পাজরের টানে (সিজন ২ – শেষ খণ্ড) – Gopon bhalobashar kotha bangla

পাজরের টানে (সিজন ২ – শেষ খণ্ড) – Gopon bhalobashar kotha bangla: তাফিফ জারাকে আবার বুকে জড়িয়ে নিয়ে কপালে একটা চুমু একে বলে, আমিও কিন্তু তোকে মারবো বেনীওয়ালী। প্রচুর জালাবো কষ্ট দিবো।


পার্ট ১৯

স্কুল থেকে হেলে দুলে বের হচ্ছে জারা। হটাৎ সামনে তাফিফকে দেখতে পায়। গাড়ির চাবি হাতের আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে তেড়ে আসছে জারার দিকে। জারা বেশ বুজতে পারে এভাবে তেড়ে আসার কারন। পাচদিন আগে কথা বলা বন্ধ করেছে। তারপর আবার পাত্তা না দিয়েছে দেখিয়ে দেখিয়ে অন্য ছেলের সাথে হেসে হেসে ডং করে কথা বলে, ছে। ফোন বার বার কেটে দিয়েছে। এতো কিছু করে ফেলেছে এমনি এমনি কি ছেড়ে দিবে নাকি? সেবার শুধু বলে, ছিল একটাকে ভালো লাগে বেস কতোদিন এড়িয়ে চললো কত কাদলো তবুও মন গলাতে পারলো না। শেষ মেষ স্কুল ই চেঞ্জ করে দিলো। এবার কি করবে? ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যায় জারার। বুকে দু হাত চেপে কাপতে থাকে আর বার বার বলতে থাকে ~ “লা হাওলা ওয়ালা কুয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ।”

পাশেই বেস্ট ফ্রেন্ড ঝুমা শুনতে পেয়ে বলে,
~ তোরে কি ভুতে ধরলো নাকি? এইভাবে বির বির করস ক্যা?
~ ভুতে ধরে নাই দোস্ত। ধরবে এখনি।

তাফিফ সামনে দাড়িয়ে জারার দিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে ঝুমার দিকে তাকায়। ঝুমা তো হা করে তাকিয়ে আছে। ঝুমার দিকে তাফিফ ও তাকিয়ে আছে। জারা একবার ঝুমার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার তাফিফের দিকে তাকাচ্ছে। ‌এদের হা করে তাকিয়ে থাকা সহ্য না করতে পেরে জারা দেয় এক চিৎকার। চিৎকারে দুজনেই জারার দিকে তাকায়। জারা ঝুমার দিকে রাগী লুক দিয়ে দাতে দাত কামড়িয়ে বলে,
~ জীবনে ছেলে মানুষ দেখিসনি তুই? এইভাবে হা করে তাকিয়ে থাকিস কেন? তোর মুখের সামনে মশা গুলো কি আমি তাড়াবো? কত বেতন দিবি আমায়?

ঝুমা জারার কথায় পাত্তা না দিয়ে তাফিফের দিকে এগিয়ে এসে মুগ্ধতাপূর্ণ লুক দিয়ে বলে,
~ ও মাই গড, ডক্টর তাফিফ খান। আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি দশদিন হলো আপনার চেম্বারে গিয়ে আপনাকে আমার ডিজিস জানিয়ে প্রেসক্রাইবড করে এনেছি।
~ ইয়েস, আই নো ইউ। এন্ড আই লাইক ইউ।

~ ও মাই গড, রিয়েলি? ডো ইউ নো ইউ আর মাই ক্রাস?
~ বি এফ হতে প্রবলে, ম নেই।
জারা ডাইরেক্ট তাফিফের কলার ধরে বলে,
~ তুই আমার বি এফ। ওর বি এফ কেন হবি? আমি কি ওর থেকে অসুন্দর? অভদ্র প্রেমিক কয়টা জি এফ লাগে তোর?
~ তুই আমার জিএফ? কোন প্রমান আছে? বলতো শেষ কবে আমার সাথে কথা বলে, ছিলি?
~ বলবোনা। আমার দাবি না মানলে আরো বলবোনা।

~ বলবিনা ঠিক আছে। তো স্কুল শেষে বাড়ি না গিয়ে ফ্রেন্ডের ভাইয়ের বার্থডে খেতে যাস কেন? কয়টা কেঅ লাগবে তোর আমাকে বলতি আমি আইসক্রিম কেক এনে দিতাম।
~ একশ বার যাবো। তুমি আমার ফ্রেন্ডকে প্রোপোজ করো আর আমি পার্টিতে গেলেই দোষ?
~ তুই গেলে আমিও ঝুমার সাথে প্রেম করবো।

~ কাভি নেহি। ঝুমারি তুই একদম আমার বিএফ এর দিক নজর দিবি না। ও তোর দুলাভাই হয় বুঝলি? সম্মান করবি। খারাপ নজর দিবি না। এখন দুর হ এখান থেকে।
বেচারা ঝুমা আগা মাথা কিছুই বুঝলো না। জারার চিল্লানিতে তারাতাড়ি পগাড় পার ওখান থেকে।
তাফিফ ঠান্ডা মাথায় জারাকে বলে,
~ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে জানিস তুই?
~ নাতো। কার সাথে?

~ রিশির সাথে।
~ রিশিকেতো সাগর ভাইয়া লাইক করে। লাবিব ভাইয়া তো ফারাহ আপুকে লাইক করে। হায় হায় কি হপ্পে এবার?
~ সাগর ভাইয়ার সাথে কন্টাক কর। রিশির পেছনে লাগিয়ে দে। এটা তোর দায়িত্ব। এই বিষয়টা নিয়ে এমনিতেই টেনশনে আছি। এর মধ্য তুই ফড়িং হয়েছিস। ভালো করে শুনে রাখ ~ ভাইয়া আর ফারাহ আপুর যদি বিয়ে না হয় আমিও কিন্তু তোকে বিয়ে করতে পারবো না। মাথায় রাখিস।

~ আমিও করবোনা। চুমু খেতে দেয়না আবার সে নাকি বিয়ে করবে!
~ চুপচাপ বাসায় যাবি। বাই।

রাতে ফোনে তাফিফ লাবিবকে সবটাই বলে, ছে। লাবিব সবকিছু শুনে সারারাত ঘুমোতে পারেনি। সকালে উঠেই না খেয়ে ড্রাইভ করে চলে এসেছে বাসায়।
বাসায় ঢুকতেই ড্রয়িংরুমে আসর দেখতে পায়। সবার কিট কিট করা হাসি শরীরে বিধতে থাকে। হন হন করে সবার সামনে দিয়ে উপরে রুমে চলে আসে। লাবিবা ছেলে এসেছে দেখে পিছু পিছু রুমে আসে। এসেই দেখে লাবিব বিছানায় বসে রাগে লাল হয়ে ফুসছে। এরোকম চেহারা দেখে আতঙ্কিত হয়ে যায় লাবিবা। দৌড়ে এসে দু হাতে মুখ তুলে বলে,
~ লাবিব। বাবা। কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন?

লাবিব লাবিবাকে সরিয়ে দিয়ে হুংকার ছেড়ে বলে,
~ ঐ বেদ্দপ মহিলা আমার বাড়িতে কি করছে? ঐ মিসেস মিশুকে এই মুহুর্তে বের করবে আমার বাড়ি থেকে। আর তার পরিবারকেও। কোন নোংরা মানসিকতার ফেমেলির সাথে আমি চাইনা আমার ফেমেলির কোন কানেক্ট থাকুক।
~ লাবিব শান্ত হ। বোঝার চেষ্টা কর। উনারা ত্যয়ইবার শশুড় শাশুড়ী।

~ তো আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছো কেন? আমি চাইনা উনাদের শশুর শাশুড়ী হিসেবে। তুমি কি ভেবেছো? আমি কিছুই জানি না? আমি সবটা জানি। আমার দাদু মনি আমাকে সবটা বলে, গেছে। ওমন মহিলার মেয়ে যে ভালো তা তোমরা ভাবো কি করে? ঐ মহিলার মম আমার দাদুমনিকে জালিয়েছে। ঐ মহিলা আমার মমকে জালিয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে আমার উপর ঐ মহিলার মেয়েকে চাপানো হচ্ছে। আমি এটা কিছুতেই মানবোনা। আমার দাদু আর পাপার মতো আমি এতোটা বোকা নই যে আসল মানুষ আর নকল মানুষ কোনটা চিনতে পারবোনা।

~ লাবিব ওনারা ভুল করেছেন। আমরা ক্ষমা করে দিয়েছি। রিশি খুব ভালো মেয়ে বাবা।
~ রিশি কেমন মেয়ে তা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। ও যদি ভালো হতো তাহলে আমি নিজে তোমাদের বলার আগে রাজি হয়ে যেতাম। আমাকে জোর করবেনা মম। আমি পারবোনা।
~ সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে বাবা। সবাই চায় রিশি এ বাড়ির বউ হয়ে আসুক।
~ ভেঙে দাও। সবাই চাইলেও আমি চাইনা।

লাবিবা একরাশ চিন্তা নিয়ে রুমে চলে যায়। তানভীরকে ব্যপারটা বলতেই তানভীর রেগে যায়। লাবিবের রুমে এসে বলে, যেখানে সবার মতামত আছে সেখানে ওর মত দিতে প্রবলে, মটা কি? কিসের জন্য রিশিকে বিয়ে করতে পারবেনা?
লাবিব উত্তর দেয় ~ পাপা আমি ফারাহকে ভালবাসি। বিয়ে করলে ওকেই করবো। তানভীর অবাক ও হয় আবার চরম রেগেও যায়। অনেক কথা শুনিয়ে দেয় লাবিবকে। সেখানে তার মা আগুন সুন্দরী সেখানে সে কিভাবে বুড়ি একটা কালো মেয়েকে বউ করার ইচ্ছা পোষন করে? কি দেখেছে ঐ মেয়েটার মধ্যে?

যাবার সময় শেষ কথা বলে, যায় রিশিকেই বিয়ে করতে হবে। অন্য কোন মেয়েকে এই বাড়ির বউ হিসেবে কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। লাবিব নিজের চুল নিজে ছিড়তে থাকে। এই মুহুর্তে তার ফারাহকে প্রয়োজন। ফারাহ একমাত্র মেয়ে যাকে দেখলে তার সকল ক্লান্তি, রাগ, দুঃখের অবসান ঘটে। শরীরের প্রত্যক শিরায় উপশিরায় শান্তির ঝরনা বয়ে যায়। ফারাহ একমাত্র মেয়ে যার চোখে চোখ রেখে প্রত্যকটা হিমশীতল রাত কাটানো যাবে। লাবিব ফারাহকে ফোন দেয়। কিন্তু বার বার ফোন সুইচ স্টপ বলে, কিচ্ছু ভালো লাগেনা লাবিবের। গাড়ির চাবি নিয়ে বেরোতে নিলে তুষার সামনে পড়ে। তুষার লাবিবকে জিঞ্জাসা করে
~ মামা কোথায় যাচ্ছ?

~ আপাদত এ বাড়ি থেকে একটু শান্তির খোজে যাচ্ছি মামা।
~ বেস্ট অফ লাক। পারলে এই বাড়িতেই এসো না। এখানে তোমার বিরুদ্ধে সবাই ষড়যন্ত্র করে।
~ কি ষড়যন্ত্র মামা?
~ বিবাহ ষড়যন্ত্র। ফুপিকে তোমার সাথে বিয়ে দিয়ে মামী বানাতে চায়। মামা আমি কিন্তু ফুপিকে কিছুতেই মামী ডাকবোনা। পচা ফুপি একটুও আদর করে না আমায়।
~ ডাকতেও হবে না মামা। তুমার একটা মিষ্টি মামী আনবো আমি। ওকেই মামী বলবে তখন।
লাবিব বেড়িয়ে পড়ে। ফারার কাছে যাবে সে। তার মায়াকুমারীর কাছে।

জারা নিচে আসতেই দেখে ড্রয়িং রুমে একটা মহিলা, একটা ছেলে, আরেকটা আধ বয়সী লোক বসে আছে। ‌কিচেনে এসে দোলাকে জিঞ্জাসা করতেই দোলা বলে,
~ ইউনিফর্ম ছেড়ে তাড়াতাড়ী ফ্রেস হয়ে তোর আপুর রুমে যা। আজ স্কুলে যাস না। সুন্দর করে সাজিয়ে দিবি ছেলের যেন পছন্দ হয়।

জারার মাথায় বাজ পড়ে। আপুকে দেখতে এসেছে। ও মাই গড। এই কথা যদি ভাইয়া জানতে পারে তাহলে তো সেই রেগে যাবে। তাফিফ ভাইয়া জানলে তো বলবেই যে বেনীওয়ালী আমি তোকে বিয়ে করবোনা। তখন আমার কি হবে? আমি বাচবো কি করে আমার ভালুপাসাকে ছাড়া? একপ্রকার কাদো কাদো ফেস নিয়েই ফারার রুমে আসে জারা। ফারাকে বলে,
~ আপু তোর পা দুইটা ধইরা কই তুই এই ছেলের সামনে যাস না। এর থেকে হিরো আলম মনে হয় কিউট আছে একটু। তুই ভাইয়াকে বিয়ে করে নে প্লিজ। আমার ভাইয়া তোকে ভালুপাসে।

~ জারা .. তোর ভাইয়া আমাকে ভালুপাসতেই পারে না। এতোদিন আমার সাথে কথা বলে, ছে দেখে ভাবছিস তোর ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে তাইতো? ভুল জানিস তুই। লাবিব ভালো ছেলে। আমার সাথে কেউ মিশেনা জন্য হয়তো আমাকে কমপানি দিয়েছে, ফাজলামো করেছে, হাসিয়েছে। তাছাড়া তোর ভাইয়ার তো বিয়ে ঠিক। রিশিকে ভাবি হিসেবে পাবি। কতো ভালো মেয়ে ..কতো আদর করবে তোকে বলতো ..।
~ কচু করবে। ভাইয়া এই বিয়েতে রাজি না।

~ তোকে বলে, ছে বুঝি?
~ না বলে, নি। কিন্তু তোমাকে তো পছন্দ করতো।
~ জারা ঐটা করতো ..তো…। তুই ছোট মানুষ এসব বুঝবিনা। আমার আচলটা ঠিক করে দে।
জারা আচল ঠিক করে দেয়। নিজেকে আয়নায় দেখে নেয় একবার।

বাইরে থেকে এতো নরমাল হলেও ভিতরটা ঠিকই পুড়ে ছাই হচ্ছে। আর সেই ছাইয়ে ফু দিয়ে আগুন জালাতে এসেছিস জারা? তোর ভাইতো আমাকে ভালোবাসেনা। বাসতেই পারে না। আমাকে কেউ ভালোবাসতে পারে না। কেউ যদি একটু দয়া করতো তাহলে খুব ভালো হতো জানিস? নিজের নামের পাশে আনমেরিড নামের অভিশাপটাকে দুর করতে পারতাম। সবাই শুধু আমার বাইরের টা দেখে। ভেতরটা কেউ বুঝে না। সং সেজে একদল লোকের সামনে বছরের পর বছর অপমানিত হতে যে যায় সেই বুঝে তার প্রত্যেকটা কদম কতটা যন্ত্রনা নিয়ে ফেলতে হয়। বিষাক্ত কাটার আচড়ের উপর মরিচ গুড়া লাগালেও মনে হয় এতটা জলবে না যতোটা অপমানের জালা সহ্য করতে হয়।

জারা ফারাহকে নিয়ে অতিথীদের সামনে আসে। ফারার হাতে ট্রে নিয়ে টি টেবিলে রাখে। সালাম দিয়ে শরবতের গ্লাসগুলো প্রত্যকের হাতে তুলে দেয়। ছেলের মা এরোকম যত্ম দেখে খুশি হয়ে যায়। বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করে ফারাহকে। ফারার বিনয়ী কথা ব্যবহার চাল চলন দেখে খুবি পছন্দ হয়ে যায় ছেলে পক্ষের। ছেলের মা খাওয়া দাওয়া শেষে পান চিবুতে চিবুতে বলে,
~ মেয়ে আপনাদের বড়ই লক্ষী। ব্যবহার চরিত্র ও ভালো। বড় লোক বাপের একমাত্র মেয়ে। আমরা এরোকমি খুজছিলাম। আমার দুইটা মেয়ে। ব্যস্ততার জন্য আসতে পারে নাই। ওরা সবসময় বলে, ভাবী এলে ওদের আদর কমে যাবে। তো এবার আর আদর কমছে না বরং বাড়ছে। বড় বাড়ির মেয়ে বড় মন। পছন্দ না হওয়ার কিছু নেই। আমাদের মাশাআল্লাহ পছন্দ হয়েছে। বাবু(ছেলে ) কি বলিস? মেয়ে পছন্দ হয়েছে?

বাবু মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানায়।
~ আম্মাজান মিস ফারাহ চৌধুরীর সাথে একটু কথা বলতে চাই।
ছেলের মা মুচকি হেসে বলে, তো বেয়াইন আমার হবু বউমার সাথে একটু আলাপচারিতার ব্যবস্থা করে দিতেন যদি ..।
মাধুজা মাথা নাড়িয়ে বলে, জারা .. তোর ভাইয়াকে আপুর রুমে নিয়ে যা।

জারা কিছু না বলে, উপরে সিড়ি দিয়ে হাটা দেয়। বাবুও পিছনে হাটা দেয়। বাবু জারার দিকে তাকাচ্ছে আবার সিড়ির দিকে তাকাচ্ছে। জারার গা জলে যাচ্ছে দেখে। আরেকবার তাকাতেই জারা মুখে ভেংচি কাটে। বাবু লজ্জা পেয়ে বলে,
~ শালিকা মজা করো ..তুমি কিন্তু অনেক সুন্দরী। তোমার আপুর আগে তোমাকে দেখলে তোমাকেই বিয়ে করতাম।

~ চুপ বেটা হিরো আলম ফেল ..। তোক কে বিয়ে করতে যাবে? আমার বি এফ এর কানি যোগ্যও না তুই। আর আপুর বিএফ দেখলে তো মাথা ঘুরাইয়া টাস্কি খাবি। এএএএএ আগে দেখলে আমাকেই বিয়ে করতো ..যেন মগের মুল্লুক। আমার আপুকেই আগে বিয়ে করে দেখানা হিরো আলম ফেল। আমার হবো দুলাভাই মানে আপুর বিএফ এর এক ঘুষিতে কই যাবি আর দেখাই যাবো না। শালা চামচিকা কথাকার।
~ ভারী অসভ্য মেয়ে তো তুমি।
~ চুপ থাক। ঐ যে ঐটা আপুর রুম। যা।


পার্ট ২০

একরাশ রাগ নিয়ে ফারার বাড়িতে আসে লাবিব। বাড়িতে চিল্লাচিল্লি করে মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে আছে। চিন চিন করে ব্যথাও শুরু করেছে। এতোক্ষনেও সেই রাগের উত্তাপ কমে নি। সকাল থেকে না খেয়ে আছে। রাতেও ঘুমায়নি। মেজাজ পুরোদমে খিটখিটে হয়ে আছে। চিটাগাং থেকে ড্রাইভ করে বাসায় এসেছে এখন আবার রেস্ট না নিয়েই ড্রাইভ করে ফারার বাসায় এসেছে। কেন এসেছে এখানে? একটু শান্তি পেতে, একটু ঘুমোতে, রেস্ট নিতে। মনে মনে রাগের সাথে অভিমানটাও উকি দিচ্ছে। ফোন কেন সুইচ স্টপ করে রাখবে? সেদিন ফোন ধরতে পারেনি জন্য এতোই অভিমান যে ফোন ই সুইচ স্টপ করে রাখতে হয়? তার বুঝি অভিমান হয় না?

এইযে দুই দিনের বেশী হয়ে গেলো কোন খোজ খবর নেওয়া নেই এতে তো তারও অভিমান করা উচিত। সব অভিমান চুকিয়েই ভালোবাসবে আজ। মায়াবী মুখটা না দেখলে যে বুকে ক্ষত হতে থাকে তা বুঝাবে আজ।
বাড়ির ভেতরে ঢুকে ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে অচেনা দুজন লোক। আগে কখনো দেখেনি এদের। দোলাকে ডাক দিতেই দোলা হাসি মুখে আসতে আসতে হাতে একটা মিষ্টি নিয়ে এসে লাবিবের সামনে ধরে। লাবিব হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে,
~ সরি খালামনি, আমি মিষ্টি খাইনা। মিষ্টি কেন খাওয়াচ্ছ বলোতো? বুড়ি কোথায়?
~ খুশির সংবাদ। আমাদের ফারার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।

লাবিবের কথাটা বুকে না লেগে মাথায় আঘাত করে। শরীরের শিরা উপশিরা বেয়ে রক্তগুলো মাথায় উঠতে থাকে। রাগে ঘাড়ের রগ গুলো ফুলে ফেপে উঠে। চোখ রক্তবর্ণ রুপ ধারন করে। ব্রেনের এক ভাগ বলতে থাকে সব চুরমার করে দে। আরেক ভাগ বলতে থাকে নিজেকে শান্ত কর। দুটোর মেল বন্ধনে এক ভয়ংকর রুপ ধারন করে। কোন দুর্বল মানুষ এই রুপ দেখলে নিমেষেই ভষ্ম হয়ে যেতে পারে। এই রুপ কিন্তু এই রুপ কেউ দেখতে পাচ্ছে না। শার্ট প্যন্ট দিয়ে পুরো শরীর ঢাকা। হাত দুটো প্যন্টের পকেটে গুজা। মুখটা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকানো। পায়ের পাতা আর আঙুল দিয়ে ফ্লোর আকড়ে ধরে আছে। নিচ দিকে তাকিয়েই বললো,
~ কার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে?

~ উনাদের ছেলের সাথে। (মহিলা আর লোকটাকে দেখিয়ে ) ছেলে সরকারী চাকুরীজিবি। ভালোই বড়লোক। মেয়ে পছন্দ হয়েছে উনাদের। আজকেই এঙ্গেজমেন্ট করাতে চাইছে। কিন্তু আমরা বললাম অনুষ্টান করে করবো আমরা। এখন ছেলে আর মেয়ে কথা বলার জন্য উপরে পাঠিয়েছি ফারার ঘরে। ওদের মতো করে ওরা কথা বলে, নেক। নতুন জীবন শুরু করবে বলে, কথা।

এতোক্ষন নিজেকে ঠিক রাখতে পারলেও ফারার রুমে ফারার সাথে কথা বলার জন্য ছেলেকে পাঠানো হয়েছে শুনে আর ঠিক থাকতে পারে না। এবার বুকেও যন্ত্রনা শুরু হয়। উপরের সিড়ির দিকে হাটা দেয়।

দরজার সামনে দাড়িয়ে পায়চারি করছে জারা। আর বাবুর পুরো গোষ্টী উদ্দার করছে। সালা হিরো আলম ফেল জীবনে মেয়ে দেখিসনি তুই? আমার আপুকেও বিয়ে করতে চাস আবার আমার দিকেও তাকাস। তোকে তো আচ্ছা ধোলাই খাওয়াবো তাফিফ ভাইয়াকে দিয়ে। আমার কি? আমি শুধু তাফিফকে বলবো তোমার বউকে ঐ বেটা লুচু হিরো আলম ফেল বিয়ে করতে চাইছে। নাও..তোমার খেল খতম সাথে সাথেই আ্যাকশন। বাচবা কিনা বলতে পারলাম না। আল্লাহ যদি রক্ষা করে তাহলে করবে নয়তো আখিরাতে গিয়ে দোযখ খেটে জান্নাতে যেও।

আগেই দোয়া করে দিলাম। হি হি আমি কত্ত ভালো। কিন্তু বেটা হিরো আলম ফেইল তুই খারাপ। কথা বলবিতো বলবিই তাই বলে, দরজা লক করে কথা বলতে হবে তোর? আপুটাও না কিযে এলাও করে নিলো। যেন ওর বিয়ে হলে ও বাচবে নয়তো মরে যাবে। আরে বাবা তোকে যে আমার ভাইটা এত্তো ভালোবাসে তুই বুঝিসনা কেন? এখন এই কথা জানতে পারলে ভাইয়া আর তাফিফ ভাইয়া আমাকে আস্ত রাখবেনা। ওরে আপুরে তোকেও মেরে দিবে আর আমাকেও মেরে দিবে। দুইটা অভদ্র প্রেমিকের পাল্লায় পড়েছি তুই বুঝলিনা।

লাবিব এসে জারার দিক একবার তাকিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখে দরজা লক করা। জারা ভয় পেয়ে যায় লাবিবকে এই ভাবে দেখে। রাগে ক্রোধে ফেটে পড়ে লাবিব। শরীরের সব জোর দিয়ে এক লাথি দিয়ে দরজার সিটকিনি খুলে ফেলে দরজা ওপেন করে দেয়। ভিতরের অবস্থা দেখে আরো রাগে যায়। জারা ভিতরে এসে দেখে বাবু খাটে বসে আর ফারাহ দাড়িয়ে আছে। ফারাহ লাবিবকে দেখে আৎকে উঠে। জারা একটানে বাবুকে নিয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। বেচারা বাবু এমন কান্ডে অবাক।

জারা বাবুকে বলে, দেখেছিস? আমার ভাই বিখ্যাত বিজনেসম্যান লাবিব খান। আমার আপুর বি এফ। আর তুই এসেছিস আমার আপুকে বিয়ে করতে? বডি দেখেছিস? মাসল দেখেছিস আমার ভাইয়ের? তোকে এক আঙুলে উঠিয়ে এমন ডিল দিবে তুই উগান্ডার বডার পাস করে একদম নাম ছাড়া সাগরে পড়বি।

দরজা বন্ধের বিকট আওয়াজ হয়। আওয়াজে জারা কানে হাত চেপে”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”পড়তে থাকে। আর বাবু এক দৌড়ে নিচে চলে আসে। নিজের বাবা মাকে বলে,
~ বাবা মা চলো। আমি এই মেয়ে বিয়ে করবোনা। আমি এর থেকে ভালো সুন্দরী কাটা ছাড়া মেয়ে খুজে বিয়ে করবো।
~ মানে কি? মেয়ে পছন্দ হয়েছেতো।
~ আমার হয়নি। চলো।

একপ্রকার টেনেই বেরিয়ে যায় বাবু মা বাবাকে নিয়ে। ফারুক আর মাধুজার এতো সপ্ন নিমেষেই চুরমার হয়ে যায়। কপালে হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ে ফারুক চৌধুরী। শরীরটা ভীষন খারাপ লাগতে থাকে। মাধুজাকে বলে, আমাকে রুমে নিয়ে যাও। মাধুজা দোলা জোহান ভয় পেয়ে যায়। ভাইকে তুলে রুমে নিয়ে যায়।

লাবিবের দরজা বন্ধের শব্দে ফারাহ কেপে ওঠে। লাবিবের দিকে তাকাতেই ভয়ে কেদে দিবে দিবে ভাব। লাবিব তেড়ে এসে ডাইরেক্ট চুলের মুঠি ধরে ঘুরিয়ে নেয় ফারাহকে। ফারাহ ব্যথায় জোরে কেদে উঠে। লাবিব রেগে বলে, ঘরের দরজা বন্ধ করে কি করছিলি? পরপুরুষের সাথে ঘরের দরজা বন্ধ করে কি করছিলি বল। বিয়ে করবি তুই? আমি নেই? কবে থেকে বলছি বিয়ে করার কথা তোকে? আমাকে পছন্দ হয়না? ঐ বলদ মার্কা বুড়াটাকে তোর পছন্দ হয় তাইনা? ঐ বুড়াটাকে নিয়ে ঘরে তুলেছিস তুই। একহাতে গলা চেপে ধরে ফারার। ফারাহ আ আ আ করে কাশতে থাকে। আর লাবিবের হাত ছাড়াতে থাকে।

লাবিব গলা ছেড়ে চিবুক ধরে আঙুল দিয়ে ঠোটের লিপিস্টিক মুছে দেয়। এতো সেজেছিস কেন তুই? ঐ বুড়োর জন্য সেজেছিস তাই না? আমি তোকে বলিনি বাইরের মানুষের সামনে খোলামেলা হয়ে যাবি না? কেন গিয়েছিস তুই? শাড়ি কেন পড়েছিস? ঐ বুড়োটাকে দেখানোর জন্য শাড়ি পড়েছিস? পেট বুক বের করে দেখাবি জন্য পড়েছিস? খুল এই শাড়ি। লাবিব একটানে শাড়ি খুলে ফেলে দেয়। সেপটিপিন লাগানো ছিলো বলে, ব্লাউজ ও ছিড়ে ছিড়ে যায়। ফারাহ এক চিৎকারে হাত দিয়ে নিজেকে আগলে নেয়। লাবিব না লাবিব না বলে, চিৎকার করতে থাকে। লাবিব এক ধাক্কায় খাটে ফেলে দেয়। ফারাহ হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে। লাবিব ফারার হাত মুচরে ধরে পেছনে নিয়ে যায়। ফারার বলে,
লাবিব প্লিজ লাবিব এটা করোনা তুমি। প্লিজ।

খুব শখ তোর না পরপুরুষের সাথে একঘরে থাকার? তোর এমন অবস্থা করবো তুই এই জীবনে আর লাবিব ছাড়া অন্য কারো নাম মুখে নিবি না। আমি বাইরে গেছি এই সুযোগে বিয়ে করে নিবি ভেবেছিলি তা আর হচ্ছে না। তুই চাস বা না চাস আমাকেই বিয়ে করতে হবে তোর। আমার তোকে চাই। শুধু তোকে চাই।

ফারার ঘারে দাত বসায় লাবিব। ফারার এক চিৎকারে পুরো ঘর কেপে উঠে। লাবিবের প্রত্যকটি কামড়ে ঘাড়ে বুকে দাগ হতে থাকে, রক্তও বেড়োতে থাকে। ফারার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। ফারাহ আর সহ্য করতে না পেরে বলে, আমাকে ক্ষমা করো। আমি আর কারো সামনে যাবো না। আমি আর কাউকে বিয়ে করতে চাইবো না। লাবিব আমি মরে যাচ্ছি লাবিব। ছাড়ো আমাকে।

এদিকে ফারার চিৎকারে সবাই এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে। জারা জোরে জোরে মরা কান্না কাদছে। আর বলছে আল্লাহ আমার বোনটাকে বাচিয়ে রেখো।
লাবিব নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ফারার উপর থেকে উঠে পড়ে। ফ্লোরে পড়া শাড়িটা নিয়ে ফারার দিকে ছুড়ে দিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে আসে। মাধুজা লাবিবের পায়ে পড়ে যায়। কি করেছো তুমি আমার মেয়ের? কি দোষ করেছিলো আমার মেয়ে? মেরে ফেলোনিতো আমার মেয়েটাকে? এদিকে রুমে উকি দিয়েই সবাই বাইরে চলে আসে। সবার ধারনা হয়ে যায় লাবিব তাদের মেয়ের সম্মান নিয়ে নিয়েছে। সবার চোখে জল। ঘরের ছেলে হয়ে এতোবড় সর্বনাশ কিভাবে করলো লাবিব? দোলার নিজেকে নিজে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করছে। ঠাস করে লাবিবের গালে চড় দেয় দোলা। শার্ট ধরে বলে,
~ বের হ তুই আমার বাড়ি থেকে। আর আসবিনা এখানে। আমি তোকে ভাগিনা বলে, মানিনা। এতো খারাপ কেন তুই? কি অপরাধ ছিলো আমাদের মেয়ের?

~ আমি যাচ্ছি। জামাই হয়ে ফিরবো আবার। এই শাস্তি তোমাদের মেয়ের পিওনা ছিলো। আমার সাথে দীর্ঘদিন প্রেম করে এখন বিয়ে করার জন্য অন্য একটা ছেলেকে নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে। বিশ্বাস না হলে বুড়িকে জিজ্জাসা করে দেখো। আর তোমাদের মেয়েকে আমি বিয়ে করবো। আর কারো সাথে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করবেনা।
সবাই জারার দিকে তাকায় সত্যটা জানার জন্য। জারা কাচুমাচু করে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে, লাবিব বেড়িয়ে আসে সেই বাড়ি থেকে।

মাধুজা ভিতরে ঢুকে ফারাহকে ইচ্ছামতো মারতে থাকে।
কলঙ্কিনী এই বয়সে কলঙ্ক করে বেড়াস। বাইরে যতোই হায় উতাস দেখাইনা কেন ভিতরে ভিতরে ঠিকই তোকে নিয়ে গর্ব করতাম। প্রেম করবিতো করবিতো আর ছেলে পেলিনা তুই? শেষ মেষ ওমন ছেলের সাথে। তোর পেটে পেটে এতো কিছু? কি দিয়ে বশ করেছিস তুই ঐ ছেলেকে যে তোর জন্য পাগল। রাজরানী হয়ার লোভে পড়েছিস তুই? মান সম্মান তো এতোদিন যা ছিলো তাও রাখলিনা। সব শেষ করে দিলি। ও বাড়িতেতো মুখটাও দেখাতে পারবোনা। তোর ছোট আম্মু আব্বুর কথাও একবার ভাবলিনা? কোন মুখে দাড়াবে ওদের সামনে। সেখানে এত্তো এত্তো গ্লামারাস মেয়ে ঐ ছেলের জন্য লাইন ধরে থাকে সেখানে তুই কিভাবে ডুকতে চাস? ঐ বাড়ির বুয়াও তোর থেকে ভালো। হায় হায় রে এই মুখ আমি কাকে দেখাবো? কি করবো?
ফারুক এর প্রেসার হাই হয়ে যায়। দাড়িয়ে কাপতে থাকে। মেয়ের এমন সর্বনাশ মেনে নিতে পারছেনা কিছুতেই। জোহান ধরে রুমে এনে বসিয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়। ফারুক চোখের জল ছেড়ে দেয়। জোহানকে বলে,
~ লাবিব আমার মেয়েকে বিয়ে করবেতো? ঐ বাড়ির লোক আমার মেয়েটাকে বৌ করে নিতে রাজি হবেতো?
জোহান কি বলবে ভেবে পায় না। এই চিন্তা তার মাথা তেও ঘুরছে। তানভীরের সাথে কিভাবে এই প্রস্তাব রাখবে সেটা ভেবেই মাথা খারাপ।

লাবিব বাসায় না গিয়ে সাগরের বাসায় যায়। গিয়েই সাগরের বেড়ে শুয়ে পড়ে। সাগর বলে,
~ কিরে মামা তোর এই অবস্থা কেন? মামি কিছু করছে নাকি? পাগলের মতো লাগছে তোকে।
~ তোর মামীর সাথে অনেক বড় একটা অন্যায় করে ফেলেছি। তোর মামী খুব ব্যথা দেয়রে। সালার প্রেমের মতো যন্ত্রনার কিছু নেই।
~ জানি। কি আর করবো বল … আমার প্রেম তো তোকে পাবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
~ রিশি?
~ হুম।

~ শালার এই মেয়েদের আল্লাহ কি দিয়ে যে বানিয়েছে বলতে পারিনা। এরা সোজা আঙুল ডিজার্ব করেনা। আঙুল বাকা করেই এদের পেতে হয়। রিশি কে পটিয়ে ফেল। তুইও সুখে থাক আমিও থাকি। ওই মেয়ে আমার টাকা আর ফিটনেসের প্রেমে পড়েছে। তুই তোর দিকে এট্যাকশন দেওয়া দেখবি তোর প্রেমে পড়ে গেছে।
~ তাই করতে হবে। তুই একটু ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে। শরীর খারাপ করলে ভোগান্তি বাড়বে।
~ হুম।

পার্ট ২১

ফারাহ আর লাবিবের ব্যপারটা জানাজানি হয়ে গেছে। তানভীরের লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসছে। তার ছেলে হয়ে এমন কিছু করবে যা ভাবনার অতীত। লাবিব বাড়ি ফিরে নি এতে আরো টেনশন হচ্ছে। রিশি রাগে ফুলে আছে। ত্যইয়বা কিছুতেই মানতে পারছেনা ব্যপারটা। কি থেকে কি করে ফেললো তার ভাইটা। ফারাহকে কখনো ভাইয়ের বউ হিসেবে মানতে পারবে না। রিশির গুম হয়ে বসে থাকা দেখে রিশির কাছে গিয়ে রিশির কাধে হাত দিতে রিশি জোরে হাত সরিয়ে হুংকার ছাড়ে। মিশু ধরতে গেলে মিশুকেও সরিয়ে দেয়।

“কি আছে ঐ কালির কাছে যা আমার মাঝে নেই? দ্যা মোস্ট হ্যন্ডসাম লাবিব খানের নজর এতো নিচের দিকে আমি ধারনাও করতে পারছিনা। আধবুড়া দেখতে কালো একটা মেয়ের প্রেমে কিভাবে পড়ে সে? আমি সবসময় তার সামনে থাকি। তার জন্য কয়েকবছর থেকে পাগল। ওর জন্য এই সামার ক্রান্ট্রির দেশে এসে পড়ে আছি। আমার মতো সুন্দরীর দিকে নজর পড়লোনা তার। পড়লো ঐ মেয়ের দিকে। ছিহহহ..। ঘৃনা করছে আমার। এত্তো রুচি খারাপ ওর। ধরতেও বমি আসে আমার।”
মিশু বলে,
“শান্ত হ মা আমার। এতোটা হাইপার হোস না। শুন আমার কথা। লাবিব বাসায় এলে আমরা এই ব্যপারে তার সাথে কথা বলি। তানভীর প্লিজ কিছু একটা করো। আমি আমার বেবির চোখে পানি দেখতে পারবোনা। লাবিবকে আমার জামাই হিসেবে চাই চাই। আমি তোমার মেয়েকে মেনে নিয়েছি। তুমি যে করেই হোক আমার মেয়েকে ছেলে বউ করে নাও। নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”
রিশিকে ধরে উপরে নিয়ে যায় মিশু।

জারা রুমের দরজা লক করে উরাধুরা নাচ শুরু করে দিছে। কিন্তু শান্তি মতো নাচতেও পারছেনা। তার প্রয়োজন এখন লাউড মিউজিক আর হাতে ওয়াইন। তবেই না হবে সেলিব্রেট। সাহস নেই মিউজিক ওপেন করার। বাড়ির পরিবেশ খুবই খারাপ। এখন মিউজিক দিলে পিঠ আস্ত থাকবেনা। বাড়ি থেকে বের ও করে দিতে পারে। সেটা কোনভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। বের করে দিলে লাবিবের আর ফারার বিয়েতে মজা করবে কিভাবে? না এখন নাচ স্টপ। পরে মিউজিক দিয়ে ডান্স করা যাবে। আপাদত ব্রাইড কি করে সেটাই দেখতে হবে।

ফারাহ বারান্দায় ফ্লোরে বসে বসে কাদছে। জারা এসে ফারার দিকে তাকিয়ে থাকে। ফারাহ জারাকে বলে,
~ কি দেখিস তুই এইভাবে?
জারা ফারার গালে পর পর পাচটা চুমু দিয়ে বলে,
~ কাদছো কেনতুমি? হাসো হাসো। অনেক ভালো হয়েছে। এখন তুমাকে আর আমাকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা।

আমরা সারাজীবন এক বাড়িতে থাকবো। বোনে বোনে ঝা .. একবার ভাবো ব্যপারটা। উফফ আমার তো গা শিউরে উঠছে। তুমি ঐ বাড়িতে চলে যাও। তারপর আমিও তাফিফ ভাইয়াকে বিয়ে করে চলে আসছি।
~ তাফিফ কে বিয়ে করবি তুই? তুইও লাভ লাইনে চলে গেছিস?
~ বুড়ি হয়ে গেলাম তো। লাবিব ভাইয়াই ঠিক করেছে। বলে, ছে ঘরের মেয়ে ঘরে থাকবে। অন্য কোথাও ভেজাল করার প্রয়োজন নেই।

~ সব প্লান করা?
~ হা তো। ভাইয়া কিন্ত তোমাকে অনেক লাভ করে। তুমি অনেক লাকি।
~ জানিনা।
~ 100% সিউর। আপু তোমাকে মেরেছে ভাইয়া?
~ ব্যথা দিয়েছে। কামড় দিয়েছে এদিকে। দেখতেই তো পারছিস।
~ আর কিছু করেনি? সবাই তো অনেক কিছুই ভাবছে।
ফারাহ জারার দিকে সুক্ষ দৃষ্টিতে তাকায়।

~ তোর ভাইয়া অভদ্র হতে পারে তবে এতোটাও খারাপ না।
জারার ঠোটে হাসি ফুটে উঠে।
~ জানি আমি। আমার ভাইয়া।
ফারাও হাসে তবে তার প্রকাশ্য খুবই অল্প।

~ একটা কাজ করতে পারবি? তোর ফোনটা দিয়ে যা আর আমার ফোনটা দিয়ে যা। জারা ফোন এনে দিয়ে ঘুমোতে চলে যায়। ফারাহ সিমটা বের করে জারার ফোনে ঢুকায়। ফোন দেয় লাবিবের নাম্বারে। কয়েকবার ফোন বাজার পর ফোন রিসিভ করে বলে,
~ আই লাভ ইউ মায়াকুমারী।

কন্ঠ শুনে ফারাহ বিচলিত। বাড়ি ফিরেনি এটা জানার পর থেকে এই ভায়টাই পাচ্ছিলো। কেদে দেয় শব্দ করে। পরক্ষনেই চোখ মুছে দাতে দাত চেপে কাপা স্বরে বলে,
~ ইউ আর ড্রাংক লাবিব ….।

লাবিব হাসে। কিছুক্ষন আগে দুই বন্ধু মিলে অনেক গুলো বোতল খালি করেছে। যদিও লাবিব এগুলো খায় না তবে আজ সামনে সাগর খাচ্ছে দেখে নিজেও বোতলের মুখ খুলে চুমুক দিয়েছে। মাতাল হয়ে বিছানায় পরে ঘুম একদম। ফারার ফোনে চোখ খুলে দেখে স্কিনে মায়াকুমারী নামটা ভেসে উঠেছে।
~ হু তো? তোমার কি মায়াকুমারী?
~ লাবিব ওসব ছাইপাস খেয়েছো কেন? কোথায় তুমি?

~ তুমি জেনে কি করবে? সবাইকে বলবে নাকি আমি সাগরের সাথে মদ খেয়ে পরে আছি?
~ লাবিব যখন যা ইচ্ছা তাই করবে নাকি? এমন কেন তুমি?
~ কারনটা তুমি মায়াকুমারী ..। অনেক নিষ্ঠুর তুমি। প্রচুর সেলফিস। আমার বুকের কলিজাটা খেয়ে উড়াল দিতে চাও। আমি তোমার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য পড়ে থাকি। আর তুমি ভাব করো আমাকে যেন চিনোনা। জানো আমি এইদেশে কেন এসেছি? তোমার জন্য এসেছি। জারা তোমার গল্প বলতো। তোমার প্রতিদিনকার গল্প। গল্প গুলো ইন্টারেস্টিং ছিলো অনেক।

নেশায় পড়ে গিয়েছিলাম। গল্পে তোমাকে শুনতে শুনতে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। তোমাকে একটু একটু করে একেও ফেলেছিলাম। লাস্ট তোমাকে দেখে ফিল করি আমার তোমাকে প্রয়োজন। আমি আমার সব ফেলে তোমার কাছে চলে আসি। তোমাকে জানাই তোমাকে ভালোবাসি। তোমার ছায়ায় নিজেকে দেখতে থাকি। আমি ভাবতাম এই বুঝি আমাকে তুমি ভালোবাসি বলবে। হয়তো দেরি হবে। তুমি যে সিচিউশনে আছো তার থেকে বের হয়ে আমার কাছে আসতে একটু সময় নিবে।

হয়তো আমাকে তুমি ভালোবাসো কিন্তু তা প্রকাশ করতে তোমার সামনে অনেক বাধা। সেই বাধা কাটিয়ে আমার কাছে একদিন ঠিক আসবে। কিন্তু আমি কি বোকা দেখ .. পাগলের মতো তোমাকে ভালোবেসে গেছি নিজে নিজেই ভেবে নিয়েছি সবকিছু অথচ তুমি এর কিছুতেই নেই। লাবিব ইজ ফুলল ম্যান ফুলল।
~ তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে লাবিব। আমি শুনেছি তুমিও মত দিয়েছো এতে।

~ আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে …বাহ… এত কম বিশ্বাস ভরসা তাহলে আমার উপর তুমার। তুমি ভাবলে, কি করে ওমন একটা মেয়েকে আমি বিয়ে করবো? তুমি জানতেনা আমি ছিলাম না এতোসব হওয়ার মাঝে? এই নিউজটার উপর ভিত্তি করেই তুমি বিয়ে করতে গিয়েছিলে তাইনা? আমার কথা তুমি কখনো ভাবোনা মায়াকুমারী।

~ লাবিব আমাদের কেউ মেনে নিবে না। আমরা একদমি মেচ করিনা। তোমার বাড়ির লোক কখনো মেনে নিবে না।
~ বিয়ে আমি করবো নাকি বাড়ির লোক করবে? আমার বউ আমার দায়িত্ব। অন্য কেউ কি আমার বউ এর দ্বায়িত্ব নিবে নাকি? বাড়ির লোক মানবে না বাড়ির লোকের কাছে যাবে না। সেই বাড়িতে থাকবেনা। তোমার জন্য আমি হাজারটা বাড়ি করতে রাজি আছি। তুমি যেখানে থাকতে চাও সেখানেই থাকতে পারো।

~ আমাকে নিয়ে তুমি লজ্জা পাবে লাবিব। কিছুদিন পর দেখবে আমাকে তুমার ভালো লাগবে না। আমি সুন্দর না লাবিব।
~ আই হোপ আজকের পর থেকে এই কথাটা তুমি বলবেনা। তুমি কি ভেবেছো আমি কিছুই খেয়াল করি নি? আমার নজর সব দিকেই থাকে ডারলিং। জীবনে সাদা পরী অনেক দেখেছি কিন্তু এই ফাস্ট শ্যমা পরী দেখলাম। আমার দেখা পৃথিবীর সর্বোচ্চ সৌন্দর্য মন্ডিতো শ্যমা পরী। জাস্ট ওয়াও ফিগা।
~ স্টপ প্লিজ …প্লিজ স্টপ। আমি সহ্য করতে পারছিনা।

~ আমাকে সহ্য করতে চাইলে তো পাবে। আমাকে কষ্ট করে সহ্য করতে হবে না। আজকের ঘটনার জন্য আই এম সরি। আশা করি তুমি সবাইকে বোঝাতে পারবে আমি তোমার কোন ক্ষতি করিনি। আমি চলে যাচ্ছি। টিকেট কাটা হয়ে গেছে। যেখানে ছিলাম সেখানেই চলে যাবো। মাঝখানে কটা দিন তোমাকে জালানোর জন্য সরি। পারলে মাফ করো। তবে তোমার অভদ্র প্রেমিক তোমারি থাকবে। ভালো থেকো। মাফ চেয়ে নিচ্ছি শেষ বারের মতো। এই মুখ তোমাকে আর কখনোই দেখতে হবে না। বাই বাই ফরএভার।

লাবিব ফোন রেখে দেয়। এদিকে ফারার মাথা পুরো পাগল হয়ে যায়। কি বললো, এসব লাবিব? বাই বাই ফরেভার মানে কি? চলে যাবে মানে ইউ এস এ তে? টিকেট কেটে ফেলেছে। ফ্লাইট কয়টার? না এ হতে পারে না। লাবিব কিছুতেই ছেড়ে যেতে পারে না। লাবিবের ফোনে ফোন দেয়। কিন্তু সুইচ স্টপ দেখায়। পুরো রাত ফারাহ কাদতে কাদতে অস্থির হয়ে যায়। শেষ রাতের দিকে সিদ্ধান্ত নেয় লাবিবকে আটকাতে হবে। মিররের সামনে গিয়ে দাড়ায়। কেদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।

বাথরুমে গিয়ে সাওয়ার নেয়। ফরজের আযান দেয় তখন। নামায টা আদায় করে নেয়। আলমারি থেকে একটা শাড়ি নিয়ে পড়ে। চোখ মুখের অবস্থা খারাপ। কেউ দেখলেই বুঝবে মেয়েটা কেদেছে। মুখে একটু পাওডার লাগিয়ে নেয় যাতে ফ্রেস দেখায়। চোখ জুড়ে কাজল দেয়। ভেজা চুল গুলো ভালোভাবে মুছে পেছনে ছেড়ে দেয়। মাথায় ঘোমটা টেনে নেয় বড় করে।

গাড়ির চাবি নিয়ে আর ফোন টা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। ভোর মাত্র হতে যাচ্ছে। অন্ধকারকে কাটিয়ে আলো ফুটতে শুরু করেছে। নিজেই ড্রাইভ করে সাগরের বাড়িতে আসে। ফারাহ আগে থেকেই বাসাটা চিনতো তাই এসেছে। মেইন ডোরে বার বার বেল এ চাপ দিচ্ছে। বেল এর শব্দে সাগর ডুলতে ডুলতে আসে দরজা খুলতে। ফারার সাথে কথা হবার পর লাবিব আর ঘুমোয়নি। সাগরকে সহ জাগিয়ে রেখেছে। ঘুমোতে দেয় নি একটুও। দুজনের নেশাই কাটে নি।

দরজা খুলে সাগর ঘুম ঘুম চোখে দেখে একটা অচেনা মেয়ে দাড়িয়ে। সাগর বলে,
~ হু আর ইউ? কি চাই এখানে? এতো সকাল এ ঘুম বাদ দিয়ে এখানে কি করছেন?
~ স্যার আমি ফারাহ। লাবিব এখানে আছে?
ফারার কথা শুনে সাগরের চোখের ঘুম নিমেষেই উধাও। চোখ ডলে বড় বড় চোখে তাকায়। এই প্রথম ফারাহকে নেক আপ বোরখা ছাড়া দেখছে সে।
~ ভাবি?

~ হুম।
~ ও মাই গড। কাম কাম।
ফারাহ ভিতরে ঢুকে। সাগর ফারাহকে নিয়ে লাবিবের কাছে আসে। পুরো রুম ফ্লোরে বোতল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ফারাহ রুমে পা রাখতেই আটকে যায়। ফ্লোরের অবস্থা দেখে বিছানায় লাবিবের দিকে তাকায়। উপুর হয়ে শুয়ে আছে। ফারাহ দাড়িয়ে পড়াতে সাগর লজ্জায় পড়ে যায়। ফারাহ সাগরকে বলে,
~ ভাইয়া বলে, ডাকি?

~ হ্যা ভাবি। অফ কোর্স।
~ লজ্জা পেতে হবে না আমি জানি রাতে দুজনে ড্রিংস করেছেন। এতো গুলো বোতল পড়ে আছে। লাবিব কি বেশি খেয়েছে?
~ না ভাবি ও দুই বোতল শেষ করেছে। বাকি গুলো আমি করেছি। অভ্যাস আছে তো।
ফারার কন্ঠ পেয়ে লাবিব ওদের দিকে তাকিয়ে ফারাহ দাড়িয়ে। ফারাহ কে প্রশ্ন করে
~ তুমি?

~ তুমি নাকি চলে যাবে?
~ ফ্লাইট নয়টায়। এখন বাজে ছয়টা।
ফারাহ সাগরকে বলে,
~ ভাইয়া ও যাবেনা। কেন্সেল করে দিন।
লাবিব বলে,
~ যেতে হবে। কেন্সেল করা যাবে না।

সাগর হেসে বলে,
~ আচ্ছা আমি দেখছি। থাক তাহলে।
সাগর দরজা চাপিয়ে চলে যায়। লাবিব অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ে। ফারার এতে খুব কষ্ট হয়। লাবিবের পায়ের কাছে গিয়ে বসে ফারাহ। কান্না কন্ঠে বলে,
~ আমাকে কি মাফ করা যায় না? ভালোবাসিতো।
~ এই কথাটা আগে বলা উচিত ছিলো। তাহলে এতো কিছু হতো না।

~ মেনে নিয়েছিতো। ভুলে যেতে চাই। না না ভুলবোনা। সারাজীবন মনে রাখবো তুমার পাগলামীটা।
~ রাগের মাথায় নিজের বেড রেকর্ড নিজে করলাম।
~ আমাকেও তো ফাসিয়ে এলে। আমার সাথে কেউ কথা বলে, না আমার বোন ঝা টা ছাড়া।
~ বাশ একা খাবো কেন? দুজনেই খাবো।

~ তো একা চলে যেতে চাও কেন? দুজনে একসাথে যাবো বলতে পারো না?
লাবিব একটানে ফারাহকে নিজের উপর ফেলে দেয়। বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,
~ বিজনেস ডিল আছে। তিনদিনের টুর ইন্ডিয়াতে। আজ না কাল ফ্লাইট।
এবার ফারাহ লাবিবের দিকে তাকিয়ে কেদে কেদে বলে,
~ অনেক জালাও তুমি।
~ মায়াকুমারী ….
~ হুম।

ফারার গালে স্লাইড করতে করতে বলে,
~ সুন্দর লাগছে।
ফারার চোখের পানি মুছে দেয়। এক টানে মাথা থেকে ঘোমটা আচল ফেলে দেয়। ফারাহ শাড়ি ধরতে গেলে হাত ধরে আটকিয়ে দেয়। জোরাজুরি না করে ফারাহ চোখ বন্ধ করে নেয়। লাবিব কামড়ের দাগ গুলোর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,
~ দাগ গুলোতে তোমাকে মানিয়েছে। আরো সুন্দর লাগছে।
ফারাহ লজ্জা পেয়ে যায়। গালে লজ্জার আভা দেখা দেয়।
~ মায়াকুমারী …
~ হুম।

~ বেশী ব্যথা দিয়ে ফেলেছি কি? জালা করে?
~ একটু।
~ ব্যথা কমিয়ে জালাটা বাড়িয়ে দেই?
~ কিভাবে? মলম আছে এখানে?

~ আদর দিয়ে।
~ না…।
~ একটু প্লিজ।

~ না…।
~ সত্যি সত্যিই কিন্তু চলে যাবো। ইউ এস এর টিকেট কাটতে বলি তাহলে।
~ না ….. মরে যাবো আমি।
~ আমি তো মারতেই চাই।

প্রেম রংয়ে রাঙাবো তুমায়
জমানো সব আদর দিয়ে
টুকটুকে গালের লজ্জা আভায়
ঢুব দিবো দেখে দুনয়নে
ফারাহ লজ্জায় এমনিতেই মরে যায় যায় অবস্থা।

লাবিব মুচকি হেসে ফারার গলায় মুখ ডুবায়। কামড়ের দাগ গুলোতে অসংখ্য আলতো চুমু একে দেয়। লাবিবের উষ্ণ নিশ্বাস ছেয়ে পড়ে ফারার গলে। প্রত্যকটি নিশ্বাসের ছোয়া বুকের মাঝে উতাল পাতাল ঢেউ তুলতে থাকে। সহ্য করতে না পেরে ফারাহ লাবিবের শার্ট খামচে ধরে। প্রতিটি উষ্ণ ছোয়ায় ফারাহ কাপতে থাকে। ফারার কম্পন বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। লাবিব বুঝতে পেরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফারাহকে। ফারার চোখ চোখ রাখে। ফারাহ লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। ফারার দু চোখের পাতায় গাড় করে দুটো চুমু দেয়। ফারা চোখ খুললে লাবিব মুখ নামিয়ে ফারার বুকে মুখ গুজে দেয়। নেশা ঘোর কন্ঠে বলে,
~ জান আমার কলিজা আমার মায়াকুমারী ..আমি ঘুমাবো। চুল গুলো একটু টেনে দাওনাগো।
লাবিবের এমন বাচ্চামোতে ফারাহ কাপা ঠোটে হেসে দেয়।

এক হাতে লাবিবকে আকড়ে ধরে আরেক হাতে মাথায় আলতো করে চুল টেনে দেয়। লাবিব পরম সুখের উষ্ণতায় ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।

পার্ট ২২

ফারাহ বাসায় ঢুকতেই মাধুজার সামনে পড়ে। মাধুজা মেয়েকে একবার পরখ করে নিয়ে বলে,
~ আজকাল বোরখা ছেড়ে অফিসেও শাড়ি পড়ে যাওয়া হচ্ছে দেখছি। তোর এই রুপে আর কে কে ডুবল রে..। অফিসে কাকে পাগল করলি? বাপের জন্নে এইসব দেখিনি। লজ্জা শরম সব গেলো।

ফারাহ কোন উত্তর না দিয়ে রুমে চলে আসে। এসেই এতক্ষন ধরে রাখা হাসিটা হেসে নেয়। আয়নার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলে,
“এই রুপে যার ডুবার সেই ডুবেছে গো আম্মুজান। যাকে তাকে তো পাগল করিনি ..একেবারে অফিসের বসকেই পাগল করেছি। প্রেমে পড়েছিগো আম্মু। প্রেমে পড়লে লজ্জা শরম কমিয়েই প্রেমে পড়তে হয়। আশেপাশের সবার সামনে যে লজ্জাটা পাওয়া হয় তা ট্রান্সফার হয়ে যায় অভদ্র প্রেমিকটার সামনে। দ্বিগুন তিনগুন করে বাড়তে থাকে।”

শাড়ি চেঞ্জ করার জন্য শাড়ি খুলতেই দৃশ্যমান হয়ে উঠে ঘাড় গলা বুকের দাগ গুলো। হাত দিয়ে আয়নায় দেখে দেখে ছুয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে ফিল করতে থাকে লাবিবের আদরের পরশ গুলো। তখনি মাধুজা রুমে আসে। দরজার শব্দে চোখ খুলে পেছনে তাকায় ফারাহ। মাধুজা ফারার দিকে এগিয়ে এসে দাগ গুলোতে চোখ বুলায়। হাতের আঙুল ছোয়ে দিয়ে বলে,
“বাপরে বাপ। কি রাক্ষস ছেলেরে বাবা। কি করেছে কামড়ে। কয়দিন খাবার না খেয়ে ছিল কে জানে? ভালোই তো ভেবেছিলাম ছেলেটাকে। কোথা থেকে এমন অভদ্র হলো কে জানে? ঐ যে বলে, না ..বাপ ভাল মা ভাল ছেলে হইল মধ্যে থেকেই খারাপ। না জানি কবে এই দাগ মিশবে। ক্রিম টিম কিনে নিবি। খারাপ দেখায় দাগ দিয়ে। সারাদিন তো খাস নাই। মুখ শুকিয়ে আছে। কাপড় পাল্টে খাইতে আস।”

মাধুজা চলে যেতেই ফারাহ মুচকি হাসে।
“এই দাগযে আমি মেশাতে চাইনা আম্মু। এ যে তোমার অভদ্র রাক্ষস জামাইয়ের প্রথম চিহ্ন। এই দাগ গুলোতে কতোযে ভালোবাসার ছোয়া আছে তা যদি তুমি জানতে ..তুমার চোখে খারাপ দেখালেই হলো নাকি? আমার অভদ্র প্রেমিকের চোখে তো সুন্দর লাগে।”

পরদিন সকালে ইয়ারপোর্টে লাবিবকে বিদায় দিতে আসে ফারাহ। সাথে জারাও আছে। সাগর ও আসে লাবিবকে ইয়ারপোর্টে ছাড়তে। জারা আর সাগর ফারাহ লাবিবকে একা ছেড়ে নিজেরা অন্য জায়গায় চলে যায়।

সেই কখন থেকে ফারাহ নিচের দিক তাকিয়ে কেদেই চলেছে। ফারার কান্না দেখে লাবিব মুচকি মুচকি হাসছে। ফারাহ লাবিবের মিটি মিটি হাসি দেখে বলে,
~ একবার বলছেও না যে কান্না করোনা। আমি চলে আসবো দুদিন পর। কষ্ট করে একটু থাকো।

ফারার কথাতে লাবিব হো হো করে হেসে দেয়। ফারা ভেবলার মতো তাকিয়ে দেখে লাবিবের হাসি। লাবিব হাসি বন্ধ করে কানের কাছে মুখ এনে বলে,
~ আসল কথা বলে, ন মেডাম যে আপনি বিয়ের আগেই আমার সাথে হানিমুনে যেতে চান।
~ ছিহ..কি লজ্জা!
~ হা হা হা। তো এবার বিদায় দেন। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করছি। বেশী দিন কষ্ট করে একা একা ঘুমোতে হবে না।

~ চুপ থাক। অভদ্র প্রেমিক।
~ তোমারই গো। তোমরা দুইটা বোন সেই পরিমান লাকি। ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকবে। নো প্যারা।
~ ভালো থেকো। সাবধানে থেকো। তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে এসো।
~ লাস্ট কি একটা হাগ পাবো না? নাকি এতেও আপনার লজ্জা করবে? লজ্জা করে লাভ নেই দিতেই হবে।
ফারাহ ছোট্ট করে একটা হাগ দেয়। লাবিব জারা সাগরকে পাশে না পেয়ে ফোন দেয়। ওরা আসলে বলে,
~ ব্যপার কি? কি করা হচ্ছিলো?

জারা উত্তর দেয়
~ জরুরী আলোচনা। তোমাদের বলবোনা। সাগর হাসে।
~ ওকে আসছি গাইস। আল্লাহ হাফেজ। আর সাগর … নাউ ইটস ইউর টাইম। অল দ্যা বেস্ট। ফিরে এসে শুনছি।
~ ইয়েজ মামা।

নাইট ক্লাবে মদের গ্লাস হাতে নিয়ে ডি জে ডান্স করতে করতে ক্লান্ত রিশি। হেলে দুলে ডান্স করছে। পাশের ছেলে মেয়েদের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে বার বার। সোফায় বসে বসে গভীর নজরে দেখছে সাগর। ডান্স দেখে খুব ইমপ্রেসড সাগর। রিশি বরাবরই ভালো ডান্স করে। বডি ল্যাংগুয়েজ জাস্ট ওসাম। ফেস এক্সপ্রেশনে হটি লুক। বাট ছেলেদের সাথে ধাক্কা লাগাটা মেনে নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে সাগরের।

কোর্টটা খুলে পাশে রেখে বলে, এতোদিন অনেক ধাক্কা খেয়েছো সুন্দরি বাট এবার তোমার প্রটেকশন দেওয়ার জন্য আমি সর্বদায় হাজির। এবার তোমার আমার ধাক্কা খাওয়ার পালা। সং চেঞ্জ করতেই ডান্স ফ্লোরে উঠে পড়ে সাগর। রিশির পাশে দাড়িয়ে রিশির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে ডান্স করতে থাকে। এতোক্ষনে হাতের গ্লাসটা রেখে এসেছে। রিশি খেয়াল করে সাগর কে। এক পর্যায়ে সাগর রিশির হাত ধরে ডান্স করতে থাকে। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজের কাছে আনে।

রিশি দু হাত সাগরের কাধে রেখে চোখ চোখ রেখে বলে,
~ Hi handsome, I think i know you.
~ sure dear . We frist meet on your nephew’s birthday.
~ oh i see. Mr. Sagor, right?
~ yeah. Nice to meet you.
ডান্স ফ্লোর ছেড়ে পাশে সোফায় এসে বসে রিশি। সাগর ও এসে বসে। রিশি সাগরের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ i am very hungry now. Can i order something for you?
~ sure. Same to you.

দুজনেই কাবাব অর্ডার করে। খেতে খেতে সাগর প্রশ্ন করে
~ কতোদিন আছো এদেশে?
~ অল্প কিছু দিন হয়তো ..আবার সারাজীবন থেকেও যেতে পারি।

~ এখনো আশা রয়েছে বুঝি? যা তোমার নয় তারপিছু নিয়ে বোকামি কেন করছো? ইনটেলিজেন্ট গার্ল তুমি। আশে পাশে তাকিয়ে দেখো একবার। বেটার কাউকে আই মিন নিজের পারফেক্ট কাউকে পেতে পারো।
~ নিজের কথা নিজেই বলছেন দেখছি।
~ হা। ঘটক নেইতো। দেখতে পারো। চাইছি তোমাকে।

~ কেন চাইছেন আমাকে?
~ তুমি আমার মতোই। পারফেক্ট কাপল হবো।
~ যাক আপনি তাহলে আমাকে চিনলেন। আপনার বন্ধু চোখ থাকতেও অন্ধ।
সাগর হাসে। মনে মনে বলে, চোখ থাকতে সঠিক জিনিসটা বেছে নিয়েছে। ওর জন্য যা উপযুক্ত তাই বেছে নিয়েছে। চিন্তা করোনা তোমাকেও আমি ঠিক করে নিবো। উগ্ৰ চলাফেরা আর জাস্ট কিছুদিন।

রীশি চোখের সামনে হাত ঘুরিয়ে বলে,
~ ও হ্যালো। কোথায় হারিয়ে গেলেন?
~ তোমাতে।
~ একদম নজর দিবেন না। চোখ আসতে চাইলে বন্ধ করে রাখবেন।
~ কেন জানতে পারি?
~ কারন আপনার ইচ্ছা পূরন হচ্ছে না।
~ দেখা যাক।

নাইট ক্লাবের সামনে বসার জায়গায় বসে আছে জারা। সাগরকে এই ক্লাবে নিয়ে এসেছে রিশির সাথে দেখা করিয়ে দেবার জন্য। বসে বসে কোমড় ব্যথা ধরে গেছে। তাই উঠে পায়চারি করছে। বিভিন্ন রকম মাতাল মানুষের আনা গোনা দেখছে হেটে হেটে। কেউ বেশী মাতাল, কেউ আবার কম মাতাল, কেউ একটু মাতাল, কেউ স্বাভাবিক ভাবে আনাগুনা করছে। ভালোই লাগছে এসব দেখতে জারার। নিউ এক্সপেরিয়েন্স।

বেনীওয়ালী …….
হটাৎ এই ডাকে চমকে উঠে জারা। পেছনে ঘুরে দেখে তাফিফ দাড়িয়ে। ভয়ে পুরো শরীরের পানি ৭০ ভাগ থেকে ৩০ ভাগ হয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,
~ তা তা তা ফিফফ ভাইয়া ..
তাফিফ হাত ধরে হাটা দেয় বাইরের দিকে। জারাও কাচুমাচু না করে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে তাফিফের পেছন পেছন আসে। তাফিফ গাড়িতে পেছন সিটে জারাকে বসিয়ে নিজেও বসে। ব্লাক গ্লাস গুলো তুলে দেয়। জারার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ বেনীওয়ালী …. কিস মি।

জারা তাফিফের দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে। ঠোট দুটো আপনা আপনি ফাক হয়ে যায়। কান কি আজকাল আবোল তাবোল শুনছে নাকি? তাফিফ হা করা দেখে বলে, কুইক কিস মি।
জারা এবার সত্যি শুনেছে। তাফিফকে প্রশ্ন করে
~ কেন?

~ কেন মানে? এর জন্যই তো আমার সাথে এমন করছিস। সাগর ভাইয়ার সাথে ক্লাবে চলে এসেছিস। কয়েকদিন থেকে আমার সাথে কথা বলিস না। আগে যখন আমি বলিনি তখন তো কেদে কেটে এক সের। তোর নাকি কষ্ট হয়। এখন যে তুই কথা বলিস না এখন আমার কষ্ট হয়না? ঐ তোর চাই টা কি হ্যা?
~ চুমু।

তাফিফ চুপ থেকে বলে,
~ তুই কি সত্যিই চুমু দিবি?
~ হা। তোর চুমু নিলে যে তোকে এখনি আমার বিয়ে করতে ইচ্ছা করবে তখন?
~ আর আমার যে সব সময় ইচ্ছা করে তার বেলায়?
~ কিহহ?

~ হা তো। বয়স কম তাতে কি? ক্লাস ফাইভের বাচ্চারা কতো সুন্দর প্রেম করে বিয়ে করে নাইন টেনে উঠতে উঠতে বাচ্চার বাবা মা হয়ে যায় আর আমার নাকি বয়স কম। বিয়ে না করার বাহানা সব। বুঝিনা ভেবেছো আমি? বিয়ে করতে মন চাইলে সেই কবে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে। আরে আমার কথায় এতো চাপ নিচ্ছো কেন? আমি খুব ভালো মেয়ে বুঝলে। পালিয়ে টালিয়ে বিয়ে করবোনা। পালিয়ে বিয়ে করলে এত্তো এত্তো গিফ্ট, টাকা, গয়না এসব কি পাবো নাকি? চুপ করে বসোতো। এখন আমি চুমু খাবো।

তাফিফ কি বলবে বুঝতে পারে না। আপাতত চুমু খেতে দেওয়া উচিত।
তাফিফ চুপটি করে বসে। জারা তাফিফের চোখে চোখ রাখে। আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে থাকে। তাফিফ ফুল ফিলিংস এ আটকে যায়। নিশ্বাস ঘন হতে থাকে। জারা তাফিফের মুখের কাছে এসে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। বন্ধ চোখে তাফিফকে কেমন দেখায় তার সৌন্দর্য লুটতে থাকে। মাশাআল্লাহ বলে, ডান গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে নিজের সিটে বসে পড়ে। এদিকে তাফিফ আর জারার অস্তিত্ব টের না পেয়ে চোখ খুলে দেখে জারা পাশে বসে তাফিফের দিকে তাকিয়ে আছে।

তাফিফের কান্না চলে আসে। রাগ ও হয় প্রচুর। ভেবেছিলো কি আর হলো টা কি? এই মেয়ে কবে বড় হবে? একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,
~ তোর চুমু খাওয়া শেষ? এই একটাতেই?

~ হা। অনেক ভালো লাগলো। তবে তোমার খোচা দাড়ির জন্য মিষ্টি না টক বুঝলাম না।
জারার কথা শুনে তাফিফ সামনের সিটে মাথা ঠুকতে শুরু করে। জারা আটকিয়ে দেয়। তাফিফ রাগে বলে,
~ তোকে ইচ্ছে করছে ধরে একটা আছাড় দিতে। এই একটা চুমুর জন্য তুই এতোদিন এমন করলি? তোর মুভিতে কি এই চুমু দিয়েছিলো?

জারা নিভল। কি বলবে এখন?
তাফিফ ফোন বের করে হাম তেরে বিন গানটা প্লে করে জারার সামনে ধরে বলে,
~ দেখতো তুই যে চুমু দিলি সেটার সাথে এটার কোন মিল আছে?
জারা এবার লজ্জা পেয়ে যায়। অসহায় ভাবে তাফিফের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ তাফিফ ভাইয়া … ঐ টাতো নিশ্বাস বন্ধ করা চুমু। আমার তো দম ছোট তুমি জানো। ঐ চুমু দিতে গেলে আমিতো মারা যাবো। তখন তো তুমি বিধবা হয়ে যাবে। তখন কি হবে তোমার? বিধবাদের কেউ বিয়ে করতে চায় না।

জারার বোকা বোকা কথা গুলোই যথেষ্ঠ তাফিফের রাগ উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। হালকা হেসে ঘোর লাগা চোখে তাকায় জারার দিক। জারার বোকা চাহনি সেই ঘোর লাগা চাহনিতে শক্ত হয়ে যায়। তাফিফ জারার মুখোমুখি এসে বলে,
~ তোর দম তো একবার দেখে নিতে হচ্ছে বেনীওয়ালী। দম ছোট হলে তো বাড়াতে হবে। নয়তো তোকে বিয়ে করে লাভ কি আমার?

জারা বেশ বুঝে যায় তাফিফ এর কথা। নেশা ভরা কন্ঠে শরীরে ঝাকুনি দিয়ে উঠে। কাপা গলায় বলে,
~ তাফিফফ ভাইয়া না ……. আমি মরে যাবো।
~ একবার মরেই দেখনা। বার বার মরতে চাইবি।

তাফিফ সোজা জারার ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দেয়। শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় জারাকে যেন নড়া চড়া না করতে পারে। শোষে নিতে থাকে সবটুকু। ঢেলে দেয় টক ঝাল মিষ্টি প্রেম গুলো। দীর্ঘ কিছুক্ষন থাকার পর তাফিফ ছেড়ে দেয় জারাকে। জারা সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে হাপাতে থাকে। তাফিফ জারার দিকে তাকিয়ে হাপাতে থাকে। রুমাল দিয়ে ঠোট মুছে বলে,
~ এই ধরনের বায়না আর কখনো করবিনা। মনে থাকে যেনো।

জারা চোখ খুলে তাফিফের দিকে তাকায়। সিট থেকে উঠে দু হাতে তাফিফের গলা জড়িয়ে ধরে।
তাফিফ হেসে ঠোটে আরেকটা চুমু দিয়ে বলে,
~ লাল হয়ে গেছিস। বাসায় আমি পৌছে দিবো নাকি সাগর ভাইয়ার সাথে যাবি?
~ তুমি কি করে জানলে আমি এখানে?

~ তোর ফোনের লোকেশন ট্রাক করে। এসেই ভিতরে গিয়ে দেখা হয় সাগর ভাইয়ার সাথে। কথা বললাম অনেকক্ষন। জানলাম তুই নাকি হেল্প করছিস। তারপর বাইরে এসে দেখি তুই পায়চারি করছিস।
জারা তাফিফের আরো কাছে ঘেসে চোখে চোখ রেখে বলে,
~ তাফিফ ভাইয়া … আমাকে ভালুপাসো?
~ এত্তোগুলা ভালুপাসি।

~ আমি খুব জালাই তোমাকে। অনেক বায়না করি তাইনা?
~ হুম।
~ আজ একটা বায়না করবো। রাখবে? এইটা তোমার ভালুপাসার প্রকাশ।
~ এইইই বেনীওয়ালী .. তোর মতলবটা কি বলতো?
~ আরেকবার দিবে? আর চাইবোনা।

~ কি?
~ নিশ্বাস বন্ধ করা চুমু।
~ এইইইই নাআআআআ। এর জন্য তোকে দিতে চাইনা। প্লিজ বেনীওয়ালী না।
~ এবার ই লাস্ট। জাস্ট একবার।
~ না না ……
এক লাফে তাফিফের উপরে উঠে ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।

পার্ট ২৩

ত্যয়বা এসেছে জারাদের বাসায়। দোলা মাধুজা খুশি হয়ে সমাদরে ব্যস্ত হয়ে যায়। কিন্তু ত্যয়বার মুখে বিরক্তের ছোয়া। মাধুজা হেসে হেসে বলে,
~ তুমি তো মা আসোই না আমাদের বাসায়। কতদিন পর এলে আমাদের বাসায়। আদর যত্ম তো করবোই মা।

~ দেখুন আন্টি ..আদর যত্ম পরেও পাওয়া যাবে। আপাদত আমি আপনার মেয়ের সাথে কথা বলতে এসেছি। আমাকে দয়া করে ছাড়ুন আমি ফারাহ আপুর রুমে যাবো।

মাধুজার মুখ ছোট হয়ে যায়। কিছু বলতে পারে না আর। ত্যয়বার সাথে কথা না বলে, রান্নাঘরে চলে যায়।
ত্যয়বা ফারার রুমে চলে আসে। ফারাহ ত্যয়বাকে দেখে সালাম জানিয়ে বসতে বলে, ত্যয়বাও সালাম নিয়ে বসে বলে,
~ তোমার সাথে কথা বলতে এলাম। তুমি কি ফ্রি আছো?
~ হ্যা একদম। বলো কি বলবে? চা আনতে বলি?
~ না প্রয়োজন নেই। বিয়ে কবে করছো?

~ তুমার ভাই আসুক তারপর দেখছি।
~ বাব্বাহ এতোক্ষন তো জানতাম আমার ভাই তোমার সাথে মিসবিহেভ করেছে এখন তো দেখছি তুমিও সুযোগ বুঝে গলায় ঝুলতে চাইছো।
~ ত্যয়বা ঠিক করে কথা বলো। আমি তোমার গুরুজন।

~ হ্যা তো তাই থাকো না ..। বড় আপু বড় আপুর মতো থাকো। ছোট ভাইয়ের বউ হোওয়ার শখ জেগেছে কেন? আমার ভাইয়ের সাথে আমার ননদের বিয়ে অনেকদিন থেকে ঠিক। এখানে ওদের মধ্যে তুমি কেন চলে এলে? আমার ভাইয়ের কোন দিক থেকে যোগ্য নোও তুমি। তুমি নিজেকে ভাবো কি করে আমার ভাইয়ের পাশে? শোন তুমি আমার ভাইকে ছাড়। ও বাইরে গেছে এর মধ্যে তুমি বিয়ে করে নাও। বুজতে পারছো আমি কি বলছি?

~ আমি যতদুর জানি আমি বিয়ে করলেও তোমার ভাই আমার ডিভোর্স করিয়ে আমাকে বিয়ে করবে।
~ ভুল জানো তুমি। আমার ভাইয়ের চোখে যে ঘোরটা লাগিয়েছো তা একদিন ঠিকই ভেঙে যাবে। সেদিন ও তোমাকে ছোড়ে ফেলে দিবে। রিশিকে তুমি ভালো ভাবেই দেখেছো। ওর মতো মেয়েই হয়না। আমার ভাইয়ের জন্য পারফেক্ট মেচ। আমার ভাইকে অনেক ভালোবাসে।
~ আর তোমার ভাই আমাকে ভালোবাসে।

~ এই ভালোবাসা বেশিক্ষন থাকবেনা ফারাহ আপু। লাবিব অনেক জেদি। তাই তোমার উচিৎ লাবিবের জীবন থেকে সরে যাওয়া। তোমাকে আমাদের কারো পছন্দ নয়। আমরা কেউ তোমাকে মেনে নিবো না।
~ তোমাদের মানতে হবে না। লাবিব মানলেই চলবে।
~ একটা ফেমেলিতে বিলং করবে তুমি। পরিবারের অমতে কিভাবে চলবে তোমাদের? আমরা কেউ তোমাকে না মানলে কিভাবে চলবে তুমি? একসময় দেখবে দুজনে আলাদা হয়ে গেছো। লাবিবের তোমার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট থাকবেনা। তুমি সেই বাপের বাড়িতেই চলে আসবে। ঠুনকো ভালবাসা ভেঙে যাবে। সবার আগে পরিবার। বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে কেউ ভালো থাকে না। আমার পাপা কখনো মানবেনা এটা।

~ তুমি বলছো এই কথা ত্যয়বা? ভালোবাসার জোর কতটুকু তা তুমি খুব ভালো করেই জানো। তুমি নিজেও পরিবারের অমতে একজনের হাত ধরে পালিয়েছিলে। তোমার শশ্বুর বাড়ি তোমাকে মানে নি। তোমার হাত ছাড়েনি কিন্তু রোশান। তুমি ওদের মন ঠিকই জয় করে নিয়েছো। ওরা তোমাকে বউ বলে, মেনে নিয়েছে। তারপর তুমি জানলে যে তুমার মম পাপার চরম শত্রুর বাড়ির বউ তুমি। তখন তুমার আফসোস হয়নি একটুও। কারন তুমি রোশানকে ভালোবাসো তাকে ছাড়তে পারবেনা। বাবা মার কষ্ট তোমার চোখে পড়েনি। তোমার বাবা মা একটুও দোয়া রাখেনি তোমার উপরর। কিন্তু কি হলো বলোতো? সবাই তোমাদের মেনে নিলো আর তুমি সুখীও হলে। গোপন করে গেলে তোমার শাশুড়ির পরিচয়।

তোমার ননদের সাথে আবার ভাইকে বিয়ে করানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছো। এক্ষেত্রে তুমি কতটা পরিবারের দিক তাকিয়েছো ত্যয়বা? আর তুমার কি আদৌ কোন গুন আছে এই সাদা চামড়া ছাড়া রোশানকে ধরে রাখার? ধর তোমার গায়ের চামড়া কোন কারনে নষ্ট হয়ে গেলো তখন নিশ্চয় আমার থেকে তুমি সুন্দর থাকবেনা …? আর রোশান ও তুমাকে ছেড়ে দিবে না। কজ হি লাভস ইউ। আমি লাবিব দুজন দুজনকে ভালোবাসি। আমাদের মধ্যে তুমি ফোড়ন কাটতে আসো কেন ত্যয়বা? হবু ননদ হবু ননদের মতো থাকো।

ত্যয়বা অপমান সহ্য না করতে পেরে তৎক্ষনাৎ চলে আসে ঐখান থেকে।
বাড়িতে এসে সবাইকে বললে তুলকালাম শুরু হয়। লাবিবা তানভীরকে ঘরে ডাকে। তানভীরের সামনে বসে হাত জোড় করে বলে,
~ দেখো তানভীর সংসার করবে আমাদের ছেলে। সে কাকে বিয়ে করবে না করবে সেটা তার ডিসিশন। সে যদি সুখী হয় তাহলে আমাদের বাধা দেওয়া উচিৎ নয়। আমাদের মেনে নেওয়া উচিত।

~ রিশির সাথে লাবিবের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমি চাই তাদের বিয়ে হোক। আমার ছেলের ভ্রম হয়েছে। তুমি এতে আক্সারা দিতে এসো না। মিশু থামসের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইনা আমি।
~ কোথায় লেখা আছে যে ওদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে ছেলেকে বিয়ে না দিলে? মেয়েতো বিয়ে দেওয়াই আছে। ওরা যথেষ্ট বুঝমান। বুঝবে আমার ছেলে তাদের মেয়েকে চায়না। ফারাহকে আমারো পছন্দ। আমার ছেলের বউ ফারাহ ই হবে। আমি কিছুতেই রিশিকে ছেলের বউ করতে পারবোনা। এটাই আমার শেষ কথা।

~ তাহলে আমার শেষ কথাটাও শুনে যাও। রিশিই লাবিবের বউ হবে অন্য কেউ না।
লাবিবা চলে আসে ঘর থেকে। তানভীর থ হয়ে যায় উঠে দাড়িয়ে দেয়ালে হাত দিয়ে বারি দেয় একটা। এই প্রথম তোমার সাথে ঝগড়া করছি মনে হচ্ছে বউপাখি। কি করবো আমি এখন বলোতো। ছেলের ভালবাসা মেনে নিয়ে আমিতো মেয়ের জিবনটাকে নষ্ট করতে পারিনা। তুমি মিশুকে চিনোনা বউপাখি। ও সব করতে পারে। ও চাইলেই আমার মেয়ের জীবনটাকে তছনছ করে দিতে পারে। আমার মেয়ের সাজানো সংসার ধ্বংস করে দিতে পারে। কি করবো আমি এখন? আমার যে দু কুল নেই।
লাবিবা ছাদে এসে লাবিবকে ফোন করে। লাবিব ফোন ধরতেই লাবিবা বলে,
~ কি করছিস?

~ এইতো মম ..অফিস থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে এখন খাচ্ছি।
~ খাওয়া শেষ করে ফোন দে।
লাবিব খাওয়া শেষ করে ফোন দেয় লাবিবাকে। লাবিবা ফোন ধরেই বলে,
~ রেডি হয়ে মলে যা। কার্ড নিয়ে যাস। অনেক কেনাকাটা আছে।
লাবিব মলে গিয়ে ভিডিও কল দেয় লাবিবাকে।
~ মম কি কিনতে হবে বলো?

~ ব্রাইড শপে যা। শাড়ি আর লেহেংগা কিনবো।
~ কার জন্য মম?
~ তোর বউ এর জন্য। বিয়ের শপিং করে আন। পরে আবার আমি এতো ভেজাল করতে পারবো না। আমি পছন্দ করে দিচ্ছি সব কিছু। আর ফারার মাপ তো তুই জানবিই।
লাবিব মুচকি হেসে ফোনেই মমকে ফ্লাইং কিস দেয়।

লাবিবাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সমস্ত শপিং করে নেয়।
ফোন বেজে চলছে বার বার। ফারাহ ঘুমের মধ্যে ফোন রিসিভ করে বলে, হ্যলো।
~ মায়াকুমারীকি গভীর ঘুমে ছিলো? আমি কি ডিস্টাব করলাম।
~ এতোক্ষনে মনে পড়লো তাইনা? তোমার মায়াকুমারী তোমার জন্য সবসময় ফ্রি।
~ উঠো উঠো তাড়াতাড়ি উঠো। ভিডিও কল দিচ্ছি।
~ এখন?

~ হুম।
লাবিব কল দিলে রিসিভ করে ফারাহ। দুজনেই কথা না বলে, দুজনকে দেখে। লাবিব নিরবতা ভেঙে বলে,
~ আমি দেখাবো আর তুমি শুধু দেখবে।
লাবিব সব শপিং একে একে দেখায় ফারাহকে।
ফারাকে জিজ্জাসা করে
~ কেমন লাগলো?
~ অসাধারন।

~ আমাদের বিয়েতে রিশি আর আমি যখন পরবো তখন কেমন লাগবে?
~ এগুলো রীশির জন্য?
~ হা। আমার উড বি ওয়াইফের জন্য। উফফ রিশি যখন লেহেংগাটা পড়ে সামনে আসবে না ..চিকনি চামেলিকে দেখে তখনি হাগ দিতে ইচ্ছা করবে। বিয়ের শাড়ি পড়ে গহনা পড়ে আমার বউ যখন সাজবে তখন তো ইচ্ছা করবে বিয়ে করে সময় নষ্ট না করে কোলে তুলে বাসর ঘরে চলে যাই। জমিয়ে বাসর হবে।
ফারাহ বুঝে যায় লাবিব মজা করছে।

~ হা। সকালে উঠে যখন আপনার ভ্রম কাটবে তখন দেখবেন ওটা রিশি নয় ওটা আমি। আর এই ড্রেস গহনা গুলো রিশির বাড়িতে না দিয়ে স্ব ইচ্ছায় আমার বাড়িতে ভুল করে দিয়ে ফেলেছিলেন। আপনার কল্পনায় রিশি থাকলেও বাস্তবে ফারাই থাকবে।
~ এত্তো কনফিডেন্স?
~ জি হ্যা। এই শুননা ..
~ বলো
~ ড্রেস গুলো দারুন ছিলো।
~ মম চুজ করেছে তোমার জন্য।
~ সত্যি? তাহলে মম আমাকে মেনে নিয়েছে।
~ জি হ্যা। এখন ঘুমাও। গুড নাইট।
~ আল্লাহ হাফেজ।

রিশির উগ্ৰ চলাফেরা বিডির অনেক স্থানেই আপত্তিকর। যদিও লোকজন ডিজিটাল হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের হাতছানিতে তবুও কিছু লোকের দৃষ্টি ভঙি এখনো পাল্টাতে পারেনি। রিশি রাস্তায় বের হওয়ার পর থেকেই কিছু ছেলে ফোলো করতে থাকে। প্রথমে রিশি কিছু না মনে করলেও পরে বুঝতে পারে এরা ওকেই ফোলো করছে। শুনশান রাস্তা মাঝে মাঝে একটা দুটা গাড়ি চলছে। নিজেকে অসহায় লাগছে রিশির এই মুহুর্তে। চাইলেও কেউ সাহায্য করবেনা এটা বুঝতে পারে ভালোভাবে। কারন ছেলে গুলোকে দেখতেই ডেঞ্জেরাজ বুঝা যাচ্ছে। কোন কুফায় যে ঘুরতে বেরিয়েছিল আল্লাহই জানে। জোরে পা ফেলে হাটতে থাকে রিশি।

পেছন থেকে একজন বলে, উঠে ও হ্যলো, সুন্দরী লেডি। এতো তাড়া কিসের? এভাবে কষ্ট করে হাটছো কেন? আমাদের বলো কোলে করে পৌছে দেই।
রিশির ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যায়। ব্যগটা বুকের সাথে চেপে ধরে দেয় দৌড়।

পিছন থেকে ছেলে গুলো বলে, উঠে ~ আরে পাখিকে ধর। উড়াল দিচ্ছে যে। পেছন পেছন দৌড় দেয় ছেলে গুলো। অনেকটা রিশির কাছে চলে আসে। রিশি আল্লাহ গো বলে, চিৎকার করে জীবন বাজি রেখে দৌড় দেয়। জীবনে হাইস্ট পা চালায়। কিন্তু ছেলে গুলোর সাথে পেরে উঠতে বেগ পেতে হয়। পিছন থেকে দৌড়ানো অবস্থায় জামা টেনে ধরে। অনেকটা ছিড়েও যায়। তবুও রিশি থামে না। তাকে বাচতে হবে বলে, দৌড়াতে থাকে।

সেই রাস্তায় সাগর প্রতিদিন অফিস যায়। আজো যাচ্ছিলো। হটাৎ রাস্তায় রিশিকে দেখতে পায়। পিছনে কয়েকটা ছেলেকেও দেখতে পায়। ব্যপার টা দেখে সাগরের মাথা পুরো নষ্ট। গাড়ি ঘুরিয়ে রিশি যে দিকে যাচ্ছে সেই দিকে যেতে থাকে। গাড়ির গেট খুলে রিশির বরাবর এসে এক টানে গাড়িতে ডুকিয়ে নেয়। আচমকা টানে রিশি কপালে ব্যথা পায়। জোরে কেদে উঠে। রক্ত পড়তে থাকে। সাগরকে দেখে স্বস্থি পায়। বুকে হাত দিয়ে চোখ বুজে। সাগর গাড়ি হাই স্পিডে টেনে এনে আউট অফ ডেনজার একটা জায়গায় রাখে। রিশি চোখ খুলে দেখে সাগর ফাস্ট এইড বক্স বের করছে।

কপালের ক্ষততে স্যভলন দিতেই রিশি চিল্লিয়ে উঠে হাত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে,
~ জালা করছে ডোন্ট টাচ মি।

গাড়ির সাথে হাত লেগে সাগর ব্যথা পায়। সাগরের পুরো রাগ উঠে যায়। রিশিকে গালে শরীররের সমস্ত জোর দিয়ে থাপ্পর দেয় একটা। রিশির চোখ দিয়ে ব্যথায় পানি বেড়িয়ে আসে। কিন্তু সে কাদছেনা একদম। কাদবেও না। গালে হাত দিয়ে সাগরের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে। সাগরের মায়া হয় এভাবে তাকানোতে। কাধ ঝাকিয়ে বলে,
~ আমি টাচ করলেই দোষ না? আর ঐ লোক গুলো কুকুরের মতো ছিড়ে খেলে ভালো হতো তাইনা? রাস্তা ঘাটে ভালো ড্রেস পড়ে বেরোনো যায় না? শরীর দেখাতে বের হোও? কি পড়েছো এটা? নাম কি এই জামার? চুপ করে আছো কেন বলো।
~ বাইনি জামা।

~ ডাইনি গিরি করার জন্য ডাইনি জামা পড়ো তাইনা? এর জন্যেই লাবিব তোমাকে পছন্দ করেনি। বেশ করেছে। ভালো জামা কাপড় পড়তে পারো না? আর যেন এসব ড্রেসে না দেখি।

বাসায় পৌছে দেয় রিশিকে। রিশি নামতে কাচুমাচু করে। সাগর জিজ্জাসা করে কি হয়েছে? রিশি বলতে পারে না লজ্জায় কেদে দেয়। সাগর রিশিকে ভালোবাভে পর্যবেক্ষন করতে গিয়ে দেখে পেছনে জামা ছেড়া। কিছু বললো, না আর। কোর্টটা গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলে, যাও।
রিশি গাড়ি থেকে নামতেই সাগর চলে যায়।

পার্ট ২৪

রিশি বাসায় যেতেই ত্যয়বা দেখে বাট কিছু বলে, না। রিশি রুমে এসে কাদতে থাকে। এই প্রথম এমন হয়েছে তার সাথে। সাগর না থাকলে নিশ্চিত একটা কিছু হয়ে যেতো। ছেলেটা ভালো। কিন্তু আমাকে ওর লাইফে এন্ট্রি নিতে বলে, কেন? আমি তো লাবিবের জন্য আসছি। কিন্তু সেইতো অন্য দিকে চলে গেছে। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। মমকে কি বলবো?

মাথা পুরো খারাপ হয়ে যায়। বাথরুমে চলে আসে সাওয়ার নেওয়ার জন্য। জামা খুলার সময় খেয়াল করে সাগরের কোর্ট পড়ে আছে। আসার সময় ত্যয়বা এই অবস্থায় দেখেছে। ইস না জানি কি মনে করেছে ভেবেই জিভে কামড় দেয়। কোর্ট খুলে রাখতে যাবে তখনি একটা মিস্টি স্মেল নাকে আসে। কোর্টটা নাকের কাছে আনতেই আরো কড়া হয়ে মিস্টি স্মেল নাকে শুড়শুড়ি দিতে থাকে। কোর্টে নাক ডুবিয়ে কিছুক্ষন স্মেল নেয় রিশি। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন আগের দেখা সাগরকে ভাবতে থাকে।

সাগরকে ধাক্কা দেওয়ার কথা মনে পড়ে যায়। চোখ খুলে আয়নার দিক ঘুরে তাকায়। কপালে কাটা স্পস্ট হয়ে আছে। হাত বুলায় কপালে। সাগরের হাতেও ব্যথা দিয়েছে ভাবতেই কেপে উঠে রিশি। মনে মনে হাজার বার সাগরকে সরি বলে, নেয়। ধাক্কা দেওয়া একদমি উচিত হয়নি। এটা ঠিক করেনি একদম। কোর্ট রেখে লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে নেয়। রুমে এসে কপালে কাটা জায়গায় মলম লাগিয়ে নেয়। ড্রয়িং রুমে চলে আসে। এসেই দেখে লাবিব চলে এসেছে। খুশি হয়ে এগুতে নিয়েও দাড়িয়ে যায়।

লাবিব যে আর তার নেই তা মনে পড়ে যায়। মিশু বার বার চোখ ইশারা দিচ্ছে লাবিবের কাছে ঘেসার জন্য। কিন্তু রিশি এগুতেই পারে না লাবিবের দিকে। মনে হয় কোন এক অদৃশ্য শক্তি এগুতে দিচ্ছে না তাকে। লাবিব সবার সাথে কথা বলে, উপরে যাওয়ার সময় সিড়ির কাছে রিশিকে ক্রস করতে নিয়েই দাড়িয়ে যায়। রিশির সামনা সামনি এসে আস্তে করে বলে,
~ ভাবি আপনার গালে আঙুলের দাগ কেন? সাগর কি মেরেছে নাকি?

রিশি থতমত খেয়ে যায় লাবিবের কথায়। প্রথমত ভাবি ডাকছে দ্বীতিয়ত আঙুলের ছাপ টা খেয়াল করেছে। রাগ করতে গিয়েও রাগতে পারছেনা। একি হলো তার?

লাবিবের দিকে জিজ্জাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই লাবিব বলে,
~ বন্ধুর বউ হবে ভাবিই তো ডাকবো এতে ওতো অবাক হোওয়ার কি আছে? আর সাগরের কথা শুনে চললেই তো হয় আর মাইর খেতে হবে না। যাই হোক চুল দিয়ে দাগটাকে একটু ঢাকার চেষ্টা করো।
লাবিব উপরে চলে আসলে রিশিও রুমে চলে যায় ড্রয়িং রুমে না গিয়ে।

রুমে এসে বেডের উপর একটা ট্রলি ব্যগ দেখতে পায়। রিশি অবাক হয়ে যায়। এই ট্রলি তো ওর ট্রলি না। আর সে তো রাখে নি। কিছুক্ষন আগেও তো এটা এখানে ছিলো না। এগিয়ে এসে ট্রলিটা নিয়ে ওপেন করে তো অবাক। পুরো ট্রলি কাপড় দিয়ে ভরা। সাথে চিরকুট ও আছে। চিরকুট হাতে নিয়ে পড়ে চিরকুটে লেখা

~ This black saree is for today. I want to see wrapped up. I waitted. Your driver has been informed of the address.
রিশি শাড়ি খুলে দেখে সুন্দর একটা ব্লাক শাড়ি আর পিংক ব্লাউজ। দোটানায় পড়ে যায় রিশি। তার কি পড়া উচিৎ নাকি পড়বেনা। সাগর কি সত্যি তার জন্য ওয়েট করছে?

যাবে নাকি যাবে না? মমকে কি বলবে? মম যদি জানতে পারে তাহলে? ট্রলিতে তাকাতেই কাপড় গুলোর উপর আরেকটা চিরকুট পায়। হাতে নিয়ে পড়ে
~ এখানে অনেকগুলো শাড়ি আর ফ্রক আছে। প্লিজ এখন থেকে এগুলো পড়বে। আমি পরে আরো পাঠিয়ে দিবো। now waitting for just you.
রিশি এবার সত্যি সত্যি টেনশনে পড়ে যায়। রুমে পায়চারি করতে করতে শাড়ি হাতে নিয়ে পড়েই ফেলে। সব দোটানাকে পেছনে ফেলে রেড়ি হয়ে নেয়।

লাবিব রুমে এসে ফারাহকে ফোন দেয়। ফারাহ ফোন রিসিভ করে কানে ধরে। লাবিব বলে,
~ শোন। এক্ষুনী আমি একটা ঠিকানা এসেমেসে দিচ্ছি চলে আসো কাজ আছে।
~ আর্জেন্ট কিছু? তুমিকি কোন ডকুমেন্ট ফেলে গেছো? আমি কি ল্যপটপ সাথে নিবো?
~ খালি হাতে চলে আসো।

ফারাহ ঠিকানা অনুযায়ী চলে আসে। থার্ড ফ্লোরে গিয়ে দাড়াতেই একজন মেয়ে এসে বলে,
~ হাই, আপনি কি মিসেস লাবিব খান?

ফারাহ এই নাম শুনে কেপে উঠে। ঠোট দিয়ে হালকা স্বরে বলে, জি মিসেস লাবিব খান। বুকের মধ্যে অদ্ভুত এক ফিলিংস পায়। আর কিছুদিন পর সত্যি সত্যি সে মিসেস লাবিব খান হয়ে যাবে।

মেয়েটি ফারাহকে আসুন বলে, এগুতে থাকে। ফারাহ পিছে পিছে যায়। মেয়েটি ফারাহকে নিয়ে একটা পার্লারে ডুকে যায়। ফারাহ মনে মনে অবাক হয়ে যায়। লাবিব কেন তাকে পার্লারে আসতে বলবে? কিন্তু কোন রিয়েক্ট করলোনা। পার্লারের আরো দুজন মেয়ে এসে বললো, ম্যম আপনি বোরখা খুলুন। ফারাহ একটু মনক্ষুন্ন হলো যে লাবিব ওকে এভাবে ভালোবাসে না। ও নিজেও আমাকে অন্যদের মতো চায়।

মেয়ে দুটি ফারাহকে অনেকগুলো ফেসিয়াল~ টেসিয়াল, মাসাজ আরো অনেক কিছু করলো। সব কিছু সহ্য করলেও ফারার চুল স্ট্রেট করার সময় অসহ্য লাগলো। মেয়েরা কেনযে চুল টানাতে আসে শখ করে তা ওরাই জানে। সব শেষে একটা নিউ লুক দেওয়া হলো ফারাহকে। হালকা মেকাব, সর্ট স্লিভ পিংক ব্লাউজের সাথে নেটের ব্লাক শাড়ি, চুল গুলো ভাগ করে সামনে এক পাশে অর্ধেক আর পেছনে অর্ধেক ছাড়া, কানে স্টোনের বড় দুল, হাতে মোটা চুড়ি পায়ে হাই হিল।

সম্পূর্ন যেন এক নতুন ফারাহ। নিজেই নিজেকে চিনতে পারছেনা ফারাহ। অনেক সুন্দর লাগছে। ফারাহ বুঝতে পারে মায়ের এতো দিনের ঘেন ঘেন করাটা ঠিক ছিলো। সবারই উচিত নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা। মন আত্মা পবিত্রতা বজায় থাকে। কিন্তু এমন ভাবে ভীষন লজ্জা লাগছে। এই অবস্থায় বাইরে যাবে কিভাবে? অভদ্র প্রেমিকটার সামনেই বা দাড়াবে কিভাবে? অভদ্রটাতো তার নজরে শেষ করে দিবে একদম। লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢাকে ফারাহ। কোমড়ে কারো ঠান্ডা হাতের ছোয়া পায়। ঘাড়ে গরম নিশ্বাসের আলোঢ়ন। চোখ খুলে দেখে লাবিব পেছন থেকে আষ্টে পিষ্টে কোমড় জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিয়েছে। পুরো শরীর ঝটকা দিয়ে উঠে। লাবিবের দিকে প্রেমময় চাহনি দেয়। লাবিব কানে একটা কামড় দিয়ে বলে,
~ তোমার চোখে দেখিয়াছি আমার সর্বনাশ।

~ লাবিব … আমার খুব লজ্জা করছে।
~ আমার নেশা ধরে যাচ্ছে।
~ লাবিব..প্লিজ ছাড়ো।

~ ছাড়ার জন্য ধরিনি তোমায় মায়াকুমারী। সারাজীবন ধরে রাখবো বলেই ধরেছি।
লাবিব ফারাহকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা দেয়। ফারাহ গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
~ তুমি আসছো বলোনি কেন?
~ সারপ্রাইজ।

~ আমি সত্যি সারপ্রাইজড। কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? লজ্জা করছে আমার।
~ ডিনারে যাচ্ছি। লজ্জার কি আছে? সেখানে মানুষজন নেই। শুধু আমরা আর সাগররা।
~ সাগর ভাইয়া আছে। তাহলে আমি যাবোনা। এই লুকে সাগর ভাইয়ার সামনে কিছুতেই না।
~ রিলাক্স ডারলিং। সাগর তোমার দিকে তাকিয়েও দেখবে না। ও চোখে সরষে ফুল দেখছে যে। রিশি আসছে।
দুজনে হেসে দেয়।

রিশিকে ড্রাইভার একটা রেস্টুরেন্টে ছেড়ে আসে। রিশি ভিতরে ডুকে দেখে অজস্র বেলুন, ফ্লাউয়ার আর লাইটিং এ পুরো রেস্টুরেন্ট সাজানো। হালকা আওয়াজে গান বাজছে। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় রিশি। সাগরকে দেখেই চোখাচোখি হয় দুজনের। দাড়িয়ে পড়ে রিশি। অপলক চোখে সাগরকে দেখে। ব্লাক ডেনিম জিন্স ব্লাক শার্টে বুকের দুটো বোতাম খুলা, চুলগুলো হালকা বাতাসে উড়ছে আর রিশির বুকে ধিড়াম ধিড়াম আওয়াজ তুলছে। না চাইতেও দু পা পিছিয়ে যেতেই একটানে বুকের উপর ফেলে সাগর।

চুল গুলো কানের পেছনে গুজে বলে, সুন্দরী আমার জন্য আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে। রিশি সরে দাড়ায়।
সাগর ফ্লোরে হাটু ভাজ করে বসে রিশির হাত দুটো দুহাতে বন্ধ করে চোখে চোখ রেখে বলে,
“আমি জানিনা আমি তোমার যোগ্য কিনা। তোমার মনের মতো হতে পারবো কিনা। শুধু জানি আমার জন্য তুমিই পারফেক্ট।

আমার অগোছালো জীবনটাকে একমাত্র তুমিই গুছাতে পারো। আমার বর্নহীন জীবনটাকে তুমিই রাঙাতে পারো। আমার একাকিত্বের দিনগুলো তুমিই ভরিয়ে দিতে পারো। আমার জীবনে অনেক মেয়ে এসেছে। কিন্তু বিশ্বাস করো কখনো রিশির মতো কেউ আসেনি। তুমি রিশি আমার সর্বশেষ একজন যার সাথে আমি আমার বাকি জীবনটা ভালোবাসার সংসারে কাটাতে চাই। তোমার মনে কি একটু জায়গা পেতে পারিনা আমি? তুমি কি আমাকে একবার ভরসা করবেনা? ভালোবেসে একবার এই হাত দুটি ধরে দেখো কখনোই কোন অবস্থাতেই ছাড়বোনা। তোমার কখনো অযত্ম হতে দিবো না। তুমিকি ধরবে আমার হাত? থাকবে আমার পাশে? বাসবে আমায় ভালো?”

রিশি চুপ।
“তুমি মুখে নাইবা বলতে পারো। আমি শুনতেও চাইনা কিছু। শুধু তোমার হাত দুটো ধরে সারাজীবন কাটাতে চাই।”
পেছন থেকে লাবিব সাগর বলে, ডাকে। সাগর রিশি দুজনেই তাকায়। লাবিব আর ফারাহ দুজন দুজনকে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে। রিশি মুগ্ধ চোখে দেখে তাদেরকে। কি সুন্দর মানিয়েছে তাদের। আর সে কিনা এই লাভ বার্ড দুটোর বিরোধিতা করতো। ভেবেই খারাপ লাগছে। তার পর ই ফারাহ রিশি দুজনেই খেয়াল করে লাবিব সাগর এক ড্রেস আর তারা নিজেরাও সেইম ড্রেসে আছে। ফারাহ রিশির দিকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দেয়। রিশির চোখে পানি চিক চিক করে উঠে। লাবিব এসে সাগরের হাতে একটা বক্স দেয়। সাগর বক্স থেকে ডায়মন্ড রিং বের করে রিশির সামনে ধরে বলে,
~ Will you marry me?

রিশি অপলক ভাবে সাগরকে দেখতে থাকে। পাশ থেকে ফারাহ আর লাবিব বলতে থাকে
~ Risi come on .
রিশি ঘোরের মাঝেই হাত এগিয়ে দেয়। সাগর অনামিকা আঙুলে রিং পরিয়ে হাতের উল্টো তালুতে আলতো করে চুমু একে দেয়। সাগরের ঠোটের ছোয়ায় রিশি কেপে উঠে। লাবিব এসে সাগরকে বুকে নিয়ে বলে, congratulations my bro .
ফারাহ এসে রিশিকে অভিনন্দন জানায়। সাগর লাবিবকে বলে, ভাবীকে মনে হয়না প্রোপোজ করেছিস। এবার তো কর। না বলবিনা। ছোট্ট করে একটা প্রোপোজ করে দেয়।
সাগর লাবিবের হাতে রিশির রিং এর সেইম রিং তুলে দেয়। লাবিব হাটু মুড়ে বসে বলে,
~ প্রোপোজ সুন্দর করে করতে পারতাম। বাট যেগুলো প্রেম বাক্য আসছে সেগুলো তোদের সামনে বলা যাবে না।
সাগর রিশি হা হা করে হেসে দেয়। ফারাহ বেশ লজ্জা পেয়ে যায়।

সাগর ফারার হাত নিয়ে আঙুলে রিং পড়িয়ে বলে,
~ পিঠটা ভীষন চুলকায়। তাড়াতাড়ি আমার বউ হয়ে এসে পিঠ চুলকানোর দায়িত্ব টা নিয়ে নাও তো।
ফারাহ কথা শোনে হাসতে হাসতে বলে,
~ এই তোমার আজ কি হলো? তুমিও কি লজ্জা পাও নাকি? ওতো মধুর মধুর বাক্য রেখে সোজাসাপ্টা চুলকানির কথা বলে, প্রপোজ করছো।

লাবিব উঠে ফারাহকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
~ আমি লজ্জা পাই না গো। আপনি কি রেড়ি শোনার জন্য?
ফারাহ মুখ চেপে বলে, ~ এই না না .. চুপ থাকো প্লিজ।
লাবিব ফারাহ এক টেবিলে আর রিশি সাগর আরেক টেবিলে বসে ডিনার করে নেয়।

সকালে জারার ফোনে তাফিফের ঘুম ভাঙে। তাফিফ কানে ফোন তুলতেই জারা বলে,
~ স্কুলের সামনে আসো। আজ হসপিটালে পরে যাবে। আমি ওয়েট করছি তোমার জন্য।

পার্ট ২৫

রিশি বাসায় এসে সেই শাড়ি আংটি আর খুলেনি। কেন জানি খুলতে ইচ্ছা করছেনা। নিজের সাথে জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছা করছে। খুলতে গিয়েও থেমে গেছে। আয়নায় দাড়িয়ে নিজেকে দেখে নেয়। শাড়িতে একদম বাঙালী মেয়েদের মতো লাগছে। লাল চুলগুলো কালো হলে আরো মানাতো। মনে মনে ঠিক করে নেয় চুল ব্লাক কালার করে ফেলবে। হাতের আংটির দিকে তাকায়। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে। পিংক ডায়মন্ড এর রিং অসম্ভব সুন্দর। যা সাগরের রুচির পরিচয় দেয়। ড্রেস গুলোও অসম্ভব সুন্দর। সব সুন্দরের মাঝে ডুবে যেন নিজেকেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে। দরজায় নক পড়তেই রিশি বলে, কাম ইন।

দরজা খুলে মিশু আসে। মিশু মেয়ের দিকে চোখ পড়তেই অবাক। এ সে কাকে দেখছে? যে মেয়ে কখনো ডিজাইনার ড্রেস ছাড়া পড়েই না সে পড়েছে শাড়ি। মিশুর এমন চাহনিতে রিশি কেপে উঠে। চোখ দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করতে থাকে। চোখ পড়ে হাতের আঙুলে আংটির উপর। হাত ধরে উপরে তুলে দেখে ডায়মন্ড রিং। এই রিং অনেক দামী। এইটা কে দিলো রিশিকে? মিশুতো সব সময় শপিং এ রিশির সাথে থাকে। রোশান দিলে তো তাকে দেখিয়ে দিবে। তাহলে দিলোটা কে? মিশু রিশিকে বলে,
~ বাহ। সুন্দর তো। কে দিলো?

রিশি কি বলবে ভেবে পায় না।
~ চুপ করে আছিস কেন?
~ লাবিব। লাবিব দিয়েছে মম।

~ লাবিব দিবে তোকে? আমার সাথে মিথ্যা বলছিস? লাবিব কেমন তা আমি জানি। একদম বাবার স্বভাব তার। যেদিকে মন যায় সেখান থেকে আর তাকে ফেরানো যায় না। এতো সহজেই নিশ্চয় তোর দিকে ফিরবে না।
~ না মম সত্যি বলছি। আর এই শাড়িটাও ওর ই দেওয়া। তুমি যাওতো মম আমি এখন চেঞ্জ করবো।
তখনি ফোন বেজে উঠে। স্কিনে দেখে সাগরের নাম্বার। রিশি কেটে দিলেও বার বার কল দিয়েই যিচ্ছে। মিশু বলে, কে ফোন করেছে? দেখি?

~ আমার ফ্রেন্ড মম।
~ এখানে আবার তোর কোন ফ্রেন্ড হলো?
~ এখানে না মম। প্যেলেস ফোন দিয়েছে। তোমাকে বলে, ছিলাম না? তুমি ওকে দেখোনি।
~ ওহ। অনেক রাত হয়েছে কথা বলে, ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়।
~ ওকে মম। গুড় নাইট।
~ গুড নাইট।

মিশু যাবার আগে আরেকবার রিশির দিকে তাকায়। সন্দেহজনক তাকানোতে রিশি ঢুক গিলে। মিশু চলে যেতেই দরজা লক করে ফোন রিসিভ করে সামনে ধরে। ভিডিও কলে সাগরের দিকে তাকিয়েই ফ্লোরের দিক তাকায়। রিশির এমন তাকানোতে সাগর হেসে বলে,
~ কিছুক্ষন আগে যখন এক সাথে ছিলাম তখন তো মহারানীর লজ্জা করেনি। এখন কেন এতো লজ্জা পাওয়া হচ্ছে?

~ শার্ট পড়ে আসো প্লিজ।
~ আরে আরে তুমি তাকাবেনাতো তাকাবে কে? ফোন কাটছিলে কেন?
~ মম ছিল।
~ ওহ। ফ্রেশ হয়ে ঘুমাও এখন।
~ হুম।

তাফিফ স্কুলে সামনে এসে দেখে দেখে স্কুল বন্ধ। তখন মনে পড়ে আজ তো স্কুল বন্ধ। তাহলে জারা কোথায়? ফোন বের করে জারাকে ফোন দেয়। জারা ফোন রিসিভ করে বলে,
~ চলে এসেছো?
~ হ্যা। কোথায় তুই? আজ তো স্কুল বন্ধ।

~ হ্যাতো। স্কুলের ডান দিকের রাস্তায় যে রেস্টুরেন্ট টা আছে সেখানে চলে আসো।
তাফিফ রেস্টুরেন্টের ভিতরে গিয়ে দেখে শুধু তার ফুলপরী নয় আরো দুজন ফুলপরী সাথে। ফুলপরীদের সাজ দেখে তাফিফের মাথা ঘুরে যায়। এরা রেস্টুরেন্টে এসেছে নাকি বিয়ে বাড়ি এসেছে তারাই জানে। তাফিফ কে দেখে জারা বসা থেকে উঠে এক দৌড়ে তাফিফের কোলে উঠে পড়ে। তাফিফ কোনমতে সামলে নিয়ে দাড়ায়। জারা টুপ করে গালে চুমু খেয়ে বলে,
~ বেইপি..এতো লেট হলো তুমার ..আমরা সেই কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করছি। রাস্তায় জ্যম ছিলো বুঝি?

পেছন থেকে একজন বলে, উঠে
~ ইটস ওকে ভাইয়া। আমরা আপনার সাথে মিট করতেই এসেছি। নো প্রবলে, ম।
তাফিফ বুঝার ট্রাই করে হচ্ছে টা কি? এই দুটো আবার কে? পিচ্চি পিচ্চি বাচ্চার ন্যকামো দেখে গা জালা করছে। জারা হাত ধরে টেনে এনে বসায়। তারপর তাফিফের কোলে বসে পড়ে। তাফিফ আশেপাশে তাকিয়ে জারাকে আস্তে করে বলে,
~ বেনীওয়ালী এটা রেস্টুরেন্ট। কোল থেকে নাম।

জারা না শুনার ভান করে গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
~ লুক এই হচ্ছে আমার বেইপি ডক্টর তাফিফ খান। আমায় এত্তোগুলা ভালুপাসে। বাড়ি গাড়ি ব্যংক ব্যাল্যান্স এভেইলেভেল। তাফিফের দিকে তাকিয়ে বলে, বেইপি ওরা হচ্ছে আমার ফ্রেন্ড মুমু আর আবিদা।
তাফিফ মাথা নাড়ায়। মুমু আর আবিদা গালে দুহাত রেখে অবাক হোওয়ার অভিনয় করে বলে,
~ ওয়াওওওও .. হাউ সুইট কাপল ..। ইউ আর মেড ফর ইচ আদার।
জারা খুশিতে বাকবাকুম হয়ে যায়। ওদের বলে,
~ কে কি খাবি অর্ডার দে।

দুজনে কাচুমাচু করে বলে,
~ খিদে পায়নি দোস্ত। তোরা খা।
~ আরে খিদে পায়নি মানে? দরকার হলে পটি করে আয়। আমার বেইপি ট্রিট দিবে আজ তোদের।
কথা শুনতে দেরি অর্ডার দিতে দেরি হয়নি। ওয়েটার এসে টেবিল ফুলফিল করে যায়। জারা তাফিফকে জিজ্জাসা করে
~ বেইপি তুমি কি খাবে বলোতো?

তাফিফ মাথা নাড়িয়ে জানায় খাবে না। জারা আইসক্রিম অর্ডার করে। তাফিফকে বলে, আইসক্রিম খাইয়ে দিতে। তাফিফ জারাকে খাইয়ে দিচ্ছে একটু একটু করে। এদিকে মুমু আর আবিদার পুরো টেবিলের খাবার খালি করা শেষ। দুজনে জারার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ তুই খুব লাকিরে দোস্ত। ভাইয়া তোকে কত্তো কেয়ার করে। এত্তো কেয়ারিং বি এফ পাওয়া সত্যি খুব ভাগ্যের ব্যপার।

জারা আরো খুশি হয়ে যায়। ওদের বলে,
~ আইসক্রিম খাবিতো। অর্ডার কর।
ওরা আইসক্রিম ও অর্ডার করে খেয়ে কত্তোগুলো ভালো ভালো কথা বলে, চলে যায়। জারার আনন্দ যেন ধরেইনা আর। তাফিফ একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,
~ ন্যকামো শেষ হয়নি এখনো নাকি আরো বাকি আছে? কি ছিলো এটা?

~ আরে জানোনাতো তোমার সাথে মিট করবে বলে, কতো দিন থেকে বলছে। অবশেষে আজ মিট করালাম।
~ আর খাওয়াটা?

~ তুমিতো জানোনা ওদের বিএফ এত্তো কিপ্টা যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ট্রিট দিবি ভালো কথা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আয় তা নয়তো খাওয়ালো শুধু ফুসকা। আজ দেখিয়ে দিলাম বিএফ হতে হয় বড় মনের।
~ আজকাল তাহলে অন্যের বি এফ এর ফুচকাও খাওয়া হচ্ছে দেখছি। বিল কতো এসেছে দেখছিস?
জারা নিভল। বিল দেখে কেপে কেপে বললো,
~ চার হাজার পাচশ ষাট টাকা।
~ দে টাকা দে।
~ মানে?

~ মানে তোর ফ্রেন্ডের জন্য আমার পকেট থেকে শুধু শুধু টাকা গেলো। এখন আমার টাকা আমাকে দিয়ে দে। দে টাকা দে।
~ কেননন? তুমি আমার বি এফ।
~ বি এফ। হাজবেন্ড তো নয়। বিয়ে করেছিস আমাকে? যা ব্রেকাপ। এখন দে টাকা দে।
তাফিফের চেচামেচিতে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার আসে। জারা কেদে দিবে দিবে ভাব। তাফিফ খেয়াল করে এটা রেস্টুরেন্ট। তাই জারার হাত ধরে বলে,
~ চল তোর আব্বুর কাছ থেকে নিয়ে আমার টাকা দিবি।
~ এই কয়টা টাকাই তো।
~ চুপ। আমার টাকা দিবি।

তাফিফ জারাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে বলে, আমি ওয়েট করছি। যা টাকা নিয়ে আসবি।
জারা বাসায় ঢুকে দেখে জোহান বসে বসে ল্যপটপ এ কাজ করছে। জারা গিয়ে সামনে থেকে টান দিয়ে অন্য সোফায় রেখে বলে, আব্বু পাচ হাজার টাকা দাও।

~ এতোটাকা কেন? তুমি ছোট মানুষ এতো টাকা দিয়ে কি করবে? কিছু লাগলে আম্মুকে বলো যাও।
~ আব্বু আমার টাকাটা লাগবেই। মাত্র পাচ হাজার টাকা। তোমার এতো কোটি টাকার সম্পদ আমারিতো। দাওনা আব্বু মাত্র পাচ হাজার টাকা।

~ তোমার মতলব আমি বুঝি। সব ই আইসক্রিম খাওয়ার জন্য। কোন টাকা দিবোনা যাও।
~ আব্বু তুমি জানোনা এই টাকার জন্য আমি আজ অপমানিতো হয়েছি। কাদছি। দাওনা গো।
জারা শত চেষ্টা করেও রাজি করাতে পারে না। এদিকে তাফিফ ওয়েট করছে। অবশেষে বলে,
~ আচ্ছা টাকা দিতে হবে না। বিয়ে দাও আমায়।

জোহান বিনা পানিতে বিষম খায়। চোখ গুলো বের হয়ে আসার পালা। জারা পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। জোহান জারার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
~ ছিহ মা এসব কি বলে, ? ছোট মা টা আমার।
~ ছোট ছোট করে আমাকে বড়ই হতে দিচ্ছোনা। বিয়ে করবো আমি। বিয়ে দাও। বর রেড়ি।
~ কে?

~ দাড়াও আনছি। জারা এক দৌড়ে তাফিফের কাছে এসে বলে, চলো।
~ দে টাকা দে।
~ কিসের টাকা টাকা করছো? পুরো একটা টাকার গোডাউন ই পেতে যাচ্ছো আর এই কটা টাকার জন্য এমন করছো।
জারা তাফিফের হাত ধরে জোহানের সামনে দাড়িয়ে বলে, আব্বু এইতো বর। কন্যা দান করে দাও।

জোহান আর তাফিফ অবাক। দুজনে চোখা চোখি করছে। পেছন থেকে দোলা হাতে খুন্তি উচিয়ে তেড়ে এসে বলে, তোদের দুই ভাইয়ের মনে এতোই ছিল আগে বুঝি নি। আমাদের দুই মেয়েকে এভাবে হাত করেছিস। দুটোই শয়তানের ঘাড়।
তাফিফ জারার হাত ছেড়ে এক দৌড়ে গাড়ি নিয়ে চলে আসে। আর জারা চিল্লাতে থাকে ~ আমার বর চলে গেলো গো আমার বর। শাশুড়ী জামাইকে তাড়িয়ে দিল। ও বর যেও না গো। তুমার বউকে নিয়ে যাও।

দোলা মুখ চেপে ধরে বলে, চুপ একদম চুপ। একটা কথা বলবিনা। দু বোনের মাথায় শিং গজিয়েছে। ঐ ছেলের সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ তোর। এই বয়সে ভিমরতী ধরেছে তোর। বিয়ে কি খেলনা মনে হয় তোর কাছে? বিয়ে কি বুঝিস তুই? এইটুকুনি মেয়ে সে নাকি বিয়ে করবে।
~ তোমার থেকে লম্বা।

~ চুপ একদম চুপ। ফোন দে। এই ফোন আর তুই নিবি না। ঐ বাড়ির এক ছেলের সাথেও তোর কোন যোগাযোগ যদি থাকে আমার থেকে কেউ খারাপ হবে না। দোলা ফোন নিয়ে চলে যায়। জারা ফ্লোরে বসেই কাদাকাটি শুরু করে দেয়। ফারাহ সব দেখেও নিচে আসে না। লাবিবকে টেক্সট করে ব্যপারটা জানায়।

আজ দুদিন হলো জারাকে পানি পর্যন্ত খাওয়ানো যায়নি। খাওয়াতে গেলেই তাফিফ বলে, কেদে উঠে। কাদতে কাদতে সেন্স হারিয়ে ফেলেছে। স্যালাইন পোস্ট করা হয়েছে। সবার চিন্তার শেষ নেই। এদিকে তাফিফের অবস্থাও খারাপ। অসহায় চোখে শুধু লাবিবের দিকে তাকিয়ে থাকে। লাবিবের নিজেকে এই মুহুর্তে অপরাধী মনে হয়। তার জন্য আজ এতোকিছু। নয়তো সব ঠিক ঠাক থাকতো। জারার কাছে যেতেও পারছেনা। কারন সবাই বেশ রেগে আছে তাদের উপর। বাড়িতেও সবাই জেনে গেছে। বাড়িতে সবার মত থাকলেও জারার বাড়ি থেকে কারো মত নেই। জোহান দোলা ঝামেলায় পড়ে যায়।

জারার জিদ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা আছে। এমন করতে করতে না জানি তাদের মেয়েকে হারাতে হয়। হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে এই খবর তাফিফের কান পর্যন্ত চলে গেছে। রাত গুলো কিভাবে কাটছে সেই যানে। ফারাহ টাইম টু টাইম জারার খবর দিচ্ছে লাবিবকে। মেয়ের এই হাল দেখে জোহান আর থাকতে পারে না। দোলাকে বলে, তানভীর ভাইকে ফোন দাও। দোলা আর অমত করে নি। তানভীর কে ফোন করে জানায় জারা হসপিটালে এডমিটেড।

পার্ট ২৬

তানভীর লাবিবা হসপিটালে এসে জারার অবস্থা দেখে জোহান দোলাকে উল্টে পাল্টে বকতে থাকে ~ কি করেছো মেয়েটার? সুস্থ সবল একটা মেয়েকে এইভাবে অসুস্থ করে ফেলেছো। ওর দিকে একটু খেয়াল রাখা যায় না? খাওয়াতে পারোনি একবার জানালে কি হতো? মরে গেছি আমরা? আমি এলে ঠিকই খেতো। আমার বুড়িমার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। যে মেয়ে এখন লাফিয়ে বেড়ানোর কথা সেই মেয়ে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। আমি দেখতে পারছিনা এটা। আমার সহ্য হচ্ছে না।
দোলা নিচু স্বরে বলে, ভাইয়া ও একটা ভুল করছে শাসন করা প্রয়োজন ছিলো।

~ খুন করে শাসন করছো নাকি? খুব বাবা মা গিরি দেখাচ্ছো এখন। খুব শাসন হচ্ছে। মেয়েটাকে এতো বড় করলো কে শুনি? আমি করেছি, আমার বউপাখি করেছে। কোন শাসন করতে হয়নি। দুষ্টুমী ছেলেমেয়েরা করবেই। আমি বুঝতে পারছিনা ও ভুলটাকি করেছে? তোমাদের এতো প্রবলে, ম কোথায়? আমাদের ছেলের থেকে আর কতো ভালো ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে আমিও দেখে নিবো।

জোহান বলে, এভাবে বলো না ভাইয়া। তাফিফ যথেষ্ট ভালো। কিন্তু ফারাহ আর লাবিবের ব্যপার টাও তো দেখতে হবে। ওরাও তো আমাদের ছেলে মেয়ে। দুই মেয়ে একি বাড়িতে ব্যপারটা কেমন হয়ে যায় যেন।
লাবিবা ফোড়ন কাটে ~ ঘরের মেয়ে ঘরে থাকবে। এতে এতো সমস্যা হচ্ছে কেন সবার? ওদের বিয়ে দেওয়া হোক।
জোহান বলে, বিয়ে কিভাবে দিবো? ওর তো বয়স হয়নি।

তানভীর ~ কোর্ট ম্যারেজ পরে করতে হবে। অথবা যদি এখনি করতে চাও তাহলে চিটিং করতে হবে। আমি চাইনা এটা করা হোক। আপাদত ধর্ম মতে বিয়ে হোক তারপর না হয় আমরা বয়স হয়ে গেলে রেজিস্টি করে নিবো।
সবাই এই প্রস্তাবে রাজি হয়। জারাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিলে বাসায় আনা হয়। শরীর আগের থেকে অনেকটা সেরে আসছে। জারা নিজেও ইচ্ছা করে করে খাওয়া দাওয়া করছে। বিয়ে করবে বলে, কথা। সুন্দরী দেখতে হবে অনেক। নইলে পরে যদি তাফিফ আবার বলে, বসে ~ “তোকে বাদরের মতো লাগছে আমি কোন বাদরকে বিয়ে করবো না।”তখন কি করবে জারা? যার জন্য এতোকিছু করলো সেই যদি ফেলে চলে যায় তখন কি হপ্পে?

এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না। প্রাকৃতিক ভাবে রুপ চর্চাও করছে। এদিকে তাফিফকে সোজা বলে, দেওয়া হয়েছে বিয়ের আগে নো দেখা দেখি। জারাকে না দেখে পাগল প্রায় অবস্থা। এদিকে জারার ফোনটাও জারা নেয়নি যে ভিডিও কলে কথা বলবে। ফারাহ তো নিজের ফোনে লাবিবের সাথে বিজি থাকে। তাফিফ না পেরে ফারাহকে টেক্সট করে বলে, জারার ফোনটা জারার কাছে নিতে। জারা নিজের ফোন নিয়ে তাফিফকে ফোন দেয় কিন্ত ফোনে পায় না। তাফিফ রাতে ঘুমোনোর আগে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ছয়টা কল।

বেনীওয়ালী নামটা দেখে মুচকি হেসে কল দেয়। জারা ঘুমের মধ্যেই কল রিসিভ করে বলে,
~ আমার বাসর গোলাপ দিয়ে সাজিয়েছো কেন? আমি না বলে, ছিলাম ব্লু অর্কিড দিয়ে সাজাতে।
তাফিফ মিন মিন করে বলে,
~ তুই কখন আমাকে অর্কিড ফুলের কথা বললি? আমাদের তো অনেকদিন থেকে কথাই হয়না। আর বাসর সাজালাম কখন? এখোনোতো বিয়েই করলাম না।

~ আম্মু দেখ তোমার জামাই কি বলছে। তিন কবুল বলে, বিয়ে করে এখন বলছে বিয়েই করেনি। আবার বলছে বাসর সাজাই নি। তাহলে আমি আদর খাবো কিভাবে 😭আমার ঠোটে নিশ্বাস বন্ধ।
ফোন কেটে দেয় তাফিফ। এই মেয়ে নিশ্চিত একটা পাগল। কখন কি বলে, সেই জানে। নিশ্চয় ঘুমের ঘরে সপ্ন দেখছে আর উল্টা পাল্টা কথা বলছে। তবে ভালোই হলো। তোর যে ব্লু অর্কিডের বাসর ঘর লাগবে সেটা জেনে গেলাম। তুই অর্কিডের বাসর ঘর ও পাবি আদরও খাবি।

বাল্যবিবাহের কাতারে পড়াতে ঘরোয়া ভাবে ছোট্ট করে আয়োজন করা হয়েছে। পড়ে না হয় বড় করে পার্টি দেওয়া যাবে। দু বাড়িতে হলুদ অনুষ্টান। জারা সকাল থেকে খুব কষ্ট করে চুপ চাপ হয়ে আছে। দোলা সাবধান করে দিয়েছে জারাকে। নতুন কনে দের লাফালাফি করতে হয়না।

চুপ চাপ থাকতে হয় সব সময়। যা মেনে চলার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জারা। হলুদ লেহেংগায় সাজিয়েছে নিজেকে। পার্লার থেকে দুজন মেয়ে এসেছে সাজানোর জন্য। হলুদ ছোট সূর্যমুখী ফুলে সাজানো হয়েছে জারাকে। পুরো অপরুপ লাগছে জারাকে। ঠোটের কোনে মিষ্টি হাসিটা আরো ফুটিয়ে তুলেছে সৌন্দর্যকে। অপলক চোখে মেয়েকে দেখছে দোলা~ জোহান। দোলার চোখের কোনে চিকচিক করছে পানি। তার ছোট্ট পাগলি মেয়েটার নাকি বিয়ে আজ।

সেদিন ও ছোট ছোট পায়ে সারাবাড়ি ঘুরে বেড়িয়েছে। আর এখন কতো বড় হয়ে স্বামীর ঘরে চলে যাওয়ার জন্য হলুদ দিচ্ছে। সংসারের কিবা বুঝবে সে? কিভাবে সামলামে স্বামীর ঘর? পরক্ষনেই লাবিবার ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকবে কথা মনে পড়ে বুকের পাথর নামে তার। মেয়ে যে তার আরেক মেয়ের কাছে যত্মে থাকবে সেই ব্যপারে পূর্ণ ভরসা আছে।

জারাকে হলুদ দিতে লাবিব আর তাফিফ বাদে সবাই এসেছে। লাবিবকে আসতে বলাতেও সে আসেনি। কারন সে বড় মুখ করে বলে, এসেছিল জামাই হয়েই সেই বাড়িতে ডুকবে। ত্যয়বা ভিডিও কলে লাবিবকে জারার হলুদ দেওয়া দেখাচ্ছে। পাশেই তাফিফ বসে দেখছে। একটু আগে তারো হলুদ অনুষ্টান হয়ে গেছে। তার ছোয়ানো হলুদ তার বেনীওয়ালীকে লাগানো হচ্ছে।

লাবিব হালকা হেসে বলে,
~ যেতে ইচ্ছে করছে? যাবি? ব্যবস্থা করে দিতে পারি। আমি না গেলেও সাগর তো গিয়েছে। ও ব্যবস্থা করে দিতে পারবে।
তাফিফ মাথা নাড়িয়ে না করে বলে,
~ এতোদিন যখন অপেক্ষা করেছি আরেকটা রাতও করতে পারবো। সবুরে মেওয়া ফলে। হবু বউ হিসাবে আর দেখতে চাইনা। নিজের বউ হিসেবে দেখতে চাই।

লাবিব তাফিফের পিঠে থাপ্পর দিয়ে বলে,
~ ঠিক ই বলে, ছিস। সবুরে মেওয়া ফলে। এখন একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর। ওদের আসতে অনেক রাত হবে। কাল রাতে তো আর ঘুমাবিনা (চোখ মেরে)।
~ আহহ ভাইয়া। ঘুমোবো। যাও তুমি।

বিয়ের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই জারার মন খারাপ হতে থাকে। মাধুজা, ফারুক, দোলা, জোহানের কাদো কাদো ফেস জারার মনে দাগ কাটতে থাকে। দোলা আড়ালে মুখ লুকিয়ে কাদলেও তা জারার চোখ এরায় না। মাধুজা তো একবার জারাকে বুকে জড়িয়ে কেদেও গেছে কিছুক্ষন। ফারাহ কাজে ব্যস্ত। যেহেতু কাউকে বলা হয়নি সেহেতু কাজ বেশিই করতে হচ্ছে সবাইকে। জারা একা বসে কাদছে আর ফোনে গেইম খেলছে। দুপুর গড়াতেই পার্লারের মেয়ে দুজন চলে এসেছে। তাফিফের দেওয়া ইন্সটাকশন অনুযায়ী জারাকে সাজানো হয়েছে। সন্ধ্যার আগে বর যাত্রী বাড়িতে পৌছে যায়। ছেলে বরন করার সময় ফারাহ দৌড়ে আসে লাবিবকে দেখার জন্য। কাল থেকে একবারো কথা হয়নি তাই আসবে কিনা জানেনা। লাবিবকে না পেয়ে মন খারাপ করে ফেলে ফারাহ। মনে পড়ে যায় লাবিবের সেদিনের কথাটা। লজ্জায় কুকড়ে যায় ফারাহ।

জারাকে নিয়ে আসা হয় বিয়ের আসরে। আসার সময় একবারের জন্যেও উপরে মুখ তুলে তাকায়না। কিন্ত মুগ্ধ চোখে তাফিফ অপলক নয়নে ঠিকই তাকিয়ে থাকে। বেনীওয়ালী বউ সেজেছে তার জন্য। একটু পর বেনীওয়ালী তার বউ হয়ে যাবে ভেবেই বুকে শান্তির আনাগোনা হচ্ছে। সব অপেক্ষার অবসান ঘটবে আজ।

জারা চুপচাপ এসে তাফিফের পাশে বসে পড়ে। এমন ব্যবহারে সবাই একটু আধটু অবাক। সাগর পিছনে দাড়িয়ে জারা আর তাফিফের মাঝখানে মাথা এনে আস্তে করে বলে,
~ বুড়ি তুই এতো ভদ্র কিভাবে হলি? কাল থেকে দেখছি একদম দুষ্টুমি করছিস না কারন কি?
~ বাবুর আম্মুরা দুষ্টুমি করে না।
~ কিহ? তুই বাবুর আম্মু কবে হলি?

~ কয়দিন পরেই হয়ে যাবো। তাফিফ ভাইয়া গিফ্ট করবে আমাকে। তুমি মামা হবে। কনগাচুলেট করো আমাকে।
~ তোর বিয়েতে কনগ্ৰচুলেট করতে এসে না হওয়া বাবুর জন্য করতে বলছিস? এটা তোর পক্ষেই সম্ভব।
তাফিফ কবুল বলার পর জারাকে কবুল বলতে বললে ফটাফট তিন কবুল বলে, দেয়। ত্যয়বা বলে,
~ একটু লজ্জা নিয়ে কবুল বলতে হয়। নয়তো মানুষ নিলজ্জ বলবে।

~ আমি তো শুধু তাফিফ ভাইয়াকেই লজ্জা পাই তোমাদের তো পাইনা। তাহলে মিছি মিছি ড্রামা কেন করতে যাবো?
ত্যয়বা আর কিছু বলে, না। বিশ্বাস নেই এর প্রতি। মান সম্মান যখন তখন ডুবাতে পারে।

অবশেষে বিদায়ের সময় জারার প্রচুর মন খারাপ করে। কিন্তু এক ফোটা চোখের পানিও ফেলে না। কারন তার কান্না দেখলে জোহানও কেদে ফেলবে যা জারা বিন্দুমাত্র সহ্য করতে পারে না। আসার সময় দোলাকে বলে,
~ চল আমরা খালামনির বাসায় চলে যাই। ওখানেই থাকবো সবাই মিলে। আপুও তো চলে যাবে। আমরা সবাই একসাথেই থাকবো।

দোলা কান্নার মাঝে হেসে ফেলে পাগলী মেয়ের কথা শুনে। মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলে, পৌছে ফোন দিস।
জারা মাথা নাড়িয়ে গাড়ীতে উঠে।

বাসর ঘরে ত্যয়বা, রিশি, ফারাহ জারাকে নিয়ে আসে। জারা রুমে এসে পুরো রুম দেখতে থাকে। ফ্লোরে লাভ শেইপের বেলুন দিয়ে সাজানো। অর্কিডে পুরো বেড সাজানো। এত্তো সুন্দর করে সাজিয়েছে জারার জন্য দেখে জারা লাফিয়ে উঠে। বেডের পাশে আইসক্রিম দেখে আরো লাফিয়ে আইসক্রিম বক্স হাতে নেয়। ত্যয়বা বলে, আস্তে লাফা শাড়ি খুলে ফেলবি। আইসক্রিম রাখ আগে তোকে চেঞ্জ করিয়ে দেই। জারা ত্যয়বার সাথে সাথে বাথরুমে চলে যায়।

জারাকে সুন্দর একটা লাল কাতান পড়ানো হয়। মেকাপ তুলে হালকা সাজানো হয়। এতেই পরী পরী লাগছে। ত্যয়বা চোখের কাজল নিয়ে কানের পিছনে লাগিয়ে বলে, কাভি নাজার নাহি লাগ যায়ে মেরে বেহেনকো। বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে লাবিব, সাগর, তাফিফ, তুষার এসেছে। তুষার এসে পাপা ডাকে বলে, ত্যয়বাকে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায়। সাগর লাবিব দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। রিশি ফারাহ তাফিফ দাড়িয়ে আছে। জারা গিয়ে খাটে বসে আইসক্রিম খেতে থাকে। পরিবেশ বড়ই শুনশান।

জারা আইসক্রিম খাওয়ার চপ চপ আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছেনা। লাবিব রাগ দেখিয়ে সাগরকে বলে,
~ পুচি ভাই বোন গুলো বিয়ে করে নিচ্ছে তুই কি করছিস? আর কতো বুড়া হয়ার শখ আছে?
~ ধুর মামা ..। গার্লফ্রেন্ড এখনো আই লাভ ইউ এক্সেপ্ট করলোনা বিয়ে করবো কিভাবে?
~ কেনো করেনি?

~ সামনেইতো আছে। জিজ্জাসা কর তুই।
~ রিশি..কি ব্যপার?
রিশি কি বলবে এখন? কাচুমাচু করতে থাকে। সাগর রিশিক বলে, বিয়ের সব শপিং করে ফেলেছিতো।
লাবিব ~ আমিও তো করে ফেলেছি। ধুর ..আজ থেকে ঘুম হারাম হয়ে গেলো আমার। গার্লফ্রেন্ড থাকতেও না ঘুমিয়ে থাকতে হবে।

ফারার দিকে কঠিন চোখে তাকালে ফারাহ চোখ নামিয়ে ফেলে। লাবিব তাফিফের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আমার পাকাবুডিকে দেখে রাখিস।
আরেকবার ফারার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে আসে। ফারাও পিছু পিছু বেড়িয়ে যায়।
সাগর হেপি ফুলসজ্জা বলে, রিশির হাত ধরে টেনে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

পার্ট ২৭

তাফিফ দরজাটা বন্ধ করে এসে খাটে বসতেই জারা বলে, তুমি টাকা কোথায় রাখ?
~ আলমারিতে। কেন?

জারা আলমারি খুলে খুজে টাকা বের করে আনে। গুনে গুনে পাচ হাজার টাকা তাফিফের হাতে দিয়ে বলে,
~ এই নাও তোমার টাকা। বাকিটা টিপস।
~ আমাকেকি তোর ওয়েটার মনে হয় যে টিপস দিচ্ছিস? আর আমার টাকাই আমাকে দিবি?

~ কোথাই তোমার টাকা তোমাকে দিলাম? আমি আমার জামাইয়ের টাকা দিলাম তোমাকে। আমার জামাইয়ের টাকা মানে আমার টাকা। এখন আমি ইচ্ছামতো খরচ করতে পারবো আমাকে কেউ আটকাতে পারবেনা।
~ ওরে বেনীওয়ালী .. তোর তলে তলে এতো? এর জন্য তুই মরতে গেছিলি?
~ মরতে কোথায় গেলাম? আমি মরলে তোমাকে বিয়ে করতো কে? আমিতো জাস্ট একটু কষ্ট করলাম। কষ্ট করলে কেস্ট মিলে।

তাফিফ একটানে নিজের কাছে এনে চোখে চোখ রেখে বলে, তোর কত টাকা দরকার আমাকে বলতি। আমি তোকে আমার সব দিয়ে দিতাম। তাই বলে, তুই না খেয়ে কেদে কেটে মরতে যাবি? এতোটা ছেলেমানুষী কেন করিস তুই? তুইকি কিছুই বুঝিস না? আজ যদি একটা কিছু হয়ে যেতো তখন কি করতাম আমি?

কোথায় পেতাম তোকে? তুই জানিস তোর হসপিটালের দিন গুলো আমার কিভাবে কেটেছে? লোক লাগিয়ে তোর কেবিনে ক্যামারা লাগিয়ে আমি প্রত্যেকটা মুহুর্ত তোকে দেখেছি। তুই আমাকে ভালোবাসিসনা বেনীওয়ালী। তুই ভালবাসলে একবার আমার কথা চিন্তা করতি।
~ উফ ওমন ঝাঝাচ্ছো কেন? আজ আমাদের বাসর রাত কই আদর খাবো তা নয় ঝাল ঝারছে আমার উপর।
~ তোকে আমি কখোনো আদর করবোনা।
~ সিউর তো?
~ পাক্কা।

~ ওকে। কি আর করার? আমি তাহলে আমার ক্রাস দ্যা মোস্ট ডেসিং বয় রহিমের থেকে আদর নিবো। রহিম..মাই বেইপি..আই এম কামিং টু ইউ।
জারা উঠতে নিলেই তাফিফ টান দিয়ে বসিয়ে দুহাতে গলা চেপে ধরে বলে,
~ উঠবিতো গলা টিপে মেরে ফেলবো।
জারা মুচকি হেসে তাফিফের হাত গলা থেকে সরিয়ে খুব শক্ত করে তাফিফকে জড়িয়ে ধরে। তাফিফ ও জড়িয়ে ধরে।

জারা বলে, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারিনা। সবসময় তোমার পাশে থাকতে ইচ্ছা করে। তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করে। তোমার কথা শুনতে ইচ্ছা করে। তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে ইচ্ছা করে। এই কাজটা না করলে আমি তোমাকে কখনো পেতাম না। পাপা আম্মু যেভাবে চটেছিলো এমনি এমনি কখনো বিয়ে দিতো না। আপু আর ভাইয়ার রেশটা কখনো শেষ হতো না। আপুকে উঠতে বসতে কথা শুনায় সবাই। লাবিব ভাইয়ার প্রতি খুব বিরক্ত।

সবার ধারনা লাবিব ভাইয়া আপুকে বিয়ে করবেনা কখনো। আপুকে নিয়ে মজা করছে শুধু। আমি জেনে বুঝেই এই কাজটা করেছি। পিঠে ব্লাউজের হুকটা খুলে দেখো এখনো পুরোপুরি দাগ গুলো মিশেনি। আম্মু অনেক মেরেছে আমাকে তাই আমিও জিদ করেছিলাম কয়েকদিনের মধ্যেই তোমাকে বিয়ে করবো।
তাফিফ তারাতারি হুক খুলে খেয়াল করে দেখে অনেকগুলো দাগ। দাগের উপর হাত বুলিয়ে বলে,
~ কি দিয়ে মেরেছে?

~ স্কেল দিয়ে।
তাফিফ জারাকে আবার বুকে জড়িয়ে নিয়ে কপালে একটা চুমু একে বলে, আমিও কিন্তু তোকে মারবো বেনীওয়ালী। প্রচুর জালাবো কষ্ট দিবো। তোর যতো জিদ হয় ততো জিদ দেখাবি। কিন্তু কখনো নিজেকে কষ্ট দিয়ে অসুস্থ হবিনা আর আমাকে ছেড়ে যাবিনা। আমি মরে যাবো তাহলে। খুব ভালোবাসি তোকে খুব।

লাবিব রেগে ঝড়ের বেগে হাটছে। ফারাহ লাবিবকে ধরার জন্য একপ্রকার দৌড়াচ্ছেই। লাবিব ছাদে এসে পুল সাইডে দাড়ায়। ফারাহ দৌড়ে এসে লাবিবকে পেছন থেকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে। লাবিব মূর্তর ন্যায় সেভাবেই দাড়িয়ে থাকে। কোন রেসপন্স না পেয়ে ফারাহ পা দুটো উচু করে ফেলে। লাবিবের ঘাড়ে চুমু দিতে গিয়েও চুমু না দিয়ে হালকা একটু খানি লিক করে। লাবিব ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে বলে,
~ ঘায়েল করতে ভালোই জানো দেখছি। কই থেকে শেখা হলো এসব?

~ অভদ্র প্রেমিকের থেকে। লাবিব মুচকি হেসে পুলে পা ডুবিয়ে বসে পড়ে। ফারাও এসে উল্টো ঘুড়ে বসে। চাদের আলোয় চারিদিক ঝকঝক করছে। পুলের নীল পানিতে চাদ সহ তার আলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পীনপীনে নিরবতা চারিদিক ছেয়ে গেছে। ছাদের উত্তর পাশের ফুল বাগান থেকে মিষ্টি স্মেল আসছে। দুজন নিশ্বব্দে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে। তবু কেন জানি ফারার মনে হতে থাকে লাবিবের প্রচন্ড মন খারাপ। মন খারাপ হবারি কথা। ফারার সাথে কথা বলছেনা তার মানে ফারার উপর মন খারাপ। এটা ফারাহ কিছুতেই মানতে পারছেনা।

অনেকক্ষন হয়ে গেছে তবুও মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না। ফারাহ আর চুপ থাকতে পারে না। পিছিয়ে বসে সামনে দিক থেকে লাবিবকে জড়িয়ে ধরে। তবুও লাবিব চুপ। ফারাহ খেলার ছলে শার্টের বোতাম খুলতে থাকে। উপরের তিনটা বোতাম খুলে ফেললেও লাবিব কিছু বলে, না। ফারাহ শব্দ করে লাবিবের বুকে চুমু খায়। কানের কাছে মুখ এনে বলে,
~ চুলকিয়ে দিতে রাজি আছি কিন্তু ঘোমড়া মুখ দেখতে রাজি নই।

~ আমি অপেক্ষা করছি। যেদিন সবাই মেনে নিবে সেদিন ই বিয়ে করবো। আজ রাতটা থাকোনা এখানে আমার সাথে। কেউ ছাদে আসবেনা এখন আর।
~ হুম আছি।

লাবিব ফারার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। ফারাহ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। লাবিব পরম আবেশে চোখ বুজে।
সাগর রিশিকে নিয়ে রিশির রুমে চলে আসে। রিশিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। খুব কাছাকাছি চলে আসে। দুজনের মাঝে এক আঙুল পরিমান জায়গাও থাকে না। রিশি কাচুমাচু করতে গেলে সাগর হাত দুটো আরো শক্ত করে ধরে দেয়ালের সাথে আটকে দেয়। অস্ফুষ্ট স্বরে কাপা গলায় বলে, সাগর কি করছো ছাড়ো।
~ আমার উত্তর টা আমি এখনো পায়নি।

Say, you love me. Say please . I love you more and more rishi. Please say you love me . Please…
রিশির ঠোট খুলতে যেয়েও খুলছে না। বলতে গিয়েও বলছে না। ঠোট দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোচ্ছে না। কাপা ঠোট গুলো আরো কাপছে। এর মধ্যেই ত্যয়বা আসে রিশির খোজে। দরজা খুলা দেখে নক না করেই ডুকে পড়ে। রিশি সাগরকে এই অবস্থায় দেখে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে পড়ে। তার চোখ যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা কোন কিছু। সাগর ত্যয়বাকে দেখে রিশিকে ছেড়ে নিচের দিকে মুখ করে তাকায়। রিশিতো ভয় পেয়ে যায়।

লজ্জায় ত্যয়বার দিকে তাকাতে পারে না। ত্যয়বা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ঠাটিয়ে সাগরের গালে চড় দেয় একটা। আকষিৎ এমন আচরনে সাগর স্তব্দ হয়ে যায়। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না। লজ্জা দুঃখে মাথা নিচু হয়ে যায়। ত্যয়বা ঝাঝারো কন্ঠে বলে,
~ আমার বন্ধু বলে, তুই এই বাড়িতে আসিস সবার সাথে মিশিস। তাই বলে, তুই নিমুক হারামি করবি এই ভাবে?

তুই জানিস ওর সাথে লাবিবের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কয়দিন পর ও তোর বন্ধুর বউ হবে। বন্ধুর বউয়ের সাথে এমন নোংরামি করতে লজ্জা করলোনা তোর? নিলজ্জ বেহায়া কথাকার। বের হ তুই আমার বাড়ি থেকে। এই মুহুর্তে বেরিয়ে যাবি।
সাগর এই অপমান সহ্য না করতে পেরে চলে আসে তখনি ঐ ডাড়ি থেকে।
রিশি কাদো কাদো অবস্থায় ত্যয়বার কাছে গিয়ে বলে,
~ ভাবি আমি সরি।

~ চুপ করো তুমি। তোমার আর আমার ভাইয়ের মধ্যে পার্থক্য কি রইল? বরং আমি বলবো আমার ভাইয়ের থেকে তুমি বেশি নোংরা। ও তো তোমাকে বিয়ে করতে চায়নি। বরং আমরাই বিয়ে ঠিক করেছি। ওর যাকে বিয়ে করতে ইচ্ছা হয়েছে তার সাথেই নোংরামো করেছে। আর তুমি? তুমি নাকি ওকে কতোবছর থেকে ভালোবাসো। ওর জন্য পাগল। বিয়ে করার জন্য নিজ দেশ ছেড়ে এখানে এসে পড়ে আছো। কতো সপ্ন তোমার।

আর এখন কি করছো? অন্য একটা ছেলের সাথে নোংরামো। কয়টা লাগে তোমার? তুমাকে ভালো মনে করেছিলাম। কিন্তু তুমিও দেখি অন্য খারাপ মেয়েদের দলেই পড়ে গেছো। এতো রুপ তোমার? এত্তো অভিনয় করতে জানো তুমি? কি পেয়েছো তুমি? কেন মিশো তুমি সাগরের সাথে?
রিশি আমতা আমতা করে বলে, ভাবী আমি সাগরকে ভালোবাসি।

~ কিহ এতো বড়ো কথা। কয়জনকে ভালোবাসো তুমি? লাবিবকে ভালোবাসি লাবিবকে ভালোবাসি বলে, আমার পুরো মাথা মস্তক খেয়ে ফেলেছিলে। মনে আছে সেই কথা? লাবিবের গল্প না শুনে তুমি একটা দিন ও পার করতে না। সব সময় লাবিবের চিন্তায় ডুবে থাকতে। লাবিবের ছবি দেখে রাত কাটাতে। লাবিবের জন্য এদেশে চলে এসেছো। যেখানে তোমার ড্রিংস বিয়ার হৈ হুল্লাড় করে দিন কাটতো সেখানে তুমি আমাদের মতো নরমাল লাইফ লিড করছো। এতোসব কি মিথ্যা ছিলো? নাটক ছিলো তোমার? কি এমন দেখলে যে তোমাকে লাবিবকে ছেড়ে সাগরের কাছে যেতে হচ্ছে। কি পেয়েছো তুমি সাগরের মাঝে? আমি মানছি লাবিব একটা ভুল করেছে।

কিন্তু আমরা তো তাকে পশ্রয় দেই নি। আমরা মেনে নেইনি তাদের তোমার সাথেই বিয়ে হবে বলে, পাপা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তোমার মম তোমার জন্য বিয়ের অর্ধেক কেনাকাটাও শেষ করেছে। তুমাকে ভাইয়ের বউ বানানোর জন্য আমি লড়াই করে যাচ্ছি আমার ভাইয়ের সাথে। তুমি হয়তো জানো না ফারাহ আপু আমার কতোটা কাছের। কতো বন্ডিং আমাদের। তোমার জন্য সেই সম্পর্ক নষ্ট করেছি আমি। আমাদের দা কুমড়া সম্পর্ক এখন। তোমাকে বউ করে আনার জন্য পাপা মমের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। আর তুমি কি করছো? যার জন্য করি চুরি সেই বলে, চুর।

~ ভাবী আমার কথা শোন।
~ কোন কথা নয়। তোমার উড়া উড়ির খবর আমি সঠিক জায়গায় পৌছে দিচ্ছি।
~ ভাবী তুমি মমকে কিছু বলোনা। ভাবি শোন আমার কথা। একটু বুঝার চেষ্টা করো। ভাবী।

ত্যয়বা মিশুকে গিয়ে সবটা খুলে বললে মিশুর পুরো মাথা নষ্ট হয়ে যায়। খুব ভালো করেই বুঝতে পারে তার মেয়ে আবেগের বসে সাগরের প্রতি ঝুকে পড়ছে। মেয়েকে বুঝানোর আগে সেই ছেলের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে।
পরদিন সকালে ত্যয়বাকে নিয়ে সাগরের অফিসে আসে মিশু। সাগর তাদের দেখে কফির অর্ডার করে। রাতের থাপ্পড়ের হালকা দাগ গালে ভেসে আছে খেয়াল করে ত্যয়বা। মনে মনে অসংখ্য বার সরি বলতে থাকে। তার এটা করা উচিত হয়নি। কারন দোষ রিশিরো ছিলো অনেক। মিশু কফি খেতে খেতে কথা পাতে এবার।

~ রিশি বড্ডো বাচ্চা মানুষ। আমি বুঝতে পারছিনা তুমি কি দেখে আমার মেয়ের পিছে পড়লে। আফটার অল লাবিবের সাথে ওর বিয়ে ঠিক। আমার মেয়ের মাথাটাও খেয়েছো দেখছি। কত চাই তোমার আমার মেয়ের মাথা উগলে দিতে?
মিশুর কথা শুনে সাগর গলা ফাটিয়ে হাসতে থাকে যা দেখে মিশু চটে যায়। তবু পাশে ত্যয়বা আছে বলে, কিছুবলতে পারে না।

ছেলের বউয়ের সামনে ভদ্রতা বজায় রাখাই শ্রেয়। ধমকে বলে,
~ দেখো ছেলে হাসবে না একদম। আমাকে উপহাস করার সাহস দেখাবেনা। আমি তোমার মায়ের বয়সী।
~ মা ই তো হবেন। আই মিন শাশুড়ী মা। শাশুড়ী মা যদি নিজেই উপহাস হতে আসে তাহলে তাকে উপহাস না করে থাকা যায় নাকি? কতো আছে আপনার?
~ কতো চাও তুমি?

~ আপনার মেয়েটাকে চাই। আমার কাছে সব থেকে দামী বস্তু।
~ রিশির আশা তোমাকে ছাড়তে হবে সাগর। ও ছাড়া যা চাইবে তাই পাবে। তুমি চাইলে কেশে দিবো।
~ আপনার হাজবেন্ড থামস মাঝে মাঝে রায়হান রহমান এর থেকে শেয়ার বাই করে। চিনেন তো তাকে। আপনার বিজনেসকে দশ বার খেলার ছলে কিনে নিতে পারে। আমি তার একমাত্র উত্তরাধিকারী সাগর রহমান। আর আমাকে আপনি কেশ দেখাচ্ছেন। বিন্দুমাত্র সম্মানবোধ যদি আপনার থাকে তাহলে নেক্সট এই সাহসটা দেখাবেন না। কোন ভিখারী এসে আমাকে।
ত্যয়বা ~ সাগর। ঠিক করে কথা বল।

~ তুই চুপ থাক আমি তোর সাথে কথা বলছি না। তোর চড়ের দাগটা এখনো আমার গালে দৃশ্যমান। আমি চাইলেই এর যোগ্য জবাব দিতে পারতাম। কিন্তু বন্ধু বলে, কিছু করছিনা। আর শাশুড়ী মা। আপনার মেয়ে আমার জন্যঠিক আছে? ওকে আটকে রাখতে পারবেন না।
মিশু আর এক মুহুর্ত সেখানে থাকে না।

পার্ট ২৮

মিশু বাসায় এসে রাগে কটমট করতে থাকে। রুমের জিনিসপত্র ছুড়ে মারতে থাকে। বিভৎস চিৎকার করে। তার এতো দিনের সব সপ্ন মিথ্যা হয়ে যাবে। এটা যে নিজের বাসা নয় সেটা সে ভুলেই গিয়েছে একদম। এই সব কিছু তার হোওয়ার কথা। নিজের প্ল্যান মাফিক এতোটুকু এগিয়েও এভাবে হেরে যাবে কিছুতেই মানতে পারছেনা। ত্যয়বা দরজার সামনে দাড়িয়ে সব শব্দ চিৎকার শুনতে পাচ্ছে। ভয়ে সে রিতীমত কাপছে।

তার শাশুড়ী এতো বড় অপমান সহ্য না করতে পেরে কোন অঘটন না ঘটিয়ে ফেলে। নিজের ক্ষতি করার মানুষ যে সে নয় তা হারে হারে যানে ত্যয়বা। চিন্তা হচ্ছে সাগর কে নিয়ে। না জানি ওর উপর কি দুর্ভোগ হবে। এদিকে রোশান ও ঢাকার বাইরে। বাড়িতে অন্য কাউকে জানাতে পারছেনা। জানাজানি হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে সব। রিশিকে এ বাড়ির বউ করে আনার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। চিন্তায় মরে যাচ্ছে সে।
রাতে খাবারের পর মিশু রিশিকে নিজের রুমে ডাকে।

রিশি এসে মিশুর সামনে বসে। মিশুর গম্ভীর মুখ দেখে ভয় পায়। বুকে সাহস যুগিয়ে বলে,
~ মম আমাকে ডেকেছিলে। বলো কি বলবে।
মিশু কিছুক্ষন ভেবে এগিয়ে এসে রিশির সামনে বসে একবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মিশুর ভয় দুর হয় যে ওর। মম স্বাভাবিক আছে।

~ শোন মা। আমি তোর মম। অনেক যত্মে আমি তোদের দুই ভাই বোনকে বড় করেছি। অনেক টাকা পয়সা খরচ করে বিলাসিতা পূর্ন জীবন দিয়েছি। অনেক ভালোবাসা দিয়েছি। মম হিসেবে সকল কর্তব্য পালন করেছি। কিন্তু বিনিময়ে তোদের ও তো আমাকে কিছু দেওয়ার থাকে। মম হিসেবে আমারো কিছু প্রাপ্য আছে। এমনকি আমার প্রাপ্য আমি চেয়েছিও তোদের কাছে। তোদের সব ই বলে, ছি।

আমার মম কে কিভাবে খান পরিবার হেনস্তা করেছে। কিভাবে সব কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে। কিভাবে প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। মেয়ে হিসেবে আমি এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার মমের অপমানের বদলা নেওয়ার জন্যে এখানে এসেছিলাম। আস্তে আস্তে তানভীর কে ভালোবেসে ফেলি। মমের কথা প্রায় ভুলেই যাই। তানভীরের সঙ্গে সারাজিবন কাটাতে চাই। অনেক ভালো দীন কাটছিলো আমাদের। কিন্তু এরি মাঝে তানভীরের মা ঐ লাবিবা কে তানভীরের বউ করে আনে। আমি চাইলেও আটকাতে পারি না।

তারপর এক বছর আমার সাথে থেকে আমাকে ছেড়ে চলে আসে। আমার মায়ের প্রাপ্যটা আমি আর ফিরিয়ে নিতে পারিনা। তারপর তোরা বড় হলি। আমার সব কিছু তোদের দুই ভাইবোনের ই। তোদের কে আমি তাই তানভীরের উত্তরাধি করার জন্য এখানে পাঠিয়ে দেই। তোদের বলি তোদের নানু আর মমের অপমানের বদলা নিতে। সাথে রাজকন্যা রাজপুত্র আমার ঘরে আনতে। রোশান আমার কথা মতো ঠিক কাজটা করে প্রমান করে দিয়েছে ও আমার ছেলে। তুমি কবে প্রমান দিবে আমার মেয়ে হোওয়ার?

রিশি ভাবুক হয়ে উঠে মিশুর কথায়। কারন সে যতোদুর জানে রোশান ত্যয়বার লাভ ম্যারেজ হয়েছে। কিন্তু এটা যে তার মমের প্লান ছিলো সে এর কিছুই জানতো না। আর ত্যয়বার মুখে লাবিবের কথা শুনে আর ছবি দেখে আকৃষ্ট হয়েছিলো। এটা মমের প্লান ছিলো। কিন্তু কিভাবে?

~ মম আমি তো আজ জানছি ভাইয়াকে তুমি এখানে পাঠিয়েছো।
~ শুধু ভাইয়াকে নয় তোমাকেও আমিই এখানে এনেছি। যখন দেখলাম তুমি লাবিবের প্রতি উইক। লাবিব কে বিয়ে করে এই সম্পত্তির মালিক হবে তুমি। কিন্তু আমি তো শুনছি তুমি সাগরের প্রতি উইক। তুমি কোনটাকে চুস করবে লাবিব নাকি সাগর?
~ মম আমি সাগরকে চাই।

~ ঠাসস….। কে এই সাগর? কিসের সাগর? তোমার এতো দিন লাবিবের প্রতি ভালোবাসা নিমেষেই উড়ে গেলো? ঐ বেয়াদব টাকে আমি কোনদিন আমার মেয়ে জামাই বলে, মানবো না। কিছুতেই না। আমার এতো দিনের সপ্ন এই প্রোপার্টি পেতে আমি তোমাদের এখানে পাঠিয়েছি‌। আমার সব অপমানের বদলা কি তুমি নিতে চাওনা? মায়ের ভালোবাসার কোন প্রতিদান দিচ্ছো তুমি? আজ ঐ মেয়েটার জন্য তুমি লাবিবকে ছাড়ছো? কি আছে ঐ মেয়ের মধ্যে যা তোমার মাঝে নেই? সব দিক থেকে উধ্বে থাকার সত্যেও তুমি লাবিবকে নিজের দিকে টানতে পারোনা। কত টা অক্ষম তুমি চিন্তা করেছো একবার? তুমাকে মেয়ে বলতে আমার লজ্জা করছে। ছিহহ। তুমি আমার মে ‌‌‌‌য়ে হতেই পারো না। দূর হোও আমার চোখের সামন থেকে।

রিশি গালে হাত রেখে কাদতে কাদতে বেরিয়ে আসে। আজ এই প্রথম মম তার গায়ে হাত তুললো। এতো বকলো। মেয়ে বলে, পরিচয়ে ঘৃনা করলো। ছিহ ও করলো। নিজের অক্ষমতার কারনে নাকি লাবিব কে হারিয়েছে। সত্যিই কি সে অক্ষম? মিশুর কথা গুলো কানে বার বার বাজতে লাগলো। মিশু মুহুর্তেই পাগল হয়ে উঠল। শব্দ করে কেদে উঠলো। মনে মনে আওডাতে লাগলো
~ সব তোর জন্য ফারাহ। সব তোর জন্য। তুই আমার জীবনের অভিশাপ হয়ে এসেছিস‌।

লাবিবের সাথে আমার বিয়ে হোওয়ার কথা। লাবিব আমার। আমার সপ্নে কল্পনায় বাস্তবতায় শুধু লাবিব ছিলো। মাঝখান থেকে তুই এসে আমার সব সপ্ন নষ্ট করে দিলি। কি ক্ষতি করেছিলাম তোর যে আমার এতো বড়ো ক্ষতি করলি? আমার মম আজ তোর জন্য আমার গায়ে হাত তুলেছে। মেয়ে বলে, অশ্বীকার করেছে। সমাজের কাছে হাস্যকর হয়ে উঠেছি আমি। যে বাড়ি নিজের হতো সে বাড়ি নিজের নয় জেনেও পড়ে আছি। তুই লাবিবের জীবনে না এলে সাগর আমার জীবনে আসতো না। আমার অবুঝ মনটাকে দখল করতে পারতো না। আমি তোকে কোনদিন ক্ষমা করবোনা ফারাহ। কোন দিন না।

লাবিব ফারার দিন গুলো ভালোই যাচ্ছিলো। দুষ্টু মিষ্টি প্রেমে মাতোয়ারা দুজনেই। জারা আর বাপের বাড়ি যায় নি। এখানেই সবাইকে নিয়ে আনন্দে হৈ হুল্লোড এ দিন কাটাচ্ছে। ফারাহ মাঝে মাঝে জারার সাথে দেখা করার জন্য আসে। মাঝে মাঝে রাত ও থাকে। বাড়ির সবার সঙ্গে ভালোই সম্পর্ক হয়ে গেছে তার। তানভীর নিজেও অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ত্যয়বা নিজেও কথা বলতে শুরু করেছে। মিশু বুঝে যায় এখানে তার অধিপত্যের ব্যঘাত ঘটতে চলেছে। যে কটা রাত ফারাহ এ বাসায় থাকে সব রাত গুলো সে ছাদে রাত কাটায় লাবিবের সাথে। সারারাত প্রেমালাপ করে কাটে তাদের। আর এসব দেখে রিশি রুমে এসে কাদতে থাকে।

সাগরের সাথে কথা হয়না তার সেদিনের পর। সেদিন মিশুর সাথে সাগরের কথা হোওয়ার পর পর সাগর রিশিকে ফোন দেয়। রিশি ফোন ধরতেই সাগর বলে,
~ তোমার মমের সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু আজ নিজের চোখে দেখলাম তোমার মম কতোটা ডেঞ্জেরাজ কতটা অর্থলোভী কতটা অহংকারী খারাপ মহিলা।

~ স্টপ সাগর। আমার মমের সম্পর্কে একটা উল্টাপাল্টা কথা বলবেনা তুমি। কতোটুকু জানো আমার মমকে? কতোটুকু চিনো আমার মমকে? কি করেছে আমার মম যে এতো নোংরা কথা বলছো?
~ নোংরা মহিলাকে নোংরাই বলা উচিৎ। তোমার মমকে যতটুকু চিনেছি ততটুকুই যথেষ্ট। তোমার মম নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারে। এবংকি তোমাকে মাধ্যমে রাখতে দুবার ভাবে না।

~ মুখ সামলে কথা বলো সাগর।
~ মুখ আমার এখনো সামলেই রেখেছি। তোমার মম আমার কাছে তোমাকে বিক্রি করতে আসছিলো আজ।
~ সাগরররর..।

~ বিনিময়ে আমার পাপার 50% শেয়ার তোমার মমকে দিতে হবে। তোমাকে তোমার মম টাকার গন্ডিতেই রেখেছে। ছিহহহ। এমন মমের মেয়েকে আমি ভালোবেসেছি ভাবতেই ঘৃনা করছে।

~ করতে হবে না তোমাকে ঘৃনা। কে বলে, ছিলো আমাকে ভালোবাসতে? আমি বলে, ছিলাম? আমার মমকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। উনি কখনো অন্যায়ের সাথে আপোস করে নি। নিজের সাথে হোওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। আজো করে যাচ্ছে। আমার মম তার সন্তানদের নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। মম কখনো সন্তানকে এতো নিচে নামায় না যে টাকার সাথে তাকে বিনিময় করবে কখনো। মম মম ই হয়। আমার মম আমাকে অনেক ভালোবাসে। অনেক যত্মে বুকে আগলে রেখেছে। তুমি কি বুঝবে? মম কি তুমি বুঝো? শুনেছিতো তোমার মম ছোট বেলায় তুমাকে ছেড়ে চলে গেছে আরেকটা লোকের হাত ধরে। তুমি কি বুঝবে মম কি জিনিস?

রিশির প্রত্যেকটা কথা সাগরের বুকে গেথে যায়। ভীষন যন্ত্রনা শুরু হয় বুকে। সত্যি ই তো সে কি বুঝবে মম সম্পর্কে? কিন্তু পৃথিবীর সব মম এক না তা বেশ ভালো করেই যানে। এই মুহুর্তে নিজের মম আর রিশির মমের মধ্যে কোন পার্থক্য খুজে পাচ্ছে না সাগর। বাইশ বছর আগে টাকার লোভে ছোট সন্তান কে ফেলে স্বামীকে ফেলে চলে গিয়েছিল তার মম। আর আজ মম হয়ে টাকার লোভে মেয়েকে বিক্রী করতে এসেছে। ছিহ। এসব মায়ের প্রতি ঘৃনা ছাড়া কিছুই আসে না। নিজের সন্তানের থেকে টাকাই এদের কাছে বড়।

ফোন রেখে দেয় সাগর। তার পর থেকে আর কথা হয় না। সাগর চাইলেও রিশিকে ফোন দেয় না। কষ্ট গুলো নিরবে সহ্য করে যায় শুধু। এদিকে রিশিও বিশ্বাস অবিশ্বাসের খেলায় জড়িয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতে থাকে। আশে পাশের মানুষগুলোর ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে পড়ে সে। কি দোষ করেছে সে যার জন্য এমন অবস্থায় থাকতে হবে তাকে? সব কিছুর জন্য রিশি ফারাহকেই দায়ী করে। ফারাহ না থাকলে সব ঠিক ঠাক থাকতো।

রোশান ফিরেছে বাসায়। বাসায় যতোক্ষন থাকে তুষার কোলেই চড়ে থাকে সব সময়। তাই আর তাকে একা পাওয়া ভার। রাতে সবাই ঘুমোলে মিশু রোশানকে টেক্সট করে ~ কথা আছে। আমার রুমে চলে আসো।

রোশান বই পড়ছিলো এতোক্ষন। বই রেখে ঘুমোতে যাবে তখন রোশান খেয়াল করে ত্যয়বা আর তুষার ঘুমিয়ে আছে। তুষার রোশানের পায়ের কাছে পড়ে পা জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে। আর ত্যয়বা বুকের উপর ঘুমোচ্ছে। এই দৃশ্যটি রোশানকে অনেক শান্তি দেয়। সব সময় কাছে না পাওয়ার জন্য যতটুকু সময় কাছে পায় ততোটুকু সময় ছেলে আর বউ চোখে চোখে রাখে। একদম সরতে দেয়না। তুষার তো কুলে উঠে থাকে সবসময়। খাইয়েও দিতে হয়। আবার গোছল ও করিয়ে দিতে হয়। আর ত্যয়িবা তো পাগলামি ছাড়ে না। এখনো নতুন বউয়ের মতো হয়ে থাকে। সব কিছুতেই রোশানকে ভেবে করে।

অনেক ভালোবাসে। এই ভালোবাসা রোশানকে আরো শান্তি দেয়। এখনো মনে হয় ত্যয়বা তার ছোট্ট প্রেমিকাটিই আছে। যাকে দেখলেই নানান রকম বাহানা শুরু হয়ে যায়। মুচকি হাসে রোশান। ত্যয়বার সামনের চুল গুলিতে মুখ ঢাকা পড়েছে। রোশান ফু দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। হাত দিয়ে কানের পেছনে এনে গুজে দেয়। কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,
~ আমার ভালোবাসা। আমার ছেলে। আমার ফেমেলি।

তখনি ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠে। চেক করে দেখে মম তাকে যেতে বলে, ছে। ভাবান্তর হয়ে পড়ে রোশান। এতো রাতে কেন ডাকবে? ইমপোটেন্ট কিছু না হলে তো ডাকবেনা।

ত্যয়বাকে আস্তে করে বুকের উপর থেকে সরিয়ে দেয়। ত্যয়বা নড়ে উঠে শক্ত করে আহার জড়িয়ে ধরে রোশানকে। ঘুমিয়ে গেলে সাবধানে আবার সরিয়ে দেয়। ঠিক করে বালিশে শোয়ায়। উঠে বসে পায়ের কাছ থেকে ছেলেকে কোলে নিয়ে ঠিক করে বালিশে শুইয়ে দেয় যাতে গড়িয়ে ঘুমের মধ্যে ফ্লোরে না পড়ে যায়।
উঠে দাড়িয়ে শার্ট গায়ে দিয়ে মিশুর রুমের দিকে এগোয়।

পার্ট ২৯

রোশান মিশুর রুমে গিয়ে মিশুকে ডাকে। মিশু পাশে বসতে বলে, মিশু ও সামনে ঘুরে বসে। গম্ভীর হয়ে মিশু নিচ দিক তাকিয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করে। রোশান জিজ্জাসা করে ~ Any problem mom?

~ I think তোমার এবার ত্যয়বাকে ডিভোর্স করার সময় চলে এসেছে।
আৎকে উঠে রোশান। মমের মুখ থেকে এই কথা শুনতে হবে ভাবতে পারেনি।
~ Impossible. What you say?
~ ত্যয়বাকে ডিভোর্স করতে বলছি।

~ কখনোই না। আমি এটা পারবোনা। এইটা করার সময় চলে গেছে মম। আমার একটা সন্তান আছে মম। ওর ভবিষৎ নষ্ট করতে পারবোনা। তাছাড়া ত্যয়বাকে আমি ভালোবাসি। আমরা অনেক হেপি আছি মম।

~ তুমাকে পারতে হবে রোশান। আমাদের লক্ষ্যে আমরা পৌছতে পারছিনা। গুটি অন্যদিক উল্টে যাচ্ছে। রিশিকে এখানে সেটেল করতে চাইছিলাম। কিন্তু তোমার বোন অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। ফারাহ নামের মেয়েটাতো লাবিব কে নিয়ে দখল করে আছে। তাও ফেমেলি যতটুকু ফেভারে ছিলো সেটাও হাত থেকেচলে যাচ্ছে। আর যাই হোক জোর করে আটকে রাখা যায় না। এটা আমি আমার জীবন দিয়ে ভালোই বুঝেছি। তাই যদি এই পুরো পোপার্টি পেতে চাও তাহলে ত্যয়বাকে ডিভোর্স দাও। আই মিন ডিভোর্স দেওয়ার নাটক করো। আমি সিউর তুমি যখন ডিভোর্স দিতে চাইবে তখন এই বিয়েতে সবাই রাজি হবে।

এমনকি লাবিব নিজেও ফারাহকে ছেড়ে আসবে। তোমার বোন ও সোজা হবে। ত্যয়বাকে খুব ভালোবাসে ও। তোমাদের সংসার ভাঙাকে কিছুতেই মেনে নিবে না। ও নিজেও লাবিবকে বিয়ে করতে দাড়িয়ে পড়বে।
~ এভাবে পোপার্টি পেতে গেলে আমার সারাজীবনের সুখ চলে যাবে মম‌। ত্যয়বার কাছে আমি সারাজীবনের জন্য অপরাধী হয়ে যাব। আমার প্রতি ওর বিশ্বাস ভেঙে যাবে। আমি আমার ছেলের কাছেও ছোট হয়ে যাবো। তা কখনো হতে পারে না।

~ রাবিস। কিছু পেতে হলে কাঠখড় পোড়াতেই হবে সেটা তুমি ভালো করেই জানো। তুমি ভুলে যেও না আমাদের লক্ষ্য এই পুরো পোপার্টি। তার জন্য ই তুমি তানভীরের মেয়েকে বিয়ে করেছো। এতো দিন থেকে নাটক করে যাচ্ছো। ইমোশোনাল সেন্টিমেন্টে কখনো কেউ নিজের উন্নতি করতে পারে না। আবেগ থেকে বেরিয়ে আসো রোশান। তুমার সামনে অনেক কিছু পাওনা আছে। দু হাত ভরে লুটে নেবার সময় এসে পড়েছে। এই বিশার সম্পত্তি তুমার আর রিশির হবে রোশান। তুমাদের জন্যই আমার এতো লড়াই। তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। নিজের ভালো পাগলেও বুঝে। তুমি কেন বুঝছো না?
~ আমি ডিভোর্স করবোনা মম।
~ নাটক করবে।

~ তুমার কাছে সব নাটক মনে হলেও আমি নাটক করিনা মম। আমি যা করি তা সৎ ভাবেই করি।
~ ভেবে দেখো আরেকবার। আমার এতোদিনের সপ্ন মিশে দিতে চাইছো তুমি। এই পুরো সম্পত্তির জন্য এতোদিনের সব লড়াই ধামাচাপা দিতে চাইছো তুমি।
রোশান কিছু না বলেই চলে আসে মিশুর রুম থেকে।

নিজের রুমে এসে খাটে বালিশ রেখে হেলান দিয়ে ভাবতে থাকে। মাথা পুরো গরম হয়ে যায়। মিশুর কথায় এতো বছরের সংসারে ভাঙন ধরাতে কিছুতেই মন সায় দিচ্ছে না তার। নিজের মমের স্বার্থে নিজের ভালোবাসার কাছে সারা জীবন ছোট হয়ে থাকবে এইটা সে কিছুতেই পারবেনা। এতোদিনে একটা কথা বুঝে গেছে রোশান টাকা পয়সায় জীবনের সব নয়। তাছাড়া ওর তো কম দেয়নি আল্লাহ। ভালোই তো কাটছে দিনকাল। তাহলে এতো কিছু দিয়ে করবে টা কি? মম কেন এতো লোভী? কান দিয়ে ধোয়া বেরোতে থাকে রোশানের। হটাৎ পাশ থেকে ত্যয়বার কেদে ফুপানোর আওয়াজ পায়।

কিছুক্ষন আগে দরজার শব্দে ত্যয়বার ঘুম ভেঙে যায়। পাশে দেখে রোশান নেই। তার মানে রোশান বাইরে গিয়েছে। নিজের ও পানি পিপাসা লাগে। পটে দেখে পানি নেই। তাই পট নিয়ে বাইরে আসে পানি নিতে। রোশানকে মিশুর রুমের দিকে যেতে দেখে। দু একবার পেছন থেকে ডাক দেয়। কিন্তু রোশান শোনতে পায় না। ত্যয়বাও এগোয় মিশুর রুমে দিকে। দরজা ভেজানো দেখে কাছে যেতেই শুনতে পায় মা ছেলের কথপোকথন। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না সে রুমে এসে ঘুমন্ত ছেলেকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেদে দেয়। নিজের মমের একটা কথা মনে হতে থাকে ~ শত্রু কোনদিন মিত্র হতে পারে না। কারন যার মনে একবার শত্রুতা ডুকে যায় তার মন সাময়িক পরিস্কার হলেও কোন না কোন কারনে ঈর্ষা আবারো উকি দেয়।

খুব বড় ভুল করে ফেলেছে ত্যয়বা। নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে নিজেই ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েছে। রোশানের পায়ের শব্দে চুপ হয়ে যায়। তবুও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে।

ত্যয়বা কাদছে বুঝতে পেরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় ত্যয়বাকে। দুহাতে চিবুক স্পর্শ করে মুখ উপর দিকে তুলে জিজ্জাসা করে
~ কি হয়েছে আমার জানটার? আমার জানটা কাদছে কেন? খারাপ সপ্ন দেখেছো?

ত্যয়বা কিছু বলে, না। রোশান জিজ্জাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ত্যয়বা স্বামীকে অবাক চোখে দেখে চোখে চোখ রেখে। একটা মানুষ যার সাথে গত নয় বছরের পরিচয়, আট বছর থেকে সংসার করছে, যার সব কিছু তার জানা চেনা আজ সেই মানুষটাকে অন্যরকম লাগছে। তাকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে। তার নিকৃষ্ট্য লক্ষ্য জানতে পেরে তাকে বিরকক্তিকর লাগছে। তার ছোয়া অসহ্যকর লাগছে। কিন্তু চোখ তো কখনো মিথ্যা বলে, না। এই দু চোখে তো নিজের জন্য ভালবাসা দেখেছিলাম। কখনো লোভের ছায়াও দেখিনি। অথচ তার মন এতো বিষাক্ত। এ যেন কল্পনারো বহুদুর।

রোশান মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। ত্যয়বা কিছু না বলে, হাত সরিয়ে ঘুরে তুষারকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
ত্যয়বা রিশির রুমে গিয়ে দেখে রিশি ফোনে কি যেন ঘাটাঘাটি করছে। ত্যয়বাকে দেখে রিশি বলে,
~ ভাবী বসো।

~ বসতে আসিনি। একটা কথা জিজ্জাসা করতে এসেছি। আশা করি সঠিক উত্তর টা দিবে।
~ বলো ভাবী।
~ লাবিব কে বিয়ে করবে নাকি সাগরকে?
~ লাবিবকে।

~ সাগরকে কেনো নয়?
~ অতন্ত্য বেয়াদব একটা লোক। আমার মমের সম্পর্কে যা তা বলে, ছে।
~ লাবিব যদি তোমাকে বিয়ে না করে?

~ করতেই হবে। আমার সাথে ওর বিয়ে দেবার জন্য তুমি আছো। মম আছে। ভাইয়া আছে।
~ আমি সরি রিশি। এর মধ্যে আমি থাকতে পারলাম না। আমি চাইনা তুমি আমার ভাইয়ের বউ হোও। ফারাহ আপু আমার ভাইয়ের বউ হবে।

ত্যয়বা রেড়ি হয়ে বাইরে বেরোনোর সময় দেখে লাবিবের গাড়ি থেকে ফারাহ আর লাবিব নামছে। ত্যয়বা এগিয়ে গিয়ে ওদের সামনে দাড়ায়। লাবিব জিজ্জাসা করে ~ কোথায় যাচ্ছিস?

ত্যয়বা উত্তর না দিয়ে আচমকা লাবিবকে জড়িয়ে ধরে। লাবিব ও জড়িয়ে ধরে বুঝার চেষ্টা করে হয়েছে টা কি? কিছুক্ষন চুপ থেকে লাবিবকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
~ আই এম সরি। তুই আর ফারাহ ভাবী অনেক সুখী হয়।

ফারাহ খুশি হয়ে ত্যয়বাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
~ আমার রায় বাঘিনী ননদিনীর রাগ তাহলে পড়েছে।
~ রাগ কখনো ছিলো না ভাবী। তোমাকে অনেক ভালোবাসি। শুধু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। সেটাও শুদ্ধ্রে নিলাম। ভেতরে যাও। আমি আসছি।

দুপুরে লাঞ্চ করে সবাই ড্রয়িং রুমে এসে রেষ্ট করছে। এরি মাঝে একজন লইয়ার আসে বাসায়। তানভীর লইয়ারকে চিনতে পেরে সাধরে ওয়েলকাম জানায়। ত্যয়বাও আসে। লইয়ার ত্যয়বাকে দেখেই বলে,
~ মেম আপনার পেপার্স সব রেড়ি।
ত্যয়বা এসে বসে। বাড়ির সবাই সেখানে উপস্থিত। তানভীর জিজ্জাসা করে কিসের পেপার্স রেড়ি করতে দিয়েছিলি?

ত্যয়বা বলে, ডিভোর্স পেপার পাপা। আমি তোমার জামাইকে ডিভোর্স দিচ্ছি।
সবাই অবাক হয়ে যায়। লাবিবা রেগে বলে, ডিভোর্স দিচ্ছিস মানে? খেলা পেয়েছিস এটা যে যখন ইচ্ছা নিজে নিজে বিয়ে করে নিলি আর যখন ইচ্ছা ডিভোর্স দিবি।

~ আমাকে ক্ষমা করো তোমরা। আমি ভুল করেছি। আমি আমার ভুল শুদ্ধ্রে নিতে চাই। তোমাদের অবাধ্য হয়ে যে ভুল করেছি তার মাশুল দিতে চাই।
~ রোশানের মতো ছেলেই হয় না। কেন তুই ওকে ডিভোর্স দিচ্ছিস?

~ হা মম রোশানের মতো ছেলেই হয়না। সত্যিই রোশান খুব ভালো ছেলে। মমের সপ্ন পূরন করতে বিয়ে করেছে আমাকে। নিজের বোনকেও আমার ভাইয়ের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে। এই পুরো সম্পত্তি চাই তার। এখন যখন উদ্দ্যেশ্য পুরন না হচ্ছে তখন আমাকে ডিভোর্স করতে চাইছে। তাই তার আগে আমিই ওকে ডিভোর্স করছি মম পাপা। আমি এখন না দিলে ওই আমাকে দিবে। ও ভেবেছে আমাকে ডিভোর্স দিলে তোমরা সবাই তার পায়ে পড়বে। তার বোনকে এই বাড়ির বউ করবে তারপর সব সম্পত্তি ওদের আন্ডারে চলে যাবে। কিন্তু আমি তা হতে দিবো না।

ওকে জানাতে হবে যে আমাদের লাইফে ওদের কোন প্রয়োজন নেই। কোন লোভী লোকের পরিবারে আমি থাকতে পারবোনা। আমার ছেলেকেও থাকতে দিবো না।
তানভীর মাথায় হাত দিয়ে বসে। যা ভেবেছিলো তাই হতে যাচ্ছে। তার মেয়ের সংসার টাকে আর সে রক্ষা করতে পারলোনা শেষ পর্যন্ত। এটা যেন হোওয়ারই ছিলো।
রোশান নিচে এসে লইয়ার আর পেপার্স দেখে জিজ্জাসা করে
~ কিসের পেপার্স এগুলো?

ত্যয়বা কিছু না বলে, পেপার্সগুলো চেক করে পেন হাতে নেয় সই করার জন্য। সই করার সময় ত্যয়বরার হাত কেপে উঠে বার বার। চোখ ফেটে জল আসতে চায়। বাইরে থেকে সে যতোটা শক্ত হয়ে আছে ভিতর থেকে সে ততোটাই দুর্বল। দাতে দাত চেপে সব গুলো পেপারে সই করে রোশানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
~ সই করো।

~ কিসের পেপার্স এগুলো?
~ ফাস্ট পেপারটা হলো~ আমাদের ছেলে তুষারের নামে তুমি তুমার যাবতীয় প্রোপার্টির ৭০% মালিকানা হুইল করে দিচ্ছো। সেকেন্ড পেপারটা হলো ~ আমার ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক হোওয়া পর্যন্ত আমার কাছে থাকবে। কারন আমি চাইনা আমার ছেলে নিয়ে কোন ভাগাভাগী হোক। এন্ড লাস্ট পেপারটা হলো ~ ডিভোর্স পেপার। আমি তোমাকে ডিভোর্স দিচ্ছি। আমি আর তোমার সাথে থাকতে চাইনা।

~ না এটা তুমি করতে পারো না। আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা।
~ আমিও পারিনি। কিন্তু করতে তো হয়েছেই। তুমি আমার পাপার সম্পত্তি চাও আমাকে আর আমার ছেলেকে নয়।
~ না এসব মিথ্যে। আমি কোন সম্পত্তি চাইনা। আমি তোমাকে আর আমার ছেলেকে চাই।

~ আমি তোমার আর তোমার মমের সব কথা শুনেছি রোশান। আমাকে আর বোঝাতে এসো না। আমি আর আমার ছেলে কেউই তোমার সাথে থাকবোনা। সই করে মম আর বোনকে নিয়ে আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাও।
রোশান এমন আক্রমনে কেদে ফেলে। পেপার্স গুলো ছিড়ে ত্যয়বার পা জড়িয়ে ধরে।

~ ত্যয়বা বিশ্বাস করো আমাকে। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে চাই। তোমার পাপার কিছুই চাইনা আমি। আমি মমের কথায় তোমার কাছে এসেছি ঠিক ই। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছি। আমাদের একটা ছেলে আছে ত্যয়বা। এমনটি করো না। আমি মমের মতো প্রোপার্টি চায় না। আমি শুধু তোমাকে আর তুষারকে নিয়ে সুখে সারাটাজীবন কাটিয়ে দিতে চাই।

রোশানের অনুনয় মিনতিতে ত্যয়বার মন গলেনি একটুও। বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে, উপরে চলে যায় ত্যয়বা। রোশান তানভীরের পায়ে পড়ে এবার। তানভীর রোশানকে আসস্ত করে বলে,
~ আমি দেখছি ব্যপারটা। আপাদতো তুমরা অন্য কোথাও শিফট করো।

উপর থেকে রিশি এর সবটা দেখে। নিজেকে সামলাতে না পেরে কাদতে কাদতে সাদে চলে আসে। এভাবে ভাইয়ের সংসার ভেঙে যাবে সে কল্পনাতেও ভাবেনি। সাদে এসে দেখে ফারাহ একা একা সাদ ঘেষে দাড়িয়ে আছে। রিশির ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিতে থাকে সব এই মেয়েটার জন্য হয়েছে। নয়তো সব ভালোভাবেই চলতো। এই অপয়া মেয়েটা এসে সবার জীবন ছাড়খাড় করে দিয়েছে। রিশির জীবনটাকে বরবাদ করে দিয়েছে। লাবিবকে রিশির থেকে কেডে নিয়েছ। এর প্রতিশোধ সে নিবেই। রাগে হিংসায় রিশি এগিয়ে পেছন থেকে ফারাহকে ধাক্কা দেয়। ফারাহ এক চিৎকার করে ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়।

পার্ট ৩০

ধাক্কা দিয়ে রিশি নিজেই ঘাবরে যায়। কি করলো এটা সে? ভয়ে কাপতে থাকে। লাবিব ছাদে উঠে ফারার কাছেই আসছিল। তার সামনেই রিশি ফারাহকে ধাক্কা দেওয়াতে লাবিব সেখানেই থ খেয়ে দাড়িয়ে থাকে। রিশি নিচে যাবার জন্য পিছু ঘুরতেই দেখে লাবিব দাড়িয়ে। রিশি এক দৌড়ে নিচে নামতে থাকে। পিছু পিছু লাবিব ও দৌড় দেয়। রিশি লাবিবকে এভাবে দৌড়াতে দেখে বাসার সবাই আসে তাদের সাথে।

রিশি ফারাহ কে দেখে এক চিৎকারে হাউমাউ করে কাদতে থাকে। ফারার মাথা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। পাত পা ছেচে গেছে। কংক্রিটের ফ্লোর লাল হয়ে গেছে। ফারাহ নিভু নিভু চোখে রিশির কান্না দেখতে দেখতে চোখ বুঝে। রিশি ফারার মাথা কোলে তুলে নিয়ে কাদতে থাকে আর বলতে থাকে
~ এই ফারাহ আপু উঠো। ফারাহ আপু। চোখ খুলো না। আমি বুঝে তোমাকে ধাক্কা দেই নি। চোখ খুলো প্লিজ। কিচ্ছু হবে না তোমার।

কাপতে কাপতে রিশিও সেখানে সেন্স হারিয়ে ফেলে। লাবিব এসে সোজা ফারাহকে কোলে তুলে নেয়। গাড়িতে বসিয়ে হাসপাতালে রওনা দেয়। বাকিরা অন্য গাড়িতে আসে। লাবিব একবার ফারার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে। দু চোখ দিয়ে অবিরতো পানি ঝরছে যার কারনে চোখে ঝাপসা দেখছে।

গাড়ি ড্রাইভ করতেও ঝামেলা হচ্ছে। নিজেকে খুব হেল্পলেস মনে হচ্ছে লাবিবের। আজ এই প্রথম দিক বেদিক ভুলে গেছে সে। ভালবাসার মানুষটি মরার মতো পড়ে আছে পাশে। ফারার মাথা দিয়ে রক্ত পড়া এখনো বন্ধ হয়নি। লাবিব মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে। আল্লাহ যেন তার মায়া কুমারী কে তার বুকে ফিরিয়ে দেয়। তার বুক যেন খালি না করে। তাহলে যে ওও বাচবে না। সব শেষ হয়ে যাবে সব। তাফিফকে ফোন করে বলে, দেয় ফারার কথা। তাফিফ বলে, তারাতারি আসো আমি ব্যবস্থা করছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

হসপিটালে নিতেই ডাক্তার নার্স এসে ইমাজেন্সিতে নিয়ে চলে যায়। তাফিফ লাবিব কে বলে,
~ ভাইয়া আমি দেখছি। তুমি একটু শক্ত হোও।
~ আমার মায়াকুমারী বাচবে তো?
~ প্রান আছে। আল্লাহ ভরসা।
সরোয়াজ এসে লাবিবকে ধরে নেয় শক্ত করে। তাফিফকে চোখের ইশারায় যেতে বলে, মিম লাবিবাকে বলে, ওদের বাড়িতে খবর দেওয়া উচিত।

লাবিবা তানভীরের দিকে তাকায়। তানভীর লাবিবকে সামলাতে বলে, সাইডে চলে যায় ফারুক কে ফোন করতে।
লাবিবের চোখের পানির বাধ ভেঙেছে আজ। সাথে উপস্থিত সবারও। লাবিব ক্রমাগতো বলছে
~ মম মায়াকুমারীর কিছু হলে আমি বাচবো না। আমি মরে যাবো।
পাগলের মতো করতে থাকে লাবিব। হসপিটালে এমন চিৎকার করাতে হসপিটালের দায়িত্বরত ইমপ্লয়ি বার বার বলছে কান্না কাটি করে পরিবেশ নষ্ট না করতে। ফারার বাবা মা জারার বাবা মাও চলে এসেছে। মাধূজা ফারুক মেয়ের জন্য ওরাও কান্নাকাটি করছে।

তানভীর বড় ডক্টরদের সাথে কথা বলে, আসে। ফারাহকে ইমার্জেন্সি অপারেশন করা হচ্ছে। লাবিবকে পাগল প্রায় দেখে তানভীর লাবিবার বুক থেকে ছেলেকে নিয়ে নিজের বুকে নেয়। মুখ চেপে ধরে চুপ করতে বলতে বলতে সরোয়াজকে ইশারা করে। সরোয়াজ আর তানভীর মিলে লাবিবকে বাইরে নিয়ে এসে বেঞ্চিতে বসায়। সরোয়াজ পানির বোতল কিনে এনে লাবিবের মুখ ধুইয়ে দেয়। জোর করে একটু পানি খাওয়ায় নয়তো যখন তখন সেন্স হারাতে পারে। তানভীর কে লাবিব বলে,
~ পাপা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি আমার মায়াকুমারীকে ছাড়া বাচবোনা। আল্লাহ প্লিজ আমার বুকের ফুলকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও।

আশে পাশের মানুষ জন লাবিবকে দেখে আফসোস করতে থাকে। তানভীর বুকে মুখ চেপে ধরে রাখে। সরোয়াজ মাথা বুলাতে থাকে। কাদতে কাদতে তানভীরের বুকেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে লাবিব।
এদিকে রিশির সেন্স ফিরলে নিজেকে বিছানায় পায়। ফারার কথা মনে পড়তেই চিৎকার করতেই মিশু দৌড়ে আসে। রিশিকে কাপতে দেখে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
~ কি হয়েছে মম কি হয়েছে?

~ মম ফারাহ আপু .. আমি ইচ্ছা করে দেইনি মম। আমি আমি যেনো একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। ঘোরের মধ্যে আমি আপুকে ধাক্কা দিয়েছি। আমি জেনে বুঝে ধাক্কা দেইনি মম। বিশ্বাস করো আমাকে।
~ আমি বিশ্বাস করিতো বেবি। তুমি ভয় পেও না। ফারাহকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুস্থ হয়ে যাবে।
~ আমি যাবো মম।

~ তোমার যাবার দরকার নেই মম। তোমাকে ওখানে কেউ এলাও করবেনা এখন। তুমি কাজটা ঠিক ই করেছিলে। কিন্তু একটা মিসটেকহয়ে গেছে মম।
~ মিসটেক?

~ হ্যা। তুমি ধাক্কা দিয়েছো ঠিক কাজ করেছো। কিন্তু লাবিব তোমাকে দেখে ফেললো তো। সবার অগোচরে কাজ টা করতে পারলেনা?

~ মমমম….। আমাকে কি তুমি কিলার মনে করছো?
~ না সোনা। বাট ফারাহ মরলে তো তোমারি লাভ। তুমার সাথে লাবিবের বিয়ে হতো। এই সাম্রাজ্যের রানী হতে তুমি।
~ ছিহ মম। এইটা কি বলছো তুমি? তুমি একটা মানুষের মৃত্যু কামনা করছো? টাকা পয়সার তোমার কাছে জীবনের থেকে বড় হয়ে গেলো?

~ আমি কিন্তু সেটা বলতে চাইনি বেবি। আমি বলতে চেয়েছিযে মিরাক্কেল হয়ে তোমার আর লাবিবের।
~ আমি কিছু বুঝতে চাইনা। আমি ফারাহ আপুর কাছে যেতে চাই। আপু বেচে আছে কিনা। আল্লাহ তুমি আপুর জীবন ভিক্ষা দাও।

রিশি বিছানা থেকে উঠে পার্স নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। মিশু শত চেষ্টা করেও আটকাতে পারেনা।
তাফিফ এসে জানিয়ে গেছে A+ রক্ত লাগবে। প্রচুর রক্তক্ষরনের ফলে ফারার শরীরে রক্ত কমে গেছে। সবাই চিন্তিতো হয়ে পড়ে। কারন বাড়ির কারো এই গ্ৰপের রক্ত নেই। বাইরের কারো রক্ত নেওয়া রিক্স হয়ে যায়। তবুও খোজাখুজি চলছে। এদিকে ফারার খবর শুনে সাগর আসে হাসপাতালে। রিশির এমন কর্মের কথা শুনে রাগে ফুসতে থাকে। নিজের প্রতি আজ তার নিজের ঘৃনা হচ্ছে।

পৃথিবীর এতো মেয়ে থাকতে এই ডাইনি মায়ের ডাইনি মেয়েটাকেই কেন তাকে ভালোবাসতে হলো কে জানে? ঘৃনা ছাড়া এদের কোন কিছুই প্রাপ্য নয়। রিশি হসপিটালে পৌছে দেখে সবার চোখে জল। রিশি একপলক ভেবে নেয় ফারার অবস্থার কথা। তার মনে হয় ফারাহ আর বেচে নেই। প্রচন্ড ভয়ে কষ্টে অনুতপ্ততায় সে কাদতে থাকে। তাকে দেখে সকলেই নাক ছিটকায়। বেরিয়ে যেতে বলে, ওখান থেকে। পুলিশে দিবে এটিও শুনতে হয় রিশিকে। চোখের পানিকে নাটক বলে, ও শুনতে হয়। কিন্তু তার মনে একটাই চাওয়া ফারাহ যেন বেচে থাকে।

ফারার কিছু হলে সে কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। রিশির চোখ পড়ে সামনে বসা সাগরের ভয়ংকর চোখের দিকে। এতোক্ষন থেকে চোখদুটি রিশিকে খেয়াল করছিলো। রিশির কান্না, অসহায়ত্বতা, ভয়ে কাপা শরীর, ঘাবড়ে যাওয়া মুখ, আর্তনাদ ভরা চোখ সবটা গভীর চোখে খেয়াল করছিলো সাগর। রিশি জল ভরা ঝাপসা চোখে তাকিয়ে থাকে সাগরের দিকে। সাগর বলে, শয়তানের মনে প্রানে আত্মায় আশেপাশে চারদিকে শয়তান ই ঘুর ঘুর করে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তাদের খেল দেখায়।

রিশি অসহায় ভাবে বলে, আমি সত্যিই এটা করতে চাইনি বিশ্বাস করো। আমি এতোটা খারাপ নই।
~ হুম করলাম বিশ্বাস। ঐতো বললাম শয়তানের খেল।

রিশি নিচের দিকে তাকিয়ে কাদতে থাকে।
ডাক্তার এসে বলে, বাল্ড পেয়েছেন কি? ইমাঞ্জেন্সি ব্লাড লাগবে। তারাতাড়ি করুন A+ ব্লাড আমাদের ব্লাড ব্যাংকে থাকলে আমরা দিতামই।

সবার মাথায় হাত এবার। কোথায় পাবে ব্লাড?
রিশি আমতা আমতা করে বলে, আমি দিতে পারি। আমার সেইম গ্ৰপ।
সবাই আটকাতে চাইলে সাগর থামিয়ে দেয়।

~ ব্লাড পেলেই হলো। এক ব্যাগ পেলেই এখন অনেক। ব্লাড দিতে চাইছে আমাদের নেওয়া উচিত তাতে যদি ওর একটু পাপ ক্ষয় হয়। রিশিকে নিয়ে ব্লাড ডোনেট কেবিনে আসে। রিশি সাগরকে বলে, ফোনটা একটু পাওয়া যাবে?
~ তোমার টা কই?
~ মম নিয়ে নিয়েছে।

~ রাবিস। নাও।
রিশি রোশানকে কল দিয়ে বলে,
~ ভাইয়া হসপিটালে আসবি? ফারাহ আপুর ব্লাড লাগবে।
~ তুই কিন্তু এক প্যাকের বেশি দিবিনা। আমি আসছি।
~ ওকে।

সাগরকে ফোনটা দিয়ে দেয়।
সাগর বলে, সেইম ব্লাড?
~ হুম।

লাবিব সেদিন হসপিটাল থেকে এসে আর হসপিটাল মুখী হয়নি। কেবিনে দেওয়ার পর ফারার শরীরে ব্যন্ডেজ দেখে লাবিব চলে আসে ঐখান থেকে। ঐরকম মায়াকুমারীকে সে দেখতে চায়না। তার কষ্ট হয় প্রচুর। কিন্তু সহ্য করতে পারবে না বলে, আর ফারার কাছে যায়নি। এদিকে ফারার অবচেতন মন বার বার লাবিব কেই খোজে। জারাকে জিজ্জাসা করে ~ তোর ভাই আসেনা কেন আমার কাছে? আমাকে কি তার দেখতে ইচ্ছা করেনা? আমাকে কি আর ভালোবাসবে না?

জারা অনেক কিছু বলে, ফারাহকে শান্ত করে রাখে। রিশি বেশ কয়েকদিন ফারার কাছে গিয়ে মাফ চেয়েছে। ফারাহ কিছু বলে, নি। শুধু চুপ চাপ রিশিকে দেখে গেছে। কতো চেঞ্জ একটা মেয়ের মাঝে। সাগর ও দু চোখ ভরে দেখে এই মেয়েটাকে। সাগর রিশিকে বলে, ছেও ~ তুমি চাইলে সব ছেড়ে আমার কাছে চলে আসতে পারো। আমি আর তুমি থাকবো শুধু। তোমার পরিবারের কারো সাথে তুমার সম্পর্ক থাকবেনা। আমি ছাড়া তোমার আপন কেউ থাকবেনা।

কিন্তু এই প্রস্তাব রিশি মানতে পারেনি। পরিবার ছাড়া কিভাবে থাকবে সে? পাপা মম ভাই ভাবী ভাতিজার সাথে সম্পর্ক শেষ করে সাগরের কাছে চলে যাবে? পাপা মমের থেকে সাগর ই তার কাছে বড় হয়ে গেলো? সাগর ই যে সারাজিবন তাকে ধরে রাখতে পারবে তার কি গ্যারান্টি? ইউ এস এ তে বড় হয়েছে সে। তার দেখা অনেক সংসার ভাঙতে গড়তে দেখেছে সে। এগুলো তাদের কাছে নরমাল। সাগর যদি কখনো ছেড়ে দেয় তখন কোথায় যাবে রিশি? তার তো কেউ থাকবেনা আপন বলতে। তাছাড়া সাগরকে কতটুকু চিনে সে? কোন আইডিয়া নেই সাগরের সম্পর্কে।

যতটুকু দেখেছে ততোটুকুই চিনেছে। তাছাড়া যে ব্যক্তি তার মমের সম্পর্কে এতো বাজে বাজে কথা বলতে পারে, মা মেয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে চায়, পরিবার থেকে মেয়েকে আলাদা করতে চায় তাকে কিভাবে বিশ্বাস করবে সে? পুরো একটা দুটানার মধ্যে পড়ে যায় সে।
ভাবতেই সব পাগল পাগল লাগে। ভালোবাসা তার কাছে এখন কঠিনতম বস্তু। না পারছে ভুলতে না পারছে সইতে। একদিকে পরিবার। আরেকদিকে ভালোবাসা।

আর না পাচ্ছে কারো সাপোর্ট। কোনটা বেছে নিবে সে?
আজ ফারার ব্যন্ডেজ খুলছে ডক্টর। দাগ পড়ে গেছে একদম। তবুও শান্তি। ওষুধ দিলেই দাগ চলে যাবে। অনেক হালকা মনে হচ্ছে ফারার। সামনে তাকিয়ে দেখে অনেকেই এসেছে। সবার মুখে হাসি। জারা তো খুশি অনেক। রিশিও এসেছে। পেছনে দাড়িয়ে আছে। ফারাহ চোখের ইশারায় কাছে আসতে বলে,

ফারার কাছে এসে বসে রিশি। হাত দুটো ধরে বলে, আপু ক্ষমা করো আমায়। ফারাহ মুচকি হেসে মাথায় হাত রেখে বলে,
~ ক্ষমা মহৎগুন। অনেক আগেই করেছি আমি। শোনো। সবসময় মনের কথা শুনে চলবে। ব্রেন খাটিয়ে ভাল মন্দ বিচার করে চলবে। অন্যের দারা প্রভাবিতো হবে না।
রিশি মাথা নাড়ায়।
ফারাহ জারার কাছে ফোন চেয়ে লাবিবকে ফোনদেয়।

লাবিব ফোন পেয়ে রিসিভ করে বলে,
~ হুম বুড়ি বল।
~ আমি।
কিছুক্ষন নিরবতা।

~ কেন আসোনা আমার কাছে? ভালোবাসোনা আর?
~ বাসি। অনেক বাসি। তোমার ঐরকম ভয়ংকর রুপ আমি সহ্য করতে পারবোনা।
~ ব্যন্ডেজ খুলে ফেলেছি। এবার তো আসবে।
~ লাবিব মাথা নাড়িয়ে বলে, আসছি।

পার্ট ৩১

লাবিব হসপিটালে আসার সময় সাথে সাগর ও আসে। হসপিটালে ডুকতে নিবে তখন মিশুর সাথে দেখা হয়। মিশু রিশিকে ড্রব করতে হসপিটালে এসেছিল। মিশুকে দেখেই সাগর নাক ছিটকায়। মিশু সাগরের নাক ছিটকানো দেখে বলে,
~ আজকাল শুনছি আমার কাছ থেকে আমার মেয়েকে নাকি কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সাগর চলে যেতে নিয়েও থেমে যায়। দু পা পিছিয়ে মিশুর সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,
~ ষড়যন্ত্র নয়। আসলে রাক্ষুসে মাছের থেকে ছোট নিরিহ মাছ কে বাচানোর চেষ্টা করছি।

রেগে যায় মিশু। চিৎকার করে বলে,
~ চুপ থাক বেয়াদব।
~ ডাইনির আসল রুপ তাহলে বেরিয়ে আসছে।

এক কথায় দু কথায় পুরো জগড়া বেধে যায়। সাগর মিশুকে যাচ্ছেতাই করে অপমান করে। কটু কথাও বলে, রিশি বেরিয়ে এসে দেখে সাগর তার মমের সাথে বেয়াদবি করছে। দৌড়ে এসে মিশুকে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায় রিশি। যাওয়ার সময় বলে, যায়
~ কে খারাপ তা আজ প্রমান হয়ে গেলো। ছিহহ।

সাগর হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে যায়। এমনটা হবে সে বুঝতে পারেনি। রিশি তাকে সত্যি সত্যি ভুল বুঝলো। এবার কি সে রিশিকে হারিয়ে ফেলবে? এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না। দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে হাসপাতালের ভিতরের দিক হাটা দেয় সাগর। লাবিব আগেই চলে গিয়েছে ফারার কাছে।

লাবিব ফারার কেবিনে ডুকতেই একে একে সবাই চলে যায়। কিন্তু বোকা জারার কোন হেলদুল নেই। সে দিব্বি আপুকে জড়িয়ে বসে আছে। লাবিব জারার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ তুই কি বাইরে যাবিনা?

~ আমি থাকি না এখানে আপুর কাছে।
~ হ্যা অবশ্যই। তুই থাক এখানে। এখন তোর আপু আর আমি চুটিয়ে প্রেম করবো। তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি কেমন?
জারা আর কথা না বলে, সুর সুর করে বেরিয়ে যায়। ফারাহ হেসে ফেলে। লাবিব গিয়ে ফারাহ কে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে।

ফারাও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দুজনেই চোখের জল ফেলতে থাকে। লাবিব মুখ তুলে ফারার কপালে গালে নাকে থুতনিতে অজস্র চুমু একে দেয়। ফারার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
~ জানো আমি ভেবেছিলাম আমি আর তোমাকে ফিরে পাবো না। হারিয়ে ফেললাম তোমাকে। শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম আমি।

~ এতো সহজে তো আমি মরছিনা অভদ্র প্রেমিক। আমি মরলে তোমার অভদ্র তা কে সহ্য করবে? এভাবে মেয়েদের মতো কেউ কাদে? লোকে দেখলে তো হাসবে। কান্না বন্ধ করো এবার।
~ লোকের সামনে তো কাদছিনা। মায়াকুমারীর সামনে কাদছি। তুমিতো না হেসে কাদছো।

~ কাদছিনা। তোমাকে দেখার জন্য কতো ছটফট করেছি। তুমি আসোনি আমার সামনে।
~ রিলিস দেক। বাসায় চলো। বিয়ে করবো। তখন বাসায় অফিসে সব সময় আমাকে দেখবে।
সাগর এসে সামনে সোফায় বসে পড়ে। ফারাহ লাবিবকে ছাড়তে চাইলে লাবিব আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সাগরের গুমড়া মুখ দেখে লাবিব জিজ্জাসা করে ~ কিরে কি হলো তোর?

~ কোন ভাগ্যের ফিরে যে বিদেশী মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম আল্লাহ জানে। আমাদের দেশের বাঙালি মেয়েদের বিয়ে করা এর চেয়ে অনেক ভালো।
~ কি হয়েছে বলবিতো।

~ রিশি মানছেনা আমাকে। ভুল বুঝছে।
~ চেষ্টা কর ভুল ভাঙানোর ঠিক হয়ে যাবে।
~ ওর ফোনে একটা ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছিলাম। ফোনটাও নাকি ওই ডাইনিটা নিয়ে নিয়েছে।
~ ধৈর্য ধর। রিশি ভালো মেয়ে।
~ জানি।

থামস কে রোশান খবর দিয়ে নিয়ে এসেছে। থামস এসেই মিশুর সাথে বোঝাপড়া শুরু করেছে।
~ আমি এতো দিন তোমার সব কিছুতে হ্যা তে হা না তে না মিলিয়ে এসেছি। তার মানে এই নয় যে তুমি যা ইচ্ছা তাই করে যাবে। তোমার অতিরিক্ত লোভের কারনে তুমি বার বার আমাকে মানুষের সামনে হেয় করেছো। আমি মেনে নিয়েছি। আমাকে ভালো না বেসেও আমার সাথে সংসার করেছো। কখনো ভালোবাসনি আমাকে। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি তোমার সাথে সংসার করে গেছি। তানভীরের উপর জিদ করে ওর টাকা পয়সার প্রতি লোভ করে ছেলে মেয়ে বিয়ে দিতে চেয়েছো। আমি কিছু বলিনি। ছেলেকে বিয়ে করিয়েছো প্লেন করে। মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়েছো প্লান করে আমি কিচ্ছু বলিনি।

তুমি যদি সম্পত্তি পেয়ে খুশি হোও তাতেই আমি সুখি। এখন তুমার উদ্দ্যেশ্য সফল হচ্ছে না জন্য ছেলের এতো বছরের সংসার ভেঙে দিতে চাইছো। নাতির ভবিষৎটাকে শেষ করে দিতে চাইছো। এবার তুমি তোমার সীমা অতিক্রম করে ফেলেছো মিশু। আমি আমার নাতির ভবিষৎনষ্ট হতে দিবো না। ছেলের সংসার ভাঙতে দিবো না। যে মা ছেলের সংসার ভাঙতে চায় তার নিজের কোন অধিকার নেই সংসার করার।

~ মানে? থামস। কি বলছো তুমি এসব?
~ আমি তোমাকে ডিভোর্স করতে এসেছি। আমি আর তোমার মতো মহিলার সাথে থাকতে চাইনা। এইযে রাখলাম পেপারর্স। সাইন করে দাও। আমি সাইন করে দিয়েছি।

~ না তুমি এটা করতে পারো না কিছুতেই। রোশান তোর পাপাকে বোঝা না। কি আবোল তাবোল বকছে।
রোশান ধিক্কার জানিয়ে বলে, পাপা এতোদিনে একটা সঠিক কাজ করছে। আমি পাপাকে সাপোর্ট করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
মিশু রেগে গিয়ে রোশানের গালে চড়দিয়ে দেয় একটা।

~ কুলাঙ্গার ছেলে। পাপার ভুল সিদ্ধান্তকে সাপোর্ট করছিস। লজ্জা করে না তোর? তোর পাপা মমকে আলাদা করে দিতে?
~ কি করবো বলো? মায়ের লজ্জা না থাকলে ছেলের লজ্জা করবে কেন? আমি থু থু ফেলি তোমার মতো মমের উপর। আজ থেকে ভুলে যাবো আমার কোন মম ছিলো। আই হেট ইউ মিশু থামস। আই হেট ইউ। তোমার মুখ দর্শন ও করতে চাইনা। রোশান চলে গেলে থামস জোর করে মিশুকে দিয়ে সাইন করিয়ে নেয়। মিশু অনেক মিনতি করে কান্নাকাটি করেও আটকাতে পারে না। থামস চলে যায়। যাওয়ার সময় বলে, যায়
~ সময় মতো নোটিশ পেয়ে যাবে।

মিশু ফ্লোরে বসে অঝরে কাদতে থাকে। তার ছেলে আর স্বামী তাকে অশ্বীকার করলো আজ।
রোশান এসে ত্যয়বার পা জড়িয়ে ধরে। ত্যয়বা ছাড়াতে নিলে রোশান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দু চোখে পানি নিয়ে বলে,
~ আমি কি ক্ষমার যোগ্য নয়? এই নয় বছরে কখনো কি তুমি বুঝেছো বা জেনেছো আমি তোমাকে ভালোবাসিনা। কখনো কি আমি তোমাকে অবহেলা করেছি? কখনো কটু কথা বলে, ছি? কখনো কষ্ট দিয়েছি? আমাকে কেন তুমি এভাবে দুরে সরিয়ে রাখো? একটুও কি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা যায় না আমাকে? আমাদের ছেলের ভবিষৎ এর কথা ভেবে অন্তত আমাকে একটা সুযোগ দাও।
~ তুমি কি ছেলের জন্য আমার সাথে থাকতে চাইছো?

~ আই লাভ ইউ জানপাখি। আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি তোমাকে দেখেই ভালোবেসেছিলাম। তোমাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছি। কারো কথায় নয়। কোন কিছুর উপর লোভ করে নয়। প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমার কোন সম্পত্তি চায়না। আমার যা আছে আমি সব তোমায় দিয়ে দিবো। আমার শুধু তোমাকে আর ছেলেকে হলেই চলবে।
ত্যয়বা দুরে দাড়িয়ে থাকা তানভীরের দিকে তাকায়। তানভীর সম্মতি দেয়। ত্যয়বা বলে,
~ আমি ক্ষমা করেছি তোমায়। তবে ভালো লাগছে এটা জেনে যে তোমার মনের খবর আমি নিতে পেরেছি। ভবিষৎ এ সাবধান থাকতে পারবো।

রোশান উঠে ত্যয়বাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
~ তোমার পাশে একটু থাকতে দিও তাতেই চলবে। আমার আর কিছুই লাগবে না।
ত্যয়বা চোখের জল ছেড়ে দেয়। তারপর সে নিজেও রোশানকে জড়িয়ে নেয়। এতোদিনের মান অভিমান গুলো দুজনেই চোখের জলে ভাসাতে থাকে।

আজ ফারাহকে রিলিজ করা হবে। মাধুজা আর ফারুক এসেছে মেয়েকে নিতে। তানভীর, লাবিব, রিশি জারা, তাফিফ, সাগর, লাবিব ও আছে। লাবিব সাগরকে চোখ ইশারা করে যাচ্ছে। সাগর বুঝতে পেরেও চুপ চাপ দাড়িয়ে আছে। রিশির সাথে আলাদা কথা বলতে পারলে ভালো হতো। সুযোগের সন্ধান করছে ও। তানভীর ফারুক কে বলে,
~ ফারুক ভাই। অনেক তো হলো। আমি এবার আমার ঘরের লক্ষী কে ঘরে নিতে চাই।
ফারুক খুশি হলো।

~ এতো আমার ভাগ্য তানভীর। আমার মেয়েটা তোমার পুত্র বধু হবে এর থেকে খুশির আর কিছু নেই আমার জীবনে।
~ এভাবে বলবেন না ভাই। আমি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা দিয়ে দিতে চাইছি। এদের দুজনের মধ্যে আর দুরত্ব রাখতে চাইছি না। দুরত্ব থাকলেই একটার পর একটা ঝামেলা আসতেই থাকবে। তাছাড়া আমার ঘরের লক্ষী এখন অনেকটাই সুস্থ। আমি এবার বিয়ের আয়োজন করতেই পারি।
~ হ্যা হ্যা অবশ্যই। আমিও আর দেরি করতে চাইছি না।

~ পরশু শুক্রবারে তাহলে এংগেইজমেন্ট টা সেরে ফেলি। শনিবার গায়ে হলুদ। রবিবার বিয়ে।
~ এতো তাড়াতাড়ি।
~ সব রেডি আছে ভাই। ও নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি অনুমতির অপেক্ষায় আছি।
~ এতো ভালো খবর। আয়োজন শুরু করা হোক তাহলে। হা হা হা।

দুই বেয়াই কুলোকুলি করে। ওদের কুলোকুলির আডালে লাবিব~ ফারাহ, তাফিফ ~ জারাও কুলোকুলি করে নেয় খুশিতে। আর সাগর রিশির হাত ধরে টেনে বাইরে চলে যায়। রিশি হাত মুচরোতে থাকে বার বার আর বলতে থাকে ~ ছাড়ো। কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? আমি যাবো না তোমার সাথে কোথাও। সাগর কথা না শুনে টেনেই রিশিকে নিয়ে বাইরে চলে আসে। গেইট খুলে গাড়িতে উঠায়। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে হসপিটালের এরিয়া ক্রস করে। একটা নির্জন পার্কে এনে বেঞ্চিতে বসায়। সামনে হাটু মুড়ে বসে হাতদুটো ধরে বলে,
~ রিশি লিসেন টু মি।

~ আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাইনা। ছাড়ো আমাকে।
~ রিশি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। একবার আমাকে বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ।
~ তোমার মতো নোংরা ছেলেকে আমি ভালোবাসিনা।

~ রিশি আমি সরি। সরি ফর এভরিথিং। আমি নিজে গিয়ে তোমার মমের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসবো। তোমাকে তোমার পরিবার থেকে কখনোই তোমাকে আলাদা করবোনা। তুমি আর পাচটা মেয়ের মতোই বিয়ের পর নিজের পরিবারের সাথে সম্পর্ক রাখবে। আমি কোন কিছুতেই তোমাকে আটকাবো না। তোমার যখন ইচ্ছা তোমার মমের কাছে যেতে পারো যখন ইচ্ছা কথা বলতে পারো। আমাকে ভুল বুঝোনা প্লিজ। দুরে সরিয়ে দিও না প্লিজ।

~ তোমার মমের সম্পর্কে এমন কিছু বললে তুমি তার মুখটাই দেখতে না। আমি বলেই তোমাকে এখনো সহ্য করছি। আমি লাবিব আর ফারার বিয়ের অপেক্ষায় আছি। ওদের বিয়েতে এটেন্ড করবো বলে, পরে আছি। বিয়ে শেষ হলে আমি ইউ এস এ ব্যাক করবো। সেখানে আমার বয়ফেন্ডের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি তাকেই বিয়ে করবো।
~ এমন করো না রিশি। আমার কি হবে তাহলে? তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। থাকলে তুমি লাবিবের জন্য পাগল হতে না। লাবিব কে বিয়ে করতে চাইতে না।

~ ইউ এস এর মেয়েদের মনে হয় তুমি চিনো না। সো সেড।
~ মিথ্যা বলছো তুমি।
~ বাই। আই হোপ আমাকে আর তুমি ডিস্টাব করবেনা।

পার্ট ৩২
{বিবাহ পর্ব~ ১}

বিবাহের জন্য একটা রিসোর্ট বুক করা হয়েছে। শুক্রবার জুমমার নামায আদায় করার পর থেকে গেস্ট আসা শুরু হয়েছে। সন্ধ্যায় এংগেইজমেন্ট অনুষ্টান এর আয়োজন করা হয়েছে। ফারাহকে পার্লারে পাঠানো হয়েছে। সাজাতে অনেক সময় লাগবে তাই আগেই পার্লারে পাঠানো হয়েছে। সাথে ত্যয়বা জারা রিশিতো আছেই। ফারাহ যদিও বলে, ছিলো ঘরোয়া ভাবে এংগেইজমেন্ট করার জন্য কিন্তু লাবিব সায় দেইনি। তার কথা বিয়ে একবারি করবে ধুমধাম করে না করলে কি আর চলে? সারাজীবনের একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে এই দিন গুলি। রিসোর্টে ডেকোরেট করছে ওয়েডিং প্লেনার।

তবুও দায়িত্বে থাকা লোকদের যেন দুদন্ড রেস্ট নেওয়ার সময় নেই। সবাই এদিক ওদিক বিজি। ছেলেদের সবার জন্য এক ড্রেস অর্ডার করা হয়েছে। ব্লাক সুট~ কোট~ বুট টাই। মেয়েদের সবার জন্য রেড গাউন। অবশ্য বয়স্ক দের জন্য রেড শাড়ীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কনের জন্য হুয়াইট গাউন উইথ দোপাট্টা। বরের জন্য হুয়াইট সুট কোট বুট। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে আসে। চারিদিক আলোয় আলোয় ভরে যায়। লোকজনের আনা গোনায় ভরে উঠে পুরো রিসোর্ট। লাবিব ও রেডি একদম।

রোশান সাগর তাফিফ লাবিবকে কনগ্ৰচুলেট করে হাগ করে। তানভীর সরোয়াজ জোহান ফারুক এসে লাবিবকে নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভ কামনা জানায়। লাবিবা মিম দোলা মাধুজা এসে আশীর্বাদ করে যায়। অবশেষে শুরু হয়ে যায় এংগেইজমেন্ট সিরিমনি। লাবিব রোশান তাফিফ সাগর ওয়েট করতে থাকে তাদের ব্রাইডের জন্য। স্পিকারে গুরুজনরা লাবিব ফারার নতুন জীবনের জন্য নিজেদের অনুভুতি, দুয়া, আশীর্বাদ সবকিছু ঘোষনা করছেন। অবশেষে লাবিবের অপেক্ষার অবসান ঘটে। ব্রাইড আসার সময় হয়। দিকে দিকে স্মোথ মিউজিক বেজে ওঠে। আলোর প্রতিসরন দ্বিগুন বেড়ে যায়। লাবিবের তৃষ্ণার্ত চোখ মায়াকুমারীকে দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়ে। রিসোর্টে দুইটি রেড় আর একটি হুয়াইট কার ঢুকে। রেড কার থেকে মেয়েরা বেরিয়ে আসে।

সেখানে ত্যয়বা রিশি জারাও আছে। হুয়াইট কারের গেইট খুলে ফ্লোরে পা রাখে ফারাহ। মেয়েরা পেছন থেকে দোপাট্টা উপর দিকে তুলে ধরে। ফারাহ গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা দুরে দাড়িয়ে থাকা লাবিবের দিকে দৃষ্টিপাত করে। দুজনের মুখে ভালোবাসার আভা খেলে যায়। ধীর পায়ে এগুতে থাকে ফারাহ। পেছনে ইয়া বড় দোপাট্টা ধরে রিশি ত্যয়বা জারাও এগুতে থাকে। উপর থেকে ফুলের পাপড়ি ঝরতে থাকে। ফোটোশুট হতে থাকে। ভিডিও এর লোকেরা সামনে সামনে দৌড়ে ভিডিও করতে থাকে।

এদিকে উচ্ছল কয়েকজোড়া চোখ তাদের প্রিয়তমাদের দেখতে থাকে। লাল পরীরা লাল ফুটন্ত ফুল হয়ে যেন ফুটেছে। ফুটন্ত লাল গোলাপ যেমন গোলাপ প্রেমীদের আকৃষ্ট করে ঠিক তেমনি সৌন্দর্য ছড়িয়ে আকৃষ্ট করছে। ফারাহ স্টেজের সামনে আসতেই লাবিব এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দেয়। ফারাহ লাবিবের দিকে তৃপ্তির নজর দিয়ে হাতে হাত রাখে।

লাবিব আলতো করে ধরে উল্টো তালুতে ঠোট স্পর্শ করে। ফারাহ লজ্জায় লাল হয়ে যায়। হাত শক্ত করে ধরে সিড়ির প্রত্যেকটা স্টেপ পার করে লাবিবের পাশে এসে দাড়ায়। ত্যয়বা রিশি জারা দোপাট্টা ফেলে স্টেজে উঠতে নিলে রোশান সাগর তাফিফ হাত এগিয়ে দেয়। ত্যয়বা জারা হাত এগিয়ে দিলেও রিশি হাত দিতে একটু ইতস্তত করে। কিন্তু বাধ্য হয়ে এগিয়ে দেয়।

লাবিবের ন্যায় রোশান সাগর তাফিফ ও তাদের প্রিয়তমার হাতে চুমো দেয়। হাত ধরে স্টেজে তুলে আনে। সবাই একত্র হলে মাধুজা আর লাবিবা ফারাহ আর লাবিবের পাশে শঙ্খ শামুকে আংটি নিয়ে হাজির হয়। লাবিবকে আগে পড়াতে বললে লাবিব হাতে তুলে নেয় রিং। ফারার সামনে হাটু মুড়ে বসে এক হাতে মাউথ স্পিকার আরেক হাতে রিং ফারার দিকে এগিয়ে বলে,

I carry your heart with me, I carry it in my heart
I am never without it anywhere.
I go you go my dear, and whatever is done
By only me is your doing, my darling
I fear no fate for you are my fate,

my sweet i want
No world for beautiful, you are my world my true
And its your are whatever,
a moon has always meant
And whatever a sun will always sing is you

Here is the deepest secret nobody know’s
Here is the root of the root
And the bud of the bud
And the sky of the sky, of a trees called life
Which grows higher’s then
The sout can hope mind as mind can hide
And this is the wonder,

thats kepping the star’s apart
I carry your heart, I carry it in my heart.
I want to spend my hole life with you.
For that, will you marry me? 🍁
ফারাহ মাথা ঝাকিয়ে উত্তর দেয়
~ Yes I will do.

লাবিব ফারার অনামিকা আঙুলে রিং পড়িয়ে রিংয়ের উপর ছোট্ট করে চুমু দেয়। লাবিব উঠে দাড়ালে ফারাও লাবিবকে রিং পরায়। লাবিবা এসে ছেলের আর ছেলের বউ এর কপালে চুমু দেয়। পুরো রিসোর্টের হুয়াইট লাইট গুলো অফ হয়ে রেড় আর ব্লু লাইট গুলো জলে উঠে। সফটলি মিউজিক স্টার্ট হয়। লাবিব ফারাহ পায়ে পা মিলিয়ে ডান্স করতে থাকে। অনেকগুলো কাপল ডান্স ফ্লোরে নেমে পড়ে। রোশান~ ত্যয়বা, তাফিফ~ জারাকে ডান্স ফ্লোরে দেখে সাগর আর দাড়িয়ে থাকতে পারে না।

রিশির সামনে গিয়ে হাত এগিয়ে দেয়। রিশি অন্যদিক মুখ ফিরিয়ে নিলে সাগর রিশির হাত ধরে জোর করেই ডান্স ফ্লোরে এনে দাড় করায়। রিশিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ডান্স করতে থাকে। রিশি উপায় না পেয়ে সাগরের সাথে পা মেলাতে থাকে। ডান্স ফ্লোর ফুলফিল হলে রোমান্টিক সং দেওয়া হয়।
সবাই সেই সং এই ডান্স করতে থাকে।

🍁Not sure of you know this
but when we frist met
I got so nourvous, I couldn’t speak
In that very moment, I found one and
my life had found it’s missing piece
So as long as I live, I will love you
Will have and hold you
You look so beautiful in white
And from now till my very last breath
This day I will cherish
You look so beautiful in white
…………… Tonight

ডান্স শেষে লাবিব ফারাহকে কেক কাটতে বলা হয়। দুজনে মিলে তাদের নতুন জীবনের শুরু কেক কেটে আরম্ভ করে। একে একে সবাইকে খাওয়ানো হয়। তারপর কিছু ফটোশুট করা হয়। সব শেষে গেস্টদের খাবারের আয়োজন করা হয়।
এংগেইজমেন্ট অনুষ্টান শেষ হয়েছে ১১ টার মধ্যেই। সবাই রিসোর্টেই থাকবে এই তিনদিন। ছাদে বসে না ঘুমিয়ে আকাশে তারা গুনছে লাবিব। পাশে বসে সাগর বোতল খালি করতে লেগে পড়েছে।

তাফিফ দোলনায় শুয়ে বিভোরে ঘুমোচ্ছে। মাঝে মাঝে নিজের শরীরে থাপ্পর দিয়ে মশাও মারছে। রোশান আসতে আসতে বলে,
~ তোমার কার রেডি শালাবাবু। কিন্তু দুঃখ জনক ব্যপার হচ্ছে তোমার মায়াকুমারী বিভোরে ঘুমোচ্ছে।
লাবিব বিরবির করতে বলে,
~ আমি এখানে না ঘুমিয়ে বসে আছি আর মহারানী সেদিকে ঘুমোচ্ছে। ঘুমের দফারফা হয়ে যাক। কল দিতে হবে।

ফোন হাতে নিতেই দেখে জারা ফোন করেছে। রিসিভ করে কানে ধরতে জারা বিভৎস চিৎকার শুনতে পায়।
~ ভাইয়া….আমার ২ নাম্বার আইসক্রিম ফ্যক্টরি হারিয়ে গিয়েছে। তুমি এখনি পুলিশকে ফোন দাও। লাস্ট বার তাকে খাওয়ার সময় দেখা গিয়েছে।
~ চুপ থাক তুই। তোর আপুকে ঘুম থেকে তুলে ছাদে নিয়ে আয়। তোর ফ্যক্টরি এখানে।

রোশান শোয়ার জন্য চলে যায়। সাগর লাবিবকে বলে,
~ শালা আর দুইটা রাত ই তো ঘুমাবে মেয়েটা। এর পর তো আর তুই ঘুমাতে দিবি না। একটুও কি মায়া হয়না তোর?
~ চুপ থাক। বত্রিশ বছর তো ঘুমাইছেই। আর কতো ঘুমাবো? সাধারন মেয়েদের থেকে বেশিই ঘুমিয়েছে।
সাগর চুপ থেকে বলে, দোস্ত আমিও নির্ঘুম রাত কাটাতে চাই। রিশি ডারলিং এর সাথে। শালার প্রেম ..।

সাগর দোলতে দোলতে ছাদ থেকে নেমে আসে। রিশির রুমে সামনে দাড়িয়ে দরজায় নক করে। রিশি ঘুমো চোখে ডোর খুলতেই সাগরকে দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলে। সাগরের লাল চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে ড্রিংস করেছে। রিশিকে ঠেলে রুমে ডুকে পড়ে সাগর। বিছানায় বসে ডোর লক করতে বলে, রিশি ভয় পেয়ে যায়।

ডোর লক না করেই ভেজিয়ে দিয়ে সাগরের কাছে এসে দাড়ায়। সাগর দু হাত ধরে বসিয়ে দেয় রিশিকে। নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ রিশি তুমি আমাকে ভালোনাই বাসতে পারো। কিন্তু আমি তুমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি জানিনা আমি কেন তুমাকে ভালোবাসি। আমি খুজে পাইনা তোমার মধ্যে কোন স্পেশাল কিছু যা দিয়ে আমি আকৃষ্ট হতে পারি।

তোমার থেকে অনেক অনেক বেটার মেয়ে আমার জন্য অপেক্ষারতো। অথচ আমার তাদের দিকে কোন ইন্টারেস্ট নেই। সব ইন্টারেস্ট তুমার মাঝে এসে জমেছে। আমরা ভাবনা কল্পনা বাস্তবতা সমস্তটা তুমি দখল করে নিয়েছো। আমি হয়তো তুমাকে বুঝাতে পারছিনা না নাকি তুমিই বুঝতে চাইছোনা আমি সেটাও জানিনা। আমি খারাপ ছেলে নই রিশি টাস্ট মি। তোমার মমের সব কথাই মিথ্যা ছিলো।

~ তুমি আবার আমার মমকে দোষারোপ করছো?
~ আমি সত্যি বলছি।
~ আচ্ছা ঠিক আছে। মানলাম আমিই খারাপ। আমি তোমার মমের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো। তবুও আমাকে ফিরিও না।

~ সাগর তুমি জানো আমার পাপা আমার মমকে ডিভোর্স করেছে। আমার ভাই আমার মমকে অশ্বীকার
করেছে। এখন আমি ছাড়া আমার মমের কেউ নেই। এ সব কিছু আমার জন্য হয়েছে। আমি না থাকলে আমার মমের এতোটা বিপদ হতো না। শুধুমাত্র আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্যই এতো কিছু ঘটে গেছে। মম তার ফ্রেন্ডের ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবে। আমরা হয়তো মানডেতে চলে যাবো।
~ তো আমি কি করতে পারি?

~ তোমার সাথে আমার মম আমাকে কিছুতেই বিয়ে দিবে না। কারন তুমি প্রচন্ড অসভ্যতামি করেছো আমার মমের সাথে। আমার মমকে অপমান করেছো অপবাদ দিয়েছো। তাই আমি বলবো তুমার আমাকে ভুলে যাওয়া উচিৎ। এসব আবেগকে যতো প্রশ্রয় দিবে ততো মাথায় চড়ে বসবে।
রিশির ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে রিশি লেখা দেখে সাগর ফোনটা তুলে নেয় রিশি নেওয়ার আগেই। রিসিভ করে লাউড দেয়।
ওপাশ থেকে ঝাঝালো কন্ঠ ভেসে আসে।

~ তুমি যে ঘুমোও নি তা আমি ভালো করেই জানি। রিচার্ড তোমাকে বার বার টেক্সট করছে আর তুমি রিপ্লাই দিচ্ছোনা।
রিশি একবার সাগরের দিকে তাকায়। মিশুকে বলে,
~ মম আমি রিপ্লাই দিবোনা। ঘুমিয়ে পড়েছি বলে, দাও।

~ তুমিযে কেন এমন করছো আমি বুঝতে পারছিনা। এতো মর্ডান হয়ে তুমি রিচার্ডের সাথে ফ্রি হতে কেন পারছোনা? ওকেই কিন্তু তোমার বিয়ে করতে হবে মনে রেখো।
~ মম আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো। এখন রাখছি। গুড নাইট।

মিশু ফোন কাটতেই সাগর বলে,
~ নিজের ফোন মমকে দিয়ে মমের ফোন নিয়ে আসতে হয়েছে তাইনা? উড বি টেক্সট করছে। দেখতে তো হচ্ছে কেমন টেক্সট করে। রিপ্লাই কেন দাওনা।

রিশি আটকাতে নেয় সাগরকে। না দেখার জন্য রিকুয়েস্ট করে। কিন্তু সাগরের সাথে পেরে উঠে না। সাগর দেখে সব টৈক্সট আনসিন করা। টেক্সটের ধরন দেখে সাগরের মাথা গরম হয়ে যায়। সব মেসেজ এডাল্ট। এক ডিলে ফোন ভেঙে ফেলে সাগর। রাগে ফুসতে ফুসতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কেদে ফেলে রিশি।

পার্ট ৩৩

{বিবাহ পর্ব~ ২}

ফারাহ আর জারা ছাদে আসে। জারা এক দৌড়ে তাফিফের কাছে চলে যায়। তাফিফের মাথা তুলে কোলে শুইয়ে দেয়। ঘুমন্ত মুখে হাত বুলিয়ে কপালে চুমু একে দেয়। তা দেখে লাবিব হেসে ফেলে। ফারাহ ঘুমু ঘুমু চোখে ডুলতে ডুলতে লাবিবের পাশে দাড়ায়। লাবিব একটানে কোলে ফেলে দেয়। ফারাহ চমকে উঠে শক্ত করে ধরে লাবিবকে। লাবিব ফারাহকে কোলে নিয়ে ছাদ থেকে নেমে বাইরে এসে গাড়িতে বসায় ফারাহকে। ফারাহ অবাক হয়ে বলে, লং ড্রাইভ?

লাবিব মুচকি হেসে সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। শহরের কোলাহলপূর্ন রাস্তা ছেড়ে নির্জন রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলতে থাকে। জানালা খুলে দেওয়ার জন্য বাতাসে ফারার চুল এলোমেলো হতে থাকে। আবছা আলোয় মায়াবী পরিকে আরো মায়াবী লাগে। বুকের এক পাশে হাত রাখে লাবিব। এই মায়াবী মায়াকুমারীটা সারাটা জীবন জুড়ে তার এই বুকে বিরাজ করবে।

হাত ধরে টেনে এনে ফারার মাথা বুকে চেপে ধরে। ফারাহ কমফোর্ট ভাবে বসার জন্য আরো চেপে সুন্দর করে লাবিবকে জড়িয়ে বসে। ফারাহ মিউজিক অফ করে দেয়। গাড়ির শো শো আওয়াজ আর বাইরের ঝি ঝি পোকার গুনগুনানিতে অদ্ভুত ভালোলাগা ছেয়ে যায়। একে অপরকে জড়িয়ে রাখা আর মাঝে মাঝে মিষ্টি আলাপনের মধ্যে দিয়ে সারারাত লং ড্রাইভ ইনজয় করে দুজনাতে। ভোরে রিসোর্টে চলে আসে। ফারাহ লাবিব এসেই ঘুমিয়ে পড়ে। ক্লান্তি চেপে বসে শরীরে।
বেলা বারোটার দিকে মিশু এসে উপস্থিত হয় রিসোর্টে।

মেয়েকে ফোনে না পেয়ে চলে এসেছে। এদিকে ফোন ভেঙে ফেলেছে শুনে মিশুর মাথায় আগুন। তার এতো দামী ফোনটা ভেঙে দিলো? রেগে গেলেও রাগতে পারছেনা। মেয়েইতো ভেঙেছে। বিয়ের আয়োজন দেখে গা জ্বালা করছে। এই আয়োজনে আজ তার মেয়ের বিয়ে হোওয়ার কথা ছিলো। মানতে পারছেনা কিছুতেই। কিন্তু করার ও কিছু নেই। দুপুর ২ টাই ফারাহ ঘুম থেকে উঠেছে। একটু খেয়েই তাকে সাজানো শুরু হয়। পার্লারের মেয়েরা তাকে সাজাতে থাকে।

হলুদ কলাপাতা শাড়িতে, হলুদ হিযআপে আবৃত করা হয়। ফুলের গহনায় সাজানো হয়। হালকা মেকাবে হলুদ সাজে অনেক সুন্দর লাগে। সব মেয়েরা গোলাপি শাড়ি পরেছে আর ছেলেরা নীল পাঞ্জাবী। ফারাহকে স্টেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সবাই মিলে একে একে হলুদ দিতে থাকে। ফারাহ লাবিবকে হলুদ লাগানো শেষ হলে সবাই এক জন আরেকজন কে হলুদ লাগাতে থাকে। রোশান ত্যয়বাকে হলুদ লাগিয়ে কানে কানে বলে,
~ আমার তো আবার বিয়ে করতে ইচ্ছা করছে। চলো করি।

ত্যয়বা চোখ রাঙিয়ে কনুই দিয়ে পেটে গুতো দেয়। রোশান চুপহয়ে যায়। জারা তাফিফ হলুদ নিয়ে রিতীমত ডিলা ডিলি শুরু করে। সাগর হলুদ নিয়ে রিশির গালে মাখিয়ে দেয়। সরে যায় রিশি। আর সাগরের সামনে আসে না। সবশেষে শুরু হয় ডিজে পার্টি। সবাই মিলে ডিজে ডান্স করে। সবাই অনেক ক্লান্ত তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। লাবিব ফারাহকে ডাকতে গেলে ফারাহ জোর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। আজকের রাতটা সে ঘুমোতে চায়। লাবিব গাল ফুলিয়ে বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল থেকেই সবার ব্যস্ত সময় কটাছে। শুধু ব্যস্ততা নেই কনের। বসে বসে সবার কাজ কর্ম দেখতে হচ্ছে তাকে। ভালো লাগে না তার। তাই লাবিবকে ফোন দেয়। ফোন কানে নিয়ে ছাদে চলে যায়। দোলনায় বসে বসে প্রেমালাপে মত্ত হয়ে থাকে। এভাবে সকাল গড়িয়ে দুপুর আসে। দুপুরে ফারাহকে সাজানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সাজগোজ শেষ হতেই সন্ধ্যা হয়ে যায়।

এদিকে ফারাহকে বউ সাজে দেখার জন্য মরে যাই যাই অবস্থা লাবিবের। ফারাও মনে মনে শেরোয়ানীতে লাবিবকে কল্পনায় ব্যস্ত। ওমন সুদর্শন একজন পুরুষ তার স্বামী হতে যাচ্ছে ভেবেই একা একা লজ্জা পাচ্ছে ফারাহ। রিশি সেজে গুজে যখন বিয়ের মঞ্চে আসবে তখন খেয়াল করে মিশু এখনো রেড়ি হয়নি।
~ একি মম এখনো রেড়ি হোওনি যে?
~ যাবো না তাই।
~ কিন্তু কেনো মম?

~ আমার সপ্ন ছিলো এইভাবে তোমার সাথে লাবিবের বিয়ে হবে। কিন্তু দেখো আজ বিয়েও হচ্ছে লাবিবের ই হচ্ছে কিন্তু অন্য একটা মেয়ের সাথে। এই বিয়েতে যাওয়া মানে নিজেই নিজেকে অপমান করা।
~ ভালো কিছু সপ্ন থাকলে আল্লাহ তাতে রহমত করে। তোমার সব সপ্ন ই কুসপ্ন মম তাই পূরন হয় না। শেষমেষ ঠিক ই ঠকে যাও তুমি।
~ রিশি।

~ হ্যা মম। কার সাথে কার বিয়ে হবে আল্লাহ নিজে ঠিক করেন। যে যার পাজরে তৈরী সে তারই হবে। এতে তোমার আমার কিছুই করার নেই।
~ চাইলে সব ই হয়।

~ ভুল মম। চাইলে সব কিছু হয়না। তুমি তো চেয়েছিলে পেয়েছো কি? তোমার মম মানে আমার নানুর সাথে লাবিবের দাদুর বিয়ে হয়নি। লাবিবের বাবার সাথে তোমার বিয়ে হয়নি। লাবিবের সাথে আমার বিয়ে হয়নি। তার মানে তো এটা না যে তোমাকে শত্রুতা করতে হবে।
~ আমি শত্রুতা করছিনা রিশি।

~ আমি জানি মম। তুমি লোভ করছো। আমার পাপা আর ভাইয়া এমনি এমনি তোমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেইনি। তুমি তাদের ক্ষতি করেছো তাই ওরা তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তুমিযে আমার ভালো চাও তাতেও তো আমার সন্দেহ হয়।
~ রিশি আমি তোমার মম।

~ জানি মম। তারজন্যই নিজের মনকে বুঝ দিয়ে রেখেছি। কোনদিন আমাকে ঠকিওনা মম।
রিশি মিশুকে জড়িয়ে ধরে। মিশুও রিশিকে জড়িয়ে ধরে।

বিয়ের মঞ্চে লাবিব এসে বসে আছে। ফারাহকে আনতে গিয়েছে জারা আর ত্যয়বা। লাবিবকে দেখে সবাই মুগ্ধ। লাল খয়েরি শেরওয়ানীতে খুব সুন্দর লাগছে। রিশি ত্যয়বা জারা ফারাহকে ধরে নিয়ে আসছে। ফারাহকে লাল খয়ারি লেহেংগায় দারুন মানিয়েছে। গায়ে সোনার গহনায় আরো যেন হাইলাইট করছে। মায়াবী পরীকে আরো মায়াবী লাগছে। লাবিব তার মায়াকুমারীকে দেখে নিজের চোখ গুলো স্বার্থক করে। রিশিকেও অপরুপ লাগছে। সবুজ রংয়ের লেহেংগায় সবুজ পরী লাগছে। স্ট্রেট সামনের চুলগুলো বার বার মুখের উপর এসে পড়াতে যেন আরো সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে।

কিন্তু সাগরের বুকে এই সৌন্দর্য ব্যথার জানান দিচ্ছে। আজি সে শেষ বারের মতো তার জানটাকে দেখতে পাবে ভেবেই বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গিয়েছে। কি করে পারবে তার কলিজাটাকে না দেখে থাকতে? যখন মনে হবে তার কলিজাটা অন্যের সাথে দিব্বি সংসার করছে তখন কি করবে সে? এতো না মরেও মৃতু্্য যন্ত্রনা সহ্য কিভাবে করবে সে? সবাই সুখী হতে পারে কিন্তু একমাত্র সাগর কেন সুখী হতে পারে না? সাগর যাকে আপন করতে চায় তারাই কেন সাগরকে ধোকা দেয়? কি পাপ করেছে সে? কেন তার ভালোবাসার মানুষ গুলো তাকে একা করে চলে যায়?

রিশির ঠোটের কোনে মিষ্টিহাসি টুকুও যেন সহ্য করতে পারেনা সাগর। দাড়িয়ে থাকতে পারে না সে। বুকের মাঝে চিন চিন করে ব্যথা অনুভব করে। আস্তে আস্তে সেই ব্যথা বাড়তে থাকে। বুকে হাত দিয়ে প্রস্থান করে সাগর। ফারাহ কে কবুল বলতে বলা হলে ফটাফট কবুল বলে, দেয়। সবাই হেসে উঠে। লাবিবকেও বললে লাবিব ও ফারার মতোন কবুল বলে, দেয়। অবশেষে সব নিয়ম মেনে বিয়ে হয়ে যায় দুজনের। ঘনিয়ে আসে বিদায়ের সময়। ফারাহ বাবা মা কে জড়িয়ে অনেক কান্না করে বিদায়ের সময়। নিজের ঘর ছেড়ে পরের ঘরের দিকে পা বাড়ায় ফারাহ। গাড়ীতে বসিয়ে দেয় জোহান। দেখতে দেখতে অদৃশ্য হয়ে যায় গাড়ী চোখের সামনে।

রিশিকে হাত ধরে টেনে বিল্ডিং এর পেছনে নিয়ে আসে সাগর। রিশি হাত মুচরা মুচরি করেও ছাড়াতে পারে না। সাগর ই হাত ছেড়ে বিল্ডিং এর সাথে চেপে ধরে রিশিকে। সাগরের ভয়ার্ত লাল চোখ, অস্থির চেহারা, উসকো খুশকো চুল দেখে ভয়ে কেপে উঠে রিশি। সাগর হাতে থাকা বোত‌ল থেকে রিশির সামনেই মুখে লাগিয়ে মদ খেতে থাকে। রিশি মুখ দিয়ে টু শব্দ করতে পারে না। ভয়ে চুপ হয়ে থাকে।

সা্যগর মুখ থেকে বোতল নামিয়ে ্য চোখে রিশির দিকে তাকায়। রিশি চোখ নামিয়ে নিতে চাইলে সাগর বলে,
~ লুক এট মি সুন্দরী। এতো সুন্দর কেন তুমি হে? আমায় পাগল কেন করো? পাগল করে আবার চলে যেতে চাও কেন? প্লিজ যেও না আমাকে ছেড়ে। আমার কাছে থাকো। আমার বুকের মাঝে থাকো।

~ তুমার কাছে থাকবো মানে? কে তুমি? কি হউ তুমি আমার? তোমার মতো একটা অসভ্য ইতর ছেলের সাথে আমি কেন থাকবো? আমি তুমাকে জেনে শুনেও কেন থাকবো তুমার কাছে? তুমি কি ভেবেছো আমি তোমার পাস্ট জানিনা? আমি সব জানি। তুমি একটা লুচ্চা অসভ্য ইতর বেয়াদব বদ খারাপ একটা ছেলে যার জীবনে নেই কোন তীর নেই কোন পবিত্র মাটি।

শুধু আছে ঘোলা নোংরা জলরাশি। তুমার মম টাকার লোভে তোমার পাপাকে, তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তুমি বেশ কয়েকজন মেয়ের সাথে নোংরামি করেছো জন্য তোমার পাপার থেকে আলাদা থাকো। মদ নিয়েই তোমার জীবন। রাস্তাঘাটে মারামারি করো। আমার মমের সাথে অসভ্যতামি করো। স্ল্যাং ইউজ করো আমি নিজের কানে শুনেছি। এতো কিছু জানার পর তোমার কাছে আমি কেন থাকবো? আমি আমার নিজেকে জেনে বুঝে কিছুতেই তুমার সাথে জড়াতে পারবোনা। আমার মম লোভি হতে পারে কিন্তু খারাপ না। আমি ভদ্র ফেমেলির ভদ্র সন্তান।

এতোক্ষন রিশির বলা প্রত্যেকটা কথা সাগরের কানে বার বার প্রতিফলন হতে থাকে। সাগর স্মৃতিতে পুরোনো ঘটনা গুলো ভেসে ওঠে। কান দিয়ে ধোয়া বের হতে থাকে। হাতের বোতলটা চাপ দিয়ে ধরাতে বোতল ফেটে সাগরের হাতে ঢুকে য়ায়। এনাফফফ বলে, চিল্লিয়ে উঠে সাগর। ভয় পেয়ে যায় রিশি। রিশির সামনে এগিয়ে এসে বলে,
~ ভদ্র ঘরের সন্তান তুই। কোন ভদ্র ঘরের সন্তান তুই? আমার মম টাকার জন্য চলে গেছে কতো সহজে বললি তুই অথচ তোর মম টাকার জন্য যার তার সাথে ছলনা করে। তোকে আর তোর ভাইকে লাবিব ত্যয়বার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। তুই নিজেও টাকার জন্য লাবিব ফরার ক্ষতি করতে উঠেপড়ে লেগেছিলি।

আমি কোন মেয়ের সাথে নোংরামি করিনি। আমি ভালোবেসেছিলাম কিন্তু তোরা এই মেয়েরা আমাকে ঠকিয়েছিস। তার জন্য আমি তোর কাছ অব্দি যায় নি তোকে পবিত্র ভাবে নিজের করবো বলে, আমার পাপার সাথে আমি নোংরামো করি জন্য আলাদা থাকিনা। আমার পাপার বেডে তোর মমকে দেখেছি জন্য পাপার কাছ থেকে দুরে আমি। অন্যায় সহ্য করতে পারিনা বলে, রাস্তাঘাটে মারামারি করি। তোর মম অসভ্য জন্য অসভ্যতামি করি আমি। তোর মম আমার কাছে না পেয়ে তোকে ঐ রিচার্ডের কাছে বিক্রি করেছে যার জন্য রিচার্ড তোকে থার্ড ক্লাস মেয়ে ভেবে নোংরা নোংরা এস এম এস দেয়। এর পরেও বলবি তুই ভদ্র ঘরের মেয়ে আর তোর ঐ বেসরমী মম ভদ্র?

আমি এতো কিছু জানার পর কেন তোর সাথে নিজেকে জড়াচ্ছি জানিস? কারন আমি তোকে ভালোবাসি। বোকার মতো ভালোবাসি। একতরফা ভালোবাসা পূর্ণতা পায়না জেনেও তোর পিছেপড়ে আছি। আমি তোদের মতো স্বার্থপর হতে পারি না। কিন্তু আর না। আমি আর তোর পিছে ঘুরবোনা। তোকে সেই মেয়েদের একজন ভেবে তোকেও ঘৃনা করবো। যা তুই যতোদূর যেতে চাস। আমি আর আটকাবোনা তোকে। আজ থেকে ঘৃনার খাতায় আরেকটা নাম লেখা হলো রিশি। আই হেট ইউ রিশি। আই হেট ইউ।

পার্ট ৩৪ (অন্তিম)

একঝাক গোলাপের মাঝে বসে আছে ফারাহ। অপেক্ষার পর চলছে অপেক্ষা। কিন্তু যার জন্য অপেক্ষা সে এখন জারাদের হাতে বন্ধি। নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিয়ে তারপর সে রুমে আসতে পারবে। রুম থেকেই শুনা যাচ্ছে তাদের চাপাচাপির আওয়াজ। ফারাহ বসে থাকতে না পেরে বিছানা থেকে নেমে আসে। আয়নাতে তার নজর পড়ে।

গুটি গুটি পায়ে এগোয় আয়নার সামনে। নিজেকে ভালোভাবে দেখে নেয়। কিছুক্ষন আগে বিয়ের সাজসজ্জা ছেড়ে সাওয়ার নিয়েছে। চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে। আরেকবার টাওয়েল দিয়ে চুল গুলো মুছে নিলো। জমকালো লেহেংগা ছেড়ে একটা লাল কাতান গায়ে জড়িয়েছে। হাতে একগোছা চুড়ির আলোড়ন। গলায় মোটা চেইন। কানে ঝুমকো। এই মিলিয়ে সম্পূর্ন অন্যরকম লাগছে।

এক কথায় বউ বউ লাগছে। আগে এতো সাজলেও এখনকার মতো কখনো বউ বউ লাগেনি নিজেকে। আজ সে বউ। লাবিব খানের বউ। লাবিবের কথা মনে হতেই লজ্জা পেল ফারাহ। লজ্জা ভাব কাটিয়ে ভালো করে নিজেকে দেখতে থাকে। এই কয়দিনের অসুস্থতায় অযত্মে আরো কালো দেখাচ্ছে তাকে। ওতো সুন্দর সুদর্শন পুরুষের পাশে নিজেকে কিভাবে মানিয়ে নিবে সে? কেমন দেখাবে তাদের? ভাবতে ভাবতেই ঘাড়ে গরম নিশ্বাস এর ছোয়া পায়। তাকিয়ে দেখে লাবিব কাধের উপর থুতনি দিয়ে আয়নার সামনে তাকিয়ে আছে। লাবিব জিজ্জাসা করে
~ মন খারাপ আমার মায়াকুমারীর?

ফারাহ মাথা নাড়ায়। লাবিব বুঝতে পেরে ফারাহকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে দু গালে হাত রেখে বলে,
~ কালো আমার দুই নয়নের আলো। ওরে আমার মায়াকুমারী তোকে আজ আমার বউ বউ লাগছে।
~ বউকে তো বউ বউ লাগবেই।

~ তাইবুঝি? তো আমার বউ হলে তো আজ থেকে আপনার অনেককিছু চেঞ্জ হয়ে যাবে মেডাম?
~ কেন? আমি চেঞ্জ হবো না।
~ কিছুই করার নেই। হবেই সিউর।

ভ্রু কুচকে তাকায় ফারাহ। লাবিব পাজাকোলে তুলে নেয় ফারাহ কে। বিছানায় এনে বসিয়ে দেয়।
~ কি ভাবে চেঞ্জ হবো? বলোনা ..?
~ আজকের পর থেকে তোমার নামের পদবী চেঞ্জ হয়ে গেছে। মিসের জায়গায় মিসেস লিখতে হবে। চৌধুরীর জায়গায় খান লিখতে হবে।

~ হুম। এটাই চেঞ্জ হবে। কোন ব্যপার না। হবেই।
~ হুম। আরো অনেক চেঞ্জ। যেমন এরপর থেকে তোমার ভেজাচুল থেকে আর টপটপ করে পানি পড়বে না। কারন সেটা আমি ভালো করে মুছে দিবো। এখন থেকে রাত দুপুরে তোমার না ঘুমিয়ে থাকতে হবে। কারন আমার পিঠ চুলকে দিবে। আর আমি ঘুমোবো। এরপর থেকে তোমার ঠোট ভরিয়ে আর ভেসলিন দিয়ে রাখতে হবে না। কারন শুষ্ক ঠোট দুটো আমিই সবসময় ভিজিয়ে রাখবো। তোমাকে আর আমার প্রিয় নাম মায়াকুমারীতে ডাকতে পারবোনা। এর জন্য আমি সরি। নাম পাল্টে রাখতে হবে।

~ কেন? কি বলে, ডাকবে তাহলে? (লজ্জা চোখে জিজ্জাসা করে ফারাহ)।
~ এখন থেকে তুমি আমার মায়াবধু। কুমারী সময় তো পাস্ট হয়ে যাবে আমার মায়াবধু।
ফারাহ প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরে লজ্জায় চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে, অভদ্র স্বামী।
~ ও তাই না? তো অভদ্র স্বামীর অভদ্রতামী দেখার জন্য আপনি রেড়ি?
ফারাহ লজ্জায় লাবিবের পিঠে হালকা জোরে চড় দিয়ে বুকে মুখ লুকায়।

ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিচে নামে মিশু। তুষার কে কোলে তুলে আদর দিচ্ছে সে। ফ্লাইটের আড়াই ঘন্টা আছে আর। রাস্তায় জ্যাম না থাকলে আধা ঘন্টায় পৌছে যাওয়া যাবে। আর যদি জ্যাম থাকে এক ঘন্টার বেশি সময় লাগবে। তারাতারি যাওয়াই বেটার। রিশিও ধীর পায়ে নিচে নেমে আসে। রাতে ঘুমোয়নি সে। সারারাত ও সাগর আর মমের কথা ভেবে ছটফট করেছে। সাগরের কথা গুলো মিথ্যা হলেও কেমন যেন বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু এগুলো সত্য হতে পারেনা। তার মম তাকে জন্ম দিয়েছে।

কষ্ট করে বড়ো করেছে সে কিভাবে এমন হতে পারে। তবে যা দৃশ্যমান তা তো অনেক খারাপ কাজ ই করেছে মম। রিশি এক ধ্যানে তার মমের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে। কতো আদর করছে নাতিকে। অথচ এই নাতির ভবিষৎ নষ্ট করতে চেয়েছিলো। বড় অদ্ভুত লাগে তার কাছে। সবকিছু ঘোলাটে লাগছে তার কাছে। পাপা কেন মমকে ডিভোর্স করবে? পাপাও তো মমের সাথে প্লান করেছিলো। পাপাকে জিজ্জাসা করলেও কিছু বলছেনা। শুধু শুধু তো কেউ কাউকে ডিভোর্স করবে না। একটা মানুষ তখনি একটা মানুষের হাত ছাড়ে যখন সেই হাতে ভরসা বলতে আর কিছুই বাকি থাকে না।

রিশি সবার কাছে বিদায় নিতে যায়। লাবিবা বুকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমাদের উপর রাগ করিস না মা। কেউ যদি কারো পাজরের না হয়ে থাকে তাহলে তা এক করা অসম্ভব। রিশি হেসে সায় দেয়।

লাবিব বলে, এটা তুমি ঠিক করলে না রিশি। তোমাকে পস্তাতে না হয় সারাজীবন এর জন্য। রিশি উত্তর দেয় না। ফারাহ বলে, সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যপার রিশি। যা কল্পনাও করিনি তা আজ আমার। ভাগ্যের জোরেও বলতে পারো। আবার পাজরের টানেও বলতে পারো। তোমাকে বুঝানোর সাধ্য আমার নেই। তবুও দোয়া করি যেখানেই থাকোনা কেন সুখে থাকো ভালো থাকো। রিশি রোশানের সামনে গিয়ে বলে, ভাইয়া আসছি। রোশান করুন চোখে রিশির দিকে তাকায়। যার অর্থ ~ যাস না বোন।

কিছুক্ষন আগে ~
রিশির রুমে রোশান আর ত্যয়বা যায়। রিশি মোকামুটি রেড়ি। রোশান গিয়ে রিশিকে বসিয়ে বলে,
~ দেখ রিশি আমি তোর ভাই। খুব আদরের বোন তুই আমার। আমি চাইনা তোর কোন ক্ষতি হোক। আমি চাই সবসময় তুই ভালো থাক।
~ আমি ভালো থাকবো ভাইয়া।

~ না তুই ভালো থাকবিনা। ঐ রিচার্ড কে আমার ভালো করে জানা আছে। ও মেয়েদের বিজনেসের সাথে যুক্ত। ও খুব খারাপ একটা ছেলে। তোর জিবনটা পুরো শেষ হয়ে যাবে। তুই মমের সাথে যাবিনা। তুই মমকে বলে, দে তুই যাবি না।
ত্যয়বা বলে, রিশি বোন আমার। সাগর আমার ছোটবেলার বন্ধু। ওকে আমি খুব ভালো চিনি। ও খুব ভালো ছেলে। ও তোমাকে খুব ভালোবাসে রিশি। সত্যিই খুব ভালোবাসে। তুমি চলে গেলে ও সত্যিই শেষ হয়ে যাবে। তুমি যেও না বোন। তুমি সাগরকে একবার সুযোগ দাও। দরকার হলে ও নিজেকে তোমার জন্য চেঞ্জ করে ফেলবে। তুমার জন্য তৈরী করবে নিজেকে। তুমি এতো বড় কাজ টা করো না বোন। ও খুব কষ্ট পাচ্ছে।

রিশি কোন কথা বলে, না। নিশ্চুপ সে।
রিশি তুষারের গালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে। রোশান ত্যয়বার আড়ালে গিয়ে চোখের জল ফেলে। তার একমাত্র আদরের বোনটা আজ সর্বনাশের পথে পা রাখলো। সে ভাই হয়েও আটকাতে পারলো না। ত্যয়বা রোশানকে সান্তনা দেয়।

এয়ারপোর্টে ঢুকার সাথে সাথে রিশির বুকে চিন চিন করে ব্যথা করতে থাকে। যে ব্যথার নাম সাগর ব্যথা। টনক নড়ে উঠে রিশির। অচেতন ব্রেন জানান দেয় সে চলে যাচ্ছে। এ শহরে একজন অতি আপন মানুষকে রেখে সে চলে যাচ্ছে। হৃদয়ের কোনে দহন জ্বলে, রিশির। না পাওয়ার বেদনার আর্তনাদ বেরিয়ে আসতে চায়।

সাগরের মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে আসতে থাকে। সাগরের পাগলামি গুলো শরীরে কাটার আঘাত করতে করতে থাকে। শুধু মনে হয় সাগর পেছন থেকে ওকে বলছে”জান থাকো আমার কাছে”। চিৎকার করে কান্না আসতে চাইছে রিশির। কাদতেও পারছেনা সে। মিশু অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। পাসপোর্ট জমা করে ওয়েটিং রুমে বসে তারা। ফারার ফোনে কল আসে। দেখে জারা কল করেছে। আসার সময় জারাকে বলে, আসা হয়নি। রিসিভ করে বলে,
~ কিরে বুড়ি? ঘুম ভাঙলো তোর?

~ তুমি আমাকে বলে, যাওনি কেন? আমাকে ডাকলে কি হতো?
~ তাফিফ বললো, তুই নাকি একটু আগে ঘুমিয়েছিস তাই আর ডাকিনি।
~ আচ্ছা। নো প্রবলে, ম। ভালোভাবে যাও। আর বিয়ের পিক গুলো হুয়াটসাপ করে দিয়েছি। দেখে নিও। যা জোস হয়েছেনা ….। কি বলবো? বাই।
~ বাই।

রিশি হুয়াটসাপ এ লগ ইন করতেই সাগরের নোটিফিকেশন আসে। রিশি আনমনে ক্লিক করে। একটা ভিডিও আসে যা অনেকদিন আগের পাঠানো। ভিড়িও অপেন করে ফুল ভিডিও দেখে রিশি মুখে হাত চেপে কেদে উঠে। এইটা ছিল সেইদিনকার ভিডিও যেদিন মিশু রিশির বিনিময়ে প্রোপার্টি চেয়েছিলো সাগরের কাছে। আরো অনেক কিছু ছিলো ভিডিও টিতে।

সাগর যা যা বলে, ছে তাই সত্যি। নিজের প্রতি নিজেকে ঘৃনা হচ্ছে রিশির। এমন মায়ের মেয়ে বলে, মরে যেতে ইচ্ছা করছে। ফ্লাইটের এনাউন্স করা হয়। মিশু কাম বলে, লাগেজ নিয়ে চলে যায়। রিশি কি করবে ভেবে না পেয়ে থামস কে কল করে।
~ পাপা তুমি মমকে কেন ডিভোর্স করেছো?

~ পাপা আমি জেনে গেছি। সব কি সত্যি?
~ হ্যা সত্যি। তুমি আসো। তুমার জন্য তোমার পাপা আছে। তোমার ভালো থাকার ব্যবস্থা তোমার পাপা করে দেবে। ভয় পেও না রিচার্ডের সাথে তোমার বিয়ে হতে দিবো না।

~ পাপা আমি যদি সাগরকে বিয়ে করি তুমিকি আমাদের মেনে নিবে?
থামস কিছুক্ষন ভেবে বলে,
~ তুমি কি চাও? তোমার ভালো থাকাতেই আমার ভালো থাকা।
~ থ্যাংক ইউ পাপা। লাভ ইউ সো মাচ।

ফ্লাইট ছেড়ে দিয়েছে। মিশু এতোক্ষন বসে আরাম করার পর রিশির কথা মনে পড়েছে। রিশির সিট খালি দেখে ঘাবরে যায় মিশু। পুরো প্লেন খুজেও পায়না রিশিকে। ফোন চেক করতেই দেখে রিশির ম্যাসেজ
“আমিও তোমাকে ত্যাগ করলাম। তুমি একা। পুরো একা। কিছুই থাকলো না আর তোমার।”
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে মিশু। ব্লাড পেসার বেড়ে যায়। বসে বসে হাউমাউ করে কাদতে থাকে সে। শূন্যতা গ্ৰআস করতে থাকে তাকে।

রিশিকে দেখে চমকে উঠে ত্যয়বা। দৌড়ে আসে রোশান। ভেজা চোখ মুছে দিয়ে বলে, ফ্লাইট চলে গেছে? মাথা নাড়ায় রিশি।
~ সাগরের কাছে যাবো। ওর ঠিকানায় পৌছে দাওনা ভাইয়া।
খুশিতে বোনকে জড়িয়ে ধরে রোশান।

~ ভাইয়ের দায়িত্ব অবশ্যই পালন করবো। অনেক দোয়া রইলো তোদের জন্য।
মাথার উপর দিয়ে প্লেন টা সুত করে উড়ে গেলো। বুকে হাত চেপে আকাশ পানে তাকালো সাগর। প্লেন যেনো উড়ে গেলো না সাথে করে তার হৃদয়টাকেও নিয়ে গেলো। বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে আর পারলোনা। চোখ নামিয়ে নিলো। টেবিলের উপর ড্রিংস গুলোও তাকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। সবকিছু মরুভূমি হয়ে গেছে যেন। আনমনে হাটতে হাটতে চোখ পড়ে প্রিয় ইলেক্টিক গিটারটির উপর। হাতে তুলে নেয় গিটারটি।

বাজাতে গিয়ে মনের ব্যথা গুলো গান হয়ে বেরিয়ে আসে তার ~
🍁 তুমি চাইলে ঠিকি পারতে, ছায়া হয়ে পাশে থাকতে
তুমি পাগল এই আমিটাকে বুকে জড়িয়ে রাখতে
তুমি চাইলেই ঠিকি পারতে,
ভালোবাসাটুকু বাচিয়ে রাখতে ..
শত রঙে সাজিয়ে তাকে আমায় নিয়ে বাচতে….
কি ভুল ছিলো আমার? ..

কেড়ে নিয়েছো সব অধিকার
শুধু শুধুই ভালোবেসেছি, বৃথাই সপ্ন বুনেছি
নিজের সাথেই লড়ে আমি নিজের কাছে হেরেছি।

তুমি চাইলেই ঠিকি পারতে .., গড়তে সেই ছোট্ট সংসার
যার সপ্ন দেখিয়ে তুমি .., সাছিয়েছিলে পৃথিবী আমার।
তুমি চাইলেই ঠিকই পারতে .., জানালার পর্দা সরিয়ে
প্রভাতের ঐ মিষ্টি আলোয়.., আমার ঘুম ভাঙাতে।

কি ভুল ছিলো আমার? .কেড়ে নিয়েছো সব অধিকার।
শুধু শুধুই ভালোবেসেছি, ..বৃথাই সপ্ন বুনেছি
নিজের সাথেই লড়ে আমি নিজের কাছে হেরেছি…..

চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে সাগরের। গিটার রেখে আনমনে দাড়িয়ে সেই খোলা আকাশ দেখতে থাকে। আকাশ টার বুক চিরে কত কিছুর আনাগোনা হয় কিন্তু শূন্য আকার শূন্য ই থেকে যায়। জীবনে এমন অনেকের আসা যাওয়া হয়েছে কিন্তু পরিশেষে শূন্য ই রয়ে গেলো তার জীবন টা।

পেছন থেকে জড়ানো হাতের স্পর্শে চোখ বুঝে সাগর।
এই স্পর্শ যে তার ই একমাত্র অধিকার। নিজের জিনিস চিনতে ভুল হয়না কারো। পেছন দিক না তাকিয়েই বলে,
~ প্লেন তো উড়ে গেলো। জায়গা হলো না?

~ ভুল জায়গায় জায়গা খুজতে যাবো কেন? সেখানে আমার জায়গা আমি সেখানেই ভিজিবল।
~ কেন এসেছো এখানে?

~ পাজরের টানে।
ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠে সাগরের।
~ ও আচ্ছা।
~ আই লাভ ইউ।

~ আই হেট ইউ। তোমার জন্য আর ভালোবাসা নেই। ফুরিয়ে গেছে।
~ লাগবেনা। চাওয়ার থেকে অনেক বেশিই পেয়েছি। সারাজীবন আকড়ে ধরে বাচতে পারবো।
~ আবেগী ভার্সন ছেড়ে চলে যাও। ঘৃনার প্রতিফলন সহ্য করতে পারবে না। শেষ হয়ে যাবে।

~ কি করবে? শেষ করবে আমায়? খুন করবে? করে দাও .. শেষ করে দাও আমায়। খুন করে দাও আমায়। পিষে ফেলে মেরে ফেলো আমায়। তোমার ঘৃনায় মরতে চাই আমি। তবুও যাবো না কোথাও।

রিশিকে ঘুরিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে, মরে গেলে আমার বাবুর মম কে হবে? হালি হালি বাচ্চা লাগবে আমার। রিশি চোখে পানি নিয়ে হেসে ফেলে বলে, অভদ্র প্রেমিক।
~ তোমারই

“সাব্বাস। কার ভাই দেখতে হবে না? ইনজয় ডিয়ারস।”

লেখা – লাবিবা তানহা লিজা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “পাজরের টানে – Gopon bhalobashar kotha bangla” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – পাজরের টানে (সিজন ২ – ১ম খণ্ড) – Gopon bhalobashar kotha bangla

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *