জীবনসঙ্গী (শেষ খণ্ড) – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা বাংলা

জীবনসঙ্গী (শেষ খণ্ড) – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা বাংলা: আমার জন্যই তো তোমাকে এতো কষ্ট দেখতে হলো জীবনে। আমাকে ছুয়ো না তুমি। আমি পাপী। তুমি আমাকে মেরে ফেলো। প্রচন্ড রকম ভেঙে পড়ে অনিকেত।


পর্ব ১৪

আমি আপনার যোগ্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করবো। কিন্তু তার আগে আপনাকে কিছু কথা দিতে হবে আমায়।
একনাগাড়ে বলে যায় শশী।
বুকের মাঝে ড্রাম বাজানোর মতো বাড়ি দিতে থাকে। যে লেভেলের রেগে গেছে অনিকেত। শশীর তো ভয় ই করছে কষিয়ে থাপ্পড় না দিয়ে দেয় অনিকেত
কিন্তু শশীকে অবাক করে দিয়ে অনিকেত শান্ত গলায় বলে।
কি কথা বলো। তোমার ভালোবাসা পাবার জন্য আর কতো পরীক্ষা দিতে হবে বলো আমাকে। আমি সব পরীক্ষা দিতে রাজি।

শশীর খুব খারাপ লাগে অনিকেতের এমন দুঃখ বিধুর কথা শুনে।
আপনি আজ থেকে ওসব ছাই পাস খাবেন না। অন্য আট দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো ঘরে থাকবেন। সবার সাথে আগের মতো আচরণ করবেন। মদ ছুঁয়েও দেখবেন না। আর নিয়মিত নামাজ পড়বেন।
এই অগোছালো জীবনকে গোছালো করবেন। নিজের চেহারাটা একটিবার আয়নাতে দেখেছেন। কি হাল করেছেন নিজের। মুখের দাড়ি টা মনে হয় সহস্র বছর ধরে শেভ করেন নি। শশী কিছুটা অভিমান নিয়ে বলে।

এসব করলে আমাকে ভালোবাসবে।
মৃদু হাসি দিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে বলে।
হুমমমম। শশী মাথা নিচু হয়ে বলে।
তাহলে আমাকে গোছালো করার ভারটা নিয়ে নাও তুমি। আমি কথা দিচ্ছি সব কথা শুনবো তোমার। তুমি আমার পাশে না থাকলে আমি যে এই অগোছালো জীবনকে গোছাতে পারবো না শশী। তুমি থাকবে তো পাশে আমার? করুনস্বরে বলে।

জ্বী। হাত পা থর থর করে কাপছে কেন যেন এসব কথা শুনে। আবার কষ্টও লাগছে অনিকেতের এমন অসহায় মুখটা দেখে
ঠিক আছে। চলো নিচে যাওয়া যাক। না হলে সবাই অন্য কিছু ভাববে। বাঁকা হাসি দিয়ে
কি ভাববে? অনির ঠোঁটের বাঁকা হাসি মোটেও ভালো সংকেত না। শশী একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়।

সেটা যারা ভাববে তাদের কাছেই জিজ্ঞেস করো। আমি কি সবজান্তা নাকি? বলেই অনিকেত হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় মুখে মৃদু হাসি নিয়ে।
শশী কপাল কুঁচকে দাড়িয়ে রয় কিছুক্ষন অনিকেতের যাওয়ার পথে তাকিয়ে। অনিকেতের দুষ্টু ইংগিত শশী ঠিক বুঝতে পারে।
ফাজিল একটা। ভেংচি দেয় শশী।

শশী নিচে নেমে দেখে অনিকেত খাবার টেবিলের চেয়ারে বসে মায়ের রান্না করা খাবার খাচ্ছে আর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছে।
শশীর খুব রাগ হয়। একটু আগে কি রাগ টাই না দেখালো। এখন আবার সব বেমালুম ভুলে কি ভাবটাই দেখাচ্ছে যেন কিছুই হয় নি। এই ছেলে জাতটাই এমন। সাধনার জিনিস পেয়ে গেলে ভাব ধরে। ডং

শশী কে এদিকে আসতে দেখে অরুনা চৌধুরী শশীর কাছে ছুটে যায়।
তোর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তুই আমার কথা রেখেছিস বউ মা। দেখ আজ আমি আবার আমার সেই অনিকে ফিরে পেলাম। এটা শুধু তোর জন্যই সম্ভব হয়েছে রে মা।
এটা আমার দায়িত্ব মা। স্বামী হিসেবে তাকে সঠিক পথ দেখানো বউ হিসেবে আমার কর্তব্য। আপনি চিন্তা করবেন না উনাকে নিয়ে।

না রে আমার আর চিন্তা নাই। তুই যে এসেছিস আমার অনির জীবনে। আমার দুশ্চিন্তা সব শেষ। আজ বুঝতে পারলাম অনি কেন এতো পাগল তোর জন্য।
কারন ও বুঝতে পেরেছে তোর চেয়ে উত্তম জীবনসঙ্গী ওর জন্য আর কেও না।
শশী লাজুক হাসিতে আড়চোখে অনির দিকে তাকাতেই অনিকে আঙুল চাটতে চাটতে এদিকে ভ্রুকুটি দিয়ে তাকাতে দেখে।

শশী কেন যেন অনিকেতের চোখের দিকে তাকাতে পারে না। কেমন নেশাভরা চোখ অনির।
মুখ ছাড়া আর কোনো অঙ্গ দিয়ে যদি মানুষের মনের ভাব বোঝা যায়। সেটি ঐ দু আখি।
অনিকেতের আখি অনিকেতের হৃদয়স্পর্শী গানের চেয়েও মারাত্মক। বেশিক্ষণ চেয়ে থাকলে ও আখির নেশায় পড়ে যাবে নিশ্চিত।

এইমুহুর্তে প্রচন্ড রকম লজ্জা অনুভব করছে শশী অনিকেতের সামনে। একটু আগেই তো ওর সাথে নিজের জীবনের অংশীদারিত্ব ভাগাভাগি করলো। যতোই বলুক সময় লাগবে তাকে আপন করতে। কিন্তু ভয় লাগে যদি এইটুকু অনুমতি তে জোর করে কাছে আসতে চাই অনি?
গলা শুকিয়ে যায় শশীর।

মম আমাকে আরেকটু মাংস দিয়ে যাও। শশীর দিকে তাকিয়ে
হ্যাঁ আসছি বাবা।
চল। তুই ও ওর সাথে বসে খাবি।
না। মা আমি বরং পরে সবার সাথে খাব।
পরে কেন খাবি? স্বামীর সাথে বসে খাওয়া সওয়াব। চল খাবি। শশীকে একপ্রকার জোর করে অনিকেতের পাশে বসিয়ে দেয়।

অনিকেতের মা টেবিলে মাংস ভর্তি বাটি এনে দেয় রান্না ঘর থেকে।
নে এবার তোরা খেয়ে নে। আমি দেখি কল করে তোর ড্যাড কখন আসবে। বলেই চলে যায় নিজের রুমে অরুনা চৌধুরী।

নিচে কেউ নেই। শুধু শশী আর অনিকেত ছাড়া। বাকি মানুষ গুলো কই কে জানে।
শশী এদিক ওদিক তাকায় কেউ আছে কি না দেখতে।
অনিকেতের পাশে বসে কেমন কেমন যেন লাগছে এখন।
যাদের খুজছ তারা কেউ নেই এখানে। আগামী ২/১ ঘন্টার মধ্যেও কেউ এদিকে আসবে বলে মনে হয় না। তাই চুপচাপ খেয়ে রুমে যাও।
শশীর ইচ্ছা করে নিজের মাথায় নিজেই বাড়ি দিতে। এই লোকটার সামনে মনে মনে কিছুই দেখি ভাবা যায় না। সব বুঝে ফেলে। ঠোঁট ফুলিয়ে বসে থাকে অনিকেতের পাশে।
মুখ খুলো। হা করো তো।

শশী হাত মুচরাতে থাকে, এই মুহুর্তে অনির মুখে খাওয়ানোর কথা শুনে
কি হলো? তুমি কি কানে কম শুনো।
কম শুনবো কেন? মাথা নিচু করে।
এইতো তাড়াতাড়ি জবাব দিলা। থেকে থেকে মুখে কি হয় তোমার? জবাব দিতে কষ্ট হয় বুঝি। হা করো খাইয়ে দেই।
আমি খেতে পারবো?

তুমি তো আমাকে স্বামীর অধিকার দিলে। সেই অধিকারে তোমাকে খাইয়ে দেওয়ার অনুমতি কি পেতে পারি না?
কি বলবো এখন। ধ্যাৎ ভাল্লাগে না। কি একটা পরিস্থিতি তে পড়েছি। মনে মনেভাবে।
কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দেয়।
জ্বী। পারেন। চোখ নামিয়ে বলে নিচুস্বরে বলে।

শশীর মুখের সামনে মাংস সহ খিচুড়ি মেখে তুলে ধরে অনিকেত।
শশী কিছুক্ষন ইতস্তত করে। মুখে পুরে নেয় অনিকেতের হাতের মাখানো খাবার।
অনিকেতের আঙুল গুলো মুখে ঠোঁটে লাগতেই অন্যরকম অনুভুতি কাজ করে শশীর শশীরে।

খাবার টা খেয়ে এতো মজা লাগে টেস্ট টা। শশীর মনে হয় যেন অমৃত মুখে দিয়েছে।
আমার মম কেমন রান্না করে বলো তো? খাবার মাখাতে মাখাতে বলে।
অনেক ভালো। হুমম দেখতে হবে না শ্বাশুড়িটা কার? হেসে বলে।
শশী না চাইতেও অনিকেতের দিকে তাকায় কথাটা শুনে।

লোকটার হাসিটা না এই অমৃতসমান খাবার থেকেও ইমামমম। এতো সুন্দর রাজকুমারের মতো স্বামী শুধু রুপকথার গল্পেই হয়। অনিকেত কে স্বামী হিসেবে পেয়ে শশীর সেই ধারণা পাল্টে গেছে। বাস্তবেও রাজকুমার আসে কারো কারো জীবনে। যেমন অনিকেত এসেছে রূপকথার রাজকুমার হয়ে দূঃখীনি গরিবকন্যা শশীর জীবনে।
মনের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে শশীর।
কি হল। হা করো।

কথাটা শুনে শশীর অনিকেতের উপর থেকে মোহাচ্ছন্নতা কাটে।
হা করে খাবার টা মুখে নিতেই অনিকেতের মুচকি হাসি দেখে শশী জিবে কামড় দেয়।
এই রে আবার মনে কথা সব বুঝে গেছে। কি ভাববে তোকে। নিশ্চয়ই পাগল ই ভাববে।
আমি কিছু বুঝি নি। নাও পানি খেয়ে রুমে যাও। হাসি দিয়ে বলে অনিকেত।
শশী কোনোমতে ঢকঢক করে পানি খেয়ে তাড়াতাড়ি রুমে চলে যায়।

অনিকেত শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। পাগলী একটা।
এভাবে প্রায় এক মাস কেটে যায়। শশী এখন অনিকেতের বাড়ির সবাইকে আপন ভাবতে শুরু করেছে। অনিকেতের সাথেও সম্পর্ক অনেকটা উন্নতি হয়েছে। দুজনের বিছানা আলাদা হলেও মনটা অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে।
শশী! শশী! চিৎকার করে
জ্বী! দৌড়ে আসে
কোথাই থাকো বলো তো।

আমি তো এখানেই ছিলাম? চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে বলে।
বিছানার উপর যে শাড়িটা আছে পড়ে রেডি হয়ে নাও তো?
কেন?
সবসময় কেন কেন করো কেন তুমি? মাঝে মাঝে চুপচাপ স্বামীর কথা শুনলে কি সমস্যা হয় বউ।

শশী আর কিছু বলে না। জানে এখন কিছু বললে দুষ্টু মিষ্টি কথা শুনিয়ে লজ্জা দেবে।
তার চেয়ে যা বলছে তাই চুপচাপ শোনা ভাল।
শশী বিছানার উপর থেকে কাপড়টা হাতে নিয়ে দেখে নীল শাড়ি। মাঝে কাঠ গোলাপের ফুলের কারুকাজ। দারুন চয়েস অনির।

যাও গিয়ে পড়ে আসো। অনিকেতের ধমকে শশী কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে।
কাপড় পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে চোখ কপালে শশীর।
নীল পাঞ্জাবি তে আয়নার সামনে চুল নাড়িয়ে নিজেকে দেখতে ব্যস্ত অনিকেত। খোঁচা খোচা দাড়িতে ফর্সা বলিষ্ঠ দেহের এই সুপুরুষের উপর জরাতে পেরে আজ বুঝি নীল পাঞ্জাবিটাও নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছে।

শশী তো এইমুহুর্তে অনিকেত কে দেখে
মনের অজান্তেই বলতে লাগলো।
দেখেছি তো কতোবার তোমায়।
তবুও মেটেনা তোমায় দেখার স্বাদ।

প্রতিবার নতুন আরো নতুন হয়ে
ধরা দাও তুমি আমার হৃদগৃহে।
হৃদয়জুড়ে তোলপাড় হঠাৎ হঠাৎ
শুধু তোমাকে দেখলেই এ মনে বার বার।
বলো না কি আছে তোমাতে।
কেন হাজার বাধাতেও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি তোমার মায়াতে।
এখন যে মনে হয় বাচা দায়।
এক সেকেন্ডও তুমি বিহনে আমার।


পর্ব ১৫

আয়নায় সামনে দাড়িয়ে আয়নার ভেতর থেকেই শশীকে একদৃষ্টিতে দেখলো অনিকেত। দুজনের কিছুক্ষন চোখাচোখি হলো।
অনিকেত কিছু না বলেই চোখ সরিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। যাবার সময় একটিবার পেছন ফিরে তাকালো না।

অনিকেতের এমন আচরণ শশীর মনে যথেষ্ট আঘাত দিলো। নিজের কাছেই নিজেকে ছোট লাগছে। কিভাবে অনিকেতের সামনে নিজের অনুভূতি জাহির করে দিলো।
অনিকেত হয়তো এখন আর এসব পছন্দ করে না। তাইতো সব শুনেও কিছু না বলেই চলে গেলো।

ভালোবাসা প্রকাশ করলে তার কদর কমে যায়।
চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ ফুটে উঠলো শশীর।
ভাবি কি হলো বসে আছ কেন। ওমা তুমি দেখি এখনো তৈরি হও নাই। যাবা না?
কোথায় যাব ফারিহা?
কেন ভাইয়া বলে নাই তোমাকে?

না। মন খারাপ করে বলে।
ওহ! হয়তো ভুলে গেছে। আমার এক কাজিনের এংগেজমেন্টে এ যেতে হবে সবাইকে।
চলো তোমাকে আমি রেডি করাই দেই।
বাহ! ভাবি তোমার শাড়িটা তো দারুন।

ফারিহা শশীকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। খোঁপার পাশে গাজরা গুজে। সাথে চোখে গাঢ় কাজল, ঠোটে লাইট লিপিস্টিক, কপালে নীল টিপ। হাতভর্তি নীল চুড়ি।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় এই মুহূর্তে শশীর কাছে যে এই জিনিসগুলো ওর ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে ফারিহা বের করে। কিন্তু শশী নিজেও জানে না এগুলো কোথা থেকে আসলো।

ফারিহা আমার ড্রয়ারে এসব আছে তুমি কি জানলে।
কেন তোমাকে বলেছিলাম না? আমার কাছে জাদু আছে।
হুমম। ঘোড়ার ডিম আছে। কে আনছে বলো না।
কে আর আনতে পারে বোঝো না। তোমার স্বামী মহাশয়।
শশীর মন কথাটা শুনেই ভালো হয়ে গেলো।

খুশি খুশি সেজেগুজে বাড়ি থেকে সবাই বের হলো। গাড়ির সামনে এসে শশী অনিকেত কে খুজে বেরায়। গাড়িতে ওঠো।
পেছন থেকে হঠাৎ কারো আওয়াজে চমকে ওঠে। পেছন ফিরে দেখে অনিকেত
আপনি কই ছিলেন। হেসে বলে

ছিলাম কোথাও। গম্ভীর স্বরে
এটা কেমন ধরনের উত্তর শশীর মোটেও ভালো লাগে না অনিকেতের এমন নিরস উত্তর।
অনিকেত শশীর উত্তরের অপেক্ষা না করে গাড়িতে উঠে গেলো।
শশীর খুব কান্না পায় অনিকেতের এমন ব্যবহারে। যার জন্য এতো সুন্দর করে সাজলাম। সেই মানুষটা একটু ভালো করে দেখলোও না। বললোও না শশী তোমাকে আজ মায়াবতী রাজকন্যা লাগছে।

অনিকেত নামক রাজপুত্রের রাজকন্যা।
বউ মা তুমি অনির সাথে সামনে গিয়ে বসো।
শশী সামনে বসতে যাবে তখনি অনিকেত বলে ওঠে।
নো মম। রাতুলরা সামনেই ওয়েট করছে। আমরা সবাই এই গাড়িতে যাব। ও তোমাদের সাথে পেছনের গাড়িতেই বসুক গিয়ে।

আচ্ছা তোমরা আস। আমি সামনে ওদের পিক করে ওয়েট করবো তোমাদের জন্য।
ড্রাইভার! ড্রাইভার!
জ্বী ভাইজান!
বাড়ির সবাইকে নিয়ে রাতুলের বাসার সামনে গাড়ি থামিও। আমি ওখানে থাকবো।
জ্বী।

অনিকেত কাওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়।
অনির মা সহ বাড়ির সবাই শশীর দিকে স্বান্তনার দৃষ্টিতে তাকায়।
শশী মেকি হাসি দিতেই সবাই গাড়িতে উঠে যায়।
ভাবি তোমার কি খারাপ লাগছে ভাইয়া যে একা একা চলে গেলো। বুঝলাম না ভাইয়াটা এমন করলো কেন? ঝগড়া করছ নাকি?

আরে তেমন কিছু না। হয়তো বন্ধুদের সাথে যাবে তাই। শশী চাপা হাসি দিয়ে ফারিহা কে বলে।
পুরো রাস্তায় ফারিহা নাসিফ কতো হাসি ঠাট্টা করে। শশী শুধু ওদেরকে দেখানোর জন্য জোর করে হাসি দেয়।
চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে পরে থেকে থেকে।
চোখের কোনার কাজল টা লেপ্টে গেছে কিছুটা।

গাড়ি এসে থামে অনুষ্ঠানের ভেন্যুতে। রাস্তায় অনিকেত ড্রাইভার কে কল দিয়ে বলেছে একবারে এখানেই চলে আসতে না থেমে।
সবাই গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে ঢোকে।
ফারিহা, নাফিস, শশী, মা, ছোট মা একইসাথেই বসে একটা টেবিলে।
শশীর শ্বশুর দূরে ছোট চাচা ও অন্যান্য লোকদের সাথে দাড়িয়ে আলাপ করছে। কিছুক্ষণ পর মা, ছোট মা ও তাদের কাছে গেলো।

দাদাভাই! দৌড়ে অনিকেতের কাছে ছুটে যায় নাসিফ।
শশী ফারিহা দুজনেই অনিকেতের দিকে তাকায়। অনিকেত একনজর ওদের দিকে তাকিয়ে নাসিফের হাত ধরে ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে থাকে।
শশী চেয়ে আছে করুন দৃষ্টিতে অনিকেতের দিকে। অনিকেত আড়চোখে শশীর দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে কথা বলছে বন্ধুদের সাথে।

শশী নিচে তাকিয়ে হাতের চুড়িগুলো নাড়াতে নাড়াতে দু’ফোটা চোখের জল ফেলে।
বুকের বাম পাশটায় ভীষণ রকম কষ্ট অনুভব করছে অনিকেতের এমন অবহেলায়।
বউ মা! শশী তাড়াতাড়ি চোখ মুছে উঠে দাড়াতেই দেখে শ্বাশুড়ি ২ জন ভদ্রমহিলা সহ সামনে দাড়িয়ে আছে। এর মধ্যে একজন কে ও চেনে। হ্যাঁ রুবিনা আন্টি রিমির আম্মু
এরা হচ্ছে তোমার খালা শ্বাশুড়ি।

আমার ২ বোন। এনি হচ্ছে মিনারা তোমার বড় খালা শ্বাশুড়ি আর ও হচ্ছে রুবিনা তোমার ছোট খালা শ্বাশুড়ি।
শশী সবাইকে সালাম করে। রুবিনা আন্টি তো শশীকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করে।
কিন্তু বড় খালাম্মা মনে হয় খুশি হন নি আমাকে দেখে। তেমন কোনো কথায় বললো না। মুখটা কালো করে থাকে।

আন্টি রিমি কই?
কেন তুই কিছু জানিস না।
না আন্টি! ওর মনে আমি কষ্ট দিয়েছিলাম। তাই হয়তো এখনো রাগ করে আছে আমার উপর।
ওহ্! ফারিহা।
জ্বী খালামনি।
শশীকে নিয়ে ভেতরে যা।
আচ্ছা।

বড় আপা! তুমি একটু মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে কি হতো। মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে মনে হয়।
তুই চুপ কর রুবিনা। আর অরুনা। আজ আজিম না বললে তো জানতামই না তুই আর অনি যে এতোবড় সর্বনাশ করেছিস।
অনি তো বাচ্চা ছেলে। তুই তো মা। তুই কি করে ওর জীবনটা নষ্ট করে দিলি। একটা ফকিন্নি তালাক হওয়া মেয়েকে ওর ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিয়ে।
আপা চুপ করো। শশী শুনবে তো। কিসব বলছ তুমি।

শুনুক। এই মেয়েকে আমি অনিকেতের জীবন নষ্ট করতে দেবো না। আমার প্রিন্সের মতো বাবাটার জীবনে তুই এইরকম একটা মেয়ে কি করে আনতে পারলি।
শশী যেতে যতে খালাম্মা কথা সব শোনে। ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠে শশীর। আটকে রাখা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে।

ফারিহা এসব কথা শুনে ভাবিকে তাড়াতাড়ি টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে যায়।
আপা! তুমি আমি এসব বলার কেউ না, যাদের জীবন তারাই সঙ্গী বেঁছে নিয়েছে। আমার অনির খুশিই আমার কাছে সব। তাছাড়া শশী লক্ষিমন্ত একটা মেয়ে। মানুষের জীবনে দূর্ঘটনা ঘটতেই পারে,

তালাকপ্রাপ্তা হওয়া কোনো পাপ না।
আজ যদি তোমার আমার মেয়ের সাথে এমন হতো?
আমার তোর মেয়ের সাথে এমন হবে না। কারন আমাদের মেয়ে খারাপ না। খারাপ মেয়েদেরই তালাক হয়। আর আমার মেয়ে তালাক নিতে চাইলে গলা টিপে মেরে ফেলবো না ওকে। মেয়েরা রঙিন কাপড়ে পালকিতে শ্বশুরবাড়ি যায় আর সাদা কাফনে খাটিয়ায় শুয়ে সেই বাড়ি থেকে বের হয়।
এটাই নিয়ম।

ছি! আপা। এই একবিংশ শতকে এসে তোমার মুখে এসব কথা মানায় না। তুমি যা বললে তা হচ্ছে আদিম বর্বরতা। মেয়ে মানুষ কোনো সস্তা জিনিস না। যাকে যেভাবে ইচ্ছা যে কেউ ব্যবহার করবে।
আল্লাহ পাক পুরুষের মতো মেয়েকেও সমান মর্যাদা দিয়েছে। আদিম যুগের সকল বর্বরতা কে বাতিল করে মেয়েদের স্বাধীনতা দিয়েছে ইসলাম। কিন্তু তোমাদের কথা মনমানসিকতা দেখে স্পষ্ট বোধগম্য তোমরা ধর্মের সারমর্ম এখনো বোঝো নাই।
যুগ পাল্টে ছে আপা। স্বামীর নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে শিখেছে মেয়েরা। কেন উঠতে বসতে অত্যাচার নিপীড়ন সইবে।

স্বামীর অত্যাচারে গলায় ফাস লাগিয়ে মরা ভাল। কিন্তু তালাক নেওয়া ভালো না তাই না?
স্বামীর হাতে মরা ভালো কিন্তু তালাক নেওয়া পাপ।
স্বামী পরকীয়া কিংবা বহুনারীর কাছে যেতে পারবে কিন্তু স্ত্রীকে মাটি কামড়ে পড়ে স্বামীর সব কুকির্তি সয়ে যেতে হবে। তবেই সে ভালো বউ। তালাক দিতে চাইলেই বউয়ের চরিত্রে দোষ। বউ খারাপ। বাহ্ আপা কি অদ্ভুত নিকৃষ্ট বর্বর নিয়ম তোমাদের।

আপা! মেয়েদের জীবনেরও মূল্য আছে, তারাও মানুষ এটা সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে আধুনিক মেয়েরা। এতেই তোমাদের মতো আদিম ধ্যানধারণার মানুষের চোখ টাটানো শুরু হয়ে গেছে।

ভাবি তুমি কেদো না। বড় খালামনি একটু সেকেলে তো তাই এমন করে। আর একটু কড়া স্বভাবের। তুমি তার কথায় কষ্ট পেয়ো না।
না না ফারিহা। আমি কিছু মনে করি নাই। তিনি তো সত্যি বলেছে।
আমার মতো মেয়ের তো কোনো যোগ্যতা নাই তোমার ভাইয়ের স্ত্রী হওয়ার।
অনি ভাই! শশীর পেছনে তাকিয়ে।

ফারিহার মুখে অনির নাম শুনে শশীর গলা শুকিয়ে আসে। শাড়ি শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে থাকে।
ফারিহা মমকে বলিস আমি বাসায় চলে যাচ্ছি শশীকে নিয়ে।
আচমকা শশীর হাত ধরে খুব দ্রুত সামনে হাটতে লাগলো। শশী অনিকেতের হাটার সাথে তাল মেলাতে পারে না। কিছুটা দৌড়ের স্পিডে হাটতে হয় শশীকে। বোঝায় যাচ্ছে রেগে আছে অনিকেত।


পর্ব ১৬

ওভার স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে অনিকেত। পাশে চুপচাপ বসে আছে শশী।
গাড়ি বাড়িতে নয়। এসে থামে একটা অচেনা জায়গায়।
পুরোটা রাস্তা দুজনের কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলে নাই।
গাড়ি থামিয়ে ব্রেকে হাত চেপে জোরে জোরে হর্ন বাজাতে থাকে অনিকেত। যেন সব রাগ হর্ন হয়ে আকাশ পাতাল কাঁপাচ্ছে।

শশী কানে হাত দিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে থাকে সিটে।
একটু পর খুব দ্রুত গতিতে দৌড়ে ৪
জন হোটেল বয় ছুটে আসে।
এদের মধ্যে থেকে একজন গাড়ির দরজা খুলে দিতেই অনিকেত গাড়ি থেকে বের হয়ে সজোরে ছেলেটাকে চর দিতে গিয়েও হাত মুঠ করে নামিয়ে নেয়।
অনিকেত নিজে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে শশীর হাত ধরে গাড়ি থেকে নামায়
তারপর আবার আগের গতিতে হাঁটতে শুরু করে। শশী চুপচাপ মাথানিচু করে অনিকেতের সাথে চলতে থাকে। এতো শক্ত করে অনিকেত শশীর হাত ধরেছে মনে হচ্ছে ছাড়া পেলে শশী হয়তো পালাবে।

শশীর হাত বেয়ে ফোঁটা ফোটা রক্ত পড়ছে।
অনিকেতের হাতের চাপ লেগে চুড়ি ভেঙে হাত কেটে গেছে। শশী কোনোরকম উহ আহ শব্দ করে না। দাঁতে দাত চেঁপে ব্যথা সহ্য করে। ব্যথা সহ্য করার পটু হয়ে গেছে আজকাল শশী।
লিফটের কাছে এসে থামে অনিকেত। লিফট ওপেন করতেই ঢুকে পড়ে শশীকে নিয়ে তারপর ৫ম ফ্লোরের বাটন চাপ দেয় অনিকেত।
মেজাজ প্রচন্ড খারাপ আজ অনির। সকালে শশী মুখের ভালোবাসা প্রকাশ সেই সাথে শাড়িতে আকর্ষণীয় লাগছিলো শশীকে। খুব ইচ্ছা করছিলো গিয়ে শশীকে দুবাহুতে জরিয়ে ভালোবাসায় হারিয়ে যেতে। কিন্তু শশী যে এখনো তার অনুমতি দেয় নাই। তাই না চাইতেও দূরত্ব বজায় রাখে শশীর থেকে।

কিন্তু কথায় আছে না প্রেমের মরা মরে বার বার। তাই ই হলো। শশীর নীল শাড়ি পড়া দেখে যতোটুকু পাগল হয়েছিল এখন পরিপূর্ন অপ্সরা লাগছে। ফারিহার সাথে যখন রুম থেকে সেজেগুজে বের হলো আমার পছন্দমত জিনিসে পরে। আমার তো হার্টবিট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
এভাবে তিলে তিলে মেরে কি মজা পায় এই মেয়ে আমাকে। ইচ্ছা ছিলো রাতে ওকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাব। কিন্তু তা হতে দিলো কই?

মানছি খালামনি ওকে যা তা বলেছে। তাই বলে ও এখনো আমাদের বিয়ের এতোদিন বাদ এসেও বলবে ও আমার যোগ্য না।
মন ত চাচ্ছিল কষে দুগালে লাগিয়ে দেয়। কিন্তু ও যে আমার জান। ওকে আঘাত করা আমার পক্ষে সম্ভব না। বড্ড ভালোবাসি যে ওকে।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই চোখের কোনা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।
অনিকেত পাশে তাকানো ভঙ্গিতে চোখের পানি মুছে নিলো।

শশী জীবনে কোনোদিন লিফটে ওঠে নি। আজ প্রথম উঠলো। লিফট উপরে ওঠার সাথে সাথে শশী ভয়ে অনিকেতের হাত খামছে ধরে। ভীষণ ভয় করে ওর।
লিফট খোলার সাথে সাথে অনিকেত হাত ধরে হোটেলের একটা বিলাসবহুল কামরায় নিয়ে যায় শশীকে।
শশী ভিতরে ঢুকে থ হয়ে যায়। এতো সুন্দর করে ডেকোরেশান করে সাজান। মুভিতে দেখেছিলো হিরো হিরোইনের জন্য লাল গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে বিছানার মাঝবরাবর লাভ শেপ করা।

মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে। কি যেন বলে এটাকে ওহ্ হ্যাঁ ক্যান্ডেলাইট ডিনার। কিন্তু এখানে কিছুটা অন্য রকম।
বিছানায় ফুল আছে কিন্তু ডিনার টা নাই। খাবারের কথা মনে পড়তেই পেটে ইদুর লাফালাফি করে। উফ্ বড্ড ক্ষুদা লেগেছে।
কিন্তু আমার স্বামীটা যে মুডে আছে তা মোটেও সুবিধার না। ঝড় ওঠার পূর্বাভাস দিচ্ছে তার নিরবতা।

কিন্তু ঘরটা উফ্। পুরাই রোমান্টিক ফিলিংস এনে দিচ্ছে। বাইরের আকাশ টাও মেঘাচ্ছন্ন। থেকে থেকে দমকা হাওয়া বইছে। শশী ধীর পায়ে জানালার কাছে গিয়ে দাড়াতেই হিমেল হাওয়া পুরো শরীর শিহরিত করে।
শাড়ির আঁচল টা খোলা পিঠে ঢেকে নেয়।

অনিকেত ওয়াশরুমে সেই কখন ঢুকেছে এখনো বের হলো না।
এতোক্ষন কি করে উনি ওয়াশরুমে? , শশী এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দরজার কাছে।
দরজায় টোকা দেওয়ার জন্য হাত উঠিয়েও আবার নামিয়ে নেয়। অনির মেজাজ চড়া হয়ে আছে। শশীর মনে ভয়ও লাগছে। যদি রাগ করে অনি।
শশী বুঝতে পারে না এতো কিসের রাগ হলো আজ তার। নিজেই তো বিকাল থেকে ভাব নিচ্ছিলো আবার নিজেই এখন এমন রাগ করছে মনে হচ্ছে আমিই যেন তার সাথে ভাব দেখাইছি।

হুহ্ যত দোষ এখন এই শশী নন্দঘোষের।
আচ্ছা নন্দঘোষের স্ত্রী লিঙ্গ কি হতে পারে?
ধূর ভাল্লাগছে না। কি করছে এতোক্ষন ভেতরে। উনিশ বিষ চিন্তা করে শশী সাহস নিয়ে দরজায় টোকা দেয়।
এই যে শুনছেন?

না ভেতর থেকে পানি পড়ার শব্দ ছাড়া কোনো শব্দই আসছে না।
অনিকেত! শুনছেন আপনি? কথা বলছেন না কেন? কাঁদো কাঁদো স্বরে।
আচমকা দরজা খুলে শশীর হাত হ্যাঁচকা টান দিয়ে ওয়াশরুমের ভেতরে নিয়ে যায় শশীকে অনিকেত।

শশীকে শাওয়ারের নিচে নিজের সাথে চেপে ধরে অনিকেত। আকস্মিক এমন ঘটনায় শশী থতমত খেয়ে যায়।
শাওয়ারের পানির স্পিডে চোখ মেলে তাকাতেও পারছে না তেমন।
তারপরও চেষ্টা করলো চোখ মেলে অনিকেতের দিকে তাকাতে।
চোখ তো নয় যেন জ্বলন্ত আগুনের গোলা। অনিকেতের চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পায় শশী।
শশীর দুবাহু চেপে নিজের খুব কাছে রেখেছে অনিকেত।
অনিকেতের ঠোঁট চিবুক বেয়ে শাওয়ারের পানি ফোঁটা ফোটা গড়িয়ে শশীর ঠোঁটে পড়ছে।
আমি যে আর পারছি না এই দূরত্ব সইতে। আমার জান টা নিয়ে নাও তুমি। মেরে ফেলো আমাকে। এভাবে তিলে তিলে মরার চেয়ে আজ একেবারে মেরে ফেলো।
শশী কি বলবে। এই মুহূর্তে কি বলা উচিত? কিছু মাথায় আসছে না শশীর।
ভালোবাসায় এতো কষ্ট জানলে নেশা করতাম তবু শালার প্রেম করতাম না।
তোমার প্রেম আমাকে পাগল করে ছাড়বে।

আমি বদলে গেছি শশী। তোমার নেশায় আমি আজ উন্মাদ হয়ে যায়। হিতাহিতজ্ঞানহীন হয়ে যাচ্ছি।
এতোক্ষন শাওয়ারের নিচে থাকায় অনিকেত শশী দুজনের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। শশী তো রীতিমতো কাঁপছে।
অনিকেতের ঘোর কাটে যখন শশীর কাপুনীর আওয়াজ কানে যায়।
নিজের হাত শশীর বাহুতে দেখে এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নেয়।
চোখে মুখে অপরাধ বোধ ফুটে ওঠে।

হাতের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ শশীর পেছনের দেয়ালে সজোরে ঘুষি মারে।
হাত ফেটে রক্ত বের হয়ে যায়।
শশী আতঙ্কে চোখ বড় করে চিৎকার করে মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে যায়।
কি করছেন কি? অনিকেতের হাত নিজের হাতে নিয়ে।

মাফ করে দাও শশী? আমি বুঝি তুমি যেই কষ্ট পেয়েছ। যেই বিভৎসতা দেখেছ তাতে সহজে কাওকে বিশ্বাস করা তোমার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু আমি বার বার নিজের ভালোবাসার নেশার উন্মাদনার কাছে তোমার কষ্ট গুলো ভুলে যায়। জোর করে নিজের ভালোবাসা চাপিয়ে দিতে চাই তোমার উপর।

ভুলে যায় তোমাকে দেওয়া কথাগুলো। তোমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে স্পর্শ করে পাপ করেছি আমি। আমাকে ক্ষমা করে দাও শশী। হাঁটু মুড়ে বসে কাঁদতে থাকে।
শশী অবাক হয় অনিকেতের এমন রুপ দেখে। ছোট বাচ্চা শিশুর মতো কাঁদছে। কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে অনিকে কাঁদতে দেখে।

শশী আর সহ্য করতে পারে না। অনিকেতের সামনে বসে জরিয়ে ধরে সমস্ত শক্তি দিয়ে।
শশী ভালোবাসার অর্থ কি আজ বুঝেছে। প্রকৃত জীবনসাথী কি আজ বুঝেছে। বুকের মাঝে গেঁথে রাখতে ইচ্ছা করছে অনিকেত কে আজ শশীর। সারাজীবন ভর অনিকেত কে বুকের মাঝে এভাবেই জরিয়ে বাঁচতে ইচ্ছা করছে শশীর
অনিকেত কে বাহুডোর থেকে আলাদা করে নিজের কপাল অনির কপালে ঠেকায় শশী।
আমি তোমাকে ভালোবাসি অনিকেত।

খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমার বাঁচা মরার শামিল। আমি তোমাকে তোমার ভালোবাসাকে ছাড়া তুচ্ছ। আমি বড় ভাগ্যবতী সৃষ্টিকর্তা আমাকে তোমার মতো জীবনসঙ্গী দিয়েছে।

পর্ব ১৭

আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছি এতোদিন। যে আমাকে পাগলের মতো নিঃস্বার্থ ভালোবেসেছে তাকে আমি শুধু কষ্টই দিয়েছি। আর না। আজ থেকে আমি তোমাকে আমার সব কিছু সমর্পণ করলাম। আমার যা কিছু বাকি আছে সব তোমার চরনে সঁপে দিলাম ভালোবেসে বিশ্বাস করে। শশী আজ থেকে অনিকেতের আকাশের শশী হয়ে থাকবে। এই আকাশই হবে শশীর শেষ ঠিকানা। শশী কাঁদতে কাঁদতে বলে।

অনিকেত শশীর মুখটা দুহাতে নিয়ে চোখে চোখ রেখে নিজের দুঠোটের স্পর্শে শশীর চোখের জল মুছে দেয়। বুকের মধ্যে জরিয়ে রাখে।
অনিকেত আমাকে ধোঁকা দেবে না তো বলো? তোমাকে হারালে আমি বাঁচতে পারবো না অনিকেত।

আমার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবে তোমায় বিহনে।
তুমি ছাড়া আমি অনিকেত জীবন্ত লাশ শশী। তুমি আমার অক্সিজেন। তোমাকে শুধু ভালোবাসতেই শিখেছি আমি। আর কিছু শেখায় নি তোমার ভালোবাসা আমাকে।
শশীকে কোলে উঠিয়ে নেয় অনিকেত। শশী অনিকেতের বুকে মাথা এলিয়ে দেয়। ঘরে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে অনি পাশে বসে। বাইরে থেকে থেকে আকাশে বিজলি

ডাকছে। বিজলির আলো এসে শশীর ভেজা মুখের উপর পরে। এলোমেলো চুলের খোঁপার ফুল দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। লাল ঠোঁট থেকে থেকে কম্পিত হচ্ছে শশীর।
অনিকেত শশীর দেহ থেকে শাড়ির আচল সরিয়ে নেয়। লজ্জায় অনিকে ঝাপটে ধরে শশী। নিজের ভেজা পাঞ্জাবি খুলে শশীর কপালে চুমু দিয়ে আলমিরা থেকে টাওয়াল বের করে নিজের চুল মুছে শশীর দিকে এগিয়ে যায়।

শশীর চোখ দিয়ে এখনো থেকে থেকে জল গড়াচ্ছে। স্থির দৃষ্টিতে নিচে চেয়ে আছে।
শশীর কানের দুল, গলার নেকলেস খুলে দেয় অনিকেত। শশীকে বুকের মাঝে নিয়ে চুলের খোপা থেকে গাজরা খুলে খোপাটা খুলে খোলা পিঠের উপর ছেড়ে দেয় চুলগুলো। নিজের হাতে শশীর চুলগুলো মুছে দেয় অনিকেত।

বুকের মাঝে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় শশীকে। নিজের দু ঠোট শশীর দুঠোটে। তারপর শশীর সমস্ত দেহজুরে নিজের ভালোবাসার চিহ্ন একে দেয়।
শশী কেঁপে কেঁপে ওঠে। রিশাদ তো কামনা মেটাতে শুধু দেহ ছুয়েছিলো। অনিকেত আজ শশীর দেহ মন দুটোয় ছুয়ে দিলো ভালোবাসার পরশে। ঐ ছোয়া আর আজকের ছোয়ার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। অনিকেতের ছোঁয়ায় ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই নেয়। প্রতিটি ছোয়াতে শুধু ভালোবাসি ভালোবাসি খুজে পায় শশী।

বাইরে প্রচন্ড ঝড় বইছে। শো শো বাতাসে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
সব কিছু ভেদ করে দুটি দেহ দুটি মন এক হয় চিরতরের লাগি। কিন্তু প্রকৃতি এতো বৈরি কেন আজ। তবে কি শশীর খুশিতে খুশি নয় প্রকৃতি।
অনিকেতের আজ খুশির সীমা নেই। নিজের করে পেয়েছে শশীকে। একান্তই যেন শশী তার। শশী নামক সম্পদ সম্পত্তির একচ্ছত্র অধিপতি আজ অনিকেত। নিজের জীবনকে পরিপূর্ণ লাগছে। এই রাত এই সময়টা যদি এখানেই থামিয়ে দেওয়া যেত।

ঘুমন্ত শশীর মুখে উপর পড়া চুলটাকে সহস্তে যতনে কানের পাশে সরিয়ে দেয়। চাদরটাকে শশীর গায়ের আরেকটু উপরে উঠিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ একে উঠে যায় অনিকেত। মন চায় এভাবেই সারাজীবন জরিয়ে ধরে রাখতে।
কিন্তু বেগমসাহেবা যে খুব ক্ষুদার্ত। শশী ঘুম থেকে ওঠার আগেই তাই অনিকেত নিজ হাতে ওর বেগম সাহেবার জন্য খাবার রান্না করে আনবে। বেগম সাহেবাকে নিজের রান্না করা খাবার খাওয়াবে আজ অনিকেত।

শশী চোখ বন্ধ করে ঘুম ঘুম ভাবে। নিজের পাশে হাতরাতে থাকে।
অনিকেত কে না পেয়ে লাফ দিয়ে ওঠে বিছানা থেকে। কই গেলো অনিকেত। এদিকে ওদিক চোখ ঘুড়ায়।
অনিকেত! অনিকেত!
কোথায় তুমি? কাঁদো কাঁদো স্বরে।
না রুমে কারো সাড়াশব্দ নেই। শরীরে চাদর পেচিয়ে ভয়ে ভয়ে বিছানা থেকে নামতেই ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।

সামনে টেবিলে উপর লাল শাড়ির সেট। সাথে লাল চুরি ও আছে। উপরে একটা চিরকুট দেখতে পায় শশী। শশী বুঝতে পায় এটা অনিকেতের কাজ।
চিরকুট হাতে নিতেই মুখের হাসিটা আরো প্রশস্ত হয় শশীর। চোখে মুখে শান্তির ছাপ।
“ভালোবাসার বেগমসাহেবা!

তোমাকে রেখে এক সেকেন্ড কোথাও যেতে আমার মন প্রান দেহ কোনটাতেই সম্মতি দেয় নাই। তবুও যেতে হলো কিছুক্ষণের জন্য। কারন আমার বেগম সাহেবার জন্য রাতের ডিনারের ব্যবস্থাটা যে করতে হবে।
এখানে কিছু পোষাক রেখে দিলাম। রেডি হয়ে থেকো। ততক্ষণে তোমার এই অধম দেওয়ানা বাদশাহ হাজির হয়ে যাবে।
শশী চিরকুট পড়ে যথেষ্ট হাসে। সত্যি শশী নিজেও দেওয়ানা হয়ে গেছে এই বাদশাহজাদার উপর।

শশী ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ি পড়ে আসে।
সামনের ড্রেসিং টেবিলে দাড়িয়ে ম্যাচিং কানের দুল, চুরি পড়ে। ঠোটে লিপিস্টক দেয়।
তুমি জানো তোমাকে দেখলে তোমার প্রেমে বার বার খুন হতে ইচ্ছা করে আমার।
আচমকা পেছন থেকে অনিকেতের এমন কথা শুনে সামনে থ হয়ে দাড়িয়ে থাকে। লজ্জা লাগে খুব শশীর অনিকেত কে দেখে।

অনিকেত খাবার ট্রে সহ ভেতরে ঢোকে। একটু পর একটা বেয়ারা গোছের ছেলে আরো কিছু খাবার দিয়ে সামনের ছোট টেবিলটা সাজিয়ে দিয়ে যায়।
বেয়ারাটা চলে গেলে অনিকেত দরজা লাগিয়ে দেয়।
শশী অনিকেতের পাশ কেটে অন্য পাশে যেতে যাবে তখনি শশীর হাতটা টেনে নিজের কাছে টেনে নেয় শশীকে।

কই যাও বেগমসাহেবা। আর দূরে সরে যেতে দেবো না তোমায়। একচুলও না। দরকার হলে পাজরের হাড়ে গেঁথে রাখবো তোমাকে।
শশীর থুতনি ধরে উচু করে শশীর চোখের পাতায় ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিয়ে।
অনিকেতের ঠোটদুটো শশীর ঠোঁটে কাছে যেতেই শশী অনিকেতের ঠোঁটে নিজের হাত রেখে বাঁধা দেয়।

অনিকেত হাসি দিয়ে শশীর হাতের তালুতে চুমু দিয়ে হাতটা বুকের বামপাশে চেপে ধরে।
এই হৃদয় ততদিনই হৃদয় হয়ে থাকবে যতদিন তুমি থাকবে আমার পাশে।
শশী লাজুক হাসি দিয়ে দাড়িয়ে থাকে।
চলো বেগম সাহেবা! খেতে বসি। আমার ক্ষুদা কিন্তু একটুও নেই। আজ এতো? শশী আবার মুখ চেপে ধরে অনিকেতের।
আমি কিন্তু খাবো না তুমি এমন করলে। লজ্জা লাগে না আমার বুঝি? শশী মাথা নিচু করে বলে।

আচ্ছা আর বলবো না। চলো খাইয়ে দেই তোমাকে। মৃদু হাসি দিয়ে।
না! আজ আমি তোমাকে খাওয়াবো।
সত্যি! এটাতো আমার জন্য পরম পাওয়া। আমার বেগম সাহেবার হাতের ছোঁয়া পেলে এ খাবার আজ নিজেদের ধন্য মনে করবে।
আআ। খাওয়াও হেসে শশীর দিকে মুখ ঝুঁকিয়ে হা করে।

শশী খাবার মুখে তুলে দিতে যাবে তখনি অনিকেত শশীর হাত ধরে ফেলে।
বেগম সাহেবা! তোমার হাত কেটেছে কি ভাবে। কতোখানি কেটে গেছে। খুব ব্যথা করছে বুঝি। অনিকেতের স্বর ভারি হয়ে ওঠে।
ও কিছু না। চুড়িতে লেগে কেটে গেছে।

আমি দিয়েছি এই ব্যথা তাই না। আমার কারনে এই ব্যথা পেয়েছ তাই না? খুব কষ্ট দিয়েছি তোমাকে আমি বেগম সাহেবা? শশীর কাটা হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় অনিকেত।
নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে অনির।
সামনে থাকা চাকুটা দিয়ে নিজের হাতে টান দিতে যাবে তখনি শশী অনির হাত ধরে ফেলে।

কি করছ কি তুমি? পাগল হয়ে গেলে। ব্যথা কি তুমি ইচ্ছা করে দিয়েছ? তুমি তো আমাকে এতো ভালোবাসো তুমি কোনোদিনও আমাকে ব্যথা দিতে পারো না। অনিকেত রা শুধু ভালোবাসতে জানে ব্যথা দিতে জানে না।
আর আমি ঠিক আছি। একটুও ব্যথা নেই আমার। সব যে তোমার ভালোবাসার ওষুধে সেড়ে গেছে। এখন যা আছে সব তোমার দেওয়া অফুরন্ত সুখের হাসি।
এবার হা করো। তোমার বেগম সাহেবার কিন্তু খুব ক্ষুদা লেগেছে। তুমি না খেলে আমি খেতে পারবো না।
শশী অনিকেত কে খাইয়ে দেয়।

অনিকেত খেয়ে শশীকেও খাইয়ে দেয়।
খাওয়া শেষে জানালার পাশে গিয়ে বসে অনিকেতের বুকে মাথা রেখে শশী। বাইরের ঝড়ো বৃষ্টি হাওয়া এসে দুজনকে আরো কাছে নিয়ে আসে।
এভাবেই।
দুজন দুজনকে ভালোবাসার আবেশে জরিয়ে রাখে।

পর্ব ১৮

নতুন সকালের স্বচ্ছ সতেজ আবহাওয়া গায়ে লাগিয়ে এগিয়ে যায় শশী আর অনিকেতের গন্তব্যের পথচলা।
পুরোটা রাস্তা শশীর হাত টা নিজের হাতে ধরে রেখে গাড়ি চালায় অনি। যেতে বার বার ঘুরে ফিরে চোখটা যেন শশীর দিকেই এসে থামে। এটাই যে শেষ গন্তব্য অনির। শশীতেই যে বিলীন হয়ে গেছে সম্পূর্ণরূপে।
শশী লজ্জায় লাল নীল হয়ে অনির ভালোবাসা উপলব্ধি করে। জীবন টা এতো মধূর অনিকে এভাবে না পেলে শশী বুঝতেই পারতো না।
রিশাদের কারনে একসময় পুরুষজাতীর উপর ঘৃণা ধরে গিয়েছিলো। আজ অনির সংস্পর্শে এসে সে ধারনা পাল্টে গেলো। এখন শ্রদ্ধা করে অনির মতো পুরুষকে। আসলে জগতে সব মানুষ তো এক না। দুনিয়াতে যেমন শয়তান আছে। তার বিপরীতে আল্লাহ পাক ফেরেশতাও বানিয়েছেন। ভালো

খারাপ দিয়েই দুনিয়াটা। হতাশ হওয়া তো সয়ং রাব্বুল আলামীনেরও পছন্দ না।
গাড়ি এসে থামে চৌধুরী মঞ্জিলে।
অনিকেত গাড়ি থামিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচায়। নাক চিকন করে শশীর দিকে অগ্রসর হয়।
কি হচ্ছে টা কি। কেউ দেখে ফেলবে তো?
সরো।
অনিকেতের বুকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়।
দেখলে কি হয়েছে। যা করছি নিজের বউয়ের সাথেই তো করছি। পরকীয়া করছি নাকি? যে লোকলজ্জার ভয় করবো। ডিস্ট্রার্ব করো না তো? খুব ইচ্ছা করছে। একটা শুধু একটা দিবো বেগমসাহেবা। ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে।
একটাও না। বলেছি না। অনির বুকে হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে।
আমি কিন্তু খুব রাগ করবো বেগমসাহেবা। আমাকে কষ্ট দেবে তুমি? স্বামীকে এসব বিষয়ে না করতে নেই কিন্তু বেগম সাহেবা। পাপ হব্বে পাপ। ঘোর পাপ।
করুন চোখে তাকিয়ে।

অনি! এটা কিন্তু ঠিক না। ইমোশনাল ব্লাকমেইল করবা না বলে দিলাম। এতো রোমাঞ্চ কোথা থেকে আসে বলোতো। এতো এনার্জি কই পাও। রাগ দেখিয়ে বলে।
সব তোমার দোষ এতো সুন্দর কেন তুমি? এতো নেশা কেন তোমার দেহে। চাইলে নজর সরাতে পারি না। তুমি এমনি জিনিস আমার কাছে যাকে হাজার লক্ষ কোটিবার ভালোবাসলেও তৃপ্ত হবো না আমি। তোমাকে দেখলে অটোমেটিক্যালিই এনার্জি চলে আসে। শশীর গালটা টেনে দেয়।
হু। গাল ঢলতে ঢলতে। এখন সব দোষ আমার। আমার দোষ তাই আমিই এখন তোমাকে শুধরাবো। এসব লুচুগিরী চলবে না এখন থেকে।

একশ বার চলবে। হাজার বার চলবে।
তোমার জন্য লুচু, লুচি, লিচি, ম্যাংগো সব হবো আমি। বাট একটা দাও না বেগমসাহেবা। বাচ্চাদের মতো নেকাসুরে বলে।
হিহিহিহি। না দিবো না। নেকাশষ্টি একটা।
ঠিক আছে দিবা না তো। যাও লাগবে না। মুখ কালো করে অন্য দিকে ফিরে দরজার হাতলে হাত রাখে অনিকেত।

অনিকেত কি সত্যি রাগ করলো? আমি কি একটু বেশিই করে ফেললাম। একটা কিসিই তো চেয়েছিলো। ধ্যাৎ আমি না একটু বেশি বেশিই করি। কিন্তু সে এমন কেন? নিজেরই তো বউ এতো নেকামির কি আছে না দিলে জোর করে নিতে পারে না। আমি তো এখন তারই। আমি কি কিছু মনে করবো নাকি? মনে মনে বলে শশী।
অনিকেত! সরি। রাগ করো নাআআআ
কথা শেষ না হতেই শশীর চুলের ভেতর হাত দিতে মাথা চেপে ধরে নিজের ঠোটের দখলে নিয়ে নেয় শশীর ঠোঁট জোড়া।

আচমকা অনিকেত এমন করাই। শশী ভয়ে চোখ বড় করে ফেলে। অনিকেত বুকে হাত ঠেকিয়ে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে লাভ হয় না। অনিকেত নিজের কাজে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ব্যস্ত এখন। কোনো বাঁধায় ইহাতে ব্যঘাত ঘটাতে পারে।
অনেকক্ষণ পর ছেড়ে দেয়। শশীর ঠোটদুটো ভার হয়ে থাকে।
বউ বলদী হলে স্বামীকেই যে সব শিখিয়ে বুঝিয়ে অভিজ্ঞ করে নিতে হয়। দেরিতে হলেও বুঝতে পারলাম বিষয়টা। শশীর গালের দুপাশে আলতো করে আবারও ভালোবাসার পরশ দিয়ে মৃদু হাসতে হাসতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

শশী থ হয়ে বসে থাকে সিটে। ঠোটে হাত দিয়ে বসে থাকে। জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস ওঠানামা করে। অনির যাওয়ার দিকে স্থির তাকিয়ে থাকে।
অনিকেত তো হাসতে হাসতে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। শশীর ঐ অবস্থা দেখে অনির যথেষ্ট হাসি পায়।
ঐ যে অনি চলে এসেছে।
অনি দেখ কে এসেছে?
অনির হাসি মুখ সিরিয়াস হয়ে যায়।
মিলা! তুমি?
হ্যাঁ। আমি। কি দেখছি এসব আমি আন্টি?

অনি! তুমি একদমি ডায়েট মেইনটেইন করো না। আন্টি দেখেছেন? দুইদিন একটু দূরে কি গিয়েছিলাম অনির তো নিজের প্রতি কোনো খেয়ালই নেই। অনির সামনে দাড়িয়ে অনিকে দেখতে দেখতে বলে।
আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি।
মম! ও গাড়িতে বসে আছে। ফারিহা কে বলো গিয়ে দেখতে। মায়ের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে অনি।
আচ্ছা দেখছি আমি। অরুনা চৌধুরী চলে যায়।

মন তো চাই অনিকে শক্ত করে জরিয়ে সিনার মাঝে গেথে নিতে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব হবে। অনি যে এখনো ভালোবাসে না মিলা কে। আর কত অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে আমাকে বলো না অনি। আর যে মন মানে না আমার। তোমাকে নিজের করে পাবার জন্য মনটা বড় ব্যাকুল আমার। কেন বোঝো না তুমি আমাকে? কেন? স্থির দৃষ্টিতে অনিকেতের দিকে চেয়ে মনে মনে ভাবে।

মিলা! অনিকেত মিলার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে।
কি হলো। এভাবে কি দেখছ?
কেঁপে ওঠে মিলা তুড়ির আওয়াজে।
কই! কিছু নাতো। মাথা নিচু করে চোখের কোনের জল মুছতে মুছতে বলে।
কখন এসেছ? গ্রাম থেকে।
কাল রাতেই ফিরেছি ঢাকায়। ফিরেই তোমাকে কল করেছি। কিন্তু তোমার মোবাইল বন্ধ ছিলো। প্রায় ৪দিন ধরেই বন্ধ পাচ্ছি তোমার মোবাইল।
ওহ সরি! আসলো একটু ব্যস্ত ছিলাম। তারপর বলো এতো লং টাইম ছুটি কাটালে। মিস করো নাই আমাদের। কিছুটা মজা করেই কথাটা বলে অনি সোফায় বসতে বসতে।

আর কাওকে মিস করিনি। তবে প্রতিটা সেকেন্ড তুমি আমার মস্তিষ্কে, হৃদয়ের স্পন্দনে ছিলে। শুধুমাত্র বাবার অসুস্থতার জন্য তোমাকে ছেড়ে এতোদিন একা থাকতে হলো আমাকে। বাবা সুস্থ হলেই তোমার কথা বাবাকে বলবো আমি। তুমি জানো না আমি কার মেয়ে অনি? তোমাকে সোজাসুজি না পেলে জোর করে হলেও নিজের করে ছাড়বো আমি। কারন তোমার উপর শুধু এই মিলা ইমতিয়াজের হক।
বির বির করে বলে নিলা।
ঐ হ্যাঁলো! আবার হারিয়ে গেলে। কি হয় যে তোমার মিলা হঠাৎ হঠাৎ। এভাবে তাকিয়ে কি বিরবির করো বলোতো।
না কিছু না। তুমি কিন্তু অনিকেত খুব অনিয়ম করছ। আমি তোমার ডায়েটিশিয়ান। আমি থাকতে আর তোমাকে ডায়েট মিস করতে দেবো না।
মিলা আপু! দেখো কে আমার সাথে।
মিলা পেছনে তাকাতেই হাসির শেষ রেখাটাও মুছে যায়।
এ কাকে দেখছে? নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। যাকে অনির জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কতো কি না করেছে। আর সেই অনিকেতের বাড়িতে। কিন্তু ও এখানে কেন। মিলার মুখে কালো মেঘ জমে যায়।
তবুও জোর করে হালকা হাসে মিলা।

আরে শশী যে। কতদিন পর দেখা। তারপর কেমন আছ? রিশাদ কেমন আছে। এখানে কেন তুমি? শশীর সামনে এসে।
শশীর মুখে বিষন্নতার ছাপ ফুটে ওঠে মিলার কথায়। মিলাকে এখানে দেখে শশীর বুকের মধ্যে কেমন কেমন করে।
রিশাদের কথা জিজ্ঞেস করায় চোখ মুখ ভার করে অনির দিকে তাকায় শশী।
অনিকেত কিছু বলতে যাবে দাঁত কটমট করে তার আগেই ফারিহা বলে ওঠে।
আরে মিলাআপু! তুমি ভাবি কে চেনো?

ভাবি? শশী তোমার কেমন ভাবি লাগে ফারিহা? রিশাদ কি তোমাদের কাজিন হয় নাকি?
রিশাদ টা আবার কে? আমি তো বলছি শশী ভাবি হলো আমার ওয়ান এ্যান্ড অনলি অনি ভাইয়ের মিষ্টি মিষ্টি বউ।
হোয়াট? কি বলছ তুমি? চিৎকার দিয়ে ফারিহার সামনে চোখ বড় করে তাকায়।
পা দুটো অসাড় হয়ে আসছে মিলার।
আমি কি মিথ্যা শুনলাম! না না, এ হতে পারেনা। অনিকেত তুমি শুধু আমার অনিকেত। তুমি অন্য কারো হতে পারো না। স্থিরদৃষ্টিতে পাথর হয়ে দাড়িয়ে রয় মিলা।
উপস্থিত সবাই কিছুটা অবাক হয় মিলার এমন রিয়াকশনে।
কি হলো মিলাপু! মিলাকে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে। এই মিলাপু।
হ্যাঁ। হ্যাঁ। ফারিহার দিকে বেকুবের মতো চেয়ে।
কি হলো তোমার।

না কিছু না। অনির দিকে তাকিয়ে।
মিলা বসো। খেয়ে দেয়ে যেয়ো। দুপুরে কথা হবে তোমার সাথে।
অনেক টায়ার্ড লাগছে আমার।
ফারিহা ব্রেকফাস্ট টা উপরে দিয়ে যাস।
শশী চলো। অনিকেত শশীর হাত ধরে উপরে চলে যায়।
শশী যেতে যেতে পেছন ফিরে মিলার দিকে তাকায়। কাল নাগিনী কাছ নাগ মনি নিলেও হয়তো এমন মুখাবয়ব করবে না যেমনটা মিলার মুখাবয়ব হয়েছে এখন। শশী ঠিক বুঝতে পেরেছে মিলা শশীকে অনিকেতের জীবনে দেখে বিন্দুমাত্র খুশি হয় নাই।
মিলাপু বসো। এই মিনু আপা! ভাইয়া ভাবির নাস্তা উপরে দিয়ে আসো।
আপু বসো কতোদিন গল্প করি না তোমার সাথে। আমাকে একটা ডায়েট টিপস দাও তো। মোটা হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।

ফারিহা আমি বরং আজ আসি। অনির রুমের দিকে তাকিয়ে। কথাটাবলেই হন হন করে চলে গেলো।
ফারিহা হা করে বসে রইল। কেমন অভদ্র ব্যবহার করলো মিলা। জবাব না দিয়েই চলে গেলো। কি হয় মিলা আপু কে জানে। থেকে থেকে ডং করে। ডায়েটিশিয়ান না সুপার মডেল কে জানে। ভাব দেখায়। ভেংচি দিয়ে বলে ফারিহা
কিরে মিলা কই?
ডঙির আবার ভং ধরেছে। চলে গেছেন উনি। আচ্ছা মম মিলাপু শুধু ভাইয়ার কথায় কেন মানে। আমাদের কথা কেন মানে না।
বেয়াদব মেয়ে! মিলা তোর বড় বোনের মতো না। কি সব বলিস ওকে তুই। ও তোর কথা মানতে যাবে কেন? মিলা কি তোর ডায়েটিশিয়ান। আর ও তো খুব ভালো মেয়ে। বাবা মা মরা মেয়েটা। ওকে একদম কিছু বলবি না।

হ হ বলবো না। দুনিয়ার সবাই ভালা। একা এই ফারিহায় ভালা না।
আমি তো ভালা না ভালা না তাইলে ভালা লইয়াই থাকো। আমি যাই।
ফাজিল মেয়ে। অরুনা চৌধুরীর মাঝে মধ্যে রাগ হয় ফারিহার বাচ্চামো দেখলে। বয়স হলেও বুদ্ধি বাড়ে নাই।
অনিকেত শশীকে নিয়েই ওয়াশরুমে ঢোকে। এক আয়নার সামনে দুজনে ব্রাশ করতে থাকে। অনিকেত ব্রাশ করে আর শশীর দিকে চেয়ে থাকে।
শশীর স্থির দৃষ্টি আয়নার দিকে। ব্রাশটা ঠিক করছে না। মুখে ব্রাশ নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে আছে। চোখের সামনে শুধু মিলার চমকে যাওয়া মুখটা ভাসছে। আচ্ছা মিলা কি সত্যি ভালোবাসে অনিকে। মিলা এখানে কি করছে? নানা চিন্তা শশীর মাথায় ঘুরপাক করছে।
হঠাৎ কারো ভেজা হাত নিজের পেটের উপর অনুভব করে। তাকাতেই দেখে অনি বাকা হাসি হাসছে।

ছাড়ো। কি করছ কি। ঠান্ডা লাগছে তো।
লাগুক ঠান্ডা। শশীকে নিজের কাছে টেনে শশীর ঘারে ভালোবাসার পরশ ছোঁয়ায়।
তুমি না! ব্রাশ টাও কি করতে দেবে না।
করো ব্রাশ। আমি কি বাঁধা দিয়েছি। তুমি তোমার কাজ করো আর আমি আমার কাজ করি।
তোমার এসব ঘোড়ার ডিম কে কাজ বলে।
ছাড়ো না। তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুমি থাকতে আমি শান্তি মতো ফ্রেশ হতে পারবো না। যাও যাও। অনিকে জোর করে ওয়াশরুম থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দেয়।
বেগম সাহেবা এটা কিন্তু ঠিক না। আমাকে সবসময় দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো। একসময় তুমি আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বেশি ব্যাকুল হবে দরজার ওপাশে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে।
হুমম ঘোড়ার ডিম হবো। শশীও দরজার এপাশে হেলান দিয়ে মুচকি হেসে বলে।

পর্ব ১৯

দুপুরে অনিকেত নিজের অফিসে চলে যায়। নতুন কয়েকটা গান কম্পোজ করতে হবে। ২ দিন পর সুইজারল্যান্ডে একটা কনসার্ট আছে। ওখানকার প্রবাসীরা মিলে আয়োজন করেছে। দেশের আরো নামিদামি স্টার রা যাবে।
অনিকেতের ভেতরে অন্যরকম এক্সাইটমেন্ট কাজ করে। কনসার্টে যাবে সেই জন্য না। শশীকে নিয়ে নিজের ড্রিম কান্ট্রিতে যাবে সেই জন্য।
এখনি হাজার রকম স্বপ্ন বুনতে থাকে। প্রচন্ড ছেলেমানুষি কাজ করে ভেতরে। ছোটবেলা ঈদের আগের দিন চাঁদ দেখলে যেমন খুশি লাগতো সেইরূপ কিছুটা অনুভূতি আসছে।
ব্রান্ডের দলের সবার সাথে আলোচনা সেড়ে ডেট ফিক্স করে অনি। পরশু যাবে। শশীকে নিয়ে যাবে শুনে বন্ধুরা খুব মজা করতে থাকে।

অনির দলের অন্যরা গেষ্টহিসেবে হোটেলে থাকলেও অনি নিজের পছন্দের হোটেলে শশীকে নিয়ে নিজ খরচে থাকবে। কনসার্টের চেয়ে বেশি গুরুত্ব শশীর সাথে একান্তে পছন্দের দেশে সময় কাটানোতে।
অনির ফিরতে ফিরতে কিছুটা রাত হলো।
শশীর ভেতরে প্রচন্ড অস্থিরতা কাজ করছে। ফারিহা তখন থেকে বকবক করে যাচ্ছে। কিন্তু একটা কথাও শশীর কানে ঢুকছে না। মাথায় শুধু মিলার কথায় আসছে। অনি এখনো ফিরলো না। কই গেলো। অনিকে ছাড়া কেমন খালি খালি লাগছে নিজেকে শশীর।
হঠাৎ গাড়ির শব্দ শুনে প্রান ফিরে এলো শশীর। দৌড়ে দরজার কাছে ছুটে গেলো। হ্যাঁ অনিকেত এসেছে। চোখে মুখে খুশির ঝলক শশীর।

অনিকেত মুচকি মুচকি হেসে শশীর কাছে আসে।
খুব মিস করছিলে বুঝি আমাকে বেগমসাহেবা!
জানি না। বলেই দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।
আচ্ছা মেয়ে মানুষ এমন কেন? সহজে কেন বলে দিতে পারে না নিজের অনুভূতি?
চোখে মুখে উপচে পড়ছে আমার লাগি তোমার প্রেম।
তবুও কেন কিসের তরে এই দুর্ভেদ।

আমি তো তোমারি! আমৃত্যু আজীবন
তাহলে বলতে কেন এতো সংকোচ
ভালোবাসি! ভালোবাসি!
রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগাতে লাগাতে বলে অনিকেত।
শশী বিছানার উপর মাথা নিচু করে বসে শাড়ির আঁচল শক্ত করে ধরে বসে থাকে।
অনিকেত পাশে বসে শশীর ঘারে হাত রাখতেই শশীর ঝাপিয়ে অনির বুকে আছড়ে পড়ে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।
কাদছ কেন পাগলী? কষ্ট পেয়েছ দেরি করে ফিরেছি বলে।
শশী মাথা হ্যাঁ সূচক নেড়ে অনির টিশার্টের বুকের অংশের কাপড়টা খামছে ধরে কাঁদে।
তুমি কেন এতো দেরি করলে অনি! তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া কতো একা একা লাগে আমার। ভয় হচ্ছিল খুব। হৃদস্পন্দন থেমে থেমে যাচ্ছে মনে হচ্ছিল। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলো শশী।

কেন ভয় হচ্ছিল? আমি তোমাকে একা ছেড়ে যাবো তাই? সয়ং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া তোমার থেকে আমাকে কেউ আলাদা করতে পারবে না শশী। আমি তোমার হয়ে গেছি। সিলমোহর লেগে গেছে তোমার আমার সম্পর্কে। তুমি চাইলে তোমাকে ছাড়তে পারবো না আমি।
তাহলে এতোক্ষন দূরে ছিলে কেন? তুমি একটুও ভালোবাসো না আমাকে। ছেলেরা শরীর পেলে সব ভুলে যায়। তুমিও ভুলে যাবে একসময় আমাকে। অবহেলা করবে হয়তো খুব। তখন আর এভাবে বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলাবে না। খাইয়েও দেবে না ভালোবেসে। তখন সব নেকামি লাগবে তোমার কাছে। ডাল ভাত হয়ে যাবো আমি তোমার কাছে জানি। অভিমানি সুরে বলে

বাহ! আমার বোকা গাধী বউটা দেখি খুব জ্ঞান রাখে। এসব উল্টো পাল্টা বাজে কথা মাথায় কে ঢুকিয়েছে শুনি। আমার ভালোবাসায় এতো অতিষ্ঠ হবে তুমি, তখন নিজেই বলবে এতো ভালোবাসো কেন?
তোমার ভালোবাসা আমার কাছে সাত রাজার সম্পদের মতো। যাকে কারো সাথে শেয়ার করা কিংবা কখনো কম হোক তা চাইবো না। তুমি ডাল ভাত না আমার জন্য। তুমি অমৃত আমার কাছে। যার স্বাদ রং সুবাস সবকিছুকে হার মানায়। বুঝলে বেগমসাহেবা শশীর নাক টেনে।

হুমমম। শশী লাজুক হেসে বলে।
শশী! শশীর ঘারে থুতনি ঠেকিয়ে শশীকে জরিয়ে
হুমম! মাথা নিচু করে অনির হাতের আঙুল গুলো নিজের আঙুলের ভাজে নিয়ে।
জানো আমার খুব ইচ্ছা ছিলো তোমাকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডের সবুজ ঘাসে অথবা বরফে আচ্ছাদিত পাহাড়ের পাশে যাবো, এক চাদরে দুজন। তুষারপাত হচ্ছে চারপাশে। আমার বুকের মাঝে উষ্ণতা খুজবে তুমি?
যাবে আমার স্বপ্নলোকের সেই দেশে? আমার স্বপ্ন কে সত্যি করতে?
শশী ঘুরে অনির দিকে তাকায়।

আমরা সুইজারল্যান্ড যাবো? সত্যি খুশির হাসি হেসে।
হ্যাঁ। অনিকেত প্রশস্ত হাসি হাসে শশীর হাসি দেখে।
হ্যাঁ অনি আমি যাবো। তুমি যেখানে নিয়ে যাবে। তুমি সাথে থাকলে আর কিছু চাইনা আমার। আমার জন্য শুধু তুমি তুমিই পরিপূরক। অনিকেতের গলা জরিয়ে ধরে।
অনিকেত শশীর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে এসে পরম আদরে ছুঁয়ে সমস্ত শরীরে সেই ছোয়ায় ভরিয়ে দেয়।

চাঁদের আলোতে অনিকেতের বুকে পরম শান্তিতে ঘুমায় শশী।
১ দিন পর প্লেনে ওঠে শশী অনি সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। এই প্রথম প্রিয় মানুষটার সাথে এতোদূর যাচ্ছে শশী। ভয় নেই কোনো। শুধুই বুকভরা ভালোবাসা অনির জন্য।
প্লেন টেক অফ করার সময় শশীর কিছুটা ভয় লাগে। কিন্তু অনিকেত শশীর হাত শক্ত করে ধরে রাখায় ভয় কেটে যায় শশীর।
শশী প্লেনে উঠে কিছু খেতে পারে না। বমি বমি লাগে খুব। শশী খায় না দেখে অনিকেতও কিছুই মুখে দেয় না।

শশী অনিকেত কে খেতে বলায় অনি বলে
তোমাকে এ অবস্থায় রেখে খাওয়ার কথা চিন্তাও তো করতে পারি না।
তুমি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করো ভালো লাগবে তোমার।
শশী ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না।
প্লেন ল্যান্ড করে জুরিখ শহরে এসে।
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী শহর জুরিখ।

অসম্ভব সুন্দর একটা শহর।
এখানে পূর্ব নির্ধারিত হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়ে শশী। মাথাটা খুব ধরেছে। অনিও শশীকে বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়ে।

পর্ব ২০

বিকালের দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে শশীর ঘুমন্ত মুখ পানে চেয়ে থাকে অনিকেত।
ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি দেখা যায় ঘুমন্ত শশীর। অনিকেতও হাসে সেই হাসি দেখে।
হঠাৎ শশীর কপাল কুঁচকে যায়। মুখে কালো ছায়া পড়ে। অনিকেতের বুঝতে বাকি থাকে না। শশীর ঘুমের রাজ্যে দুঃস্বপ্নরা এসে ভীর করেছে।
অনি থাকতে তার বেগমসাহেবা চিন্তা বা ভয় মাথায় নেবে এটাতো হতে পারে না। অনি শুধু শশীর মুখের হাসিটায় সারাজীবন দেখতে চায়।
বেগমসাহেবা! এই বেগমসাহেবা!

ওঠ! ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কি হানিমুন কাটাবে তুমি? শশীর চুলে বিলি কেটে বলে।
শশী টিপটিপ করে চোখ খোলে অনির স্পর্শে।
উমমম। ঘুমাতে দাও না আরেকটু। অনির কোলে মাথা রেখে বলে।
না! একদমই না। ওঠ বলছি। না হলে কিন্তু?
শশীর পেটে হাত বুলাতে বুলাতে উপরে উঠতে থাকে।

এই সরো! দুষ্টু একটা। শান্তি মতো একটু কি ঘুমাতেও দিবা না আমাকে? বিছানা থেকে এক লাফে উঠে অনির থেকে দূরে সরে।
না দেবো না। আমার ঘুম হারাম করে শান্তিতে ঘুমানো। এটা হবে না বুঝছ? শশীর নাক টেনে বলে। গালে আলতো আদর করে।
হু। তুমি আমার নাকটাকে টানতে টানতে বড় করে দেবে নাকি?
হুম দিবো তো! শশীর ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোট কামড়ে এগোতে এগোতে।
সরো! অনির বুকে ধাক্কা দিয়ে হিহিহি করে হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
অনিকেত হাসি দিয়ে শশীর যাওয়ার দিকে তাকায়।

মুখে পানি নিয়ে আয়নার দিকে তাকায়। রিশাদকে নিয়ে আজও দুঃস্বপ্ন দেখেছে শশী। রিশাদ অনিকে পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। শশী অনিকেত বলে চিৎকার করে কাঁদছে।
না না এটা তো একটা দুঃস্বপ্ন মাত্র। এসব সত্যি হবে না। হয়তো এখনো মনের কোথাও রিশাদ কে নিয়ে ভাবার কারনে এসব স্বপ্ন দেখছে শশী।
নিজেকে বুঝ দেয় শশী। আর ভাববে না এসব নিয়ে। অনিকেত ছাড়া আর কাওকে নিয়ে ভাববে না শশী।
অনির পছন্দের ব্লাক সালোয়ার সুট পড়ে শশী। অনিও মিল রেখে ব্লাক ব্লেজার কফি কালার টিশার্ট পরে।

দুজনে হোটেলে হালকা নাস্তা করে বাইরে বের হয়। শশীর এখান কার খাবার গুলো রুচিতে লাগে না। পছন্দও হয় না।
অনিকেতকে খুব মজা নিয়ে খাবার খেতে দেখে, না চাইতেও শশী দুএক টুকরো মুখে দেয় অনিকেতের জন্য। কারন শশী জানে শশী না খেলে অনি খাবে না।
টিপিকাল বাঙালীদের কাছে এগুলো অখাদ্যই বটে কিছুটা। ভিনদেশী মসলা ভিনদেশী রান্নার স্টাইল। শশী মতো বাঙালির পেটে হজম হবে না। তারপর দুঃস্বপ্ন দেখায় মনটাও ভালো না।
শশী এমনিতেও খাবারের বিষয়ে বড্ড খুতখুতে। যা তা মুখে দিতে পারে না একদমি। হতে পারে এগুলো ভালো খাবার? কিন্তু যার মুখে যা রোচে।
খাবারের পার্ট সেরে অনিকেত শশীকে নিয়ে বের হয় জুরিখ শহর ঘুরতে।
আসার সময় লংটাইম জার্নির কারনে অসুস্থ অনুভব করায় ওতো কিছু খেয়াল করে নাই শশী।

এখন শরীর মেজাজ দুটোয় কিছুটা ভালো আছে।
হোটেল থেকে বেরিয়ে মনের মধ্যে আলাদা রকম অনুভূতি খেলে গেলো শশীর। এতো সুন্দর পরিবেশ! সুবহানাল্লাহ বের হয় শশীর মুখ থেকে।
পরিচ্ছন্ন আকাশ সাথে সুন্দর নিরিবিলি রাস্তা। পাশে রুপকথা গল্পের মতো বাড়িগুলো উফ। শশীর তো মন চাচ্ছে উড়তে।
কেমন লাগছে বেগমসাহেবা!
অন্নেক সুন্দর! খুশিতে উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলে।
দুনিয়াতে এতোসুন্দর জায়গা থাকতে পারে শশীর ধারনার বাইরে ছিলো।
চলো আমার পছন্দের জায়গায় তোমাকে নিয়ে যায়। শশীর হাত ধরে উপরে উঠতে থাকে।
জুরিখ শহরটা ছোট্ট ছোট্ট পাহাড় নিয়ে তৈরি।
এর রাস্তা গুলো ঢালু। পাহাড়ে উঠতে যেমন হাঁপিয়ে যাওয়া লাগে এখানের রাস্তায় চলাচল করলেও তেমন হাপানো লাগে কিছুটা।

অনি ও শশী উপরে উঠে কিছুটা হাপিয়ে যায়।
শশীকে একটা নদীর উপরে নিয়ে দাড়ায় অনিকেত। নদীটা এখান থেকে নিচে। নদীর পাশেই রাস্তা দিয়ে বাস এবং মানুষের চলাচল। পাশে দাড়িয়ে আছে অসম্ভব সুন্দর করে নির্মাণ করা বাড়িঘরগুলো।
এ কোন দেশে আসলো শশী। নাকি কল্পনার কোনো রাজ্যে অনি শশীকে নিয়ে আসলো
limmat riverএর পাশে দাড়িয়ে পুরো শহরটাকে একনজরে দেখা যায়। অসম্ভব সুন্দর সেই দর্শন। এই স্বচ্ছ জলের ধারা মনে প্রশান্তি এনে দিতে সক্ষম যে কারো। শশীকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘারে ঠোঁট ছুঁয়ে দাড়িয়ে দূরের পাহাড় ঘেরা ছোট্ট ছোট্ট বাড়িঘর গুলো দেখে নদীর এপারে দাড়িয়ে।
কি করছ কি? লোকে দেখছে তো?

অনি হেসে শশীর মুখ সামনে ফেরাতেই শশী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
সামনে প্রেমিক যুগল একে অপরকে ভালোবাসায় ব্যস্ত। এই নদী এই শহরকে সাক্ষী হিসেবে রেখে তারাও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হতে চাই। এমন পরিবেশে মন আরো বেশি রোমান্টিক হয়ে ওঠে।
শশী অনিকেত অনেক্ষণ এখানে সময় কাটায়। সন্ধ্যার দিকে হোটেলে ফেরে। শশীর মনটা খুব ফ্রেশ হয়ে গেছে জুরিখের নির্মল পরিবেশে। যার দরুন মুখে শান্তি ও তৃপ্তির হাসি লেগেই ছিলো।
সবার মতো শশীও অনির হাতে হাত রেখে ঘুরছে।
শশী! হুম বলো।
এই চাবিটা নিয়ে তুমি রুমে যাও। আমি একটু আমার দলের সাথে কথা বলে আসছি।
ঠিক আছে। যাও।

ভয় পাবে না তো তুমি? যেতে পারবে?
হ্যাঁ, খুব পারবো। কেন আমাকে কি পিচ্চি মেয়ে মনে হয় তোমার। আমি ইয়াং সুপারস্টার অনিকেতের বউ। আমার ভয় কিসের শুনি।
তাই নাকি? শশীর কোমর চেপে কাছে টেনে নেয়।
এই ছাড়ো! দেখবে তো লোকে।
দেখলে দেখুক। তুমি আমার বৈধ সম্পত্তি। কার সাধ্য আমাকে কিছু বলে।
বলেই শশীর ঠোঁটে আলতো করে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়।
আচ্ছা যাও। শশীর কপালে চুমু দিয়ে।
আবার হাত টেনে ধরে।
কি হলো যেতে দিবা না?

না ইচ্ছা করছে না বেগমসাহেবা।
যাও তো? তাড়াতাড়ি চলে আসবে কিন্তু?
আমি অপেক্ষা করবো।
বলেই হেসে হাঁটা শুরু করে শশী। শশীরও মন চাচ্ছে না অনিকে নিজের থেকে আলাদা করতে এক মুহুর্তের জন্যেও। কিন্তু কাজ তো করাই লাগবে অনির।
শশী দূরে লিফটে ওঠা পর্যন্ত অনি দাড়িয়ে থাকে। লিফট বন্ধ হওয়ার পরই অনিকেত মাথায় হুড উঠিয়ে দিয়ে চলে যায়।

শশীর লিফট হঠাৎ থেমে যায়। লিফট খুলতেই একটা লোক লিফটে ওঠে। হুড দিয়ে এভাবে মুখটা ঢেকে রেখেছে যে ভালো করে মুখটা দেখাও যাচ্ছে না।
শশী চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। শশীর মাথায় শুধু লিম্মাত নদী জলের ধারা আর অনির ভালোবাসার গভীরতা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। দুনিয়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন লাগছে। শশীর সময় যেন লবিতে অনির চুমোতেই থেমে আছে। আনমনেই লাজুক হাসি হেসে ওঠে শশী।
নিজের ফ্লোরে আসতেই লিফট খুলে যায়। শশী বের হয়ে রুমের দরজার লক খুলবে ঠিক সেই সময় কেউ ওর হাত চেপে ধরে।
শশী অনিকেত ভেবে পেছনে ফিরতেই বড় রকমের ধাক্কা খায়।
লিফটের সেই লোকটা? কিন্তু এই লোক এভাবে হাত ধরলো কেন? ভয় করে শশীর।
লোকটা মাথা থেকে হুড ফেলে তাকাতেই?

দুনিয়া উলোট পালোট হয়ে যায় শশীর। দুপুরের স্বপ্ন কি তাহলে সত্যি হয়ে গেলো? অজানা ভয়ে অন্তর আত্মা কাঁপতে শুরু করলো।
রিইইইশাআআদদ? গলা শুকিয়ে যায় শশীর।
হ্যাঁ শশী! আমি! তোমার রিশাদ। কেমন আছ শশী?
ছাড়ো আমাকে! আমাকে স্পর্শ করার অধিকার আর নেই তোমার। কেন এসেছে আমার সামনে এতোটা দিন পরে। দেখতে এসেছ তোমার দেওয়া ধোকা খেয়ে মরে গেছি নাকি?
না মরি নাই! বেঁচে আছি এবং আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি।
শুনেছ? এখন যাও। আর কোনোদিন আসবে না আমার সামনে। তোমাকে দেখলে ঘৃণা হয় আমার। এক নিঃশ্বাসে বলেই দরজার লকে জোরে চাপ দিতে থাকে। না খুলছেই না লক।
শশী আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি? আমি তোমার সুখের জীবনে বাঁধা হতে আসিনি। শুধু ক্ষমা চাইতে এসেছি শশী?

তুমি ক্ষমা করলে আর কোনোদিন আসবো না তোমার সামনে। আছেই বা কটা দিন আমার জীবনে?
শশী দরজার লকে হাত রেখে পিছন ফিরে দাড়িয়ে থেকে রিসাদের কথা চুপচাপ শোনে।
ফ্লোর টা শুনশান কেউ নেই এখানে ভয় হয় শশীর খুব।

পর্ব ২১

দেখো রিশাদ! তোমার এসব ফালতু কথা শোনার সময় বা ধৈর্য কোনোটাই নেই আমার? তোমার কি হলো না হলো তাতে আমার কি? তাই তুমি এখান থেকে চলে গেলেই খুশি হব আমি।
শশী আমি বললাম তো মুখ থেকে একবার বলো তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ। আমি কথা দিচ্ছি আমি আর আমার চেহারা দেখাবো না তোমাকে।
ক্ষমা! এতো সহজে কি করে ক্ষমা চাইতে পারো তুমি রিশাদ? বিবেক বলতে কি কিছু নেই তোমার? কি করেছিলে আমার সাথে সব ভুলে গেলে? অবশ্য তোমার মতো পশুর আর কি বা করার থাকে। তোমার মতো লোকের ছায়াও মাড়াতে চাই না এখন আমি। মুখ দেখাও পাপ তোমার। চলে যাও বলছি। নয়তো অনিকেত কে আমি সব বলে দেবো? দাঁতে দাঁত চেপে কিছুটা উচ্চস্বরে বলে শশী।

এতোদিন পর দেখে রিশাদের প্রতি ঘৃণাটা আরো বেড়ে গেছে। এতোটা বেহায়া কি করে হয় মানুষ। বেমালুম ভুলে গেলো কতোটা কষ্ট দিয়েছে ও আমাকে।
যে পাপ করে নিজের অনুশোচনায় ভোগে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় কিন্তু যে পাপ করতে করতে শয়তানে পরিনত হয়। পাপকাজকে অভ্যাস করে নেয় নিজের জীবনে তাকে ক্ষমা করাটাও এক ধরনের পাপ। আর শশী এই মুহুর্তে অন্তত সেই পাপটা করতে চাচ্ছে না। কারন শশী জানে এসব সব রিশাদের নাটক। রিশাদ বা রিশাদের কোনো নেকামো কথায় শশী এখন বিশ্বাস করে না। রিশাদ কে দেখে এমনিতেই রাগে গা জ্বলছে। তার উপর ওর এসব নেকামো কথা শুনে মেজাজ ঠিক থাকছে না। অনিকেত যদি থাকতো হয়তো পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দিতো।

শশী দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে যাবে ঠিক সেই সময় রিশাদ শশী হাত টেনে দুহাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
রিশাদ! সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার তোমার? ছাড়ো বলছি। শশী হাত ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা করে।
শশী প্লিজ শান্ত হও! আমি জানি তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না। কিন্তু একটিবার আমাকে আমার কথা রাখার সুযোগ টা তো দেবে প্লিজ।

আমি তোমার কোনো কথায় শুনতে চাচ্ছি না রিশাদ! তুমি হাত ছাড়ো আমার!
ওকে ওকে! ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আমার কথা তোমাকে শুনতেই হবে। না হলে এখান থেকে তোমাকেও নড়তে দেবো না।
ভয় দেখাচ্ছ তুমি আমাকে? আমি তোমার মতো শয়তানকে ভয় পাই না। কিছুই করতে পারবে না তুমি আমার।

তুমি জানো না কি কি করতে পারি আমি তোমাকে পাবার জন্য ( মনে মনে বলে রিশাদ)
শশী! ঐ রাতে কি হয়েছিল আমি পরে শুনেছি। আমি প্রচন্ড নেশায় তোমাকে মেরে আধমরা করে ফেলেছিলাম? নিজেও পরে ছিলাম বেহুশ হয়ে। মা বাবা ভেবেছিলো তুমি মরে গেছো। আমাকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচানো জন্য তোমাকে ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে ঝুলিয়ে দেয়।

ঝুলানোর পর যখন তোমার গলায় টান পড়ে তুমি ছটফট করতে থাকো মুমূর্ষু অবস্থায়। তুমি বেঁচে আছ বুঝতে পেরে মা আবার তোমাকে নামিয়ে নেয়। আমাদের ঘার থেকে ঝামেলার কমানোর জন্য মা চাইনি তোমার মৃত্যু হোক। কারন মায়ের মনে ভয় ছিলো যদি পুলিশ সত্যিটা জানতে পারে? তবে কেউ বাঁচতে পারবে না। তাই মা তোমাকে বাঁচিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। সাথে সাথে আগের চালাকি করে সই করানো তালাকনামাটা পুলিশের হাতে দিয়ে তোমার চরিত্রে দোষারোপ করে পুলিশ ও তোমার পরিবারকে বিশ্বাস করায় তুমিই নিজেই তালাক দিয়েছ আমাকে।
শশীর মাথা ঝিমঝিম করে। মানুষ কতোটা নিচে নামলে আরেকটা মানুষের সাথে এমন করতে পারে। চুপচাপ দাড়িয়ে রয়। যেন পুরোনো ক্ষতগুলো আজ আবার নতুন করে ব্যথা দিতে থাকে।

শশী বিশ্বাস করো আমাকে। আমি যা করেছি নেশার ঘোরে আর বাবা মার উপর জিদ করে। আমি ভেবেছিলাম বিশাখায় আমার জীবনের সব। ওর জন্য আমি তোমার প্রতি কতো অন্যায় অত্যাচার করেছি।
তুমি যাওয়ার পর আমার নেশার পাগলামো আরো বেড়ে যায়। বাবা মা সহ্য করতে না পেরে রিহাব সেন্টারে ভর্তি করায়। ৬ মাস ছিলাম ওখানে আমি শশী। এই ৬ মাসে তোমাকে কতোশত বার মনে করেছি আমি জানি? পাপের অনুশোচনা কুড়ে কুড়ে খেয়েছে আমাকে। একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে আমার শশী। আমি তোমাকে সত্যি বড্ড ভালোবাসি। কিন্তু এই কথাটা বুঝতে আমার অনেক দেরি হয়ে গেলো। জীবনের মূলবান সম্পদ হারিয়ে ফেলেছি আমি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফকির আমি। শশীর সামনে হাটু মুড়ে কাঁদতে থাকে রিশাদ।

শশী কি বলবে বুঝতে পারে না। রিশাদকে এখন ঘৃণাও করতে পারছে না। ওর পাপের শাস্তি তো ওর অনুশোচনায়। আবার কেন যেন বিশ্বাসও করতে চাচ্ছে না মন ওকে।
তুমি জানো শশী? তোমার শরীরের গন্ধ আজও আমার ভেতর নেশা জাগায়। সেই মিলনের দিন রাত এখনো আমার চোখে ভাসে। আরেকটু অপেক্ষা করতে পারলে না আমার জন্য। এতো ঠিনকো ঠুনকো ছিল আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা। শশী ফিরে এসো আমার জীবনে প্লিজ! আমি তোমাকে চাই। আবার আগের মতো করে। শশীর হাত ধরে কেঁদে বলে।
রিশাদের এমন ধরনের কথা শুনে শশীর অসস্তি লাগে। বিরক্তও লাগে। নোংরা লাগে ওর মুখের ওসব কথা শুনতে।

আর কথা না বাড়িয়ে শশী হুট করে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ঢোক গিলতে থাকে।
এ কোন বিপদ আসলো জীবনে। ভালোই তো ছিলাম। রিশাদ কেন ফিরে এলো। আমি তো চাই না আর রিশাদকে। কিন্তু ওর চোখের পানি আমার সহ্য হয় না। কি করবো এখন।
এদিকে হঠাৎ কেউ এসে রিশাদের কাঁধে হাত রাখায় রিশাদ কিছুটা চমকে যায়। পেছন ফিরে তাকাতেই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসি দেয়।

বাহ! ভালোই তো অভিনয় জানো তুমি রিশাদ। শশীর রোমাঞ্চের তো ১২ টা বাজিয়ে দিলে। বেচারি কতো আশা করে এখানে এসেছিলো? তোমার জন্য তো সব আশা দুঃশ্চিতায় রূপ নেবে। বেচারি। আজকের পর থেকে আর হাসবে না প্রান খুলে।
ও হাসবে! তবে সেই হাসির কারন অনিকেত নয় এই রিশাদ হবে।
তোমাকে ধন্যবাদ শশীকে আবার আমাকে ফিরিয়ে পেতে সাহায্য করায়। এতোটা দিন হন্নে হয়ে খুজেছি। কতো অনুনয় বিনয় করেও ওর পরিবারের কাছ থেকে ওর খোজ পাই নি। তুমি আমাকে সেই খোজ দিলে। কৃতজ্ঞ আমি তোমার কাছে।
কি চাও তুমি?

তুমি কি দেবে আমাকে। তোমার মতো লোকের কি আর সাধ্য আছে আমাকে দেওয়ার। আমার যা নেওয়ার আমি আপসে নয়তো ছিনিয়েই নেই।
বলেই চলে যেতে লাগলো।
মিলা? ওয়েট। সত্যি করে বলো তো স্বার্থ টা কি তোমার? পরোপকারী মেয়ে তুমি যে নও তা অন্তত বুঝি। অনিকেত কে পাবার জন্য এতো নাটক তোমার তাই না? এই জন্যই আমাকে আবার এতোদিন পর তোমার প্রয়োজন হলো।

হ্যাঁ! হ্যাঁ! অনিকেত কেই প্রয়োজন আমার। ওকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না। আর সেই অনিকেতের বাহুতে অন্য কেউ থাকবে এটা আমি মেনে নেবো কি করে বলো। আমার চোখে ঘুম আসে না আজ ৭ দিন। অনিকেত কেন বুঝলো না আজও আমার ভালোবাসা। কেন এভাবে দূরে ঠেলে দিলো। কোনো জিনিস আপষে না পেলে সেই জিনিস জোর করে আদায় করে নেওয়া মিলা ইমতিয়াজের জন্য ফরজ। যা আমার তা শুধুই আমার।
এতোটা বছর ওকে পাওয়া জন্য ওর শত অপমান ইগনোর সহ্য করেছি। পাপা কে ছাড়া এতোদূর এসে থাকছি জাস্ট বিকজ হিম। ও শশীকে বিয়ে করে সুখে থাকবে? আর আমি বসে বসে স্যাড সং শুনে কাদব। আমার যা হারাবার গেছে হারিয়ে টাইপ?

নেভার! মিলা আলাদা ধাতুর তৈরি। মিলা ইমতিয়াজ নাম আমার। নিজের জিনিসে মাছি পড়লে কি করে ফেলতে হয় তা আমি জানি।
তোমাকে একটা সুযোগ দিলাম। আপোষে ওকে অনির জীবন থেকে সরিয়ে নাও। নয়তো ওর কপালে শনি আছে বলে দিলাম।
গট ইট।
তুমি শশীর কোনো ক্ষতি করবে না। আমি ওকে চাই। তোমার অনিকেত দরকার আর আমার শশী। তোমার টা তুমি আদায় করে নাও। আমার টা আমিই নিবো।
গুড চলো এখান থেকে। অনিকে একটা সারপ্রাইজ তো দিতে হবে। আজ থেকে অনিকে নিজের করে নেওয়ার মিশন শুরু আমার। অনেক ছাড় দিয়েছি আর না।

শশীর চোখে কান্নাও আসছে না আতঙ্কে। রিশাদই তো ওকে জীবন থেকে ছুড়ে ফেলেছিলো তবে এখন আবার কেন ফিরে এলো। অনিকেত কি কথাটা বলবো? না থাক। যদি কিছু মনে করে। আর রিশাদের নাম তো শুনতেই পারে না। কতো আশা নিয়ে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। শেষে মুডটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
রাতে অনিকেত খুব ফ্রেশ মেজাজে হোটেলে ফেরে। আসার সময় কাছের পাকিস্তানি হোটেল থেকে বিরিয়ানী, কাবাব, তন্দুরী সহ আরো কয়েকপদ নিয়ে আসে। অনিকেত জানে শশী এখনো না খেয়ে বসে আছে।

রুমে ঢুকতেই ঘরটা অন্ধকার লাগে। বিছানায় গুটিশুটি মেরেশুয়ে আছে শশী। দরজা বন্ধ করে খাবারের পার্সেল টা টেবিলের উপর রেখে শশীর মাথার কাছে গিয়ে বসে অনিকেত।
শশী! এই শশী! ঘুমিয়ে গেছো? মাথায় হাত রেখে বলে।
না! একটু চোখ লেগে আসছিলো। কখন এলে তুমি? আড়মোড়া ভেঙে ওড়না টা বুকে নিয়ে বলে।
এই তো এইমাত্র। শরীর কি খারাপ লাগছে তোমার? শশীর দুগালে হাত রেখে বলে।
না তেমন কিছু না। মাথাটা খুব ধরেছে। হঠাৎ হঠাৎ মাথা ঘুরে ওঠে। ঝিম ঝিম করে থেকে।
ডাক্তারের কাছে যাবে?

না। জার্নি কারনে এমন হয়েছে। ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।
হুমম। খাওয়াও তো হচ্ছে না ঠিক মতো তোমার। চলো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেবে।
শশী উঠে ফ্রেশ হতে গেলো। অনির মোবাইলে টুং করে ম্যাসেজের শব্দ হতেই অনি ওপেন করতেই দেখে একটা এমএমএস আর কিছু ছবি। চোখ মুখ দিয়ে আগুন বের হতে থাকে। মুখটা কালো হয়ে যায়।
শশী ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে। অনিকেত পাশে বসে কি যেন ভাবছে?
তুমি খাবে না?
হ্যাঁ তুমি শুরু করো।

শশী বিরিয়ানি মুখে দিতেই পেটে মোচর দেয়। দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
অনিকেত চিন্তিত হয়ে পেছন পেছন ওয়াশরুমে যায়।
কি হলো খুব কি খারাপ লাগছে। চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।
না অনিকেত। আমি ঠিক আছি। হয়তো গ্যাস্ট্রিকের জন্য এমন হচ্ছে। একটা ট্যাবলেট খেলে ঠিক হয়ে যাবো। ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে না।
হুমম। যা ভালো বোঝো। বলে চলে আসলো শশীর কাছ থেকে।

শশীর কেন যেন অনির কথার সুর অন্যদিন থেকে আলাদা লাগলো। ঘুম থেকে ওঠার আগেও তো ঠিক ছিলো অনি। তবে কি হলো হঠাৎ ওর।
চোখ মুখে পানি দিয়ে অনির পাশে বসলো।
কনসার্টের কি খবর? কবে হবে।
ভালো। কাল হবে।

কবে ফিরবো তাহলে দেশে আমরা?
কেন আমার সাথে সময় কাটাতে ভালোলাগছে না বুঝি আর?
কি বলছ তুমি? কি হয়েছে অনিকেত তোমার? এমন করে কেন বলছ।
কিছু না। আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি। ফিরতে সময় লাগবে আমার। ঘুমিয়ে পড়ো তুমি। বলেই হনহন করে চলে গেলো রুম থেকে।
টেবিলে খাবার ঐ ভাবেই পড়ে আছে। অনিকেতও কিছু মুখে দেয় নাই।
শশীর দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।

পর্ব ২২

হ্যালো! হ্যা আমি জুরিখ লেকের সামনে দাড়িয়ে আছি।
ওকে রাখছি। অনিকেত কলটা কেটে লেকের পাশের বেঞ্চিটায় বসে। একটু পর পর চোয়াল টা ফুলে উঠছে।
অনিকেত!
অনিকেত ডাকে দাড়িয়ে পিছন ফিরে তাকায়।
আমি বলেছিলাম না শশী তোমার যোগ্য না। দেখলে তো? বিশ্বাস হলো এবার তোমার। তোমাকে শুধু আমি ডিজার্ভ করি শশী নয় অনি। ওর মতো চরিত্রহীনা কুলটা মেয়ে তোমার পায়ের আঙুলেরও যোগ্য না।
ঠাসসসসস

তোর সাহস কি করে হয়। আমার শশীকে চরিত্রহীনা কুলটা বলার। সাত বার জনম নিলেও তুই ওর নখের যোগ্য হতে পারবি না মিলা। মিলার চুলের মুঠি ধরে কর্কশ স্বরে বলে।
কত্ত খুশি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলো। অনি আজ ওর হয়ে যাবে শশী আর রিশাদের ঘনিষ্ট হওয়া ছবি আর ভিডিও দেখে।
রিশাদ যখন শশীর হাত দেয়ালে হাত চেপে ধরেছিলো ঠিক ঐ সময় ছবি টা তোলে মিলা।
এতোকিছুর পরও অনিকেত শশীর নাম জপছে। রেগে আগুন হয়ে আছে অনিকেত। মিলা কিছুটা ভয় পায়।

অনিকেত? তুমি আমাকে বিশ্বাস করছ না। এই ছবিগুলে দেখেও এসব বলছ?
হ্যাঁ বলছি। আর সারাটা জীবন বলবো। তুই কি ভেবেছিস? আমার ভালোবাসা এতো ঠুনকো কাঁচের মতো যে তোর মতো যে যা বলবে তাতেই কান দিয়ে নিজের স্ত্রীকে কষ্ট দেবো।
আমি শুধু চোখ দিয়ে নয় অন্তর দিয়ে দেখেছি আমার শশীকে,
, আমার মায়াবতী তোদের নেকা কান্না শুনে দয়া ও ক্ষমা করতে জানে। কিন্তু তোদের ভেতরের শয়তানী ও দেখতে পায় না। কারন ওর মনটা সরল, পবিত্র। তাই সবাইকে ঐরূপই ভাবে। সরল মানুষকে ঠকিয়ে কি মজা পাস তোরা? মিলাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দেয় অনিকেত।
অনেক কষ্ট পেয়েছে আমার শশী। আর না। আজকের পর তুই কিংবা তোর ঐ সাথী রিশাদকে যদি আমাদের আশেপাশেও দেখেছি ছাড়পত্র ছাড়াই গুলি করে লাশ গুম করে দেবো। কাকপক্ষীতেও টের পাবে না।
Now get out From here।
চিৎকার দিয়ে বলে অনি মিলাকে।
তুমি আমাকে চেনো না অনি? তুমি আমার হবে যেকোনো মূল্যেই হোক। তোমার চাওয়া বা না চাওয়াতে কিছু আসে যায় না। তোমাকে আমার হতে হবে। তোমার লাশকে নিয়েও যদি বাসর সাজাতে হয় আমি তাতেই রাজি। তবু তোমাকে আমার চাই। উন্মাদের মতো চিৎকার করে বলে।

Are you out of ur mind? কি বলছ বুঝতে পারছ তুমি? তোমার তো পাগলাগারদে থাকা উচিত। পুরোপুরি সাইকো তে পরিনত হয়ে গেছো তুমি? রেগে মিলার দিকে এগিয়ে।
হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সাইকো। তোর প্রেম সাইকো বানিয়েছে আমাকে। এখন তুই যদি আমার না হোস তো পুরো দুনিয়ায় কেয়ামত ডেকে আনবো আমি।
ঠিক আছে। আমিও দেখবো তুই কি করে আমাকে তোর করতে পারিস? তোর মতো পাগলীকে আমি কাজের মেয়েও তো রাখবো না। আবার প্রেমিকা বানাবো। যা ফুট এখান থেকে। মিলার ঘারে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় অনিকেত।

অনিকেত! অনিকেত! আমাকে এভাবে অপমান করতে পারো না তুমি? তুমি জানো না কি করতে পারি আমি? অনিকেত! এখনো সময় আছে ফিরে আসো বলছি।
অনিকেত সামনে হাটতে থাকে আর মিলা পেছন থেকে চিৎকার করতে থাকে।
মিলার চিৎকার অগ্রাহ্য করে হাত ইশারায় বাই বাই দিয়ে চলে যায় অনিকেত।
শশী কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। ঘুমের ঘোরে নিজেকে শূন্যে অনুভব করলো।
চোখ খুলে তাকাতেই বড় রকমের শকড হলো। অনিকেত শশীকে কোলে তুলে দাঁত বের করে হাসছে।

শশীর ভয়ার্ত চেহারা দেখে মনে হয় বেজায় খুশি হয়েছে।
ছাড়ুন আমাকে! ঘুমাবো আমি। ছাড়ুন বলছি।
একদম ছাড়ুন ছাড়ুন করবা না। ধরেছি ছাড়ার জন্য। হানিমুন করতে এসে বেগমসাহেবার ঘুম ই যেন যাচ্ছে চোখ থেকে। একদম ঘুমাবা না বলে দিলাম। কোলে নেওয়া অবস্থায় শশীর নাকে নাক ঘষে অনিকেত।
একশবার ঘুমাবো আমি? তুমি যাও যেখানে গিয়েছিলে। আমি যা খুশি তাই করবো। একটু আগেই তো বলে গেলে আমার যা ইচ্ছা।

ওলে আমার বউটা লে নাগ কলেছে দেকছি। আসো বউ তোমালে আদল করি। তোমার নাগ কুমে দাবে। বাচ্চাদের মতো নেকামি করে অনিকেত শশীকে বলে।
আপনি নামান আগে। আমার কিন্তু ভাল্লাগছে না অনি।
ঐ আপনি আপনি করছ কেন? আমি কি তোমার ভাসুর লাগি বেয়াদ্দব বউ একটা। শশীকে কোল নামিয়ে দিয়ে।

কিইই। আমি বেয়াদব বউ। ঠিক আছে।
থাকবো না আর তোমার মতো ফাজিল স্বামীর সাথে। চলেই যাবো। তারপর একটা আদব বউ খুজে সংসার করো। ভেংচি কেটে খাটে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে শশী।
কই যাবা বউ আমাকে একা রেখে? এই রাত্রি বেলা একা পেলে সুইচরা তোমাকে খেয়ে ফেলবে। শশীর ঘারে আলতো করে কামড় দিয়ে।
আহ্! লাগছে তো। কি বাচ্চামো শুরু করেছ তুমি অনি? ভাল্লাগে না সরো।
কি করবো তাহলে বলো। আমার তো আর একটা কিউট গোলুমোলু বাচ্চা নাই, তাই নিজেই বাচ্চা সাজছি। আজ যদি একটা বাচ্চা থাকতো তাহলে বাপ বেটিতে মিলে কত্ত মজা করতাম। তখন তোমাকে আমার লাগতোই না।
ডং।

ও বউ কথা কও। শশীর কোমরে শুরুশুরি দিয়ে। সুরে সুরে বলে।
হিহিহি। কি বলো। হাসি আসে খুব শশীর অনির বাচ্চামি দেখে।
কবে হমু আমি বাপ? আমার কানে কইয়া যাও।
বলবো না যাও ভাগো। ভেংচি দিয়ে উঠে যেতেই শশীর হাত ধরে ফেলে অনি।
শশীকে নিজের দুবাহুতে ঘিরে ধরে বসে থাকে অনিকেত
বলো না বউ।

বিয়া দুদিন না হতেই কেন করো পাগলামী। বলেই লজ্জায় অনির বুকে মুখ লুকায় শশী।
অনিকেত হেসে শক্ত করে জরিয়ে ধরে শশীকে বুকের মাঝে।
শশী জানেও না অনিকেতের বুকে অন্য এক ঝড় বইছে। যে ঝড়ের আভাষ শশীকে পেতে দেবে না অনি। নিজের জীবন দিয়ে হলেও নিরাপদে আগলে রাখবে শশীকে।
শশীর সাথে তখন অযথায় রাগ করে। হঠাৎ করে রিশাদের সাথে শশীকে দেখে মাথা নষ্ট হয়ে যায়। মনে অনুরাগ জন্মে। কেন বললো না শশী ওকে রিশাদের কথা। শশীকে নিয়ে সন্দেহ করার কথা অনিকেত স্বপ্নেও ভাববে না।
অনিকেত একটা কথা বলি? শশী অনির বুকে মাথা রেখে মৃদু স্বরে বলে।
বলো। শশী চুলে নিজের হাত বুলাতে বুলাতে।
তুমি রাগ করবে না তো?

না বেগমসাহেবা। কোনোদিন না।
আজ রিশাদ এসেছিলো। আমার খুব ভয় হচ্ছে অনি। চলো না আমরা দেশে ফিরে যায়। এখানে আমার একদমি ভালো লাগছে না।
হুমমম। ভয় পেয়ো না। আমি তো আছি। আমি থাকতে কার ঘারে কটা মাথা আমার বেগমসাহেবা কে ভয় দেখাবে।
সত্যি। কিছু হবে না তো আমাদের।

না কিছুই হবে না। ভরসা রাখ আমার উপর। ভরসা আছে তো নাকি?
হ্যাঁ আছে। নিজের চেয়েও বেশি। জিজ্ঞেস করলে না রিশাদ কি বলেছিলো?
দরকার নেই। আর এরপর যেন না আশে তোমার সামনে সেই ব্যবস্থাটায় করবো চিন্তা করো না।
এখন চলো খুব খিদে পেয়েছে। চলো চলো।
শশীকে নিয়ে একসাথে বসে খায় দুজন।
এদিকে মিলা হোটেল রুমে ঢুকে ওয়াইনের বোতল ছুড়ে মারতে থাকে। হোটেলের সব কিছু ভাঙতে থাকে। হোটেল ম্যানেজার বাধ্য হয়ে পুলিশ কে খবর দেয়।
পুলিশ এসে এ্যারেস্ট করে নিয়ে যাই মিলাকে।
শশীকে পেছন থেকে জরিয়ে জানালার পাশে একচাদরে জরিয়ে বসে থাকে

পর্ব ২৩

২ দিন পর শশী ও অনিকেত বাংলাদেশের উদ্দেশ্য রওনা হয়। খুব ভোরে বাংলাদেশ এসে পৌঁছায় ওদের প্লেন।
শশী মোটেও জার্নি করতে পারে না। জার্নি করলে ওর বমি করতে করতে অবস্থা হালুয়া টাইট হয়ে যায়।
বাসায় এসে পৌঁছাতেই সবাই শশীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে। খুব দূর্বল হয়ে গেছে শশী। জার্নিতে তো শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে।
অনির মা তো অনিকে ইচ্ছা মতো বকা।

অনিকেত! এ কি হাল করেছিস বউটার। এতো সুন্দর পুতুলের মতো বউটাকে তোর সাথে দিলাম আর তুই তার এ অবস্থা করেছিস?
আমি কি করলাম? অনিকেত চোখ কুঁচকে মায়ের দিকে তাকায়।
তোমার বউমা কে কত্ত বুঝিয়েছি। জিজ্ঞেস করো কতো খেয়াল রেখেছি ওর।
শশী কিছু বলবে তার আগেই শ্বাশুড়ি মা অনিকে ধমক দিলো।
ও কি বলবে। আমি দেখছি তো কি খেয়াল রেখেছিস। কতো দূর্বল হয়ে গেছে মেয়েটা। খাওয়া দাওয়াও মনে হয় ঠিকমতো করে নাই। তুই তো মনে হয় তোর নিজের চিন্তায় ব্যস্ত ছিলি?

আরে মম! কি বলছ। আমি জীবনে নিজেরও ওতো খেয়াল রাখি নাই যতটা শশীর রেখেছি। কিন্তু ওর বমি মাথা ঘোরা এসব সমস্যা যাচ্ছিলোই না। কত্ত বার বললাম চলো ডক্টর কে দেখায় বলে লাগবে না দেখানো। গ্যাস্ট্রিকের জন্য এমন হচ্ছে ঠিক হয়ে যাবো? কি করবো বলো? মাইর দিবো তোমার বউ মাকে? শশীর দিকে চোখটিপ দিয়ে।
কি? এই তোর সাহস কি করে হয় বউকে মারার কথা বলার? অনির গায়ে কয়েকটা থাপ্পড় মারে অনির মা।

শশী সহ সবাই মিটিমিটি হাসতে লাগলো।
ভালো মা ভালো! তুমি কি আমার মা না ওর মা। ওর জন্য এই প্রথম মাইর দিলা। নাকে কেদে কেদে বলে।
আমি ওর মা হয়ছে। এখন যা গিয়ে তোর ডাক্তার আঙ্কেল কে কল করে বাসায় আসতে বল।
পারতাম না? তোমার মেয়ে তুমিই যাও। সোফায় বসে।
অনি! তুই এমন করছিস কেন? সুইজারল্যান্ড গিয়ে কি তুই বাচ্চা হয়ে গেছিস। বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করছিস।
যা না রে প্রিন্স টা আমার।

হুমম যাচ্ছি যাচ্ছি। বউমা ই সব হয়ে গেলো আমিও যে শুকিয়ে গেছি সেদিক কারো খেয়াল আছে? কেউ নাই আমার। আজ মা টাও পর হয় গেলো, নাক টানতে টানতে মায়ের গলা জরিয়ে ধরে।
বউমা! আমার ছেলেটার কি হয়ছে রে মা। এমন করছে কেন?
অনি প্রিন্স আমার কি হয়েছে তোর। অনির দিকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে গায়ে বুলাতে থাকে।
মা আমার কি মনে হয় জানো? ভাইয়াকে কোনো সুইচ জিনে ধরছে? তাই এমন করছে।
শশী ফারিহার কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়।
বেশি বুঝিছ তুই। ফারিহার মাথায় হালকা থাপ্পড় দিয়ে। শশীর দিকে চোখ ছোট্ট করে তাকায়।

অনির ওভাবে তাকানো দেখে শশী সবার নজর লুকিয়ে অনিকে জিহ্বা বের করে ভ্যাঙ্গায়।
ভাইয়া! হুহুহু মা দেখো না? নাকে কাঁদে ফারিহা।
অনি যা তো তুই। আগে তোর ডাক্তার আঙ্কেল কে কল কর। পরে তোর জিন ছাড়াচ্ছি আমি।
ফারিহার বাচ্চা! তোকে হাতের নাগালে পাই একবার। জিনে ধরলে কি করে দেখাবো। ফারিহার কান মুচড়ে চলে যায় অনি।
মা! ফারিহা কান ডলতে ডলতে নাকে কাঁদে।
তোরা দুই ভাইবোন কি দিন দিন ছোটো হচ্ছিস রে। তোর তো আগে থেকেই বুদ্ধি কম। এখন এই অনিটাও এমন করছে। আমার হয়েছে যতো জ্বালা।
কি আমার বুদ্ধি কম? ছোট মা।

ভাবি ছাড়ো তো। ওদের এসব দুষ্টু সারাজীবন চলবে।
এখন কেমন লাগছে বউ মা! খাবার নিয়ে আসি? অল্প করে কিছু মুখে দাও?
ভালো লাগছে মা এখন। আচ্ছা নিয়ে আসেন। শশীরও খুব খিদে পেয়েছে। কিন্তু খিদে পেলে কি হবে। খাবার গন্ধ শুকলেই বমি চলে আসে।
বিকালে ডক্টর আঙ্কেল আসে শশীকে দেখতে। অনি একটু কাজে স্টুডিও তে গেছে।
মিজান ভাই! কি হয়েছে বউমার? কিচ্ছু খেতে পারছে না। সকালে, বিকালে শুধু কয়েকটুকরা ফল ছাড়া আর কিছুই খেতে পারে নাই। চিন্তিত হয়ে ডাক্তার মিজানকে বলে অরুনা চৌধুরী।

সমস্যা তো গুরুতর। আজিম কে কল করেন। তার তো মহাবিপদ সামনে? শশীকে চেকাপ করে গম্ভীর গলায় বলে ডাক্তার মিজান।
বিপদ? কি বলেন। বউমার কি এমন হয়েছে মিজান ভাই। কাঁদো কাঁদো হয়ে যায় অরুনা চৌধুরী।
আরে ভাবি? বিপদ ই তো? আজিমের কম্পিটিটর আসছে যে। আপনার ঘরে অতিথি আসছে ভাবি। হোহোহো করে এসে ওঠে ডাক্তার মিজান।
কি? অরুনা চৌধুরী চোখ বড় করে মুখে হাত দেয়। সত্যি?
হ্যাঁ ভাবি! মিস্টি কই। শালা আজিমের আজ খবর আছে ভাবি বলে দিলাম। মোটা অংকের ফিস ছাড়া ওকে ছাড়ব না আমি।
শশী! তো অবাক হয় আবার লজ্জা ও পায়। এতো তাড়াতাড়ি কন্সিভ করবে ও স্বপ্নেও ভাবে নাই।

অরুনা চৌধুরী শশীকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়। চিৎকার করে সারাবাড়ি এক করে। ফারিহা, নাসিফ, ছোট মা, ছোট চাচ্চু তো সেই খুশি।
অনিকে সারপ্রাইজ দেওয়ার চিন্তা করতে থাকে মনে মনে সবাই।
অরুনা চৌধুরী খুশিতে মনে হয় পাগল হয়ে যাবে। কাজের লোকদের সাথে সাথেই ৫০ হাজার টাকা দান করে দেন।
নিজের অনাগত বংশ প্রদীপের জন্য সবার কাছেই দোআ কামনা করেন,
শশী নিজের পেটে হাত দিয়ে অনাগত সন্তান কে অনুভব করতে থাকে। মনের অজান্তেই দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে শশীর চোখ দিয়ে। আচ্ছা অনি কি খুশি হবে? নাকি ও রিশাদের মতো এখন বউয়ের সাথে মজা চাই বাচ্চা না। শশী এই বাচ্চা কে হারাবে না। যেকোনো মূল্যে এ বাচ্চাকে শশী দুনিয়ার আলো দেখাবে।
সাত পাঁচ নানা চিন্তা শশীর মাথায় ঘোরে।

নাসিফ এসে ভাবির পাশে বসে।
কি হয়েছে নাসিফ বাবু। নাসিফের মাথায় হাত দিয়ে বলে শশী।
ভাবি মনি! তোমার কি হয়েছে। তুমি কি অসুস্থ।
না বাবু! আমি ঠিক আছি।
তাহলে ডাক্তার নানু আসলো কেন?
তুই চাচ্চুমনি হবি তাই বলতে এসেছে বুঝেছিস? শশীর দিকে চেয়ে হেসে বলে ফারিহা
ভাবি মনি! ফুপি কি সত্যি বলছে। আমি

চাচ্চু হবো। হুরররে। ঢিঙ্কা চিকা ঢিঙ্কা চিকা। আমি চাচ্চু মনি হবো।
শশী আর ফারিহা হাসছে নাসিফের খুশিতে নাচ দেখে।
হঠাৎ শশীর মোবাইলে অনির মোবাইল থেকে কল আসে।
ঐ যে বাচ্চার বাবা কল করেছে। ফারিহা কিছুটা ধাক্কা দিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে উঠে নাসিফকে সঙ্গে করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
শশী মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে। বুকটা কাঁপছে। লজ্জা লাগছে অনির সাথে কথা বলতে। সংকোচ করে কল রিসিভ করতে যাবে তার আগেই কলটা কেটে গেলো। আবার কল আসতে থাকলো।
এই যে বাচ্চার বাপ এতো অধৈর্য কেন আপনি? । শশী মোবাইলে ভেসে আসা অনির নাম্বার টা দেখে বলে।

আসসালামু আলাইকুম! হেসে লাজুক ভঙ্গিতে কল রিসিভ করে বলে শশী।
হ্যাঁলো! আপনি কি মিসেস অনিকেত বলছেন?
অচেনা কন্ঠস্বর শুনে ঘাবড়ে যায় শশী?
জ্বী! থতমত খেয়ে বলে।
তোমার লাজুক হাসির শব্দটা এখনো আগের মতোই বুকে এসে লাগে আমার। অচেনা ব্যক্তি বলে।
অনিকেত কোথায়। আপনি কে? ওর মোবাইল আপনার কাছে কেন? বলুন। ভয়ার্ত স্বরে বলে।

শশী! শশী! মাই লাভ। অনিকেত অনিকেত করছ কেন? আমাকে কি তোমার এখন আর ভালো লাগে না। মনে পড়ে না আমার কথা।
কে আপনি? এসব কথা কেন বলছেন?
এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে? আমি কিন্তু এখনো ভুলি নাই তোমাকে, তোমার শরীরের গন্ধ কে। প্রথম যেদিন তোমার সারা শরীর ছুয়েছিলাম। বিশ্বাস করবে এতো মজা আমি কোনোদিন পাই নাই যতো মজা ঐদিন তোমার দেহভোগে পেয়েছি। আলাদা একটা নেশা আছে তোমার শরীরে। এই জন্যই তো শালা অনিকেত তোমাকে বিয়ে করেছে। সেকেন্ড হ্যান্ড হলেও তুমি খাসা মাল বুঝেছ।
রিশাদ?

শশীর হাত পা অবশ হয়ে যায় রিশাদের মুখে এমন বিশ্রী, অশ্লীল ইংগিতবাহী কথা শুনে।

পর্ব ২৪

রিশাদ?
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় রিশাদের এমন নোংরা কথা শুনে। একজন খারাপ মানুষের সঙ্গী হলে জীবনে যে কতো কষ্ট শশী হারে হারে বুঝেছিলো রিশাদকে বিয়ে করে।
শশীর এখনো মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে। শশীকে যখন উঠিয়ে নেয় নাই রিশাদ রা। রিশাদ প্রায় হোটেলে নিয়ে যেত ঘুরার কথা বলে। বিবস্ত্র করে সিগারেট ধরিয়ে বসে বসে শশীর সমস্ত শরীরের ছবি তুলতো

একসাথে বিছানায় থাকাকালীন ভিডিও করতো। এসব নাকি ভালো লাগে রিশাদের। পর্নোগ্রাফির নায়িকাদের মতো শশীকে ড্রেস পড়াতো। ঠিক ঐরুপ আচরন অঙ্গভঙ্গী করতে বলতো। শশীর সাথে ঐভাবে থাকতো।
কতোবার বলতো রিশাদ এসব আমার ভালো লাগে না। আমি তো আর ঐ সব মেয়ে না। আমার কাছে আমার ইজ্জত বহু মূল্যবান। এসব করা তো আল্লাহও পছন্দ করবে না। দয়া করে এমন করো না।

কথায় আছে না চোরে শোনে না ধর্মের কথা।
রিশাদও তাই। স্বামী হিসাবে তার যা অধিকার শশী সব দিতো। কিন্তু সহধর্মিনী ও একজন নারীর হিসেবে শশীও চাইত তার স্বামী তাকে ভালোবেসে স্পর্শ করুক। কিন্তু রিশাদের স্পর্শে শুধু কামনার লালসা ছাড়া কিছুই কোনোদিন পায় নাই শশী। সব মুখ বুঝে সহ্য করতো। পৃথিবীর সমস্ত মেয়েই স্বামী সংসার ঠিকিয়ে রাখতে চাই। ভাঙ্গতে কয়জন চাই?
শশীও চাই নাই। শত অপমানের পরও যখন রিশাদের একটু ভালোবাসা মাখা কথা শুনতো সব কষ্ট ক্ষোভ ভুলে যেত।
সকল অপমান লাঞ্চনা সহ্য করেও স্বামীর হেদায়েত কামনা করে স্বামীকে আঁকড়ে ধরে বেচে ছিলো শশী।

মেয়েরা সবকিছুর ভাগ দিতে রাজি হয় কিন্তু স্বামীর ভাগ মেয়েরা কোনোদিনও একচুল পরিমানও দিতে রাজি থাকে না। স্বামী শুধুই তার স্বামী হবে। স্বামী ভালোবাসা রাগ অভিমান অত্যাচারে শুধু তারই অধিকার থাকবে। অন্যকোনো রমনীর আনাগোনা স্বামীর চৌহদ্দির আশেপাশেও পছন্দ করে না স্ত্রী রা। এটাই স্ত্রীদের স্বভাবগত ধর্ম।
শতাব্দী, যুগ, বছর পাল্টেছে কিন্তু নারীদের এই স্বভাব পাল্টায় নাই। আর খারাপই কিবা এতে? স্বামীর প্রতি হক থাকতেই পারে। এটা প্রতিটি স্ত্রীর স্ত্রীগত অধিকার।
শশীর সব সহ্যের সীমা ঐ দিন ভেঙে যায় যেদিন শশী বুঝতে পারে রিশাদ পরকীয়া করে। পুরুষজাতের মতিগতি দুজন মানুষ বুঝতে পারে। এক মা দুই নাম্বার স্ত্রী। রিশাদের হাবভাবে শশীর বুঝতে বাকি থাকে না রিশাদ অন্য মেয়েতে আসক্ত। যেসব পুরুষের ঘরের বউয়ের প্রতি টান থাকে না। তারা সচরাচর অন্য মেয়েতেই আসক্ত থাকে।

বাইরে যদি প্রতিদিন ভ্যারাইটি খাবার পায়। ঘরের নিত্যদিনের ডাল ভাত কার ভালো লাগে। এই ধারনাটা সব পুরুষের নেই। তবে কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের পুরুষের রয়েছে। রিশাদও তেমন মন মানসিকতা সম্পন্ন প্রানী।
শশী বুঝতে পারে প্রায় গভীররাত পর্যন্ত রিশাদ মোবাইলে চ্যাটিং করে কার সাথে যেন? এমনকি বিছানায় শশীর সাথে দৈহিক সম্পর্কের সময়ও মাথার কাছে মোবাইল রেখে চ্যাটিং করে। দৈহিক সম্পর্কটা যেন রিশাদের জন্য নিছক একটা ডিউটি। যা অনিচ্ছা স্বত্বে ও পালন করে। কারন এই মিলনে নেই কোনো আবেগ নেয় কোনো ভালোবাসা শুধুই যেন দৈহিক চাহিদা।

শশীর দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। কেন পড়ে শশী বোঝে না। হয়তো নিজেকে তুচ্ছ লাগে। নিজের স্বামীর চোখে অর্ধাঙ্গিনী নয় কোনো পতিতা মনে হয় নিজেকে।
মন না ছুঁয়ে দেহভোগের মিলনে সুখ নয় হীনমন্যতা জাগে। স্বামী স্ত্রীর এমন মিলনে ইসলামেও নিষেধ আছে।

একটা মানুষ কতটা বিকৃত মনা হলে তাকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্টতম পদে অধিষ্ঠিত করা যায় তা রিশাদকে না দেখলে শশী জানতেও পারতো না।
কি হলো শশী! তুমিও কি আমার সেই ভালোবাসার পরশগুলো মনে করছ? বলেই শয়তানী সুরে হাসি দেয়।
হঠাৎ রিশাদের খিকখিক করা শয়তানী হাসি শুনে ঘোর কাটে। এমন হাসির শব্দে গা জ্বালা দিয়ে ওঠে শশীর।

পরক্ষনেই মনে পড়ে অনিকেতের মোবাইল রিশাদের কাছে কিভাবে এলো? অনির কোনো ক্ষতি করলো না তো এই পশুটা?
আমার অনি কোথায়? কি করেছ তুমি অনিকেতের। ওর মোবাইল তোমার কাছে কেন এলো। শশী অস্থির হয়ে বলে।
কুল ডারলিং! এতো রেগে যাচ্ছ কেন? অনিকেতের সাথে যা করার তাই করবো আমি। শালা আমার শিকার নিয়ে নিজের কাছে রেখেছে। ওকে যা করার করবো সময় হলেই।
ওর কথা বাদ দাও তো এখন। চলো একটু পুরোনা স্মৃতিচারন করি।

তোর মতো কুকুরের কাছে কুকুরের মতোই ব্যবহার আশা করা যায়। কারন তুই তো আর সভ্য সামাজিক জীব না। তোর কথা শুনলেও আমার পাপ হবে। আমার অনির
কিছু হলে তোকে আমি কেটে কুঁচি কুচি করে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো রিশাদ। রাগে চিৎকার দিয়ে বলে শশী।

কাম ডাউন জান! আগে তো এমন ছিলে না। আমাকে তুই তুকারি করছ কেন? ভেরি ব্যাড। আমি না তোমার প্রথম লাভ। আর প্রথম ভালোবাসার জন্য সব মানুষের একটা সফ্ট কর্নার থাকে মনে তা আমি ভালো করেই জানি। তোমার হৃদয়েও আমার প্রতি সফ্ট কর্নার আছে তাই না? আমি সিওর সবার চেয়ে একটু বেশিই আছে কারন তোমার দেহে এখনো যে আমার দেওয়া দাগ আছে সোনা তাই না! রাগ অভিমান ভুলে চলো না আবার এক হয়।

হারামী! তোর কান্না দেখে ঐ দিন কষ্ট পেয়েছিলাম। কারন তুই আমার প্রথম স্বামী। সেই খাতিরে মনে একটু কষ্ট লাগাটায় স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে সেই দয়া করুনা করা কে তুই দূর্বলতা ভেবেছিস। শুনে রাখ হৃদয়ে তো দূরে থাক আমার জুতার তলায় ও তোকে রাখি না আমি। মনের সফ্ট কর্নারে তোকে রাখবো আমি? এমন যোগ্যতা রাখিস বুঝি?
অনিকেত কোথায় তাই বল তুই। নয়লে ১৪ শিকের ভাত সারাজীবন খেতে হবে তোকে বলে দিলাম আমি। নারীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে দূর্বলতা ভেবে ভুল করেছিস তুই। নারীর আত্নসম্মান, বিশ্বাসে যখন আঘাত আসে তোর মতো মানুষ রুপি জানোয়ারকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার সাহস শক্তি এমনিতেই চলে আসে।

ওক্কে সময় হলেই দেখবো আমার জানের কতো ক্ষমতা। অনেক রেগে গেছো দেখছি। এই সময় এতো রাগ কি ভালো বলো? বাচ্চার সমস্যা হবে তো নাকি? যদি আগের মতো কিছু হয়ে যা। আআআআ কি হবে তখন জানেমান?
তুই এতো কিছু কি করে জানিস? আগের মতো কি হবে? শশী আৎকে ওঠে।
সাসপেন্স! সাসপেন্স! সব তো এখন বলা যাবে না। তুমি বরং তোমার ভালোবাসার অনিকেতের সুস্থতা কামনা করো।

রিশাদ? রিশাদ! শশী রিশাদ রিশাদ বলতে বলতেই কলটা কেটে দিলো রিশাদ।
খুব টেনশন হচ্ছে শশীর। অনিকেত কোথায় তুমি? বাড়ির সবাইকে কি বলবো এসব কথা? হ্যাঁ বলতেই হবে
,
শশী বিছানা থেকে উঠতেই দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে অনিকেত।
ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরে অনিকেত কে।
। কোথায় ছিলে তুমি? জানো কতোটা ভয় পেয়েছি আমি। কাঁদতে কাঁদতে বলে শশী।
আরে কি সমস্যা তোমার? আসতে না আসতে কান্না শুরু হয়ে গেলো। বাইরে থেকে এসে একটু জিরাতেও কি দিবা না। সরো তো। শশীকে ছাড়িয়ে হনহন করে ওয়াশরুমে চলে গেলো অনিকেত
শশী অনিকেতের এমন দূরব্যবহারে অবাক হয়ে গেলো। মনে ব্যথা পেলো খুব।
কি এমন করলো যার জন্য এমন আচরন করলো অনিকেত। শশী যে ভয়ে কাদছিলো অনিকেত বুঝেও এমন করতে পারলো? একবার জিজ্ঞেস ও করলো না কি হয়েছে তোমার?
বড্ড অভিমান হয় শশীর। মুখ কালো করে নিচে চলে যায় শশী। কথায় বলবো না আজ অনিকেতের সাথে।
মম! মম! গলা ছেড়ে রুম থেকে চিল্লাতে চিল্লাতে বের হয় অনি।
ডায়নিং এ সবাই বসে রাতের খাবার প্রস্তুতি সারছিলো। অনিকেতের এমন হাক ডাকে চমকে গেলো সবাই।
কি হলো? ওভাবে ধেড়ে গলায় চিৎকার করছিস কেন? ডায়নিং টেবিলে বসে পেয়াজ কাটতে কাটতে বলে অরুনা চৌধুরী।

চিৎকার করবো না তো কি করবো? আমার কালো টিশার্ট টা কোথায় রেখেছ খুজে পাচ্ছি না। শশীর দিকে একনজর তাকিয়ে রাগী স্বরে বলে অনি।
শশী মন ভার করে পেয়াজ কাটছে আর দুচোখের পানিতে নাক মুখ ভেজাচ্ছ। খুব কান্না পাচ্ছিলো শশীর। কান্না টা গলা অব্দি এসে বাধা ভাঙার সকল চেষ্টা করছে।
তাই পেয়াজ কাটার ছলে মন ভরে কেদে নিচ্ছে শশী। অনিকেতের চিৎকারে আরো কষ্ট লাগছে শশীর।

ভালো করে খুজে দেখ। পেয়ে যাবি। ঘরের জিনিস ঘরেই আছে। অরুনা চৌধুরী অনির দিকে বিরক্তি নিয়ে বলে।
না নেই ঘরে। থাকলে কি তোমাকে বলতাম।
না থাকলে অন্য যেটা আছে সেটাই এখন পর। ঝামেলা করিস না তারপরও।
আমার ঐটায় দরকার। তুমি দিয়ে যেতে বলো ওকে।
ওকে কাকে বলবো? তুই বলতে পারিস না। ঝগড়া করেছিস বউমার সাথে তুই? ঝাঁঝালো গলায় বলে অরুনা চৌধুরী।

না মা। ঝগড়া হবে কেন? আমি এখনি খুজে দিচ্ছি তোমার শার্ট। শশী অরুনা চৌধুরীর সন্দেহ নিবারনের জন্য কথা চেপে যায়। অনিচ্ছা সত্বেও অনির সাথে কথা বলে শশী।
বউ মা তোমাকে পেয়াজ কাটতে কে বলেছে। কেঁদে কেটে একাকার করে ফেলেছ। ওঠো ওঠো। তোমার কোনো কাজ করা লাগবে না শুধু পাশে বসে থাকলেই হবে মা। এখন যাও গিয়ে ঐ বাদরটার শার্ট দিয়ে আসো।
শশী অনিকেতের দিকে তাকাতেই অনিকেত মুখ ঘুড়িয়ে হন হন করে রুমে ঢুকে দরজা দিয়ে দেয়।

শশীর বুক ফেটে কান্না আসে। তবুও শ্বাশুড়ির সামনে হাসি মুখ করে চোখ মুছতে মুছতে সিড়ি বেয়ে রুমের দরজার কাছে এসে থামে। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে দরজা খুলতেই বড়সড় শকড পায়। শকডও বলা যায় না অবাক বিশাল পর্যায়ের অবাক হয়,
হঠাৎ ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেলো। দেয়ালে প্রজেক্টেরের আলো পড়লো। তাতে শশীকে ঐ যে প্রথম মাঠে বসে খেলা দেখতে দেখেছিলো অনিকেত গালে হাত দিয়ে বিরক্তি ভরা মন নিয়ে সেই ছবিটা ভাসছে। ইশশ কেমন ভাবুক ভাবুক দেখাচ্ছে।

তুমি কি বিশ্বাস করবে? তোমাকে হ্যাঁ তোমাকেই প্রথমবার দেখে এই অনিকেতের হৃদস্পন্দন কেঁপেছিলো। থেমে থেমে যাচ্ছিলো পুরোটা সময়।
কেন? কি কারনে? আজও এর ব্যাখ্যা আমার মন আমাকে দেয় নাই। আমি তো বিনা দ্বিধায় বিনা জানায় মন দিয়ে ফেলেছিলাম তোমাকে।
ঐদিন থেকে আমাকে আর আমি খুজে পেতাম না। নিজেকে খুজতে গিয়ে তোমাকেই বার বার খুজে পেতাম। সিগারেট মদ সব নেশায় তো করেছি। কিন্তু তোমার নেশা অদ্ভুত এক নেশা। আমার ভেতরটা পুরো জেকে বসেছিলো সেই নেশা। আবার তোমাকে ভালোবেসে সব নেশা পায়ে ঠেলেছি আমি।

শশী থ হয়ে দাড়িয়ে রয়। বৃষ্টি শেষে হিমশীতল হাওয়া যেমন গায়ে কাঁপন লাগিয়ে দেয় হঠাৎ। এই মুহুর্তে অনির কথাগুলোও তেমন কাপন লাগিয়ে যায় শশী দেহ মনে।
পরের ছবিটা বিয়ের পরেরদিনের। যখন রিমি আর শশী বাড়ির ছাঁদে দাড়িয়ে ছিলো তখনকার। এখানেও মন ভার করে দাড়িয়ে আছে শশী।
আবার সেই শিহরণ জাগানো আবেগ মাখা কথা শুনতে পেলো। শশী ছবির দিকে চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে মোহমুগ্ধতায় কথাগুলো শোনে।
তোমাকে এভাবে হারাবো স্বপ্নেও ভাবি নাই।

কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি এই কথাটাও আমি যে মানতে পারি নি। তুমি জানো সব নেশা তে ডুবেছি কিন্তু তোমার নেশা ভুলতে পারিনি।
পরের ছবি আসতেই পরিচিত হাতের স্পর্শ শশীর পেট জরিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে।
সাথে সাথে শশীর মন খুশিতে ভরে ওঠে সামনের ছবি ও প্রিয় মানুষটার ছোঁয়া পেয়ে।
ছবিটা শশী আর অনিকেতের বিয়ের। , যখন ও কাবিন নামাই সাইন করছিলো সেই সময়কার।

অবশেষে সৃষ্টি কর্তা তোমাকে আমার কাছে বৈধ ভাবে ফিরিয়ে দিলো সারাটা জীবনের জন্য ফিরিয়ে দিলো। আমার করে শুধুই আমার। আর আজ সেই তুমি। আমার প্রেয়সী বধু থেকে আমার সন্তানের মা হয়ে গেলে। আজ আমি পরিপূর্ণ। আমার ভালোবাসাও পরিপূর্ণ।
অনিকেত শশীর মুখটা দুহাতে নিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে পরম আদরে জরিয়ে নিলো বুকের মাঝে।

পর্ব ২৫

আমার তখনকার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছ তাই না শশী!
শশী মাথা নিচু করে চোখের জল ছেড়ে দেয়।
সরি বেগমসাহেবা। এই দেখো কানে ধরেছি। তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে ওমন আচরন করেছি যাতে তুমি রাগ করে রুম থেকে বের হয়ে যাও আর আমি তোমার জন্য সারপ্রাইজ রেডি করতে পারি।
আমি কোনো সারপ্রাইজ চাই না অনি! তুমি আমার হয়ে থেকো জীবনভর এতেই আমি খুশি। আর কিছুই চাই না আমার। তোমার দেওয়া কষ্ট আমার বুকে তীর হয়ে বিঁধে তুমি জানো না অনি। আমি পৃথিবীর সমস্ত কষ্ট সহ্য করতে পারি কিন্তু তোমার দেওয়া কষ্ট আমি কোনোদিন সহ্য করতে পারবো না। এর চেয়ে যে আমার মৃত্যুও ভালো।
চুপ। একদম চুপ। আরেকবার মুখ থেকে মরার কথা বের করলে মেরে তক্তা বানিয়ে দেবো। শশী আর অনির ৫/১০ টা বাচ্চা হবে। ঘর ভরা নাতি নাতনী হবে? তাদের কে আমরা আমাদের ভালোবাসার গল্প শুনাবো।
এসব ভাববা। আবার যদি উল্টো পাল্টা কথা শুনেছি খবর আছে বুঝলা। আসো বুকে মাঝে আসো এখন।
শশী অনিকে জরিয়ে অনির বুকে মাথা রাখে।
। শশী!
। হুম।
একটা কাজ করবে?
কি? বুক থেকে মাথা উচু করে অনির মুখ পানে চেয়ে।
ঘরের বাতিটা জ্বালিয়ে দিয়ে আসবে?
আচ্ছা।

শশী দেখে অনি এখনো জরিয়ে ধরে আছে শশীকে।
কি হলো ছাড়ো! না ছাড়লে বাতি জ্বালাবো কি করে।
ওহ্ হ্যাঁ। কিন্তু এই মুহুর্তে তোমাকে নিজের থেকে ছাড়াতে ইচ্ছা করছে না।
তাহলে থাক। মুচকি হেসে শশী বলে।
হুম। শশীর চুলে হাত বুলতে বুলাতে বলে অনিকেত।
আচ্ছা। যাও বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে আসো।

শশী বাতি জ্বালিয়ে বিছানার দিকে তাকাতেই শশীর খুশিতে চিৎকার করতে ইচ্ছা করে।
পুরোটা বিছানায় ছোট বেবিদের ছবি। মাঝ খানে আম, তেতুল। বিভিন্ন রকম ফলও আচারে ভর্তি ঝুড়ি। পাশেই শশীর ফেবারিট পিঠা, পায়েশ। খিচুড়ী বিফ। ফুচকা, হালিম, চটপটি, আইসক্রিম। হাজির বিরিয়ানী। আরো অনেক কিছু। অনির দিকে তাকাতেই মনটা দ্বিগুণ খুশিতে নাচে। ৩ রঙের গোলাপ, রজনীগন্ধা জারবেরা সহ কয়েক প্রকার ফুলের বুকে হাতে দাড়িয়ে আছে অনিকেত। তাতে লেখা
“Happy birthday আমার বাচ্চার আম্মি”

সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে হুড়মুড় করে ঘরে ঢোকে ফারিহা, রাতুল, রিমি, শোভন, শিখা, সামির, নাসিফ। হ্যাপি বার্থ ডে হবু বাচ্চার মা।
রিমি শিখা সামির শশীকে জড়িয়ে ধরে।
শশী কি বলবে। এমন সারপ্রাইজে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে একপ্রকার।
আজ যে ওর নিজের বার্থডে ছিলো শশী নিজেও জানতো না। কোনোদিন শোভন ভাইয়া আর রিমি ছাড়া কেউ মনেও রাখতো না শশীর বার্থ ডে।
শিখা সামির কে আদর করে রিমির কাছে যায় শশী। আমাকে মাফ করে দে রিমি! তোকে আমি বিশ্বাস না করে কত্ত কথা শুনিয়েছি। তুই ই ঠিক বলেছিলি। রিশাদ ভালো না।
আরে বাদ দে তো! আমি সব ভুলে গেছি। আমার জানটুস টা হ্যাপি আছে এতেই খুশি আমি। তোর জায়গায় আমি থাকলে আমিও এমন করতাম। সো পাস্ট ইজ পাস্ট।

নাও চিল বাবু। উম্মাআআ। শশীকে জরিয়ে গালে চুমো দেয় রিমি।
আমি যে আন্টি মা হচ্ছি তাতেই তোর দোষ মাফ। তুই সুস্থ থাক আর বাবুটাও এটাই আমার দোয়া।
রিমি শশীকে জরিয়ে ধরে কাঁদে।
এই কাদুনী। একদম কাদবি না। এখন হ্যাঁপি মোমেন্ট চলছে সবাইর এর মধ্যে তোর চেহারা স্যাড বানাইস না। শশীর চোখ মুছিয়ে দিয়ে।
অনি ভাই। বউকে ফুল দিয়ে দেন। অনি শশীর সামনে হাটু গেড়ে বসে ফুলটা দিয়ে ধরে
আমার বাচ্চার মা। আমার সহধর্মিণী, অর্ধাঙ্গিনী মিসেস অনিকেত কে আমার পক্ষ থেকে একগুচ্ছ ভালোবাসা ও শুভ জন্মদিনের শুভেচ্ছা। সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি আজ সত্যি কৃতজ্ঞ তিনি আমাকে তার এতো সুন্দর সৃষ্টির জীবনসঙ্গী করেছেন।
রাতুল শোভন সমস্বরে বলে ওঠে।

। আমিন! আমিন!
শশী হেসে লাজুক লাজুক ভঙ্গিতে ফুলটা হাতে নেয়।
সবাই বসে আড্ডা দিতে থাকে। শশীকে সবাই জোর করে অনেক কিছু খাওয়া। শশী সবার খুশির জন্য একটু একটু সব কিছু খায়। কিন্তু এখন কেমন যেন বমি বমি ভাব আসছে।
কিরে শশী! মুখটা ওমন করছিস কেন? বমি আসছে নাকি?
এই কথাটা বলতে যতো দেরি শশী দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে গড়গড় করে বমি করতে দেরি করে না।

অনি, শিখা, রিমি গিয়ে ওকে পরিষ্কার করে এনে বিছানায় পিঠ বালিশে ঠেকিয়ে বসিয়ে দেয়।
খুব খারাপ লাগছে শশী? অনিকেত চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করে।
না এখন একটু ভালো লাগছে। অনির বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে।
আমরা বরং অন্য রুমে গিয়ে বসি। তুই রেস্ট কর শশী। রিমি শশীকে বলে।
আরে না না! আমি এখন ভালো আছি। কতোদিন পর তোদের দেখলাম। থাক না পাশে।
আচ্ছা ঠিক আছে।
ফারিহা একটু পর সবার জন্য আইসক্রিম

নিয়ে আসে। শশীকে অনিকেতের বাটি থেকে অনিকেত ২ চামচ খাইয়ে দেয়।
আচ্ছা অনি। একটা গান শুনা। অনেকদিন তোর কন্ঠে গান শুনি না।
না রে রাতুল মন চাচ্ছে না এই মুহুর্তে। শশীর মুখের দিকে তাকিয়ে।
রাতুল ভাই! আজ অনি ভাই থাক! আজ মিসেস অনিকেতের গান শুনবো আমরা।
রিমির কথা শুনে সবাই শশীর মুখের দিকে তাকায়।
অনি নিজেও ঘার বাকিয়ে শশীর দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়।
শশী রিমির কথা শুনে হকচকিয়ে ওঠে।
ঐ কি বলিস তুই।
হ্যাঁ! তুই গান গাইবি এখন।

হ্যাঁ রিমি আপু ঠিক বলেছ। শশী আপু অনেক সুন্দর গান গাইতে পারে। শিখা রিমির কথার সাথে কথা মিলিয়ে বলে।
সত্যি! অনিকেত শশীর দিকে তাকায়।
আরে কি বলছিস রিমি তোরা এসব? লজ্জিত হয়ে বলে।
আমি গান টান পারি না।

এসব বললে হবে না শশী ভাবি। গান তো গাইতেই হবে।
রাতুল সহ সবাই অনিকেত কে দিয়ে শশীকে গান গাইতে রাজি করায়। অবশেষে শশী রাজি হয়। তবে সম্পূর্ণ নয় অল্প করে গানটা শেষ করবে বলে রাজি হয় শশী।
অনিকেত সহ সবাই আগ্রহ নিয়ে শশীর গানের অপেক্ষা করে।
চোখ বন্ধ করে বড় শ্বাস নিয়ে রিমির কিছুটা পেছনে মুখ লুকিয়ে গান গাইতে থাকে শশী।
“কত ভালোবাসি। কি যে ভালোবাসি🎶
এতো ভালোবাসি তাই মনে জাগে ভয়🎶
এতো সুখ ভাগ্যে যদি না সয়🎶

জানে ফুল, জানে পাখি, জানে ঐ ঢেউ। 🎶
তুমি ছাড়া এ জীবনে নেই আর কেউ🎶
জানে চাঁদ, জানে রাত, জানে জোছনা 🎶
তুমি ছাড়া দুটি চোখে কিছু দেখি না🎶
কেন যে ভালোবাসি জানে এ হৃদয়🎶

পর্ব ২৬

অনিকেত সহ সবাই শশীর গান মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে। হঠাৎ অনিকেতের মোবাইল টা বেজে ওঠে। অনিকেত কাওকে কিছু না বলেই রাতুল আর শোভন কে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
শশী কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না। কারন ততক্ষণে অনিকেত রুমের বাইরে। মেজাজটা খারাপ হয় প্রচুর। এমন কেন? সবসময় এমন করে। ধুর। মুখ কালো করে বসে থাকে।
রমনা পুলিশ স্টেশনে এসে গাড়ি থামে অনিকেতের। ৩ জন গাড়ি থেকে নামতেই হাবিলদার এসে সামনে দাড়ায়।
স্যার লোকটা কে ধরে নিয়ে এসেছে।
কোথায় এখন? কঠিন স্বরে বলে অনিকেত।
লকাপে। চলেন স্যার।
থানার ভেতর প্রবেশ করা মাত্রই ওসি ছুটে এসে হ্যান্ডশেক করে। আমার মিসেস আপনার খুব বড় রকমের ফ্যান অনিকেত সাহেব। অনিকেত যেনো কিছুই শোনে না। অনির নজর সেলের দিকে।
ওসি সাহেব কালপিট টা কই। রাতুল এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে।
ও হ্যাঁ! আসুন! আসুন আপনারা বসুন আমি এখনি নিয়ে আসছি আপনাদের সামনে। বড্ড ধূর্ত আর চতুর লোকটা। ১০ শয়তান মরার পর মনে হয় হারামিটার জন্ম হয়েছে। অসম্ভব রকমের ছ্যাঁচড়া।
ওসি হাবিলদার কে ডেকে অনিকেত দের জন্য চা নাস্তার দিতে বলে ও আসামি কে আনতে বলে।

এই যে চলে এসেছে হারামিটা।
অনি রা বসে পেছন ফিরতেই ৩ জনেরই মুখের অবয়ব পরিবর্তন হয়। ৩ জনই যে যথেষ্ট রাগে জ্বলছে তা তাদের মুখ দেখে আন্দাজ করা যাচ্ছে।
শোভন দ্রুত গতিতে উঠে গিয়ে বেধড়ক পিটাতে থাকে।
তোর সাহস কি করে কুত্তার বা* তুই আমার বোনের দিকে নজর দিস। তোর কলিজা ছিঁড়ে শিয়াল কুকুরকে খাওয়াবো রিশাদ।
হাবিলদাররা গিয়ে ঠেকায়। রিশাদ ঠোঁটের রক্ত মুছে শয়তানি হাসি হেসে উঠে দাড়ায়।
তারপর অনিকেত সাহেব! সেকেন্ড হ্যান্ডে কি খুব মজা। আসলে আমিও জানতে চাই। আর শশী এতোটা আবেদনময়ী আমার কাছে। উফ্

মাঝে মাঝে আমাকেও একটু শেয়ার করতে পারেন তো নাকি।
অনিকেত আর কন্ট্রোল করতে পারে না নিজেকে। সোজা গিয়ে ওসির পিস্তল নিয়ে রিশাদের মাথায় তাক করে। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে।
ওসি অনিকেতের এমন আচরনে যথেষ্ট ঘাবড়ে যায়।
শোভন তো ইচ্ছা মতো চিল্লাচ্ছে। হাবিলদার আর রাতুল ধরে রেখেছে নয়তো রিশাদ এতোক্ষনে মরেই যেত শোভনের হাতে।
হুহুহু। অনিকেত আমি তো ভয় পেয়ে গেছি। এখন কি হবে? আমাকে মারিস না প্লিজ আমাকে মারিস না। কোন দোষে মারবি বল! ও হ্যাঁ দোষ তো আছে। গুরুতর দোষ। অনিকেতের বেস্ট ফ্রেন্ড অনির ভালোবাসাকে বিয়ে করে। এই দোষে? কিন্তু আমি তো জানতাম না অনি! শশী তোর প্রেয়সী ছিলো। মুখটা করুন করে বলে।
মিথ্যে বলিস না রিশাদ! তুই সব জানতি। তুই জেনে শুনেই বিয়েটা করেছিস। অনিকেতের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।

তুই জেনে গেছিস রাতুল? শালা তুই সারাজীবন আমার পথের কাটা হয়ে রইলি। আমি যতবার ভেবেছি অনির ক্ষতি করবো তোর জন্যই পারি নাই। তুই এসে বাম হাত ঢুকাবিই। রেগে নাক কুচকে বলে।
কেন করেছিস এমন? আমি তো তোকে বন্ধু ভেবেছিলাম তাই না? সেই স্কুল জীবন থেকে তুই আমার দোস্ত। সবচেয়ে ভালো বন্ধু ভাবতাম তোকে আমি। তবে কেন করলি এমন বল রিশু বল। চিৎকার করে রিশাদের কলার চেপে ধরে।

হাহাহাহা! বন্ধু? কে বন্ধু? তুই? তোকে কোনোদিন আমি বন্ধু ভাবিনি। তুই সবসময় আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলি। মনে আছে তোর তুই যখন আমাদের স্কুলে এসে ক্লাস নাইনে ভর্তি হলি পরের বছর তোর রোল নম্বর ১ হয়েছিলো। নতুন স্টুডেন্ট এসেই রোল এক করে ফেলেছে পুরো স্কুল ও এলাকায় লোকে তোকে সম্মান আদর দুটোয় করতে লাগলো। স্কুলের মেয়েদের কাছে তুই হয়ে গেলি ক্রাশ। কিন্তু এসব তো সব আমার ছিলো। তুই এসে দখল করে নিয়েছিলি। রাস্তা ঘাটে আমাকে কথা শুনতে হতো তুই আমাকে হারিয়ে দিয়েছিস। বাবা উঠতে বসতে কথা শুনাতো তুই এমন ওমন। তোর সাথে মিশে যেন আমিও ভালো হই। তবে
আমি কি খারাপ ছিলাম?

এসব শুনতে শুনতে মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল আমার। ডিপ্রেশনে পড়ে গেছিলাম। বাধ্য হয়ে তোর সাথে বন্ধুত্ব করতে হলো আমাকে। তোর কাছে ওটা বন্ধুত্ব ছিলো কিন্তু আমার কাছে ওটা ছিলো প্রতিশোধের উপায়। কিন্তু পারি নাই তোর থেকে ভালো রেজাল্ট করতে বোর্ডে। পারিনি প্রতিশোধ নিতে। কারন কি শুনবি?
কারন হলো বিশাখা। হ্যাঁ বিশাখা। নাইনে পড়তো? ধনীর দুলালী। পুরো এলাকার ছেলেদের ক্রাশ। যার ক্রাশ ভালোবাসা ছিলাম আমি। কিন্তু পরিক্ষার আগে জানতে পারলাম ও আমাকে নয় এখন তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। তুই আমার থেকে বিশাখার ভালোবাসাটাও কেড়ে নিলি অনি। আমি পড়তে বসতে পারতাম না। ঘুমাতে, খেতে কিছুই করতে পারতাম না। নেশা করা শুরু করলাম সব ভোলার জন্য। শেষ হয়ে গেলো আমার বড় সাইন্টিস্ট হওয়ার স্বপ্ন। তোর জন্য শেষ হয়ে গেলো। কিছুই পেলাম না আমি।

বিশাখাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে বিয়ে করলাম। সব ছেড়ে আবার বাচতে চাইলাম। কিন্তু ওর মনে তো তুই ছিলি তুই। আমি তো শুধু করুনা আর ওর দয়ায় ছিলাম।
আমাকে ছুঁতে দিত না। দূরে দূরে রাখতো।
আবার শুরু হলো আমার নেশা করা। এবার নতুন ভাবে যুক্ত হলো পর নারীতে আসক্ত। বিশাখার উপর রাগ করে প্রতিদিন অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটাতে লাগলাম।
বিশাখার এসব জানা ছিলো। কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিলো না আমার এসব কাজে। ও ওর মতো চলতো। আমি ওকে জ্বালাতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো অন্য মেয়ের কাছে যাই শুনে হিংসা করে হলেও আমাকে আপন করে নেবে? কিন্তু না ফল উল্টো টাই হলো। তালাক দিতে চাইলো আমাকে। ছেড়ে চলে যেতে চাইলো।

একদিন রাস্তায় তোর হাতে হাত রেখে কাঁদতে দেখি। তুই ওর চোখ মুছিয়ে দিচ্ছিস। পরম ভালোবাসায় কথা বলছিস। আমার বুঝতে বাকি থাকলো না বিশাখা আমাকে কেন ছেড়ে যেতে চাইলো। মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো দেবে থাকা তোর প্রতি ঘৃণা। প্রতিশোধ চরম প্রতিশোধ নিতে চাইলো মনটা আমার।
আমার পর্যায়ে আমি তোকে নামাবো। যেকোনো মূল্যেই হোক তোকে আমি আমার কষ্টের দিনগুলো তোকে উপহার দিবো।

দুই দিন পর বিশাখার সাথে তালাকের কাজ সম্পন্ন করলাম। ৪ মাস অতিবাহিত হলো। সবকিছুই স্বাভাবিক ছিলো সবার কাছে। আমার বাবা মাও অবাক হয় আমার চুপচাপ শান্ত থাকা দেখে। তোদের সাথে আবার আগের মতো মেশা শুরু করলাম। জানতে পারলাম তুই প্রেমে পরেছিস। কঠিন প্রেম। পুরোপুরি বদলে যেতে দেখি তোকে প্রেমে। ঠিক আমার মতো। আমি যেমন বিশাখাকে ভালোবেসে বদলে গিয়েছিলাম সেই রকম।
মাথায় চরম পর্যায়ের প্লান

কাজ করলো। এর চেয়ে মোক্ষম সময় আমি পাবো না আর তোর উপর বদলা নেওয়ার।
তোর প্রেমটাকে গভীর হওয়ার সময় দিলাম।
জানতে পারলাম তোর প্রেমিকা শশী তোকে মোটেও ভাও দেয় না। মনে মনে প্রচন্ড আফসোস হতে লাগলো। আমার বিশাখা কেন এমন হলো না।
বাবা মাকে বললাম বিয়ে করবো আবার। তবে ২ দিনের মধ্যে বিয়েটা করাতে হবে। মেয়েটা গরিব জেনেও বাবা মা রাজি হলো। কারন বাবা মা চাইছিলো বিশাখার থেকে আমাকে আজীবনের জন্য দূর করতে। তাদের ধারনা ছিলো ওর কারনেই ভদ্র ছেলেটা রসাতলে গেছে। তাদের মনে ভয় ছিলো আমি হয়তো আবার বিশাখাকে ফিরিয়ে আনতে পারি।
কিন্তু আমি যে আজীবন বিশাখাতেই ডুবে আছি তা তারা বোঝে নাই।

বিয়ে হলো ইচ্ছা করলে ঐদিন বাসর করে আসতে পারতাম। কিন্তু শশীর প্রতি আমার কোনোরকমের আকর্ষণ ছিলো না। আমার সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু তো বিশাখা ছিলো।
তাই মা অসুস্থ বলে চলে আসলাম বিয়েটা পড়ে।
এদিকে বিশাখাকে তোর সাথে নিয়মিত ঘুরতে দেখতাম। এদানিং তোদের বাড়িতেও যেতে দেখতাম। হয়তো তোরা এক হচ্ছিস। আমাকে ছুঁতে দিলো না অথচ তোকে নিজে থেকেই। ছি!
মনে প্রচন্ড রাগ জন্মালো। এখন তো তোর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার মোক্ষম জিনিসটাও হাতের নাগালে। অনেকটা কালো জাদুর মতো। আমি জানতাম শশী নামক পুতুলটাকে ব্যথা দিলে তোর বুকে সেই ব্যথা লাগবে। তুই আমার বিশাখাকে ছুয়েছিস। আমিও যদি না ছুই তাহলে কি করে হয়।

হুট করে চলে গেলাম ঐ দিন শশীদের বাড়ি। শশীকে কলেজ ড্রেসে দেখে লোভ সামলাতে পারি নাই। যথেষ্ট সুন্দরী। স্বামীর অধিকার খাটালাম। যখনি রাগ উঠতো তোর উপর। এসে শশীর শরীরের উপর সেই রাগ মেটাতাম। পৈশাচিক আনন্দ হতো তাতে। ওর প্রতি আমার মনের টান কোনোদিনই ছিলো না। ওকে বশে রাখতে তোর থেকে দূরে রাখতে ভালোবাসার নাটক করতাম। ভেবেছিলাম এভাবে কিছুদিন করে তালাক দিয়ে দিবো। কিন্তু কি হলো শালী প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলো। জানাজানি হয়ে গেলে তো সমস্যা তাই জোর করে এবোশন করালাম।

মার চাপে পড়ে না চাইতেও উঠিয়ে নিতে হলো। দাদাীকে উসকে দিয়ে ওদের কাছ থেকে যৌতুক দাবী করলাম। কিন্তু ফকিন্নি জাত কিছুই দিতে পারলো না সামান্য টাকা ছাড়া।
আমার বাড়িতে এনে আরো স্বাদ মিটিয়ে শাস্তি দিতাম শশীকে। ওর চোখের পানি আর তোর নেশায় ডুবে থাকার দুটো দেখতেই মনটা খুশিতে নেচে উঠতো।
এর মধ্যে শশী দুবার কন্সিভ করে। ইচ্ছে করে দুটো বাচ্চায় নষ্ট করি আমি। ভেবেছিলাম হয়তো এতো কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আপনা আপনি আত্নহত্যা করবে কিন্তু শালীর কৈ মাছের প্রান। সহজে মরে না।

একদিন বিশাখার বাড়ি গেলাম। কেউ নেই বাড়িতে বিশাখা ছাড়া জেনেই গিয়েছিলাম আমি। জোর করে পেতে ইচ্ছে করছিল সেদিন।
দরজায় টুকা দিতেই খুলে দিলো বিশাখা। চোখে মুখে কেন জানি ওর আনন্দ দেখতে পেলাম। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলাম। ভুল ভাবছি। আনন্দ হবে কেন? ও তো আমাকে ভালেবাসেই না।
ভেতরে আসতে বলবে না বিশাখা?
এসো!

তা হঠাৎ এদিকে। তোমার স্ত্রী যদি শোনে ঝামেলা হবে না?
শুনবে না। আর শুনলেই কি। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না। ভালোবাসো অনি কে।
একদম বাজে কথা বলবে না রিশাদ।
বাজে কথা? তুই অস্বীকার করতে পারবি তুই অনিকেত কে ভালোবাসিস না। তুই অস্বীকার করতে পারবি অনির সাথে তুই রাত কাটাস নাই। কি এমন আমার নাই যা অনির আছে। বল
নেশা করেছ তাই না? তোমার মন টা এতো নোংরা। ছি! এখানেই পার্থক্য তোমার আর অনির মধ্যে। ওর মনটা পাক। তোমার মতো পশু আর খারাপ না ও। তুমি বেড়িয়ে যাও এখান থেকে।

আমি পশু। আমি খারাপ। আর অনি ভালো। অনিকে বিয়ে করে সংসার করবি তাই তো?
দরকার হলে তাই করবো? তোমার মতো লোকের মুখ দেখাও পাপ। তুমি কোনোদিনও ভালো হবে না।
ও আমার মুখ দেখা পাপ? আর অনির মুখ দেখা সওয়াব। এতো কিসের অহংকার তোর? আজ সব অহংকার ভেঙে দেবো।
বিশাখাকে টেনে বিছানায় নিয়ে যায়। পড়নে থাকা কামিজ সালোয়ার টেনে ছিড়ে ফেলি। বিশাখা চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। মুখ চেপে ধরি। প্রতিশোধের নেশায় এতোটায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে এইটুকু খেয়াল করি নাই ওর হাত মুখ সহ বিশাখার নিঃশ্বাস ও চেপে ধরেছি আমি। বিশাখার শরীরের উপর তখন নিজের পশুত্বের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত আমি।

রাগটা যখন মাথা থেকে নামে। আমি বুঝতে পারি কতোবড় সর্বনাশ করে ফেলেছি। বিশাখার নিথর প্রানহীন দেহ পড়ে আছে। উন্মাদ হয়ে যায় আমি। উদভ্রান্ত হয়ে বারে চলে যায়। যতক্ষণ মাথা থেকে ঐ দৃশ্য না যাচ্ছিলো অনবরত মদ পান করতে থাকি। একসময় ভুলে যায়। বাড়িতে এসে শশীর মুখে বিশাখার নাম শুনে আবার মনে পড়ে। আক্রোশ পুরোটা শশীর উপর চালিয়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় শশী।

আর আমি ৬ মাস রিহাব সেন্টারো কাটিয়েছি। বিশাখার নিথর দেহের ছবি বুকে নিয়ে। তোর কারনে এই হাতে শেষ করেছি আমি আমার বিশাখাকে। তোর কারনে আজ এতোগুলো জীবন নষ্ট হয়েছে। শশীর কষ্টের কারন তুই অনি তুই।
উপস্থিত সবাই রিশাদের কথা শুনে থ হয়ে দাড়িয়ে থাকে। ওসি জীবনে বহু আসামিদের অপরাধের কাহিনি শুনেছে কিন্তু এর মতো এতো পৈশাচিক কাহিনি হয়তো শোনা হয়নি।
অনিকেতের রূহ আৎকে ওঠে। এ কাকে দেখছে অনিকেত। কি শুনছে। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।
নিঃশব্দে দেয়ালের সাথে মিশে দাড়ায়। শরীরে একরত্তি শক্তি অনুভব করছে না। দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।

পর্ব ২৭ (অন্তিম)

তোর দুনিয়ায় কেয়ামত শুরু হয়েছে তাই না অনি? আমারও বহুদিন আগে এমন হয়েছিলো। যখন বিশাখা আমাকে ছেড়ে তোকে ভালোবেসেছিলো।
আমি তোকে ধ্বংস করে দেবো অনি। তুই আমার কাছ থেকে আমার ভালোবাসাকে দূর করেছিস। এই হাতে আমি আমার ভালোবাসাকে খুন করেছি এই হাতে। শুধুমাত্র তোর জন্য। চিৎকার করে রিশাদ। সেই চিৎকার পুরো রমনা থানা কেঁপে ওঠে।

তুই একটা সাইকো। হ্যাঁ তুই একটা সাইকো। তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে হিংসার আগুনে জ্বলে। বধ্য উন্মাদে পরিনত হয়েছিস তুই রিশাদ। অনিকেত রিশাদকে অনবরত থাপ্পড় দিতে থাকে।
মার আরো মার। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে তোর এই কষ্ট আমাকে খুব আনন্দ দিচ্ছে। মার না আরো মার আরো। হাহাহাহা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
অনি নিচে বসে পড়ে হাটু মুড়ে।

জানিস অনি শশীর বাচ্চা নষ্ট করে যখন শশীর মুখটা কষ্টে নীল দেখতাম। সন্তানহারানোর সে কি বেদনা ওর চোখে মুখে। আমার কেন যেন একটু খারাপ লাগত পরে আনন্দ হতো। তোর শশী কাঁদছে হ্যাঁ আমি প্রতিনিয়ত ওকে কাদাতে পারছি এতেই আমার জিত। আমার কাছ থেকে স্বামীর আদর অধিকার পাওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকতো আর আমি ওকে চাতক পাখির মতো ভালোবাসার পিপাসায় কাতরিয়ে মারতাম।

আমি শশীকে মেরে ফেলবো তোর অনাগত সন্তান সহ। তোকে আমি আমার পর্যায়ে নামাব বুঝলি অনি। আমার মতো উন্মাদ হবি তুই। হাহাহাহা
একদম চুপ! আরেক বার আমার শশী আর বাচ্চার নাম নিলে এক্ষুনি তোর জিব টেনে ছিঁড়ে ফেলবো। তুই একটা বদ্ধ উন্মাদ। তোর স্থান পাগলা গারদ।
কি বলছিলি তুই বিশাখা আমাকে ভালোবাসতো তাই তোকে ছেড়ে দিয়েছে।
আরে তুই তো হিংসার আগুনে অন্ধ হয়ে গেছিস। তুই কারো ভালোবাসা কি করে দেখবি?

বিশাখা আমাকে নয় তোকে ভালোবাসতো তোকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওর ভালোবাসা তুই ছিলি। ও আমার কাছে আসতো তোকে এই নেশা থেকে মুক্ত করার জন্য। আমাকে অনুরোধ করতো। ওর মা ওকে জোর করে তোর থেকে আলাদা করতে চেয়েছিলো। তোর বাবা মা ওকে উঠতে বসতে কথা শুনাতো। বেচারি কি দিন দেখেছে আমি জানি।
আমাকে বলতো অনি ভাই আপনি একটু বুঝান ও যেন আবার আগের মতো হয়ে যায়। এখন তো মেয়েদের সাথেও রাত কাটানো শুরু করেছে রিশাদ। আমি আর পারছি না অনি ভাই।
তোকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওর বাবা মা জোর করে তোর থেকে তালাক নেওয়ায়। একটিবার যদি ভালোবেসে ওর চোখের দিকে তাকাতি ওর চাপা কষ্ট আর্তনাদ বুঝতে পারতি। আমি কতোবার তোকে বলতে চেয়েছি? কিন্ত বিশাখা বড্ড অভিমানি মেয়ে বার বার তোর কসম দিয়ে নিষেধ করে।

। বলে আমি চাই সে আমাকে বুঝুক। আপনার কথায় করুনা না করে সত্যিকারে ভালোবাসুক রিশু আমায়। বিশ্বাস করুক আমাকে। যেদিন স্বেচ্ছায় আমাকে বিশ্বাস করে বুকে টেনে নেবে সেদিনই ওর বুকে যাবো আমি। কিন্তু ঐ দিন কবে আসবে আমি জানি না অনি ভাই। এখন খুব কষ্ট হয় আমার মনে হয় গিয়ে দুচারটা চর বসিয়ে দিয়ে আসি। আর বলি এমন কেন তুমি? এতো নিষ্ঠুর কেন? বোঝো না তোমার মাতাল হওয়া অন্য মেয়ের কাছে যাওয়া আমাকে একটু একটু করে মেরে ফেলছে। বড্ড ভালোবাসি তোমাকে রিশু বড্ড। তোমার নির্জীবতা কতো কষ্ট দেয় তুমি বোঝো না আমাকে।
সেই বিশাখাকে তুই। ছি! রিশাদ। ছি! তুই মানুষ না। আর কিছু বলতে পারে না অনিকেত। একদিনে এতো কষ্ট সহ্য হচ্ছে না। বিশাখাকে আপন ছোটবোনের মতো ভাবতো। রিশাদের সাথে সম্পর্কের উন্নতির জন্য কতো কথা হতো। হাত ধরে কতো কেঁদেছে মেয়েটা। এতো নিষ্ঠুর কেন প্রকৃতি বিশাখা মেয়েটাকে একটু সুখও দিতে পারলো না। যেই ভালোবাসার হাতে হাত রেখে সুখের স্বপ্ন বুনেছে সেই হাতেই নির্মম অপমৃত্যু হলো ওর। হায়রে নিয়তি। বড় নিষ্ঠুর তোমার বিধান। হয়তো কারো কারো নিয়তি এমন। সারাজীবন কষ্ট পাওয়া। মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সেই কষ্টের অবসান হয়। যেমন বিশাখার হলো। খুব জানতে ইচ্ছে হয়। বিশাখা তুই কি এখনো সুখে আছিস পরপারে? নাকি এখনো এই জানোয়ারটার জন্য তোর মন পোড়ে। গলাটা ধরে আসে। দুচোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।
তুই মিথ্যে বলছিস। নিজের দোষ ঢাকার জন্য এখন মিথ্যে বলছিস তুই। বিশাখা আমাকে কোনোদিনও ভালোবাসে নাই। ও শুধু তোকে ভালোবেসেছে তোকে। হ্যাঁ হ্যাঁ তোকে।
আমাকে শুধু করুনা করতো।

মিথ্যে আমি বলি না সেটা সবার থেকে তুই ভালো জানিস রিশাদ। বিশাখা আমার বোনের মতো ছিলো। ঐ মেয়েটা তোর জন্য কি পরিমান কষ্ট সয়েছে আমি জানি। তোর বাবা মার মিথ্যে বঞ্চনা লাঞ্ছনা অপবাদ সব নিরবে সয়ে গেছে। তোকে করুনা করার জন্য না তোকে ভালেবাসে তাই।
আমি বিশ্বাস করি না। তুই আবার আমাকে হারাতে চাচ্ছিস তাই না অনিকেত? আমি জানি এটাই চাচ্ছিস। কিন্তু পারবি না তুই হারাতে পারবি না।
তোকে কি হারাবো আমি? তুই নিজেই তো নিজের চোখে হেরে গেছিস। বিশাখাকে নিজে হাতে খুন করে তুই তোর ভালোবাসাকে খুন করেছিস। হেরে গেছিস তুই রিশাদ হেরে গেছিস। নিজের কাছেই নিজে হেরে গেছিস।

রিশাদ শোকে পাথর হয়ে যায়। বিশাখাকে নিয়ে এতো ভুল ধারনা জন্ম নিয়েছিলো ওর মনে। অথচ বিশাখা ওর জন্যই দিন গুনতো একথা শুনার আগে রিশাদ মরে গেলো না কেন। হিংসা প্রতিশোধ রিশাদের ভেতরকার মানুষটাকে মেরে ফেলেছে। পশু বানিয়ে তুলেছিলো। ন্যায় অন্যায় বিচার করার জ্ঞান লোপ পেয়েছিলো ভেতর থেকে। আজ বড় আফসোস হচ্ছে যদি হিংসা না করতো। যদি মেনে নিতো সব সহজ ভাবে। তাহলে জীবনের এমন নিষ্ঠুর সময়ে রিশাদ কে দাড়াতে হতো না। সম্পর্কে সন্দেহ জিনিসটা খুব খারাপ। ভালোবাসায় ভুল বুঝাবুঝিতে আজ বিশাখা বহুদূর। রিশাদ স্থির দৃষ্টি তে এগিয়ে দাড়ায় সামনে।
তারপর পিছন ফিরে তাকায়। দুচোখ অনুশোচনার জল।

অনিকেত! আমি জানি আমি যা করেছি ক্ষমার যোগ্য না তবুও তোরা পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। শশীকে বলিস এই নরপিশাচটাকে যদি পারে ক্ষমা করে দেয়।
হঠাৎ কোনোকিছু বোঝার আগেই নিচে পড়ে থাকা পিস্তল টা উঠিয়ে নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে পরপর দুটো গুলি করে রিশাদ।
অনি দৌড়ে যায়। একি করলি রিশাদ।

আমার কপালটায় খারাপ রে অনি! আমি সুখ ধরতে গিয়ে প্রতিশোধের নেশায় সুখের প্রকৃত রাস্তায় ভুলে গেছি। আমি তো ধ্বংস হলাম আজ। না পেলাম ইহকাল না পেলাম পরকাল। এমন কেন হলো রে অনি! দুচোখে জল ছেড়ে বিদায় নিলো রিশাদ।
রিশাদের শেষ কথা উপস্থিত সবার মনকে নাড়া দিলো। আচ্ছা এমন কেন জীবন। কেন নিজের ইচ্ছে মতো সব পাওয়া যায় না। কেন হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে যায়। কেন আশেপাশের মানুষগুলো নিয়ে সুখি হওয়া যায় না। কেন একসময় বাঁচার শেষ অবলম্বন টুকুও খুজে পাওয়া যায় না হাতের নাগালে। তখন মনে হয় মৃত্যুই যেন মুক্তির একমাত্র উপায়। আর কিছুই থাকে না অবশিষ্ট।
কি নির্মম মৃত্যু রিশাদের।

লাশটা অনিকেত নিজে গ্রহণ করে। বেস্টফ্রেন্ড ছিলো রিশাদ ওর। অনিকেত নিজেকে সব কিছুর জন্য দায়ী ভাবে। সবার জীবনের ট্রাজেডির জন্য নিজেকে দোষারোপ করে মনে মনে। ওর উপর প্রতিশোধের জন্যই শশীকে এতো কষ্ট করতে হলো বিশাখার অকাল মৃত্যু হলে। রিশাদের জীবনটা এতো ভয়ানক দুর্বিষহ হলো। চলে গেলো নিজের জীবন ধ্বংস করে।
লাশ দাফন করে রাত ১ টার দিকে বাড়ি ফিরলো। ততক্ষণে বাড়ির সবাই সব কিছু জেনে গিয়েছে। রিশাদ কারো সাথে কোনো কথা না বলে চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। রিশাদের আফসোস ভরা মৃত মুখখানা যেন ওকে বলছে তুই আমার খুনি, তুই আমার অনুভুতি গুলোর খুনি।
শশী ওয়াশরুমে ঢুকে কান্নায় ভেঙে পরা রিশাদকে বুকে টেনে নেয়।

শশী আমি অপরাধী শশী। আমাকে পুলিশে দাও শশী। আমি তোমাদের জীবন নষ্ট করে দিয়েছি শশী। আমি রিশাদের জীবন শেষ করে দিয়েছি। আমি খুনি শশী। আমি খুনি।
শশী অনিকেতের মাথা মুছিয়ে কাপড় বদলে বিছানায় বসিয়ে নিজেও পাশে বসে রিশাদের মুখটা নিজের দুহাতে নেয়।
কে বলেছে তুমি খুনি। তুমি কারো জীবন নষ্ট করো নি। তুমি তো জানতেই না রিশাদ মনে মনে এতো কপটতা ধারন করেছে। ওর মুনাফেকি চরিত্রই ওর পরিনতির জন্য দায়ী। কেউ কারো ক্ষতি করতে চাইলে তারই এমন নির্মম পরিনতি হয় এবং ভবিষ্যতও হবে এটাই সৃষ্টিকর্তা আমাদের বুঝিয়ে দেয়।
রিশাদের পরিনতির জন্য রিশাদই দায়ী। তুমি নও। তুমি তো ভালো মানুষ। যে কোনো কাজে কখনো মিথ্যাচার করে নাই। বন্ধুকে এতো বিশ্বাস করেছ। ধোঁকা তো তুমি খেয়েছ। আল্লাহ তোমাকে আমাকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দিয়েছে আর রিশাদকে দিয়েছে ওর কর্মের শাস্তি। তুমি মোটেও অনুশোচনায় ভুগবে না। আমার অনি বেস্ট। সবচেয়ে ভালো স্বামী, ভালো মানুষ।
অনির চোখের জল নিজের ঠোঁট দিয়ে মুছিয়ে দেয়।

আমার জন্যই তো তোমাকে এতো কষ্ট দেখতে হলো জীবনে। আমাকে ছুয়ো না তুমি। আমি পাপী। তুমি আমাকে মেরে ফেলো। প্রচন্ড রকম ভেঙে পড়ে অনিকেত।
চুপ! একদম চুপ! অনিকেতের মাথাটা বুকে মাঝে টেনে নেয়। এভাবে কেন বলছ অনি। তুমি নিজেও জানো তুমি কিছুই করো নাই। সব দোষ রিশাদের আর তাছাড়া ভাগ্যের উপর কারো হাত নাই। আমার ভাগ্যে ছিলো তাই এমন হয়েছে। তোমার ভালোবাসায় সব ভুলে গেছি সব। এখন আমার মাঝে শুধু তোমার ভালোবাসা আর তোমার অস্তিত্ব বিরাজ করে।
অনিকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেয় শশী। নিজের ভালোবাসার স্পর্শে অনির সব কষ্ট মুছে দেয়,

এভাবেই সুখে শান্তিতে সংসার জীবন কাটতে থাকে অনিকেত শশীর। ভালোবাসা আর মাঝে মাঝে প্রেমময় খুনসুটিতে কেটে যায় দিনগুলো।
একে অপরের ভালোবাসা দিয়ে তারা তাদের কষ্টের অতীত ভুলতে চায়। একসময় কষ্টের অতীত ধূসর হয়ে যায় বর্তমানের সুখের কাছে।
ফারিহা রাতুল ও রিমি শোভনের ধুমধাম করে বিয়ে হয়।
১০ মাস পর আজ অনিকেত সহ চৌধুরী বাড়ির সবাই হাসপাতালে অটির সামনে দাড়িয়ে আছে।
অস্থির ভাবে পায়চারী করছে অনিকেত অটির বাইরে।
অটির লাল আলো নিভে যেতেই থমকে দাড়ায় অনি। সুখবর আজিম! সুখবর।
টুইন নাতি নাতনি হয়েছে তোর
আজিম চৌধুরী সহ বাড়ির সবাই খুশিতে নাচতে থাকে একপ্রকার। অনিকেত ডাক্তার আংকেল কে গিয়ে প্রশ্ন করে।

আমার শশী কেমন আছে?
একটু উইকনেস আছে। স্যালাইন চলছে। আদার ওয়াইস ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ। এক ঘন্টা পর মা ও শিশুদের বেডে দেওয়া হবে।
শশী ও বাচ্চাদের বেডে দেওয়া হয়েছে।
অনিকেত সহ সবাই গিয়ে বাচ্চাদের দেখে শশী নিজ হাতে অনিকেতের কোলে বাচ্চাদের তুলে দেয়। অনিকেত শশী খুশিতে কান্না করে দেয়। নিজের অংশ নিজের সন্তান আজ তাদের কোলে। কতো কাঙ্ক্ষিত ছিলো বাচ্চাগুলো তাদের কাছে।
আজিম চৌধুরী নাতি নাতনীকে বাড়িতে নিয়ে বিরাট আয়োজন করে আকিকা করান। নাম রাখেন। অনিকেত শশীর ছেলের নাম রাখা হয়
সাদাফ খান শামস আর মেয়ের নাম রাখা হয় অন্বেষা বিনতে অনিকেত।
শশী!
হুম।

শামস আর অনুকে ভাবছি কিছু উপহার দিবো?
তাই নাকি? তা কি উপহার দেবে শামসের বাবাজান।
শামস আর অনুর আরো ৩ টা ভাইবোন উপহার দিলে কেমন হয়? শশীকে জরিয়ে ধরে।
মোটেও ভালো হয় না। দেশের জনসংখ্যা বাড়ানোর প্লান তাই না। আমি একজন সচেতন নাগরিক হয়ে তোমার কথায় সম্মতি দিতে পারলাম না বুঝলে মি. অনিকেত
দুটি সন্তানের বেশি না। শশী অনির নাক টেনে হেসে বলে।
৫ টি হলে মন্দ না। অনিকেত শশীকে জাপটে নিজের কাছে টেনে বলে।
তারপর। তারপরেতে অনিকেত শশী সুখে শান্তিতে ভালোবেসে বসবাস করতে লাগলো।
আর আমার গল্পও শেষ হয়ে গেলো,

লেখা – তানিশ তানি

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “জীবনসঙ্গী – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা বাংলা”গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – জীবনসঙ্গী (১ম খণ্ড) – ভালবাসার রোমান্টিক কথা বাংলা

2 thoughts on “জীবনসঙ্গী (শেষ খণ্ড) – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা বাংলা”

  1. শেষ টা আরো ভালো লাগলো, আপনার গল্প গলু অনেক ভালো লাগলো, ধন্যবাদ এমন গল্প অপহার দেওয়ার জন্য👌👌👌👌👌👌🌹🌹🌹🌹♥️♥️♥️♥️♥️

  2. সত্যিই অনেক সুন্দর।খুব খুব ভালো। আমার মানুষটা যদি এভাবেও ফিরে আসে তবুও আমি মেনে নিতাম কিন্তু সবার ভাগ্যে তো অনির মতো না।তাই ফিরে আসাটাও possible na.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *