ভয়ানক ভৌতিক গল্প ১৩

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১৩

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১৩: কল্পনার চেয়ের বেশি কিছু ঘটছে আমার জীবনে। জীবনে কারো কোন ক্ষতি করি নাই কিন্তু ভুল করে একদিন তেঁতুল গাছের ভুতটার মাথায় পা দিয়েছি এটাই নাকি অন্যায় করেছি আমি। আমি তো আর তাকে দেখতে পাই না, দেখলে তো তার কাছে যাওয়া দূরের কথা পালিয়ে বাঁচতাম। কিন্তু কে বোঝাবে তাকে এগুলো, আমার ক্ষতি করার জন্য সে একটার পর একটা ক্ষতি করে চলছে আমার। শুধু কে একজন! তার পরিবার গুষ্টি আমার পিছে লেগেছে। এবার আমিও এই ভূতের গুষ্টিকে দেখে নিব।

অশুভ আত্মার পিছু

এমন সময় একটা শব্দ “ঠাসসসসসসসসস।”

আমি চমকে উঠলাম। দৌড়ে গিয়ে রাসেলের দরজা খুলে দেখলাম রুমের মধ্যে রাসেল নেই। তাবিজ দুটো রুমের ফ্লোরে পড়ে আছে। রাসেলের জানালাটা ভাঙ্গা।

দৌড়ে গিয়ে বাহিরে খেয়াল করলাম, রাসেল এক লাফ দিয়ে দেওয়াল টপকে দেওয়ালের বাহির হয়ে চলে গেছে।

রনি বলল,

রনিঃ আজকে যদি আবার আমার খালাতো বোনের বাচ্চার মত কোন বাচ্চার জীবন নিয়ে নেয়?

শাফিনঃ আজকে আমি রাসেলকে কিছু করতে দিব না। চল, আমরা গিয়ে রাসেলকে আটকাই়।

রনির হাতে একটা টর্চ লাইট এবং আমার হাতে একটা টর্চ লাইট নিয়ে দৌড়ে গেলাম রাসেলের পিছু পিছু।

রাসেল আগের দিনের মতো বরাবর সেই জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করল। আমরাও তার পিছু পিছু জঙ্গলের ভিতরে গেলাম।

এরপর দেখলাম রাসেল জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে এক লাফে একটা গাছ থেকে আরেক গাছে চলে যাচ্ছে। এভাবে তাকে খোঁজা মুশকিল।

সে যদি এভাবে উড়ে উড়ে চলে যায়, আমরা তাকে কিভাবে ফলো করবো? তারপরেও যতই কষ্ট হোক, আমরা রাসেলের পিছু ছেড়ে দিলে হবে না।

তার পিছু নিতেই হবে।

অবশেষে দেখলাম, রাসেল একটা জায়গায় গিয়ে নেমে বসে পড়ল।

একজন সন্ন্যাসীর মতো করে হাত দুটো তার হাটুর মধ্যে রাখল।

এরপর বিড়বিড় করে কি যেন পড়তে লাগলো। আমি বললাম,

শাফিনঃ রনি, তুই দাঁড়া। আমি দেখে আসি, রাসেল কি বলতেছে?

রনিঃ না শাফিন, তুই ওখানে যাস না। এটা এখন তোর ভাই না। এটা মাথায় রাখ। এইটা অন্য একটা অশরীরী তোর ভাইয়ের শরীরে আছে।

সেজন্য আমরা রাসেল মনে করতেছি, কিন্তু এইটা তো মূলত রাসেল না।

শাফিনঃ সেটা তো আমিও জানি রনি। কিন্তু আমরা এর রহস্য বাহির করতে হলে তো দেখতেই হবে। আমি গিয়ে দেখি কি বলে?

রনিঃ এত রিক্স নেওয়া দরকার নেই। আমরা দেখতে থাকি কি কি হয়?

শাফিনঃ ঠিক আছে, তোর কথাই মানলাম।

ভূতুড়ে পরিবেশ এবং অবস্থা

রাসেল সেখানে প্রায় ৩০ মিনিটের মতো বসে বসে বিড়বিড় করে কি যেন বলতেছে। আমরা তার দিকে একমনে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ করে রাসেল বনের পশুদের মতো এক দৌড়ে হাওয়া হয়ে গেছে। যেভাবে জঙ্গলের মধ্যে বাঘ হরিণরা হাত পা দুটো দিয়েই দৌড় দেয়। ঠিক সেভাবে অনেক স্পিডে দৌড় দিল, যেন বাতাসের সাথে মিশে কোথাও উধাও হয়ে গেছে। আমরা আর ফলো করতে পারছি না।

চারপাশে তাকাতেই আমি এবং রনি দুজনেই আতঙ্ক হয়ে গেলাম। এ আমরা কোথায় চলে এসেছি রাসেলকে ফলো করতে করতে।

আশেপাশে তাকিয়ে দেখি ঘন অন্ধকার। গাছপালাগুলো যেন ভয়ংকর ভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমাদের পায়ের নিচের মাটি গুলো তেমন শক্ত না। এমন নরম মাটি তো আমার জানা মতে এখানে নেই।

চারপাশ কেমন সুনসান নীরবতা আবহাওয়ায় পরিণত হয়ে গেছে। কোন পশু পাখির শব্দ শুনতে পাচ্ছি না।

এই এলাকার আশপাশ সবই আমার মুখস্থ। কিন্তু এই জঙ্গল টা তো আমি এর আগে কখনো দেখিনি? এই জঙ্গলে আমি আরো বহুবার এসেছি। কিন্ত এই জায়গা আমি কখনো দেখিনি। আমি রনিকে জিজ্ঞেস করার আগেই রনি আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো,

রনিঃ এই জায়গা তুই চিনিস?

শাফিনঃ না দোস্ত, এর আগে আমি এখানে আসিনি।

রনিঃ রাসেলকে ফলো করতে করতে রাসেল আমাদেরকে কোথায় নিয়ে এসেছে?

শাফিনঃ চল, আমরা এখান থেকে বাহির হয়ে যাই। আজকে তো রাসেল আমাদের হাত থেকে হাতছাড়া হয়ে গেছে। কালকে আমরা ঠিকই ফলো করবো।

আমরা সেই জঙ্গল থেকে চলে আসছি ঠিক উল্টা পথে। যে পথ দিয়ে আমরা এসেছিলাম।

কিন্তু আমরা যেখান দিয়ে এসেছিলাম। আমাদের মনে হচ্ছে আমরা সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি না। এই রাস্তা দিয়ে একটু আগেই এসেছি এইটা মনে হচ্ছে না।

কেমন অচেনা অচেনা লাগছে সবগুলো।

ভয়ানক ঘটনা

এমন সময় স্পষ্টভাবে একটা গোঙরানির আওয়াজ শুনতে পাই আমি।

যেন আশেপাশে কেউ কাতরাচ্ছে কষ্টে। আমি আর রনি চারপাশে লাইট মারতে লাগলাম। দেখতে দেখতে সামনে ছোট একটা বাড়ি দেখতে পেলাম। আমরা তাড়াতাড়ি বাড়ির ভিতরে গেলাম। গিয়ে দেখি একজন মহিলা মাটিতে পড়ে আছে।

পুরা ঘরের মধ্যে রক্ত আর রক্ত ভেসে যাচ্ছে। মহিলাটি চিত হয়ে পড়ে ছিল। আমরা গিয়ে মহিলাটিকে সোজা করতেই অবাক হয়ে গেলাম।

এমন ভয়ংকর মুখ সরাসরি এই প্রথম দেখেছি আমি।

মহিলাটির নাক কেটে নিয়ে গেছে। মহিলাটির ঠোঁট দুটো কেটে ফেলা হয়েছে। গলার মধ্যে যেন হাতের নখ দিয়ে খামচে খামচে গর্ত করে ফেলেছে।

এরকম ভয়ঙ্কর নিশংস ভাবে মেরেছে মহিলাটিকে। গলার মধ্যে আঘাত করার কারণে কণ্ঠনালী দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।

তাই গোঙরানির শব্দ।

আমরা মহিলাটিকে কিছু জিজ্ঞেস করতেছি। কিন্তু মহিলাটি কোন উত্তর দিতে পারছেনা। কোনো কথা বলতে পারছে না। হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো উনার ঘরের কোণায়।

আমরা তাকিয়ে দেখি বাচ্চাদের দোলনা ঝুলে আছে। বুঝতে বাকি রইল না মহিলাটি কি বুঝাতে চাচ্ছে।

আমি দৌড়ে গিয়ে দোলনায় তাকিয়ে দেখি দোলনায় কোন বাচ্চা নেই। এমন সময় মহিলাটির দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। তারমানে রাসেল মহিলাটিকে মেরে বাচ্চাটাকে নিয়ে গেছে?

কিন্তু এই মহিলার স্বামী কোথায়? আর এই মহিলা এই জঙ্গলের মধ্যে একা কিভাবে থাকতেছে এবং রাসেল শুধুমাত্র বাচ্চাদেরকে কেন নিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলতেছে?

মাথার মধ্যে হাজারো প্রশ্ন। কিন্তু উত্তরের কোন নিশানা আমি এখনো পাচ্ছিনা।

অতৃপ্ত আত্মার তাণ্ডব

মহিলাটির দিকে তাকাতেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। নিজের বোনের বয়সী একজন মেয়েকে এভাবে মেরে ফেলা হয়েছে।

এমন সময় রনি বলল,

রনিঃ এই মহিলাটিকে তো বাঁচানো গেল না। কিন্তু এ মহিলার বাচ্চাকে আমাদের বাঁচাতে হবে।

রাসেল বাচ্চাটিকে মারার আগেই আমরা কিছু একটা করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমি আর রনি টর্চ লাইট জ্বালিয়ে দৌড় দিতে লাগলাম। আমাদের এখন সে বাচ্চাটাকে বাঁচাতে হবে।
কিন্তু আমরা কোথায় দৌড়ে যাচ্ছি? নিজেরাও বলতে পারবো না।

শুধুমাত্র এইটা জানি, আমরা যে দিক থেকে এসেছি সে দিকে যাচ্ছি। তবে আসার সময় রাস্তা এইরকম ছিলনা।

যাওয়ার সময় অন্য রকম দেখতে পাচ্ছি। অনেকটা দূরে যাওয়ার পরে দেখলাম একটা আলো আসতেছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি কোন ট্রাকের কিংবা বাসের লাইট। তার মানে সামনে রাস্তা আছে।

আমরা আরো জোরে দৌড়াতে লাগলাম। সে আলো বরাবর এগুতে এগুতে আমরা রাস্তায় গিয়ে পৌঁছালাম। এ রাস্তাটাও কেমন অচেনা অচেনা লাগছে। চারপাশে ভালো করে লাইট মেরে একটা সাইনবোর্ড দেখি।

সাইনবোর্ডটার দিকে তাকিয়ে আমি এবং রনি দুজনেই থ হয়ে গেছি।

আরে? এইটা তো নোয়াখালী ফেনীর মেইন রোডে আমরা চলে এসেছি।

রামগঞ্জ থেকে এই জায়গায় গাড়ি দিয়ে আসতে নিন্মে ৫ ঘন্টা সময় লাগে। আর আমরা হেঁটে হেঁটে এতদূর কিভাবে আসলাম?

তারপরেই দেখতে পেলাম একটা ট্রাক আসতেছে। আমরা রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে ইশারা করতেই ট্রাক ব্রেক করল। ড্রাইভার এর জানালার পাশে গিয়ে আমরা অনুরোধ করলাম।

রনি ও শাফিনঃ ভাই, আমাদেরকে যেভাবে হোক রামগঞ্জ দিয়ে আসুন। আমরা এখানে একটা এক্সিডেন্টের কারণে চলে এসেছি। রাস্তা় মিস্টেক হয়ে গেছে। প্লিজ ভাই, আমাদেরকে সাহায্য করুন।

আমাদের কথায় লোকটির মন গলে গেছে।

ড্রাইভারঃ হ্যাঁ, আপনারা উঠে বসুন।

আমি আর রনি গিয়ে ট্রাকের সামনে বসে পড়লাম। ট্রাকটি চলছে তো চলছেই।

ড্রাইভার এর দিকে তাকিয়ে আমাদের কেমন একটা সুবিধার ঠেকচেনা।

আমাদের সাথে কথা বলার সময় সুন্দর ভদ্র মনে ছিলেন। কিন্তু এখন ড্রাইভ করার সময় কেমন যেন মনে মনে হাসছে।

সে যেন সাত রাজার ধন পেয়েছে। এরকম খুশি হয়ে গেছে আমাদেরকে পেয়ে। আমি ড্রাইভারের মুখের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম।

অদৃশ্য আত্মার কাণ্ড

ড্রাইভারটি মুচকি মুচকি হাসছে। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতেছি, এটা ড্রাইভার নাকি অন্য কিছু।

কিছু চিন্তা ভাবনা করার আগেই ড্রাইভার এমন জোরে ব্রেক কষলো। আমি এবং রনি ট্রাকের আয়না ভেঙ্গে ট্রাক এর সামনে গিয়ে পড়লাম।

ড্রাইভার এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ড্রাইভারটি জোরে একটা অট্টহাসি দিয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে গেল।

চোখের সামনে একজন মানুষকে এভাবে অদৃশ্য হতে দেখে ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো।

এমন সময় একটা কাক এসে জোরে চিৎকার দিল।

কাকের চিৎকারের সাথে সাথে চারপাশের পরিবেশ নিস্তেজ হয়ে গেছে।

একটা শব্দও শোনা যাচ্ছে না।

আশপাশ এমনভাবে নীরব হয়েছে, যেন আমার কান দুটো নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না।

তারপর হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার কপালের মধ্যে টপ টপ টপ করে কিসের যেনো ফোঁটা পড়তেছে।

হাত দিয়ে ধরে দেখি রক্ত…

আমার কপালে রক্তের ফোটা পড়তেছে।

উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি রাসেল একটা বাচ্চাকে কোলের মধ্যে রেখে গাছের ডালে বসে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।

বাচ্চাটির এক হাত ছিড়ে রাসেলের বাম হাতে রেখে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে।

এবং ডান হাত দিয়ে বাচ্চাটির গলা ধরে পেট কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে। চলবে…

পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *