জীবনসঙ্গী (১ম খণ্ড) – ভালবাসার রোমান্টিক কথা বাংলা

জীবনসঙ্গী (১ম খণ্ড) – ভালবাসার রোমান্টিক কথা বাংলা: অনিকেত শশীর হাত না যেন চাঁদ হাতে পেয়েছে। আজ সবচেয়ে খুশির দিন কারন অনির প্রেয়সী আজ নিজ ইচ্ছায় ওকে হাতটা ধরতে দিয়েছে। প্রিয়ার স্পর্শ পাওয়া যে সকল প্রেমিকের মনের বাসনা।


পর্ব ১

মা তুমি না? সব ভুলে যাও। আজ এক্সট্রা ক্লাস ছিলো ভুলে গেছ। স্কুল ব্যাগ বিছানায় রেখে শুয়ে পড়ে।
ওতো বাপু মনে থাকে না আমার তোদের এক্সট্রা ভেক্সট্রা।
একি শুয়ে পড়লি কেন?

টায়ার্ড লাগছে খুব মা।
ওঠ মা ভালো। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। আজ রিশাদের পরিবার আসছে একটু পর।
মা! প্লিজ আমাকে এখন বিয়ে দিয়ো না। আমি পড়ালেখা শেষ করে নিজের পায়ে দাড়াতে চাই।
শশী! সবসময় এক কথা কেন বলিস, বল? (রেগে)
শশী কাঁদতে থাকে।

কাদিস না রে মা! বুঝার চেষ্টা কর। তোর বাপটা তো তোদের জন্ম দিয়েই পালালো।
ভাই ভাবীর সংসারে বোঝা হয়ে আর কতো থাকবো বল। তোর বিয়েটা হলে তুই সামির আর শিমুর দায়িত্ব নিতে পারবি। আমার বড় ছেলে বলিস মেয়ে বলিস সব তুই রে মা।
রিশাদ তোর মামাকে বলেছে ও সামির আর শিমুর দায়িত্ব নেবে। ওদের মুখ চেয়ে আমার কথায় রাজি হয়ে যা মা।

শশী চোখ মুছে মনকে শক্ত করে। সবসময় মনের মতো তো আর জগতে চলা যায় না। দায়িত্বের কাছে সব বিসর্জন দিতে হয়।
ঠিক আছে মা! তুমি আর মামা যা বলবা তাই হবে।
লক্ষি মা আমার। কষ্ট নিস না। আমি তো সারাজীবনে তোদের শখ আহ্লাদ পূরন করতে পারলাম না। আল্লাহ এতো দিনে মুখ তুলে চেয়েছেন, নয়লে এতো বড় ঘর থেকে তোর জন্য সমন্ধ আসে বল।

শশীকে তাড়াতাড়ি শাড়িটা পড়িয়ে দেয়। ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা করতে চাই রিশাদরা। কারন তারা নাকি শশীদের খরচ করাতে চাই না।
সন্ধ্যার পরপরই বিয়েটা হয়ে যায় শশী ও রিশাদের। বরপক্ষ থেকে রিশাদের বাবা ও দুলাভাই এসেছিলে শুধু।
শশীর বুকের মাঝে কেমন যেন ভয় কাজ করে। মনটা কোনোভাবেই যেন বিয়েতে সায় দেয় না।

কিন্তু কথায় আছে না। গরিব মানুষের মন বলে কিছু থাকতে নেই। তাই শশীও নিজের মনের সকল আকাঙ্ক্ষাকে দাফন করে দেয় বুকের মাঝে।
পরিবারের জন্য এতোটুকু ত্যাগ একটা মেয়ের জন্য কিছুই না সমাজে।
বিয়ে নিয়ে প্রতিটি মেয়েই আজন্ম স্বপ্ন লালন করে। এমন নিরবে আমেজ ছাড়া হুট করে বিয়ে কোনো মেয়ের কাম্য না।

কয়েকদিন পর উঠিয়ে নেবে বলে বিয়েটা পড়িয়ে চলে যায় রিশাদ সহ রিশাদের পরিবার।
ভালো করে খাই ও না ওরা।
যাওয়ার আগে শশীর মামাতো ভাই একপ্রকার জোর করে শশীর মোবাইল নাম্বারটা রিশাদকে দিয়ে দেয়।

রিশাদ পুরোটা সময় চুপচাপ ছিলো। যেন বাবার বাধ্য ছেলে। একটিবার নিজের নতুন বউয়ের সাথে নিজস্ব ভাবে কোনো কথাও বলে নি। এই নিয়ে যথেষ্ট কানাঘুষো করে শশীদের বাড়ির লোক।

শশীর খুব খারাপ লাগে বিষয়টা।
ঐ দিন রাতে ভালো করে কিছু খাই ও নাই শশী। বালিশে মুখ চেপে কান্না করেছে শুধু। কি একটা জীবন শশীর মন খুলে কান্নাও করতে পারে না।
সকালে ঘুম ভাঙে অচেনা নাম্বার থেকে আসা কলের কারনে।
বিরক্তি ভরা কন্ঠে কল টা রিসিভ করে।
হ্যাঁলো আসসালামু আলাইকুম।

কেমন আছ শশী। সালামের উত্তর না দিয়েই,
জ্বী ভালো। কে বলছেন আপনি?
সেকি? কাল বিয়ে হলো আর আজই ভুলে গেলে নিজের বরটাকে।
শশী বিছানা ছেড়ে বসে। নিজের বর। অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে কথাটা শুনে।
সরি! আস্তে করে উত্তর দেয়।

ঠিক আছে জানটা। সরি বলা লাগবে না। এই আমি তোমাকে জান বলতে পারি তো নাকি?
জ্বী। কোনো অনুভূতি হয় না এমন কথা শুনেও কেন যেন শশীর।
জানো আমার খুব ইচ্ছা ছিলো কাল রাতটা তোমার সাথে কাটানোর। কিন্তু কি করবো বলো আম্মুর প্রেশার টা বেড়ে যাওয়ায় চলে আসতে হলো।
সমস্যা নাই।

কেমন মেয়ে তুমি বলো সমস্যা নাই।
সরি!
আবার সরি বলো।
তুমি কি এই বিয়েতে খুশি নও।
না! না! ঠিক তা নয়।

আসলে হঠাৎ করে হলো তো বিয়েটা তাই সবকিছু মানতে একটু সময় লাগবে।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমার ই তো হয়ে গেছো যতো সময় নাও নিতে পারো।
আচ্ছা রাখি পরে ফোন দিবো। তুমি উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে আমাকে মিসকল দিয়ো।
জ্বী।

ওপাশ থেকে রিশাদ কলটা কেটে দেয়।
মনের মধ্যে কেমন কেমন করলেও অন্যরকম অনুভূতি লাগে রিশাদের কথায়। এভাবে এতোক্ষন কোনো পুরুষের সাথে কথা বলে নাই শশী। তারপর কল কাটার পরপরই কাজিনরা সব মজা করতে থাকে রিশাদের নাম নিয়ে। শশী লজ্জা পাই।

আজ আর শশী কলেজে যায় না। নাস্তা করে বসে থাকে। কিছুই ভালো লাগছে না।
কিরে রিশাদ বলে তোকে মিস কল দিতে বলেছিলো। তো দিচ্ছিস না কেনো।
ভালো লাগছে মা। পরে দিবো।

দেখ শশী। নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে তোদের। এখন যেভাবেই হোক স্বামীর মন জয় কর। মনে রাখিস তোর কাঁধেই আমাদের ভবিষ্যত। রিশাদ যেন কোন বিষয় নিয়ে কষ্ট না পাই।

মায়ের কথায় মন না চাইলেও রিশাদকে কয়েকদফা কল দেয়। কিন্তু রিশাদ কলটা ধরে না। মায়ের জোরাজুরিতে পরে আবার কল দেওয়ার পর এবার রিশাদের মোবাইল টা সুইচ অফ পাই।
খুব অপমানিতবোধ করে।

এ কোন ধরনের ব্যবহার নিজেই তো বললো মিসকল দিতে। তাহলে এমন করলো কেন।
কল ধরে বলতে তো পারতো বিজি আছি পরে কল দাও।
আরে! পুরুষ মানুষ কতো কাজে ব্যস্ত থাকে।

তুই এসব জিনিসে কষ্ট নিস না। পরে আবার কল করিস। শশীর মা উঠে চলে যায়।
শশীর কান্না পাই। এ কেমন সম্পর্কে জরালাম। কোনো আবেগ ভালোবাসা সম্মানবোধ কিছুই নেয় যেখানে।
দুপুর পর্যন্ত শুয়ে থাকে।
এই শশী! দেখ কে এসেছে।
রিমি তুই?

তোমরা বসে গল্প করো আমি আসছি।
কিরে শশী আমি কি এতো পর হয়ে গেলাম যে একটিবার আমাকে তোর বিয়ের বিষয়টা বলতে পারলি না।

তুই রাগ করিস না রিমি। হঠাৎ করে হয়ে যায়। তাই বলতে পারিনি।
হুমম! শুনলাম আন্টির কাছে। আমার কিন্তু কেমন যেন লাগছে। এভাবে এতো বড়লোকের ছেলে তোকে বিয়ে করতে যাবে কেন।
জানি না রে।

অনিকেত কাল কলেজে তোর কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।
ওসব কথা বাদ দে।
আচ্ছা তাহলে বল। আমাদের দুলাভাই দেখতে কেমন?
জানি না।
জানি না মানে?
আমি তাকে দেখি নি এখনো।

কাল বিয়ে পড়ানোর সময় তাকাস নি দুলাভাইয়ের দিকে?
না।
এ কেমন কথা। মন খারাপ তোর তাই না শশী?
না রে। এমনিতেই ভাল লাগছে না।
আচ্ছা শোন মন খারাপ করিস না। চল ছাদে যায়।
রিমি জোর করে শশীকে ছাদে নিয়ে যায়।


পর্ব ২

শশীর মন ভালো করার জন্য রিমি অনেক মজার গল্প বললো। কিন্তু মুচকি হাসি ছাড়া আর কিছুই বের হলো না শশীর মুখ থেকে।
বিকালে রিমি চলে যাওয়ার পর রিশাদ কল দেয়।
কি করছে বউটা আমার।
কিছুনা। রূঢ হয়ে।

রাগ করেছ শশী। রাগ করো না প্লিজ লক্ষিটি।
না, রাগ করবো কেন। রাগ করি নি।
এইতো ভালো বউ আমার। আচ্ছা খেয়েছো
কখনকার খাবার?

ওহ সরি। এখন তো বিকাল হয়ে গেছে। শোনো না আমি তোমাকে উঠায় নিয়ে আসি আমাদের বাড়ি তারপর দেখবা কত্ত ভালোবাসবো আদর করবো তোমাকে।
আমি তো এখনি ঠিক করে রেখেছি আমরা কক্সবাজার অথবা বান্দরবান হানিমুনে যাবো।
রিশাদ এটা ওটা নানা কথা বলতে লাগলো।
শশী শুধু হুমম হুমম উত্তর দিলো।

কি হলো শশী এভাবে হুম হুম করছো কেন?
ভালো লাগছে না আমার সাথে কথা বলতে।
রেখে দেবো।
শশীর ইচ্ছা করছিলো বলতে হ্যাঁ রেখে দেন।
কিন্তু মা যদি জানে কষ্ট পাবে। তাই চুপচাপ সহ্য করে।
না! না! আমার আসলে অন্যরকম লাগছে। আপনার সাথে আজই প্রথম কথা তাই। আপনি আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েন না প্লিজ।
আরে না পাগলী মেয়ে। কষ্ট কেন পাবো। তুমি আর আমি তো এখন এক।
তোমাকে একটা কথা বলি শশী?
জ্বী বলুন!

তুমি জানো তুমি কতো সুন্দর। তোমার মায়াবী মুখশ্রী, কাজল কালো দীর্ঘ চক্ষুদ্বয়,
তোমার গোলাপ রাঙা গায়ের রঙ সবটা আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
আপনি কি দেখেছিলেন নাকি? অভিমান করে বলে।
তোমার কি মনে হয়। তোমাকে আমি দেখেছি শশী। দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। কিন্তু তুমি একবাও আমার দিকে তাকাও নাই।

তোমাকে দেখে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। এতো মিষ্টি বউ তো ভাগ্যবানেরি কপালে জোটে নাকি?
শশী মুচকি হাসে। সে হাসির সাক্ষীও একমাত্র শশী হয়। এমন কথা শুনলে সত্যি অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করে।
এভাবেই মনে হয় একদিন রিশাদকে ওর ভালো লেগে যাবে। হয়তো ভালোও বেসে ফেলবে।

এভাবে কেটে যায় ২ সপ্তাহ। এর মধ্যে রিশাদ ওর সাথে দেখা করতে না আসলেও রিশাদের বাবা মা আসতো।

মা খুব আপ্যায়ন করে খাওয়াতো। মামী তো দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতো নিজের সংসারে আমাদের। এখন মামী প্রায় মামার সাথে ঝগড়া করে না খেয়ে থাকে। তার ঘরে আমরা কি কম ঝামেলা ছিলাম যে এখন নিত্যদিন নতুন অতিথি আসছে খরচ বাড়াতে।
মা তো এখন আমাকে অনেক চাপ দিচ্ছে মানসিকভাবে। আমি যেন রিশাদকে একটু বলি তাড়াতাড়ি আমাকে উঠিয়ে নেওয়ার কথা।

মা ধারনা আমাকে রিশাদের জীবনে সেটেল করতে পারলেই তার সকল দুশ্চিন্তা শেষ চিরতরে। ঐ পরের ছেলের প্রতি এতো বিশ্বাস আমার মায়ের।
কিন্তু মা কে কি করে বোঝায় রিশাদকে আমার দেখা অন্য বিবাহিত পুরুষ বা স্বামীদের মতো লাগে না।

আমার খুঁত খুতে মন সে জন্য কি না, সে বিষয় সন্দেহ আছে কিছুটা অবশ্য আমার।
কলেজ শেষে রিমি আর আমি হেটে বাড়িতে আসছিলাম। বেশি দূর না কলেজ বাড়ি থেকে।
রিমি তো সব সময় রিশাদ আর আমাকে নিয়ে মজা করে এটা ওটা বলে। আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।
রিশাদ ভাই কি কি বলে রে তোকে।
সেটা তোকে কেন বলবো।

স্বামী স্ত্রীর গোপন কথা কাওকে বলতে নেই। গুনাহ হয়। বুঝলি শাক চুন্নি।
হু ডং। বললে কি তোর হিরোর মতো স্বামীকে আমি নিয়ে নিবো।
ও হিরো তুই কি করে জানলি।
শোভন ভাইয়া তোদের বিয়ের ছবি দিয়েছিলো কাল রাতে। তাতেই দেখলাম। জানিস দেখতে অবিকল পুলকিত সম্রাটের মতো।

দারুন লাগছে কিন্তু আমার।
সর! তোর যতো আজাইরা কথা।
ওলে লে পুলকিত সম্রাটের বউটা দেখছি খুব লজ্জা পেয়েছে।
দেখ রিমি। নিজে যে শোভন ভাইয়ার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করো আমি বুঝি জানি না। মামী কে বলবো তোদের কথা।
দেখ দেখ শশী। তুই যা ভাবছিস তা না।
হুমম,

আচ্ছা যা। আমিও তোর স্বামীকে বলে দিবো আপনার বউ তো আপনারে পুলকিত সম্রাট বলে।
দেখ রিমি। ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
কি দেখবো বল।
কুত্তি।

ঘেউ। ঘেউ। শশীকে কাতুকুতু দিতে দিতে।
পুরোটা রাস্তা রিমি রিশাদকে নিয়ে প্রচন্ড জ্বালায়।
নতুন বিবাহিত মেয়েদের এই একটা পিড়া সবাই শুধু মসকরা করতে থাকে এটা ওটা নিয়ে।
রিমি বাড়ি শশীদের বাড়ির রাস্তার অন্য দিকে।

তাই রিমি চলে যায়। শশী কিছুটা পথ একাই বাড়ির দিকে যায়।

দুপুরের দিক লোকজন সচরাচর এই গলিতে কম থাকে।
শশী দেখে সামনে রাতুল ভাইয়া দাড়িয়ে আছে।
পাশ কাটিয়ে যেতেই।
ভালো আছেন ভাবি?

আমি আপনার কোন জনমের ভাবি হই বলেন তো রাতুল ভাইয়া। কিছুটা বিরক্তি নিয়ে।
আপনি আমার সারাজনমের ভাবি হন।
এতো নিষ্ঠুর হতে পারলেন ভাবি। একটিবার অনিকেতের কথা মনে পড়লো না। ওকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিলেন।

দেখেন রাতুল ভাইয়া। আপনি এসব কি বলছেন মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে। আপনার বন্ধুকে কি কোনোদিন আমি বলেছি তাকে আমি ভালোবাসি। না সেরকম ইঙ্গিত দিয়েছি। তাহলে সে মরলো কি বাচলো তার দায়ভার আমার উপর দিচ্ছেন কেনো।

এখনো সময় আছে। অনিকেত কে একটা সুযোগ দিন। ও আপনাকে প্রচন্ড ভালোবাসে ভাবি। ওর জীবন আপনি ছাড়া মূল্যহীন ওর কাছে। কেন ভালোবাসতে পারলেন না ওকে।
প্রথম কথা আপনি আমাকে ভাবি বলা ছেড়ে দিন। আমি এখন অন্য কারো বউ। আপনি কিংবা আপনার বন্ধু আগেও আমার জীবনের কেউ ছিলেন না। আর ভবিষ্যতেও থাকবেন না।
আপনার বন্ধুর মতো গুন্ডা কে হ্যান্ডসাম, সিঙ্গার ভেবে এলাকার মেয়েরা ফিদা হতে পারে। কিন্তু আমি হবো না। কারন আমি জানি সে বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলে। তার কাছে মেয়েমানুষ শুধু দেহসর্বস্ব একটা পুতুল। যাকে মনমতো খেলে মনভরে গেলে ছুড়ে ফেলে দেয়।
কোন ভিত্তিতে এতোবড় কথা বললেন আপনি অনি সম্পর্কে। রাতুল কিছুটা রেগে যায়।
এলাকার সবাই জানে এসব কথা। এর আবার নতুন কি ভিত্তি দেবো আপনাকে।
আর কখনো আমার জীবনে এভাবে ঝামেলা করতে আসবেন না আপনি কিংবা আপনার ঐ গুন্ডা বন্ধু।

রাতুলের ইচ্ছা করছিলো শশীকে ঠাটিয়ে একটা চড় দিতে। ওর কলিজার দোস্ত সম্পর্কে এতো নোংরা কথা বলে গেলো।
কিন্তু অনির ভালোবাসার কথা ভেবে কিছুই বলে না রাতুল।
শশী বাসায় গিয়ে অবাক। কারন রিশাদ এসেছে। এ কদিনে একটু একটু ভালোবেসে ফেলেছে রিশাদকে শশী। মানুষটার সাথে কথা না বললে এখন ভালোই লাগে না শশীর।
শশী লজ্জায় মাথা নিচু করে রিশাদের সামনে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
রিশাদ আড়চোখে শশীকে দেখে হাসে।

শশী ব্যাগটা রেখে বিছানায় বসে। হাত পা কাঁপছে। এই প্রথম রিশাদকে দেখে বুকটা দুরুদুরু করছে। মাথায় কাজ করছে না। লজ্জায় সব ভুলে যাচ্ছে। গলাটাও শুকিয়ে যাচ্ছে। মোবাইলে কথা বলে দুজন অনেকটা কাছাকাছি এসেছে। কিন্তু সামনা সামনি রিশাদকে দেখে কেমন যেন অচেনা অনুভূতি কাজ করছে।
আসবো।

রিশাদের হাসি মাখা কন্ঠ শুনে শশী আরো লজ্জা পায়। দাড়িয়ে পড়ে।
জ্বী আসুন।


পর্ব ৩

লজ্জা পাচ্ছো কেন শশী। মোবাইলে তো কতো কিছু বলো। অথচ সামনা সামনি এতো চুপ। শশীর দিকে এগোতে এগোতে।
কই। না তো, শশী নিচে তাকিয়ে পিছাতে পিছাতে
মিথ্যা বললে তোমার মুখ যে লাল হয়ে যায় তা কি জানো শশী? শশীকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।

শশীর হাত পা রীতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে রিশাদে স্পর্শে। কিছু বলার মতো স্বর গলা থেকে বের হচ্ছে না।
আমি কি বাঘ না ভাল্লুক শশী। এভাবে কাপছ কেন? শশীর গালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে।
পুরো শরীর শিহরিত হয় শশীর
আমি কলেজ ড্রেস চেঞ্জ করে আসি। আপনি বসুন। আস্তে করে ভেঙে ভেঙে কথাগুলো বলে।

আমি থাকতে এতো কষ্ট কেন করবে তুমি।
জ্বী। শশী রিশাদের চোখের দিকে চমকে তাকাতেই
রিশাদ নিজের দুওষ্ঠ শশীর ওষ্ঠে বিলীন করে দেয়।
সমস্ত শক্তি দিয়ে চেপে ধরে নিজের সাথে শশীকে।

বেশকিছুক্ষন পর শশীকে ছেড়ে শশীর মুখটা দুহাতে ধরে মুচকি হাসে রিশাদ।
তারপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে শশীকে কোলে তুলে নেয়।
শশীর কাছে স্বপ্ন লাগে সব কিছু।
রিশাদের বুকের ভালোবাসার সমুদ্রে হারিয়ে যায় শশী। লুটিয়ে দেয় নিজেকে রিশাদের কাছে।

দুপুরে মা এসে ঘরে খাবার দিয়ে যাই।
রিশাদ একটু লাজুক স্বভাবের। সবার সাথে তেমন খোলামেলা না। আমার মা কে মা ডাকতেও তার লজ্জা খুব। আসার পর থেকে রুম থেকে একবারটিও বের হয় নি। আমাকেও যেতে দিচ্ছে না।

খাবার প্লেটে শশী বেড়ে দেয়।
শুনতাম বিয়ে হলে বউ নাকি স্বামীকে খাইয়ে দেয়। আমার বউ তো শুধু বেড়েই দিচ্ছে। মুখ গোমড়া করে বলে রিশাদ।
শশীর তো রিশাদের কথা শুনে লজ্জায় লাগে।
খাওয়াবা না শশী আমাকে। আআআ খাওয়াও না।

শশীর লজ্জা লাগলেও রিশাদের কষ্ট লাগবে জেনে সব লজ্জা ভুলে রিশাদকে খাইয়ে দেয়।
এবার আমি খাওয়াবো তোমাকে।
শশী অল্প করে মুখ খুলতেই রিশাদ খাইয়ে দেয়।
শশী রিশাদের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দেয়।

কি হলো শশী! কাদছ কেন? ঝাল লেগেছে। কোথাও কষ্ট হচ্ছে।
শশীকে বুকে টেনে নেয় হাত ধুয়ে।
কাঁদছ কেন পাগলী।
আমার ভয় হয় রিশাদ।

কিসের ভয়। আমি আছি তো তোমার পাশে।
এতো সুখ কি আমার কপালে সইবে।
সইবে মানে কি সইয়ে তো গেছে। এই আমার বুকে তুমি আছো।
আমাকে এখান থেকে কখনো ছুড়ে ফেলে দেবেন না তো আপনি। আমার বাবা যেমন আমার মাকে ছেড়ে চলে গেছে। আপনিও এমন করবেন না তো আমার সাথে। আমার যে খুব ভয় করে রিশাদ।

আমাকে তোমার তাই মনে হয় শশী। তোমাকে আমি বিয়ে করেছি ছেড়ে দেওয়ার জন্য? তোমাকে আমার সারাজীবন চাই নিজের করে। ফের এসব কথা বলো না শশী।
আমার মায়ের মতো এতো ধৈর্য সাহস আমার নেই রিশাদ। আমি যে আপনাকে নিজের ভালোবাসা, সতিত্ব, জীবন সব সঁপে দিয়েছি।
আমার তো আর কিছুই নাই নিজের বলতে।

আমিই তো পুরোটা তোমার হয়ে গেলাম শশী। আর কি চাই তোমার।
আমাকে কথা দিন। আমাকে ধোঁকা দিবেন না। ভুলে যাবেন না কোনোদিন। আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই চলবো। তবু ছেড়ে যাবেন না।
কথা দেওয়া লাগবে কেন। আমার প্রতি বিশ্বাস নেই তোমার।
বিশ্বাসের কথা না। আপনি রাগ করবেন না প্লিজ। আমার শান্তির জন্য কথাটা দিন আমাকে।

ঠিক আছে দিলাম কথা, এবার একটু হাসো।
শশী রিশাকে জরিয়ে ধরে খুশিতে।
দিনে একশবার এমন কথা দিতে পারি যদি কেউ আমাকে কথা দেয়। প্রতিবার সে আমাকে ঠিক এভাবেই জরিয়ে রাখবে।
শশী লজ্জায় খিলখিল করে হেসে দেয়।

রিশাদ মুগ্ধ নয়নে শশীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
এভাবে প্রায় মাঝে মাঝে আসতো রিশাদ। আর মোবাইলে তো দুমিনিট পর পরই কথা হতো দুজনের।
চাতক চাতকীর মতো শশী আর রিশাদ। রিশাদ ফোন না দিলে শশীর কোনোকিছুই ভালো লাগতো না। মিস কল দেওয়ার পর কল ব্যাকে দুমিনিট দেরি হলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতো শশী।

তারপর রিশাদ তার মিষ্টি বউটার মান ভাঙাতো নানা ছলা কলায়।
প্রায় ৬মাস পর শশীকে নিজেদের বাড়িতে অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নেওয়ার তোরজোর শুরু হলো।

যদিও কথা ছিলো না অনুষ্ঠান করার কিন্তু রিশাদের বাবা মা একপ্রকার প্রেশার দিতে থাকলো। রিশাদ নিজেও শশীকে কিছুটা চাপ দিলো ওদের স্টাটাসের কথা বলে।
খুব কষ্ট লেগেছিলো শশীর। রিশাদ এমনটা করবে ও ভাবতেও পারে নি।
ঐ কয়দিন রিশাদ ভালো করে কথাও বলে নি,

কিন্তু ঐ সময়টাতে শশীর রিশাদের সাপোর্টের খুব দরকার ছিলো।
মেয়ের সুখের জন্য শশীর মা নিজের গয়না বিক্রি করে লোন নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করলো।
কিন্তু এর মধ্যে রিশাদের মা একদিন ফোন দিয়ে শশীর মাকে বললো।
বেয়াইন আমরা তো তেমন কিছুই চাই নি। আমাদের হিরার টুকরো ছেলেটাকে আপনাদের দিয়ে দিলাম। তো ছেলে তো আপনাদেরই ছেলের দাদীর খুব ইচ্ছা ছেলেকে আপনারা একটা বাইক আর হিরার আংটি দিবেন,

, আসলে বুঝেন ই তো রিশাদকেও মানুষের সাথে মিশতে হয়। মানুষ যদি জিজ্ঞেস করে। কিরে রিশাদ তোর শ্বশুরবাড়ির লোক কি দিয়েছে। যদি কিছু না দেন তখন কি মুখ থাকবে আপনার জামাতার বলেন। আর মেয়েকে তো আর আপনারা খালি হাতে দিবেন না তা তো জানিই।

শশীর মার হার্ট ফেল হওয়ার উপক্রম।
এতো টাকা কই পাবো আল্লাহ।
কমসে কম ৫ লাখ টাকার জিনিস।
মাথায় হাত দিয়ে ভেঙে পড়ে শশীর মা।

শশী দরজার পিছনে দাড়িয়ে মায়ের অসহায়ত্ব দেখে দুচোখের অশ্রু ফেলে।
আচ্ছা এমন নিয়ম কেন সমাজে।
প্রত্যেকের সন্তানকেই বাবা মা একই কষ্টে ত্যাগ ভালোবাসায় বড় করে। তাহলে মেয়েদের বাবা মাকে কেন সব কিছু দিয়ে মেয়েকে বিদায় করতে হবে। কেন একটা মেয়ে জন্ম নিলে বাবা মার কপালে চিন্তার বিন্দু ফুটে উঠবে।

মেয়েদের যেমন খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছে। ছেলেদের বেলায়ও তো তাই করেছে।
ছেলেপক্ষ এতো কিছু কেন দাবি করে। তারা কি বউ নেয় নাকি একটা কিনলে একটা ফ্রি এই অফার চাই।

কিছুই চাই না বলে বলে বাবা মার শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নেয় জোর করে।
বাড়িতে এনিয়ে সবার মাঝেই দুশ্চিন্তা বিরাজ করে। মায়ের তো প্রেশার বেড়ে অবস্থা কাহিল। কি করবে আমার হতভাগী মা।
মামী তো রিশাদের মায়ের কথা শুনে মামাকে
একহাত নিয়েছে। খুব ঝগড়া হয়েছে মামার সাথে। একদিক থেকে ঠিকই আর কতো করবে আমাদের জন্য।

মামীর সংসারে পরগাছা হয়ে বেঁচে আছি।
সারাজীবন মাকে মামীর খুটা শুনে মাথা নিচু করে চলতে হলো।
আজ প্রচন্ড ঘৃনা হচ্ছে নিজের মেয়ে হয়ে জন্মানোতে। মেয়ে কি বাজারের পন্য যাকে সমাজে টাকা দিয়ে জিনিস দিয়ে বিচার করা হয়,

নিজ্বতা বলতে কিছুই নেই। বাবা মায়ের চিন্তার কষ্টের কারন হতে হয় বার বার। নিজেকে মেয়ে বলে মনে হয় মনে হয় কলুর বলদ।
মাকে ওষুধ খাইয়ে ঘরে এসে মোবাইল টা চেক করে না আজ সারাটাদিনে একবারও কল করে নি রিশাদ। একা লাগে শশীর খুব। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করে।
কিন্তু অসহায় মা আর ছোট ছোট ভাই বোনের মুখটা চোখের সামনে ভেসে আসতেই সাহস পায় না মরতে।

রিশাদকে কল করবে কি না ভাবে। খুব অভিমান হয় রিশাদের উপর। এই এতো ভালোবাসা তাহলে আজকে সারাটা দিন একটু খোজ নিতে পারলো না।
কল করবে না করবে না ভাবত ভাবতে কল করে শশী। রিশাদের সাথে কথা বলাটা যে নেশার মতো হয়ে গেছে। কি করে থাকবে কথা না বলে।
কয়েকবার রিং বাজার পর কল ব্যাক করে রিশাদ।

হ্যাঁ বলো। রূঢ় ভাবে বলে।
খুব কি বিজি আপনি।
হ্যাঁ বিজি। জরুরি কথা থাকলে বলো। নয়তো কাটো কল।
ঠিক আছে। রেখে দিচ্ছি। ভালো থাকবেন। শশীর দুচোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরে।


পর্ব ৪

সারারাত ঘুমাতে পারে না শশী। কি করে ঘুমাবে বড্ড অসহায় লাগছে যে নিজেকে। কেউ নেই পাশে।
নিজের স্বামীটাই যখন কিছু বুঝলো না তখন অন্যের কাছে কি আর আশা করবো আমি।
রিশাদের উপর অভিমান করে মোবাইলটাও অফ করে রাখে। যদিও শশী জানে রিশাদ আজ আর কল করবে না।

ভোরের দিকে চোখটা লেগে আসছিলো। নামাজ টা পড়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। চিন্তায় শরীরটাও দূর্বল লাগছে।
কখন যে চোখ দুটো লেগে আসছিলো বুঝতেও পারেনি।
এতো তো ভালোবেসেছি রিশাদকে।
আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়ে আজ নিজেই অবহেলায় জর্জরিত করছে প্রতিনিয়ত।
এই শশী! এখনো ঘুমাচ্ছিস কেন?

ও মা তুমি। এখন শরীর কেমন মা তোমার?
আমার কথা বাদ দে। শোন না মোবাইল টা বন্ধ করে রাখছিস কেন? শোভনের মোবাইলে রিশাদ কতো বার কল দিয়েছে তোর মোবাইল খোলার জন্য।
দিক কল। পরে কথা বলবো।
চলো তোমাকে ওষুধ খাইয়ে দেই।

আমার কিছুই লাগবে না। তুই রিশাদের সাথে আগে কথা বল।
বললাম তো বলবো। মন না চাইলেও কি জোর করে কথা বলতে হবে তার সাথে আমার এখনি। রেগে বলে।
বেয়াদব মেয়ে মুখেমুখে কথা বলিস কেন? তোর প্রথম থেকেই এ বিয়েতে মন ছিলো না। তাইতো আজও রিশাদ কে মেনে নিতে পারলি।

ভালো যা খুশি কর। আমি মরে গেলে বুঝবি। মানুষের কত অপমান গঞ্জনা সহ্য করে তোরে এতো বড় করলাম কিন্তু তুই। তুই তো বুঝিস ই না আমার কষ্ট। নিজের মন যা চাই তাই করছিস।

আল্লাহ আমারে নেয় না কেন? মরে তোদের মুক্তি দেই। তখন আর কেউ কোনোকিছু নিয়ে জোর করবে না।
এভাবে বলো না মা। শান্ত হও।
না হবো না শান্ত। আমি মরে তোরে শান্তি দিয়ে যাবো রে শশী। আমার চাপে বিয়ে টা করলি বলে রিশাদের প্রতি তোর এতো অনিহা তাই না।
না মা তা না। তুমি ভুল ভাবছ। কাদতে কাঁদতে

আমি ঠিকই ভেবেছি। আমি এতো কষ্ট করছি শুধু তোর সুখের জন্য। আর তুই একটা কথা শুনিস না আমার।
মা তুমি শান্ত হও। তোমার শরীর ভালো না মা।
আমি এখনি কথা বলছি রিশাদের সাথে।
তোর যা খুশি তাই কর আমি আর কিছু বলবো না।
শশীর মা রাগ করে শশীর ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

তোমাকে কি করে বোঝায় মা আমার ভেতরটা কিরূপ ভেঙে চুরে যাচ্ছে।
তুমি বলো আমি রিশাদ কে স্বামী রুপে মানি নি। এই বিয়ে মেনে নেই নি। তাহলে নিজের সব কিছু রিশাদ কে কি করে সঁপে দিলাম। ভালোবাসি আমি রিশাদকে মা খুব ভালোবাসি। আমার সমস্ত জুরে এখন শুধু রিশাদের বসবাস।
রিশাদের অবহেলা টা তুমি দেখো না মা। ভালোবাসার মানুষের অবহেলা কি যে কষ্টের তা কি করে বুঝাবো তোমাকে আমি মা।

শশী চোখের জল মুছে বুকে কষ্ট নিয়ে রিশাদকে কল করে।
কল করা মাত্রই রিশাদ কল রিসিভ করে।
হ্যালো শশী! এই কি ব্যাপার মোবাইল টা বন্ধ করে রেখেছিলে কেন তুমি?
চার্জ ছিলো না তাই। এই প্রথম মিথ্যা বললো। তা না হলে যদি রিশাদ কষ্ট পাই।
ও আচ্ছা! তোমার মোবাইল বন্ধ পেয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম জানো তুমি। আর কখনো এমন করবা না।

শশী তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
কি ব্যাপার হাসলে যে।
রিশাদ একটা কথা জিজ্ঞেস করি আপনাকে।

এই তোমাকে কতোবার বলেছি না আপনা আপনি করবা না। তুমি বলে ডাকতে পারো না
আচ্ছা কি বলবা বলো।
তোমার মা আমার মা কে বললো তোমাকে নাকি দিয়ে দিয়েছে আমাদের।
হ্যাঁ। তো?
রিশাদ আমার মা গরিব মানুষ এতো জিনিস কোথায় পাবে বলো। তুমি একটু বুঝাও না তোমার পরিবারকে। তুমি তো এখন আমার মায়ের সন্তানের মতোই। আমার ঘুম আসে না রিশাদ।

এসব কথা আমাকে কেন বলছো শশী। বড়দের ব্যাপারে আমাকে জড়াবা না। তাছাড়া আমাদের সমাজে জামাতাকে কিছু তো দিতেই হয়। সবাই দেয়। তাহলে তোমাদের সমস্যা কিসের। আমারও তো মানসম্মান বলতে কিছু আছে নাকি?
সবার মতো তো আমরা না রিশাদ। তুমি তো জানো আমাদের সিচুয়েশান। আমার মার পক্ষে এতোকিছু দেওয়া সম্ভব না।

এতো কিছু আমি জানি। দেওয়ার যদি এবিলিটি না থাকে তো আমার মতো বড়লোকের ছেলেকো বিয়ে করেছ কেন?
তোমাদের মতো ছোটলোকরা শুধু নিতেই জানে। দেওয়ার কথা আসলেই নাটক শুরু হয়।
রিশাদ। কান্না করে বলে।
এই চুপ একদম। মুডটাই নষ্ট করে দিছিস।

তোকে যে আমার বউ বানাইছে আমার বাবা মা তাতেই তোর ১৪ গুষ্টির ভাগ্য।
তুই শুনে রাখ যা যা বলেছি দিতে পারলে তোকে বাড়িতে নিয়ে আসবো নয়তো না।
রিশাদ কলটা কেটে দেয়।
রিশাদের হঠাৎ এমন পরিবর্তনে শশীর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।
এ কেমন জীবনসঙ্গী পেলাম আমি। তাহলে কি লোকে ঠিকই বলতো। আমার বাবা আমার মায়ের সাথে যা করেছে আমার সাথেও তাই হবে।

না! না একি ভাবছি। রিশাদ এমন না।
কিন্তু রিশাদ কেমন তাই তো বুঝতে পারি না আমি।
একটা মানুষের এতো রূপ কেন।
শশীর তো এখন কান্না আসছে না ভয়ে। চোখ দুটো স্থির হয়ে আছে। কি হবে এখন ওর জীবনে। রিশাদ যদি ছেড়ে দেয় কি করে মুখ দেখাবে সমাজে। মা তো মরেই যাবে কষ্টে।
আল্লাহ গো এমনটা করো না আমার সাথে। আমি যে বড় অসহায় আল্লাহ। রিশাদই এখন আমার শেষ আশ্রয়।

এভাবে বিয়ে অনুষ্ঠানের দিন ঘনিয়ে আসতে থাকে। আর শশীদের বাড়িতে সবার চিন্তা বাড়তেই থাকে। রিশাদকে এসব নিয়ে কিছু বললেই খারাপ ব্যবহার করে। ২/৩ পর পর কল করে। শশী কল দিলে এখন বেশিরভাগ সময় ফোন ব্যস্ত পায় রিশাদের। ভাগ্যক্রমে কলটা ঢুকলেও সহজে ধরে না রিশাদ। যদিওবা ধরে দুর্ব্যবহার করে।
শশী না পারে সয়তে না পারে কাওকে বলতে। সারারাত শুধু চোখের জলে বালিশ ভিজাই।
জানটা মনে হয় গলা পর্যন্ত এসে থেমে আছে।
আপু রিমি আসছে।

ভেতরে আসতে বল শিমু।
আচ্ছা।
কিরে নতুন বউ। এতো চুপচাপ কেন? তোর বিয়ে আর তোর ভেতরি কোনো আমেজ নাই।
এমনি রে। বস।

কি হয়েছে শশী তোর কি হাল করেছিস নিজের। আয়না দেখেছিস নিজেকে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কি হয়েছে তোর দোস্ত।
শশী রিমিকে জরিয়ে ধরে ঢুকরে কেদে ওঠে।

রিমির বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে ওঠে। এভাবে কাদছে কেন শশী।
কি হয়েছে বল আমাকে। শশীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে রিমি।
কিছু না রে। তোদের ছেড়ে এই সব কিছু ছেড়ে চলে যাবো কিছুদিন পর তাই কান্না আসছে। চোখ মুছে।
সত্যি বলছিস? রিমির কেন যেন শশীকে ঠিক লাগছে না।
হ্যাঁ রে।

তারপর বল। শরীরের এমন অবস্থা কেন? খাওয়া দাওয়া কি শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার আনন্দে ভুলে গেছিস? ।
আরে না! এমনিতেই কিছু খেতে ইচ্ছা হয় না। বমি বমি লাগে। মাথাটা ঘোরে হঠাৎ হঠাৎ।
ডাক্তার দেখিয়েছিলি?

না রে। বিয়ের ঝামেলায় হয়ে ওঠে নি দেখানো।
পিরিয়ড কি ঠিকমতো হচ্ছে?
না রে গত ৩ ধরে বন্ধ।
কি বলিস? তার মানে তো সুখবর আসছে। আমি মনে আন্টি হবো দোস্ত। শশীকে খুশিতে জরিয়ে ধরে রিমি।

শশীর খুশি হওয়ার কথা হলেও অজানা আতঙ্ক মনে জেগে ওঠে।
তারপরও রিমিকে দেখানোর জন্য জোর করা হাসি দেয়।
রিমি অনেকটা সময় শশীর সাথে কাটিয়ে সন্ধ্যার একটু আগে চলে যায়।
শশীর ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে রিমির সংকেতে।
সত্যি কি ও মা হতে চলছে।

নিজের অজান্তেই হাতটা পেটের উপর রাখে। মাতৃত্বের অজানা টান অনুভব করে।
এতো কষ্টের মধ্যেও খুশি হয় শশী।
খুশিতে সব ভুলে যায়। রিশাদকে কল করে বসে আনন্দের সাথে।
হ্যাঁ বলো। রিশাদ কঠিন স্বরে বলে।
রিশাদ আমি মনে হয় মা হতে চলেছি। বাঁধন হারা খুশিতে উচ্ছ্বাসিত হয়ে ওঠে কথাটা বলে।

হোয়াট। রেগে ওঠে রিশাদ।
তুমি খুশি হও নি। আনন্দের মাত্রা পরক্ষনেই চিন্তা আর ভয়ে রূপ নেয় শশীর।
এটা কোনো খুশির খবর বললে তুমি। এটা কোনো সময় হলো বাচ্চা নেওয়ার। এখন আমার বাচ্চা চাই না। এবোশন করে ফেলো।
কি বলছ তুমি? এটা আমাদের প্রথম সন্তান রিশাদ। আমি পারবো না শেষ করতে ওকে।
কেঁদে দেয় শশী।

পর্ব ৫

শশী নিজের পেটে হাত দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে।
শশী মা হয়ে যদি অনাগত সন্তানের প্রতি এতো মায়া অনুভব করতে পারে। তাহলে রিশাদও তো পিতা ওর কেন ঐ সন্তানকে শেষ করতে বলায় কলিজা কাপলো না।
এ কেমন পিতা। পিতা কি এমন হয়। পিতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার সংবাদ শুনে খুশি হওয়ার বদলে রাগ হতে পারে? ।

এমন জীবনসঙ্গী তো চাই নি আমি। আমি চেয়েছি এমন জীবনসঙ্গী যে আমাকে বুঝবে। আমার বিপদে পাশে থাকবে। আমার সন্তানের গর্বিত পিতা হবে। কিন্তু রিশাদের ভেতর এর একটা গুনও নাই।
না চাইতেও রিশাদের উপর প্রচন্ড রাগ হয় শশীর।
বিকালের দিকে রিশাদ শশীদের বাড়ি আসে।
শশী রিশাদকে ঘরে দেখে পাশ কাটিয়ে যাবে তার আগেই রিশাদ শশীর হাত টা টেনে কোমড় জরিয়ে ধরে।

রাগ করেছ শশী। রাগ করো না। আমার মাথা গরম থাকায় তোমাকে তখন উল্টো পাল্টা কথা বলেছি। তুমি তো জানোই তোমাকে আমি কতো ভালোবাসি।
রিশাদ আমাকে ছাড়ো। তুমি বসো আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।
না ছাড়বো। থাকো না একটু কাছে। কতোদিন পর আসলাম।
শশীর বলতে ইচ্ছা করছিলো। কেন আসছো তুমি। একা থাকা তো শিখিয়ে দিয়েছো এই ৬ মাসে। চোখের কোনে জল চিকচিক করে।
সরি শশী! এই দেখো কানে ধরেছি।

ছি! কানে ধরছেন কেনো। আমার পাপ হবে আপনাকে কষ্ট দিলে। কিন্তু আপনার তো আর পাপ হবে না স্ত্রীকে কষ্ট দিলে। অভিমান করে বলে।
অভিমান করেছে দেখি আমার বউটা। খুব অভিমান হয়েছো দেখি। শশীর মুখটা দুহাতে নিয়ে।

আচ্ছা বসো। রিশাদ জোর করে শশীকে পাশে বসিয়ে শশীর ঘারে নিজের থুতনি লাগিয়ে পেছন থেকে জরিয়ে বসে।
এখনো তোমাকে উঠিয়ে নেই নাই। এই সময় যদি তুমি গর্ভবতী হও। আমার আত্নীয় স্বজন শুনলে কি বলবে বলো। বলবে কি রে রিশাদ শ্বশুরবাড়ি থেকে দেখি বউয়ের সাথে বাচ্চা ফ্রি নিয়ে এসেছিস। তোমার কি তখন ওসব শুনতে ভালো লাগবে বলো। তোমাকে নানা কটু কথা শুনতে হবে। তোমার ভালোর জন্যই তো বললাম

চলো এবোশন টা করিয়ে ফেলি। পরের মাস থেকে আমরা সন্তানের জন্য আবার চেষ্টা করবো। প্লিজ লক্ষিটি আমার অনুরোধটা রাখো।
রিশাদ আমি পারবো না। আমি যে মা রিশাদ। ওর জন্য আমি পুরো পৃথিবীর মানুষের সাথে লড়তে পারবো। একটা মায়ের মন তুমি কেন কোনো পুরুষই বুঝতে পারবে না। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। তুমি মেনে নাও রিশাদ।

রিশাদের রাগে চোয়াল ফুলে ওঠে। তারপরও নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখে।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমার বউ যখন চাচ্ছে তাই হবে।
সত্যি। রিশাদকে কাঁদো কাঁদো চোখে জরিয়ে ধরে।
হ্যাঁ সত্যি। চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করে রিশাদ।
শশী।

অন্য রুম থেকে মায়ের ডাকে রিশাদকে ছেড়ে খুশিতে মায়ের কাছে যায় শশী।
বলো মা।
মেয়ের মুখের হাসি দেখে শশীর মাও খুব খুশি হয়। সন্তানের মুখের হাসিই তো সব মায়ের কাম্য
যা জামাই কে কাপড় চেঞ্জ করতে বলে খেতে দে। তোর বুদ্ধি যে কবে হবে। কখন এসেছে আর তুই এভাবে বসিয়ে রেখেছিস। রিশাদ দেখেই কিছু বলে না তোকে।
যাচ্ছি মা। শশী দৌড়ে রিশাদের কাছে যায়।

আপনি রেডি রাইখেন সব আমি ওকে নিয়ে ১ ঘন্টার মধ্যে আসছি।
কোথায় যাবা রিশাদ। খাবা না। রিশাদকে মোবাইলে কথা বলতে দেখে শশী জিজ্ঞেস করে।
না খাবো না।

তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে আছ রিশাদ। ভয়ে ভয়ে।
আরে ধূর পাগলি বউ আমার। তোমার উপর কি রেগে থাকতে পারি বলো। তোমাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যাবো তাই ডিনারের জন্য বুকিং করলাম। বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত তো তোমাকে নিয়ে কোথাও বাইরে যেতে পারলাম না আজ তোমাকে নিয়ে যাবো চলো।
শশীর খুশি যেনো আকাশ ছোঁয়া।

রিশাদের পছন্দমতো শাড়ি পড়তে চাইলেও রিশাদ শশীকে বোরকা পরতে বলে।
উঠিয়ে নেওয়ার আগে কারো সামনে স্বামী স্ত্রী হয়ে বেড়াতে চাচ্ছে না রিশাদ।
শশীর কাছে এখন এসব কিছুই না। রিশাদ যে ওর সিদ্ধান্ত মেনে ওকে আজ বাইরে ডিনার করতে নিয়ে যাচ্ছে এতেই শশী খুশি।

একটা রিকশা ভাড়া করে দুজন রওনা হলো। রিশাদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মৃদু হাসে শশী। এতো ভালো একটা জীবনসঙ্গী পেয়েছি অথচ তাকে নিয়ে কি না কি ভাবছিলাম। ছি। আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি অনেক ভাগ্যবতী যে তুমি আমাকে রিশাদের মতো একজন জীবনসঙ্গী দিয়েছ।
হঠাৎ রিকশা থামায় শশীর ঘোর কাটলো।
নামো শশী!

শশীর রিকশা থেকে নেমে সামনের দিকে তাকাতেই হাসি উড়ে গেলো। মুখে ঘন কালো মেঘ ছেয়ে গেলো।
বুকের মধ্যে অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে গেলো।
রিশাদ আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কেন? তুমি না বললে রেস্টুরেন্টে যাবে তাহলে।

দেখো শশী আমি তোমার স্বামী। আমি যা বলবো করবো তা তুমি শুনতে বাধ্য। আমি এই বাচ্চা এখন
চাই না। নতুন বিয়ে হলো এখন হচ্ছে মজা করার সময় এখন বাচ্চা নিলে আমার মজার কি হবে।

চলো বাচ্চা এখনি এবোট করবা। শশীর হাত ধরে টানতে টানতে।
রিশাদ প্লিজ এমটা করো না। তোমার পায়ে পরি। তুমিও তো পিতা তোমার কি কষ্ট লাগবে এই নিষ্পাপ প্রান টাকে শেষ করতে। ও তো এখনো পৃথিবীর মুখ দেখতে পারলো না। আমার বাচ্চা টাকে মেরো রিশাদ। ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে।
একদম চুপ করে থাক। আমি পিতা আমার দরকার নাই ওকে এখন তাই ও আসবে না। আমার ইচ্ছায় সব হবে।

তুই যদি না শুনিস তোকে এখনি দাড়িয়ে ডিভোর্স দেবো। বল কি চাই তোর। আমাকে না তোর পেটের সন্তানকে। শশীর বাহু জোরে চেপে ধরে।
আমার দুজনকেই চাই রিশাদ। কান্নাজরিত স্বরে। রিশাদ বাহু চেপে ধরায় প্রচন্ড ব্যথা লাগে শশীর

এমন কেন করছ শশী। যা বলছি শোনো না। লক্ষি বউটা। আবার তো হবেই আমাদের।
প্লিজ রিশাদ। দয়াকরো আমার সন্তানের উপর। তুমি তো পিতা এতো নিষ্ঠুর হয়ো না। রিশাদের পা ধরে কাদে।

ঠিক আছে থাক তুই তোর সন্তান নিয়ে। আমি চিরকালের জন্য চলে যাচ্ছি। দেখি তোর সন্তান কার পরিচয়ে বড় হয়। আমি তো আজকের পর থেকে তোকে বউ হিসেবে অস্বীকার করবো। কি বলবি সমাজকে। কার সন্তান তোর পেটে।
রিশাদ। আতঙ্কিত স্থির চোখে বলে শশী।
চল বলছি।

শশী রিশাদের কথা শুনে সব জবাব ভুলে যায় এতো নিষ্ঠুর হতে পারে কেউ। পশুও তো নিজের সন্তানকে জীবন দিয়ে বিপদমুক্ত রাখে তবে রিশাদ কি পশুর থেকে অধম।
শশীকে টেনে এবোশন করার জন্য নিয়ে যায়। শত কাকুতি মিনতি করেও রিশাদের মন গলাতে পারে না শশী।

দেহের অসহ্য কষ্ট আর ব্যথাকেও হার মানায় শশীর মমত্বের আর্তনাদ। জীবন্ত লাশ হয়ে যায় শশী। মা হয়ে নিজের সন্তানকে বাচাতে পারলো না।
ডাক্তার বলেছে ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবা। চলো।
রাশেদ শশীর গায়ে হাত দিতেই গা ঘিনঘিন করে শশীর।

মনে হয় শশীর সন্তান যেনো বলছে মা আমার খুনিটা তোমাকে ছুতে চাই মা। দূরে যাও মা দূরে যাও।
শশী নিজের হাত সরিয়ে নেয় রিশাদের হাত থেকে। কিন্তু বেড থেকে উঠতেই মাথা ঘুরে পড়তেই রিশাদ ধরে ফেলে।
বেশি তেজ দেখাইয়ো না। বউদের এতো তেজ ভালো না। রিশাদ জোর করে আবার হাতটা টেনে রিকশায় উঠিয়ে নিয়ে যায়।

বাসায় এসে রিশাদ শশীর মাকে বলে শশী ব্যথা পেয়েছে ওষুধগুলো যেন ঠিকমতো খাইয়ে দেয়। সাথে কিছু টাকাও দেয় শ্বাশুড়িকে রিশাদ।
শশীর মার তো জামাতার এতো দায়িত্ববোধ আর মেয়ের প্রতি ভালোবাসা দেখে মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। জামাতাকে ছেলে বানাতে গিয়ে মেয়ের কষ্ট ঢাকা পড়ে যায় শশীর মায়ের চোখে।

এসব কথা যেন কাকপক্ষিও টের না পাই। যদি পাই তাহলে শশীর জন্য তা মোটেও ভালো হবে না। এসব বলে শশীকে আচ্ছা মতো শাসিয়ে যায় রিশাদ।
শশী এখন চিৎকার করে কাঁদে না। কেন কাদবে কার কাছে কাঁদবে। কেউ তো নেই শশীর কষ্ট বোঝার মতো। দুচোখ দিয়ে শুধু অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ে। জাহান্নামের আগুন রিশাদ যাকে আকড়ে এখন শশীকে বাঁচতে হবে। শশী তো রিশাদের কাছ থেকে নিস্তার পাবে না।
যদি এই সমাজের মানুষগুলোকে নিজের কষ্টের কথা শুনাতে যাই।

তারা বলবে। স্বামীর তো যুবক বয়স। এমন করবেই। ধৈর্য ধর ঠিক হয়ে যাবে একসময়।
এই একসময় আসতে আসতে অনেক গৃহবধূর জীবনের সময় ফুরিয়ে যায় অকালে।
আচ্ছা যারা বলে ধৈর্য ধরতে।

তারা কি পারবে ধৈর্য ধরতে। পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ অন্যকে জ্ঞান দেওয়া।
ঐ পরিস্থিতিতে পড়লে মানুষ বুঝতে পারবে জ্ঞান দেওয়া আর ধৈর্য ধরার মধ্যে কি তফাৎ।
এভাবে কেটে যায় দিন। শশীকে রিশাদরা উঠিয়ে নেয়। না পারে না শশীর মা রিশাদকে বাইক দিতে। কারন ওতো টাকা তার মতো স্বামী পরিত্যক্তা মহিলার কাছে যোগার করা অসম্ভব। যদিও শশীর মামীর কথা উপেক্ষা করে মামা তার আদরের ভাগনীর সুখের জন্য নিজের জমানো টাকা থেকে ২ লাখ টাকা রিশাদকে দেয়।

কিন্তু রিশাদ ও তার পরিবার যে এই টাকাতে খুশি হয় নি তা কিছুদিন পর তাদের আচরন থেকে শশী বুঝতে পারে।
দিনে বাড়ির ছোটবড় সব কাজ শশীকে করতে হয়।
আর রাতে শশীর উপর চলে রিশাদের পৈশাচিক শারীরিক অত্যাচার।
প্রায় প্রতি রাতে নেশা করে বাড়ি ফেরে রিশাদ।
বোবা পুতুলের মতো বিছানায় পড়ে থাকতো শশী।

সব মুখ বুঝে সহ্য করে শশী। কারন মা এবাড়িতে পাঠানোর সময় বলে দিয়েছিলো মেয়েরা লালশাড়িতে শ্বশুরবাড়ি যায় আর সাদা কাফনে বেড়োয়। তাছাড়া কই যাবে আর শশী। মামাবাড়ি গিয়ে তো মামার বোঝা হতে পারবে না আর।
রান্না ঘরে দুধ জ্বাল দিচ্ছিলো আর ভাবছিলো শশী।
ভাবি মন কই আপনার। আরেকটু হলেই তো দুধ সব পড়ে যেতো। তারপর আবার খালাম্মার গাইল শুনতে হতো আপনার।

আপনি জানেন ভাইজানের আগের বউটাও খালাম্মার ব্যবহারে টিকতে না পেরে গেছে গা।
কাজের মেয়ের কথায় চমকে ওঠে শশী।
আগের বউ মানে। কি বলো শিউলি।
না! না! কিছুনা।

দাড়াও শিউলি। আমার কসম লাগে তুমি আমার ধর্মের বোন হও। দয়াকরে বলো কি বলছিলা। শিউলির সামনে হাত জোর করে।
ভাবি কাওরে কইয়েন না। আসলে রিশাদ ভাইয়ের আগে একটা বিয়ে হইছিলে। রিশাদ ভাই নিজেই পছন্দ করে একা একা বিয়ে করছিলো। কিন্তু খালা আর খালু ঐ মাইয়ারে পছন্দ করে নাই। করবো কেমনে সারাদিন ক্লাব পার্টি করতো খালা খালুরে মানতো না। আবার তার বাপেও কিছু দেয় নাই তারে।

তাই খালা খালুর জোড়াজুড়িতে ভাইয়া তারে ছাইড়া দেয়। আমার কি মনে হয় জানেন ভাবি ভাই তারে এখনো ছাড়ে নাই। নইলে আপনাগো ১ বছর হয়ে গেলো এখনো বাচ্চা হয় না কেন। আবার কেমুন কেমুন ব্যবহারও করে আপনার লগে। স্বামী কি এমন হয়। আমাগো স্বামী আছে না?

পর্ব ৬

শশী নিজের পেটে হাত দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে।
শশী মা হয়ে যদি অনাগত সন্তানের প্রতি এতো মায়া অনুভব করতে পারে। তাহলে রিশাদও তো পিতা ওর কেন ঐ সন্তানকে শেষ করতে বলায় কলিজা কাপলো না।
এ কেমন পিতা। পিতা কি এমন হয়। পিতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার সংবাদ শুনে খুশি হওয়ার বদলে রাগ হতে পারে? ।

এমন জীবনসঙ্গী তো চাই নি আমি। আমি চেয়েছি এমন জীবনসঙ্গী যে আমাকে বুঝবে। আমার বিপদে পাশে থাকবে। আমার সন্তানের গর্বিত পিতা হবে। কিন্তু রিশাদের ভেতর এর একটা গুনও নাই।

না চাইতেও রিশাদের উপর প্রচন্ড রাগ হয় শশীর।
বিকালের দিকে রিশাদ শশীদের বাড়ি আসে।
শশী রিশাদকে ঘরে দেখে পাশ কাটিয়ে যাবে তার আগেই রিশাদ শশীর হাত টা টেনে কোমড় জরিয়ে ধরে।

রাগ করেছ শশী। রাগ করো না। আমার মাথা গরম থাকায় তোমাকে তখন উল্টো পাল্টা কথা বলেছি। তুমি তো জানোই তোমাকে আমি কতো ভালোবাসি।
রিশাদ আমাকে ছাড়ো। তুমি বসো আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।
না ছাড়বো। থাকো না একটু কাছে। কতোদিন পর আসলাম।

শশীর বলতে ইচ্ছা করছিলো। কেন আসছো তুমি। একা থাকা তো শিখিয়ে দিয়েছো এই ৬ মাসে। চোখের কোনে জল চিকচিক করে।

সরি শশী! এই দেখো কানে ধরেছি।
ছি! কানে ধরছেন কেনো। আমার পাপ হবে আপনাকে কষ্ট দিলে। কিন্তু আপনার তো আর পাপ হবে না স্ত্রীকে কষ্ট দিলে। অভিমান করে বলে।
অভিমান করেছে দেখি আমার বউটা। খুব অভিমান হয়েছো দেখি। শশীর মুখটা দুহাতে নিয়ে।

আচ্ছা বসো। রিশাদ জোর করে শশীকে পাশে বসিয়ে শশীর ঘারে নিজের থুতনি লাগিয়ে পেছন থেকে জরিয়ে বসে।
এখনো তোমাকে উঠিয়ে নেই নাই। এই সময় যদি তুমি গর্ভবতী হও। আমার আত্নীয় স্বজন শুনলে কি বলবে বলো। বলবে কি রে রিশাদ শ্বশুরবাড়ি থেকে দেখি বউয়ের সাথে বাচ্চা ফ্রি নিয়ে এসেছিস। তোমার কি তখন ওসব শুনতে ভালো লাগবে বলো। তোমাকে নানা কটু কথা শুনতে হবে। তোমার ভালোর জন্যই তো বললাম

চলো এবোশন টা করিয়ে ফেলি। পরের মাস থেকে আমরা সন্তানের জন্য আবার চেষ্টা করবো। প্লিজ লক্ষিটি আমার অনুরোধটা রাখো।
রিশাদ আমি পারবো না। আমি যে মা রিশাদ। ওর জন্য আমি পুরো পৃথিবীর মানুষের সাথে লড়তে পারবো। একটা মায়ের মন তুমি কেন কোনো পুরুষই বুঝতে পারবে না। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। তুমি মেনে নাও রিশাদ।

রিশাদের রাগে চোয়াল ফুলে ওঠে। তারপরও নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখে।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমার বউ যখন চাচ্ছে তাই হবে।
সত্যি। রিশাদকে কাঁদো কাঁদো চোখে জরিয়ে ধরে।
হ্যাঁ সত্যি। চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করে রিশাদ।
শশী।

অন্য রুম থেকে মায়ের ডাকে রিশাদকে ছেড়ে খুশিতে মায়ের কাছে যায় শশী।
বলো মা।
মেয়ের মুখের হাসি দেখে শশীর মাও খুব খুশি হয়। সন্তানের মুখের হাসিই তো সব মায়ের কাম্য
যা জামাই কে কাপড় চেঞ্জ করতে বলে খেতে দে। তোর বুদ্ধি যে কবে হবে। কখন এসেছে আর তুই এভাবে বসিয়ে রেখেছিস। রিশাদ দেখেই কিছু বলে না তোকে।
যাচ্ছি মা। শশী দৌড়ে রিশাদের কাছে যায়।

আপনি রেডি রাইখেন সব আমি ওকে নিয়ে ১ ঘন্টার মধ্যে আসছি।
কোথায় যাবা রিশাদ। খাবা না। রিশাদকে মোবাইলে কথা বলতে দেখে শশী জিজ্ঞেস করে।
না খাবো না।
তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে আছ রিশাদ। ভয়ে ভয়ে।
আরে ধূর পাগলি বউ আমার। তোমার উপর কি রেগে থাকতে পারি বলো। তোমাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যাবো তাই ডিনারের জন্য বুকিং করলাম। বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত তো তোমাকে নিয়ে কোথাও বাইরে যেতে পারলাম না আজ তোমাকে নিয়ে যাবো চলো।
শশীর খুশি যেনো আকাশ ছোঁয়া।

রিশাদের পছন্দমতো শাড়ি পড়তে চাইলেও রিশাদ শশীকে বোরকা পরতে বলে।
উঠিয়ে নেওয়ার আগে কারো সামনে স্বামী স্ত্রী হয়ে বেড়াতে চাচ্ছে না রিশাদ।
শশীর কাছে এখন এসব কিছুই না। রিশাদ যে ওর সিদ্ধান্ত মেনে ওকে আজ বাইরে ডিনার করতে নিয়ে যাচ্ছে এতেই শশী খুশি।

একটা রিকশা ভাড়া করে দুজন রওনা হলো। রিশাদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মৃদু হাসে শশী। এতো ভালো একটা জীবনসঙ্গী পেয়েছি অথচ তাকে নিয়ে কি না কি ভাবছিলাম। ছি। আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি অনেক ভাগ্যবতী যে তুমি আমাকে রিশাদের মতো একজন জীবনসঙ্গী দিয়েছ।
হঠাৎ রিকশা থামায় শশীর ঘোর কাটলো।
নামো শশী!

শশীর রিকশা থেকে নেমে সামনের দিকে তাকাতেই হাসি উড়ে গেলো। মুখে ঘন কালো মেঘ ছেয়ে গেলো।
বুকের মধ্যে অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে গেলো।
রিশাদ আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কেন? তুমি না বললে রেস্টুরেন্টে যাবে তাহলে।

দেখো শশী আমি তোমার স্বামী। আমি যা বলবো করবো তা তুমি শুনতে বাধ্য। আমি এই বাচ্চা এখন
চাই না। নতুন বিয়ে হলো এখন হচ্ছে মজা করার সময় এখন বাচ্চা নিলে আমার মজার কি হবে।

চলো বাচ্চা এখনি এবোট করবা। শশীর হাত ধরে টানতে টানতে।
রিশাদ প্লিজ এমটা করো না। তোমার পায়ে পরি। তুমিও তো পিতা তোমার কি কষ্ট লাগবে এই নিষ্পাপ প্রান টাকে শেষ করতে। ও তো এখনো পৃথিবীর মুখ দেখতে পারলো না। আমার বাচ্চা টাকে মেরো রিশাদ। ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে।

একদম চুপ করে থাক। আমি পিতা আমার দরকার নাই ওকে এখন তাই ও আসবে না। আমার ইচ্ছায় সব হবে।
তুই যদি না শুনিস তোকে এখনি দাড়িয়ে ডিভোর্স দেবো। বল কি চাই তোর। আমাকে না তোর পেটের সন্তানকে। শশীর বাহু জোরে চেপে ধরে।
আমার দুজনকেই চাই রিশাদ। কান্নাজরিত স্বরে। রিশাদ বাহু চেপে ধরায় প্রচন্ড ব্যথা লাগে শশীর

এমন কেন করছ শশী। যা বলছি শোনো না। লক্ষি বউটা। আবার তো হবেই আমাদের।
প্লিজ রিশাদ। দয়াকরো আমার সন্তানের উপর। তুমি তো পিতা এতো নিষ্ঠুর হয়ো না। রিশাদের পা ধরে কাদে।

ঠিক আছে থাক তুই তোর সন্তান নিয়ে। আমি চিরকালের জন্য চলে যাচ্ছি। দেখি তোর সন্তান কার পরিচয়ে বড় হয়। আমি তো আজকের পর থেকে তোকে বউ হিসেবে অস্বীকার করবো। কি বলবি সমাজকে। কার সন্তান তোর পেটে।
রিশাদ। আতঙ্কিত স্থির চোখে বলে শশী।
চল বলছি।

শশী রিশাদের কথা শুনে সব জবাব ভুলে যায় এতো নিষ্ঠুর হতে পারে কেউ। পশুও তো নিজের সন্তানকে জীবন দিয়ে বিপদমুক্ত রাখে তবে রিশাদ কি পশুর থেকে অধম।
শশীকে টেনে এবোশন করার জন্য নিয়ে যায়। শত কাকুতি মিনতি করেও রিশাদের মন গলাতে পারে না শশী।

দেহের অসহ্য কষ্ট আর ব্যথাকেও হার মানায় শশীর মমত্বের আর্তনাদ। জীবন্ত লাশ হয়ে যায় শশী। মা হয়ে নিজের সন্তানকে বাচাতে পারলো না।
ডাক্তার বলেছে ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবা। চলো।
রাশেদ শশীর গায়ে হাত দিতেই গা ঘিনঘিন করে শশীর।
মনে হয় শশীর সন্তান যেনো বলছে মা আমার খুনিটা তোমাকে ছুতে চাই মা। দূরে যাও মা দূরে যাও।

শশী নিজের হাত সরিয়ে নেয় রিশাদের হাত থেকে। কিন্তু বেড থেকে উঠতেই মাথা ঘুরে পড়তেই রিশাদ ধরে ফেলে।
বেশি তেজ দেখাইয়ো না। বউদের এতো তেজ ভালো না। রিশাদ জোর করে আবার হাতটা টেনে রিকশায় উঠিয়ে নিয়ে যায়।

বাসায় এসে রিশাদ শশীর মাকে বলে শশী ব্যথা পেয়েছে ওষুধগুলো যেন ঠিকমতো খাইয়ে দেয়। সাথে কিছু টাকাও দেয় শ্বাশুড়িকে রিশাদ।
শশীর মার তো জামাতার এতো দায়িত্ববোধ আর মেয়ের প্রতি ভালোবাসা দেখে মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। জামাতাকে ছেলে বানাতে গিয়ে মেয়ের কষ্ট ঢাকা পড়ে যায় শশীর মায়ের চোখে,

এসব কথা যেন কাকপক্ষিও টের না পাই। যদি পাই তাহলে শশীর জন্য তা মোটেও ভালো হবে না। এসব বলে শশীকে আচ্ছা মতো শাসিয়ে যায় রিশাদ।
শশী এখন চিৎকার করে কাঁদে না। কেন কাদবে কার কাছে কাঁদবে। কেউ তো নেই শশীর কষ্ট বোঝার মতো। দুচোখ দিয়ে শুধু অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ে। জাহান্নামের আগুন রিশাদ যাকে আকড়ে এখন শশীকে বাঁচতে হবে। শশী তো রিশাদের কাছ থেকে নিস্তার পাবে না।
যদি এই সমাজের মানুষগুলোকে নিজের কষ্টের কথা শুনাতে যাই।

তারা বলবে। স্বামীর তো যুবক বয়স। এমন করবেই। ধৈর্য ধর ঠিক হয়ে যাবে একসময়।
এই একসময় আসতে আসতে অনেক গৃহবধূর জীবনের সময় ফুরিয়ে যায় অকালে।
আচ্ছা যারা বলে ধৈর্য ধরতে।

তারা কি পারবে ধৈর্য ধরতে। পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ অন্যকে জ্ঞান দেওয়া।
ঐ পরিস্থিতিতে পড়লে মানুষ বুঝতে পারবে জ্ঞান দেওয়া আর ধৈর্য ধরার মধ্যে কি তফাৎ।
এভাবে কেটে যায় দিন। শশীকে রিশাদরা উঠিয়ে নেয়। না পারে না শশীর মা রিশাদকে বাইক দিতে। কারন ওতো টাকা তার মতো স্বামী পরিত্যক্তা মহিলার কাছে যোগার করা অসম্ভব। যদিও শশীর মামীর কথা উপেক্ষা করে মামা তার আদরের ভাগনীর সুখের জন্য নিজের জমানো টাকা থেকে ২ লাখ টাকা রিশাদকে দেয়।

কিন্তু রিশাদ ও তার পরিবার যে এই টাকাতে খুশি হয় নি তা কিছুদিন পর তাদের আচরন থেকে শশী বুঝতে পারে।
দিনে বাড়ির ছোটবড় সব কাজ শশীকে করতে হয়।
আর রাতে শশীর উপর চলে রিশাদের পৈশাচিক শারীরিক অত্যাচার।

প্রায় প্রতি রাতে নেশা করে বাড়ি ফেরে রিশাদ।
বোবা পুতুলের মতো বিছানায় পড়ে থাকতো শশী।

সব মুখ বুঝে সহ্য করে শশী। কারন মা এবাড়িতে পাঠানোর সময় বলে দিয়েছিলো মেয়েরা লালশাড়িতে শ্বশুরবাড়ি যায় আর সাদা কাফনে বেড়োয়। তাছাড়া কই যাবে আর শশী। মামাবাড়ি গিয়ে তো মামার বোঝা হতে পারবে না আর।
রান্না ঘরে দুধ জ্বাল দিচ্ছিলো আর ভাবছিলো শশী।

ভাবি মন কই আপনার। আরেকটু হলেই তো দুধ সব পড়ে যেতো। তারপর আবার খালাম্মার গাইল শুনতে হতো আপনার।

আপনি জানেন ভাইজানের আগের বউটাও খালাম্মার ব্যবহারে টিকতে না পেরে গেছে গা।
কাজের মেয়ের কথায় চমকে ওঠে শশী।
আগের বউ মানে। কি বলো শিউলি।
না! না! কিছুনা।

দাড়াও শিউলি। আমার কসম লাগে তুমি আমার ধর্মের বোন হও। দয়াকরে বলো কি বলছিলা। শিউলির সামনে হাত জোর করে।
ভাবি কাওরে কইয়েন না। আসলে রিশাদ ভাইয়ের আগে একটা বিয়ে হইছিলে। রিশাদ ভাই নিজেই পছন্দ করে একা একা বিয়ে করছিলো। কিন্তু খালা আর খালু ঐ মাইয়ারে পছন্দ করে নাই। করবো কেমনে সারাদিন ক্লাব পার্টি করতো খালা খালুরে মানতো না। আবার তার বাপেও কিছু দেয় নাই তারে।

তাই খালা খালুর জোড়াজুড়িতে ভাইয়া তারে ছাইড়া দেয়। আমার কি মনে হয় জানেন ভাবি ভাই তারে এখনো ছাড়ে নাই। নইলে আপনাগো ১ বছর হয়ে গেলো এখনো বাচ্চা হয় না কেন। আবার কেমুন কেমুন ব্যবহারও করে আপনার লগে। স্বামী কি এমন হয়। আমাগো স্বামী আছে না?

পর্ব ৭

writer- Tanishq Tani
kiya rang laaya dill ka lagaana।
Kiya rang laaya dill ka lagaana।
Goonje Hawa mein।

Bechhde dilaan diyan duhaiyaan
Vey badi lambiyan si judaiyaan
Tere nishaan yadoon mein hai।
Tu kyun nehi Taqdeer mein।
Nadaan dil hain dhoondtah
Qurbat Teri tasveer mein।

Mumkin nehi hai Tujhko bhulana।
Mumkin nehi hai Tujhko bhulana
Dekhe khudaya do aashiqaan diyaan Tabahiyan।
Vey badi lambiyaan si judaiyaan
এতো রাতে এমন গান শুনে কিছুটা বিস্মিত হলো শশী।
দুচোখ বেয়ে এতোদিন পর আবার অশ্রু ঝরে। শশীরের অসহ্য যন্ত্রনা শুরু হয় গানের প্রতিটি কথায়। পাথরের মূর্তি আজ আবার নড়ে উঠলো। পুরোনো ক্ষত যেন দগদগ করছে সমস্ত দেহে। বিছানা খামছে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে কাঁদতে থাকে। ক্রমশ কান্না সকল বাঁধা উপেক্ষা করে আকাশ পাতাল ছেয়ে গেলো। শশী আর্তনাদ করে উঠলো।
গানের কথাগুলো যেন রিশাদের দেওয়া ঘাকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে। নিজের শরীর খামচে চুল টেনে উন্মাদের মতো আচরন করতে থাকে।
কেন রিশাদ? কেন? কি ক্ষতি করেছিলাম তোমার। কেন এভাবে আমার জীবনটা শেষ করে দিলে। মানুষ একটা পালিতো কুকুরের সাথেও তো এমন করে না যেমন একটা মানুষ, একজন একজন স্বামী হিসেবে তুমি আমার সাথে করলে

। আমি তো তোমাকেই ভালোবেসে সব দিয়ে দিয়েছি। তোমাকে সব দিয়ে আজ আমি নিঃস্ব রিক্ত।
আমাকে মেরে কেনো ফেললে না তোমরা। আমি জীবন্ত লাশ হয়ে বাঁচতে চাই না আর।
বাসর ঘরের বিছানার চাদর উল্টে ফেলে শশী। পাগলের মতো শুরু করে।
আমি মরে যাবো। আমার তো সব শেষ। কেন বাঁচবো। আমি বাঁচবো না। শশী সামনে থাকা কাঁচের ভাছ টা ভেঙ্গে কোনোকিছু না ভেবেই হাতের শিরা বরাবর টান মারে।
চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসে ধীরে ধীরে।
ফ্লোরে পড়ে যায় নিথর হয়ে।

সকালে চোখ মেলতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। বেঁচে যাওয়ার ক্ষোভে মনটা বিষিয়ে ওঠে আবার। এই দুনিয়ার বাতাসে এখন শ্বাস নিতেও ঘৃনা লাগে। সব ধোঁকাবাজ। মিথ্যুক।
ভাবি মনি তুমি জেগে গেছো। একটা ৭/৮ বছরের ছেলে এসে শশীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে

ছেলেটার হাতের স্পর্শে শশীর রাগ চলে যায়।
বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়েও উঠতে পারে না শশী হাতের ব্যথায়। হাতে স্যালাইন চলছে।
উঠো না ভাবি মনি। কি লাগবে তোমার বলো। আমি এনে দেবো।
কিছু লাগবে না বাবু। ছেলেটার মাথায় অন্য হাত বুলিয়ে দেয়।
তোমার হাতে খুব ব্যথা তাই না ভাবি মনি? তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি? দাদা ভাই তো ডাক্তার কে খুব বকেছে জানো।

না বাবু আমি ঠিক আছি। এ কষ্টে আমার কিছুই হয় না।
কেনো কিছু হয় না? তুমি কি দাদা ভাইয়ের মতো সুপারহিরো। জানো আমার দাদা ভাইয়েরও এমন ব্যথা লাগে। আমি জিজ্ঞেস করলে বলে তারও নাকি কষ্ট হয় না।
কি করছো নাসিফ। ভাবি মনিরকে ডিস্টার্ব করো না। যাও রুমে গিয়ে বসো।
বাহ রে। আমি কি তোমাকে ডিস্টার্ব করেছি ভাবি মনি বলো?

মুখ ফুলিয়ে বলে।
না বাবু। তুমি তো এতো মিষ্টি একটা ছেলে। এতো মিষ্টি ছেলে কি কখনো কাওকে ডিস্টার্ব করতে পারে। মুচকি হেসে নাসিফের গালে হাত দিয়ে বলে শশী।
দেখছ। আম্মু তুমি সবসময় আমাকে বকো।
হয়েছে রে বাপ তুই ঠিক আমি বেঠিক। এখন যা দাদাভাইকে গিয়ে বল ভাবি মনি জেগে গেছে।

দাদা ভাই তো জানে ভাবি মনি জেগে গেছে। দাদাভাই তো এখনি গেলো এখান থেকে। আম্মু তুমি না কিছুই জানো না।
আহ্ নাসিফ। যেতে বলেছি যাও।
নাসিফ মুখ ফুলিয়ে চলে যায়।
শশী নাফিসের যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে।
এখন কেমন আছো শশী।

জ্বী ভালো। আস্তে করে জবাব দেয়।
উঠে বসবে, আচ্ছা আমি সাহায্য করছি শশীকে খাটের সাথে বালিশ পিঠের নিচে দিয়ে বসিয়ে দেয়।
আমি হচ্ছি অনির ছোট চাচী।
তুমি আমাকে ছোট মা বলতে পারো। অনিও বলে।
এখন বলো কি খাবা। সুপ করে আনি।
না। আমি কিছু খাবো না।

তা বললে কি হবে বলো। ডাক্তার বলে গেছে তোমাকে কিছু খাইয়ে তারপর ওষুধ খাওয়াতে।

আচ্ছা তুমি বসো আমি সুপ নিয়ে আসছি।
শশী চুপচাপ মহিলার কথা শুনলো। এতো আদর কেন করছে বোঝে না শশী। শশী তো ভাবছিলো এখন ইচ্ছা মতো ১৪ গুষ্ঠি উদ্ধার করবে কাল রাতের ঘটনার জন্য। কিন্তু এ তো দেখি পুরোপুরি ধারনার বাইরে ব্যবহার করলো।

কে জানে হয়তো রিশাদের চেয়ে বেশি কিছু মতলব এটেছে এরা।
তা যাই হোক। শশীর এখন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ভয় নেই। মামার সংসারে হাসি ফুটাতে পেরেছে এই যে অনেক শশীর জন্য।
এখন কেউ মেরে ফেললেও কিছু আসে যায় না। শুধু দুঃখ একটাই জনম দুখীনি মা টা সারাজীবন কষ্ট করে গেলো।

সারাদিন বিছানায় শশী। এবাড়ির মানুষগুলোর আচরন শশীর মোটেও সুবিধার মনে হয় না। ওর মতো এমন গরিব তালাকপ্রাপ্তা মেয়েকে কেউ এতো আদর করতে পারে ঘরের বউ হিসেবে তা শশীর হজম হয় না।
কথায় আছে না সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস। আর অসৎ সঙ্গে নরক বাস। শশীর ক্ষেত্রে কথাটা কিছুটা ভিন্নরূপে ধরা দিয়েছে। এতোদিন অসৎ সঙ্গে নরক বাস করে এখন স্বর্গও যে নরক লাগে শশীর চোখে। সব মানুষের মাঝে রিশাদের প্রতিচ্ছবি দেখে।

শশীর এ বাড়িতে শুধু নাসিফ কে ভালো লাগে। সারাটাদিন নাসিফ ভাবি মনির পাশে বসে ছিলে। আর ওর মুখে সর্বক্ষণ দাদাভাই দাদাভাই। দাদা ভাই এটা করে ওটা করে।
আচ্ছা নাসিফ। দাদাভাই কে। তোমার বাবার বাবা বুঝি। সবসময় দাদাভাই দাদাভাই করছো। তোমার দাদি ভাই কি ভালোবাসে না তোমাকে?
নাসিফ খিলখিল করে হেসে দেয়।

ভাবি মনি তুমি কি বোকা। দাদাভাই মানে দাদু ভাই না তো। দাদাভাই আমার অনি ভাইয়া।
শশী একটি লজ্জায় পায় নাসিফের কথা শুনে। কিন্তু এই অনি টা কে। তখন ছোট মাও বললো এনার কথা। আবার এই নাসিফও বলছে।
নাসিফ অনি কে?

শশীর মুখে এমন কথা শুনে নাসিফ হা করে চেয়ে থাকে।
ভাবি মনি তুমি ঠিক আছো তো। অনি ভাইয়া কে জানো না তুমি।
না তো। কে অনি।

অনি হলো তোমার বর। বুঝলে ভাবি একটা অষ্টাদশী মেয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো
ফারিহাপু। নাসিফ মেয়েটিকে আপু বলে জরিয়ে ধরতেই মেয়েটি নাসিফকে কোলে নিয়ে গালে চুমু দিয়ে শশীর পাশে বসে।

নিজের বরকে চেনো না এটা যদি কেউ শোনে মানসম্মান থাকবে তোমার বলো।
সরি। শশী মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো।
আরে ভাবি তুমি সরি বলছ কেন? । আমরা তো ননদ ভাবি মজা করতেই পারি।
মেয়েটা অনেক কথা বললো কিন্তু শশীর এসব কিছুই ভালো লাগছে না।
ঠিক আছে ভাবি তুমি ঘুমাও। আমরা পরে আবার গল্প করতে আসবো। চল নাসিফ।
নাসিফও বাই বলে চলে যায়।

শশীর শরীর মোটেও ভালো লাগছে না। শুয়ে চোখটা বন্ধ করতেই রাজ্যের ঘুম নেমে আসে চোখে।
মাঝরাতে ঘুম ভাঙতেই আবার সেই কাল রাতের গানের গিটারে তোলা সুর শুনতে পায়। কিছুক্ষন যেতেই যন্ত্রনাদগ্ধ কন্ঠে গানটা গাইতে শোনে।
শশীর খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে এতো দরদ দিয়ে কে গান টা গাচ্ছে। যার কন্ঠ শুনে শশী তার বুকের যন্ত্রনা আন্দাজ করতে পারছে।

অনেক কষ্টে বিছানা থেকে স্যালাইন খুলে উঠে গানের উৎসের দিকে এগোতে থাকে।
দরজা খুলে পাশের রুমের দরজায় গিয়ে থামে শশী। হ্যাঁ এখান থেকেই আসছে আওয়াজ।
অসুস্থ শরীরে ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখ পড়ে দেয়ালে টানানো শশীর অসংখ্য ছবি। শশী অবাক হয়ে যায়। প্রত্যেকটা ছবি শশীর কলেজে থাকাকালীন। মাঝে বড় একটা ছবি হ্যাঁ ছবিটা কালকের বিয়ের পোশাকে তোলা। কিন্তু এতো ছবি কোথা থেকে এলো। কে তুললো।
তখনি শোনা যায় কেউ সামনের আধার থেকে গিটার নিয়ে গান গাচ্ছে
শশীকে যেন মোহের মতো গানটা টানে।
Nadaan dil hai dhoondtah
Qurbat teri tasveer mein।
Mumkin nehi hai tujhko bholanaa
Mumkin nehi hai tujhko bholanaa
শশী সামনে এগোতেই কিছুর সাথে ধাক্কা লাগে ওর ওমনি গানটা থেমে যায়।
শশী কিছুটা ভয় পেয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে ঠিক তখনি কারো হাত শশীর হাতটা টেনে ধরে।
ভয়ে নিশ্বাস জোরে জোরে উঠানামা করে শশীর।
হাতটায় টান লাগতেই শশী চোখ বন্ধ করে জড়সড় হয়ে যায়।
শশী কারো শরীরের পরিচিত পারফিউমের তীব্র গন্ধ পায়।
হ্যাঁ এটা তো অনিকেতের শরীরের গন্ধ।

কলেজে যখন তখন অনিকেত শশীর সামনে এসে দাঁড়াতো সিঁড়ি দিয়ে একা যেতে দেখলেই দেয়ালের সাথে শশীর হাত চেপে ধরতো। একটাই কথা বলতো শুধু।
আমাকে কি ভালোবাসা যায় না শশী। একটু ভালোবেসে দেখো। জীবন টা দিয়ে দেবো তোমার হাতে।

বিরক্ত লাগতো শশীর। রীতিমতো রাগ হতো অনিকতের উপর। কিন্তু কিছুই বলতে পারতো না অনিকেত কে। কেন যেন বুকটা দুরুদুরু করতো অনিকেত আশেপাশে থাকলে। গলা শুকিয়ে যেতো অনিকেতের তীক্ষ্ণ নেশা ভরা নজর দেখলে।
আজও বহুদিন পর একই অনুভূতি।
শশী টিপটিপ করে চোখ খুলতেই চোখ কপালে উঠালো।
এ কাকে দেখছে। সেই চেহারা। সেই মানুষটা। হ্যাঁ এতো অনিকেত।
বলেছিলাম না। তুমি না চাইলেও তুমি আমার হবে। পুরো পৃথিবীকে এক করে দেবো তোমাকে পাবার জন্য। আজ দেখো তুমি শুধুই আমার শশী। এই অনিকেতের শশী।

পর্ব ৮

অন্ধকার ঘরে চাদের আলোতে মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে অনিকেত শশী।
শশীর সময় যেন থেমে গেছে মূহুর্তের জন্য। যাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে নিজের জীবনের আশেপাশেও আসতে দেয় নাই। আজ সেই মানুষটায় যে শশীর এতো কাছে চলে এসেছে।
ছাড়ুন আমাকে। আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে ছোঁয়ার। আপনার মতো একটা খারাপ মানুষের ছায়াকেও ঘৃনা হয় আমার।
অনিকেত কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

অনিকেত নেশা করায় শশীর আচমকা ধাক্কাতে তাল সামলাতে না পেরে পাশে থাকা বুক সেলফের সাথে লেগে পড়ে যায়। কপালে বুক সেলফের কোনা টা লেগে কেটে যায় অনির।
টলতে টলতে দেয়াল ধরে উঠে দাড়ায় অনি। কপালের কাটা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই ওর।

শশী চলে যেতেই ঘরের লাইট জ্বলে ওঠে।
চলে যাচ্ছ যাও। শুধু একটিবার বলে যাও কোন দোষে শাস্তি পাচ্ছি আমি। কি এমন পাপ করেছি যে তোমাকে নিজের করে কাছে পাবো না। আমি কি এতোই খারাপ যাকে তুমি একটু ভালোবাসতে পারো না।

এখন তো আমি তোমার স্বামী। সেই খাতিরে না হয় একটু ভালোবাসা ভিক্ষা দাও আমাকে।
তোমাকে ভালোবাসার একটু অধিকার দাও আমায়।
শশীর সামনে হাটু মুড়ে বসে অনি।
শশী অনির কথার জবাব দেবে তখনি দেখে অনির কপাল বেয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে।
একি আপনার তো কপাল কেটে গেছে। কত্ত রক্ত পড়ছে। নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে অনির কপালের কাটা জায়গায় চেপে ধরে মুখোমুখি বসে।

আমার কপালের রক্ত তোমার চোখে পড়ে শশী। কিন্তু হৃদয় যে তোমার ভালোবাসা পাওয়ার বিরহে তোমার বার বার প্রত্যাখানে প্রতিমুহুর্তে রক্তাক্ত হয় তা কি তোমার চোখে পড়ে না। এই বুকের ভেতরের কলিজাটা ছিন্ন ভিন্ন হয়েছে তোমাকে অন্যে হতে দেখে। আমি তো বেঁচেও মরে গেছি সেদিনই।

আজ আবার ভাগ্যগুনে তোমায় পেলাম। কিন্তু আজও তোমার মনে নিজের জন্য একবিন্দু ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারলাম না। এ যে আমার কতবড় ব্যর্থতা কতো বড় দুঃখ তুমি বুঝবে না শশী।

চুপ করুন তো। চলুন আপনার কপালে স্যাভলন লাগাতে হবে। শশী অনিকেত কে অনেক কষ্টে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে দেয়।
অনিকেত নেশার ঘোরে বিরবির করতে থাকে শশীকে নিয়ে।
শশী বিছানায় অনিকে শুয়ে দিয়ে জুতা মোজা খুলে চাদর টেনে স্যাভলন নিয়ে অনির মাথার কাছে বসে।

শশীর দুচোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। অনির কষ্ট দেখে কষ্ট হয় শশীর। অনিকেতের কপালের কাটা জায়গায় মেডিসিন লাগাতে লাগাতে চোখ মুছতে থাকে।
কি অদ্ভুত নিয়ম প্রকৃতির। যাকে এতো ভালোবাসলাম সে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আমাকে শেষ করে দিলো। বাজারের পন্যের মতো ব্যবহার করলো।
আর যাকে আমি তুচ্ছতাচ্ছিল্য, অপমান করলাম সে আমাকে পাগলের মতো ভালোবেসে নিজের জীবন শেষ করছে।

কিন্তু আমার মনে তার জন্য কোনো ভালেবাসায় নেই।
অথচ যে মানুষটা এতো জঘন্য আচরন করলো আমার সাথে। আজও তার জন্যই পরানটা পোড়ে আমার।

তাকে পাবার তীব্র ইচ্ছা মনে জাগে। এতোদিন পথ চেয়ে থাকতাম একটিবার যদি এসে বলতো শশী আমি অন্যায় করেছি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
হয়তো সাত পাঁচ না ভেবেই ঝাপিয়ে পরতাম সব ভুলে তার বুকে। এখন তো সেই ভাবনাটাও নিষিদ্ধ আমার জন্য।

প্রথম প্রেম আর প্রথম স্বামী জন্ম দাগের মতো ঠিক। রয়ে যায় সমস্ত দেহ মন জুরে কোন এককোনে আমৃত্যু।
পৃথিবীর সব ভোলা যায়। কিন্তু তাদের কে কোনোদিন ভোলা সম্ভবই না।
ভাবতে ভাবতে শশী দুচোখে জল ফেলে।
ঘড়ির কাটাতে ঠিক রাত ৩ টা বাজে।
এখন আর ঘুম আসবে না শশীর।

তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার কথা ভাবে শশী।
আগেও মাঝেমধ্যে পড়তো তাহাজ্জুদ।
মায়ের কাছে শুনেছে তাহাজ্জুদের নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে হাত তুললে আল্লাহ সে হাত কখনো খালি ফিরাই না। তিনি তো রহমানির রহিম।

শশী নিজের জন্য একটা সুখী পরিবার চাইতো মাঝেমধ্যেই তাহাজ্জুদে দাড়িয়ে।
একবার স্কুলে পড়াকালীন। মামীর গালমন্দে কষ্ট পেয়ে রাতে তাহাজ্জুদে দাড়ায় শশী। আল্লাহর দরবারে হাত তুলে ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে কাদে। আল্লাহ কে বলে
“ও আল্লাহ তুমি কেন কষ্ট দাও আমাকে। খুব কি পঁচা আমি। আমি শুনেছি কোনো বান্দা বান্দী যদি তোমার দরবারে হাত তুলে কিছু চাই তুমি কখনো তাকে নিরাশ করো না। ও আল্লাহ আজ আমি তোমার কাছে অনেক টাকা চাই। কালই আমার অনেকগুলো টাকা চাই। দিয়ো আমাকে প্লিজ আমার রব”

রাতে খুশি মন নিয়ে ঘুমাই শশী। কাল তো আল্লাহ ওকে অনেক টাকা দেবে। সেই টাকা দিয়ে ও ওর মা ভাই বোনকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠবে। ওদেরকে কেউ আর উঠতে বসতে খোটা দেবে না মামীর মতো।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিছানা হাতরায় শশী। কাপড়ের ড্রয়ার সব কিছু তন্নতন্ন করে খোজে না কোথাও তো টাকা নেই। তাহলে কি আল্লাহ ভুলে গেছে শশীর কথা। শশীর খুব কান্না পাই।
কিরে শশী। সকাল হয়ে গেলো স্কুলে যাবি না।
মা। মা। আল্লাহ কি তোমার কাছে টাকা পাঠিয়েছে।
কি বলছিস। আল্লাহ টাকা পাঠাবে মানে।
ওমা তুমিই তো বললে। আল্লাহ বান্দার খালি হাত ফেরত দেয় না। আমিও তো কাল নামাজ পড়ে দুহাত তুলে মোনাজাত করলাম। আমাকে যেন অনেক টাকা দেয় আল্লাহ তাআলা।
মেয়ের মনের সরলতা দেখে শশীর মা হেসে মেয়ে বুকে জরিয়ে নিলেন।
মা। আল্লাহ মনে হয় আমাকে পছন্দ করে না তাই তো আমার দুআ কবুল হলো না। কাদে মায়ের বুকে শশী।
পাগলী মেয়ে আমার। কে বলেছে আল্লাহ তোকে পছন্দ করে না।

আচ্ছা বলতো তোকে সবচেয়ে কে ভালোবাসে।
কেন তুমি?
না রে মা। আমার থেকেই তোকে আল্লাহ বেশি ভালোবাসে। আমি তোকে জন্ম দিয়েছি।
তিনি তো তোকে সৃষ্টি করেছে। তার সব সৃষ্টি থেকে প্রিয় হলাম আমরা।
তাহলে কেন দিলো না আমাকে টাকা?
শশী তোকে আজ একটা কথা বলি মান বি।
হ্যাঁ।
আল্লাহ কে কখনো প্রশ্ন করবি না। এটা তার সাথে বেয়াদবি হয়।
আচ্ছা বল। সামির তো ছোট বাবু। ও যদি আমার কাছে ব্লেড, ছুরি এসব চাই আমি কি দিবো বল।
না। মা। তাহলে তো সামিরের হাত কেটে যাবে। সামির ব্যথা পাবে।
কিন্তু সামীর যে কাদবে ওসব না পেলে। তোর কষ্ট হবে না ভাইয়ের কষ্ট দেখে। আমি বরং দিয়েই দেবো তাহলে ও খুশি হবে ওর পছন্দের চাওয়া পূরন হয়েছে ভেবে।
না। না। মা। ও ছোট বাবু কিছুই বোঝে না। তুমি তো মা। তুমি জেনে শুনে ওকে ব্যথার জিনিস দেবে কেন।

ঠিক তাই আল্লাহ আমাদেরকে সব দেয় না যা আমরা চাই। কারন তিনি সর্বদ্রষ্টা,
তিনি নিজেই পবিত্র কুরআনে পাকে বলেছেন।
“তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ। তিনিই প্রকাশ্য, তিনিই গোপন এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত।”(সূরা আল হাদিদ, আয়াত ৩)

তাই বান্দার ভালোর জন্য বান্দার অনেক চাওয়া তিনি অপূর্ণ রাখেন।
এইজন্য আল্লাহ কে কখনো প্রশ্ন করবি না কোনো বিষয়ে কারন তিনি যা করবেন যেমন করবেন অবশ্যই ভালোর জন্যই করবেন। এর মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত থাকে।
মনে রাখবি মা আল্লাহ পাক যদি কারো ক্ষতি করতে চাই সেই ক্ষতি ঠেকানোর ক্ষমতা সারাজাহানের কারো নেই। ঠিক তেমনি আল্লাহ পাক যদি কারো কল্যাণ করতে চাই তার অকল্যাণ করার মতো শক্তি কারো নেই।

তাই আল্লাহ কে অসন্তুষ্ট করবি না।
সবসময় বেশি বেশি তওবা করবি। আর ধৈর্যধারন করবি। মনে রাখবি আল্লাহ ধৈর্যশীলকে পছন্দ করে।

শশীর মনের সব কষ্ট চলে যায় মায়ের কথা শুনে। সত্যি কতো ভালো আল্লাহ।
মা তুমি এতো ভালো তাহলে আল্লাহ তোমাকে এতো কষ্ট দেয় কেন?
কারন আল্লাহ যাকে ভালেবাসে তাকেই বেশি কষ্ট দেয়। বেশি বেশি পরীক্ষায় ফেলে।
বান্দা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ফেরেশতাদের ডেকে ডেকে বলে দেখো আমার বান্দা আমাকে কতো ভালোবাসে সে তার কঠিন সময়েও আমার নাফরমানি না করে ধৈর্যধারন করে।
আমার এমন প্রিয় বান্দা বান্দীর জন্যই তো জান্নাতকে সাজিয়েছি।

শশী মায়ের কথা বিভোর হয়ে শোনে। আল্লাহ প্রতি এক প্রবল টান অনুভব করে। সবচেয়ে আপন মনে হয় এখন আল্লাহ কে।
অতীত স্মৃতি মনে পড়তেই মনের ভেতর অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।
অযু করে জায়নামাজে বসে নামাজ পড়ে শশী।

নামাজ শেষে দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে শশী।
ও আমার রব। তুমি আমার মনে আমার দ্বিতীয় স্বামীর জন্য ভালেবাসা সৃষ্টি করো। আমি যেন তাকে সব অধিকার দিতে পারি।
আমার প্রথম স্বামীর জন্য সকল মনের টান মুছে ফেলো হৃদয় থেকে। কারন সে এখন হারাম আমার জন্য।

ও আল্লাহ ও রাহমানির রাহীম আমার সংসারে রহমত দান করো। আমার এই সংসার টা তুমি আমৃত্যু স্থায়ী করো। না হলে সমাজের মানুষের কাছে আমি খারাপ মেয়ে মানুষ বলে গন্য হবো আমার মালিক।
সকল ধোঁকা, সকল লাঞ্চনা অপমান থেকে আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি অধৈর্য্য হয়ে কাল রাতে যে মহাপাপ করতে গিয়েছিলাম তার জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি তোমার দরবারে।

অঝোর কাদতে থাকে শশী আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে।
তাহাজ্জুদ শেষ করে ফজরের আজান শুনে ফজরটাও পড়ে কুরআন তেলওয়াত করতে করতে জায়নামাজেই একসময় ঘুমিয়ে পড়ে শশী।

ভোরের সূর্য অনির চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলতেই নিজেকে নিজের রুমের বিছানায় আবিষ্কার করে। খুব অবাক লাগে
গত একবছরে একটা রাতও অনি নিজের ঘরে কাটায় নি। নিজের গানের রিয়ার্সেল ঘরেই কাটাই শশীর ছবি সামনে নিয়ে গান আর মদের সাথে।
কিন্তু এই রুমে কে নিয়ে আসলো ভাবতে ভাবতে বিছানা ছেড়ে উঠতেই চোখে মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠলো।

আজ এতোবছরের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো। সামনে অনির মনোমোহিনী। স্বপ্ন সুরের গীত শুয়ে আছে।
অনির খুশি চোখে মুখে উপচে পড়ে। আজ ঘুম ভেঙে ওর প্রেয়সীকে দেখে দুচোখ বুঝি আবার বাচার স্বপ্ন দেখছে। ভালোবাসাকে বুকে ধরে আঁকড়ে বাঁচার।
মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে শশীর দিকে অনি। সারাজনম বুঝি শশীকে এইভাবে দেখে দেখেই পার করে দিতে পারবে।

শশীর ঘুম ভাঙতেই অনিকেত কে বাকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে দেখতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় শশী। মাথা নিচু করে বসে থাকে।
শশী অনিকে দেখে অপ্রস্তুত হওয়ায় অনি নিজেও কিছুটা লজ্জা পায়। তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড়িয়ে যায় মাথার চুলগুলো নাড়াতে নাড়াতে।

শশী জায়নামাজ থেকে উঠতে যাবে তখনি অনুভব করে ঘারটা ঘোরাতে পারছে না। বালিশ ছাড়া উল্টো পাল্টা শুয়ে থাকার কারনে ঘারে এই অবস্থা।
কোনোরকমে জায়নামজ উঠিয়ে ঘরটা গুছিয়ে গোসল করতে চলে যায়। শরীর টা খুব ম্যাজম্যাজ করছে তাই।

গোসল করে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ায়। সকালের মিষ্টি রোদে হিমশীতল বাতাস লাগছে সকাল সকাল গোসল করার জন্য। মনটা ফুরফুরে লাগছে আজ,

পর্ব ৯

বেলকনির গ্রিলে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে শশী। এতোদিন পর আজ প্রান ভরে শ্বাস নিচ্ছে। সবকিছুই ভালো লাগছে। ফুরফুরে লাগছে মেজাজ।
কিন্তু হঠাৎ করে ঢুকরে কেঁদে ওঠে।

হৃদয়জুড়ে ভাঙাচুরা শুরু হয়। এ কান্নার সঠিন কারন শশীর জানা নেই। কিন্তু কেন যেন কান্না চোখ মুখ হৃদয় ভেঙে বের হচ্ছে।

বেলকনিতে দেয়াল ঘেষে বসে শাড়ির আঁচলে মুখে চেপে কাঁদতে থাকে।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে চোখ মুখ মুছে উঠে বসে।
ভাবি মনি কই তুমি।
নাসিফের ডাক শুনে শশী রুমের ভেতর আসে।
এই তো বাবু।

নাসিফ দৌড়ে গিয়ে শশীকে জরিয়ে ধরে।
শশী নাসিফের মুখ উচু করে হেসে দেয়।
নাসিফও একগাল হেসে দেয়।
কি অবস্থা এখন তোমার শশী।
জ্বী ছোট মা ভালো।

চলো নিচে সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে খাবার টেবিলে।
জ্বী।
শশী শাড়ির আঁচলে ঘোমটা টেনে নাসিফ আর ছোট মার সাথে নিচে খেতে গেলো।
শশীর খুব লজ্জা লাগছে। নতুন বউ সে জন্য নয়। তালাকপ্রাপ্তা নতুন বউ সেইজন্য। নিজের কাছেই কেমন ছোট ছোট লাগছে।

ফারিহা ভাবিকে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো।
শশী নাসিফ কে নিয়ে বসলো।
কিছুক্ষণ পর একজন ভদ্রলোক গোছের লোক অফিসিয়াল পোষাকে শশীর থেকে কিছুটা দূর গিয়ে বসলো।
ছোট মা প্লেট ঠিক করার ছলে শশীকে বলে
এনিই তোমার শ্বশুর যাও গিয়ে সালাম করো।

শশী কথাটা শুনে উঠেই অনিকেতের বাবা মি.আজিম চৌধুরী কে সালাম করতে যায়।
কিন্তু অনিকেতের বাবা হাত উচিয়ে শশীকে থামিয়ে দেয়।
হতে পারো তুমি অনির বউ। কিন্তু আমি তোমাকে পূত্রবধূ হিসাবে মানি না। আর মানবোও না কোনোদিন। তোমার মতো থার্ড ক্লাস ডিভোর্সি মেয়েকে আমার সোসাইটিতে মানায় না। সো এসব ন্যাকামি আমার সামনে করতে আসবে না। কর্কশ গলায় বলে।
শশী মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে।

অনিকেত উপর থেকে সব দেখে রাগে দাতে দাত চেপে নিচে নামে।
ছোট মা। কি দরকার ছিলো ওনাকে সালাম করতে বলার। তুমি তো ভালো করেই জানো সে আমার কোনো খুশি পছন্দতেই রাজি না।
অনি তুমি মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছ। রাগে আওয়াজ করে বলে আজিম চৌধুরী
শশী আমার স্ত্রী ওর কেউ অপমান করবে আমি তা একদমই সহ্য করবো না। আমার স্ত্রীর অপমান আমার অপমান। সবাই যেন মনে রাখে। কারো ভালো না লাগলে বলুক আমি আমার স্ত্রী কে নিয়ে চিরতরে এ বাড়ি থেকে চলে যাবো।

অনি তুই এসব বলতে পারলি। বাবা হয় তোর। কি করে বলতে পারলি সব ছেড়ে চলে যাবি।
বুঝো না কেন অরুনা। তোমার ছেলের বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়েছে। তাইতো সমাজ সোসাইটি সব বাদ দিয়ে এই মেয়েকে আপন করেছে।
এখন সবাই ছোট এই ২ টাকার মেয়ের কাছে।
বড় ছোটর কথা আসছে কোথা থেকে মম।

আমি শুধু আমার স্ত্রীর অপমানের প্রতিবাদ করছি। স্ত্রী হিসেবে আমার কাছে এতোটুকু সে পেতেই পারে। আমার স্ত্রী কোনো পন্য না যে কেউ তাকে টাকা দিয়ে বিচার করবে।
তোমরা আমার মম ড্যাড তোমাদের আমি রেস্পেক্ট করি তদ্রূপ শশী আমার স্ত্রী ওর মান সম্মান বজায় রাখা স্বামী হিসেবে আমার দায়িত্ব। কোনোভাবেই এই দায়িত্ব আমি এড়িয়ে যেতে পারবো না।

চলো শশী। শশীর হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে যায় শশীকে।
ছোট মা আমাদের খাবার ঘরেই দিয়ে যাও।
যেতে যেতে বলে অনিকেত।
শশী অবাক দৃষ্টিতে অনিকেতের দিকে চেয়ে রইলো। মনে মনে বললো প্রকৃত স্বামী তো অনিকেতের মতো পুরুষ। যারা স্ত্রী কে শুধু বিছানার সাথী, ঘরের দাসী আর বাচ্চা তৈরির মেশিন মনে করে না। জীবনসঙ্গী মনে করে। নিজের পাজরের হাড় দেহের অংশ মনে করে।

নাসিফও দৌড়ে দাদাভাইয়ের হাত ধরে উপরে উঠে যায়।
রুমে এসে শশীর হাত ছেড়ে দেয় অনিকেত।
আপনি আপনার বাবা মায়ের সাথে ওমন আচরন না করলেও পারতেন।
তারা তো আপনার বাবা মা। আমার মতো সাধারণ ডিভোর্সি মেয়ের জন্য আপনি কেন এতোগুলো কথা খরচ করলেন।

একদম চুপ। কি মনে করো কি তুমি। তোমার জন্য তুমি হতে পারো সাধারন বা অন্যকিছু। আমার জন্য তুমি আমার স্ত্রী। আমার ভালোবাসা, প্রানেশ্বরী। যে আঘাত তোমার মনে লাগে সে আঘাত তীর হয়ে আমার বুকেও এসে বিঁধে। কবে বুঝবে তুমি আমাকে, আমার ভালোবাসাকে। আমি মরে গেলে। শশীর বাহু চেপে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসে।
আহ্। খুব জোরে বাহু চেপে ধরায় ব্যথা পায় শশী।

শশী ব্যথা পাওয়ায় অনি শশীর বাহু ছেড়ে নাসিফের দিকে তাকায়
নাসিফ ওদের দুজনকে এভাবে দেখে চোখ বড় করে দাড়িয়ে থাকে।
দাদা ভাই তুমি ভাবি মনি কে মারছ?
নাসিফ কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে।

না তো? আমি তো তোর ভাবি মনি কে আদর করছিলাম শশীর দিকে দাত কটমট করে বলে।
শশী অনির কথা শুনে হা করে চেয়ে থাকে।
হিহিহি।
হাসলি কেন?

এই যে তুমি বললে ভাবি মনি কে। হিহিহি।
পাকা হয়ে গেছিস দেখছি। নাসিফ কে কাতুকুতু দিতে দিতে বলে।
নাসিফ দাদাভাইয়ের কাতুকুতুতে বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে হেসে কুটিকুটি হয়।
শশী দাড়িয়ে নাসিফ আর অনিকেতের দুষ্টুমি দেখে মুচকি হাসে।
ভাইজান! আপনার আর নতুন ভাবির খাবার।
সামনের টি টেবিলে রেখে তুই যা।

নাসিফ বাবাই! তুমি আমার সাথে নিচে চলো। ছোট চাচিম্মা তোমাকে যেতে বলেছে।
না তুমি যাও। আম্মু কে বলো আমি যাবো না। দাদাভাইয়ের কাছে থাকবো।
বাবাই! তোমার স্কুলের সময় হয়ে গেছে তো। রেডি হবা না।
না আমি স্কুলে যাবো না আজ।

সুপারস্টার এটা তো ঠিক না। তুই তো আমার সুপারস্টার তাই না। সুপারস্টার রা কখনো স্কুল বন্ধ দেয় না। go সুপারস্টার।
নাসিফ কে অনেক বুঝিয়ে কাজের মেয়ের সাথে পাঠিয়ে দেয়।
দাড়িয়ে আছো যে?
এখান এসে বসো।

শশী চুপচাপ এসে অনিকেতের পাশে বসে।
অনিকেতের রাগের সাথে অনেক আগে থেকেই পরিচিত শশী। এলাকার সব ছেলেরা ভয় পাই অনিকেত কে। এলাকায় আলাদা প্রভাব রয়েছে অনিকেত ও ওর বন্ধুদের।
খাও। শশীর প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে বলে।
শশীর ডান হাতটার শিরা কেটে যায়। রুটি ছিড়তে গিয়ে হাতের শিরায় টান লেগে ব্যথায় কুকড়ে ওঠে শশী।

চোখ দিয়ে পানি বের হয়।
অনিকেত খাবার মুখে নিতে গিয়ে শশীর চোখের পানি দেখে খাবার মুখে নিতে পারে না
হা করো।

জ্বী। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
যা বলি তাই করো।
শশী আর কথা বাড়ানোর সাহস পায় না।
চুপচাপ হা করে।
অনি নিজের খাবার টুকরা টা নিজে না খেয়ে শশীর মুখে দেয়।
আমি খেতে পারবো। আপনি খান। আস্তে করে বলে।
এতো কথা বলো কেন? আমাকে পছন্দ করো না জীবনে হয়তো ভালোবাসতেও পারবে না। ঠিক আছে।

আমিও জোর করছি না আর কোনোদিন করবোও না। ডোন্ট ওরি।
কিন্তু তোমার কোনো কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না পারবোও না। তোমার কষ্ট দূর করে তোমাকে ভালো রাখার জন্য যা করার দরকার সব করবো আমি। এক্ষেত্রে তোমার কোনো বাঁধা নিষেধ আমি শুনবো না। গট ইট।
এই হাত একবার যখন ধরার সৌভাগ্য পেয়েছি। দুনিয়া উতাল পাতাল হয়ে গেলেও এই হাত আর ছাড়াতে পারবে না।

তুমি নিজেও ভালো করে জানো কতোটা জেদি আমি।
এখন চুপচাপ খাওয়াতে দাও।
শশী চোখ নিচু করে তাকিয়ে অনির সব কথা নিরবে শুনে যায়। শশী বুঝতে পারে শশীর কারনে অনিকেত কতো কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু জোর করে তো আর ভালোবাসা যায় না।
শশীর দেহ মন জুরে যে রিশাদের আবাস।

হাজার বাঁধা ঘৃনা উপেক্ষা করে এখনও রিশাদের স্মৃতি মস্তিষ্ক জুরে রয়ে গেছে।
শশীকে খাইয়ে শশীর হাতের ক্ষতে নিজেই ড্রেসিং করে দেয় অনিকেত।
কোনোকিছু দরকার হলে ছোট মা অথবা ফারিহা কে বলবে।
আমার আসতে রাত হয়ে যেতে পারে। একটা কনসার্টে শো আছে আজ।
আলমিরা থেকে ব্লেজারটা বের করে রুম থেকে বের হয়ে যায় অনিকেত।
শশীর খুব ইচ্ছা করে অনিকেত কে বলতে আপনি আমাকে একা রেখে যাবেন না প্লিজ।
কিন্তু বলতে পারে না। কোন মুখে বলবে। কি দিতে পারবে অনিকেত কে কিছুই যে আর নেই শশীর।

খাবারগুলোর দিকে তাকাতেই মনে পড়ে অনিকেত না খেয়ে গেছে।
নিজের মুখের খাবার আমার মুখে তুলে দিয়ে নিজে খালি পেটে চলে গেলো।
আর আমি একটিবার তাকে বললাম না খেয়ে যান আপনি।
আজ সারাদিন ফিরবে না। কি খাবে কখন খাবে। শশী তুই সত্যি খারাপ। ভালো না বাসতে পারিস। যে এতো কেয়ার করে বিনিময়ে তার তো একটু কেয়ার করতে পারিস নাকি?
লোকটা না খেয়ে চলে গেলো। মনটা খারাপ হয়ে যায় শশীর।
অনিকেতের জন্য খারাপ লাগে।

শশী নিচে যাওয়ার সাহস পাই না। চুপচাপ ঘরে বসে আছে। গল্প উপন্যাসের বই থাকলে এই বসে থাকাটায় একঘেয়েমি আসতো না।
কি ব্যাপার চুপচাপ ঘরে বসে আছ যে। এ বাড়ির বউ তুমি। এভাবে চুপচাপ একা ঘরে বসে থাকা কি মানায় তোমার।

অনিকেতের মায়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনে শশী ভয় ও লজ্জা দুটোয় পায়। মুখটা ছোট হয়ে যায় ভয়ে।
এদিকে আসো। আমার পাশে বসো। বিছানার উপর বসে শশীকেও বসায়।
কয়েকটা জুয়েলারি বক্স আর শপিং ব্যাগ নিয়ে বিছানায় রাখে অনিকেতের মা।
দেখো বউ মা। সকালে যা হয়েছে তার জন্য মনে কিছু নিয়ো না। অনি আমাদের একমাত্র আদরের ছেলে। ওর বিয়ে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিলো। তুমিই বলো তুমি কি তোমার ছেলের জন্য কোনো ডিভোর্সি মেয়ে বউ হিসেবে চাইতে।
শশীর না সূচক মাথা নাড়ায়।

তাহলে আমি বা অনির বাবা কি করে তোমাকে মেনে নিবো বলো।
আন্টি আপনি যদি চান আমি এখনি চলে যাবো। আমি বুঝি আপনাদের কষ্ট। আসলে আমি তো এতো কিছু জানতাম না। আমার মতো মেয়ের কারনে আপনাদের পরিবারে ঝগড়া মনমালিন্য হোক তা আমি কোনোভাবেই চাইবো না।
কিন্তু এখন তো তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে কি করে যাবে। আর আমি যতোদূর জানি তুমি ও তোমার মা তোমার মামা বাড়িতে আশ্রিতা। তারা তোমাকে কি আবার মেনে নেবে নিজেদের কাছে।

ও নিয়ে আপনি ভাববেন না আন্টি, আল্লাহর দুনিয়ার কোথাও না কোথাও ঠাঁই হবেই আমার।
আমি কি এখনি চলে যাবো আন্টি।

ঠাসসসসস
শশীর গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিলেন মিসেস অরুনা চৌধুরী।
তুমি কি হ্যাঁ। কি করে পারো এতো সহ্য করতে। নিজে তো জ্বলে পুরে শেষ হয়ে যাচ্ছ সাথে আমার ছেলেটাও শেষ করে দিচ্ছ।
আমার ছেলেটা পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াই করে তোমাকে নিজের করে নিলো আর তুমি কি? এতো সহজে ওকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছ।

তুমি জানো তোমার বিয়ের খবর শোনার পর থেকে গত ১ বছর আমার ছেলেকে আমি হাসতে দেখি নি। সারাদিন গান আর তোমার ছবি নিয়ে পড়ে থাকতো।
কিন্তু গত পরশু আমার অনিকে আমি আবার হাসতে দেখেছি। আগের মতো খুশি দেখেছি ওর চোখে মুখে।

কেমন মেয়ে তুমি এমন হিরা কে না চিনে পচা শামুককে গ্রহন করেছ।
আবার বলছ ছেড়ে যাবে আমার ছেলেকে। গিয়েই দেখো না এবার আমিই তোমার ঠাং ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো। শশীকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দেয় মিসেস অরুনা।
শশী তো অবাক হয়ে যায় অনির মায়ের ব্যবহার দেখে। শশীর চোখেও পানি চলে আসে।
হয়েছে হয়েছে অনেক কেঁদেছ আর আমার ছেলেটাকেও কাদিয়েছ। আর কাদবে না। শশীর চোখের পানি নিজে হাতে মুছে দিয়ে।

আমি তোমাকে ছেলের বউ হিসেবে শুধু নয় মেয়ে হিসেবে গ্রহন করলাম।
আর মেয়েকে তো আর তুমি তুমি বলবো না। তুই করেই মা বলে ডাকবো। ঠিক আছে হাসি দিয়ে বলে।

এখন হাত দুটো দাও তো বালা পড়িয়ে দেয়। নতুন বউয়ের হাত খালি থাকতে নেই।
শশীর ডান হাতে ব্যান্ডিজ দেখে বাম হাতেই দুটো বালা পড়িয়ে দেয় অরুনা চৌধুরী। সাথে শাড়ি গয়না তো আছেই।
এসব আমার শ্বাশুড়ি আমাকে দিয়েছিলো আজ তোকে দিলাম। যত্ন করে রাখবি আমার ভবিষ্যত নাত বউয়ের জন্য।
এমন কথা শুনে শশী কিছুটা লজ্জা পায়।

পর্ব ১০

শাশুড়ি মা পুরো বাড়িটা বাড়ির চাকর বাকর সহ পরিবারের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
হুট করে ঘরোয়াভাবে বিয়েটা হওয়াতে কেউ এ বিয়ের বিষয় টা জানে না।
রান্নাঘরে অরুনা চৌধুরী, ছোট চাচিমা সুমাইয়া চৌধুরী, ফারিহা, সবাই মিলে গল্প করছে আর শশীকে অনি সহ এ বাড়িতে কে কেমন সব বলছে।

আচ্ছা ভাবি তুমি তো ভালো বিরিয়ানি আর ভুনা খিচুরী রান্না করতে পারো তাই না?
ভালো হয় কি না জানি না। তবে পারি রান্না করতে। কিন্তু তুমি কি করে জানলে।
জানি জানি। আমার কাছে জাদু আছে। আরো অনেক কিছু জানি শুনবা? শশীর হাতে মাথা ঠেকিয়ে।

আন্দাজে। কপাল কুচকে তাকায় শশী।
বিশ্বাস করলে না তো তোমার ননদীনিকে।
তাহলে প্রমান দেই
তুমি রোমান্টিক গল্পের চেয়ে এডভেঞ্চার টাইপ গল্প বা মুভি লাইক করো। তুমি হরর মুভিওলাইক করো। যদিও ঐ মুভির ভয় একসপ্তাহ তোমার মধ্যে থাকে। আমি এটাও জানি স্কুল লাইফে একদিন কেনো ফ্রেন্ডসের থেকে গল্পের বই নিয়ে বাসায় এসে স্কুল ড্রেস চেঞ্চ খাওয়া দাওয়া ভুলে ঐ অবস্থায় গল্পের পুরো বইটা পড়া সন্ধ্যা দিকে শেষ করো।

হ্যাঁ। এসব তুমি কি করে জানলে। অবাক তাকায় ফারিহার দিকে।
বলছিলাম না। আমার কাছে জাদু আছে।
শশীর অবাক লাগে এই মেয়ে এতো কিছু কি করে জানলো। হয়ত মা বা কাজিনদের কেউ বলেছে।

বলো না ফারিহা কি করে জানলে এসব।
ওমা। বললাম ই তো। জাদু দিয়ে। তোমার কিছু জানার প্রয়োজন হলে বইলো আমি জাদু দিয়ে সব বলে দেবো।
শশী ভাবে সত্যি কি জাদু টোনা এসব আছে নাকি। সব ভূয়া কথা। ফারিহা নিশ্চয়ই কারো কাছ থেকে শুনে এখন ভাব নিচ্ছে সব জানি জাদু দিয়ে। বেক্কল মাইয়া হিহিহি
হুম ভালো হয়েছে। এতো জানা তো ভালো না ননদীনি। বেশি জানলে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেবে। ফিসফিস করে ফারিহা কে বলে শশী।

সত্যি বলছ। আলহামদুলিল্লাহ। ভাবি তোমার মুখের কথায় আল্লাহ রহমত দিক।
এ্যা। এই তুমি খুশিতে লাফাচ্ছ কেন? পাগল টাগল হয়ে গেলে নাকি।
হ ভাবি। তুমি যেই কথা বলেছ পাগল না হয়ে কই যাবো বলো। আমার এখনি ভেতরে কুচ কুচ হোতাহে বিয়ের কথা শুনে।

ফারিহা। তুমি বিয়ের কথা শুনে এমন করছ। সিরিয়াসলি। কোনো মেয়ে যে বিয়ের কথা শুনে এমন লাফাতে পারে এই প্রথম দেখলাম। পারোও তুমি।
আরে ভাবি। তুমি আসলেই কিছু বুঝো না। বিয়ে মানে কত্ত আনন্দ। ভরপুর রোমাঞ্চ। আমি তো রাতুল কে বলেছি বিয়ের পর আমাকে দার্জিলিং নিয়ে যেতে। ঠান্ডা ঠান্ডা মৌসুমে দুজন এক চাদরে। উই। কি খুশি লাগছে। শশীকে জরিয়ে ধরে ভাবনায় হারিয়ে যায় ফারিহা।
কি রে ফারিহা। এভাবে জরিয়ে আছিস কেন শশীকে।

কই ছোট মা। আমি তো আদর করছিলাম আমার ভাবিকে। তাই না ভাবি। আই লাবু ভাবি। চোখ টিপ দিয়ে বলে ফারিহা।
এই ফারিহা আর ফারিহার ভাই দুটোই দেখি এক ধাঁচের গড়া, হবেই বা না কেন রক্তের ভাইবোন না। লজ্জা শরম বেচে খাইছে।

এই অনি কলেজে জ্বালিয়ে মারছিলো শশীকে। এতে প্রেমভাব কই পায় ভাইবোন দুটো আল্লাহ জানে। রোমাঞ্চ মনে হয় মাথার মধ্যে গিজগিজ করে।
অনির সাথে প্রথম দেখা হয় রিমির সুবাদে।
শশীদের কলেজের সামনের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছিলো আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ অনিকেত।

বাসকেট চ্যাম্পিয়ন ছিলো কলেজের। বাস্কেট টুর্নামেন্ট প্রতিযোগিতা দেখতে রিমি একপ্রকার জোর করে ধরে কলেজের পাশের মাঠটাই নিয়ে যায় শশীকে।
শশীর এসব খেলা একদম ভালো লাগে না। সব গুলো ছেলেকে হা করে গিলছে মেয়েগুলে। বিশেষ করে শশীদের গ্রুপের সবচেয়ে ডঙি স্মার্ট মেয়ে মিলা।

একটু পর পর একটা ছেলেকে মিলা অনি মাই বেবি বলে চিৎকার করছে। ছেলেটা অন্যসব ছেলেগুলে থেকে একটু বেশিই ড্যাসিং। ৬ ফুটের কাছাকাছি। সুঠাম দেহ। মাংসপেশি গুলো নিয়ে দেখে বোঝা যায় সেই লেভেলের জিম করে।
রিমির কানটা ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে এই ডঙির ডং দেখে।

শশীরে আমার তো মনডা চাচ্ছে লাত্থি দিয়ে মিলার বাচ্চারে মাঠে ফালাই দিতে।
ঐ ছেলে যে ওকে পাত্তাও দিচ্ছে না সেদিকে মহারানীর কোনো হুশ নেই বেহায়ার মতো অনি মাই বেবি ডং। ভেঙছি কেটে বলে
বেশি ক্ষন বসে এই মিলা আর বোরিং বাস্কেট বল খেলা দেখে বিরক্ত লাগে শশীর।
ঐ রিমি তুই যাবি না আমি একাই যাবো।
এমন করছিস কেন। থাক না একটু খেলা তো প্রায় শেষ ই।
তুই থাক।

শশী রিমির উপর রাগ করে উঠে চলে আসে মাঠ থেকে।
মাঠ থেকে কিছুদূর ফাঁকা গলি দিয়ে হেটে যাচ্ছে শশী
ভর দুপুর সময় পুরো গলিটা ছমছমে লাগছে। সবাই খেলা দেখতে যাওয়ায় গলিটা এতো ফাঁকা। শটকাট তাড়াতাড়ি করে বাসায় যাওয়ার জন্য মেইন রোড দিয়ে না গিয়ে এই রাস্তায় আসছে।

অনেক দূর আসার পর শশীর মনে ভয়টা বেশিই চেপে গেছে।
৫ মিনিটের রাস্তা চলে এসেছে। কিন্তু ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। রিমির উপর আর ঐ ডঙির উপর বিরক্ত হয়ে কি মনে করে যে এ রাস্তায় এলো খেয়ালি নাই শশীর
আর রিস্ক না নিয়ে আবার কলেজ মাঠের দিক উল্টো পথে হাটা শুরু করলো।
৫ মিনিটের রাস্তা ৩ মিনিটেই শেষ করে মাঠে এসে দেখে সব ফাঁকা।
একি গেলো কই সব।
ঐ রিমি রিমি।

এদিক ওদিক উঁকি দিয়ে খুজতে থাকে রিমি কে। হঠাৎ পেছনে ঘুরতেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা লাগে।
উপরে তাকাতেই কলিজা শুকিয়ে আধা হয়ে যায়। অনিকেতের বুকে হাত দিয়ে শশী দাড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি করে অনিকেতের বুক থেকে হাত সরিয়ে দূরে সরে যায়।
অনিকেত স্পিডের ক্যান থেকে চুমুক দিয়ে খেতে থাকে আর শশীর দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে ধীর পায়ে এগোয়।

দেখুন সামনে আসবেন না একদম। আমি কিন্তু চিল্লাবো।
ভাই ভাবি তো দেখি চিল্লাবে বলে। ও ভাবি চিল্লাইয়েন না। আমার ভাইয়ের মানসম্মান সব শেষ হয়ে যাবে তাহলে। পেছনে দাড়িয়ে অনির বন্ধুরা মজা করতে থাকে।
অনি পেছনে তাকাতেই।
শশী এই সুযোগে দেয় ভো দৌড়।

গেটের সামনে গিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখে ঠিক ঐ ভাবে এখনো অনিকেত তাকিয়ে আছে।
গুন্ডা বদমাশ সবগুলো। বলে আবার দৌড়ে চলে যায় সামনে থেকে।
এরপর প্রায় প্রতিদিন অনিকেত কে শশী মহিলা কলেজের সামনে দেখতো।
মাঝেমধ্যে টিচারদের সাথে কথা বলার বাহানায় কলেজে ঢুকে পড়ত।
অনিকেতের পারফিউমের গন্ধ শশী অনেকদূর থেকে চিনতে পারতো।
বুঝতে পারতো তখন অনিকেত আশেপাশেই আছে।

শশী নিজেও এখন অনিকেতের জন্য দূর্বলতা অনুভব করে। যদিও প্রথম থেকেই সব মেয়েদের মতো অনিকেত কে ওর ভালোই লাগতো।
কিন্তু নামেই ও শশী(চাঁদ, ) বাস্তবে ও তো পৃথিবীর ধূলো।
একদিন মিলা এসে হঠাৎ হাতটা ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতে লাগলো।

শশী অনিকেত মোটেও ভালো ছেলে না। আমি জানি অনিকেত তোকে ভালেবাসার নামে মিথ্যা অভিনয় করছে। ও আমার সাথেও এমন করেছিলো। এগুলে সব ওর অভিনয়।
বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে। মেয়েরা ওর জন্য একরাত্রের বিছানার সাথী। তারপর ও ছুড়ে ফেলে দেয় রাস্তায় তাদের। অনেক মেয়ের জীবন ও নষ্ট করেছে। তুই ওর ফাদে পা দিস না।

তোর সাথেও কি বিছানায় গিয়েছিলো অনি ভাই মিলা। পেছন থেকে হঠাৎ এসে রিমি প্রশ্ন করে মিলাকে
দেখ শশী, তোর বাবা নাই মামার বাড়ি আশ্রিতো থাকিস তাই বললাম তোর ভালোর জন্য
রিমির কথার জবাব না দিয়ে রিমিকে ভেংচি দিয়ে চলে যায়।
দেখলি কত্তবড় মিথ্যাবাদী মিলা টা।
মিথ্যা বলেছে তুই কি করে বুঝলি। কারো সম্পর্কে এতোবড় কথা কেউ কখনো মিথ্যা বলতে পারে না।

মনে রাখিস যা রটে তা কিছুটা বটে।
হ তুই সব বুঝিস। ও ইচ্ছা করে অনি ভাইয়ের নামে মিথ্যা বললো। অনি ভাই ওকে পাত্তা দেয় না তাই। বুঝতে পারছে তোকে ভালোবাসে তাই তোর মন বিষানোর জন্য অনি ভাইয়ের নামে মিথ্যা বলছে।

এসব ছেলেরা কখনো কাওকে ভালোবাসে না। এরা শুধু মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলে।
তুইও মিলার কথা বিশ্বাস করছিস।
ঐ দিন রিমির সাথে শশীর অনেক কথা কাটাকাটি হয়। জানের বান্ধবীটার সাথে আজ ঐ গুন্ডা অনির জন্য ঝগড়া লাগলো। ওকে তো কোনোদিন আমি ভালোবাসবো না। একপ্রকার জিদ চেপে যায় শশীর।

ভাবি কি করছ।
ফারিহার ডাকে অতীত স্মৃতিচারন থেকে বাস্তবে ফেরে শশী।
আরে ভাবি কি প্লেট পুলেট ধুচ্ছ। রাখো তো এসব। চলো ভাইয়ার কনসার্ট শুরু হয়ে গেছে হয়তো।
চলো চলো।
শশীকে টেনে ধরে ড্রইং রুমের সোফায় দুজন বসে।
এই নাসিফ তোর শিনচ্যান বাদ দিয়ে চ্যানেল আইতে দে। দাদাভাইয়ের গান শুরু হয়েছে।
সত্যি আপু।

নাসিফ দাদাভাইয়ের গান শোনার জন্য শিনচ্যান দেখা বাদ দিয়ে চ্যানেল আইতে দেয়।
না হলে জীবনেও চ্যানেল পাল্টাতো না ও
রাইজিং সিঙ্গিং স্টার অনিকেতের গান শোনার জন্য হাজার হাজার মানুষ কনসার্টে এসেছে।

তখনি লাইট মঞ্চে পড়তেই অনিকেতের গান শুরু হলো। গিটার হাতে বসে গান শুরু করে অনিকেত
ভালেবাসার সাগর তুমি ইইইইই
বুকে অথৈ জল
তবু পিপাসাতে আখি

হয় যে ছলো ছল
হয় যে ছলো ছল
তোমার মিলনে বুঝি গো জীবন।
বিরহে মরন
বিরহে মরন।

তুমি আমার এমনি একজন।
যারে একজনমে ভালেবেসে ভরবে না এ মন
একজনমের ভালোবাসা
একজনমের কাছে আসা
একটি চোখের পলক পড়তে লাগে যতক্ষণ।

পর্ব ১১

শশী মুগ্ধ হয়ে অনিকেতের গান শোনে। এতো সুন্দর মোহমুগ্ধতা ওর কন্ঠে যে কেউ বিভোর হয়ে রবে গান শুনতে শুনতে।
শশীও ঠিক তাই হয়ে আছে।
ভাবি। শশীর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে

হুম। হুমমম। গানের মধ্যে এতোটায় বিভোর ছিলো ফারিহার ডাকে হকচকিয়ে যায়।
গানের মধ্যে ডুবে গেছো তাই না?
আরে তেমন কিছু না। সরো রান্নাঘরে যাবো আমি।
আরে কিসের রান্নাঘর। চুপ করে বসো তো এখানে। শশীর হাত টেনে বসিয়ে দেয়।
তুমি জানো ভাই এতো সুন্দর করে গান কেন গায়।
না জানি না। মুখ ছোট করে বলে।

তোমার জন্য।
আমার ভাই তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে যেখানে ওকে পাবার জন্য বাংলাদেশের মেয়েরা পাগল। আর তুমি আমার ভাইকে গুনো ই না। আর কতো কষ্ট দিবা আমার ভাইটাকে।
তোমার ভাইকে এতো কষ্ট করতে বলেছে কে শুনি। বাংলাদেশের যেসব মেয়েরা তার জন্য পাগল তাদেরকে ভালোবাসলেই পারে।
মুখ ভেংচি দিয়ে।

আমি হইলে তোমাকে জোর করে। থাক কমু না।
কি করতা।
ভাগ্য ভালো তোমার আমি অনি ভাইয়া না।
না হলে এতো অহংকার কিসের তোমার। জোর করে হলেও নিজের করে নিতাম তোমাকে।

জোর করলেই সব পাওয়া যায় না ফারিহা।
মানুষের ব্যবহার কর্ম সৎ চরিত্রই তাকে অন্যের কাছে আকৃষ্ট করে।
তুমি কি মনে করো আমার ভাইয়ের মধ্যে এসব গুনাগুন নেই?
আমি তো তা বলি নাই। আমি বলেছি একটা মানুষের ব্যবহার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কারনে অন্য কে আপনাআপনিই ভালোবাসতে বাধ্য করাবে। এরজন্য জোর বা বার বার ভিক্ষা চাওয়া লাগবে না।

একদিন তুমিও আমার ভাইয়ের মতো কাঁদবে দেখো সেদিন আজকের এই গোয়ার্তুমির জন্য আফসোস হবে।
অভিশাপ দিচ্ছ।

অভিশাপ না ভাবি। যে যা করে তার ফল সে ভোগ করবেই। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
ফারিহা ভাবিকে নিয়ে খেতে আয়।
আসছি মা।
চলো ভাবি।

তুমি যাও আমার ক্ষেতে ইচ্ছা করছে না।
রাগ করেছ ভাবি আমার উপর। রাগ করো না প্লিজ আমার মিষ্টি ভাবি। আসলে আমি কিন্তু কষ্ট দেওয়ার জন্য কিছু বলিনি তোমাকে। ভাইয়ের কষ্ট আমাকে কষ্ট দেয় খুব তাই।
চলো না গুলুগুলু ভাবিটা আমার। শশীকে জোর করে সোফা থেকে উঠিয়ে নিয়ে ডাইনিং এ নিয়ে যায়।

ছোট মা একটা কথা বলো তো।
কি বল।
ভাবিকে কোন হিরোইনটার মতো লাগে বলো তো।
উমমম, শশীর দিকে তাকিয়ে।
ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। তামিল নায়িকা হানসিকার মতো।
ঠিক না।

হ্যাঁ তাই। শুধু হাইট টা একটু কম।
শশী চুপচাপ ওদের কথা শুনে মনে মনে হাসে।
ওর মতো একটা পেত্নিকে এরা হানসিকা বানাই দিলো।
ফারিহা ভাবির প্লেটে খাবার তুলে দেয়।
ভাবি শুরু করো।
হুমম।

অরুনা চৌধুরীর নামাজ পড়ে রুম থেকে ডাইনিং এর দিকে আসতেই অনি কল দেয়।
হ্যাঁ অনি বল। তোর আসতে লেট হবে। রাত ১ বাজতে পারে। আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে আসিস।
হ্যাঁ। বউমা ঠিক আছে। হ্যাঁ হ্যাঁ সবাই খেতে বসেছে।
আচ্ছা ঠিক আছে।
কি হয়েছে মা।
তোর ভাই কল করেছিলো। শো লেট নাইট পর্যন্ত হবে তাই আসতে আসতে ১/২ বাজতে পারে।

এই মিনু অনি আসলে খাবার গরম করে খেতে দিস। কি অবস্থা করেছে ছেলেটা নিজের ওর ডায়েটিশিয়ান আমাকে কাল কল করে বলছে ম্যাডাম স্যার কে একটু বোঝান। অতিরিক্ত অ্যালকোহল আর ডায়েট অনিয়মের জন্য দিনদিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। ঠিকমতো পারফমেন্স করতে পারছে না শো তে। এভাবে চলতে থাকলে অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে।

কি যে করি এই ছেলেটাকে নিয়ে আমি। আমার চিন্তায় ঘুম হয় না।
শশী মন খারাপ করে শাশুড়ির কথা শোনে।
তোমরা না খেয়ে চুপ করে বসে আছ কেন।
খাওয়া শুরু করো। আমি অনি বাড়ি ফিরলে খাবো।
কিন্তু আপা তোমার তো ডায়াবেটিস তুমি খাবারে অনিয়ম করলে সমস্যা। অনি আসলে আমি খাবার দিয়ে দিবো তুমি খেয়ে নাও।

ছোট মা। মা। আপনারা কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলি।
বলো বউ মা।
মা আপনারা খেয়ে শুয়ে পড়ুন। উনি আসলে আমিই খাবার দেবো।
না না। তুমি নতুন বউ। আবার তুমি অসুস্থও তুমি বরং খেয়ে শুয়ে পড়।
না মা। আমার সমস্যা হবে না। আমি পারবো। উনি আসলে একবারে খাবো
ভাতের প্লেট সরিয়ে।

আরে মা। ভাবি যখন পারবে বলছে তুমি না না করছ কেন। স্বামীকে রেখে স্ত্রীর খাওয়া ঠিক না। ভাবি তুমি ভাইয়ার সাথে খেয়ো।
কিরে ফারিহা এদানিং দেখছি খুব বুঝতে শিখেছিস। আপা ফারিহা তো আর ঘরে রাখা যাবে না। এবার পরের ঘরে বিদায় করতে করতে হবে।
ছোট মা তুমি না। লজ্জা পায়,
,
বাড়ির সবাই খেয়ে শুয়ে পড়ে। শশীকে শ্বাশুড়ি মা অনেকবার বলে রাতের খাবার খেয়ে অনির জন্য অপেক্ষা করতে কিন্তু শশী অনির সাথে খাবে বলে আর খাই না।
ঘড়িতে রাত ১ টার কাটা ছুঁই ছুঁই।
শশী বিছানায় বসে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।
ঘারটায় অনেক ব্যথা করছে। সারাদিন এই ঘার আর হাতটার ব্যথা খুব পিড়া দিয়েছে।
পরের বাড়ি দেখে কাওকে কিছু বলে নি শশী।

তখন খাবার না খাওয়ার আরো একটা কারন হলো শশীর হাত দিয়ে খাবার খেতে পারবে না শশী। কারন ডান হাতের কাটা শিরাতে টান লাগে ডান হাতে কোনো কাজ করলে।
তাছাড়া অনিকেত সকালে না খেয়ে যাওয়ায় শশীর খাবার খেতে ইচ্ছা করে না অনিকেত ছাড়া।
হঠাৎ রুমের দরজা খোলার আওয়াজে শশী দরজার দিকে তাকায়।
অনিকেত এসেছে।
শশী তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে দাড়াতে গিয়ে ঘারে টান লাগে। আহ্ শব্দ বের হয় মুখ থেকে।

শশীকে এভাবে এতোরাতে জেগে থাকতে দেখে অনিকেতের চিন্তা হয়।
অনিকেত ভেবেছিল শশী ঘুমিয়ে পড়েছে। সারাদিন প্রেয়সীর মুখটা দেখতে না পেয়ে অনিকেতের মন টা ছটফট করছিলো। তাই ঘুমন্ত শশীকে একনজর দেখার জন্য রুমে এসেছিলো।
কি হয়েছে কো

নো সমস্যা। এখনো ঘুমাও নাই যে। খারাপ লাগছে। কেউ কিছু বলেছে।
শশীর কাছে এসে ওর দিকে তাকিয়ে অনর্গল বলে যায় কথাগুলো।
না কিছু হয় নি আমার। আপনার বাড়ি ফেরার প্রতিক্ষা করছিলাম।
কি বললে। আবার বলো। অনিকেত শশীর কথা শুনে আশ্চর্য হয়। যে মেয়ে ওকে স্বামী হিসেবে মানে না পছন্দ করে না। সে কিনা ওর জন্য এতো রাত করে জেগে আছে।
ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন আমি খাবার গরম করছি।
দাঁড়াও। তুমি খাবার খেয়েছ।

শশী না সূচক মাথা নাড়ায়।
কেন?
জানি না।
শশী অনিকেত কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
অনিকেতের এতো ভালো লাগে। খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করে। ওর স্বপ্ন সব বাস্তব হয়ে ধরা দিচ্ছে।
ভেতরে একটা বিশ্বাস তৈরি হচ্ছে হয়তো শশী একদিন ওকে আপন করে নেবে।
অনিকেত ফ্রেশ হয়ে একটা ব্লাক টিশার্ট পড়ে নিচে নামে।
শশী টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিচ্ছে।

অনিকেত চেয়ার টেনে শশীর দিকে চেয়ে চেয়ারে বসে।
শশী অনিকেতের প্লেটে খাবার বেড়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে পাশে দাড়িয়ে থাকে।
অনিকেত কোনো কিছু নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই শশী গিয়ে আগেই সেটা নিয়ে অনিকেতের কাছে দেয়।

অনিকেতের হৃদয়জুড়ে ভীষণ ভালো লাগা কাজ করে। আনমনে হাসে অনিকেত।
এখানে বসো তোমার তো হাতে ব্যথা তাই হয়তো খাও নি। বসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
শশী বসতে ইতস্তত করলে অনিকেত ধমক দিয়ে পাশে বসায়।
তারপর শশীকে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দেয়।

পরেরবার আবার খাওয়াতে গেলে শশী বলে

এবার আপনি খান। সকালে তো কিছুই খান নি। নিচের দিকে চেয়ে
আমি এই হাত মুখে দিলে তোমার এই এটো হাতে খেতে ইচ্ছা করবে।
কেন ইচ্ছা করবে না। আপনি খান তারপর আমাকে খাইয়ে দিয়েন। মাথা নিচু করে লাজুক ভঙ্গিতে বলে।

ঠিক আছে। মিসেস যা বলবে তার মি. তাই শুনবে। ঠোঁট বাকিয়ে হেসে।
শশীকে খাইয়ে নিজেও খাই। খাওয়া শেষে অনিকেত শশীকে খাবার প্লেট ধুতে ও বাকি খাবার সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।

শশীর দিকে চেয়ে আনমনে হাসে অনিকেত। চোখে মুখে আনন্দ উপচে পড়ে।
আচ্ছা তাহলে তুমি গিয়ে শুয়ে পড় আমি পাশের রুমে আছি। দরকার হলে বলো।
শুনুন। অনিকেত কে পেছন থেকে ডাক দিয়ে।
হ্যাঁ বলো। শশীর দিকে ফিরে।

আমার রাতে একা ঘুমাতে ভয় করে। মুখটা ছোট করে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে।
আচ্ছা তুমি যাও। আমি আসছি।
শশী। অনিকেতের জবাব শুনে খুশি হয়।
শশী বিছানা ঠিক করে দুটো বালিশ মাথার দুপাশে রেখে বিছানা উপর বসে থাকে অনিকেতের প্রতিক্ষায়।

অনিকেত কিছুক্ষণ পর রুমে ঢুকে সোফায় শুয়ে পড়ে শশীকে শুতে বলে।
শশী মন টা বেজার করে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়ে।
আচ্ছা আমি উনাকে পছন্দ করি না ঠিক। কিন্তু স্বামী হিসেবে তো মানি। কিন্তু উনি কিভাবে দূরে দূরে থাকে। এক বিছানায় শুলে কি হতো।

ঘোড়ার ডিম টা ভালোবাসে। পঁচা স্বামী।
এই যে শুনছেন।
হ্যাঁ বলো। মোবাইল ফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে শশীর দিকে চেয়ে।
আপনি সোফায় শুয়েছেন কেন। আপনার জন্য যে ফেরেশতারা আমাকে অভিশাপ দেবে।
হোয়াট।

কেন আপনি জানেন না বুঝি। স্বামী স্ত্রী আলাদা ঘুমালে ফেরেশতারা নারাজ হয়।
সেটা তো ঝগড়া করে আলাদা ঘুমালে।
তোমার সাথে তো আর আমি ঝগড়া করি নাই। তাছাড়া তুমি যতদিন চাইবা না আমি তোমার কাছে স্বামীর অধিকার চাইব না।

বলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।
শশী চুপ করে অনির দিকে তাকিয়ে থাকে। কেন মনটা খারাপ লাগে অনিকেতের এমন দূরত্বে। আমিও তো চাই সে দূরে থাক আমার থেকে। আসলে কি আমি চাই সে দূরে থাক আমার থেকে? হ্যাঁ আমি চাই সে দূরে থাক। কি আছে আমার অনিকেত কে দেওয়ার মতো। কিছুই নেই। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে শশীর অনিকেতের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে।

আমি কি দেবো ওগো তোমায়।
নিজের বলে কিছু নাই যে আমার।
তোমার চরনের ফুল হওয়ার ভাগ্য
নেই গো প্রিয় এই অভাগির।

পর্ব ১২

সকালে ঘারের ব্যথাটা খুব বেড়েছে লাগে। মনে হচ্ছে এই বুঝি ঘাড়ের রগ টা ছিড়ে যাই। বিছানা থেকে উঠে নামাজ টাও পড়তে পারে নাই। অর্ধেক রাত ব্যথায় ছটফট করেছে শশী।

এসময় অনিকেতের প্রবেশ রুমে। শশীর এতো বেলা করে শুয়ে থাকা দেখে চিন্তিত হয়।
তোমার কি শশীর খারাপ?
না। ব্যথায় মুখ মলিন হয়ে যায় শশীর
তাহলে এখনো শুয়ে আছ যে।
না কিছু না। এখনি উঠছি।

শশী চোখ বন্ধ করে ঠোট চেপে ব্যথা ভুলে উঠতে গিয়ে পারে না।
আর কতো নিজেকে কষ্ট দেবে। তুমি কি ভাবো আমি বুঝিনা তুমি কাল রাত থেকে ঘাড়ের যন্ত্রনায় ভুগছ। একটিবার আমাকে বলতে পারলে না? তোমার কষ্ট হচ্ছে।
শশী চুপচাপ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে থাকে।

তোমাকে সাহায্য করার মতো অধিকারটুকুও দেওয়া যায় না আমাকে শশী?
এতোটাই কি খারাপ মানুষ আমি। কষ্ট ভরা স্বরে বলে।
শশী হাতটা অনির দিকে বাড়িয়ে দেয়।
অনিকেত অবাক হয়ে যায়। শশীর হাত বাড়িয়ে দেওয়া দেখে।
অনিকেত শশীর হাত এই প্রথমবার শশীর ইচ্ছায় স্পর্শ করে।

এর আগে কলেজে একবার জোর করে ওর হাত ধরেছিলো। আর কতো ধৈর্য ধরবে। এই মেয়ে যে খুব জেদি। কোনোভাবেই অনিকেত কে ভালোবাসে না। কতো কি করেছে শুধু শশীর মুখে একবার ভালোবাসি শুনার জন্য। কিন্তু শশীর চোখ দিয়ে সেদিন জল গড়িয়ে পড়েছিলো অনিকেত শশীর হাত ধরাতে।

নিজের কাছেই ছোট হয়েছিল ঐ দিন শশীর চোখে জল দেখে।
নিজের সাথে ওয়াদা করেছিলো ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আর কোনোদিন ওকে স্পর্শ করবে না।
অনিকেত শশীর হাত না যেন চাঁদ হাতে পেয়েছে। আজ সবচেয়ে খুশির দিন কারন অনির প্রেয়সী আজ নিজ ইচ্ছায় ওকে হাতটা ধরতে দিয়েছে। প্রিয়ার স্পর্শ পাওয়া যে সকল প্রেমিকের মনের বাসনা।

অনিকেত শশীকে বিছানার পাশে বালিশ ঠেকিয়ে বসতে সাহায্য করে।
ভাইয়া ডাক্তার আঙ্কেল এসেছে।
ভেতরে আসতে বল।
ঠিক আছে।

ফারিহা ডাক্তার কে নিয়ে অনির রুমে আসলো।
ডাক্তার শশীকে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করলো।
প্রেশারটাও মেপে নিলো।
না প্রেশার তো দেখছি ঠিকই আছে। মনে হয় উল্টো পাল্টা শোয়ার কারনে এমনটা হয়েছে।

আচ্ছা তেমন কোনো চিন্তা নেই। আমি ব্যথার ওষুধ লিখে দিচ্ছি খাইয়ে দিবা। ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়ে শশীকে আশির্বাদ করে চলে যায়। অনি ডাক্তার আঙ্কেল কে নিচ পর্যন্ত ছাড়তে যায়।
ভাবি খুব কি কষ্ট হচ্ছে।
না তেমন না।

তুমি বললেই হবে। ব্যথায় মুখটা নীলচে হয়ে আসছে তোমার আর তুমি বলো তেমন না।
চিন্তা করো না ননদী। ঠিক হয়ে যাবো আমি।
হুমম। আল্লাহ যেন তাই করে।
আচ্ছা ভাবি আমি যাই। পরে আসবো।
অনিকে রুমে ঢুকতে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ফারিহা।
দরজার সামনে যেতেই মিনু কে খাবার সাজানো ট্রে হাতে অনির রুমে ঢুকতে দেখে।
ভাইয়া নাস্তা করে নাই মিনু আপা।

না ছোট আপা। ভাইয়া ভাবির লগে খাইবো তাই খাবার ঘরে নিয়ে যাইতে কইছে।
হাও রোমান্টিক। রোমাঞ্চ শুরু ভাইয়া ভাবির। আমার রাতুল বলদ টা যে কবে শিখবে এসব রোমাঞ্চ।
ছোট আপা কি কন হাইসা হাইসা বিরবির কইরা।
আরে কিছুনা। তুই যা। নয়তো রোমাঞ্চ থুক্কু খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।
হে ফাগল নি। কি কয় আমি বুঝিনাই। আফনারা বুজঝুইন।
মিনু ফারিহার পাগলামি দেখে মুখটা বোকার মতো করে রুমে ঢুকে খাবার দিয়ে বের হয়ে যায়।

অনি রুমের দরজা বন্ধ করে খাবার ট্রে টা বিছানার উপর রাখে।
শশী চুপচাপ বসে থাকে। অনিকে ব্লাক এ বরাবরই অসাধারণ লাগে।
আসলে ব্লাক কেন এমন ফর্সা সুঠাম দেহি সুশ্রী পুরুষকে সবকিছুতেই চমৎকার লাগে।
অনি প্লেটে খাবার বাড়ে আর শশী চেয়ে থাকে অনির দিকে বিমুগ্ধ নজরে।
এভাবে চেয়ে থেকো না বউ। প্রেমে পড়ে যাবা। খাবার প্লেটে বাড়তে বাড়তে বাকা হাসি দিয়ে বলে অনিকেত।

শশী চোখ বড় করে নিজের মুখে হাত দেয়।
আমি তো মুখে কিছু বলিনাই। অনিকেত শুনলো কি করে তাহলে।
জাদুটাদু জানে নাকি?
সত্যি তো এভাবে চেয়েছিলাম কেন এই গুন্ডা হ্যান্ডসাম টার দিকে।
এতো কেয়ার করলে সেই মানুষটার উপর চেয়ে না থেকে কি পারা যায়। তারপর যেই লুক এইটার আল্লাহই জানে এর মতো আরেকটা পিস দুনিয়াতে আছে কি না।

শশীর কেন যেন আজ মনে হয় অনিকেতের মা ঠিকই বলেছিলো শশী আসল হিরা চিনতে পারে নি।
রিশাদের জীবনে থাকাকালীন রোগে শোকে মৃতপ্রায় হলেও রিশাদের সময় হতো না শশীর খোজ নেওয়া। হাজার অসুখ হোক রিশাদের বিছানার সঙ্গী শশীকে হতেই হতো।
দুচোখের জল গড়িয়ে পড়তো। তবুও ঐ পশুর মনে একটু দয়া হতো না।
সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে রাতে রিশাদের মাইর অথবা শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হতে হতো। এখনো মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে শশীর। অন্ধকার অধ্যায় ছিলো
শশীর জীবনে ওটা।

আর এই মানুষটা অনুমতি ছাড়া হাতটাও ধরতে নারাজ শশীর। প্রকৃত পুরুষ তো একেই বলে। যে পুরুষ নিজের স্ত্রীকে সম্মান দিতে জানে না সে পুরুষ সুপুরুষ নয়।
দুচোখে জল গড়িয়ে পড়ে শশীর।

অনি শশীর মুখে রুটি তুলে দিতে যাবে তখনি মাথা নিচু করা শশীর চোখে জল পড়তে দেখে
কি হয়েছে তোমার খুব কি কষ্ট হচ্ছে। বলো আমাকে। তোমার চোখের পানি আমার ভেতর বাহিরে তোলপাড় সৃষ্টি করে শশী। মাথা ঠিক থাকে না ঐ চোখে জল দেখলে। বলো না কেন কাঁদছ।
কিছু না। আপনি খাওয়ান আমাকে। চোখ মুছে মুচকি হেসে। হা করে
চোখের জল দেখে অনির বুকে হঠাৎ ওঠা ঝড় টা যেন এক নিমিষেই শান্ত নদীর জল হয়ে যায় শশীর হাসি দেখে
তুমি জানো শশী। আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য কি। শশীর মুখে রুটির টুকরো দিয়ে।

কি। রুটির টুকরো হা করে মুখে নিয়ে
তোমার এই হাসি। রোম রোম দাড়িয়ে যায় আমার তোমার হাসির শব্দে। বুকের ভেতর কাঁপন তোলে তোমার ঠোটের প্রসারনে।
আপনি পাগল একটা।

হুমম। তোমার এই হাসির প্রেমে পাগল আমি। তোমার মুখের হাসি দেখার জন্য এই অনিকেত কি কি করতে পারে তা তুমি ভাবতেও পারবে না।
আমার লাগবে না ভাবা। আপনি খান এবার।
আমি না খেলে কি কষ্ট হয় তোমার।
সত্যি বললে খাবো আমি। নয়তো না।

না কষ্ট হয় না আনন্দ হয়। আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছা করে। রাগ করে বলে।
তুমি নাচতেও পারো? বাহ! বাবা গান পারে মা নাচ পারে। ভালোই হবে আমাদের সন্তান তাহলে মাল্টি টেলেন্টেড হবে।
আপনার মাথা হবে।

সেটা কি করে হয় আবার।
জানি না যান।
চলে যাবো?

না না। আপনি খাবার না খেয়ে কোথাও যাবেন না কিন্তু।
ঠিক আছে তাই হবে মিসেস। হাসি দিয়ে বলে।
অনিকেত শশীর সামনে নাস্তা করে খাবার প্লেট গুলো গুছিয়ে রাখে। শশীকে বিছানা থেকে নামতেই দেয় না।

আলমিরা থেকে কি যেন বের করে নিয়ে আসে।
শশী এটা তোমার জন্য।
এতো দামি মোবাইল আমাকে কেন দিচ্ছেন।
নিজের বউকে দেবো না তো অন্যের বউকে দিবো।
না মানে। আমি তো এগুলো তেমন চালাতে পারি না।

জানি আমি। আমি শিখিয়ে দিচ্ছি তোমাকে।
অনিকেত শশীকে প্রাইমারি নিয়মগুলো শিখিয়ে দেয় এন্ড্রয়েড মোবাইল চালানোর।
মায়ের সাথে কথা বলবে।
শশীর চোখে মুখে খুশির ঝলক উপচে পড়ে। সত্যি আপনি দেবেন কথা বলতে মায়ের সাথে।

আমি তো ভাবছিলাম আপনিও হয়তো রিশাদের মতো মায়ের সাথে কথা বলতে চাওয়ার কথা বললে বকবেন মারবেন।
আমাকে কি তোমার রিশাদ মনে হয়। একদম ওর নাম মুখে আনবে না। ভুলে যাবে ঐ নামে কেউ ছিলো তোমার জীবনে। আমি শুরু আমিই শেষ তোমার জীবনে বুঝতে পেরেছ। রাগে লাল হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

যা বাব্বাহ কি বললাম। মি. কুল দেখি মি. হট হয়ে গেলো।
মায়ের সাথে ২দিন কথা বলি নাই। কতো কষ্ট হচ্ছিল আমিই জানি।
শশী অনিকেতের শিখিয়ে দেওয়া নিয়মে কল অপশনে গিয়ে মাকে কল করে।
হ্যাঁলো কে বলছেন।
মা। আমি শশী।

শশী। কেমন আছিস রে মা।
ভালো মা। মা তুমি আমাকে এভাবে পর করে দিলে। বেঁচে আছি না মরে গেছি একটিবার খোজও নিলে না। কেঁদে দেয় শশী।
নারে মা এভাবে বলিস না। আগের বার রিশাদকে তোর সাথে একটু কথা বলাই দিতে বলতাম বলে তোরে কতো কথা শুনতে হতো। মাইরও খেতি। তাই এবার বুকে পাথর বেঁধে রেখেছি তোর ভালো জন্য। সুখের জন্য।

হ্যাঁ রে মা ভালে আছিস তো তুই। ঐ বাড়ির লোকজন কি তোকে খুব কথা শুনায়।
হ্যাঁ আমি খুব ভালে আছি। না মা। এরা খুব ভালো সবাই। আমাকে বুঝতেও দেয় না আমি ডিভোর্সি, গরিব। তুমি জানো ওর মা আমাকে বলেছে আমি শুধু তার ছেলের বউই না তার মেয়েও। আমাকে খুব আদর করে এরা।

নিজের অসুস্থতার কথা মাকে জানায় না মা চিন্তা করবে তাই
সত্যি শশী। শুনে কলিজায় শান্তি পেলাম। দুচোখের পানি আমার শুকিয়ে গেছে তোর চিন্তায় কেঁদে। এখন কিছুটা চিন্তা
মুক্ত হলাম আমি।

মা সামীর আর শিখা কেমন আছে। ওরা কি স্কুলে যায় ঠিক মতো। ওদের কে একটু দাও না কথা বলি।
শশী ভাইবোন মায়ের সাথে মন ভরে কথা বলে। সুখ তো এখানেই শশীর। এরাই তো বাঁচার মাধ্যম শশীর জন্য।

শশী এখন তাহলে ফোন রাখ। তোর শ্বশুরবাড়ির লোক খারাপ ভাবতে পারে।
আচ্ছা মা। পরে আবার কথা বলবো। তুমি জানো এই মোবাইল অনিকেত আমাকে উপহার দিয়েছে। একগাল হেসে মাকে বলে শশী।
সেকি রে। স্বামীর নাম ধরিস। তোকে কতোবার বলবো এসব বেয়াদবী। আর ডাকবি না। আর শোন মা অনিকেত খুব ভালো ছেলে আমি খোজ নিয়ে জেনেছি। তুই রিশাদের পাপের শাস্তি ঐ বেচারাকে দিস না।
অতীত ভুলে নতুন জীবন শুরু কর মা।

হুমমম।
আচ্ছা রাখি মা। শশী কল কেটে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবে।
নতুন করে জীবন শুরু করা কি এতোই সহজ মা। ঐ স্মৃতি ভোলা এতো সহজ না মা আমার জন্য। কে জানে অনিকেত ও আমার দেহ ভোগ করে রিশাদের মতো ব্যবহার করবে।
আমার ভয় হয় আবার ভালোবাসতে। আবার স্বপ্ন দেখতে মা। একবার তো ভেঙেচুরে জিন্দা লাশ হয়ে আছি। পরের বার হয়তো বেঁচে থাকার মতো সাহস বা অবলম্বন কোনোটাই থাকবে না আর পৃথিবীর বুকে শ্বাস নেওয়ার।

পর্ব ১৩

মায়ের সাথে কথা বলে বিছানার উপর রেখে দেওয়া ব্যথার ওষুধ টা খেয়ে শুয়ে পড়ে শশী। শরীরটা মোটেও ভালো লাগছে না। মন খারাপ লাগলে শরীরটাও কেমন যেন দুর্বল লাগে।

বিছানায় শুয়ে মায়ের কথা আবার কানে বাজছে।
না ভালো লাগছে না আর এসব ভাবতে শশীর। মন না চাইলে শশী জোর করে মিথ্যা ভালো অনিকেত কে বাসবে না। প্রিয় মানুষের ছলনায় কি যে কষ্ট লাগে শশীর চেয়ে সে উপলব্ধি আর কার বেশি।

শ্বশুরবাড়ির নিয়ম কানুন নিয়ে নতুন বউয়ের মাঝে একধরনের ভীতি কাজ করে সেটা এখন আর শশীর মধ্যে নেই। কেন নেই কে জানে? হয়তো দ্বিতীয় শ্বশুরবাড়ি তাই।
প্রথম প্রথম সব কিছুতেই একটা ভয় চিন্তা বিরাজ করে। কিন্তু দ্বিতীয়বারে তা আর লাগে না।
কপালে হাত রেখে ঘুমিয়ে যায় শশী।
বিকালে শশীর ঘুম ভাঙে। ঘুম ঘুম চোখে আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে। হাত ও ঘাড় ব্যথার কারনে অলসতা বেশি কাজ করছে।
শুয়ে থাকতেই ইচ্ছা করছে সারাক্ষণ।

না আর শুয়ে থাকা যাবে না। কি ভাবছে এ বাড়ির মানুষ। ছেলের সুখের জন্য বাবা মা কতো কি করে আজ অনিকেতের বাবা মা কে দেখে বুঝেছে শশী।
এভাবে যে আমি শুয়ে আছি। অনির মা একবারটি এসে রিশাদের মার মতো বললো না কিরে নবাবের বেটি এতো ঘুমাচ্ছিস কেন? তোর বাপ কি বিয়ের সময় এক ট্রাক জিনিস দিয়েছে নাকি? এতো ভালো মানুষ হয় নাকি শ্বাশুড়ি? হয়তো ছেলের জন্য সব মুখ বুজে সহ্য করছে।

শশী বিছানা ছেড়ে উঠে শাড়ির আঁচল টা বুকে তুলে নিলো। এই একটা বদ অভ্যাস আছে শশীর ঘুমালে কাপড় ঠিক থাকে না।
গত কাল রাতে শীত শীত লাগায় ভাগ্যেস চাদরটা শরীরে টেনে নিয়েছিল।
ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো শশী। ড্রইংরুমে অনিকেত নাসিফের সাথে বসে কার্টুন দেখছে। নাসিফ যদিও ইনজয় করছে কার্টুন দেখা। অনিকেত মোটেও তা করছে না। এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে অন্যমনস্ক হয়ে টিভির দিকে।
ভালোবাসার মানুষগুলোকে নিয়ে মানুষ প্রবল ইনসিকিওর হয়। সেখানে ভুলেও যদি দ্বিতীয় কারো সাথে তুলনা করে তার ভালোবাসার মানুষটি তাহলে কুরুক্ষেত্র বেধে যায় তার অন্তরে।

অনিকেতের ভেতরটাতেও কিছুটা এমনি হচ্ছে।
শশীকে যত আপন করতে চাচ্ছে শশী যেন ততই দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
ভাবি মনি। নাসিফ দৌড়ে শশীকে জরিয়ে ধরে।
অনিকেত শশীকে দেখে পাশ কেটে উপরে চলে যায়।
শশী চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।

ভাবি ঘুম ভাঙলো তোমার, বাব্বারে বাব্বা নতুন বউ বাপের বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে কতো কিছু নিয়ে আসে আর তুমি তো নিয়ে আসলা চোখে একরাজ্যের ঘুম।
এতো ঘুমাইলে আমি ফুপি হইতে পারতাম কও? ঘুমকুমারী ভাবি আমার।
ফারিহা তুমি না। বিব্রত হয়ে কিছুটা।
ভাবি মনি চলো আমরা ছাঁদে যায়।

না বাবুসোনা। আমি একটু রান্নাঘর থেকে আসছি। তুমি বরং বসে কার্টুন দেখো
শশী রান্নাঘরে উকি দিতেই দেখে শ্বাশুড়ি মা রান্না করছে পাশে মিনু।
মা আসবো।

হ্যাঁ আয়। নিজের বাড়িতে কেউ কি অনুমতি চায়।
সরি মা। রান্নাঘররের দরজায় মুখ মলিন করে দাড়িয়ে।
থাপ্পড় কি আরেকটা খাবি মেয়ে তুই? মায়ের সাথে সরি কি রে। তরকারি নাড়তে নাড়তে।

না মানে আমি সারাদিন শুয়ে বসে থাকি। আর আপনারা কাজ করছেন।
হ্যাঁ তাইতো শুয়ে বসে থাকিস কেন? বাড়ির বউ না তুই। ভুলেই গেছিলাম। সব কাজ করবি আজ থেকে। ঘর মোছা থেকে রান্না বান্না সব।
জ্বী। মুখ কালো করে।
জ্বী কি রে। তুই সত্যি ভাবলি আমি তোকে দিয়ে এসব করাবো। এতো খারাপ ভাবিস। শশীর মুখটা উচু করে।

না না মা।
না না না কি? তাইতো বুঝালি। তুই অসুস্থ আমরা বুঝেও তোকে দিয়ে কাজ করাবো। এতো খারাপ না রে আমরা।
যতদিন সুস্থ না হবি কোনো কিছু করবি না তুই। আমি চাই না আমার মেয়েটার কষ্ট হোক। হেসে বলে।

শশীর চোখদুটো ছলছল করে। শ্বাশুড়ি কি কোনোদিন মা হতে পারে? হয়তো পারে? অনির মাকে না দেখলে শশী এই কথা কোনোদিন বিশ্বাস করতো না।
এখন বল আমাকে, কি খাবি তুই। পাঁচ টা না দশটা টা না একটামাত্র ছেলের বউ আমার। তাকে আমি রান্নাঘরে খাটিয়ে মারবো। অরুনা চৌধুরী এতো খারাপ না।
আরে তুই তো আমার ঘরের চাঁদ
তোকে আমি মাথায় করে রাখবো।

শশীর কপালে চুমু খেয়ে।
শশী শ্বাশুড়িকে জরিয়ে ধরে শক্ত করে। কেন জানি না শশীর খুব ভালো লাগছে অরুনা চৌধুরী কে জরিয়ে ধরে। শান্তি লাগছে বুকের মধ্যে। খুব আপন লাগছে।
আচ্ছা ছাড়। চল আমাকে সাহায্য করবি রান্নায়। না সাহায্য করা লাগবে না। তুই বরং বস এখানে। আজ অনেকদিন পর অনির পছন্দের খেচুরি আর গরুর মাংসের কালা ভুনা করছি। তুই একটু চেখে দেখ তো কেমন হয়েছে?
বস এই চেয়ারটায়।

জানিস আগে মন ভালো লাগলেই আমার অনি এসে আমাকে বলতো মম আজ খিচুড়ি আর গরুর মাংসের কালা ভুনা করো খাবো।
আমি সব ফেলে আমার প্রিন্সের জন্য এটা করে দিতাম।
রান্নার সময় অনি আমার সাথেই থাকতো রান্নাঘরে। রান্না শেষ হওয়ার আগেই খাওয়া শুরু হয়ে যেত ওর এখানে বসে বসে।

নে খেয়ে দেখ মাংস টা কেমন হয়েছে। অনেকদিন রান্নাটা করা হয় না আগের মতো। আঁচলে হাত মুছতে মুছতে।
শশী শ্বাশুড়ির খুশি দেখে একটুকরো মাংস মুখে দিয়ে চাবাতে থাকে।
অরুনা চৌধুরী অধীর আগ্রহে শশীর দিকে চেয়ে রয়। যেভাবে বোর্ড পরীক্ষার্থীরা রেজাল্টে অপেক্ষায় থাকে।

ভালো হয় নি তাই না বউ মা। মুখটা কালো করে বলে।
না মা। খুব ভালো হয়েছে। খুব টেস্টি। আমি এমন রান্না আগে খাই নি। অনেক ইয়ামম
সত্যি। তোর ভালো লেগেছে।
হুমমম খুব ভালো লেগেছে। আমি নিজেও তো আপনার রান্নার ফ্যান হয়ে গেলাম মা।
আমাকে শিখাবেন মা এই রান্নাটা।
হ্যাঁ অবশ্যই শিখাবো।

এখন খিচুড়ী টা রান্না করি। তুই ফারিহাদের সাথে গিয়ে ড্রইং রুমে বস গিয়ে। এখানে গরমে কষ্ট হবে তোর।
না মা। একদম কষ্ট হবে না আমার। আমি বরং আপনার খিচুড়ি রান্না দেখি।
আচ্ছা ঠিক আছে। শশী শ্বাশুড়িকে রান্নাঘরে এটা ওটা দিয়ে সাহায্য করে রান্নায়। বউ শ্বাশুড়ি একসাথে রান্নাঘরের কাজ করে।

সন্ধ্যার দিকে শশী নামাজ টা পড়ে নেয়। এখন ঘার ও হাতের ব্যথাটা কমেছে কিছুটা।
সন্ধ্যার পর থেকে অনিকেত কে দেখে নি শশী। কেমন যেন লাগে শশীর।
জানালার গ্রিল ধরে আধারে নেমে যাওয়া আকাশকে দেখে শশী। হঠাৎ করে দীপ্তউজ্জ্বল আকাশটায় নিকষ কালো আধার ঘিরে ফেলে। ঠিক যেভাবে হাসি খুশি একটা মানুষের জীবনে দুঃখ নেমে আসে।

আচ্ছা কি হতো যদি একটু সাহস করে অনিকেতকে ভালোবাসতে পারতাম?
কিন্তু এতো সাহস যে গরিবের মেয়েকে মানায় না। কেন আজ নিজেকে ঘৃনা লাগে। কেন
মনে হয় পঁচে গেছে এই দেহ। পঁচে গেছি এই আমি নামক মানুষটা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শশী।
রাতে সবাই মিলে ড্রইং রুমে বসে জি সিনেমায় হাম সাথ সাথ হে মুভিটা দেখে।

শশীরও এমন একটা শ্বশুরবাড়ি পাবার ইচ্ছা ছিলো। আর সালমান খানের মতো একটা বর। শান্ত শিষ্ট মার্জিত স্বভাবের। যে পরিস্থিতি বুঝে আবার কঠিন ও হয়।
ফারিহাপি! এই সাল্লু আংকেল আমার দাদা ভাইয়ের মতো তাই না?
ঐ তুই ওরে আংকেল বললি কেন? ইভারগ্রিন হিরো সালমান বুঝলি। আংকেল ও কোনোদিন হবে না। আর কোনোদিন যদি আংকেল বলছিস থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো বেয়াদব।

নাসিফ চোখ বড় করে মুখ গোমড়া করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে শশীর পেছনে গিয়ে কেঁদে দেয়।
আহা! ফারিহা। ও কি বোঝে। তাছাড়া ওর বয়সী তো সালমান কে আংকেল ই বলবে। সালমান নিজেই তো অনুমতি দিয়েছে বজরঙ্গী ভাইজানের মধ্যে। মুন্নি কে মামা বলতে বলেছিলো না বলো? নাসিফ তো মুন্নির কাছাকাছি বয়সের হবে। সেদিক থেকে সমস্যা হওয়ার কথা না তোমার।

তুমি বললে ভাবি? তুমি? তুমি নিজেও তো সালনানের খানের ফ্যান।
তো? আমি ওমন পাগলও না যে এসব নিয়ে আধিকখ্যেতা করবো। ভালো লাগতেই পারে। সেটা নিয়ে মারামারিতে যাওয়া আদৌ কি ঠিক? আমার মনে হয় না।
হুমম। নাসিফের দিকে কটমট করে তাকিয়ে।
এই ফারিহা। চিন্তিত হয়ে

হ্যাঁ মা বলো।
অনিকেত তো এখনো নিচে নামলো না। গিয়ে একটু ডেকে নিয়ে আয় না মা।
তুমি কেন যাও না ভাইয়ার গানের স্টুডিওর রুমে। দেখছ না মুভি দেখছি। আমি যাবো না।
তুই গেলি। রেগে গিয়ে বলে
মা! ফারিহা থাক। আমিই যাচ্ছি।

হ্যাঁ তাই ভালো হবে। বউ মা তুমিই যাও
ড্রইং রুম থেকে বেরুলেই পেছন থেকে অরুনা চৌধুরী ডাক দেয় শশীকে।
আমার ছেলেটাকে আগের মতো করে দে না মা। আমার প্রিন্স টা আবার আমাকে মা মা বলে জরিয়ে ধরবে। আঁচলে চোখ মোছে অরুনা চৌধুরী।

বউ মা! আমি আমার প্রিন্স টাকে আবার ফিরে চাই। তুই ফিরিয়ে দিবি। কথা দে আমাকে, এই মায়ের অনুরোধ রাখবি তুই শশীর হাত ধরে ছলছল চোখে।
আপনি চিন্তা করবেন না। আমি চেষ্টা করবো। শশী নিজেও অরুনা চৌধুরীর এমন অনুরোধে কিছুটা অসস্তি অনুভব করে।
তারপরও অরুনা চৌধুরীর খুশির জন্য হ্যাঁ বলে।

স্টুডিওর রুমের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ে। দরজা খুলতে কিছুটা সংকোচ লাগে। এই ঘরেই ঐ দিন রাতে অনিকেত কে স্বামী রূপে এতোবছর পরে দেখে। অনিকেতের ভালোবাসার চিহ্ন পুরোটা দেয়ালে দেখে বিস্মিত হয়।
সংকোচ কাটিয়ে দরজা খুলতেই অনিকেত কে পিয়ানো বাজাতে দেখে।

kho Na doon main paake tumko
Aaye yakeen na khud pe hamko
Jaise nadi ko kinara mila
Maine jo chaha mujhko wohi mila
Kiya dil main tere meri jagah hain

Ya phir yeh jo hain woh bewajah hain
Jaana na dil se door
Jaana na dil se door
Jaana na dil se door
শশী অনিকেতের গান শুনে থমকে যায়। এই মানুষটা এতো ভালো কি করে গাইতে পারে। হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

কেন এসেছ এই ঘরে। অনিকেত তোমাকে ভালোবেসে কিভাবে ধুঁকে ধুকে মরছে তাই দেখতে তাই না? দেখো শশী দেখো। আমাকে দেখে একটু করুনা কর। আমি যে আর পারছি না। আমাকে দয়া কর তুমি। আমি বাঁচতে চায় তোমাকে ভালোবেসে বাঁচতে চায়। তোমাকে আমার করে বাঁচতে চাই।
পিয়ানোর উপরে মাথা ঠেকিয়ে।

শশী পাথর হয়ে দাড়িয়ে রয়। এই মুহুর্তে এমন কথার জবাব কি হবে শশী বুঝতে পারে না। আর এই লোকটা বুঝলো কি করে আমি এখানে এসেছি। ধ্যাৎ কি জানি।
মা। চিন্তা করছে। নিচে চলুন। নিচুস্বরে কথাটা বলে শশী।
হুমম। যাও তুমি আমি আসছি। পিয়ানো থেকে মাথা উঠিয়ে ভারি স্বরে বলে।
নিজের উপর রাগ হয় অনিকেতের। ও কি কোনো জীবন্ত নারীর প্রেমে পড়েছে নাকি কোনো হৃদয়হীনা পাথরের মূর্তির। এতো নির্দয় কেন শশী ওর প্রতি।

শশী কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে আসে।
আমি আপনাকে কিছু বলতে চায়।
হ্যাঁ শুনছি। রেগে উত্তর দেয়

কেন এভাবে নিজের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছেন? আমার মতো পঁচে যাওয়া মেয়ে মানুষের জন্য। আপনি আমার চেয়ে আরো ভালো কাওকে ডিজার্ভ করেন।
এই তোর লেকচার শুনতে চেয়েছি আমি। তুই ভালোবাসত পারবি না ভালো কথা। তাই বলে আমাকেও কি এখন তোকেও ভালোবাসতে দিবি না। আমার ইচ্ছা আমি যাকে খুশি যেভাবে খুশি ভালোবাসবো।

আমি ভালো কাওকে ডিজার্ভ করি তাই না?
আমার জন্য তোর চেয়ে ভালো আর কিছু নেই। কেউ নেই। শশীর মুখের কাছে গিয়ে শশীকে ধরতে গিয়েও হাত মুঠ করে রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
হঠাৎ অনিকেতের এমন ভয়ংকর রুপ দেখে শশীর তো কলিজা শুকিয়ে যায়। অনিকেতের মুখটা একদম শশীর মুখের উপর।

দেখুন এতো পাগলামী ভালো না। এই বয়সে এসব মানায় না। শশী কাঁপা কাঁপা গলায় বলে।
তাই নাকি? কি মানায় তাহলে। বল আমাকে বলনা। তোকে জোর করে নিজের করে নেওয়া এটা মানাবে তাই না?

আমার মেজাজ প্রচন্ড বিগড়ে গেছে চলে যাও তুমি এখান থেকে।
Out! I just say leave me alone। চিৎকার করে।
শশীর অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠে ভয়ে

না যাবো না আমি। শাড়ির আঁচল শক্ত করে মুঠ করে হাতে। চোখ খিচে বন্ধ করে।
আমি জানি আমি আপনাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি। কিন্তু কি করবো বলেন। আমার অতীত আমার পিছু ছাড়ে না। আমি চেয়েও বর্তমান কে নিজের মতো সাজাতে পারি না।
আমাকে একটু সময় দিন সব ভোলার। আমি কথা দিচ্ছি আজ, এখন থেকে আমি আপনাকে এবং আপনাকেই নিজের জীবনসঙ্গী মানছি। তবে মন থেকে আপনাকে আপন করতে আমার সময় লাগবে। সেই সময়টুকু আমাকে দয়া করে দিন অনিকেত। একনাগারে বলে যায় শশী।

লেখা – তানিশ তানি

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “জীবনসঙ্গী – ভালবাসার রোমান্টিক কথা বাংলা” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – জীবনসঙ্গী (শেষ খণ্ড) – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা বাংলা

1 thought on “জীবনসঙ্গী (১ম খণ্ড) – ভালবাসার রোমান্টিক কথা বাংলা”

  1. আপু অনেক ভালো লাগলো,,,,👌👌👌👌👌
    বিশেষ করে সেই কথাটা…!
    যারা স্ত্রী কে শুধু বিছানার সাথী, ঘরের দাসী আর বাচ্চা তৈরির মেশিন মনে করে না। জীবনসঙ্গী মনে করে।।।।।
    অনেক সুন্দর আপু🌹🌹🌹👌👌👌👌👌

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *