থাকা পানির ভিতরে তো রাত ও কাটানো যাবে না। দুশ্চিন্তা নিয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে অলিভিয়া ।

কম্বল গায়ে দিয়ে তসবি জপছেন জহির আংকেল। বর্ণ ও তুরাণ দুজনেই জহির আংকেলের বাসায় এসেছে। জহির আংকেলের স্ত্রী সুমা রহমান খুব যত্ন করে রান্না করবে সবার জন্য। বউয়ের সামনে একদম ভেজা বেড়াল হয়ে তসবি জপতে থাকা জহির আংকেল সুযোগ খুঁজছেন কখন তার স্ত্রী একটু রান্না ঘরে যাবে। খুব দ্রুত সে সুযোগ এসেও যায়। সব কিছুর বন্দোবস্ত করে লম্বা সময়ের জন্যা সুমা রহমান চলে যান রান্নাঘরে।

জহির আংকেল ফিক করে সামনের দু দাঁত বের করে হেসে দিয়ে বগলের নিচ থেকে সিগারেট বের করে নাকের সামনে নিয়ে প্রাণ ভরে একটা ঘ্রাণ নেয়। বেশ অনেকক্ষণ সিগারেট না খেতে পেরে কাঁচা নিকোটিনের ঘ্রাণ ও তার কাছে কস্তরির মত লাগে।

সিগারেট ধরিয়ে চোখ বুজে টানতে থাকে সে। সচারাচর বাসায় সিগারেট খাওয়া হয় না তার। বাইরে আজ এত বৃষ্টি, বাইরে গিয়ে টানার ও উপায় নেই একদম। কি আর করার! এদিকে সুমা রহমান একটু পর ই তিনজনের জন্য চা এবং বিস্কুট নিয়ে রুমে প্রবেশ করেন। চোখ বুজে সিগারেট টানতে থাকা জহির আংকেলের পিঠ থেকে আজ একটাও মার নিচে পরতো না, যদি না বর্ণ টান দিয়ে সিগারেট টা নিয়ে নিজের ঠোঁটে নিয়ে না রাখত।

বর্ণের মুখে সিগারেট দেখে ভ্রু কুচকে যায় সুমা রহমানের। বর্ণর দিকে চোখ বাকিয়ে তাকায় সে। জোর গলায় সাবধান করে দেয়, ভুলেও যেন টাকলা বুড়োকে এসব ছাইপাঁশের ভাগ না দেয়। কম্বল মুড়ি দিয়ে চোখ বুজে তসবি জপতে থাকা জহির আংকেল মনে মনে বলে, সিগারেট ই তো খাই। অন্য মহিলাদের ঠোঁট তো না। এত চিল্লাচিল্লি করার কি আছে রে বাপু!

তবে বর্ণর সিগারেট খাওয়াটা একদম ই ভালভাবে নেয় নি সুমা রহমান। যদিও মুখে কিছু বলেনি, তবে মনে মনে হয়ত দু একটা চড় থাপ্পড় দিয়েছে।

তদন্ত ও রহস্য

সুমা রহমান চলে যাওয়ার পর পর কম্বলের ভেতর থেকে এক লাফে চলে এসে বর্ণর হাত থেকে সিগারেট নেয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে জহির আংকেল। কিন্তু বর্ণ তার স্ত্রী এর ভয় দেখিয়ে চুপ করে তাকে বসে থাকতে বলে।

প্রথমবারের মত বর্ণ সিগারেটে এক লম্বা টান দেয়৷ যদিও টান দেয়ার সাথে সাথেই কাশি দিতে শুরু করে সে। কিন্তু আস্তে আস্তে মানিয়ে নেয়৷ নাহ, সিগারেট টানতে একদম খারাপ লাগছে না বর্ণর। যদিও মাঝে মাঝেই দু একটা কাশি আসছে, তবে সেটাকে গুরুত্ব দেয়ার কিছুই নেই৷ মুখ থেকে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বর্ণ উপলব্ধি করতে থাকে, এই হ্যাভিওয়েট এনিমি দের দুনিয়ায় সে নিতান্ত ই নাজুক এবং ঠুনকো।

আরো একটা ব্যপার বর্ণের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হলো শ্রাবণ এবং তাইসনের শত্রুতা। শ্রাবণ বেঁচে আছে কিনা সেটাও আদৌ জানেনা বর্ণ।

আরো একটা গভীর সমস্যা হলো ন্যাশের চেহারা হবুহু দেখতে বর্ণের মত৷ মিলিটারিরা বর্ণকে দেখলে ন্যাশ ভেবে গুলি চালিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা একেবারে শতভাগ৷ এমনকি বর্ণের বাবার বাসা কয়েকবার এসে সার্চ ও করে গিয়েছে মিলিটারিরা।

কিন্ত বর্ণ উপর মহলের কর্মকর্তাদের সাথে মোটামুটি পরিচিত হওয়ায় প্রায় সবাই ই জানে, অনেক আগে থেকেই বর্ণ তার নিজ বাসায় থাকে না৷ যে বাসায় থাকত, সে বাসাটাও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে পরে আছে। ন্যাশের শরীরে তাইসন যেদিন প্রবেশ করে সেদিন ই বর্ণের বাসা তছনছ করে ফেলে একদম। বর্ণ আপাতত গা ঢাকা দিয়ে আছে জহির আংকেলের বাসায়। একেবারেই কোন ঠাসা হয়ে আছে সে।

সিগারেট টা কখন শেষ হয়ে গিয়েছে, হাতে আগুনের আঁচ এসে না লাগলে একদম ই বুঝতে পারতো না বর্ণ।

নিকোটিন বর্ণকে ভালোই সঙ্গ দিলো। আলমারির পায়ার নিচে লুকিয়ে রাখা জহির আংকেলের সিগারেটের প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট নিয়ে ধরায় সে।

তাইসন ন্যাশের দেহ কন্ট্রোল করে অত্যন্ত গোপনীয় একটা জায়গায় মাটি খুড়ে গর্ত করে ছোট খাট একটা ল্যাবরেটরির মত বানিয়ে ফেলেছে। এতে অবশ্য তেমন বেশি একটা বেগ পেতে হয় নি তাকে।

ন্যাশের অত্যাধুনিক সাইবর্গ বডির উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাটিতে শুধুমাত্র মানুষ ঢোকার মত ছোট্ট একটি গর্ত করে মাটির বেশ গভীরে চলে গিয়ে ছোট্ট একটা রুমের মত জায়গা খনন করে ফেলে সে। উপর থেকে যাতে কিছুতেই গর্তের মুখ বোঝা না যায় এবং বৃষ্টি হলেও পানি কোন ভাবেই ভিতরে ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থাও করে ফেলে তাইসন।
মাটির নিচের গুপ্ত রুমটিতেই সে শুরু করে এন্টি টর্চ বড় করে বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মূলা আবিষ্কারের কাজ।

ধোঁয়াশাময় রহস্য

রবিবার রাতে বর্ণের একটি ফেভারিট টিভি শো প্রচারিত হয়। পৃথিবীব্যাপী সমস্ত বড় বড় ক্রিমানালদের কিভাবে আটক করা হয় তার উপর ডকুমেন্টারি। জহির আংকেল বরাবরের মত ই বলে চলেছে, এই খুনী ব্যাটাকে ধরতে এত ঝামেলা করতে হয়?

আমি হলে তো একা একাই শালাকে আটকে দু গালে দুটা ঠাস ঠাস করে চড় মেরে জিজ্ঞেস করতাম “আগে বল তুই খুন করলি কেন?” তুই তো অনেক খারাপ ছেলে। তোর বাবা মা তোকে কি ছোটবেলায় উপযুক্ত শিক্ষা দেয় নাই? তারপর হাত পা বেঁধে জেলের ভিতরে এনে ফেলে রাখতাম। আর এই পুঁচকে ছেলেকে ধরতে এতগুলো মানুষের ভারী ভারী অস্ত্র নিয়ে বাড়ি ঘেরাও দেয়া লাগে! একেবারেই ফালতু প্রোগ্রাম।

বর্ণ মনোযোগ দিয়ে অনুষ্ঠানটি দেখছিলো। দেখতে দেখতেই টি টেবিলের উপর থেকে একটি আপেল নিয়ে ছুরি দিয়ে কেটে কেটে খাচ্ছিলো সে।মনোযোগ টিভিতে চলতে থাকা প্রোগ্রামের দিকে বেশি থাকায় আচমকা তার হাতের আংগুলে ছুরির ফলা গিয়ে আঘাত করে।
আউচ করে উঠে বর্ণ।

হাতের অনেকটা জায়গা জুড়ে কেটে গিয়েছে তার, ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে। ছুড়িটা বেশ ধারালো হওয়ায় লম্বালম্বি ভাবে অনেকটা জায়গা জুড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। বর্ণর হাতের রক্ত দেখে সেন্স হারিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে গেছে জহির আংকেল। তুরাণ কে তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ করার গজ কাপড় এবং বরফের টুকরো নিয়ে আসার জন্য তাড়া দেয় বর্ণ।

তুরাণ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায়। ফিরে আসে ব্যান্ডেজ করার গজ এবং বরফ নিয়ে। বর্ণ বসে আছে সোফায়। তুরাণ তার দিকে বরফ ও গজ এগিয়ে দিয়ে বলে -এই নাও।

বর্ণ তুরাণের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে এগুলো দিয়ে আমি কি করবো?

তুরাণ উত্তরে জানায়,

  • মাত্রই না তোমার হাত কেটে গেলো!

তুমিই তো আমাকে এগুলো আনতে বললে?

  • তোর মাথা ঠিক আছে তুরাণ? হাত তো কেটেছে কালকে, এখন এগুলো নিয়ে আসলি কেনো!

তুরাণ বর্ণের হাতের দিকে তাকায়, ব্যান্ডেজ করা আছে ভালো ভাবেই।
মোবাইল ফোন বের করে তারিখ দেখে সে। তাজ্জব বনে যেতে হয় তুরাণ কে৷ মোবাইলের কোণায় স্পষ্ট করে লেখা মানডে, মানে আজ সোমবার!
ঠিক কয়েক মুহূর্তের মধ্যে কি থেকে কি ঘটে গেল কিছুই বুঝতে পারলো না সে। তার স্পষ্ট মনে আছে রবিবারের টিভি প্রোগ্রামটি টিভিতে মাত্র কিছুক্ষন আগেও চলছিল। এর ভিতরেই ১ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো কিভাবে যেটা তুরান মোটেই টের পেল না! চলবে..

পরের পর্ব- এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৬ – এলিয়েন মানবের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *