বেষ্ট ফ্রেন্ড যখন বউ – (সিজন ১) – Arekti premer golpo

বেষ্ট ফ্রেন্ড যখন বউ – (সিজন ১) – Arekti premer golpo: কোন কথা না বলে চুপ করে জান্নাতের পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেল আমিও ঢুকে গেলাম। তারপর জান্নাত আমার পছন্দের কিছু খাবার অডার করলো।


পর্ব ১

জান্নাতঃ আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছো? (গল্পের নায়িকা )
আম্মুঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস রে মা?

জান্নাতঃ এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
আম্মুঃ অনেক দিন পর আমাদের বাসায় আসলি। বস আমি চা বানিয়ে আনছি।

জান্নাতঃ না আন্টি এখন এই সব কিছুই করতে হবে না। আনি হনুমানটাকে কলেজে নিয়ে যেতে এসেছি।
আম্মুঃ ও তো এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।

জান্নাতঃ দাঁড়াও আমি ওর ঘুম বের করছি।
তারপর জান্নাত এক দৌড়ে আমার ঘরে চলে আসলো।

জান্নাতঃ এই নাসিম উঠ। ( গল্পের নায়ক )
আমিঃ …………….
জান্নাতঃ তুই উঠবি নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা করবো?

আমিঃ আম্মু যাও তো আর একটু ঘুমিয়ে উঠছি।
জান্নাতঃ দাড়া তোর ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছি।

এই কথা বলে জান্নাত এক মগ পানি নিয়ে এসে আমার ( নাসিমের ) গায়ে ঢেলে দিলো। আমি পানি চোখে পড়াতে ধরফর করে উঠে বসে পড়লাম।
আমিঃ আম্মু আমাদের সাদ ফেটে গেছে।
জান্নাতঃ ঐ চুপ।

আমিঃ ………….( আমি তো জান্নাতের এক ধমকে চুপ হয়ে গেলাম। )
জান্নাতঃ তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস কেন?

আমিঃ…………….
জান্নাতঃ ঐ কথা বলছিস না কেন? তুই বোবার মত বসে আছিস কেন?

আমিঃ তুই তো কথা বলতে নিষেধ করলি।
জান্নাতঃ তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো। ( তেড়ে মারতে আসতে লাগলো। )

আমিঃ বোন তুই থাক আমি গেলাম।
এক দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে আসলাম। ওর সামনে থাকলে নিশ্চিত মার খেতে হবে। ও যেই পরিমাণ রাগী।

ওর মত রাগী মেয়ে সচরাচর দেখা যায় না।
ওহ আপনাদের তো আমার পরিচয় দেওয়ায় হয়নি। আমি নাসিম আরাফাত।

বাবা মায়ের দুইমাত্র সন্তান। বুঝলেন না তো, আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি। আমি আর আমার একটা ছোট বোন আছে তার নাম হলো মিমি। আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি আর ও ক্লাস এইটে পড়ে। আর আব্বু ব্যবসার কাজে সিংগাপুরে আছে।

আর একটু আগে যার সাথে আমার ঝগড়া হলো সে আমার ফ্রেন্ড থুক্কু বেষ্ট দুশমন জান্নাত। ও আমার ছোট বেলার বন্ধু। ও বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আর আমরা একই সাথে পড়াশোনা করি।

জান্নাতঃ ঐ সালা পিচাস বাথরুমে ঢুকে কি ঘুমিয়ে গেছিস?
এই রে আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে মনেই নেই।

জান্নাতঃ তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আয়। আমি নিচে গেলাম।
যাক বাবা বাঁচা গেল। একটু আরামছে কাম সারা যাবে। তারপর ফ্রেস হয়ে কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে আসলাম।
আমিঃ আম্মু খুব খুধা লাগছে। তাড়াতাড়ি নাস্তা দেও তো।

আম্মুঃ আচ্ছা বস আমি দিচ্ছি।
জান্নাতঃ না তোর খাওয়া লাগবে না। চল আজ না খেয়ে থাকতে হবে।

আমিঃ আম্মু ……
আম্মুঃ জান্নাত যখন নিষেধ করেছে তখন আমার কিছুই করার নেই।
আমিঃ ধুর কিছুই ভালো লাগে না। এই তুই আমার বাসায় আসবি না তো।

জান্নাতঃ ১০০ বার আসবো পারলে ঠেকিয়ে দেখাস। এখন চলে কলেজে পৌঁছাতে দেরি হবে।
আমিঃ চল।

কি আর করার জান্নাতের জন্য না খেয়েই কলেজে যেতে হবে। বাইক নিয়ে গেটের বাইরে আসলাম।
আমিঃ ওঠ।

জান্নাতঃ যদি ফাউ ফাউ ব্রেক ধরিস তোর খবর আছে।
আমিঃ তোর প্রতি আমার কোন ফিলিংস আসে না। তাহলে ব। ব্রেক ধরবো কেন?

জান্নাতঃ মনে হচ্ছে তুই কোনো যুবরাজ যে, তোর প্রতি আমার আকর্ষণ আছে। আর তুই কেমন লুচু আমার জানা আছে।
আমিঃ ধুর তোর সাথে বকবক করা আর পেতনির সাথে বকফক করা একি কথা।

জান্নাতঃ দেখ তুই যদি আর একবার আমাকে পেতনি বলিস আমি কিন্তু তোকে কি করবো নিজেও বলতে পারছি না।
আমিঃ ওকে আমার ভুল হয়েছে এখন তুই ভালো করে ধরে বস। আমি গাড়ি চালাব।
জান্নাতঃ হুম টান।

তারপর আর কথা না বাড়িয়ে বাইক নিয়ে টান দিলাম। হঠাৎ জান্নাত বলে উঠলো।
জান্নাতঃ নাসিম দাঁড়া দাঁড়া।
আমিঃ কেন?

জান্নাতঃ তোকে দাড়াতে বলছি দাঁড়া।
আমিঃ হুম গাড়ি ব্রেক করলাম। এবার বল কি করবি?
জান্নাতঃ পিছনে একটা রেস্টুরেন্ট ফেলে এসেছি ওখানে নিয়ে চল।

আমিঃ তুই যে, কখন কি করিস আমি নিজেও বুঝতে পারি না। ( বাইক ঘুরিয়ে )
রেস্টুরেন্টের সামনে এসে বাইক থামালাম।

আমিঃ এবার নাম তোর কাজ সেরে তাড়াতাড়ি আয়।
জান্নাতঃ তুই নামছিস না কেন?
আমিঃ আমি নেমে কি করবো?

জান্নাতঃ তোর কি পাবলিক প্লেসে থাপ্পড় খাওয়ার খুব শখ হয়েছে?
আমিঃ না।
জান্নাতঃ তাহলে কোন কথা না বলে চুপ করে আমার সাথে সাথে আয়।

আমিঃ হুম।

জান্নাতের উপর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নাই। কখন কোথায় কী করবে ও নিজেই জানে না। কি জন্য যে, এর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে গিয়েছিলাম আল্লাহ ভালো জানেন।

কোন কথা না বলে চুপ করে জান্নাতের পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেল আমিও ঢুকে গেলাম। তারপর জান্নাত আমার পছন্দের কিছু খাবার অডার করলো। ওয়েটার কিছুক্ষণ পর খাবার ‌দিয়ে গেল। আমি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আছি।
জান্নাতঃ হ্যবলার মত আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?

আমিঃ তা আমি কি করবো?
জান্নাতঃ এই খাবার গুলো অডার করলাম কার জন্য? তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু কর।
আমিঃ তুই খাবি না?
জান্নাতঃ না আমি বাসা থেকে খেয়ে এসেছি।

কি আর করার জান্নাতকে এখন হাজার বার বললেও আর খাবে না। আমি খাওয়া শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি জান্নাত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিঃ কি হলো তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
জান্নাতঃ ক কই কিছু না। তুই খা।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে খেতে লাগলাম। আমার খাওয়া দাওয়া শেষ হলে জান্নাত বিল দিয়ে দিলো।
আমিঃ তোর দেওয়া লাগবে না। আমি দিয়ে দিচ্ছি।
জান্নাতঃ তোর দেওয়া লাগবে না। আমি দিচ্ছি।

আমিঃ ওকে। তোর বাপের এত টাকা খাবে কে? যাহ তোর বিয়ের সময় তোর বড়কে একটা ঘরি গিফট দিয়ে দেবো।
জান্নাতঃ আমার বাপের টাকা কে খাবে না খাবে তোর এত ভাবা লাগবে না।

তারপর জান্নাতের বিল দেওয়া শেষ হলে আমরা আবার বাইকে করে কলেজে চলে আসলাম। আমি বাইক পার্কিং করে এসে আমি আর জান্নাত ক্যনটিনের দিকে যাচ্ছিলাম এমন সময় একটা ছেলে আমাকে ডাকলো।
ছেলেঃ ভাই একটু শুনবেন প্লিজ।

আমিঃ জি ভাই বলেন।
ছেলেঃ একটু এদিকে আসেন।
আমিঃ জান্নাত তুই একটু দাঁড়া আমি আসছি।
তারপর একটু সরে আসলাম।

আমিঃ হুম বলেন‌ কি বলবেন?
ছেলেঃ আপনার সাথে যে আছে তার নাম তো জান্নাত তাই না?
আমিঃ তো?

ছেলেঃ আসলে আমি জাননাতকে পছন্দ করি। আর আমি এটাও খোঁজ নিয়েছি যে, জান্নাত আপনার বেষ্ট ফ্রেন্ড gf না।
আমিঃ ……..( তোর মনে হচ্ছে মার খাওয়ার শখ হয়েছে )
ছেলেঃ কি হলো ভাই কথা বলছেন না কেন?

আমিঃ আপনি জান্নাতকে পছন্দ করেন তাহলে আমাকে বলেছেন কেন? যান গিয়ে জান্নাতকে প্রপোজ করেন।
ছেলেঃ ওকে আপনি দাড়ান আমি এক্ষুনি প্রপোজ করবো।
আমিঃ বেস্ট অফ লাক ব্র।

ছেলেঃ হুম।


পর্ব 2

ছেলেঃ ওকে আপনি দাড়ান আমি এক্ষুনি প্রপোজ করবো।
আমিঃ বেস্ট অফ লাক ব্র।

ছেলেঃ হুম।
তারপর ছেলেটি গুটি গুটি পায়ে গিয়ে জান্নাতের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। আর আমি কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছি।

ছেলেটি হাঁটু গেড়ে জান্নাত কে কবিতা আকারে করে প্রপোজ করলো। আর জান্নাত আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ দিয়ে ইশারা করলাম কি হলো? ও মনে হচ্ছে আরো বেশি রেগে গেল। আমি আবার ইশারা করে বললাম প্রপোজ এ‌কসেপ্ট কর।

আরে ভাই কি বলবো ধুম ধাম করে তাল কড়া শুরু হলো। জান্নাত ছেলেটিকে চড় থাপ্পড় ঘুষি মারতে শুরু করলো ছেলেটি শুয়ে পড়লে লাত্থি মারতে শুরু করলো আর বেচারা ছেলেটি মাটিতে গড়াগড়ি করতে লাগলো।

আমি অবস্থা বেগতিক দেখে জান্নাতকে সরিয়ে আনতে গেলাম। কিন্তু জান্নাতের হাত এর নড়াচড়ার ফলে আনতে পারছি না। সেজন্য জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে এক সাইড করে নিলাম।

ছেলেটি কোনরকমে মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল।
জান্নাতঃ তোকে যদি আর কখনো আমার সামনে দেখি তাহলে তোর ১২ টা বাজিয়ে ছাড়বো।
ছেলেটি : তোকেও এর মাসুল দিতে হবে।

জান্নাতঃ তোকে তো আমি…..
জান্নাত ছেলেটিকে লাত্থি মারতে গেলে আমি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। যার কারণে আর মারতে পারলো না।
আমিঃ তুই এখন এখান ভাগ। নয়তো তোর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।

ছেলেটি চলে গেল জান্নাত এখনো ছুটাছুটি করছে। আমি সামনাসামনি করে জড়িয়ে ধরে থাকলাম। জান্নাতও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
আমিঃ কি হলো তুই আবার কাঁদছিস কেন? তুই তো ছেলেটিকে চড় থাপ্পড় ও লাত্থি মারতে মারতে শুয়াই ফেললি।
আমিঃ তোর সামনে ঐ ছেলেটি আমাকে প্রপোজ করছে আর তুই কিছুই বললি না কেন?

আমিঃ ওমা আমি আবার কি করবো? ও তোকে পছন্দ করে তাই প্রপোজ করলো এখন তোর ভালো লাগলে একসেপ্ট করবি নয়তো রিজেক্ট করবি। ( ছেড়ে দিলাম )
জান্নাতঃ ওহ তাইতো। তুই কি করবি তোর চো কিছুই করার নেই। আচ্ছা তুই ক্লাসে যা আমি বাসায় যাবো। ( কান্না থামিয়ে )
আমিঃ আচ্ছা যা।

জান্নাত চলে গেল আর আমি ইভান ও রাকিবদের কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার ৩ ফ্রেন্ড ইভান, রাকিব ও মারিয়া বসে আছে।
আমিঃ কিরে কি করছ তোরা?

ইভানঃ এই তো মামা ভালোই আছি। তা জান্নাত কোথায়?
আমিঃ আরে বলিস না বাইক পার্ক করে আমি আর জান্নাত আসছিলাম হঠাৎ………..………….. এটা হলো তারপর জান্নাত চলে গেল।
মারিয়াঃ মামা আমি তোকে একটা কথা বলি?
আমিঃ নিষেধ করেছে কে? না করলেও বলবি সো বলে ফেল।

মারিয়াঃ জান্নাত হয়তো‌ তোকে ভালবাসে।
সবাইঃ ….
মারিয়াঃ ঐ আমি আবার কি এমন কথা বললাম যে, তোরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিচ্ছিস?

রাকিব : তুই তো হাসার মত জোকস্ বললি তা আমরা হাসবো না?
মারিয়াঃ ধুর তোদের এখানে আমি থাকবোই না।

আমিঃ আরে তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস?
মারিয়াঃ ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে আমি ক্লাসে যাচ্ছি।

আমিঃ যাহ ক্লাস করতে যা।
জান্নাত হলো আমাদের ক্লাসের এক নম্বর স্টুডেন্ট। আর আমি শেষের দিকের স্টুডেন্ট। আমি ক্লাস না করতে চাইলেও জান্নাত জোর করে ক্লাসে নিয়ে যায়। আর আজ যেহুতু জান্নাত নেই তার মানে আজ আমার ছুটি।
ইভানঃ চল মামা কোথাও থেকে ঘুরে আসি।

আমিঃ কোথায় যাবি রে?
এ দিকে………..
জান্নাত রাগ করে বাসায় চলে আসল। জান্নাত যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই নাসিমকে ভালোবাসে। কিন্তু বন্ধুত্ব ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে কখনো বলতে পারেনি।

তবে জান্নাত অনেক ভাবেই নাসিমকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু নাসিম কোন ভাবেই বুঝতে পারছে না বা না বুঝার ভান করে রয়েছে।
জান্নাত কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ঢুকলো। আন্টি ( জান্নাতের আম্মু ) দেখলো জান্নাত কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ঢুকলো। জান্নাত সোজা গিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।

আন্টিঃ জান্নাত তোর কি হলো? দরজা খোল।
জান্নাতঃ ……………( চোখ মুছে সব ঠিক করছে। )
আন্টিঃ কি হলো তুই কথা বলছিস না কেন?

জান্নাতঃ আম্মু আমার কিছুই হয়নি। ভালো লাগছে না তাই আজ ক্লাস না করে চলে আসলাম। ( কিছুটা কাঁদো কাঁদো গলায় )
আন্টিঃ তুই তো কখনো ক্লাস শেষ না করে বাসায় ফিরে আসিস না আজ কি এমন হলো?

জান্নাতঃ আমাকে একটু একা থাকতে দেও প্লিজ ( কেঁদে দিলো )
আন্টিঃ মা তুই দরজাটা একটু খোল তো।
জান্নাতঃ তুমি যদি এখন না যাও আমি কিন্তু খারাপ কিছু করে ফেলবো।

আন্টিঃ আমি চলে যাচ্ছি।
তারপর আন্টি জান্নাতের ওখান থেকে চলে আসলো।

এ দিকে….
তারপর হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো। আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি আন্টি ফোন করেছে। আমি ফোন পিক করলাম।
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি কেমন আছো?

আন্টিঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। কিন্তু জান্নাতের কি হয়েছে?
আমিঃ কেন আন্টি কি হয়েছে?

আন্টিঃ জান্নাত বাসায় কাঁদতে কাঁদতে আসলো।
আমিঃ আন্টি তেমন কিছু হয়নি। একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।
ইভানঃ তা কোথায় ঘুরতে যাবি রে?

আমিঃ আজ আর যাবো না। কিছুই ভালো লাগছে না।
রাকিব : তোর আবার কি হলো?

আমিঃ তেমন কিছু না। এমনি ভালো লাগছে না। আচ্ছা আমি এখন বাসায় যাবো তোদের সাথে পরে কথা হবে বাই বাই।
ইভানঃ ওকে সাবধানে যাস।
তারপর কোন কথা না বলে বাসায় চলে আসলাম।

ইতিপূর্বে কয়েকটি গল্পের আইডি খুলেছি। সব কয়টা আইডি নষ্ট হয়ে গেছে। আর বন্ধুদের কে ও আমার লেখা গল্প গুলোও হারিয়ে ফেলেছি। সেই জন্যই একটা পেজ খুলেছি। আপনারা সবাই লাইক দিয়ে শেয়ার করুন। আমার আইডিতে গল্প না পাইলেও পেজে পাবেন।


পর্ব 3

ইভানঃ ওকে সাবধানে যাস।
তারপর কোন কথা না বলে বাসায় চলে আসলাম। দরজার কলিং বেল চাপ দিলাম। কেউ দরজা খুলছে না। অনেকক্ষণ পর মিমি দরজা খুলে দিল।
মিমিঃ কিরে তুই না কিছুক্ষণ আগে কলেজে গেলি এখন আবার চলে আসলি যে, কোন সমস্যা?

আমিঃ কোন সমস্যা নেই। এমনি ভালো লাগছে না তাই আজ ক্লাস না করে বাসায় চলে আসলাম।
মিমিঃ আমাদের বাসায় একজন এসেছে। কে হতে পারে বল তো।
আমিঃ জানি না। যা সর সামনে থেকে।

আমগ মিমিকে পাস কাটিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি রুপা বসে আছে।
আমিঃ আরে রুপা কেমন আছিস?
রুপা এক দৌড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

রুপা : এই তো ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
আমিঃ এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোকে অনেক দিন পর দেখলাম।
রুপা : তুই তো আর আমাদের বাসায় যাবি না। তাই তোদের সাথে দেখা করতে চলে এলাম।
আমিঃ আসলি যেহুতু কিছু দিন থেকে যা।

রুপা : আমি একেবারেই চলে এসেছি। এখন থেকে এখানেই পড়াশোনা করবো।
আমিঃ ওহ তাহলে তো আরো ভালোই হলো।
রুপা : হুম। আর হ্যা আমি তোর সাথে তোর কলেজেই ভর্তি হবো।

আমিঃ ওকে , আগামীকাল ভর্তি করে দেবো।
রুপা : তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে আয়। আমি তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
আমিঃ আমি আবার কোথায় যাবো?

রুপা : আমি তো কিছুই আনিনি। আমার একটু শপিং করতে হবে।
আমিঃ তুই আর মিমি যা।
রুপা : মিমি তো যাবেই তুই রেডি হয়ে নে। আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।
আমার কথা না বলতে দিয়ে রুপা চলে গেল।

আমিও ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম। গিয়ে দেখি ওরা দুইজন রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে।
আমিঃ কিরে তোরা কি মেয়ে মানুষ না?
মিমিঃ তোর চোখে কি বালি পড়েছে? দেখতে পারছিস না?

আমিঃ তা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু তোদের সাজুগুজু করতে তো ১ ঘন্টা লাগার কথা কিন্তু আমার আগেই হয়ে গেছে।
রুপা : তোর অত চিন্তা করতে হবে না। এখন চল যাই।

আমিঃ হুম।
তারপর আমরা ৩ জন গাড়িতে উঠে শপিং মলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমি গাড়ি চালাচ্ছি আর মিমি আর রুপা পিছনে বসে গল্প করছে।
তারপর আমরা সবাই এক শপিং মলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আর মিমি ও রুপা শপিং করতে শুরু করলো। দেখতে দেখতে পাক্কা গুণে গুণে ৩ ঘন্টা কেটে গেল।

শপিং শেষ হলে আমরা বাসার চলে আসলাম। এসে ফ্রেস হয়ে একটা ঘুম দিলাম। এক ঘুমে বিকাল ৩ টা গেছে।
বিকালে ৩ টায় কোন একজনের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
ইভানঃ ওই সালা ওঠ।

আমিঃ কেন কি হয়েছে? আর তুই এই টাইণে আমার বাসায় কেন?
রাকিব : কেন তোর বাসায় আসতে কি অনুমতি নেওয়া লাগবে নাকি?
আমিঃ আরে না। তুই এই সময়ে আসিস না তো তাই বললাম।

ইভানঃ তা চল।
আমিঃ কোথায় যাবো?
রাকিব : আজ আমাদের টিমের সাথে বিপ্লবের টিমের সাথে খেলা আছে।
আমিঃ ওহ চল।

তারপর আমরা খেলার মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করলাম এবং বিজয়ী হলাম। আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে রাত ১০ টা বেজে গেছে।
বাসায় এসে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছে না তাই মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে ঢুকতে যাবো এমন সময় দেখি ৩০ টা মিসকল।

আর সব গুলো মিসকল এসেছে আন্টির নাম্বার থেকে। আমি সাথে সাথে ব্যক করলাম। কিছুক্ষণ ফোন বাজার পর আন্টি ফোন পিক করলো।
আমিঃ আন্টি তুমি আমাকে এতগুলো কল দিয়েছো কে?

আন্টিঃ আমি তোকে সেই দুপুর বেলা থেকেই ফোন করে যাচ্ছি আর এখন তুই কল দিচ্ছিস?
আমিঃ আসলে আন্টি কখন যে, ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছি আর খুলতে মনে নেই।

আন্টিঃ ওওওও বুঝতে পারছি।
আমিঃ তা আন্টি কি জন্য এত কল দিয়েছো?

আন্টিঃ জান্নাত সেই যে, কলেজ থেকে এসে ঘরে ঢুকেছে এখনো বের হওয়ার কোন নাম গন্ধ নেই। আর সারাদিন ধরে কিচ্ছু মুখে দেয়নি।
আমিঃ কিহ তা আমাকে আগে বলবা না?

আন্টিঃ এই জন্যই তো তোকে ফোন করেছি কিন্তু তুই তো ফোন ধরলিই না।
আমিঃ ওকে তুমি অপেক্ষা করো‌ আমি এখনি আসছি।

তারপর আম্মুকে বলে ডাইক নিয়ে ২ মিনিটের মধ্যে জান্নাতের বাসায় চলে আসলাম। জান্নাতের বাসা আর আমার বাসা হেটে যেতে ৫ মিনিট লাগে। আর বাইকে ২ মিনিট।

দরজার কলিং বেল চাপ দিলাম। কিছুক্ষণ পর আন্টি দরজাটা খুলে দিল।
আমিঃ আন্টি জান্নাত কোথায়?
আন্টিঃ ও তো ওর রুমে আছে।

আমিঃ আচ্ছা দেখছি।
তারপর আমি জান্নাতের রুমের দরজা সামনে আসলাম।

আমিঃ জান্নাত ঐ জান্নাত দরজা খোল। ( দরজায় টোকা দিয়ে )
জান্নাতঃ ………………..
আমিঃ কি হলো তুই শুনতে পারছিস না?

জান্নাতঃ …………….
আমিঃ আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলবো।
জান্নাতঃ তুই এখানে এসেছিস কেন?
আমিঃ আগে দরজা খোল পরে বলছি।

জান্নাতঃ না এখন খুলবো না। ভালো লাগছে না পরে কথা হবে এখন তুই তোর বাসায় যা।
আমিঃ তুই দরজাটা খুলবি নাকি ভেজ্ঞে ফেলবো?

জান্নাত দরজাটা খুলে দিল। আমি আর আন্টি জান্নাতের ঘরে ঢুকে দেখি সব জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো।
আমিঃ রুমের এই অবস্থা কেন?

জান্নাতঃ এমনি।
আমিঃ আন্টি আপনি একটু খাবার আর‌পানি নিয়ে আসেন তো।
আন্টিঃ আচ্ছা বাবা আনছি।

জান্নাতঃ আমি এখন কিছু খাবো না।
আমিঃ আন্টি আপনি আনেন আমি দেখছি।

আন্টি খাবার আনতে গেল। আর জান্নাতের মুখটা খুব মায়া লাগছে। চোখ মুখ ফুটে গেছে।
আমিঃ তোর কি হয়েছে? তুই এমন কান্নাকাটি করছিস কেন?

জান্নাতঃ আমার আবার কি হবে? আর আমার মনে চেয়েছে তাই কান্নাকাটি করছি। তোর কি?
আমিঃ আমারই তো সব। তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড হয়ে কান্নাকাটি করবি আমার ভালো লাগে?

আন্টিঃ এই নেও বাবা। ( খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে )
আমিঃ জি। এবার আন্টি আপনি যান আমি দেখছি। ( খাবারের প্লেট নিয়ে )
আন্টি চলে গেল। আর আমি কিছুটা খাবার মাখিয়ে নিয়ে জান্নাতের মুখের কাছে ধরলাম।

আমিঃ হা কর।
জান্নাতঃ আমি খাবো না। তুই এখন চলে যা প্লিজ।
আমিঃ দেখ আমার কিন্তু রাগ তুলবি ঠাস করে একটা চড় দেবো বলে দিলাম।

জান্নাত আর কোন কথা না বলে চুপ করে খেয়ে নিলো। তারপর ওকে রেখে চলে আসলাম। আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। এক ঘুমে সকাল হয়ে গেছে।

সকাল…………….রুপা : ঐ নাসিম ওঠ……….


পর্ব 4


সকাল…………….
রুপা : ঐ নাসিম ওঠ .
আমিঃ কিরে তুই এত সকাল সকাল আমাকে ডাকছিস কেন?

রুপা : তোর কাছে সকাল মনে হচ্ছে? এখন সকাল 9:00 টা বাজে কলেজে যাবি না?

আমিঃ আজ যেতে ভালো লাগছে না।
রুপা : আমি তোর কোন কথাই শুনতে চাই না‌। তুই এখন উঠে ফ্রেস হয়ে আমাকে নিয়ে কলেজে যাবি ব্যাস।
হঠাৎ জান্নাতের কথা মনে হয়ে গেছে।

আমিঃ তুই একটু দাড়া আমি একটু কথা বলে নেই।
রুপা : ওকে।

আমি মোবাইল বের করে জান্নাতকে ফোন করলাম। কিছুক্ষণ রিং বাজার পর জান্নাত ফোন পিক করলো।
জান্নাতঃ হ্যা বল।
আমিঃ তুই আজ কলেজে যাবি.?

জান্নাতঃ হুম যাবো। কেন রে?
আমিঃ ওহ তাহলে আমিও যাবো।

জান্নাতঃ আর ডহ্যা আজ তুই অবশ্যই কলেজে আসবি। তোর জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে।
আমিঃ কি সারপ্রাইজ বল না একটু শুনি।

জান্নাতঃ আরে গাধা! এখন বলে দিলে আবার সারপ্রাইজ থাকবে নাকি? সময় হলে জানতে পারবি। তুই কলেজে আয়। পরে কথা হবে বাই।
আমিঃ ওকে বাই।
রুপা : তোর কথা শেষ হয়েছে?

আমিঃ হুম।
রুপা : যা এবার ফ্রেস হয়ে নিচে আয়। আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।
আমিঃ ওকে যা।

তারপর আমি ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম। গিয়ে দেখি রুপা বসে আছে। তারপর নাস্তা সেরে আমি আর রুপা বাইকে করে কলেজে চলে আসলাম। এসে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে গিয়ে রুপার ভর্তির কার্যক্রম শেষ করে একটা গাছের নিচে বসে আছি।

রুপা : আমি তো ক্রাস খেলাম।
আমিঃ কিহ তোর মাথা ঠিক আছে? কলেজে আসতে না আসতেই তোর ক্রাস খেতে হবে?
রুপা : তুই এসব কি বুঝবি? এত দিনে একটা প্রেমও করতে পারলি না?

আমিঃ আমার অত প্রেম করার দরকার নেই। একা আছি বেশ ভালো আছি। ( এদিক ওদিক তাকিয়ে )
রুপা : তুই কি কাওকে খুজছিস?

আমিঃ হুম। আজ আমার একটা ফ্রেন্ডকেউ খুঁজে পাচ্ছি না। আজ আমাকে বলে কি সারপ্রাইজ দেওয়া হবে।
রুপা : ঠিক সময় মতো ওরা তোকে ডেকে নিয়ে যাবে।

আমিঃ হুম। আর হ্যা তুই কাকে দেখে ক্রাস খেয়েছিস?
রুপা : পরে দেখাবো। এখন বলতো আমি ওকে কিভাবে প্রপোজ কবো?

আমিঃ তা তো জানি না। তবে এখন একটু প্রাকটিস করে নে। তুই অনেক ফার্স্ট।
রুপা : ওকে। তুই একটু দাড়া আমি আসছি।

তারপর রুপা একটা সুন্দর গোলাপ ফুল কিনে আনলো।
আমিঃ তুই একটু দাড়া আমি প্রপোজ করে দেখিয়ে দিচ্ছি যদিও কখনো করিনি।
আমিঃ ওকে।

রুপাএক জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল। আমি রুপার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলতে শুরু করলাম।
আমিঃ আমি তোমাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি। জানিনা তুমি আমাকে পছন্দ করবে কি না।

কিন্তু আমি তোমাকে আমার মনের গহীনে লুকিয়ে রাখতে চাই। চাঁদের আলোতে হাতে হাত রেখে মনের কথা গুলো বলতে চাই। রাস্তায় গুটিগুটি পায়ে একসাথে হাঁটতে চাই। তুমি কি আমাকে সেই অধিকার দিবে? কথা………….
হঠাৎ ঠাস ঠাস করে আমার গালে ২ টা চড় দিলো। আমি এতক্ষন রুপার কথা গুলো শুনছিলাম।

এমন সময় কেউ আমাকে চড় মারলো। আমি তাকিয়ে দেখলাম জান্নাত আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে আমাকে চড় ২ টা জান্নাত মেরেছে।
আমিঃ কিরে তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আমাকে মারছিস কেন?
জান্নাতঃ তুই যদি কখনো আমার সামনে আসিস তাহলে তোর খবর আছে।

এই কথা বলে হনহন করতে করতে জান্নাত চলে গেল। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
রুপা : কিরে ঐ মেয়েটা তোকে মারলো কেন?

আমিঃ আমিও তো বুঝতে পারছি না। ও বললো আজ আমাকে সারপ্রাইজ দেবে। কিন্তু ও যে, আমাকে চড় মেরে সারপ্রাইজ দেবে, আমি নিজে কখনো কল্পনাও করিনি।

ইভানঃ তুই তো কোন কিছুই কল্পনা করিস না। তুই তো এখনো বাচ্চা তুই কিছুই বুঝতে পারিস না। ( হঠাৎ এসে বললো )
আমিঃ মানে?

রাকিব : মানে খুব সোজা। জান্নাত আজ তোকে কি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো জানিস?

আমিঃ ও‌ তোকে সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভালোবাসে আর তুই জেনেও না জানার ভান করে রয়েছিস। আর আজ তো অন্য একটা মেয়েকে প্রপোজ করছিস।

আমিঃ আসলে ও যে আমাকে ভালবাসে আমি নিজেও জানতাম না আর…….
মারিয়াঃ থাক তোর আর বলতে হবে না আমরা যা বুঝার বুঝে গেছি। আজ থেকে তোর সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ বাদ। তুই আমার ফ্রেন্ড হতে পারিস না। তোর মত মানুষের সাথে কি জন্য যে, ফ্রেন্ডশিপ করতে গিয়েছিলাম আল্লাহ জানে। এখন নিজের উপরই নিজের রাগ হচ্ছে। ছিহ।

একে একে ইভান রাকিবও আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ ভেজ্ঞে দিয়ে চলে গেল। আমি শুধু ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।
এক মুহুর্তে যেন আমার সব কিছুই উল্টা পাল্টা হয়ে গেলো। আমি কি বলবো বা কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমিঃ রুপা তুই বাসায় যাবি? আমি বাসায় যাবো।

রুপা : হুম চল। ( কেঁদে কেঁদে )
আমিঃ কি হলো তুই আবার কাঁদছিস কেন?

রুপা : সব কিছু আমার জন্য হয়েছে।
আমি: আরে না। ওরা আমার সাথে মজা নিচ্ছে একটু পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
রুপা : তাই যেন হয়।

আমিঃ হুম।
তারপর ….


পর্ব 5

রুপা : তাই যেন হয়।
আমিঃ হুম।

তারপর আমরা 2 জন বাসায় চলে আসলাম। এসে রুমে ঢুকে পড়লাম। আম্মু অবশ্য অনেকবার জিজ্ঞেস করল যে, আমরা এখন চলে আসলাম কেন? কিন্তু আমি কোন কথা বললাম না।

ধুর আজ কি থেকে কি হয়ে গেল। কিছুই ভালো লাগছে না। একটু ফেসবুকে ঢুকে দেখি কি অবস্থা? কিন্তু একি , সবাই তো আমাকে ব্লক করে দিয়েছে।
কি আর করার একটা ঘুম দিলাম। কোন ভাবে দিন টা পাড় করলাম। সকালে মিমির ডাকে ঘুম ভাঙল।
মিমিঃ ভাইয়া! ঐ ভাইয়া ওঠ তুই কলেজে যাবি না?

আমিঃ হুম উঠছি।
তারপর আমি উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম। নাস্তা করে নিলাম।

আমিঃ কিরে রুপা তাড়াতাড়ি কর। কলেজে যাবি না, দেড়ি হয়ে যাবে তো।
রুপা : তুই চলে যা আমি তোর সাথে যাবো না।

আমিঃ কেন?
রুপা : একদিন গিয়ে তোর সব কিছুই উল্টা পাল্টা করে দিয়েছি। আমি তোর আর কোন ক্ষতি করতে চাই না।
আমিঃ আরে এতো তোর দোষ কিসের? ওরা তো বুঝতে ভুল করেছে।

রুপা : তুই যাই বলিস আমি তোর সাথে যাবো না।
আমিঃ ওকে তুই থাক আমি গেলাম।

রুপা : হুম যা।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বাইক নিয়ে কলেজে চলে আসলাম। এসে দেখি জান্নাত, মারিয়া, রাকিব ইভান সবাই বসে আছে আমিও ওদের পাশে গিয়ে বসলাম।
আমিঃ কিরে তোরা কখন আসলি?

সবাই : ……………..( সবাই আমার দিকে ভূত দেখার মত তাকিয়ে আছে )
আমিঃ কি হলো তোরা আমার দিকে এই ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

জান্নাতঃ তোর এখানে আসার অধিকার দিয়েছে কে? তুই এখন এখান থেকে যা।
আমিঃ আমি কোথায় যাবো? আমি আমার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি তোর সমস্যা কি?

জান্নাতঃ এই তোরা কার বন্ধু হয়ে থাকবি? আমাকে নয়তো নাসিমকে বেছে নে। ( বাকিদের উদ্দেশ্য করে বলল)
সবাই :…………..
আমিঃ তুই বন্ধুত্ব নিয়ে ভাগাভাগি করছিস?

জান্নাতঃ রাকিব তুই কার পক্ষে?
রাকিব : তোর।

একে একে সবাই জান্নাতের পক্ষেই গেছে।
জান্নাতঃ এখানে কেউ তোর পক্ষে নেই সো তুই এখান থেকে যা।

আমিঃ তোরা যায় বলিস আমি এখান থেকে যাবো না।
জান্নাত ঠাস ঠাস করে চড় থাপ্পড় দিলো। আমি দাঁড়িয়ে আছি। সবাই দেখে কানাঘুষা করছে যে, জান্নাত আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড অথচ কি এমন হলো যে, জান্নাত আমাকে মারছে।

হঠাৎ কোথা থেকে রুপা আসলো এসেই জান্নাতকে একটা চড় দিলো। জান্নাত এমনিতেই রুপার উপর রেগে আছে এখন আবার চড় দেওয়ায় আরো রেগে রুপাকে মারতে গেলে
আমিঃ জান্নাত তুই আমাকে মেরেছিস এতে আমি কিছুই মনে করিনি। কিন্তু রুপার গায়ে হাত তুললে আমি তোকে ছেড়ে দেবো না।

ইভান ও রাকিব : আর মনে হচ্ছে আমরা ছেড়ে দেবো?
মারিয়াঃ কিরে তোরা কি শুরু করলি?

পলাশ : কিরে হিরো কি হয়েছে? তুই না তোর ফ্রেন্ডশিপ নিয়ে খুব ভাব দেখাতিস, আজ তোকে সবাই এমন দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে কেন?
আমিঃ দেখ পলাশ তুই এর মধ্যে নাক গলাতে আসবি না। এমনি মাথা খারাপ কখন কি করে ফেলবো আমি নিজেও বলতে পারছি না।

পলাশ : ঐ তুই এখন হিরোগিরি দেখাস না। নয়তো তোকে এখানে মেরে পুতে রেখে যাবো।
আমি আর রাগ কন্টল করতে পারলাম না। সোজা পলাশের নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে দিলাম। পলাশের নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।

পলাশের দলবল সবাই একসাথে আমার উপর হামলা করে আর আমি তো আর কোন সিনেমার হিরো নই যে, একাই সবাইকে মারতে পারবো।
আমি কয়েকজনকে মারলাম পিছন থেকে কেউ একজন আমার মাথায় জোরে একটা আঘাত করলো তারপর আমর আর কিছুই মনে নেই।
আমি নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম। আমি শুয়ে আছি আর আমার আম্মু আমার হাত ধরে কান্না করছে।

আমিঃ আম্মু?
আমিঃ বাবা তোর জ্ঞান ফিরেছে?( আ
অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে )
আমিঃ হুম। তা তুমি এমন কান্নাকাটি করছো কেন?

আম্মুঃ যার ছেলে হাসপাতালের বেডে ৩ দিন ধরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে সে কান্না করবে না তো কে করবে?
আমিঃ কিহ আমি ৩ দিন ধরে অজ্ঞান ছিলাম?

রুপা : হ্যা তুই আজ ৩ দিন ধরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছিস। ( বাইরে থেকে কেবিনে ঢুকে )
আমিঃ তা আমি এখানে কিভাবে?

রুপা : পলাশ ও তার দলবল সবাই মিলে তোকে মেরে ফেলে রেখে চলে গিয়েছে পরে আমি তোকে অন্যের সাহায্য নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম।
আমিঃ ওহ তা রাকিব ও জান্নাতরা আসেনি?

রুপা : না ওরা এই ৩ দিনে একবারও আসেনি। আর যখন পলাশরা তোকে মারছিলো তখন ওরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো।
আমি: ওহ।

এভাবে দেখতে দেখতে আমার পরিপূর্ণ সুস্থ হতে ২ মাস লেগে গেল। কেউ আমাকে দেখতে আসলো না।
আজ ২ মাস পর আমি আবার আমার সেই চেনা জানা কলেজে চলে আসলাম।

এবার অবশ্য পড়াশোনা করতে আসিনি। এসেছি কলেজ থেকে টিসি নিতে।
আমি এখানে আর পড়াশোনা করবো না। আমি কলেজে ঢোকার পর আমাদের সেই আডডার দেওয়ার জায়গায় তাকালাম। কেউ ওখানে নেই জায়গাটা ফাকা পড়ে রয়েছে।

আমি সোজা প্রিন্সিপাল স্যার এর রুমে ঢুকলাম।
স্যার : আরে নাসিম তুমি সুস্থ হয়েছো?

আমিঃ জি স্যার।
স্যার : তা কিছু বলবা নাকি?
আমিঃ জি স্যার। আমি টিসি নিতে এসেছি। এখানে আর পড়াশোনা করবো না।
স্যার : কিহ তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? তুমি চলে যাবে কেন?

আমিঃ স্যার একটু ব্যক্তিগত প্রবলেম।
তারপর স্যার আমাকে অনেক বুঝালেন কিন্তু আমার তো আর এই কলেজে পড়াশোনা করা সম্ভব না।

তাই টিসি নিয়ে চলে আসতে গেলাম হঠাৎ একজনের সাথে আমার ধাক্কা লাগে। আমি সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।


পর্ব 6

তারপর স্যার আমাকে অনেক বুঝালেন কিন্তু আমার তো আর এই কলেজে পড়াশোনা করা সম্ভব না। তাই টিসি নিয়ে চলে আসতে গেলাম হঠাৎ একজনের সাথে আমার ধাক্কা লাগে। আমি সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।

আমার যার সাথে ধাক্কা খেয়েছি সে আর কেউ না সে হল জান্নাত। জান্নাত ঠাস করে একটা চড় দিলো।
জান্নাতঃ তোর মত লুচ্চা পোলা আমি কখনো দেখিনি। কখনো আমার সামনে আসবি না।

আমিঃ ওকে।
যদিও ধাক্কা লাগাতে আমরা উভয়েই দোষী। তাও কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম। তারপর বাইক নিয়ে এক টানে বাসায় চলে আসলাম।
আমিঃ আম্মু তোমার গোছানো শেষ হয়েছে?

আম্মুঃ তোর না গেলে হয় না?
আমিঃ দেখো আম্মু আমার বর্তমানে এই কলেজে পড়াশোনা হবে না। আর আমি তো শুধু ঢাকায় যাচ্ছি আর তোমার সাথে তো প্রায় প্রতিদিনই কথা হবে।
আব্বুঃ তুই যা করছিস ভেবে করছিস তো?

আমি: হুম আমি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মিমি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
মিমিঃ ভাইয়া তুই আমাদের ছেড়ে যাস না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

আমিঃ আরে আমার পাগলি বোন। আমি তো পড়াশোনা করতে যাচ্ছি। আমি তো‌ একেবারে চলে যাচ্ছি না। ( সবার আড়ালে চোখের পানি মুছে নিলাম। যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে, আমি কারো দেওয়া কষ্টের কারণেই এখান থেকে চলে যাচ্ছি। )

তারপর সবাইকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বিদায় নিয়ে রাস্তায় চলে আসলাম। এসে একটা cng নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে আসলাম।
এসে বাসে উঠে বসে আছি। ‌আমার লক্ষ্য এখন ভালো করে পড়াশোনা করে মানুষের মত মানুষ হওয়া। এত দিন যা করেছি করেছি। এখন থেকে আমাকে ঠিক মত পড়াশোনা করতে হবে।

কিছুক্ষণ পর বাস ছেড়ে দিলো। গাড়ি চলতে শুরু করল। একের পর এক এলাকা অতিক্রম করতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম কিভাবে আমার জীবনটা পাল্টাবো।
পরের বাস্টপে বাস থামলে কিছু যাত্রী উঠলো আর কিছু যাত্রী নামল। এতক্ষণ আমার পাশের সিট খালি ছিল, কিন্তু এই মাত্র একজন যুবক ছেলে উঠলো। উঠে আমার পাশের সিটে বসে।

ছেলেঃ হাই ব্র।
আমিঃ হুম।
ছেলেঃ আমি নাফি আপনি?

আমিঃ আমি নাসিম আরাফাত।
নাফিঃ আপনি কোথায় যাবেন?

আমিঃ আমি জানি না। ( আসলেও কোথায় যাবো এখনো ঠিক করেনি। শুধু এতটুকু বলতে পারছি যে, আমি ঢাকায় যাবো। )
নাফিঃ কি বলছেন আপনি ঢাকার বাসে উঠে বলছেন আপনি কোথায় যাবেন এটা জানেন না?

আমিঃ আসলে আমি ঢাকায় যাবো বাট কোথায় যাবো এটা ঠিক করেনি।
নাফিঃ তা ঢাকায় কি করতে যাবেন?
আমিঃ পড়াশোনা করতে যাচ্ছি।

নাফিঃ তা কোন‌ ক্লাসে পড়েন?
আমিঃ ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আপনি?( এটা গল্পে , বাস্তবে না। )
নাফিঃ আরে আমিও তো ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। তা থাকবেন কোথায়?

আমিঃ দেখি কোন ম্যাচে ট্যাচে থাকবো।
নাফিঃ আচ্ছা আমি একটা কথা বলি?
আমিঃ হুম বলেন।

নাফি: আমি যেই কলেজে পড়াশোনা করছি আপনিও সেখানে ভর্তি হয়ে আমার সাথে ম্যাচে থাকবেন।
আমি ভাবতে লাগলাম। আসলে এই অফারটি লুফে নেওয়াই বেটার হবে। কেননা আমি কোথায় যাবো কোথায় ভর্তি হবো কিছুই ঠিক করা হয়নি। আর এই ঢাকা শহরে একা একা কি করবো না করবো তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই।

((মাঝে মাঝে আইডিতে প্রবলেম হচ্ছে। আগের আইডির মত এই আইডিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে সো সবাই আমার প্রোফাইলে দেওয়া পেজের লিংক এ গিয়ে লাইক দিয়ে রাখুন। যাতে আইডি নষ্ট হয়ে গেলেও আমার লেখা পড়তে পারেন। ))

নাফিঃ কি হবেন?
আমিঃ হুম হবো।
নাফিঃ ওকে তাহলে আমরা ফ্রেন্ড।
আমিঃ ওকে ফ্রেন্ড।

তারপর গল্প করতে করতে গাবতলী চলে আসলাম। এসে বাস থেকে নামলাম।
আমিঃ তা এখন কোথায় যাবেন?
নাফিঃ আমরা না বন্ধু? এখন নো আপনি জাষ্ট তুই , ওকে?

আমিঃ ওকে। তা এখন কোথায় যাবি?
নাফিঃ তুই আসতে থাক আমার সাথে সাথে। ( কেউ কিন্তু আবার অপরিচিত কারো সাথে এভাবে চলে যাবেন না। নতুবা বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে )
তারপর দেখলাম নাফি কলেজ গেট যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছকটা বাসে উঠে। কলেজ গেট নেমে একটা রিকশা করে আমরা ২ জন তাজ মহল রোডে গেলাম। গিয়ে একটা ম্যাচের সামনে আসলাম।

নাফিঃ এই যে, আমরা আমাদের ম্যাচে চলে আসলাম। চল ভেতরে যাই।
আমিঃ হুম চল।
তারপর আমরা ভিতরে গেলাম। গিয়ে দেখি আরো কয়েকটা ছেলে বসে বসে গল্প করছে।
নাফিঃ হাই গায়েস কেমন আছস তোরা সবাই।

সবাই : আমরা ভালো কিন্তু এই ভাইটা কে? আমরা তো চিনতে পারলাম না।
নাফিঃ এর নাম হলো নাসিম আরাফাত। আমাদের সাথে এখানেই থাকবে আর আমাদের সাথে এখানেই পড়াশোনা করবে। আর নাসিম এরা হলো জয়, হৃদয় বিপ্লব।

আমিঃ হাই ব্র। ( সবার সাথে পরিচিত হয়ে নিলাম )
তারপর একটা বেডে শুয়ে পড়লাম। খুব ক্লান্ত লাগছে। ফোনটা বের করে দেখি আম্মু ফোন দিয়েছে। কিন্তু আমি ধরতে পারিনি। তাই ব্যাক করলাম।
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম। আম্মু আমি নাসিম।

আম্মুঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। কিরে বাবা আমি ফোন দিলাম কিন্তু তুই রিসিভ করলি না যে।
আমিঃ আসলে আম্মু আমি গাড়ির ভেতরে ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি।

আম্মুঃ তা ঠিক মত পৌঁছাতে পেরেছিস?
আমিঃ হুম আমি এখন ম্যাচে শুয়ে আছি। ( আম্মুকে বলেছিলাম যে, আমার এক বন্ধুর সাথে ম্যাচে থাকবো। যদি না বলতাম আম্মু অনেক বেশি টেনশন করতো। )

আম্মুঃ আচ্ছা বাবা তুই রেস্ট নে। পরে কথা হবে।
আমিঃ ওকে আম্মু। আসসালামু আলাইকুম।
আম্মুঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখন কি করবো কিছুই ভালো লাগছে না তাই বাইরে একটু বের হলাম। বের হয়ে দেখছি কয়েকজন মানুষ একজনকে মারছে। আমি গিয়ে ঠেকাতে গেলাম। আমাকেও মারতে শুরু করলো। আমি পাশে থাকা বাস নিয়ে সব কয়টাকে পিটাতে লাগলাম। একে একে সবাই পালিয়ে গেছে।
আমিঃ ভাই আপনি ঠিক আছেন?

ছেলেঃ হ্যা ভাই আমি ঠিক আছি আর তোমাকে ধন্যবাদ।
আমি আরো কিছু কথা বলে দোকান থেকে একটা সিম কিনে চলে আসলাম। আমার হাতে কিছুটা কেটে গিয়েছে।
নাফিঃ কিরে তুই কোথায় গিয়েছিলি আর তোর হাত কেটে গেল কিভাবে?

আমিঃ পড়ে গিয়েছিলাম। ( সত্যি বললে রাগ করতে পারে )


পর্ব 7

নাফিঃ কিরে তুই কোথায় গিয়েছিলি আর তোর হাত কেটে গেল কিভাবে?
আমিঃ পড়ে গিয়েছিলাম। ( সত্যি বললে রাগ করতে পারে )
নাফিঃ তা একটু দেখে শুনে চলবি না?

আমিঃ পড়ে গিয়েছি তো কি আর করার?
নাফিঃ হুম।

তারপর আমি আমার বেডে শুয়ে পড়লাম। আর ভাবতে লাগলাম কি হবে আগামী কাল বিকেলে? আসল বিষয় কি হয়েছে আপনাদেরকে খুলে বলি।
আসলে যে ব্যাক্তিকে মারা হচ্ছিল সে আর কেউ না।

সে একজন আন্ডার গ্রাউন্ড পুলিশ অফিসার। আর যারা মারছিল তারা জেনে গেছে যে, সে একজন আন্ডার গ্রাউন্ড পুলিশ অফিসার। (অবশ্য এটা পরে জানতে পারলাম। )

সেই পুলিশ অফিসারের নাম হলো রাজিব।
রাজিবঃ ভাই তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আমিঃ আপনার শরীরের থেকে অনেক রক্ত বের হচ্ছে। চলেন আমি আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
আর রাজিব স্যারের কথা না শুনে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার সাহেব পেশেন্টের ট্রিটমেন্ট করে কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে চলে গেল। রাজিব স্যার বেডের ওপর শুয়ে আছে আর আমি একটা চিয়ারে বসে আছি।

হঠাৎ করেই ১০/১৫ জন সাধারণ পোশাক পরিহিত লোক কেবিনে ঢুকে গেল।
আমিঃ ঐ আপনারা কারা? এই ভাবে পার্মিশন ছাড়া এই কেবিনে ঢুকে গেছেন কেন?

লোকগুলো একজন মাঝবয়সী ব্যক্তিকে আসার জন্য পথ করে দিল। লোকটি আমার সামনে এসে দাড়ালেন।
আমি: আপনারা কারা?

রাজিবঃ নাসিম ভাই এরা আমার শত্রু না। এরা আমার শত্রু। ( রাজিব ভাই আমার থেকে ২/৪ বছরের বড় হবে )
আমিঃ কিহ?

লোকটিঃ তা রাজিব তোমার শরীর এখন কেমন?
রাজিবঃ জি স্যার আমি ঠিক আছি। আর আজ এই ভাইটার জন্য বেঁচে গেলাম।

লোকটিঃ সবাস ইয়াং ম্যান। ( ঘারে হাত দিয়ে)
আমিঃ ধন্যবাদ। কিন্তু আমি তো আপনাদেরকে চিন্তে পারছি না। আপনাদের পরিচয় কি?

লোকটিঃ আমরা সবাই আন্ডার গ্রাউন্ড পুলিশ অফিসার। আর এই কাড অনুযায়ী আগামী কাল বিকেলে চলে আসবে।
আমিঃ কেন?

লোকটিঃ তোমার কিছু পরীক্ষা দিতে হবে।
আমিঃ কি পরীক্ষা?😱😱
লোকটিঃ সময় হলে জানতে পারবে। রাজিব চলো তোমার এখানে থাকা ঠিক হবে না।

রাজিবঃ জি স্যার।
তারপর অফিসার গুলো রাজিব স্যারকে নিয়ে গেছে। আমিও আমার মত ম্যাচে চলে আসলাম। হঠাৎ মোবাইলের রিংটোন এর শব্দে ধ্যান ভেঙ্গে গেল। আম্মু ফোন দিয়েছে।

আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম আম্মু।
আম্মুঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। বাবা তুই বাসায় চলে আই। আমার কিছুই ভালো লাগছে না।

আমিঃ আম্মু ঢাকায় আসলাম পড়াশোনা করতে। এখন কিভাবে যাবো?
আম্মুঃ আমি জানি না। তুই চলে আসবি ব্যাস।

বলেই ফোন কেটে দিল। এখন কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নাই। রাত্রে নাফিরা অনেক বার খাওয়া দাওয়ার জন্য ডেকেছিল। কিন্তু ভালো লাগছে না বিধায় আর উঠলাম না। এক ঘুমে সকাল হয়ে গেছে।

সকাল……..
নাফিঃ ওই নাসিম ওঠ কলেজে যাবি না?
আমিঃ হুম।

তারপর উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে কলেজে চলে আসলাম। এসে ভর্তির কার্যক্রম শেষ করে ম্যাচে ফিরে আসতে আসতে দুপুর হয়ে গেছে।
ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করে মোবাইলে ৩:০০ সময় এলারাম দিয়ে রাখলাম। তারপর একটা ঘুম দিলাম বিকাল ৩:০০ সময় এলারামের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে ফ্রেস হয়ে সবকিছু ঠিক টাক করার পর ম্যাচ থেকে বের হয়ে গেলাম। তারপর কার্ডের ঠিকানা অনুযায়ী চলে গেলাম।

এটা দেখে অফিস তো মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কারো বাসা। আমি আবার ঠিক মত ঠিকানা দেখে নিলাম। নাহ ঠিকানা তো ঠিকই আছে।
আমি গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। কিছুক্ষণ এদিকে ওদিকে দেখতে লাগলাম অমনি কোথা থেকে ৩/৪ জন আমাকে ঘিরে ধরলো।

আমিঃ আপনারা কারা?
ওদের মধ্যে একজন বলে উঠল।
একজন : আমাদের পরিচয় তোমার না জানলেও তোমার চলবে। তোমার পরিচয় দেও।

আমিঃ আসলে আমাকে এই ঠিকানায় ডাকা হয়েছে। তাই আসলাম কিন্তু কাউকে তো খুঁজে পাচ্ছি না।
আরেকজন : তোমার কাছে কি এ্যপার্মেন্ট লেটার আছে?
আমিঃ তেমন কিছু নেই। শুধু এই কার্ড আছে।

লোকটি আমার হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে কিছুক্ষণ দেখে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল।
লোকটিঃ এই গেট খুলে দে। ( অপরজন কে বললো )
লোকটিঃ সামনে গিয়ে বামে কার্ডটা দেখাবেন তাহলে আপনাকে দেখিয়ে দেবে।

আমি আর কোন কথা না বলে কার্ড নিয়ে চুপচাপ হাঁটা শুরু করলাম। তারপর আরেকজন কার্ড দেখে ৩ তলায় যেতে বলল।
আমি সেই কথা মোতাবেক উপরে যাচ্ছি আর আসে পাশে তাকিয়ে দেখলাম। বাইরে থেকে তো একটা সাধারণ বাসা মনে হচ্ছিল এখন দেখি বাইরের দৃশ্য দেখতে যেমন সুন্দর তার থেকে বেশি সুন্দর ভিতরের অংশ।

আর এতে গার্ডের কোন কমতি নেই। ২/৪ হাত পর পর গার্ডরা অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার এমনি একটু ভয় বেশি এখন তো আমার পা কাপতে লাগলো। কোন রকমে উপরে উঠতে লাগলাম।

উঠতে উঠতে একটা রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। এখন কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। আবার কাউকে জিজ্ঞেস করতে ভয়ও লাগছে।
কিন্তু কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই দাঁড়িয়েই আছি। হঠাৎ আমার সামনে একজন এসে দাঁড়ালো।
লোকটিঃ কাকে চান?

আমিঃ এটা দেখুন ( কার্ডটা এগিয়ে দিলাম )
লোকটি কার্ডটা নিয়ে কিছুক্ষণ দেখে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল এই রুমে আসুন।

সে আমার সামনে হাঁটতে লাগলো আমি পিছন পিছন হাঁটতে লাগলাম। আমাকে নিয়ে একটা রুমে নিয়ে গেল।
আমি ঢুকে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম……


পর্ব 8

সে আমার সামনে হাঁটতে লাগলো আমি পিছন পিছন হাঁটতে লাগলাম। আমাকে নিয়ে একটা রুমে নিয়ে গেল।
আমি ঢুকে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম জান্নাতের মামা আর বাকি সবাই বসে আছেন ( জান্নাত তার মামার পিক দেখিয়েছিল )
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম।

সবাই : ওয়ালাইকুমুস সালাম।
কালকের সেই পলিশ অফিসার বর্তমান ইউনিফর্ম পরিহিত। আর তার বুকে লিখা আছে। মাসুদ রানা।
মাসুদঃ নাফি নাসিমকে আরেক রুমে নিয়ে যাও আমি একটু পরে আসছি।

আমি তো আবার বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম। নাফি এখানে কি করছে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। নাফি আমার কাছে আসলো।
নাফিঃ আই আমার সাথে।

আমি মনে হচ্ছে বোবা হয়ে গেলাম। আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। আমি কোন কথা না বলে চুপ করে নাফির পিছনে হাঁটতে লাগলাম। একটা রুমে আসলাম।
আমিঃ কিরে বিষয়টা কি রে?

নাফিঃ কোন বিষয়?
আমিঃ তুই এখানে কিভাবে?
নাফিঃ আমি তোকে কিছুই ‌বলতে পারবো না। তবে এতটুকু বলতে পারি যে, জান্নাত তোকে অনেক ভালোবাসে।
আমি আবার একটা ঝটকা খেলাম। নাফি জান্নাতকে চেনে কিভাবে?

আমিঃ তুই জান্নাতকে চিনিস কিভাবে?
নাফিঃ পরে এক সময় বলবো।

আমিঃ কিন্…………..
মাসুদ স্যারঃ কি ব্যাপার তোমরা ২ জন কি নিয়ে গল্প করছো?
নাফিঃ স্যার তেমন কিছু না।

মাসুদ স্যারঃ নাফি তুমি যাও আমি নাসিমের সাথে একটু কথা বলবো।
নাফিঃ জি স্যার।
নাফি চলে গেল। আমি আমার মত বসে রইলাম।

মাসুদঃ তোমার শখ হলো আন্ডার গ্রাউন্ড পুলিশ অফিসার হওয়া। তাই না?
আমিঃ জি কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?

মাসুদ স্যারঃ তুমি দেশের জন্য কি করতে পারবে?( এই কথা বলার সাথে সাথে স্যারের হাতে থাকা গান ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দুইটাই উপরের দিকে ছুঁড়ে মারে)
এক মুহুর্তের জন্য মাসুদ স্যার কে পাগল মনে হল। তিনি গান ও পতাকা ছুঁড়ে মেরে বসে রইল। আমি এক লাফে আগে পতাকা ধরে তারপর গান ধরে ফেললাম।

মাসুদ স্যারঃ তোমার জব নিশ্চিত হয়ে গেছে।
আমিঃ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
মাসুদ স্যারঃ আমি আমাদের দেশে পতাকা আর গান উপরে ছুঁড়ে মারলাম। তুমি আগে পতাকা ধরেছ এর দ্বারা তোর চাকরি কনফার্ম। কিন্তু তুমি গান ধরলে কেন?

আমিঃ আমি আগে দেশের পতাকা ধরে দেশের প্রতি আমার টান প্রকাশ করলাম তারপর নিজের প্রতি নিজের টান প্রকাশ করলাম।
মাসুদ স্যারঃ তুমি দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত নও?

আমিঃ সর্ব প্রথম আমার দেশকে রক্ষা করবো তারপর আমাকে কেননা দেশ আগে আর গান ধরার কারণ হলো এই গান নিচে পড়ে গেলে এই গান থেকে কোন গুলি বের হয়ে আমার কোন ক্ষতি হতে পারতো।

মাসুদ স্যারঃ গুড বয়। ( কাঁধে হাত রেখে বলল)
আমিঃ ধন্যবাদ স্যার।
তারপর সেখান থেকে আমি আর নাফি ম্যাচে চলে আসলাম। আসলে মিশতে মিশতে কখন যে, জান্নাতকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না। এখন জান্নাতের কথা খুব মনে পড়ছে। জানি জান্নাতের সাথে আমার আর দেখা হবে কিনা?
নাফিঃ কিরে তুই কি ভাবছিস?

আমি: তুই জান্নাতকে চিনিস কিভাবে?
নাফিঃ ওহ তাহলে এই ব্যাপার। তাহলে শোন মনে আছে সেই দিনের কথা যেদিন জান্নাত তোকে কলেজে দ্রুত আসতে বলেছিল।
আমিঃ হুম।

নাফিঃ কেননা জান্নাত তোকে সেই ছোট্ট বেলা থেকেই অনেক ভালোবাসতো। আর ও সেদিন তোকে প্রপোজ করবে বলে সারপ্রাইজ এর কথা বলে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে। আর তুই তো সফ কিছু উল্টা পাল্টা করে দিয়েছিস।
আমিঃ আমি তো।
নাফিঃ আমি সব জানি।

আমিঃ জান্নাত যদি আমাকে ভালোই বাসতো তাহলে আমাকে কখনো এই ভাবে একা করে দিতো না। আর পলাশ আমাকে মারছিল ও ওই ভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে উপভোগ করতো‌ না।
নাফিঃ আসলে……..

আমিঃ থাক আর বলতে হবে না। আমি এখন ঘুমাবো তুই এখন যা। আর হ্যা আমি যে, আন্ডার গ্রাউন্ড পুলিশ অফিসার এটা কাউকে বলবি না।
নাফিঃ এই ব্যাপারে আমি তোর থেকে বেশি জানি।
নাফি চলে গেল আমি ফ্রেস হয়ে রাতের খাবার না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকাল বেলা নাফির ডাকে ঘুম ভাঙল। ফ্রেস হয়ে কলেজ যাওয়া আর ম্যাচে ফিরে আসা। আর হ্যা আমার জব হয়ে গেছে। এভাবে দেখতে দেখতে ১ বছর কেটে গেল।

আজ বাসায় যাবো। অনেক হলো আব্বু আম্মু আর মিমিকে দেখেনি। আর হ্যা একটা কেচের জন্য আমি আবার আমার আগের কলেজে ভর্তি হতে হবে।
আব্বুর কাছে ফোন দিলাম। কিছুক্ষণ ফোন বাজার পর আব্বু ফোন রিসিভ করে।

আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম আব্বু কেযন আছো?
আব্বুঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস বাবা?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। কি করছো?

আব্বুঃ এই তো সুয়ে বসে দিন কাটছে। তোর আম্মুর সাথে কথা বল।
আমিঃ হুম দেও।

আম্মুঃ কিরে বাবা কেমন আছিস?
আমিঃ এই তো আম্মু আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

আম্মুঃ আমার আবার ভালো থাকা। তুই যে, কবে গেলি আর তো আসার কোন নাম গন্ধ নেই। ( কেঁদে দিলো)
আমিঃ আম্মু সময় হলে আসবো। ভাই থাকো আল্লাহ হাফেজ। ( আম্মুকে আমার যাওয়ার কথা বললাম না। কেননা আমি সারপ্রাইজ দিতে চাই )
আম্মুঃ কি হলো তুই কথা বলবি না?

আমিঃ তুমি শুধু কান্নাকাটি করো তাই কথা বলতে মনে চাচ্ছে না।
আম্মুঃ ওকে আমি আর কান্নাকাটি করছি না।

তারপর আম্মুর সাথে অনেক সময় নিয়ে কথা বললাম। কথা শেষ হতেই নাফি এসে উপস্থিত হলো।
নাফিঃ আমাদের ২ জনের টিকিট কাটা শেষ। তবে তোর আর আমার সিট আলাদা। এক জায়গায় হয়নি।
আমিঃ ওকে নো প্রবলেম।

নাফিঃ হুম।
তারপর সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে আসলাম। তারপর বাসে উঠে বাস ছাড়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে আমার পাশের সিটে বসে।

ধুর কোন ছেলে হলেই ভালো হতো। গল্প করতে করতে জার্নির সময়টা কেটে যেত। আমি বিরক্ত হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম।
মেয়ে : ঐ ভাদাইম্যার মত এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
আমিঃ কাকে বলছেন?

মেয়ে : আমার পাশে যেই হ্যবলা বসে আছে তাকেই বলেছি। 😂😂😂😂
আমিঃ আজব পাবলিক। ( মুখ ঘুরিয়ে জানালার বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম )

আর মেয়েটি মুখ টিপে হাসে লাগলো আর আমার শরীর জলে যাচ্ছে। না পারছি কিছু বলতে না পারছি কিছু করতে।
মেয়ে : রেগে গেলে না আপনাকে অনেক কিউট লাগে।
আমিঃ ……… ( ভুরু কুঁচকে মেয়েটির দিকে তাকালাম )

মেয়ে : এবার আপনাকে একটুও ভালো লাগছে না। অনেকটা পেঁচার মতো লাগছে।
আমিঃ ঐ আপনি চুপ থাকতে পারেন না? উঠেই তো বকবক করতে লাগলেন।
মেয়ে : সত্যিই আমি চুপ থাকতে পারি না।

ধুর মেয়েটির সাথে আর কথা না বাড়িয়ে ফোন বের করে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর দেখি মেয়েটা আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে।
আমিঃ ঐ আপনার সমস্যা কি?

মেয়ে : কোই কোন সমস্যা নেই তবে একা বসে থাকতে বিরক্ত লাগছে।
আমিঃ আপনার ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে আপনি আমাকে চিনেন?
মেয়ে : আমি তো আপনাকে চিনি।

আমিঃ কিহ কিভাবে?😣😣😣
মেয়ে : আগে পরিচিত হয়ে নিই। তারপর না হয় আমি বলি।

আমিঃ ওকে। ( এতক্ষণ মেয়েটির প্রতি বিরক্ত বোধ করছিলাম কিন্তু এখন আর তেমন লাগছে না। বিরক্ত না লাগার কারণ হলো। যখন কেউ আপনাকে চেনে অথচ আপনি তাকে চেনেন না। তখন নিজেকে খুব বিশেষ কেউ মনে হয়। যেমনটা এখন আমার মনে হচ্ছে। 😂😂😂😂😂)
মেয়ে : আমি তমা। আপনি? (হাত বাড়িয়ে )

আমিঃ……….( কিছু বলতে যাবো। )
তমাঃ থাক আর কিছু বলতে হবে না। আমি তো আপনাকে বেশ ভালো করেই চিনি।

সুতরাং পরিচয় দিতে হবে না। আসলে আমি হলাম জান্নাতের ফ্রেন্ড। আর জান্নাত আপনার কথা অনেক বলেছে। আর আপনার কথা শুনতে কানের পোকা বের হয়ে গিয়েছে।
আমিঃ কোন জান্নাত?( চিনেও না চিনার ভান করে )


পর্ব 9 ( শেষ )

তমাঃ থাক আর কিছু বলতে হবে না। আমি তো আপনাকে বেশ ভালো করেই চিনি। সুতরাং পরিচয় দিতে হবে না। আসলে আমি হলাম জান্নাতের ফ্রেন্ড। আর জান্নাত আপনার কথা অনেক বলেছে। আর আপনার কথা শুনতে কানের পোকা বের হয়ে গিয়েছে।
আমিঃ কোন জান্নাত?( চিনেও না চিনার ভান করে )

তমাঃ ওহ আপনি তো কোচি খোকা। আপনি তো নিজেকেও চিনেন না। তাই না?
আমি তো কিছুটা ঘাবড়িয়ে গেলাম। এখন আর কথা বাড়ানো যাবে না। নয়তো আমি যে, জান্নাতকে এখনো ভালবাসি এটা ও জেনে যাবে। আমি কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে বললাম।

আমিঃ আপনাকে কখনো হয়তো দেখেছি। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছি না।
তমাঃ হয়তো দেখেছেন কোথাও। কিন্তু আপনি যে, কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছেন আমি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।
আমিঃ না তেমন কোন বিষয় না।

তমাঃ জানেন জান্নাত না আপনাকে এখনো পাগলের মত ভালবাসে।
এই মেয়ের সাথে আর কথা বলতে ভালো লাগছে না। তাই নাফিকে আমার সিটে আর আমি ওর সিটে বসলাম।

জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম। কতদিন পর আবার সেই নিজের পরিচিত শহর অভিমুখে যাচ্ছি।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নাই। হঠাৎ নাফির ডাকে ঘুম ভাঙল।
নাফিঃ নাসিম ঐ নাসিম ওঠ। আমরা তো চুয়াডাঙ্গা চলে এসেছি।

আমিঃ হুম চল বাস থেকে নেমে যাই।
নাফিঃ হুম চল।

তারপর আমরা বাস থেকে নেমে যার যার বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম। কিছুক্ষণ পর বাসার গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রইলাম।
নিজের বাসায় নিজের ঢুকতে কেমন যেন লাগছে। আর সাত পাঁচ না ভেবে গেট দিয়ে ঢুকে দরজার কলিং বেল চাপ দিলাম।
কিছুক্ষণ পর মিমি এসে দরজা খুলে দিল। আর আমার ‌দিকে তাকিয়ে আছে।

আমিঃ কিরে বোন তুই কেমন আছিস?
বোন আমার কোন কথা না বলে সোজা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
আমিঃ কিরে তোর আবার কি হলো? তুই কান্নাকাটি শুরু করলি কেন?

মিমিঃ……………..
আমিঃ আচ্ছা আমাকে ছাড় আমি আবার চলে যাবো।
মিমিঃ এবার যাওয়ার কথা বললে পা ভেঙ্গে বাসায় বসিয়ে রেখে দেবো। ( চোখের পানি মুছে )
আমিঃ আচ্ছা আর যাবো না। আমাকে তো বাসার ভিতরে যেতে দে।

মিমিঃ ওহ তাই তো চল।
আম্মুঃ তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি। আর মাত্র ৭ দিন পর। সামনের সাপ্তাহে তোর বিয়ে ( কিচেন থেকে আসতে আসতে )
আমিঃ আমি এতদিন পর আসলাম আর তুমি এমন ভাবে কথা বলছো যেন আমি তোমার কেউ না।
আম্মুঃ তুই কোথায় যাচ্ছিস কি করছিস আমার সব জানা আছে।

আমিঃ আমি যে, আসছি তুমি আগে থেকেই জানতে?
আম্মুঃ হুম জানতাম। আর যা তুই ফ্রেস হয়ে আয়। আমি তোর জন্য খাবার রেডি করছি।

ধুর আমি মনে‌ করলাম কতদিন পর বাসায় আসলাম আর মনে করলাম বাসার সবাই কে সারপ্রাইজ দেবো। কিন্তু আমি নিজেই তো সারপ্রাইজ পেয়ে গেছি।
কি আর উপরে আমার রুমে চলে আসলাম। এসে তো আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম। এটা যে, আমার রুম আমি নিজেই চিন্তে পারছি না। অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে।

যাক তাহলে আমার বোনটা অনেক সুন্দর করে সাজানো শিখে গেছে। আমি ফ্রেস ট্রেস হয়ে নিচে গেলাম।
নিচে নেমে তো আবার অবাক হয়ে গেলাম। নিচে নেমে দেখি ইভান রাকিব ও জান্নাত এবং মারিয়া বসে আছে।

ওদের দেখে আমার রাগ ১০০ তে‌ ১০০ হয়ে গেছে। এখন রাগারাগী করার কোন মুড নেই তাই কোন কথা না বলে সোজা আমার রুমে চলে আসলাম।
পিছন থেকে রুপা অনেক বার ডেকেছে কিন্তু আমি কোন কথায় কান না দিয়ে চলে আসলাম। এসে খাটে শুয়ে পড়লাম।
কিছুক্ষণ পর জান্নাত, ইভান, রাকিব ও মারিয়া আমার রুমে চলে আসলো। এসে আমার খাটে বসলো। আমি উঠে বসে আছি। পাশে ওরাও বসলো। আর মিমি কফি নিয়ে এলো।

মিমিঃ আপু ভাইয়া তোমারা সবাই এক কাপ করে নেও।
আমিঃ মিমি এদের সবাইকে নাস্তা দিয়ে বিদায় কর। আমি একটু বাইরে যাবো।
ইভানঃ নাসিম আমরা সবাই সরি বলতে এসেছি।

আমিঃ তোদেরকে আমার কোন দরকার নেই।
জান্নাতঃ কিন্তু তোকে তো আমার দরকার। আমি তোকে ভালবাসি।

আমিঃ তোর মুখে এটা মানায় না। আমি তোকে ভালবাসি না। আর হ্যা সামনের সাপ্তাহে আমার বিয়ে। যদিও আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছাই আমার ছিল না। কিন্তু এখন তোকে বলছি আমি ঐ বিয়েটা করবো। পারলে ঠেকিয়ে দেখাস।

জান্নাত কোন কথা না বলে মুচকি হাসি দিয়ে বলল।
জান্নাতঃ ওকে বাই।

এটা বলে সবাই চলে গেল। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। কি এমন কথা বললাম যে, সবাই এভাবে চলে গেল।

এভাবে দেখতে দেখতে আমার বিয়ের দিন চলে আসলো। এমনকি বিয়েও হয়ে গেছে। আমি এখন বাসর ঘরে ঢুকে দেখি জান্নাত খাটের উপর বসে মাথার আঁচল ফেলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস খাচ্ছে।

লেখা – আরমান

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “বেষ্ট ফ্রেন্ড যখন বউ – (সিজন ১) – Arekti premer golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – বেষ্ট ফ্রেন্ড যখন বউ (সিজন 2) – Bonyo premer golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *