গোধূলী বেলায় তুমি – Amar valobasar moyna pakhi

গোধূলী বেলায় তুমি – Amar valobasar moyna pakhi: বাসর রাত সবার স্বপ্নের হলেও, জয়ার কাছে বাসর রাতটা জীবনের কাল রাত মনে হচ্ছে! বাসর ঘরটা তার কাছে মনে হচ্ছে নরক। তার সব স্বপ্নগুলো আজ ফ্যাকাশে। ভাবনা গুলো ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে।


পর্ব ১

ওহ্! আর পারছি না ব্যাথা লাগছে তো রাজ। রাজ ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় অধরার গালে!

চড়টা এতই জুরে ছিল, অধরার ঠোঁট কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল। রাজ অধরাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে! অধরা ছটফট করছে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। আর বলছে, প্লিজ ছেড়ে দাও বলছি। কি করছো এসব? তোমার পায়ে পড়ছি আমার সর্বনাশ করো না। প্লিজ ছাড়ো। কি চাও তুমি আমার কাছে? আমার সতিত্ব হরণ করো না।

~ অধরা রাজের সাথে পেড়ে উঠছে না। রাজ জোর করে অধরার শাড়ির আচল টেনে হিঁচড়ে ছিড়ে ফেলছে!
~ বাবা~মা কোথায় তোমরা বাঁচাও আমাকে। এই কালপিডটা আমার সাথে অসভ্যতামী করছে। অধরার চিৎকারে ড্রয়িংরুম থেকে সবাই অধরার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ায়।

~ অধরা রাজের পায়ে পড়ছে তবুও রাজ ছাড়ছে না। রাজ যখন বুঝতে পারলো দরজায় সামনে সবাই এসে গেছে। তখন রাজ অধরাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, তুমি যদি এখন সবাইকে বলোও যে আমি তোমার কোন ক্ষতি করিনি। শুধু তোমার শাড়ির আচল আর জামাটা একটু ছিড়েছি। তা কেউ বিলিভ করবে না। কথাটা বলে মুচকি হেসে রাজ ঘরের দরজা খুলে দেয়।

~ দরজা খুলতেই অধরাকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখে রাজের বাবা ঠাস করে রাজের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল, এজন্যই তোকে পড়ালেখা শিখিয়েছি? রাজ কোন কথা না বলে চলে যায়।

অধরা দরজা লাগিয়ে কাঁদতে থাকে। রাজ তার স্বপ্নগুলো নষ্ট করে দিলো। তার মৃত্যু ছাড়া এখন কোন রাস্তা নেই। কেন এমন করল? সদ্য কাজল গুলো অধরার চোখের ভ্রু ছেড়ে গাল ছুঁয়ে যাচ্ছে। নতুন কালো পাড়ের নীল শাড়িটা আর আগের মতো নেই। নীল রঙা কাঁচের চুড়িগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে অধরার স্বপ্নগুলোর মতো এক নিমিষে। মাথার সিল্কি করা চুলগুলো আর আগের মতো নেই। জীবনটা যেন এক কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডবন্ড হয়ে গেল।

সবাই চুপ~চাপ বসে আছে। কারো মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ঝড় থেমে গেলে যে শান্ত অবস্থা বিরাজ করে সেরক সব কিছু স্থবির হয়ে আছে। কেউ ভাবতেও ঘূণাক্ষরে মেয়ে দেখতে এসে রাজ এমনটা করবে। রাজের বাবা আর অধরার বাবা ছোটবেলা থেকেই বন্ধু।

আর তাই রাজ আর অধরার বিয়ের জন্যই আজ কথা হচ্ছিল। এক পর্যায়ে ছেলে মেয়ে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য যখন রুমে পাঠানো হয়। তখনি রাজ বিশ্রী ঘটনাটার জন্ম দেয়। অধরার বাবার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। সে এ মুখ দেখাবে কি ভাবে সমাজে।

~ রাজের বাবা এসে অধরার বাবাকে বললো, বন্ধু আমাকে ক্ষমা করে দে। তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোন উপায়ান্ত নেই।
~ বন্ধু আমি কি করবো? আমার মরা ছাড়া কোন উপায় নেই! এ মুখ সমাজে দেখাবো কি করে? কাল যখন রাস্তা দিয়ে যাবো। তখন লোকে বলবে, ওই দেখ ধর্ষিতার বাবা যাচ্ছে! এই বলে অধরার বাবা কেঁদে দিল।

~রাজের বাবা অধরার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো, বন্ধু কান্না করিস না আজ এ মুহূর্তে রাজ আর অধরা মার বিয়ে হবে।
~ অধরা এ কথা শুনে বললো, কি বলছেন এসব? আমি কি আপনাদের হাতের পুতুল? যা ইচ্ছা তাই করবেন? মন চাইলে খেলবেন না মন চাইলে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন? শুনেন দরকার হলে গলায় দড়ি দিব তবুও ওই দুশ্চরিত্রটাকে বিয়ে করবো না। বাবা তুমি না করে দাও উনাকে। আর বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলো।

~ মারে চুপ কর, তুই কি তোর বাবার মরা মুখ দেখতে চাস? মারে তোর কাছে জীবনে কিছু চায়নি আজ বাবা হয়ে আমার সম্মান তোর কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি। পারবি আমার সম্মান রক্ষা করতে? বিয়েটা তুই করে নে।
~ বাবা তুমি ওমন করে বলো না। আমি বিয়ে করবো আয়োজন করো।

~ এদিকে সন্ধ্যায় রাজ আর অধরার বিয়ে হয়ে যায়। অধরা বাসর ঘরে ঢুকার সময় বিষ খেয়ে নিছে। সে চায় না রাজ নামক ধর্ষক টার সাথে সংসার করতে।
অধরার খুব করে কান্না পাচ্ছে। একটা সময় সে রাজকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু যেদিন তার বোন সুসাইড করলো আর সুসাইড করার পর যখন তার বোনের ডাইরি পড়ে জানতে পারলো সুসাইডের কারণটা ছিল রাজ।

এখনো সে দিনের কথা মনে হলে রাজকে খুন করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সেদিন কাউকে কিছু বলতে পারে নাই। আর এখন নিজের বোনের হত্যাকারীকেই বিয়ে করতে হলো। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে টুপ~টাপ বৃষ্টির মতো জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।
~ বাসর রাত সবার স্বপ্নের হলেও, অধরার কাছে বাসর রাতটা জীবনের কাল রাত মনে হচ্ছে! বাসর ঘরটা তার কাছে নরক মনে হচ্ছে।

তার সব স্বপ্নগুলো আজ ফ্যাকাশে। এসব ভাবতে ভাবতে,
হঠাৎ দরজায় কড়া নড়ল। অধরা তাকিয়ে দেখে রাজ রুমের দরজা লাগিয়ে এদিকে আসছে। কিন্তু এখনো বিষে কাজ করছে না কেন? রাজ যদি সত্যি স্বামীত্ব ফলায়? নাহ্ ওর মতো একটা দুশ্চরিত্রের সাথে ঘর করা যায় না। এদিকে রাজ অধরার কাছে এসে ঘুমটা সরাতেই,


পর্ব ২

~ বাসর রাত সবার স্বপ্নের হলেও, জয়ার কাছে বাসর রাতটা জীবনের কাল রাত মনে হচ্ছে! বাসর ঘরটা তার কাছে মনে হচ্ছে নরক। তার সব স্বপ্নগুলো আজ ফ্যাকাশে। ভাবনা গুলো ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে। এসব ভাবতে ভাবতে,
হঠাৎ দরজায় কড়া নড়ল! জয়া তাকিয়ে দেখে রাজ রুমের দরজা লাগিয়ে এদিকে আসছে।

কিন্তু এখনো বিষে কাজ করছে না কেন? রাজ যদি সত্যি স্বামীত্ব ফলায়? নাহ্ ওর মতো একটা দুশ্চরিত্রের সাথে আর যাই হোক ঘর করা যায় না। এদিকে রাজ অধরার কাছে এসে ঘুমটা সরাতেই জয়া বালিশের নিচে থেকে টান দিয়ে ছুরি বের করে রাজের গলায় ধরলো।
এই জয়া কি করছো? গলা কেটে যাবে তো।

হুম বুঝতে পারছেন! এখন যদি নড়াচাড়া করেন তাহলে একদম গলায় চালিয়ে দিবো। এতোদিন জয়ার কোমল স্বভাবটাই দেখেছেন, এখন থেকে ভয়ংকর রুপটাও দেখবেন।শুনেন যদি আমার সাথে কিছু করতে আসেন না, তাহলে আপনাকে নরকে পাঠিয়ে দিবো। আপনি কি ভেবেছেন? আপনি বিয়ে করলেই আমাকে পেয়ে যাবেন? না আমার দেহে প্রাণ থাকতে আপনি আমাকে পাবেন না।

~ জয়া কি বলছো এসব? আল্লাহ তায়ালার পবিত্র কালামকে সাক্ষী রেখে আমরা বিয়ে করেছি। আর বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। যে বন্ধন শত্রুকেও ভালোবাসতে শেখায়। আর তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে।

ভালোবাসা? ভালোবাসা আপনার মুখে শোভা পায় না। কি করেছিল আমার বোন আপনাকে? জানেন আপু আপনাকে কতখানি ভালোবাসতো? আর আপনি আমাকে আর আপুকে দুজনকেই নিয়ে নোংরা খেলায় মেতেছিলেন। আমি আপনাকে ঘৃণা করি মিষ্টার রাজ। আপনি আর যাই করেন কাউকে ভালোবাসতে পারেন না।
জয়া প্লিজ বিশ্বাস করো, অদ্বিতীয়া আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসতাম। তুমি ভুল বুঝবে কারণে তোমাকে ওর কথা কিছু বলিনি। কিন্তু সে যে এমন কাজ করবে না বুঝতে পারিনি।

বাহ! ভালো তো তাই বলে আমার আপুটাকেই সুসাইড করতে বাধ্য করলেন?
প্লিজ আজ আমাদের বাসর রাত, আজকে আপাদত আমার কথা বিশ্বাস করো তুমি। আচ্ছা চলো আজ দুজনের জীবনে একটা মর্যাদাপূর্ণ রাত। এ জন্য দুরাকাত নফল নামায পড়ে নেয়।

আপনাকে আমি এ জীবনে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না। আর আপনার মন চায়, আপনি নামায পড়ে নেন। আর শোনেন আপনি যদি স্বামীর অধিকার নিতে আসেন তাহলে নিজেকে শেষ করে দিবো। জয়া মনে মনে ভাবছে বিষ এখনো কাজ করছে না কেন? তিন্নি কি বিষ দিলো তাহলে। কাল বাসায় যেয়ে নেয় তারপর দেখবো নকল বিষ দেওয়ার পরিণাম।

~রাজ জয়াকে আর কিছু বললো না। জয়ার পাশ থেকে বালিশ নেওয়ার সময় বললো, জানো জয়া আমি তোমাকেই ভালোবাসি। আমি জানি আমি তোমার কাছে ঘৃণার পাত্র ছাড়া আর কেউ নয়। তোমাকে এভাবে বিয়ে করা ছাড়া আমার কোন পথ খোলা ছিল না। যদি পার দিনের ঘটনার জন্য ক্ষমা করে দিয়ো। আরেকটা অনুরোধ স্বামী হিসেবে নয়, শত্রু হিসেবেই নিয়ো। আমাদের জন্য যেন আমাদের পরিবারের কেউ কষ্ট না পায়। তারা যেন বুঝতে না পারে কোন কিছু।
~ আচ্ছা ঠিকআছে।

আরেকটা কথা, তুমি যেটা বিষ ভেবে খেয়েছো সেটা বিষ ছিল না। আমি বিষের বোতল পাল্টে দিয়েছিলাম।

আপনাকে তো আমি। আপনার জন্য কি আমি মরতেও পারবো না?
না পারবে না, কারণ আমার জীবনটাই যে তুমি। আমার প্রতিটা শ্বাস~প্রশ্বাস জুড়ে শুধু তুমিই রয়েছো।

জয়া কিছু বলছে না, আজকের রাতটা নিয়ে তার কত স্বপ্ন ছিল। আর প্রতিটা স্বপ্ন রাজকে ঘিরেই ছিল। কিন্তু রাজ তার ভালোবাসার সাথে বেইমানী করেছে। যে বোন মায়ের মতো আগলে রাখতো সে বোনকে হারিয়েছে রাজ নামক নরপশুর জন্য! আর যাই হোক এমন মানুষের সাথে সংসার করা যায় না।

~ এদিকে পরের দিন সকালে রাজ ঘুম থেকে উঠে দেখে জয়া রুমে নেই। রাজ তাড়াহুড়া করে বিছানা গুছিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর রাজের ভাবী আসে।
~ কি গো দেবর সাহেব বিড়াল কেমন মারলে?

ভাবী তুমিও না?
হ্যাঁ তলে তলে এতকিছু আমি বললেই দোষ। বিয়ে করার জন্য এতোকিছু করলো আর বিড়াল মারার কথা শুনে মনে হচ্ছে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানো না। যাও ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।

রাজ শাওয়ার নেওয়ার জন্য বার্থরুমের দরজা ধাক্কা দিতে দরজা খুলে যায়। রাজ ভেতরে ঢুকতেই শর্ক খায়! জয়া শাওয়ার নিয়ে শরীরে টাওয়াল প্যাঁচ্চাছে!
~ জয়া রাজকে দেখে, চিৎকার দিয়ে উঠে। জয়া খেয়াল করেনি সে তার টাওয়ার গায়ের সাথে ঠিকভাবে জড়াতে পারেনি। তার আগেই রাজ ভেতরে এসে যায়। জয়া আবার যখন চিৎকার দিতে যাবে, ঠিক সে মুহূর্তে জয়ার টাওয়াল খুলে যায়।

রাজ জয়াকে জড়িয়ে ধরে মুখটা চেপে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো, ওগো টায়ালটা তো জড়াতেই পারো না। কিন্তু বার্থরুমের দরজাটা তো লাগাতে পারো। এটা তোমার বাসা না। এখানে ভাইয়া আছে বাবা আছে। যদি অন্য কেউ এসে যেতো।জয়া নিজেকে রাজের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। রাজ একহাতে বার্থরুমের দরজাটা লাগিয়ে দেয়
~বাহির থেকে রাজের ভাবী বার্থরুমের দরজা নক করে বলে, জয়া চিৎকার দিলে কেন ভেতরে কি হয়েছে?

~ জয়া নিজেকে রাজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে টাওয়াল নিছে পড়ে আছে।শরীরে কোন কাপড় নেই। জয়া নিজের হাতে তার চোখ দুটি ধরে ফেলে। রাজ ফ্লরে থেকে টাওয়ালটা তুলে জয়ার শরীরে প্যাঁচিয়ে দিয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই।

কি, গো? দেবর জ্বী। রাতে মন ভরেনি এখন বার্থরুমেও এসব চলছে। এই জন্যই তো বলি, ভেতরে চিৎকার শুনি একজনের বাহির হয় আরেকজন। বাড়িতে ভূত~প্রেত ভয় করলো নাকি?
ভাবী তুমিও না বেশি বলছো কিন্তু?

হ হ যতো দোষে নন্দ ঘোষ!
এমন সময় জয়া বার্থরুম থেকে বেরুতেই ভাবী বললো, কি গো একদিনের মধ্যেই এতো ভালোবাসা? বার্থরুমে একা আসা যায় না? এটাই ভালোবাসা। জয়া কিছু বলছে, লজ্জায় তার মুখটা গোধূলী লগ্নে সূর্য যে রুপ ধারণ করেছে। সেরুপ ধারণ করেছে। রাজ পলকহীন নয়নে তাকিয়ে আছে। রাতের জয়া আর এখনকার জয়ার মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান। জয়া ভাবীকে কিছু না বলে রুমে চলে গেল।

~ রাজ কিছুক্ষণ পর রুমে গিয়ে দেখে জয়া শাড়ি না লুঙি পরে আছে। রাজ হাসবে না কাঁদবে কিছু বুঝতে পারছে না। জয়া বার বার শাড়ির কুচি দেওয়ার চেষ্টা করতে পারছে না। রাজ দূরে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। জয়া খেয়াল করেনি রাজ রুমে আসছে।

এখন রীতিমতো জয়ার রাগ হচ্ছে। শাড়িটাও সে পরতে পারে না এভাবে নিচে কিভাবে যাবে!
হঠাৎ জয়া খেয়াল করলো কে যেন তার শাড়ির কুঁচি দিচ্ছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই রাজ শাড়ি কুঁচি করে গুঁজে দেয়। তখন হাতটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও জয়ার স্পর্শকাতর জায়গায় লাগে। জয়া শরীরটা কেমন যেন শিউরে উঠে! মনে হয় সারা শরীরে বিদ্যৎ বয়ে যাচ্ছে। জয়া রাজেরর গালে চড় বসিয়ে দেয়।

রাজ অবাক হয়ে জয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস? তোর কি করে সাহস হয় রুমে না বলে প্রবেশ করার তার উপর আমাকে শাড়ি পরাতে গিয়ে ওখানে হাত দেওয়ার।


পর্ব ৩

কিছু বুঝে উঠার আগেই রাজ শাড়ি কুঁচি করে গুঁজে দেয়। তখন হাতটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও জয়ার স্পর্শকাতর জায়গায় লাগে। জয়া শরীরটা কেমন যেন শিউরে উঠে! মনে হয় সারা শরীরে বিদ্যৎ বয়ে যাচ্ছে। জয়া রাজেরর গালে চড় বসিয়ে দেয়।
রাজ অবাক হয়ে জয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

কি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস? তোর কি করে সাহস হয় রুমে না বলে প্রবেশ করার তার উপর আমাকে শাড়ি পরাতে গিয়ে ওখানে হাত দেওয়ার। তোর কি মনে হয় তোর এসবে আমার মন গলে যাবে? মনে রাখিস আমি পৃথিবীতে যদি কাউকে ঘৃণা করি তাহলে সেটা তুই।
জয়া তুমি যতই অবহেলা করো না কেন আমি তোমাকে ভালোবাসবোই। তোমার মন ঠিকই জয় করে নিব।

একটা খুনি আমার মন জয় করে নিবে? যার কারণে আমার মায়ের মতো বড় বোন আত্মহত্যা করেছে। কি দোষ করেছিল আমার বোন? কি দোষ করেছিলাম আমি? ভালোই তো বাসতাম তোমাকে। নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি। তার প্রতিদান স্বরূপ নিজের কলিজার টুকরো বোনকে হারিয়েছি। আমি তোকে ঘৃণা করি।

তোর মুখটাও দেখতে ইচ্ছে হয় না আমার।
রাজ আর জয়ার তর্কাতর্কির সময় রাজের ভাবী রুমে এসে পড়ে।

কি হলো তোমরা এভাবেই থাকবে? নিচে খেতে আসো। রোমান্স করার অনেক সময় পাবে।
সকালে নাস্তা করে রাজ জরুরি কাজে অফিসে চলে যায়। অফিস থেকে আসার সময় জ্যামে যখন আঁকটে পড়ে। হঠাৎ খেয়াল করে দেখতে পায় একটা নয় ~দশ বছরের মেয়ে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির কাচ নামিয়ে দিতেই মেয়েটা বললো, স্যার একদম তাজা বেলী ফুলের মালা। ম্যাডামের জন্য নিয়ে যান ম্যাডাম অনেক খুশি হবে।

রাজ মেয়েটার কাছ থেকে একটা ফুলের মালা নিয়ে এক হাজার টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিলো।

~ স্যার সারাদিন পাঁচশো টাকার ফুলও বিক্রি করতে পারি না। এতো টাকা কিভাবে ভাংতি দিবো?
তোমাকে এক হাজার টাকাই দিয়েছি রেখে দাও। আর দোআ করো তোমার ম্যাডাম যেন খুশি হয়।
~ রাজ ফুলের মালাটা ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখততেই দেখতে পেল জয়া বেলকণীতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।

~ জয়া তুমি এটা করতে পারলে? আমার কথা একবারো তোমার মনে পড়লো না?
জয়া জারিফের কথা শুনে ফুঁপিয়ে কান্না করে দিল।

কি হলো কাঁদছো কেন?
জারিফ বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছা করে বিয়েটা করিনি। রাজ আমাকে দেখতে গিয়ে অসভ্যতামি করেছে। তুমি যেভাবেই হোক আমাকে নিয়ে যাও। আমি এ নরকে থাকতে পারবো না।

জয়া তুমি চিন্তা করো না আমাদের দুজনকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। আগামী মাসে আমি দেশে আসছি। আর তুমি পারলে রাজকে ডির্ভোস দিয়ে দাও। পরে কোন ঝামেলা হবে না।

ওকে মাই সুইর্ট হার্ট! তুমি চিন্তা করো না। আমি যত তাড়াতাড়ি পারি রাজকে ডির্ভোস দিয়ে দিবো। আর একটা কথা আমি তোমার আমানত খেয়ানত করিনি। রাজকে আমি স্বামীর ~অধিকার দেয়নি আর কোনদিন দিবোও না।

~ জয়া ফোন কেটে দিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখে রাজ দাঁড়িয়ে আছে। জয়া রাজকে কিছু না বলে রুমে চলে গেল।
~ জয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে যখন চুল আঁচড়াচ্ছে এমন সময় রাজ বললো, জয়া তোমার খোপাতে বেলী ফুলের মালাটা খুব সুন্দর লাগবে। একটু পড়বে মালাটা?

জয়া মালাটা হাতে নিয়ে বললো, তাই বুঝি? খুব সুন্দর লাগবে তাই না। আচ্ছা তুই কি করে ভাবলি তোর দেওয়া ফুল আমি খোঁপায় জড়াবো? কথাটা বলে মালাটা পা দিয়ে পিষে ফেলল!
~ রাজ কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

~ রাত্রি বেলা রাজ ফ্লরে শুয়ে আছে। জয়া রাজকে শুনিয়ে শুনিয়ে জারিফের সাথে কথা বলছে। কথা বলার এক পর্যায়ে জারিফ বললো, বেবী একটা পাপ্পি দাও না?
ইশ আমার সরম করে তুমি পাপ্পি দাও।

জয়ার প্রতিটা কথা যেন রাজের বুকে তীরের মতো এসে বিঁধছে। জৈষ্ঠের আকাশটা যেন আষাড়ে দখল করে নিয়েছে। এই বুঝি মুষলধারে বৃষ্টি নামবে। জয়ার কথাগুলো রাজ সহ্য করতে পারছে না। তাই জয়াকে বললো, আমার বাড়িতে অন্য পুরুষের সাথে কথা বলা চলবে না। আর মনে রেখো তুমি আমার স্ত্রী। তুমি মানো বা না মানো সেটা তোমার বিষয়।

কিসের স্ত্রী? জোর করে বিয়ে করলেই স্ত্রী হয়ে যায়। তিন বার কবুল বললেই কি শরীর ভোগ করাে লাইসেন্স পাওয়া যায়? শোন আমি ডির্ভোস চাই। তুই যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসিস সে ভালোবাসার কসম তুই আমাকে ডির্ভোস দিবি।
জয়া এসব কি বলছো তুমি? ডির্ভোস!

হ্যাঁ ডির্ভোস, সামনে মাসে জারিফ আসবে। জারিফ এসেই আমাকে বিয়ে করবে।
রাজ কি বলবে তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। যে জয়া তাকে কলিজা ছাড়া ডাকতো না সে তার কাছে ডির্ভোস চাচ্ছে। সময় মানুষকে কত ভাবেই না পরির্বতন করে দেয়।

~ এদিকে দেখতে দেখত প্রায় মাস চলে যায়। এখন রাজ আর জয়া নতুন অফিসের জন্য ঢাকায় থাকে। দুজনে একসাথে থাকলেো এতোদিনে রাজ জয়াকে একটা দিনের জন্যও কাছে পায়নি।

~ প্রতিদিনের মতো রাজ অফিস থেকে আসার সময় কিছু না কিছু জয়ার জন্য ঠিকই নিয়ে আসবে। জয়া এ নিয়ে রাজকে নানা~ভাবে অপমান করবে। কিন্তু রাজের কোন অভিযোগ নেই জয়ার প্রতি কারণ রাজ জয়াকে ভালোবাসে।

~প্রতিদিনের মতো আজও রাজ অফিসে চলে যায়। রাজ অফিসে চলে যাওয়ার সাথর সাথেই জয়ার নাম্বারে একটা মেসেজ আসলো। দরজাটা খুলো তো।
~ জয়া দরজা খুলতেই চমকে গেল। জারিফ তুমি?
~ কেমন দিলাম সারপ্রাইজ?

আমি বিশ্বাসি করতে পারছি না আমার জারিফ দেশে এসেছে। দুজনের চোখেই আনন্দ অশ্রু। জয়া আর জারিফের এই প্রথম সামনা সামনি দেখা হলো। জারিফ জয়ার কাছে রাজের বিষরে সবকিছু শুনে বললো, তুমি চিন্তা করো না আমরা খুব শ্রীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছি। তুমি শুধু রাজের থেকে ডির্ভোসটা নাও। আর আজ আমি আসি।

~ জারিফ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর রাজ বাসায় প্রবেশ করেই বুঝতে পারছে জয়া আজ ভীষণ খুশি। কিন্তু কেন?
~ রাত্রে জয়া জারিফের সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলছে। তখন রাজ বুঝতে পারলো জারিফ দেশে এসেছে। জারিফের আসার কথা শুনে রাজের বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। মনে হচ্ছে প্রিয় বস্তুটা হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছে।

~ এদিকে জয়া জারিফের সাথে কথা শেষ করেই রাজকে বললো, রাজ কালকেই আমি ডির্ভোস চাই।
~ সরি আমি তোমাকে ডির্ভোস দিতে পারবো না। তবে একটা শর্তে ডির্ভোস দিতে পারি।
কি শর্ত বলো?

আগামী সাতদিন তুমি আমার স্ত্রীর মতো হয়ে থাকবে। যা বলবো তাই করবে। ভয় পেয়ো না স্বামীর অধিকার চাইবো না। আর কোনদিন তোমার সামনে এ মুখ নিয়ে দাঁড়াবো না। আর হ্যাঁ আজ অফিস থেকে আসার সময় ডির্ভোস লেটার নিয়ে এসেছি। সাতদিন পর সই করে দিবো। এখন বলো তুমি শর্তে রাজি কি না?

আচ্ছা আমি তোমার শর্তে রাজি।
তাহলে কাল সকাল থেকে সাতদিন শুরু।


পর্ব ৪

আগামী সাতদিন তুমি আমার স্ত্রীর মতো হয়ে থাকবে। যা বলবো তাই করবে। ভয় পেয়ো না স্বামীর অধিকার চাইবো না। আর কোনদিন তোমার সামনে এ মুখ নিয়ে দাঁড়াবো না। আর হ্যাঁ আজ অফিস থেকে আসার সময় ডির্ভোস লেটার নিয়ে এসেছি। সাতদিন পর সই করে দিবো। এখন বলো তুমি শর্তে রাজি কি না?
আচ্ছা আমি তোমার শর্তে রাজি।

তাহলে কাল সকাল থেকে সাতদিন শুরু।
আচ্ছা, তবে আবারো বলে দিচ্ছি স্বামীর অধিকার তুমি কখনো পাবে না আমার থেকে।
রাজ মুচকি হেসে বললো, চিন্তা করো না ওসব কিছু করবো না। এখন ঘুমিয়ে যাও।

ফজরের আযানের সময় রাজ, জয়াকে ডেকে দিতেই জয়া বললো, আমি নামায পড়বো না আমাকে ঘুমাতে দাও। কেন শুধু শুধু বিরক্ত করো?
জয়া ভুলে যেয়ো না এ সাতদিন আমার কথা মতো চলবে। যাও অযু করে আসো। রাজ জয়াকে অযু করতে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেও অযু করে নামায পড়ে নিন।
~ সকালে জয়া যখন রান্না করছে, তখন রাজ জয়ার সাথে থেকে হেল্প করে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও জয়া এসব সহ্য করে যায়। আর মনে মনে ভাবে সাতদিনই তো।

~ এদিকে প্রতিদিনের মতো, রাজ আজকেও অফিস থেকে আসার সময় বেলী ফুলের মালা নিয়ে এসে নিজ হাতে জয়ার খোঁপায় পরিয়ে দেয়! জয়া না করতে পারে না।
~ রাতে জয়া আর রাজ ডিনার করতে বসছে। রাজ খেয়াল করলো জয়া খাচ্ছে না।
~ এই তুমি খাচ্ছো না কেন?

~ হাত কেটে গেছে দুপুরে ফল কাটতে গিয়ে।
~ ওহ্ আচ্ছা তাই বুঝি? আচ্ছা হা করো।
~না আমি খেতে পারবো। আপনার খাইয়ে দিতে হবে না।

~ এ সাতদিন কোন কৈফিয়ত শুনতে চাই না। হা করো, জয়া রাজের দিকে চেয়ে আছে এক দৃষ্টিতে আর খাবার খাচ্ছে।
~ তিনদদিন খুব ভালো কাটল। তৃতীয় দিন রাজ অফিসে এমন সময় বৃষ্টি নামল! জয়া ছোটবেলা থেকেই বৃষ্টি পাগল। বৃষ্টি শুরু হলেই, জয়া ছাদে গিয়ে ভিজতে লাগে। প্রায় ঘন্টাখানেক ভিজার পর রুমে এসে কাপড় চেঞ্জ করতেই।

কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসে যায়!
রাজ বাসায় এসেই দেখে জয়া বিছানায় শুয়ে আছে। জয়াকে দুবার ডাক দিতেও যখন বিছানা থেকে উঠছিল না তখন মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে!
রাজ কি করবে বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ জলপট্টি দিয়ে দেখলো জ্বর কমছে না।

তাই আর দেরী না করে রাতেই, হসপিটালে নিয়ে যায়। হসপিটাল দুই দিন রাজ জয়ার পাশেই থাকে। তিনটা দিন এক মুহূর্তের জন্যও রাজ জয়ার চোখের আড়াল হয়নি। জয়াকে খাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে মেডিসিন দেওয়া সব করেছে। দুই দিন পর হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরে আসে।

~ বাড়ি ফিরার পর রাজ জয়াকে রান্না করতে দেয়নি। এদিকে রাজ রান্না করতে গিয়ে তার হাত পুড়ে ফেলে। এর আগে কোনদিন তো রান্না করেনি সে জন্য। দুপুরে রাজ যখন জয়াকে খাইয়ে দিতে যায়। তখন জয়া খেয়াল করে রাজের ডান হাতে ফুসকা পড়েছে অনেকগুলো। রাজকে জিজ্ঞেস করতেই বলে, ওই একটু খানি হাত তেলের ছিটা লেগেছিল। তুমি কিছু ভেবো না ঠিক হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ তুমি তো গোসল করোনি। আমি পানি তুলে কাপড় রেখে আসছি তুমি গোসল করে আসো। ঠিকমত গোসল না করলে তো শরীর আরো খারাপ লাগবে।

~ জয়া গোসল করে বের হতেই রাজ বিছানায় বসিয়ে, জয়ার মাথায় চুল আঁচড়ে তেল লাগিয়ে দেয়। জয়ার এসব সহ্য হয়না কিন্তু সহ্য করা ছাড়া এ মুহূর্তে কোন উপায় নেই। আর কয়েকটা দিনই তো মাত্র!
আর বাকি দুদিন জয়া এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। এদিকে জয়ার দিনগুলি যেন যাচ্ছে না। আর মাত্র দুটি দিন তারপরেই সে জারিফ কে পেতে যাচ্ছে! কিন্তু এ দুটি দিন জয়ার কাছে দুটি মাসের সমান লাগছে।

~ দেখতে দেখতে ছয়দিন চলে যায়। আজকের রাতটা পেরুলেই কাল সকালে অপেক্ষার সাতদিন পূর্ণ হবে। রাজ জয়ার মাথায় হাত বুলাচ্ছে, জয়ার বড্ড রাগ হচ্ছে তবুও কিছু বলছে না। সে নতুন সকালের নতুন একটি সুন্দর ভোরের আশা করছে। যে ভোরে থাকবে না কোন খুনির ছায়া!
~ এদিকে রাজ জয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, জয়া সত্যিই কি জারিফ আমার চেয়ে তোমাকে বেশি ভালোবাসে?

~ রাজ দেখলো জয়া ঘুমিয়ে গেছে। চাঁদের আলো জানালার কাচ ভেদ করে জয়ার মুখে পড়ছে। এমনিতেই রুপকথার রাজকুমারীর মতো দেখতে জয়া, চাঁদের আলোতে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। রাজের মন চাচ্ছে জয়ার কপালের চুলগুলো সরিয়ে তার কপালে চুমু এঁকে দিতে। কিন্তু না।

~ এদিকে জয়ার মাঝরাতে কারো কান্না শুনে ঘুম ভেঙে যায়! জয়া বুঝতে পারে পাশের রুমে কে যেন কাঁদছে। তাড়াহুড়া করে ঘুম থেকে উঠে পাশের রুমে উঁকি দিতেই দেখে রাজ জায়নামাযে বসে মোনাজাত ধরে কান্না করছে আর কি যেন বলছে।

~ জয়া, একটু মনোযোগ দিয়ে শুনতে পেল। রাজ বলছে, হে আল্লাহ রাত্রি যতই গভীর হয় ততই তোমার দরজা বান্ধার জন্য উন্মুক্ত হয়। তুমি না শেষ রাতে বান্দার ফরিয়াদ শোনার জন্য শেষ আসমানে আসো। ও আল্লাহ আমি আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে তোমার পথে আনার জন্য, চেষ্টা করেছি। হেদায়াত দানের মালিক তুমি। আমি আমার কর্মের জন্য তোমার কাছে তওবা করছি। ও আমার আল্লাহ তুমি জয়াকে আমার জন্য কবুল করে নাও।

তুমি তো জানো কতটা ভালোবাসি আমি তাকে। তুমি তো সত্যিটাও জানো। ও আল্লাহ জয়াকে আমার করে দাও।
~জয়ার কাছে রাজের কান্না অসহ্য লাগছে। তাই তাড়াতাড়ি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
~ রাজ সারারাত ওভাবেই কাটিয়ে দিল।

~ সকাল বেলা ভোরের আলো পড়তেই জয়ার ঘুম ভেঙে যায়! ঘুম ভাঙতেই তার খুব খুশি লাগে। আজ থেকে সে মুক্ত। কিন্তু কোথাও রাজকে দেখতে পাচ্ছে না। রাজ কী তাকে ডির্ভোস দিবে না? হঠাৎ খেয়াল করলো টেবিলের উপর ডির্ভোস পেপার। তার পাশেই একটা চিরকুট। জয়া দেখলো ডির্ভোস পেপারে রাজ সাইন করে দিয়েছে। সাইনটা দেখেই ঈদের চাঁদ দেখার আনন্দ হচ্ছে। ডির্ভোস লেটারের পাশে থাকা চিরকুট খুলে পড়তে শুরু করলো
তোমাকে কি বলে সম্বোধন করবো সে ভাষা আমার জানা নেই,

আজ থেকে তোমার প্রতি আমার কোন অধিকার রইল না। আজ থেকে তুমি মুক্তি। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে। আজকের পর থেকে আর কেউ বেলী ফুলের মালা নিয়ে এসে তোমাকে বলবে না ভালোবাসি। বলবে না তোমাকে নীল শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগে।

আর কেউ তোমাকে জোর করে খাইয়ে দিবে না। আর কেউ হয়তো তোমার জন্য হাত পুড়ে রান্না করবে না। বলবে না নামায পড়তে। জানো খুব করে চেয়েছিলাম জান্নাতে তোমাকে নিয়ে একসাথে থাকতে। জানি তোমার রাত্রে উঠতে কষ্ট হতো, তারপরেও সাতটা দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ানোর চেষ্টা করেছি।

জানো জয়া আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসতাম, তুমি যতক্ষণ আমার পাশে থাকতে মনে হতো পুরো পৃথিবীটাই আমার পাশে। কিন্তু আমি এ জিনিসটা বুঝতাম না জোর করে ভালোবাসা হয় না। তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে একটা সময় কলিজা ছাড়া ডাকতেই না।

কিন্তু আজ বুঝতে পারলাম তুমি আমাকে ঘৃণা করো প্রচন্ড ঘৃণা করো। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো জোর করে তোমাকে বিয়ে করার জন্য। আর হ্যাঁ আজকের পর থেকে বিরক্তিটা আর কোনদিন তোমার সামনে আসবে না। ভালো থেকো। আর হ্যাঁ তুমি না বলেছিলে, কবুল কবুল কবুল তিনবার বললেই বিয়ে হয় না? তুমি হয়তো ভুলে গেছো বিয়ে হয় আল্লাহর পবিত্র কালাম পড়ে। আর পবিত্র কালামের একটা বন্ধন থাকে। এ বন্ধনটাই একদিন তোমাকে খুব করে কাঁদাবে।

ভালো থেকো বিরক্তিটা আর তোমার জীবনে আসবে না।
~ চিঠি পড়া শেষ হলেই, জয়ার চোখের সামনে তার বোনের সুসাইড করার চেহারাটা ভেসে উঠল। জয়া মনে মনে বললো, যাক অবশেষে খুনির হাত থেকে বাঁচলাম।

~ জয়া ডির্ভোস লেটার টা নিয়ে সোজা জারিফের বাসায় চলে যায়। জারিফের রুমের কাছে যেতেই শুনতে পায়,
~আরে কি বলিস ওই বিয়ে করা মেয়েকে আমি আবার বিয়ে করবো? শুনেছি আজ ডির্ভোস নিবে। ভাবছি হোটেলে নিয়ে ব্যবহার করে ছেড়ে দিবো। মেয়েটা সুন্দর তাই একটু বেশিই সময় দিতে হচ্ছে।

~ আরে দোস্ত তুই একলাই খাবি না কি? আমাদের নিবি না?
~ আরে তোরাও আসিস, আগে আমি যাবো তারপর তোরা। আর হোটেল বুক করার টাকা কিন্তু তুই দিবি।

~জারিফের কথা শুনে জয়ার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। জারিফ তাকে নয় তার শরীরটাকে ভালোবাসে। জয়া জারিফের সাথে কথা না বলেই তার বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বাসা থেকে বের হতেই ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠে, ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ে বলে, আপু আপনি একটু ইবনেসিনা হসপিটালে দেখা করেন।

~ জয়া হসপিটালে গেলে নার্স একটা রোগীর সামনে নিয়ে যায়। বিছানায় শুয়ে আছে মুখে অক্সিজেন মাক্স থাকা সত্ত্বেও লোকটাকে চিনতে ভুল হয় না জয়ার এটা আপুর ফেন্ড হাবীব!
~ জয়াকে দেখেই হাবীব বললো, আমি আর বাঁচবো না হয়ত। তাই সত্যিটা বলে যেতে চাই। তোমার আপু সুসাইড করিনি, আমি ধর্ষণ করে মেরেছি।

পর্ব ৫

~ জয়া হসপিটালে গেলে নার্স একটা রোগীর সামনে নিয়ে যায়। বিছানায় শুয়ে আছে মুখে অক্সিজেন মাক্স থাকা সত্ত্বেও লোকটাকে চিনতে ভুল হয় না জয়ার, এটা আপুর ফেন্ড হাবীব!
~ জয়াকে দেখেই হাবীব বললো, আমি আর বাঁচবো না হয়ত। তাই সত্যিটা বলে যেতে চাই। তোমার আপু সুসাইড করিনি, আমি ধর্ষণ করে মেরেছি।

~ কি বলছেন এসব!
~ আপু যে সুসাইড নোট লিখেছিল। রাজ যদি তাকে ভালো না বাসে তাহলে সে সুসাইড করবে? আর আপু তাই করেছিল!
~ হ্যাঁ সুসাইড নোট লিখেছিল কিন্তু সেটা মিথ্যা ছিল। আমি জানতাম অদ্বিতীয়া রাজকে নিজের থেবে বেশি ভালোবাসতো। তাই আমি ওর সাথে প্ল্যান করে বলি রাজকে সুসাইডের হুমকি দিয়ে চিরকুট লিখে সুসাইড করার অভিনয় করবি। তখন দেখবি রাজ সত্যি তোকে ভালোবাসবে।

~ অদ্বিতীয়া সরল মনে রাজি হয়ে যায়। আর সুসাইড নোট লিখে ফেলে। আর তখনি অদ্বিতীয়াকে ধর্ষণ করে মেলে ফেলি। যেন রাজ ফেঁসে যায়। কিন্তু তুমি সুমাইড নোট পুলিশের কাছে দাওনি। সেদিন আমার বিচার না হলেও প্রকৃতি আমাকে ছাড়েনি। হসপিটালে এসে মৃত্যুর প্রহর গুনছি। শরীরে মরন ব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে।

~ হাবীব আর কথা শেষ করতে পারলো না। কথা বলতে বলতেই সে মারা গেল।
~ এদিকে জয়ার সামনে সত্যিটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। রাজ ফুলের মতো নিষ্পাপ। এতোটা ভালোবাসার পরও রাজকে জয়া চিনতে পারলো না। নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা লাগছে।

~ হসপিটালের বেঞ্চে জয়া বসে পড়ল। চোখের পানি টলমল টলমল করছে। খুব সুন্দর করে সেজেছিল আজ জারিফের জন্য। কালো পাড়ের নীল শাড়ি। খোঁপায় বেলীফুলের মালা। কপালে ছোট্ট করে বিন্দুর মতো কালো টিপ!
~ সুচয়না চোখ জুড়াতে সরু করে কাজল দিয়েছিল সে। কিন্তু সে কাজলগুলো মনে হয় আর ধরে রাখতে পারবে না। হসপিটালের বেঞ্চে বসে বসে রাজের কথা ভাবছে এমন সময় একটা নার্স বললো, আপু আপনি কেমন আছেন?

~আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
~ জি ভালো। আপু কয়েকদিন আগে আপনি আসছিলেন না জ্বর নিয়ে এ হসপিটালে?
~ হ্যাঁ আপু। কেন কি হয়েছে?

~ কিছু না আপু। আপু আপনার হাসবেন্ড আসেনি?
~ না ওই আজ বাসায়।
~ আপু একটা কথা বলি?

~ হ্যাঁ বলো।
~ আপি আপনি কি এমন ভালো কাজ করছেন যার জন্য এমন স্বামী পেয়েছেন?
~ কি বলছো আপু?

~ আপু আপনি সত্যি অনেক ভাগ্যবতী। হসপিটালে চারবছরে কত কাপল দেখেছি। কতত ক্রিটিক্যাল মুহূর্ত পার করেছি। কিন্তু আপনার স্বামীর মতো কাউকে দেখেনি। সারারাত আপনার জন্য নামায পড়ে কান্না করছে। যেন আপনি সুস্থ হয়ে যান। একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে এতটা ভালোবাসতে আপনার স্বামীকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। দিনের বেলাতে আপনার মুখে তুলে খাইয়ে দিল। আপু আমার জন্য দোআ করবেন। আমার স্বামীটা নেশা করে। তবুও ছেড়ে যেতে পারি না। আল্লাহ যেন আমার স্বামীকে আপনার স্বামীর মতো ভালো বানিয়ে দেয়।

~ জয়া নার্সকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। সে ভাবতে পারছে না সে কোথায় যাবে।
~ জয়ার জড়িয়ে ধরা দেখে নার্স হতভম্ব হয়ে যায়! জয়া নার্সকে বিদায় জানিয়ে তাড়াহুড়া করে বাসায় এসে পড়ে। বাসায় আসতেই শুনতে পায় কে যেন ডাকছে, এই কলিজা বেলী ফুলের মালা এনেছি! খোঁপায় জড়াবে না। জয়া দৌড়ে ডেসিংটেবিলের সামনে যায়।

কিন্তু না রুমে কেউ নেই। জয়া রাজের দেওয়া ফেলে রাখা চিরকুট বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। রাজের মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে~মুচড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে হৃদপিন্ডে কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। জয়া তার ফোন থেকে বারবার রাজের নাম্বারেরে ফোন দেয়। নাম্বারটা বারবার বন্ধ শুনাচ্ছে। বাসায় ফোন করে রাজের মাকে রাজের কথা বললে তারা বললো, রাজ তো বাসায় আসেনি মা।

~ জয়া ফোন কাটতেই ডির্ভোস লেটারটা চোখে পড়ল। ডির্ভোস লেটারটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারলো ডির্ভোস লেটারে ফোঁটায় ফোঁটায় জলের ছাপ। জয়ার আর বুঝতে বাকি রইল না রাজ ডির্ভোস লেটারে সাইন করতে গিয়ে কান্না করছে। জয়া আর একমুহূর্ত দেরী না করে ডির্ভোস লেটারটা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে।

এবং
বিকেলের টিকেট করে বাসে করে রাজের বাসায় এসে পড়ে। বাসায় এসে রাজের মাকে বললো, মা রাজ এখনো বাসায় ফিরেনি?
~ না তো মা। আরেকটা কথা তোমাকে যে কিভাবে বলি?
~ মা কি বলবেন বলেন। আমি কিছু মনে করবো না।

~ মা রাজ আমার সাথে সব শেয়ার করেছে। এবং
তোমাকে ডির্ভোস দেওয়ার আগের দিন ফোন করে অনেক কান্না করেছিল। আমিই প্রথমে না করেছিলাম। কিন্তু যখন শুনলাম ডির্ভোস তোমার ইচ্ছাতেই হচ্ছে তখন আর আকটাইনি। তোমাকে নিজের মেয়ের মতো ভেবেছিলাম। মানছি বিয়ের আগে রাজ একটা সিনক্রিয়েট করেছিল।

সেজন্য আমিও ক্ষমা চাচ্ছি। আমাদের ক্ষমা করে দিয়ো মা। আমার ছেলেটা তোমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। দোআ করি তুমি সুখী হও। তোমাকে চাইলেও আর এ বাড়িতে রাখতে পারবো না। আরেকটা কথা আমার ছেলেটা তোমাকে বড্ডবেশি ভালোবাসতো। আচ্ছা এসব বাদ দাও মা। তুমি ভালো থেকো।
~ মা কি বলছেন? আপনি ক্ষমা চাচ্ছেন কেন?

মা আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি অনেক বড় ভুল করছি। আপনাদের ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।
এমন সময় জয়ার বাবা আসলো। জয়া তার বাবাকে দেখে ক্ষানিকটা অবাক হয়ে যায়। বাবা তুমি কেন আসছো?
~ শুনলাম রাজ নাকি তোকে ডির্ভোস দিয়েছে। তাই তোকে নিতে আসলাম।

~ জয়া আর তার বাবাকে কিছু বলতে পারলো না। বাসায় আসার পর রাজের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। পরিচিত একজনের কাছে শুনেছে রাজ নাকি আমেরিকা চলে যাবে কিছুদিনের মধ্যে।

~ জয়া ভাবতে পারছে না এ মুখ নিয়ে কিভাবে রাজের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। যতই দিন যাচ্ছে রাজের স্মৃতিগুলো ততই মনে পড়ছে। রাজের খাইয়ে দেওয়া অফিস শেষ করে বেলী ফুলের মালা নিয়ে আসা সবকিছু!

~ একদিন হঠাৎ শুনতে পেল রাজের বিয়ে। তাও জয়ারই বান্ধবী জেনিফার সাথে। জয়া বিশ্বাস করতে পারছে না। রাজের বিয়ে! কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে তার। না এ বিয়ে যেভাবেই হোক আঁকটাতে হবে। রাজকে ছাড়া সে বাঁচবে কিভাবে।

পর্ব ৬ (অন্তিম)

~ জয়া ভাবতে পারছে না এ মুখ নিয়ে কিভাবে রাজের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। যতই দিন যাচ্ছে রাজের স্মৃতিগুলো ততই মনে পড়ছে। রাজের খাইয়ে দেওয়া অফিস শেষ করে বেলী ফুলের মালা নিয়ে আসা সবকিছু!

~ একদিন হঠাৎ শুনতে পেল রাজের বিয়ে। তাও জয়ারই বান্ধবী জেনিফার সাথে। জয়া বিশ্বাস করতে পারছে না। রাজের বিয়ে! কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে তার। না এ বিয়ে যেভাবেই হোক আঁকটাতে হবে। রাজকে ছাড়া সে বাঁচবে কিভাবে।

~ কোন মতো রাজের ঠিকানা সংগ্রহ করে রাজের নতুন বাসায় গেল। রাজ ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিল। জয়াকে দেখে ফোন রেখে দিয়ে বললো, আপনি কেন এসেছেন?

~ আমি আমার স্বামীর কাছে এসেছি।
~ তাই বুঝি? কিসের স্বামী আমি? একটু বুঝিয়ে বলবেন? আপনাকে আমি ডির্ভোস দিয়েছি। আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন?
~ রাজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি সত্যিই সব না জেনে করছি।

~ ক্ষমা সে তো তোমাকে ডির্ভোস লেটারের সাথেই করে দিয়েছি। কি চাও আর? আর কত কষ্ট দিতে চান আপনি আমাকে? সে ফুলশর্য্যার রাত থেকে আপনি আমাকে কত অপমান না করেছেন। সব আপনাকে ভালোবাসার কারণে। আমি চাইলেই আপনার কাছ থেকে স্বামীর অধিকার আদায় করে নিতে পারতাম।

কিন্তি কেন নেয়নি জানেন? আপনাকে বড্ডবেশি ভালোবাসতাম। বলতে পারেন নিজের থেকেও বেশি। এ জন্যই আপনি যত্ন সহকারে কষ্ট দিয়েছেন। সারারাত আমার কাঁদতে হয়েছে। প্লিজ আপনি এখান থেকে চলে যান।

~ রাজ তুমি মারো ~কাটো যাই করো তবু আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না। এ কতদিনে বুঝতে পেয়েছি তুমি আমার কতটা জায়গা জুড়ে ছিল।
~ আপনি যাবেন? আপনার মুখটা আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না আর। এমন সময় জেনিফা এসেই রাজকে বললো, হাই বেবি আমি কখন থেকে ওয়েট করছি। বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবে না?

~ হুম জানেমন যাবো। তবে দিনটা মনে হয় আজ অশুভ যাবে। সকালেই কার মুখ দেখতে হলো। আচ্ছা এসব বাদ দাও। চলো শপিং করে একটু পার্কে ঘুরতে যাবো।
~ জেনিফা গিয়ে রাজের হাত ধরল। জয়ার কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে। চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না।

~এদিকে রাজ আর জেনিফা যখন বাসা থেকে বের হবে। এমন সময় জয়া বললো, রাজ প্লিজ যেয়ো না তোমাকে ছাড়া সত্যি আমি মরে যাবো। আর এই জেনিফা তুই আমার বন্ধু হয়ে আমার কলিজাকেই আমার কাছ থেকে আলাদা করতে চাচ্ছিস? কেমন বন্ধু তুই?

~ বন্ধু কিসের বন্ধু? তাছাড়া রাজকে আমি ভালোবাসি। এতে তোর তো কোন প্রবলেম হওয়ার কথা না। তুই তো রাজকে ডির্ভোস দিয়েছিস। এখন কেন আছছিস আমাদের মাঝে? তোকে যেন নেক্সট টাইম রাজের সামনে না দেখি।

~ জয়া এবার জেনিফার সামনের রাজের দুপা ঝাপটে ধরে বললো, রাজ আমাকে ছেড়ে যেয়ো না।তুমি যা বলবে তাই করব। তোমার বাসার কাজের মেয়ে করেই রেখে দিয়ো। তবু আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না।
~ জয়া এসব কি করছো? পা ছাড়ো প্লিজ।

~ না পা ছাড়বো না। তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ক্ষমা না করবে। আমি ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার পা ছাড়বো না।
~ জয়া এসব কি হচ্ছে? আমি জেনিফারে কথা দিয়েছি তাকেই বিয়ে করবো। আমার এখন আর কিছু করার নেই। এছাড়া তুমি ডির্ভোস চেয়েছিলে।তখন যা হয়েছিল তোমার ইচ্ছাতেই হয়েছিল। এখন যা হবে আমার ইচ্ছাতেই হোক।

~ রাজ প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। সত্যি মরে যাবো।
~ জয়া প্লিজ পা ছাড়ো। আর একটা কথা তুমি আর আমাদের মাঝে এসো না। যদি কখনো আমার সামনে এসো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে। কথাটা বলে রাজ চলে গেল।
~ জয়া শুধু রাজের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল পলকহীন ভাবে।

~ এদিকে জয়া বাসায় গিয়ে আর ঘুমাতে পারলো না। বারবার রাজের মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।রাজের সাথে কাটানো বিরক্তিকর সেই স্মৃতিগুলো আজ বড্ডবেসি মিস করছে। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। জয়া রাজকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছে না। দেখতে দেখতে রাজ আর জেনিফার বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায়। জেনিফায় জয়াকে ফোনে এ খবর দেয়।

~ রাজ আর জেনিফার বিয়ের আগের দিন, জয়া সারারাত কান্না করে। শেষ রাতে আর সহ্য করতে না পেয়ে অনেকগুলো স্লিপিই পিল খেয়ে নেয়। আর রাজের ছবিটা বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে যায়।

~ সকাল বেলা জয়ার মা দরজা খুলা দেখেই জয়ার রুমে এসে দেখে জয়া ফ্লরে পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে জয়াকে ইমার্জেন্সি বিভাগে এডমিট করে জয়ার বাবা রাজকে ফোন করে সবকিছু বলে।
~ রাজকে যখন জয়ার বাবা ফোন করে রাজ তখন ফ্লাইটের অপেক্ষা করছে। সে স্থির করেছে আমেরিকা চলে যাবে। কিন্তু ফোন পেয়ে সরাসরি হসপিটালে এসে পড়ে। সাথে জেনিফারেই ফোন দেয়।

~ রাজ হসপিটালে আসতেই জয়ার বাবা রাজকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়ে বলে, বাবা রাজ আমি জানি আমার মেয়েটা ভুল করেছে। তুমি ওকে ক্ষমা করে দাও। আমার একটা মাত্রই মেয়ে ওকে ছাড়া আমরা বাঁচবো কিভাবে?
~ বাবা চিন্তা করবেন না আপনি আমি দেখছি কি করা যায়।

~ এমন সময় নার্স এসে বললো পেশেন্টকে জ্ঞান ফিরেছে। বেডে দেওয়া হয়েছে। আপনারা দেখা করতে পারেন।
~ সবাইকে রেখে রাজ একলায় জয়ার কেবিনে গেল। জয়া রাজের আসার শব্দ পেয়ে ওপাশ ঘুরে শুয়ে পড়লো। রাজ জয়ার পাশে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, কেন মরতে গিয়েছিলে? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে বাঁচবো?

~ তোমার না জেনিফা আছে। আজ না ওকে বিয়ে করারর কথা? আমি পারবো না এসব সহ্য করতে তাই মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছি!
~ আরেকবার বাজে কথা বললে সত্যি সত্যি জেনিফারে বিয়ে করে নিবো।
~ মানে?

~ মানে কিছুই না আমি আর জেনিফা প্লান করছিলাম। যেন তুমি বুঝতে পারো ভুলটা। আমি আজ আমেরিকা চলে যেতাম। কিন্তু তোমার পাগলামীতে আর যেতে পারলাম কোথায়?
~ আমাকে ছেড়ে তুমি যদি আবার কোথায় যাও আমি সত্যি মরে যাবো।

~ ছি! ছি! কি বলো? তুমি মরে গেলে ফুলশর্য্যা করবো কার সাথে? এখনো তো অনেক কিছুই বাকি?
~ যাহ্ দুষ্ট সরম করে না বুঝি আমার?
~ তাই বুঝি? তাহলে জেনিফার কাছে যায়।

~ কথাটা শেষ করার আগেই জয়া রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমাকে এ বুক থেকে মৃত্যু ছাড়া আর কেউ আলাদা করতে পারবে না। তুমি যে গোধূলী বেলায় রাজকুমার আমার। বড্ডবেশি ভালোবাসি।

লেখাঃ রাইসা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “গোধূলী বেলায় তুমি – Amar valobasar moyna pakhi” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – তুমি আমার ভালবাসা (১ম খণ্ড) – কলেজের প্রেমের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *