রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ৩

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৩ | Love Story

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৩: গত ২য় পর্বে আমরা দেখেছি মাহির ভাই মাহির জন্য গৃহশিক্ষক খুঁজছে। এই নিয়ে নাবিলের সাথে অনেক আলোচনাও করেছে সে। কিন্তু কোন সমাধান পায়নি। আজকের এই পর্বে দেখি কি হয়?

টিউশনের জন্য নাবিলকে প্রস্তাব

পরের দিন শফিক আর নাবীল বসে চা খাচ্ছে। তাদের একটা নির্দিষ্ট জায়গা আছে, তারা এখানেই বসে আড্ডা মারে বেশির ভাগ সময়। হঠাৎ নাবীল শফিক কে উদ্দেশ্য করে বললো কি রে, কিছু ভাবলি। কাকে রাখবি?

শফিকঃ ভাবলাম তো.. সারা রাত ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অনেক ভাবলাম।

নাবীলঃ কি..! মানুষ জেগে থেকে ভাবে আর তুই ভাবিস ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। আজব!

শফিকঃ আরে দূর ওটা বাদ দে। আমি এমনেই ভাবি।

নাবীলঃ ঠিক আছে বস। এখন বল কাকে দিয়ে পড়াবি?

শফিকঃ তুই ছাড়া আমার কে আছে বল।

নাবীল চা খাচ্ছিলো, শফিকের কথা শুনে বিষম খেলো।

নাবীলঃ কি যা তা বলছোস! আমি? তুই আর কাউকে খুঁজে পাসনি! আমি কি আগে কাউকে পড়াইছি। আর জানোস না মাহি মাঝে মাঝে এমন কাণ্ড করে তখন আমার খুব রাগ উঠে যায়। তখন আবার আমি নিজেকে সামলাতে না পারলে কি না কি করে ফেলবো, আমি নিজেও জানি না। আমার রাগ সম্পর্কে তো তোর আইডিয়া আছেই।

শফিকঃ সে কারণেই তো তোকে বললাম। মাহি খুব ভয় পায় তোকে, তোর ভয়ে এমনেই দেখবি পড়াও সব তাড়াতাড়ি কমপ্লিট করে ফেলবে, তোকে ভাগানোর জন্য। আমিই পড়াতাম কিন্তু আমার চাকরীর লেটার যে কোন সময় পেয়ে যাবো। তখন আবার সমস্যা হবে, তাই তোকে বললাম। আর ওর পরীক্ষারও বেশিদিন বাকি নেই। দেখ এতো কম সময় ওর সিলেবাস একমাত্র তুই কমপ্লিট করে দিতে পারবি।

নাবীলঃ তুই রনি কে বল? ও তো এর আগেও অনেককে পড়িয়েছে।

শফিকঃ তুই রনির স্বভাব জানোস না? ওর কাছে আমার বোন কে দেব? এর আগে ও কি কি করেছে জানোস না? পড়া রেখে আমার বোনের দিকে নযর দিবে। দেখ নাবীল আমার শেষ ভরসা তুই। তুইও কি আমাকে নিরাশ করবি?

নাবীলঃ ওকে, ঠিক আছে। আমি শুধু ওর সিলেবাস শেষ করে দেবো। ওকে। (কিছুক্ষণ চিন্তা করে জবাব দিলো)

শফিকঃ ওওওওও নাবীল। (নাবীল কে জরিয়ে ধরে) তুই আমার কতো বড় সমস্যা দূর করছোস জানোস না।

মাহির বাসায় নাবিল

নাবীলঃ তোর সমস্যা তো দূর হলো আমার শুরু হলো। তুই জানোস তোর বোন আমাকে হিটলার বলে। আমি নাকি এনাকোন্ডা। আমি নাকি সব কিছু গিলে ফেলি, চাবানোর সুযোগও দিনা।

শফিকঃ হা হা তোকে কে বলললো?

নাবীলঃ একদিন বসে বসে আমাকে বকছিলো, আমি পেছনো দাঁড়িয়ে ছিলাম। বেচারি জানতো না ,যখন আমাকে দেখলো এমন দৌড় দিলো। এক মাস আমার সামনেও আসে নি। তাহলে বুজ.!

শফিকঃ ভালই তো। তুই আজ থেকেই পড়ানো আরম্ভ কর। আমি মাকে বলে দিবনি।

নাবীলঃ ওকে।

বিকেলে হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো..

মাঃ মাহি দরজা খোল, দেখতো কে আসছে? তোর স্যার আসার কথা ছিলো। ( মা চিৎকার দিয়ে বলছে রান্না ঘর থেকে)

মাহি দরজা খুলে দেখে নাবীল দাঁড়িয়ে আছে। নাবীলকে দেখে এই সময় মাহি কিছুটা আশ্চর্য হলো। কারণ শফিক ভাই না থাকলে নাবীল কখনো আসে না। ফোন দিয়ে আসে।

মাহিঃ নাবীল ভাই আপনে। শফিক ভাইতো বাসায় নেই।

নাবীলঃ তা তো জানি, আমি তো শফিকের সাথে দেখা করতে আসিনি, আসছি তোর জন্য।

মাহিঃ এ্যা…। (মাহি, মুখ চোখ বাকিয়ে)

নাবীলঃ কিরে এভাবে তাকিয়ে থাকবি নাকি ঘরেও আসতে দিবি।

মাঃ কি রে মাহি কে আসছে? (মার কথায় মাহির ধ্যান ভাঙ্গলো)

মাহিঃ মা নাবীল ভাই। মাহি মনে মনে ভাবছে এই হিটলার আমার সাথে দেখা করতে কেনো আসছে মতলব কি?

মাঃ আরে নাবিল বাবা আসো আসো। বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেন, ভেতরে আসো?

নাবিল ভেতরে ডুকে মাহির মাকে জিঙ্গেস করলো, আন্টি কোথায় বসবো, ড্রয়িংরুম এ, নাকি মাহির রুমে।

মাহির রুমে কথাটা শুনে…মাহি যেনো আকাশ থেকে পড়লো। আ..মা..র..রুমে মানে কি?

মাহির মা মাহির কথা কানে মনে হয় শুনলোই না।

মাঃ আরে এখানে কেনো বসবে মাহির রুমে গিয়ে বসো। ওখানে পড়াতে সুবিধা হবে।

মাহিকে পড়ানোর প্রথম দিন

এতোক্ষণ পরে মাহির চিন্তার অবসান হলো। নিউ টিচার আর কেউ না নাবীল। (মাহি তো পারে না কেঁদেই দেয়)

এই লোকটার কাছে কিভাবে পড়বো আমি? এটাতো এক নাম্বারের হিটলার। এনাকোন্ডা। আমাকে গিলে খেয়ে ফেলবে। মনে মনে নাবীলকে গালি দিচ্ছে আর ভাবছে।

নাবীলঃ আমাকে গালি দেয়া শেষ হইছে, নাকি আরো বাকি আছে। এখন চল পড়তে বসি।

নাবীল এর কথায় মাহি ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গেলো। কপালটা কুচকিয়ে মনে মনে বললো কিভাবে জানলো আমি গালাগালি করছি?

নাবীল গিয়ে মাহির রুমে চেয়ারে বসলো, মাহির কোন কোন সাবজেক্ট এ সমস্যা আছে তা আগে বের করতে বললো।

মাহি ২ টা বই সামনে দিয়ে বললো, কতো বছর পর এই বই গুলোর মুখ দেখছেন?

নাবীলঃ তোর কি মনে হয় আমি অনেক বুড়ো হয়ে গিয়েছি? তাই বই দেখলে বলবো আরে আমি তো পাস করার পর বই গুলো ধরিনি। তাই না..।

মাহিঃ না তেমন কিছু তো বলিনি আমি! আপনে একটু বই গুলোর সাথে পরিচিত হন, আমি একটু আসছি।

নাবীলঃ কই যাস তুই। পড়া রেখে।

মাহিঃ এই তো আম্মুর কাছে, আমি এখনি আসছি। মাহি সোজা ওর মার কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করলো, মা মা..!

মাঃ কি হইছে, সারা দিন বকরীর বাচ্চার মতো ম্যা ম্যা করস কেনো? আর তুই এখানে কি করস, পড়তে না বসে?

মাহিঃ মা আমি কি তোমার সৎ মেয়ে? নাকি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাইছো।

মাঃ কি যা তা বলছিস! তোর মাথা কি ঠিক আছে?

মাহির অভিমান

মাহিঃ কিভাবে মাথা ঠিক থাকবে? তোমরা একটা বারও আমাকে জিঙ্গেস করলে না, নাবীল ভাইকে ঠিক করার আগে। এমনেই তাকে আমার সহ্য হয় না তার উপর আমার ঘাড়ে বসিয়ে দিয়েছো।

মাঃ দেখ মাহি আর কোন কথা শুনতে চাই না। নাবীল বসে আছে আগে পড়া শেষ কর, তারপর কথা হবে।

মাহি চলে গেলো ওর রুমে। চেয়ারে বসে নাবীলের দিকে থাকিয়ে আছে।

নাবীল বুঝতে পেরে বইটা বন্ধ করে। মাহির দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করলো- কি সমস্যা, এভাবে তাকিয়ে আছোস কেন? কিছু বলবি।

মাহিঃ আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো? স্যার নাকি নাবীল ভাই!

নাবীলঃ দু..টাই। (নাবীল জানতো মাহি এমন ইস্টুপিট মার্কা প্রশ্ন করবেই)

মাহিঃ এ্যা..এ্যা…।

নাবীলঃ মুখ বন্ধ কর। নাহলে মোশা ঢুকবে।

মাহিঃ আচ্ছা স্যার আইডিয়াটা কার ছিলো আমাকে পড়ানোর।

নাবীলঃ তোর শফিক ভাইয়ার।

মাহি মনে মনে বলা শুরু করলো- হে আল্লাহ একটা রশি ফেলো আমি উঠে যাই তোমার কাছে। কেনো এমন ভাই আমার কপালে জুটলো?

নাবীলঃ এখন যদি তোর প্রশ্ন শেষ হয় তাহলে এবার পড়ায় মনোযোগ দেয়া যাক।

মাহিকে সব পড়া বুঝিয়ে দিয়ে নাবীল চলে গেলো। কাল আবার আসবে অনেক পড়া দিয়ে গেছে সব যাতে কমপ্লিট পায় কাল, মাহিকে বলে গেলো।

ফাঁকিবাজ মাহি হাতেনাতে ধরা

মাহি ভাবছে যদি ভালো মতো দিতে না পারি কাল আবার যেনো কি শাস্তি দেয় আল্লাহ ই যানে। সে দিনের শাস্তির কথা মাহির এখনো মনে আছে। এই তো কয়েক সপ্তাহ আগের কথা।

মাহি কোচিং এ গিয়ে শুনে আজ স্যার পড়াবে না অসুস্থ। তাই মাহি আর ওর কিছু কোচিং ফ্রেন্ডসরা প্লানিং করলো আজ পার্টি করবে ওরা।

মাহির সাথে রুহিও ছিলো, আর তিন জন ছেলে ফ্রেন্ডস। যারা মাহির সাথে কোচিং এ পড়ত। ওরাও এই এলাকায় থাকে।

মাহি ও ওর ফ্রেন্ডসরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে আর ক্লাসের কিছু বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে।

এমন সময় নাবীল বাইক নিয়ে যাবার সময় মাহিকে দেখে থেমে যায়। বাইক থেকে নেমে মাহির কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করে এখানে কি করস তুই? তোর না এখন কোচিং এ থাকার কথা।

হঠাৎ নাবীল কে দেখে মাহি বিষম খায়! ফুসকা মনে হয় ওর গলা দিয়ে নামছে না। কোন রকম খেয়ে বললো- আজ ছুটি দিয়ে দিয়েছে স্যার, সে অসুস্থ।

তাই খুশিতে ফুসকা পার্টি চলছে, তা আবার রাস্তা দাঁড়িয়ে। তাই না। (নাবীল রাগে কটমট করে কথা গুলো বলছে)

নাবীলঃ চল, আজ আমি তোকে ফুসকা খাওয়াবো। দেখি তুই কতো খেতে পারিস? মামা ১ প্লেট ফুসকা বানান কড়া জাল দিয়ে..।

এ কথা শুনে মাহি তো ভয়ে কাপতে লাগলো। আর রুহি ফুসকার প্লেট টা রেখে বিল দিতে চাইলে, নাবীল বলে… আমি দিয়ে দেবো রুহি। তোমরা যাও, নাকি তোমাদের জন্যও অর্ডার করবো।

রুহিঃ না ভাইয়া, আমাদের পেট ভরে গেছে, আমরা আসি। সব দৌঁড়, সেখান থেকে।

নাবীল ফুসকার প্লেট টা নিয়ে মাহিকে দিলো। খাও এবার।

মাহি প্লেটটার দিকে তাকিয়ে দেখলো মরিচ দিয়ে ভরা। সে নাবীলের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকলো।

নাবীলঃ তুই খাবি নাকি আমি খাইয়ে দেবো।

মাহিঃ না না আমি খাচ্ছি। বলে মাহি শুরু করলো। ওর চোখ নাক লাল হয়ে গিয়েছে, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তবুও সব খেলো।

নাবীলঃ নেক্সট টাইম এভাবে দেখলে এর থেকে বেশি হবে মনে রাখিস! বলে একটা রিকসা ডেকে ভাড়া দিয়ে দিলো রিকসা চালক কে। আর কিছু চকলেট মাহির হাতে দিয়ে দিলো।

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প শুরু

মাহি রাগবে নাকি কাঁদবে কিছু ই বুঝতে পারছে না।

-বাসায় এসে ওর ভাইকে বিচার দিচ্ছে, নাবীল কি কি করছে?

-ওর ভাই ওর সামনে এসে যা বললো এতে ও আরো অবাক হলো।

শফিকঃ নাবীল তো ঝাল খাইয়েছে, আমি থাকলে তোকে এক থাপ্পড়ও খাওয়াইতাম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুমি পার্টি করো, তা আবার এলাকার বদ ছেলেদের সাথে। আবার বিচার দিতে আসছো। যা ঘরে, যা।

মাহি দৌড় দিয়ে ঘরে চলে গেলো। সেদিন কিছুই আর খায়নি রাগ করে।

পরে মাহির বাবা এসে ওর রাগ ভাঙ্গিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো।

মাহি হঠাৎ ওর মার ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো। মনে মনে ভাবছে, লোকটা আমার সাথে এমন কেনো করে? আসলে সমস্যা কি তা ও কখনো বলে না। চলবে…

আরো পড়ুন: রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৪

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

আরো পড়ুন- বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রেমপত্র

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *