আয়না সুন্দরী – Bangla choto new golpo

আয়না সুন্দরী – Bangla choto new golpo: রিদ জানালার দিকে তার দৃষ্টি ঠিক রেখেছে। তার চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারন করেছে। তার সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিতে ইচ্ছে করছে। অবন্তীর বাবা মারা না গেলে আজ তার এমন কাথায় তাকে কাঠোর শাস্তি ভোগ করতে হতো।


পর্ব ১

তুমি চাঁদের জোছনা নও,
ফুলের উপমা নও,
নও কোনো পাহারি ঝরনা।
আয়না….
তুমি হ্রদয়ের আয়না।
তুমি সাগর নীলিমা নও,
তুমি মেঘের বরষা নও,
তুমি সাগর নীলিমা নও মেঘের বরষা নও,
তুমি শুধু আমারই গয়না
আয়না…
আমি হ্রদয়েরই আয়না……..

আরশি গান শুনে ধীরে ধীরে আগাচ্ছে সব রুম চেক করেছে বুঝে ওঠতে পারছেনা গানটা কোথা থেকে আসছে। হঠাৎ সিড়ির কাছে আসতেই বুঝতে পারলো ছাদ থেকে গানের আওয়াজ ভেসে আসছে, দেরী না করে ছুটে সাদে গেলো এদিক ওদিক তাকাতেই দেখতে পেলো অবন্তী বসে আছে পাশেই ছোটো সাউন্ড বক্স রাখা গানের আওয়াজ পাচ্ছেনা এখন আর শুধু ফুপিয়ে কেঁদে ওঠছে অবন্তী সেটা বুঝতে পারলো।

আরশি অবন্তীর কাঁধে হাত দিতেই কেঁপে ওঠলো তাকিয়ে দেখে আরশি, ওকে দেখেই চোখের পানি মুছে বললো কেমন আছিস?

কেমন আর থাকি বল আমার বোনটা এতো কষ্টের মাঝে আছে তার এই কষ্ট দেখে কি আর ভালো থাকা যায়…
বাকা হেসে অবন্তী বললো থাকা যায় না? কে বললো থাকা যায় না, আমার মা যদি পারে আমার বাবা যদি পারে, আমার ভাই যদি পারে তুই কেনো পারবিনা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো..

আরশি কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছেনা,

চল নিচে যাই অনেক ক্লান্ত আমি ছোটো মামিকে দেখলামনা, মামাতো কলেজে, (অবন্তীর বাবা একজন বাংলা প্রফেসর) তোর গুনোধর ভাই আমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে কিসের কাজ আছে বলে চলে গেলো, ফ্রেশ হবো চল নিচে যাই।

হুম তুই যা আসছি আমি।
ওকে আপুনি।

আরশি ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খেয়ে নিল তারপর অবন্তীর ভাইয়ের রুম ঘুরাঘুরি করলো কিছুক্ষন আর একটা বছর অনার্সটা কমপ্লিট হলেই আরিয়ান ( অবন্তীর ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে) পারিবারিক ভাবেই অনেক আগেই তাদের বিয়ে ঠিক করে রাখা আছে তাই কখনো অন্য কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেনি আরিয়ানকে নিয়েই তার সব স্বপ্ন, আরিয়ানও তাকে পছন্দ করে তবে ভালোবাসে কিনা সেটা আরশি এখনো বুঝে ওঠেনি চাপা স্বভাবের মানুষ নিয়ে যা সমস্যা হয় আর কি।

আরশি আরিয়ানের রুম থেকে অবন্তীর রুমে গিয়ে দেখে অবন্তী শুয়ে আছে একমনে কি যেনো ভেবে যাচ্ছে চোখের জলে চিক চিক করছে চোখ দুটো। এই মেয়ের এতো চোখে পানি কোথায় থেকে আসে কে জানে বলে ওর পাশে গিয়ে বসলো।

অন্তী( অবন্তীকে বাড়ির সবাই অন্তী বলেই ডাকে) আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসা হয়েছে জানিস?
আস্তে করে বললো নাহ, কেনো?

তোর এই অবস্থায় আরিয়ান, মামা মামি সবাই কষ্ট পাচ্ছে তাই আমাকে এনেছে হ্যা আসতাম আমি তবে এখনি না। কিন্তু দিন দিন তোর এই অবস্থা দেখে ওরা ভয় পেয়ে যাচ্ছে ঠিকভাবে খাওয়াদাওয়া করছিসনা, ঘুমাচ্ছিসনা, চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে, যে আরিয়ান আমার সাথে প্রয়োজন ছারা কথা বলেনা সে তোকে নিয়ে এতোটাই চিন্তিত যে আমাকে দিনে দশ থেকে বারো বার ফোন দিত এখানে আসার জন্য রিকোয়েস্ট করতো আমি এক্সামের জন্য আসতে পারছিলামনা। আর আজ আসবো শুনে আরিয়ান নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছে।

অন্তী জীবনে অনেক ঝর আসবে সেগুলে সামলে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। অতীত কে বর্তমানে রেখে কষ্ট যন্ত্রনা ছাড়া কিছু পাবিনা বোন আমার এইভাবে ভেঙে মা পড়ে শক্ত হয়ে ওঠতে হবে জীবন কে নতুন করে সাজাতে হবে। যে তোকে ছেড়ে চলে গেছে, তোকে ঠকিয়েছে তার জন্য নিজেকে এইভাবে কেনো কষ্ট দিচ্ছিস প্লিজ মামা মামীর পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে নিজের জীবনটা নতুন ভাবে সাজিয়ে নে প্লিজ অন্তী কেউ ভালো নেই সবাই তোর হাসি মুখ দেখতে চায় সবাই চায় তুই সুখী হোশ।

আপু তুই ভাইয়ার কাছে শুনে এসব বলছিসতো তুই সবটা জানিসনা আপু..বলে কাঁদতে শুরু করলো অবন্তী। আরশি মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো অন্তী সবটা খুলে বলতো কি হয়েছে –

কান্না জরিত কন্ঠে অবন্তী বললো -আপু ও আমায় ঠকিয়েছে কিনা জানিনা তবে আমার বিশ্বাস ও আমায় ঠকায়নি। ও আমাকে ঠকাতে পারেনা আপু। কিছুতো একটা হয়েছে আপু ওর ফোন অফ, ফেসবুকে আসেনা কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছিনা ওর কিছু একটা হয়েছে। সাতদিনের সময় নিয়ে আজ সাতটা মাস ধরে সে নিখোঁজ হয়ে আছে।

মানে…(আরশি)
হুম আপু সেদিন ওর মা আমেরিকা থেকে ফেরার কথা তাকে আনতেই এয়ারপোর্টে গিয়েছিল আর বলে গেছিলো সাতদিন পর আমাদের বাড়ি আসবে ওর মাকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতে। এইসাতদিনে বাড়িটা গুছিয়ে নিবে এতোদিনতো ও ছাড়া কেউ ছিলনা তাই সেইভাবে গুছানো নেই। কিন্তু সেই যে গেলো তারপর থেকে আর যোগাযোগ নেই। আমি একমাস ওয়েট করে আর থাকতে না পেরে ওর বাড়ি যাই ওর মা আমার সাথে কথা বললেন না। ওর ব্যাপারেও কিছু বললেন না বুঝতে পারলাম ওনি আমাকে এভোয়েট করতে চাচ্ছেন। বাড়ির আগের কাজের লোকদের কাউকে দেখতে পায়নি ফিরে আসলাম হতাশা নিয়ে। ওর সব ফ্রেন্ড ওদের কেউই জানেনা ও কেথায়। ও আমাকে ঠকালে এমন নিখোঁজ কেনো হবে আপু বলতে পারিস?

অন্তী ও আমেরিকাতে চলে যায়নি তো?
না আপু এটা কি করে হয়।
হতেও পারে।

না আপু আমি ওকে বিশ্বাস করি ও আমাকে না জানিয়ে চলে যেতে পারেনা আপু আমার বিশ্বাস ও ফিরে আসবে কিন্তু বাবা, মা, ভাইয়া কেউ আমাকে ওর ফেরার অপেক্ষা করতে দিচ্ছেনা আপু আমি বিয়ে করতে পারবোনা ওকে ছাড়া কাউকে মেনে নিতে পারবোনা আমি, মরে যাবো আপু বলে ডুকরে কেঁদে ওঠলো অবন্তী।

আরশি ওকে শান্ত করার চেষ্টা করলো পারলোনা তারপর বললো অন্তী তুই পাগলামি করিসনা বাস্তবতা মেনে নে ওই ছেলে তোকে ভালবাসলে এতোদিন নিখোঁজ হয়ে থাকতোনা। আর এতোদিন তোর খোঁজ না রেখেও থাকতে পারতোনা তুই হয়তো ওকে চিন্তে পারিসনিরে।

না আপু আমি ওকে যতটা ভালবাসি তার থেকেও হাজারগুন বেশী ভালোবাসে ও আমায়।
আপু তোর মনে আছে আয়না সুন্দরীর কথা।
ওমা মনে থাকবে না আপনাকে ভার্সিটির প্রথম দিন এই উপমা দিয়েছিলো এক ছেলে সেই নিয়ে কত রাগ আপনার।
হুম আপু ওইদিনটা আমার জিবনে এইভাবে আটকে যাবে কখনো ভাবিনি।
মানে কেনো?

সেদিন ছিলো আমার ভার্সিটির প্রথম দিন, সাজের ব্যাপারে বরাবরই আমি খুব পরিপাটি থাকতে পছন্দ করতাম। আর স্কুল লাইফ থেকেই আমার ব্যাগে থাকতো ছোটো আয়না। সেদিন রেডি হয়ে তাড়াহুড়ায় আয়না ওঠাতে ভুলে গেছিলাম রিকশায় ওঠে মনে পড়ে যে আয়না ওঠাইনি কি আর করার ওইভাবেই গেলাম রিকশা থেকে নেমে রাস্তা পাড় হলাম।

ভার্সিটির গেইটের একটু দূরে একটা সাদা প্রাইভেট কার দাঁড়ানো ছিল আমি সোজা গিয়ে গাড়ির আয়নায় নিজেকে দেখে নিলাম চুলটা ঠিক করে ভার্সিটির ভিতরে চলে গেলাম প্রথম দিন তাই বেশী ক্লাশ ছিলনা দীনা, রাতুল ছাড়া আর কোন পরিচিত বন্ধু ছিলনা। ওদের সাথেই বেরিয়ে আসলাম ওরা চলে গেলো আমিও রিকশা নেওয়ার জন্য রিকশার কাছে যাব এমন সময় কেউ হাত টেনে ধরলো আর বললো কেথায় যাচ্ছো আয়না সুন্দরী? আমি পিছনে তাকিয়ে অবাকের চরম পর্যায়ে………


পর্ব ২

পিছনে তাকিয়ে দেখি একজন সুপুরুষ লম্বা, ফরসা, গাল ভর্তি দাড়ি, চাপ দাড়ি দেখতে বেশ তাকে অপছন্দ করার জো নেই কিন্তু আমার তখন রাগ চরম পর্যায়ে সে আমার হাত ধরে বাকা হাসি দিচ্ছে রাগে আমার মাথা গরম হয়ে গেলো – হেই ইউ সাহস তো কম না মেয়ে দেখলেই হাত ধরতে ইচ্ছে করে বলেই এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলাম।

অসভ্য লোক ইভটিজিং কেসে ফাসিয়ে দিব ব্যাটা তারপর দেখবো সাহস কই যায়। আরে অদ্ভুত তো এমন ক্যাবলার মতো হা করে দেখছেন কি হ্যালো…. হাত নাড়িয়ে চেচামেচি করতেই লোকটার হুশ ফিরলো। আমার রাগান্বিত চোখ দেখে বললো সরি সরি। আমি আর কোনো কথা না বলে হাঁটা শুরু করলাম লেকটাও পিছু পিছু হাটতে লাগলো আর বললো আরে আয়না সুন্দরী এতো রেগে যাচ্ছো কেনো… আমি আবার দাঁড়ালাম রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম কি ফাজলামো করছেন কে আপনি আর এসব কি অদ্ভুত নামে ডাকছেন?

আমি রাফসান চৌধুরী আমাকে তুমি রিদ বলতে পারো…
দেখুন আপনাকে কোনো নামে ডাকার ইচ্ছে আমার নেই।
হুম সে তোমার নাই থাকতে পারে বাট আমারতো আছে আয়না সুন্দরী… বলে বাকা হাসলো।

কিসের আয়না সুন্দরী কি সব বাজে বকছেন এইসব ফালতু নাম আমার না।
তো নামটা কি সুন্দরী সেটা বলোতো এতো রেগে না গিয়ে নামটা বলো।

কেনো আপনাকে নাম বলবো কেনো আপনার মতো অসভ্য লোককে নাম বলতে আমার বয়ে গেছে বলে সমনে এগোতেই একটা রিকশা পেয়ে গেলাম ওনাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে আসলাম। ওনি যে আমার পিছু নিয়ে বাড়ির সামনে এসেছিল সেটা আমি সেদিন খেয়াল করিনি। তারপর ফ্রেশ হয়ে তোকে ফোন দিয়ে জানিয়ে ছিলাম মনে আছে।
হুম।
তারপর কি হলো পুরোটা বলতো।
হুম –

তারপরের দিন রেডি হয়ে বের হলাম দশটায় বাড়ি থেকে দুমিনিট হেঁটে যাওয়ার পর রিকশা নেই কিন্তু সেদিন বাড়ির সামনে যেতেই দেখি একটা রিকশা এসে বলছে আপামনি চলুন। আমি অবাক হলাম আমি কোথায় যাব আপনি জানেন?

কেন আপা কাল যে গেলেন ওইখানেই তো পড়েন আপনি আমি প্রতিদিন এই জায়গা থেকে দুজন নিয়ে যাই আজকে দেরীতে আইছি বলে ওনাদের পাইনাই, আপনি যাইবেনতো চলুন তাহইলে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে ওঠে পড়লাম। ভার্সিটির সামনে গিয়ে পৌছালাম ভাড়া মিটিয়ে রাস্তা পার হলাম সেই একি জায়গায় আজো গাড়িটা আছে। আজকে ব্যাগে আয়না থাকা সত্ত্বেও আমি নিজের অজান্তেই গাড়ির আয়নায় নিজেকে দেখলাম চুলটা ঠিক করলাম রিকশাতে অনেক বাতাস লাগাতে চুল গুলো একটু অগুছালো হয়ে ছিলো ঠিক করে নিয়ে যেই এসে পড়বো ওমনি গাড়ির ভিতর থেকে আওয়াজ এলো – কি.. আয়না সুন্দরী কেমন আছো বলেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। লজ্জায় আমার জান যায় যায় অবস্থা ছিঃ ছিঃ অন্তী তুই শেষ।

এই জন্যেই লোকটা কাল থেকে এই নামে ডাকছে এখন আমি কি করি কীভাবে পালাই। কি অসভ্য লোক কেমন করে তাকিয়ে হাসছে দেখো ওনার গাড়িতে মুখ দেখেছি বলে এমন হেয়ালি করার কি আছে বিরবির করতে করতে কাচুমাচু হয়ে পাশ কাটিয়ে এসে পড়ব ওমনি আমার হাতে ধরে টেনে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভ করা শুরু করলো আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব ঘটে গেলো আর হুশ ফিরলো ওমনি আমি চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

যখন জ্ঞান ফিরলো নিজেকে আবিষ্কার করলাম মস্ত বড় একটা বাড়িতে। ধরপরিয়ে ওঠে বসলাম সাথে সাথে আবার ডাক শুনলাম আয়না সুন্দরী সামনে তাকাতেই দেখি এক গ্লাস জুস নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওই অসভ্য লোকটা। রাগে আমি কেঁদে ফেললাম। আমার কান্না দেখে সে জুসটা রেখে আমার কাছে বসে বললো এই পাগলি কাঁদছো কেনো?
আমি আরো জোরে কান্না শুরু করলাম আর মনে মনে ভাবছি লোকটার মাথায় কি গন্ডগোল নাকি কোনো বাজে মতলব আছে কিছু বুঝে ওঠতে পারছিলামনা। তাই ওনার থেকে সরে বসলাম।

তারপর তুতলাতে তুতলাতে বললাম আপনি কেনো আমাকে কিডনাপ করেছেন বলে আবার কাঁদতে লাগলাম। লোকটা এবার জোরে হো হো করে হেসে দিল। আমি আরো ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলাম। আমার ভয়ার্ত মুখ দেখে লোকটা হাসি থামিয়ে বললো – ভয় পেওনা আমি বাজে বা খারাপ লোক নই এই জুসটা খেয়ে নাও তারপর সব বলছি। তুমি যে এতো ভিতু আজ কিডনাপ না করলেতো জানতেই পারতামনা একদম জ্ঞান হারিয়ে ফেললে।

তারাতারি এটা খেয়ে নাও বলে জুসটা এগিয়ে দিল। কিন্তু আমি বললাম না খাবোনা এটাতে কি মিশিয়েছেন আমার এমন প্রশ্নে ওনি ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন মনে হয়। আমি ওঠে দাড়ালাম আর দরজার দিকে ছুটতে নিব এমন সময়ই ওনি আমার হাত শক্ত করে ধরে বললেন দেখো তুমি চুপচাপ আমার কথা গুলো শুনো তোমার কোনো ক্ষতি হবেনা আমি নিজে তোমাকে বাড়ি পৌছে দেব।

আর আমাকে কথা বলার সুজোগ না দিলে কি করবো এই একা ঘরে বুঝতেই তো পারছো। ওনার কথা শুনে ঢোক গিললাম ওনি হাত ছেড়ে দিল। আর বসতে বললো আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বসে পড়লাম। আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে লাগলাম।
জুসটা খেয়ে নাও। আমি কাপা কাপা গলায় বললাম না খাবনা।
ওকে খেতে হবেনা।
এটা আমারই বাড়ি ভয় পাওয়ার কিছু নেই বাড়িতে আরো মানুষ আছে।

আমি একটু অবাক হলাম আর বললাম আপনার বাড়িতে আমাকে কেনো নিয়ে এসেছেন কে আপনি?
কালতো বললাম আমার নাম রাফসান। তোমার নাম।
কিছু বললাম না।

ওকে বলতে হবে না।
তবে তোমাকে আমি আয়না সুন্দরী বলেই ডাকবো।

কাল প্রথম তোমায় দেখেছি আমার গাড়ির আয়নায় সত্যি বলতে এতো সুন্দরী মেয়েকে আমি প্রথম আয়নাতে দেখেছি তাই তোমার নামের উপমা এটা ছাড়া আর কোনো কিছু খুঁজে পেলামনা। প্রথম দেখাতেই তোমাকে আমার খুব ভালো লেগে গেছে তবে ভালবাসাটাও আস্তে আস্তে হয়ে যাবে চিন্তা করোনা।

আমি রেগে বললাম চিন্তা করব মানে আমি কি আপনার ভালবাসা পাওয়ার জন্য বসে আছি।

এই আবার রেগে যাচ্ছো কথার মাঝখানে কোনো কথা বলবেনা পুরোটা শুনো নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে বাঁকা হাসি দিল। আমি আবার ভয়ে চুপটি মেরে গেলাম। আর ওনি বলতে শুরু করলেন- আমি আমার বাবার বড় ছেলে ছোট একটা ভাই আছে আমেরিকা তে থাকে আমার ফুল ফ্যামিলি আমেরিকাতে আমি বাবার বিজনেস দেখছি। সেদিন তোমাদের ভার্সিটি গিয়েছিলাম ওই ভার্সিটিতেই আমি পড়াশোনা করেছি।

কিছু কাগজপএের জন্য গিয়েছিলাম। ভার্সিটির সামনে গাড়িতে বসে ফোনে কথা বলছি এমন সময় আয়না তে চোখ যায় দেখতে পাই এক অপ্সরিকে। চোখ ফিরিয়ে নেই আবার চোখ যায় আবার চোখ সরিয়ে ফেলি।

আবারো চোখ যায় তবে তখন আর দেখতে পাইনা। বুকের ভেতর কেমন একটা করে ওঠলো মুখ দিয়ে না চাইতেই বেরিয়ে আসলো আয়না সুন্দরী কোথায় তুমি… তারপর তাড়াতাড়ি বের হলাম তোমায় দেখতে পেলামনা আর।
আমার সব কাগজপএ নিয়ে আমার অফিসের পিএ কে ফোন দিলাম আসার জন্য তাকে সব কাগজপএ দিয়ে অফিসের কাজ বুঝিয়ে দিলাম চলে গেলো। আমি নিজেও বুঝে ওঠতে পারছিলামনা কি করছি৷ শুধু একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল যে আয়না সুন্দরী কে আমার লাগবে। আরো বহুদিন, বহুবছর আয়নায় তার মুখ দেখার ইচ্ছা জাগলো। মনকে বুঝালাম রিদ তুই এখান থেকে চলে যা। বাড়াবাড়ি করিসনা এসব তোকে মানায় না।

পড়াশোনা শেষ করেছি দুবছর হলো কখনো কারো প্রেমে পড়া হয়ে ওঠেনি। ইন্টারে পড়ার সময় এক মেয়েকে পছন্দ হয়েছিল প্রোপজ করার আগেই শুনি সে বিবাহিত। প্রেমে পড়ার আগেই প্রেম ভেঙে গেলো তারপর বাবা মা ভাইকে নিয়ে আমেরিকাতে চলে গেলো। আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল আমিই রাজি হইনি কারন আমার নিজের মাকে ছেড়ে তার স্মৃতি ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করেনি। যখন আমার বয়স পাঁচ বছর তখন আমার মা ব্লাড ক্যানসারে মারা যায়। কোটি কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও তাকে আমার বাবা ফেরাতে পারেনি। তারপর দাদীর চাপে আবার বয়ে করে সেই মাও আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে কিন্তু নিজের মায়ের মতো ভালোবাসা কি অন্য কেউ দিতে পারে।

কয়েকবছর পর তার একটা ছেলে হয় আমার ভাই রূপম বাবা মা ওকেই বেশী সময় দেয় আর আমি আমার মতো থাকি। টাকা পয়সা কোনো কিছুর অভাব রাখেনি বাবা শুধু ভালবাসার অভাবটা রয়েই যায়। তারপর দাদীও মারা যায়। এভাবে আরো কিছু বছর কেটে যায়।

আমেরিকা থেকে বাবার বিজবেস পার্টনার ফোন করে বিজনেসের স্বার্থে বাবার ওখানে যেতেই হয় কিন্তু মা জেদ ধরে বসে সেও যাবে বাবা অনেক বুঝায় রিদকে একা রেখে যাওয়া যাবেনা। আমার নিজের মা থাকলে হয়তো যেতোনা কিন্তু সে ঠিকি সেদীন চলে গেছে এতো বড় বাড়িতে কাজের লোক ছাড়া আর কেউ আমার সাথে থাকেনা। দুবছর আগে বাবা দেশে ফিরে আমাকে বিজনেসের সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আবার চলে গেছে। কষ্ট হয়নি আমার কারন এই কবছর এ আমি অনেক স্ট্রং হয়ে গেছিলাম। বাস্তবতা মেনে নিতে শিখেছিলাম।

কাছের আত্বিয় সজন রা আসতো মাঝে মাঝে তাদের সাথেও সময় কাটাতে ইচ্ছে করতোনা। কয়েকজন বন্ধু বান্ধব ছিল অবসরে তাদের সাথেই সময়, কাটাতাম। রক্তের সম্পর্কে আমার বিশ্বাস মরে গেছে তাই তাদের কেয়ার করিনা তেমন।

কিছু মানুসিক চাপ, একাকিত্ব, মেনে নিয়ে জীবন চলছিল আমার পড়াশোনা তারপর বিজনেসের কাজে ব্যাস্ত থাকতে থাকতে জীবনে এর বাইরে আর কিছু ভাবা হয়নি। কিন্তু কাল তোমায় দেখে মনের ভিতর অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করলো। তোমায় দেখে ভাবলাম এই মেয়ে কে আমার পাশে চাই। আমি ইচ্ছে করলে তোমার সব ডিটেইলস নিতে পারতাম। তোমাকে প্রোপোজ করতে পারতাম। কিন্তু সেইসব আমি কিছুই করিনি।

কারন আমি ছোটো থেকে যেভাবে বড় হয়েছি আমার মনে হয় আমাকে এইসব মানায় না। আর তাছাড়া বাচ্চাদের মতো করার বয়সটাও এখন আর নেই। তুমি হয়তো ভাবছো তোমাকে এতোকিছু কেন বলছি। কারন আমি ঘুরিয়ে পিছিয়ে কথা বলতে পছন্দ করিনা। তাই সরাসরি বললাম ভার্সিটিতে যদি তোমায় বিরক্ত করতাম সেটা দৃষ্টি কটূ হয়ে যেতো। তাছাড়া সবাই আমাকে চেনে আমার থেকে দৃষ্টি কটূ আচরন তারা আশা করবেনা।

আর তুৃমিও অস্বস্তি তে ভুগতে তোমার সমস্যা হতে পারতো যেহেতু তুমি একটা মেয়ে। আমি তোমার কাছে এখনি ভালবাসা চাচ্ছিনা বা তোমাকে ভালোবাসতে চাচ্ছিনা। ভালোবাসাতো আর হুট করে হয়ে যায়না তাইনা।

কিন্তু ভাললাগাটাতো আমার হুট করেই হয়ে গেছে। তাই আমি চাই তুমি আমার সাথে আগে বন্ধুত্ব কর।

জানি আমি তেমার থেকে বয়সে অনেকটাই বড় কিন্তু আমি পারবো তোমাকে মানিয়ে নিতে আর আমি চাই তুমিও চেষ্টা করো। তুমি যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও আমি তোমার সব খোজ নিয়ে তোমার বাবা মার সাথে কথা বলে বিয়ে করতে পারবো একদম পারিবারিক ভাবেই৷ কিন্তু আমি চাই তার আগে তুমি আমাকে চেনো জানো আমার প্রতি তোমার ভালবাসা জন্মাক।

কারন আমি ভালোবাসতে চাই, ভালোবাসা পেতে চাই, আমার এই মন ভালবাসার কাঙাল।

কথাগুলো বলে থেমে গেলো আর আমি একমনে সব কথা শুনছিলাম আর ভাবছিলাম এতো কষ্ট লোকটার মনে। আর এতো ভালো মনের মানুষ হয়। আমার ধ্যান ভাংলো -এই লোকটাকে এতো তারাতারি বিশ্বাস করা ঠিক হবেনা এমনোতো হতে পারে আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করছে।

আমি বাড়ি যাবো প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
হুম তার আগে এই জুসটা খেয়ে নাও কিছু মেশানো নেই বিলিফ করো।

না আমি কিছু খাবোনা যেতে দিন আমায়।

ওকে তার আগে নামটা বলো?
অবন্তী সরকার অন্তী।

বাহ সুন্দর নাম।
আচ্ছা তোমার ব্যাগটা নাও বলে ব্যাগটা এগিয়ে দিলো। অতিরিক্ত ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম জ্ঞান ফেরার পর তো নিজের দিকে খেয়ালই হয়নি ব্যাগটার কথাও ভুলে গেছি।

যাইহোক ব্যাগটা নিয়ে ওনার রুম থেকে বেরিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছিলাম ওই বাড়ির পাঁচটা লোক হা করে আমাকে দেখছে আমি কিছু না ভেবে বেরিয়ে যাবো তার আগেই একজন বললো আপা এই যে জুসটা খেয়ে নিন বলে চামচ দিয়ে একটু নিয়ে সেও খেলো আর বললো কিছু মেশানো নেই।

আমি আশেপাশে তাকাতেই রিদকে দেখলাম ভ্রু নাচিয়ে হাসছে বুঝতে পারলাম তারই কাজ তাই খেয়ে নিলাম। তারপর বেরিয়ে আসতেই ওনি এসে হাত ধরে আমাকে ওনার গাড়িতে বসিয়ে দিল। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলামনা।

লোকটা সুযোগ পেলেই হাত ধরে অসভ্য একটা মনে মনে আরো কিছু গালি দিলাম হঠাৎ লোকটা আমার একদম কাছে আসলো আমি বড় বড় করে তাকালাম যেই চিৎকার দিব ওমনি বুঝতে পারলাম সিটবেল্ট লাগাচ্ছে এতো কাছে আসাতে আমার কেমন একটা ফিল হলো খুব অচেনা ফিলিং। ওনার কথায়, আমায় ঘোর কাটলো। সরি বার বার না বলে হাত ধরছি কিন্তু এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তো

। আমি কিছু বললামনা কেমন যেনো রাগও আর হলোনা। মাএ দুদিনেই মনে হলো কতদিনের চেনা লোকটাও অদ্ভুত দুদিনেই আমার সাথে এমন আচরন করছে যে আমি তার বহুবছরের চেনা। ভাবতে ভাবতে আড় চোখে ওনার দিকে তাকালাম ইশ লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে ধরা পড়ে গেলাম। ওনিও যে আড় চোখে আমাকে দেখছে আর ড্রাইভ করছে।


পর্ব ৩

হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। ঘড়ি তে তাকিয়ে দেখি বারোটা এিশ বাজে। আমাকে দুটার মধ্য বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু এই লোকটার গাড়ী করে বাড়ি ফিরলে সেটাতো কেউ ভালো চোখে দেখবেনা। আর ভাইয়া জানতে পারলে মেরেই ফেলবে। ভাবতে ভাবতে বলে ওঠলাম গাড়ী থামান।

কি বলছো এখানে গাড়ী থামাবো মানে? বৃষ্টি হচ্ছে আর তোমার বাড়িতো আরো দূরে এখানে থামতে বলছো কেনো?

আমি রাগী গলায় বললাম এখানে থামাতে বলছি থামান ৷ সকাল থেকে অনেক সহ্য করেছি আর না। আপনি থামান নয়তো আমি চিৎকার দিব।
ওনি গাড়ীটা থামালেন-

এই কি বলছো অন্তী কি হলো হঠাৎ এতোক্ষনতো বেশ শান্তো ভাবেই ছিলে। পাগলামি করোনা প্লিজ এই ফাঁকা রাস্তায় এতো বৃষ্টির মধ্যে আমি তোমাকে নামিয়ে দিতে পারিনা৷
এবার আমি ওনার সাথে না পেরে কেঁদে দিলাম….
একি কাঁদছো কেনো বোকার মতো অল্পতেই কেঁদে দাও কি হয়েছে বলো। আমি যা করেছি সবকিছুর কারনতো তোমাকে বলেছি। আর তোমার কোনো ক্ষতি ও করিনি শুধু আজ ক্লাশ টাই মিস গিয়েছে তার জন্যেও সরি সরি ওকে।

আপনি বুঝতে পারছেন না। আপনার গাড়ী করে বাড়ি ফিরলে আমার সমস্যা হবে। আর আপনাকেও কেউ চিনেনা।
ওহ নো আই এম রেইলি সরি। আমি আসলে এই বিষয়টা ভাবিইনি। আচ্ছা আমি তোমাকে ভার্সিটির সামনে থেকে রিকশায় ওঠিয়ে দিব কেমন। নো ক্রাইং… বলে আবার ড্রাইভ করা শুরু করলো।

আমি একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললাম লোকটা খারাপ না। যদি খারাপ হতো এতোটা সময় একসাথে একা আছি আমারতো কোনো ক্ষতি বা অসম্মান করেনি। তবে বেশ অসভ্য। আর হাত ধরার রোগ তো আছেই। সুযোগ পেলেই হাত ধরবে অসভ্য লোক একটা।

কি ব্যাপার ভালো লেগেছে নাকি আমাকে?
এই যা মনের কথা বুঝে ফেললো নাকি আন্দাজ করেই বলেছে -মোটেই না আপনাকে আমার একদমই ভালো লাগেনি আপনি খুব খারাপ একটা লোক।

এই আবার রেগে যাচ্ছো যে রাগ করোনা আমি ভয় পাচ্ছিতো বলেই বাঁকা হাসলো।

আমি রাগি লুক নিয়েই বসে রইলাম। বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর খুব জোরে বজ্রপাত হলো আমি বৃষ্টি যেমন ভালোবাসি ঠিক তেমনি বজ্রপাত হলে প্রচুর ভয় পাই সেদিন ও পেয়েছিলাম আর ভয়ে যেটা করেছিলাম তাতে আমার লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিলো – বজ্রপাত হওয়ার সাথে সাথে আমি রিদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ি। রিদ কোনোরকমে গাড়িটা থামিয়ে ছিল আর আমি ছিলাম ওনার বুকে ওনাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কাঁপছিলাম ভয়ে।

রিদ বুঝতে পেরেছিলো আমি ভিষন ভয় পেয়েছি। তাই আস্তে করে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো অন্তী ভয় পেওনা আমি আছিতো কিছু হবেনা। ওনার বুকের সাথে এমন ভাবে মিশে ছিলাম যে ওনার বুকের ধুকপুকানি আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। আমার ভয়টা কেটে গেলো আমি আস্তে করে মাথা নিচু করে সরে বসলাম।

ওনি কিছু বললেননা হয়তো আমার মতো ওনিও একি অনূভুতিতে মগ্ন। এটা আমি কি করলাম দুদিনেই একটা অপরিচিত মানুষ কে এইভাবে জরিয়ে ধরলাম ছিঃ।

এই নাও পানিটা খেয়ে নাও ভয়টা কেটে যাবে।
আমি আর কিছু না বলে পানি খেয়ে নিলাম। আর ওনি আবার ড্রাইভ করতে শুরু করলো।
আমি আর কিছু না ভেবে বললাম সরি। আমি খুব ভয়, পেয়ে গেছিলাম।

ওনি বললেন সরি বলছো কেনো? তুমি আমাকে পর ভাবলেও আমি কিন্তু তোমাকে আপন আর নিজেরি ভাবি আর মানিও তাই আমার অবাক লাগেনি, হতে পারে দুদিন তবে এই অল্প সময়েই আমি তোমাকে নিজের মনে করতে শুরু করেছি।

আবার ভালোও লাগেনি যেদিন ভালোবেসে এইভাবে আমার বুকে মাথা রাখবে সেদিন আমিও ভালোবেসে তোমাকে আমাতে মিশিয়ে নিব। বলেই একটা মুচকি হাসি দিলো। তারপর বললো -তুমি কিন্তু বড্ড ভিতু একদম বাচ্চাদের মতো। আমার ভালোই হলো বলো বাচ্চা একটা বউ পাবো কোলেপিঠে করে মানুষ করে নিব। বলে হো হো করে হাসতে লাগলেন

আমি ওনার দিকে তাকালাম।
এই এই রেগে যেওনা প্লিজ। সরি
আমি কিছু বললাম না যা করেছি এরপর আর কিছু বলার সাহস পেলামনা। তবে মানুষ টাকে বেশ ভালোই লাগছিল। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলামনা।

রিদ ওর মতো দায়িত্ব নিয়ে রিকশায় ওঠিয়ে দিলেন। আমি একটা পয়তাল্লিশ এ বাড়ি পৌছালাম।
ফ্রেশ হয়ে খেয়ে একটা লম্বা ঘুম দিলাম। ঘুম ভাংলো ফোনের শব্দে।

কিন্তু চোখ না মেলেই ফোন রিসিভ করলাম। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো সেই ডাক আয়না সুন্দরী কি করছো? আমি ঘুম কাতুরে কন্ঠেই জবাব দিলাম কে আপনি? ওনি আমার কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারলো আমি ঘুমিয়েছিলাম। তাই বললো – ঘুমিয়েছিলে অন্তী সরি ঘুমটা ভেঙে দিলাম। তবে তোমার ঘুম কাতুরে কন্ঠটা একদম বুকে গিয়ে লাগলো বিলিভ মি। এতো সুন্দর মিষ্টি, বাচ্চা ভয়েস এর আগে কখনো শুনিনি।
এবার আমি বুঝতে পারলাম এটা সেই লোকটা রিদ। আমি ধরপরিয়ে ওঠে বসলাম। চোখটা একহাত দিয়ে কচলে নিলাম।
আপনিহ? আপনি আমার নাম্বার পেলেন কিভাবে?
আজকাল কি কারো নাম্বার জোগার করা খুব কঠিন ব্যাপার নাকি? তবে আমি খুব সহজেই পেয়ে গেছি।
মানে কিভাবে পেলেন?
আরে বোকা মেয়ে ভুলে গেছো নাকি। ওয়েট ওয়েট মনে করিয়ে দিচ্ছি – তুমি জ্ঞান হারানোর পর তোমাকে রুমে নিয়ে এসে শুইয়িয়ে দিয়ে গাড়ি থেকে তোমার ব্যাগ নিয়ে রুমে রেখেছি। তারপর তোমার ফোনে মেসেজের শব্দ পেয়ে ওটা বের করলাম আর তোমার পারমিশন ছাড়াই তোমার নাম্বারটাও কালেক্ট করে নিয়েছি। সরি অন্তী।

আপনিতো বড্ড খারাপ লোক হাজারটা ভুল করে আবার সরি বলে দিচ্ছেন। আপনি আমাকে আর ফোন করবেননা। আপনাকে জাস্ট আর নিতে পারছিনা। অসভ্য লোক একটা।

এই রেগে যেওনা প্লিজ এইটুকু না করলে তোমার আমার বন্ধুত্বটা কি করে হবে বলোতো?
চাইনা আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে ফোনটা রাখুন।

ওকে ওকে তবে শুনো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও। যা ওজন তোমার একেবারেই বাচ্চা রয়ে গেছো এক হাত দিয়েই তুলতে পারবো তোমায়।

কি…. আপনি এসব কি বলছেন আমার ওজন কতো আপনি জানলেন কি করে?

আরে আবার বোকার মতো প্রশ্ন করছো একটু আগেতো বললাম গাড়ি থেকে তোমাকে আমিই আমার রুমে নিয়ে গেছি তুমিতো সেন্সলেস অবস্থায় ছিলে।

কি… রাগে আমি ঘেমে গেলাম, আপনি আমাকে ছিঃ আপনি এতো খারাপ ছিঃ।

অন্তী রাগ করোনা এছাড়া কোনো উপায় ছিলনা। আর আমি তোমাকে কোনো বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে স্পর্শ করিনি বিলিভ মি।
আপনারা মতো মানুষকে বিলিভ কান্না জরিত কন্ঠে বলে ফোন কেটে অফ করে রাখলাম। আর ফোন অন করিনী। পরেরদিন শুক্রবার হওয়াতে ভার্সিটি যাওয়া হলোনা সকালের নাস্তা করে ছাদে গেলাম কাপড় গুলো রোদে মেলে দিলাম। তারপর হাটাহাটি করতে করতে ছাদের পশ্চিম পাশে গেলাম। একটু দূরেই মেইন রোডে সেই সাদা গাড়ীটা দেখতে পেলাম। গাড়ীটা চিনতে খুব একটা অসুবিধা হলো না আমার ভালোভাবে তাকিয়ে দেখতেই ভিতর থেকে কেউ বেরিয়ে এলো এ আর কেউ নয় মি. রাফসান ওরফে রিদ।

আমি ওনাকে দেখেই সরে যেতে নিয়েও থেমে গেলাম। কারন ওনি বের হয়ে একটা ছোটো আয়না আমার দিকে তাক করলেন আর চোখে আলো আসতেই আমি একটু সরে দাঁড়ালাম। আরে এটাতো আমার আয়না ব্যাগে ছিল। তারমানে এটা কাল ওনি নিয়েছে।

আর আমি ভাবছিলাম হয়তো রাস্তায় পড়ে গেছে। কারন বাড়ি এসে দেখি ব্যাগের চেইন খোলা কাল এতো সবের মধ্যে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম না পারছিলাম কিছু বলতে না পারছিলাম সহ্য করতে। তবুও চুপচাপ ছিলাম। কোনো কিছুই তেমন খেয়াল করিনি কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আবার চোখে আলো আসাতে আমি ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলাম। ওনি হাত নেরে ইশারা করছেন ভ্রু নাচাচ্ছেন হয়তো বলছেন কি…আয়না সুন্দরী অবাক হলে। আমি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি এই লোকটা তো খুব জালাচ্ছে বাড়ির সামনে এসে পড়েছে। হায় আল্লাহ তিনদিনেই এতো এগিয়ে গেছে লোকটা নাহ একে থামাতে হবে নয়তো বাড়িও এসে পড়বে দুদিনেই যে তার বাড়ি তুলে নিয়ে যায় তার পক্ষে সব সম্ভব। আমি ওখানে আর একমূহুর্ত দাঁড়ালাম না। তারাতারি নিচে নেমে গেলাম দৌড়ে রুমে গেলাম। মা বললো কিরে দৌরাচ্ছিস কেনো পড়ে যাবিতো। আমি কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে অন করলাম। সাথে সাথেই ফোনে কল আসলো। ওনি মনে হয় জানতো আমি সাদ থেকে নিচে এসেই ফোন অন করবো বাব্বাহ ট্যালেন্ট লোকটা ভেবেই ফোন রিসিফ করলাম।

সাথে সাথেই বলে ওঠলো এই যে আয়না সুন্দরী এখন ফোনটা অন না করলে সরাসরি তোমার বাড়ি চলে যেতাম।

তোমার সাহস হয় কি করে ফোন বন্ধ করে রাখার আর যদি ফোন বন্ধ করেছো একদম বাড়ি থেকে ওঠিয়ে নিয়ে যাব। ধমকের সুরে একদমে কথা গুলো বলে থামলো। আমি কি বলতে ফোন অন করলাম আর এখন কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা। লোকটাতো খুব খারাপ কেমন করে থ্রেট দিচ্ছে। কাল কিভাবে সব কিছু বললো যেনো ওনার মতো ভালো মানুষ হয়না আর এখন থ্রেট দিচ্ছে ছিঃ।

কি হলো অন্তী চুপ কেনো বলো আর কখনো ফোন অফ করে রাখবা৷

এই আপনার সমস্যা টা কি হ্যা আমার বাড়ি অবদি চিনে গেছেন আর আপনিতো একটা চোর। চুরি করে আমার আয়না নিয়েছেন।

আমার কথা শুনে লোকটা হোহো করে হেসে দিলো। আর বললো তাইনাকি তো আয়নাটা ফেরত নিয়ে যাও নয়তো বাড়ির বাইরে গেলে কি দিয়ে মুখ দেখবে আয়না পাগলি ওরফে আয়না সুন্দরী বলে আবার হাসতে লাগলো।
এবার আমার রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।

আপনি আমাকে এইসব ফালতু নামে ডাকবেন না। আর প্লিজ ওখান থেকে চলে যান।
আরে তারিয়ে দিচ্ছ কেনো। আমিকি তোমার বাড়ি গিয়েছি নাকি। এটাতো রাস্তা এখান দিয়ে যাওয়ার এখানে দাঁড়ানোর সবারি অধিকার আছে আমারো আছে।

ওকে থাকুন ওখানে। আমাকে আর ফোন দিবেননা আমাকে। বলেই ফোন কাটবো এমন সময় বলে ওঠলো ফোন কাটলে কিন্তু একদম বাড়ির ভেতর চলে আসবো। আমার কথা গুলো শুনো তারপর আমি নিজেই কাটবো।

কি বজ্জাত লোক বাড়ি আসার হুমকি দিচ্ছে। নাহ বাড়ি এসে আবার কি গন্ডগোল করবে কে জানে তাই কি বলে চুপচাপ শুনি।

ওকে বলুন কি বলবেন।

দেখো অন্তী সারারাত ঘুমাতে পারিনি এইভাবে রাগ করে কেউ ফোন কেটে দেয় কেটেছোতে কেটেছো বাট ফোন অফ করে রাখলে এটা তুমি ঠিক করোনি। তুমি জানো সারারাত আমি ফোন দিয়েছি কিন্তু পাইনি তোমায়।

তাই সকাল সকাল দেখতে চলে এসেছি। আজ তো তোমার ভার্সিটি নেই আমারো অফিসনেই। তাই চলে এলাম। অন্তী সব কিছুর জন্য সরি প্লিজ তুমি সাদে আসো আমি কান ধরে ওঠবোস করবো আই প্রমিস ইউ।

তুবও রাগ করে থেকো না তোমার খারাপ লাগে এমন কোনো কাজ আর করবোনা আর যতোটুকু হয়েছে কাল সেটার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না তুমি সেন্সলেস না হলে আমি তোমায় কোলে নিতাম না।

আচ্ছা আমি সাদে আসছি আপনি কান ধরে ওঠবোস করবেন আমি দেখবো তবেই আপনাকে ক্ষমা করবো। সেদিন যপনো কেমন ওনাকে কানে ধরে ওঠবোস করতে দেখার ইচ্ছা হলো। সেই সাথে বেশ মজাও লাগছিলো। কাল থেকে খুব জালিয়েছে এই সুযোগ এ লোকটাকে জব্দ করা যাবে ভেবে ফোন রেখে সাদে গেলাম।

গিয়ে দেখি ওনি হা করে দাড়িয়ে আছে ভালোভাবে দেখলাম তখন মনে রাগ ছিলনা ছিল দুষ্টামি।

কালো কালারের টি শার্ট, সাথে কালো থ্রি কেয়াটার প্যান্ট, পড়া হাতে ফোন নিয়ে তাকিয়ে আছে দেখতে বেশ লাগছে ফর্সা চেহেরাটা আরো উজ্জ্বল লাগছে কালো পড়াতে। ( লেখিকা ঃনওশিন নাঈমা) তো যাই হোক আমি ইশারা করে কানে ধরতে বললাম।

ওনি কেমন মলিন মুখে তাকিয়ে আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কানে ধরার একদম ইচ্ছা নেই। তবু আস্তে আস্তে কানে ধরলো৷

আমার খুব মজা লাগছিল বিষয়টা তারপর ইশারা করলাম বসতে ওনিও বাধ্য ছেলের মতো দশবার ওঠবোস করলো। এবার আমি থামিয়ে নিজেই ফোন করলাম। ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই বললাম ঠিক আছে এবার আসতে পারেন। ওনি বললো-

তুমিতো ভারী দুষ্টু আমাকে দিয়ে ওঠবোস করিয়েই ছারলে।

এবাবা আপনিইতো বললেন এখন আবার আমাকে দুষ্টু বলছেন কেনো।

হ্যা তাই বলে তুমি আমাকে তাই করালে। অবশ্য তোমার কথা রাখতে আমি সব করতে পারবো তবে আজকের এই বিষয়টা যেনো আমি আর তুমি ছাড়া কেউ জানতে না পারে।

কেনো জানলে কি হবে?

কি হবে সেটা আস্তে আস্তেই বুঝবা এখনি সব জেনে কাজ নেই।
ওকে ওকে আপনার বিষয়ে আমার জানার ইচ্ছাও নেই।

তাইনাকি সেটা সময় হলেই বেঝা যাবে মিস আয়না সুন্দরী। তো আপনার আয়নাটার কি হবে?
ওটা আমি পড়ে নিয়ে নিব।

ওহ আচ্ছা আচ্ছা সো সুইট টাটা বলে ফোন কেটে হাসতে হাসতে গাড়ী ওঠে চলে গেলো৷ আমি কিছু বুঝে ওঠতে না পেরে ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর যখন হুশ ফিরলো নিজেই নিজের মাথায় থাপ্পড় দিলাম।

ছিঃ এটা আমি কি করলাম পরে আয়না নিব মানে তারমানে ওই লোকটা আবার আমার সাথে দেখা করতে আসবে। আর এইজন্যেই কি ওইভাবে হাসলো।

হায় আল্লাহ এটা আমি কি করলাম ধ্যাত নিজের বোকামির জন্য নিজেই ফেসে গেলাম। কি হতো ওটা না নিতে আমার কি এতোই অভাব পড়েছে দুটো ড্রেসিং টেবিল আমার রুমে, ছোটো ছোটো আয়নার অভাব নেই ব্যাগে টেবিলে, ছোট থেকেই সাজগুজের পাগল আর সবসময় নিজেকে সুন্দর করে সাজাতে ভালোবাসি।

পরিপাটি হয়ে রোজ রোজ আয়নায় নিজেকে প্রেজেন্ট করা আমার যেনো জন্মগত অধিকার। একদিন আয়না দেখা মিস হলেই মনে হয় ওরা আমার জন্যেই অপেক্ষা করছে। এগুলো যে জর পদার্থ তা তো আমি ভুলেই গেছি। এগুলো আমার নিত্য দিনের সঙ্গী। আর আমার এই সঙ্গী গুলার অভাব আছে নাকি। তাহলে ওটা না নিলে কি হতো? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম আবার নিজেই নিজেকে বকছিলাম।

দুপুর বেলা বাবা, ভাইয়ার সাথে লাঞ্চ করলাম। তারপর জমিয়ে আড্ডা দিলাম। তারপর ভাইয়া বেরিয়ে গেলো বাবা বই পড়া শুরু করলো, আমি মায়ের সাথে টুকিটাকি কাজ করে রুমে আসলাম। আয়নায় কিছুক্ষন নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলাম কেমন যেনো লাগছে মুখটা তবে আগের থেকে বেশ উজ্জ্বল ই লাগছে ভেবে মুচকি হাসলাম। নিজেই কেমন নিজের প্রশংসা করছি সত্যি আমি পাগলি।

কি… আয়না সুন্দরী আয়নায় নিজেকে দেখে মুচকি হাসছো? নিজেই নিজের প্রেমে পড়ে যাচ্ছো? তাহলে ভাবো আমার কি অবস্থা?
একি আপনি? (অবাক হয়ে)


BANGLA CHOTO NEW GOLPO

পর্ব ৪

আপনি এখানে কি করে এলেন। (বলেই আয়না থেকে ঘুরে তাকালাম)
কিছু দেখতে পেলমনা। ( দিন দুপুরে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি আমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি বলেই তারাতারি বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিলাম। তারপর তয়ালে দিয়ে মুখ মুছে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

তারপর কালকে রিদের বলা প্রত্যেকটা কথা শুরু থেকে শেষ অবদি মনে করলাম। সব ভেবে ওনার জন্য কেমন একটা মায়া হলো সত্যি লোকটা বড্ড একা নিজের মা নেই। বাবা আর সৎ মা ভাই দূরে থাকে। ইশ আমিতো বাবা মা, বড় ভাই ছাড়া কোথাও গিয়ে একা থাকতেই পারিনা ওনার জায়গায় আমি হলে দম বন্ধ হয়ে মরে যেতাম।

আহারে লোকটার ভালোই কষ্ট। আমি কি তাহলে লোকটাকে শুধুই ব্ন্ধু বানাবো লোকটাতো একা মানুষ এই মাঝে মাঝে জাস্ট কথা বলবো। আমার আবার কারো কষ্ট দেখে সহ্য হয় না।

এই না অন্তী না দুদিনেই কাউকে বিশ্বাস করে বন্ধু বানাস না পরে কিন্তু ফেসে যাবি। এমন ও তো হতে পারে লোকটা তোর চেহেরা দেখে এমন করছে কলেজে, স্কুলে কতো ছেলে তোকে প্রোপজ করেছে কিন্তু তুই এক্সেপ্ট করিসনি। কলেজেতো এক স্যার ও প্রোপোজ করেছিল ওনার চোখে আমি ছিলাম বলিওডের হিরোইন ক্যাট্রিনা কাইফের মতো।

শেষমেষ বিয়ের প্রস্তাব ও পাঠিয়েছিলো সেই নিয়ে কত কাহিনী। আর যে ছেলে গুলা প্রপোজ করতো ওই ছেলে গুলাকে রিজেক্ট করার কয়েকমাস পর দেখতাম অন্য মেয়েদের সাথে রিলেশন করেছে। কারন সেগুলো ভালবাসা ছিলনা ছিল খনিকের মোহ। তুই এই লোকটাকে এতো তারাতারি বিশ্বাস করিসনা অন্তী আরো অনেক সময় নে। ( নিজেই নিজেকে বললাম মনে মনে)

পরেরদিন ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হলাম। ভাইয়া এমনিতে প্রতিদিন আমার আগেই বেরিয়ে যায় কিন্তু ওইদিন লেট করে বের হয়েছে বিধায় আমাকে পৌছে দিয়েছে ভার্সিটি ভাইয়ার বাইক দিয়ে৷ ভার্সিটির সামনে এসে নামিয়ে দিয়ে ভাইয়া চলে গেলো আমি ভার্সিটির গেইটে পা রাখার আগেই আমার সামনে এসে দাঁড়ালো রিদ।

খুব রাগি চোখ নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো লোকটা কে ছিল অন্তী। আমি ওনার এমন রাগী লুক দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলাম। আর ঢোক গিললাম। – কি হলো আমি কিছু জিগ্যেস করেছি বলো ওটা কে ছিলো?

ও..নি আমার ভাইয়া (ভয়ে ভয়ে উওর দিলাম)

এক নিমিষেই ওনার মুখের আকৃতি চেঞ্জ হয়ে গেলো। এমন ভদ্র ভাবে হাসি দিলো যেনো একটু আগের ওনি আর এখনকার ওনি সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাক্তি আমারো ভয়টা কেটে গেলো।

এই নাও তোমার আয়না বলে আয়নাটা আমাকে দিলো আমি কিছু না বলে নিয়ে চলে আসব এমন সময় ওনি বললো – আজ আমার অফিস আছে তাই আজ আর দেখা হবেনা আয়না সুন্দরী তুমি লক্ষী মেয়ের মতো ক্লাশ করে বাড়ি চলে যাবে কেমন।

আমি ওনার কথা শুনে রাগে গজ গজ করতে করতে ভিতরে চলে গেলাম। তারপর দূরে গিয়ে তাকাতেই দেখি ওনি আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে।

তারপর চলে গেলো।

আমিও ক্লাশে চলে গেলাম মনে মনে হাজারটা গালি দিলাম ওনাকে।

ক্লাশে এসে দীনার পাশে বসলাম সাথে সাথেই বললো কি রে কালকের আগেরদিন আসলিনা মেসেজ দিলাম রিপলাই দিলিনা, ফোন বন্ধ ছিল কেনো?

আর বলিসনা খুব ঝামেলায় পড়ে গেছি আমি।

কি বলছিস কি ঝামেলায় পড়লি। ( দীনা)

আমি ওকে গতো তিন দিনের সব কিছু খুলে বললাম।
সেকিরে কি বলছিস তুই কিডনাপ হয়েছিলি? আল্লাহ তুই ঠিক আছিসতো? তোকে কিছু করেনিতো?

আরে আমি ঠিক না থাকলে এখানে আমি তোর সামনে কি করে আসলাম।
জ্বিব কেটে সরি সরি। তবে বুঝ এখন আয়না দেখতে গিয়েতো খুব ভালো ফাসাই ফেসেছো বাবু… বলেই ফান করা শুরু করলো। (দীনা)

এই তুই ফান বাদ দিয়ে বল কি করবো এখন লোকটা তো পিছু ছারছেনা। তবে আজ আর জ্বালাবেনা খুব বাঁচা বেঁচে গেছি। লোকটা সামনে আসলেই কেমন আন ইজি ফিল হয় কেমন করে হাসে, কথা বলে খুব বদমাশ লোকটা।

আরে অন্তী টেনশন নিশনা আবার আসলে আমাকে ডাকবি তারপর দেখ কি করি। ব্যাটা কে এমন শিক্ষা দিব আর জীবনে আয়না সুন্দরী তো দূর আয়নাতে নিজের মুখ দেখতেও ভুলে যাবে।
কি বলছিস কি করবি?

যাই করি তোর সেটা নিয়ে ভাবতে হবেনা নাকি আবার প্রেমে টেমে পড়ে গেছিস তুই ও। (দুষ্ট হাসি দিয়ে)

কি বলছিস একদমই না। যা ইচ্ছা কর ওনাকে তাতে আমার কি। ( বলেই মুখ বাঁকা করলাম)
তারপর স্যার আসলো সবকটা ক্লাশ করে বাড়ী চলে গেলাম।

রাত দশটার দিকে পড়ছিলাম এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠলো। রিসিফ করলাম। আমি যেনো জানতাম রিদ ফোন করবেই তাই স্বাভাবিক ভাবেই রিসিফ করলাম।
হ্যালো অন্তী…

হুম বলুন.
কি করছো?
পড়ছিলাম.

ওহ.খেয়েছো?
হুম.
কালতো ভার্সিটি তে যাবে তাইনা?
হুম.

আচ্ছা তাহলে ঘুমিয়ে পড়।
হুম.

বাহ বাঁচলাম কোনো অবান্তর কথা বলেনি।
তারপর ঘুমানোর জন্য প্রিপারেশন নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। প্রতিদিনের মতো ঘুমানোর আগে একটু মেসেঞ্জারে গেলাম। যাওয়ার সাথে সাথেই রায়হান ভাইয়ার বেশ কয়েকটা মেসেজ আসলো।

প্রথমে হাই, তারপর কয়েক মিনিট পর একটা অডিও রেকর্ড পাঠিয়েছে। এক্টিভ ছিলনা তাই আর রিপলাই করলাম না। তবে রেকর্ড টা প্লে করলাম = শুনতে পেলাম দুজন মানুষের ফোনে কথোপকথন একজন রায়হান ভাইয়া নিজে।

অপরজনকে চিন্তে একটু দেরী হলো তবে চিন্তে পারলাম যখন আমার নামের জায়গায় অন্তীর পরিবর্তে ছিলো আয়না সুন্দরী। হ্যাঁ রায়হান ভাইয়া আর মি. রাফসান চৌধুরী রিদের কথোপকথন ছিল।

  • হ্যালো রায়হান।
    হুম রিদ বল। কি জরুরি কথা বলবি। আর এখানে সবকাজ আমি কমপ্লিট করে ফেলেছি। দুদিন পর ফিরব। অফিসেও জয়েন করবো।

হুম জানি। দুদিন ঘুরে আয় সিঙ্গাপুর দিয়ে ভালো ভালো জায়গায় ঘুরতে যা ভালো লাগবে।
হুম। তো বল কি বলবি।

আমাদের ভার্সিটি গেছিলাম দুদিন আগে………..। তারপর সেদিনের পুরো ঘটনা বললো তারপরের দিনের ঘটনা সহ।

রায়হান ভাইয়া মনে হয় আচ করতে পেরেছিল মেয়েটা আমিই হতে পারি। তাই প্রশ্ন করলো মেয়েটার নাম কি দেখতে কেমন?

দেখতে লম্বা এই ধর পাঁচ ফুট চার, পাঁচ হবে। একদম বলিউডের নাইকাদের মতো ফর্সা। একদম সিমসাম বডি ফিটনেস খুবই হালকা।
সেকিরে নামটা কি বলতো?
নাম হচ্ছে অবন্তী। আমার আয়না সুন্দরী।

ওহ নো।

কিহলো তুই চিনিস?

আরে চিনবনা আমার ছোটো ভাই রাতুলের ফ্রেন্ড।
তাইনাকি তাহলেতো আরো ভালো হলো। আমার বিয়ে করার রাস্তা সহজ হবে।
কি বলছিস এতোদূর এগিয়ে গেছিস। কিন্তু..

কোনো কিন্তু না ওকে আমার চাই ব্যস।
হুম তুই তো সহজে কারো প্রেমে পড়ার কথা না অফিসে কতো মেয়ে তোর ওপর ক্রাশ তাদেরই পাত্তা দিসনা। তবে অবন্তীর প্রেমে পাড়ার কারন ও আছে মেয়েটা অনেক সুন্দরী। আর মেয়েটাকে অনেক ছেলেই প্রোপোজ করেছে কাউকে পাত্তা দেয়নি।

রাতুলদের এক স্যারতো বিয়ের প্রস্তাব ও দিয়েছিলো কিন্তু ওর ভাই আর বাবা এক্সেপ্ট করেনি।

হুম বিধাতা যে ওর জুটি আমার সাথেই বেধে রেখেছে তাইতো ওর মনের জায়গায় এখনো কেউ আসেনি। আমারো আসেনি কিন্তু ওকে দেখার পর আমি আর অন্য কাউকে আনার কথা ভাবতে পারবোনা আমার ওকে চাই ব্যাস।

সত্যি কি তাই রিদ। ভালোভাবে ভেবে বল তারপর বাকিটা আমি দেখবো।
তোর কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলছি তুই আমাকে চিনিসনা? আমার সম্পর্কে সব জেনেও এমন অবান্তর কথা বলছিস কেনো?

আসলে মেয়েটাকে আমি ভালো করেই চিনি আর পাঁচ টা মেয়ের মতোনা আর ভালো পরিবারের মেয়ে।

হুম তো আমার পরিবার কি খারাপ? নাকি ছেলে হিসেবে আমি খারাপ?

আরে দোস্ত না তুই ভুল বুঝছিস। আসলে ওকে আমি ছোটো বোনের মতো দেখি। আসলে এখন তোর ভালো লেগেছে পরে নাও লাগতে পারে। আর মেয়েটা যেহেতু সুন্দরী তো সবাই ভাবতেই পারে যে ওর সৌন্দর্য দেখে প্রেমে পড়েছিস। আর ও যে ধরনের মেয়ে আমার মনে হয় সেইম ভাবনা ও নিজেও ভাববে।

দেখ রায়হান আমি কখনোই কারো রূপ দেখে কারো প্রতি আকর্ষিত হওয়ার ছেলে না৷ আমি ওকে ওর রূপের জন্য ভালোবাসি না। ওর মুখে আলাদা একটা মায়া আছে। ওর চোখে আলাদা একটা গভীরতা আছে যা আমার মনকে বলছে ওকে ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখ।

আমি ওকে ভালবাসতে চাই ভালো রাখতে চাই, সারাজীবন আগলে রাখতে চাই। সারাজীবন ওর পাশে থাকতে চাই ওর ভালবাসা পেতে চাই। আমার একলা পথের সাথী হিসেবে ওকে চাই।

হায়রে রিদ তুইতো শেষ। ভালো ভাবেইতো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো। আমি দেখছি কি করা যায় তবে একটু কঠিন হবে। অন্য কোনো মেয়ে হলে এতোটা কঠিন হতোনা।

যেভাবেই হোক তুই কিছু কর। আমি ওর সম্মতিতে ওর পরিবারের কাছে যেতে চাই।
হুম বুঝেছি তোকে এতোবছর ধরে চিনি। তোর কাজ সম্পর্কে জানি আমি। তুই জোর করে আর যাইহোক ভালবাসা পেতে চাস না। তবে তৈরী করে নিতে পারবি।

যাইহোক চিন্তা করিসনা আমি আসছি খুব তারাতারি।
ওকে ওকে রাখছি। (রিদ)

ওকে। বাই (রায়হান)
বাই। ( রিদ)
পুরো এক ঘন্টারর কল রেকর্ড শুনলো অন্তী। ওর মাথা ঘুরছে সব শুনে। লোকটা কি তাহলে সত্যি তাকে ভালোবাসে। কথাগুলো শুনেতো তাই মনে হলো। কিন্তু এই অল্পদিনে কি করে কারো মনে এতো ভালবাসা জন্মাতে পারে। ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ফোন বেজে ওঠলো। রিসিফ করলাম-
কি অন্তী ঘুমাওনি কেনো এখনো? (রিদ)

ওনার কথা শুনে আমি লাফিয়ে ওঠে বসলাম। ইনি জানলো কি করে ঘুমাইনি। ( মনে মনে)
আপনি কি করে বুঝলেন আমি ঘুমাইনি –

আরে পাগলি মনের মানুষ কি করছে না করছে সেটা মন দিয়েই ফিল করা যায় বুঝলে। আর কোনো কথা না ঘুমিয়ে পড় নয়তো আমি এখনি তোমার বাসায় চলে যাবো গিয়ে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিব।

কি বলছেন এসব ফোন রাখুনতো যত্তসব। বলেই ফোন কেটে দিলাম।
ওনিও আর ফোন দেয়নি৷ তারপর শুয়ে পড়লাম কিন্তু ঘুম আসছেনা বার বার ওনার কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই ওনার প্রতি একটা ভালোলাগা কাজ করছিল। কেমন অস্থিরতা বাড়ছিল তবু অনেক কষ্টে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। ওঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে গেলাম। বাবা ভাইয়া আগেই চলে গেছে। আমিও নাস্তা করে বের হলাম। বের হওয়ার সময় আম্মু বলে দিল সাবধানে যাস। প্রতিদিন এই কথা বলেই মা আমাকে এগিয়ে দেয় রাস্তা অবদি। আমি রাস্তায় দাড়াতেই সেই রিকশা টা দেখলাম আসছে ওটাই

থামালাম আর ওঠে চলে গেলাম ভার্সিটিতে। আজ আর ওনাকে দেখতে পেলাম না। আমি একটু ভাবলাম পরপর তিনদিন আসলো আর আজ আসলোনা। না আসলো তাতে আমারকি ভালোই হয়েছে বলে ক্লাশে চলে গেলাম। আরো
কয়েকটা ফ্রেন্ড হয়ে গেছে। বেশ ভালোই লাগছে ক্লাশ করতে। দুপুর একটা নাগাদ ক্লাশ শেষ করে গেইট অবদি আসছি আমার সাথে দীনা আর রাতুল ও আছে।

রাতুল আমাদের থেকে এগিয়ে ছিল তাই – আরে রিদ ভাইয়া কেমন আছো?
আমি চমকে ওঠলাম। আর সামনে তাকাতেই ওনাকে দেখতে পেলাম।

বাহ রাতুল এর সাথে বেশ ভালোই ভাবতো। কেমন ভাব জমিয়ে কথা বলছে।
ভাইয়া হঠাৎ এখানে। ( রাতুল)
আসলে রায়হান তোমার সাথে একটু কথা বলবে ফোনে। তাই আসা।

বুঝলামনা ভাইয়াতো আমাকেই ফোন দিতে পারে তাহলে তুমি আসলে কেনো?
আর তুমিতো আমাদের বাসায়উ যাওনা তাহলে এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে আসলে। (রাতুল)

রাতুলকে থামিয়ে রিদ আমতা আমতা করে রায়হান ভাইয়া কে ফোন করলো আর ফোন ধরিয়ে দিল রাতুলকে।

আর ওনি মিটমিটিয়ে হাসছে আমার দিক তাকিয়ে একটু দূরত্বে আমি আর দীনা দাঁড়িয়ে ছিলাম। দীনা আমাকে একটু চিমটি কাটলো আমি চমকে ওঠলাম।

কিরে ওইদিক কি দেখছিস? প্রেমে পড়ে গেলি নাকি লোকটার? রাতুলের পরিচিত বলবো নাকি রাতুলকে বলেই চোখ মারলো.. (দীনা)

আমি একটু হালকা কাশি দিয়ে কি বলছিস যা তা আমি প্রেমে পড়বো কেনো?
যা তা মানে লোকটা কি স্মার্ট দেখেছিস দেখে তো বোঝাই যাচ্ছে বেশ বড় লোক দেখ রাতুলের হাতে অনেক দামী আইফোন। লোকটা বেশ বড় লোক দেখতেও হেব্বি আমিই প্রেমে পড়ে গেছি।

কি বলছিস আস্তে বল শুনতে পাবেতো। দেখ তাকিয়ে আছে।
আরে থাকুকনা আমরাও তাকাই।

এই না না। দীনা এই লোকটাই সেই লোক যে আমাকে কিডনাপ করেছিলো।
ও মাই গড, রেইলি!
হুম এটাই সেই লোক।

ওয়াও সো হ্যান্ডসাম! এতো সুন্দর ছেলেকে টাইড দেওয়া যাবেনা অন্তী। লোকটা বেশ তোর মতোই ফর্সা, লম্বা তো অনেক ছয় ফুটই হবে হয়তো অন্তী এটাকে রিজেক্ট করিসনা, তোর জায়গায় আমি হলে কখনোই রিজেক্ট করতামনা প্লিজ এতো সুন্দর জিজু পেয়ে হারাতে চাই না।

চুপ করবি তুই এতো বাজে বকছিস কেনো তোরা থাক আমি যাই৷ বলেই এসে পড়ব কয়েক পা এগিয়েছি দীনা ডাকছে না শুনেই এগিয়ে যাচ্ছি রিদ ও ডাকছে এই কোথায় যাচ্ছো দাঁড়াও, তারপর রাতুল ডাকলো এই অন্তী…. দাঁড়া খুব দরকারি কথা আছে।

তখন আমি থামলাম। ঘুরে তাকিয়ে বললাম কি কথা?

তারপর ও এসে আমাকে ইমেশনালি ব্ল্যাকমেইল করে বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে রিদের সাথে রেষ্টুরেন্টে যেতে বাধ্য করলো সাথে ওরা দুজনও ছিলো। মুখোমুখি বসে আছি-


পর্ব ৫

আমার বুঝতে বাকি রইলো না রায়হান ভাইয়া রাতুলকে বলে এসব করাচ্ছে। আর রায়হান ভাইয়াকে করাচ্ছে মি. রাফসান চৌধুরী রিদ। তো যাইহোক আমি বসে রাগে ফুসছি আর এরা তিনজন গল্পের ঝুরি খুলে বসেছে। লোকটা খুব তারাতারি মিশে যায় সবার সাথে। কিন্তু আমি চুপ করে আসামির মতো বসে আছি।

মাঝে মাঝে সামনে চোখ চলে যাচ্ছে আর লোকটার হাসি মাখা মুখ ভেসে ওঠছে।

মাঝে মাঝে ওনিও আড় চোখে আমাকে দেখছে আর কথা বলছে ওনার চোখে চোখ পড়তেই আমি সরিয়ে নিচ্ছি। এভাবে অনেকক্ষন চললো ওদের তিনজনের বেশ ভাব হয়েছে দীনার বিহেইভ দেখেতো গা জ্বলে যাচ্ছে। কেমন করছে মনে হয় মায়ের পেটের ভাই। এমন ভাবে রিদকে ভাইয়া ভাইয়া বলছে।

অন্তী… ( রিদ)
ওনার ডাকে চমকে ওঠলাম কি যে বলবে ওদের সামনে আল্লাহ জানে। এমনিতেই মাথায় কেমন করছে অস্থির লাগছে কখন যে জ্ঞান হারাই।

কিছু বলছোনা কেনো। ফ্রি ভাবে কথা বলো কোনো সমস্যা নেই।

আর এইভাবে তোমাদের এখানে নিয়ে এসেছি একটাই কারন। আমি চাই তুমি আমার সাথে মিশো কথা বলো আমাকে চিনো জানো। আমি যদি বলতাম তুমি আসতেনা আর একা আসতে আরো বেশী আপত্তি করতে তাই এই ব্যাবস্থা করেছি।

সেদিন একা বাসায় নিয়েছিলাম কারন সেদিন যে ব্যাপার গুলো শেয়ার করেছি সেটা একান্তই ব্যাক্তিগত ব্যাপার ছিল। সেটা জানার তোমার অধিকার আছে দিয়েছি সেই অধিকার। যা জানানোর জানিয়েছি।

এখন শুধু দুজনকে চেনা জানার পালা। আমি চিনে গেছি জেনে গেছি যা জানার। এখন শুধু তোমার পালা।

প্লিজ আমি বাড়ি যাবো ভালো লাগছেনা শরীর খারাপ লাগছে।
কি বলছো? …. (রিদ)
কি হয়েছে অন্তী। ( দীনা)

নার্ভাস ফিল করছিস? (রাতুল)
ওদের এতো প্রশ্নে আমার আরো অস্থিরতা বেড়ে গেলো কি বলবো বুঝতেছিলামনা৷ তারপর হঠাৎ ই জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। দীনার কাছে শুনেছি আমার ঐ অবস্থা দেখে সেদিন ওনি পাগলের মতো হয়ে গেছিলো।

আমাকে পাজাকোলে নিয়ে দৌড়ে গাড়ীতে ওঠিয়ে হসপিটাল গিয়ে এডমিট করেছিল। দীনা রাতুল অনেকবার বলেছে যে আমি অতিরিক্ত ভয় বা নার্ভাস হয়ে গেলে জ্ঞান হারাই। তারপর ও ওনি কোনো কথা শুনেনি। হসপিটালের ডক্টর আমাকে দেখে বলেছিল তেমন কিছুই হয়নি।

হার্ট দুর্বল বেশি তাই অল্পতেই বেশী নার্ভাস হয়ে যাই, ভয় পেয়ে যাই। আমাকে চেক আপ করে কিছু ওষুধ লিখে দিল। আর বললো ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।

ওনি তারপর ওইদিন আর একটা কথাও বলেনি ওনার গাড়ি করেই তিনজনকে পৌছে দিয়েছে। ওষুধ গুলো আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে গাড়িতেই এছাড়া আর কিছু বলেনি দীনাকে আমার সাথে আমার বাড়ি পাঠিয়েছিলো আর ওনি বেশ দূরত্বে গাড়ি রেখে ওয়েট করছিল দীনাকেও ওনি বাড়ি পৌঁছে দিবে বলে।

দীনা আমাকে রুম অবদি দিয়ে গেলো মা কে সব বললো। মা তো কান্না করে দিয়েছিলো ওমনি বাবাকে ভাইয়াকে ফোন করলো। দীনা চলে গেলো। মা ও আমার পাশে বসে মরা কান্না জুরে দিলো। তারপর আমার খাবার নিয়ে খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়িয়ে বললো ঘুমিয়ে পড় এখন ঠিক হয়ে যাবে। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।

মা খাওয়া দাওয়া কিছু করেনি। বাবা ভাইয়া বিষয় টা নিয়ে তেমন চিন্তা না করলেও মা ঠিক ই চিন্তা করে বাবা এতো বুঝায় যে এটা তেমন কিছুনা তবুও বুঝেনা। ওনার মতে ওনার একমাএ মেয়ের এমন হওয়া বারন। ওনার খাওয়া দাওয়াও বন্ধ। রাতে আমি ওঠে একসাথে মাকে নিয়ে খেয়েছিলাম সেদিন। আমাকে সেদিন রিদ আর ফোন করেননি।

কিন্তু রাতুল ফোন করে খোঁজ নিয়েছে আমার অবচেতন মন যেনো সেদিন টের পেয়েছিল রাতুলের পাশে রিদ আছে। হুম সত্যি তাই রিদই রাতুলকে দিয়ে ফোন করিয়েছিল। ওনি নিজে ফোন করেননি। কারন ওনি আমাকে এতোটাই ভালোবাসে যে ওনার জন্য আমি ভয় বা নার্ভাস ফিল করে অসুস্থ হয়ে পড়ি সেটা চায় না।

আমাকে ওনি কষ্ট দিতে চায় না। সেদিন আমাদের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে অফিস যাবে ভেবেছিল। কিছুক্ষন এর ব্রেক নিয়ে এসেছিলো কিন্তু ওনি আর যেতে পারেননি। রাতুলের বাসায় ছিলেন। আমার খোঁজ নিয়ে তারপর নিজের বাসায় ফিরেছিলেন।

পরপর তিনদিন ওনি আমার সাথে দেখা করেননি। কিন্তু দূর থেকে দেখে চলে গেছেন। সেটা ওনিই বলেছিলেন যখন আমি নিজে ওনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।

ওনার ধারনা ওনি আমার সাথে দেখা করলেই আমি নার্ভাস হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ব তাই ওনি চায় ওনার ভালবাসা ভালো থাকুক তাই ওনি আমার সামনে আসেননি। কিন্তু আমি যে খুব করে চাইছিলাম ওনি আমার সাথে দেখা করুক। একবার বলুক আয়না সুন্দরী কেমন আছো? নাহ ওনি আসেনি।

তিনদিন ওনাকে না দেখে আমি রাতুলকে ফোন করি ওনাকে ফোন করতে লজ্জা বোধ করছিলাম তাই রাতুলকেই ফোন দিলাম ফোন দিয়ে ওনার কথা জিগ্যেস কতেই রাতুল বললো আমি তোর বাড়ি আসছি দীনাকে নিয়ে তুই তোদের ছাদে কফি বানিয়ে যা পাঁচ মিনিটেই আসছি।

আমি বললাম ওকে।
আমি সব রেডি করে ছাদে চলে গেলাম। ওরাও আসলো আমি জিগ্যেস করলাম এখানেই আসছিলি নাকি ওরা বললো হুম এখানেই আসার জন্য বের হয়েছি। আমি বললাম এসেছিস ভালোই হয়েছে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে। রাতুল বললো অন্তী তোর সাথে অনেক কথা আছে। আমি বললাম কি কথা?

রাতুল বললো আমি যা বলি মনোযোগ দিয়ে শুনবি তার আগে একটা কথাও বলবি না।
আমি খুব মনোযোগ দিয়ে ওর দিকে তাকালাম রিদের কথা মনে পড়তেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম বল কি বলবি।

তারপর ও বলা শুরু করলো আমি আর দীনা শুনছি-
কাল রিদ ভাইয়া আমাদের বাসায় গিয়েছিলো ভাইয়াও এসে পড়েছে। তো যাইহোক সবার আগে এটা বলি আমি রিদ ভাইয়াকে অনেক আগে থেকেই চিনি এই ধর পাঁচ ছয় বছর।

আমার ভাইয়া আর রিদ ভাইয়া বেষ্ট ফ্রেন্ড। আমাদের বাসায় তেমন আসেনা তবু একবছর এ তিন চারবার এসেছে তাও ভাইয়ার জোরে আর আম্মার আবদারে। সত্যি বলতে রিদ ভাইয়ার মতো মনের মানুষ খুব কম ই হয়। এতোবড় মাপের একজন মানুষ হয়েও কোনো অহংকার নেই।

সাধারন মানুষের মতোই থাকে সবার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করে আমার আম্মাতো রিদ ভাইয়া বলতে অজ্ঞান। আম্মা সব সময় বলে রাতুল তুই যদি মেয়ে হতি রিদ বাবাকে বলতাম আমার মেয়েটাকে তোমার পায়ে ঠাই দাও। তুই জানিস অন্তী আমার আব্বা মারা যাওয়ার পর আমরা দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম।

আব্বা ছোটো একটা দোকান করে সংসার চালাতো ভাইয়া কেবল ভার্সিটি পড়ে আমি তখন সেভেনে পড়ি এমন সমায় আব্বা চলে যায় আমাদের বাড়ি ছাড়া আর কিছু ছিলনা। তখন ভাইয়ার পাশে রিদ ভাইয়া দাঁড়ায়।

আমাদের তিন জনকে অনেক সাহায্য করে।

রিদ ভাইয়ার বাবাকে বলে তাদের অফিসে ভাইয়াকে জব দেয় পড়াশোনার পাশাপাশি জব করতো তারপর পড়াশোনা শেষ করে রিদ ভাইয়া অফিস জয়েন করে আর আমার ভাইয়াকে আরো বড় পোষ্ট দেয় এখন আমাদের সংসার আমাদের পাড়া শোনা ভালোই চলছে এইসবের পিছনে রিদ ভাইয়ারই সম্পূর্ন অবদান।

আমি আমার আম্মা, ভাইয়া এক ডাকে বলতে পারি রিদ ভাইয়ার মতো মানুষ হয় না। একদম খাঁটি মানুষ। অন্তী অনেক ভাগ্য করে জন্মালে এমন কাউকে পাওয়া যায়। তুই ভাইয়াকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে পারিস।

জানিস সেদিনের পর থেকে ওনি কতো কষ্টে আছে। বার বার আমাকে ফোন দিয়ে তোর খোজ নিচ্ছে। অন্তী ওনি চাইলে জোর করে তোকে পেতে পারবে কিন্তু ওনি তোকে ভালোবেসে জয় করতে চায়।

আর ওনি চায় না ওনার জন্য তোর কোনো প্রকার ক্ষতি হোক। জানিস অন্তী রিদ ভাইয়ার মতো এমন কঠিন মানুষ ও কারো জন্য এতো নরম হতে পারে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস ই করতামনা। তোর জন্য ওনার মুখে প্রানখোলা হাসি দেখেছি তোর জন্য ওনার চোখে পানিও দেখেছি।

রাতুলের এই কথা শুনে আমার বুকটা কেঁপে ওঠলো।

অন্তী রিদ ভাইয়া ভালো নেই ওনি খুব কষ্ট পাচ্ছে খুব তুই ওনার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বল বন্ধুর মতো ভাইয়া এখনি তোর কাছে ভালোবাসা চায় না শুধু বন্ধুত্ব চায় প্লিজ এইটুকু কর অন্তী।

তুই ভয় পাশনা অন্তী ভাইয়া তোকে মন থেকেই ভালোবাসে। একদম খাঁটি ভালবাসা আস্তে আস্তে বুঝবি তুই দেখিস।

রাতুল আর কিছু না বলে থেমে গেলো। আমার মধ্যে কেমন আবার অস্থিরতা বেড়ে গেলো রিদের কথা আরো বেশী মনে প
ড়ছিলো। তাই রাতুলকে জিগ্যেস করলাম।

রাতুল ওনি এখন কোথায়?
ওনি আমাদের বাসায় গেছিলো জানিস তোর জন্য দিনে দুইবার করে গেছে আজো গেছিলো কেমন বিষন্ন মন অন্তী ওটা দেখে আমার খুব খারাপ লাগলো তাই দীনাকে ফোন করে তোর বাসায় আসলাম।

অন্তী ওনার চোখে তোর জন্য গভীর ভালবাসা দেখেছি। কারো জন্য এটা দেখিনি আমরা কেউ ভাইয়ার কাছে শুনেছি ওনি ওনার বাবার প্রতিও এতো সিরিয়াস না যতোটা এই কদিনে তোর প্রতি হয়েছে।

রাতুলে কথা শুনে ওনার সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলো ওনার ফ্যামিলির সব কথাতো সেদিন বলেছে আমায় যদি আপন নাই ভাবতো তাহলে কি ওসব বলতো দুদিনের পরিচয়েই।

আমি রাতুলকে বললাম রাতুল ওনাকে ফোন করে শুনে নে প্লিজ ওনি কোথায়?
ওকে ফোন দিচ্ছি।

রাতুল ওনাকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে রিসিফ করে রায়হান ভাইয়া। কি বলে শুনতে পেলামনা। রাতুল ফোন রেখে বললো অন্তী, দীনা রিদ ভাইয়ার এক্সিডেন্টে হয়েছে তারাতারি চল। কথাটা শুনে আমার শরীর অবশ হয়ে গেলো তারপর নিজেকে একটু শক্ত করে নিলাম।

অন্য সময় হলে জ্ঞান হারাতাম কিন্তু রিদের কাছে যেতে হবে এই চাওয়াটার জন্য সেদিন নিজেকে শক্ত করে নিয়েছিলাম। আর দৌড়ে বের হলাম মা অনেকবার ডেকেছে শুনিনি। তারাতারি সিএনজি নিলাম। ওরা দুজন চুপ হয়ে আছে আর আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।

আমি যেনো এটা মেনে নিতে পারছিনা তিনদিনে ওনাকে একবারো দেখিনি আর আজ ওনার এই অবস্থা তে দেখতে যাচ্ছি। আমার কেমন অপরাধ বোধ হলো রাতুল বলছিল অনেক বিষন্ন মন ছিলো। হয়তো অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চলাচ্ছিল তাই এমন হলো আমি ওনার সাথে ভালোভাবে কথা বললে আজ এমন হতোনা কান্নায় ভেঙে পড়লাম দীনা আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।

বেশকিছুক্ষন পর হসপিটালের সামনে এসে পৌছালাম। ভিতরে যেতেই রায়হান ভাইয়াকে দেখলাম ডক্টরের সাথে কথা বলছে। আমাকে দেখে অবাক ই হলো, খুশিও হলো মনে হয়। রাতুল রায়হান ভাইয়ার কাছে কেবিন নাম্বার শুনে আমাকে নিয়ে কেবিনে চলে গেলো।

আমি রাতুল দীনা দেখলাম ওনার মাথায় ব্যান্ডেজ শুয়ে আছে আমাদের দেখে ওঠে বসার চেষ্টা করলো। রায়হান ভাইয়া দৌড়ে এসে ওকে ধরে বসালো আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি জড়সড় হয়ে দাড়িঁয়ে আছি।

রাতুল ওনার কানে যেনো ফিসফিস করে কি বললো তারপর দীনাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো রায়হান ভাইয়া ও চলে গেলো।

আমি ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম ওনি ওনার চোখ দিয়ে আমাকে এমন ভাবে দেখছে যেন বহুবছর পর দেখা। বেশ কিছু ক্ষন নিরবতা কাটলো। তারপর বললো অন্তী এদিকে এসো.. আমি মাথা নিচু করে ওনার কাছে গেলাম।

তারপর বললো বসো আমি ওনার পাশের মোড়ায় চুপটি মেরে বসলাম। তারপর বললো অন্তী এমন বোকামো যেনো আর না হয় এতো কাদার কি আাছে আমার কিছু হয়েছে কি সামান্য লেগেছে। ওনার কথা শুনে আমি ডুকরে কেঁদে ওঠলাম। কেনো কেদেঁ ওঠলাম সেদিন না জানলেও আজ খুব করে বুঝতে পারি।

তারপর আমার কান্না দেখে ওনি ওনার সব শক্তি দিয়ে ওঠে দাড়িয়ে আমাকে সোজা দাঁড় করিয়ে বললো এইসব কি বোকামো কাঁদছো কেন?

আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম আপনি ওঠেছেন কেনো আপনি অসুস্থ প্লিজ বসুন। ওনি আমার কোনো কথা না শুনে আলতো করে আমার গালে হাত দিলো আমি ওনার স্পর্শ পেয়ে চোখটা বন্ধ করে ফেললাম।

ওনি আমার চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে বললো আর কখনো কাঁদবে না। তোমার চোখের পানি আমার বুকে আঘাত করছে অন্তী। কেদোঁনা প্লিজ সহ্য করতে পারছিনা।

এমনিতেই যে আঘাত পেয়েছি শরীরে আজ তারওপর আবার এই আঘাত দিওনা প্লিজ। ওনার কথা শুনে চোখ মেলে তাকালাম ওনি মিটিমিটি হাসছিলো হয়তো হাসিটা জয়ের হাসি আমার মনে জায়গা করে নেওয়ার আনন্দের হাসি।

আমি আবার চোখ নামিয়ে বললাম আপনি প্লিজ বসুন বসে কথা বলুন। আমার কথা শুনে ওনি বসার আগে হুট করেই আমাকে জরিয়ে ধরলো আমার মাথাটা ওনার বুকে ঠেকলো আমি যেনো কোনো গোল বৃত্তে আবৃত্ত হয়ে গেলাম একদম ওনার বুকের মাঝখানে বন্দি করে ফেললো আমাকে।

জিম করা বডি, হাইট ছয়ফুট আমার মতো দুজোনকে জরিয়ে রাখতে পারবে ওনি আমি মনে হয় ওনার একদম ভিতরে চলে গেছি এমন ভাবে জাবটে ধরে রেখেছে আমায়। সে কি অনুভূতি প্রথমে বুঝে ওঠিনি কিন্তু অনুভূতিটা প্রবল ভাবে প্রকাশ পেলো যখন আমি কাপছিলাম।

ওনার বুকের ধুকপুকানির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। আর ওনি আমার কাপাকাপি অনুভব করতে পারছিলো হয়তো তাই ওনি আমাকে ছেড়ে দিল আর বেডে গিয়ে বসলো। আমি তখনো কাপছিলাম আর ওনি আমাকে দুচোখ ভরে দেখছিল।

তারপর আমাকে বসতে বললো কিন্তু আমি যেন বরফের মতো শক্ত হয়ে গেছি। ওনি বুঝতে পেরেছিল হয়তো তারপর আবার বললো অন্তী বসো একটু জোরেই বললো আমার ঘোর কাটলো আমি লজ্জায় ওনার দিকে তাকাতে পারছিলামনা মাথা নিচু করে বসে পড়লাম।


পর্ব ৬

অন্তী। (রিদ)
……

অন্তী তাকাও এদিকে।

আমি লজ্জায় ওনার দিকে তাকাতে পারছিলামনা।
অন্তী লজ্জা পাচ্ছো।

আমি মাথা নারালাম, না,
ওনি হেসে দিলো আর বললো বুঝতেই পারছি পাচ্ছো কিনা।

বুঝতেই যখন পাচ্ছেন তাহলে জিগ্যেস কেন করছেন অসভ্য। ( মনে মনে)
আমি আসছি বলেই ওঠে দৌড়ে কেবিনের বাইরে চলে গেলাম ওনি পিছু ডাকছিলো কিন্তু এতো লজ্জা পাচ্ছিলাম যে আর দাঁড়ালাম না।

বাইরে গিয়ে ওদের সবাইকে দেখতে পেলাম। সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

আমি রায়হান ভাইয়াকে বললমা – ভাইয়া ভিতরে যান ওনি ডাকছে। রায়হান ভাইয়া ভিতরে গেলো। আমরা তিনজন ওখানেই বসলাম।

ভাইয়া একটু পর আমাদের সবাইকে ভিতরে ডাকলো আমি একা যাবনা বলে রিদই সবাইকে একসাথে ডেকেছে। আমরা ভিতরে গিয়ে দাঁড়ালাম ওনি বললো তুমরা বাড়ি চলে যাও আমি একদম ফিট আছি। আমি আজি বাসায় চলে যাব বাসায় সব ব্যাবস্থা করা আছে ডক্টর ও দিনে দুবার গিয়ে দেখে আসবে।

তোমরা চাইলে আমার বাসায় যেতে পারো মাঝে মাঝে আর আজ এখানে আসার জন্য তোমাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করতে চাইনা। এখন বাসায় চলে যাও তোমরা। রায়হান ওদের পৌছে দিয়ে আয়।

ওনি কথা গুলো বলছিল আর আমার দিকে তাকাচ্ছিল আমি নিচের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। তারপর রায়হান ভাইয়া বললো- চলো।

আমরাও বের হলাম তবে সবার শেষে আমি বের হলাম বের হওয়ার আগে একবার ওনার দিকে ঘুরে তাকালাম-এই যা আবার লজ্জা পেয়ে গেলাম কেমন দুষ্টু হাসি দিচ্ছে মনে মনে ভেবেই ঝড়ের গতিতে বের হলাম।

তারপর বাড়ি ফিরলাম। সন্ধা হয়ে গেছে বাবা, ভাইয়া তখন অফিস থেকে ফিরেছে। আমাকে দেখেই বললো -কোথায় ছিলে?

আমি মাথা নিচু করে বললাম এক ফ্রেন্ড এক্সিডেন্ট করেছে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম রাতুল দীনাও ছিল সাথে। আমার গুমরা মুখ দেখে আর কিছু বললোনা। ভাইয়া বললো তোর রুমে চকলেট রাখা আছে ফ্রেশ হয়ে খা। আমি মাথা নাড়িয়ে চলে আসলাম।

ভাইয়া বাবা একটু অবাক হলো আমার এই নিরবতা দেখে অন্যদিন হলে লাফিয়ে ওঠতাম কিন্তু সেদিন তা করিনি। অবশ্য ফ্রেন্ড অসুস্থ তাই মন খারাপ ভেবেছে। তারপর রাতে ডিনার করে আমার রুমে পাইচারি করছিলাম।

আর ভাবছিলাম আজ কি হলে আমি এতো ভেঙে পড়লাম কেনো। রিদকে কি আমি ভালবেসে ফেললাম। এতো তারাতারি ভালবাসা হয়? তারপর ওনার জরিয়ে ধরার কথা মনে পড়তেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।

দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে ওনাকে ফিল করছিলাম। ওনার বুকে আমার মাথা, ওনার বুকের ধুকপুকানি ওনার জন্য অস্থিরতা, কান্না করা সব কিছু আমাকে বুঝিয়ে দিলো অন্তী ভালোবেসে ফেলেছিস তুই।

হ্যা রিদকে ভালোবাসি ভালবাসি ভালবাসি। নিজের অজান্তেই তিনবার বলে ফেললাম। সাথে সাথে চোখ খুলে ফেললাম। লজ্জায় নিজের দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম।

কিছুক্ষন পর আমার ফোন বেজে ওঠলো ফোন ধরেই আমার হাত কাঁপা কাপি শুরু করলো।

রিদ ফোন দিয়েছে একবার বেজে কেটে গেলো। আবার বেজে ওঠলো সাহস করে এবার রিসিফ করলাম। = কি করছো অন্তী? (রিদ)
আমি আস্তে করে বললাম কিছুনা।

খেয়েছো?

হুম।
গুড। আমিও খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলাম। এখন তোমার সাথে কথা বলে ঘুমাবো।
হুম।

অন্তী…
হুম।
ভালোবাসো আমায়?
আমি কিছু বললাম না।

এবারো কিছু বললাম না।
ওকে বলতে হবে না। তবে আমি বুঝে নিয়েছি অন্তী তোমার চোখের পানিই সবটা বুঝিয়ে দিয়েছে আমাকে।

আই প্রমিস অন্তী আর কখনো অন্য মনস্ক হয়ে গাড়ি চালাবোনা তোমার চোখের পানি ঝড়তে দিবনা আর অন্তী। আমার আয়না সুন্দরী কে কাঁদলে একদমই বাজে লাগে। আর কখনো কাঁদবে না।

অন্তী?

হুম।

ঘুমিয়ে পড়।
হুম।
বাই।

হুম।
পরের দিন ভার্সিটিতে ক্লাশ করে বারোটার দিক চলে গেলাম রিদের বাড়ি। ক্লাশে একদম মনেযোগ আসেনি। মন শুধু রিদকে দেখতে চাইছে কেমন অচেনা একটা মায়া অনুভব করছিলাম রিদের প্রতি। তাই আর কিছু না ভেবেই চলে গেলাম। রাতুল দীনা কাউকে সাথে নেইনি ওদের কিছু বলিওনি।

আমি রিদের বাড়ির সামনে গিয়ে অনেকক্ষন তাকিয়ে দেখছিলাম বিশাল বড় বাড়ি। সামনে বাগান গেইটম্যান তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

ঢুকতে দিবেতো। ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলাম। সেকি আমাকে দেখে সালাম দিয়ে গেইট খুলে দিল। আমিও সালামের জবাব দিয়ে আস্তে আস্তে এগোলাম। সেদিন রিদের সাথে দেখেছে তাই হয়তো আজ চিনেছে।

কলিং বেল বাজাতেই সেই মহিলাটা দরজা খুলে দিলো যিনি সেদিন জুস দিয়েছিলো আমায়। আমাকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে বললো।

আমিও কোনো কথা না বলে দ্রুত পায়ে উপরে রিদের রুমে চলে গেলাম। ওনার রুমে গিয়ে ওনাকে পেলাম না। তারপর কি করবো কিছু বুঝে ওঠতে পারলাম না না জানিয়ে আসা কি ঠিক হলো।

তারপর আমার ঘোর কাটলো হায় আল্লাহ এটা আমি কি করলাম আমি একা একা এখানে এসে পড়লাম কি করে? কীভাবে এলাম? এলামি যখন দীনা বা রাতুলকে সাথে নিয়ে এলাম না কেনো?

নাহ কাজটা আমি ঠিক করিনি ওনার জন্য অস্থিরতা এতোই বেড়ে গেছিলো যে আমি উলটা পালটা কাজ করতে শুরু করে দিয়েছি নাহ এখানে আর এক মূহুর্তও না খোজ নেওয়ার হলে ফোনে নিব৷ চলে যাই ওনি থাকলে বেশ লজ্জা পেতাম ভাগ্যিস নেই। কিন্তু ওনি গেলো কোথায়?

হয়তো কোনো কাজে গেছে বা হসপিটাল গেছে তো যাইহোক পরে খোঁজ নিয়ে নিব। এ বাড়ির লোকগুলো কি যে ভাবলো ছি কেমন অদ্ভুত কাজ যে আমি করি

। মনে মনে নিজেকে গালি দিতে দিতে রুম থেকে বের হব এমন সময় ডাক
শুনলাম কারো। আর থেমে গেলাম- মমতা চাচি আমার টাওয়ালটা দিয়ে যান তো। কিন্তু রুমেতো আমি ছাড়া কেউ নেই ওনি বাথরুমে গেছেন।

তারমানে ওনি বাড়িতেই। এখন কি করি। ওনি তো অসুস্থ আমার কি ওনাকে হেল্প করা উচিত। নাকি কাউকে ডাকবো। কিন্তু আমিতো কাউকে চিনিনা। আরো লজ্জা পাবো এর থেকে আমি ওনাকে এইটুকু সাহায্য করতেই পারি।

যেই ভাবা সেই কাজ কিন্তু টাওয়াল টাওয়ালটা কোথায় পুরো রুম খুজলাম। তারপর বারান্দায় চোখ পড়তেই দেখতে পেলাম টাওয়াল। সেখান থেকে নিয়ে দরজায় টুকা দিলাম। ওনিও দরজা খুলে টাওয়াল নিয়ে বললো এক গ্লাস পানি দিতে ফিল্টার থেকে। এতো মহা ঝামেলা আবার পানি।

পানি যেহেতু চেয়েছে দিতেই হবে। কেউ পানি চাইলে তাকে ফিরিয়ে দিতে নেই। ( একবার স্কুলে আমার খুব পানি পিপাসা পেয়েছিলো। আমি আমার ক্লাসমেট এর কাছে পানি চেয়েছিলাম কিন্তু ও আমায় দেয়নি পরেরদিন ও এসে আমার পায়ে ধরে মাফ চেয়েছিল।

কারন স্বপ্নে নাকি কি দেখেছিলো এটা নিয়ে। কান্নাও করেছিল। পরে আমি ক্ষমা করে দিয়ে ছিলাম। (সত্য ঘটনা আমার জীবনের) )। সেটা ভেবেই আমি পানি গ্লাসে নিয়ে ঘুরে তাকাতেই রিদকে দেখলাম ওনাকে দেখে ভয়ে হাত কাঁপতে কাঁপতে গ্লাস টা নিচে পড়ে গেলো। ওনিও আমাকে দেখে ভুত দেখার মতো চেয়েছিলো।

আমি ওনার চাহনি দেখে কান্না করে দিয়ে বললাম -আমি আসতে চাইনি বিশ্বাস করুন কিন্তু মনটা খচখচ করছিলো তাই কীভাবে এসে পরেছি নিজেও জানিনা। খুব ভুল হয়ে গেছে আর আসবোনা। (কাঁদো কাঁদো সুরে) ওনি আমার অবস্থা দেখে জোরে হোহো করে হেসে দিলেন।

কি হাসি এই হাসি দেখেই যেনো আমি ওনার প্রতি আরো আকর্ষিত হলাম। সেই হাসিতে কোনো ছলনা ছিলনা। ছিলো আমার জন্য ওনার এক বুক ভালবাসা।

আর সেই ভালবাসাতে আমারো তাল মেলাতে ইচ্ছে করছিলো। আমি ওনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ওনি মাথায় আঘাত পেয়েছে তাই মাথায় ব্যান্ডেজটা ছিল৷ শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে অনেক স্নিগ্ধ লাগছে। তবে আরো বেশী ভালো লাগতো যদি চুল ভেজা থাকতো কিন্তু মাথায় আঘাতের জন্য চুল গুলো ভেজাতে পারেনি। তারপর ও যে আকর্ষিত করছে আমাকে এতেই যথেষ্ট।

একমনে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি ফর্সা ধবধবে শরীর টা খুবই মনোমুগ্ধকর লাগছে। লোমশ বুকটা দেখে মনের ভেতর অদ্ভুত অনুভূতিরা শিহরন জাগাচ্ছে। বড্ড লোভ হচ্ছে আজকে ওনার প্রতি। আমার ঘোর কাটলো ওনার ডাকে।

কি ব্যাপার অন্তী। এইভাবে তাকিয়ে আছো। এই ভাবে তাকিয়ে থেকোনা কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে। ওনার কথা শুনে আমি বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম। ইশ কি নর্লজ্জ আমি। চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকালাম।

আর ওনি আমার দিকে এগিয়ে আসলো আমি দু পা পিছুলাম। ওনি আবার আগালো আমিও আবার দু পা পিছুলাম। কেমন একটা ঘোর এর মধ্যে ছিলাম। মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলোনা। একসময় পিছুতে পিছুতে দেয়ালের সাথে ঠেকে গেলাম। ওনি ওনার একহাত দেয়ালে রাখলো আরেক হাত দিয়ে আমার সামনে আসা চুল কানে গুজে দিলো।

আমি ওনার স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠলাম ওনি সেটা বুঝতে পারলেন। তাই হাত সরিয়ে নিলো। আর বললো -ভয় পেয়োনা অন্তী৷ তুমি কতটা ভালবাসা নিয়ে আমার খোঁজ নিতে আমার বাড়ি এসেছো।

তোমার কি মনে হয় এই ভালবাসার অসম্মান করবো আমি। না অন্তী এতো নিখুঁত ভালবাসা পেয়ে আমি সেটার অসম্মান করতে পারবোনা।

তোমাকে অসম্মান করা মানে তোমার ভালবাসাকে অসম্মান করা। আর একটা কথা আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি -সম্মান তুমি তখনি পাবে যখন অপর জনকে সম্মান করতে পারবে। মানুষকে অসম্মান করে কখনো নিজে সম্মানিত বা সফল হওয়া যায় না। আর তোমাকে আমি ভালবাসি তোমার ভালবাসা আর আমার ভালবাসা এখন একই সুতোয় গাঁথা।

আমি ওনার কথা শুনে বললাম কি বলছেন আপনি।

কেনো কি বলছি তুমি কি ভেবেছো ভালবাসার কথা বলোনি বলে আমি বুঝবো না। তোমার চোখের ভাষাতো আমি পড়ে ফেলেছি হসপিটালেই অন্তী।

আর লুকোচুরি করে কি লাভ। ধরাতো তুমি পড়েই গেছো। কিন্তু সমস্যা নেই তোমার মুখে বলতে আপত্তি থাকলে বলো না আমি জোর করবোনা। ভালবাসা তো আর মুখে বলার জিনিস না। মনের ভালোবাসাই আসল ওটা পেলেই আমার চলবে।

আমি ওদিক সেদিক তাকালাম সেটা দেখে ওনি সরে গেলেন। আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যেনো দম টা আটকে ছিলো। সেইদিনই প্রথম আমার হার্টবিট খুব দ্রূত চলছিল। বুকের বা পাশটায় কেমন একটা অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছিল। সে অনুভূতি না দেখানো যায়, না বলে বুঝানো যায়।

তারপর আমি ওনাকে বললাম আসছি আমি। ওনি বললেন না আমার এখানে এসেছো আমার একটা দায়িত্ব আছে আমি পৌছে দিব তোমায় চলো।

না ঠিকাছে আমি চলে যেতে পারবো। আপনিতো অসুস্থ।

আমাকে নিয়ে আর এতো চিন্তা করোনা তো আমি একদম ফিট আছি। মাথায় যেটুকু চোট আছে তিনদিনেই সেরে যাবে। (রিদ)

তারপর ওনি একটা কালো শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে বাথরুম চলে গেলো আমাকে বসতে বলে ৫মিনিটেই বের হলো, চুলগুলো ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে ঠিক করে নিলো ব্যান্ডেজ এর কারনে ভালো ভাবে পারলো না।

আমি একমনে ওনাকে দেখে যাচ্ছি কখন যে ওনি আমার সামনে এসে গেছে টেরই পাইনি। ওনি আস্তে করে কানের কাছে এসে বললো অন্তী এভাবে তাকিও না এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।

আমি চমকে ওঠলাম আর বড় বড় করে ওনার দিকে তাকালাম।

ওনি বাঁকা হাসি দিলো। সেই হাসিটা দেখে আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিল। তারপর ওনি বললো চলো। আমি ওনার সাথে গাড়িতে বসলাম। ওনি আমাকে সেদিনের মতোই ভার্সিটির সামনে থেকে রিকশায় ওঠিয়ে দিলো আমি বাড়ি চলে গেলাম। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিন রাত দশটার দিকে ওনি ফোন করতো একঘন্টা কথা বলতাম। কখনো কখনো দুই, তিন ঘন্টা ও পার হয়ে যেতো।

সকালে অফিস যাওয়ার আগে নিয়ম করে আমার সাথে দেখা করে যেতো। বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে এসে ওয়েট করতো আর আমি ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ না হয়েই সাদে চলে যেতাম ওনার সাথে দেখা করার জন্য। আমার সকালটা ওনার মুখ দেখেই শুরু হতো। ধীরে ধীরে ওনার সাথে বেশ ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছিলো। ওনি মানুষ হিসেবে যেমন খাঁটি মানুষ, বন্ধু হিসেবেও তেমন। ওনার প্রত্যেকটা ব্যপার প্রত্যেকটা বিষয়ই আমাকে মুগ্ধ করতো।

ভাললাগাটা তো শুরু হয়ে গেছে সেই কবেই। আর মনের গভীরের ভালবাসার কথাটাও ওনাকে জানানো হয়নি তবুও মানুষটা সব বুঝে নিয়েছে। দুটো মনই তো এক হয়ে গেছে সেখানে ভালবাসার কথা বলাতে না বলাতে কি আসে যায়। তবুও একবছর হয়ে গেলো এবার বলা উচিত।

হয়তো এই কথা শোনার অপেক্ষায় আছে ওনি। তাই ভাবলাম আজ সরাসরি ওনার অফিস চলে যাবো তারপর সেখান থেকেই দুপুরে দুজন লাঞ্চ করবো বাইরে কোথাও। যেই ভাবা সেই কাজ। সাদা কালারের একটা রাউন্ড ড্রেস পড়ে চুলগুলো ছেরে দিয়ে, চোখে কাজল, ঠোঁটে গোলাপি কালারের লিপস্টিক দিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে নিলাম ভালো ভাবে।

আর মনে মনে বললাম রিদ আপনার আয়না সুন্দরী আসছে। যে কথা শোনার জন্য অপেক্ষায় আছেন আজ সেই কথা আপনাকে বলবো আমি।

রিদের অফিস গিয়ে শুনি ওনি বাড়ি চলে গেছেন। তাই আমি ওনার বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলাম। কিন্তু আমার পিছনে যে কিছু বখাটে ছেলে ছিলো তারা যে আমাকে ফলো করছিলো বুঝতে পারিনি। আমি সিএনজির জন্য বেশ কিছুক্ষন সময় দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু পাচ্ছিনা।


পর্ব ৭

আমি সিএনজির জন্য বেশ কিছুক্ষন সময় দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু পাচ্ছিনা রিকশা ছারা আর কিছু নেই, রিকশা দিয়ে যাওয়াও পসিবল না পঁচিশ, এিশ মিনিট এর রাস্তা। বর্ষা কাল তাই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। আমার ব্যাগ থেকে ছাতা বের করলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে অনেক ভিজে গিয়েছিলাম খুব জোরে বৃষ্টি হতে লাগলো। একটু পরেই শুনতে পেলাম কোথায় যাবেন আপনি?

পিছনে তাকিয়ে দেখি তিনটা ছেলে দেখে বোঝাই যাচ্ছে রাস্তার বখাটে ছেলে। কেমন বাকা হাসি দিচ্ছে। আমি কিছু না বলে হাঁটতে লাগলাম ছেলেগুলো ও আমার পিছনে হাঁটতে লাগলো দূরে কয়েকটা লোক ছিল তারা এগিয়ে আসলো না।

আর আমি একটু ভয় পেয়েই গেছিলাম তাই আরো দ্রুত পা এগুলাম।

আমার পিছনে ছেলে গুলাও দ্রুত এগুচ্ছে আমার খুব ভয় করছিলো তাই আর কিছু না ভেবে ছাতাটা ফেলেই দৌড়াতে লাগলাম ছেলে গুলোও দৌড়াতে লাগলো।

এমন একটা পরিস্থিতি যে আশে পাশে কাউকে দেখতে পারছিনা। ভুল করে ফেললাম নাকি এইভাবে ওখান থেকে সরে এসে। (মনে মনে) বিপদে পড়লে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল খেয়াল থাকেনা আমারো সেই অবস্থা হয়েছিলো।

তারপর আমি দৌড়াতে গিয়ে হাপিয়ে গেছিলাম আর পারছিলামনা তারপর হঠাৎ দেখি একটা গাড়ী আসছে সেই মূহুর্তে খেয়াল ছিলনা এটা কার গাড়ী আমি দৌড়ে গাড়ীটাকে সিগনাল দিলাম গাড়ীটা থামলো।

আমি কাছে যেতেই গাড়ী থেকে রিদ বেরিয়ে এলো আমি ওকে দেখে দৌড়ে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম রিদ আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো রিদ বুঝতে পেরেছিলো আমি ভিষন ভয় পেয়েছি তারপর বললো-ভয় পেওনা অন্তী কিছু হবেনা আমি আছি।

ওনার কথা টা শুনে আমার ভয় কিছুটা কেটে গেলো ওনাকে জরিয়েই ছিলাম তারপর ওনি আমাকে ছাড়িয়ে দিলো আমি ওনার পেছনে দাঁড়ালাম। এদিকে ছেলে গুলোও দৌড়ে আসলো রিদকে দেখে থেমে গেলো। রিদ ভয়ংকর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেগুলোর দিকে ছেলেগুলোও রিদকে দেখে ভয় পেলো আর পিছিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু রিদ ওদের থামতে বললো – দাঁড়া এখানে তোরা এক পা ও নড়বি না।

ছেলে গুলো থেমে গেলো রিদ ওদের কাছে গিয়ে আমাকে দেখিয়ে বললো ওকে এইভাবে দৌড়াচ্ছিলি কেনো? ছেলে গুলো আমতা আমতা করছিলো। রিদ চিৎকার দিয়ে ওঠলো ওর চিৎকারে আমিও কেঁপে ওঠলাম ছেলে গুলো নিচের দিকে মাথা দিয়ে ছিলো। আমিতো খুব অবাক তিনজন ছেলে এই একজন এর সামনে এমন বিড়াল হয়ে আছে কেনো খুবই খটকা লাগলো।

তারপর রিদ বললো জানিস ও কে? ও আমার জীবনের সব। ও আমার হবু স্ত্রী।
কথাটা শুনে আমি চমকে ওঠলাম আমার বুকের ভিতর ধক করে ওঠলো। আর ছেলেগুলোর ব্যবহারে তো আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম কথাটা শোনা মাএই ছেলেগুলো রিদের পা ধরে ক্ষমা চাইছিলো।

স্যার ক্ষমা করে দিন প্লিজ আর এমন হবে না আমরা জানতামনা স্যার ওনি কে।
ও না হয় কে জানতিনা আজ আমি না আসলে তোরা ঠিক কি করতি জানিনা, তবে আজ ওকে চিনে রাখলি কিন্তু অন্যদিন অন্য মেয়েদের সাথে এমন করবি তাহলে তোদের কি করে ক্ষমা করি বল। (রিদ)

না স্যার কসম করে বলছি এমনটা আর কোনোদিন করবোনা বলে কাঁদতে লাগলো। ছেলেগুলো বেশ ভয় পেয়েছে রিদকে দেখে। রিদ তাও ওর ভয়ংকর দৃষ্টি নামায়নি ছেলে গুলো যেনো মরন ফাদে পা দিয়েছে এইভাবে কাঁদছে অবশেষে ওরা আমার পা ধরে ক্ষমা চাইতে লাগলো আমি কি করবো বুঝে ওঠতে পারলামনা রিদ এসে ওদের কলার ধরে ওঠিয়ে একজন কে জোরে থাপ্পড় দিলো। -তোদের সাহস কি করে হয় তোদের পাপী হাত দিয়ে ওর পা স্পর্শ করার বলে আরেকটা থাপ্পর দিলো ওরা মাথা নিচু করে ছিলো।

এইসব দেখে আমার মাথা ঘুরছিলো। আমি বেশী নার্ভাস বা ভয় পেলে জ্ঞান হারাই সেদিন ও তার ব্যাতিক্রম হয়নি তবে তার আগে বলেছিলাম -রিদ ওদের ক্ষমা করেদিন বলেই জ্ঞান হারাই।

রিদ ওদের ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে এসে আমাকে ধরে। আমার পুরো শরীর ভেজা ছিলে ওই অবস্থায় আমার শরীরে হাত দেওয়ার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আমাকে পাঁজা কোল করে নিয়ে গাড়ীতে ওঠিয়ে ওনার বাড়ি নিয়ে যায় এছাড়া কোনো উপায় ছিলনা।

কারন ঐ অবস্থায় আমার বাড়ি নিয়ে যাওয়া পসিবল ছিলোনা। আর ছেলে গুলোকে বললো বেঁচে গেলি আজ নেক্সট টাইম যেনো তোদের রাস্তায় ও না দেখি বলেই চলে আসলো।

রিদ আমাকে ওর রুমে নিয়ে শুয়িয়ে দিয়ে মমতা চাচীকে দিয়ে দিয়ে আমার জামা কাপড় পালটে দিয়েছিলো আর তার একটা শাড়ি কাপর পরিয়ে দিয়েছিলো যাতে জ্বর না আসে। তবুও জর এসেছিলো। আমি জ্ঞান ফেরার পর দেখি রিদ আমার পাশে বসে আছে। আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার পড়নে শাড়ি পেটটা বেরিয়ে আছে একটু এমন অবস্থায় দেখে তারাতারি ওঠে বসলাম। রিদ আমাকে বসতে দেখে বললো অন্তী ভয় পাচ্ছো?

আমি ওনার দিকে করুন চোখে তাকালাম।

ওনি বললো তুমি জ্ঞান হারানোর পর আমি নিয়ে এসেছি। আর তোমার শরীর ভেজা ছিলো জ্বর আসতে পারে বলে মমতা চাচীকে দিয়ে চেন্জ করিয়েছি।
ওনার কথা শুনে নিশ্চিত হলাম। তারপর বললাম আমি বাড়ি যাবো।

তার আগে বলো কিভাবে এসব হলো তুমি কেথায় যাচ্ছিলে?

আমি মাথা নিচু করে বললাম আপনার কাছেই।
ওনি ভ্রু কুঁচকে -আমার কাছে আসছিলে আমাকে একটা ফোন করেছিলে? আমাকে জানাতে পারতে। আজ যদি আমি রায়হানের সাথে দেখা করতে যাওয়ার জন্য না বের হতাম তাহলে কি হতো বুঝতে পারছো তুমি? এমন বোকামো যেনো আর কখনে না হয় অন্তী। ( কঠিন স্বরে) আজকে খু জরুরি কাজ ছিল সেটা করা হলোনা রায়হানকে ফোন দিয়ে না করে দিয়েছি।

আমি মাথা নিচু করেই রইলাম৷
অন্তী কিছু বলবে? কি এমন ব্যাপার যে আমাকে না জানিয়েই বের হয়েছো?
আমি কিছু বললামনা।

কি হলো বলো।
………….
অন্তী আজ কিন্তু মাথা গরম আাছে চুপ করে না থেকে বলো।
…….
এবার ওনি ধমকের সুরে -কি হলো বলো –
আমি কেঁপে ওঠলাম।

বলো অন্তী ( চোখ গরম করে)
আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে- আ…মি ভালবাসি। এটা বলতেই এসেছিলাম। বলেই মাথা নিচু করে ফেললাম।

ধীর গলায় আস্তে করে কাকে?
আমি মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে -আপনাকে।
রিদ আর কিছু বললোনা কিছুক্ষন চুপ করে রইলো তারপর মমতা চাচীকে ডাকলো ওনি সাথে সাথে এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে হাজির হলেন। রিদ গ্লাস নিয়ে ওনাকে চলে যেতে বললেন।

আর আমাকে বললো এটা খেয়ে নাও। আমি মাথা নাড়ালাম। ওনি বললো -অন্তী কোন কথা না খেয়ে নাও তেমার শরীর দূর্বল আর বৃষ্টি তে ভিজেছো এটা দরকার তোমার বলেই ওনি গ্লাসটা মুখের কাছে এগিয়ে দিলো খাওয়িয়ে দিলো আমিও বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিলাম।

তার পর ওনি আমার হাত টা ওনার হাতের মধ্যে শক্ত করে চেপে ধরলো আমার বুকের ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো আর ওনি বললেন আমি এক দৃষ্টিতে ওনার দিকে চেয়ে রইলাম – অন্তী তুমি আমাকে ভালোবাসো সেটা আমি জানি এইভাবে আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। ভালবাসার কথা বলাতে বা না বলাতে কোনো জায় আসে না। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো তারপর ও যেহেতু মুখ ফুটে বলেছো সেহেতু আজ আমি খুব খুশি সারাজীবন আমার পাশে থেকো অন্তী এইভাবেই আর তুমি যদি বলো আজই আমি তোমার বাবা ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।

আমি রিদ কে থামিয়ে দিয়ে বললাম না আজ না আমার সামনে এক্সামটা শেষ হোক তারপর।

ওকে আমার কোনো সমস্যা নেই যা হবে তোমার ইচ্ছাতেই তোমার সম্মতিতেই।
তারপর রিদের ফোন আসলো রিদ ফোন নিয়ে বাইরে গেলো।

আর আমি ওঠে দাড়ালাম শাড়ি আমি কখনোই পড়িনি আজই ফ্রাস্ট তাই ড্রেসিং টেবিল এর সামনে গিয়ে নিজেকে দেখছিলাম। শাড়িতে মেয়েদের এতো সুন্দর লাগে সত্যি আমাকে অন্যরকম লাগছে বড় বড় লাগছে ভেবেই মুচকি হাসলাম। তারপর রিদের রুম ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। বেশকিছুক্ষন পর আমার ওয়াশরুম যাওয়ার প্রয়োজন হলো তাই রিদের ওয়াশরুমে চলে গেলাম।

জীবনে প্রথম শাড়ি পড়লে যে এই হাল হয় আগে জানতামনা। এখন কি করি আমি কিভাবে বাইরে যাই। আমার শাড়ীটা একদম খুলে গেছে খুব ভয়ে ভয়ে কোনো রকমে পেচিয়ে বের হচ্ছি শাড়িটা পেঁচিয়ে রাখার জন্য আঁচল টা ফ্লোরে মেলে ছিলো আর আমার পায়ের সাথে লেগে আমি ওপুত হয়ে পড়ে গেলাম আর জোরে চিৎকার দিলাম।

আমার চিৎকার শুনে রিদ দৌড়ে এলো আর আমাকে ঐ অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে গেলো। শাড়িটা ফ্লোরেই পড়ে আছে রিদ কি করবে বুঝে ওঠতে পারলোনা চোখ ফিরিয়ে নিলো।

এরকম একটা অবস্থায় পড়বো কখনো ভাবিনি। এমনই অবস্থা যে ওঠতে পারছিলামনা ওঠতে পারলে হয়তো শাড়িটা তারাতারি শরীরে পেঁচিয়ে নিতাম। আর কোনো উপায় না পেয়ে চুল গুলো সামনে ছরিয়ে দিলাম।

আর অসহায় দৃষ্টিতে রিদের দিকে তাকালাম ও অন্যদিকে তাকিয়ে আছে আমার মনে হয় যতটা অসস্থিতে আমি ছিলাম তার থেকে দ্বিগুন অসস্থি ওর হচ্ছিলো।

আমি কোনো রকমে ওঠার চেষ্টা করলাম একটু ওঠে যেই পা ফেলেছি সাথে সাথে ব্যাথায় কুকরে ওঠলাম আর পড়ে গেলাম।

আমি পা আর কোমড়ের ব্যাথায় কেঁদে ওঠলাম। রিদ আমার দিকে তাকালো আমার চোখের পানি দেখে, আমার কান্না দেখে রিদ সহ্য করতে না পেরে আর কিছু না ভেবে আমাকে কোলে তুলে নিল চোখ বন্ধ করে।

রিদের ভেতর তখন কি চলছিল আমি বুঝতে পারছিলাম ওর হার্টবিট ওঠানামা করছিলো খুব দ্রুত আমার পুরো শরীর শিউরে ওঠেছিলো।

রিদের এক হাত আমার পেটে লেগেছিলো রিদের ও হাত কাপছিলো আমাদের দুজনেরই হার্টবিট ওঠানামা করছিলো।

দুজনেরই যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। রিদ আমাকে খাট এ বসিয়ে দিয়ে শাড়িটা আমাকে দিয়ে বললো পড়তে পারবে?

আমি কিছু বললাম না।
রিদ বললে ওয়েট মমতা চাচীকে ডেকে আনছি।

বলেই দরজা অবদি গিয়ে আবার ফিরে আসলো। অন্তী মমতা চাচীকে ডাকতে গেলে সে খুব বাজে মাইন্ড করতে পারে তুমি কি একটু কষ্ট করে পড়ে নিতে পারবেনা।

আমি মাথা নাড়ালাম। ওনি চলে যেতে নিলো আমি ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু পা ফেলতে গিয়ে ব্যাথায় কুকড়ে ওঠলাম আমার আহত গলা শুনে ওনি তাকালো আমার কাছে এসে আমাকে ধরে বললো – অন্তী পায়ে খুব লেগেছে আমি কান্নার সুরে মাথা নারালাম ওনি আর কিছু না বলে শাড়ীটা দ্রুত আমাকে পড়িয়ে দিয়ে কুচি করে আমার হাত দিয়েই গুজে দিলো পেটে।

তারপর ওনি আমার পা ধরে এদিক সেদিক নারাতেই আমি কেঁদে ওঠলাম ওনি বুঝতে পেরে ওনার পরিচিত ডক্টর কে ফোন করলো। সাথে রাতুল দীনাকেও দীনা আসার পর ওকে দিয়ে আমার বাসায় ফোন করে বলে দিলো আজ দীনার বাসায় থাকবো। ঝুম বৃষ্টি থাকার কারনে বাবাও রাজি হয়ে গেলো

আর আমিও রইলাম রিদের বাড়ি সাথে দীনা, রাতুল ও। রিদের প্রত্যেকটা কাজই আমাকে মুগ্ধ করে তুললো মন বার বার বলছিলে রিদকে ভালোবেসে কোনো ভুল করিনি আমি। ও ইচ্ছে করলেই অনেক সুযোগ নিতে পারতো কিন্তু নেয়নি ভালবাসার সঠিক সম্মান করেছে।

নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হচ্ছিল যে এমন মানুষ আমাকে ভালোবাসে সত্যি রায়হান ভাইয়া রাতুল ঠিকই বলেছে রিদ সত্যি আলাদা।

রাতুল, রিদ, দীনা সবাই গল্প করছে আর আমি বিছানায় বসে বসে ওদের গল্প শুনছি। অন্য সময় হলে কথার ঝুরি খলে বসতাম কিন্তু রিদ সামনে থাকাতে লজ্জায় সেটা পারছিনা। রিদ মাঝে মাঝে আমাকে দেখছে আমিও দেখছি চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় আবার চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছি।

এভাবেই বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়া হলো। রাতে ডিনার করার পর আমরা চারজন মিলে ছাদে গেলাম সেখানেও আড্ডা হলো অনেকক্ষন। আমি ও ভালোই সহজ হয়ে গেছি ততোক্ষন এ বেশ ভালোই লাগছে।

তারপর রাতুল নিচে চলে গেলো দীনাও ঘুম পেয়েছে বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম ওরা ইচ্ছে করেই এটা করলো। রিদ আমার পাশে এসে দাঁড়ালো আমিও চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। রিদ ও তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে।

অন্তী আজ আমি পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ। চারদিকে নিস্তব্ধতা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি আমার ভালবাসার মানুষের সাথে চাঁদের আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠেছে দুজোরা চোখ, একজোড়া হ্রদয়।

সত্যি এর থেকে সুখের আর কিছু হতে পারেনা। বলেই রিদ ওর চোখ দুটো বন্ধ করে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো – অন্তী ভালোবাসি খুব ভালবাসি। সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই আগলে রাখতে চাই সেই সুযোগটা কি দেবে আমায় বলেই আমার দিকে ঘুরে তাকালো।

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই রিদ আমাকে জরিয়ে ধরলো। আমার মাথাটা ওর বুকে ওর হ্রদ স্পন্দনের শব্দ শুনতে পাচ্ছি আমি। আমার পুরো শরীরে অচেনা একটা শিহরন বয়ে গেলো আমিও ধরলাম রিদকে খুব শক্ত করে। কতোক্ষন ওভাবে ছিলাম জানিনা তবে মনে হচ্ছিলো সময়টা যেনো ওখানেই থমকে যায়।

তারপর রিদ আমাকে ছেড়ে আমার মুখটা দুহাতে আলতো করে ধরলো আমার বুকটা কেঁপে ওঠলো অজানা ভয় এ।

আমার হার্টবিট আরো বেড়ে গেলো হাত পা কাঁপতে শুরু করলো আমি রিদ বলতেই আমার দুজোরা ঠোঁট রিদ শাহাদাৎ আঙুল দিয়ে চেপে ধরলো আমি আর কিছু বললাম না শুধু দুচোখ বন্ধ করে ফেললাম। চোখ দুটো খুললাম কিছুক্ষন পর যখন রিদ কপালো আলতো করে চুমু দিলো। সে কি অনুভূতি এটাকেই বোধহয় বলে ভালবাসার পরশ।

এসুখ যেনো অন্যরকম এক সুখ আমার চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গরিয়ে পড়লো এতোটা ভালোবাসে রিদ আমায় এতোটা সম্মান এতো ভালো কেউ হয় সেসবই ভাবছিলাম। আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলো, যখন রিদ আমায় কোলে তুলে নিল। আমি কি বলবো কি করবো বুঝে ওঠতে পারলাম না।

ও আমার সামনে আসলে আমি যেনো কেমন চুপ হয়ে যাই দুচোখ ভরে দেখা ছাড়া আর কিছু করতে পারিনা। ওর প্রতি কেমন একটা ভরসা এসে গিয়েছিলো।

এই মানুষটা আমাকে অসম্মান করতে পারেনা আমার ক্ষতি করতে পারেনা অচেনা একটা মায়া, বিশ্বাস, ভরসা অনুভব করতে পারছিলাম তাই কিছু বলতে পারেনি শুধু বুকের ভেতর আলাদা শিহরন বয়ে যাচ্ছিলো।

রিদ আমাকে ওর রুম এর সামনে এসে নামিয়ে দিয়ে বললো আজ তুমি আর দীনা এখানে থাকবে। আমি বললাম – এটাতো আপনার বেডরুম।
তো কি হয়েছে আমার থেকেও তোমার অধিকার বেশী এখন এইরুমে বুঝলে বলেই বাঁকা হেসে আমাকে রুমের ভিতর ঢুকিয়ে দিলো। আর প পাশের রুমে চলে গেলো।

পরেরদিন সকালে অফিস যাওয়ার আগে তিনজনকেই বাড়ি পৌছে দিলো। আসার সময় ও বাড়ির কাজের লোকগুলো আমাকে আবার যাওয়ার কথাও বলে দিল আমি শুধু মাথা নারালাম। আর মমতা চাচীতো আমাকে বৌমা বলেই সম্বোধন করেছে বেশ লজ্জা পেয়েছি তাতে।

এভাবেই কেটে গেলো একবছর রিদের সাথে আমার সম্পর্কটাও বেশ জোরালো হয়ে গেছিলো। ততোদিনে রিদের সম্পর্কে ও অনেক কিছু জেনে গিয়েছিলাম। রিদ নিজেই বলেছে সব আমায়। রিদের বাবা খুব নামকরা বিজনেস ম্যান সেই সাথে খুব পাওয়ার ও আছে পলিটিকস ও করতো একসময় সেই সুবাদে এখনো সবাই তাকে ভয় পায়।

দেশের বাইরে থাকলেও তার হাত বেশ লম্বা। রিদ ও কম না বাবার থেকে এক ধাপ এগিয়ে। কিন্তু রিদ মানুষের ক্ষতি করেনা সবসময় মানুষের পাশে থাকে। অসহায়দের সহোযোগিতা করে।

যে টুকু বেপরোয়া ছিলো সেটুকু ও কমে গেছে আমার জন্য। সারা দুনিয়ার কাছে রিদ বদ মেজাজি রাগী হলেও আমার কাছে একদমই ঠান্ডা মানুষ। আমার প্রতি ওর অনেকটাই দুর্বলতা ছিলো। ভালবাসার মানুষ ছিলাম এখনো আছি তাই অনেক দুর্বল ছিলো।

আরশিকে কথাগুলো বলে অবন্তী থেমে গেলো। চোখ দুটো ভেজা। অবন্তী রিদের ভালবাসার কথা শুনে আরশির ও চোখ বেয়ে পানি আসলো। তারপর আরশি অবন্তীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো অন্তী বাকিটা রাতে শুনবো মামি অনেকনার ডেকে গেছে এখন নিচে চল।

অন্তী চোখ ভালোভাবে মুছে ঠোটের কোনে হাসি রেখে বললো- হুম চল।
আরশি অন্তীর কপালে চুমু দিয়ে বললো চলো বোনু।

রাত দশটার দিকে অবন্তী আর আরশি রাতের খাবাড় খেয়ে শুয়ে পড়লো। আরশি অন্তীর দিকে মুখ ঘুরে বললো -তারপর কি হলো অন্তী?

অন্তী আবার অতীতের কথা বলতে শুরু করলো –

১৫ই এপ্রিল সেদিন আমি ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরে দেখি ভাইয়া আর মা সোফায় বসে কথা বলছে ওদের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সিরিয়াস কিছু নিয়ে আলোচনা করছে। আমি আসাতেই চুপ হয়ে গেলো। আমি বললাম – কি ব্যাপার কি নিয়ে মিটিং চলছে বলেই হেসে দিলাম। মা বললো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।

কিন্তু ভাইয়া কিছু বললোনা। মুখটা খুবই বিষন্ন লাগছিলো।

আমি বললাম- ভাইয়া কি ব্যাপার কি হয়েছে ভাইয়া ওঠে আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো কিছুনা খেয়ে নে পরে কথা হবে বলেই বেরিয়ে গেলো। ভাইয়া যে চাপা স্বভাবের মানুষ তাই আমিও আর কিছু ভাবলামনা। কিন্তু বিষয়টা ভাবালো রাতে যখন ভাইয়া আমার রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।

আর বললো অন্তী এদিকে এসে বোস কথা আছে। আমি টেবিলে বসে পড়ছিলাম। ভাইয়ার কথা শুনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো। ধীর পায়ে এসে বোসলাম ভাইয়াও বসলো।

তারপর যা বললো সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।


পর্ব ৮

অন্তী আমি জানতে চাইনা তুই কাউকে ভালোবাসিস কিনা? তোর লাইফে কেউ আছে কিনা সেটা জানার মতো কোনো আগ্রহ আমার নেই। শুধু তোকে একটা কথা বলি আমি বাবা মা যা করবো তোর ভালোর জন্যই করবো।

তোর সুখের জন্যই সব করবো তাই কোনো পিছুটান না রেখে আমাদের সবার কথা তুই মেনে নিবি এটাই চাই। বাবার সম্মানে যেনো আঘাত না লাগে আমরা দুইভাইবোন সেটাই করবো।

কি হয়েছে ভাইয়া হঠাৎ এসব বলছিস কেনো? (অবন্তী)
অন্তী কি হয়েছে সেটা তোকে বলার প্রয়োজন নেই আমার মতে, তবুও বলছি তুই যেটা করছিস ভুল করছিস। আর আমি আর বাবা থাকতে এতোবড় ভুল কখনোই করতে দিবনা। তুই আমার একমাএ বোন, বাবার একমাএ মেয়ে।

আমার বোন সুখে থাকুক। বাবার মেয়ে সুখে থাকুক আমরা এটাই চাই। মানুষ ভুল করবেই কিন্তু পরিবারের সকলের উচিত সেই ভুল ভাঙিয়ে দেওয়া। সন্তান ভুল করলে বাবা মা, বড় ভাই বোন সে ভুল ভাঙিয়ে দিয়ে সঠিক পথ দেখাবে।

আমরাও ঠিক তাই করছি। তুই বড় হয়েছিস ভালো মন্দ বুঝবি। কিন্তু আমাদের কাছে এখনো ছোটোই আছিস তাই তোর ভুলটা সুদরে দিব।

ভাইয়ার কথাগুলো শুনে অজানা এক ভয় কাজ করছিলো তবে কি ভাইয়া রিদের বিষয়টা জেনে এমন করছে। তাই যদি হয় তাহলে ভাইয়া বাবাকে বুঝাবো রিদ ছেলে হিসেবে যথেষ্ট ভালো শিক্ষিত ছেলে দেখতেও বেশ সব দিক থেকে আমাদের ছাড়িয়ে। রিদ কে মেনে নিতে অসুবিধা হবেনা কারো। হয়তো ওর সম্পর্কে জানেনা তাই এমন কথা বলছে। (মনে মনে)

ভাইয়া কেনো এসব বলছো? আমি তেমন কিছু করিনি।
হুম জানি তেমন কিছু করিসনি তাই বলছি যেটার মধ্যে আছিস বেরিয়ে আয় তাতেই মঙ্গল।

আমি ভাইয়াকে রিদের বিষয় বলার জন্য যেই বলেছি -ভাইয়া রিদকে…..
সাথে সাথে ভাইয়া আমাকে থামিয়ে দিলো। -ব্যাস আর কিছু শুনতে চাইনা। আমি আবার বললাম ভাইয়া তুই ওকে চিনিস না জানিস না। তাই আগে সবটা শোন।

তাই নাকি = মি. রাফসান চৌধুরী, পিতাঃ রিশতাক চৌধুরী, মা মৃত। ঢাকা শহরের টপ বিজনেস ম্যান সেই সাথে পলিটিকস এর হাত ও বেশ লম্বা। বাবা মা ছাড়া একাই মানুষ হয়েছে টাকার উপরে রাজ করে। রাস্তার বখাটে ছেলে পুলেরাও রাফসান চৌধুরী কে ভয় পায়। আরো কি চিনতে বলছিস তুই?

ভাইয়া রিদ এর সম্পর্কে তুমি বাইরে থেকে জেনেছো কিন্তু আমি ভেতর থেকে জেনেছি৷

ব্যাস অন্তী। আর জানার নেই কিছু। অন্তী আমাকে দেখে কয়জন ভয় পায় বলতো। বাবা মায়ের শিক্ষায় বড় হয়েছি মধ্যবিও ফ্যামিলিতে। কই আমায়তো কেউ ভয় পায় না। না দেখাই টাকার গরম না দেখাই ক্ষমতা।

দেখ আমাদের সাথে ওদের মিলবে না। ওরা বড় লোকের ব্যাপরোয়া ছেলে আজ ভালবাসছে কাল রাস্তায় ফেলে দিবে। বাবা মা ছাড়া বড় হয়েছে মা ছারা একটা মেয়েকে কি সম্মান দিতে হয় একটা ছেলে কি করে শিখবে। মা ই তো ছেলে মেয়েদের ভালো মন্দ শিক্ষা দিবে।

আর সৎ মা শিক্ষাতো দূরের কথা দেশে একা ফেলে চলে গেলো স্বপরিবার নিয়ে। সেই ছেলে ভালো মন্দ কি করে শিখবে কি করে জানবে কোনটা ভালো কোনটা মন্দ৷ পরিবার ছারা বড় হয়েছে আর তুই পরিবারের সকলের ভালবাসায় বড় হয়েছিস। অন্তী দুনিয়াটা বড় কঠিন।

বাইরের জগৎ ছেলেদের মনের খবড় তুই জানিস না। বাবার একটা সম্মান আছে অন্তী সেটা তুই ধুলোয় মিশিয়ে দিস না।

রিদের পরিবারের সাথে আমাদের মিলবেনা কখনোই। আর তুই রিদকে বিয়ে করলে কখনো শশুর শাশুড়ীর ভালবাসা পাবিনা। একা একা তুই কিভাবে থাকবি।
পরিবার ছাড়া কিছু হয় না অন্তী। আর রিদের রাগ জেদ সম্পর্কে তুই জানিস না।

তোকে বিয়ে করে যে টর্চার করবেনা তার কোনো গ্যারান্টি নেই।

ভাইয়া না রিদ আগে কি ছিলো জানিনা কিন্তু রিদ আমাকে পাগলের মতো ভালবাসে ভাইয়া রিদের বাবা মা ওর কাছে নেই এটা কি ওর দোষ বল।

রিদের মায়ের মৃত্যুতে কি ওর হাত আছে? সবতো উপরওয়ালা করেছে তার শাস্তি কেনো ও পাবে বল ওর কি অপরাধ ও আমাকে ভালোবাসে ভাইয়া আমার থেকে হাজারগুন বেশী ভালোবাসে আমায়।

আমি রিদকে ঠকাতে পারবোনা ভাইয়া কোনোভাবেই না।
হ্যা ওর হাত নেই সেই সব এ কিন্তু তোর অপরাধ কি যে তুই পরিবার ছাড়া সারাজীবন কাটাবি। রিদের একার জীবনে তুই ও অংশীদার হবি তোরতো একটা ভবিষ্যৎ আছে তোর বাচ্চারা কেনো দাদা-দাদী পাবেনা। তাদের কি দোষ।

আর সবথেকে বড় কথা আমি বা আমরা কেউ চাইনা আমার বোনের স্বামী বোনের শ্বশুর কোনো গুন্ডা বা মাস্তান হোক। আমার বোনের ছেলে মেয়েকে দেখে কেউ ভয় পাক যে অমকের নাতি অমকের মেয়ে। আমরা চাই তোর ভালো একটা পরিচয় যেখানে সকলের শুধু সম্মানই থাকবে কোনো ভয় থাকবেনা।

ভাইয়া রিদ অমন না রিদের বাবাকে ভয় পেলেও রিদকে সবাই সম্মান করে রিদ আলাদা ভাইয়া তুই ওর সাথে দেখা কর একবার তাহলেই বুঝবি সবটা।

ব্যাস অন্তী রিদকে ভুলে যা বাবার বন্ধুর ছেলে এস আই পদে চাকরি করছে কয়েক বছর পরে আরো বড় পোষ্টে যাবে ওর সাথেই তোর বিয়ে ঠিক করেছি আমরা। জেনে শুনে আমরা তোকে কোনো মস্তানের বাড়িতে পাঠাবোনা।
ভাইয়ার কথা শুনে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো রিদের সম্পর্কে এতো অসম্মানজনক কথা শুনে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।

কিন্তু এটা কি বললো ভাইয়া অন্য কাউকে বিয়ে মানে না কখনোই না রিদকে ছাড়া অন্য কাউকে জীবন সঙ্গী করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

ভাবতে ভাবতে আমি নিচে বসে পড়লাম। কান্নায় ভেঙে পড়লাম। ভাইয়া মাথায় হাত বুলিয়ে বললো –
অন্তী বোন আমার এমন করিসনা তোর ভালোর জন্যই করছি সব একদিন ঠিক বুঝবি। বলেই চলে গেলো। আর আমি পাগলের মতো ছটফট করতে লাগলাম এখন কি করবো আমি।

আমার খুব মাথা ঘুরছিলো অন্যসময় হলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতাম কিন্তু ওই সময়টায় বোধহয় আমার দূর্বলতাও কেটে গেছিলো শুধুমাত্র রিদকে হারানোর ভয় এ। আমি তারাতারি ওঠে পাগলের মতো ফোন খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও পাচ্ছিনা তারপর মনে পড়লো ফোন চার্যে তাই তারাতারি চার্য থেকে ফোন খুলে রিদকে ফোন করলাম কিন্তু রিদ ফোন রিসিফ করলোনা, পরপর দশবার রিং দিলাম তাও কাজ হলোনা।

আমি আরো ভেঙে পড়লাম। আর ভাবলাম রিদতো রাতে আমায় ফোন করে আজ তাহলে করলোনা কেনো? আমি ফোন দিলাম তাও রিসিফ করলো না। এই সময় তোমাকে খুব প্রয়োজন রিদ বলে কাঁদতে লাগলাম। বুকের ভেতর কেমন শূন্য শূন্য লাগছিলো কিছু ঢুকছেনা মাথায় কি করবো। তারপর রায়হান ভাইয়া কে ফোন দিলাম। কিন্তু কাজ হলোনা ফোন বন্ধ রিদকে আরো এগারোবার ফোন করলাম নাহ কোনো রপসপন্স নেই। রাতুলকে ফোন করলাম। দুবার রিং হতেই রিসিফ হলো, –

রাতুল রায়হান ভাইয়া কোথায়?
কেনো এতোরাতে ভাইয়াকে কি দরকার? আর তোর ভয়েস এমন লাগছে কেনো?

প্লিজ বল রায়হান ভাইয়া কোথায়? ( কান্নাজরিত কন্ঠে)।
ভাইয়াতো অফিসের কাজে ময়মনসিংহ গেছে রিদ ভাইয়াও গেছে। তুই জানিসনা? রাগারাগি হয়েছে কি?

নাহ ঠিক আছে।

রাতুলের সাথে কথা বলে ফোন কেটে আমি আরো জোরে কাঁদতে লাগলাম।
রিদ আমাকে না জানিয়েই ময়মনসিংহ চলে গেলো আমাকে একটাবার ফোন করলোনা। আর আমার ফোন ও রিসিফ করছেনা এখন আমি কি করবো। আল্লাহ প্লিজ পথ দেখাও।

সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলে গেছিলো সকালে ব্রেকফাস্ট না করেই বাবা ভাইয়া ড্রয়িংরুমে আসার আগেই বেরিয়ে গেলাম। মা কে শুধু বলে গেলাম রাতুলদের বাড়ী যাচ্ছি। কেনো জিগ্যেস করেছিলো কোনো উত্তর দেইনি। রাতুলদের ওখানে গিয়ে রাতুলকে সব খুলে বললাম।

রাতুল সব শুনে রায়হান ভাইয়া কে ফোন করলো এবার রিসিফ হলো। আর বললো তারা ফিরছে ঢাকা রাতুল বললো -রিদ ভাইয়াকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসো।

কেনো? ( রায়হান )
অন্তী এসেছে খুব ঝামেলা হয়েছে।, (রাতুল)
কি বলছিস ওকে ওকে। আর শোন রিদের ফোন অফিসে ফেলেই বেরিয়ে গেছিলো খুব দরকারি কাজে গেছিলাম আমার ফোনেও চার্জ ছিলো না তাই অন্তীকে জানাতে পারেনি রিদ ওকে বলে দিস। (রায়হান)
হুম (রাতুল)
দুঘন্টা পর রায়হান ভাইয়া আর রিদ আসলো।
আমি চুপ করে বসে ছিলাম একদিকে তাকিয়ে।

রিদ এসে আমার কাঁধে হাত রাখলো আমি সাথে সাথে ওর দিকে তাকালাম আমার মুখ দেখে রিদ চমকে গেলো।
অন্তী এই কি হয়েছে বলেই আমার দুকাধে ধরে ওঠালো। আমার দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। রিদ বললো- এই অন্তী কি হয়েছে। কতোবার বলেছি বোকার মতো কাঁদবে না। এই সরি কান ধরছি আর কখনো এমন হবেনা।

অফিসের এতো চাপে পড়ে ফোন ফেলেই চলে গেছি এতোটাই বিজি ছিলাম যে তেমাকে জানাতেও পারিনি ওখানে অনেকের ফোন ছিলো কিন্তু এতো জরুরি কাজে গিয়ে এসব করলে হাসির পাএ হতাম। সরি অন্তী আর কখনো এমন হবেনা একরাতেই চোখ মুখের কি হাল করেছো অন্তী। এমন পাগলামি কেউ করে।

অফিসে ফোন দিতে তাইতো জানতে আমি কেথায়। আচ্ছা আর কখনো এমন হবে না। না বলে কোথাও যাবোনা প্রমিস এতে যত ক্ষতি হওয়ার হোক বউ এর থেকে দামী কিছুনা৷ এই দেখো কান ধরছি বলে দুকান ধরে ওঠবোস করতে লাগলো। আমি সেটা দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠলাম। আর রিদ থেমে গেলো আর আমাকে জরিয়ে নিলো ওর বুকে। আমি ওর বুকে মিশে গেলাম খুব শক্ত করে ধরলাম ছাড়লেই যেনো ওকে আমার থেকে কেউ নিয়ে নিবে।

রিদের খটকা লেগেছিলো আমার কান্না দেখে তাই ছেরে দিলো আমায়। আমিও সরে গেলাম। রায়হান ভাইয়া আর রাতুল ওখানেই ছিলো।

রিদ বললো- রায়হান তোর রুমে একগ্লাস পানি দেতো বলেই আমার হাত ধরে রায়হান ভাইয়ার রুমে নিয়ে গেলো রাতুল এদিকে রায়হান ভাইয়া কে সব বলে দিয়েছে। রায়হান ভাইয়ার মুখে ভয়ের ছাপ। রিদকে ভালোভাবেই চেনে তাই কিছু না বলে রাতুলকে দিয়ে পানি পাঠিয়ে দিয়েছে।

রিদ আমাকে বিছানায় বসিয়ে পানিটা খেয়ে নিলো। তারপর আমার পাশে এসে বসে আমাকে বুকে জরিয়ে নিলে। তারপর কানের কাছে এসে বললো- অন্তী পৃথিবীর কারো সাধ্য নেই তোমাকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিবে। এক আল্লাহ ছাড়া কেউ আলাদা করতে পারবে না আমাদের। তাই সব ভয় বাদ দাও। আর চোখের পানি অনেক ফেলেছো অন্তী কেঁদে কেঁদে তো চোখ গুলো ফুলিয়ে ফেলেছো।

তুমি কি জানোনা তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারিনা নাকি নতুন করে আবার জানাতে হবে। বুকের বা পাশটায় যে থাকো সেখানে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে টের পাচ্ছোনা। নাকি ইচ্ছে করেই শাস্তি দিচ্ছো।

রিদের কথা শুনে আমার কান্না থেমে গেলো। চুপ করে বুকের ধীর গতিতে হার্টবিট ওঠানামা শুনছিলাম আর ভাবছিলাম এই মানুষটা কি, কি দিয়ে তৈরী এতোটা আদর মেখে এতোটা ভালবেসে কিভাবে বলতে পারে এই মানুষটা। সত্যি এই মানুষটা বড্ড ভালোবাসে আমায়। কিছু না বলতেও কিভাবে বুঝে গেলো আমার কান্নার কারন। সত্যি রিদ আপনি আমার জন্যই তৈরী।

হুম অবশ্যই।
আমি চমকে ওঠলাম আর রিদের থেকে সরে যেতে নিলাম।

কিন্তু রিদ আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো আরো। আর বললো-
কথা বলছি মাঝখানে ডিস্টার্ব করছো কেনো। চুপচাপ এখানে থাকো নয়তো খবড় আছে।
আমি আর কিছু বললাম না।

তারপর রিদ বললো অন্তী আমার ধীর বিশ্বাস আমার এই বুকের বাম পাজোঁড় দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাকে বানিয়েছেন। তোমার মনের ভেতর কি চলছে কিছুটা হলেও বুঝতে পারি, কিছুটা চোখের ভাষা, কিছুটা বুঝে নেওয়ার অভিজ্ঞতা কিছুটা আত্মার টান, কিছুটা ভালবাসার টান। আর আমি এটাও জানি তোমার পরিবারের কেউ কিছু বলেছে তাই তুমি এতোটা ভেঙে পড়েছো। তাই ঠিক কি হয়েছে আমায় বলো। বাকিটা আমি সামলে নিব।

শুধু চোখের পানি ফেলোনা এটা কোনো সলিউশন দিবেনা।

আমি রিদের কথা শুনে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিলাম। তারপর ভাইয়ার বলা প্রত্যেকটা কথা রিদকে জানালাম। সব শুনে রিদ আমাকে ওঠিয়ে দুহাতে আমার দুগালে আলতো করে ধরে কপালে চুমু দিলো তারপর বললো অন্তী এখানে থাকো আমি ২০মিনিটেই আসছি বলেই বেরিয়ে গেলো।

আমি ওনার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলাম।

সারারাত ঘুমাতে পারিনি তাই বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই ঘুমিয়ে গেলাম।
যতক্ষন ঘুমিয়েছি ততোক্ষনে রিদ আমার জন্য খাবাড়ের ব্যবস্থা করে রুমে আসলো-আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে ডাকলো -অন্তী ওঠো।

আমি ওকটু নড়ে আবার ওপাশ ঘুরে শুলাম। রিদ আবারো ডাকলো। সারারাত ঘুমাইনি তাই ঘুমাচ্ছি এখন। কিন্তু আমি যে সকালে কিছু খাই ও নি রিদ সেটাও বুঝতে পেরেছিলে তাই আমাকে খাওয়ানোর জন্যই ডাকাডাকি করছিলো। তারপর আমি ওঠে বসলাম আর খেয়াল করলাম এটা আমার রুম না। তারপর সব মনে পড়লো।

তারাতারি গায়ের ওরনাটা ঠিক করে নিলাম। রিদ সেটা দেখে বাঁকা হাসলো। আমিও লজ্জা পেলাম মাথাটা নিচু করে ফেললাম। আর রিদ খাবাড় সামনে নিয়ে বশে পড়লো আর বললো লজ্জা না পেয়ে মুখে পানি দিয়ে আসো একটু।
আমি ওঠে চোখ মুখে পানি দিলাম। তারপর তয়ালে দিয়ে মুখ মুছে রিদের পাশে বোসলাম। তারপর রিদ নিজের হাতে খাবাড় মেখে আমার মুখের সামনে ধরলো। আমারচোখ দিয়ে আবারো পানি বের হলো। এই মানুষটার ভালবাসা কি ওপেক্ষা করা যায়। (মনে মনে)

না যায় না আপনাকে কেউ করতেও বলেনি সকাল থেকে যে না খেয়ে আছেন সেটাও জানি আমি। তাই খেয়ে নিন দুটা বাজে। আর কোনো কথা হোক সেটা চাইনা যা হবে আপনার খাওয়া শেষ হওয়ার পর। ( রিদ )
কি করে পারেন সব বুঝতে?

তোমাকে যদি বুঝতেই না পারি তাহলে ভালবাসবো কি করে হুম বলেই ভ্রু নাচালো। তার
পর বললো- আর কোনো কথা না হা করো।

আমি বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিলাম। একটু পর রাতুলের মা আসলো আর বললো রিদ বাবা রায়হান অপেক্ষা করছে একসাথে খাবে যাও আমি অন্তীর সাথে কথা গল্প করি।

রিদ আমাদের কথা বলতে বলে বেরিয়ে গেলো।
অন্তী মা তোমার বাড়ি থেকে ফোন করেছিলো তোমার ফোন বন্ধ করে রেখেছো তারা টেনশন করছে। আমি বলে দিয়েছি আমাদের এখানেই আছো।

আমি শুধু আন্টির কথা শুনলাম কিছু বললাম না। তারপর আন্টি আমার মাথায় হাত রেখে বললো চিন্তা করোনা মা রিদ বাবা সব ঠিক করে দিবে। আমি বুঝাবো তোমার মা কে তুমি কোনো চিন্তা করোনা। রিদ বাবা ও টেনশন করছে অনেক কিন্তু তোমাকে বুঝতে দিচ্ছেনা তুমি যে অনেক ভেঙে পরেছো। তাই তোমাকে আর দুর্বল করতে চায় না।

তবে কি জানো মা ছেলেটার মনে অনেক কষ্ট। মা হারা ছেলেটা তোমাকে পেয়ে কতো বদলে গেছে এখন যদি তোমাকেও হারায় ছেলেটা বাঁচবে না৷ পাগলের মতো ভালোবাসে তোমাকে। বাবা থেকেও নেই ছেলেটা তোমাকে পেয়ে কতো বদলে গেছে। তুমি ওর জীবনে আসার পর ওর মুখে প্রাণ খোলা হাসি দেখতে পেয়েছি। তোমাকে হারাতে দিবেনা রিদ বাবা তোমাকে আঁকড়ে ধরেইতো বাচতে চাইছে। শুধু তুমি ওকে সাপোর্ট কর। আমরা সবাই আছি তোমাদের পাশে।

আন্টির কথা শুনে অনেক ভরসা পেলাম। আর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম।
তারপর আন্টি বললো বোসো আমি রাতুলকে পাঠিয়ে দিচ্ছি আর রিদ, রায়হানকে দেখি গিয়ে ছেলেগুলো খাচ্ছে কি লাগে না লাগে দোখি গিয়ে।
আমি বললাম আচ্ছা। ওনি চলে গেলো।

তারপর রাতুল আসলো কথা বললাম। রাতুল বললো -অন্তী রিদ ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসেরে তোর এই অবস্থা দেখে কেমন করলো জানিস?
আমি জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।

রাতুল বললো-অন্তী তুই না খেয়ে আছিস তাই পাগলের মতো করলো তারপর আম্মাকে দিয়ে খাবাড় তৈরি করে তোর জন্য খাবাড় নিয়ে এলো। তুই যে খাসনি সেটা তে জানিইনা কেউ রিদ ভাইয়া বললো। তোকে খাওয়িয়ে পরে সে খেতে বসলো। তুই চিন্তা করিস না অন্তী রিদ ভাইয়া সবটা মেনেজ করে নিবে।

তুই ভয় পাস না।
হুম তাই যেনো হয়রে। আমি রিদকে ছাড়া থাকতে পারবোমা। অন্য কাউকে মেনে নিতে পারবোনা।
অন্তী রিদ ভাইয়া তোর জন্য তার আগের সব স্বভাব বাদ দিছে তোর ভাইয়া হয়তো মানুষের মুখে শুনে খারাপ ভাবছে কিন্তু দেখিস রিদ ভাইয়াকে দেখলে বুঝবে যপ রিদ ভাইয়া কেমন।

রাগতো থাকবে স্বাভাবিক বাবার পাওয়ার আছে। রিদ ভাইয়ার ও আছে কিন্তু সেটাতো কারো ক্ষতি করেনি তাইনা। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস।
হুম।
কিছুক্ষন পর রিদ আসলো রাতুল বললো তোমরা কথা বলো আসছি আমি।

রিদ এসে দু হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে সোজা দাঁড়ালো। তারপর বললো – অন্তী তোমাকে এখন যে কথা গুলো বলবো মনোযোগ দিয়ে শুনবে আর বোঝার চেষ্টা করবে। আমার কথা শেষ না হলে একটা কথাও বলবে না তাহলে কিন্তু আমি রেগে যাবো সেটা ভালো করেই জানো।

অন্তী তোমার ভাইয়া যে কথা গুলো কাল বলেছে একদম ঠিক বলেছে। তারা তোমাকে ভালোবাসে ভালো চায় তাই বলেছে। এতে তাদের কোনো ভুল নেই। কিন্তু তারা তোমার অপছন্দে অন্যকারো সাথে বিয়ে দিতে চেয়ে ভুল করেছে। এটা একদম ঠিক না তোমার ভাইয়ার জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো তোমার পরিবারের লোক ছারা আউট সাইট কেউ হতো তাহলে এতক্ষনে ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে যেতো।

কিন্তু তা হয়নি কারন ওনি তোমার বড় ভাই তাই ওনাকে যথেষ্ট সম্মানের চোখে আমি দেখছি। ওনার কথা গুলো আমি একজন প্রেমিক হিসেবে ভাবছিনা। একজন আলাদা মানুষ হিসেবেই ভাবছি। তোমার ভাইয়ের জায়গায় আমি নিজেকে বসিয়েছি। তোমার বাবার জায়গায় বসিয়েছি নিজেকে। তাদের জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে বলতে পারি আমাকে বিয়ে করা উচিত নয়।
আমি রিদের কথা শুনে কেঁদে ফেললাম। আর অভিমানে কষ্টে বলে ওঠলাম আমি বাড়ী যাবো। রিদ আমার কথা শুনে খুব রেগে গেলো সেদিনই প্রথম ওর রাগ দেখেছিলাম।

রিদ রেগে গিয়ে আমাকে হেচকা টান দিয়ে একদম ওর কাছে নিয়ে এলো আমার চোখে চোখ রাখলো দুহাতে আমার হাত আঁকড়ে ধরে বললো – আমি আগেই বলেছি আমার কথার মাঝখানে কথা বলবেনা। কথা শেষ করতে না দিয়েই কথা বলো এটা কি ধরনের স্বভাব। ধমকের সুরে বলে ওঠলো আমি ওর থেকে চোখ ফিরিয়ে কান্না জরিত কন্ঠে বললাম ছাড়ুন আমাকে রিদ আমাকে ছেড়ে দিলো। তারপর বললো হ্যা ছেরেছি এখন কি করবে?
আমি বললাম চলে যাবো।
কোথায় যাবে? (রিদ)

বাড়িতে।
তারপর? (রিদ)
আমি অভিমানী সুরে বললাম -তারপর বাবা ভাইয়ার পছন্দে বিয়ে করে নিব বলেই চলে যেতে নিলাম। কিন্তু বুঝে ওঠতে পারিনি যে রিদ এই কথায় এতো রেগে যাবে।

কথাটা আমি সিরিয়াস বলিনি রিদ জানে তারপর ও ও ভীষন রেগে গেছিলো। আমি দরজার বাইরে পা ফেলবো ঠিক তখনি রিদ আমাকে পিছন থেকে টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে একহাত দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। তারপর দরজার পাশে দেয়ালটায় ঠেকিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো।

আমি ভয়ে ঢোক গিললাম। আর রিদ বললো – আমার পুরো কথা না শুনে এমন অবুঝ পানার মানে কি অন্তী ধমক দিয়ে ওঠলো। সাথে সাথে আমি কেপে ওঠলাম। আমার মনে হয় পুরো বাসাটাই কেপে ওঠেছে।

রাতুল আর রায়হান ভাইয়া ভয়ে আসতে পারেনিও ধমক শুনে। রাতুলের মা এসে একবার ডাকলো। রিদ বললো বাচ্চা আর বোকা বউ থাকলে মাঝে মাঝে এমন ধমক দিতে হয়। আন্টি কথাটা শুনেই চলে গেলো। আর ডাকলো না আর আমি কান্না করে দিলাম। প্রথমে ভয় পেলেও পরে রিদের কথা শুনে ভয় কেটে গেলো।

আমার কান্না দেখে রিদ আমার হাত ছেরে দিলো তারপর আমি নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছিলাম আমার চোখের পানি রিদ সহ্য করতে পারেনা তাই হয়তো বেঁচে গেলাম তাই রিদ বললো- অন্তী পুরো কথাটা শুনলে কিন্তু এটা হতোনা। যাইহোক ভুল করলে শাস্তি তো পেতেই হবে আর অন্যকাউকে বিয়ে করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছো তার শাস্তি ও পাবে তবে আমি আমার কথা গুলো শেষ করি। রিদ আবার বলা শুরু করলো আমিও রিদের দিকে করুন চোখে তাকালাম রিদ আমায় ফিরিয়ে দেবেনাতো। আবার ভাবলাম ফিরিয়ে দিলেতো আমায় আটকাতো না তাই ওর দিকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছিলাম।

অন্তী তাদের ধারনা অনুযায়ী আমাকে বিয়ে করা উচিত নয়। সত্যিতো আমার একটা ফ্যামিলিই নেই অন্তী কি পাবে তুমি। টাকা পয়সা আর আমি ছারা। আমাদের সন্তানরাই বা কি পাবে। তাই আমি তোমার পরিবারকে সাপোর্ট করছি। তাই বলে আমি পিছুপা হয়ে যাবো সেটা কখনোই না।

আমি আমার ভালবাসাকে কোনো মূল্যেই হারাতে পারবোনা। রিদের এই কথা শুনে আমার ভয় দূর হলো আমি রিদকে জরিয়ে ধরলাম রিদ ও আমাকে ওর বুকে মিশিয়ে নিলো। তারপর রিদ আবার বলতে শুরু করলো আর আমি শুনলাম -আমার নিজের মা নেই তাতে কি হয়েছে আমারতো বাবা আছে বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আছে ছোটো ভাই আছে।

এতোদিন তাদের ইগনোর করেছি কিন্তু আজ যদি তোমার জন্য আমাকে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয় তাহলে আমি তাই করবো। বিজনেস ছারা বাবার সাথে আমার সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমি তার সাথে একবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে একবার খোঁজ নিলে সে দশবার খোঁজ নিবে আমার। আমি তার প্রথম সন্তান। তার প্রথম স্ত্রীর চিন্হ।

বাবার সাথে যতো অভিমান ছিলো সব আমার ভালবাসার জন্য দূর করে দিব তবুও আমার তোমাকে চাই চাই চাই।
অন্তী?
হুম।
তুমি কোনো চিন্তা করোনা আমি আজকেই বাবাকে ফোন করবো খুব তারাতারি আসার জন্য বলবো বাবা কি জানায় সেটা শুনেই আমি তোমার ভাইয়ার সাথে দেখা করবো।

আমি একটা শান্তির নিঃশ্বাস নিলাম যে নিঃশ্বাস এর শব্দ রিদ শুনতে পেলো। তাই আমাকে ছেরে দুহাতে মুখটা ধরে বললো হারাবেনা আমায় অন্তী কোনো ভয় নেই তুমি আমার হবেই। বলেই কপালে চুমু খেল আমি আমার চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম। তারপর রিদ বললো এই যে এবার শাস্তির পালা। অন্য কাউকে বিয়ে করে নিবে তাইতো এমন ভেলকি দেখাবো যে অন্যকাউকে বিয়েতো দূরের কথা ভুলেও মনে আনবেনা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিলো। আমি ভয় পেয়ে বললাম কিসের শাস্তি?

রিদ বললো দাঁড়াও শাস্তি টা দেওয়ার আগে একটু আসে পাশে খেয়াল করে নেই।
আমি= মানে?

রিদ বাঁকা হেঁসে দরজাটা খুলে ওদিক সেদিক তাকালো তারপর আবার রিদ দরজা লাগিয়ে দিলো। সেটা দেখে আমার বুক ধক করে ওঠলো রিদ কি চাইছে। এই দুবছরে তো রিদ আমাকে কোনো বাজে উদ্দেশ্যে টাচ ও করেনি। সবসময় বুকে জরিয়ে ধরা আর কপালে ভালাবাসার পরশ ছারা আর কিছু না।

সুযোগ যে পায়নি তা না। কিন্তু রিদ রিলেশনের আগেই বলেছিলো অন্যান্য ছেলে মেয়েদের মতো প্রেম করার সময় রিদের নেই। নেই তেমন মন মানুসিকতারও। রিদের ইচ্ছে হয়নি তা না। রিদ স্বীকারও করেছে ইচ্ছে হয় কিন্তু আমাদের ভালবাসার অসম্মান করতে চায়নি কখনো। সব সময় বলেছে সব বিয়ের জন্য তোলা থাকলো। তাহলে আজকে কি রিদ রাগের মাথায় কিছু করবে। আমি কেনো অমন কথা বলতে গেলাম।

রিদ আমাকে ভালোবাসে সম্মান করে বলে এই কথাতেও রিয়াক্ট করবে না এটা ভুল। মনে মনে ভাবছিলাম তারপর রিদ আমার দিকে এগিয়ে আসলো আমি পিছিয়ে গেলাম দুকদম পিছাতেই দেয়ালে ঠেকে গেলাম। রিদ কে দেখেই বুঝতে পারছি ও কেমন ঘোরের মধ্যে আছে কিন্তু রাগতো দেখছিনা তাহলে রাগটা কি বাহানা। আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো। রিদের কপালে ঘাম জমে ছিলো ওর অস্থিরতাটাও আমি বুঝতে পারলাম। তবে আজ রিদকে আলাদা লাগছে এইরূপে কখনো দেখিনি।

দেখলেও রিদ বুঝতে দেয়নি সবসময় এরিয়ে চলেছে। রিদ ওর দুহাত দেয়ালে রেখে আমাকে আবদ্ধ করে ফেললো আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো আমি বললাম -কি.. করছেন?
রিদ কোনো উওর দিলো না ধীরে ধীরে ওর মুখ এগোতে লাগলো আমার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেলো।

আমি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম আমার নিঃশ্বাস রিদের মুখে লাগলো সাথে সাথে রিদ চোখ বন্ধ করে ফেললো দেয়াল থেকে হাত সরিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো। আমার পুরো শরীর কেঁপে ওঠলো। রিদ কানের কাছে মুখ এনে আস্তে করে বললো অন্তী দুটা বছর অপেক্ষা করেছি আর কয়েকটা দিন পারবোনা ভাবলে কি করে।

আমি একটু মজা করছিলাম তবে অনুভূতি টা সত্যি অসাধারণ। আর এই অনুভূতি টা চরম পর্যায়ে আাসার পর নিজেকে আটকানোর রাস্তা একটাই সেটা হচ্ছে বুকের ভেতর জরিয়ে নেওয়া এর থেকে বড় আর কিছু হতে পারেনা।

আমার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসলো এই মানুষটাকে কিছুক্ষনের জন্য হলেও অবিশ্বাস করাটাও আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। নিজের কাছে নিজেই প্রমিস করলাম আর কখনো কোনো পরিস্থিতি তে তাকে অবিশ্বাস করবোনা। সম্মানটা সেদিন তার প্রতি আরো বেড়ে গেছিলো।
তারপর সেদিন বাড়ি ফিরে যাই। রিদ ওর বাবাকে ফোন করে জানায় দেশে ফেরার জন্য।

রিদ আর একা থাকতে চায়না সেটাও জানায়। খুব জোর দিয়েই বলে রিদের বাবা খুব খুশি হয়।

আর রিদকে বলে যে খুব শিঘ্রই ফিরবে।
এদিকে আমি মা কে সব জানাই রিদের ব্যাপারে। মা ভাইয়ার কাছে যা, শুনেছে তাতে রিদকে না মেনে নিলেও আমার কথা শুনে মা রিদকে দেখতে চায়। আর ভাইয়াকে মা বোঝায়। ভাইয়া তাও রাজি হয় না শুধু বলেছিলো রিদের সাথে দেখা করবে। রিদকে বাড়ী আসতে তারপর ভেবে দেখবে। আমি খুব খুশি হই আর রিদকে ফোন করি। রিদ আমাকে বলে কাল সকাল এ দেখা হচ্ছে। আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দেয়।

পরেরদিন সকালে রিদ ফোন করে সাদে যেতে বলে আমি সাদে যাই। রিদ গাড়ী নিয়ে দাড়িয়ে আছে একহাতে ফোন ধরে আছে আরেক হাত পকেটে ঢুকিয়ে। আমাকে দেখেই এক ভুবন ভুলানো হাসি দিলো। সেই হাসিটায় কতোটা তৃপ্তি ছিলো আমি আর উপরওয়ালাই জানি। রিদ আমাকে দেখে ইশারায় বুঝালো সুন্দর লাগছে।

আমি লজ্জা পেলাম ঘুম থেকে ওঠেই এসেছি ফ্রেশ না হয়েই এলোমেলো চুলে আবার সুন্দর মুখ বাঁকা করে দিলাম। সেটা দেখে দাঁত বের করে হেসে দিলো ফোনে হাসির শব্দ ও পেলাম। মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম সেই হাসিমাখা মুখ।

তারপর রিদ বললো কি ম্যাডাম এই ভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন। আর বেশী দেরি নেই খুব তারাতারি আপনাকে একদম নিজের করে নিবো তখন যতো ইচ্ছে দেখবেন। আর আমিও আমার আয়না সুন্দরী কে দেখবো রোজ সকাল বিকাল বলেই বাঁকা হাসলো। আমি বললাম সত্যি? রিদ বললো হুম।

তারপর আমি বললাম কবে দেখা করবেন ভাইয়া, বাবার সাথে? রিদ বললো- দেখাতো আজো করতে পারি কিন্তু করবোনা। তোমার ভাইয়া যা বলেছে সেটাতো মাথায় আছে আমার।

আমি বললাম- আপনি ওগুলোর জন্য রাগ করেছেন। বলেই মুখ কালো করে ফেললাম৷

একদম না রাগ তো হচ্ছে এই জন্য যে আমার বউ আমাকে এখনে আপনি আপনি করছে আপনি থেকে তুমিতে না আসলে কিন্তু বিয়ে করবো না বলে দিলাম।

আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম আর ভাবলাম সত্যিতো আমি এখনো তুমি বললাম না রিদ ঠিক বলেছে। তাই বললাম-
তুমি এসো প্লিজ ভাইয়ার সাথে সবার সাথে দেখা করো।

আমার বোকার মতো কথা শুনে রিদ হোহো করে হেসে ওঠলো আর বললো – এই পাগলি আমিতো মজা করছিলাম।

তবে তোমার মুখে তুমি টা কিন্তু একদম বুকে লাগে আদর মাখা ডাক। তো এবার সিরিয়াস কথায় আসি অন্তী আমি এয়ারপোর্টে যাচ্ছি। মা ফিরছে বাবা আরো একমাস পর আসবে। আমি মা আর ভাইকে নিয়ে তোমার বাড়ী যাবো। সাতদিন সময় নিলাম তার মধ্যে সব গুছিয়ে নিব। এতোদিন একা থাকতাম এখন মা ভাই আসলে বাড়িটাও গোছাতে হবে তুমিও আসবে কিছুদিন পর অনেক কাজ।

আমি রিদের কথা শুনে খুশিতে আত্বহারা হয়ে গেলাম। রিদ বললো যাও ফ্রেশ হয়ে নাও আমি রাতে ফোন করবো কেমন।
ওকে সাবধানে যেও।
হুম টাটা।

তারপর ভাইয়া মা কে বলেছিলাম বাবাও জানতো যে রিদ আসবে। তবে বাবার পছন্দের ছেলেকে না করেনি কারন তাদের বিশ্বাস ছিলো রিদ আসবেনা আসলেও ব্যাপারটা বিয়ে অবদি গরাবেনা তারা রিদকে বিশ্বাস করেনি। কিন্তু আমি হাজারটা স্বপ্ন দেখছিলাম সারাদিন। তারপর রাত হলো রিদ ফোন করলোনা।

আমি অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ওঠে দেখি রিদ ফোন করেনি। অবাক হলাম বুকের ভেতর কেমন একটা মোচর দিয়ে ওঠলো তারপর রিদকে ফোন করলাম ফোন অফ ফোন অফ পেয়ে অনেকবার ট্রাই করলাম৷ পেলামনা সারাদিন হয়ে গেলো রিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলামনা। তাই রায়হান ভাইয়া কে ফোন করলাম।

রায়হান ভাইয়া বললো আজ অফিস যায়নি। আর ফোন ও অফ। আমি অনেক ভেঙে পরলাম কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারালাম। যখন জ্ঞান ফিরে দেখি বাবা ভাইয়া মা তিন জন ই আমার রুমে। মা মাথার কাছে বসে চোখের পানি ফেলছে। বাবা অনেক কিছু বুঝালো তারপর চলে গেলো। সবাই মা আমাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু খাইনি। এইভাবে কয়েকদিন কেটে গেলো। তারপর রায়হান ভাইয়া ফোন করে জানালো রিদে অফিস যাচ্ছেনা৷

রিদের ছোট ভাই রিদের পরিবর্তে যাচ্ছে। রিদের কথা জিগ্যেস করায় বলেছে রিদ কোথাও গেছে তবে কোথায় কাউকে জানায়নি। কবে ফিরবে তাও না৷ আমি শুনে কেঁদে ফেললাম রায়হান ভাইয়া সান্ত্বনা দিলো। এভাবে একমাস কেটে যায় আমি বাধ্য হয়ে রিদের বাড়ী যাই। সেখানে দাড়োয়ান আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।

আমি কাছে যাওয়াতে বললো এ কি হাল মা তোমার। আমি কিছু বললাম না রিদের কথা জিগ্যেস করাতে সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে বললো রিদ বাবা সেই যে বেরিয়ে গেলো আর আসেনি। আমি জিগ্যেস করলাম কবে গিয়েছে ওনি বললো ওনার মা ভাই যেদিন আসলো সেদিন বিকেলে তারপর আর কোনো খোঁজ নেই। ওহ

! আমি কি ভেতরে যেতে পারি?
হ্যা মা যাও।

আমি ভেতরে গিয়ে কলিং বেল বাজালাম অচেনা একটা মহিলা খুললো। কথা শুনে বুঝলাম নতুন কাজের লোক আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ পরিচিত নেই। তারপর রিদের সৎ মা আসলো আমি সালাম দিলাম৷ ওনি সালাম ফিরিয়ে বললো কাকে চাই? আমি নিচু স্বরে বললাম রিদ কোথায়?
ওনি চমকে ওঠলেন। তারপর বললেন তুমি কে?
আমি বললাম আমি অবন্তী সরকার।
ওহ আচ্ছা রিদের বান্ধবী?

হুম।
দেখো মা রিদ কোথায় গেছে জানিয়ে যায়নি। ও আসলে তোমার সাথে যোগাযোগ করবে তুমি আসতে পারো এখন।
আমি ওনার কথা শুনে খুব অপমান বোধ করলাম। আর মনে মনে বললাম রিদ আপনার অন্তীকে এইভাবে আপনার বাড়ী থেকে বেরিয়ে যেতে বলছে। আপনি এটা কিভাবে সহ্য করছেন।

আমি ওনাকে আরো কিছু প্রশ্ন করার আগেই ওনি কাজের কথা বলে উপরে চলে গেলেন৷ আমি অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলাম৷ তারপর পুরো বাড়িতে চোখ বুলালাম সব কেমন পালটে গেছে।

তারপর সেখান থেকে চলে আসলাম এভাবে কেটে গেলো সাত মাস এই সাত মাস এ একটা দিন ও আমি রিদকে ভুলে থাকতে পারিনি৷ রায়হান ভাইয়া রাতুল, দীনা এদের কাছে গিয়ে একটু শান্তি পেতাম কিন্তু ভাইয়ার জন্য সেটাও পারিনা এখন।

রায়হান ভাইয়া নিজের চেষ্টায় রিদকে খুজে যাচ্ছে। আর আমি অপেক্ষা করছি আমার ভালবাসার জন্য। কিন্তু বাবা ভাইয়া এইটুকু ও করতে দিচ্ছেনা। অবন্তী আরশিকে কথা গুলো বলে কেঁদে ওঠলো আরশি ও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না।

তারপর আরশি বললো রিদের নাম্বার টা দে অন্তী।

অবন্তী বললো নাম্বারতো বন্ধ কি করবি ওটা নিয়ে৷
আরশি বললো কাজ আছে তুই দে।


পর্ব ৯

অন্তী নাম্বার টা বললো আরশি ফোনে নাম্বারটা সেইভ করে রাখলো। তারপর আরশি বললো অন্তী এতোটা ভালবাসার পর ও তোরা আলাদা হয়ে যাবি এটা আমি কিছুতেই হতে দিব না। আজ থেকে রিদ ভাইয়াকে খোঁজার মিশনে আমিও আছি। আর তোর বিয়ে অন্যকারো সাথে যাতে না হয় সেটাও আমি দেখবো।

আর সবার আগে আরিয়ানকে টাইট দিতে হবে। নিজের মন তো পাষাণ নিজের মধ্যে ভালবাসা নেই বলে অন্যের ভালবাসায় বাধা দেওয়া এটা আমি হতে দিব না। তোর ভাই একটা হ্রদয়হীন। তোর ভাইকে আমি দেখে নিবো।

অন্তী হেসে বললো – আহারে আমার আপু /হবু ভাবি ভাইয়ের ভালবাসা না পেয়ে খুব অভিমান করেছে মনে হয়।
আরশি অন্তী কে ধমক দিয়ে বললো -তুই চুপ কর তোর ভাইয়ের ভালবাসার কোনো দরকার নেই। বাবা মায়ের জন্য বিয়েতে রাজি হয়েছি আর মামা মামির জন্য নয়তো তোর ই গুমরা মুখো ভাইকে এই আরশি বিয়ে করতো না।

জানিস কতো ছেলে আমার জন্য পাগল। তোর ভাইয়ের ভাগ্য ভালো যে আমি তাকে বিয়ে করতে চেয়েছি।

হুম ভালো করেছিসরে আপু। তোর মতো আপু ভাবি পাশে থাকা খুব দরকার। আরশি অন্তী কে জরিয়ে ধরলো আর বললো আমার এই ছোটো বোনটার মুখে হাসি ফিরিয়ে আনবোই। আচ্ছা অন্তী রিদ ভাইয়ার বাবা কোথায়? সে আসেনি একমাস পর?
অন্তী বললো- না আপু রায়হান ভাইয়া যতোটা খোঁজ নিয়েছে ওনি দেশে আসেননি আমেরিকাতেই আছে।

হুম বুঝলাম এইখানে অনেক বড় জটলা আছে অন্তী আমাদের সেগুলা খুঁজে বের করতে হবে। বলেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো তিনটা বাজে এখন ঘুমাতে হবে পরে সব সলিউশন বের করবো চল ঘুমাই।

অন্তী বললো – কিসের জটলা আপু বলনা।

সেটাতো আমিও জানিনা রে বোন। কিন্তু রিদ ভাইয়ার সব কথা শুনে আমি এটা শিউর সে ইচ্ছে করে তোর থেকে দূরে যাবেনা। ( আরশি)
অন্তী লাফ দিয়ে ওঠলো আপু আমার রিদের কিছু হয়নিতো বলেই কান্না করে দিলো।

আরশি অন্তী কে স্বান্তনা দিয়ে বললো আরে না তেমন কিছুনা ঘুমাতো দেখবি খুব তারাতারি রিদ ভাইয়ার সাথে তোর দেখা হবে।

অন্তী সুয়ে পড়লো আর বললো তাই যেনো হয় বলেই চোখ বন্ধ করে রইলো রিদের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো। আরশিও চিন্তা করছিলো আর ভাবছিলো রিদের হঠাৎ উধাও হওয়া কারো চক্রান্ত না তো। কিন্তু কে? বিজনেসের বিষয়ের শত্রু? রিদের বাবা কি জানেনা রিদের বিষয়ে? নাকি রিদের সৎ মায়ের কোনো চাল?

এরকম অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরছিলো আরশির মাথায়। আরশি খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে যথেষ্ট ম্যাচিউর। তাই তার ভাবনা অন্তীর মাথায় আসবেনা। অন্তী খুবই সহজ সরল মনের একটা মেয়ে। জীবনটাকে অতো জটিল ভাবে সে ভাবেনা। কিন্তু আরশি ভাবে তাই সে তার বুদ্ধি দিয়ে সব সলিউশন বের করার চেষ্টা করবে।

সকাল নয়টায় ঘুম ভাংলো অবন্তীর। পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। অবন্তী ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।

সাজগোজ তো দূরের কথা নিজের সামান্য যত্নও করা হয় না এখন আর। মনের ভেতর যে ঘনকালো মেঘ জমেছে সেটাকি আর কাটবেনা? আমার রিদ কি ফিরবেনা তার ভালবাসা কি আমার পাওয়া হবেনা। কবে সে আসবে কবে এসে বলবে এই বোকামি গুলার মানে কি অন্তী? কবে এসে বলবে আয়না সুন্দরী কেমন আছো?

বলবেতো? তার আয়না সুন্দরী যে আর সুন্দরী নেই। তার ভালবাসা না পেয়ে তার অভাবে আমার সব সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে৷ আয়নাতে এখন আর কোনো সুন্দরী যুবতীকে দেখতে পাইনা।

দেখতে পাই এক ভালবাসাহীন, হতাশায় পরিপূর্ণ যুবতী। যার মধ্যে সব সৌন্দর্যতা বিলীন হয়ে গেছে। নিজের দিকে তাকিয়ে অনেক কথা ভেবে যাচ্ছে অবন্তী।

রুম থেকে বেরিয়ে বসার রুম গিয়ে দেখলো বাবা চা খাচ্ছে। রান্না ঘর থেকে কথার আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখলো আরশি আর অবন্তীর মা আয়েশা বেগম কথা বলছে।

আয়েশা বেগম রান্না করছে আর আরশি তার পাশে দাড়িয়ে সব দেখছে। অবন্তী কে দেখতে পেয়ে আরশি ওর জন্য এক কাপ চা নিয়ে ওর কাছে আসলো আর চা দিলো। অবন্তী খুবই অবাক এতো দায়িত্ববান মেয়ের মতো তাকে চা দিচ্ছে যে আপু না ভাবি ভাবি লাগছে তাই মুচকি হাসলো। আর ফিসফিসিয়ে বললো আপু তুই তো পুরো গিন্নি হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে আমি তোর শ্বশুর বাড়ি আসছি।

আরশিও ফিসফিসিয়ে বললো- হুম শ্বশুর বাড়ি ই তো বলেই চোখ মারলো। অবন্তী হেসে দিলো, আরশিও হেসে দিলো। তারপর আবার আয়েশা বেগম এর পাশে দাঁড়ালো আরশি। রান্না দেখতে মনোযোগ দিলো বাবা মায়ের একমাএ মেয়ে হওয়াতে তার রান্নাবান্না কিছুই শেখা হয়নি। তাই মামির কাছেই সব শিখে নিচ্ছে আরিয়ান খেতে খুব ভালোবাসে তাই এতো আগ্রহ শেখার। নয়তো রান্না না শিখলেও কারো মাথা ব্যাথা নেই।

সকালের খাবাড় খেয়ে সবাই যার যার রুমে চলে গেছে। আজ শুক্রবার তাই সবাই বাড়িতেই আছে। আয়েশা বেগম টুকটাক কাজ করছে। অবন্তীর বাবা রুমে বই পড়ায় ব্যাস্ত। অবন্তী রুমে শুয়ে আছে আজ কাল অবন্তীর শরীরটা ভালো নেই। খাওয়া দাওয়া ঠিকভাবে না করায় তার শরীর টা নেতীয়ে পড়ছে।

অবন্তী বেশ বুঝতে পারছে তার শরীরটা ভালো নেই এইভাবে আর একমাস থাকলে সে আর বাঁচবে না। তার এমন অবস্থা আর কেউ টের না পেলেও আয়েশা বেগম ঠিকি বুঝতে পারছে। কিন্তু কি করবে তার সহজ সরল মেয়েটাও যে বড় জেদী হয়ে গেছে গত কয়েকমাসে। শুধু নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন আয়েশা বেগম।

আরশি তার বন্ধু বান্ধব দের সাথে কথা বলছিলো। কথা বলতে বলতে হাটছিলো বারান্দায় সেখান থেকে দেখলো আরিয়ান তার জানালা থেকে তাকে একবার দেখলো। তাই ফোনে কথা বলা শেষ করে আরশি মনে মনে ভাবছিলো-আরিয়ান তো কখনো তার দিকে তাকায়না তাহলে এখন এতদূর থেকে কি দেখছিলো। ব্যাপারটায় খটকা লাগলো তার। তারপর পা বাড়ালো আরিয়ানের রুমে। দরজার কাছে গিয়ে বললো আরিয়ান আসবো?

ভেতর থেকে শুধু হালকা কাশির আওয়াজ হলো। আরশি বুঝতে পারলো উওরটা হ্যা তাই ভেতরে প্রবেশ করলো। কিন্তু ভালোভাবে বললেও পারতো আসো বা আয় এটুকু বললেতো আর মহাপাপ হতোনা মনে মনে অভিমান করলো কিন্তু প্রকাশ করলো না।

আরিয়ান একটা বই হাতে নিয়ে বিছানায় বসে আছে। তার চোখ গুলো বইয়ের দিকেই। সামনে যে একজন সুন্দরী যুবতী দাড়িয়ে আছে তাতে তার কোনো খেয়াল নেই সে একমনে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

আরশি তাকিয়ে আছে আরিয়ানের দিকে -ইচ্ছে করছে এক ঘুষি দিয়ে মাথাটা ফাটিয়ে দেই। আরে আমিতো তোর বোন ও হই তোর নিজের ফুপুর মেয়ে সেই সম্পর্কে তো ভালোভাবে কথা, বলতে পারিস। ভাব দেখলে গা জ্বলে যায় এর সাথে যে কিভাবে সারাজীবন কাটাবো আল্লাহ ভালো জানে। (মনে মনে)
আরিয়ান আমাকে কি কিছু সময় দেওয়া যাবে?

আরিয়ান বই থেকে চোখটা সরিয়ে আরশির দিকে তাকালো-
দেওয়া যাবে তবে ভদ্রতা আর বড়দের সম্মান দেওয়াটা শিখে আসো তারপর। বলেই আবার বইয়ে মনোযোগ দিলো।

আরশি এতোটা অপমানিত হবে ভাবতে পারেনি। কি ভুল হলো আর কিভাবে কখন কাকে অসম্মান করলাম মনে মনে ভেবে বললো-কি বলছো এসব?

কি বলেছি শুনোনি আবারো বলতে হবে? কোনো সমস্যা আছে নাকি?
আরশি এবার অপমানের চরম পর্যায়ে চলে গেছে তাই আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যাবে ভেবে দরজায় পা বাড়ালো। ভাবলো আরিয়ান হয়তো ডাকবে যে কি বলতে এসেছো বলে যাও। না সেসব কিছুই হলো না।

আরশি অবন্তীর রুমে গিয়ে অবন্তীর পাশে মন খারাপ করে শুয়ে পড়লো চোখের কোনে পানি জমেছে। শুয়ে শুয়ে ভাবছে কি এমন হলো যে আরিয়ান এমন আচরন করলো আমি আবার কাকে অসম্মান করলাম। মামা, মামি ছাড়া এই বাড়ি আর কে বড় আছে। আরশির মাথায়, কিছু ঢুকছেনা।

এদিকে অবন্তী তার পাশে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে সেটাও খেয়াল নেই তার। বেশকিছুক্ষন পর আরশি তাকালো পাশে অবন্তীর চোখ গাল ভেজা তবে চোখ দুটো বন্ধ। তাই ডাকলো- অন্তী। সারা না পেয়ে বেশ, কয়েকবার ডাকলো কিন্তু কাজ হলোনা। অব্তীর পাশে তাকাতেই, দেখতে পেলো রিদের সাথে তার কিছু পুরোনো ছবি বের করা।

আরশির বুঝতে বাকি রইলো না অবন্তী জ্ঞান হারিয়েছে। তাই তারাতারি গিয়ে আয়েশা বেগমকে ডেকে আনলো সে এসে কান্না জুরে দিলো কান্নার আওয়াজ শুনে আরিয়ান দৌড়ে এলো। আরিয়ানের বাবা আরমান সরকার ও এলো সবাই চোখে মুখে পানি দিলো কিন্তু না জ্ঞান ফিরেনি। অনেক চেষ্টা করলো তাই আরমান সরকার আর দেরী না করে

আরিয়ানকে গাড়ী আনতে বললো, আরিয়ান তার এক বন্ধুকে কল করলো, দশমিনিট পর গাড়ী আসলো সবাই তারাতারি বের হলাম আরিয়ান অবন্তী কে কোলে নিয়ে গাড়ীতে ওঠালো। আয়েশা বেগম কেঁদেই চলেছে আর বাকি সবার মুখে চিন্তার ছাপ।
হসপিটাল বেডে শুয়ে আছে অবন্তী। সেলাইন চলছে বাকি সবাই কেবিনের বাইরে মুখ ভার করে বসে আছে।
ডাক্তার, এসে বললো অবন্তী সরকারের মেইন গার্ডিয়ান কে?

আরমান সরকার ওঠে দাড়িয়ে বললো আমি।
ডাক্তার তাকে দেখে বললে ভেতরে আসুন আপনার সাথে দরকারি কথা আছে। আরিয়ান বললো- কি কথা আমাকে বলা যাবে কি?
ডাক্তার বললো- আপনি কে?
আরিয়ান- আমি প্যাসেন্টের বড় ভাই।
ডাক্তার- হুম আপনিও আসুন।

অবন্তীকে তিনদিন হসপিটালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হলো। অবন্তীর মা হসপিটাল থেকে এক পাও নড়ছে না। কেঁদেই চলেছে আরমান সরকার বাড়ি চলে গেছে ফাঁকা বাড়ি তাই। আরিয়ান আর আরশি বাড়ি যাবে কিছু রান্না করতে হবে দায়িত্বটা আরশি নিজেই নিয়েছে বাড়ি গিয়ে খাবাড় তৈরী করে হসপিটাল পাঠাবে আর আরমান সরকার কেও রাতে খেতে দিতে হবে। সেই সকালে খাওয়া হয়েছিলো সবার তারপর কারো পেটে একটা দানাও পড়েনি।

দুজনেই বাড়ি পৌছালো আরশি ভাত ডাল আর সবজি রান্না করে আরমান সরকারকে খেতে দিয়েছে। অবন্তী আর আয়েশা বেগমের জন্য হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছে। আরিয়ানকে খেতে বলেছিলো কিন্তু আরিয়ান বলেছে হসপিটাল থেকে ফিরে খাবে। আরশিও খায়নি। রাত নয়টা এিশ এ আরিয়ান বাড়ী ফিরলো আরশি খাবাড় টেবিলে বেড়ে আরিয়ানকে ডাকলো আরিয়ান এসে বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে নিলো একবারো তাকালো না আরশির দিকে। আরশি এবার আর মন খারাপ করলো না। অবন্তীর জন্য সবারি মন খারাপ

। কিন্তু একবার কি জিগ্যেস করবো রান্নাটা কেমন হয়েছে? জীবনে প্রথম এইভাবে দায়িত্ব নিয়ে রান্না করলাম। না থাক কি না কি বলে বসবে (মনে মনে ভাবলো আরশি)। আরিয়ান খেয়ে ওর রুমে চলে গেলো কেবলই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে এমন সময় আরশি আসলো আরিয়ানের রুমে।
আরশি ডাকলো -আরিয়ান?

আরিয়ান চোখ খুললো আরশির দিকে তাকালো চোখ দুটো লাল আরিয়ানের। আরশি বুঝতে পারলো অবন্তীর জন্য চিন্তায় এমন হয়েছে। কিন্তু অবন্তীর হয়েছেটা কি সেটা জানার জন্যই আরশি আরিয়ানের রুমে এসেছে।
আরশি বললো – তোমার সাথে কিছু কথা আছে।

আরিয়ান বললো আমারো।
আরশিতো অবাক আরিয়ান তার সাথে কথা বলবে। তবে বুঝতে পারলো বিষয়টা তাহলে সিরিয়াস আর অবন্তীকে নিয়ে। তাই আরশি বললে আচ্ছা বলো। আরিয়ান বললো তুমি যেহেতু আমার রুম এসেছে কিছু বলার জন্য তাহলে তোমারি আগে বলা উচিত আর আমার শুনা উচিত।

আরশিতো অবাকের চরম পর্যায়ে। আরিয়ানকে আজকে অনেক অচেনা লাগছে তবে ভালো ও লাগছে তাই বললো- আসলে ডক্টর কি বলেছে অন্তীর বিষয়ে? খুব সিরিয়াস কিছু কি?
হুম আমিও সেই ব্যাপারেই বলবো তোমাকে।
আরশি উওেজিত হয়ে বললো কি হয়েছে অন্তীর?
আরিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো………..


পর্ব ১০ (BANGLA CHOTO NEW GOLPO)

আরিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো-
আমার বোনটাকে শেষ করে দিলো ঐ রাফসান চৌধুরী। ওকে আমি ছাড়বোনা একবার শুধু পাই আমার বোনের জীবনটা তীলে তীলে শেষ করে দিচ্ছে।
আরিয়ান কি হয়েছে ডক্টর কি বলেছে সেটাতো বলো? (আরশি)

অন্তী যে বেশ কয়েকমাস ধরে খাওয়া দাওয়া করছে না সেটা আমরা সবাই জানি। তুমিও জানো। রাফসান চৌধুরীর জন্য কান্নাকাটি করে সেটাও জানি। কিন্তু ওর ভেতরে যে যন্ত্রণাটা হচ্ছে সেটা কি কেউ অনুভব করতে পারি আমরা? না পারিনা বোনটা আমার ভিতরে ভিতরে দুমরে মুচরে যাচ্ছে। আমার বোনটা বেশী কষ্ট সহ্য করতে পারেনা আর আজ সে বুকের ভেতর একবুক যন্ত্রণা নিয়ে বসবাস করছে।

খাওয়া দাওয়া না করে শরীরের অবস্থা এতোটাই খারাপ করেছে যে আজ সেলাইন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মনের ক্ষত কিভাবে সারাবো আমরা। দিন দিন খুব বেশী ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। ডক্টর বলেছে এইভাবে বেশীদিন চললে অন্তীকে বাঁচানো যাবে না।

হার্টদূর্বল মানুষ আর এই কমাস এ ওর হার্টে অনেক বেশী সমস্যা দেখা দিয়েছে। হার্ট ব্লক হওয়ার সম্ভবনা খুবই বেশী। এখন ওকে হাসি খুশি রাখতে হবে ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করতে হবে কিন্তু রাফসানকে ছাড়া কি আমার বোনটা স্বাভাবিক হবে। আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। মা কে এসব জানানো হয়নি মায়ের ও হাই প্রেশার স্ট্রোক ও করতে পারে এসব জানলে। তাই একমাত্র তুমিই পারো আমাকে সাহায্য করতে অন্তীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।

আরশি বুঝতে পারলো অন্তীর সমস্যাটা। আরশি বললো – আরিয়ান আমি একটা কথা বলি?
হুম বলো?
অন্তীর বিয়েটা এতো তারাতারি দিও না। আর ওকে বলো তোর বিয়ে ক্যানসেল।

এই মূহুর্তে ওর বিয়ে নিয়ে এগোনো ঠিক হবে না বিয়েটা পিছিয়ে দাও। ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। রিদ ভাইয়া কে আস্তে আস্তে ভুলে যাক তারপর অন্যকিছু। এইভাবে একজনকে মনে রেখে আরেকজন কে বিয়ে করলে ও কোনোদিন স্বাভাবিক হবে না আমাদের অন্তী কে আমরা ছাড়া আর কে ভালো বুঝবে বলো।
কিন্তু পরেও যদি ভুলতে না পারে? (আরিয়ান)

দেখোইনা কি হয় সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পালটে যায়। এমনতো হতেই পারে আরো কয়েকটা মাস কেটে গেলে অন্তী রিদ ভাইয়া কে কিছুটা ভুলে যাবে। অথবা রিদ ভাইয়া ফিরে আসলো। কি এমন হতে পারেনা? আরশি জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকালো আরিয়ানের দিকে।

না ঐ রাফসান কে বিশ্বাস করিনা। যদি ফিরতো তাহলে চলে যেতোনা। আমার বোনকে ঠকিয়েছে। অন্তীর সরলতার সুযোগ নিয়েছে তাইতো বিয়ের কথা শুনেই উধাও হয়ে গেছে।

আরিয়ান এমনোতো হতে পারে রিদ ভাইয়া ইচ্ছে করে উধাও হয়নি। তাকে উধাও করা হয়েছে?
মানে?

মানেটাই আমি বের করবো তুমি শুধু বিয়েটা পিছিয়ে দাও।
আচ্ছা দিচ্ছি তবে জাষ্ট দুমাস এর বেশি না।

আরশি মনে মনে কি যেনো একটা ভেবে বললো – আচ্ছা ঠিক আছে।
আরিয়ান বললো -হুম যাও শুয়ে পড়ো গিয়ে।
হুম যাবো তবে আমার একটা প্রশ্ন আছে তোমার কাছে।
কী৷
কাল আমি কি ভুল করেছিলাম। আর কিভাবে বড়দের অসম্মান করেছিলাম সেটাই জানার ছিলো বলেই আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো আরশি।
আরিয়ান হালকা কাশি দিয়ে ওঠে দাড়ালো তারপর প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো- দাঁড়াও।
আরশি ভ্রু কুচকে তাকালো। এ আবার কি বলে (মনে মনে)
কি হলো শুনতে পাওনি।
আরশি একটু নড়েসরে বললো হুম দাড়াচ্ছি। দ্রুত বিছানা থেকে ওঠে আরিয়ানের সামনে দাঁড়ালো।
আরিয়ান বললো- দেখোতো কে বেশী লম্বা?

আরশি অবাক চোখে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আর মনে মনে বললো- এ আবার কেমন কথা আমার সাথে হেয়ালি করছে কেনো। নিজেতো খাম্বার মতো লম্বা এটা কি আমি জানিনা নাকি। নাকি এতোদিন আমাকে অন্ধ মনে করতো। আজব ব্যাপার লম্বা বলে এইভাবে গর্ব করার কি আছে।
কি হা করে তাকিয়ে আছো কেনো? হাতে তুড়ি বাজিয়ে বললো আরিয়ান।

আরশি চমকে ওঠলো। আর বললো তুমিই লম্বা এটা আলাদা করে বলার কি আছে।
অনেক কিছুই আছে। এখন বলো আমাদের দুজনের মধ্যে কে বয়সে বড়।

আরশি পুরো ভিমরি খেয়ে গেলো। আরিয়ান তার থেকে পাঁচ বছরের বড়। কিন্তু এগুলো কেনো জিগ্যেস করছে কিছু ঢুকছেনা আরশির মাথায়।
কিহলো একটা, প্রশ্ন করলে এমন বেকুবের মতো তাকিয়ে থাকো কেনো। ধমকের স্বরে বললো আরিয়ান।
আরশি মন খারাপ করে বললো তুমি বড় এটাতো সবাই জানে।

হুম রাইট। তাহলে কি দাঁড়ালো আমি দেখতেও বেশ বড় বয়সেও বেশ, বড়। সবদিক দিয়েই বড় বলেই বাঁকা হাসলো আরিয়ান।
আরশি একটু লজ্জা পেয়ে গেলো। আরিয়ান এইভাবে কথা বলছে অবিশ্বাস্য। (মনে মনে)
আরিয়ান বেশ, ধমকের সুরে বললো যেহেতু আমি তোমার বড় সেহেতু বার বার নাম ধরে ডাকার অর্থ কি?
আরশি বেশ অবাক হয়ে বললো তাহলে কি বলবো?
কি বলবে মানে আমাদের সম্পর্ক টা কি ভুলে গেছো?

তুমি আমার ফুপির মেয়ে আমি তোমার মামার ছেলে তো আমাদের সম্পর্ক টা কি?
আরশি কি বলবে বুঝতে পারছেনা। আরিয়ান সবটা জেনেও তার সাথে এমন আচরন করবে ভাবতে পারেনি। চোখদুটো পানিতে টলমল করছে। তবু নিজেকে সামলে নিলো।

আমি তোমার বড়ভাই তাই ভাইয়া বলেই ডাকবে নেক্সট যেনো ভুল না হয়। আমি ছোটোদের বেয়াদবি একদম পছন্দ করি না।

আরশির চোখ দিয়ে এবার পানি বেরিয়ে গেলো। এইভাবে অপমানিত হবে সে ভাবতে পারেনি। হবু স্বামী কে এখন ভাই বলে ডাকতে হবে। আরিয়ান কি জানে না কিছু নাকি না জানার ভান করছে। মনে মনে ভেবে আরশি বললো কিন্তু আমাদেরতো বি….

আরিয়ান আরশিকে থামিয়ে দিয়ে বললো বিয়ে ঠিক করা আছে কিন্তু বিয়েটা তো হয়নি। বিয়ের আগে আমাদের সম্পর্কটা কি সেটা মাথায় রাখো আর কোনো কথা না বলে যাও রুমে গিয়ে ঘুমাও।

আরশি চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো। রুমে গিয়ে বসে বসে কান্না করতে লাগলো আর আরিয়ানকে ইচ্ছে মতো গালি দিতে লাগলো আর বলতে লাগলো- হবু স্বামী কে ভাইয়া ভাইয়া বলতে হবে কি রাক্ষস একটা। গুমরা মুখো হ্রদয়হীন। তোকে বিয়েই করবোনা। আমার জন্য কি ছেলের অভাব পড়েছে। বিয়ে ক্যানসেল করলাম ভাই তুই ভাই ই থাক। রাগে কটমট করতে লাগলো আরশি।

কাঁধে হাত পড়তেই চমকে ওঠলো আরশি। পিছনে তাকিয়ে ভুত দেখার মতো ভয় পেয়ে গেলো। লাফ দিয়ে ওঠে দাঁড়ালো ভয়ে ঢোক গিললো৷ আরিয়ান রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। আরশির হাত উঁচু করে কিছু একটা দিলো। নিচে তাকিয়ে দেখে একটা ফোন। এটাতো আমার ফোন আরিয়ানের রুমেই ফেলে এসেছিলাম। কিন্তু আমার সব কথা কি শুনেছে? শুনলে শুনুক তাতে আমার কি ( মনে মনে)

আরিয়ান ফোনটা দিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো। আরশি একটা ঘুষি দেখাতে নিবে এমন সময়ই তাকালো আরিয়ান আরশিও তারাতারি হাত নামিয়ে নিলো। আরিয়ান বললো- চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো কোনো সমস্যা হলে ফোন দিও। বলেই বেরিয়ে গেলো আরিয়ান।

আরশি মুখ ভেঙচি দিয়ে বললো তোকে ফোন দিতে বয়ে গেছে আমার তুই কে রে গবর গোনেষ একটা। বলেই গটগট করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

রাত তিনটায় ঘুম ভেঙে গেলো আরশির। খুব পানি পিপাসা পেয়েছে পানি আনা হয়নি আরিয়ানের সাথে রাগ করে এসে ঘুমিয়ে গেছে। তাই ওঠে পানি আনার জন্য জগ নিয়ে কিচেনে গেলো।

পানি নিয়ে রুমে ফিরে আসবে এমন সময় দেখতে পেলো আরিয়ানের রুমে আলো জ্বলছে। আরিয়ানতো রাতে আলো নিভিয়ে ঘুমায় আলোতে ঘুমাতে পারে না। তাহলে কি ও জেগে আছে ঘুমায় নি মনে মনে ভেবে আরিয়ানের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আরশি। হাতে জগ ছিল তাই পা দিয়ে দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখলো দরজা লাগানোই আছে। ভাবলো হয়তো আজ লাইট অন রেখেই ঘুমিয়েছে।

তাই পিছন ফিরে চলে যাবে এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো। হঠাৎ কারেন্ট চলে যাওয়াতো অনেকটাই ভয় পেয়ে গেলো হাতে কাচের জগটাও হাত ফসকে পড়ে গেলো। কি করবে বুঝে ওঠতে পারছেনা আরশি এই অন্ধকারে রুমেই বা যাবে কি করে।

আর আরিয়ান যদি দেখে কি ভাববে ভেবেই বেশ ঘাবরে গেলো। তাই অন্ধকারেই আস্তে করে চলে যাবে ভাবলো অন্তীর রুম দশ পা গেলেই পেয়ে যাবে ভেবেই পা বাড়ালো সাথে সাথে কাচের টুকরা ঢুকে গেলো আরশির পায়ে আর আরশি চিৎকার করে ওঠলো। আরশির খেয়ালই ছিলনা যে জগটা পড়ে গেছে আর সেটা এখন কাঁচের টুকরায় পরিণত হয়েছে। ~ [ লেখিকা ঃ নওশিন নাঈমা ]

আরশির চিৎকার শুনে আরিয়ান ফোনের টর্চ জালিয়ে দৌড়ে দরজা খুললো। সামনে আলো ধরতেই দেখতে পেলো আরশি পা ধরে কান্না করছে আর পা দিয়ে অনেক রক্ত বেড়িয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান তারাতারি আরশিকে দুহাত দিয়ে ধরে ওঠিয়ে কাচের টুকরার মাঝখান থেকে সরালো। এতোরাতে এখানে কি করছো।

আরশি কান্না করেই চলেছে। আরিয়ান কি করবে কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছে না। পায়ে ধরে কাচটা একটানে বের করে ফেললো আরশি আরো জেরে কেদে ওঠলো। এবার আরিয়ান আর সহ্য করতে পারলোনা। আরশির কান্নাটা ওর বুকে গিয়ে আঘাত করলো। বুকের ভেতর কেমন একটা মোচর দিয়ে ওঠলো।

আরিয়ান আর দেরী না করে তারাতারি আরশিকে পাজাকোল করে ওর রুমে গিয়ে বিছানায় বসালো আরশির পা দিয়ে অনর্গল রক্ত ঝরেই যাচ্ছে। তাই তারাতারি ফার্স্ট এইডস বক্স এনে কাটা জায়গা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। একটা ব্যাথার ওষুধ ও খাওয়িয়ে দিলো। আরশি ব্যাথায় একদম নেতিয়ে পড়লো। আরিয়ান আরশির পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত দিয়ে বললো সেড়ে যাবে। একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো। আরশি ডুকরে কেঁদে ওঠলো।

আরিয়ান বুঝতে পারলো আরশি একটু ব্যাথাও সহ্য করতে পারেনা। ফুফু ফুফার একমাএ আদরের মেয়ে।

ছোটো থেকেইতো জানি কেমন মনে মনে ভেবে আরশিকে বুকে জরিয়ে নিলো। আর যাই হোক এই মেয়েটার চোখের পানি সহ্য করা যায় না। আর কতটা যন্ত্রণা নিয়ে এইভাবে কাঁদছে সেটা বুঝতে পারছে আরিয়ান তাই ওর মাথাটা বুকে নিয়ে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আরশি ও আস্তে আস্তে শান্ত হলো বেশ কিছুক্ষন পর ঘুমিয়েও পড়লো।

আরশিকে শুইয়িয়ে দিয়ে নিজে ওঠে গেলো ভোর হতে ঘন্টাখানিক আছে। আরশিকে অন্তীর রুমে দিয়ে আসা উচিত ভাবছে আর পাইচারি করছে রুমে। হঠাৎ চোখ গেলো বিছানার দিকে। এতোক্ষন তেমনভাবে খেয়াল করা হয়নি। গোল্ডেন কালারের প্লাজো আর কালোর মধ্যে গোল্ডেন সুতোর ভারী কাজের কামিজ পড়া আছে আরশি।

ঘুমন্ত আরশিকে এখন অপ্সরীর মতো লাগছে আরিয়ানের কাছে। ইচ্ছে করছে কাছে গিয়ে একটুখানি ভালবাসার পরশ একে দেই। কিন্তু সেটা কি ঠিক হবে আরশি যখন হবু স্বামী হিসেবে আমার সাথে কথা বলতে আসে আমিতো পাত্তাই দেইনা। (মনে মনে)
পানি পিপাসা পেয়েছিলো অনেক তাই তারাহুড়োয় আর ওড়নাটাও নেওয়া হয়নি আরশির।

তার সাথে যে এসব ঘটবে তাও জানতোনা সে তাই ওড়না নেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করেনি। কিন্তু তার হবু স্বামী যে তাকে এইভাবে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেছে বুকের ভেতর অজানা এক অনুভূতিরা শিহরন জাগাচ্ছে সেটা কি সে টের পাচ্ছে। যদি পেতো হয়তো লজ্জায় শেষ হয়ে যেতো। আরিয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। এইভাবে ঘুমন্ত আরশিকে দেখা কি ঠিক হচ্ছে। যদি জানতে পারে কি ভাববে আমাকে নাহ একদম ঠিক হচ্ছেনা।

কি করবে কিছু বুঝে ওঠতে পারছেনা আরিয়ান। তাই রুম থেকে বেরিয়ে যাবে সিদ্ধান্ত নিলো। দরজার কাছে গিয়ে আবার ঘুরে তাকালো আরশির দিকে। তাকিয়ে ভাবলো কতোটা মায়া আছে এই মুখটায় আজ যদি এসব না ঘটতো কখনো খেয়ালই করা হতোনা। বুকের ভেতর এমন উথাল পাথাল করছে কেনো। মানুষের মধ্যে কি দুইটা মন থাকে? নাকি আমার মধ্যে দুইটা মন তৈরী হয়ে গেলো একমন বলছে চলে যা আরেক মন বলছে থেকে যা।

নাকি ব্যাপারটা অন্য কিছু। হতে পারে একটা আবেগ আরেকটা বিবেগ কিন্তু এখনো কি এতোটা আবেগী হওয়ার বয়স আছে। থাকবেনা কেনো আবেগটাতো আর বয়স বিবেচনা করে থাকে না।
ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে….


পর্ব ১১

ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে ধীর পায়ে আলমারীর দিকে এগোলো।

আলমারি থেকে একটা তয়ালে বের করে আরশির দিকে এগিয়ে গিয়ে একটু ঝুকে তয়ালেটা গলায় পেঁচিয়ে দিলো। আরশির চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো কান্না করাতে চোখের পাপড়িগুলো ভেজা। ঘনকালো চোখের পাপড়িগুলো চোখের পানিতে ভিজে গেছে জড়সড় পাপড়িগুলো দেখতে অসাধারণ লাগছে।

এই চোখ দিয়ে তাকালে মনে হয় আরো বেশী সুন্দর লাগতো। খুব ইচ্ছে করছিলো জাগিয়ে দিতে কিন্তু এতোটা বোধহয় আমায় মানায় না ভেবেই সোজা হয়ে ওঠে দাঁড়ালো।
আরশি যখন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলো তখনই কারেন্ট ও চলে এসেছে।
লাইট টা অফ করতে গিয়েও অফ করলোনা আরিয়ান। যদি ঘুম ভাঙলে ভয় পেয়ে যায়। এমনিতো খুব সাহসীকতা দেখায়। হুট করে কারেন্ট চলে না গেলে জানতেই পারতাম না কতোটা ভীতু। (মনে মনে)

আরিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে অন্তীর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। বোনের চিন্তায় সারারাত ঘুম হয়নি। শেষ রাতটাও আরশির জন্য ঘুম হলো না। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলে মাথা যন্ত্রণাটা কমবে ভেবেই চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে দিলো বিছানায়।

ছয়টার দিকে আরিয়ানের ফোনে কল আসলো। হসপিটাল থেকে ফোন করেছে আয়েশা বেগম। অন্তীর অবস্থা আগের থেকে ভালো সেই খবড় দিতেই ফোন করেছে। আর সকালের খাবাড় নিয়ে যেতে বলেছে। অন্তীকে বাড়ীর খাবাড় খাওয়ানো যাবে কাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি অন্তীর। শুধু স্যালাইন চলছিলো।

কিন্তু আরশিওতো অসুস্থ এই পা নিয়ে তো কিছু করতে পারবেনা। তাই আয়েশা বেগম কে সবটা জানালো আর বললো- সকালের খাবাড়টা বাইরে থেকেই খেতে হবে আমি খাবাড় নিয়ে পৌছে যাবো। আর ফুপুকে ফোন দিয়ে আসতে বলি আরশিকে সামলাবে কে বাড়িতে একজন থাকতে হবে। বাবাতো আর পারবেনা বলেই ফোন কেটে দিলো। আরশির মা কে ফোন করে সবটা জানালো দুপুরের মধ্যেই এসে পড়বে। শুধু সকালটা আরিয়ানকেই ম্যানেজ করতে হবে। আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে গেলো।
আটটার দিকে ঘুম ভাংলো আরশির। চোখগুলো খুলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো আরিয়ানের রুমে। তারাতারি ওঠে বসলো। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা তয়ালে দিয়ে গলা মোড়ানো। আরশির মাথায় কিছু ঢুকছেনা এই তয়ালে আসলো কি করে। এটাই বা আমার গায়ে কেনো মনে মনে ভাবছে আরশি। হঠাৎ রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। দ্রূত পায়ের দিকে তাকালো হ্যা পায়ে ব্যান্ডেজ করা। তারপর তার মনে পড়ে গেলো সে আরিয়ানের বুকে মাথা দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। কিন্তু এই তয়ালেটার মানে কি?
আরশি চমকে ওঠলো আমিতো রাতে ওড়না ছাড়াই পানি নিতে এসেছিলাম তারপর ঘটে যাওয়া সব মনে পড়লো ছি ছি আরিয়ান কি ভাবলো। ও যে ধরনের মানুষ নিশ্চয়ই আমার ওপর রেগে গেছে। হায় আল্লাহ কি যে ভাবছে আমায়৷ আরিয়ানই কি তয়ালেটা দিয়ে দিয়েছে? ও কি এইভাবে দেখেছে? দেখেছে বলেইতো তয়ালে টা দিয়ে দিয়েছে। ইশ লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে কিভাবে মুখ দেখাবো ওকে ধ্যাত।

তবে কি বুদ্ধুরাম নিজেতো রুমে নেই নিশ্চয়ই অন্যরুমে গিয়ে ঘুমিয়েছে এই খালি ঘরে কে দেখবে আমায় এইভাবে প্যাকিং করে যেতে হবে। মনে মনে কথাগুলো বলে মুচকি হাসলো আরশি।

বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াতে গিয়েও দাঁড়াতে পারলোনা পায়ে বেশ কেটে গেছে।
তাহলে এখন সব কি করে করবো রান্নাটাও তো করা উচিত। আর আমার ফোন সেটাওতো এখানে নেই কি করবো এখন মামা কি আছে না বেরিয়ে গেছে। আরিয়ানই বা কোথায়। ( আরশি)

বেশকিছুক্ষন পর ওঠে দাড়ালো একপায়ে ভর দিয়ে কাটা পায়ে হালকা ভর করে। এক পা ফেলে আরেক পা এর আগা ফেলে খুব কষ্টে দু তিন পা এগোলো। আরেক পা এগোতে গিয়ে ধপাস করে পড়ে গেলো ফ্লোরে আবারো চিৎকার করে ওঠলো। আরিয়ান কেবলই হসপিটালে খাবাড় দিয়ে এসে ড্রয়িং রুমে বসেছে। সাথে সাথে আরশির চিৎকার শুনে দৌড়ে রুমে আসলো। এসে দেখলো আরশি ওপুত হয়ে পড়েছিলো আস্তে করে ওঠে বসলো। আরিয়ান বললো-

কাউকেতো ডাকবে নাকি.. বার বার এমন বোকামি কেনো করো বলেই আরশি কে ওঠতে সাহায্য করলো। কিন্তু এবারেও আরশির গায়ে ওড়না ছিলনা তয়ালেটাও ফ্লোরে পড়ে আছে। আরশি বেশ লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু একা হেটে যেতেও পারছে না।

আরিয়ান ও বেশ অসস্তি তে আছে কি করবে বুঝে ওঠছেনা। বুকের ভেতর কেমন ধকধক করছে চাপা অনুভূতিটা চেপেই রাখলো। নিচে তাকিয়ে দেখলো তয়ালেটা পড়েই আছে তাই আর কিছু না ভেবে এ একহাত দিয়ে তয়ালে তুলে নিলো আরশি একপায়ে ভর করেই দাড়িয়ে আছে। তয়ালেটা আরশিকে দিতেই আরশি আর আরিয়ানের দিকে তাকাতে পারলো না। কি হচ্ছে এসব এমন লজ্জাকর পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে কেনো ভাবছে আরশি।

আরিয়ান বুঝতে পারলো আরশির মনের অবস্থা তাই সে নিজেই আরশিকে তয়ালেটা ওড়নার মতো করে পড়িয়ে দিলো। আরশি খুব লজ্জা পাচ্ছিলো যদি পারতো এখনি পালিয়ে যেতো আরিয়ানের সামনে থেকে কিন্তু সেই উপায়ও নেই। আরিয়ান বললো- হাটতে পারবে আমাকে ধরে?
আরশি কিছু বললো না।
আরিয়ান কি যেনো ভেবে আরশিকে পাজাকোল করে নিয়ে অবন্তীর রুমের উদ্দেশ্য বের হলো। আরশিতো অবাক কি হচ্ছে কাল থেকে আমি স্বপ্ন দেখছিনাতো। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো আরশি অনুভব করার চেষ্টা করলো সব কিছু। আরিয়ানের স্পর্শ অনুভব করতে পারছে আরশি। সবটাই বাস্তব কোনো স্বপ্ন নয়।

কাল রাতে যেটা আরশি ফিল করতে পারেনি আজ সেটা ফিল করছে। আরিয়ান কি তাহলে আমাকে ভালবাসতে শুরু করেছে? নাকি সবটাই শুধু দায়িত্ব আর মনুষত্বের খাতিরে করছে। আরশি বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে।

অবন্তীর রুমে গিয়ে আরশিকে বাথরুমের ভেতরে গিয়ে বসিয়ে রেখে বললো ফ্রেশ হয়ে নাও কিছু লাগলে ডেকে নিও। বাইরে থেকে খাবাড় এনেছি ফ্রেশ হয়ে খেতে হবে কিছু ওষুধ ও খেতে হবে। আরশি মাথা নাড়ালো আরিয়ান চলে গেলো। এতক্ষন যা ঘটলো আরশি তাতে কখনোই পরিচিত ছিল না আজ যেনো এক নতুন সকালের আগমন ঘটেছে আরশির জীবনে। তবে কি আরিয়ানের ও আমার প্রতি অনুভূতি আছে।

আরশির মন স্থির হতে পারছেনা শুধু আরিয়ানের অনুভূতির কথা জানতে ইচ্ছে করছে। মনের ভেতর অজানা এক ভাললাগা কাজ করছিলো আরশির তবে কি এবার আরিয়ানের ভালবাসা পাবো আমি? মানুষটা কি ভালোবাসতে পারে? ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো আরশি তারপর ফ্রেশ হয়ে নিলো। আস্তে আস্তে দেয়াল ধরে বাথরুম থেকে বের হলো।

তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নিজেকে দেখতে লাগলো। চেহেরায় কি উজ্জলতা বেড়ে গেলো? প্রিয়জনের ভালবাসা পেলে ভালবাসার পরশ পেলে নাকি মেয়েদের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি পায়।
ভালবাসার পরশ কি তবে আমায় ছুতে পেরেছে। ভেবেই মুচকি হাসলো।

তারপর ড্রেসিং টেবিলের পাশে থাকা ওয়ারড্রব থেকে একটা ওড়না বের করে পড়ে নিলো। হাঁটতে কষ্ট হলেও বিছানায় গিয়ে ফোন টা নিয়ে হসপিটালে ফোন করলো ওদিকের সব খবড় নিয়ে রেখে দিলো। অন্তীকে আরো তিনদিন পর বাড়ী নিয়ে আসবে। সে অবদি আমাকে সেরে ওঠতে হবে মনে মনে ভাবলো আরশি।

কিছুক্ষন পর আরিয়ানকে ফোন দিলো একবার রিং বাজতেই কেটে দিলো ফোন। পাঁচ মিনিট পর খাবাড় নিয়ে রুমে আসলো আরিয়ান। আরশি অবাক এ কাকে দেখছে এ সত্যি আরিয়ান তো? আমার জন্য রুমে খাবাড় নিয়ে আসলো এক গ্লাস পানিও যে নিজের হাতে করে খায় না সে রুমে খাবাড় নিয়ে এসেছে। (মনে মনে)
পা নিয়ে হাটতে পারবেনা তাই রুমে নিয়ে আসলাম।

বলেই খাবাড়টা আরশির হাতে দিলো আর নিজের প্লেট টাও নিয়ে আরশির পাশে বসে পড়লো। আরিয়ান খেতে শুরু করলো আর আরশি কে বললো খাবাড় নিয়ে বসে না থেকে খেয়ে নাও তারাতারি, ওষুধ খেতে হবে।

কীসের ওষুধ?
পা কেটেছে ভুলে গেছো নাকি … ওষুধ না খেলে ব্যাথা করবে আর ঘা টাও শুখাবেনা তাই খেতে হবে।
ওহ!
হুম। ভালোই কেটেছে আর একটু আঘাত হলেই সেলাই করা লাগতো। তাই ওষুধ গুলা নিয়মিত খেতে হবে। কি হলো এইভাবে খাবাড় নিয়ে বসে আছো কেনো খেয়ে নাও৷
আরশি চমকে ওঠলো আর বললো- হুম খাচ্ছি বলেই খাবাড় গুলো হাত দিয়ে নাড়তে লাগলো। যা দেখে আরিয়ানের রাগ হলো তাই ওঠে দাঁড়ালো আর বললো খাবাড়টা শেষ করে ডেকে নিও বলেই হনহন করে চলে গেলো। খাবাড়টা পুরোটা খেতেও পারলোনা। আরশি কিছুই বুঝতে পারলোনা কি হলো।

রেগে গেলো নাকি কিন্তু কেনো রাগ করলো খাচ্ছিলাম না বলে? তাই রাগ করার কি হলো কাল থেকে যা হচ্ছে এরপর কি ওর সামনে খাবাড় গলা দিয়ে নামবে। ছোটো থেকেতো কোনো দিন দরকার ছাড়া সামনেও আসে নি। কাল থেকে যে এতো কাছে পাচ্ছি এতেতো আমি অভ্যস্ত নই। ভালবাসার মানুষকে এইভাবে এতো কাছে প্রথম প্রথম পেলে অন্যরকম লাগাটাই স্বাভাবিক সেটাকি ঐ গুমরামুখো বুঝে না নাকি। মনে মনে ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

আরিয়ান চুপ করে রুমে বসে আছে আর ভাবছে আরশির প্রতি হঠাৎ এতো দূর্বল হয়ে পড়ছি কেনো। আর পাঁচ মিনিট ওইরুমে থাকলে হয়তো আমি নিজের হাতেই ওকে খাওয়িয়ে দিতাম। তাই রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে পড়া ছাড়া উপায় ছিলনা। এতো তারাতারি তো আমার ভালবাসা ওর কাছে প্রকাশ করা যাবে না।

আমাকে আগে বুঝতে হবে আমার প্রতি ওর অনুভূতিটা ঠিক কি। বাবা মায়ের জন্য আমরা দুজনই হয়তো বিয়েটা করে নিব। একসাথে সারাজীবন থাকবো। কিন্তু তার আগে জানতে হবে আমার প্রতি ওর ভালবাসার গভীরতা কতটুকু।

শুধুই কি বিয়ে করবে বলে আমার কাছাকাছি আসতে চায় নাকি আমার প্রতি ওর ভালবাসা আছে। সেটা আমাকে জানতেই হবে। আজ হয়তো বাবা মার জন্য বিয়ে করে নিবে এমন ও তো হতে পারে অন্তীর মতো ওর জীবনেও কেউ থাকতে পারে বা ভবিষ্যতে কেউ আসতেও পারে। তাই এসব বিষয় আমাকে ক্লিয়ার হতেই হবে। বিয়েটা সত্যি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরে এটা নিয়ে কোনো আফসোস থাক চাই না।

কিন্তু অন্তী ওর কি হবে রাফসান কি সত্যি ফিরবে যদি না ফেরে বাবাতো তার বন্ধুর ছেলের সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দেবেই আমি হয়তো কিছুদিন আটকে রাখতে পারবো। এই বিষয়টা নিয়ে আরশির সাথে কথা বলতে হবে৷ কিন্তু তাহলেতো ওর কাছাকাছি যেতে হবে। যদি দূর্বল হয়ে পড়ি। নাহ নিজেকে শক্ত রাখতেই হবে কঠোর হয়ে থাকতে হবে ওর সামনে।

আরশি খাওয়া কমপ্লিট করে বসে আছে। ভাবছে আরিয়ানকে ডাকবে নাকি ডাকবে না। রেগেই তো চলে গেলো মনে হয়। এই লোকটার মতি গতি কাল থেকে ভাল লাগছেনা। মা গো তোমার ভাইয়ের ছেলে আমাকে শান্তি তে থাকতে দিবেনা এতোদিন কাছে গেলে দূর দূর করতো আর আজ কাছে এসে আবার রাগ দেখিয়ে চলে গেলো।
ভাললাগা শুরু হওয়ার আগেই এমন শেষ শেষ হয়ে যায় কেন।

কি ব্যাপার হা করে বসে কি ভাবছো? খাওয়া শেষে ডাকতে বলেছিলামতো। তেমার সমস্যা কি। মাথায় কি সমস্যা আছে নাকি ডক্টর দেখাতে হবে? ধমকের সুরে বলে ওঠলো আরিয়ান।

আরশি চমকে ওঠলো বড় বড় করে তাকালো আরিয়ানের দিকে।
আরিয়ান কয়েকটা ট্যাবলেট আরশির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো খেয়ে নাও।

বলেই প্লেট নিয়ে চলে গেলো আর কিছু না বলে। আরশি পাশে থাকা পানির গ্লাসটা নিয়ে ওষুধগুলো খেয়ে নিলো। আর ভাবলো না আর চুপ করে থাকা যাবেনা এবার কথা বলতেই হবে কাল থেকে অনেক চুপ করে থেকেছি আর না।

কি বললো আমার সমস্যা আছে কি না তাইনা আরে আমার কি সমস্যা থাকবে সমস্যা তো তোর আছে। ফিলিংস হীন পুরুষ একটা এতো সুন্দরী একটা মেয়ে সামনে আছে আর তার কোনো হুশই নেই। ভাবনার মধ্যেই কথাগুলে যে ভালোই জোরে বলে ফেলেছে নিজের অজান্তেই সেটা টেরই পায়নি আরশি।

তারপাশেই যে আরিয়ান পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে দেখতে পায়নি।
আমি ফিলিংস হীন পুরুষ? শান্ত স্বরে কঠিন মুখো ভঙ্গিতে বললো। (আরিয়ান)

আরশি চমকে ওঠে দাঁড়াতে গিয়েও দাঁড়াতে পারলোনা বসেই ঢোক গিললো। ভয়ে ভয়ে বললো তুমি।
কেনো অন্য কেউ আসার কথা, ছিলো নাকি। বাড়িতে তো কেউ নেই আমি ছাড়া। বাবা তো হসপিটাল গেছে।
তো কি বলছিলে?
আরশি আমতা আমতা করে বললো কই কিছুনা তো।

মিথ্যা আমি একদম পছন্দ করিনা। তাই বলো কি বলছিলে?

আসলে আমি কথাগুলো তোমাকে বলিনি। ( নিচু স্বরে)
ওহ আচ্ছা তোমার লাইফে কেউ আছে না কি যিনি ফিলিংস হীন?

আরশি থমকে গেলো কথা শুনে কিছুটা রেগেও গেলো তাই বললো- এসব কি বলছো আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আর আজ তুমি বলছো অন্য কেউ আছে কিনা। না আরিয়ান কেউ নেই।
ওহ তাহলে সেই পুরুষ টা আমি যার ফিলিংস নেই?
আসলে কথাটা ওইভাবে বলতে চাইনি। সরি (মন খারাপ করে)

সরি বলছো কেনো সত্যি তো আমার মধ্যে কোনো ফিলিংস নেই। আমি গুমরা মুখো কিছু বুঝিনা আমি। আরশি বিয়েটা এখনো হয়নি তুমি চাইলে বিয়েটা ক্যানসেল করতে পারো।
আরশির চোখ দুটো পানিতে ভরে গেছে আরিয়ানের কথা শুনে শুধু গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা।

আরিয়ান বলতেই থাকলো ওর কথা ইচ্ছে করেই এসব বলছে আরিয়ান – আমার কোনো সমস্যা নেই ফুপু আসবে একটু পরেই তুমি বলে দিও আমাকে বিয়ে করতে চাও না তুমি। কি পাবে আমাকে বিয়ে করে হাসি মুখে তো দুটো কথাও বলতে পারিনা তোমার সাথে। অন্য ছেলেদের মতো তোমার পিছু ঘুর ঘুর করতে পারিনা। আমিতো তোমাকে ভালোও বাসিনা যেখানে ভালবাসা নেই সেখানে কেনো আসবে তুমি। তাই তুমি তোমার জীবনটা এমন ভালবাসাহীন, ফিলিংসহীন লোকের সাথে জরিও না।

আরশির চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়তে লাগলো আরিয়ান ওর চোখের পানি দেখে আর কিছু বলতে পারলো না। পরীক্ষা টা কি খুব বেশীই হার্ট করে ফেললো আরশিকে। নাহ আমার দুর্বল হলে চলবে না।

আরিয়ান রুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেলো আরশির কান্নাটা আরিয়ানের বুকে গিয়ে লাগছে। এই কান্নায় ভালবাসাই আছে বুঝতে পারলো আরিয়ান কিন্তু সেটা কি ক্ষনস্থায়ি না দীর্ঘস্থায়ি এটা যেদিন বুঝবো সেদিনই আমার ভালবাসার পরীক্ষা শেষ হবে। আমার মতো ফিলিংসহীন পাষাণ হ্রদয়ের মানুষের এই টুকু না করলে কি চলে। ভাবতে ভাবতে চলে গেলো। তবে তার ও যে কম অভিমান নেই আরশির প্রতি। যতটা আরশির আছে তার প্রতি তার থেকে দ্বিগুন আছে তার আরশির প্রতি।

আরশি কান্না করতে করতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে সারাদিন রুম থেকে বের হয়নি। সবাই ভেবেছে পায়ের জন্য বের হয়নি কিন্তু আসল ব্যাপারটা কেউ জানে না। আরিয়ান ও তেমন বুঝতে পারেনি। আরশির মা এসেছে দুপুরের দিকে মেয়ের চোখ দেখে ধারনা করে নিয়েছে তার আদরের মেয়ের পা কাটাতে এইভাবে কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।

তিনদিন কেটে গেছে। অবন্তীকে বাড়ী নিয়ে আসা হয়েছে। অবন্তী আর আরশি দুজনকেই সামলাচ্ছে আয়েশা বেগম আর আরশির মা আসমা বেগম। এইকদিন এ আরিয়ানের সাথে তেমন দেখা হয়নি আরশির। আরশি ও চায় না দেখা হোক। কিন্তু আরিয়ান ঠিকি আরশির খবড় পায় তার মায়ের থেকে।

তেরোদিন পার হয়ে গেছে। আরশি মনে মনে জেদ করেছে আরিয়ান কে উচিত শিক্ষা দিবে। তাই সে অনেক প্ল্যান ও করে ফেলেছে। আরিয়ানের তার প্রতি ফিলিংস আছে কিনা এবার সে ঠিকি বুঝতে পারবে। তার ভেতরে সুপ্ত কোনো প্রেম আছে কিনা সেটা এবার বের করেই ছাড়বে আরশি। যদি না থাকে তাহলে সারাজীবনের জন্য আরিয়ান আর এই বাসা দুটোই ত্যাগ করবে। তবে প্ল্যান টা সাকসেসফুল করতে হলে সেরকম একটা পরিস্থিতি লাগবে কিন্তু সেটা কবে ভাবতে ভাবতে ড্রয়িং রুমে পা বারালো আরশি।
ড্রয়িংরুমে গিয়ে আরশির চোখ দুটো রসগোল্লার মতো গোল হয়ে গেলো…


পর্ব ১২

ড্রয়িং রুমে অবন্তীর, বাবা মা, ভাই আর আরশির মা বসে খুব জরুরী কোনো বিষয়ে আলোচনা করছে। এতোটাই জরুরী আরশি যে ড্যাবড্যাব করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই। আরিয়ান বসে আছে তার মা আসমা বেগমের কাছে। আরশিকে দেখে আরিয়ান আসমা বেগমের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো সোফায়। তা দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠলো আরশি। আমাকে অপমান করে আমার মায়ের কাছে বসে ভাব বিনিময় করা হচ্ছে তাইনা (মনে মনে)

আরিয়ানের মাথার চুল হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছে অনেক আদরের সাথে আসমা বেগম। ছেলে নেই তার ভাইয়ের ছেলেকে খুব ভালোবাসেন তাইতো একমাএ আদরের কন্যার সাথে বিয়ে দিয়ে সম্পর্ক আরো গভীর করতে চান।

ভাই আর ভাইয়ের ছেলের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস। আরশির খুব রাগ হচ্ছে ইচ্ছে করছে গিয়ে টেনে তুলে বলুক আমার মায়ের কাছে একদম আসবেনা। আর তার মা কে ও বলুক তার গুনোধর ভাইপোর কীর্তি। নাহ আর সহ্য করা যাচ্ছে না। আরশি ঝড়ের ব্যাগে গিয়ে আয়েশা বেগমকে বললো -মামি ক্ষুধা লেগেছে খেতে দাও।

সবাই আরশির দিকে তাকালো আরিয়ান ও তাকালো আরশি ইতস্তত বোধ করলো। আসমা বেগম বললো- কিরে আজ এতো আগেই ক্ষিদে পেলো বারোটা বাজে তিনটার আগেতো দুপুরে খাবাড় খাসই না। সেই সকাল নয়টা আবার দুপুর তিনটায়।

আরশি আরো রেগে গিয়ে বললো ওকে খাবনা চলে যাচ্ছি। বলেই রাগে গটগট করতে করতে চলে গেলো। আরিয়ান চুপ করে ফুপুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে রইলো সোফায় আরিয়ানের বাবা বললো-মেয়েটাকে রাগিয়ে দিলি খেতে চাইলো। আয়েশা যাও আরশি মা কে খাবাড় দিয়ে আসো।

হুম যাচ্ছি।

আসমা বেগম বললো রাগটা হয়েছে অন্যকারনে সেটা তুমি বুঝবে না। আমার মেয়েকে আমার থেকে ভালো আর কে চেনে। আর ওর খিদে ও পায় নি মিলিয়ে নিও।

আরিয়ান ভাবতে লাগলো রাগের কারন। আমি ফুপুর আদর খাচ্ছি তাই এমন নাকি হুম এটাও হতে পারে এসবেতো হিংসুটে। আমার সাথে একটু বেশী আর সেদিন যা বলেছি এরপরতো আরোই। তারপর থেকে তো আমার সামনেও আসে না। মনে মনে ভেবে মুচকি হাসলো।

আরশি অবন্তীর রুমে ঢুকলো।
মাথার উপর যে শূন্যতা তার নাম আকাশ, বুকের ভেতর যে শূন্যতা তার নাম দীর্ঘশ্বাস।

আমার এই দীর্ঘশ্বাস কি কোনোদিন ও কাটবেনা। প্রত্যেকটা রাত, প্রত্যেকটা সকাল, প্রত্যেকটা বিকেল যে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সেই দীর্ঘশ্বাস কি কোনোদিনও কাটবেনা। আমার ভালবাসা কি আমার কাছে ফিরবেনা। আর কতোদিন তাকে ছাড়া থাকতে হবে। আমি এই যন্ত্রণা আর কতোদিন বয়ে বেড়াবো। মনের মধ্যে অসংখ্য প্রশ্ন নিয়ে, এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠলো অবন্তী।

আরশি চমকে ওঠলো রুমে ঢুকার সাথে সাথে অবন্তীর চিৎকার শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে।
অন্তী কি হয়েছে।

অবন্তীর কাছে যেতেই অবন্তী আরশিকে জরিয়ে ধরে হাওমাও করে কাদতে লাগলো আরশি কি করবে বুঝে ওঠতে পারছেনা। অবন্তীকে স্বান্ত করার চেষ্টা করলো। আর বললো- অন্তী এইভাবে কাঁদলে শরীর খারাপ করবে তোর প্লিজ এইভাবে কাঁদিস না বোন আমার।

আপু আমার রিদ কোথায় চলে গেলো। আটমাস হয়ে গেলো। কেনো ও আসছেনা আমার কাছে আপু আমার রিদকে এনে দে আমার কাছে আমি যে আর পারছিনা ওকে ছাড়া থাকতে বলে আবার কান্নায় ভেঙে পড়লো অবন্তী।
আরশি ভাবলো এবার কিছু একটা করতেই হবে।

অন্তী খুব তারাতারী রিদ ভাইয়া ফিরে আসবে দেখিস।

আপু রিদ ঠিক আছেতো ওর কিছু হয়নিতো। কেনো ও আসছেনা। আপু আমার সবথেকে বেশী ভয় কি জানিস।
কী।
আমার রিদ ঠিক থাকলে এই পৃথিবীর যেখানেই থাকুক সে তার অন্তীর থেকে দূরে থাকতে পারবেনারে আপু। আপু আমার রিদের কিছু…. আর কিছু বলতে পারলোনা আবারো ডুকরে কেঁদে ওঠলো অবন্তী।

আরশি বললো- একদম চুপ কিছু হয়নি। তুই ভাবছিস রিদ ভাইয়া হয়তো দুনিয়াতেই নেই তাইতো। অন্তী সেটা হলে তুই রিদের জন্য এতো মরিয়া হয়ে ওঠতি না। এইভাবে দিনেরপর দিন অপেক্ষা করতি না। অন্তী – মানুষতো জীবিত মানুষের জন্যেই অপেক্ষা করে। মৃত মানুষের জন্য কেউ অপেক্ষা করে না অন্তী সে যতো আপন লোকই হোক না কেনো। আমাদের সব অপেক্ষা তো জীবিত মানুষের জন্যই মৃত মানুষের জন্য নয়।

আরশির কথা শুনে অবন্তী একটু শান্ত হলো। আরশি অবন্তী কে বললো রিদ ভাইয়া যদি এসে দেখে তুই এই ভাবে কান্না করে করে অসুস্থ হয়ে গেছিস দেখিস তোর সাথে আর কথাই বলবেনা। অবন্তী জোর পূর্বক একটা হাসি দিলো চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরশিকে ছেড়ে বালিসে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। আরশি বললো- একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর আসছি আমি।

আয়েশা বেগম খাবার নিয়ে রুমে ঢুকবে এমন সময় আরশি বেরিয়ে আসলো।
আয়েশা বেগম বললো- এই তোর খাবাড় চল খেয়ে নে।
না মামি খাবনা খিদে নেই।

সেকিরে তখন যে বললি খিদে পেয়েছে।
তখন পেয়েছিলো এখন নেই। বলেই সিড়ি দিয়ে ওঠে ছাদে চলে গেলো আরশি। বিষয় টা এড়ালোনা আরিয়ানের চোখে।
আরশি সাদে গিয়ে তার এক পুলিশ ফ্রেন্ড কে ফোন করলো রিদের ব্যাপারে সমস্ত ডিটেইলস দিলো। রিদের নাম্বার ও দিলো। আরশির সব জরুরী কথা শেষ।

এমন সময় আরিয়ান ও ছাদে আসলো আরশি বুঝতে পারলো কিন্তু এমন ভাব করলো যেনো তাকে দেখতে পায়নি। সে তার মতো কথা বলতে শুরু করলো আরিয়ান কান পেতে কথা গুলো শুনছে। ফোনের ওপাশের কথা বুঝতে পারছেনা শুধু আরশিরটাই শুনতে পেলো।
ওকে খুব তারাতারি মিট করবো। টেক কেয়ার বাই।

(আরশি)
আরিয়ান রাগে হাতদুটো মুঠ করে আছে। আরশি ফোন কেটে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। আরিয়ান বলে ওঠলো এই কড়া রোদে ছাদে এসে কার সাথে কথা বলতে হয়।

আরশি শুনেও না শুনার ভান করে চলে যাওয়ার জন্য এক পা আগালো। আরিয়ান এতে আরো রেগে গেলো। আরশির একহাতে টান দিয়ে চিলেকোঠার ঘরের দেয়ালে ঠেকিয়ে নিজের দুহাত দেয়ালে রাখলো।

আরশি এমন আচরনে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। আরিয়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আরশিও কম না সেও বড় বড় করে তাকিয়ে বললো কড়া রোদে ছাদে এসে যার সাথেই কথা বলি তাতে তোমার কি।

এই যে আরিয়ান ভাইয়া শুনো বিয়েটা আমি ক্যানসেল করে দিব যেহেতু তুমি আমাকে ভালোইবাসোনা সেহেতু এই বিয়েটা অর্থহীন। আরশির মুখে ভাইয়া ডাকটা আরিয়ানের বুকে তীরের মতো বিধলো আটাশ বছরের জীবনে প্রথম আরশি তাকে ভাইয়া বলে ডাকলো। আরিয়ান মলিন মুখ করে তাকিয়ে রইল। তার রাগ নেমে গেলো।

আমি আম্মুকে বলবো খুব তাড়াতাড়ি যে এই বিয়েটা আমরা কেউ করতে চাই না। আরিয়ানের মুখটা চুপসে গেলো আরশির কথা শুনে।
মানে।

মানে টা বুঝোনি সেদিনের কথা গুলো মনে করো মানেটা বুঝে যাবে। বলেই আরশি আরিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে নিচে নেমে গেলো। আরিয়ান ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।

তারমানে আরশি আমাকে ভালোই বাসেনি। তাহলে বিয়েটা ক্যানসেল হয়ে যাবে। তারমানে কি ওর জীবনে অন্যকেউ আছে। কে সে। না আরশি না তোমাকে তো এতো সহজে ছাড়বোনা এতোবছর ধরে লুকিয়ে রাখা ভালবাসা তুমি এতোসহজে উপরে ফেলতে পারবেনা। আর তুমি চাইলেও বিয়েটা আটকাতে পারবেনা। একমাএ আমি আর উপরওয়ালা ছাড়া কেউ পারবেনা বিয়েটা আটকাতে।

আরিয়ান দেয়ালে একটা ঘুষি দিলো। তারপর সেও নিচে নেমে গেলো।
আরশি তার মতো করে রিদের খোজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে অবন্তীকে ডাক্তার সবসময় হাসি খুশি রাখতে বলেছে।

কিন্তু বিষাদ যেনো তাকে ছাড়ছেইনা। তাই বাসার সবাই ছোটোখাটো আয়জন করবে ঠিক করেছে।

আরিয়ানের বন্ধুবান্ধব অবন্তীর বন্ধু বান্ধব কে ইনভাইট করা হয়েছে। আরশি ব্যাপারটা এইমাএ শুনলো। তাহলে এইটা নিয়েই গোলমিটিং চলছিল। (মনে মনে আরশি)
আরশিকে আয়েশা বেগম সবটা জানালো।

আরশি খুব খুশি হলো ভালোই হয়েছে এক কাজে দুই কাজ হবে যাকে বলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা। অবন্তীকেও আনন্দে রাখা যাবে আরিয়ানকেও শিক্ষা দেওয়া যাবে ভেবেই মিটিমিটি হাসলো। তারপর বললো আমিও আমার বন্ধুবান্ধব দের ইনভাইট করবো।

হুম কর তাহলেতো ভালোই বাড়িটা আনন্দে ভরে ওঠবে অনেকদিন পর। ( আয়েশা বেগম)
না তোর বন্ধু বান্ধব কে বলতে হবে না (আসমা বেগম)
কেম মন খারাপ করে। (আরশি)

আসমা আরশি মা যাকে খুশি ইনভাইট করবে তুই একটা কথাও বলবিনা। (আরিয়ানের বাবা)
আরশির মুখে হাসিতে ভরে গেলো। থ্যাংকিউ মামু।

বলেই দৌড়ে উপরে চলে গেলো। আরশির খুশি দেখে সবাই খুব খুশি হলো৷ কিন্তু আয়েশা বেগম এর চোখ গরিয়ে পানি পড়লো আর ভাবলো – কতদিন হয়ে গেলো আমার অন্তী মায়ের মুখে প্রানখোলা হাসি দেখিনা।

আরশি তার সব বন্ধু দের ফোন করে সবটা বুঝিয়ে দিয়েছে এখন শুধু অপেক্ষা করা আর মাএ কয়েকদিন।
পাঁচদিন পর শুক্রবার সবারি ছুটির দিন। বড়রা সবাই রান্নার কাজে বিজি।

পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে। অবন্তীর রুম সাজানো হয়েছে। তার পছন্দের লাল গোলাপে ভরে গেছে তার রুম।

পুরো রুমে সুগন্ধী ছড়াচ্ছে। অবন্তী মনে হাজার ব্যাথা নিয়েও নিজেকে স্বাভাবিক রাখছে আজ তার বাবা মা ভাই বোন সবাই তাকে খুশি দেখার জন্য এতো কিছু করছে আর সে তাদের পরিশ্রমের এইটুকু মূল্য দিবেনা তাই কখনো হয়।

আরশির কথা মতো অবন্তী আজ গোল্ডেন এর মধ্যে গোলাপি কালারের গাউন পড়েছে। আরশি নিজের হাতে অবন্তী কে সাজিয়ে দিয়েছে চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। মুখে হালকা মেকআপ চোখে কাজল। ঠোটে গোলাপি লিপস্টিক সব মিলিয়ে অসাধারন লাগছে অবন্তী কে আটমাস পার আজ এইভাবে সে সেজেছে। ইচ্ছে না হলেও সেজেছে।

সাজ কমপ্লিট করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো অবন্তী নিজেকে সেই আগের অবন্তীর মতো লাগছে।

শুধু চোখের নিচের কালো দাগটা রয়েই গেছে৷ তার ভালবাসা হারানোর ব্যাথার চিন্হ। হাজার চেষ্টা করেও সেই চিন্হ কি মুছা যাবে। না যাবে না।
আরশি অবন্তী কে বললো- তোর সাজ কমপ্লিট এবার আমি রেডি হয়ে আসছি তুই নিচে যা।

দীনা আর রাতুল এসেছে। অবন্তী আচ্ছা বলে বেরিয়ে গেলো। আরশি দরজাটা চাপিয়ে দিলো। তয়ালে দিয়ে চুল গুলো বাধা ছিলো ভেজা চুল তয়ালেটা সরিয়ে হাত দিয়ে চুল গুলো এলোমেলো করে নিলে৷ তারপর নিজের চুলের গন্ধ নিলো। শ্যাম্পুকরা চুলের গন্ধে নিজেই মাতাল হয়ে যাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে আজকে তোমার পুরুষত্বের পরীক্ষা মি.আরিয়ান সরকার। আমি জানি কোনো পুরুষই নারীর শ্যাম্পু করা চুলের গ্রান পেয়ে তাকে এরিয়ে চলতে পারে না তাও যদি সে নিজের হবু বউ হয় তাহলে তো না ই।

যে কোনো পুরুষ কে পাগল করার জন্য একজন নারীর শ্যাম্পু করা চুলই যথেষ্ট। ভেবেই মুচকি হাসলো আরশি।
তারপর নিজেকে সুন্দর পরিপাটি করে সাজালো। কালো রঙের একটি গাউন পড়েছে আরশি।

সাথে গোলাপি লিপস্টিক। গালে হালকা মেকআপ চোখে গাড় করে কাজল সবটাই আজ আরিয়ানকে দেখানোর জন্য। সে কখনো সাজগোজ করেনা সব সময় সিম্পল ভাবেই থাকে। আরিয়ান ও সিম্পল ভাবেই থাকে। কিন্তু আজকের প্ল্যান অনুযায়ি কাজ করতে হলে এমন সাজ সাজতেই হবে তাই সে সেজেছে এইভাবে।

সবটা মিলিয়ে তাকে আজ পরীর মতো লাগছে। ফর্সা সিমসাম বডি ফিটনেস, লম্বা সুদর্শনীয় এক নারী সে। কালো রঙের জামাটায় তার গায়ের উজ্জ্বলতা যেনো আরো বহুগুন বেড়ে গেছে। এতো সাজে নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হচ্ছে। কখনো সেইভাবে সাজা হয় নি। আজ আরিয়ানের জন্য এইভাবে সাজ প্রেমে পড়লে মানুষ কতো কি করে। তার সূচনা বোধ হয় আজ আমার হলো। জানিনা আর কি কি করতে হবে৷ অবশ্য যে প্ল্যান করেছি অনেক কিছুই করতে হবে। ভেবেই তারাতারি ওড়নাটা গায়ে জরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আরশি।

সব মেহমান এসেছে আরশির তিনটা ফ্রেন্ড এসেছে দুইজন ছেলে একজন মেয়ে। রাশেদ, সুমন, আর বৃষ্টি। আরিয়ানের ও ফ্রেন্ড এসেছে তবে সব ছেলে একটাও মেয়ে ফ্রেন্ড আসেনি। আরশি ভাবছে আসবে কি করে এই রসকষ হীন মানুষের সাথে কোন মেয়েই বা বন্ধুত্ব করতে যাবে।

অবন্তী দীনা আর রাতুলের সাথে বসে গল্প করছে। আরিয়ান রেডি হয়ে নিচে নামছে কালো শার্ট কালো প্যান্ট পড়া। আটাশ বছরের প্রাপ্তবয়স্ক একজন সুপুরুষ। কালো রঙে উজ্জ্বল শ্যামবর্ন গায়ের রংটা আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠেছে। তাকে দেখে আরশির চোখ কপালে ওঠে গেছে। এটা কি হলো কি করে মিলে গেলো।

ধ্যাত এই গবেটের সাথে মিলিয়ে ড্রেস পড়ার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই। কি আর করার কিভাবে মিলে গেলো আল্লাহ জানে৷ যাই হোক কাজের কাজে আসি আমার ক্যালমা শুরু। আরশি আরিয়ানকে দেখেই চট করে রাশেদ আর সুমনের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো আর বৃষ্টি কে বললো এই বৃষ্টি আমাদের পিকচার ওঠিয়ে দেতো। কথাটা এতো জোরেই বললো যে উপস্থিত সবার নজর আরশির দিকে। আরিয়ান নিচে নেমে তার বন্ধুদের পাশে দাঁড়ালো।

তার নজর আরশির দিকে আরশি একবার রাশেদের কাধে ধরছে আরেকবার সুমনের কাধে আর বৃষ্টি আপন মনে ছবি তুলে যাচ্ছে। আরিয়ান আরশির হাভভাব দেখছে আর ভাবছে এই মেয়ের মাথা গেছে। কিন্তু হুট করে আরিয়ানেট মনে পড়লো আরশি তো এমন করার মেয়ে না৷ সে যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে তার এটিটিউট তো এমন নয়। তাহলে কি সবটাই সাজানো।

আরো গভীর ভাবে চিন্তা করতে যাবে এমন সময় আরমান সরকার আরিয়ানকে ডাকলো -আরিয়ান এদিকে আয়তো।

আরিয়ান বললো হুম বাবা আসছি। বন্ধু দের পাশ কাটিয়ে আরিয়ান বাবাকে অনুসরন করে চলে গেলো। আরশিও ছবি তোলা বাদ দিয়ে অবন্তীর পাশে গিয়ে বসলো। সবাই খোশগল্পে মজে ওঠলো অবন্তীর অনেকটাই হালকা
লাগছিলে। তবে তার বুকের ভেতর অস্থিরতা কাজ করছিলো বার বার মনে হচ্ছিলো হয়তো রিদের সাথে তার দেখা হবে খুব তারাতারি। কিন্তু হঠাৎ এমনটা কেনো মনে হলো তার সেটা ভেবে পাচ্ছেনা অবন্তী ঘোর কাটলো আরশির ডাকে। কিরে কি এতো ভাবছিস।

না কিছুনা বলেই মুখ চেপে হালকা হাসি দিলো। আরশি দীনা সবাই মিলে অবন্তীর সাথে সেলফি ওঠালো এভাবে কেটে গেলো বেশকিছুক্ষন। এদিকে আরমান সরকার আরিয়ানকে ডেকে বললো তার বন্ধুর ছেলে কেও ইনভাইট করা হয়েছে। সেও আসবে এই সুযোগ এ অন্তীকে দেখাও হবে অন্তীও দেখবে ছেলেটাকে। আরিয়ান কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছেনা। বাবাকে নাও করতে পারছে না আবার বোনের ভালবাসা ওপেক্ষাও করতে পারছেনা।
একটা
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো আচ্ছা আসুক। আরমান সরকার খুশি হয়ে বললো অন্তী কে কিছু বলার দরকার নেই এখনি। এমনি মেহমান হিসেবে বা তোর বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিবি। আরিয়ান কথাটা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আর বললো আচ্ছা।

আরশি অপেক্ষা করছে কখন আরিয়ান এদিকে আসবে রাশেদকে সে রেডি রেখেছে। আরিয়ান আসার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো প্রেমলীলা। আরিয়ান কে আসতে দেখেই ড্রয়িং রুমের দরজার পাশে দাড়িয়ে পড়লো রাশেদ। আরশি ড্রয়িং রুমে ঢুকবে এমন ভংগিমায় পা বাড়ালো। আরিয়ান বাইরে থেকে ড্রয়িং রুমে ঢুকেই চোখ রাখলো সোজাসুজি -রাশেদ আরশির ডানহাত ধরলো তার দুহাত দিয়ে চেপে ধরে বললো – আরশি i love u. I love u so much.

কথাটা শুনে আরিয়ান ভ্রু কুচকে আরো এগিয়ে আসলো। বাকি সবাই গল্পে মগ্ন। সুমন আর বৃষ্টি সোফায় বসে ওদের কাহিনী দেখে মিটি মিটি হাসছে। আরিয়ান দরজার এপাশে আর রাশেদ আরশি ওপাশে। আরশি আরিয়ান

কে দেখতে পেয়েই বলা শুরু করলো- রাশেদ তোকে আমি অনেকবার ফিরিয়ে দিয়েছি ভুল করেছিরে তুই কষ্ট পাস না। তুই আমাকে মাফ করে দিস। কিন্তু আজ আর তোকে আমি ফেরাবোনা আমি আজ তোর ডাকে সারা দিব। আরিয়ান কিছুটা আচ করতে পারছে যে কি হচ্ছে তারপরও তার রাগ হচ্ছিলো। এসব করার কি দরকার ছিলো

অভিনয় করেই হোক সিরিয়াস ই হোক অন্যছেলের হাত এইভাবে ধরে আছে। আরিয়ানের মেজাজ বিগরে গেলো। কি করবে বুঝে ওঠতে পারলো না তাই ভাবলো আর এক মূহুর্ত এখানে না। ভেবেই আবার বাইরে চলে যাবে ভেবেই পিছু ঘুরেছে এমন সময় আরশি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রাশেদকে চোখ মারলো আর রাশেদ আরো জোরে বলা শুরু করলো-আরশি সত্যি তুই আমাকে মেনে নিয়েছিস সত্যি। তাহলে তুই আমাকে একটা অধিকার দে।

কি অধিকার বল।
আমি তোকে একটা কিস করতে চাই…
কিহ।
ভয় পাস না ঠোটে না গালে বলেই লজ্জা পেলো রাশেদ।

আরশি আরো জোরে বললো একটা কেনো তুই দশটা কিস কর আজ আমায় কোনো বাধা নেই। বলেই রাশেদের হাত ধরে ছাদের দিকে ছুটে গেলো। আরিয়ানের এবার ধর্যের বাধ ভেঙে গেলো। আবার ঘুরে দেখলো আরশি নেই৷ আরিয়ানের অস্থিরতা বেড়ে গেলো কপাল দিয়ে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। রাগে তার শরীর জলতে শুরু করলো। এদিক ওদিক তাকিয়েও তাদের দুজনকে দেখতে পেলোনা। তার চোখ দুটে রক্তবর্ণ ধারন করলো। আরশি তুমি

কাজটা একদম ঠিক করলেনা। সবকিছু নিয়েই ফান এই আরিয়ান মেনে নেবে না। বলেই দৌড়ে ছাদে গেলো কিন্তু না আরশি বা রাশেদ কাউকে পেলো না তাহলে কোথায়। পাগলের মতো পুরো বাড়ি খুজলো নাহ পেলো না৷ সুমন বৃষ্টি এবার ভয় পেয়ে গেলো। আরিয়ানের বন্ধুরা কিছু বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে আরিয়ান কেনো এতো ছটফট করছে। রাশেদ আর আরশি কিচেন রুমে আয়েশা বেগম আর আসমা বেগমের সাথে খোশগল্প জুরে দিয়েছে।

আরিয়ান কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেনা কোথায় গেলো। তারপর পানি খাওয়ার জন্য কিচেন রুমে যেতেই দেখতে পেলো দুজনকে দাড়িয়ে খোশগল্প করছে। আরিয়ান পানি না খেয়ে রাগে দ্রুত ওখান থেকে চলে আসলো। এদিকে বৃষ্টি আরশিকে মেসেজ করে সব জানালো আরশি বেশ মজা পাচ্ছে আরিয়ানকে জালিয়ে।

আরিয়ান শুধু সুযোগের অপেক্ষায় আছে তারপর বুঝাবে আজ আরশিকে যে সে কতোবড় ভুল করেছে। আর আজকের পর এরকম ভুল দ্বিতীয় বার করার কথা স্বপ্নেও ভাববে না আরশি।


পর্ব ১৩

দুপুর দুইটায় সবাই খাওয়া দাওয়া করলো। কয়েকজন ক্লোজ ফ্রেন্ড বাদে সবাই চলে গেছে। দীনা আজ থাকবে অবন্তীর সাথে। আরশির বন্ধুরাও চলে গেছে। আরিয়ান তার কয়েকজন বন্ধুদের সাথে রুমে আড্ডা দিচ্ছে। আরশি মনের আনন্দে গুন গুন করে গান গাইছে বারান্দার রেলিং ধরে। আজকে তার খুব আনন্দ হচ্ছে আরিয়ানকে রাগিয়ে দিয়ে মনটা কেমন ফ্রেশ হয়ে গেছে তার। তার সাথে এটাও বুঝে গেছে তারপাশে অন্য ছেলে দেখলে আরিয়ান জিয়েলাস ফিল করেছে। খুব শান্তি শান্তি লাগছে আজ তার। অশান্ত হ্রদয় আজ শান্তিতে ভরপুর।

এই শান্তি তে এখন শুধু একটু ভালবাসার পরশ দরকার। তাহলেই মনের শান্তি তে একটু সুখ সুখ অনুভব হবে।

কিন্তু সেই সুখ পেতে হলে তো আরিয়ানকে পেতে হবে। সেদিন তো সরাসরি বলে দিলো যে আমি তোমাকে ভালবাসিনা। সত্যি কি তাই তাই হলে কি আজ এতো ছটফট করতো। আরশির ভাবনায় বিঘ্ন ঘটালো আসমা বেগম। কিরে এখানে কি করছিস আরিয়ান নাকি তোকে কি একটা কাজ দিয়েছে। এখনো করিসনি কেনো।

তোকে ডাকছে যা ওর রুমে।
আরশির চোখ গুলো গোল হয়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম। কিসের কাজ।

সেটা আমি কি করে জানবো। আমাকে বললো তাই তোকে বললাম যা কাজ কর গিয়ে। এখানে হা করে দাড়িয়ে না থেকে একটুআধটু কাজ কর। পরে কাজে দিবে। আমার অনেক কাজ বাকি রাতে তোর বাবা আসবে যাই।
সত্যি বাবা আসবে খুশিতে লাফিয়ে ওঠলো আরশি।

হ্যা। যা আরিয়ানের রুমে যা৷ এই খুশিটা বাবা আসলে দেখাস বলেই আসমা বেগম চলে গেলেন।

আরশির খুশিটা মিলিয়ে গেলো৷ আর ভাবতে লাগলো কি কাজের কথা বলেছে আরিয়ান। আম্মুকে মিথ্যা বলে ডাকতে পাঠালো। নাকি আবার বিয়ে ক্যানসেল এর বিষয়েই এটা বলেছে। আরশি চিন্তারত মুখ করে আরিয়ানের রুমের দিকে এগোলো।

আরিয়ানের বন্ধুরা কিছুক্ষনের জন্য বাইরে গেছে। তাই আরিয়ান তার ফুপুকে দিয়ে আরশিকে ডেকে পাঠিয়েছে কাজের বাহানা করে। আরশি দরজার সামনে এসে দরজায় হালকা টোকা দিলো। আরিয়ান ভেতর থেকে বললো- খোলাই আছে আসো ভেতরে।

আরশি দরজাটা খুলে ধীরে ধীরে আরিয়ানের দিকে এগোলো। আরিয়ান বিছানায় বসা থেকে ওঠে আরশির সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর জিজ্ঞেস করলো বলেছিলে ফুপুকে যে বিয়েটা ক্যানসেল?

আরশি একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো না বলিনি। আরিয়ান আরেকটু কাছে আসলো আরশির একদম মুখোমুখি দাড়িয়ে বললো কেনো বলোনি?

আরশির হার্টবিট বেড়ে গেলো এইভাবে এতোটা কাছে এসে জিজ্ঞেস করার কি আছে অদ্ভুত তো। আরশি পিছন ঘুরে দাঁড়ালো তার খুব অসস্থি হচ্ছে এইভাবে এতোকাছে থেকে কথা বলতে। তাই পিছন ঘুরে বললো – আগে ভালো দেখে একটা প্রেম করবো ভালো একটা লাইফ পার্টনার খুজে বের করবো তারপর বলবো আম্মুকে।

আরিয়ান খেপে গেলো। আরশির বাহুতে ধরে ঘুরিয়ে চোখ দুটো আরশির চোখে স্থীর রেখে বললো কি বললে।
আরশি আরিয়ানের থেকে চোখ সরিয়ে ওদিক সেদিক আমতা আমতা করে বললো- যা বললাম শুনতেইতো পেলে। আরিয়ান আরো শক্ত করে চেপে ধরলো আরশির বাহুতে। আরশি ব্যাথা অনুভব করে বললো – লাগছে এইভাবে ধরেছো কেনো। আরিয়ান আরশির কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে আরো জোরে চেপে ধরে বললো – রাশেদ যখন হাত ধরেছিলো তখন লাগেনি তাইনা।

আরশি ভ্রু কচু কালো ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করে মনে মনে হাসি একে বললো- ওতো ভালবেসে ধরেছিলো তুমিতো ভালবেসে ধরোনি।

ওহ তাই ভালবাসা আচ্ছা ভালবাসা একদিনেই হয়ে গেলো তোমাদের। এতো তারাতারি ভালবাসা হয়ে যায়। তুমি কি ভেবেছো ও তোমাকে ভালবাসে।

আরিয়ান প্লিজ তোমার এই রূপে আমি অভ্যস্ত নই।

আর তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না তাহলে আমি কি করলাম না করলাম সেদিকে খেয়াল রেখোনা।
আরিয়ান আরশির কথা শুনে ছেড়ে দিল ওকে। আরশিও হাফছেড়ে বাচলো।

আরশি বললো আমি চলে যাবো খুব তারাতারি। সত্যিতো যেখানে ভালবাসা নেই সেখানে থাকা উচিত নয়। চলে যাব আমি তুমি চিন্তা করোনা রাতে বাবা আসবে সকালেই চলে যাব৷

আরশির চলে যাওয়ার কথা শুনে আরিয়ানের বুকটা কেঁপে ওঠলো। এইভাবে চলে যাওয়ার কথা বলাতে আরিয়ানের বুকে ঝর ওঠে গেলো। আরশিকে আবারো শক্ত করে দুহাত দিয়ে বাহুতে চেপে ধরে বললো কোথায় যাবে। আরশি বললো কোথায় নিজের বাড়ি যাবো তারপর একদিন অন্যকারে ঘরে।

আরিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে ধমকের সুরে বললো আরশি। আরশি কেপে ওঠলো। আরিয়ান এবার বলতে শুরু করলো -আমার আশে পাশে তো খুব ঘুরাঘুরি করতে বিহেভিয়ার এ যে কেউ বলতো যে তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমিও তাই ভেবেছি কিন্তু না।

আরশি আরিয়ানের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো।

তুমি আমাকে ভালোইবাসোনা ভালবাসলে আমি সেদিন যাই বলি না কেনো তুমি আমার থেকে দূরে সরে যেতে চাইতে না৷ না অন্যকাউকে ভালবাসার কথা বলতে, না অন্যকারে সাথে ঘর বাঁধার কথা বলতে। আর না রাশেদ কে তোমায় স্পর্শ করতে দিতে। এই হাতে তো আমার ছোঁয়ার কথা বলেই আরিয়ান একহাত দিয়ে আরশির হাতে হাত রাখলো। তারপর জোরে চেপে ধরলো। আরশি আহ করে ওঠলো।

খুব লাগছে তাইনা, আমারো লেগেছে।

আরশির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো আরিয়ান ছেড়ে দিলো আরশি কে। আরশি একহাত দিয়ে নিজের হাত ধরে দাড়িয়ে রইলো। মনে মনে নিজেকে খুব ছোটো ভাবলো ছি এটা আমি কি করলাম। আরশির বুকেও ঝর বয়ে যাচ্ছে কি বলবে আরিয়ান আর আর কোনো কঠিন কথা বললে আমি সহ্য করতে পারবোতো।

আরিয়ান নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে আরশির দিকে তাকালো। তারপর আবার বলতে শুরু করলো। আরশি বিয়েটা সারাজীবনের ব্যাপার সেই ছোটো বেলা থেকে আমি জানি আমার বউ হবে তুমি। সেই স্বপ্ন নিয়েই নিজেকে তৈরী করেছি। কখনো অন্যকারো কথা ভাবিনি৷ কিন্তু আমার চাওয়াতেই সব না আমি চেয়েছি তোমার ও চাওয়া তেমার চাওয়াকেও সম্মান জানাতে চেয়েছি। তাই সেদিন তেমাকে ওসব বলেছি।

তবে এটা সত্যি তোমার জীবনে যদি স্পেশাল কেউ থাকে বিয়েটা আমি নিজে ভেঙে দিব। কিন্তু তুমি কি করলে আমাকে রাগানোর জন্য অন্য ছেলের হাত ধরলে। যদি এই ধরাতে ভালবাসা থাকতো আমি নিজে মিলিয়ে দিতাম তোমাদের কিন্তু না তুমিতো অভিনয় করেছো। কিন্তু কেনো এটার কি খুব প্রয়োজন ছিলো।

আমি বুঝতে চেয়েছিলাম তোমার অনুভূতি। নিচু স্বরে (আরশি)
বাহ এইভাবে কি বুঝবে এইভাবে আমার চোখে আরো ছোটো হয়ে গেলে তুমি। আরশি আমি ছোটো থেকেই খুব চাপা স্বভাবের মানুষ নিজের আবেগ অনুভূতি কারো কাছে প্রকাশ করিনা। আমি সব ছেলেদের মতো করে ভালবাসার মানুষকে ভালবাসি কথাটা বলতে পারিনি৷ দিতে পারিনি সময়। দিতে চাইনি।

আজকাল তো মেয়েরা চায় একটা ছেলে তাকে সময় দিক এটা ওটা গিফ্ট দিক। বড় বড় রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া দাওয়া। ঘুরাফেরা। আরো কতো কি এগুলোকেই বলে ভালবাসা। কিন্তু আমি তো তোমাকে এগুলো দিতে পারিনি। ঠিকভাবে কথাই বলিনি কখনো একসাথে বসে কখনো গল্প করিনি৷ প্রেমময় কোনো কথাই বলিনি। আমি মানুষটা আসলেই অনেক বোরিং আমার সাথে কি সারাজীবন কাটানো যায় যায় না।

যদি বিয়ের পর এসব না করতে পারি তোমার বোরিং ফিল হতেই পারে। বেছে নিতে পারো অন্যকাউকে। তাই আমি চাইছিলাম তোমার মনের আসল কথাগুলো জানতে তোমার চাওয়া গুলো জানতে। আরশি তুমি স্পষ্ট করে বলে দাও আজ আমার মতো গুমরা মুখো বোরিং মানুষের সাথে কি সারাজীবন থাকা যায়। তুমি যদি থাকতে না চাও আমি নিজে সবটা ম্যানেজ করবো সবাইকে বুঝাবো আর তোমার পছন্দের কেউ থাকলে তার সাথে মিলিয়ে দিব সেটা যদি রাশেদ ও হয় নো প্রবলেম।

আরশি চোখদুটো বন্ধ করে ফেললো চট করে আরিয়ানকে জরিয়ে ধরলো। আকস্মিক ঘটনায় আরিয়ান চমকে ওঠলো বুঝতে পারলোনা কি হলো ব্যাপারটা। আরশি খুব শক্ত করে তাকে জরিয়ে ধরে আছে। আরশির গরম নিশ্বাস আরিয়ানের বুক পড়তেই তার শরীর জুরে আলাদা এক শিহরণ জেগে ওঠলো।

তার বুকের ভেতর শো শো করে বাতাস বইছে এমন অনুভূতি হলো। আরশি চোখ বন্ধ করে আরিয়ানের হ্রদ স্পন্দন এর শব্দ শুনতে পাচ্ছিলো। আরিয়ান আরশি কে দুহাতে আঁকড়ে ধরতে গিয়েও ধরেনি। তার অভিমানেরা তাকে আরো বেশী করে চেপে ধরেছিলো। বেশকিছু সময় এইভাবেই পিনপতন নীরবতায় কাটিয়ে দিলো দুজন।

আরশি তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ধরে আছে আরিয়ানকে। কিছুক্ষন পর চোখ খুললো আরশি তারপর বললো- তুমি না ধরলে এইভাবেই আমি থাকবো ছাড়বোনা। আমার ভালবাসা চাই তোমার ভালোবাসা তোমার ভালবাসার স্পর্শ চাই আমার। আরিয়ানের শরীর ঝাকুনি দিয়ে ওঠলো। মনের অস্থিরতা বেড়ে গেলো। আরশিকে দুহাত দিয়ে ধরতে গিয়েও ধরলো না আরশি বুঝতে পারলো তাই বললো- আরিয়ান ভালবাসি। নিচু স্বরে।

আরিয়ানের হার্টবিট আরো দ্রুত ওঠানামা করতে লাগলো। আরশি কান পেতে শুনছে সেই ওঠানামার গতি। তারপর আবারো বললো- ভালবাসি ভালবাসি খুব।

ভালবাসি চারটা অক্ষরের শব্দ
কিন্তু এই চারটা অক্ষরকে টিকিয়ে রাখতে বিশ্বাস, সেক্রিফাইজ, সম্মান, ভরসার দরকার
ভালবাসার জন্য তোমাকে রোমান্টিক কথা শিখতে হবে না, যে ভালবাসবে তোমার প্রতিটা কথাই তার কাছে ভালো লাগবে

যে সত্যিকারের ভালবাসবে তাকে দামি দামি গিফ্ট দিয়ে খুশি করতে হবে না, তোমার দেওয়া যেকোনো কিছুই তার কাছে মূল্যবান হবে
তোমাকে কোনো নামি দামি রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়াতে হবে না, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে একসাথে ফুচকা খেলেই চলবে

তাকে কোনো সারপ্রাইজ দেওয়া লাগবে না, হঠাৎ কারন ছাড়া কল দিয়ে ভালবাসি বললেই খুশি হবে
প্রচন্ড ঝগড়ার পর যদি বলো রাতে খেয়ে ঘুমাইও, তার খুশি হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট
রাগ-অভিমান শেষে তুমি নিজেই আগে ভালবাসি বললে, অপর প্রান্তের মানুষটার কাছে এটাই অসীম ভালবাসা
ভালবাসার জন্য বড় বড় কাজ করা লাগেনা, তোমার ছোট ছোট কাজের মধ্যেই ভালবাসা লুকিয়ে থাকে।

যে সত্যিই তোমাকে ভালবাসবে সেই বুঝবে।

সংগৃহীত
আরিয়ান তার মনের সব প্রশ্নের উওর পেয়ে গেছে। আরশি খুব সুন্দর করে সেই উওর দিয়ে দিয়েছে। আরিয়ান তার মনের সমস্ত অভিমান দূরে সরিয়ে দিয়ে দুহাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো আরশিকে। আরশিও একটা শান্তির নিশ্বাস ফেলে পরম আবেশে আরিয়ানের বুকে মাথা রাখলো।

বেশ কিছুক্ষন পর আরশি বুঝতে পারলো আরিয়ান তার চুলে নাক ডুবিয়ে দিয়েছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আরশি শিউরে ওঠলো।

আরিয়ান আস্তে আস্তে আরশির মাথা থেকে নাক, মুখ কানের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বললো –
তোমার চুলের মাতাল করা গন্ধে হারিয়ে গেছি অচীনপুর।

আরশি লজ্জা পেয়ে মুখ লুকালো আরিয়ানের বুকে।

আরশি-পেরেছি আমি ইয়েস পেরেছি আমার ভালবাসা জয় করে নিয়েছি আমি।

হুট করে রুমে ঢুকে পড়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে শাওন, রাফি, নিরব, তিনজনের ই চোখ কপালে ওঠে গেছে। ভাই এটা আমি কি দেখলাম নিরবের কাধে হাত রেখে৷ (শাওন)
মামাহ ভুল রুমে ঢুকে পড়েছি মনে হয় (রাফি)

আরশি ছিটকে দূরে সরে গেলো রুম থেকে ছুটে চলে গেলো। আরিয়ান ও বেশ ঘাবড়ে গেলো আজ সে শেষ।
আরে তোরাহ। ( আরিয়ান)

ভাই বিষ দে বিষ। (শাওন)
কি বলছিস। (আরিয়ান)

তিনজনই এসে জাবটে ধরলো আরিয়ান কে তারপর ইচ্ছে মতো পচালো। শেষ মেষ তুই ও। ভাই তাও না জানিয়ে এইভাবে ভাবা যায়। (নীরব)

তাইতো বলি এতো সুন্দরী মেয়ে থাকতে কখনো কারো উপর আকর্ষণ নেই কেনো। আরে ভাই ঘরেই যদি থাকে বাইরে আর কি প্রয়োজন। বলেই হো হো করে হেসে ওঠলো তিন বন্ধু। আরিয়ান মুখ লুকানোর জায়গা খুজে পাচ্ছে না। ইশ কি বাশটাই না খেয়ে গেলো।

তিনজনই আজ চেপে ধরেছে আরিয়ানকে ট্রিট চাই। আরিয়ান বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলেছে সামনে ফ্রাই ডে দিবে আজ বাড়িতেই খাওয়া দাওয়া হবে।

তারপর সবাই আবারো চেপে ধরলো কবে থেকে এসব চলছে আরো অনেক প্রশ্ন। আরিয়ান যে টাইপের ছেলে সে এসব এ একদম কমফোর্টেবল ফিল করছেনা। কিন্তু এদের সাথে সবটা বুঝিয়ে না বললে আরো কাহিনী হবে।

সব ফ্রেন্ড জানাজানি করে দেবে তারপর শুরু হবে জালাতন। তাই আরিয়ান সবটা বুঝিয়ে বললো তাদের বিয়ের ব্যাপার ও বললো তারপর বন্ধু রা শান্ত হলো আর বললো হুম তাইতো বলি হবু বউ বলেই এতেদূর। তবে যাই বলিস দেখতে কিন্তু হেব্বি। (রাফি)

আরিয়ান চোখ গরম করে তাকালো।

ভাই রাগ করিসনা এখনি রাগলে কেমন হবে আসল ঘটনা তো শোন৷ ( শাওন)
আরিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো।

রাফি ভরকে গেলো এই যা সব বলে দিবে নাকি। নীরব মিটি মিটি হাসছে।

শাওন বললো- রাফি বাইরে গিয়ে আমাদের বললো তোর ফুফাতো বোনকে নাকি ওর হেব্বি লাগছে তোকে বলেই আজ প্রোপোজ করতে চেয়েছিলো তার আগেই কি হয়ে গেলো৷ আহারে ছ্যাকা খেলো আমাদের রাফি টা৷ বলেই শাওন আর নীরব হাসিতে ফেটে পড়লো।

রাফি আমতা আমতা করতে শুরু করে দিলো। আরিয়ান রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে রাফির দিকে তারপর বললো – সিট খালি নেই অন্য সিট খুজে নে৷ আরিয়ানের কথায় সবাই জোরে চিল্লানি দিয়ে ওঠলো রাফিও শুনে অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো।

আরশি লজ্জায় কারো দিকেই তাকাতে পারছেনা। আরিয়ান বা তার বন্ধু রা কারো সামনে যাওয়ার সাহস নেই গেলেই চরম পর্যায়ে লজ্জা পেয়ে যাবে।

মনে তার সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। হ্রদপিন্ড টা আজ একদম সতেজ হয়ে ওঠেছে তার। রুমে গিয়ে বেশ কিছুক্ষন ঝিম মেরে বসে ছিলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।

ষে আরমান সাহেব আরিয়ান আর আয়েশা বেগমকে ডেকে পাঠালেন।

এবং বললেন তাহসান আসছে আরিয়ান তুমি ওকে এগিয়ে নিয়ে আসো আর আয়েশা তুমি খাবাড়ের আয়োজন করো। দুজনই সম্মতি জানালো।

বাড়ির সামনে পুলিশ এর গাড়ী দাঁড়ানো পুলুশি পোশাকেই এসেছে তাহসান আহমেদ। অফিস থেকে সোজা এখানে এসেছে এক, দুঘন্টা পর আবার অফিস চলে যাবে। আরিয়ান সম্মানের সাথে তার সাথে হ্যান্ডশেক করে আলাপচারিতা করতে করতে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। তাহসান সবাইকে সালাম জানালো তারপর সোফায় বসলো। সবাই গল্প করছে।

অবন্তীর শরীর ভালো লাগছেনা তাই সে সুয়ে আছে দীনার সাথে গল্প করছে। আসমা বেগমের ডাকে নিচে নেমে আসলো আরশি নিচে নেমে সোফায় চোখ পরতেই আরশি অবাক একি তাহসান এখানে। ওর সাথে তো আমার কদিন পর দেখা করার কথা।

তাহসান আরশির ডাকে সামনে তাকালো আরশিকে দেখে অবাক হয়ে দাড়িয়ে পড়লো তাহসান। তুই এখানে।
আমিও তো সেটাই ভাবছি তুই এখানে কি করছিস।

তুমি ওকে চিনো। ( আরিয়ান)
ডানপাশে তাকালো আরশি আরিয়ানকে দেখে বললো হ্যা চিনি। ও আমার খুব ভালো বন্ধু।
ওহ তাহসান বাবার বন্ধুর ছেলে অন্তীর জন্য…

আরশির ভ্রু কুচকে তাকালো মানে?

তাহসান হালকা কেশে ওঠলো।

আরশি এগিয়ে গিয়ে বললো – এটা আমার মামার বাড়ী আরমান সরকার আমার মামা।
ওহ আচ্ছা।
হুম বোস।

হুম।
তোমরা তাহলে কথা বলো বলেই বেরিয়ে গেলো আরিয়ান।

আরশি তাহসানের কাছে গিয়ে বললো তুই কি অবন্তীকে দেখতে এসেছিস।

তাহসান আবারো কেশে ওঠলো তারপর বললো -হুম।

আরশি চোখ বড় বড় করে বললো তোর সাথে আমার কথা আছে। তাহসান বললো হুম এখনি বলবি নাকি।
হুম এখনি না বললে সর্বনাশ হয়ে যাবে চল আমার সাথে।

কোথায় যাচ্ছো যা গল্প হবে খাওয়া দাওয়া করার পর হবে৷ চলো সবাই। বলেই আরিয়ান ডাইনিং টেবিলে নিয়ে বসিয়ে দিলো। আরশি অবন্তী দিনাকে ডেকে আনলো সবাই খাওয়া দাওয়া করছে আয়েশা বেগম আর আসমা বেগম খাবাড় সার্ভ করছে। অবন্তীকে তাহসানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো বলা হলো সে আরিয়ানের বন্ধু কিন্তু পোশাক দেখে সে কিছুটা আচ করতে পারে।

গলা দিয়ে তার আর খাবাড় নামলো না কান্নাচেপে দ্রুত ওঠে চলে গেলো। ব্যাপারটা এরালোনা আরশি আর আরিয়ানের চোখে।

অবন্তী রুমে গিয়ে বিছানায় ওপুত হয়ে শুয়ে মুখে বালিশ চেপে কান্না করলো অনেক্ষন। ডিসিশন নিয়ে ফেললো রিদ যদি না ফেরে আর এই ছেলেকে যদি তার সাথে জরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সেদিনই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবে সে। রিদ কে ছাড়া অন্যকাউকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবেনা সে।

সবারই খাওয়া শেষ কিছুক্ষন গল্প করার পর আরশি তাহসানকে নিয়ে ছাদে গেলো একা কিছু কথা বলার জন্য। আরিয়ান পিছু নিলো আরশি তাহসান কে একা কেনো ছাদে নিয়ে গেলো এমন কি সিকরেট ব্যাপার। খটকা লাগলো অনেক। আরশি আর তাহসান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কি যেনো ভাবলো আরশি তারপর আরিয়ানকে ফোন করে বললো ছাদে আসো। আরিয়ান সাথে সাথে বললো আসছি।

আরশি ফোন কেটেই মুচকি হাসলো কারন আরিয়ানের পারফিউম এর গন্ধ পেয়েই সে বুঝেছে আরিয়ান আশে পাশেই আছে। একমিনিটের মধ্যেই আরিয়ান হাজির তিনজনই দাড়িয়ে আছে পাশাপাশি আরশি মাঝখানে ছাদের এক কিনারে গিয়ে দাড়িয়েছে তিনজন। আরশি বললো -তাহসান,

সেদিন তোকে ফোনে যে ছেলের কথা বলেছিলাম মনে আছে। লোকেশন ট্র্যাক করেছিলি।
আরিয়ান আরশির দিকে তাকালো বুঝার চেষ্টা করলো কে।

তাহসান বললো হুম ট্র্যাক করেছি। সব ডিটেইলস ও পেয়েছি। আর যা পেয়েছি তাতে আমি বেশ অবাক।
আরশি উওেজিত হয়ে বললো- কি পেয়েছিস তুই রিদ ভাইয়াকে পেয়েছিস।
আরিয়ান চমকে ওঠলো। তাহলে রিদের ব্যাপারেই কথা বলছে . (মনে মনে)
তাহসান বললো রিদকে কীভাবে চিনিস তুই।

আরশি বললো- আমি চিনিনা।
তোহ?

অবন্তীর ভালবাসার মানুষ রিদ আটমাস ধরে তাকে খুঁজে চলেছে অবন্তী। আটমাস আগে হারিয়ে গেছে রিদ ভাইয়া।

তাহসান ভ্রু কুচকালো আরশির দিকে তাকিয়ে বললো অবন্তী?

হুম অবন্তী, রিদকে ছাড়া ও আর কাউকে মেনে নিতে পারবেনা। (আরিয়ান)
হুম তুই রিদ ভাইয়ার খোজটা এনে দে আমার বোনটা যে আর পারছেনা একা থাকতে।

তাহসান হালকা হেসে উওর দিলো – আর বেশীদিন একা থাকতে হবে না। তোর বোনকে বলে দিস।
মানে। (আরশি)

আরিয়ান ও জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
ফোন বেজে ওঠলো তাহসানের। ওপাশ থেকে একজন বললো -স্যার মিরাক্কেল ঘটে গেছে প্যাসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। একমাস আগেই জ্ঞান ফিরেছে ইটস মিরাক্কেল আপনি তারাতারি আসুন।
আসছি।


পর্ব ১৪ (BANGLA CHOTO NEW GOLPO)

আসছি। বলেই ফোন কেটে দ্রুত জায়গা ত্যাগ করলো তাহসান। শুধু বললো এ বিষয়ে পরে কথা হবে। অবন্তীকে বলিস তার রিদ খুব শিঘ্রই তার কাছে ফিরে আসবে।

আরশি আরিয়ান একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো।

তাহসান তারাহুরো করে আরমান সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিলো। তারপর চলে গেলো হসপিটালে। হসপিটাল পৌছেই তার বন্ধু দূর্যয়কে ফোন করলো এবং বললো আমি পৌছে গেছি ওর কেবিনে যাচ্ছি তুই কেথায়।
আমি ওখানেই আছি। সাবধানে আয় আশে পাশে খেয়াল করে আসিস।

ওকে।
কেবিনে পৌঁছেই দেখতে পেলো কেবিনের বেড এ আধ সোয়া হয়ে বসে আছে প্যাশেন্ট। ডক্টর দূর্যয় দাঁড়িয়ে আছে দুজন নার্স ও দাঁড়িয়ে আছে। তাহসান দূর্যয় বলতেই সবাই তাকালো তাহসানে দিকে। দূর্যয়ের মুখে হাসি ফুটে ওঠলো।

তাহসান তুই বলেই বেড থেকে নামতে যাচ্ছিলো। নার্স রা থামিয়ে দিয়ে বললো- কি করছেন আপনি। আপনি সুস্থ নন। ওঠবেন না। সমস্যা হবে আপনার।

তাহসান বললো- তুই ওঠবিনা যা বলার আমাকে বল শুনবো তার আগে ডক্টরের সাথে কথা বলতে দে।
দূর্যয় তাহসানকে বললো- খুব ছটফট করছে প্যাশেন্ট জ্ঞান ফেরার পর থেকে ওনাকে আটকে রাখা খুবই কষ্টকর ব্যাপার হয়ে গেছে।

আচ্ছা ওর সাথে একা কথা বলা যাবে কি।
হুম শিওর। (দূর্যয়)

কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো সবাই শুধু তাহসান বাদে।

তাহসান এগিয়ে আসলো বেডের পাশের মোড়ায় বসলো – রিদ কেমন আছিস।

রিদ -ভালো নেই আমি আমি এখানে কেনো কে এনেছে এখানে কি হয়েছিলো আমার আমি আর এক মূহুর্তও এখানে থাকতে পারছিনা যেতে দে তোরা আমাকে। একদমে কথা গুলো বলে থামলো রিদ।

শান্ত হ আগে আমার সব কথা শোন তারপর যেখানে যেতে চাস যাবি।

আর তোর শরীর ভালো নেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিস তুই।
রিদ অবাক চোখে তাকালো।

তাহসান বললো -হ্যা আটমাস তেরোদিন ধরে তুই এখানে আছিস। আর এই কথাটা আমি ছাড়া আর এই হসপিটালের ডক্টর রা ছাড়া, কিছু নার্স ছাড়া কেউ জানে না।

কি বলছিস তুই বলেই রিদ লাফ দিয়ে ওঠে পড়লো শরীরের অবস্থা ভালো না থাকায় আর মাথায় আঘাতের কারনে মাথা ধরে বসে পড়লো। তাহসান ওঠে রিদকে ধরে বললো -কি রে সমস্যা হচ্ছে এ
ই জন্যই বলছি এত ছটফট করিস না। চুপ করে বোস।

নাহ চুপ করে থাকতে পারছিনা। আমি এতোদিন ধরে এখানে থাকলে আমার বাড়ির লোক জানবেনা কেনো? আর আমার…..

কিরে চুপ করে গেলি কেনো কে তোর বলেই রিদের চোখের দিকে তাকালো।
এতো অস্থিরতা কার জন্য? অবন্তী?

রিদ চমকে ওঠলো তুই অন্তীকে চিনিস তারমানে ও জানে আমি এখানে তাইনা৷ ও কোথায় ওকে আসতে বল আমারতো জ্ঞান ফিরেছে।

আরে তুই শান্ত হ অবন্তী কিছু জানে না।

মানে তাহলে ও কোথায়, কি বলছিস আটমাস ধরে আমি এখানে আর ও জানে না বলেই রিদ আবারো ওঠে পড়লো। সারা শরীর ঘেমে গেছে ওর৷ তাহসান কোনোভাবেই ওকে শান্ত করতে পারছেনা৷
তুই যদি শান্ত না হোশ তাহলে কিন্তু অনেক বড় বিপদ তোর না অবন্তীর।

এবার শান্ত হলো রিদ। কিছুক্ষন চুপ থেকে তাহসানের মুখোমুখি হয়ে বললো ওর বিপদ মানে কে কি করবে ওর সাথে তাকে আমি…….

তাহসান বুঝতে পারলো ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে তার প্রিয়তমাকে না দেখতে পেয়ে। তার প্রিয়তমাও যে আজ আটমাস ধরে ছটফট করছে নীরবে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে।

রিদ তুই এতো ছটফট না করে চুপচাপ বোস আর সব কথা শোন গতো আটমাসের সব তোর জানতে হবে৷
তার আগে বল আমার অবন্তী ঠিক আছে তো?

হ্যা ঠিক আছে একদম৷
আর তুই কি করে ওকে চিনলি আমিতো বলিনি। মা -বাবা, ভাই বলেছে কি?
না সেসব কিছুইনা তুই চুপ করে বোস আমি তোকে সবটা জানাচ্ছি।

রিদ শান্ত হয়ে বোসলো৷ তাহসান ও মোড়ায় বোসলো মুখোমুখি রিদ তাহসান।

সেদিন রাস্তায় পড়েছিলি রক্তাক্ত অবস্থায় আশেপাশের মানুষ তোকে নিয়ে একটা সাধারন হসপিটাল এডমিট করেছিল। এক্সিডেন্ট টা এতোটাই মারাত্মক ছিলো তোর গাড়ীর সাথে আরো যে গাড়ির ধাক্কা লেগেছে সেই গাড়ির তিনজন মারা গেছে। অদ্ভুত ব্যাপার এই যে তোর মা ভাইকে খবর দেওয়ার পর ও তারা আসেনি৷ রিদ অবাক হয়ে তাকালো।

হ্যা রিদ আসেনি ওরা, তোর বাবা দেশেও আসেনি। সেই মূহুর্তে তোর পাশে আমি কাউকে পাইনি। সব তদন্ত নিয়ে জানতে পারি তোর গাড়ির ব্রেকফেইল হয়ে ছিলো যা ছিলো কারো পরিকল্পিত কাজ। তোকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো আর উপায় হিসেবে এটাই বেছে নিয়েছিলো। আমি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারলাম এগুলোর পিছনে কার হাত থাকতে পারে।

রিদ তাকালো বললো- কার?
এখনো বুঝতে পারছিস না তোর মা আর ভাই।

তুই নিখোঁজ হওয়ার পর একটা দিনও তারা খোঁজ করেনি সবাই তোর কথা জিগ্যেস করলে বলেছে তুই না বলেই কোথাও চলে গেছিস। তোর বিজনেস এখন তোর ভাই এর হাতে তোর বাবাও দেশে আসেনি আমার মনে হয় ওনাকে ইচ্ছে করেই ফিরতে দেওয়া হয়নি৷

রিদ ওঠে দাঁড়ালো নিজের হাত মুঠো করে দেয়ালে পরপর তিনটা ঘুষি দিলো তাহসান গিয়ে রিদের কাধে হাত দিলো। আমি জানি তুই কি তোর রাগ জেদ সম্পর্কে আমি জানি৷ আর এটাও জানি তোর মতো মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই হয়৷ ফুপু মারা যাওয়ার পর থেকে তুই অনেক স্ট্রাগল করে বড় হয়েছিস৷ তোর জীবনের প্রত্যেকটা কথা আমার জানা শুধু অবন্তী বাদে৷ ঘুরে তাকালো রিদ তাহসান বলতেই থাকলো।

তুই নিখোঁজ হওয়ার পর এই পুরো পৃথিবীতে আর কেউ তোর খোঁজ না করলেও একজন ঠিকি করেছে আর সেটা হলো অবন্তী আর আমি আজি জানতে পারলাম সবটা।

রিদ তাহসানের দুহাত আঁকড়ে ধরে বললো – ভাই আমার অন্তী কেমন আছে।

ভালো নেই সে আর সেটা তুই তাকে দেখেই বুঝতে পারবি চোখের নিচের কালো দাগ গুলোই বুঝিয়ে দিবে৷ সে তার পরিবারের সাথে আটমাস ধরে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আর তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

রিদ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তারপর বললো আমি এখনি যাবো ওর কাছে এখনি৷
তাহসান রিদের হাত ধরে বললো পাগলামি করিসনা সবটা শোন।

তাহসান অবন্তীর বিয়ে ঠিক হওয়ার ব্যাপারে আরশির মাধ্যমে অবন্তীর কথা জানতে পারা, সবটা জানালো রিদকে।
রিদ তোর এখনো অনেক কাজ বাকি আছে তার আগেই তুই অবন্তী কে জরাস না তোর সাথে।

সবার আগে দায়িত্ব তোর বাবাকে দেশে ফিরিয়ে আনা৷ আমি পারতাম তার সাথে যোগাযোগ করতে কিন্তু তোর সাথে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে এটা যেনো ভবিষ্যতে আর না ঘটে সেই ব্যাবস্থা করতে হবে সবটা মাথা ঠান্ডা করে। আর সেসব না করে অবন্তীকে জরানো ঠিক হবেনা ওর জীবনও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে তাহলে।

না আমি থাকতে আমার অবন্তীর কিছু হবে না৷ আটমাস দূরে থেকেছি আমরা আর সম্ভব না। ওকে আর কষ্ট দিতে পারবোনা। আমার কাছে ওকে নিয়ে আসবোই৷

হুম তাহলে সব অন্যভাবে করতে হবে।

বেশকিছুক্ষন আলোচনা হলো ওদের মাঝে। পরের দিন ডক্টর চেক আপ করে দেখলো রিদ অনেকটাই ঠিক আর এটা সম্ভব হয়েছে ওর নিজের জন্যই। মানসিক ভাবে অনেক স্ট্রং রিদ। কিছু মেডিসিন দিয়ে আর প্রত্যেক সপ্তাহে একবার চেক আপ করতে বললো ডক্টর রিদ ধন্যবাদ জানালো আর এতোমাস এতোটা সিকরেট ভাবে তার ট্রিটমেন্ট করার জন্য কৃতঘ্যতা প্রকাশ করলো।

তাহসান গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো উদ্দেশ্য তার ফ্ল্যাট এ নিয়ে যাবে যতোদিন না তার প্ল্যান এ সাকসেসফুল হচ্ছে ততোদিন সেখানেই থাকবে।

ফ্ল্যাটে পৌঁছেই ছটফট করতে লাগলো সে আর এক মূহুর্ত থাকতে পারছে না। তাহসান ও অফিস চলে গেছে। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে ফোন করলো রায়হান কে। রায়হানকে সরাসরি ফ্ল্যাট এ আসতে বললো ঘন্টাখানিকের মধ্যেই পৌঁছে গেলো রায়হান তার প্রিয় বন্ধুর এতোদিন পর খোঁজ পেয়ে সে আর দেরী করেনি।

রায়হান এসেই রিদকে দেখে জরিয়ে ধরলো। তারপর প্রশ্নের পাহার তুলে দিলো। রিদ এক এক করে সবটা জানালো। রায়হান বিস্ময় কাটিয়ে ওঠতে পারলোনা এতো নিষ্ঠুর মানুষ হয়। বেশ কিছুক্ষন ওদের মধ্যে আলোচনা

হলো। রায়হানের থেকে অবন্তীর বিষয়ে আরো সব তথ্য নিয়ে কীভাবে কি করা যায়, সব প্ল্যান করে ফেললো। আর বললো – আর দূরে থাকতে পারবোনারে। আমার জিনিস আমি এখন বুঝে নিতে চাই তুই আর তাহসান মিলে সেই ব্যবস্থাই কর। ওর সব কষ্ট দূর করে দিব। আমার সবটুকু ভালবাসা দিয়ে ওকে ভরিয়ে দিব। আর কোনো কষ্ট স্পর্শ করতে পারবেনা। কষ্ট রাও ভয় পাবে বলবে রিদের ভালবাসাকে আর একদন্ড কষ্ট ও দেওয়া যাবেনা। এতোদিন সবাই জানতো আমি কি। এখন থেকে সবাই জানবে আমি কতটা সাংঘাতিক।

রায়হান শুধু চুপ করে শুনে গেলো রিদের সাথে যা হয়েছে এর পর রিদের এই রূপই দেখতে পাবে সবাই সেটা জানা কথাই।

সকাল দশটা বাজে তাহসান আরশি কে ফোন করলো আর বললো অবন্তীকে নিয়ে তার ফ্ল্যাট এ চলে আসতে।

আরশি অনেক প্রশ্ন করলো কিন্তু না কিছু বললো না। অরশি কোনো রকমে অবন্তী কে জোর করে রাজি করালো এক বান্ধবীর বাসায় যাবে বলে। বাড়িতেও সবাইকে এটাই বললো। আরিয়ান অফিস চলে যাওয়াতে তাকে কিছু জানানো হলো না। অবন্তী কোনোরকম ভালো একটা থ্রিপিস পড়ে নিলো। চুলগুলো বেধে রেডি হয়ে বের হলো কোনো প্রকার প্রসাধনি ইউস করলো না যার ফলে চোখের নিচের কালো দাগ স্পষ্ট হয়ে থাকলো।

দুজন বেরিয়ে তাহসান এর বলা অনুযায়ী চলে গেলো তার ফ্ল্যাটে। অবন্তী কল্পনা ও করতে পারবেনা আজ তার সাথে কি হতে যাচ্ছে দুঃখের পরেই সুখ আসে কথাটা বোধ হয় মিলে যাবে আজ অবন্তীর জীবনের সাথে। মানুষ এক জীবন কষ্ট করলে আরেক জীবন ঠিকই সুখ ভোগ করে। অবন্তীর কষ্টটাও একজীবন না হলেও তার কাছে আট মাস আট হাজার বছরের সমানই মনে হয়েছে।

কলিং বেল এর শব্দে চমকে ওঠলো রিদ। বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো সে ইচ্ছে হলো ছুটে গিয়ে তার আয়না সুন্দরী কে জাপটে ধরতে কিন্তু খুব কষ্টে ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখলো। একটু ধৈর্য ধরলে হয়তো খুব বেশীই ভালো কিছু পাওয়া সম্ভব। সম্ভব না সম্ভব করবো। (রিদ)


পর্ব ১৫

তাহসান গিয়ে দরজা খুলে দিলো আরশি আর অবন্তী কে দেখে ভেতরে প্রবেশ করতে বললো। কিন্তু তাহসানকে দেখে থমকে গেলো অবন্তী। অবিশ্বাসের চোখে তাকালো আরশির দিকে। চোখ দুটো পানিতে চিক চিক করছে তার। শেষে আরশি আপু ও আমাকে এইভাবে ঠকালো নানা রকম ভাবনা ভাবতে লাগলো অবন্তী। আরশি অবন্তীর হাত শক্ত করে ধরে বললো- আমাকে বিশ্বাস কর অন্তী এই মূহুর্তে এর থেকে বেশী কিছু বলতে পারছিনা।
তোমরা কি বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি, ভেতরে আসো।

হ্যা যাচ্ছি বলেই আরশি অবন্তীর হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো৷ তাহসান অবন্তীর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছিলো৷ অবন্তী খুব বিরক্তি চোখে একবার দেখে আর তার দিকে তাকালো না। অবন্তী কে আরশি নিয়ে সোফায় বসালো। আরশি অবন্তী দুজনই বসে আছে। অবন্তীর মনের ভেতর কেমন অস্থিরতা বেড়ে গেলো ঘেমে যাচ্ছিলো বার বার। হাতদিয়ে বার বার কপাল আর মুখ মুছছিলো। আরশি বিষয় টা খেয়াল করলো। যখনি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই তাহসান বললো- আরশি একটু এদিকটায় আয় তো কিছু কথা ছিলো৷
কি কথা অন্তী কে একা রেখে তোর কথা শুনতে যাবো। কি বলবি বল এখানেই।

অবন্তী তোমার কি আপওি আছে তোমার বোনকে কিছুক্ষনের জন্য এখান থেকে নিয়ে গেলে।
অবন্তী জোর পূর্বক একটা হাসি দিলো। নাহ আপওি থাকবে কেনো। আপু যা তুই। আমি ওয়েট করছি।
আরশি আর তাহসান ডানপাশের রুমের দিকে চলে গেলো৷

পাঁচ মিনিট হয়েছে একা বসে আছে অবন্তী। তার মাথায় নানা রকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বুকের ভেতর কেমন অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে কেনো। এখানে আসার পর থেকে এমন অস্থির লাগছে কেনো। মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেকদিন পর অজানা এক অনুভূতি হচ্ছে কিন্তু এই অনুভূতির মানে কি বুঝতে পারছেনা অবন্তী। হঠাৎ বাম পাশের দিকের রুমের দরজা খোলার আওয়াজ হলো।

তাকালো অবন্তী ভেবেছিলো হয়তো কেউ বেরিয়ে আসবে কিন্তু না কেউ আসলো না। কিন্তু রুম থেকে পারফিউমের গন্ধ বেরিয়ে আসছিলো সেই চিরচেনা গন্ধটা। যেটা আরো দ্বিগুন অস্থিরতা বাড়িয়ে দিলো অবন্তীর মনে। আর চুপ করে বসে থাকতে পারলো না ওঠে দাঁড়ালো। পরোক্ষনেই মনে পড়লো একিরকম পারফিউম তো অনেকেই ইউস করতে পারে। এমন উতলা হচ্ছি কেনো আমি ভেবেই বসে পড়লো।

কিন্তু মনটা যেনো মানছিলনা বার বার ইচ্ছে হচ্ছিলো রুমটাতে গিয়ে দেখতে কেউ আছে কি না আর যদি থাকেই তাহলে কে? আবারো ওঠে দাঁড়ালো অবন্তী। আস্তে আস্তে এগোতে লাগলো রুমের দিকে। যতোই এগোচ্ছে ততোই তার হ্রদ স্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে গেছে৷

কি আছে এতো কিসের কৌতুহল হচ্ছে কোনোদিনতো এমনটা হয় নি। তবে আজ এমনটা হচ্ছে কেনো। মনে হচ্ছে কারো শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে ওই রুমে যেটা আমার খুব চেনা। এমনটা কেনো হচ্ছে ভয়ে ভয়ে রুমের সামনে দাঁড়ালো। অদ্ভুত ব্যাপার অবন্তী রুমের সামনে যেতেই রুম টার সব আলো উধাও। লোড শেডিং হলো নাহ শুধু তো এই রুমটাই অন্ধকার হলো। তার মানে সত্যি কেউ আছে।

যতটা সাহস নিয়ে এগিয়েছিলো এখন আর সাহস পাচ্ছেনা। আর যাই হোক নিজের কৌতুহল মেটানোর জন্য একা একা অন্ধকার রুমে ঢোকার মতো সাহস অবন্তীর নেই, আরশি হলে ব্যাপারটা অন্যরকম হতো। তাই সে পিছিয়ে গেলো ঘুরে দাঁড়ালো।

পিছন ফিরে ঘুরতেই একটা হাত অবন্তীর বাহুতে ধরে হেচকা টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে গেলো। সাথে সাথে ভয়ে একটা চিৎকার দিয়ে ওঠলো সে। অবন্তীকে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে কপালে আলতো করে কিস করলো রিদ। অবন্তী হতভম্ভ হয়ে চুপসে গেলো৷ রিদ কিস করার পর হুট করেই অবন্তী জাপটে ধরলো তাকে। কিন্তু মুখ দিয়ে একটা কোথাও বললো না। তবে অবন্তীর চোখের পানি রিদের শার্ট ভেদ করে বুকে ঠান্ডা অনুভূত হলো। রিদ বুঝতে পারলো তার অন্তী বুঝে গেছে।

দুজনের শরীরেই বয়ে যাচ্ছে শীতল হাওয়া। দুজনের বুকে যে আগুনটা গতো আটমাসে জ্বলছিলো সেই আগুনে যেনো পানি পরেছে। ধাও ধাও করে জ্বলে ওঠা আগুন এক নিমিষেই নিভে গেছে৷ বেশকিছুক্ষন নিরবতা চললো। নিরবতা ভেঙে রিদ পরম আবেশে বুকে নিয়েই ডাকলো অন্তী……. সাথে সাথেই বুঝতে পারলো তার প্রিয়তমা শরীরের ভার ছেরে দিয়েছে।

হ্যা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। সবসময় দুঃখের ধাক্কায় জ্ঞান হারানো মানুষ টা আজ সুখের ধাক্কায় জ্ঞান হারিয়েছে। আর এক মূহুর্তও দেরী না করে কোলে তুলে নিলো অবন্তী কে। আর সে যেটা অনুভব করলো তা হচ্ছে মেয়েটা একদম মিয়িয়ে গেছে। কতোটা কষ্টে কাটিয়েছে তার প্রত্যেকটা প্রমান যে ঠিক কতোটা আঘাত দিবে আমায় সে শুধু আমিই জানি। (মনে মনে রিদ)

রুমে লাইট অন করে অবন্তীকে শুইয়িয়ে দিলো রিদ। তারপর অবন্তীর কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো।
বেশ কিছুক্ষন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো অবন্তীকে বুকের ভেতর কেমন চিন চিন করে ওঠলো। রাগে হাত মুঠ করে চোখ মুখ শক্ত করে বললো- যার জন্য এই অবস্থা তাকে আমি ছাড়বোনা অন্তী। যার জন্য এতো কষ্ট পেয়েছি দুজন, আলাদা থেকেছি তাকে চরম শাস্তি ভোগ করতে হবে।

ছাড়বোনা তাকে আমি।
ফোন বের করে কল করলো তাহসান কে সাথে সাথেই বললো- আমরা রেডি তুই এসে দেখে যা সব।
ওকে।

রিদ তাহসানের রুমে চলে গেলো সেখানে আরশির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো তাহসান। আরশিও সব ব্যাপার জেনে নিয়েছে তাহসানের থেকে। বাহ অবন্তীর সাথে রিদ ভাইয়াকে অনেক সুন্দর মানিয়েছে। রিদ ভাইয়াকে সুন্দর ভেবেছিলাম তবে এতোটা ভাবিনি। যাই হোক বোনটার সব কষ্ট এবার দূর হবে। তীলে তীলে নিজেকে যেভাবে শেষ করে দিচ্ছিলো এখন রিদ ভাইয়ার ভালবাসায় আবার শুরু করবে। হে আল্লাহ ওদের মিলিয়ে দিও সুখী করো।
কিরে এমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো।

চমকে ওঠলো আরশি। না মানে কিছুনা সবতো রেডি। অবন্তী কে নিয়ে আসি।
রিদ থামিয়ে দিলো- না ও জ্ঞান হারিয়েছে।
কি বলছেন ভাইয়া জ্ঞান হারিয়েছে মানে।

তেমন কিছুনা চিন্তা করো না। কিছু হবেনা। আমি জাগিয়ে দিব একটু পর।
কি বলছেন ভাইয়া ওকে ডক্টরের কাছে নিতে হবে তো।

এই রিদ কি বলছিস এই বলছিস জ্ঞান হারিয়েছে এই বলছিস কিছু হবেনা।

হ্যা সবসময় কষ্ট পেয়ে জ্ঞান হারায় এবার আমাকে পেয়ে খুশিতে জ্ঞান হারিয়েছে তাছাড়া কিছুই ন। আমার অন্তী কে আমার থেকে কেউ বেশী চিনে না। তুই আসল লোক কে ফোন কর।

তাহসান আগা মাথা কিছুই না বুঝে কাকে যেনো ফোন করতে করতে বেরিয়ে গেলো।

আরশি বুঝলো অন্তীর জ্ঞান হারানোর বিষয়ে রিদ জানে। তারমানে এখন জ্ঞান হারানোটা সিরিয়াস কোনো বিষয়ে নয়। কিন্তু ডক্টর যে কথা বলেছে সেটা কি রিদ ভাইয়াকে জানাবো। না থাক আজকে এসব বললে সিচুয়েশন অন্যরকম হয়ে যাবে। আর যে টুকু দেখলাম বুঝলাম রিদ ভাইয়া অন্তীর ব্যাপারে খুব সিরিয়াস তাই এখন না বলাই ব্যাটার।

হ্যালো আপু শুনছেন৷ হাতে তুরি বাজিয়ে।
হ্যা বলুন। চমকে ওঠে৷

কি ব্যাপার বলুনতো আপনার বোন ও মাঝে মাঝে ভাবনার জগৎ এ চলে যায় আপনিও সেইম দেখছি। তা কি ভাবছেন এই ভাবে ভাবতে গেলে তো দিন পেরিয়ে রাত হয়ে যাবে আমার বিয়েটা কি তাহলে আজ থেমে থাকবে।
আরশি হেসে ওঠলো৷ আরে কি বলছেন ভাইয়া আজকে বিয়ে কমপ্লিট করেই বাড়ি ফিরবো নো টেনশন। কিন্তু এখন আমার কাজ কি বোনটা তো আমার সুখে জ্ঞান হারালো।

আপনি শুধু একটা জিনিস ম্যানেজ করবেন।
কি?
আজকে বাড়ি ফেরা যাবে না সেটা যেভাবেই হোক ম্যানেজ করবেন।

আরশি ভয় পেয়ে গেলো। আর বললো- আসলে আরিয়ান মানে অন্তীর বড় ভাই আর মামা কে ম্যানেজ করা খুব কঠিন হবে৷ আর যেহেতু বাড়িতে অন্তীর ব্যাপারে সবাই সবটা জানে সেহেতু সন্দেহ ও করবে।

আরশি মনে মনে টেনশন করতে লাগলো একেতো আরিয়ানকে কিছু জানানো হয়নি৷ তার ওপর রিদ ভাইয়া আজি বিয়ে করতে চাচ্ছে। আর এটা কিছুদিনের জন্য গোপন রাখতে চাচ্ছে। আবার বাড়ি ও না ফিরলে সবটা কীভাবে ম্যানেজ করবো৷ আরিয়ানকে কি জানানো উচিত। না থাক মেরেই ফেলবে আমায়।

কি ভাবছেন এতো।
না কিছুনা।
আচ্ছা ঠিক আছে রাতে থাকতে হবে না সন্ধ্যার মধ্যেই বাড়ি ফিরবেন আপনারা৷
আরশি স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললো।

কাজি এসে উপস্থিত। আরশি, তাহসান, রায়হান বসে আছে কাজির সাথে। রিদ অবন্তীর কাছে গেছে মেয়েটর এখনো জ্ঞান ফিরেনি। ইচ্ছে করেই ফেরায়নি রিদ। তবে এখন তো জাগাতেই হবে তা না হলে বিয়ে বাসর কিছু হবে না। কিন্তু বাসর তো রাতে হয়। রাতে তো থাকবেনা অন্তী।

তাতে কি আমি না হয় দিনেই করবো বাসর, যেটাকে বলে দিন বাসর। ভেবেই মুচকি হাসলো রিদ। হালকা পানি ছিটিয়ে দিলো অবন্তীর চোখে। চোখ পিটপিট করে তাকালো রিদ কে দেখে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই হুহু করে কেঁদে ওঠলো অবন্তী। ওঠার শক্তিটাও সে পাচ্ছেনা৷ এই কমাসে যে তার শরীরটা একদম নিস্তেজ হয়ে গেছে।

অবন্তীর চোখের পানি রিদের বুকে রক্তক্ষরন যন্ত্রনা বয়ে আনলো। বার বার সে হিংস্র রূপ ধারন করতে গিয়েও থেমে যাচ্ছে তার প্রিয়তমার সামনে এইরূপ সে কোনো ভাবেই আনতে চায় না। শুধু সময়ের অপেক্ষা যে বা যারা এতোদিন এই হিংস্র খেলা খেলেছে সেই খেলার জবাব হিংস্রতা দিয়েই দিবে৷ নিজেকে কন্ট্রোল করে দুহাত দিয়ে অবন্তীর কাধে ধরে ওঠিয়ে বুকের সাথে জরিয়ে নিলো৷

অবন্তী ও রিদকে জরিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠলো। এতোটা শক্ত করে ধরলো যাতে ছেড়ে দিলেই আবার হারিয়ে ফেলবে তাকে। রিদ বুঝতে পেরে আরো গভীর ভাবে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। বেশ খানিকটা সময় চললো পিন পতন নিরবতা। যে নিরবতায় মিশে ছিলো হাজারো অভিযোগ, অভিমান। নিরবতার পাহাড় ভেঙে অবন্তীর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে ওঠলো -তোমার সব প্রশ্নের উওর তুমি পেয়ে যাবে সঠিক সময়ে। এখন শুধু আমি যা বলি তাই করো। কোনো বাধা দিও না।

রিদের গরম নিঃশ্বাস অন্তীর কানে পড়তেই তার শরীর সির সির করে ওঠলো। তার প্রত্যেকটা সিরা উপশিরা জানান দিয়ে দিলো তোর রিদ ফিরে এসেছে। তোর ভালবাসা ফিরে এসেছে। আঁকড়ে ধর খুব শক্ত করে যেনো আর দূরে না যেতে পারে। আবারো ডুকরে কেঁদে ওঠলো সে। রিদ কি করবে বুঝে ওঠতে পারছেনা ছাড়তেও ইচ্ছে করছেনা কিন্তু সময় যে খুবই স্বল্প। তাই আর কিছু না ভেবেই ওঠে দাঁড়ালো সাথে পাঁজা কোল করে তুলে নিলো অবন্তী কে।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসিয়ে দিলো। পিছনে দাড়িয়ে গায়ের ওড়নাটা দিয়ে ঘোমটা তুলে দিলো। অবন্তীর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অনবরত পানি। দুকাধে হাত রেখে ঘুরিয়ে দাড় করালো। চোখের পানি মুছে দিয়ে এক হাতে শক্ত করে ধরে বললো চলো। দুপা এগোতেই অবন্তী আঁতকে ওঠলো – দাঁড়াও।
পেছন ঘুরে তাকালো রিদ। কি হয়েছে?

অবন্তী রিদের কপালের দিকে চোখ রাখতেই বুঝতে পারলো রিদ। তাই শাহাদাৎ আঙুল দিয়ে ঠোঁট জোরা চেপে ধরলো। আর বললো- বলেছিনা সব উওর পেয়ে যাবে এখন কোনো কথা নয়। হাতে সময় নেই বেশি বলেই রিদ আবারো হাত ধরে সরাসরি চলে গেলো তাহসানের রুমে।

রুমে ঢুকেই অবাক চোখে সকলকে দেখছে অবন্তী আরশিকেও দেখতে পেলো। হাসিমাখা মুখ সবার এরা সবাই এখানে। তারপর চোখ গেলো দাড়িওয়ালা হুজুরটার দিকে। বেশ কাগজ পাতি সামনে কিছু ঢুকছেনা মাথায় তার কি হতে যাচ্ছে।

জিগ্যাসু চোখে তাকালো রিদের দিকে। রিদ বাকা হেসে চোখ মেললো। যেটা অবন্তী কে বুঝিয়ে দিলো আস্থা রাখো। দুজনই চুপচাপ বসে পড়লো। যাবতীয় কাজ কমপ্লিট করে কাগজ এগিয়ে দিলো অবন্তীর দিকে। কাগজের দিকে বেশকিছু ক্ষন তাকিয়ে রিদের দিকে তাকালো রিদ আবারো মাথা আর চোখ উপর নিচ করলো।

অন্য সময় হলে অবন্তী বাঁধা দিতো কিন্তু আটমাস আলাদা থাকার পর আর সেই স্পর্ধা তার হলো না৷ কারন সেও চাইছে খুব কাছে খুব গভীরে। চাইছে ভালবাসার পূর্ণতা। সবকাজ শেষে সবাই দুয়া করলো।

রিদ অবন্তী দুজনই নামাজ পড়ে নিলো। আরশি, তাহসান, রায়হান গল্প করছে। মুভি দেখছে। আড্ডায় জমে ওঠেছে ড্রয়িং রুম।

এদিকে রিদ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে অবন্তীর দিকে। অবন্তী ও চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে বিছানায়। রিদ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। চোখ দুটো বন্ধ করে নরম সুরে বললো অন্তী……
আস্তে করে জবাব দিলো- হুম…….

কি চাই তোমার আজ আমার থেকে বলো যা চাইবে সব দিবো তোমায় আজ আমি।
চোখ মেলে তাকালো রিদের দিকে রিদ চোখ বন্ধ করেই শুয়ে আছে। সেই সুযোগে প্রানভরে দেখে নিচ্ছে তাকে। রিদ ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করে আছে। কারন সে জানে তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারবেনা তার আয়না সুন্দরী। সে যে বড্ড লাজ্জাবতী।

কিছু চাইনা আপনার থেকে শুধু সারাজীবন পাশে চাই। সারাজীবন আপনার বুকে মাথা রেখে রাত পার করতে চাই। আমার সকালটা আপনার মুখ দেখে শুরু করতে চাই। দিনটা শেষ করতে চাই আপনাকে দেখে। আপনার ভালবাসায় রাঙিয়ে তুলতে চাই আমার জীবন। সারাজীবন খুব খুব ভালোবাসতে চাই৷ ভালো রাখতে চাই। আর কিছু চাইনা।

রিদ লাফ দিয়ে ওঠে পড়লো মুখোমুখি বোসলো অন্তীর। প্রশ্ন করলো আর কিছু চাইনা?
না…..

সত্যিতো…
হুম……..
রিদ রহস্যময়ী একটা হাসি দিলো। আবারো বললো-
সত্যি কিছু চাইনা?

নাহ আর কিছু চাইনা আমার, শুধু আপনাকে চাই।
রিদ আবার শুয়ে পড়লো। মিটিমিটি হাসছে। অবন্তী ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে কি ব্যাপার।
কি আর করার বলো অন্তী? বিয়ে আরেকটা করতে হবে। আর কোনো উপায় নেই।

অবন্তী বড় বড় চোখ করে তাকালো রিদের দিকে। রিদ মিটি মিটি হাসছে৷ অবন্তী এবার রাগি লুক নিয়ে তাকালো।
রিদ সেটা দেখে আবার ওঠে বসলো – কি করবো বলো প্রথম বউতো সবই চাইলো কিন্তু একটা বাচ্চাই চাইলো না।

তাই ভাবছি দ্বিতীয় টা কে শুধু বাচ্চা দিবো বলেই বাঁকা হাসলো৷ অবন্তী রেগে আগুন হয়ে গেলো রিদের উপর ঝাপিয়ে পড়লো। আর বুকে ইচ্ছেমতো কিল ঘুষি দিতে লাগলো। রিদ হাঁপিয়ে গেছে বেশ লাগছেও এই মেয়েতো বেশ রেগে গেছে। কি করে থামাই ভেবেই অবন্তীর দুহাত চেপে ধরলো। দুহাত বিছানায় চেপে ধরেছে রিদ।

অবন্তী ছাড়ানোর চেষ্টা করেও রিদের শক্তির সাথে পেরে ওঠে নি। অবন্তীর দুহাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে ঝুঁকে গেলো তার মুখ বরাবর। অবন্তীর চোখ বেয়ে পানি পড়লো। রিদ অবন্তীর মুখোমুখি মুখ রেখে বললো- এই পাগলি মজা করছিলামতো এইটুকু মজা না করলেতো আর এইভাবে কাছে পেতাম না।

লজ্জা পেয়েই দিনটা পার করে দিতে। তখন আমাদের দিন বাসর কি করে হতো হুম? এই টুকু মজার জন্য কেউ কাঁদে বোকা মেয়ে।

রিদের গরম নিঃশ্বাস অবন্তীর মুখে পড়তেই পুরো শরীর শিউরে ওঠলো তার। আর কথা শুনে লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেছে সে। ফর্সা গাল টা টমেটোর মতো লাল টক টক করছে। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলেছে৷ রিদ ধীরে ধীরে মুখ এগিয়ে নিচ্ছে। অবন্তীর শ্বাস চলছে দ্রুত গতিতে।

যা টের পাচ্ছে রিদ তার পুরো শরীর উথালপাথাল ঢেউ খেলে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে রিদ মুখ এগিয়ে নিলো অবন্তীর কানের কাছে। ফিসফিসিয়ে বললো- অন্তী……
হুম। অন্তীর ভারী নিঃশ্বাসের আওয়াজ রিদের বুকে আলাদা এক শিহরণ জাগালো।
পূর্ণতা পাক আমাদের ভালবাসা আজ। অনুমতি চাই।

অবন্তী লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো। রিদের হাত ছারানো চেষ্টা করলো হাত ছাড়লেই ছুটে পালাতো৷ কিন্তু রিদ যে খুব শক্ত করে চেপে ধরে আছে। ওর শক্তির সাথে কি আর পেরে ওঠবে অবন্তী।
কি হলো বলো৷

জানিনা…..( ভাড়ি আওয়াজ) খুব দ্রুত গতিতে ওঠানামা করছে অবন্তীর শ্বাস প্রশ্বাস।
রিদ আর কোনো সুযোগ দিলোনা অবন্তী কে।


পর্ব ১৬

কানের কাছ থেকে মুখ সরিয়ে আনলো। দুজনেরই হার্টবিট ওঠানামা করছে। মনের ভিতর বয়ে যাচ্ছে শীতল হাওয়া। অস্থিরতা ক্রমশ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে অবন্তী।

রিদ ধীরে ধীরে মুখ ডুবিয়ে দিলো অবন্তীর ঘারে, সারা শরীর কেঁপে ওঠলো অবন্তীর যা খুব ভালো ভাবেই টের পেলো রিদ৷ অবন্তী খামছে ধরলো রিদের শার্ট। রিদ ধীরে ধীরে মুখ এগিয়ে নিলো অবন্তীর মুখের কাছে দুজোরা ঠোঁট একহওয়ার আগেই অবন্তী লজ্জায় ঘুরিয়ে নিলো মাথাটা।

যার ফলে রিদের ঠোট ঠেকলো অবন্তীর কানের নিচে। রিদ একটা মুচকি হাসি দিয়ে কানের পিঠে কিস করলো। অবন্তী শিউরে ওঠলো। অবন্তী আবারো চেষ্টা করলো রিদ কে ছারানোর এ বার রিদ ও আলগা করে দিলো হাত।

অবন্তী ছাড়া পেয়ে চট করে ওঠে পড়লো। জামা টা ঠিক করে নিলো কিন্তু ওড়নাটা দেখতে পাচ্ছে না পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো রিদের বুকে ওড়না যা সে স্পর্শ করে আছে আর মিটি মিটি হাসছে। অবন্তী পিছন ঘুরে বসলো। ওড়নাটা দিন বলেই হাত বাড়ালো। রিদ মিটিমিটি হাসি দিয়েই বললো এখনো এতো কিসের লজ্জা তোমার আজ থেকে তো তোমার সব কিছুতেই আমার অধিকার আছে। আর এইভাবে চট করে ওঠে পড়লে যে বাসর কি আজ হবে না। বলেই বাঁকা হাসলো।

চুপ। বলেই লজ্জা পেয়ে মুখটা দুহাত দিয়েই ঢেকে ফেললো।

রিদ কাছে গিয়ে হাত সরিয়ে এক ঝটকায় টান দিয়ে একদম বুকের ওপর ফেলে দিলো। শক্ত করে বাহুতে আবদ্ধ করে ফেললো।

অবন্তী লজ্জায় রিদের বুকে মুখ লুকিয়ে রাখলো। ওঠতে গেলেই যে আরো লজ্জা পেয়ে যাবে। তার ওড়নাটা যে রিদের দখলে।

চুলগুলো মুখের সামনে থেকে সরিয়ে কানের পিঠে গুজে দিলো রিদ। দুহাতে দুগাল আলতো করে ধরে কাছে নিতেই ফোন বেজে ওঠলো। অবন্তী চট করে ওঠে ওড়নাটা ছিনিয়ে নিলো এই সুযোগে। রিদ ও একটা হাসি দিয়ে পাশ থেকে ফোন ওঠালো। ফোন আসার আর সময় পেলিনা। রোমায়েন্টিক মুহুর্তটা এইভাবে নষ্ট করে দিলি। ধূর। অবন্তী লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকালো৷
হ্যালো।

রিদ অবন্তীর বাবা স্ট্রোক করেছে তারাতারি ওদের ফিরতে হবে। আরশি কে ফোন করেছিলো আরিয়ান। (তাহসান)

ওকে আসছি বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো রিদ।

বিছানা থেকে ওঠে শার্ট ঠিক করে নিলো। অবন্তী কেও ফ্রেশ হয়ে বেরোতে বললো। অবন্তী ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো- কি হয়েছে? তোমাকে এমন চিন্তিত লাগছে কেনো? কে ফোন করেছিলো।

তাহসান, তোমার বাড়ি থেকে ফোন করেছিলো আরশিকে। যেতে হবে।

কথাটা শুনেই আঁতকে ওঠলো অবন্তী চট করে ওঠে রিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। রিদকে জরিয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো।

রিদ বুঝতে পারলো তার কান্নার কারন৷ তাই পরম আবেশে গাল দুটো দুহাতে আবদ্ধ করে বললো- এই বোকা মেয়ে কাঁদছো কেনো? আমরা তো এক হয়েই গিয়েছি। আর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না। শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা তারপর তোমার বাবা মায়ের সম্মতিতে তোমাকে নিয়ে আসবো আমার ঘরে। বউ কে তো আর এমনি এমনি নিয়ে যাওয়া যাবেনা তাইনা কতো কি গুছাতে হবে বলোতো।

এইভাবে আর কেঁদো না তো এখন আর বাচ্চা নেই ওকে বউ তুমি আমার।

এইভাবে কাঁদলে মানুষ কি বলবে রাফসান চৌধুরীর বউ ছিচকাদুনে। অবন্তী কান্না থামিয়ে দিলো। আর বললো – আমাকে আপনি ফোন করবেন তো?

না করবোনা।
অবন্তী বড় বড় চোখ করে তাকালো।

রিদ অবন্তীর চোখে চোখ রেখে বললো- নিজের স্বামী কে আপনি করে বলছো। তাহলে কেনো ফোন করবো করবো না কোনো কথা নেই ওকে। অভিমানী সুরে বলে ওঠলো।

না তুমি আমায় ফোন করবে নয়তো আমি কান্না করে করে শেষ করে দিব নিজেকে৷ ( ন্যাকামো করে। )
আঙুল দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে – চুপ।

এতো ভেবনা পাগলি। মৃত্যু মুখ থেকে ফিরে এসেছি। তোমার জন্যই আর হারাবে না।
অবন্তী চমকে ওঠলো। কি বলছো?

সেসব পরে শুনবে৷ এবার চলো বাড়ি ফিরতে হবে তোমাদের আমি যাচ্ছি। তুমি পাঁচমিনিটের মধ্যে বেরিয়ে আসো৷
অবন্তী মাথা উপর নিচ করলো।

রিদ বেরিয়ে গেলো ড্রয়িং রুমে যেতেই আরশির চিন্তা ভরা মুখ দেখতে পেলো।
এখনি বেরুতে হবে রিদ। (রায়হান)

না আমরা না তাহসান যাবে হসপিটালে আরশি আর অন্তী কে নিয়ে। তাহসান ওদিকটার সব খবড় আমায় দিবি। আর রায়হান তোর এখন আরো অনেক কাজ আছে। আর অন্তী কে আগেই কেউ কিছু জানিও না। সরাসরি হসপিটাল নিয়ে যেও৷

অবন্তী লজ্জামাখা মুখ নিয়ে মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসলো। রিদের বুকে শীতল শিহরন বয়ে গেলো। হালকা কেশে ওঠলো। অবন্তী গুটিগুটি পায়ে ওদের কাছে আসলো। সাথে সাথেই আরশি বলে ওঠলো -চল।

তাহসানও বেরিয়ে গেলো। অবন্তী আর আরশি বেরিয়ে গেলো। রিদ ওদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো অবন্তী হাতের ইশারা দিয়ে বাই জানালো। রিদ ও একটা হাসি উপহার দিয়ে ইশারায়, বাই দিলো।
আপু তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো।

আরশি কি বলবে বুঝে ওঠছে না। মেয়েটা এতোদিন পর সুখের মুখ দেখলো আর আজি আরেকটা দুঃসংবাদ।
কিহলো কি ভাবছিস। রিদকে কি তোর পছন্দ হয় নি। বা আজ যা হলো এটাতে তুই অসন্তুষ্ট।

আরে কি বলছিস রিদ ভাইয়া অনেক ভালো। সবদিক দিয়েই ভালো লেগেছে। আর যেটা হয়েছে সেটাতো হওয়ারই ছিলো তাইনা।

তাহলে তোর মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেনো?

আরশি অবন্তীর হাত শক্ত করে ধরে বললো- অন্তী মামা স্ট্রোক করেছে।

কিহ কি বলছিস কখন। এমনটা কেনো হলো? আমি বাবার কাছে যাবো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লো অবন্তী।
আরশি ওকে ধরে বললো- আমরা হসপিটাল যাচ্ছি কিছু হবেনা দেখিস। সব ঠিক হয়ে যাবে। এইভাবে কাঁদিস না কিছু হবেনা মামার।
ভাইয়া কোথায়? (কান্নামিশ্রিত গলায়)

আরিয়ান ওখানেই আছে। মা বাবা, মামি, আরিয়ান আছে। তেমন ভয়ের কিছু নেই।
বিশ মিনিট পর পৌছালো হসপিটালে আরশি, অবন্তী, আর তাহসান। তাহসানকে দেখে অবাক হলো আরিয়ান। তুমি এখানে।
আসলে রাস্তায় দেখা হয়েছিলো শুনলাম আংকেলের এই অবস্থা। তাই আমার গাড়ি করেই ওদের নিয়ে সাথে আমিও আসলাম। রিদ আর অবন্তীর জন্য এই টুকু মিথ্যার আশ্রয় নিতে হলো আমায় মনে মনে ভাবলো তাহসান।
ভাইয়া বাবা কোথায় কান্না জরিতো কন্ঠে বলে ওঠলো অবন্তী।

ডক্টর চেকআপ করছে সাথে মা গেছেন।

ভয় পাস না অন্তী কিছু হবে না বাবার আল্লাহর রহমতে। কিন্তু বাবাকে একটু সাবধানে রাখতে হবে। কোনো প্রকার টেনশন দেওয়া যাবেনা। আর একবার এমন কিছু হলে খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
বোনকে সান্ত্বনা দিয়ে আরিয়ান গভীর চিন্তা ভরা মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে পাশে অবন্তী আর আরশি। তাহসান একটু দূরে গিয়ে রিদকে ফোনে সব জানাচ্ছে।

আরশি আরিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বললো -তুমি কেনো এতো টেনশন করছো।
কিছু হবেনাতো মামার।
আরিয়ান আরশির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো- হুম তাই যেনো হয়।
ডক্টর চেকআপ করার পর আরিয়ান আরমান সরকার কে আর সবাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো। তাহসান পৌছে দিলোসবাইকে তার গাড়ি দিয়ে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো সে। আরিয়ানের কিছু একটা সন্দেহ করলো কিন্তু বাবার টেনশনে সেটা আর পাত্তা দিলো না।

রাতে বাবার পাশে বসে আছে অবন্তী। আরশি আর অবন্তীর মা খাবাড় তৈরী করছে। আরিয়ান রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। অবন্তী বাবার পাশে বসে কাঁদছে। তার বাবার একটা হাত বাঁকা হয়ে গেছে।

সে আধসোয়া অবস্থায় বিছানায় বসে আছে। মেয়েকে স্বান্তনা দিচ্ছে। আরশি আরমান সরকারের জন্য খাবার নিয়ে আসলো। অবন্তী আরশি বসে আসে অবন্তী খাওয়িয়ে দিচ্ছে বাবাকে। আর আরশি ওষুধ নিয়ে বসে আছে। খাওয়া শেষ হলেই ওষুধ গুলো খাওয়িয়ে দিবে। খাওয়া শেষে ওষুধ দিলো আরমান সরকার ওষুধ খেয়ে বললো- আরশি মা অবন্তীর বিয়েটা খুব তারাতারি দিয়ে দিবো। আল্লাহ জানে আর কতোদিন বাঁচবো।

দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার আগে মেয়ের একটা ব্যাবস্থা করে যাই। তারপর তোমাকেও ঘরে নিয়ে আসবো। ঘরের লক্ষীকে ঘরে আনার পর আমার দায়িত্ব শেষ। নিজের ইচ্ছে পূরনের কথা শুনে আরশি খুশি হতে চেয়েও হতে পারলো না। অবন্তীর বিয়ের কথা শুনে। আজ যেটা হয়েছে সেটা কি করে মামাকে জানাবো আমরা। অবন্তী ও অসহায় দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।

কি হবে এবার বাবাকে সবটা কীভাবে বলবো। রিদ কীভাবে সব ম্যানেজ করবে৷ আবার এসবের জন্য বাবার কোনো ক্ষতি হবেনা তো? বাবাকে যে কোনো প্রকার টেনশন দেওয়া যাবেনা। রিদকে কাছে পেয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে করে কি ভুল করলাম। এটার জন্য আমার বাবার কোনো ক্ষতি হবেনাতো?

সেটা হলে কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা৷ বাবাকে যে আমি খুব ভালবাসি। আমার জীবনে ভালবাসার প্রথম পুরুষ যে বাবা। গভীর একটা নিঃশ্বাস ফেললো অবন্তী।

সবাই রাতের খাবাড় খেয়ে যার যার রুমে চলে গেছে। শুধু খায়নি আরিয়ান৷ সে পরে খাবে বলে তার মা কে পাঠিয়ে দিয়েছে৷ আরশি খাবাড় নিয়ে সোজা আরিয়ানের রুমে চলে গেছে। খাবারটা বিছানার পাশের টেবিলে রেখে৷ আরিয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে ডাকলো – আরিয়ান।

ওলটো ঘুরে শুয়ে ছিলো আরিয়ান আরশির স্পর্শ পেয়ে আর ডাক শুনে ঝটপট ওঠে বোসলো।
তুমি?

হুম। তোমার খাবাড় নিয়ে এসেছি।

ক্ষিদে নেই।

সেই সকালে খেয়েছো আর কিছু খাওনি। টেনশন করছো বলে ক্ষিদে পাচ্ছেনা অল্প করে খেয়ে নাও।
বললাম তো খাবনা। ( চিৎকার করে)
আরশি ভয়ে বিছানা থেকে ওঠে দাঁড়ালো।

আরিয়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে।
আরশি এমন ভয়ংকর দৃষ্টি আগে দেখেনি এতো কিসের রাগ। আরশি কাঁপা গলায় বললো- কি হয়েছে তোমার?
আরিয়ান ধপ করে ওঠে দাঁড়ালো। আরশি ভয় পেয়ে দুপা পিছিয়ে গেলো।


পর্ব ১৭

আরিয়ান বিছানা থেকে ওঠে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো দরজা ঠাশ… শব্দ করে ওঠলো। ভয়ে আবারো কেঁপে ওঠলো আরশি। কয়েক সেকেন্ডে কি ঘটে গেলো, কেনো ঘটলো সব মাথার উপর দিয়ে গেলো আরশির। বাবা অসুস্থ হওয়াতেতো এমন রিয়াক্ট করার কথা না তাহলে কি অন্য কিছু? রাগটা কি আমার সাথেই? কিন্তু কেনো? আরশি কিছুই ভেবে পেলো না কি হলো হঠাৎ। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেছে টেবিলের কাছে গিয়ে এক গ্লাস পানি ভরে খেয়ে নিলো।

আরিয়ান কোথায় গেলো? ওতো না খেয়ে আছে এমন রাগ করে আছে কেনো কি হয়েছে? ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আরশি। সবার রুম চেক করলো কোথাও নেই। ধীরে ধীরে ছাদে ওঠে গেলো আরশি। ছাদে পা রাখতেই নাকে কিছু একটার গন্ধ পেলো হ্যা সিগারেট।

কিন্তু এ বাড়ীতে তো কেউ সিগারেট খায় না। তাহলে গন্ধ টা কোথায় থেকে আসছে? আরো কয়েক পা এগিয়ে বাম পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো কেউ দাঁড়িয়ে আছে ডানহাতে জলন্ত সিগারেট। হ্যা এ আর কেউ নয় আরিয়ান। কিছুক্ষনের জন্য আরশি স্তব্ধ হয়ে গেলো। আরিয়ান সিগারেট খাচ্ছে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না আরশি৷ ছোটো থেকে কখনোই এমন কিছু চোখে পড়েনি তার তাহলে আজ কেনো?

কি হয়েছে আরিয়ানের? ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সে আরিয়ানের পাশে দাঁড়ালো।

খানিকটা ভয় লাগছে তবুও সাহস করে দাঁড়ালো সে। আরশি ধীর কন্ঠে বললো- কি হয়েছে? কিছু কি হয়েছে মামার অসুস্থতা ছাড়া। তুমি সিগারেট খাচ্ছো কেনো?

আরিয়ান জলন্ত সিগারেট হাতে মুঠ করে নিলো চোখ মুখ শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠলো- এখানে কি করছো? চলে যাও এখান থেকে। ধমকের স্বরে।

আরশি অবাক চোখে তাকালো। নিজেকে স্বান্ত রেখে বললো – প্লিজ কি হয়েছে বলো আমায়। কেনো এমন করছো আমার সাথে।
জাষ্ট লিভ মি। তোমাকে আমার জাষ্ট সহ্য হচ্ছে না। চলে যাও নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে।

আরশি আরিয়ানে দুগালে আলতো করে ধরে – প্লিজ এমন করো না কি হয়েছে বলো আমায়।

হাতের মুঠ ছেড়ে দিলো জ্বলন্ত সিগারেট টা পড়ে গেলো নিচে। দুহাত দিয়ে আরশির হাত ছাড়িয়ে নিলো পাশ ফিরে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো- নিজের ভালো চাও তো চলে যাও।

আরশি কি করবে বুঝে ওঠতে পারছেনা এ কোন আরিয়ান একে তো সে চিনে না এমন ভয়ংকর ব্যাবহার কেনো করছে সে৷ এমন করার মানুষ তো ও না। এতো শান্ত স্বভাবের ছেলেটা হঠাৎ এতোটা অশান্ত কি করে হলো। গভীর চিন্তীত এক নিঃশ্বাস ফেলে আরিয়ানের কাধে হাত রাখলো আরশি। কি হয়েছে কেনো রেগে আছো বলো আমায়? না বললে কি করে বুঝবো?

এবার যা হলো তার জন্য আরশি মোটেই প্রস্তুত ছিলো না। কখনো ভাবেনি এতোটা কঠোর আরিয়ান হতে পারে।
পিছন থেকে ঘুরে আরশির দুকাধে খুব শক্ত করে চেপে ধরলো আরিয়ান৷ আরশি ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো।
কতোবার বলছি চলে যাও কথা কানে যাচ্ছে না। কি ভাবো তুমি নিজেকে।

তোমার কথা অনুযায়ী সব হবে৷ এই আরিয়ান তোমার গোলাম হয়ে দুনিয়াতে এসেছে। সবার জীবন কি তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী চলবে। আমার উপর একদম জোর খাটাতে আসবে না।

জাষ্ট চলে যাও আমার সামনে থেকে তোমার মুখ দেখতেও ইচ্ছে করছে না। নেক্সট আমার সামনে আসারও চেষ্টা করবে না। আরশির চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসলো। আরিয়ান আরশির কাঁধ ছেড়ে দিয়ে আবার পিছন ঘুরে দাঁড়ালো। আরশির হাত পা কাপছে। সে কিছুতেই নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারলোনা আর। অশ্রু মিশ্রিত চোখ নিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে আসলো। অবন্তীর রুমে গিয়ে বাথরুমে গিয়ে সিটকিরি লাগিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো। অনেকক্ষন কান্না করার পর প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।

নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিলো। তারপর শুয়ে পড়লো। এতোক্ষনে তার খেয়াল হলো অবন্তী ফোনে কথা বলছে। আরশি শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলো হঠাৎ কি হলো? রিদ ভাইয়ার ব্যাপারটা কি জেনে গেছে? না তা কি করে হয়, আর রিদ ভাইয়ার ব্যাপারে তো জানেই আরিয়ান।

নাকি বিয়ের ব্যাপারটা জেনে গেছে ভয়ে আঁতকে ওঠলো আরশি। ধরফরিয়ে ওঠে বোসলো। অবন্তীর কাঁধে হাত দিয়ে ডাকলো অবন্তী রিদকে বলে ফোন রেখে দিলো। তারপর ঘুরে বললো- কি হয়েছে আপু তোকে এমন লাগছে কেনো?

আরশির চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়লো। অবন্তী অবাক চোখে তাকিয়ে বললো- কি হয়েছে আপু কাঁদছিস কেনো? আরশি খুবই স্ট্রং একটা মেয়ে খুব বড় আঘাত না পেলে সে কখনোই কাঁদে না। তাই অবন্তী খানিকটা চিন্তীত হয়ে জিগ্যাস করলো- আপু কি হয়েছে বলতো? এইভাবে কাঁদছিস কেনো?

আরশি সবটা বললো। সব শুনে অবন্তীও ঘাবরে গেলো বড় বড় চোখ করে বললো- কি ভাইয়া তোর সাথে এমন আচরন করেছে? কিন্তু তোদের তো সব ঠিক ছিলো কিছুদিন আগেওতো।

আরশি অবন্তী কে থামিয়ে দিয়ে বললো- তোর ভাই সত্যি একটা হ্রদয়হীন। আমাকে কোনো দিনই সে ভালবাসতেই পারে না। আর আজ যা করলো।

কিন্তু আপু এমনটার পিছনে কি কারন হতে পারে?
রিদ ভাইয়ার ব্যাপার জেনে যায়নিতো?

অবন্তী ভয়ে ঢোক গিললো। কি বলছিস আপু। এখন কি হবে?
কি হবে জানিনা। আরিয়ান আমায় ক্ষমা করবেনা৷ আর মামা কি বললো শুনিসনি?
হুম আমি রিদকে জানিয়েছি।

কি বললো?
বললো ও খুব তারাতারি ব্যবস্থা করবে। আমি ওকে বলেছি আমাদের বিয়ের ব্যাপারে বাবাকে জানানো যাবেনা। তাহলে বাবা খুব শখড পাবে।

অন্তী আমার মাথায় কিছু ঢুকছে মা কীভাবে কি হবে? আর আরিয়ান আমার সাথে এমন করছে কেনো? ও যদি এমনটা না করতো আমি ওকে আস্তে আস্তে পুরো ব্যাপার বুঝাতে পারতাম। সেই সুযোগ টাও তো দিলো না আমায়। এখন কি করবো।

জানিনারে আপু খুব ভয় লাগছে আমার।
হম মামাকে নিয়ে বেশী চিন্তা মামাকে কোনো কিছু নিয়েই চাপ প্রয়োগ করা যাবেনা৷ হার্ট করা যাবেনা।
আপু রিদ সবটা ম্যানেজ করে নিবে দেখিস।

হুম তার আগে আরিয়ানকেও জানানো উচিত নয়তো ও আমায় ভুল বুঝবে।

পরের দিন সকালে। রিদ আমেরিকাতে ফোন করে ওখানকার সব খবড় নিয়ে জানতে পারে তার বাবা মৃত্যুসহ্যায় আর সেখানকার হসপিটালে ভর্তি আছে। রিদ ভালোভাবেই বুঝতে পারলো তার বাবার অসুস্থতা আর তার নিখোঁজ হওয়াটা মা ছেলে ভালো ভাবেই উপভোগ করছে। কিন্তু ঐ মা ছেলে জানে না রাফসান চৌধুরী কি জিনিস। রিদ রায়হানের মাধ্যমে অফিসের যাবতীয় ডিটেইলস জেনে নিলো। বর্তমানে কি অবস্থা কি হচ্ছে এভ্রিথিং।

রিদ তাহসান এর সাহায্যে আর আমেরিকার বন্ধু বান্ধব এর সাহায্যে তার বাবাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করলো। তারপর বেরিয়ে গেলো এডভোকেট সাহাজাদ খান এর বাড়ির উদ্দেশ্য। সেখানে গিয়ে তাকে কয়েকমাসের পুরো ঘটনা খুলে বললো। আর তার বাবার তৈরী ফাইল গুলো রেডি করে রাখতে বললো।

সব কাজ কমপ্লিট করে সেখান থেকে বেরিয়ে চলে গেলো সোজা অফিসে। সবাই তাকে দেখে অবাক নয় মাস পর কোথায় থেকে আসলো। অফিসের সবাই তাকে যথেষ্ট সম্মান করলো। সবাই তাকে অনেক প্রশ্ন করলো কিন্তু সে কোনো উওর দিলো না। অফিসে ঢুকেই কয়েক পা এগেতেই সামনে পড়লো তার ছোটে ভাই রূপম রিদকে দেখে ভুত দেখার মতো করে তাকিয়ে রইলো।

রিদ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে দুহাত পকেটে গুজে দাঁড়ালো। রূপম ভয়ে ঢোক গিললো। রিদ সাথে সাথে বলে ওঠলো এখনি গলা শুকিয়ে গেছে। আমাকে দেখেই যদি গলা শুকিয়ে যায় তাহলে এরপর কি হবে? বলেই জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকালে রূপমের দিকে। রূপম আমতা আমতা করতে শুরু করলো৷
কিরে কি হলো?

জোর পূর্বক হাসি টেনে তুতলাতে তুতলাতে বললো-তুমি।

কেনো আমাকে আশা করিসনি বুঝি? (একটু ঝুকে)
না মানে তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে ভাইয়া? কতো খুজেছি তোমাকে? মা আর আমি অনেক খুঁজেছি। অনেক খুশি হলাম তুমি ফিরে এসেছো বলেই জরিয়ে ধরলো। রিদ ও এক হাত রূপমের পিঠে রাখো কানের কাছে এসে বললো – এই তো ফিরে এসেছিতো। এখন সবটা সুদে আসলে মিটিয়ে দিব।

রূপম রিদকে ছেড়ে দিলো ভয়ে ভয়ে তাকালো। রিদ রূপমকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো অফিসের ম্যানেজারের কাছে। রূপম তারাতারি করে ফোন বের করে ফোন করলো তার মায়ের কাছে।

রূপম তার মা কে সব জানাতেই সে ঘাবরে গেলো। তারপর ছেলে কে বললো ভয় পাসনা কিছু হবেনা। যা বলি তাই কর বলেই তাদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষন গোপন আলাপ চললো। রিদ অফিস থেকে বেরুতেই রূপম এসে বললো ভাইয়া বাসায় চলো। মা কে জানিয়েছি তুমি ফিরে এসেছো মা খুব খুশি তেমাকে নিয়ে শিঘ্রই বাসায় ফিরতে বললো।

ও তাই বুঝি? আমার বাড়িতো আমি ফিরবোই তোর সুপারিশ করা লাগবেনা৷ বলেই রিদ চলে গেলো। রূপম আবার তার মাকে ফোনে সবটা জানিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরলো।

এদিকে অফিসে সবাই খুশি তাদের আসল মালিক ফিরে আসায়। রূপমের স্বভাব, চরিএ কোনোটাই কর্মচারীদের পছন্দ নয়৷ তারা সবাই খুব খুশি হলো রিদ ফিরে আসায়।

রিদ তার নিজের বাড়ীতে ফিরল দীর্ঘ নয় মাস পর। সবকিছুই পালটে গেছে দারোয়ান থেকে শুরু করে কাজের লোক কেউ আর পরিচিত নেই৷ মমতা চাচী যে তাকে মায়ের মতো আগলে রাখতো সেও নেই। নিজের রুমে গিয়ে বুঝতে পারলো সেটা রূপম দখল করে নিয়েছিলো।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার নিচে নেমে আসলো। রিদ নিচে নামার সাথে সাথে শায়লা বেগম ডানদিকের রুম থেকে রোগা রোগা ভান করে বেরিয়ে আসলেন। রিদ বাবা বাবা তুমি ফিরেছো? আহারে বাবা কতো শুকিয়ে গেছে বাবা আমার কই ছিলা বাবা এতোদিন? রিদের সামনে এসে অভিনয় করা শুরু করে দিলো শায়লা বেগম। রিদ বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে বেরিয়ে যেতে নিয়েও বেরুলো না।

শায়লা বেগম কথা বলতে বলতেই রিদের পিছনে যাচ্ছিলো। রিদ পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো- আমার সামনে এইসব ন্যাকামো একদমই করবেন না মিসেস শায়লা চৌধুরী।
একি বাবা নিজের মা কে কেউ নাম ধরে ডাকে।

রিদ হা হা করে হেসে ওঠলো। রিদের হাসি দেখে ঘাবরে গেলেন শায়লা বেগম৷
নিজের মা? এই মা শব্দ টার অর্থ আপনি জানেন? যেদিন মা শব্দের অর্থ জানবেন সেদিন নিজেকে আমার মা বলে দাবি করবেন। আর হ্যা আপনাকে মা হিসেবে কোনো দিনই আমি মেনে নেইনি। মাঝখানে একদিন শুধু একজনের জন্য মায়ের স্থান দিয়েছিলাম। আর সেটাই আমার জীবনের চরম ভুল।

কি বলছো বাবা। (কান্নার ভঙ্গিতে)
আমিতো হিন্দি বা উর্দু ভাষা প্রয়োগ করিনি যে আপনি বুঝবেন না তাইনা। খাঁটি বাংলা ভাষাতেই বলেছি। বলেই রিদ আবারো বেরিয়ে পড়লো।

শায়লা বেগম শীড়া টান টান করে দাঁড়িয়ে রূপম রূপম করে ডাকতে শুরু করলো। রূপম দৌড়ে নিচে আসলো। মা আমার সব জিনিস ঐ রুম থেকে বের করতে হবে৷ অনেক বড় ঝড় আসছে মা। আমরা ধরা পড়ে যাবো না তো৷ ভাইয়া কে দেখে তার কথা শুনেই বুঝা যাচ্ছে সে আমাদের সন্দেহ করছে। আমরা যদি ধরা পড়ে যাই? চলো মা পালিয়ে যাই।

এই চুপ বোকার মতো কথা বলিস না। রিদ কিছু জানেনা। আর সন্দেহ করছে আমাদের ওর সন্দেহ দূর করে দিতে হবে। সেইভাবে ওর সাথে ভালো আচরন করতে হবে। পালিয়ে যাবি কেনো ভুলে যাস না তুই ও রিজওয়ান চৌধুরীর ছেলে। আর ঐ রিজওয়ান চৌধুরী কি করলো তার সব সম্পত্তি রাফসান চৌধুরীর নামে করে দিলো।

আর তোকে তোকে কি দিলো শুধু এই বাড়ির অর্ধেক টা ভাগ। আর সারাজীবন রিদের গোলামি করে কাটাতে বললো।

আমাকে বিয়ে করার আগেই সবটা রিদের নামে করে দিয়েছে আর আমি কিছুই জানতাম না৷ আমাকে আর তোকে ঠোকানো হয়েছে। আর তার শাস্তি ঐ লোকটাকে আমি দিয়েছি৷ আর আমার পথের কাটাও সরাতে চেয়েছি।

কিন্তু আবার ফিরে আসলো। এতো সহজে আমি হাল ছেড়ে দিবো না। আমাদের যেভাবেই হোক সবটা সামলাতে হবে৷ আর তোর বাবার সাথে যেনো রিদ যোগাযোগ না করতে পারে৷ ঐ দিকে সব ঠিক করে রাখ এই দিক আমি দেখছি। রূপম মায়ের পরামর্শ অনুযায়ী আমেরিকায় তার লোকদের ফোন করলো তারপর সে যা শুনলো এতে তার শরীর পুরো ঘেমে গেলো। শায়লা বেগম ছেলের কপালের ঘাম মুছে দিয়ে বার বার প্রশ্ন করলো কি হয়েছে?
মা বাবা হসপিটালে নেই বাবাকে ওখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কে কোথায় নিয়েছে সেটা কেউ জানে না। শুধু বললো অনেক বড় কারো হাত আছে এখানে। শায়লা বেগম ও এবার ভয় পেয়ে গেলো।

এখন সে কি করবে বুঝে ওঠতে পারছে না কোনোভাবেই৷ রূপম ও বেশ ঘাবরে গেলো। মায়ের কথায় জীবনে অনেক ভুল করেছে সেই শাস্তি গুলো কি এখন পাওয়ার সময় এসে গেলো?

দুজনই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।

আরশির মনটা বড্ড খারাপ আরিয়ানের গতকাল রাতের ব্যাবহারটা সে ভুলতে পারছেনা। যখনি মনে পড়ছে তখনি চোখ বেয়ে জল পড়ছে। অবন্তী অনেক সান্তনা দিচ্ছে তবু কাজ হচ্ছেনা৷ দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসেছে আরমান সরকার, আয়েশা বেগম, আসমা বেগম, আরিয়ান, অবন্তী।

আরশি রুমে খাবে বলে আসেনি শরীর ভালো না। আসমা বেগমকে তাই বলে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অবন্তী আর আরিয়ান ঠিকি আসল বিষয়টা বুঝতে পারলো।

অবন্তী লক্ষ করলো আরিয়ান তার সাথেও ঠিকভাবে কথা বলছে না৷ হসপিটাল থেকে ফিরে আসার পর থেকে। আসল ব্যাপারটা কি? কি হয়েছে? গভীরভাবে চিন্তা করছিলো অবন্তী। তার চিন্তায় বেঘাত ঘটলো আরমান সরকারের কথায়।
আয়েশা বেগম তাকে খাওয়িয়ে দিচ্ছিলো। এমন সময় সে বলে ওঠলো। আরিয়ান?
আরিয়ান আস্তে করে নিচের দিকে মাথা দিয়েই বললো -হুম।

তাহসানের বাবাকে কল করতে হবে বিয়ের কাজটা যতো দ্রুত করা যায় ততোই ভালো৷ অবন্তী চমকে ওঠলো৷ তার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসলো। গলায় খাবাড় আটকে গেলো। তারাতারি একটু পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।

আরিয়ান বাবার কথায় বাকরুদ্ধ। সে কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছেনা। মলিন মুখে বললো আর কিছুদিন সময় নেওয়া যায় না?

আরমান সরকার কঠিন স্বরে বলে ওঠলেন না আর সময় নেওয়া যাবেনা। আমি আমার মেয়ের সুখের সংসার দেখতে চাই। আরিয়ান আর কিছু বলার সাহস পেলো না। বাবার শরীরের কথা চিন্তা করে সে চুপ করেই রইলো। অবন্তীর চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছিলো৷ আয়েশা বেগম সেটা দেখতে পেলো। ভাবলো রিদের কথা ভেবে কান্না করছে৷ বিয়েটা হয়ে যাক আস্তে আস্তে ঠিকি অতীতটা ভুলতে পারবে আমার মেয়েটা ভাবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

অবন্তী কোনো রকমে ওঠে নিজের রুমে গিয়ে আরশিকে পুরো ব্যাপার জানালো। অবন্তী রিদকেও জানালো খুব কান্নাকাটি করলো। রিদ কি করবে এই মূহুর্তে যে তার অনেক কাজ কোনটা সামলাবে বুঝে ওঠতে পারছেনা। তাই বললো-
অন্তী চলে আসো আমার কাছে?

এটা কীভাবে সম্ভব বাবা যে বাঁচবে না তাহলে।

রিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো- তাহলে কেমন হবে কি করবে এখন?

তুমি প্লিজ আমার পরিবারের কাছে আসো।

আমি গেলেই তারা মেনে নিবে।
কেনো নিবেনা অবশ্যই নিবে।
না অন্তী ভুল।

ভুল কেনো।
রিদ কিছু না বলে শুধু বললো আমার সাথে দেখা করতে পারবে? খুব দরকার।
কিন্তু এখন কীভাবে?
আরশিকে নিয়ে আসবে?

ওকে দেখি তবে আজ না কাল।
ওকে।
অবন্তী আরশিকে বললো আরশি চিন্তীত মুখ করে বললো দেখি৷ অবন্তী বুঝতে পারলো আরশির মনের অবস্থা ভালো নেই তাই সে দীনাকে ফোন করলো৷

আরশি সারাদিন অনেক চিন্তাভাবনা করে ডিসিশন নিলো আরিয়ানের সাথে দেখা করবে৷ যে ভাবেই হোক অবন্তীর ব্যাপারে সব খুলে বলবে৷ আর তারপরেই বোঝা যাবে কি নিয়ে ওর এমন করছে ও।

রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে আরশি মনে সাহস করে আরিয়ানে রুমের কাছে যায়। গিয়ে দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই বুঝতে পারে দরজা খোলাই আছে। হালকা একটু খুলে মাথা ঢুকিয়ে দেখলো পুরো রুম ফাঁকা। আরিয়ান তাহলে কোথায় রাত এগারোটা পঁচিশ বাজে এখন কোথায় ছাদে যায় নি তো? .

ছাদে গিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখতে পেলো আরিয়ান আজো সিগারেট খাচ্ছে। আরশি কাছে যেতেই সিগারেটের ধোয়া একদম তার নাকের ভিতর ঢুকে গেলো সাথে সাথে আরশি কাশতে শুরু করলো৷ আরিয়ান পিছন ঘুরে দেখলো আরশি।

তারাতারি সিগারেট টা পায়ের নিচে পিশে ফেললো। আরশি কাশতে কাশতে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। আরিয়ান সেদিকে আর খেয়াল না দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। আরশি কিছুক্ষনপর নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো- আরিয়ান।

কোনো সারা দিলো না।
আবার বললো- আমার তোমার সাথে কথা আছে৷

আরিয়ান আকাশের দিকে তাকিয়েই বললো- আর কি বলবে তুমি আমায়? কি বলার আছে তোমার?
আরশির বুকের ভিতর মোচর দিয়ে ওঠলো। আরিয়ানের সামনে গিয়ে দুহাতে জরিয়ে ধরলো। খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করে ওঠলো। আরশির চোখের পানিতে ভিজে গেলে আরিয়ানের শার্ট। আরশি কেঁদেই চলছে৷

আরিয়ান তবুও তাকে ধরলো না। দুহাত দিয়ে আরশিকে ছাড়িয়ে চড়া গলায় বলে ওঠলো -একদম চুপ…….


পর্ব ১৮

দেখো আমি ঠান্ডা মাথায় ভালো ভাবে বলছি চলে যাও।
না আমি যাবো না আমাকে মারো কাটো যা ইচ্ছে হয় করো। তবুও যাবোনা আমি।

আরিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো- যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে যা করার তাতো তোমরা করেই ফেলেছো। এখন মেরে কেটে কি হবে? শুধু যে ঝড় টা আসবে সেটা আমাকে একাই সামলাতে হবে। বাবা টাও আমার বোনটাও আমার।

আরশি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো আরিয়ানের দিকে। আরিয়ান চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো।

বিশ্বাস করো আমি কিছু জানতাম না এসবের। আমি কি করতে পারতাম বলোতো। যেখানে ওরা দুজনেই রাজি।

আরিয়ান আরশিকে থামিয়ে দিয়ে বললো- ব্যাস। আর কিছু জানার ইচ্ছে নেই। যখন প্রয়োজন ছিলো তখন জানাও নি এখন কেনো এসব বলছো।
আমি তোমাকে জানাতাম আর আমি জানাতেই চাইছি কিন্তু তুমি আমাকে সুযোগটাই দিচ্ছ না৷

কেনো দিবো আরশি। সবটা তো আমি জেনেই গেছি। তাহলে তোমার থেকে কেনো শুনবো বলতে পারো। দুঃখ টা কোথায় জানো আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। ভরসা করেছিলাম।

আমি কখনো ভাবতেই পারিনি তুমি না জানিয়ে এমন একটা কাজে সম্মতি দিবে। অন্তী না হয় সহজসরল বোকা। তুমি তো তেমন নও তুৃমি যথেষ্ট ম্যাচিওর। এছাড়া তুমি তো বাবার ব্যাপারে জানতে রিদের ব্যাপারেও জানতে তাহলে কেনো এটা করলে। আর ঐ রিদ এমন কাপুরুষের মতো কাজ কেনো করলো আরশি। আমি অবাক হয়ে যাই আরশি অবাক হয়ে যাই কি করে পারলে তোমরা।

আরশি নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে আর আরিয়ান তাকে দোষারোপ করে যাচ্ছে।

আজকে যদি তোমাদের এই ভুলের জন্য বাবার কিছু একটা হয়ে যায় ক্ষমা করতে পারবে তোমরা নিজেদের৷ ভুলে যেওনা আরশি মা বাবা বিশ্বাস করে অবন্তীকে তেমার সাথে বের হতে দিয়েছিলো। তারা যখন জানবে সবটা তোমার প্রতি তাদের কি ধারনা হবে বুঝতে পারছো। আরশি কান্না জরিত কন্ঠে বলে ওঠলো রিদ ভাইয়া বলেছে মামার সাথে তোমার সাথে দেখা করবে।

হ্যা তাহলে সেটাই আগে করতো এসবের কি দরকার ছিলো।

রিদ ভাইয়া আর অন্তী অনেক দিন আলাদা থেকেছে তাই আগে তারা নিজেদের ভিতরে ক্লিয়ার হয়ে নিলো।
ওহ আচ্ছা আমাদের কথা একবারো ভাবলো না। নাকি ভুলে গেছে ওর একটা পরিবার আছে। বাবার জন্য শুধু চুপ করে আছি নয়তো ওকে আমি কখনোই ছেড়ে দিতাম না।

আরশি ভয় পেয়ে ওঠলো আরিয়ান অবন্তী কে খুবই ভালোবাসে। এক কথায় বোনটা তার কলিজা। আর তার প্রতি এতো রাগ। তাহলে আমাকে কি ক্ষমা করতে পারবে। আরিয়ানের কথা শুনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো সে।

আরিয়ান শান্ত কন্ঠে বললো – তোমাকে আমি ভরসা করেছিলাম আরশি। তুমিতো সেদিন আমাকে একটা বার ফোনে জানাতে পারতে। না তুমি সেটা করো নি৷ কেনো করবে আমি কে আরশি। না তোমার বিষয়ে আমার জানার অধিকার আছে না আমার নিজের বোনের ব্যাপারে।

আমি নিজেও জানতামনা আরিয়ান, অবন্তী ও না। রিদ ভাইয়া তাহসানের বাসায়। তাহসান রিদ ভাইয়ার কাজিন এসব কিছুই জানতম না। (কান্না জরিতো কন্ঠে)

প্লিজ আরশি কোনো অজুহাত দেখিও না। যখন দেখলে তখন জানাতে পারতে। যখন বিয়ে হলো তখন ফোন দিতে পারতে।

আরশি অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রইলো। আর কি বলবে সে আরিয়ান যে কোনো কথাই মানতে রাজি নয়।
নিচে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। অনেক রাত হয়েছে। বলেই আরিয়ান সেখান থেকে চলে গেলো নিচে।

আরশি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ঘুম যে তার আসবেনা। সারারাত ছাদেই কাটিয়ে দিলো আরশি। ছাদের এক কোনায় বসে ছিলো সে ফজরের সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। তবুও আরশি সেখান থেকে সরলো না ওখানেই বসে বসে ভিজতে শুরু করলো। এদিকে অবন্তী আরশির জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছিলো।

ফজরের সময় ঘুম ভাঙতেই বুঝতে পারলো তার রুমে সে ছাড়া আর কেউ নেই। আপু কি তাহলে রুমে আসেনি। কোথায় গেলো? ফুপির সাথে ঘুমিয়েছে কি? হুম হতে পারে। ভেবেই বিছানা ছেড়ে ওঠে নামাজ পড়ে নিলো।

মুনাজাতে তার বাবার জন্য দূয়া করে রিদ আর তার সম্পর্ক যেনো ঠিক থাকে৷ সব যেনো ভালোয় ভালোয় মিটে যায় এই দুয়াই করলো। ভারী বর্ষন হচ্ছে টানা একঘন্টা ধরে বৃষ্টি পড়ছে থামার নাম নেই৷ আরশি ও সেখানেই ঠায় বসে আছে। তার হ্রদয় যে আহত হয়েছে৷ বোনের ভালো করতে গিয়ে নিজের ভালবাসার মানুষকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।

শুধু তাই নয় সকলের বিশ্বাস ভেঙে ফেলেছে সে৷ তাই আর কোনোদিকে খেয়াল নেই তার। সে একমনে বসে আছে আর চোখের জল ফেলছে৷ বৃষ্টির পানিতে সব ধুয়ে মুছে যাচ্ছে৷ টানা দুই ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজেছে আরশি। বৃষ্টি ও থেমে গেছে। সকাল সাতটার দিকে আরিয়ান অফিস যাবে বলে গেসল করে শার্ট প্যান্ট ছাদে শুকাতে দিতে এসেছে। তারপর নিচে গিয়ে তারাহুরো করে খেয়ে বেরিয়ে পড়বে এই চিন্তা ধারা তার। কিন্তু ছাদে গিয়ে তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। একি আরশি এখানে এভাবে বসে আছে কেনো। তাহলে কি রাতে আর নিচে যায় নি?

এসবের মানে নি? সব কিছু নিয়েই কেনো এতো বাড়াবাড়ি ভেবেই আরিয়ান ডাকলো- আরশি?

আরশি?
দুবার ডাকতেও সারা নেই। কি ব্যাপার আরেকটু কাছে যেতেই বুঝতে পারলো মেয়েটা গুটিসুটি মেরে বসে আছে। হয়তো ঠান্ডা লাগছে পরোক্ষনেই আরিয়ানের মাথায় এলো টানা দুঘন্টা বৃষ্টি হয়েছে। তার মানে ও এতোক্ষন ভিজেছে। আরিয়ান তারাতারি হাটুগুজে বোসলো আরশির সামনে। আরশির এদিকে কোনো খেয়াল নেই।

সে হাটু ভাজ করে হাটুতে মুখে রেখে নিচের দিকে মাথা দিয়ে বসে আছে।
আরিয়ান তার কাঁধে হাত রাখলো গা গরম। একটু ঝাকুনি দিয়ে ডাকলো।

না কোনো সারা নেই কিন্তু শরীর টা খানিক কাঁপছে। আরিয়ান আর দেরী না করে আরশিকে পাজাকোল করে নিলো৷ দেখতে পেলো আরশির চোখ দুটো বন্ধ। তারমানে কি সেন্সলেস হয়ে গেছে৷ গা টাও বেশ গরম তারাতারি করে নিচে নিয়ে গেলো।

অবন্তী রুম থেকে বেরিয়ে আসমা বেগমকে বললো? ফুপি আপু ওঠেছে?

আসমা বেগম ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো – সেটা তো আমি তোকে জিগ্যাস করবো? তুই আমায় জিগ্যাস করছিস কেনো?

অবন্তী চমকে ওঠে বললো- কী বলো আপু তোমার সাথে ঘুমায়নি।
নাতো ও তোর সাথে ঘুমায় নি।

অবন্তী কিছু বলার আগেই আয়েশা বেগমের কথায় দুজনই তাকালো সিঁড়ির দিকে।
একি কি হয়েছে আরশির।

আরিয়ান আরশিকে নিয়ে নিচে নেমে আসলো। আসমা বেগম অবন্তী, আয়েশা বেগম কাছে গিয়ে – শরীর ভেজা কেনো কি হয়েছে। আরিয়ান সোফায় শুইয়িয়ে দিয়ে বললো-ফুপু তোমার মেয়েকে এবার শাসন করো দুঘন্টা বৃষ্টি তে ভিজেছে আর সেন্সলেস হয়ে গেছে৷ আমি ডাক্তারকে কল করছি।

আসমা বেগম ভয় পেয়ে গেলো। আয়েশা বেগম তারাতারি তয়ালে এনে মাথা মুছে দিতে লাগলো। অবন্তী গিয়ে পাশে বোসলো৷ আসমা বেগম কান্না করে দিলো তার আদরের মেয়ে।

বৃষ্টি তে ভিজতে দেয় না ছোটো বেলা থেকেই৷ একবার নিউমোনিয়া হয়েছিলো৷ তার পর থেকে খুব সাবধানে রেখেছে তাকে। কিন্তু আজ কিনা বৃষ্টি তে ভিজলো। রুমে নিয়ে গিয়ে কাপড় চেন্জ করে দিলো।

জ্ঞান ও ফিরেছে কিন্তু জরের ঘোরে সে ওঠতে পারছেনা শুধু বির বির করছে৷ আরিয়ান ডক্টর নিয়ে এসে জ্বর মেপে দেখলো৷ ওষুধ পএ সব ই আনা হলো। হালকা খাবাড় খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়িয়ে দেওয়া হলো।

আসমা বেগম মেয়ের পাশে বসে ছিলো। আরশির মুখ বির বির করতে দেখে সে সামান্য ঝুকে কান খাড়া করলো আর বুঝার চেষ্টা করলো মেয়ে কি বলছে। আর সে বুঝতে পারলো তার মেয়ে আরিয়ান কেই বলছে কথা গুলো। আমি কিছু জানতাম না। আমাকে ক্ষমা করে দাও আরিয়ান। এইটুকু বুঝতে পারলে আসমা বেগম।

কি ব্যাপার কিসের জন্য৷ ক্ষমা চাইছে আরিয়ানের কাছে। কি ভুল করলো মেয়েটা। চিন্তিত মুখ করে আসমা বেগম গেলেন আরিয়ানের রুমে। আরিয়ান রেডি হয়ে বের হবে এমন সময় ওনি বলে ওঠলেন – তুই আমার মেয়েকে কিসের জন্য কথা শুনিয়েছিস আর ওর কোন ভুলের ক্ষমা করিসনি।

কি বলছো। যাও মেয়ের সেবা করো আর আমাকে অফিস যেতে দাও।
আমার মেয়ের এই অবস্থা আর তুই অফিস যাবি।

তো কি করবো? ওকে বৃষ্টি তে ভিজতে কে বলেছিলো তুমি? না আমি?
দেখ যা করেছে করেছে। কিন্তু ও বির বির করে তোর কাছে ক্ষমা চাইছে কেনো।
গম্ভীর গলায় -জানিনা।

আসমা বেগম বুঝলেন সিরিয়াস কোনো কিছু হয়েছে। তাই বললেন- দ্যাখ বাবা মেয়েটা আমার খুবই সেনসেটিভ। জেনে শুনে কোনো ভুল সে করবে না৷ তাও যদি করে থাকে ক্ষমা করে দে৷ আর আজ ছুটি নে ওর সাথে থাকবি সারাদিন।
কি বলছো। আমাকে যেতে দাওতো দেরী হয়ে যাচ্ছে৷

না আজ যাবিনা৷ কদিন পর বিয়ে করবি অথচ মেয়েটার সাথে ভালো ভাবে কখনো কথা বলতেই দেখিনা। বিয়ের পর থাকবি কি করে?

জানিনা।
দ্যাখ আরিয়ান আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। তুই আমার মেয়েকে কষ্ট দিতে পারবি না৷ বলেই কান্না করে দিলো আসমা বেগম। আমার একমাএ মেয়ের যাতে কষ্ট পেতে না হয় সেজন্য তোকে আমি ভরসা করেছি।
তোদের বিয়ে ঠিক করেছি আর তুই কিনা। বলেই মুখ চেপে কান্না করতে করতে বেরিয়ে গেলো আসমা বেগম।
আরিয়ান কি করবে পিছন পিছন গিয়ে বুঝালো ওকে আমি ছুটি নিচ্ছি কেঁদো না৷

ফুপিকে সে নিজের মায়ের মতোই ভালো বাসে। তাই কি আর করার বাধ্য হয়ে অফিস বাদ দিতে হলে আজ।
নোটস এর কথা বলে দীনার সাথে দেখা করতে বের হলো অবন্তী। আরিয়ানের সন্দেহ হলো বিষয়টা কিন্তু সে কিছু বললো না। বোনের বিষয়ে তার আর কোনো কিছু বলার নেই।

তার কাজের জন্য সব রাগ আরশির ওপর ঝেড়ে দিয়েছে। তবে অভিমানটা আরশির ওপরই বেশি হয়েছে তার।

বোন গোপন করেছে তাই বলে সেও গোপন করবে ভাবতে পারেনি৷ নিজের লোকের বিষয়ে জানতে পারলো বাইরের লোকের থেকে। তাহসান ই সবটা বলেছে আরিয়ান কে রিদই বলতে বলেছিলো তবে এ ব্যাপারে অবন্তী কিছু জানেনা।

রিদের সাথে দেখা করলো অবন্তী রায়হানদের বাসায়। অবন্তী কে সবটা খুলে বললো রিদ। সব শুনে অবন্তীর চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। তার রিদ এতোটা কষ্টের ভেতর ছিলো। আর সে জানতেই পারলো না। আর তার সৎ মায়ের কথা শুনে তো অন্তী হতবাগ ছি মানুষ এতোটা নিচ হতে পারে?

হ্যা অন্তী হতে পারে৷ সম্পওির লোভে মানুষ নিজেকে পশুতেও রূপান্তর করে। তবে চিন্তা করো না বাবা কে ফিরিয়ে আনার ব্যাবস্থা করেছি৷ ছাড়বোনা ওই মা ছেলেকে আমি। আর এই রিদ কি সেটা হারে হারে টের পাবে।

অবন্তী রিদের হাতে হাত রাখলো তারা রায়হান এর রুমেই বসে আছে। এইদিকে রায়হান এর মা এতোদিন পর রিদ অবন্তী কে দেখে খুব খুশি তাই খাবাড়ের আয়োজন করতে লাগলো৷ দুপুরে সকলে মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করবে৷ রায়হান মা কে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে। রাতুল দীনা কে আনতে গেছে। তারা খুব খুশি। তবে বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানে না তারা। রায়হান শুধু তার মা কেই জানিয়েছে বিষয় টা।

রিদ বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে। অবন্তী তার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে। অবন্তী রিদকে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু সাহস করে ওঠতে পারছে না।

কি বলবে বলে ফেলো এমন জরতা কেনো এখনো তোমার?

অবন্তী চমকে গেলো চোখ তুলে তাকালো রিদের দিকে। আর ভাবলো কি করে বুঝলো কিছু বলবো?
রিদ বাঁকা হেসে বললো- কেনো আগে বুঝিনি নাকি?

অবন্তী লজ্জা পেয়ে গেলো।

অবন্তী একটু ভয়েই বললো-তাহলে আগে বলুন রেগে যাবেন না।

না রাগবো না। তুমি যে রোমায়েন্টিক কিছু বলবে না সেটা তো মুখ দেখেই বুঝেছি। কঠিন কিছুই বলবে তাই আমি সেই প্রিপারেশনেই আছি বলো কি বলবে?
আসলে….

হুম কি?
অবন্তী নিচের দিকে তাকিয়ে বললো- আমি আপনার বাড়ি গেছিলাম। আপনার মায়ের কাছে৷
আমার খোঁজ নিতে?

অবন্তী মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললো।

রিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তারপর?

ওনি আমাকে তেমন কিছু না বলেই এসে পড়তে বলেছে।

তাড়িয়ে দিয়েছে তাইতো?

না সেরকম না তবে আপনার বিষয়ে কিছু জানেনা এসবই বলেছে।

হুম তোমার লুকাতে হবে না। সব টা আমার জানা ওকে৷ তোমার বাড়ি থেকে তোমাকে বের করে দিয়েছে৷ সেটা এই রিদ সহ্য করতে পারবেনা অন্তী। তোমার বাড়িতে আমি তোমাকে সম্মানের সাথে নিয়ে যাবো৷ সেদিন ঐ দিনের অপমানের কষ্ট টা ঠিক ভুলে যাবে৷

অবন্তী মিষ্টি একটা হাসি দিলো। রিদ ও তাকে পরম আবেশে বুকে জরিয়ে নিলো৷
অন্তী?

হুম।
ভালোবাসি।

আমিও…
কি?

ভালবাসি।

রিদ আরো শক্ত করে চেপে ধরলে অবন্তী কে। অবন্তীও তার বুকে মাথা রেখে বসে রইলো৷ এভাবে কেটে গেলো বেশ কিছুক্ষন। হঠাৎ রিদ আবার ডেকে ওঠলো- অন্তী? ..

হুম। তোমার ভাইয়া আমাদের বিয়ের ব্যাপারে জানে। এটা কি তুমি জানো? ..

অবন্তী চট করে ওঠে পড়লো। ভয়ে ভয়ে বললো – কী বলছেন।

এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?

আমি নিজেই তাহসানকে দিয়ে জানিয়েছি।

আর তোমার ভাইয়াকে জানানো উচিত ছিলো।

তাহলে ভাইয়া বাবাকে কিছু বলেনি কেনো আমাকেওতো খুব চিন্তায় পড়ে গেলো অবন্তী।
কেনো তুমি কি চাইছিলে তোমার ভাইয়া তোমাকে মারধর করুক।

অবন্তী বড় বড় চোখ করে তাকালো।

তাহলে এইভাবে বলছো যে?

অবন্তী রাগি চোখে তাকালো।

ওররে আমার বউ আবার রাগ ও করতে পারে বলেই অবন্তীকে একটানে নিজের বুকে নিয়ে নিলো৷ মাথায় আলতো করে বুলিয়ে দিতে দিতে বললো- তুমি এখন আমার বউ ওকে। আমার বউ কে একমাএ আমি শাসন করবো। আর কেউ না।

হয়েছে ছাড়ুন এখন।
কেনো ছাড়বো কেনো এতোদিন পর কাছে পেয়েছি। ছারতে ইচ্ছে করে না। তোমার স্থান তো এই বুকেই। যতোটা গভীরে ধরে রাখা যায় ইচ্ছে হয় তার থেকেও বেশী গভীরে জরিয়ে নেই৷

অবন্তী লজ্জা পেয়ে গেলো তাই চুপ করে রইলো।
অন্তী?

হুম।
তোমার বাবা বিয়ের কথা বললে তুমি কিছু বলবে না। যা করার যা বলার তাহসানই বলবে৷ এতে আর কোনো ঝামেলা হবে না।

হুম আচ্ছা।
আবার কবে দেখা হবে জানিনা। তবে একটু লেট হবে আমার বেশকিছু কাজ আছে। তুমি নিজের যত্ন নিও। ফোন না দিতে পারলে মন খারাপ করবে না একদম।
হুম। যদি আমার কষ্ট হয়?

যখন খুব বেশী মনে পড়বে আমায় কিছু মেসেজ দিয়ে রাখবে। আমি সময় করে দেখে নিবো। ফোন আমিই আগে করবো সময় বুঝে। তোমার করতে হবে না।

হুম। আবার আমাকে ভুলে যাবেন না তো?
হাহাহা বুকের ভিতর কান পেতে শুনে নাও উওর টা।

হুম শুনছিতো৷
কী…

এই আপনি ভুলে যাবেন৷ (আল্হাদী স্বরে)
তাই নাকি। ওকে আমি ভুললেও আমার বউ টা আমাকে ভুলবে না

না আমিও ভুলে যাবো মনেই করবো না আপনাকে। (অভীমানী স্বরে)

তাই আচ্ছা তাহলে এমন কিছু করি আজ যা তোমাকে আমায় ভুলতে দিবেনা৷
কিহ বলেই বুক থেকে ওঠে পড়লো অবন্তী।
রিদ ভ্রু কুচকে – কী ব্যাপার এটা কি হলো?
কিছুনা। (মাথা নিচু করে)
কিছুনা বললে তো হবে না৷ এভাবে ওঠার মানে কি?

নিজের স্বামী হিসেবে মানতে কষ্ট হচ্ছে অন্তী? ( রাগী স্বরে)
অবন্তী কান্না করে বললো- কি বলছেন আপনি৷

একদম চোখের জল ফেলবে না অন্তী। (রাগী কন্ঠে)
আমি এমনি ওঠে পড়েছি৷ আপনিইতো আমার সব। আপনাকে হাজার বার স্বামী হিসেবে মানি আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ও মানতে চাই।

আর মৃত্যুর পর মানতে চাও না?
এবার অবন্তী আরো জোরে কেঁদে ওঠলো৷

আমি সেটা বলতে চাইনি বিশ্বাস করুন।
রিদের খুব হাসি পাচ্ছে। অবন্তীর এমন ভীতু মাখা মুখ দেখে। কিন্তু কান্নাটা আর সহ্য হচ্ছে না তাই হুট করেই অবন্তীকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কোলের ওপর ফেলে দিলো।

অবন্তী চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। চোখ গরিয়ে পানি বের হলো।
রিদ একটু মিটি মিটি হাসলো-মেয়েটা অল্পতেই কেমন কেঁদে ফেলে একদম বাচ্চাদের মতো। (মনে মনে)

রিদ টুপ করে অবন্তীর গালে চুমু দিয়ে দিলো। অবন্তী চোখ খুললো। তার নিশ্বাস ভারী হয়ে ওঠলো। রিদ ধীরে ধীরে মুখ এগিয়ে নিলো অন্তীর মুখ বরাবর। অন্তী ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে রিদ অবন্তীর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।

কিছুক্ষন পর রিদ অবন্তীর চোখের দিকে তাকালো – তার চোখ বেয়ে পানি ঝরে যাচ্ছে। তবে এটা দুঃখের নয় সুখের কান্না ভেবেই হাসলো রিদ। চোখ জোরা বন্ধ অন্তীর। তার শরীর কাঁপছে। রিদ তাকে আরো গভীর ভাবে ভালবাসা একে দিতেই সে খামচে ধরলো তার শার্ট। রিদ পরম আবেশে তার ঠোটে ঘারে মুখ ডুবিয়ে দিচ্ছে।


পর্ব ১৯

রিদ অবন্তীর পুরো শরীরে ভালবাসা একে দিচ্ছে। ফোনের শব্দে ঘোর কাটলো রিদের। কিছুক্ষনের জন্য সে হারিয়ে গেছিলো অবন্তীর মাঝে। ফোনের আওয়াজ শুনে অবন্তীকে সে ছেড়ে দিলো। অবন্তীও লজ্জামাখা মুখ নিয়ে ওঠে বোসলো।

এই ফোন আসার আর সময় পায় না। বলেই ফোন রিসিফ করলো রিদ।
হ্যালো রিদ তুই কোথায়? (তাহসান)

বউ এর কাছে আছি ফোন দেওয়ার আর সময় পেলি না তুই।
ওহ সরি সরি ব্রু বুঝিনাই তাহলে পরে ফোন করি নাকি।
না ঠিকাছে বল।

কিছু ইনফরমেশন পেয়েছি পরে দেখা করে নিস তবে আজের মধ্যেই।
ওহ আচ্ছা।
ফোন রেখে অবন্তীর দিকে তাকাতেই সে চট করে ওঠে দাঁড়ালো।

রিদ মুচকি হাসি দিলো।
অবন্তীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। তার শ্বাস খুব দ্রুত চলছে। অন্যদিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে সে। লজ্জায় তাকাতে পারছেনা রিদের দিকে। রিদও বিষয়টা খুব ভালো ভাবে উপভোগ করতে লাগলো। বিছানা ছেড়ে ওঠে অবন্তীকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরতেই সে শিউরে ওঠলো। রিদ তার ভালবাসা দিতে ব্যাস্ত আর কোনোদিকে তার খেয়াল নেই। মুখ ডুবিয়ে দিলো অবন্তীর ঘারে। অবন্তীর পুরো শরীরে আলাদা শিহরন বয়ে যাচ্ছে।

রিদ যে তাকে এক অজানা অনুভূতির ছোয়া লাগিয়ে দিচ্ছে। যা তাকে বার বার জানান দিচ্ছে তোরা দুজন এক হয়ে গেছিস। আর কেউ পারবেনা তোদেরকে আলাদা করতে। রিদের ভালবাসায় যখন ডুবে আছে অবন্তী তখনই কানের কাছে এসে রিদ বলে ওঠলো – অন্তী, তোমার পুরো শরীরে আমার ছোয়া পড়েছে আজ। ভুলতে পারবেনা আজকের পর তুমি আমাকে ভুলার সাহসই পাবেনা৷ আমার প্রত্যেকটা স্পর্শ বার বার তোমাকে মনে করিয়ে দিবে তোমার শরীর, তোমার মন, সবটাই এই রিদের দখলে।

অবন্তীর লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। সে এই মুখ কোথায় লুকাবে কোনো কিছু না ভেবে রিদের দিকে চট করে ঘুরে বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললো। রিদ ও বুঝতে পারলো তাই তাকে বুকে জরিয়ে নিলো। কতক্ষন এভাবে একে অপরের সাথে তারা মিশে ছিলো তা তারা কেউ জানেনা।

রাতুল, দীনা, রায়হান, রিদ, অবন্তী, সবাই একসাথে খাওয়া, দাওয়া করে বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিলো। সে দিনটা বেশ ভালোই কাটলো তাদের।

আরশি চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে তার পাশে এসে বসেছে আরিয়ান। আরিয়ানের খুব খারাপ লাগছে আরশিকে দেখে। জ্বরে মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। চোখদুটোও বেশ ফোলা দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক কান্নাকাটি করেছে মেয়েটা।

অনেকক্ষন মন ভরে আরশিকে দেখে তার কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো।

আরশি হালকা কেঁপে ওঠলো। আরিয়ান তারাতারি ওঠে পড়লো। ঘুরে দাঁড়ালো রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আরশি তার হাতটা টেনে ধরেছে।

আরিয়ান চমকে ওঠলো আবার তাকালো তার দিকে।
আরশি তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান ইতস্তত বোধ করলো।
কি হলো হাত ধরেছো কেনো? তুমি ঘুমাওনি?

ঘুমালে তো আর এই অনুভূতি টা পেতাম না। (নরম কন্ঠে)
কিসের অনুভূতি?

কিছুনা। বলেই আরশি লজ্জা পেলো।

আরিয়ান ও লজ্জা পেলো ধরা পরে গিয়ে।
আর একটু থাকোনা আমার কাছে। (অনুরুরধ সুরে)
আরিয়ান আরশির এমন আকুতিভরা কথা ফিরিয়ে দিতে পারলো না। আরশির হাতটা একহাত দিয়ে ধরে বিছানায় তার মাথার কাছে বোসলো।

আরিয়ান তার হাত শক্ত করে ধরে আছে আরশিও ধরে আছে দুই জোরা হাত এক হয়ে আছে।
আরশি যে ভরসা চাচ্ছে সে সেটা পেয়ে গেছে।

দুজনেই বেশকিছুক্ষন নিরবতায় কাটালো।
নীরবতা ভেঙে আরশি বললো- আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর কক্ষনো না জানিয়ে কিছু করবোনা। কোনো বড় বড় ডিসিশন তোমায় ছাড়া নিবো না প্রমিস।

বাচ্চা দের মতো করে কথাগুলো বলে আরিয়ানের দিকে তাকালো আরশি।
আরিয়ান একটা নিশ্বাস ফেলে বললো- তোমার ভুল নেই। আমিই বেশি রিয়াক্ট করে ফেলেছি ওদের রাগটা তোমার ওপর ঝেরেছি। তাই বলে এইসব বোকামো করার কোনো মানে হয়। আর ক

তাহলে আমায় ভালবাসতে হবে অনেক অনেক। আমার ভালবাসা চাই।
হুম পাবে সব বিয়েটা হোক।

কেনো এখন বাসোনা?

শান্ত কন্ঠে বললো- সেটা বুঝে নাও।
আরশি চোখ সরিয়ে নিলো। আরিয়ান বুঝতে পারলো মেয়েটার অভীমান হয়েছে হবেইত হওয়ারই তো কথা। মেয়ে হয়ে যেটা ও সহজেই বার বার বলে ফেলে সেটা তো আমি ওকে বলিনা। আমারই তো উচিত ওকে ওর পাওনাটা দেওয়া। ইনশাআল্লাহ দিব বিয়েটা হোক।

আরশি চোখ নামিয়ে নিয়েছে। মলিন মুখটার দিকে তাকিয়ে আরিয়ান এর খুব মায়া হলো। বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো। আরশির মুখের দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলে ওঠলো-

তোমাকে আমি কতটা ভালবাসি সেটা কি তুমি জান? জান না, তাই না?

আমিও জানি না। ভালবাসা যদি তরল পানির মত কোনো বস্তু হত তাহলে সেই ভালবাসায় সমস্ত পৃথিবী তলিয়ে যেত। এমনকি হিমালয় পর্বতও।

আরশির হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো চোখ মেলে তাকালো আরিয়ানের দিকে। আরিয়ান ও চোখ রাখলো আরশির চোখে। চোখে চোখে কথা হলো বেশ খানিকটা সময়।

আরিয়ান ও এইভাবে ভালবাসার কথা বলতে পারে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশি। বেশকিছু ক্ষন চললো পিনপতন নিরবতা। দুজনেই হারিয়ে গেছে দুজনের মনের গভীরে। বুঝে নিচ্ছে একে অপরের ভালবাসার গভীরতা।
আয়েশা বেগম আরশির জামা কাপাড় রুমে দেওয়ার জন্য দরজা অবদি এসে থমকে দাঁড়ালো।

আরিয়ান আরশিকে এতোটা কাছে দেখে বেশ অবাক হলো। দুজনের হাতও একসাথে। মুচকি হেসে সে চলে গেলো।

হঠাৎ ই আরশির খুব কাশি শুরু হয়ে গেলো আরিয়ান চট করে ওঠে আরশিকে ধরে আধসোয়া অবস্থায় বসিয়ে দিলো।
দেখেছোতো কতটা ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলেছো।

আরশি চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

আরিয়ান পাশ থেকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো- খেয়ে নাও।
আরশিতো একটা ঘোরে চলে গেছে। এগুলোকি স্বপ্ন না সত্যি?

তার ঘোর কাটলো আরিয়ানের ধমকে।

কিহলো নাও।

চমকে ওঠে পানিটা নিয়ে খেয়ে নিলো। আরিয়ান তাকে রেষ্ট নিতে বলে বেরিয়ে গেলো। আরশি তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।

রাতে আরশিকে খাওয়ানো, ওষুধ খাওয়ানোর দায়িত্ব পড়লো আরিয়ানের। আসমা বেগমের কড়া আদেশ মানতে বাধ্য। আয়েশা বেগম শুধু মিটি মিটি হাসছে। আরিয়ান কি আর করবে বাধ্য ছেলের মতো খাবাড় নিয়ে চলে গেলো আরশির কাছে। রুমে ঢুকেই অবন্তীকে দেখতে পেলো। মেয়েটা আবার আগের মতো প্রাণোচ্ছল হয়ে গেছে।

মুখ দেখেই বুঝা যায় সে কতোটা সুখী। আমিওতো চেয়ে ছিলাম ওকে সুখী দেখতে। কিন্তু এইভাবে না ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

অবন্তী আরিয়ানকে দেখে ভয়ে ঢোক গিললো। আরিয়ান সবটা জানে তাই তার সামনে লজ্জা ভয় দুটোয় হচ্ছে অবন্তীর।

আরশি ওপাশ হয়ে সুয়ে আছে জ্বরের ঘোরে আছে।

আরিয়ান রুমে এসে বললো-আরশির খাবাড়।

আচ্ছা আমি খাওয়িয়ে দিবো রেখে যাও।
আরিয়ান কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছে না ছোটো বোনকে তো আর বলা যায় না যে আমি খাওয়িয়ে দিব আমার হবু বউকে৷ আরিয়ান কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছেনা।

অবন্তীর ও ব্যাপারটা গোলমেলে মনে হচ্ছে।
না তুই না আজকে ও খাওয়াবে আমার মেয়েকে। এখন থেকে দায়িত্ব নেওয়া শিখুক। কড়া গলায় কথা গুলো বলে ওঠলেন আসমা বেগম। আরিয়ান, অবন্তী দুজনই দরজার দিকে তাকালো।

আরিয়ান লজ্জা পেলো ছোটো বোনের সামনে। অবন্তী বড় বড় চোখ করে মিটিমিটি হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আরিয়ান লজ্জাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে খাবাড়টা টেবিল এ রাখলো।

আরশির মাথার কাছে গিয়ে আলতো করে কাধে হাত রেখে ডাকলো। ঘুমন্ত আরশি ওপাশ ফিরে এপাশ হয়ে ঘুমু ঘুমু চোখে তাকালো।


পর্ব ২০

আরিয়ান কে দেখে একটা হাসি দিলো সেই হাসিতেই আটকে গেলো আরিয়ান৷ ঘুমন্ত মুখে হাসি বুঝি এতো সুন্দর লাগে। বুকে টান পড়া হাসি। একধ্যানে তাকিয়ে রইলো আরশির মুখের দিকে৷ আরশি ভালো ভাবে ঘুমটা ছাড়িয়ে ওঠে বোসলো। আরশির ওঠে বসাতে ঘোর কাটলো আরিয়ানের।

সে এদিক সেদিক তাকিয়ে টেবিল থেকে খাবাড় নিয়ে পাশে বোসলো। ভাত মাখতে মাখতে জিগ্যেস করলো – এখন কেমন লাগছে?

আগের থেকে একটু ভালো।
হঠাৎ তুমি খাবাড় নিয়ে। আমি স্বপ্ন দেখছিনাতো।

আরিয়ান কিছু বললো না। সে খাবার মেখে আরশির সামনে ধরলো।
হা করো।
আরশি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে এটা কি করে সম্ভব।

কিহলো?
আরশি একধ্যানে তাকিয়েই হা করলো আরিয়ান মুখে খাবাড় ঢুকিয়ে দিলো।
কিহলো খাচ্ছনা কেনো।

হুম খাই।
হঠাৎ ই ভীষম খেলো আরশি। নাক মুখ খিচে ওঠলো।

আরিয়ান তারাতারি প্লেট রেখে পানি এগিয়ে দিলো।
আরশির চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

আরিয়ান রেগে গেলো-

নাও পানিটা খাও৷ ধমকের সুরে বলে ওঠলো। আরশি তারাতারি পানি খেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে নিলো।
আরিয়ান আর খাওয়ানোর সাহস পেলো না। রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠলো-

এই জন্যেই তোমার কাছে আসতে ইচ্ছে করেনা। আমি কি ভুত যে এইভাবে ভুত দেখার মতো দেখতে হবে৷ আর আমি কি বিষ খাওয়াচ্ছি যে গিলতে সমস্যা হচ্ছে। এতো জ্বালাচ্ছো কেনো আমাকে। আমি নিজের ইচ্ছায় আসিনি। ফুপি জোর করে পাঠিয়েছে। ভুল হয়ে গেছে আসাটা আমার। খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিও যাচ্ছি আমি৷ একদমে কথা গুলো বলে থামলো আরিয়ান। আরশির চোখ চিকচিক করছে।

এই মানুষ টা কি আবেগ অনুভূতি কিচ্ছু বুঝেনা। ( মনে মনে)
সরি। মাথা নিচু করে।

আরিয়ানের রাগটা পানি হয়ে গেলো৷ আবারো কি বেশি বলে ফেললাম ও তো অসুস্থ কাজ টা কি ঠিক করলাম।
আর কিছু না ভেবে খাবারটা মেখে খাওয়িয়ে দিলো আরশিকে। আরশিও লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে নিলো। নয়তো আবার এক গাদা ঝাড়ি খেতে হবে ভেবেই খেয়ে নিলো। তারপর আরশিকে ওষুধ গুলো খাওয়িয়ে দিয়ে। কপালে হাত দিয়ে জর দেখলো আগের থেকে কমেছে বেশ। শুয়ে পড়ো।

আরশি মাথা নাড়িয়ে হুম বললো। আরিয়ান চলে গেলো।

আরশি তো আজ খুব খুশি ইশ জ্বর হলে যদি এই মানুষ টার থেকে এতো আদর, এতো যত্ন পাওয়া যায় তাহলে সারাজীবন জ্বরে ভুগতেও আমার সমস্যা নেই ভেবেই মুচকি হেসে শুয়ে পড়লো আরশি।

অবন্তী তো তার ভাইকে দেখে আজ পুরোই অবাক। যাক অবশেষে ভাই আমার প্রেমে পড়লো। ভেবে মিটি মিটি হাসতে হাসতে নিজের রুমে গিয়ে আরশিকে বেশ কিছুক্ষন জ্বালালো৷ তারপর দুজনেই শুয়ে গল্প করতে লাগলো।

রাত নয়টার দিকে রিদ তার নিজের বাড়ী ফিরলো হইল চেয়ারে করে তার বাবা রিজওয়ান চৌধুরীকে সাথে নিয়ে পাশে রয়েছে একজন এডভোকেড, তাহসান, রায়হান, কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দিলো কাজের লোক। রিদের সাথে এতো মানুষ আবার পুলিশের ড্রেসআপে একজন দেখে কাজের লোকটি ভরকে গেলো ভয়ে ভয়ে সরে দাঁড়ালো। রিদ বাঁকা হেসে বাবাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো পিছনে সবাই ঢুকলো ভিতরে।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে শায়লা বেগম বললেন কে এসেছে রে (রিদের সৎ মা)
বলেই নিচে তাকাতে বেশ ঘাবরে গেলো৷ এমনিতেই বেশকদিন আতঙ্কে আছে যা নিয়ে ছিলো সেটাই সত্যি হলো। তার শরীর ভায়ে কাঁপতে লাগলো অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নামতে নামতে বললো একি গো তুমি।

রীদ তার বাবাকে পাশে বসিয়ে সবাই মিলে সোফায় বসে কাগজ পাতি ঠিক করছিলো। শায়লা বেগমের কথায় সবাই বিরক্তি নিয়ে সেদিকে তাকালো।

শায়লা বেগম ছুটে রিজওয়ান চৌধুরীর সামনে আসলো তার গালে হাত দিয়ে স্পর্শ করতেই সে হাত ছুটিয়ে দিলো। মুখ ও অন্যদিক ঘুরালো। পরিস্থিতি অন্যরকম আভাস পেয়ে সে ন্যাকা কান্না জুরে দিলো৷ কতো চেষ্টা করেছি দেশে ফিরিয়ে আনার কিন্তু পারিনি। রিদ বাবাকে যে বলবো সেও নিখোঁজ ছিলো। বলেই কান্না জুরে দিলো। রিজওয়ান চৌধুরী ঘৃনার চোখে একবার তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।

শায়লা বেগম তার নাটক দেখাতেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। কই গেলি রূপম দেখ কে এসেছে তোর বাবা এসেছে।
রূপম ছুটে ড্রয়িং রুমে আসলো বাবাকে দেখে তার কাছে এসে অসহায় ভঙ্গিতে বললো- কেমন আছো ডেড।
সে তার থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিলো।

সে যে কথা বলতে পারে না প্যারালাইসেস এর রোগী সে।

রিদের মাথায় রক্ত ওঠে গেছে মা ছেলের অভিনয় দেখে। তাই সে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো- যাকে আমেরিকা তে একা ফেলে চলে এসেছিলে তোমরা তার প্রতি এতো দরদ দেখাতে হবে না।

শায়লা বেগম রিদের কাছে গিয়ে বলে ওঠলেন – কি বোলছো বাবা তোমার বাবাকে রেখে আসবো কেনো তোমার কথাতেই তো আমি এসেছিলাম। তোমার বাবার ও আসার কথা ছিলো। কিন্তু যোগাযোগ করতে পারিনি তাই দেশেও আনতে পারিনি।

রূপম মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। উপস্থিত সবাই তাদের কথা শুনছে।
ওহ তাই নাকি। তাহলে কিছু ভিডিও দেখাই নাকি।

রিদ আমেরিকার বাসার সিসি ক্যামেরা থেকে বেশ কিছু ভিডিও সংগ্রহ করেছে তার মধ্যে একটা অন করলো-
তুমি এটা কি করে করতে পারলে তোমার সব সম্পওি বড় ছেলের নামে করে দিলে। তাহলে আমার রূপমের কি হবে? ( শায়লা বেগম)

এসব কি বোলছো রিদ কে আমি ও জন্মানোর পরেই সব লিখে দিয়েছি। তখন তুমি বা রূপম আমার জীবনে ছিলে না। কিন্তু রূপমকে আমি আলাদা বাড়ী গাড়ী সব দিয়েছি শুধু পুরো বিজনেসটা দেইনি৷ আর তাছাড়া পুরো বিজনেসটা রিদ এর নামে থাকলেও ও সেটা একা ভোগ করবে না। রূপম ও থাকবে সাথে৷
ওও আমার ছেলে তোমার ছেলের চাকর হয়ে থাকবে।

এইসব কি বলছো। রিদ কে কি তোমার তেমন মনে হয়৷ আর তোমার ছেলের যা হাভভাব ওর নামে সব দিলে একমাসেই সব লুটাবে৷ আমি যা করেছি ভেবে চিন্তেই করেছি আমার পর আমার পরিবারে যাকে ভরসা করি সেটা হচ্ছে রিদ।
বাহ ভালোই চাল চেলেছো বাপ ছেলে মিলে। আমার ছেলেটাকে ঠকিয়ে।

কি বোলছো শায়লা। তুমি এতো লোভী মনোভাব পোষন করছো আমি মানতে পারছি না ছি।
শায়ল বেগম ভয়ে ঘাবড়ে গেলো পুরো ভিডিওটা দেখানো হলে যে তার পর্দা ফাস হয়ে যাবে। সে চিৎকার দিয়ে ওঠলো এগুলো মিথ্যা৷

রিজওয়ান চৌধুরী বাঁকা হাসলো শায়লা বেগমের ভয় দেখে। রূপম ও অবাক চোখে দেখছে। কারন এই ঘটনা সে জানে না ভিডিওতে যা দেখছে তা তাকে তার মা জানায় নি।

ভিডিওটাতে ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছে রিজওয়ান চৌধুরী তর্ক করতে করতে কোর্ট খুলতে খুলতে উপরে যাচ্ছেন। শায়লা বেগম পিছন পিছন ঝগরা করতে করতে যাচ্ছে। সিড়ি দিয়ে উপরে ওঠছে তর্কের এক সময় শায়লা বেগম তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন সিঁড়ি থেকে। রিজওয়ান চৌধুরীর মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে নিচে সেও পড়ে থাকেন একসময় অজ্ঞান হয়ে যান৷।

শায়লা বেগম কি বলবে কি করবে বুঝে ওঠতে না পেড়ে রিদকে থাপ্পর দেওয়ার জন্য হাত তোলেন তার আগেই রিদ তার হাত ধরে ফেলে।

মোটেও এই ভুল করবেন না৷ রাফসান চৌধুরীর গায়ে হাত তোলা এতো সহজ না৷ যে ভুল করেছেন তার শাস্তিইতো নিতে পারবেন না এই বয়সে আবার গায়ে হাত তুলতে আসেন এই হাত আমি ভেঙে মুচরে দিতে পারি।
রূপম বলে ওঠলো- ছি মা ছি। তুমি এতো নিচ।

শায়লা বেগম অবাক চোখে তাকান।
তুমি আমার বাবাকে ছি ভাবতে পারছি না।
ধমকের সুরে – তুই আমার ছেলে হয়ে আমাকে ছি বলছিস। আমিতো এইসব তোর জন্যেই করেছি।
রিদ হাত ছেড়ে দিলো।

তাহসান এই মহিলাকে আমার চোখের সামন থেকে নিয়ে যা।
শায়লা বেগম ভয়ে পিছু পা হলো। রূপম অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একদিকে মা আরেকদিকে বাবা। রিদকে সে সহ্য করতে না পারলেও বাবাকে সে ভালোবাসে।

রূপম গিয়ে রিদের হাতজোর করে ক্ষমা চাইলো৷ কিন্তু রিদ কোনো গুরুত্ব দিলো না। রূপম বললো আমার মা কে আর আমাকে নিয়ে যান অফিসার।

রিদ কঠোর ভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। শায়লা বেগম রূপমকে এসে কষে একটা থাপ্পর দিলেন। তুই আমার ছেলে হয়ে মানুষের পা ধরিস৷

ব্যাস মা ব্যাস তোমাকে নিজের মা বলতেও ঘৃনা হচ্ছে আমার। যে কিনা সম্পওির লোভে নিজের স্বামী কেও ছাড়ে না সে কতো টা নীচ হতে পারে আমার বোঝা শেষ। আমি যে ভুল করেছি তার শাস্তি পাবোই। আর তুমিও পাবে।
রিদ তাকালো রূপমের দিকে রূপম গিয়ে রিদকে জরিয়ে ধরলো। ভাই আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি মায়ের কথায় অনেক পাপ করেছি। তোমার মতো ভাই কে খুনের ষড়যন্ত্র করেছি৷ আমাকে যা শাস্তি দেওয়ার দাও।

রিদ রূপমকে ছাড়িয়ে দিলো৷ তাহসান তার পুলিশসৈন্যকে নিয়ে শায়লা বেগম আর রূপমকে নিয়ে চলে গেলেন।
যাবতীয় কাগজ পএ রিদ বুঝে নিয়ে সবাইকে বিদায় দিলেন৷
রিদ তার বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখে পানি।

বাবা কেদোনা বলেই হাটুগেরে বাবার সামনে বসলো। বাবার হাত জোরা নিজের হাতে আবদ্ধ করে বললো- বাবা শেষ সময় রূপমের মধ্যে অনুতাপ দেখলেও ওই মহিলার মধ্যে দেখিনি৷ জানি বাবা রূপম তোমার ছেলে সে কখনোই খারাপ হতে পারে না মায়ের জন্য যতোটা অধপতন হয়েছে সেটা ঠিক হয়ে যাবে কয়েকমাসেই৷

তোমাকে তোমার ছেলে ফিরিয়ে দিতে পারবো কিন্তু ঐ মহিলাকে দিতে পারবো কিনা জানিনা৷ রিজওয়ান চৌধুরী ছেলের হাত হালকা চেপে ধরলো মুখে তার হালকা হাসি। রিদ বাবাকে নিয়ে উপরে চলে গেলো।

পরের দিন যাবতীয় কাজ কমপ্লিট করে মমতা চাচীর খোঁজে বেরিয়ে পড়লো রিদ৷ অনেক কষ্টে তাকে খুঁজে পেলো৷ আবার নিজের বাড়ি নিয়ে আসলো।

বাড়িটা আবার সেই আগের মতো করে গুছাতে শুরু করলো। রায়হান ও হাতে হাতে সব করে দিলো। একদিনে রিজওয়ান চৌধুরীও অনেকটা সুস্থতা বোধ করছে৷

সব গুছিয়ে নিতে তিনদিন কেটে গেলো এই তিন দিনে রিদের সাথে অবন্তীর কোনো যোগাযোগ হয়নি৷ অবন্তী অনেক মেসেজ করেছে কোনো রেসপন্স পায়নি। অবন্তীর আবার মন খারাপ হয়ে গেলো।

আরশির জ্বর কমে গেছে সে এখন সুস্থ। আরিয়ানকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তার সময় কেটে যায়। তবে কদিন ধরে তাকে কাছে পায়নি তাই প্ল্যান করেছে আজ চুপি চুপি তার রুমে যাবে।

রাত নয়টার দিকে আরশি আরিয়ানের রুমে ওকি দিয়ে দেখলো সে বই পড়ায় ব্যস্ত। নাহ এখন যাওয়া যাবে না রেগে গিয়ে আবার ঝাড়ি দিবে৷ কিন্তু এখন কি করবো আমি ঘুমও আসবে না৷ ভাবতে লাগলো আচ্ছা অবন্তীর সাথে গল্প করি গিয়ে।

রুমে এসে দেখলো মনমরা হয়ে শুয়ে আছে।

কিরে কি হয়েছে তোর?
কিছুনা।

এই বল কি হয়েছে?
কী আর হবে তোমার মতো তো আর সুখী নই আমি। বলেই মুখ ফুলালো।

এ মা আমি আবার সুখী হলাম কীভাবে রে সুখী তো তুই।
মোটেই না। তুমি যখন ইচ্ছা তোমার ভালবাসার মানুষ কে দেখতে পারে, কথা বলতে পারো। আর আমি কি হতভাগী বলেই গাল ফুলিয়ে রইলো।

ওওও এই ব্যাপার আহারে। বোন আমার স্বামী শোকে পাগল প্রায় এই না পাগলি প্রায় বলেই হিহি করে হেসে ওঠলো৷ অবন্তী আপু বলেই যেই যাবটে ধরতে যাবে সাথে সাথে ফোন বেজে ওঠলো তার।

আরশি হাসতে হাসতে লুটিপুটি খাচ্ছে বিছানায় এইদিকে ফোনের স্ক্রিনে রিদের নাম্বার দেখেই অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে গেছে তার হাত কাঁপতে শুরু করেছে৷ আরশি ভ্রু কুচকে বললো – কী হলো আবার?

অবন্তী মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। ফোন বাজতে বাজতে কেটে গেলো৷ আবার বাজতে শুরু করলো। পেছন থেকে ওকি মেরে আরশি নাম্বার দেখে। খিলখিল করে হেসে ওঠলো৷ আহারে বনু এইতো ফোন করেছে। তুমার মনের ডাকে সারা পেয়েছো বেবি কথা বলো আমি যাই৷ আবার আমার সামনে লজ্জা পাবে।

হাজার হলেও আপুভাবী বলে কথা বলেই চোখ মেরে চলে গেলো৷ অবন্তী মিটিমিটি হেসে আরশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে লজ্জামাখা মুখ করে ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিফ করলো।
ফোন কানে ধরতেই ওপাশ থেকে বলে ওঠলো- কি..আয়না সুন্দরী… কেমন আছো?

অবন্তীর হৃদয় স্পন্দন বেড়ে গেলো। অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে গেলো। যেনো শুকনো গাছের গোড়ায় একটু পানি পড়লো। ঘোর লেগে গেলো তার বার বার স্মরন হতে লাগলো আয়না সুন্দরী কেমন আছো?

বেশকিছুক্ষন নীরব থাকার পর আবারো ভেসে এলো কন্ঠ টা।
কি..কোথায় হারিয়ে গেলেন হুম। লজ্জায় তো একেবারে লাল হয়ে গেছেন৷
অবন্তী চমকে ওঠলো কি করে বুঝলো।

রিদ হোহো করে হেসে ওঠলো। হায়রে পাগলী কি করে বুঝলাম এখনো বোঝোনা।
আচ্ছা আর লজ্জা পেতে হবে না এতো বলোতো কেমন আছো?

ভালো, আপনি?
আমিও। ভালো। তবে এখন আরো অনেক ভালো আছি।
আমার পাগলীটা আমাকে কতোটা মিস করেছে৷ এইকদিনে আর এমন হবে না। সবটা আমি সামলে নিয়েছি অন্তী সব ঠিক হয়ে যাবে এখন।

হুম।
বেশ কিছুক্ষন নীরবতা….

কি হলো…
কিছুনা…
এখনো এতো লজ্জা কোথায় থেকে আসে হুম।
জানিনা….

এতো লজ্জা এতোকিছুর পর ও লজ্জা ভাঙলো না তোমার। আর একবার কাছে পাই লজ্জা যদি না ভাঙিয়ে দিয়েছি।

কি বলছেন। অবন্তীর নিশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে। লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে। তার ঘন নিশ্বাসে রিদের রিদের কানে শীতল শিহরন বয়ে যাচ্ছে।
এই অন্তী।

হুম।
চলে আসো আমার কাছে।

নাহ…
কেনো?

এমনিহ…
আমি যদি চাই এখনি নিয়ে আসতে পারবো তোমাকে। কিন্তু ভালোবাসি যে. ঐভাবে আনতে চাই না।
হুম…

অন্তী…
এই কয়েকটা দিন এক সেকেন্ডের জন্যও ভুলতে পারিনি তোমায়। তোমার শরীরের ঘ্রান বার বার নিতে ইচ্ছে করছিলো।

অবন্তীর হার্টবিট বেড়ে গেলো। তার নিশ্বাসের শব্দ রিদের মনের অস্থিরতা আরো বাড়িয়ে দিলো।
অন্তী নেশা নেশা লেগে গেছে আমার। আমি তোমার ঐ নেশায় আসক্ত হতে চাই।
রাখছি আমি।

এই একদমই না কাটবেনা। আচ্ছা যাও আর বলবো না এসব। কিন্তু আমি জানি যতোটা আমার মন চাই চাই করছে৷ তার থেকেও তোমার মন বেশী কাছে চাইছে আমাকে।

মোটেই না।

তাই… সেটা তো পড়েই বুঝবো আর বুঝাবো।
অবন্তী আর কিছু বলতে পারলো না বেশ নীরবতা কেটে গেলো।

নীরবতা ভেঙে রিদই আবার বলতে শুরু করলো৷ অবন্তী ও তার সাথে কথার ঝুড়ি খুলে বসলো। এভাবেই চলতে থাকলো তাদের কোথোপোকোথন।

আরশি ছাদে গিয়ে পাইচারি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো। নাহ আরেকবার দেখে আসি এইবার দিয়ে আটবার হবে সে আরিয়ানের রুমে ওকি মারতে যাচ্ছে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো দরজাটা আস্তে করে ঠেলতে গিয়ে হুরমুরিয়ে এসে রুমের ভেতরে পড়ে গেলো। আর আহ করে ওঠলো।

আরিয়ান থমকে গেলো। দরজা খোলার সাথে সাথে আরশি এসে পড়ে গেলো তারমানে কি আরশি ওকি দিচ্ছিলো আগে থেকেই। ওহ আল্লাহ এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা আমি।

ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো আরশির কান্না জরিত গলায়।

আমাকে ওঠাও ওঠতে পারছিনা তো। তাকিয়ে দেখে আরশি তার হাত এগিয়ে দিয়েছে৷
আরিয়ান ও একহাত দিয়ে তার হাত ধরেই একটানে ওঠিয়ে ফেললো।

লেগেছে কি অনেক।
আরশি ঠোঁট ফুলিয়ে উওর দিলো না….

এখানে কি করছিলে?
আরশি আমতা আমতা করতে করতে বললো – ঘুম আসছিলো না তাই এসেছি।
ঘুম আসছেনা এখানে কি তাতে।

আরশি চুপ করে গেলো কিছুনা। বলেই আরিয়ানের হাত ধরে টান দিয়ে বললো চলো ছাদে যাই।
সে একটুও নড়লো না। এতো রাতে ছাদে কেনো?
চলো না যাই। গল্প করবো।

আমি ঘুমাবো। ঘুম পাচ্ছে বলে হাত ছাড়িয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। আরশি ভ্রু কুচকে তাকালো। দরজা খুলে তো বাইরেই যেতো। তাহলে কি আমাকে দেখে ঘুমের ভান করছে। আচ্ছা দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।

আরশিও আরিয়ানের বিছানায় গিয়ে তার পাশে শুয়ে পড়লো। আরিয়ান ঝট করে ওঠে বোসলো।
এই মাথা খারাপ হয়ে গেছে না কি। ওঠো আমাকে ঘুমাতে দাও। আমার অফিস আছে সকালে।

আরশি ও ওঠে বোসলো। আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।

আরিয়ান বড় বড় করে তাকালো। এই মেয়ের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি।

আরশি আমাকে রাগিয়ে দিও না ভালোভাবে বলছি রুমে গিয়ে ঘুমাও।

না আমি যাবোনা বলেই আরিয়ানকে জরিয়ে ধরলো। আরিয়ান স্তব্ধ হয়ে রইলো। এমন করছে কেনো এতো পাগলামি তো ও করে না। এইভাবে আমার কাছে আসলে আমিও যে নিজের ওপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবো।

বিয়ে ওবদি তো ধৈর্য ধরতেই হবে। খুব কাছে পেতে হলেতো একটু কষ্ট করতেই হবে সেটা কি এই মেয়ে বুঝে না।

আরশিকে ধীর গলায় ডাকলো আরিয়ান। তার মাথায় আলতো করে হাত দিয়ে।

আরশি আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। আরিয়ান আর নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারলো না। সেও পরম আবেশে বুকে জরিয়ে নিলো আরশিকে।

কি হয়েছে বলোতো?

আরশি চোখ বন্ধ করেই বলে ওঠলো- থাকতে পারছিনা আমি তোমার বুকের এই শব্দটা শুনার জন্য মনটা অস্থিরতায় ভুগছিলো। কেনো দূরে দূরে থাকো কেনো একটু কাছে টেনে নাও না আমায়। আমি যে আর পারছিনা৷ এই কদিনে সামনে থেকে থেকে আরো বেশী দূর্বল হয়ে পড়েছি৷ দূরে থাকলে এতোটা অবুঝ হই না আমি। প্লিজ আমায় একটু ভালবাসা দাও না।
আরশির এমন আবেদনময়ী অভিযোগ আরিয়ানের বুকে ঝড় তুলে দিলো। এই মেয়েটা তার সুপ্ত প্রেম আর সুপ্ত প্রেম রাখবে না। উন্মুক্ত করে দিতে চাইছে তার ভালবাসা তার প্রেমকে।

আরিয়ানে পুরো শরীর পুরো মনে ভালবাসার এক শিহরন বয়ে যাচ্ছে খুব কাছে টানছে আরশিকে। কোনোভাবেই সে আর নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারছেনা৷ আরশির মাথায় আলতো করে একটা চুমু একে দিলো। আরশির পুরো শরীর কেঁপে ওঠলো।

আরিয়ান তার শক্ত বাঁধন আলগা করে আরশির মাথা থেকে মুখ সরিয়ে নিলো। গালে চুমু একে দিলো। আরশি শক্ত করে জরিয়ে নিলো আরিয়ানকে। আরিয়ান তার ভালবাসার ছোয়া দিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

সে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। আররশিকে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো। আরশির মুখে, ঘারে তার স্পর্শ একে দিতে লাগলো। আরশি হঠাৎ ই চোখ দুটো খুলে ফেললো। আরিয়ানকে ছারাতে চেষ্টা করছে না পারছে না।

তার প্রত্যেকটা স্পর্শ বলে দিচ্ছে সে ঘোরের মধ্যে আছে কোনো ভাবেই পারছে না ছাড়াতে।

আরশির মনে অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো। আমি এটা কি করলাম এতোটা আবেগ প্রবন হয়ে গেলাম। আরিয়ান তো দূরেই থাকতে চেয়েছে। আমি কেনো এতোটা দূর্বল হয়ে পড়লাম আর ওকে দূর্বল করে দিলাম।

এ যে ভয়ংকর প্রেমিক হয়ে গেছে এর পাগলামি তো আমার থেকেও দ্বিগুন। আরশি কোনো রকমে আরিয়ানকে ছারাতে পারলেই ছুটে পালাবে৷ কিন্তু আরিয়ান যে পাগলামি করছে যতোই ছুটতে চাইছে ততোই পাগলামি বেড়ে যাচ্ছে। আরিয়ান ধীরে ধীরে আরশির ঘার থেকে মুখ সরিয়ে বুকে এগোতেই আরিয়ানের কাধ বরাবর জোরে একটা কামড় দিয়ে দিলো।

আরিয়ান চোখ দুটো খুলে তাকালো আরশির দিকে আরশির নিশ্বাস দ্রুত গতিতে চলছে। হাঁপিয়ে ওঠেছে সে। আরিয়ান এর ঘোর কাটলো। কাধে ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো।

করুন চোখে তাকালো আরশির দিকে। আরশির হাত তার হাতের নিচে আবদ্ধ। আরিয়ান হাতের বাঁধন আলগা করে দিলো আরশি তারাতারি ওঠে বোসলো। এদিক সেদিক তাকা

আরশি ওড়নাটা শরীরে জরিয়ে দ্রুত বিছানা ছেড়ে ওঠে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। আরিয়ান নিজেকে অপরাধীর মতো দোষারোপ করতে লাগলে এটা কি করে হয়ে গেলো। আমি এমনটা কেনো করে ফেললাম৷ মুখ দেখাবো কি করে ওকে। সারারাত আরিয়ান আর ঘুমাতে পারলো না।

এদিকে আরশি ও আর ঘুমাতে পারলো না। লজ্জা, ভয় সবটাই তাকে আঁকড়ে ধরেছে বার বার আরিয়ানের স্পর্শের কথা মনে করে কেঁপে ওঠছে সে। আর ভয়ে ভয়ে বলছে আর কখনো ওর সামনে যাবো না বিয়ের আগে৷ আজকে যা হলো। আমি ভালবাসা চেয়েছি নদী সমান আর সে আমাকে সমুদ্র সমান ভালবাসা ভেবেই লজ্জায় দুহাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেললো।

সকাল হতে হতেই আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে শুধু তার মা কে বলে বেরিয়ে গেছে। আরশি লজ্জায় রুম থেকেই বেরুতে পারছেনা। অবন্তী তো বুঝতেই পারছেনা হলোটা কি। অনেক বার প্রশ্ন করেছে কিন্তু সে যে মুখে কুলু পেতেছে কিচ্ছু বলছে না। শুধু এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।

আরমান সরকারের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তার মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়াটা মেনে নিতে পারে নি তিনি। তাহসানের বাবা ফোন করে বলেছে ছেলের অন্য রিলেশনশীপ আছে তাকে ছাড়া বিয়ে করবে না। তাই অবন্তীর জীবন সে নষ্ট করতে চায় না।

আয়েশা বেগম, আসমা বেগম চিন্তিত মুখ করে বসে আছে। আরমান সরকার বলে ওঠলেন অন্য পাএ খুজে সাতদিনের মধ্যে বিয়ে দিবো আমার মেয়ের। আর আরিয়ান, অবন্তীর একি দিনে বিয়ে হবে আসমা তুই আরশি মা কে জানিয়ে দিস।


পর্ব ২১ (BANGLA CHOTO NEW GOLPO)

বাবার কথা শুনে অবন্তী থমকে গেলো। তার মনের ভেতর অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো। পরোক্ষনেই ভাবলো রিদ তো সব সামলে নিয়েছে এখনিতো সময় ওকে এখনি জানাতে হবে সবটা। তারাতারি রিদকে ফোন করলো সাথে সাথেই ফোন রিসিফ হলো।
হ্যালো..

আপনি কি ব্যাস্ত?
হুম একটু। বলো কি বলবে?

বাবা বলেছে এক সপ্তাহের মধ্যেই আমার বিয়ে দেবে। সাথে ভাইয়ার ও।
তুমি চিন্তা করো না আমি দেখছি।

হুম।
ওকে রাখছি এখন।
অবন্তীর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। রিদের মধ্যে তেমন আগ্রহ না পেয়ে৷ তাও মনকে বুঝালো কিছু একটা করবেই ও।

আরমান সরকারের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। যতো তারাতারি সম্ভব সে ছেলে মেয়ের বিয়ে দেখে যেতে চায়। ছেলেকে নিয়ে তার চিন্তা না থাকলেও মেয়েকে নিয়ে তার বেশ চিন্তা। তার পরিচিত একজনকে ফোন করলো। সে জানালো তার কাছে ভালো ছেলে আছে চাইলে কালকেই নিয়ে আসবে। সে একটু স্বস্তি পেলো।
এদিকে বিয়ের কথা শুনে আরশি চমকে ওঠলো কাল রাতের কথা মনে পড়েই। ভয়ে ভয়ে বললো- এখনি কেনো আমার পরীক্ষা শেষ হোক।

আসমা বেগম মেয়েকে ধমক দিয়ে বললেন – তেমন বড় অনুষ্ঠান হবেনা। শুধু বিয়েটা হোক আমার ভাইয়ের ইচ্ছায় ভাইয়ের শরীরটা ভালো না। আরশি কি আর করবে মায়ের কথাই মেনে নিলো। আর ভাবতে লাগলো- আরিয়ান কি জানে ওকে তো দেখছি না কোথায়।

ওর রুমে যাওয়ার সাহস টা আর নেই কখনো যাবো না। কিন্তু বিয়ের পর কি হবে। তার ভিতরের সত্তাটাকে তো আমি চিনে ফেলছি ভেবেই লজ্জায় ভয়ে চুপসে গেলো।

ভাবি আরিয়ান কই আসমা বেগম আয়েশা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠলেন।

খুব সকালে বেরিয়ে গেছে অফিসে কাজ আছে হয়তো। আরশি চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। আজ এতো সকালে চলে গেছে কেনো। যাক গে ভালোই হয়েছে ওর সামনে যাওয়া তো দূর ওর আশে পাশেও থাকা যাবে না৷ ভেবেই রুমে চলে গেলো।

এদিকে রিদ ভেবেছিলো এ সপ্তাহেই বিয়ে করবে অবন্তীর বাবার সাথে কথা বলে সবার সম্মতিতে তাদের দ্বিতীয় বার বিয়ে হবে। কিন্তু অফিসে খুব জরুরি কাজ পড়ে গেছে তার বাবার অনুপস্থিতিতে তাকেই যেতে হবে। নয়তো তার বাবার কথার খেলাপ হবে। তাই ছেলে হয়ে বাবার দেওয়া কথা রক্ষা করতে হবে তাকেই৷

রিদ অবন্তীর বাড়ি গিয়ে কলিং বেল বাজাতে লাগলো। দুমিনিট পর আসমা বেগম খুলে দিলেন।
কে আপনি?

আমি রাফসান চৌধুরী। মি.আরমান সরকারের সাথে দেখা করতে এসেছি। আসমা বেগম আরেকটু ভালো করে দেখে নিলো। তার বেশ পছন্দ হলো রাজপুএের মতো ছেলে। মনে মনে ভাবলো ভাই মনে হয় অবন্তীর জন্যই একে ডেকে পাঠিয়েছে। আসো বাবা ভিতরে আসো।

বোসো আমি ভাইকে ডেকে আনছি।

ওকে থ্যাংকিউ। বলেই রিদ বোসলো।
এদিক ওদিক তাকালো। তার আয়না সুন্দরী কে একবার দেখার জন্য। তাকে না জানিয়েই এসেছি দেখে হয়তো সারপ্রাইজ হতো ভেবেই মুচকি হাসলো।

অবন্তী আর আরশি রুমে বসে গল্প করছে এদিকটায় তাদের খেয়াল নেই। তবে অবন্তী খানিকটা চিন্তিত ও বটে।
বাবা তুমি ভিতরে আসো। এসো আমার সাথে। রিদ ওঠে দাঁড়ালো। আসমা বেগমকে অনুসরণ করে পা চালালো। থামলো এক রুমের সামনে। এগিয়ে দেখতে পেলো – অবন্তীর বাবা আধশোয়া হয়ে বসে আছে দেখেই বেঝা যাচ্ছে লোকটা বেশ অসুস্থ।

রিদ গিয়ে সালাম দিলো। আরমান সরকার সালাম ফিরিয়ে বসতে বললো। আসমা বেগম চেয়ার এগিয়ে দিয়ে চা আনতে চলে গেলেন।

আংকেল আমার নাম রাফসান চৌধুরী।

ওও আচ্ছা। কোনো দরকারে এসেছো? বলো কিভাবে সাহায্য করতে পারি।
আসলে আমি বিয়ের কথা বলতে এসেছি।

আরমান সরকার অবাক চোখে তাকালো। ধীর গলায় বললো- বুঝলাম না।

আমি অবন্তী কে ভালবাসি। বিয়ে করতে চাই৷ একদমে বলে ফেললো রিদ৷ আরমান সরকার খানিকটা সোজা হয়ে বোসলো। তারপর জিগ্যাস করলেন – তোমার বাবার নাম?

রিজওনান চৌধুরী।

এবার আরমান সরকার চিনতে পারলেন। আর খুব ভালো করেই বুঝতে পারলেন রিদ কে?
হুম তোমার কথা আমি শুনেছি৷ কিন্তু আশা করিনি তুমি আসবে।

আসলে আংকেল আমি অবন্তী কে খুবই পছন্দ করি। অনেক আগেই আসার কথা ছিলো। কিছু সমস্যার জন্য পারিনি আসতে।

আমার মেয়েও তো তোমাকে পছন্দ করে?

রিদ উওর দিলো -হ্যা।

আরমান সরকার ছেলের সাহস দেখে অবাক। অবশ্য তার মতো ছেলের সাহস থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তার আত্মবিশ্বাস, সাহসীকতায় মুগ্ধ হলেন আরমান সরকার।

আসমা বেগম চা নিয়ে আসলেন। রিদ চা খায় না তারপরও অবন্তীর বাবার সামনে না করতে পারলো না। অবন্তীর জন্য সে সব করতে পারে। তার এই একটাই দূর্বলতা।

চায়ে চুমুক দিচ্ছে আরমান সরকার আর এটা সেটা প্রশ্ন করছে।

রিদ ও চায়ে চুমুও দিয়ে খুবই ইনোসেন্ট ভাবে উওর দিচ্ছে৷ আরমান সরকার তার বাবা মা সম্পর্কে এতোক্ষনে সব ডিটেইলস জেনে নিয়েছে। তার বেশ পছন্দ হলো ছেলেটা কে৷ কিন্তু তার সম্পর্কে বেশ রেকর্ড শুনেছে আগে৷ কিন্তু মেয়ের মুখ চেয়ে সে রাজি হলো। আর এইটুকু বুঝতে পারলো তার মেয়ে সুখেই থাকবে রিদের কাছে।

তাই বিয়ের ডেট ও বলেছে। কিন্তু রিদ বাঁধা দিলো। সে তার সব সমস্যা তাকে বুঝিয়ে বললো। সে বেশকিছুক্ষন চিন্তা ভাবনা করে সম্মতি জানালো। আর বললো – তাহলে ছেলের বিয়েটাই আগে হোক। দুজনেই হেসে দিলো। রিদ ও বিদায় জানালো৷ বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে আসতেই ধাক্কা খেলো অবন্তীর সাথে।

অবন্তী বাবার রুমেই আসছিলো। নাকে ব্যাথা পেয়ে নাকে হাত দিয়ে উপরে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
রিদ ও বাঁকা হেসে ভ্রু নাচালো।

অবন্তী অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। কিরে হা করে কি দেখছিস ছেলেটাকে যেতে দে। আসমা বেগমের কথায় ঘোর কাটলো অবন্তীর। সরে দাঁড়ালো। রিদ ও সবাইকে সালাম দিয়ে চলে গেলো। অবন্তী আর বাবার রুমে গেলো না। তার হৃদস্পন্দন ১০০ গতিতে বেড়ে গেছে। সেই সাথে কৌতুহল হচ্ছে কি হলো না হলো।

আয়েশা বেগম আর আসমা বেগম কে ডেকে পাঠালেন আরমান সরকার। তারা গেলেন অবন্তী দরজার কাছে আরি পেতে দাঁড়িয়ে রইলো।

আরমান সরকার সব কথা বললেন অবন্তীর মনে যেনো খুশির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। আনন্দে তার নাচতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু খুশিটা বেশিক্ষন থাকলো না যখন শুনলো এই সপ্তাহে তাদের বিয়ে হবে না।

শুধু আরিয়ান আর আরশির বিয়েটা হবে। আর বিয়েটা যে রিদই পিছিয়ে দিয়েছে সেটাও শুনলো৷ তার বেশ রাগ হলো অভীমান হলো রাগে গাল ফুলিয়ে রুমে চলে গেলো।

রিদকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে রিসিফ হলো ফোন।
জানতাম আপনি ফোন দিবেন বলুন কি অভিযোগ আছে আপনার।

আপনি একদম চুপ করে থাকবেন৷

কেনো বউ রেগে গেছো কেনো ভাইয়ের বিয়ে ইনজয় করো। তা না করে বরের সাথে ঝামেলা করছো কেনো৷
আপনি এটা কি করলেন৷

কি করেছি। ( দুষ্টমি হাসি হেসে) যা অবন্তী বুঝতে পারলো।

অবন্তী আরো দ্বিগুন রেগে গিয়ে বললো- বিয়েটা পিছিয়ে দিলেন কেনো?

কেনো একবার বিয়েতো করেছোই আবারো করতে ইচ্ছে হচ্ছে? দিনবাসর বুঝি ভালো লাগছেনা? রাতবাসর চাই বুঝি?

অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। আপনি একটা অসভ্য। বলেই ফোন কেটে দিলো।
সাথে সাথেই রিদ আবার ফোন দিলো৷

এই পাগলি, লজ্জাবতী পাগলি শুনো।
না শুনবোনা।

তাহলে এখনি চলে আসবো তোমার কাছে। সবার সামনে গিয়ে বলবো আমরা বিয়ে করেছি আর বাসর করবো আজকেই।

অবন্তী একটু ভয় পেয়ে গেলো৷
আ..আচ্ছা বলুন।
এইতো গুড গার্ল।

অবন্তী একটু মুখ ভেঙচি কাটলো৷

রিদ বললো- রাস্তায় গাড়ী থামিয়ে কথা বলছি। তাই বেশি সময় নেই।
হুম বলুন।

আমার খুব জরুরী কাজ পড়ে গেছে। আর জানোইতো বাবা অসুস্থ। কাজের জন্য বিয়েটা পিছিয়ে দিয়েছি তবে খুব বেশী দিন না৷ তুমি ভাইয়ার বিয়েতে ইনজয় করো একদম মন খারাপ করবে না। আমি যদি শুনি মন খারাপ করেছো তাহলে কিন্তু খবড় আছে।

হয়েছে আর বলতে হবেনা।

রিদ হেসে দিলো। আচ্ছা পাগলি মন খারাপ করোনা খুব তারাতারি নিয়ে আসবো আমার কাছে। যাও এখন ভাইয়ের বিয়ের আয়োজন করো৷ আরশি ভাবীকেও সময় দাও কেমন৷ আমি সময় করে ফোন দিবো৷
ওকে সাবধানে যান।

ওকে।
বাই।

বাই।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে আরিয়ান বাড়ী ফিরেনি। আয়েশা বেগম ফোন করেছিলো কাজের বাহানা দিয়ে কেটে দিয়েছে। এদিকে বিকালেই আসমা বেগম তার বাড়ী চলে গেছেন যেহেতু বিয়েটা তার ভাইয়ের বাড়ীতেই হবে তাই সে তার মেয়ের জন্য গয়না শাড়ী নিতে গিয়েছেন৷ ছোটো করে হোক অনুষ্ঠান তবুওতো তার একমাএ মেয়ের বিয়ে।

সাজগোজে কোনো ত্রুটি রাখবেনা৷ এছাড়া সামনে অবন্তীর ও বিয়ে আছে তাই অনেক কাজ।

তাই সে সব গুছিয়ে আবার চলে আসবে৷ আরশির বাবাও আসবে তার সাথে। তবে আরশির বাবা বলে দিয়েছে বিয়ে ছোটো করে হোক অনুষ্ঠান সে করবেই এখনতো জুলাই মাস ডিসেম্বরে বড় করে অনুষ্ঠান করবে সে৷

রাত আটটা বেজে গেছে আয়েশা বেগম আরমান সরকার কে খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়িয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে আলমারি খুললেন। যতো গয়না আছে সব বের করে অবন্তীর রুমে নিয়ে গেলেন। আরশি আর অবন্তী কে গিয়ে একটা একটা করে পড়ালেন।

দুজনকেই বেশ ভারী ভারী গয়না পড়ালেন। দুজনকেই বেশ লাগছে। আরশি, অবন্তী দুজনই লজ্জা পাচ্ছে। আয়েশা বেগম বেশ কিছুক্ষম গয়না পড়িয়ে দেখে তারপর সব নিয়ে চলে গেলেন৷ যাওয়ার আগে বলে গেলেন শরীরটা ভালো লাগছে না ঘুমিয়ে পড়বো তারাতারি আরিয়ান আসলে তোরা খেতে দিয়ে দিস।

আরশির তো হার্টবিট ১০০গতিতে বেড়ে গেলো। কাল রাতের ঘটনা এখনো সে ভুলেনি। অবন্তী আরশিকে ধাক্কা দিয়ে বললো আপুনি তুই দিয়ে দিস।

না না আমি না তোর ভাই তুই দিবি।

অবন্তী ভ্রু কুচঁকে তাকালো –
কি ব্যাপার ভাইয়ার কাছে যাওয়ার জন্য তো সারাদিন সুযোগ খুঁজো তাহলে আজ কি হলো?
আরশি আমতা আমতা করে বললো কিছুনা আমার শরীর ভালো লাগছে না।

অবন্তী একটু সন্দেহ করলেও আর কিছু বললো না।

কলিং বেল এর শব্দ কানে আসতেই অবন্তী গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ভাইয়ের সামনে এতোদিন আসতে আনইজি ফিল হলেও আজ হচ্ছে না।

আরিয়ান কে তার মা ফোনে সব জানিয়েছে। তাই সে সবটা জানে।

আরিয়ান ভিতরে এসে হাত পা ছেড়ে সোফায় বোসলো। অবন্তী খাবাড়ের জন্য কিচেনে যাবে এমন সময় আরিয়ান ডাকলো- অন্তী?

অবন্তী তাকালো।
ব্যাগে চকলেট আছে।

সাথে সাথে অবন্তীর মুখে হাসি ফুটে ওঠলো।
সত্যি….

হুম….
আজ অনেকদিন পর আরিয়ান তার বোনের জন্য চকলেট এনেছে। রিদের সাথে বিয়ের কথা শুনার পর আরিয়ানের মনটা ভেঙে গিয়েছিলো। বোনের উপর অনেক রাগ হয়েছিলো।

কিন্তি রিদতো সবটা ম্যানেজ করে নিয়েছে। আর তার ছোটো বোনটা না হয় একটা ভুল করেছে সেজন্য তো অনেকদিন সে ভাইয়ের আদর পায়নি। আজ সব রাগের অবসান। কদিন পর তো বোন চলেই যাবে রাগ অভিমান কে জায়গা দেওয়া যাবে না।

অবন্তী চকলেটগুলো নিয়ে খুশিতে টেবিলের ওপর রাখলো।
ভাইয়া ফ্রেশ হও তোমাকে খেতে দেই। মা ঘুমিয়ে গেছে শরীর ভালো না।

হুম।
আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে খেতে বোসলো। আর জিগ্যাস করলো ফুপি খেয়েছে।
ফুপিতো তার বাসায় গেছে। আরিয়ান অবন্তীর দিকে তাকালো।

অবন্তী বললো- তোমাদের বিয়ের জন্যই কিসব দরকারে গেছে কালই এসে পড়বে।
ওহ আচ্ছা।

তোরা খেয়েছিস?

অবন্তী এবার মুচকি হাসি দিলো। তার ভাই যে আরশির খোজ নিচ্ছে সেটা আর বুঝতে বাকি রইলো না তার। এদিকে আরশি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের কথা শুনছিলো। এখন লজ্জা পেয়ে রুমে চলে গেলো।

আরিয়ান খেতে খেতে বললো খেয়ে নে।

তুমি খাও আমি আর আরশি আপু পড়ে খাবো।

আরিয়ান শিওর হলো আরশি খায় নি।
খাওয়া শেষে আরিয়ান বললো- অন্তী।
অবন্তী প্লেট গোছাচ্ছিল।

হুম।
রিদের নাম্বারটা দে তো।
অবন্তী চোখ বড় বড় করে তাকালো। আরিয়ানকে দেখে আবার মাথা নিচু করে নাম্বার টা দিলো।
ভয় নেই এমনি আলাপ করবো। আদরের বোনের স্বামীও তো আদরেরই হবে তাইনা। বলেই মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো। অবন্তীর চোখে পানি চিকচিক করছে।

কতোদিনপর ভাইয়ের আদর পেলো।
সত্যি না জানিয়ে এইভাবে বিয়ে করা ঠিক হয় নি। বাবা জানলে কতো কষ্ট পেতো। বাবার কতো স্বপ্ন আমার বিয়ে নিয়ে। এসব জানলে বাবার মন ভেঙে যেতো বিশ্বাস ওঠে যেতো। ছোটো থেকে কতো আদরে মানুষ করেছে আমায়। তার কলিজার টুকরা আমি। আর আমি কিনা তাকে ছাড়াই এতো বড় ডিসিশন নিয়েছি।

বাবা কখনো মেনে নিতে পারতো না। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আমার আর রিদের বিয়েটা হলে বাবার ইচ্ছা পূরন হবে শান্তি পাবে। অনেক টেনশন দিয়েছি তাদের আর দিতে চাইনা ভালোই ভালোই সবটা যেনো হয় আল্লাহ।
কিরে কোন জগতে চলে গেছিস।

কোন জগতে আর যাবো বাবা তো চায় আমার সুখের সংসার দেখতে সেটা যেনো ভালোয় ভালোয় হয়রে সেটাই ভাবছি।

হুম হবে বনু হবে। চিন্তা করো না একদম।
হুম।

চল আপু খেয়ে নেই।
হুম চল।

দুজনেই খেয়ে রুমে চলে গেলো।

এদিকে আরিয়ানের চোখে ঘুম নেই। আরশি কে সরি বলার দরকার ছিলো। সেটা আর বলা হলো না। সামনেই তো এলো না আর৷ ফোন করবো একটা। হুম তাই করি।

আরিয়ান আরশিকে ফোন করলো। আরশিতো অবাক আরিয়ান তাকে ফোন দিয়েছে৷
কিন্তু কেনো ফোন করলো।

ফোন ধরার সাহস ও পাচ্ছে না। বেজে বেজে কেটে গেলো৷ অবন্তী হালকা ঘুমিয়ে গেছিলো। ফোনের শব্দে ঘুরে তাকালো – কার ফোন ধরছো না কেনো?

কারো না ঘুমা তুই।
আবার বেজে ওঠলো ফোন আরশি ও কেঁপে ওঠলো। অবন্তী অবাক চোখে তাকালো।
কিরে আপু ভাইয়া ফোন দিয়েছে এমন ভয় পাচ্ছিস কেনো।

আরশি তুতলে তুতলে বললো- কই ভয় পাচ্ছি। আমি কথা বলবো না তোর ভাইয়ের সাথে।
অবন্তী ওঠে বোসলো। আবারো ফোন বেজে বেজে কেটে গেলো৷ রাগ করেছিস ভাইয়ার সাথে?
না রাগ করবো কেনো আমার ঘুম পাচ্ছে বলেই শুয়ে চোখ বন্ধ করলো।

অবন্তীর বেশ খটকা লাগলো কিছুতো একটা হয়েছেই কিন্তু কি?

অবন্তী চমকে ওঠলো- তার ফোনও বাজছে হাতে নিয়ে দেখে আরিয়ান কল করেছে। আরশির দিকে তাকালো সে চোখ বন্ধ করেই রেখেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনটা রিসিফ করলো।

অন্তী?
হুম ভাইয়া বলো।
কি করছিস ঘুমাস নি।

না ঘুমাবো আর কি কিছু বলবে।
আরশির ফোন কোথায়?

অবন্তী কি বলবে বুজতে পারছেনা আস্তে করে বললো -এখানেই।
আরশি ফোন ধরছে না কেনো?

অবন্তী আমতা আমতা করে বললো আপু ঘুমিয়ে গেছে।

আরিয়ান বুঝতে পারলো আরশি ঘুমায়নি আর ইচ্ছে করেই ফোন টা ধরে নি।
আচ্ছা ঘুমিয়ে পড় বলেই ফোন কেটে দিলো।

আরিয়ানের খুব রাগ হচ্ছে এরকম করার মানে কি। সরি বলার ও সুযোগ দিবেনা। আবার ফোন ও ধরবেনা। এমন কি হয়েছে দুদিন পর তো বিয়েই। আর যা হয়েছে তার জন্য কি আমাকে শাস্তি দেয় নি। ভেবেই কাঁধে হাত দিলো। এখনো ব্যাথা আর দাগ আছে। কারো সামনে খালি গায়ে গেলেই সমস্যায় পড়বো।

ভেবেই ওঠে দাঁড়ালো। পুরো রুম জুরে পাইচারী করছে আর ভাবছে- আরশি এমন করছে কেনো? এমনতো না যে আমার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়নি। আমাদের মধ্যে ভালবাসা নেই বা আমি জোর করে ওর কাছে গিয়ে কিছু করেছি। তাহলে এমন করার মানে কি দুদিন পর তো বিয়ে। আরিয়ানের মাথায় কিছু ঢুকছেনা খুব রাগ হচ্ছে নিজের ওপর। কেনো একটু কন্ট্রোল করতে পারলো না নিজেকে।

আর যতো যাই হোক ওর তো বুঝা উচিত ছিলো পুরো বিষয় টা কিন্তু ও বুঝল না। আরিয়ান এর ইচ্ছে হচ্ছিলো আরশিকে গিয়ে চিৎকার করে বলুক তোমাকে আমি ছুবো না তো কে ছুবে। এমন করার মানে কি? অনেক কষ্টে নিজের রাগ কন্ট্রোল করলো।

এদিকে অবন্তীর এতো রিকোয়েস্টেও আরশি কথা বলতে রাজি হয় নি।

সারারাত ঘুমাতে পারেনি আরিয়ান। শেষরাতে একটু ঘুমিয়েছে। সকালে ওঠে গোসল করে তয়ালে টা ছাদে মেলতে গেছে আরিয়ান। ছাদে গিয়ে দেখতে পেলো আরশি ফোনে কথা বলছে। তয়ালেটা মেলে দিয়ে আরশির পেছনে দাঁড়ালো। আরশি ফোনে কথা বলেই পিছন ঘুরতেই আরিয়ানকে দেখে চমকে গেলো।

এক ঢোক গিলে আরিয়ান কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই আরিয়ান ওর একহাত ধরে ফেললো। আরশির হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। একটানে আরশিকে সামনে নিয়ে এলো দুকাধে ধরে কঠোর গলায় বললো – এতোবার ফোন দেওয়ার পরেও ফোন ধরোনা এটা কেমন স্বভাব?

আরশি কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছে না এতো শক্ত করে ধরেছে যে যেতেও পারছেনা। আরিয়ানের চোখের দিকে তাকাতেও পারছে না তাই এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।

আরিয়ানের খুব রাগ হলো এতোটা এমন করার মানে হয়। একটা ধমক দিয়ে বললো- তাকাও এদিকে।
আরশি কেঁপে ওঠলো চোখ মেলে তাকালো আরিয়ানের দিকে।

আরিয়ানে চুলগুলো ভেজা সবেমাএ গোসল করে এসেছে আরশি আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব স্নিগ্ধ লাগছে আরিয়ান কে আরশির পুরো শরীর জুরে আলাদা এক শিহরন বয়ে গেলো।

তারপর চোখ গেলো আরিয়ানের কাধে এতোক্ষনে খেয়াল করলো আরিয়ান খালি গায়ে৷ তাই লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকালো। কাঁধে দাগটাও রয়েছে। একটু মায়া হলো।

কি ব্যাপার আরশি কাল কতোবার ফোন দিয়েছি ধরোনি এখনো উওর দিচ্ছো না৷ সমস্যা কি?
কিছুনা যেতে দাও।

আরেকটু চেপে ধরলো কাঁধে।
আরশি আহ করে ওঠলো।

আরিয়ান বুঝতে পারলো বেশ জোরে ধরে ফেলেছে তাই হালকা করে দিলো।
আরশি তাকাও এদিকে।

আরশি লজ্জামাখা মুখ করে তাকালো আরিয়ান চোখের দিকে।

আরিয়ান বললো- সরি সেদিনের জন্য। এটা বলতেই ফোন করেছিলাম। কিন্তু তুমি যেটা করছো এটা ঠিক না। আমি কে আরশি? আর একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো আমি কে আর তুমি কে?

আর শুনো আমার রুমে ছোট একটা ব্যাগ আছে টেবিলের ওপর রাখা নিয়ে নিও। আমি অফিস যাওয়ার পর যেও। আমি থাকলে তো যাওয়া যাবে না খুব বড় ক্ষতি যদি করে ফেলি তোমার।

শেষের কথা গুলো আরিয়ান বেশ অভিমান নিয়েই বললো। আরশিকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো।

আরশির দম টা বন্ধ হওয়ার উপক্রম এতোক্ষন আরিয়ানের সমস্ত নিশ্বাস আরশির মুখের উপর পড়েছে।

তার ও শ্বাসটা ভারী হয়ে আসছিলো। কয়েকবার বড় বড় নিশ্বাস নিলো আরশি। তারপর তার নিজেরই খারাপ লাগলো শেষের কথা গুলো আরশির বুকে লেগেছে একদম৷ সেও বুঝলো আরিয়ান বেশ অভীমান করেছে।

আরিয়ান অফিস যাওয়ার পর আরশি আরিয়ানের রুমে এসে ছোট ব্যাগটা খুললো। দেখতে পেলো অনেকগুলো চকলেট। আরশির মুখটা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠলো। আরিয়ান সত্যি তাকে খুব ভালোবাসে আগে প্রকাশ করেনি এখন প্রকাশ করছে। তবে সেটা তো আমার জন্যই ভেবে একটু ভেংচি কাটলো।

দুদিন হয়ে গেলো আর একটা দিন আছে তারপরেই আরশি আরিয়ানের বিয়ে৷ আসমা বেগম ও এসে পড়েছে আরশির বাবা কাল আসবে। এদিকে সব আয়োজনই কমপ্লিট। কিন্তু এই দুদিন এ আরিয়ান আরশির সাথে কথা বলেনি। ফোন ও করেনি। সামনে পড়লেও এরিয়ে গেছে৷ আরশি বেশ বুঝতে পারলো তার অভিমান হয়েছে।

আরিয়ান কয়েকদিন ছুটি নিয়েছে তাই আজ অফিস যায় নি ঘুমাচ্ছে। আরশি আরিয়ানের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে মনে একটু সাহস নিয়ে আরিয়ানের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়েছে।

আরিয়ান ঘুম থেকে ওঠে চমকে যাবে আর আরশি মনে মনে হাসবে এই প্ল্যান নিয়েই গেছে৷ বাড়ির সবাই কাজে বিজি অবন্তী তার মা কে হেল্প করছে আরশির কোনো কাজে হাত দেওয়া বারন তাই সে সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে৷ তাছাড়া তার হবু বর যে অভিমান করেছে।

এমনিতেই কাছে আসে না তার ওপর সেদিন এসেছিলো আর সে যা করেছে তার পর থেকে আরশি না চাইলে সে যে আর কাছে আসবে না এটা বুঝে গেছে আরশি।

আরশি গুটিশুটি মেরে আরিয়ান কে ছুঁয়ে ছুঁয়ে সুয়ে আছে। আরিয়ানের আরশির স্পর্শ পেয়ে ঘুমটা আলগা হয়ে গেলো। সে টের পেলো কেউ তার খুব কাছে পিছন ফিরে শুতেই আরশির মুখটা ভেসে এলো আরশির চোখ দুটো বন্ধ। আরিয়ান প্রথমে স্বপ্ন ভাবলেও পরে বুঝলে আরশিই।

কিন্তু ও এখানে কেনো চট করে ওঠে পড়লো। আরশি টের পেলো তবু চোখ খুললো না। আরিয়ান দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ছিটকিরি লাগানো। আরিয়ান বুঝলো আরশি আবার তার কাছাকাছি আসতে চাইছে। সেটাতো হবে না আরশি বিয়ে যে পর্যন্ত না হচ্ছে তোমাকে আমি আর স্পর্শ ও করবো না।

আরিয়ান ফ্রেশ হতে চলে গেলো৷ আরশি নিরাশ হয়ে ওঠে বসলো।

আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই আরশি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আরিয়ান পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে এমন সময় আরশি হাত চেপে ধরলো। আরিয়ান রেগে গেলো হাত ছাড়ো।

না ছাড়বোনা। আগে কথা শুনো।
আরশির এমন বাচ্চামি মাখা কথা শুনে আরিয়ানের ঘোর লেগে গেলো।

তারপরও খুব কষ্টে নিজেকে শক্ত করে নিলো। হাত ছাড়িয়ে সোজা দাঁড়ালো আরশির মুখোমুখি কি বলবে বলো গায়ে টাচ করো কেনো?

আরশির খুব অপমান বোধ হলো তারপর ও তার ভুল টা মনে করে আরিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো- সরি।
আরিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো। সরি কেনো?

আসলে আমি সহ্য করতে পারিনি। প্রথম এতো কাছে….
আরশিকে থামিয়ে দিয়ে বললো- এসব অর্থ হীন কথা না বলে যাও এখন। আমার কাজ আছে। বলেই একটা বই হাতে নিয়ে বিছানায় বসতে যাবে এমন সময় –
বই পড়বে আর বোলছো কাজ।
আরিয়ান আবার তাকালে আরশির দিকে। এতো কথা বাড়িও না যাও এখন এখান থেকে।

আরশি মুখ গুমরা করে বললো কেনো যাবো। এখন থেকে তো এটা আমারো রুম হবে যাবো না তুমি যাও বলেই আরশি টপ করে বিছানায় বসে পড়লো।

আরিয়ান বুঝলো এখন এ যাবে না আর আশে পাশে থাকলে আমিও দূর্বল হয়ে পড়বো৷ মেয়েটা সবসময় কাছে এসে মাথা খারাপ করে দিবে। তারপর কিছু হলেই দোষ হবে আমার ভেবেই আরিয়ান পা বাড়ালো বইটা রেখে দরজার কাছে পা ফেলতেই আরশি পেছন পেছন যেতে লাগলো।

এমন করছো কেনো আমিতো একটু কথা বলতে এসেছি দাঁড়াও যেওনা৷ আরিয়ান এবার রেগে গেলো আরশির দিকে ফিরে শক্ত চোখে তাকিয়ে ধমক দিবে তার আগেই আরশি চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলেছে। পিটপিট করছে। আরিয়ান এর রাগ নিমিষেই চলে গেলো৷ একটু হাসলো ধমক দেওয়ার আগেই রেডি হয়ে আছে।

আরশির চোখ দুটো বন্ধ অবস্থাতেই আছে আরিয়ান একটু কাছে গিয়ে হালকা ঝুকলো আরিয়ানের নিশ্বাস আরশির মুখে লাগতেই আরশি চোখ খুলে তাকালো। চোখাচোখি হয়ে গেলো দুজনেরই। আরশির হার্টবিট বেড়ে গেলো।

নিশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে তার আরিয়ান আরশির গাল দুহাতে আলতো করে ধরলো দুজনেই ঘোরে চলে গেছে।
শরীরে বয়ে যাচ্ছে শীতল হাওয়া। আরিয়ান আরশির খুব কাছাকাছি আরশির ঠোঁট কাঁপছে আরিয়ানের নেশা লেগে যাচ্ছে আরশিকে এভাবে দেখে। আরেকটু এগিয়ে গেলো আরিয়ান। আরশি তার চোখ দুটো পরম আবেশে বুজে ফেললো। দুজোড়া ঠোঁট এক হতে গিয়েও হলো না আরিয়ান তার হাত আলগা করে দিলো।

আরশির ভারী নিশ্বাসের শব্দ আরিয়ানের কানে শিহরন বয়ে গেলো। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে আরশিকে ছেড়ে দিলো চলে গেলো রুমের বাইরে। আরশি একটা লম্বা শ্বাস টেনে আরিয়ানের বিছানায় গিয়ে মুখ গুজে শুয়ে পড়লো।

আমার কথা গুলোইতো ভালো করে শুনলো না। তুমি আমার কে সেটা তো তোমাকে বলাই হলো না। তুমিকি জানো না তুমি আমার সেই মানুষ যার স্পর্শ পেলে আমি বারবার শিহরিত হয়ে যাই।

যার একটু ভালবাসা মাখা কথাতেই আমার হার্টবিট ১০০গতির ও বেশি বেড়ে যায়। না ১০০ না ১০০০, না তার থেকেও অনেক বেশী গতিতে বেড়ে যায়। তুমি আমার সেই মানুষ যার একটু অভিমানে বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তুমিইতো আমার জীবনের সব সবটা জুরে শুধু তুমি আর তুমি।
বড্ড ভালবাসি যে৷ সেই ছোট্ট বেলা থেকে তোমার বউ হবো বলে স্বপ্ন দেখছি। সেই ছোট বয়স থেকেইতো স্বামী হিসেবে মেনে এসেছি। তুমি তো বুঝোইনি কখনো আমাকে। আরশি নিচের দিকে মুখ গুজে একমনে কথা বলে যাচ্ছে। আরিয়ান যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার সব কথা শুনছে সেটা কি সে জানে৷

হালকা কেশে ওঠলে আরিয়ান আরশি চমকে ওঠলো৷ আস্তে করে মাথা তুলে তাকিয়ে এতো টা লজ্জা পেলো যে দুহাতে চোখ ঢেকে ফেললো৷ আরিয়ান মুচকি হেসে বই নিয়ে চলে গেলো।

আরশি আস্তে করে তাকিয়ে দেখলো রুম ফাঁকা।

একি কই গেলো৷ চলে গেলো৷ সবতো শুনে নিয়েছে ইশ…কি লজ্জা ভেবেই চোখ দুটো আবার ঢেকে ফেললো।
আজ আরশির বিয়ে খুব সকালে ওঠেছে আরশি আর অবন্তী……..।


পর্ব ২২

সব আয়োজন শেষ। আরশির বাবা আর আরমান সরকার কাজির সাথে বসে কথা বলছে। এদিকে আরশিকে লালটুকটুকে বেনারশী পড়ানো হয়েছে। অবন্তী সাঝের ব্যাপারে খুবই পটু আরশিকে সেই সাজিয়েছে মন ভরে সাজিয়েছে। কোনো ত্রুটি রাখেনি সাজে। পার্লারের সাঝ থেকে কোনো কমতি রাখেনি।

সাজানো শেষে হা করে তাকিয়ে রইলো আয়নার দিকে। বাববাহ আপুনি তোকে যা লাগছে একদম অপ্সরির মতো। রিদ আমাকে আয়না সুন্দরী বলে। আর আজ আমি আয়নায় তো আরো বহুগুন সুন্দরী কে দেখতে পাচ্ছি। আয়নাতে অপ্সরি ঢুকে পড়েছে ওয়াও.. ভাইয়ার তো তোকে দেখে হার্ট এ্যাটাক ই হয়ে যাবে।

আরশি লজ্জা পেলো। সকাল থেকেই সে চুপ হয়ে আছে। বিয়ে মেয়েদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই হয়তো তার অনিভূতিটাই অন্যরকম হচ্ছে।

আরশির কিছু ক্লোজ ফ্রেন্ড ও এসেছে সবাই তার সাথে হাসি তামাশায় ফেটে পড়ছে।

এদিকে আরিয়ানের ও একি অবস্থা একি বাড়িতে বর কোনে আছে। বরের বন্ধু রা একটু পর পর ওকি মেরে যাচ্ছে৷ আরশির বান্ধবী রাও কম কিশে তারাও বেশ জ্বালাচ্ছে বরের বন্ধু আর বর কে। এক বাড়িতে বিয়ে হলে যা হয় আর কি।

পুরো বাড়িটায়ই খুশির আমেজে আছে প্রত্যেকে ভীষন খুশি৷ এই পরিবারকে দেখে সবাই এক ডাকে বলতে পারবে তারা সবাই কতটা সুখী। কোনো দিক দিয়ে কমতি নেই। কিন্তু এই সুখ কি সইবে তাদের? অতিরিক্ত খুশি, অতিরিক্ত সুখ কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস নয় তো আবার। কে জানে কি ঝড় আসতে যাচ্ছে।

আরশি আরিয়ানের বিয়ে কমপ্লিট হলো সবাই দুয়া করলো ওদের জন্য। আরিয়ান আরশির দিকে তাকাতেই পারেনি এতো মানুষের ভীরে। আরশিও আরিয়ানকে বরের সাঝে দেখতে পারেনি দুজনেই নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
এদিকে সবাই মিলে হৈ হুল্লোড় করছে। অবন্তী ও আজ কম সাঝেনি৷

তবে সাঝার আরেকটা উদ্দেশ্য হচ্ছে রিদ কে ভিডিও কলে দেখানো কিন্তু সে এতোই বিজি যে ফোন ধরার টাইম ও তার নেই। তাই কি আর করার আরশির পাশে গিয়ে সকলের সাথে আড্ডায় যোগ দিলো।

তারপর অবন্তীর ডাক পড়লো সাথে কিছু ফ্রেন্ডের ও। তাদের দায়িত্ব বাসর সাজানো সবাই তো চিল্লিয়ে ওঠলো। বেশ হাসি তামাশায় বাসর ঘর সাজালো তারা।

রাত এগারোটায় বাসর ঘরে আরশিকে লম্বা একটা ঘোমটা টেনে দিয়ে সবাই চলে গেলো। বিছানার মাঝখানে বসে আছে আরশি। এদিকে আরিয়ানকে তার বন্ধুরা অনেক রকম ভাবেই জ্বালাচ্ছে যা তার মোটেই পছন্দ হচ্ছে না। আয়েশা বেগমের ডাক পড়াতে সে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
আয়েশা বেগম ছেলেকে অনেক উপদেশ দিলেন। আজ থেকে তাদের নতুন জীবন শুরু।

আরশিকে কোনোভাবে কষ্ট যেনো না দেয়। সারাজীবন আগলে রাখে যেনো। বেশ কিছু ক্ষন উপদেশ দিয়ে সে চলে গেলেন। অবন্তী তার ভাইয়া কে বলে বাসর ঘরে নিয়ে যাবে এমন সময় তার বন্ধু রা আবার তাকে ঘিরে ধরেছে। অবন্তী তাদের ম্যানেজ করে আরিয়ানকে রুমে পাঠিয়ে বাইরে থেকে সিটকিরি দিয়ে তালা মেরে দিলো।

চাবিটাও সে তার কাছেই রাখলো। যাতে কেউ ডিস্টার্ব না করতে পারে তাদের। এমন কাহিনী দেখে আরিয়ানের বন্ধুদের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তাদের সব প্ল্যানে অবন্তী পানি ঢেলে দিলো।

আরিয়ান রুমে গিয়ে সিটকিরি লাগিয়ে দিলো। আরশি বুঝতে পারলো আরিয়ান রুমে এসেছে তার হার্টবিট বেড়ে গেলো। গলা শুখিয়ে গেলো সেদিনের ব্যাপারটা ভাবতেই তার পুরো শরীর শিউরে ওঠলো। আরিয়ান ধীর পায়ে এগোতেই তার ফোন বেজে ওঠলো। ফোন রিসিফ করে হ্যালো বলতেই-
ভাই সব প্ল্যান শেষ? (রাফি)
আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো কিসের প্ল্যান?

তোদের আজ বাসর আর কোনো প্ল্যান করবো না তাই হয়। কিন্তু তোর বোন তো প্ল্যানে একবালতি পানি ঢেলে দিলো।

অবন্তী আবার কি করলো?

কি আর করবে তালা মেরে চাবি নিয়ে চলে গেলো।
কিসের তালা?
সকালেই বুঝবি।

আচ্ছা রাখ।
আরেহ বা এতো অস্থির হয়েছো কেনো ব্রু?

কিসের অস্থির আজবতো?

আরশি বোরিং হয়ে যাচ্ছে বাসর ঘরে ঢুকেই এতো ফোনে কথা বলতে হবে ধূর ঘুম পাচ্ছে।
দোস্ত কি কি করবি এখন?

এই শালা ফোন রাখ বলেই ফোন কেটে দিলো।

আরশিতো অবাক শালা মানে?
আরিয়ান মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলেছে রাফি এতো আবলতাবল কথা বলছিলো। কিন্তু আরশি যে কথা টা শুনে ফেলবে বুঝেনি।

আরিয়ান একবার দরজার দিকে তাকালো সে বেশ বুঝলো অবন্তী কি করেছে। একটা মুচকি হাসি দিয়ে বিছানার পাশের টেবিলে গিয়ে হাত ঘড়ি খুলে রাখলো।

আরশি আস্তে করে নেমে আরিয়ান কে দুপা ধরে সালাম করলো। আরিয়ান তো অবাক৷ এসব কি?
আরশি মাথা নিচু করেই বললো-

মামি বলে দিয়েছে।
আরিয়ান আরশি কে ভালোভাবে দেখলো পা থেকে মাথা অবদি। আরশি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
যে যাই বলুক আর কখনো যেনো এটা না হয়। আরশি চোখ তুলে তাকালো আরিয়ানের দিকে। দুজনেরই চোখাচোখি হয়ে গেলো। আরিয়ান আরশিকে বললো -আমি এটা পছন্দ করিনা। আর বউ এর স্থান পায়ে হয় না বউ এর স্থান হয় বুকের বাম পাশে বুঝলে। আরশির ঘোর লেগে গেলো আরিয়ানের কথায় সে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আরিয়ান আরশির কাধে ধরে তাকে বিছানায় বসালো। সেও বোসলো।

একটা এয়ারিং পকেট থেকে বের করে তার হাতের অনামিকায় পড়িয়ে দিলো। আরশি একমনে তাকিয়ে দেখছে সব। হঠাৎ হাতে ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠলো। আরিয়ান তার হাতে চুমু দিয়ে আবার তার দিকে তাকালো৷ অন্যরকম চাহনী দেখেই আরশি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। তার চোখে আর চোখ রাখতে পারলো না৷

আরিয়ানের তো নেশা ধরে যাচ্ছে। এতো সাজে এই প্রথম আরশিকে দেখছে। লালটুকটুকে শাড়িটায় তার চেহেরায় যেনো হাজার গুন সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। চোখ ফেরাতেই পারছেনা সে। ধীরে ধীরে আরশির দিকে মুখ এগোতে লাগলো। আরশির ভয়ে হার্টবিট দৌরাতে শুরু করে দিলো৷ তার যে গলা শুখিয়ে গেছে। একবার ঢোক গিলে গলাটা হালকা ভিজিয়ে নিলো। আরিয়ান এর নিশ্বাস তার মুখে লাগতেই সে কেঁপে ওঠলো।

আরিয়ান বুঝতে পারলো তাও এগিয়ে গেলো তার ঠোঁটের স্পর্শ ছুইয়িয়ে দিলো আরশির কপালে। সাথে সাথেই আরশির বন্ধ চোখ দুটো মেললো। অজানা এক সুখের অনুভূতি হলো তার।

আরিয়ান ওঠে দাঁড়ালো। শাড়ীটা চেঞ্জ করে নাও এতো ভারী শাড়ী পড়ে ঘুমাতে পারবেনা।

আরশির ঘোর কাটলো নিশ্বাসটা একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।

আরিয়ান আরশিকে চেঞ্জ করতে বলে বাথরুম চলে গেলো নিজেও চেন্জ করতে।

আরশি ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে আরেকবার বউ সাজে দেখে নিলো। কিছুক্ষন আগের কথা ভেবে লম্বা একটা শ্বাস টেনে শাড়ির পিন গুলো খুলতে শুরু করলো। সবপিন খুলেছে সে আরিয়ান বের হওয়ার আগেই তার চেন্জ করে নিতে হবে খুব তারাহুরোই সব খুলেছে।

শুধু পেছনের আচলের সাথে ব্লাউজের লাগানো পিনটা খুলতে পারছেনা পুরো শাড়ীটাই খুলে গেছে। এলোমেলো ভাবে শুধু আঁচল টাই আটকানো আছে কোনো ভাবেই সেটা খুলতে পারছেনা। বেশ অনেকক্ষন যাবত চেষ্টা করেও কাজ হলো না। তাই শাড়ীটা দুহাতে মুড়িয়ে বিছানার কাছে গেলো অবন্তী কে ফোন করার জন্য ওই খুলতে পারবে যেহেতু ও লাগিয়েছে।

ফোন ধরার সাথে সাথেই আরিয়ান বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।

আরশির দিকে তাকাতেই আরিয়ান অবাক। একি এটা কি অবস্থা শাড়ীটা এমন চারদিকে ছড়িয়ে আছে কেনো। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো আরশির পিঠ বেরিয়ে আছে পেট বেরিয়ে আছে।

আরিয়ানে মধ্যে আলাদা এক অনুভূতি কাজ করলো। পুরো শরীরে শিহরন বয়ে গেলো। আরশির পাশে গিয়ে বললো- কি হলো?
আরশি চমকে ওঠলো হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো।

আরিয়ান ফোনটা নিয়ে বিছানায় রাখলো।
আরশির বেশ লজ্জা লাগলো। এখন কি করবে সে কিছু বুঝে ওঠতে পারছেনা৷

তারাতারি শাড়িটা কোনো রকমে ধরে আবার আয়নার সামনে চলে গেলো। আবার চেষ্টা করতে লাগলো।
আরিয়ান বিছানায় আধসোয়া হয়ে বসে আছে আর আড় চোখে আরশিকে দেখছে। দশ মিনিট পর আরিয়ান আরশির পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।

আরশির হাত সরিয়ে দিলো পিঠ থেকে৷ সে পিছন দিয়ে ব্লাউজের ভিতরে হাত দিতেই আরশি কেঁপে ওঠলো। আরিয়ান সেপটিপিন খুলে দিয়ে আবার বিছানায় গিয়ে বসলো।

আরশি লজ্জায় শেষ এতোক্ষন ধরে চেষ্টা করেও পারলো না। মনে মনে অবন্তীকে একশটা গালি দিলো। কেমন করে লাগিয়েছিস যে খুলতেই পারলাম না শয়তান মেয়ে নাকি ভাইকে দিয়ে খুলাবি বলে এটা তোর প্ল্যান৷ আমারো দিন আসবে আমিও মজা দেখাবো। মনে মনে ভেবে ঐ ভাবেই শাড়িটা ধরে আর একটা শাড়ি নিয়ে বাথরুম চলে গেলো।

শাড়ি পড়তে পারে না তবুও কোনে রকমে পেচিয়ে রুমে আসলো। আরিয়ান আরশির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিলো।

আরশি দেখেও না দেখার ভান করে বেনারশীটা রেখে দিলো।
আবার শাড়ী পড়ল কেনো?

আরিয়ানের কথায় আরশি তাকালো তার দিকে। সেলোয়ার কামিজ রুমে দেয়নি অন্তী এই শাড়ীটাই দিয়েছে আর বললো এটা হালকা এটা পড়ে ঘুমালে সমস্যা নেই।

পড়তেতো পারো না। বলেই আবার মিটিমিটি হাসলো
আরশির রাগ হলো কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। আরিয়ানের দিক পিছন ফেলে।
আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো এটা কি হলো? (মনে মনে)

আরশি?
হুম বলো?

শুয়ে পড়লে কেনো?
আরশি ওপাশ থেকে আরিয়ানের পাশ ঘুরলো। তো কি করবো?

আজকে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি আর আমার অনুমতি ছাড়াই এইভাবে শুয়ে পড়লে? স্মামীর হুকুম ছাড়া এ পা নড়াও নিষেধ।

আরশি চট করে ওঠে বোসলো।
কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো তার দিকে। আরিয়ান একটু বাকা হাসলো।

আরশি বেশ বুঝতে পারলো মজা নিচ্ছে।
আরিয়ান তাকিয়ে আছে একমনে মন ভরে দেখছে আজ। তার বউরূপে
এমন ভাবে তাকিয়ে আছে ঘোর লাগা চোখে। আরশি লজ্জায় এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।

কি করবে বুঝে ওঠতে পারছেনা হঠাৎ মনে পড়লো খোপা টা খোলা হয়নি। মাথায় টান পড়ছে যাক একটা কাজ পাওয়া গেলো এই সুযোগে সে পিছন ফিরে বসে খোপা খুলতে লাগলো। আরিয়ানের ঘোর কাটলো একটা ভারী নিশ্বাস নিলো।
আরশি খোপা ছেরে দেওয়ায় পুরো পিঠ টা ঢেকে গেছে।
আরিয়ানের নাকে সেই মাতাল করা গন্ধ টা পৌছে গেছে। এতো মারাত্মক ঘ্রান সে খুব কাছ থেকে না নিয়ে থাকতে পারলো না সেই লোভ টা ছাড়তে পারলো না। আরশির বাহুতে ধরে হেচকা টান দিলো।
আরশির মুখ গিয়ে ঠেকলো আরিয়ানের বুকের বা পাশে।
আরশি ওঠে পড়তে গিয়েও পারলোনা চেপে ধরে রাখলো আরিয়ান।

আরশির হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। বুকের বা পাশের ডিপডিপ আওয়াজ শুনতে পেলো সে। যে ঝড়ের তোলপাড় তার মনে চলছে সেই একি তোলপাড় আরিয়ানের ভিতরেও চলছে। সেটা খুব ভালো ভাবেই অনুভব করলো সে।

আরশির চুলে নাক ডুবিয়ে দিয়েছে আরিয়ান। তার মাতাল করা চুলের গন্ধে ডুবে গেছে সে। ধীরে ধীরে আরো বেশী ঘোর লেগে গেলো। আরো বেশী কাছে পাওয়ার নেশা ধরে গেলো। আরশির শ্বাস ভারী হয়ে গেলো তার ঘন ঘন নিশ্বাস আরিয়ানের বুকে লাগতেই আরিয়ান চুল থেকে ঘারে মুখ ডুবিয়ে দিলো। আরশি কেঁপে ওঠলো আরিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো আরশিকে চোখ দুটো বন্ধ চোখ, ঠোঁট কাঁপছে তার।

তার ভারী নিশ্বাসের আওয়াজ আরিয়ানের কানে লাগলো পুরো শরীর শিহরন জাগিয়ে তুললো তার।

আরশির চোখের পাতায় চুমু একে দিলো। ধীরে ধীরে আরশির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো ভালবাসার মিলন হলো দুজোরা ঠোঁটের। আরশি দুহাতে আরিয়ানের পিঠ চেপে ধরলো। তার চোখ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। এ যে সুখের কান্না নিজের ভালবাসাকে কাছে পাওয়ার সুখ। এ যন্ত্রনা পৃথিবীর সব থেকে আলাদা যন্ত্রনা এতে নেই কোনো বিরহ, নেই কোনো বেদনা আছে শুধু দুজনের দুজনার প্রতি ভালবাসা।

আরশির ঠোঁট ছেড়ে তার মুখের দিকে তাকালো আরিয়ান। তার চোখ বেয়ে জল দেখে তার ভিতরে আলাদা এক ভাললাগা কাজ করলো। কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো-

আমি কি পুরোপুরি স্বামীর অধিকার আজ পাবো?
আরশি চোখ মেলে তাকালো লজ্জায় সে কোথায় লুকাবে খুজে পাচ্ছে না। আরিয়ান আরেকটু চেপে ধরলো তাকে পুরো শরীরের ভার দিয়ে দিয়েছে আরশিকে।

আরশির দম আটকে যাওয়ার অবস্থা। সে আরিয়ানের দিকে তাকালো তার ঘন নিশ্বাস আরিয়ানের মুখে লাগলো। আরিয়ান তার চোখে চোখ রেখে ইশারায় আবারো জিগ্যাস করলো আরশি দুহাতে আবার জরিয়ে ধরলো তাকে তার কাধে মুখ লুকালো। আরিয়ান তার উওর পেয়ে গেছে।

সে আবার তার ভালবাসা একে দিতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো। আরশির ঠোঁটে গলায় কিস করতে লাগলো৷

আরশি খামচে ধরলো আরিয়ানের শার্ট। যা আরো দ্বিগুন ভাবে নেশা ধরিয়ে দিলো আরিয়ান কে পরম আবেশে পুরো শরীরে তার ভালবাসা একে দিতে লাগলো। দুজন দুজনার মাঝে হারিয়ে গেলো। সারারাত এভাবেই দুজন দুজনাতে মিশে গেলো এক হয়ে গেলো দুটো হৃদয়। আরিয়ান পুরোপুরি ভাবে আরশিকে তার করে নিলো।

অবন্তী রাতে অনেকবার রিদকে ফোন দিয়েছে পায়নি শেষে ঘুমিয়ে পড়েছিলো আজান দিতেই তার ঘুম ভেঙে গেলো৷ পাশ থেকে ফোন হাতে নিয়েই দেখতে পেলে দুটো মিসড কল একটি ম্যাসেজ৷

ম্যাসেজ অপশন ক্লিক করতেই ভেসে এলো-
পাগলী আমার ঘুমিয়ে পড়েছে মুঠোফোন তাই শান্ত,

আমি রাত জেগে দিচ্ছি পাহাড়া মুঠোফোনের এই প্রান্ত,
একথা যদি সে জানত।
ম্যাসেজটা দেখে অবন্তীর মনটা খুশিতে ভরে গেলো। যাক তাহলে ওনি ভুলেননি আমায়। মিস করেছে। কিন্তু আমিও তো মিস করেছি জেগে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি নিজেই জানিনা।

এখন ফোন দেই বলেই ফোন করল। সাথে সাথেই রিসিভ হলো। বেশ কিছুক্ষন তারা ফোনালাপ করলো। খুব তারাতারিই ফিরবে রিদ সে কথা জানালো। তারপর বেশকিছুক্ষন কথা বলে রেখে দিলো।

অবন্তী ভোর হতে হতেই গিয়ে দরজা তালাটা খুলে সিটকিরি খুলে দিলো। কেউ ওঠেনি সে ছাড়া। তারপর রান্না ঘরে গিয়ে এক কাপ কফি বানিয়ে রুমে চলে গেলো। আজ বউভাতের ছোটো খাটো অনুষ্ঠান তার বাবা কাল বলেছে আরশির সাথে তাকেও শাড়ি পড়তে। কাল আরশিকে শাড়ি পড়া দেখে তার খুব ইচ্ছে হয়েছে তার মেয়েকে শাড়ি পড়া দেখবে। তাই আলমারী থেকে একটা গাড় খয়েরি কালারের গেল্ডেন পাড়ের শাড়ি বের করলো।

বাবাকে দেখাবে আর রিদকে ফোন দিবে আজ যদি না পায় ফোনে তো খবড় আছে তার ভেবেই শাড়ি বের করে বিছানায় রাখলো। তারপর কফিতে এক চুমুক দিয়ে বারান্দায় গেলো।

আরিয়ানের বরাবরই সকালে ওঠার অভ্যেস আজো ব্যাতিক্রম হয় নি ঘুম ভেঙে গেছে তার।

বুকের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরশি তার বুকে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। তার নিশ্বাস বুকে এসে পড়ছে। মুখে হাসি ফুটে ওঠলো তার কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো। আরেকটু নিজের সাথে চেপে ধরতেই আরশির ঘুম হালকা ছেড়ে গেলো ঘুমের মধ্যেই আরিয়ানকে জরিয়ে ধরলো। আরিয়ানও পরম আবেশে তার শরীরের ঘ্রান নিচ্ছিলো।

বাঁশি শরীর থেকে এক মাতাল করা ঘ্রান পাচ্ছে আরিয়ান। যার ফলে তার বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঢেউ খেলে যাচ্ছে। আরশি কে একটু উঁচু করে তার বুকের উপর নিয়ে নিলো।

আরশি ঘুম ভেঙে গেলো অবাক চোখে তাকালো। তার মুখ আরিয়ানের মুখের উপর। হতোবাক হয়ে চেয়ে রইলো ঘুম থেকে সদ্য ওঠায় তার চেহেরায় অন্যরকম এক আকর্ষণ অনুভব করছে আরিয়ান। একরাতেই যেনো তার চেহেরা পালটে গেছো। হাজারগুন বেশী সৌন্দর্য ভর করেছে তার ওপর। আরিয়ানের ঘোর লেগে গেছে সে আবারো ডুবতে চাইছে আরশির মাঝে। আরশি ওঠতে গিয়েও পাচ্ছেনা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে।

আরিয়ান পরম আবেশে তার ঘারে মুখ ডুবিয়ে দিলো ঘ্রান নিতে শুরু করলো তার বাঁশি শরীরের। আরশি কেঁপে কেঁপে ওঠতে লাগলো আরিয়ানকে জরিয়ে ধরলো। সে বেশ বুঝতে পারলো আরিয়ান তার শরীরের ঘ্রান নিতে ব্যাস্ত।
আরিয়ান ঘোর লাগা গলাতেই ডাকলো আরশি….

আরশি হুম বলে সারা দিলো। আরিয়ান বেশ টের পেলো তার ভারী নিশ্বাস।
নেশা ধরে গেছে আমার। এই নেশাতো সব নেশাকে হার মানিয়ে ফেলেছে আরশি।

আরশি লজ্জায় আরিয়ানের বুকে মুখ লুকালো।
আরিয়ানও পরম আবেশে বুকে জরিয়ে রাখলো বেশ কিছুক্ষন চললো পিনপতন নিরবতা।
নিরবতা ভেঙে আরিয়ানই বললো চলো শাওয়ার নিবো।

আরশি বললো-

তুমি আগে যাও তার পর আমি।
কেনো একসাথে গেলে সমস্যা আছে৷

আরশি চট করে ওঠে পরলো। ও কি আমায় একবারে ভালবাসার সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরে ফেলতে চাইছে। ( মনে মনে)
আরিয়ান আরশির দিকে তাকিয়ে – কি হলো?

মাথা নিচু করে কিছুনা।

সাথে সাথেই দরজায় টোকা পড়লো। আপুভাবি…. ও ভাইয়া তোমরা কি আর ওঠবেনা আজ।
আরশি দরজার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের দিকে তাকালো। আর যা দেখলো তাতে সে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে চাইছে।

আরিয়ান বাঁকা হাসলো। আরশি তারাতারি কাপড় দিয়ে বুক ঢেকে ফেললো।

চট করে বিছানা থেকে ওঠে পড়লো।

আরিয়ান বললো- এইতো ওঠেছি তুই আমার জন্য কফি বানা আসছি।
ওকে ভাইয়া।
পিছন থেকে আরশিকে জরিয়ে ধরলো আরিয়ান।

এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে সারারাত তো…….
আর কোনো সুযোগ না দিয়ে আরিয়ানের হাত ছাড়িয়ে আরশি চট করে বাথরুমে চলে গেলো। আরিয়ান একটা মুচকি হাসি দিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।

আয়েশা বেগমের চিৎকার শুনে অবন্তী ছুটে গেলো তাদের রুমে। গিয়ে যা দেখলো তাতে অবন্তীর পুরো শরীর ঝাকি দিয়ে ওঠলো। হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো তার।


পর্ব ২৩

আরমান সরকার চিৎ হয়ে শুয়ে আছে তার চোখ দুটো বন্ধ। আয়েশা বেগম পাশে বসে তাকে নারাচ্ছে আর কান্না করছে। অবন্তী দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে তার বুকে হাত দিয়ে বুঝতে পারলো তার বাবার শ্বাস প্রশ্বাস চলছেনা।

তার মাথা থেকে পুরো শরীর কেঁপে ওঠলো হঠাৎ ই বুকের ভিতর মুচরে গেলো। জোরে জোরে ভাইয়া ভাইয়া করে ডাকতে লাগলো। আসমা বেগম ও ছুটে এলো আরশির বাবা এলো, আরিয়ানের বন্ধু রা, আরশির বন্ধু রা।

আরিয়ান এতো আওয়াজ শুনে কান্না শুনে দৌড়ে এলো। বাবাকে অমন অবস্থায় দেখে তারাতারি ডক্টর কে ফোন দিলো আরশি এসে অবন্তীকে ধরলো। এমনিতেই অনেক দূর্বল প্রকৃতির মেয়ে তার ওপর হার্ট এ সমস্যা। মূহুর্তের মধ্যেই পুরো বাড়িটা থমকে গেলো।

ডাক্তার এসে চেক আপ করে তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে দিলো। সাথে সাথে জ্ঞান হারালো অবন্তী।

আসমা বেগম তার বড় ভাইকে ফোন দিয়ে জানালো ছোট ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে সে পরিবার সহ এসে পড়লেন।

আরশি অবন্তী কে সামলাচ্ছে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে মেয়েটা। আরিয়ান থমকে গেছে। পুরো বাড়িতে কান্নার ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। কাল যে বাড়ি খুশির আমেজে ভরে ছিলো আজ সে বাড়িতে কান্নার ঝড় ওঠে গেছে। এমনটা হওয়ার কি খুব দরকার ছিলো।

ডাক্তার জানালো আরমান সরকার ঘুমের মধ্যেই স্ট্রোক করেছেন। আয়েশা বেগম পাগল প্রায়।

সে নামাজ পড়ে, কোরান পড়ে এসে তার কোনো সারা পায় নি। কয়েকবার ডেকেও সারা পায় নি সে। তার স্বামীর সাথে আরেকটা নতুন সকাল দেখার সুযোগ সে পায় নি।

বিয়ের পর থেকে স্বামীকে ছাড়া একদিনের জন্যও কোথাও গিয়ে একা থাকেনি সব সময় মানুষটা ছায়ার মতো পাশে থেকেছে। আর আজ এইভাবে একা করে চলে গেলো সে মেনে নিতে পারছেনা কিছুতেই। মেয়ের বিয়ে দেখার কতো শখ ছিলো সেটাও পূরন হলো না।

মেয়ের সুখের সংসার দেখতে পেলো না৷ আয়েশা বেগম এসবই বলছেন আর চিৎকার করে কাঁদছেন।

আরিয়ান স্তব্ধ হয়ে রুমের এক কোনায় বসে আছে। তার বন্ধুরাও তার পাশেই আছে।

আসমা বেগম ভাইয়ের পাশে বসে কাঁদছেন। এই ভাইটাই তাকে বাবার মতো করে ভালোবাসতেন

বাবার পর এই মানুষই তার এতো খোঁজ খবড় রাখতেন। সেও খুব ভেঙে পড়লেন৷ একটা মানুষের মৃত্যু তে অনেক গুলো জীবন থমকে গেলো। আর অবন্তী দৌড়ে তার রুমে গিয়ে সেই শাড়িটা এনে বাবার পাশে বসে কাঁদছে আর বলছে – বাবা ও বাবা দেখো আমি শাড়ি বের করেছি। তুমিতো আমায় শাড়ি পড়া দেখতে চেয়েছিলে দেখবেনা বাবা।

তোমার সোনামুনি যে আজ শাড়ি পড়তে চেয়েছিলো তুমি দেখবেনা বাবা ও বাবা আমি কাকে বাবা বলে ডাকবো। বাবা কে আমার জন্য চিন্তা করবে তোমার মতো করে কে ভালোবাসবে বাবা। কে তোমার মতো করে আমার চিন্তা করবে বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠলো। আরশি অবন্তীকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে সেও কাঁদতে লাগলো৷ সবটা এমন কেনো হয়ে গেলো এমনটাতো নাও হতে পারতো আজকের সকালটা তো এমন হওয়ার কথা ছিল না৷

অবন্তী আবার জ্ঞান হারালো। আরশি পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরানোর পর অন্তী তার ভাইকে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো। আরিয়ান বোনের চিৎকার শুনে তার কাছে আসলো অবন্তী আরিয়ানকে জাবটে ধরে কাঁদতে লাগলো ও ভাইয়া আমার বাবাকে এনে দে। এই ভাইয়া বাবা ওঠছেনা কেনো।

আরিয়ান আর নিজেকে শক্ত করে রাখতে পারলো না বোনকে বুকে জরিয়ে সেও কাঁদতে লাগলো। আরশিও তাদের জরিয়ে কাঁদতে লাগলো।
হঠাৎ অবন্তী আরিয়ানকে ছাড়িয়ে দিলো –

এই তোরা আমাকে কেউ ছুবি না। আমি খুব খারাপ মেয়ে৷ আমার জন্যই আজ বাবা চলে গেলো। আমার জন্যই বাবা এতো চিন্তা করে করে নিজে মৃত্যুর মুখে গেলো। আমি যদি বাবার কথায় বিয়ে করে নিতাম বাবার শেষ ইচ্ছাটা পুরন করতাম তাহলে এমন হতো না। আমি কেমন মেয়ে যে বাবার শেষ ইচ্ছাটাও পূরন করতে পারলাম না। ছি ঃ ছিঃ বলেই অবন্তী দৌড়ে তার রুমে চলে গেলো। আরিয়ান আরশি গেলো তার কাছে।

এদিকে রায়হান রিদকে ফোন করে সবটা জানালো। রিদও ভেঙে পড়লো অবন্তীর জন্য তার টেনশন হতে লাগলো৷ কিন্তু এই মূহুর্তে তো ফেরা যাবে না। রাতে ফ্লাইট। তবুও সারাদিন রায়হান কে রাতুলকে ফোন করে অবন্তীর খোঁজ নিলো।

আরমান সরকার কে কবর দেওয়া হলো। বাড়ির সবার দায়িত্ব এখন আরিয়ানের সেই ভাবেই সে নিজেকে শক্ত করে নিলো। মা আর বোনকে সামলাতে হবে এরা দুজনই খুব ভেঙে পড়েছে৷ আমি যে ছেলে আমার ভেঙে পড়লে চলবেনা বলেই আরশির দিকে করুন মুখে তাকালো। আরশি আরিয়ানের হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে বললো-, আমি আর তুমি মিলে সব সামলে নিবো দেখো।

আরিয়ান আরশিকে জরিয়ে ধরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

এদিকে অবন্তী তার নিজের ফোন ভেঙে গুরো গুরো করে ফেললো। আর মনে মনে বললো-আজ যদি রিদ চলে না যেতো বাবার কথায় কাল ই বিয়ে করতো তাহলে আমার বাবা তার মেয়ের বিয়েটা দেখে যেতে পারতো। ওর জন্য নয়টা মাস আমি বাবার সাথে ঠিকভাবে কথা বলিনি। ওর জন্য আমি আমার পুরো পরিবারকে অবহেলা করেছি। ঠকিয়েছি আমার বাবাকে। আর ও আমার বাবার শেষ ইচ্ছেটাই পূরন করতে দিলো না।

আমি আমার বাবাকে সুখ দিতে পারলাম না৷ যে মানুষ টা সারাজীবন আমাদের সবাইকে সুখ দিলো সেই মানুষটাকে আমি সুখ দিতে পারলাম না। ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে আর একমনে এসব বলে যাচ্ছে অবন্তী। তার মনে অসংখ্য জেদ এসে ভর করেছে৷ রিদের ওপর রাগ অভিমানের পাহার তৈরী করে ফেলছে মনের ভেতর।

আমি এই বিয়ে মানি না। যে বিয়ে বাবা মা কে না জানিয়ে হয় সেটা কোনো বিয়েই না। আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হারিয়ে ফেললাম। আল্লাহ আর একটিবার ফিরিয়ে দাও আমার বাবাকে তার সব কথা শুনবো আমি। তার সব ইচ্ছে পূরন করবো আমি ফিরিয়ে দাও না আল্লাহ। দুহাত তুলো অবন্তী অঝরে কাদঁতে লাগলো আর তার
বাবাকে একবার ফিরিয়ে দিতে বললো। কিন্তু তা যে সম্ভব না এটাই যে তার ভাগ্য। সেই ভাগ্যকেই যে মেনে নিতেই হবে।
পরের দিন সকালে রিদ অবন্তী কে ফোনে পাচ্ছে না। তাই আরিয়ানের ফোনে ফোন করেছে।

বিয়ের আগেরদিন রাতে রিদের সাথে আরিয়ানের বেশ কিছুক্ষন কথা হয়েছে। তখনই আরিয়ানের নাম্বার সেইফ করে রেখেছিলো।
আরিয়ানের থেকে রিদ জানতে পারে অবন্তী তার ফোন ভেঙে ফেলেছে। সে ভাবলো বাবা মারা যাওয়ায় মেয়েটা বেশ ভেঙে পড়েছে। তাই হয়তো এমনটা করেছে। কিন্তু তার জন্য যে আরো অনেক বড় ঝড় আসতে যাচ্ছে সেটা কি সে জানে?

দুদিন হলো রিদের সাথে অবন্তীর কোনো যোগাযোগ নেই। কোনোভাবেই সে যোগাযোগ করতে পারছে না। অবন্তী কারো সাথে কথা বলতেই রাজি না। সে সারাদিন বাবার রুমে চুপ করে সুয়ে থাকে। ঠিক ভাবে খাবাড় ও খায় না।

বাড়ির কারো মনের অবস্থাই ভালো না। সবাই খুব ভেঙে পড়েছে। রিদ আরশি, আরিয়ান কে ফোন করেই অবন্তীর খোঁজ নেয়। অবন্তী কে একটু একা সময় দেওয়া দরকার সেই ভেবে সে আর তার কাছে যায় না। অবন্তীও মনের ভুলে রিদের সাথে কথা বা দেখা করতে চায় না।

এইভাবে দিন চলে যায় রাত আসে রাত চলে যায় দিন আসে৷ রিদের মনের ভিতর দিন দিন অস্থিরতা বাড়তে থাকে। কিন্তু কি করবে সে বুঝে ওঠতে পারে না।

এদিকে আরশি আরিয়ান, আয়েশা বেগম, আসমা বেগম কেউই অবন্তীকে কিছু বুঝাতে পারছে না। তার এক কথা তার জন্যই তার বাবা চলে গেছেন৷ আর রিদের জন্যই তার বাবার শেষ ইচ্ছে টা পূরন হলো না। সে চায় একা থাকতে যে সম্পর্ক তার বাবা দেখে যেতে পারলো না সেই সম্পর্কের কোনো মূল্য নেই তার কাছে।

আরিয়ান অনেক বুঝিয়েছে যে -এতে রিদের কোনো দোষ নেই সবটাই আমাদের ভাগ্য। আর রিদ তো পরিস্থিতির চাপে তখন বিয়ে করতে পারেনি। এতো বুঝিয়েও কাজ হলো না। অবন্তী জেদ ধরেই রইলো। এদিকে রিদ আর থাকতে না পেরে চলে গেলো অবন্তীদের বাড়ি।

কলিং বেল বাজাতেই আরিয়ান এসে দরজা খুললো। রিদকে দেখে তার মুখ চুপসে গেলো। কারন সে জানে অবন্তী তার সাথে কি করবে। এতোদিন বিষয়টা চেপে রেখে ছিলো কিন্তু আজ কি হবে।

জোর পূর্বক হেসে ভিতরে আসতে বললো রিদ কে। আরশি কে ডেকে নিয়ে আসলো সে কিছুক্ষন কথা বলে কফি বানাতে গেলো। আয়েশা বেগম এর সাথে কথা বললো বেশ কিছুক্ষন। আসমা বেগম তার বাড়ি চলে গেছেন দুদিন হলো।

রিদ এদিক সেদিক তাকালো তবুও অবন্তী কে দেখতে পেলো না।
কফি খেতে খেতে আরিয়ানের সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা বললো। তারপর রিদ বললো-

অন্তীর সাথে আমার কিছু কথা আছে দেখা করতে চাই। আর আরশি ভাবি এটা রাখেন আমি চলে গেলে এটা দিবেন ওকে।

আরশিকে একটা পার্সেল দিলো। আরশি পার্সেল হাতে নিয়ে জিগ্যাসু চোখে তাকালো।
রিদ বললো-এখানে একটা ফোন আছে ওকে দিবেন।

আরিয়ান আরশি চুপ করে রইলো হালকা হাসলো। তারা ও তো ফোন কিনেছে অবন্তীর জন্য কিন্তু সেটা নেয়নি ছুয়েও দেখেনি। তারপর ও রিদকে তো এসব বলতে পারে না রেখে দিলো। আর বললো- আচ্ছা দিয়ে দিবো।

আরশি রিদকে নিয়ে আরমান সরকার এর রুমের দিকে এগোলো আর শুধু একটা কথাই বললো- ভাইয়া অন্তী যাই বলুক আপনি শুধু একটু ধ্যৈর্য ধরবেন মেয়েটা একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছে। বাবার মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি।

রিদ শুধু মাথা ঝাকালো। আর কিছু বললো না। রিদ ও যে বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছে কিছু একটা হয়েছে অবন্তী তাকে ইগনোর করছে সেটা সে ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। অবন্তী জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে মাথাটা হেলিয়ে। আরশি গিয়ে ডাকলো- অন্তী… দেখ কে এসেছে।

অবন্তী তাকালো।
রিদকে দেখে সে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।

আরশি বললো- তোরা কথা বল আমি আসছি। বলেই চলে গেলো।

রিদ অবন্তীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। জানালার বাইরে তাকিয়ে দু পকেটে হাত গুজে দিলো। অবন্তীও তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে এক ধ্যানে। দুজনের মধ্য দূরত্ব নেই খুব একটা৷ এতো কাছে থেকেও রিদের মনে হচ্ছে তার অন্তী তার কাছে নেই। অনেকটা দূরে চলে গেছে। নীরবতা ভেঙে রিদ অন্তীর দিকে তাকিয়ে জিগ্যাস করলো- কেমন আছো?

অবন্তীর দৃষ্টি বাইরের দিকেই। সেদিকেই দৃষ্টি ঠিক রেখে জবাব দিলো- আছি আল্লাহ যেমন টা রেখেছেন।
বেশ কিছুক্ষন নিরবতা চললো- রিদ আবারো বললো- অন্তী…

যা হওয়ার হয়ে গেছে। সবটাইতো ভাগ্য এইভাবে গুমরে থেকে থেকে নিজের ক্ষতি কেনো করছো। তোমার বাবার আত্মা যে শান্তি পাবে না তাহলে।
অবন্তী তাচ্ছিল্য হাসি দিলো।

আমার বাবার শেষ ইচ্ছাই পূরন করতে পারিনি। তার আত্মার শান্তি দিতে পারেনি। বেঁচে থাকতেই দেইনি। ঠকিয়েছি তাকে আমি আমার ভুলগুলো শুধরে নিবো আমি।

মানে…?
অবন্তী রিদের চোখে কঠোর দৃষ্টি তে তাকালো।

কেনো এসেছেন এখানে? চলে যান।
রিদ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। নিজের চোখের সামনে এ কোন অবন্তীকে দেখতে পাচ্ছে সে আজ। এ তো তার অন্তী না তার আয়না সুন্দরী না।

যথেষ্ট ঠান্ডা মেজাজে রিদ বললো- অন্তী নিজের চেহেরার এ কি হাল করেছো চোখের নিচের কালি দাগ গুলো চওড়া হয়ে ওঠেছে ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করছো না৷ অন্তী মানুষ মরনশীল। আর এই সত্যিটা আমাদের প্রত্যেককেই মেনে নিতে হবে।

হ্যা নিয়েছিতো। প্লিজ আমাকে একা থাকতে দিন চলে যান এখান থেকে।
রিদ অবন্তীর দুহাত আঁকড়ে ধরে বললো- একটা মাস তো একাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। একি হাল করেছো নিজের আর পারবোনা একা ছাড়তে। অন্তী তোমার পাশে এখন আমার থাকা উচিত। তুমি এমনটা নও। তোমার এইরূপে আমি অভ্যস্ত নই।

অবন্তী হাত ছাড়িয়ে দিলো। রিদ অবাক চোখে তাকালো।
অভ্যস্ত নন এখন অভ্যাস করে নিন।

মানে?
মানেটা খুব সহজ চলে যান। আর কখনো আমার সামনে আসবেননা। (চিৎকার করে বলে ওঠলো)
রিদ নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না দু কাঁধ দুহাতে আঁকড়ে ধরলো।

এই অন্তী কি হয়েছে এমন করছো কেনো। তুমি তোমার রিদ এর সাথে এমন করতে পারোনা।
আমার রিদ কে আমার রিদ আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই চলে যান।

রিদ তার মাথা অবন্তীর মাথায় ঠেকালো।

আমার চোখে চোখ রাখো অন্তী। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো আমি কে।

অবন্তী দুচোখ বন্ধ করে ফেললো। এতোকাছে আছে রিদ তবুও সে তার অভিমান ভেঙে জরিয়ে ধরে কাঁদতে পারছেনা। তার জীবনের অনেক মূল্যবান জিনিস যে সে হারিয়ে ফেলেছে। সেই কষ্ট টায় যে তার বুকের ভেতর দুমরে মুচরে গেছে।

আপন মানুষ হারানোর ব্যাথা টা যে খুবই যন্ত্রনাদায়ক। আবারো সেই কষ্ট কীভাবে মেনে নেবো সে। রিদ যে তার কাছে খনিকের জন্য আসে আবার চলে যায়। এর থেকে একবারেই সব শেষ হয়ে যাক আর কোনো হারানোর ভয় থাকবে না।

কিহলো অন্তী চোখ খুলো তাকাও আমার দিকে। রিদের গরম নিশ্বাস অন্তীর মুখে পড়তেই সে ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে দিলো।
পিছন ঘুরে বললো- চলে যান প্লিজ।

রিদ হতবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
অন্তী আমার বউ এইভাবে একা একা কষ্ট পাবে সেটা আমি কীভাবে মেনে নিবো।
অবন্তী পিছন ফিরে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো রিদের দিকে।

কিসের বউ কে আপনার বউ৷
রিদের মাথায় রক্ত ওঠে গেলো। এখন কি অন্তী তার ভালবাসা ও অস্বীকার করবে তাদের বিয়েটাও অস্বীকার করবে।

দুহাত শক্ত করে মুঠ করে রাখলো।
আমি এই বিয়ে মানি না। যে বিয়ে বাবা মা, পরিবারের আড়ালে হয় সেটা কোনো বিয়েই নয়। বাবা – মা কে ঠকিয়ে বিয়ে সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়াই কেমন বিয়ে সেটা। আর কেমন বউ আমি বা কেমন মেয়ে আমি।

রিদ চিৎকার করে বললো- অন্তী……….৷

বাড়ির সবাই চমকে ওঠলো। আরশি দৌড়ে আসলো সাথে আরিয়ান ও।

অবন্তী ও হালকা কেঁপে ওঠলো। তবুও সে তার জেদ থেকে এক পা ও নড়লো না। মূর্তির মতো দাড়িয়ে রইলো। কঠোর চোখে তাকিয়ে রইলো। সে চোখটা বড়ই সুক্ষ্ম।
আরিয়ান এসে ডাকলো অন্তী..

আরশি অন্তীর পাশে দাঁড়ালো।

অন্তী ভাইয়া এতোদিন পর এসেছে তুই এমন করিস না।
রিদ জানালার দিকে তার দৃষ্টি ঠিক রেখেছে। তার চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারন করেছে। তার সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিতে ইচ্ছে করছে। অবন্তীর বাবা মারা না গেলে আজ তার এমন কাথায় তাকে কাঠোর শাস্তি ভোগ করতে হতো।

রিদ চোখ দুটো বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

আরিয়ান বললো – ওকে আরেকটু সময় দাও।
রিদ কিছু বললো না।

আরশি অবন্তী কে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সে ঠায় দাঁড়িয়েই রইলো৷ এক পা ও নড়লো না। তার চোখের দৃষ্টিও সেই মেঝের দিকেই রইলো আশে পাশের কারো দিকে তার কোনো খেয়াল নেই।

রিদ নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো- ভাইয়া ভাবি আপনারা বাইরে যান আমিও আসছি।
আরশি আরিয়ান চলে গেলো। রিদের আগেই অবন্তী বলে ওঠলো-

আপনার জন্যই আমি আমার বাবাকে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়েছি৷ আপনার জন্যই আমার বাবার শেষ ইচ্ছে পূরন করতে পারিনি আমি৷ আপনাকে আমি সহ্য করতে পারছিনা চলে যান প্লিজ দয়া করে চলে যান৷ হাত জোর করে বললো রিদ কে।

রিদ একটু বাঁকা হাসলো। অবন্তীর কাছে গিয়ে তার দুগালে আলতো করে ধরে কপালে একটা চুমু খেলো।
অবন্তী আবারো হাত ছাড়িয়ে পিছন ঘুরে দাড়ালো।

রিদ যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। আবার পিছন ঘুরে অবন্তী কে বললো-

অভিমানের পালাটা খুব বেশীই ভারী হয়ে গেছে। আর এই অভিমানটা ভাঙাতে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসতে হবে৷ আর সেটাই করবো আমি। আর মনে রেখো তোমার মনে কি চলছে সেটা আর কেউ না বুঝলেও এই রাফসান চৌধুরী ঠিকি বুঝতে পেরেছে। বলেই বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

অবন্তী ও ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। অনেক কষ্টে তার চোখের পানি সে আটকে রেখেছিলো।

কান্নায় ভেঙে পড়লো অবন্তী। তার জীবনটা কেনো এমন হলো। তার রিদকে সে এইভাবে কথা কীভাবে বলতে পারলো৷ এতটা কঠোর সে কি করে হতে পারলো।

বাবা তুমি কেনো এইভাবে চলে গেলে। বাবা তোমার অভাব যে কোনোদিন ফুরাবে না৷ তোমার মেয়ে তোমাকে ছাড়া নতুন জীবন সাজাতে পারবে না বাবা। অঝরে কাদতে লাগলো অবন্তী।

আয়েশা বেগম রিদের দুহাত আঁকড়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।

বাবা গো আমার মেয়েটা তোমাকে ভীষন ভালোবাসে। আমার মেয়ের কথায় তুমি দুঃখ পেও না। ওকে একটু সময় দাও সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার যখন খুশি এ বাড়িতে আসবে আমার মেয়েটা তো এখন তোমার ই ওর সব দায়িত্ব তেমারই বাবা।

রিদ আয়েশা বেগম এর হাত ধরে বললেন৷ আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়েকে আমি সামলে নিবো।
আরশি ভাবি…

হ্যা ভাইয়া বলুন।
অবন্তীর কদিনপর সেমিষ্টার এক্সাম আছে ও এক্সাম দিবে। আমি ওর এডমিট পাঠিয়ে দিবো। ওকে এক্সামের জন্য প্রস্তুত হতে বলবেন। আর এক্সামের পরেই ওকে আমার কাছে নিয়ে যাবো। ধুমধাম করে হয়তো নেওয়া হবেনা তবে আর দূরে রাখবো না। ওকে। দূরে থাকতে থাকতে আজ এই অবস্থা আর না। বলেই আয়েশা বেগম কে ভরসা দিয়ে আরিয়ানের সাথে কথা বলে চলে গেলো রিদ।

আয়েশা বেগম বললেন- ছেলেটা আমার মেয়েকে নিয়ে অনেকভাবে এতোকিছুর পরও ওর সব চিন্তা মাথায় রেখেছে৷

হ্যা মা ঠিক বলেছো আমরা ওকে কতো ভুল বুঝেছি। কিন্ত ছেলেটা খুবই বুদ্ধিমান, জ্ঞানী। আমার বোন অনেক ভাগ্য করে ওর মতো স্বামী পেয়েছে। আরশি এসে বললো ঠিক বলেছো। কিন্তু একটা জিনিস জানো তো –
আরিয়ান আর আয়েশা বেগম জিগ্যাসু চোখে তাকালো আরশির দিকে। আরশি বললো-

অবন্তী শুধু বাবা মারা যাওয়ায় অভিমান করে নেই। এর মধ্য আরো অন্য কারন আছে যার জন্য ও রিদ ভাইয়াকে এরিয়ে চলছে।
আরিয়ান বললো- কিন্তু কি সেটা।

আয়েশা বেগম বললেন। ঐভাবে গোপনে বিয়ে করাটাই হয়তো তোদের বাবাতো আর শুনে যেতে পারলো না। আমিতো তোদের বাবা চলে যাওয়ার পর শুনলাম।

আমি অন্তীর সাথে আজ রাতে থাকবো আর সবটা শুনতে হবে আমায় বোঝাতে হবে ওকে। রিদ ভাইয়া যে ওর স্বামী এটা ওকে বুঝতে হবে।

রাতে খাবাড় খেয়ে আরশি অবন্তীর রুমে গেলো। সে চুপ করে শুয়ে আছে। আরশি তার পাশে গিয়ে বললো- অন্তী কেনো এমন করছিস সবটা ঠিক করে নে তুই ও কষ্ট পাচ্ছিস রিদ ভাইয়াও কষ্ট পাচ্ছে।

আপু বাদ দে আমি আর কাউকে আপন করে পেয়ে আবার হারাতে চাইনা বলেই এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অন্তী।
কি বলছিস এসব হারাবি মানে।
জানিনা।

অন্তী বল বলছি।

কিছুনা আপু বাদ দে..
আরশি অন্তীর হাত নিয়ে তার মাথায় রেখে কসম করলো। এবার বল সবটা আমায়।
অন্তী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেদে ওঠলো ওঠে বোসলো।

আপু তুই তো জানিস একবার রিদের কতো বড় এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। এমনটা যদি আবার হয়। আমি যে আর হারাতে চাই না আপু। সহ্য করতে পারবো না এর থেকে আগেই সরে যাচ্ছি।

আরশি থমকে গেলো৷
ছিঃ অন্তী ছিঃ তুই কি সত্যি আমাদের অন্তী।

অবন্তী করুন চোখে তাকালো আরশির দিকে।
আরশি কঠোর স্বরে বললো- তুই এতোটা স্বার্থপর আগে জানতাম না তো।
কি বলছিস আপু…

হ্যা ঠিক বলছি। তুই তোর স্বামীর বিপদ দেখে তাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছিস। তার পাশে না থেকে তার থেকে দূরে যাচ্ছিস শুধু মাএ নিজের কষ্ট হবে বলে।

আর তুই কি বললি তোর বাবার ইচ্ছে তাইনা৷ শোন অন্তী তুই যদি তোর বাবাকে সত্যি ভালবাসতি তাহলে রিদের সাথে সুখের সংসার গড়ে তুলতি। মামা তো এটাই চেয়েছিলো আর এটা হলেই তার আত্মা শান্তি পেতো। ভুলে যাস না তোর বাবা রিদকে মেনে নিয়েছিলো। আর রিদ তার বাবার দেওয়া কথা পূরন করতে গিয়েছিলো।

সবটাই পরিস্থিতির জন্য।
আর বললি বিয়ে সেদিন বিয়েটাতো তোর মতেও হয়েছে। একজনের ইচ্ছায় কখনোই বিয়ে হয় না।
অপ্রাশংগিক কথা বলে তুই এমন ভুল করিসনা। এখনো সময় আছে তুই ভালোভাবে সবটা ভাব।

অবন্তীর চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছে।
অন্তী তুই আজকে রিদ ভাইয়ার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছিস। তারপর ও ওনি তোর কথাই শুধু ভেবেছে তোর জন্য ফোন নিয়ে এসেছে। তোর এক্সামের জন্য সব কমপ্লিট করেছে কদিন পর এক্সাম তোর সেদিকে খেয়াল না থাকলেও রিদ ভাইয়ার ঠিকি আছে। ওনার মতো স্বামী অনেক ভাগ্য করে পাওয়া যায় অন্তী।

ওনার মতো করে কেউ তোর এতো খেয়াল রাখবেনা কেউ এতোটা বুঝবেনা৷ মামার পর ওনার কাছেই তুই অনেক নিরাপদ অন্তী।
প্লিজ সব অভিমান ভুলে যা।
অবন্তী আরশিকে জরিয়ে ধরলো। কান্না করে করে বলে ওঠলো রিদ কে হারালে আমি বাঁচতে পারবো না রে আপু তাইতো দূরে সরে যেতে চাইছি আমি।

অন্তী দূরে সরে গেলে পরে আরো অনেক বেশী আফসোস করবি। ভালোবাসার মানুষের সাথে কখনোই অভিমান করে দূরে সরে থাকবি না। জীবনটা খুবই ছোট অন্তী এই ছোট খনিকের জীবনে রাগ -অভিমানকে জায়গা না দিয়ে ভালবাসার মানুষকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাক যতোদিন পৃথিবীতে আছিস তার পাশে থাক।

ভালবাসায় ভরিয়ে দে তার জীবন আর যাই হোক কোনো আফসোস থাকবে না।
অবন্তী কান্না থামিয়ে দিলো। চুপ করে রইলো।

অন্তী আজ যদি রিদ ভাইয়ার সাথে সংসার করিস। তোদের সুখের সংসার হবে ছোট ছোট বাচ্চা হবে তাদের দেখে মামী কতোটা খুশি হবে বলতো। ঐ মানুষটার কথাওতো ভাবতে হবে। মামা চলে যাওয়ার পর ঐ মানুষ টা সব থেকে বেশি একা হয়ে গেছে। আমাদের কি উচিত না ঐ মানুষটাকে খুশি করার। সুখে রাখার।

অন্তী চোখ তুলে তাকালো আরশির দিকে। আরশি মাথা নাড়ালো। অবন্তী হালকা হেসে ওঠলো।
হ্যা আপু ঠিক বলেছিস আমিতো মায়ের কথা ভুলেই গেছিলাম৷ বাবা হারানোর পর মা কে ও তো অবহেলা করেছি। আমি কালকেই মায়ের সাথে কথা বলবো। মায়ের সাথে কথা বলেই আমি রিদের সাথে কথা বলবো।
আরশি খুশিতে কেদে দিলো জরিয়ে ধরলো অন্তী কে।

অন্তী তোর জন্য আমরা সবাই কষ্ট পাচ্ছি আরিয়ান ও খুব চিন্তা করছে রে।
আর চিন্তা করতে হবে না৷ যা ভাইয়ার কাছে যা।

আরশি অবন্তী কে ছেড়ে বললো- আজ এখানে থাকবো বলে এসেছি।

এই একদম না আমি খুব ভালো করে জানি তুই ভাইয়াকে আর ভাইয়া তোকে কম ভালবাসা দিচ্ছে আমার জন্য তোরাও শান্তি তে নেই। যা ভাইয়ার কাছে যা আর গিয়ে বল কাল থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে।

ওলে বাবা আপনি এতো জানেন৷ মোটেই না আপনার ভাই আমাকে ঠিকি ভালবাসা দিচ্ছে আর আমিও।
তাহলে আমি ফুপি হতে পারবো তারাতারি তাইতো।
আরশি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।

বড় বড় করে তাকালো।
এই লজ্জা পাচ্ছিস কেনো। যা ভাইয়ার কাছে যা আমার রুমে তোর জায়গা নেই। বলে টানতে টানতে রুম থেকে বের করে দিলো। আরশি লজ্জায় কিছু বলতে পারলো না৷

অবন্তী ও অনেক দিন পর একটু হাসলো। সে খুব ভালো করেই জানে তার ভাই বাবা মারা যাওয়ার পর মানুসিকভাবে ভেঙে পড়েছে৷ ছেলে বলে হয়তো প্রকাশ করে না। পরিবারের চাপে সে যে আরশিকেও তেমন কাছে টানেনা সেটাও সে বুঝতে পেরেছে। কিন্তু আরশি ও খুবই ম্যাচিওর মেয়ে৷ সে সবটা মানিয়ে নিয়েছে।

আরিয়ানের পাশে থেকে সেও পরিবারটা কে সামলাচ্ছে। এই একমাসে সে কখনো কোনো অভিযোগ করেনি। রাতের বেলা আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে পেরেছে এই তার শান্তি আর কিছু লাগেনা তার৷

অবন্তীর কথা ভাবতে ভাবতে লজ্জাভরা মুখ নিয়ে নিজেদের রুমের দিকে পা বারালো। কয়েকবার টোকা দিতেই দরজা খুলে দিলো আরিয়ান। একি চলে আসলে যে৷

আরশি কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে রুমে ঢুকলো আরিয়ান সিটকিরি লাগিয়ে। বিছানায় তাকাতেই দেখে আরশি একধ্যানে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। মন খারাপ না কি কিছু বুঝে ওঠতে পারাছে না সে। তাই পাশে গিয়ে বোসে আরশির কাধে হাত রেখে বললো অন্তী কি বাজে বিহেইভ করেছে?

সাথে সাথে আরশি তাকে জরিয়ে ধরলে তার বুকে মুখ লুকালো আরিয়ান ভ্রকুচকে বললো-কি হলো হঠাৎ?
আরশি বললো –

তোমার বোনের মন গলে গেছে সে রিদের সাথে সব ঠিক করে নিবে।
সত্যি….

হুম
কীভাবে মানালে।

ওমনি মানিয়েছি।
আরিয়ান ও চিন্তা মুক্ত হয়ে আরশির কাধে ধরে ওঠিয়ে জিগ্যাস করলো-
তা আমার বউ কীভাবে কি করলো?

আরশি সবটা বললো।
আরিয়ান খুশিতে জরিয়ে ধরলো আবার।

আরশি হঠাৎ বলে ওঠলো – শুনো?
হুম।
মায়ের তো একটা সঙ্গী দরকার। আর সেটা অন্তী কে বলতেই ও আমাকে রুমে পাঠিয়ে দিলো।
বলেই আবার ও মুখ লুকালো বুকে।

কিসের সঙ্গী বুঝলামনা?

আর এমন লজ্জা পাচ্ছো কেনো?
আরশি রাগ করে ওঠে পড়লো। কিছুক্ষন আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে গালি দিলো গাধা কেথাকার।
একটুতে বুঝে না। মনে হয় ভাজা মাছটা ওলটে খেতে জানে না। অথচ সে ভাজা মাছ ওলটিয়ে পালটিয়ে ঝুরঝুরে করে খেতেও ওস্তাদ ভেবেই মুখ ভেঙচি কেটে শুয়ে পড়লো।

আরিয়ান অবাক হয়ে চেয়ে রইলো৷ এ মেয়ের হলো টা কি। আরিয়ান লাইট টা অফ করে আরশির পাশে শুয়ে পড়লো।

কি ব্যাপার আজ বুকে আসবেনা বলেই আরশির কাধে হাত রাখলো। আরশি এক ঝটকা দিয়ে হাত সরিয়ে দিলো।
আরিয়ানতো হতবাক মেয়েটার কি হলো হঠাৎ। কিসের সঙ্গী কি যেনো বললো ভেবেই আরশিকে টেনে বুকে আনলো। বুকে জরিয়ে জিগ্যাস করলো কি হয়েছে বউটার এমন অভিমান কেনো?
জানিনা….

আরে বলনা না বললে বুঝবো কি করে।

আরশি আমতা আমতা করে সব জরতা ভেঙে বলেই ফেললো – আমার একটা ছোট্ট আরিয়ান চাই….. বলেই মুখ লুকালো আরিয়ানের বুকে। কিছুক্ষনের জন্য আরিয়ান স্তব্ধ। তার পুরো শরীরে একটা শিহরন বয়ে গেলো। এই অনুভূতি টা একেবারেই আলাদা। এই অনুভূতি টা স্বামীর না।

কারো বাবা হওয়ার পূর্বাভাসের অনুভূতি। অজানা এক সুখ সুখ অনুভূতি হলো তার। আরশি কে শক্ত করে বুকে জরিয়ে নিলো। দুজনেই দুজনের অনুভূতি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।

আরিয়ান আরশির কানে ফিসফিস করে বললো- আমার সন্তানের মা হওয়ার অপেক্ষায় আছো? সব অপেক্ষারই তো অবসান ঘটিয়েছি এটা আবার বাদ রাখবো কেনো?

বলেই আরশির কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো। আরশিও পরম আবেশে চোখ বুজে ফেললো।
ধীরে ধীরে আরশির গালে, থুতনিতে, গলায় পাগলের মতো চুমু দিতে লাগলো। বিয়ের পর দ্বিতীয় বার তারা দুজন এতো কাছাকাছি।


পর্ব ২৪ (BANGLA CHOTO NEW GOLPO)

সারারাত চললো তাদের ভালবাসা। একে অপেরর সাথে মিশে যাওয়া। ভালবাসাময় রাতের অবসান ঘটলো।
সকালে খুব তারাতারি অবন্তী ঘুম থেকে ওঠে পরেছে। বাবা মারা যাওয়ার পর আজি প্রথম সে এতো সকাল সকাল ওঠলো। ওঠে এক কাপ চা বানিয়ে খেয়ে মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

রুমের দরজা খোলাই ছিলো। ভিতরে ঢুকেই দেখতে পেলো তার মা কোরান পড়ছে। সে গুটিগুটি পায়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। তার মায়ের স্রুতি মধুর আওয়াজ শুনছে এক মনে। সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো তার। আজ খুব মনে পড়ছে ছোটবেলার সেই দিন গুলো। মা কোরান পড়তো সে আর তার বাবা বিছানায় শুয়ে আওয়াজ শুনতো।
বাবার কথা মনে পড়ায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

বেশকিছুক্ষন পর আয়েশা বেগম কোরান পড়া শেষ করে। সব গুছিয়ে মেয়ের পাশে বোসলো।
মাথায় হাত বুলিয়ে বললো-কি রে আজ এতো সকালে ওঠেছিস? কিছু হয়েছে? কিছু বলবি?
অবন্তী চট করে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
মা একটু আদর করো না। আয়শা বেগম হেসে ফেললো। পরম আবেশে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো- মায়ের কথা মনে আছে এই বয়স্ক একা মানুষটার কথা তো সবাই ভুলেই গেছে।

অবন্তী তাকালো মায়ের দিকে করুন চোখে বললো- সরি মা। আর এমন হবে না।
মা কপালে চুমু একে বললো- সরি কিসের মায়ের কাছে আবার সরি বলতে হয় নাকি। সরি লাগবেনা আমার ভুল শুদরে নিলেই চলবে।
অবন্তী চোখ বন্ধ করেই বললো-আচ্ছা মা তোমরা সকলে যা চাও তাই হবে।
আমরা মানে তুই চাস না কপাল কুচকে বললো আয়েশা বেগম।

অবন্তী ওঠে বোসলো হুম চাই। মা তুমি আর চিন্তা করো না। বাবার মতো তোমাকে চিন্তায় ফেলতে চাইনা। সব আমি ঠিক করে নিবো। তুমি শুধু মন থেকে সব চিন্তা দূর করে দাও আর দুয়া করো তোমার মেয়ে যেনো সুখী হয়।

আয়েশা বেগম মেয়ের দুগালে আলতো করে ধরে বললেন- সেটা তো সব সময়ই চাইরে মা সেটা তোকে বলে দিতে হবে না। তুই শুধু রিদ বাবাকে মেনে নে।

আচ্ছা মা চলো দুজন মিলে খাবাড় রেডি করি আর আজ আমার ভার্সিটিতে যাওয়া লাগবে।
আচ্ছা চল।
বরাবর আরিয়ানের ই আগে ঘুম ভাঙে আজো তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ঘুম ভাঙতেই টের পেলো আরশিকে সে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে আছে। ঘুমন্ত মুখটা দেখে আরিয়ানের বুকে এক টান পড়লো।

বাশি শরীরের ঘ্রান নেওয়ার লোভটা আর সামলাতে পারলো না। আরশিকে তুলে নিজের শরীরের উপর সুইয়িয়ে দিলো। আরশির ঘুম ভেঙে গেলো। আর সে খুব ভালো ভাবেই টের পেলো সে আরিয়ানের বুকের উপর রয়েছে। বুকের ডিপডিপ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে সে। আরিয়ান পরম আবেশে আরশির চুলে মুখ গুজে দিয়েছে, চুল থেকে ঘারে, ঘার থেকে বুকে নাক ডুবিয়ে ঘ্রান নিতে ব্যাস্ত। আরশির পুরো শরীরে শিহরন বয়ে যাচ্ছে তার শ্বাস ভারী হয়ে গেছে। আরিয়ান ধীরে ধীরে আরশিকে শুইয়িয়ে দিলো।

পুরো শরীর জুরে তার ছোয়া লাগিয়ে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে শুরু করলো থামলো আরশির পেটের কাছে। নাভীতে মুখ গুজে দিতেই আরশি খামচে ধরলো আরিয়ানের চুল। এতোক্ষনে আরিয়ানের ঘোর ভাঙলো তার বউ এর ঘুম ভেঙে গেছে। আরিয়ান মুখ তুলে তাকালো আরশির দিকে আরশি লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো। আরিয়ান ওঠে তার পাশে শুয়ে পড়লো টেনে বুকে জরিয়ে নিলো আরশিকে।

আরশি ফিসফিসিয়ে বললো-আমার বর এতো রোমায়েন্টিক আগেতো বুঝিইনি।
আরিয়ান মুচকি হেসে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো- সবটা তো জমিয়ে রেখেছিলাম বউ করে সব দিব বলে। আরশি লজ্জায় শক্ত করে জরিয়ে ধরলো আরিয়ান কে আরিয়ান ও তাকে জরিয়েই রইলো।

রিদ অবন্তীদের বাড়ির সামনে এসে ওয়েট করছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই অবন্তী বেরিয়ে এলো পিছনে আরশি আসলো। রিদের সাথে কথা বললো ভিতরে যেতে বললো কিন্তু অফিস আছে বলে ভিতরে গেলো না।

অবন্তী গাড়ীতে বসে আরশিকে টাটা দিলো রিদ গাড়ী স্টার্ট দিলো। অবন্তী মাথা নিচু করেই বসে আছে। কি বলবে সে বুঝে ওঠতে পারছেনা। মানুষটাকে কাল কীভাবে অপমান করলো। দূরে যেতেতো পারলোই না মাঝখান থেকে দুজনেই কষ্ট পেলো। রিদের কথায় ঘোর কাটলো অবন্তী।

যা করেছো করেছোই সব কিছুর শোধ তুলবো বাসর রাতে। এখন এমন পেচার মতো মুখ করে আছো কেনো।
অবন্তী চমকে তাকালো রিদের দিকে রিদ আড় চোখে একবার তাকিয়ে আবার গাড়ি চালাতে মনোযোগ দিলো।
অবন্তী ভাবতে লাগলো মানুষটা কতো ভালোবাসে আমায় কতো বোঝে৷ না বলতেই অনেক কিছু বুঝে ফেলে এটাকেই হয়তো বলে ভালবাসা। আর আমি কিনা ছিঃ।

মায়ের কথায় ওনাকে ফোন করে আজ আমায় ভার্সিটি নিয়ে যেতে বলায় কোনো ভুল করিনি বরং সরি বলার সুযোগ পেলাম। সামনে এক্সাম আলাদা দেখাও করতে চাইতো না ওনি যা করেছি ঠিক করেছি ভেবেই অবন্তী রিদের দিকে তাকিয়ে বললো- সরি……
রিদ গাড়ি থামিয়ে দিলো।
অবন্তী হালকা কেঁপে ওঠলো আর ভাবলো-রেগে গেলো নাকি…
রিদ অবন্তীর দিকে তাকালো অবন্তী চোখ নামিয়ে ফেললো।

রিদ সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো- বেশী কথা বলোনা তাহলে কিন্তু ভুলভাল কিছু করে ফেলবো। এক্সাম অবদি টাইম নিবো না। তাই কাটা ঘায়ে আর নুনের ছিটে দিও না। পরে কিন্তু সামলাতে পারবে না। আর বউ ভুল করলে তো আর বউকে ছেড়ে দেওয়া যাবেনা বরং বউ কে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যাতে পরেরবার আর এই ভুল করার সাহস না পায়।

অবন্তী ভয়ে ঢোক গিললো। রিদ বাঁকা হেসে আবার গাড়ি স্ট্রাট দিলো। অবন্তী ভারী টেনশনে পড়ে গেলো।
রিদ কি ওকে মারবে নাকি বকবে সেই চিন্তায় তার মুখটা কালো হয়ে গেলো। রিদ আড় চোখে তাকালো বেশ বুঝতে পারলো তার বউ এর মনে কি চলছে।
চিন্তা করো না মারবোও না বোকবোও না।

অবন্তী আবার রিদের দিকে তাকালো। জিগ্যাসু চোখে?
রিদ বাঁকা হেসে বললো রাতবাসর করবো যখন তখনি বুঝতে পারবে কি শাস্তি…..
অবন্তী চোখ নামিয়ে ফেললো লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেলো। আর কিছু সে বলতে পারলো না। মাথা নিচু করেই বসে রইলো। রিদ আড় চোখে বারবার অবন্তীর অবস্থা দেখলো আর মিটি মিটি হাসলো।

ভারর্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামালো রিদ দীনা গেইটের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। রিদ ইশারা দিতেই দীনা গাড়ির সামনে আসলো। রিদ অবন্তী কে নামতে বললো। তার ঘোর কাটলো এসে পড়েছে ভার্সিটিতে খেয়ালই করেনি দীনাকে দেখে মুখে হাসি একে নেমে পড়লো।

রিদ তাকে বললো কাজ শেষে ফেরার সময় আমাকে একটা কল করবে। ফ্রি থাকলে আমিই পৌছে দিব তোমায় নয়তো রিকশা পাঠিয়ে দিবো।
অবন্তী মাথা নাড়ালো রিদ চলে গেলো।

সেদিন রিদ রিকশা পাঠিয়ে দিয়েছিলো সে আসতে পারেনি। এভাবেই কিছুদিন কেটে গেলো রিদ সময় করে ফোন দিয়ে খোজ নেয় অবন্তীর। সামনে এক্সাম তাই আর দেখা করে না। কিছুদিন পর এক্সাম শুরু হয় রিদই তাকে প্রতিদিন দিয়ে আসে নিয়ে আসে। যেদিন তার কাজ থাকে সেদিন আলাদা গাড়ি পাঠিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে ভার্সিটির সবাই জেনে গেছে সে রাফসান চৌধুরীর ওয়াইফ তাই সে যথেষ্ট সম্মান পায়।

কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি তার। বরং বেশ সুবিধা হয়েছে। এক্সাম শেষ। আর কদিন পরেই ছোটো খাটো অনুষ্ঠান করে অবন্তী কে ঘরে তুলবে রিদ। বেশ বড় করেই করতে চেয়েছিলো। কিন্তু আরশির বাবার অনেক রিকোয়েস্টে আপাদত ছোটো খাটো অনুষ্ঠান ই করছে ডিসেম্বরে একসাথে দুজোরা বর বউয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।
অবন্তী কে খুব ভারী সাজসজ্জায় সাজানো হয়েছে।

চোখ ফেরানো যাচ্ছে না তার থেকে আজ। আরশি তো অনেক মজা নিচ্ছে আর অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে রায়হান, রাতুল, রিদের আরো বন্ধুরা মিলে রিদের রুম সাজাচ্ছে পুরো রুম টাই তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে। পুরো বিছানায় তাজা গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। ফুলসজ্জার সাজে সজ্জিত করেছে তার বিছানা। আর দেয়ালের একপাশ জুরে রয়েছে আয়না এটাকে বলা যায় আয়না দেয়াল। আর এটা শুধু তার অবন্তী তার আয়না সুন্দরীর জন্য।


পর্ব ২৫ (অন্তিম)

রিদ অবন্তীর দ্বিতীয় বার বিয়ে খুব ভালো ভাবেই সম্পন্ন হলো। রিদ এখনো অবন্তীর মুখ দেখেনি। ঘোমটার আড়ালে তার মুখ। রিদের কথায়ই এইভাবে ঘোমটা দিয়ে রাখা হয়েছে তাকে।

সবাই হাসি ঠাট্রায় মজে আছে। আরিয়ান বাবার অনুপস্থিতিতে কোনো প্রকার ত্রুটি রাখে নি তার বোনের বিয়েতে। সবকিছু সে ভালো ভাবেই সামাল দিয়েছে। এতো খুশির দিনেও আরিয়ানের বুকটা ভারী ভারী লাগছে। বাবার অভাব সেই সাথে আদরের বোনের বিদায় আর কিছুক্ষন পরেই। বুকে পাথর চেপে সবার সাথে হাসি খুশি রয়েছে সে। তার এই চাপা কষ্ট আরশি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো।

অবন্তীর পাশ থেকে ওঠে আরিয়ানের পাশে গিয়ে হাত রাখলো আরিয়ানের কাঁধে। আরিয়ান ঘুরে তাকাতেই আরশি চোখ দুটো নিচের দিকে মেললো। আরিয়ান হালকা হাসলো। তার বউ যে খুব বুঝে তাকে তাই সেই ভরসা মাখা চাহনিতে বুকের ভারটা কিছুটা হলেও হালকা হলো তার।
রিদের বাবাকে নিয়ে রায়হান আগেই চলে গেছে।

এবার তাদের ফেরার পালা। আয়েশা বেগম মেয়েকে জরিয়ে খুব কাঁদলেন। অবন্তী ও কান্নায় ভেঙে পড়লো একটা মেয়ের বিয়ের পর বিদায়ের সময়ের যে কষ্ট সেটা শুধু একটা মেয়েই বোঝে। এই অনুভূতি কোনো ছেলেই পায় না। আয়েশা বেগম রিদের হাত ধরে কাদলেন আর বললেন- আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো বাবা। আমার কলিজার টুকরাটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। রিদ আয়েশা বেগমের চোখের পানি মুছে দিয়ে ভরসা দিলেন।
আরিয়ানকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে অবন্তী।
ভাইয়া এই ভাইয়া মা কে দেখে রাখবি কিন্তু। আর আরশি আপুর সাথে কখনো রাগবি না। তুই ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করবি। বেশী টেনশন নিবি না। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো অবন্তী। আরিয়ান বোনের দুগালে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো- তুই ও নিজের খেয়াল রাখিস।

অবন্তী কান্না জরিত কন্ঠে বললো- কাল কখন যাবি ভাইয়া?
সকালেই চলে যাবো বলেই বোনের চোখের জল মুছে দিলো। আরশির দিকে তাকিয়ে বললো অবন্তী – মা আর ভাইয়া কে সামলে রাখিস। আরশি অবন্তী কে জাবটে ধরে কেঁদে দিলো। আরিয়ান দুজনকেই জরিয়ে ধরে সান্ত্বনা দিলো।
আয়েশা বেগম, আরিয়ান, আরশি মিলে অবন্তী কে গাড়িতে ওঠিয়ে দিলো। চলে গেলো অবন্তী শশুর বাড়ি। আয়েশা বেগমকে ধরে নিয়ে রুমে পৌছে দিলো আরশি আরিয়ান।

আয়েশা বেগম স্বামীর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বললো- তোমার ইচ্ছা আজ পূরন হলো৷ তোমার মেয়ে শশুর বাড়ি চলে গেছে। দূয়া করো মেয়েটা যেনো সুখী হয়। বলেই চোখের জল ফেললো।

রিদ এর বাবা হইল চেয়ারে বসে আছেন মমতা চাচী বউ বরন করে ঘরে তুললেন। রূপম কেও জেল থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সে যথেষ্ট অনুতপ্ত। কিন্তু তার মায়ের শাস্তি এখনো পুরো হয়নি সে এখনো অনুতপ্ত নয় তাই রিদ রূপমকে ফিরিয়ে আনলেও তার মা কে ফিরিয়ে আনেনি।

অবন্তী কে সোফায় বসিয়ে রাখা হয়েছে পাশে রয়েছে দীনা আর রাতুল। দীনা আর রাতুল গল্প করছে অবন্তী বসে শুনছে। নতুন বউ সে তাই চুপ করে বসে ছাড়া থাকা উপায় নেই। এদিকে তার হার্টবিট ১০০গতিতে দৌড়াতে শুরু করে দিয়েছে। রিদ যে ভয় দেখিয়েছে সেদিন। বার বার তার গলা শুকিয়ে আসছে। অবশেষে লজ্জা সরম কাটিয়েই দীনা কে বললো – এই দীনা আমার খুব পানি পিপাসা পেয়েছে।

কিরে পানি পিপাসা পেয়েছে মানে এখনি এই অবস্থা। জিজুতো আসেইনি জিজুর সামনে কি হবে হুম। ভ্রু নাচিয়ে মজা নিতে শুরু করে দিলো দীনা। এদিকে মমতা চাচী এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে বললো-এই নাও মা খেয়ে নাও।
অবন্তী একটু উপরে তাকিয়ে গ্লাস নিয়ে পানিটা খেয়ে নিলো। কিছুক্ষন পর রায়হানের ডাকে রাতুল দীনা ওঠে গেলো। মমতা চাচী পাশেই বসে আছে অবন্তীর। কয়েক মিনিট পর রিদ আসলো মমতা চাচী- এসো বাবা বসে বউমার সাথে কথা বলো বলেই ওঠে গেলো।

রিদ ধীর পায়ে অবন্তীর কাছে আসলো। অবন্তী বসে বসে তার দুহাত মুচরাতে লাগলো। তার আবারো গলা শুকিয়ে গেছে। বুকের ভিতর অন্যরকম ভয় কাজ করছে তার। রিদ আদুরে গলায় ডাকলো-
অন্তী……….

অবন্তীর কান জুরে যেনো এক শীতল হাওয়া বয়ে গেলো বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেলো তার পা।
হাতটা কি ভেঙে ফেলবে নাকি। তারপর আমার কি হবে বলোতো বউ এর হাতের রান্না খাওয়ার আর ভাগ্য হবে না। বলেই বাঁকা হাসলো।

অবন্তী চমকে ওঠলো। রিদ দুকাধে ধরে তাকে ওঠালো তাকে সামনে এনে পিছন দিক ঘুরিয়ে ঘোমটার ভিতর তার দুহাত ঢুকিয়ে দিলো। অবন্তীর দুচোখ আবদ্ধ করে ফেললো তার দুহাতে। রিদের বাম পাশে অবন্তী কে রেখে দুহাতে চোখ ঢেকে সামনের দিকে এগোতে বললো। অবন্তী কিছুই বুঝতে পারলো না তার সাথে কি হচ্ছে। মনে মনে ভাবতে লাগলো – কি করতে চাচ্ছে ওনি।

আমার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাও কিছুক্ষন পরেই টের পাবে সবটা।
অবন্তী একটা শ্বাস ফেললো যার শব্দ রিদ পেয়ে বাঁকা হাসলো।

সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠলো রিদ অবন্তী। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো রিদের রুমে। রিদ রুমে ঢুকে অবন্তিকে নিয়ে উওর মুখ বরাবর দাঁড়ালো ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে নিলো রিদ। অবন্তীর কানের কাছে গিয়ে বললো চোখ খুলো। রিদের গরম নিশ্বাস অবন্তীর কানে পড়তেই তার পুরো শরীরে শিহরন বয়ে গেলো।

দুহাতে ঘোমটা ওঠিয়ে সামনের দিকে চোখ তুলে তাকালো। সাথে সাথে তার চোখের সামনে ভেসে এলো একজোড়া দম্পতি। হ্যা লালটুকটুকে বেনারশী পড়ে বউ সাজে অবন্তী আর বরের বেশে রিদকেই দেখা যাচ্ছে। অবন্তী হা করে তাকিয়ে আছে রিদের দিকে চোখ পড়তেই দেখতে পেলো রিদ সামনের দিকে তার দৃষ্টি স্থির রেখেছে।

মন ভরে দেখছে তার আয়না সুন্দরী কে। এই দিনটারই তো অপেক্ষায় ছিলো সে৷ তাইতো পুরো রুমের একপাশ জুরে আয়না দেয়াল তৈরি করেছে সে। শুধু তার অবন্তীর জন্য। রিদকে অমন করে তাকাতে দেখে অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো চোখ সরিয়ে নিলো সেখান থেকে। আয়নায় আবার তাকাতেই খেয়াল করলো পিছনের বিছানায়।

বিছানায় তাকাতেই তার পুরো শরীরে উথাল পাথাল ঢেউ বইতে লাগলো৷ তাজা ফুলের সাজে সজ্জিত বিছানা টা দেখে অবন্তী লজ্জায় চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। রিদ আয়নাতেই অবন্তী কে ঐভাবে দেখে হালকা হেসে দিলো। অবন্তীর কানের কাছে গিয়ে বললো-
বলেছিলামনা বিয়ের পর প্রত্যেকটা দিন প্রত্যেকটা রাত প্রত্যেকটা সকাল আয়নাতে আমার আয়না সুন্দরী কে দেখতে চাই।
অবন্তী রিদের দিকে তাকালো লজ্জা মাখা মুখ করে বললো- আপনি একটা পাগল বলেই পিছন ঘুরলো অবন্তী। রিদ হেসে দিলো পেছন থেকে অবন্তী কে জরিয়ে ধরে বললো- সে তো তোমার জন্যই।

অবন্তী চোখ দুটে বন্ধ করে ফেললো অনুভব করতে লাগলো রিদ কে। রিদ কানের পিঠে মুখ দিয়ে বললো- সারপ্রাইজ টা কেমন লেগেছে?
অবন্তী উওর দিলো ভীষন ভালো লেগেছে। অবন্তীর আওয়াজ শুনেই রিদের ঘোর লেগে গেলো। ভারী নিশ্বাসের শব্দ অনুভব করতে পারলো। অবন্তী কে ছেড়ে দিলো রিদ।

সাথে সাথে অবন্তী ঘন ঘন শ্বাস নিতে শুরু করলো। মনে হয় এতোক্ষন তার দম টা আটকে ছিলো। রিদ আবার অবন্তীর দিকে এগিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো। সাথে সাথে অবন্তী আবার তার চোখ দুটো বুজে ফেললো। রিদ তার দিকে তাকিয়েই ধীরে ধীরে বিছানায় এগোতে লাগলো।
বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো অবন্তীকে। ধীরে ধীরে তার মুখের কাছে এগোলো কপাল থেকে টিকলি খুলে ফেললো বিছানার একপাশে রাখলো টিকলি। কানের কাছে এগিয়ে কানের দুল খুলে ফেললো। অবন্তীর ঘন নিশ্বাস রিদের মুখে লাগছে রিদ ঘোর লাগা চোখে তাকে দেখছে আর তার শরীরের সব গহনা খুলছে।

অবন্তীর চোখ দুটো বন্ধই রয়েছে। সব গহনা খুলার পর শাড়ির আচলে হাত দিতেই অবন্তী রিদের হাত ধরে ফেললো। চোখ মেলে তাকালো রিদের দিকে রিদ ও ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকালো। রিদের সে দৃষ্টিতে তকিয়ে থাকার ক্ষমতা অবন্তীর হলো না।

চোখ সরিয়ে ফেললো। রিদ আবার তার কাজে মনোযোগ দিলো। শাড়ির আচল খুলতেই অবন্তী চট করে ওঠে রিদ কে জরিয়ে ধরলো। ঘনঘন নিশ্বাস রিদের ঘারে লাগতে লাগলো। শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে অবন্তী রিদ কে। রিদ একহাতে অবন্তীর কোমড় চেপে ধরলো সাথে সাথে কেঁপে ওঠলো অবন্তী। দুহাতে খামচে ধরলো রিদের পিঠ। রিদ একহাতে কোমড় জরিয়ে অন্য হাতে অবন্তীর ব্লাউজের ফিতায় টান দিলো। অবন্তী ভয়ে আরো জোরে আকড়ে ধরলো রিদ কে। রিদ অবন্তীর ঘারে মুখ ডুবিয়ে দিলো। পিঠে স্পর্শ করতেই অবন্তী বার বার কেঁপে ওঠলো।

রিদ অবন্তী কে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো একহাতে আরেক হাতে তার শাড়িটা এক টানে খুলে ফেলে দিলো ফ্লোরে।
অবন্তী ভয়ে কেঁদে দিলো। তার কান্নাতেও আজ রিদের ঘোর কাটলো না সে ধীরে ধীরে মুখ এগিয়ে নিলো অবন্তীর মুখের দিকে। অবন্তীর ঠোঁট জোরা সম্পূর্ণ নিজের আয়ত্তে করে নিলো। বেশ কিছুক্ষন পর রিদ চোখ তুলে তাকালো অবন্তীর দিকে। অবন্তীর চোখে পানি দেখে তার কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো।

অবন্তী কিছু বলতে যাবে তার আগেই শাহাদাৎ আঙুল দিয়ে তার ঠোঁট চেপে ধরলো। ভারী আওয়াজে বললো- আজ কোনো কথা নয়। আজকের রাতটা আমাদের দুজনেরই দীর্ঘ প্রতিক্ষার রাত। আজ কোনো বাঁধা নয় আজকে দুজনেরই দুজনকে আপন করে নেওয়ার রাত। আর আমি জানি এই দিনটার জন্য তুমিও অপেক্ষায় আছো। বলেই আর কিছু বলার সুযোগ অবন্তীকে দিলো না রিদ। তার ঠোঁটে, থুতনিতে, গলায় ভালবাসার ছোয়া দিতে লাগলো।

অবন্তীকে একেবারেই নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো রিদ। সারারাত অবন্তীর মাঝে ডুবে রইলো রিদ। অবন্তী ও রিদকে তার সমস্ত ভালবাসা দিয়ে ঘিরে রাখলো। দুজনেই মিশে গেলো দুজনাতে। আর কোনো পিছুটান নেই তাদের, নেই কোনো হারানোর ভয়।
সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো অবন্তীর। পুরো শরীর জুরে ব্যাথা অনুভব হলো তার। আর অনুভব হলো ভারী কিছু তার উপর রয়েছে। চোখ খুলতেই মনে পড়ে গেলো কাল রাতের কথা। লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে। একহাত দিয়ে রিদ কে নাড়াতেই সে আরো ভালো ভাবে চেপে ধরলো অবন্তী কে।

অবন্তীর দম আটকে যাওয়ার অবস্থা। সাতচল্লিশ কেজি ওজনের মেয়েটা পচাওর কেজি ওজনের ভার কিকরে সহ্য করবে তাও এইভাবে চেপে ধরলে। সহ্য করতে না পেরে একটু জোরেই কেঁদে ওঠলো অবন্তী। রিদ চমকে ওঠে ধপ করে বসে পড়লো। অবন্তী কাচুমাচু মুখ করে মাথা নিচু করে ওঠে বসলো গায়ে চাদর জরিয়ে।

রিদ অবাক চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগলো অবন্তী কে। অবন্তীর চোখে পানি দেখে রিদ ভ্রু কুচকে জিগ্যাস করলো কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?

অবন্তী কিছু না বলে মাথা নিচু করেই চাদর জরিয়ে ওঠে পড়তে নিলো। রিদ একটানে অবন্তীকে তার ওপর ফেলে দিলো দুহাতে জরিয়ে ধরলো।

কি হয়েছে আগে বলো তার আগে ছাড়ছিনা বলেই অবন্তীর ঘাড়ে নাক ঘষতে লাগলো। অবন্তী ছাড়াতে চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলো না। রিদ এবার শক্ত গলায় বললো -বলেছিতো কান্নার কারন বললেই ছেড়ে দিবো।
অবন্তী একটু ভয় পেয়েই বললো- আমার খুব শরীর ব্যাথা করছে।
রিদ অবাক হয়ে তাকালো অবন্তীর দিকে?
শরীর ব্যাথা………

অবন্তী চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে বলে ফেললো আপনি অনেক ভারী।

রিদ কথা টা শুনে হা হয়ে গেলো অবন্তী কে হালকা করে দিলো। সে চট করে ওঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রিদ কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছে না। বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করলে এই এক সমস্যা মাএ পচাওর কেজীই ভারী লাগলো। ভেবেই মুচকি হাসলো রিদ। একটু মায়া হলো তার রাতের কথা ভাবতেই সে বললো- ইশ একবারে বেশীই ধকল গেছে মেয়েটার। তারপর আবার ভাবলো এটাই তো ওর শাস্তি ভেবে আবারো মুচকি হাসলো।

অবন্তী তয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে। আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো। ঘাড়ের দিকে তাকাতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। তার ঘারেও লাল দাগের আবরন পড়েছে। রিদের ভালবাসার চিন্হ ভেবেই এক চিলতে হাসি দিলো।

এদিকে ধীর পায়ে এসে রিদ পিছন থেকে অবন্তী কে জরিয়ে ধরলো। সাথে সাথেই কেঁপে ওঠলো অবন্তী। আয়নায় তাকিয়ে রিদকে দেখে লজ্জা পেলো। রিদ অবন্তীর চুলে মুখ গুজে দিলো। পরম আবেশে ঘ্রান নিতে লাগলো তার চুলের। ধীরে ধীরে মুখ তুলে অবন্তীর মাথার সাথে মাথা হেলিয়ে জরিয়ে ধরেই আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো-

ভালোবাসি আয়না সুন্দরী। অনেক অনেক ভালবাসি। অবন্তী লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো রিদ অবন্তী কে

কোলে কোরে নিয়ে জানালার কাছে নিয়ে নামিয়ে দিলো। অবন্তী কে জানালার ফাকে সূর্যের আলোর দিকে তাকাতে বললো অবন্তী তাকালো। রোদের আলো মুখে পড়তেই অবন্তীর মুখের দিকে তাকালো রিদ অপরূপ সুন্দরী লাগছে অবন্তী কে। ভীষন স্নিগ্ধ আর আবেদনময়ী লাগছে তাকে। রিদ অবন্তীকে আবারো পিছন থেকে জরিয়ে ধরে
কানের কাছে মুখ নিয়ে গাইতে শুরু করলো-
হৃদয়ে পেতেছি প্রেমেরি বিছানা, আমি তোমার হতে চাই।

দুজনে দুজনার হাতে হাত রেখে সারাজীবন চলতে চাই।
যদি কখনো মরনও আসে চাইবো সেদিনও তোমায়।

অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন।
পেলাম খুঁজে এ ভূবনে আমার আপনজন।

লেখিকা – ওশিন নাঈমা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “আয়না সুন্দরী – Bangla choto new golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – হিয়ার মাঝে – Valobashar choto golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *