ক্রাশের সাথে বিয়ে – বর কনের গল্প

ক্রাশের সাথে বিয়ে – বর কনের গল্প: আমাকে তো বিয়ের পর মিষ্টি খেতেই দিল না। তাই আমিই খেয়ে নিলাম। বাআই রা ওয়ে, আজকের সব মিষ্টি থেকে এটা বেশি মিষ্টি ছিল।


মূলগল্প

~ আপনার জন্য আমি আমার থেকেও ভালো একজন পাত্র খুজে দেব। তাও প্লিজ আপনি গিয়ে বলেন যে আপনি আমাকে পছন্দ করেন নি। বা আমি ভালো ছেলে না, আপনার জন্য পারফেক্ট না। এ
~ কেন?
~ আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।
~ তো?

~ আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আমার আম্মু আপনার সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
একদমে বলে ফেলল রিয়ান। বলে মাথা তুলে সামনে থাকা মেয়েটার দিকে তাকাল। সে যেন এবার ওর মায়ায় আটকে যাচ্ছে। নিজের চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে। বুঝতে পারছে না যে তার মনে কি চলছে? অবশ্য জখন প্রথম দেখেছিল তখনও এমন অনুভূতি হয়েছিল তার। নিজের মাথা হালকা নাড়াচাড়া করে আবার মাথা নিচু করল। কিন্তু
~ সোনা বাবু আমার। আমার সাথে মজা করছ না? ডোন্ট ওয়ারী বেবি, তোমার গার্লফ্রেন্ডের ছবি আমি আমাদের বিয়ের পর ঘরে বড় করে ঝুলিয়ে রাখব। তখন মন ভরে দেখো কেমন , জানু?
সাথির কথায় রিয়ান টাস্কি খেলো। কি বলছে মেয়েটা? প্রথম দেখায় এতদূর? এ তো রবি নেটওয়ার্কের মতো। নাকি বাংলালিঙ্ক নেটওয়ার্ক?

তারপর রিয়ান কে আর কোন সুযোগ না দিয়ে সাথি রুম থেকে এক দৌড়ে পগারপা। সোজা নিজের মায়ের কানের কাছে গিয়ে বলল,
~ আমি রাজি।

কেনই বা বলবে না? ও যেদিন রিয়ানকে প্রথম দেখেছিল রাস্তায়, সেদিনই ক্রাশ খেয়েছিল। রইয়ানকে ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম, টুইটার স্ন্যাপচ্যাট সবকিছুতেই ফলো দিয়ে রেখেছে তারপর। রোজ ওই একই রাস্তা দিয়ে আসতো শুধু একবার রিয়ানকে দেখার জন্য। কিন্তু কথা বলার মতো সাহস ওর ছিল না। ওর ফ্রেন্ড ঝুম্পাও তখন সাথে থাকত। কিন্তু সে কয়েকবার সাথিকে সাহস জুগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাও সাথি ওর সাথে কথা বলে নি। ভাবত, যদি রিয়ান ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়, তাহলে তো আর সে রিয়ানকে দেখতে পারবে না। তাই আর কিছু হয় নি।

কিন্তু রিয়ানের মা আর সাথির মা যে একে অপরকে চিনত, সেটা সাথি জানত না। কিন্তু আজ হঠাৎ সাথির মা সাথিকে রেডি করিয়ে দিল।

প্রশ্ন করেছিল সাথি। কিন্তু কিছু বলেন নি। পরে বেল বাজতেই দরজা খুলে প্রথমে রিয়ানকে দেখে। দেখে পরের ১৫ মিনিট সেখানে ওভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল।

এদিকে এভাবে তাদের দেখে সাথির মা সাথিকে কান ধরে টেনে ঘরে নিয়ে যায় আর সাথে ওদের রুমে বসতে বলে।

সাথি আবার বলে,
~ আম্মু , আমাকে এভাবে সাজিয়েছ কেন? আর ওরা কারা?
~ ওনারা আজ তোকে দেখতে এসেছে। পছন্দ হলে বিয়ে ঠিক করবে।
বলেই চলে যেতে যান। সাথি ওর মায়ের হাত ধরে আটকায় আর মুখ গোমড়া করে তাকায়। মেয়ের এমন চেহারা দেখে মা ঘাবড়ে যান। কিন্তু তাকে অবাক করে সাথি ওর মায়ের দুই গালে হাত দিয়ে ‘ওলে লে লে আমার সুইট আম্মু’ বলে টানা শুরু করে।

তারপর ওকে নিয়ে ওদের সামনে বসানো হয়। আগে থেকেই অ্যান্টিকে চিনত আর রিয়ানের মাও সাথিকে চিনত। তাই আর কিছু না করে হ্যাঁ বলে দেয়। এদিকে রিয়ান আর সাথিকে কথা বলতে পাঠায়। কারণ ওরা আগে কখনো একে অপরের সাথে কথা বলে নি। তারপর যা যা হল, তাতে রিয়ান টাস্কি খেলো।

এদিকে মেয়ে হ্যাঁ বলে দিয়েছে, এটা আলোর বেগ মানে ৩X১০^৮ মিটার/সেকেন্ড এর থেকেও বেশি দ্রুত সবার মাঝে ছড়াল। সাথির মায়ের কান থেকে সাথির বাবার কানে পৌছুতেই তিনি সবার মাঝে সেটা বলে দিলেন।

এদিকে ‘আলহামদুলিল্লাহ্‌’ বলার রোল পড়ে গেল।

আর অন্যদিকে রিয়ান এখনো সেখানেই বসে আছে। কি হল আসলে? পরে সবার আওয়াজ শুনে বুঝতে পারল ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। রিয়ান বাঁকা হাসল।

রিয়ান আর সাথি পাশাপাশি বসে আছে। কিছুক্ষণ আগে ওদের বিয়ে শেষ হয়েছে। কবুল বলার পর্ব আর সাইন করা শেষ। এখন সবাই মিষ্টিমুখ করছে। সাথিকেও মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে গেল ওর আম্মু। সাথির মিষ্টি খুব পছন্দ। আর ওর বিয়েতে ওকে মনভরে মিষ্টি খেতে না দিলে নিশ্চিত তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে দিবে তাই।

হঠাৎ তার কানে একটা শব্দ ভেসে আসতেই সে থেমে গেল।
~ কনগ্রাটুলেশনস।

এটা রিয়ানের আওয়াজ ছিল। তখন সে মিষ্টি খাচ্ছিল। কিছুক্ষণ আগেই তার আম্মু খাইয়ে দিয়ে গিয়েছিল। থেমে রিয়ানের দিকে যেই না তাকাতে যাবে ,তার আগেই রিয়ান ওর ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা মিষ্টি নিজের ঠোঁট লাগিয়ে খেয়ে নিল। বড়রা কেউ না দেখলেও ওদের সমবয়সী ফ্রেন্ডরা দেখে ফেলে আর সবাই একসাথে ‘ওও ও’ বলে চিৎকার করে ওঠে।

পরে বড়রা যখন জজ্ঞেস করে যে কি হয়েছে, তখন ওরা বলে যে ওদের ফ্রেন্ড এর বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাই পরাধীন জীবনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।

একজন ফ্রেন্ড তো এই মুহূর্তের ছবিও তুলে ফেলেছে। আসলে ও নিজের অজান্তেই তুলেছে। ক্যামেরা ঘুরিয়ে বর কনের দিকে নিতেই এটা দেখে ফেলে আর অজান্তে ওর বাটনে প্রেস হয়ে যায়।

এদিকে রিয়ান মিটমিটয়ে হাসছে। সাথি অবাকের চরম পর্যায় থেকে এখনো বের হতে পারে নি। তবু জিজ্ঞেস করল,
~ এটা কি ছিল?
~ আমাকে তো বিয়ের পর মিষ্টি খেতেই দিল না। তাই আমিই খেয়ে নিলাম। বাআই রা ওয়ে, আজকের সব মিষ্টি থেকে এটা বেশি মিষ্টি ছিল।
~ কেন?
~ সেটা কি আমি আবার করে দেখাব?
~ নাহ নাহ।

~ একটা সিক্রেট বলি, আজ আমি আমার ক্রাশ কে বিয়ে করলাম। আই এম সো হ্যাপি। আর একটা কথা। তোমাকে আমি জোর করেছি আমাকে বিয়ে করতে। কারণ তুমি আমার ক্রাশ।
~ মানে কি?
~ ওকে আমি পুরো ঘটনা বলি। আমি তোমাকে প্রথম দেখি তোমার বাসায়, সেদিন আমি এসেছিলাম আম্মুর সাথে বাট তুমি তখন ঘুমিয়ে ছিলে বলে দেখনি। তোমাকে দেখেই তোমার উপর ক্রাশ খেয়েছিলাম। খুব পছন্দ হয়েছিল তোমাকে। পরে কৌশলে অ্যান্টির কাছ থেকে তোমার সব খবর নিই। দেন তোমাকে ফলো করতাম। কিন্তু একদিন তুমি আমাকে দেখে ফেলো।

সেদিন ভেবছিলাম আমি ধরা পড়ে গিয়েছি। কিন্তু আমার চিন্তা ভুল করে তুমি আমাকে ফলো করে শুরু করলে। আমার জন্য ইজি হয়ে গেল। কিছুদিন আগে আম্মুই আমাকে বলেছিল তোমাকে বিয়ে করার কথা আমি রাজি হয়ে যাই। তবে তোমাকে ফলো করতে করতে একটা জিনিস খেয়াল করছিলাম। তুমি অকারনে বেশি মানুষের উপর ক্রাশ খাও। তখন তোমার গালে কষে চোর মারার ইচ্ছা টা যে কত কষ্ট করে দমিয়ে রেখেছি, একমাত্র আমিই জানি। তাই বুদ্ধি করে একটা কাল্পনিক জিএফ আনলাম। আর তুমি আমার চিন্তা মতই একেবারে পারমানেন্টলি রাজি হয়ে গেলে। সিম্পল।

সব কথা শুনে সাথি কাশা শুরু করল। রিয়ান ওর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিল। সেই পানি শেষ করে কিছুক্ষণ পর সাথি বলে উঠল,
~ আপনি আমাকে থাপ্পড় মারতে চেয়েছেন?
~ ওটা তো
~ যাই হোক, আমার ক্রাশ আমার উপর ক্রাশ খেয়েছে। ভেবেই আমার কি খুশি লাগছে। পারলে তো আমি এখনই উড়া শুরু করে দিই।
~ উড়ো।

~ যাহ্‌। শেষ মেশ আমার ক্রাশেরসাথেবিয়ে হল আমার। ইয়েয়েয়ে।
বলে সাথি হালকা চেঁচিয়ে উঠতে গেলে রিয়ান ওর মুখে হাত চেপে ধরে টেনে সাথিকে বসিয়ে দেয়।
তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
~ পাগলি একটা।
~ এখন তো আপনারই। কি আর করার? আগে হলেও আমিই বিয়েটা ভেঙে দিতাম। কিন্তু আপনি এমন ব্যাবস্থা করলেন।
~ বেশ করেছি।

লেখা – সাদিয়া সৃষ্টি

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “ক্রাশের সাথে বিয়ে – বর কনের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – ভাল্লাগে না – এ কেমন ভালোবাসা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *