রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ৫

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৫ | Love Story

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৫: গত পর্বে দেখেছি বিয়ে বাড়িতে মাহি, তার পরিবার এবং সাথে ভাইয়ের বন্ধু নাবিলও ছিল। যদিও মাহি নাবিলকে সহ্য করতে পারত না, তো আজ দেখার পালা এই সহ্য করতে না পারা নাবিলের উপর কোন অসহ্য রকম ভালবাসা বর্তায় কিনা? তো শুরু করা যাক।

সিনেমাটিকে ভালোবাসা

শফিক ও নাবীল সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গেলো। কারণ আজ গায়ে হলুদ, আর ডেকোরেশন এর দায়িত্ব পড়লো তাদের উপর। তাই তারা সকাল সকালই কাজ শুরু করে দিলো।

মাহি লোকজনের কোলাহলের শব্দে ঘুমাতে পারছে না। বিয়ে বাড়ী বলে কথা। শব্দ তো হবেই। তাই সেও ঘুম থেকে উঠে গেলো। আজ সকালটা তার কাছে অনেক ভালো লাগছে। গ্রামের বিয়ে বাড়ীগুলো ঢাকার মতো না, কিন্তু অনেক মজা হয়। বান্ধবীদের মুখে অনেক শুনেছিলো সে। তাই সেও আজ অনেক মজা করবে ভাবছে মনে মনে।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে বাহিরে এসে দেখলো সবাই ব্যস্ত। মাহি চিন্তা করলো একটু হাটাহাটি করে চারপাশটা দেখি। কালতো রাত ছিলো কিছুই দেখতে পারিনি। রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে বাড়ী থেকে অনেকটা দূরই এসে পড়লো ও। চারদিকে ধানক্ষেত, সবুজের সমাহার। হঠাৎ পিছে ঘুড়ে মাহি ভয়ে আতকে উঠলো। সামনে তিনটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। তাদের মতলব ভালো দেখাচ্ছে না, মাহি বুঝতে পারলো। পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে ওরা বাধা দেয়। কিছু বলার আগেই ওরা মাহির হাত ধরে ফেলে। মাহি চিল্লাতে শুরু করে। এমন সময় ওদের তিনজনের মধ্যে একজন বলে- আরে সুন্দরী এমন করো কেনো। আমরা তো তুমারে মারবো না, একটু আদর করবো। এটা বলে ওরা হাসাহাসি করছে।

শফিক বার বার মাহিকে বলেছিলো, একা কোথাও না যেতে। কিন্তু মাহি এমন ভুল কিভাবে করলো। নিজের ভুলের কারণে এতো বড় বিপদে পড়তে হলো। মাহি মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে। কারণ চারপাশে কেউ নেই, যে মাহিকে সাহায্য করবে। মাহির চোখ দিয়ে ভয়ে পানি বের হচ্ছে।

ছেলেটা মাহির হাত ধরে টেনে একটা ঝোপের মধ্যে নিয়ে যেতে চাইলো। এমন সময় মাহি বুজলো তাকে কেউ ধরে রেখেছে। পেছনে তাকিয়ে দেখে নাবীল। মাহি এই প্রথম নাবীলকে দেখে এতো খুশি হলো। নাবীল মাহির অন্য হাতটা ধরে রেখছে।

ঔই কেডারে তুই? আমাগো মালের দিকে নযর দেস। জানোস আমরা কে। (ওই ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বললো)

নাবীল রাগে মাহিকে একটা থাপ্পড় মারলো। মাহিতো অবাক। গালে হাত দিয়ে নাবীল এর দিকে তাকিয়ে দেখলো নাবীলের চোখ দুটা লাল হয়ে আছে।

তোকে না বলছি একা কোথাও বের হবিনা। তুই এখানে একা একা কি করছোস। তুই কেনো কোন কথা শুনুছ না বলতো। সমস্যা কি তোর? নাবীল মাহির সাথে রাগারাগি করছে এমন সময় মাহির হাতের দিকে ওর নজর যায়। হাতটা লাল হয়ে গিয়েছে। এটা দেখে নাবীলের রাগ আরো বেরে যায়। কে তোকে ধরছে এদের মধ্যে। মাহি চুপ হয়ে আছে। এখন নাবীল জোরে একটা ধমক দিলো। মাহি ভয় পেয়ে যায়।

নায়ক নাবিল আর নায়িকা মাহি

মাহি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, যে ছেলেটা ওর হাত ধরেছিলো।

নাবীল ছেলেটার সামনে গিয়ে এমন জোরে একটা থাপ্পড় মারে যে, ছেলেটা রাস্তার অনেকটা দূরে গিয়ে পরে। নাক দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়। থাপ্পরটা এমনি জোরে ছিলো। ওদের মধ্যে আরেক জন নাবীলকে মারার জন্য এগিয়ে আসতে চাইলে নাবীল তার বুকে এমন এক লাত্থি মারে, ছেলেটা পাশের ক্ষেতে গিয়ে পরে। আর ওদের সাথে ৩য় ছেলেটা ভয়ে পালিয়ে যায়। প্রথম ছেলেটাও চলে যেতে যেতে বলে এর প্রতিশোধ আমি নেবো।

নাবীল মাহির হাত ধরে বাসায় নিয়ে এলো। এই দৃশ্য অনেকেই দেখছে গ্রামের। মাহিকে সোজা ওর ঘরে গিয়ে বসালো।

এখনো নাবীল এর রাগ কমছে না। কারণ ও সময় মতো না গেলে আজ কি হতো, তা ভেবেই ওর বুক কেপে উঠে। মাহির দিকে তাকিয়ে আছে। মাহি খাটে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই বলছে না।

নাবীল দেখলো মাহির গালে ওর আঙ্গুলের ছাপ পড়ে গেছে। তা দেখে নাবীল নিজেই নিজেকে বকছে কিভাবে মাহিকে মারতে পারলো সে? রুম থেকে বের হয়ে পাশের রুম থেকে একটা মলম নিয়ে আসলো। একটা চেয়ার নিয়ে মাহির সামনে বসলো। নাবীল মলমটা নিয়ে ওর গালে লাগাতে গেলে-

মাহিঃ আমাকে দিন, আমি নিজেই লাগাতে পারবো।

নাবীলঃ চুপ, একদম! নাকি আরো একটা থাপ্পড় খাবি। আমাকে আমার কাজ করতে দে।

নাবীল আস্তে আস্তে করে ওর গালে মলম টা লাগিয়ে দিলো।

নাবীলঃ নাস্তা করেছিস?
মাহিঃ না। (মাথা নাড়িয়ে)
নাবীলঃ ওকে আমি সীমাকে দিয়ে নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি, চুপচাপ লক্ষীমেয়ের মতো নাস্তা করে নিস। একদম কোন নাটক করবি না।

মাহি রাগি চোখে নাবীলের দিকে তাকায়।

আমিই তোকে মারবো, আবার আমিই তোকে আদর করে মলমও লাগিয়ে দেবো। এই অধিকারটা শুধু আমার। নাবীল একটু হেসে কথাটা বলে বাহিরে চলে গেলো। সীমাকে মাহির নাস্তার জন্যও বলে দিলো।

রোমান্টিক নাবিল

মাহি অবাক হয়ে নাবীলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো। মাহি ভাবতেও পারেনি নাবীল এমন কোন কথা বলবে ওকে। হঠাত সীমার ডাকে মাহির ঘোর কাটলো, সীমা ওকে নাস্তা করিয়ে দিলো।

নাবীল বাহিরে এসে শফিককে সব বললো। শফিকেরও মাহির উপর খুব রাগ আসলো। এতো করে বুজাবার পরও এই মেয়েটা এমন ভুল কেমনে করলো। রাগে মাহির কাছে যেতে চাইলে নাবীল বাধা দেয়। আজ এমনেও অনেক হইছে আর না। আমি ওকে যা বলার বলে দিয়েছি। পরে কথা বলিস। এমনেই অনেক কাজ আছে তা সারি তাড়াতাড়ি চল। সারা দিন মাহি আর রুম থেকে বের হয়নি। আসলে নাবীলকে দেখে ভীষণ লজ্জা লাগছে ওর। তাই সারা দিন সীমার সাথেই ছিলো।

রাতে হলুদের জন্য একটা হলুদ জামদানি শাড়ী পড়লো। মুট ভরে চুড়ি পড়লো। হালকা সাজে গাড় লিপস্টিক দিলো। মাথার সামনের চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে বেধে নিলো। পেছনোর চুলগুলো কাটা দিয়ে খোপা করে নিলো। এর থেকে বেশি সাজ ওর পছন্দ না।

এ দিকে নাবীল এবং শফিকও তৈরি হয়ে গেলো। শফিক আগেই বের হলো। নাবীল তৈরি হয়ে বাহির হতেই দেখলো মাহি শাড়ি ঠিক করতে করতে রুম থেকে বের হচ্ছে। সামনে যে নাবীল দাঁড়িয়ে আছে তা ওর খেয়ালই নাই। নাবীলের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে নাবীল ধরে ফেলে। নাবীলের এক হাত মাহির কোমড়ে আর এক হাত দিয়ে মাহির হাত ধরে আছে।

মাহিঃ আল্লারে বাঁচাও! (ভয়ে মাহি চোখ বন্ধ করে ফেললো)

কিছুক্ষণ পর মাহি চোখ খুলে দেখে নাবীল ওকে ধরে রেখেছে। তা না হলে পড়ে কোমর আজ যেতো।

নাবীল মাহিকে সোজা করে দাঁড় করালো। কোথায় চোখ রেখে হাটস বলতো? এখন যদি আমি না থাকতাম কি হতো?

আপনে ছিলেন বলেই পড়ে যেতে নিয়েছি, তা না হলেতো আমি পড়তামই না। ভুল আপনার ছিলো, আর আমাকে বকছেন শুধু শুধু। আর আপনে না ধরলে অন্য কেউ ধরতো, কেউনা কেউ বাঁচাতো আমাকে।

মাহির দূর্বলতা

মাহি এক দমে কথাগুলো বলে নাবীলের দিকে তাকালো।

নাবীলের চোখ ২টা লাল হয়ে গিয়েছে রাগে। মাহিকে অন্য কেউ ধরতো এ কথাটা শুনতেই নাবীলের রাগ চরম মাত্রায় পৌছে গেছে। মাহির হাতটা ধরে টেনে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। মাহি এবার ভয় পেয়ে গেলো। নাবীল মাহির দিকে এক পা এক পা করে এগাতে লাগলো মাহি ভয়ে পিছিয়ে যেতে লাগলো। ভয়ে মাহির মুখ দিয়ে কথাও বের হচ্ছে না। কারণ মাহি নাবীলের এমন রুপ আগে দেখেনি কোন দিন। পেছনের দেয়ালে মাহির পিঠ ঠেকে গেলো।

মাহির কাধের দুপাশে হাত রেখে মাহিকে জিঙ্গেস করলো,

নাবীলঃ কি বললি তুই! আবার একটু বলতো।

মাহিঃ আ..মি..মি কিকিকি.. বললাম। (মাহি ভয়ে ভয়ে বললো)

তোকে অন্য কেউ ধরবে মানে। কেউ তোকে ধরলে আমি তাকে জ্যান্ত কবর দেবো। আর তুই কাউকে ধরলে তোর হাতটা কেটে দেবো, মনে রাখিস। আর এতো সেজেগুজে কই যাস। গায়ে হলুদ তোর বোনের, তোর না। আর এতো বড় কেনো ব্লাউজ এর গলা, শরীর দেখাতে খুব ভালো লাগে, তাই না!

নাবীল মাহির খোপাটা খুলে পিঠটা ঢেকে দিলো চুল দিয়ে। এমন বড় গলার ব্লাউজ আর কখনো যাতে পরতে না দেখি। এ কথা বলে মাহির কপালে একটা ভালোবাসার পড়স বসিয়ে দিলো। মাহি হালকা কেঁপে উঠলো। মাহি এখনো হতোভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আর নাবীল চলে গেলো।

অল্প অল্প প্রেমের গল্প

হঠাৎ নাবীল আবার আসলো।

নাবীলঃ কি রে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি। নাকি বাহিরে আসবি ,শফিক ডাকছে তোকে।

নাবীলের কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো মাহির। একটু আগে যা ঘটলো তা কি সত্য ছিলো।

মাহি বাহিরে গিয়ে দেখলো উঠান ভর্তি মানুষ। মাহি এদিক ওদিক তাকিয়ে সব কিছু দেখতে লাগলো, কারণ কাউকে ও তেমন ভালো করে চিনে না। হঠাৎ দেখলো নাবীলকে ঘিড়ে অনেকগুলো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর ও মেয়েগুলোর সাথে হাসাহাসি করছে। মাহির গা জ্বলে যাচ্ছে। ঢং আমাকে বলে কোনো ছেলের আশেপাশেও যাতে না যাই। আর নিজে মেয়েদের মাঝে বসে রং তামাসা করছে। (মাহি মনে মনে নাবীলের চৌদ্দগুষ্টিকে বকছে)

নাবীল আড় চোখ দিয়ে সব দেখছে, আর হাসছে।

মাহি রেগে গিয়ে সীমার পাশেগিয়ে বসলো, সবাই হলুদ দেয়া আরম্ভ করলো।

আর নাবীল শুধু মাহির দিকেই তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। আজ ওকে পরীর মতো লাগছে। এভাবে চলতে থাকলে নিজেকে ওর কাছ থেকে দূরে রাখা কস্ট হয়ে পড়বে। এ মেয়েটা কি এখনো বুঝতে পেরেছে আমি ওকে কতো ভালোবাসি। এক নাম্বারের গর্দভ, আমি খুব ভালো করেই জানি! ও হয়তো এখনো বুঝেনি। চলবে…

আরো পড়ুন: রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৬

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *