রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ২০

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ২০ | Love Story

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ২০: নাবীল মাহির উপর ভীষণ রাগ করেছে, কিন্তু কেন? মাহি বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। জানি না কি হবে তাদের। কোন ভুল বোঝাবুঝি হবে না তো?

বর হিসেবে প্রথম রাগ

নাবীল ও তাওহিদ দেখে সবাই ড্রয়িং রুমে আড্ডা দিচ্ছে। কিন্তু নাবীল মাহিকে দেখে মেজাজ গরম হয়ে যায়। কারণ মাহি আর অর্ক পাশাপাশি বসে কথা বলছিলো, আর কি বিষয় নিয়ে জেনো অনেক হাসাহাসি করছে।

অর্ক, দিশা, ঝুমুর ও অনু এরা হচ্ছে সবাই নাবীলের কাজিন। সবাই ড্রয়িংরুম বসে আড্ডা দিচ্ছিলো, সাথে তানজিলা আর নিশিও ছিলো।

নাবীল মাহির দিকে রাগান্বিতভাবে তাকিয়ে আছে সে দিকে মাহির খবরি নেই।

অনুঃ আরে নাবীল কেমন আছিস? বিয়ের পরে ভাবলাম, হানিমুনে যাবি। তা না করে অফিসে যাস। কেমন আনরোমান্টিক তুই?

নাবীলঃ কেমন আছো, আপু তুমি।

দিশাঃ আমরাও কিন্তু আছি ভাইয়া।

অনুঃ আমরা তো ভালো, কিন্তু তোর কি হলো? আমাদের দেখে কি খুশি হোসনি?

নাবীলঃ কি বলো আপু! আসলে একটু টায়ার্ড। আর কিছু না। আমি বরং একটু ফ্রেস হয়ে আসি। তারপর তোমাদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেবো। ওকে।

একবার মাহির দিকে তাকিয়ে, নাবীল উপরে চলে গেলো।

মাহিঃ আরে বাবা কি হলো, আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো কেনো? আমি এখন আবার কি করলাম?

নাবীলের ভাবীঃ মাহি নাবীলের জন্য চা নিয়ে যাও। তা না হলে চিল্লাবে এখন।

মাহিঃ হমমমমমম, ভাবী।

মাহি নাবীলের জন্য চা নিয়ে রুমে গেলো। নাবীল চেঞ্জ না করে বারান্দায় সিগারেট খাচ্ছে।

মাহিঃ কি হলো আপনে এখানে? চেঞ্জ করবেন না।

নাবীল সিগারেটা হাতে মাহির দিকে তাকালো। চোখগুলো লাল হয়ে গেছে।

চোখগুলো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম, তবুও সাহস নিয়ে আবার জিজ্ঞাস করলাম,

মাহিঃ আপনে ঠিক আছেন।

নাবীল সিগারেটটা ফেলে দিয়ে মাহিকে দেয়ালের মধ্যে চেপে ধরলো।

নাবীলঃ কি করছিলি নিচে? (কিছুটা ঝাঁজালো সুরে)

মাহির ভয়ে মুখ দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছে না।

ভালবাসার ভুল বোঝাবুঝি

নাবীল একটু চুপ করে চিল্লায় বলে- কি হলো, কথা বলোস না কেনো? আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি।

মাহিঃ না মানেএএ, কিকিকি করেছি।

নাবীলঃ এতো কিসের হাসাহাসি অর্কের সাথে? কি হয় তোর ওওও?

মাহিঃ না, কিছু না, এমনেই। আপনে হয়তো ভুল বুজছেন।

নাবীলঃ আমাকে শিখাতে আসবি না মাহি। যা আমার একদম পছন্দ না তা করার চেষ্টাও করবি না। অর্ক আমার ভাই কিন্তু তোর আশেপাশেও আমি ওকে দেখতে চাই না। অর্কের থেকে ১০ হাত দূরে থাকবি, কি বলছি শুনছোস?

মাহিঃ হুমমমম। (মাহি নিচে তাকিয়ে হ্যা বললো)

নাবীল মাহিকে ছেড়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।

এদিকে মাহির খুব কান্না পাচ্ছে, নাবীলের এমন আচরণে। সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এমন রিয়েক্ট করার কি ছিলো? মাহি নিচে চলে গিয়ে ভাবীর পাশে গিয়ে বসলো।

নাবীলের ভাবীঃ কি হলো মাহি, মুখটা এমন মলিন কেনো? নাবীল কিছু বলছে।

মাহিঃ না ভাবী, এমনেই।

নাবীলকে খুব ভালো করেই চিনে তানজিলা তাই আর কিছু বললো না।

এদিকে তাওহিদের সাথে গায়ে পরে হাসাহাসি করছে ঝুমুর। তা দেখে তানজিলা দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে।

তাওহিদ ব্যাপারটা বুঝতে পারে। তাই ড্রয়িংরুম থেকে উঠে সোজা নিজের রুমের দিকে হাটা ধরে সাথে তানজিলাকেও আসতে বলে। তানজিলাও চলে যায়।

এতোক্ষণে নাবীল এসে পরে, আর গিয়ে মাহির সাথে বসে পরে।

অর্কঃ ভাইয়া আজকের প্লান কি?

নাবীলঃ আমি কি করে বলবো তোরা কি প্লান করছোস? আজ এমনেই টায়ার্ড। তাই আজ না করে কাল কর, ভালো হবে, যাই করোস।

অর্কঃ ভাইয়া আমরা সবাই রাত জেগে মুভি দেখবো, ঠিক আগে যেমন করে দেখতাম।

নাবীলঃ ওকে আমি মুভি সিলেক্ট করে নিই আগে। তারপর কাল রাতে দেখবো নি। পরের দিনতো ছুটি, তাই কোন সমস্যাও হবে না।

অর্কঃ ঠিক বলছে ভাইয়া-অর্ক।

তানজিলা রুমে গিয়ে তাওহিদকে ইচ্ছামত ঝাড়ছে।

তানজিলাঃ তাওহিদ তুমি জানো আমার ওকে একদমই পছন্দ না। তবুও কেনো ঝুমুরের সাথে এতো মাখামাখি তোমার। ও তোমার কাজিন না হলে আমি কখনো ওকে এই বাসায় ঢুকতেই দিতাম না।

তাওহিদ তানজিলাকে জরিয়ে ধরে,

তাওহিদঃ তানজু তুমি জানো আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি। তাই এসব চিন্তা বাদ দেও।

বউয়ের রাগ ভাঙ্গানো

নাবীল লক্ষ করলো মাহির মনটা ভালো না। হয়তো তখন এমনটা করা ঠিক হয়নি। কিন্তু কি করবো? কেনো জানি ওর পাশে অর্ককে সহ্য হচ্ছিলো না আমার। ওকে হারানোর ভয়টা এখনো আমাকে তাড়া করে। তাইতো না বুঝেও কস্ট দিয়ে ফেলি। কিন্তু তার জন্য তোকে সরি বলবো না, কারণ দোষটা তোরই ছিলো।

সবাই মিলে অনেকক্ষণ আড্ডা দেবার পর, রাতের খাবার খেয়ে নিজ নিজ রুমে চলে গেলো।

আজ আকাশে পূর্ণিমা চাঁদ উঠেছে। তাই বিছানাটা ঠিক করে বারান্দায় দাঁড়ালাম। হালকা বাতাসে চুল গুলো উড়ছে আর পূর্ণিমা চাঁদের আলো যেন মন মুগ্ধকরা পরিবেশ।

ঘরে এসে দেখি মাহি নেই। তাই বারান্দায় চলে গেলাম। বাতাসে মাহির চুলগুলো উড়ছে। আর মাহি বার বার চুলগুলোর সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। মুখের উপর চাঁদের আলোয় যেন ওকে আরো অপরুপ লাগছে। আমিতো ওর থেকে চোখই সরাতে পারছিনা।

হঠাৎ মনে হলো কেউ পিছে দাঁড়িয়ে আছে, ঘুরে দেখি নাবীল। এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমাকে আগে কখনো দেখেনি। চোখে চোখ পরায় আমি সরিয়ে নিলাম।

নাবীলঃ মাহি চল আমার সাথে। (মাহির হাতটা ধরে)

মাহিঃ কোথায়?

প্রশ্ন করার সাথে সাথে নাবীল আমার হাতটা ছেড়ে আড়কোলে তুলে নিলো। আমি কিছুটা আশ্চর্য হয়ে গেলাম।

মাহিঃ আরে এটা কি করছেন? নামান আমাকে, না হলে পরে যাবো।

নাবীলঃ চুপ থাক, তা না হলে আমি নিজেই তোকে ফেলে দেবো।

মাহিঃ আমি ভয়ে নাবীলের গলা জরিয়ে ধরলাম।

নাবীল মুসকি হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা হাটা ধরলো ছাদের উদ্দেশ্যে।

ছাদে গিয়ে দেখি একটা মাদুর বিছানো। আমাকে মাদুরের উপর বসিয়ে দিয়ে, নিজেও পাশে বসলো।

অতীতের ভালোবাসা

নাবীলঃ জানোস, আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো তোকে নিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখবো। তাই দেরি না করে এখানে নিয়ে এলাম।

রাতে খোলা আকাশের নিচে প্রিয়জনের সাথে চাঁদ দেখার মজাই আলাদা।

নাবীল মাদুরের মধ্যে শুয়ে উপরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, মনে হয় অনেক কিছু চিন্তা করছে।

আমি নাবীলের এক হাত পাটিতে রেখে ওর হাতের বাহুর উপর শুয়ে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ নাবীল কিছু বলে উঠলো,

নাবীলঃ মনে আছে মাহি, তোর পাঁচ বছর আগের কথা। সেদিন মনের অজান্তেই তুই আমার জীবনে প্রবেশ করেছিলি।

মাহিঃ হুমমমমম।

পাঁচ বছর আগে-

নাবীল ও শফিক এক সাথে ছাদে বসে সিগারেট খাচ্ছিলো আর কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো। এমন সময় শফিক এর ফোন আসে তাই শফিক নিচে চলে যায়। আর আমি একাই ছাদে ও পিঠ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ কেউ পেছন দিক দিয়ে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করছে। আর কিছুক্ষণ পর পর নাক ঘষছে আমার জামাতে। আমার বুঝার বাকি ছিলো না, এটা মাহি। আমার ভেতরটা কেমন জানি তোলপার শুরু হয়ে গেলো। তবুও নিজেকে সংযত রেখে হাতটা ছাড়িয়ে পেছনে তাকালাম,

নাবীলঃ কি হলো মাহি?

মাহিঃ আরে নাবীল ভাইয়া আপনে, আমি ভাবলাম শফিক ভাইয়া। সরি, আমি বুঝতে পারিনি। কান্না করছে আর বলছে।

কেনো জানি মাহির প্রতিটি চোখের জল আমার ভেতরটা ছাড়খাড় করে দিচ্ছে।

নিজেকে শান্ত রেখে,

নাবীলঃ কি হলো মাহি, বল আমায়। আর কান্না করছোস কেন, আগে কান্না বন্ধ কর? চোখের পানি মুছে দিয়ে। তোকে কেউ কিছু বলছে। মা বকেছে।

মাহিঃ না, কিন্তু।

নাবীলঃ কিন্তু কি বল আমাকে সব?

হঠাৎ মাহির হাতের দিকে চোখ গেলো।

নাবীলঃ তোর হাতের এ অবস্থা কেনো, কে করেছে? বল…।

মাহি কিছু না বলে কান্না করে যাচ্ছে। তাই নাবীল একটা ধমক দিয়ে,

নাবীলঃ বল আগে, কিভাবে হলো এমন, তারপর কাঁদিস?

নাবীলের ধমকে মাহি ভয় পেয়ে সব বলে দিলো।

মাহিঃ রাস্তার মোরে যে দোকানটা আছে না, আমি স্কুল থেকে আসার সময় ওখামে আইচক্রিম আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই লোকটা খুব বাজে, আমাকে কি সব কথা বলছে আমার একদম ভালো লাগছিলোনা। তাই চলে আসতে চাইলাম, কিন্তু আমার হাতটা শক্ত করে ধরে দোকানের ভেতরে নিয়ে যেতে চাইলো। তাই আমি আমার হাতের পানির বোতল দিয়ে জোরে একটা মেরে পালিয়ে এলাম। দেখো, আমার হাতটা কি করছে? খুব ব্যথা করছে।

নাবীল মাহির হাতটা ধরে তাকিয়ে আছে। আর রাগে ওর মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে। পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে।

নাবীলঃ তুই বস, আমি আসছি।

একথা বলে নাবীল নিচ থেকে কিছু বরফ নিয়ে এলো। হালকা করে মাহির হতে লাগাতে লাগলো যাতে কিছুটা কমে যায়।

নাবীলঃ শোন মাহি, শফিককে তুই কিছু বলবি না, যা করার আমি করবো। ওই লোকটা তোকে আর ডিস্টার্ব করবে না। কিন্তু শফিক জানলে তোকে বকবে।

মাহিঃ ঠিক আছে, আমি বলবো না।

এরপর নাবীল চলে গেলো।

মনের মানুষকে আগলে রাখা

পরের দিন মাহি স্কুল থেকে আসার সময় দেখলো দোকান বন্ধ আর টুলেট লাগানো।

আরে একদিনের মধ্যে কই গেলো।

ফ্লাশ ব্যাক-

নাবীল সে দিন এসে দোকানদারকে অনেক মারলো। এমনি যে হাত দিয়ে মাহিকে ধরেছে সে হাতটাই ভেঙ্গে দিলো। এরপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বললো। না গেলে জান হারাবে।

তাই দোকানদার রাতারাতি সব কিছু ছেড়ে চলে গেলো।

এসবের কোন কিছুই মাহি জানে না।

এরপর থেকেই নাবীল মাহিকে নজর রাখতে লাগলো। মাহি কি করে, কার সাথে চলে? মাহির পুরো জীবনটা জেনো নাবীলের হয়ে গেলো। নাবীল মাহিকে চোখে হারায়। কিন্তু কখনো মাহিকে নিজের মনের কথা জানতে দেয়নি।

এসব ভাবতে ভাবতে মাহির দিকে তাকিয়ে দেখে মাহি ঘুমিয়ে গেছে।

ঘুমন্ত মাহির মুখে চাঁদের আলো জেনো মাহির রুপকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

নাবীল একটু হেসে মাহিকে একটা কিস করলো। এরপর মাহিকে কোলে করে রুমে নিয়ে এলো। মাহিকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

চলবে…..

পরের পর্ব- রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ২১

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *