বউয়ের ভালোবাসা ১

বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ১ | Bouer Valobasha

বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ১: সময় কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা একমাত্র সময়ই বলে দেয়। প্রাণপ্রিয় ভালবাসার মানুষটিকে অন্যের সাথে কেউ শেয়ার করতে চায় না, কিন্তু ঐ যে বলালম সময়ের ব্যাপার। সুখের জীবনে হটাৎ কালবৈশাখী ঝড় অনেক সহ্য করতে পারে না, কিন্তু কি আর করার সহ্য করতে হয়, বেঁচে থাকতে হয়। এমনি এক অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে লেখক সিমলা নীল একটি বাস্তব জীবন অবলম্বনে গল্প লিখেছেন। চলুন শুরু করা যাক।

আজ স্বামীর বিয়ে

আজ আমার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়েটা দিচ্ছি। কতজনের এমন ভাগ্য হয় বলেন।

বিয়ের সব দায়িত্ব আমি নিজে নিয়েছি। খুব কষ্ট হচ্ছে, নিজের আত্মাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু আমি যে নিরুপায়! আমার জন্য তাকে পিতৃত্বের সুখ থেকে বঞ্চিত করতে পারি না আমি। যতই কষ্ট হোক আমাকে শক্ত থাকতেই হবে।

(ও আামার পরিচয়টাই তো দেওয়া হয়নি। আমি নীলিমা জান্নাতি। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করেন, আর মা গৃহিণী। আমি আর আমার বড় ভাই। এই নিয়ে আমাদের ছোট সংসার)

ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো। নতুন বউকে নিয়ে সবাই আমাদের রুমে গেলাম। ও ভুলেই গেছি, ওটা তো আজ থেকে আমার ঘর না। নতুন বউয়ের ঘর নতুন বউয়ের সংসার।

(নতুন বউয়ের নাম জিনিয়া ইসলাম। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ছিল। কিন্তু ছোটবেলায় ওর মা বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। ভাগ্যক্রমে জিনিয়া বেঁচে যায়। খুব ভালো মেয়ে। ওর ব্যাপারে যা শুনেছি ভালোই মেয়েটা। ওর মামা মামির কাছেই সে বড় হয়েছে।)

জিনিয়াকে কাব্যের রুমে দিয়ে গেস্ট রুমে চলে আসলাম। বর্তমানে এটাই আমার আশ্রয়। খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবো এই বাড়ি থেকে। পুরনো দিনের কথা খুব মনে পরছে খুব কষ্ট হচ্ছে।

ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার আগে আমার মৃত্যু দিলে না কেন?

পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো চোখে ভাসছে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। চোখের জল যেন বাঁধ মানছেই না।

ভাইয়ের কষ্টের গল্প

৩ বছর আগের কথা…

আমি শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে কিন্তু খুব চঞ্চল। সবার আদরের। ৪ জনের ছোট সংসার আমাদের। ছোটবেলা থাকেই যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। কোনো অপূর্ণতা রাখেনি কেউ। স্কুল লাইফটা বাবার স্কুলেই কাটিয়েছি। বাবার সাথেই স্কুলে যেতাম, বাবার সাথেই বাড়িতে ফিরতাম। খুব ভালোই কেটেছে স্কুল জীবন। ইন্টারে যখন উঠলাম ভাইয়া কলেজে দিয়ে আসতো নিয়ে আসতো।

তাদের একটাই ভয় রাস্তায় যদি কোনো দূর্ঘটনা ঘটে তাই একা ছারতো না সবার আদরের ছিলাম তাই হয়তো।

এলাকার সব ছেলেরাই আমাকে পছন্দ করতো। কিন্তু ভাইয়ার ভয়ে কেউ আজ পর্যন্ত বিরক্ত করার সাহস পায়নি। আমার ভাইয়া একটা কোম্পানিতে চাকরি করে। তাই ও মাঝেমাঝে সময় পায়না নিয়ে আসতে। তখন একাই আসতাম। খুব ভালোই কাটছিল দিনগুলো।

সেকেণ্ড ইয়ারে সবে উঠলাম। একদিন হাত খরচের টাকার জন্য ভাইয়ার রুমে গেলাম। ভাইয়া ওপাশ হয়ে শুয়ে আছে।

আমি বললাম,

আমিঃ ভাইয়া, এই অসময়ে সুয়ে আছো যে?

(আমার কথা সুনে চোখের পানি মুছতে চেষ্টা করল!)

আমিঃ ভাইয়া, তুমি কাঁদছো কেন? কি হয়েছে তোমার?

ভাইয়াঃ কিছু না রে! সুয়ে আছি তো তাই চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।

আমিঃ তুমি আমাকে বোকা বানাতে চাচ্ছো? বলো কি হয়েছে তোমার? তুমি কাঁদছো কেন? কি অবস্থা করেছো নিজের দেখছো তুমি?

ভাইয়াঃ আরে পাগলি বোন, কিছুই হয়নি আমার।

আমিঃ তুমি বলবে না, তাই তো! দাঁড়াও মা কে ডাকছি মা…মা…(মুখ চেপে ধরেছে)

ভাইয়াঃ আচ্ছা বলছি, মা কে ডাকিস না, প্লিজ।

আমিঃ ওকে। এখন বলোতো কাঁদছো কেন? কি হয়েছে আমার ভাইটার?

ভাইয়াঃ আমি একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসি রে। কিন্তু ওর পরিবার ওকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি কি করবো না করবো কিছুই বুঝতেছি না।

আমিঃ ও এই বেপার! লুকায় লুকায় এইসব করো তুমি। এতে কান্নাকাটি না করে ভাবো কি করবে? বাচ্চা নাকি তুমি যে কাদছো?

ভাইয়াঃ কি করবো জানি না! শুধু এটুকু জানি ওকে ছাড়া ভালো থাকবো না আমি।

আমিঃ তুমি মা বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে ওদের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাও আমি আছি তোমার পাশে।

ভাইয়াঃ ওরা কি মানবে? কেমনে কি করবো কিছুই বুঝতেছি না।

আমিঃ আচ্ছা, তুমি এত ভেবোনা। দেখছি কি করা যায়। আমার ভাইয়া এত কষ্ট পাবে তা তো আমি মানতে পারবো না।

ভাইয়াঃ তুই ছোট মানুষ কি করবি?

আমিঃ আগে আগে দেখো হো তা হে ক্যায়া। এখন আমি আসি।

ভাইয়াঃ আচ্ছা।

ভাই বোনের ভালবাসা

চলে আসলাম আমার রুমে ভাইয়াকে কখনো এভাবে কাঁদতে দেখিনি। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য। ও যে চাপা সভাবের আমাকেই কিছু করতে হবে।

কিন্তু করবো তো করবোটা কি? মা কে বলতে হবে সবটা।

রান্নাঘরে মা আছে। তাই রান্নাঘরে গেলাম মা কে বললাম,

আমিঃ মা তোমার সাথে কিছু কথা আছে।

মাঃ কি কথা রে মা?

আমিঃ যা বলবো ঠান্ডা মাথায় শুনবে রাগ করতে পারবে না।

মাঃ আচ্ছা বল দেখি, কি কথা?

আমিঃ ভাইয়া একটা মেয়েকে ভালোবাসে। কিন্তু মেয়েটির পরিবার মেয়েটিকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। ভাইয়া মেয়েটিকে খুব ভালোবাসে মা। প্লিজ, কিছু একটা করো। ভাইয়া খুব কষ্টে আছে।

মাঃ কোন মেয়ে? আমাকে তো কিছুই জানায়নি সে। মেয়েটা কেমন তার পরিবার কেমন কিছুই তো জানি না আমরা?

আমিঃ তোমার ছেলে নিশ্চয়ই কোনো খারাপ মেয়েকে ভালোবাসে নি। সব থেকে বড় কথা, ভাইয়া কিসে খুশি থাকবে, ওর সুখটাই আসল। প্লিজ মা, বাবাকে রাজি করাও। মেয়েটার বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাই দেখা যাক কি হয়।

আর ভাইয়া জব করে, আমাদের ফামিলিও ভালো। ওরা নিশ্চয়ই রাজি হবে।

মাঃ আচ্ছা দেখি, তোর বাবার সাথে কথা বলে।

আমিঃ আচ্ছা মা, আমি আসছি। ভাবীর পুরো পরিচয়টা জেনে নেই।

মাঃ আচ্ছা যা। এখনও কিন্তু ভাবী হয়নি।

আমিঃ আজ হয়নি কাল হবে।

ভাইয়ার রুমে এসে বললাম,

আমিঃ ভাইয়া আমাকে ট্যাক্স দেও?

ভাইয়াঃ কিসের ট্যাক্স দেব?

আমিঃ মা’কে রাজি করালাম। কত কাট খড় পোড়াতে হলো আমার।

ভাইয়াঃ সত্যি মা রাজি হয়েছে?।

আমিঃ হুম। বাবা আসলে বাবার সাথে কথা বলবে বলেছে।

ভাইয়াঃ বাবা রাজি হবে তো?

আমিঃ চিন্তা করিও না, হয়ে যাবে।

(পকেট থেকে ৫০০০ টাকা দিয়ে বলল)

ভাইয়াঃ এই নে তোর ট্যাক্স। তুই না থাকলে কিছুই সম্ভব ছিল না।

আমিঃ হয়েছে! এখন ভাবীর পুরো পরিচয় বলো, লাগবে?

(সব খুলে বললো ভাইয়া। ভাবীর নাম নীলাসা, অর্নাস ২য় বর্ষের ছাত্রী। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে)

আমিঃ বাহ মিল আছে আমাদের। আমি নীলিমা, তুমি নীল আর ভাবি নীলাসা। ছবি দেখাও?

(ভাইয়া ছবি দেখালো। কয়েকটা ছবি আমার ফোনেও নিলাম)

ভাইয়াঃ কেমন লাগলো তোর ভাবিকে?

আমিঃ অনেক সুন্দর তো, তোমার পছন্দ আছে বটে।

ভাইয়াঃ দেখতে হবে না ভাইটা কার?

আমিঃ হুম আমার ভাই। আমি আসছি মা কে ছবিটা দেখাই।

ভাইয়াঃ আচ্ছা।

আমাদের সুখী পরিবার

মা কে ছবিটা দেখালাম, মায়েরও পছন্দ হয়েছে।

রাতে বাবা আসলে বাবাকে মা সবটা খুলে বললো।

বাবা শুধু বলেছে ওদের সুখে আমাদের সুখ। আমার কোনো আপত্তি নেই।

রাতের খাবার একসাথেই খাই সবাই।

আজও সবাই খেতে বসেছি, ভাইয়া খুব ভয়ে আছে। সেটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

আমি হেসে বললাম,

আমিঃ ভাইয়া তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন?

(ভাইয়া নিচের দিকে মুখ করে খাচ্ছেই)

বাবা বললো,

বাবাঃ তোর পছন্দেই আমাদের পছন্দ। শুভ কাজে দেরি করতে নেই। আমরা আগামী শুক্রবার মেয়ে দেখতে যাবো।

সবার খাওয়া শেষে ভাইয়া আমকে বললো,

ভাইয়াঃ তোর জন্যই সব সম্ভব হয়েছে রে। তুই সবটা ম্যানেজ না করলে আমার যে কি হতো রে কে জানে?

আমিঃ এভাবে বলো না ভাইয়া, এটা আমার কর্তব্য। অনেকদিন পর একটা বিয়ে খাবো অনেক আনন্দ করবো। ভাবিকে পেয়ে আমাকে ভুলে যেও না আবার।

ভাইয়াঃ না রে তুই আমার একমাত্র আদরের ছোট্ট বোন তোকে কখনও ভুলি।

আমিঃ হুম! দেখাই যাবে।

ভাইয়াঃ দেখে নিস।

ভাইয়ের বিয়ে

এভাবে চলতে থাকলো দিন ভাইয়ার বিয়েও ঠিক হয়ে গেল।

২১শে ফেব্রুয়ারী ভাইয়ার বিয়ে। সবাই খুব খুশি।

বিয়ের অনুষ্ঠান কেনাকাটা নিয়ে তোরজোর শুরু হয়ে গেছে।

আজ ভাইয়ার বিয়ে খুশিতে ভোরে গেছে পুরো বাড়ি। সব অনুষ্ঠান শেষ করে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। আমি আর আমার বান্ধবী অহনা নতুন ভাবিকে ভাইয়ার রুমে নিয়ে আসলাম।

আমি বললাম,

আমিঃ এটা আজ থেকে তোমার রুম, তোমার বাড়ি, তোমার সংসার। নিজের মত করে গুছিয়ে নেও এখন থেকেই। আর আমার একমাত্র ভাইকে কখনও কষ্ট দিও না। ও খুব ভালো, তোমায় সুখে রাখবে।

ভাবীঃ জানি রে তোমাদের সুখে রাখার দায়িত্ব আজ থেকে আমার।

আমিঃ হুম।

অনেক গল্প মজা করলাম সবাই মিলে।

ভাইয়া এসে বললো…চলবে…

পরের পর্ব- বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *