অবন্তির খুন (১ম পর্ব) – লোমহার্ষক মার্ডার থ্রিলিং স্টোরি

অবন্তির খুন – লোমহার্ষক মার্ডার থ্রিলিং স্টোরি: অবন্তির লাশটা চোখের সামনে ভাসতে থাকে। আমার মনে হচ্ছে এই কেসটা আরো কিছু দিন চললে আমি পাগল হয়ে যাবো।


১ম পর্ব

আমার সামনে পড়ে আছে ৭বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের লাশ। নাম অবন্তি। মেয়েটার শরীরে সুতো পরিমাণ ও কোনো কাপড় নেই।

প্রথমে রেপ, তারপর খুন।
শরীর রক্তাক্ত। শরীরের প্রত্যেকটা জায়গায় ছুরির আঘাতের চিহ্ন।

হাতের পায়ের সব আঙুল কাটা।
লজ্জাস্থানে শ’খানেক বার ছুরি দিয়ে আঘাত। এইটুকুন একটা বাচ্চা মেয়েকে এভাবে খুন? ভাবা যায়?

খুনটা যেই করুক, ও কোনো মানুষের বাচ্চা হতে পারেনা। কোনো মানুষ এতো ভয়ানক ভাবে একটা বাচ্চা মেয়েকে খুন করতে পারবেনা।
অবন্তির লাশের দিকে তাকিয়ে যতোটা রাগ লাগছে, তারচাইতেও বেশি ভয় হচ্ছে। আমার নিজের একটা মেয়ে আছে। আরশিতা। বয়স ৭।
অবন্তির মতোই ফুটফুটে নিষ্পাপ।

এই নিষ্পাপ বাচ্চাটার সাথে কোন শুওরের বাচ্চা এমন কাজ করবে?
কেনো করবে?
লাশটা দেখে বুঝা যাচ্ছে শুধুমাত্র রেপ করার জন্য খুনটা করেনি।

শরীরের প্রত্যেকটা জায়গায় বহুবার ছুরির আঘাত। হয়তো অনেক বেশি ক্ষোভ, রাগ, বা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এভাবে খুন করেছে।
কিন্ত এই নিষ্পাপ বাচ্চাটার উপর এতো রাগ? এতো ক্ষোভ?
সম্ভব না।
মনে হচ্ছে কেউ অবন্তির
বাবা মায়ের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বাচ্চাটার সাথে এমন করেছে।

কিন্তু এতো ভয়ানকভাবে খুন?
কেনো?

দুইদিন আগে স্কুল ছুটির পর অবন্তি নিখোঁজ হয়। স্কুলের কয়েকটা বাচ্চার কথা অনুযায়ী একটা কালো গাড়ি এসে স্কুলের গেইটের সামনে দাঁড়ায়।
অবন্তি প্রথমে গাড়ির ভিতরে থাকা কারো সাথে কথা বলে। তারপর নিজ ইচ্ছায় গাড়িতে উঠে।
বাচ্চারা বারবার বলছে “কেউ অবন্তিকে কোনো জোর করেনি।” তারা দেখেছে অবন্তি নিজ ইচ্ছায় গাড়ির ভিতরে ঢুকেছে। গাড়ির ভিতরে কে ছিলো, বা কেমন মানুষ ছিলো সেটা দেখা যায়নি’।

অবন্তিকে শেষবার ওই গাড়িতে উঠার সময় দেখা যায়। তারপর থেকে অবন্তি নিখোঁজ।
দুইদিন ধরে খোঁজেও অবন্তির কোনো খোঁজ পাইনি। এই দুই দিনে অবন্তির বাবা আসাদ সাহেবের কাছে কেউ কল করে মুক্তিপণ ও চায়নি।
তারমানে কিডন্যাপ বা খুনের পিছনে টাকার কোনো উদ্দেশ্য নেই।

কিন্তু কেউ কেনো এতো ভয়ানক ভাবে খুন করবে একটা বাচ্চাকে?
গাড়ির ভিতরে থাকা মানুষটা কে ছিলো? অবন্তি কেনো নিজ ইচ্ছায় গাড়িতে ঢুকলো? তাহলে কি অবন্তির পরিচিত কেউ?

অবন্তির লাশের পাশে বসে চিৎকার করে কান্না করছেন অবন্তির মা ‘রিয়া’ হক।
অবন্তির বাবা আসাদ সাহেবের চোখেও পানি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তিনি চিৎকার করে কান্না করছেন না।
যথেষ্ট শক্ত মনের মানুষ।

রিয়া হককে দেখে অনেক মায়া হচ্ছে। পাগলের মতো কান্না করছেন।
একমাত্র মেয়ে, তাও আবার মাত্র ৭বছর। দুনিয়ার কিছুই দেখেনি বলা যায়। এতটা নিষ্পাপ আর ফুটফুটে মেয়ের এভাবে মৃত্যু কোনো মা সহ্য করতে পারার কথা না।
এই কান্নার আর্তনাদ শুনার ক্ষমতাও সবার নেই।”

অবন্তির বাবা আসাদ সাহেবের চোখ থেকে অবিরাম পানি পড়ছে।
বুঝতে পারছি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তারপরেও উনার কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম~
~ আপনাকে কি বলে স্বান্তনা দিবো ঠিক বুঝতে পারছিনা। তবে যে কুত্তার বাচ্চা এই কাজ করেছে, খুব তাড়াতাড়ি তাকে খোঁজে বের করবো।”
আমার কথা শুনে উনি কোনো কথা বললেন না। চোখ থেকে তখনো অবিরাম পানি পড়ছে।

আমি আবার বললাম~
~ আপনার কি খুব বড় কোনো শত্রু আছে? যে আপনার উপর অনেক রাগ, বা প্রতিশোধ নিতে চায় এমন কেউ?
খুনের ধরন দেখে বুঝা যাচ্ছে কেউ অনেক বেশি রাগ নিয়ে খুনটা করেছে।”
আসাদ সাহেব চোখ মুছতে মুছতে বললেন~
~ না মেহরাব স্যার! আমার এমন কোনো শত্রু নেই।”

~ কাউকে কি সন্দেহ করছেন?”
আমার পশ্ন শুনে আসাদ সাহেব চুপ করে রইলেন। কিছু বললেন না।
মনে হলো কিছু লুকাতে চাচ্ছেন। খানিকক্ষণ পর কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন~
~ দেখুন মেহরাব স্যার, আমি খুব~ ই সহজ জীবনযাপন করি।

কারো সাথে শত্রুতা নেই বললেই চলে৷
তবে আমার ছোট ভাই রিফাতের সাথে জায়গা নিয়ে কিছু ঝামেলা চলছে। আমার মনে হয়না জায়গা জমিনের ঝামেলার জন্য রিফাত এভাবে আমার মেয়েকে খুন করবে।
তাছাড়া আমার আর কোনো শত্রু নেই। এখন খুন কে করেছে খোঁজে বের করাটা আপনাদের কাজ। আমি শুধু আমার মেয়ের খুনিদের শাস্তি চাই, ব্যাস।”
কথাটা বলে আসাদ সাহেব আবারো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলেন। একমাত্র মেয়ে হারানোর যন্ত্রণাটা আমি বুঝতে পারছি।”

ওইখান থেকে চলে আসবো ঠিক এমন সময় রিয়া হক কান্না জড়িত কন্ঠে চিল্লায়া উঠলেন~
~ আমার মেয়েকে ওর ভাই রিফাত ই মেরেছে। ওই লম্পট রিফাত খুনিইইই।”
কিছুক্ষণের জন্য আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। রিয়া ঠিক কি বলতে চাচ্ছে বুঝতে পারছিনা। বললাম~
~ মানে? কি বলতে চাচ্ছেন? আপনার দেবর অবন্তিকে এভাবে খুন করেছে?”

রিয়া কান্না করতে করতে বললো~
~ হ্যা স্যার। আমার অবন্তিকে ওই রিফাত~ ই মেরেছে।
সারাদিন বন্ধুদের সাথে টাকা উড়ায়।

ড্রাগ নেয়। মদ খায়। মেয়েদের সাথে নষ্টামি করে। এসব খারাপ কাজের জন্য যখন আমার স্বামী আসাদের কাছে টাকা চাইতো, আসাদ টাকা দিতোনা।
রিফাত রাগারাগি করতো। বলতো বাবার সম্পত্তি চাই। আমার সামনেই রিফাত অনেকবার আসাদকে বলেছে~
“প্রথমে তোমার বউ বাচ্চা খুন করবো, তারপর তোমাকে। তোমাদের খুন করার পর আমাকে কেউ টাকা নিতে মানা করবেনা। আমার বাবার সম্পত্তি আমি যেভাবে ইচ্ছা ব্যাবহার করবো।”

ওই রিফাত ই মেরেছে আমার মেয়েকে। আপনি প্লিজ আমার মেয়েকে বিচার পাইয়ে দিন। প্লিজ।”
কথাটা বলেই দু’হাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কান্না করে যাচ্ছেন রিয়া।
আমি আসাদ সাহেবের দিকে একবার তাকালম। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। নিঃশব্দ। স্ত্রী’র মুখে তার ভাইয়ের নাম শুনেও কিছু বলছেন না।
তারমানে কিছু’তো গন্ডগোল আছে।

সম্পত্তির জন্য খুন করাটা আজকাল নতুন না। তাছাড়া রিয়ার কথা অনুযায়ী আসাদ সাহেবের উপর রিফাতের অনেক রাগ আছে। এমনকি সরাসরি খুন করার কথাও বলেছে। হতে পারে অবন্তির খুনটা রিফাত করেছে।”

আস্তে আস্তে হেঁটে আসাদ সাহেবের কাছে গেলাম। বললাম~
~ নিজের মেয়ের এমন রক্তাক্ত লাশের দেহ দেখেও নিজের ভাইকে বাঁচাতে চাচ্ছেন? বাহ আসাদ সাহেব।”
চোখের পানি মুছতে মুছতে আসাদ সাহেব বললেন~
~ মেহরাব স্যার, আমি রিফাতকে সেই ছোট থেকে দেখে আসছি। আমি মানছি রিফাত অনেক রাগী, বদমেজাজি।
কিন্তু ও আগে এমন ছিলোনা।

আম্মা মারা যাওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
আজেবাজে জিনিষ খাচ্ছে।
কিন্তু রিফাত এতোটাও খারাপ হয়ে যায়নি যে “সম্পত্তির জন্য রাগারাগি করে আমার মেয়েকে এভাবে রেপ করে খুন করবে। এটা অসম্ভব স্যার।”
আমি আসাদ সাহেবের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। দুনিয়াতে এখন কি চলছে তার কোনো ধারণাই নেই।

ড্রাগে আসক্ত হয়ে সন্তানেরা এখন নিজের বাবা~ মা কে খুন করতেও হাত কাঁপেনা। অথচ আসাদ সাহেব এখনো আগের যুগে রয়ে গেছেন।
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম~
~ আমাদের কাজটা আমাদের করতে দিন আসাদ সাহেব। রিফাতকে এখন কোথায় পাবো বলতে পারেন?”

~ স্যার ও আমার সাথে কথা কাটাকাটি করে ২সপ্তাহ আগেই বাসা থেকে চলে গেছে। আমি জানিনা রিফাত এখন কোথায়।”
আমি উনার সাথে আর কোনো কথা বাড়ালাম না। রিফাতকে এখন খোঁজে বের করাটা জরুরী।

অবন্তির লাশ পোস্টমর্টেম করার জন্য পাঠিয়ে থানায় চলে আসলাম। আপাতত আমার নজর রিফাতের উপর।
এই খুনটা ৮~ ১০টা খুনের মতো না।
এত ভয়ানক’ভাবে কাউকে রেপ করে খুন করতে আমি আজ অবধি দেখিনি।
তাও আবার নিষ্পাপ একটা বাচ্চাকে।
খুনি যেইহোক, অবন্তির প্রতিটা চিৎকার, প্রতিটা যন্ত্রণার মূল্য তাকে দিতেই হবে।”


পর্ব ২

অবন্তির লাশ পোস্টমর্টেম করার জন্য পাঠিয়ে থানায় চলে আসলাম। আপাতত আমার নজর রিফাতের উপর।
এই খুনটা ৮~ ১০টা খুনের মতো না।
এত ভয়ানক’ভাবে কাউকে রেপ করে খুন করতে আমি আজ অবধি দেখিনি।

তাও আবার নিষ্পাপ একটা বাচ্চাকে।
খুনি যেইহোক, অবন্তির প্রতিটা চিৎকার, প্রতিটা যন্ত্রণার মূল্য তাকে দিতেই হবে।”

রিফাতকে খুঁজে পেলাম তার একটা ফ্রেন্ডের বাসায়। ধরে থানায় নিয়ে আসলাম। দুনিয়াতে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের চেহারা দেখলেই বুঝা যায় তারা খারাপ নেশায় আসক্ত। রিফাতকে দেখে আমার ঠিক সেরকমই মনে হলো।
সরাসরি বললাম~
~ এইটুকু একটা বাচ্চাকে এভাবে খুন করতে তোর হাত কাঁপলোনা?”

রিফাত বড়বড় চোখে আমার দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে কথাটা শুনে অবাক হয়েছে। ভ্রুঁ কুঁচকে বললো~
~ খুন? কার খুন? কোন বাচ্চা?”
~ দেখ রিফাত, আমি ড্রামা একদম পছন্দ করিনা। অভিনয় করবিনা।
আমি তোর ভাইয়ের একমাত্র মেয়ে অবন্তির কথা বলছি, বাচ্চাটাকে এতোটা ভয়ানক’ভাবে খুন করলি কেনো?”

রিফার এবার একটু বেশি অবাক হয়ে বললো~
~ কিইইই? অবন্তি মারা গেছে? কিভাবে? কখন?”
রিফাতের কথা শুনে আমি ফিক করে হাসলাম। ছেলেটা অভিনয় করলে নিশ্চিত বড় কোনো সুপারস্টার হতে পারতো। বেশ ভালো অভিনয় করে।
আমি বললাম~
~ এমন ভাব নিচ্ছিস যেনো কিছুই জানিস না। তুই তোর ভাইয়ের ফ্যামিলিকে খুন করার হুমকি দিয়েছিস। সবার সামনে। তাছাড়া তুই ছাড়া আসাদ সাহেবের সাথে তেমন কারো শত্রুতাও নেই।

খোঁজ নিয়ে জানলাম তুই ড্রাগে আসক্ত। সাথে আরো অনেক বাজে অভ্যাস আছে।
আসাদ সাহেব তো তোকে এসব কিছুই করতে দিতেন না।
২০~ ২২ বছরের যুবক তুই। রাগী রক্ত।

আসাদ সাহেবের উপর রাগ তো হবেই।
কিন্তু অবন্তি তো নিষ্পাপ ছিলো।
নিজের ভাইয়ের উপর জমে থাকা রাগটা কেনো ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়ের উপর শেষ করবি? তুই মানুষ?”

আমার কথার কোনো উত্তর দিলোনা রিফাত। মাথা নিচু করে বসে আছে। চুপচাপ। নিঃশব্দ।
আমি খেয়াল করে দেখলাম রিফাতের চোখ থেকে টুপ করে একফোঁটা পানি পড়লো।
রিফাতের চোখ থেকে কেনো পানি বের হলো আমি জানিনা।
কিন্তু আমার কাছে মনে হলো এই চোখের পানিটা মিথ্যা না।

রিফাতকে বললাম~
~ কান্না করছিস কেনো?”
রিফাত ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো~
~ স্যার অবন্তি আমার ভাতিজী।
অনেক ভালোবাসি আমি ওকে।

ওর বাবার চাইতেও অবন্তি আমার সাথে বেশি সময় কাটিয়েছি। হ্যা আমি মানছি আমার যখন রাগ উঠে আমি উল্টাপাল্টা বলে দেই। কিন্তু তাই’বলে আমি অবন্তিকে খুন করবো? এটা কিভাবে সম্ভব স্যার?”
রিফাতের চোখের দিকে তাকালাম।
চোখগুলো পানিতে টলমল করছে।
মনে হচ্ছেনা মিথ্যা বলছে।
রিফাত যদি খুনটা না করে থাকে, তাহলে খুনটা কে করবে?

অবন্তির পরিচিত আর কে আছে যে খুনটা করতে পারে?
রিফাতকে বললাম~
~ ২৮মে থেকে ৩০মে অবধি এই তিন দিন তুমি কোথায় ছিলে? খুঁজ নিয়ে জেনেছি তুমি শহরে ছিলেনা। অদ্ভুতভাবে ২৮মে থেকে অবন্তিও নিখোঁজ। এটা কিভাবে সম্ভব?”

~ স্যার আমরা ৬জন ফ্রেন্ড মিলে ২৭তারিখ রাতে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য রওনা দেই। আমাদের প্ল্যান ছিলো ওইখানে দু’দিন ইনজয় করে তারপর ব্যাক করবো। আমরা গতকাল রাতেই শহরে এসেছি স্যার। আপনি চাইলে কক্সবাজার যে হোটেলে আমরা থেকেছি সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে পারেন, অথবা অন্যভাবেও খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। স্যার আমি তো জানতামও না অবন্তি খুন হয়েছে।”

রিফাতের কথা শুনে মনে হলো সব সত্যি বলছে। কক্সবাজারে খোঁজ নিলেই সবকিছু জানা যাবে।
কিন্তু রিফাতের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে অবন্তির পরিচিত আর কে হতে পারে যে এরকম নিষ্ঠুরভাবে খুন করেছে। আমার মাথা কাজ করছেনা। রিফাতকে বললাম~
“তুমি সম্পুর্ন নির্দোষ এটার প্রমাণ না পাওয়া অবধি আপাতত তোমাকে থানাতেই থাকতে হবে। আমি দেখি তোমার কথার সত্যতা কতোটুকু।”

রিফাতের সাথে কথা শেষ করে চেয়ার থেকে উঠবো ঠিক এমন সময় রিফাত বললো~
“মেহরাব স্যার একটা কথা বলবো?”
আমি মাথা নেড়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলাম। রিফাত বললো~
~ স্যার আপনি অবন্তির মা রিয়াকে কেনো ধরছেন না? আমার তো মনে’হয় অবন্তির খুনের পিছনে রিয়ার কোনো হাত আছে।

এই মহিলার চরিত্র থেকে শুরু করে কোনো ভালোদিক নেই স্যার।
হয়তো কাউকে দিয়ে রিয়াকে খুন করিয়েছে। রিয়ার দ্বারা সব সম্ভব।”
রিফাতের এই কথাটা শুনে আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। রিফাত কি বলছে হয়তো নিজেও বুঝতে পারছেনা।
এটা একেবারেই অসম্ভব। বললাম~
~ পাগল হয়ে গেছো তুমি? মাথা ঠিক আছে? রিয়া অবন্তির মা হয়।

আমি নিজ চোখে দেখেছি অবন্তির জন্য রিয়ার ভালোবাসা। রিয়া নিজেও পাগলের মতো কান্না করছিলো।
তাছাড়া অবন্তিকে খুন করার জন্য রিয়ার হাতে কোনো কারণ ও নেই। কারণ ছাড়া কেউ কেনো খুন করবে? তাও আবার নিজের মেয়েকে?”
আমার কথা শুনে রিফাত অনেক জোরে হেসে উঠলো। এভাবে হাসছে কেনো বুঝতে পারলাম না। আমি বোকার মতো রিফাতের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
রিফাত হাসতে হাসতে বললো~
~ মেহরাব স্যার, আপনি রিয়ার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ও কতোবড় ছলনাময়ী আপনার কোনো ধারণাও নেই। আপনাকে একটা গোপন কথা বলি, অবন্তির স্কুল টিচার পলাশের সাথে রিয়ার পরকীয়া চলছে। গভীর প্রেম।

আপনি একটু খোঁজ নিন।
হয়তো তাদের মিলনের মাঝখানে একমাত্র বাঁধা ছিলো অবন্তি।
আর আমি যখন শেষবার বাসায় ছিলাম, আমি দেখেছি রিয়া কিভাবে অবন্তিকে অত্যাচার করতো।
আপনার সামনে কান্না করা এসব শুধুই রিয়ার অভিনয়। রিয়া অবন্তিকে ততোটাও ভালোবাসতো না।
আমার তো মাঝেমধ্যে মনে হয় অবন্তি রিয়ার আসল সন্তান ই না।”

রিফাতের শেষ কথাটা আমার বুকের মধ্যে একদম তীরের মতো এসে লাগলো। “অবন্তি রিয়ার আসল সন্তান ই না।”
আমি বললাম~
~ ঠিক বুঝলাম না। তোমার শেষ কথাটার মানে কি? তুমি কি অবন্তির জন্মের সময় ছিলেনা? অবন্তি রিয়ার আসল সন্তান না এটা মনে হওয়ার কারণ?”
~ মেহরাব স্যার, এটা তো প্রায় সাত বছর আগের কথা। আমি তখন সম্ভবত সেভেনে পড়ি। আম্মা তখনো বেঁচে ছিলেন। অসুস্থ।
ভাইয়া নতুন একটা চাকরি পেলো।
বিয়ে করলো। কিছুদিন পর শুনলাম ভাইয়া বাবা হবে, আর আমি চাচা।

আম্মা অসুস্থ থাকার কারণে ভাইয়া রিয়াকে তার বাবার বাসায় রেখে আসলো। রিয়ার না’কি আলাদা যত্ন দরকার এই সময়।
আমি দেখিনি অবন্তি তার মায়ের পেটে কিভাবে বেড়ে উঠেছে।
অবন্তির জন্মের কয়েকমাস পর অবন্তি এবং রিয়াকে নিয়ে ভাইয়া বাসায় আসে।
আমি শুধুমাত্র আমার ধারণার কথা বললাম স্যার। আপনি আপনার মতো খোঁজ নিয়ে দেখুন।
আরেকটা কথা, পলাশ মানে অবন্তির টিচার ও সুবিধার লোক না।

ডেঞ্জারাস মানুষ। অনেক কিছুই করতে পারে। কিছুদিন পর আমার ভাইকেও খুন করে দিতে পারে।
আপনি তাদের রাসলীলা সম্পর্কে একটু খোঁজ নিন। জানেন ই তো আজকাল গভীর প্রেমের জন্য সন্তানকে কোরবানি করে দেওয়াটা অবাস্তব কিছুনা।
সেটাও যদি আবার নিজের সন্তান না’হয় তখন?”

রিফাতের কথাগুলো শুনে আমার রীতিমতো মাথা ঘুরাচ্ছে।
রিফাতের একটা কথাও ফেলে দেওয়ার মতো না। তাছাড়া অবন্তির টিচার পলাশ এবং রিয়া দুজনেই অবন্তির পরিচিত। হতে পারে ওই গাড়িতে তাদের ভিতর কেউ একজন ছিলো।
আমি কিছু ভাবতে পারছিনা।
মাথা কাজ করছেনা।

অনেকগুলো প্রশ্ন এখন মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে।
“ওই গাড়িতে কি রিয়া বা পলাশ কেউ ছিলো?”
“রিয়া এবং পলাশের পরকীয়া চলছে?”
“আসাদ সাহেব কি এটা জানেন?”
অবন্তি কি রিয়ার আসল সন্তান?”

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানাটা ভীষণ জরুরী। রিফাতের এসব কথার সত্যতা কতোটুকু খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।
রিফাতের সাথে আর কোনো কথা বাড়ালাম না। থানা থেকে বের হয়ে আসলাম।
রিয়া এবং পলাশের ব্যাপারটা পরে দেখবো, আগে আমাকে কক্সবাজারে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে রিফাত আসলেই ওইখানে ছিলো কি’না।

রিফাতের বিষয়ে কক্সবাজার পুরো খোঁজ নিলাম।
সব সত্যি বলেছে।
২৭ থেকে ৩০ তারিখ ওরা ছয়’জন ফ্রেন্ড একসাথে কক্সবাজার ছিলো।
এটার মানে হচ্ছে অবন্তির খুনের সাথে রিফাত কোনোভাবেই জড়িত নয়।
তাহলে কি রিফাতের বাকি কথাগুলোও সত্য? কোনোভাবে অবন্তির খুনের সাথে রিয়া এবং অবন্তির টিচার পলাশ জড়িত নয়তো?”

পর্ব ৩

রিফাতের বিষয়ে পুরো খোঁজ নিলাম।
সব সত্যি বলেছে।
২৭ থেকে ৩০ তারিখ অবধি ওরা ছয়’জন ফ্রেন্ড একসাথে কক্সবাজার ছিলো। এটার মানে হচ্ছে অবন্তির খুনের সাথে রিফাত কোনোভাবেই জড়িত নয়।
তাহলে কি রিফাতের বাকি কথাগুলোও সত্য? কোনোভাবে অবন্তির খুনের সাথে রিয়া এবং অবন্তির টিচার পলাশ জড়িত নয়তো?”

কন্সটেবল আসিফকে কল দিলাম। বললাম~
“রিফাতকে ছেড়ে দাও। বলিও আমি প্রয়োজন হলে তাকে ডেকে নিবো।
সাথে পলাশ এবং রিয়ার নাম্বার ট্রেক করো। আমি তাদের সমস্ত কল লিস্টের রেকর্ড চাই। পলাশের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কেও একটু খোঁজ নাও।”
আসিফ বললো “ঠিক আছে স্যার।
কিছুটা সময় লাগবে। আমি আপনাকে আপডেট জানাচ্ছি।”

আসিফের সাথে কথা শেষ করে বাসায় আসলাম। মাথায় হাজারটা টেনশন। রুমে ঢুকতেই আমার মেয়ে আরশিতা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এই জড়িয়ে ধরার মানে হচ্ছে
“প্রতিদিন বাসায় ফেরার সময় তার জন্য যে চকলেটটা নিয়ে আসি সেটা দেওয়া।” কিন্তু আজকে আমি চকলেট আনিনি।ভুলে গেছি। মাথার ভিতর অবন্তির খুনটা একদম গেঁথে গেছে। মাথায় অন্যকিছু কাজ করছেনা। আরশিতার কপালে ছোট একটা চুমু দিয়ে বললাম~
~ পাপা তো আজকে চকলেট আনতে ভুলে গেছি মামনী। আগামীকাল পাপা একসাথে অনেকগুলো চকলেট আনবো। ঠিক আছে?”

আমার কথা শুনে আরশিতার মুখটা মুহুর্তেই কালো হয়ে গেলো। ভীষণ রাগ করেছে। গাল ফুলিয়ে বললো~
“লাগবেনা চকলেট। আজকের চকলেট আগামীকাল দিবা কেনো? আজকের হোমওয়ার্ক কি আমি আগামীকাল করি?”
কথাটা শেষ করে আরশিতা রাগ করে অন্যরুমে চলে গেলো।
আমার স্ত্রী মিহি পাশে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখে হাসছে। আরশিতা চলে যাওয়ার পর মিহি হাসতে হাসতে বললো~
~ বাব্বাহ। ফাইনালি মেয়ে তাহলে বাবার উপর রাগ করলো।

এই প্রথম আরশিতার জন্য চকলেট আনতে ভুলে গেলে।
ব্যাপার কি মেহরাব? কিছু হয়েছে?”
আমি বড় একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম~
~ তেমন কিছুনা মিহি। অনেক কঠিন একটা কেস নিয়ে কাজ করছি।

আরশিতার মতোই নিষ্পাপ একটা বাচ্চাকে রেপ করে খুন করেছে।
তাও আবার ভয়ানক ভাবে।
কে করেছে? কেনো করেছে? কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।”

মিহি আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো~
~ টেনশন নিওনা তো মেহরাব, সব ঠিক হয়ে যাবে। আচ্ছা ভালো কথা মনে পড়েছে, আব্বুর বাসার নিচ তলায় শারমিন নামে একটা মহিলা থাকতোনা?
যার কিউট একটা ৪ বছরের মেয়ে আছে। মনে আছে?”
~ হু! মনে থাকবেনা কেনো?
মেয়েটা মাশআল্লাহ অনেক কিউট।

আমি তোমাদের ওইখানে গেলেই ওরে আদর করে আসি। কি হয়েছে ওর?”
মিহি মন খারাপ করে বললো~
~ আজকে সকালে বাচ্চাটাকে বাসায় একলা রেখে ওর আম্মু শারমিন কোথাও চলে গেছে। দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া ছিলো। ভাবতে পারছো?
ভাগ্যিস আব্বু বাচ্চাটার কান্না শুনে দরজা ভেঙে বাচ্চাটাকে নিয়ে আসে।
লোকে কানাকানি করছে শারমিন না’কি কারো সাথে পালিয়ে গেছে।
পরকীয়া করতো।

আমি তো চিন্তা করছি বাচ্চাটার কথা। এতো কিউট একটা বাচ্চাকে কেউ এভাবে রেখে যায়? ওরা মানুষ?
বাচ্চাটার বাবাও বিদেশ থাকেন। কি যে হবে এখন।”

মিহির কথা শুনে আমার বুকের ভিতর ধড়াম করে একটা আওয়াজ হলো।
হচ্ছে কি এসব?
মানুষ কি আর মানুষ নেই?
মা যদি বাচ্চাকে এভাবে একলা রেখে চলে যায়, তাহলে সেইসব মা বাচ্চাকে খুন ও করতে পারবে। অসম্ভব না।

আমার চোখে অবন্তির রক্তাক্ত লাশটা বারবার ভেসে উঠছে। মাথায় রিফাতের কথাগুলো বারবার ঘোরপাক খাচ্ছে।
রিফাত বলেছিলো~
“মেহরাব স্যার, প্রেম মানুষকে অন্ধ করে দেয়। আজকাল পরকীয়া করে সন্তানকে কোরবানি করাটা অবাস্তব কিছুনা।”
তাহলে কি অবন্তির খুনের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছিলো?
রিয়া কিছু করেছে? না’কি রিয়ার প্রেমিক পলাশ? না’কি দুজন মিলেই কিছু একটা? সবচাইতে বড় প্রশ্ন~
“অবন্তি কি রিয়ার নিজের সন্তান?”

রাত ১২টা।
চোখে ঘুম নেই। বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি। মাথায় হাজারটা টেনশন।
এমন সময় ফোনটা বেঁজে উঠলো। কন্সটেবল আসিফের কল। ধরলাম।
আসিফ বললো~
~ স্যার, রিয়া এবং পলাশের কল লিস্ট এখন আমার হাতে। দু’জনের ভিতর কিছু একটা চলছে এটা নিশ্চিত।
বহুদিন ধরেই তাদের মধ্যে অনেক লং টাইম কথা হচ্ছে।”

~ গুড। ওটা থাক, আমি সকালে এসে দেখছি।”
~ মেহরাব স্যার আরেকটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা,
একটা জিনিষ আমার কাছে বেশ অবাক লাগলো। রিয়া এবং পলাশের ভিতর শেষবার কথা হয়েছিলো ২৭মে রাতে। ২ঘন্টা ১৫মিনিট।
ঠিক তার পরেরদিন ২৮তারিখ অবন্তি নিখোঁজ হলো। তারপর পলাশের সাথে রিয়ার আর কোনো কথা হয়নি।”
কন্সটেবল আসিফের কথা শুনে সন্দেহটা আরো শক্ত হলো।

খানিকক্ষণ চুপ করে রইলাম।
এসব ইশারা ইঙ্গিত আমাকে একদিকেই টেনে নিয়ে যাচ্ছে ” রিয়া~ পলাশ খুনি।”
খানিকক্ষণ পর আসিফকে বললাম~
~ এই বিষয়ে সকালে থানায় এসে তোমার সাথে কথা বলছি।”
~ ঠিক আছে স্যার।”

আসিফের সাথে কথা শেষ করে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। ঘুম আসছেনা।
মনে হচ্ছিলো অবন্তির রক্তাক্ত লাশটা আমার চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে।
বারবার চিৎকার করে বলছে~
“আমি বিচার চাইআমাকে বিচার পাইয়ে দাও”

সকালে আসাদ সাহেবের বাসায় গেলাম। দেখলাম আসাদ সাহেব এবং রিয়া টেবিলে বসে আছে।
সামনে অনেকগুলো নাস্তা, কিন্তু কেউ কিছু খাচ্ছেনা। দুজনেই চুপচাপ।
আমাকে দেখামাত্র আসাদ সাহেব বললেন~
~ আরে মেহরাব স্যার, এতো সকালে?

আসুন। অবন্তির খুনিকে কি খুঁজে পেয়েছেন?”
আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম~
~ খুনি তো আমার আশপাশেই আছে আসাদ সাহেব। ব্যাস প্রমাণটা পেলেই হয়ে গেলো।”
আসাদ সাহেব খানিকটা অবাক হয়ে বললেন~
~ মানে? বুঝলাম না আপনার কথা।”
~ বাদ দিন ওসব। আপনাদের কাছে অনেকগুলো প্রশ্ন নিয়ে এসেছি।

চাইলেই থানায় ডেকে নিয়ে প্রশ্নগুলো করতে পারতাম, কিন্তু আমার হাতে সময় খুব কম। আমি যত দ্রুত সম্ভব অবন্তির খুনিকে বের করতে চাই।”
~ জ্বী বলুন কি জানতে চান।”
আমি সরাসরি বললাম~
~ আপনি কি জানেন আপনার স্ত্রী পরকীয়া করছেন। তাও আবার অবন্তির স্কুল টিচার পলাশের সাথে।”
আমার কথাটা শুনে রিয়া বড়বড় চোখে আমার দিকে তাকালো।

আসাদ সাহেব ও অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। এটার মানে হচ্ছে আসাদ সাহেব কিছুই জানেন না।
আমি আবার বললাম~
~ আচ্ছা বাদ দিন। এটা বলুন অবন্তি কি আপনাদের নিজের সন্তান?”

আমার প্রশ্নটা শুনে আসাদ সাহেব কিছু বলার আগেই রিয়া চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। জোরে চিল্লায়া উঠলো~
~ কি সব আজেবাজে প্রশ্ন করছেন আপনি? অবন্তি আমাদের নিজের সন্তান। আমার নিজের গর্ভে অবন্তিকে ধারণ করেছি। আপনি চাইলে রায়গড় হসপিটালে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
২০ নভেম্বর ২০০৮ অবন্তির জন্ম।
যান গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখুন।”

রিয়া যেভাবে কথাটা বললো,
এতে বুঝা যাচ্ছে অবন্তি রিয়ার নিজের ই সন্তান। অন্যথায় জন্মতারিখ সহ হসপিটালের নাম এভাবে বলতোনা।
আমার প্রথম সন্দেহটা ভুল হলো।
কিন্তু প্রেমের জন্য কেউ কি নিজের সন্তানকে খুন করতে পারবে?

করতেও পারে। অসম্ভব না!
রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম~
~ এতো রাগ করিয়েন না। এখনো অনেক প্রশ্নই বাকি। যেরকম সহজভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন, ঠিক সেভাবে এটাও বলে দিন ‘অবন্তিকে খুন করালেন কেনো?”
রিয়া এবার একটু জোরে চিল্লায়া উঠলো~
~ কিইইইই? কি বলছেন এগুলো?
পাগল হয়ে গেছেন? অবন্তি আমার নিজের মেয়ে। আমি মা। অবন্তির মা।
কিভাবে খুন করবো? কেনো খুন করাবো?”

আমি ফিক করে হেসে বললাম~
~ অনেক কারণ হতে পারে। হতে পারে আপনার প্রেমিক পলাশ অবন্তিকে মেনে নিবেনা। পলাশকে পেতে হলে অবন্তিকে মারতে হবে। অথবা পলাশ এবং আপনাকে নোংরা অবস্থায় দেখে ফেলেছিলো অবন্তি। আপনি ভয় পাচ্ছিলেন আপনার আর পলাশের নোংরামি অবন্তি যদি আসাদ সাহেবের কাছে বলে দেয়। খুন করার জন্য অনেক কারণ থাকতে পারে।”
আমার কথা শুনে রিয়া চুপ করে রইলো।

কোনো কথা বলছেনা। কপালের কোণে ঘাম দেখা যাচ্ছে। টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটা রিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম “পানি খেয়ে নাও।”
রিয়া কিছুটা পানি খেলো।
বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো~
~ মেহরাব স্যার, আপি আপনাকে সব সত্যি বলছি। একটা কথাও মিথ্যা বলবোনা। কারণ আমিও চাই আমার মেয়ের খুনির শাস্তি হোক।
হ্যা এটা ঠিক আমি পলাশের প্রেমে পড়েছিলাম। গভীরভাবে পড়েছিলাম।

আমাদের প্রেমটা অনেক গভীর পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিলো।
এটাও ঠিক অবন্তি থাকা সত্বে পলাশ আমাকে কখনোই বিয়ে করতোনা।
পলাশ বারবার বলতো~
“স্বামী আর মেয়েকে ছেড়ে আমার কাছে চলে আসো। আমরা বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করবো।”

কিন্তু আমি ভালো করেই বুঝতে পারতাম আসাদ আমাকে সহজে ছাড়বেনা।
আর আমি নিজেও আমার মেয়েকে ছাড়তে পারবোনা।
রিয়া নিখোঁজ হওয়ার আগের রাতে আমি অনুভব করলাম আমি ভুল করছি।
যা করছি একদম ঠিক না।
এটা ভুল। পাপ। প্রচন্ড অপরাধী মনে হচ্ছিলো নিজেকে।

আমি পলাশকে কল দিলাম।
২ঘন্টার উপর পলাশের সাথে কথা বললাম। বুঝালাম। বললাম~
“আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ করা উচিত। আমরা যা করছি এটা পাপ।”
পলাশ রেগে গেলো। ও কোনোভাবেই আমাকে ছাড়বেনা।
কিছুতেই বুঝাতে পারলাম না।

প্রচন্ড রেগে পলাশ বললো~
“আমার সাথে সম্পর্ক শেষ করলে আমি যতোটা কষ্ট পাবো, তারচাইতেও বেশি কষ্ট আমি তোমাকে দিবো।”
এটাই পলাশের সাথে আমার শেষ কথা স্যার। তারপর আমি পলাশের নাম্বার ব্লক করে দেই। কিন্তু আমি তখনো বুঝিনি পলাশ আমার উপর রাগ করে এতোটা নির্মম ভাবে আমার মেয়েকে খুন করবে।”
কথাটা শেষ করে রিয়া কান্না শুরু করলো। অবিরাম কান্না করছে।
চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।

আমি জানিনা রিয়ার চোখের পানি কতোটা সত্য।
আমি জানিনা রিয়ার কথাগুলো কতোটা সত্য। কিন্তু এটা বুঝতে পারছি রিয়া হয়তো এই খুনটার সাথে জড়িত না।

রিয়ার সাথে কথা বলে আপাতত আমার মাথায় ৩টা কথা ঢুকেছে।
এক, রিয়া বললো অবন্তি তার নিজের সন্তান। তারপরেও রায়গড় হসপিটাল থেকে একবার খোঁজ নিতে হবে।
দুই, রিয়া চাচ্ছিলো পরকীয়া সম্পর্কটা শেষ করতে, এটার জন্য পলাশ অনেক বেশি রেগে ছিলো রিয়ার উপর।
তিন, রিয়ার কথাগুলো যদি সত্যি হয়,
তাহলে অবন্তির খুনের সাথে রিয়ার কোনো হাত নেই।

এখন প্রত্যেকটা কথা, প্রত্যেকটা প্রমাণ, আমাকে একদিকেই ইশারা করছে
“পলাশ খুনি।”
আমার ফোনটা বেঁজে উঠলো। কন্সটেবল আসিফের কল। ধরলাম।

আসিফ বললো~
“স্যার পলাশের স্কুল থেকে খোঁজ নিয়ে জানলাম ২৮ মে অর্থাৎ অবন্তি নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে পলাশ স্কুলে আসেন না। স্কুলের কেউই উনার কোনো খোঁজ জানেন না।”
আমার এমনিতেই পলাশের উপর সন্দেহটা অনেক বেশি ছিলো।
কন্সটেবল আসিফের এই কথাটা শুনার পর আমার সন্দেহটা বিশ্বাসে বদলে গেলো। তারপরেও পলাশকে খোঁজে বের করে, ওর সাথে কথা না বলা অবধি নিশ্চিত করে বলা যাবেনা পলাশ~ ই খুনটা করেছে।

পর্ব ৪

ফোনটা বেঁজে উঠলো। কন্সটেবল আসিফের কল। ধরলাম।
আসিফ বললো~
“স্যার পলাশের স্কুল থেকে খোঁজ নিয়ে জানলাম ২৮ মে অর্থাৎ অবন্তি নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে পলাশ স্কুলে আসেন না। স্কুলের কেউই উনার কোনো খোঁজ জানেন না।”
আমার এমনিতেই পলাশের উপর সন্দেহটা অনেক বেশি ছিলো।

কন্সটেবল আসিফের এই কথাটা শুনার পর সন্দেহটা বিশ্বাসে বদলে গেলো। তারপরেও পলাশকে খুঁজে বের করে, ওর সাথে কথা না বলা অবধি নিশ্চিত করে বলা যাবেনা পলাশ~ ই খুনটা করেছে। এখন পলাশকে খুঁজে বের করাটা অনেক বেশি জরুরী।

কন্সটেবল আসিফের সাথে কথা শেষ করে আসাদ সাহেবের দিকে একবার তাকালাম, দেখলাম উনার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।
রিয়াও কান্না করছে। কিন্তু রিয়ার কান্নার চাইতেও আসাদ সাহেবের কান্নাটা আমার বুকে এসে বেশি লাগছে।
একটাই তো মন, কতো আঘাত সহ্য করবেন? একদিকে মেয়ে অবন্তির খুন, অন্যদিকে স্ত্রী রিয়ার পরকীয়া।
বড্ড মায়া লাগছে উনার জন্য।

আমি বললাম~
“এখন তাহলে যাই আসাদ সাহেব। প্রয়োজন হলে আপনাদের খবর করবো।”
আমার কথার কোনো উত্তর দিলেন না তিনি। চুপচাপ টেবিলের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছেন।
চোখ থেকে অবিরাম পানি পড়ছে।

বুঝলাম তিনি এখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। রিয়ার সাথেও আর কোনো কথা বললাম না।
আসাদ সাহেবের বাসা থেকে সরাসরি থানায় চলে আসলাম।

থানাতে এসে কন্সটেবল আসিফকে বললাম “আজকের ভিতরে যেভাবেই হোক পলাশকে খুঁজে বের করতে হবে।
যেকোনো মূল্যে আমি পলাশকে চাই।”

আমার মনের ভিতর তখনো রিয়ার উপর সন্দেহ শেষ হয়নি। অবন্তি রিয়ার নিজের সন্তান কি’না এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রায়গড় হসপিটালে যোগাযোগ করলাম। খোঁজ নিয়ে দেখলাম রিয়া মিথ্যা বলেনি। রিয়ার বলা তারিখ অনুযায়ী ডেলিভারি হয়েছে।
ডেলিভারি ফাইলে দেখলাম রিয়া এবং আসাদ সাহেবের নাম।

এটার মানে হচ্ছে অবন্তি তাদের নিজের মেয়ে এটা পুরো নিশ্চিত।
তাহলে কি রিয়ার বাকি কথাগুলোও সত্য? পলাশ~ ই মেরেছে অবন্তিকে?

পলাশকে খুঁজে পেলাম শহর থেকে একটু দূরে তার একটা বোনের বাসায়।
ধরে থানায় নিয়ে আসলাম।
আমার মাথা তখন ভীষণ গরম।
মাথায় একটা কথা বারবার রিপিট হচ্ছে
“পলাশ অবন্তিকে খুন করেছে।”
মনে হচ্ছিলো অনেক কষ্টের পর খুনি অবধি পৌছাতে পেরেছি।

পলাশকে থানায় এনে কোনো কিছু বলার আগেই ওর গালে ঠাসসসস করে দুইটা থাপ্পড় মারলাম। পলাশ গালে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো~
“স্যার আমাকে মারছেন কেনো?”
আমি রেগে বললাম~
~ শালা ফেরেশতা সাজার নাটক করোস?কেনো মারছি বুঝিস না? এখন তো জাস্ট থাপ্পড় মারতেছি, একটু পর দেখ তোরে আমি কি করি।”
~ আমি কি করছি স্যার? আমার অপরাধ কি? এমন করছেন কেনো?”

পলাশের কথা শুনে মেজাজটা আরো খারাপ হলো৷ ঠাসসস করে ওর গালে আরেকটা থাপ্পড় মেরে বললাম~
~ একটা বাচ্চা মেয়েকে রেপ করে,
ভয়ানক’ভাবে খুন করে, এখন বলছিস ”আমার অপরাধ কি?”

পলাশ প্রচন্ড অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে হচ্ছে আমার কোনো কথা ও বুঝতে পারছেনা।
খানিকক্ষণ পর অবাক কন্ঠে পলাশ বললো~
“বাচ্চা? রেপ? খুন? আমি করেছি?
পাগল হয়ে গেছেন আপনি?”

পলাশের কথা শুনে আমি ফিক করে হাসলাম। বললাম~
~ এটাই স্বাভাবিক! কোনো অপরাধী স্বীকার করেনা সে অপরাধ করেছে। আচ্ছা তুই আমাকে সত্যি করে একটা কথা বল, অবন্তির মতো ফুটফুটে নিষ্পাপ একটা বাচ্চাকে এভাবে খুন করতে তোর একটুও হাত কাঁপলোনা? একটুও মায়া হলোনা? কিভাবে পারলি? আমি মানছি হয়তো রিয়ার উপর তুই অনেক বেশি রেগে ছিলি। তাই বলে রিয়ার উপরের রাগটা তুই নিষ্পাপ একটা বাচ্চার উপর মিটাবি?”

আমি খেয়াল করে দেখলাম অবন্তির নামটা শুনার পর পলাশের চেহারা মুহুর্তেই বদলে গেছে।
কপালের চামড়াটা কুঁচকে গেছে।
চোখগুলো অনেক বড় বড় হয়ে গেছে।
প্রচন্ড শকড খেলে মানুষের চেহারা যেমনটা দেখায় ঠিক সেরকম।
পলাশ তোতলাতে তোতলাতে বললো~
“অ অ অবন্তি মারা গেছে? কখন?”

পলাশের চোখ মুখ দেখে এটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে পলাশ রিতীমত শকড।
মনে হচ্ছে ও কিছুই জানেনা।
আমি বললাম~
~ ২৭ তারিখ রাতে রিয়ার সাথে তোর ঝগড়া হয় এটা ঠিক?”
পলাশ মাথা নেড়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো।
আমি আবার বললাম~
~ রিয়া পরকীয়া থেকে সরে আসতে চাইছিলো এটা ঠিক?”

~ হ্যা ঠিক। কিন্তু স্যার~~~
আমি পলাশের কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম~
~ এজন্যই তুই রিয়ার উপর অনেক বেশি রেগে গেলি। রিয়াকে এটা বলে হুমকি দিলি “আমি যতো কষ্ট পাবো তার চাইতে অনেক বেশি কষ্ট তোমাকে পেতে হবে।”
ঠিক তার পরেরদিন অবন্তি নিখোঁজ। অদ্ভুতভাবে তুই ও ওইদিন থেকেই নিখোঁজ। সবকিছু তোর দিকেই ইশারা করছে পলাশ। খুন করলে স্বীকার করে নে, অন্যথায় কিভাবে স্বীকার করাতে হয় আমরা ভালোভাবেই জানি।”

পলাশ ভীত কন্ঠে বললো~
~ স্যার আপনার সবগুলো কথা ঠিক।
হ্যা ওইরাতে যখন রিয়া বললো আমার সাথে আর কথা বলবেনা, সম্পর্ক রাখবেনা, আমি শুনে অনেক রেগে গেছিলাম। এটা সত্য।

আমি রিয়াকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম স্যার। যখন শুনলাম রিয়া আমার সাথে সম্পর্ক রাখবেনা,
আমি মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। উল্টাপাল্টা বলে দিছি।
কিন্তু ফোন রাখার কিছুক্ষণ পর আমার এটা মনে হলো রিয়া সঠিক সীদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের এই পরকীয়ার সম্পর্কটা রাখা উচিত না।
এটা আসলেই পাপ।

আমি তার পরেরদিন সকালেই কাউকে কিছু না বলে আপির বাসায় চলে আসি।
আমি চাচ্ছিলাম কয়েকটাদিন এই শহর থেকে, রিয়ার স্মৃতি থেকে দূরে থাকতে।
বিশ্বাস করুন মেহরাব স্যার,
আমি অবন্তিকে খুন করিনি।
আমি এইখানে ছিলাম ও না।
এমনকি অবন্তি খুন হয়েছে এটাও আমি জানতাম না।

পলাশের কথা শুনে কি বলবো বুঝতে পারছিনা। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
রিয়া খুন করেনি।
পলাশ খুন করেনি।
রিফাত খুন করেনি।
তাহলে অবন্তিকে খুন করলো কে?

এই কেসটা শুরু হওয়ার পর থেকে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিছে।
সবসময় মাথাটা ভারী হয়ে থাকে।
অবন্তির লাশটা চোখের সামনে ভাসতে থাকে। আমার মনে হচ্ছে এই কেসটা আরো কিছু দিন চললে আমি পাগল হয়ে যাবো। পলাশকে বললাম~
~ তুই যে অবন্তিকে খুন করিস নি সেটার প্রমাণ দিতে পারবি?”
~ অবশ্যই স্যার। আমি ২৮তারিখ সকালে যে বাসের টিকেট কেটে আপুর বাসায় গেলাম, আপনি চাইলে সেই বাসের সব যাত্রীদের লিস্ট চেক করতে পারেন। আমার নাম পাবেন।

আমি ওইখানে যে কয়দিন ছিলাম আমাকে অনেক মানুষ দেখেছে, ওইখানে গিয়ে মানুষদের থেকে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
আর হ্যা, রিয়ার কথা চিন্তা করতে করতে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।
এজন্য ৩০তারিখ ওইখানের একজন ডাক্তারের কাছে যাই। আপনি চাইলে সেখানেও খোঁজ নিতে পারেন।
অথবা ডাক্তার সাহেবের নাম্বার আছে আমার মোবাইলে, উনার সাথে এখন কথা বলুন।”

আমি খুব করে চাইছিলাম পলাশ যাতে খুনি হয়। এই কেসটা যেনো এখানেই শেষ হয়। কিন্তু সেটা হলোনা।
পলাশের কাছ থেকে নাম্বার এনে ডাক্তারের সাথে কথা বললাম।
ডাক্তার বললেন~
“স্যার উনি ৩০তারিখ আমার কাছে ট্রিটমেন্টের জন্য আসছিলেন।

উনার শরীর অনেক দূর্বল আর প্রচন্ড জ্বর ছিলো। যেটার জন্য ঠিকঠাক ভাবে হাঁটতেও পারছিলেন না।
আমার চেম্বারে সিসিটিভি লাগানো আছে স্যার, আপনি চাইলে দেখতে পারেন।”
ডাক্তারের কথা শুনে উনার সাথে আর কোনো কথা বাড়ালাম না।

ফোনটা রেখে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
কিছু ভাবতে পারছিনা।
কি করবো বুঝতে পারছিনা।
অবন্তির খুনি কি তাহলে এভাবে স্বাধীন ঘুরে বেড়াবে?

একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পলাশকে বললাম~
~ তুমি এখন যাও। এটা ভাবিওনা যে তোমার উপর থেকে সন্দেহ উঠে গেছে।
তুমি নজরে থাকবে। তোমার ব্যাপারে আরো ভালো করে খোঁজ নিচ্ছি।
আর হ্যা, ক্ষমা করে দিও। না বুঝে গায়ে হাত তুলছি। মাথা অনেক গরম ছিলো।
আমি সরি।”

পলাশ মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো~
~ ব্যাপার না মেহরাব স্যার। আমি বুঝতে পারছি আপনার মনের অবস্থা।
কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন?”
~ হু বলো! কি প্রশ্ন?”

~ আমি খুনি করেছি এটা আপনাকে রিয়া বলেছে তাইনা?”
পলাশের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলাম না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
পলাশ আবার বললো~
~ রিয়া আমার কথা আপনাকে বলতে পারলো, কিন্তু শাকিলের কথা কিছু বলেনি?”

পলাশ ঠিক কি বলতে চাইছে বুঝতে পারলাম না। আমি প্রথমবার শাকিলের নাম শুনলাম। প্রচন্ড কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাস করলাম~
“শাকিল? এই শাকিলটা আবার কে?”
পলাশ আমার কথা শুনে খিক খিক করে হেসে বললো~
~ মেহরাব স্যার, আপনি তো আসল খুনির নামটাই তাহলে জানেন না। তার কাছ অবধি পৌছাবেন কিভাবে?”
আমার মাথায় তখনো কিছু ঢুকছেনা।

একদিকে টেনশন, অন্যদিকে পলাশের এই হাসি। বিরক্ত লাগছে।
খানিকটা রেগে বললাম~
~ হাসা বন্ধ করে বল শাকিল কে?”
~ স্যার শাকিল হচ্ছে আসাদ সাহেবের বেস্টফ্রেন্ড। শুধু আসাদ সাহেব বললে ভুল হবে, রিয়ার ও বেস্টফ্রেন্ড।
এটা এখনকার কথা না, অনেক আগের কথা স্যার। রিয়া আমাকে বলেছিলো তারা ৩জন একিই কলেজে পড়তো।
শাকিল এবং আসাদ দুজনেই ভালো স্টুডেন্ট। কিন্তু শাকিলের চাইতে সবসময় ভালো রেজাল্ট আসতো আসাদের। কলেজ লাইফ থেকে আসাদের কাছে শাকিলের হার শুরু।

রিয়া জানতোনা শাকিল এবং আসাদ দুজনেই রিয়াকে ভালোবাসে।
ভার্সিটিতে উঠার পর একদিন হুট করে তারা দু’জনে একসাথে রিয়াকে প্রপোজ করে। রিয়া কাউকেই এক্সেপ্ট করেনি।
তারপরেও তারা রিয়ার পিছু ছাড়েনি।

ভার্সিটি শেষ করার পর শাকিল এবং আসাদ দুজনেই বড় একটা চাকরির জন্য একিইসাথে ইন্টারভিউ দেয়৷
আসাদ চাকরিটা পেয়ে যায়।
চাকরিটা না পেয়ে শাকিল শুরু করে ছোট একটা বিজনেস। শাকিল এখানেও হেরে যায় আসাদের কাছে।

তারপর শাকিল এবং আসাদ দু’জনে একসাথে রিয়ার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। রিয়ার বাবা তখন অসুস্থ।
শেষ ইচ্ছা ছিলো ভালো একটা ছেলে দেখে রিয়াকে বিয়ে দেওয়া।
স্বাভাবিক ভাবেই রিয়ার বাবা আসাদকে পছন্দ করলেন। কারণ আসাদের কাছে আছে বড় চাকরি। ভালো ইনকাম।

অসুস্থ বাবার ইচ্ছা রাখার জন্য আসাদকে বিয়ে করে রিয়া।
এখানেও আসাদের কাছে শাকিল হেরে যায়। আর তারপর~
পলাশ থামলো। আমি হুড়মুড় করে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বললাম~
“তারপর? তারপর কি হলো?”

লেখা ~ মেহরাব নয়ন

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “অবন্তির খুন – লোমহার্ষক মার্ডার থ্রিলিং স্টোরি” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – অবন্তির খুন (শেষ খণ্ড) – লোমহার্ষক মার্ডার থ্রিলিং স্টোরি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *