হেই জুনিয়র – Valobasha obiram

হেই জুনিয়র – Valobasha obiram: সুপ্তির ক্ষেত্রে এটা লাভ এট ফার্স্ট সাইট হলেই সুবর্ণর ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে জন্ম নেয়। এক আলাদা টান। ভালোলাগা, কেয়ার, টান, ক্ষুদ্র অভিমান, সেটা ভাঙানো এভাবে বাড়তে থাকে একে অপরের অনুভূতি।


মূলগল্প

সুবর্ণ নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। নিতান্তই বাচ্চা স্বভাবের। কিন্তু তাকে একজন সিনিয়র আপু পর্যবেক্ষণ করে চলেছে, যেদিকে সুবর্ণর খেয়াল নেই। তার ভয়ে চোখ কুঁচকে ফেলা, মুখে বির বির করে কিছু বলে চলা, ফাঁকে ফাঁকে চোখ হালকা খুলে ভয়ে ভয়ে এক পলক দেখে আবার বন্ধ করে নেওয়া, ব্যাগ চেপে ধরা এক জনের মনে খুব গভীর ভাবে ছেদ করেছে।

সুবর্ণর চারপাশে গোল হয়ে সিনিয়র আপুরা ঘুরছে আর গান গাচ্ছে~
~ যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাঁদ উঠেছিল গগনে।

তবে এখানে রবীন্দ্রনাথের নয়, রোদ্দুর রায়ের। এক বছরের সিনিয়র হলেও প্রতিটি জুনিয়রকে র‍্যাগ করা কর্তব্যের আওতায় পড়ে তাদের কাছে। এদিকে সুবর্ণ ভয়ে কুঁচকে আসছে। ছোটকাল থেকেই মেয়েদের থেকে ১০ হাত দূরে থেকে এসেছে সে। তাই ভয়ে কাঁপছে। তার নিজেকে এখন বলির পাঠা বলেই মনে হচ্ছে। এখনই কেউ এসে যেন হঠাৎ করেই ওর গলায় লম্বা এক তলোয়ার বসিয়ে দিবে।
হঠাৎ একটি মেয়ে, পরনে আকাশি রঙের সালোয়ার~ কামিজ, সাদা ওড়না,কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ, চোখে গোল চশমা। কানে দুল পরেছে আর কপালে ছোট একটি টিপ যা মোটেই দৃশ্যমান নয় কারো হয়তো। সেও অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। সে এসে সাধারণ ভাবেই বলে উঠল,
~ তোমরা ওকে ছেড়ে দেও।

শুনতেই সবাই সেখান থেকে বিনা বাক্য ব্যায়ে চলে যায়। পাল্টা প্রশ্ন করে নি। কিন্তু আশেপাশে ভিড় তখনও কমেনি দেখে আবার সাধারণ ভাবেই বলে উঠল হাসিমুখে,
~ সবাই ক্লাসে যাও।
সাথে সাথে সেই স্থান ফাঁকা হয়ে গেল। যারা নতুন তারাও সিনিয়র দের দেখাদেখি সেখান থেকে চলে গেল। মেয়েটি আবার বলল,
~ ওরা আর তোমাকে ডিস্টার্ব করবে না। কোণ ইয়ার?
~ ফ…ফার্স্ট ই… ইয়ার।

~ তাহলে তোমার ক্লাস সেকেন্ড ফ্লোরে। যাও ক্লাস কর। আর এদের ভয় পাওয়ার দরকার নেই।
বলেই মেয়েটি সুবর্ণর মাথায় হাত বুলাল। মাথায় কোন মেয়ে হাত দিয়েছে বুঝতেই উপরে চোখ তুলে তাকাল সে। আর সেই নীল চোখে হারিয়ে যায় সুবর্ণ। সে কোনোমতে সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায়। সুবর্ণর দৌড় দেখে মেয়েটি হেসে দেয় আবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এতক্ষণ ছেলেটার দিকেই তাকিয়ে ছিল। তার হার্ট বিট যেন থেমে ছিল এতক্ষণ। কিন্তু সে পর্যন্ত ওর মাথায় হাত দেওয়া থেকে নিজেকে আটকাতে পারল না। এতে করে আবার হার্ট দৌড়াতে শুরু করেছিল।

পরের দিন সুবর্ণ ক্যান্টিনে বসে ছিল। সে ভিড় থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করে। সেখানে বসে বইয়ে মুখ গুঁজে রেখেছিল। আগের দিনের মেয়েটি এসে তার বই নামিয়ে রেখে বলল,
~ হেই জুনিয়র। হাই আমি সুপ্তি। সেকেন্ড ইয়ার।
সুবর্ণ কি করবে বিঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাল।
~ ডোন্ট ওয়ারী, তোমার নাম বল।

~ আ…আমার ন…নাম সুবর্ণ ফ… ফার্স্ট ইয়ার।
~ তোতলানোর দরকার নেই। আমি তোমার থেকে ক্লাস এ বড় হলেও বয়সে এক বছরের ছোট।
এই কথা শুনে সুবর্ণ টেবিল এর দিকে আটকে রাখা দৃষ্টিকে মুক্ত করে সুপ্তির দিকে তাকাল। হয়তো বুঝাতে চাইল যে সে অবাক হয়েছে। সুপ্তি বুঝতে পেরে বলল,
~ আমি ২ ক্লাস বাদ দিয়ে ছোট কালে পড়া শুরু করেছিলাম তাই। বাই দ্য ওয়ে, ফ্রেন্ডস?

বলে সুবর্ণর দিকে হাত বাড়াল সুপ্তি। সুবর্ণও কাপা হাতে ওর সাথে হাত মিলালো।
এর পর থেকে সুবর্ণর সাথে সুপ্তির কথা হত। সুপ্তি নিজে থেকেই ওর কাছে যেত। কোন সমস্যা থাকলে সাহায্য করত। এতে করে সুবর্ণর নতুন কিছু বন্ধু হয়ে যায়। সুপ্তির প্রতি দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে সুবর্ণ। একে অপরের জন্য অনুভূতির জন্ম নেয় আর সেটা বাড়তে থাকে প্রতিনিয়ত। কিন্তু কাউকেই কেউ বলে নি।

সুপ্তির ক্ষেত্রে এটা লাভ এট ফার্স্ট সাইট হলেই সুবর্ণর ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে জন্ম নেয়। এক আলাদা টান। ভালোলাগা, কেয়ার, টান, ক্ষুদ্র অভিমান, সেটা ভাঙানো এভাবে বাড়তে থাকে একে অপরের অনুভূতি। এর নাম ভালোবাসা এটা মনে মনে জানলেও, বা বন্ধুরা সবাই বললেও দুজনেই এড়িয়ে চলে।

বেশ সময় কেটে যায় ওদের এভাবে। বেশ কয়েক বছর। হঠাৎ সুপ্তির সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সুপ্তির তখন মাস্টার্স শেষ। কিন্তু সুবর্ণ তখনও এক বছরের জুনিওর। সুপ্তির হঠাৎ গায়েব হয়ে যাওয়া বড্ড ভাবায় সুবর্ণকে। ও মিস করতে থাকে সুপ্তিকে, সুপ্তির আচরণ, চলাফেরা, কথা বলা, কাজ সব। তাই এক সপ্তাহ পর সুপ্তির খোঁজ করা শুরু করে। বহু কষ্টে রিয়া বলতে রাজি হয় যে সুপ্তির বিয়ে ঠিক করছেন তার পরিবার। পাত্র দেখছেন তারা। সাথে সাথে খারাপ লাগা ভর করে সুবর্ণ কে। বুকে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে সে।

~ তারপর কি হল আব্বু?তাহলে সুপ্তি তোমার ফার্স্ট লাভ ছিল? আর আমার আম্মু সেকেন্ড? বল না আব্বু।
~ আম্মুজান, তোমার মা ~ ই আমার ফার্স্ট লাভ । তোমার মায়ের ফুল নেইম ভুলে গেলে? সুমাইয়া আফরোজ সুপ্তি।
মেয়েটি মাথায় এক হাত দিয়ে বাড়ি মেরে বলল,
~ উফ, ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিয়ে হল কিভাবে? আর তুমি কি আম্মুকে প্রপোজ করো নি?
~ তবে রে পাকা বুড়ি?
~ বল না আব্বু, দেরি কর না, আমার কলেজে লেইট হয়ে যাচ্ছাে।

~ তারপর…
তাই দেরি না করে বাবা মা কে জানায় সে। সুবর্ণ কে যে বদলিয়েছে সুপ্তি সেটা তারা জানতেন। তাই বুঝতে পারলেন যে তাকে ছাড়া সুবর্ণ আবার আগের মত একলা হয়ে যাবে তখন দু জন মিলেই সিদ্ধান্ত নেন তাদের বিয়ে দেওয়ার। বাড়ি বাবা মা গিয়ে উনাদের সাথে কথা বলেন। কিন্তু ওরা রাজি হচ্ছিল না প্রধানত সুবর্ণ সুপ্তির এক ক্লাস জুনিওর হওয়ায়। তবু বাবা মা অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে কাবিন করিয়ে রাখেন। তার পরের বছর কঠিন পরিশ্রম আর ভাগ্যের জোরে ভালো চাকরি পেলে সুপ্তিকে তাদের বাড়ি আনা হয়।

সুবর্ণর মেয়ে সারিকা বুঝদারের মতো মাথা উপর নিচ নাড়ে।
~ তাহলে তো প্রপোজ করাই হল না। কিন্তু ফুপির কাছে তো শুনেছিলাম তুমি আম্মুকে প্রপোজ করেছ?
~ বিয়ের পর প্রথম ম্যারিজ এনিভারসারিতে। একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝেই একটা ভালো দিন দেখে প্রপোজ করে দিয়েছিলাম। ঠিক করেছিনা?
সারিকা সুবর্ণর পিঠে চাপড় মেরে বলল,
~ সাহি কিয়া মেয়ে আব্বুজান।
~ যাহ্‌ তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে।
~ কিন্তু কি করে প্রপোজ করেছিলে সেটা বিস্তারিত বললে না তো?
~ তুই যাবি?

~ ওকে ওকে, যাচ্ছি। কিন্তু পরে ফুপির কাছ থেকে শুনে নেব। ইয়েয়ে…
বলেই চলে গেল সারিকা। পিছন থেকে সুপ্তি বলে উঠল,
~ এখন কি সব মেয়েকে বলে দিবে নাকি?
বলতে বলতে আবার রান্নাঘরে চলে গেল। শনিবার হলেও আজ সুবর্ণর ছুটি। সরকারি অফিসে চাকরির সুবিধা। সে সুপ্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ রেখে বলে উঠল,
~ নাহ, বাকিটা দুজনে মিলে বলব ঠিক আছে?
~ আর কি বাকি রেখেছ?

~ কি করে প্রপোজ করেছিলাম, প্রপোজের পর কি করেছিলাম সব?
~ যাও তো জুনিওর, কাজ আছে আমার।
~ আমি হেল্প করি তোমাকে?

লেখা – সাদিয়া সৃষ্টি

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “হেই জুনিয়র – Valobasha obiram” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – নাপা ট্যাবলেট – Bonno premer golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *