একজীবনে শুধু তুমি – তোমাকে নিয়ে কিছু কথার বাকি

একজীবনে শুধু তুমি – তোমাকে নিয়ে কিছু কথার: নেহালের কথা শুনে হৃদয়টা ধক করে উঠলো। ঘৃণার আড়ালের ভালোবাসাটা দেখাতে চাইনা। তবে সে আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাক এটা কখনো চাইনি৷ দুরে থাকি তবুও সে থাকুক আমার জীবনে, কোনো মায়ায়, কোনো পবিত্র বন্ধনে।


পর্ব ১

ইন্টারভিউ বোর্ডে নেহালকে দেখে ভীষণ অবাক হলাম।

আজ কে চাকরির জন্য এখানে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম।

এই কম্পানির এমডি যে নেহাল হবে সেটা ভাবতেই পারিনি।
খুব কষ্ট করে কান্না আটকে রেখেছি।

চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে,
“কেন ফিরিয়ে দিয়েছিলে আমাকে? তোমাকে তো ভালোই বেসেছিলাম। এটা কি আমার অপরাধ? দেখ না তোমার মায়ায় এমনভাবে জড়িয়ে আছি যে আজ অবধি কারোরই হইনি।”
কিন্তু আপসোস আমি কিছুই বলতে পারছিনা।

ইন্টারভিউ শেষ নেহাল বলল,

মিসেস রাত্রি আপনি একটু আমার কেবিনে আসুন। গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে।

সরি স্যার, আপনি ভুল করছেন মিসেস না, মিস রাত্রি। আর হ্যা আপনার সাথে আমার কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা থাকতে পারে বলেতো আমার মনে হয়না।

রাত্রি!

করুন চোখে তাকালো।
কিন্তু তার চোখের দিকে চোখ আমি রাখতে পারলাম না।
কেন যেন মনে হচ্ছে এই চোখে সেই মায়া রয়েছে যা ছিলো কয়েক বছর আগে।
তাই চোখ নামিয়ে নিলাম।

পাশথেকে আরেকজন বলল,

স্যার, আপনি কি ওনাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনেন?

হ্যা, মানে না।

বুঝলাম নেহাল বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
তাই এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব বের হওয়ায় ভালো।

এক্সকিউজ মি স্যার আমি আসি। বলে নিজের ফাইলের ফিতাটা লাগিয়ে বের হতে নিলাম।

নেহাল আবার রিকুয়েষ্ট করলো।
ফেলতে পারলাম না যেমনটা ফেলতে পারিনি ৫ বছর আগে। পার্থক্য একটাই এখনকার অনুরোধ হলো কথা বলতে চাওয়ার আর তখনকার অনুরোধ ছিলো আর যেন কথা না বলি সেটার।

নেহালের পিছন পিছনে তার কেবিনের দিকে যেতে লাগলাম, ওর কর্মী দুইটা কেমন যেন সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখলো আমাকে। কিন্তু আমার এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।

নেহালের কেবিনে,

কেমন আছো রাত্রি?

“কেমন আছো তুমি কি জানো না।
জীবন্ত লাশ হয়ে আছি।
তোমাকে ছাড়া কিভাবে আছি তা বোঝানোর ভাষা নেই আমার।
তোমার কি একটুও কষ্ট হয়না আমার জন্য?
এতো পাষাণ কেন তুমি? যদি আমাকে ছেড়েই দিবে তাহলে সেই ৯ বছর আগে মিথ্যা মায়ায় কেন জড়িয়েছিলে।
কিন্তু মনের কথা মনেই রেখে দিলাম।”

জি, আমি খুব ভালো আছি।

কত বছর পর দেখা বলো! কিন্তু রাত্রি চৌধুরীর হঠাৎ চাকরির কেন প্রয়োজন?
যার নিজের বাবার কম্পানিতেই ১৫০০০ কর্মচারী রয়েছে।

সেটা আপনাকে জানাতে চাইনা আমি।

তুমি না জানাতে চাইলে জোর করবো না। কিন্তু তুমি কি জানো আমি তোমাকে অনেক খুজেছি? তোমার বাসাতে গিয়ে দেখি সেই বাসার মালিক এখন অন্যকেও।
কোনো ভাবেই আমি তোমাদের খোজ পাইনি। পাগলের মত খুজেছি তোমাকে।
আমি কোনো গুপ্তধন নই যে আমাকে আপনি পাগলের মত খুজবেন, মিস্টার নেহাল।

নেহাল মুচকি একটা হাসি দিলো।
এটা সাধারণ হাসি না। কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি আছে এই হাসিতে। যা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই।

তুমি জানো না তোমাকে কেন খুজেছি?

আজব! আমি কি ভাবে জানবো আপনি আমাকে কি জন্য খুজেছেন?

নেহালের এই কথা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। নিজেই সম্পর্কের ইতি টেনে আবার নিজেই খুজেছে। বিষয় টা হাস্যকর।

না আমি জানি না আপনি আমাকে কেন খুজেছেন।
আমার ইন্টারভিউ কেমন হলো আমি জানিনা। তবে যদি ভালোও হয় তাহলে দয়া করে আমাকে সিলেক্ট করবেন না।

তোমার রাগ আর অভিমান সেই আগের মতই আছে।

মনে আবারও বলে উঠলো “শুধু রাগ আর অভিমান না নেহাল, আমার ভালোবাসাটাও যে আগের মতই আছে। শুধু তুমি সেটা দেখতে পাচ্ছোনা”।

আপনি আমার এমন কেও না যার জন্য আমার রাগ বা অভিমান কিছু থাকবে।

কে! সেতো তুমিই ভালো জানো।

বললাম তো জানিনা। আমি এখন আসি।

-রাত্রি। আমি জানিনা কি হয়েছে তোমার সাথে। কিন্তু তুমি যেহেতু বলতে চাওনা তবে একটা কথা বলছি, তুমি যেহেতু আমার এখানে জবের জন্য এসেছিলে জবটা আমি তোমাকে দিচ্ছি।

আমি কোনো ভিকারি না যে আমার জন্য আপনার এতো দয়া দেখাতে হবে।
আমার যোগ্যতায় ইনশাআল্লাহ আমি অন্য অনেক জব পেয়ে যাবো।
আর হ্যা যদি জানতাম আপনি এখানে আছেন তাহলে আমি কোনোদিন এই অফিসের ত্রিসিমানায় পা দিতাম না। আপনার দয়া আমার চাইনা। আমি এখন আসি।

বলে বের হতে নিলাম নেহাল আমার হাতটা ধরে ফেলল।

দাড়াও রাত্রি যেওনা। এটা দয়া না রাত্রি।

হাতটা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে নিলাম নেহালের হাত থেকে।

এটা দয়া না তো কি মিস্টার নেহাল। আরেকটা কথা। এইযে আপনি ইন্টারভিউ এর পর কেবিনে পারসোনালি কথা বলছেন এর পর যদি আমি আপনার অফিসে কাজ করি তাহলে সবাই কি ভাবে বিষয়টা নিবে বুঝতে পারছেন?

কারো পরোয়া আমি করি না।

কিন্তু আমি করি মিস্টার নেহাল। আপনি একটা পুরুষ মানুষ সব কিছু ফেলে দিয়ে সামনে আগাতে পারেন কিন্তু আমি পারিনা। কিছু সৃতি আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে দেয়না। তাছাড়া লোকজনের কথা আমি আর শুনতে চাইনা।

রাত্রি আগেই এত কিছু ভেবে ফেলোনা। আমিতো আছি তোমার সাথে।

আমার সাথে না থেকে নিজের স্ত্রীর পাসে থাকেন তাহলে সে খুশি হবে।

সেটা তো থাকবোই। তোমাকেও সাহায্য করতে চাই।

আমার কথা যে জবাব নেহাল দিলো তাতে করে বুঝেগেছি যে তার বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে কেন সে আমার প্রতি এত কেয়ার দেখাচ্ছে।

আমি এখন আসি।
আর হ্যা আপনি যতই চাকরিটা দিতে চাননা কেন আমি এইটা করবো না।

দেখা যাক, চাকরিটা করো কি না!

মিস্টার নেহাল ভুলে যাবেন না। আমার প্রতি আপনার কোনো অধিকার নেয়।

যদি বলি আছি। আমাদের সম্পর্ক টা….

যেটা আপনি শেষ করেছেন।
এখন তো আপনার চরিত্রের উপর সন্দেহ হচ্ছে।
নিজের স্ত্রীর প্রতি সম্পর্ক, ভালোবাসা দেখাবেন।
একটা অচেনা মেয়েকে এতো আদিখ্যেতা দেখাবেন না।

রাত্রি!

চিৎকার করবেন না মিস্টার নেহাল।
আমি সেই আগের রাত্রি নেই। যে সব কিছু মাথানত করে মেনে নেব।
আমি আমার মত বাচতে শিখেছি।
আমি আসি এখন।
ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

নেহালের কেবিন থেকে বের হয়ে আসলাম।

বাসাতে ফিরতে হবে তাই অনেক্ষন ধরে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছি।


পর্ব ২

কালো রঙের একটা কার সামনে এসে দাড়ালো।

হর্ণ দিয়ে আমাকে বিরক্ত করতে লাগলো।
বাইরে থেকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
তাই ঝাড়ি দেওয়ার জন্য গাড়ির সামনে গিয়ে ভিতর তাকাতেই দেখলাম নেহাল ড্রাইভিং সিটে।

চোখ দিয়ে ইশারা করে আমাকে গাড়ির পাসে আসতে বলল।
কিন্তু আমি জানি যে সে এখন আমালে লিফ্ট দিতে চাইবে। কিন্তু আমার না আছে তার প্রতি কোনো অধিকার আর না আছে আমার প্রতি তার কোনো অধিকার।

তাই তার ছায়ার আশেপাশেও আমি থাকতে চাইনা। কিন্তু নেহাল এসব কি শুরু করেছে।

আমাকে দরজার পাশে না আসতে দেখে নেহাল নিজেই গাড়িয়ে একটু এগিয়ে এনে আমার পাশে দাড় করালো।

গাড়িতে উঠে বসো রাত্রি।
তারপর নিজে ভিতর থেকেই বাম পাশের দরজাটা খুলে দিলো।

আমি অন্য গাড়িতে চলে যেতে পারব। প্লিজ আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করেন না।
আমার জীবনটা নিয়ে তো খুব খেলেছেন। এখন একটু শান্তিতে থাকতে দেন।

সামান্য লিফ্টই তো দিতে চেয়েছি। তার জন্য এতো রিয়াক্ট করছো কেন?

আপনাকে আমি সহ্য করতে পারিনা মিস্টার নেহাল।
আমাকে আমার মত থাকতে দেন। সিনক্রিয়েট করেন না দয়া করে।

আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম। কিছু লোকজন দাড়িয়ে দেখছে আমাদের কনভারসেশন।
হয়তো বা চিল্লিয়ে কথা বলার কারণে এদিকে তাকিয়ে আছে।

সিনক্রিয়েট তুমি করছো। (নেহাল বললো)

আমি না আপনি করছেন মিস্টার নেহাল।
আরেকটা কথা আমি আপনার জন্য এখন অচেনা কেও।
দয়া করে তুমি শব্দটা ইউজ করবেন না।

সরি মিসেস রাত্রি। আসলে
আমি দেখলাম আপনি অনেকখন ধরে এখানে দাড়িয়ে আছেন।
তাই আপনাকে সাহায্য করতে এসেছিলাম। প্লিজ আপনি চলুন।

আমি আর কথা বাড়ালাম না। রাস্তা ধরে হাটতে লাগলাম আর নেহালও পাশেপাশে গাড়ি চালিয়ে বারবার অনুনয় করতে লাগলো।

শেষমেষ না পেরে আমি গাড়িতে উঠলাম।

থ্যাংক ইউ।

হয়তো থ্যাংক ইউ কথাটা আমার বলা উচিত ছিলো কিন্তু আমি যদি কথাটা বলি নেহাল আবার কথা শুরু করার একটা সুত্র পেয়েযাবে।
তাই কোনো এন্সার দিলাম না। চুপচাপ সিট বেল্ট বেধে নিলাম।

জানেন মিস রাত্রি।
কিছু কিছু অভিনয়ের ভিতত শুধু মিথ্যা না, খুব বড় বড় সত্যও লুকিয়ে থাকে। কিন্তু হয়তো একটা দিন আসবে যেদিন সত্যটা জানার পরেও হয়তো সেই তাকে ফিরে পাওয়া যায়না।

নেহালের সম্পুর্ন কথাটাই যেন অভিমানে ভরা। কিন্তু এই অভিমানটা কার জন্য! আমার জন্য তো না। কারণ সেদিন সেই সম্পর্কটা শেষ করে ছিলো, আমি না। সঙ্গে এটাও বলেছিলো, “আর কখনো যোগাযোগ করো না”।
ওর ভালোবাসায় এতোটাই অন্ধ হয়েগেছিলাম যে ওর সুখ ভেবে হাসি মুখে ওর কথাটা মেনে নিয়েছিলাম।
কিন্তু এর ভিতর কিসের অভিনয় আছে সেটা আমি বুঝতে পারছিনা। সব কিছু তো সত্যি সত্যিই শেষ হয়েছিলো। যদি অভিনয় হতো তাহলে কয়দিন পর তো বলতে পারতো যে মজা করেছিলাম। এমনকি আজও বলতে পারতো মজা করে ছিলাম। কিন্তু না। সেতো বউ নিয়ে সুখেই আছে। দঃখের সাগরে শুধু আমাকেই ফেলে দিলে নেহাল।

মিস রাত্রি মনে যেটা ভাবা হয় সেটা সত্যি নাও হতে পারে।

আমি কি ভেবেছি সেটা আপনি কিভাবে জানলেন। আর হ্যা আমি কিছু ভাবিনি।

কিন্তু আপনার চোখ তো বলছে আপনি কিছু ভাবছিলেন।

সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম।
আমার চোখের ভাষাও তো তুমি পড়ে ফেললে , ঠিক যেমন টা আগেও পড়ে ফেলতে? (মনে মনে)
কথা কাটানোর জন্য অন্য কথা বললাম।

আপনার স্ত্রী কেমন আছে?

খুব ভালো আছে?

বেবি কয়টা?

একটা।

ওহ।

তুমি পেরেছো নেহাল আমাকে ভুলতে। আমি পারলাম না কেন বলতে পারো? (মনে মনে)

আমার দেওয়া ঠিকানা মোতাবেক গাড়িটা থামলো। গাড়ি থেকে নেমে। বাসার ভিতর যেতে নিলে।

আপনাকে হেল্প করলাম। এককাপ চা খেতেও তো বলতে পারেন।

মিস্টার নেহালের বাসায় চায়ের অভাব আছে কি, যে আমি বাসায় চা খেতে চাইছেন? আর হ্যা হেল্পটা আপনি যেচে করেছেন আমি চাইনি।

আচ্ছা, চা খেতে দিতে হবেনা। শুধু একট কথা বলছি শোনেন।
আগামিকালকে আপনার ছুটি।
কিন্তু আগামী পরসু দিন থেকে আপনি চাকরিতে জয়েন করছেন।

ওই হ্যালো আমি চাকরিটা করছিনা যেভাবে হুকুম দারি করছেন যেন আপনি আমার বস।
বায়।

মেইন গেইট আটকে দিলাম। গাড়ির শব্দ শুনে মনে হলো নেহাল চলে গেছে। কলিং বেইল চাপ দিতেই মা দরজা খুলে দিলো।

কিরে মা চাকরিটার কি খবর?

আজকেই ইন্টারভিউ দিলাম কিভাবে বলবো কি খবর।

মা আমার কপালে হাত দিয়ে,
তোর চেহারাটা এমন লাগছে কেন?

আমি নেহালের কথা লুকালাম,
ও কিছুনা মা। খুব গরম পড়েছে তাই হয়তো একটু অন্যরকম লাগছে।

কতবার বলেছি চাকরি ইন্টারভিউ দিস না।
চাকরি করতে হবেনা। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমাদের যা সেভিংস আছে। তোর তিন নাতিনাতনি অবধী চলে যাবে। আর হ্যা নিজের গাড়ি নিয়ে যাস নি কেন?

কিন্তু আমি মধ্যবিত্ত লাইফ চলতে চাই মা। দেখতে চাই এই লাইফে কত কষ্ট। নিজের ভালোবাসাকে কে ভুলে থাকা যায় কিনা। ( কান্না করে ফেললাম)।

মা আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলো,
যে মানুষটা তোর জীবন থেকে চলে গেছে তার জন্য আর কত কষ্ট পাবি।
আয় মা তোর জন্য আমি গাজরের হালুয়া বানিয়েছি। নিজ হাতে তোকে খাইয়ে দেব চল।

বাচ্চা মেয়ের মত মায়ের কলে মাথা দিয়ে আছি আর মা চামচে করে আমার গালে হালুয়া তুলে দিচ্ছে।

রাতে ঘরে শুয়ে আছি,
কোনো কিছু পড়ার শব্দে ঘুম ভাঙলো।
এই রাতে মা কি ঘর থেকে বের হয়েছে! কিন্তু মা তো রাতে ঘর থেকে বের হয়না। ওয়াসরুম তো সব ঘরেই এটাচ্ড। তাই চেক করার জন্য ভাবলাম একবার নিচে যাই। ড্রয়িং রুমেই শব্দটা হয়েছে।

দরজা খুলতেই মুখের উপর রুমাল পড়লো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি জ্ঞান হারালাম।

যখন জ্ঞান ফিরলো নিজেকে চেয়ারে বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম।


পর্ব ৩

যখন জ্ঞান ফিরলে নিজেকে চেয়ারে বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম।
কোথায় আছি সেটাও বুঝতে পারছিনা।
অন্ধকার কোনো ঘর হবে হয়তো। নেহাল আমাকে কিডন্যাপ করেনিতো!

হঠাৎ আলো জ্বলে উঠলো। সামনে চোখ পড়তেই দেখলাম লম্বা একটা লোক। উচ্চতা বডিফিটনেস সব তো নেহালের মতই। তাহলে এটা নেহাল?

কি চান আপনি আমাকে এভাবে বেধে রেখেছেন কেন? দেখুন মিস্টার নেহাল আমি কিন্তু আপনাকে চিনতে পেরেছি।

আমি কোনো নেহাল টেহাল না।

‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম লোকটা নেহাল হবে হয়তো। কিন্তু কথা শুনে সিওর হলাম যে ওটা অন্যকেও। তবে এই কণ্ঠটাও চেনা চেনা।

যদি বলি তোর জীবনটা চাই। তাহলে কি দিবি?

দেদেখুন আমি আপনাকে চিনিনা। আমাকে মেরে আপনার কি লাভ হবে?

লাভ লোক শানের হিসাব পরে।
তোর বাবা আমাকে তার অফিস থেকে ঘাড় ঢাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলো। তাকে তো মারতে পারিনি এখন তোকে মারবো। এটাই আমার শান্তি।

নিশ্চয়ই আপনি কোনো অন্যায় করেছিলেন। না হলে আমার বাবা বিনা দোষে কাওকে কোনোদিন শাস্তি দেয়নি।

মৃত্যুর মুখে দাড়িয়ে বাবার গুণগান করা হচ্ছে।
আর কিছুক্ষনের ভিতর যে তোর জীবনটা যাবে সেটা কি ভেবে দেখেছিস।
মরার জন্য তৈরি তো?

কথাটা বলেই। বন্দুকটা আমার দিকে ধরলো।
ভয়ে আমি চোখ বুঝেনিলাম।
এই মূহুর্তে মাকে আর নেহাল কে একবার দেখতে মন বলছে। মরার আগে নেহালকে শেষ বারের মত বলে যেতে ইচ্ছা করছে।
“তোমাকে ভালোবাসি নেহাল।
যতভালো বাসলে তোমার সুখের জন্যে নিজেকে বলি দিতে পারি ততটাই ভালো বাসি।”

আমি মারা গেলে আমার মায়ের কি হবে!
কে দেখেশুনে রাখবে আমার মাকে।
টাকা দিয়ে হয়তো জীবন পার করে দেওয়া যায় কিন্তু আমার মায়ের সুখ যে আমি।
আমি না থাকলে আমার মা যে বেচে থেকেও মরে যাবে।

হঠাৎ গুলির শব্দে চেচিয়ে ঊঠলাম।
আমাকে কি গুলি করেছে!

কই না তো। আমি তো বেচেই আছি তাহলে কি হলো।

আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখলাম। দারজার পাশে। নেহাল দাড়িয়ে আছে সাথে তিন জন পুলিশ।

মুখোশধারি যে লোকটা ছিলো তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিজের হাতটা ধরে কাতরাচ্ছে।

তার মানে গুলিটা করেছে ওই পুলিশ গুলোর একজন। আর ওই লোকটার হাতেই গুলি করেছে।

একজন পুলিশ সামনে এগিয়ে এসেছে লোকটার মুখোশটা খুলে নিলো মুখ থেকে। লোকটার মুখ দেখে যেন আকাশ থেকে পড়লাম।
এতো আমার আর নেহালের ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড “রবি”। তাইতো বলি কথাটা কেমন চেনা চেনা লাগছিলো।

রবি তুই?
তুই এই জঘন্য কাজটা করেছিস আমি ভাবতেও পারছিনা। আমার বাবা কবে তোকে তার অফিস থেকে বের করে দিয়েছিলো?
আর যদি করেও থাকে তার জন্যে একজনকে মেরে ফেলতে চাইতে পারিস কি করে? কোথা গেলো তোর বন্ধুত্ব।

কিসের বন্ধুত্ব তোরা কোনোদিন আমার বন্ধু ছিলি না।

নিজেরা যখন প্রেম শুরু করলি আমাকে ভুলেই গেছিলি। তাই রাগে রাগে তোর বাবার কাছে নেহালকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলি যাতে করে তোদের রিলেশন ব্রেক হয়ে যায়।
কিন্তু না, তোর বাবা গার্ড দিয়ে আমাকে মেরে অফিস থেকে বের করে দেই। আর বলে “আমার মেয়ের জামাই নেহালই হবে। আমি জানি ছেলেটা কেমন আশা করি ওদের থেকে দুরে থাকবে”।
তাই তোর বাবাকে মার‍তে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। পরে তোকেও মারতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোর আগের ঠিকানায় আর তোকে খুজে পাইনি।
গতকাল তোকে হঠাৎ ফাইল নিয়ে কোথাও যেতে দেখি তারপর থেকেই ফলো করা শুরু।
আজকে হয়তো বেচে গেলি।
কিন্তু মনে রাখিস সুযোগ আমার হাতেও আসবে একদিন। সেদিন দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবি তুই।

নেহাল এসে ঠাস করে রবিকে চড় লাগালো,

আরে তুই কি মানুষ নাকি জানোয়ার। সাইকোর থেকে গেলি সারাজোবন?
ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে একজনকে মেরে ফেলতে চাস?
কি শিক্ষা নিয়েছিস সারাজীবন?
তোকে বন্ধু বলতেও ঘৃণা হচ্ছে। আর হ্যা কি বলছিলি যেন, সুযোগ তুইও পাবি তো!
হাহা।
সেই দিন আর কখনো আসবে না।
সারাজীবন তোকে জেলে কিভাবে রাখতে হয় সেই ব্যবস্থায় আমি করবো। ওকে নিয়ে যান স্যার।

পুলিশ রবিকে নিয়ে চলে গেলো।
নেহাল আমার চেয়ারের সামনে হাটু গেড়ে বসে ধীরে ধীরে বাধনগুলো খুলে দিতে লাগলো।

আমার মাঝে মাঝে মনে হতো নেহাল আমাদের সম্পর্কটা শেষ করেদিয়েছে এর পিছনে হয়তো বাবার কোনো হাত থাকতে পারে। কিন্তু একি শুনলাম আমি!
মায়ের মত বাবাও রাজি ছিলো নেহালের সাথে আমার বিয়ে দিতে। তাহলে কি এমন কারণ ছিলো যে জন্য নেহাল আমাকে ছেড়েদিলো! তাহলে কি নেহাল ধোকাবাজ?
না। আমার নেহালকে আমি এত খারাপ উপাধি দিতে পারবোনা। যত কষ্টই পাইনা কেন।

আজকে তোমার ফোন ট্র‍্যাক না করলে কি একটা অঘটন ঘটে যেত ভাবতে পারছো?

কিন্তু আমার নাম্বার আপনি কিভাবে জানলেন।

ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে অনলাইনে যে এপ্লিকেশন করেছিলে সেখান থেকে।

কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে যখন আমি ঘরের দরজা খুলি মানে যখিন কেও আমার মুখে রুমাল ধরে আমার হাতে আমার মোবাইলটা ছিলো না।
তার মানে মোবাইল আমার ঘরেই পড়ে আছে। তাহলে ট্র‍্যাক করলেন কিভাবে। তাও আবার এতো রাত্রে।

আমার কথা শুনে নেহাল কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে গেল। পরেক্ষণে আবার হাসি মুখে বললো,

এখন এসব জেরা করে কি লাভ তার থেকে বরং বাসায় চলো। আর হ্যা মোবাইল্টা এই রুমের বাইরে পেয়েছি। তা না হলে আমি এখানে আসবো কিভাবে।

মিস্টার নেহাল আপনি কিন্তু আমাকে আবার তুমি বলছেন। এটা ভুলে যাবেন না আশা করি।
আর হ্যা এতো রাতে একটা মেয়েকে বাচাতে এসেছেন আপনার স্ত্রী কিছুই বললো না?

সে কখনো আমাকে সন্দেহ করে না।
আমার প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস।

বাহ নেহাল বাহ! কিভাবে পারো?
আমার সামনে জোর গলায় নিজের স্ত্রীর প্রসংশা করছো যে! তাকে করা তোমার এই প্রসংশা আমার এই ছোট্ট হৃদয়টাকে যে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে সেটা কি তুমি দেখতে পাচ্ছো না? তোমাকে তো অভিনয় জগতে যাওয়া উচিত ছিলো। (মনে মনে)

ভাবনা থেকে বের হলে চলো সরি, চলেন, বাসায় যাওয়া যাক।

আমি একলা চলে যেত পারবো।

এখন জীবন বাচালাম নাহলে তো এতখনে স্বর্গে চলে যেতেন। আর এখনি ইগো দেখাচ্ছেন?

আপনাকে কেও দাওয়াত দেয়নি আমাকে বাচাতে আসতে। মরে গেলেই তো ভালো হতো।

রাত্রি!

নেহাল তুমি আমার দিকে এই করুণ দৃষ্টিতে তাকিও না। আমি যে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনা। তোমার বুকে ঝাপিয়ে পড়তে মন বলে। কিন্তু আপসোস দেখো তুমি অন্য কারো স্বামী। তোমার সংসার আছে, আছে একটা মেয়েও আছে। আর আমার?
আমার আছে একবুক কষ্ট।
তোমার এই তাকানোর ভিতর এতো আবেগ কেন বলতে পারো? (মনে মনে)

এই রাতে নিজের জেদ ধরে রাখা ঠিক না রাত্রি। প্লিজ চলুন আমার সাথে।

নেহাল ড্রাইভ করছে আমি পাসের সিটে বসে আছি।

আচ্ছা মিস্টার নেহাল। আপনি কিভাবে বুঝলেন আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।

একটা মেয়ের মোবাইলে লোকেশন এতো রাতে নিজের বাসাতে না থেকে অন্য কোথাও থাকলে এমন কিছুই তো মাথায় আসবে নাকি?

হম।
,
চুপচাপ সিটে হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। জায়গাটা কোথা আমার জানা নেয়। শহর থেকে দুরেই হবে কারণ আশে পাশে কোনো ল্যাম্পপোস্ট ও দেখা যাচ্ছে না। না দেখা যাচ্ছি কোনো অট্টালিকা। ঘুটঘুটে অন্ধকার চার পাশে। ঠিক আমার মনের মত।


পর্ব ৪

তাহলে নেহাল আমাকে বোকা বানালো।
তার মানে কিডন্যাপ কি ও নিজেই করেছিলো? রবিও ওর সাথে ছিলো? কিন্তু এসব করে ওর লাভটা কি?

আমাকে সব কিছু বের করতেই হবে।
ভালোবাসার অভিনয় করে তো আমাকে মাঝ রাস্তায় ফেলে চলে গিয়েছিলেন মিস্টার নেহাল।
কিন্তু এসব কিডন্যাপের মানে টা কি আমাকে বের করতেই হবে।

একটা প্লান করি।
নেহালের অফিসে জবটা করবো। তাহলে সব বুঝতে পারবো হয়তো।
সকালে সব প্লান অনুযায়ী কাজ করবো এখন ঘুমাই।

সকালে,

মা তোমার কাছে নেহালের নাম্বারটা দিয়ে গেছিলো না?

হ্যা ফোনেই আছে। কিন্তু তুই কি করবি?

ওর অফিসে জবটা করবো মা।

কিন্তু তুইতো বললি ওখানে জব করবি না। তাহলে রাতের ভিতর এমন কি ভেবে বসলি যে তোর এখন ওর অফিসে জব করার ইচ্ছা জাগলো আবার।

আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার দরকার মা।

পারবিতো নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে চোখের সামনে এই ভাবে দেখতে।
সে তো আর তোর নেই। সারাক্ষণ সামনে সামনে থাকলে কিভাবে নিজেকে ঠিক রাখবি মা?

আমি না তোমার মেয়ে! সব পারবো।

কেমন পারবি আমার জানা আছে। রাতে যার জন্য কাদিস তোকে ছাড়াতো সে ভালোই আছে তাহলে কেন তার সামনে সামনে থেকে নিজেকে কষ্ট দিবি।

আমি কষ্ট পাবো না। লক্ষি মা আমার। ( মাকে জড়িয়ে ধরলাম)

এক শর্তে রাজি আছি।

কি শর্ত মা।

তোকে মন মরা হয়ে দেখতে পারবোনা।

আচ্ছা মা। প্রমিস করছি আর মন মরা হয়ে থাকবোনা। এখিন দাওতো নেহালের নাম্বারটা দাও।

মায়ের কাছথেকে নেহালের নাম্বারটা নিয়ে ঘরে আসলাম।

কল দিতেই সাথে সাথে নেহাল রিসিভ করলো,যেন আমার কলের জন্যই অপেক্ষা করছিলো।

হ্যা মিস রাত্রি বলুন। আপনি তাহলে রাজি হয়ে গেলেন চাকরিটা করার জন্য?

আমি রাজি হলাম কিনা, নেহাল বুঝলো কিভাবে।
আমার মনের ভিতর কি মেশিন সেট করে রেখেছে নাকি যে আমি যাই বলবো তাই বুঝে যায়।

হ্যা আমি রাজি আছি আপনার অফিসে জব করতে।

ঠিক আছে তাহলে কালকেই জয়েন করুন।

কালকে কেন আমিতো আজকে থেকেই জব করতে চাই।

কথা টা শুনে নেহালের গলাটা কেমন যেন কাপতে লাগলো।
প্লিজ আপনি কালকে আসবেন। বস হিসেবে এটা আমার আদেশ।

ঠিক আছে বলে কলটা রেখে দিলাম।

কিন্তু আজকে জয়েন হলে ক্ষতি কি। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি আসলো, “আজকে এই ভাবে যেতে নিষেধ করছে তার মানে নিশ্চয়ই গোপন কিছু ঘটছে। এটা আমাকে দেখতেই হবে। হতে পারে আমার বিষয়ে কিছু।”

রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বের হলাম। তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে তাই নিজের গাড়িটাই নিয়ে বের হলাম।

৩০ মিনিটে নেহালের অফিসের নিচে পোছালাম। গাড়ি পার্ক করে লিফটে উঠে নেহালের অফিসে গেলাম।

নেহালের কেবিনের দিকে যাচ্ছি সবাই যেন কেমন একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আগের দিন যেমন ভাবে তাকিয়ে ছিলো।
আমি সব উপেক্ষা করে চললাম।

কেবিনের নক করতে গিয়ে থেমে গেলাম কারণ দেখলাম দরজা হালকা খুলে রাখা আর ভিতর থেকে কারো হাসির শব্দ পাচ্ছি।
দরজার ফাকে চোখ রাখবে আমি অবাক হওয়ার চরম পর্যায়ে চলে গেলাম।

রবি!

রবি আর নেহাল। হাসাহাসি করছে। তার মানে আমার সন্দেহই ঠিক!

ওরা কি কথা বলছে শোনার জন্য দাড়িয়েই থাকলাম দরজার এপাশে,
নেহাল- শালা তুই যা অভিনয়টা না করেছিস না! একেবারে পাক্কা অভিনেতাদের মত।

রবি- তুইও কম কিসে। ফোন ট্র‍্যাক করে নাকি বাচাতে গেছিস। হাহাহাহা।

নেহাল- ভাগ্যিস রাত্রিদের বাসাতে গিয়ে ওয়াস্রুমে যাওয়ার নাম করে। ওর ঘর থেকে মোবাইলটা এনে ছিলাম। ঘর থেকে মোবাইলটা ওর হাতে দিলাম আর বুঝালাম মোবাইল লোকেশন ধরে ওকে বাচাতে গেছিলাম। কিন্তু ওর মাথায় এটাই ঢুকলো না যে একজন কিভাবে কিডন্যাপ করে! হাহাহা

দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলাম। হাত তালি দিলাম। দুজনে আমাকে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়লো।

নেহাল-রাত্রি আপনি?

হ্যা মিস্টার নেহাল আমি।
কাল রাতেই সন্দেহ হয়েছিলো কিডন্যাপের বিষয়ে।
তাই আমার এক বান্ধবী সারাকে কল দিয়ে আমার ফোনের এক্স্যাক্ট লোকেশন জানতে পেরেছিলাম। আর এখন আপনাদের দেখেই বোঝা গেলো আপনারা এক একটা অভিনেতা পাক্কা অভিনেতা।

আরেকটু বাকি আছে মিস রাত্রি। এখন সেটাও দেখবেন।

এই বলে দুইজন মিলে জোর করে আমাকে চেয়ার বসিয়ে দিয়ে একজন দরজা আটকে দিলো। আমি চিল্লাতে থাকে কিন্তু বাইরের লোকজনের কোনো রিয়াকশনই দেখলাম না। তার মানে রুম টা সাউন্ড প্রুফ।

একটা অভিনয় বাকি আছে। সরি সরি অভিনয় না সত্যতা বাকি আছে। দেখুন তো এটা আপনার ঘর কিনা।

কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখালো।

আপনার মোবাইল আনার সময় একটা রিমোর্ট কন্ট্রোল বোম্ব লাগিয়ে এসেছিলাম আর এই ক্যামেরাটাও।

এতটা নিচে কিভাবে নামতে পারেন মিস্টার নেহাল।

আরো একটু নিচে নামবো।
এখন আজকে এই মুহূর্তে আমাকে বিয়ে করতে হবে নাহলে, এই রিমোটটার বাটনে একটা প্রেস করলেই আপনার মা দুনিয়া থেকে চলে যাবে। হাহাহা।

মাকে হারালে কাকে নিয়ে থাকবো। এবার খুব ভয় পেলাম।

দেদেখুন মিস্টার নেহাল। আপনিতো বিবাহিত তাহলে এমন কেন করছেন আমার সাথে?

কে বলেছে আমি বিবাহিত?

আপনি নিজেই বলেছেন।

আমি কখনো বলি নি। আপনিই আগ বাড়িয়ে আমার বউ আছে বউ আছে করেছেন।

তাহলে কালকে একটা মেয়ের নাম করলেন সেটা কে।

হাহা। ওটা রবির মেয়ে। আমি আর রবি একবাসাতেই থাকি।

আমি আপনাকে আর ভালোবাসি না প্লিজ আমাকে ছেড়েদিন।

আপনাকে ছেড়ে দিলে যে আমাকে রিমোটটা বাটন টা প্রেস করতে হবে।

নায়ায়ায়ায়ায়া, আপনি আমার মায়ের কিছু করবেন না। আমি বিয়েতে রাজি।

রবি একটা পেপার বের করে দিলো।
আর বললো এটাই সাইন করে দিতে। আমি কাপা হাতে সাইন করলাম। তারপর নেহাল ও সাইন করলো।

রবি- নেহ, তোরা এবার আইন অনুযায়ী স্বামী স্ত্রী। এবার ধর্মীও রীতিতে বিয়েটা হলেও সব কাজ শেষ।

নেহালের প্রতি ঘৃণা জমে গেলো। সমস্ত ভালোবাসা আজকে শেষ হয়ে গেলো। আমার ভালবাসার মানুষটা এতো নিচ আমি ভাবতেও পারছিনা।

পর্ব ৫

নেহালের প্রতি ঘৃণা জমে গেলো। সমস্ত ভালোবাসা আজকে শেষ হয়ে গেলো। আমার ভালবাসার মানুষটা এতো নিচ আমি ভাবতেও পারছিনা। !

রবি- আমি কাজী সাহেব কে ফোন দিয়েছি। সে আসলেই ধর্মীও রীতিতে বিয়েটা সম্পন্ন হবে।

মিস্টার নেহাল আপনি বিয়েটা আমাকে জোর করে না করলেও তো পারতেন।
আপনার স্ত্রী বিষয়ক কথা গুলো যে আমি বলেছিলাম। সেগুলো সেই সময়েই তো ক্লিয়ার করে দিতে পারতেন। আপনি কি ভেবেছেন জোর করে বিয়ে করে আমার ভালোবাসা পাবেন?
না তা কখনও সম্ভব না।
আপনার এই অফিসে আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি আপনামে ভালোবাসতাম।
কিন্তু এই মুহুর্তে আমি আপনাকে ঘৃণা করি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি।

তুমি ঘৃণা করো আর ভালোবাসো সেটা মেটার করে না, মেটার করে আমি তোমার স্বামী সেটা।
তোমার উপর সব অধিকার এখন থেকে আমার।

হুহ। স্বামী। স্বামী শব্দটার মানে যদি আপনি জানতেন তাহলে সেদিন আমাকে ফিরিয়ে দিতেন না।
আর ফিরিয়েই যদি দিলেন তাহলে আজকে এসবের মানে কি?

তোমাকে একটা গল্প শুনাই মিস, উপ্স, সরি মিসেস রাত্রি।

“তোমার সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীন আমার আরো তিনটা সম্পর্ক ছিলো।
যেটা আমার অজান্তেই তোমার বাবা জেনে যায়। আর আমাকে তোমার জীবন থেকে সরে যেতে বলে।
আমি যেতে চাইনি তাই তিনি আমার পায়েও ধরেছিলো। তবুও রাজি হয়নি। কারণটা তুমি ভালোই জানো। তোমার টাকাই আমার পড়াশোনা। হাহা।
কিন্তু তোমার বাবা যখন দেখলে আমি তোমার সাথে সম্পর্কটা চালিয়েই যাচ্ছি। আবারো আমার সাথে দেখা করে তোমার সাথে সম্পর্ক শেষ করতে বলে। কিন্তু আমি রাজি হইনি।

কিছুটা ভেবে প্লান চেঞ্জ করি।
আমি তোমার বাবার কাছে টাকা চাই।
যে আমাকে যদি আমার চাহিদা মোতাবেক টাকা দেয় তাহলে তোমাকে ছেড়ে দুরে চলে যাবো। তোমার বাবাও রাজি হয়ে যায়। যতইহোক কোনো বাবা তো আর চাইনা একটা খারাপ ছেলেকে তার মেয়ে ভালোবেসে যাক। তাই যত টাকা চাই সব দিয়ে দেয়। আমিও সেখান থেকে চলে আসি”

মিস্টার নেহাল আপনি বড়ই বোকা আজকে বুঝলাম।
এসব কথা আমাকে না জানালে হয়তো আপনার স্ত্রী হিসেবে কোনো না কোনোদিন আপনাকে মাফ করে আমার ভালোবাসতে শুরু করতাম।
এখন কি হবে ভেবে দেখেছেন?

সব ভেবেছি রাত্রি। তুমি শোনো আমার গল্প কিছুটা বাকি আছে।”
“তারপর তোমার সাথে ব্রেকাপ করা। অন্যকোথাও চলে যাওয়া। এভাবে একবছর কেটে যায়। একসময় আমি বুঝতে পারি তোমাকে ভালোবাসি। তখন তোমাকে তোমার পরিবারকে বা তোমার বাবার অফিস কিছুই আর খুজে পাইনি।

কিন্তু ভাগ্য দ্বারা কি না সম্ভব। আমার অফিসে তুমি জবের ইন্টারভিউ দিলে। আমি জানতাম আমাকে দেখলে তুমি চাকরিটা করতে চাইবেনা।
কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে শুধু আমার আশেপাশে দেখতে চেয়েছিলাম।
তাই এসব কিডন্যাপের প্লান করা। তারপর তোমার মনে সন্দেহ তৈরি করে দেওয়ার জন্য সেই রাতেই তোমাকে বাচাতে যাওয়া।
আমি এটাও জানি রাত্রি কতটা ইন্টেলিজেন্ট তাই এমন এমন কাজ করি যাতে করে আমাকে সন্দেহ করো। তুমি সেগুলোই করলে। আজকে অফিসে না আসতে অনুরোধ করাটাও ছিলো সেই প্লানেরই অংশ। তুমি আমাদের ফাদেই পা দিয়ে দিলে। আর এখন তুমি আমার স্ত্রী। হাহাহা

হাসুন খুব ভালো করে হাসুন
নেহাল মনে রাখবেন। এই স্ত্রী শুধু একটা শব্দ আপনার আর আমার মাঝে। এখানে না থাকবে কোনো অনুভূতি আর নাহি ভালোবাসা।

ভালোবাসবে রাত্রি। আজকে না হোক কালকে ভালোবাসবে। যদি তাও নাহয়, যেদিন আমি দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে সেদিন আমাকে ভালোবাসবে। কথাটা লিখে নিও। ভালো তুমি আবার বাসবে আগে যতটা ভালোবাসতে তার থেকে হাজার গুণ বেশি ভালো বাসবে।

আপনি স্বপ্নই দেখতে থাকেন মিস্টার নেহাল। আমি কখনো আপনাকে ভালোবাসবো না। আপনার জন্য থাকবে শুধু একরাশ ঘৃণা। সারাজীবন থাকবে। মরার আগ পর্যন্ত থাকবে।

আমি যেমন ১০০% সিওর ছিলাম আজকে তুমি আমার অফিসে আসবে। তেমনি আমি এখন অতটাই সিওর আছি যে তুমি আবার ভালোবাসবে। কতটা সেদিন তুমি নিজেই বুঝে নিও। যেদিন আমি থাকবোনা।

এই কথার মাঝখানে কাজী চলে আসলো।
ধর্মীয় রীতিমতো আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।
ঘৃণা থাকা সত্তেও বিয়েটা করতে হলো। শুধুমাত্র মাকে হারানোর ভয়ে।

বিয়ে শেষ হলে,

চলো এবার মায়ের কাছথেকে দোয়া চেয়ে নিয়ে আসি।

আপনার মা আছে?

তুমি আমার স্ত্রী, তোমার মা মানেই আমার মা।

যাকে মেরে ফেলতে চাইছিলেন একটু আগে তাকে মা বলতে আপনার লজ্জা করে না?

মেরে ফেলতে চাইছিলাম তো তোমার জেদ ভেঙ্গে ফেলতে। যদি তাকে মারার ভয় না দেখাতাম তাহলে তুমি কখনোই এই বিয়েতে রাজি হতে না।

নেহাল তোমাকে আমি মনের কথা কি ভাবে বোঝাই বলতে পারো।
নিজেই তো ঘৃণা তৈরি করে দিয়েছো তোমার প্রতি। সব করেছি, বিয়ের সব নিয়ম মেনেছি একবারো আমার মনকে জিজ্ঞাসা করেছো তার মত আছে কিনা?
না এই মনে শুধু ঘৃণা ঘৃণা ঘৃণা। (মনে মনে)

চলো রাত্রি যাওয়া যাক।

বাসাতে,

নেহাল আর আমি মায়ের সামনে দাড়িয়ে আছি। বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন পেপার মায়ের হাতে।

নেহালের তো বিয়ে হয়ে গেছে এটা কিভাবে করলি তোরা।

আন্টি,সরি মা। আমার কোনো জায়গাই বিয়ে হয়নি রাত্রি নিজের মনে মনেই সব কাহিনী তৈরি করে আমাকে জিজ্ঞাসা করতো আর আমি মজা নেওয়ার জন্য হ্যা হু করতাম।

যাক এখন আর আমার কষ্ট নেই।
সারাজীবনই চাইতাম তোমাদের হাত একসাথে হোক। আজকে তা হলো। আর কোনো চিন্তা নেই আমার।

জ্বি,মা। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

সবসময়ই দোয়া করি তোমার জন্য তোমার সৎছেলের হাতে মেয়েকে দিয়ে যে আমি নিশ্চিন্ত।

মা তুমি যাকে সৎ বলছো সে একটা পাক্কা ভিলেন। আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কতকিছুই না করেছে।
আবার আমাকে নিজের জীবনে ফিরে পাওয়ার জন্য কত জঘন্য কাজটাই না করেছে। আমাকে কিডন্যাপ করেছে,
তোমাকে পর্যন্ত মেরে ফেলতে চেয়েছে। (মনে মনে)

নেহাল- মা আপনি আপনার সমস্ত কিছু গুছিয়ে নেন। আজকে থেকে আপনি আমাদের সাথে থাকবেন।

না বাবা। জামাইয়ের বাড়িতে থাকতে আছে নাকি!

জামাই বাড়ি না। আপনি ছেলের বাড়ি থাকবেন।
তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নেন।
আর এই বাসাটাই আমি কেয়ার টেকার রেখে দিব, সমস্যা নাই।
আর মাসে মাসে এই বাড়িতে সবাই একবার করে ঘুরে যাবো।

সমস্ত কিছু গুছিয়ে নেহালের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। আমার ঘৃণার সংসারে।

পর্ব ৬

নেহালের বাড়িতে,

কলিংবেল বাজানোর সাথে সাথে একজন মেয়ে দরজা খুলে দিলো। আমার সমবয়সী কিংবা কম বয়সী হবে। কোলে ছোট্ট একটা মেয়ে।

কেমন আছেন ভাবি?

আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
হ্যা ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

আমি ভালো আছি।
আর হ্যা, আমাকে আপনি করে বলবেন না। আমি আপনার থেকে অনেক ছোট হবো। তুমি করে বললেই হবে।
আরে আসুন আসুন। আমিতো কথা বলতে বলতে আপনাদের বাইরেই দাড় করিয়ে রেখেছি।

মায়ের সাথেও কুশল বিনিময় করলো। কথার ভাব দেখে মনে হচ্ছে ভালো ঘরের মেয়ে।

আমি হলাম সারা। রবির স্ত্রী আর আপনার হাসবেন্ড মানে নেহাল ভাইয়ার বোন। যদিও রক্তের সম্পর্ক নেয় তবুও বোন। আর এই যে আমার কলিজাটা আমার তিতলি মনি।

মনে মনেই বললাম, যাকে ভাই বাইয়েছো আর যার সাথে ঘর করছো দুইটাই হলো কাল সাপ। জানিনা তোমার কপালে কি আছে!

কি ভাবছেন ভাবি?

না, কিছুনা। গতদিন শুনেছিলাম তিতলি অসুস্থ, এখন কেমন আছে?

এখন একদম ভালো আছে ভাবি। নেহাল ভাইয়া থাকতে তার ভাগনী অসুস্থ থাকতেই পারে না।

হুম।

আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব চিন্তিত আছেন ভাবি!
কোনো সমস্যা হলে আমাকে জনাতে পারেন।

বা কোনো সমস্যা নেয়।

সমস্যায় বা কেন হবে ভালোবেসে বিয়ে যে করেছেন। হাহাহা।

নেহাল দেখছি বোনের কাছে খুব ভালো সেজেছে। ঘৃণাকে ভালোবাসা বলেছে। কি করে পারে এসব।

সারাদিন এভাবেই পার হয়ে যায়।

রাত ১১ঃ০০ টা। বাসর ঘরে বসে আছি।

একটু পর নেহাল আসলো সাথে রবি।

নে তোর সোয়ামি কে রেখে যাচ্ছি। দেখে রাখিস।

এরা এমন ভাব করছে যেন আমি নিজ ইচ্ছাই বিয়ে করেছি। সবটা যে ওরা জোর করেছে সেটা কি মনে করতে চাচ্ছেনা নাকি বুঝতে পারছেনা?
,
রবি চলে গেল,

সামনে বসে আছে নেহাল। মনের ভিতর একটাই ভয় যদি নেহাল আমার উপর স্বামিত্ব ফলায় কি করবো আমি? নিজেকে কি ওর কাছে বিলিয়ে দেব নাকি বাধা দেব।

উহহুম।

নেহাল নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। কিন্তু আমি কোনো কথা বলছিনা। অনেকক্ষণ পর।

রাত্রি জানি তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছি।
আবার অতিতে তোমাকে নিজের দোষেই দুরে সরিয়ে ছিলাম। আমি ভুল করেছি। আমাকে কি মাফ করা যায় না?

আপনি শুধু ভুল করেন নি। আপনি পাপও করেছেন। আর পাপ ক্ষমা করার মালিক আমি না। আল্লাহর কাছে মাফ চাইবেন।

তার মানে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো?

আমি কোনোদিন আপনাকে ক্ষমা করলে আমার মৃত বাবার সাথে অন্যায় করা হবে।
যাকে টাকার বিনিময়ে একটা কাপুরুষের কাছথেকে নিজেরই মেয়েকে কিনতে হয়েছিলো।
বলুন তো কিভাবে ক্ষমা করবো আপনাকে?

মনকে বলে দেখো, ঠিক পারবা।

মনে মনে বললাম, মনকে কি বোঝাবো নেহাল তুমি যা করেছো মাফ করা যায়না। আর কত ভালোবাসার দোহায় দিবে তুমি? নিজেকে ছোট করতে করতে যে তুমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছো আমার মন থেকে সেটা কি ভেবে দেখেছো?

আর হ্যা রাত্রি, আমি তোমার কাছে আজকে স্বামীর অধিকার চাচ্ছি, তুমি কি দিবে।

আজকে বিয়ে করলেন আর আজকেই আমার দেহ চাচ্ছেন? এমন হলে তো পতিতালয়ে যেতে পারতেন। কোথায় আপবার ভালোবাসা? এইটা ভালোবাসা?

তুমি আল্লাহর কালাম সাক্ষী করা স্ত্রী।
আমার কি কোনো অধিকার নেই আমার স্বামীর অধিকার চাওয়া?

শুধু মাত্র আল্লাহর কালাম সাক্ষী করার জন্য আমি আপনাকে আমার দেহের উপর কর্তৃত্ত্ব ফলানোর অধিকার দিলাম।

এটা কেমন কথা। স্বামীর হক আছে স্ত্রীর প্রতি, কিন্তু তার মানে এই না যে তোমার দেহকেই ভালোবাসবো!

আমি যেহেতু আপনার স্ত্রী আমার প্রতি আপনার অধিকার আছে।

নেহাল আমাকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। আমিও নেহালেফ সাথে নিজেকে জড়ালাম।

এ কেমন ভালোবাসা।

যাকে ভালোবাসলাম সে ছেড়ে চলে গেলো, আবার যখন ফিরে এলো, তার প্রতি ঘৃণা ভরে উঠলো মনে। কিন্তু সে স্বামী আমার।

আমার উপর তার অধিকার আছে।
আমি যদি তাকে বাধা দিই তাহলে আল্লাহকে অমান্য করা হবে।
যদিও সে কোনো কিছুই ঠিক করেনি আমার সাথে। কিন্তু একটা সম্পর্ক সত্য, সে আমার স্বামী আর আমি তার স্ত্রী। পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র সম্পর্ক। তবুও তাকে আমি ঘৃণা করি। স্বামী হিসেবে না, মানুষ হিসেবে।

পর্ব ৭

সকালে নিজেকে নেহালের বুকের উপর আবিষ্কার করলাম। মানুষটা এখনো ঘুমিয়ে আছে। কি নিষ্পাপ দেখাচ্ছে মুখটা। একবার ছুয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু নিজেকে ওর কাছে বিলিয়ে দিয়েও আজ যেন আমি দোটানায় পড়ে আছি।

ভালোবাসা আর ঘৃণার।
মন বলছে আবার ভালোবাসতে কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে ঘৃণা করতে। সত্যি আমি দোটানায় পড়ে আছি।
ঠিক যেন একটা গোলকধাঁধা যার কোনো শেষ বা শুরু নেয়। আছে শুধু দোদুল্যমান একটা মন। যে আমার ইচ্ছা বা নিজের ইচ্ছাইও থামতে পারছেনা।

নেহালের চোখ মেলে তাকানোর আগেই আমি নিজেকে সরিয়ে ওয়াসরুমের দিকে চলে গেলাম।
সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলাম নেহাল এখনো শুয়ে আছে। আমি বারান্দায় গেলাম। ইজি চেয়ারে বসে আছি। আল্লাহর কাছে আমি সাহায্য চাচ্ছি। দুইমনা হয়ে কিভাবে থাকবো। নিজেকে মাঝে মাঝে অসহায় মনে হচ্ছে।
আমাকে কিছু একটা স্থির করতেই হবে, ভালোবাসা বা ঘৃণা। যদিও ভালোবাসায় কারণ খুবি কম সেই তুলনায় ঘৃণা করাটা বেশি যুক্তিযুক্ত। তবুও তাকে একবার সুযোগ দিতে মন বলছে।

তিন মাস পর,
আজও সেই দোটানায় আছি। কিন্তু এভাবে আর চলা সম্ভব না। এবার মন বা মস্তিষ্ক কোনো একটাকে জয়ী হতেই হবে নাহলে আমি পাগল হয়ে যাবো হয়তো।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শুয়ে আছি।
পেটটাও খানিকটা বড় হয়েছে।
পেটের বাবুটা কেমন আছে? নেহাল আর আমার বাসর রাতের কাছাকাছি আসার আল্লাহর দেওয়া উপহার হয়তো। তার পর থেকে তার সাথে না বলেছি নিজ ইচ্ছাই কথা না তাকে বলার সুযোগ দিয়েছি।
কিন্তু আমি এই ঝামেলা শেষ করে চাই।

মা অনেকবার খাওয়ার জন্য ডেকে গিয়েছে কিন্তু আমার দেহ চলছেনা আজকে। মা এসে আমাকে খাইয়ে দিলো।

এভাবে তোকে শুয়ে থাকতে দেখে আমার আর ভালোলাগছেনা মা। চল তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়।

কিন্তু মা তুমি নিজেও সুস্থ নেয়। নেহাল আসলে নাহয় ওকে বলবো।

তুই বলবি নেহালকে? এটা আমি বিশ্বাস করবো? নিজে মরে পড়ে থাকবি তবুও বলতে চাইবিনা যে তোর সমস্যা হচ্ছে।

কিন্তু মা…..

কোনো কিন্তু না। চল আমার সাথে।

মায়ের সাথে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

হাসপাতালে ওয়েটিং রুমে বসে আছি। হঠাৎ নেহালকে দেখলাম একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে আসছে।

এই দৃশ্যটা কোনো স্ত্রীর জন্যই সহ্যের বাইরে।
তবুও ধৈর্য ধরলাম এই ভেবে যে হয়তো অপরিচিত কাওকে সাহায্য করছে।

ট্রলিতে মেয়েটিকে শুইয়ে দিলো আর সাথে সাথে দৌড়াতে লাগলো ট্রলির সাথে।
এতো কিছু ঘটছে কিন্তু নেহাল আমাদের দিকে খেয়াল করেনি।
ডাক্তার ওকে জিজ্ঞাসা করলো যে মেয়েটা ওর কি হয়।

বউ/বোন।

কিছু একটা বললো মনে হলো। কিন্তু মস্তিষ্ক বউ হিসেবেই কথাটা ধরে নিলো। এটা কিভাবে সম্ভব নেহালের আরেকটা বউ আছে। একটা মানুষ এতোটা প্রতারক কিভাবে হতে পারে। ওর আরেকটা বউ আছে এটা জেনে যে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে।

মাথাটা ভনভন করছে।
তারপর কি হলো কিছু মনে নেয়। যখন চোখ মেললাম। নিজেকে হাসপাতালের কেবিনে আবিষ্কার করি। পাশে মা আর নেহাল কে দেখলাম।

আমার মন আর মস্তিষ্কের তিন মাসের যুদ্ধে অবশেষে মস্তিষ্কই জিতে গেল। তার মানে ঘৃণা জিতে গেলো ভালোবাসার কাছে। এই ঘৃণা আর কোনোদিন হয়তো ভালোবাসায় বদলাবে না।

এই মুহুর্তে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাইনা। তাই চুপচাপ থেকে গেলাম।

ডাক্তার চেকাপ করে সবাইকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করলো। কারণ এই অবস্থা একটু অসস্তি একটু অসুখ হবেই।

বাসায় এসে সারার সাথে দেখা করে তিতলিকে একটু আদর করে ঘরে চলে আসলাম।

আজকে থেকে আর নেহালের সাথে এক বিছানায় একই ঘরে শুয়ে থাকা অসম্ভব। তাই নিজের জিনিসপত্র গোছগাছ করে পাশের ঘরে চলে যাবো। সম্ভব হলে এই বাসা ছেড়ে চলে যেতান কিন্তু মায়ের জন্য পারিনা। যদি নেহাল আমার মায়ের কোনো ক্ষতি করে?

কি করছো রাত্রি? সব কিছু পাশের ঘরে নিয়ে যাচ্ছো নাকি? আমরা কি আজকে থেকে পাশের ঘরে শুবো?

আপনি না মিস্টার নেহাল আমি একা থাকবো।

কিন্তু আমার অপরাধটা কি জানতে পারি?

একবউ বাসায় রেখে আরেক বউ বাইরে রাখা হয়? তাহলে কেন আপনার সাথে থাকবো আপনি তো কুকুরের থেকেও জঘন্য মানুষ?

আমি করলাম টা কি?

হাসপাতালে আপনার আরেক বউকে না দেখলে বুঝতাম ই না যে আপনার চরিত্র আসোলেই খারাপ।

তুমি ভুল বুঝছো রাত্রি। মেয়েটা আমার বউ হবে কেন।
ওতো আমার বোন সারা যেমন আমার বোন সেউ তেমন। নিজের রক্ত দিয়ে আমার জীবন বাচিয়েছিলো একদিন। সেই থেকেই বোন।

নেহালের এসব কথা যেন আমার বিশ্বাসই হলো না। মনে হলো যেন আবারও কোনো মিথ্যা বলছে। তাই ওর কোনো কথায় কান না দিয়ে নিজের কাজে মন দিলাম না।
দেখলো কাজ হচ্ছে না তাই আমার হাত ধরলো।
আমি একঝটকা মেরে নিজের হাত ছুড়িয়ে নিলাম।

আপনি আমার গায়ে হাত দিলে মনে হয় যেন আগুন লাগিয়ে দিই নাহয় সেই অংশটা কেটে ফেলি।

রাত্রি এতো বড় কথা বলো না প্লিজ। আমি কখনো আর তোমাকে জোর করবো না প্লিজ তুমি আমার বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেও না। আমি মারা গেলে চলে যেও। কেও আটকাবে না।

সেই দিন নেহালের কথাটা বিশ্বাস না করাটাই ছিলো আমার জীবনের চরম ভুল।

চার বছর পর,

আজও আলাদা ঘরেই আমাদের রাত কাটে।
মেয়েটা বারবার বাবার কাছে যেতে চাই কিন্তু আমি যেতে দিই না। তবুও বাবা থেকে মেয়ে আলাদা রাখতে পারা কি আমার সাধ্য?
চুপিচুপি বাবা মেয়ের খুনশুটি চলেই থাকে। তবে আমার চোখ ফাকি দিতে পারে না। মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে চলে আসি।

আর নেহাল করুন চোখে তাকিয়ে থাকে যার অর্থ, আমার মেয়েকে কিছুটা ভালোবাসতে দাও। ওতো আমার অংশ। আমার থেকে আলাদা রেখে না আমার মেয়ে খুশি আছে না আমি আর না তুমি তবে কেন এই রাগ কেন এই অভিমান।

নেহালের এই করুন চোখের ভাষা আর দেখতে মন বলে না।

একদিন বিকালে মেয়েকে নিয়ে শুয়ে আছি। নেহাল ঘরের প্রবেশ করে খাটের পাশে হাটু গেড়ে বসে আমাকে ধীর গলায় ডাকলো।

রাত্রি! এই রাত্রি!

শুনছি।

জরুরি মিটিং এর জন্য চট্টগ্রাম যেতে হচ্ছে।

সেতো প্রতিমাসে যেয়ে থাকেন তাহলে এখন বলার মানে নেয় কোনো।

তোমার কাছে না থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে আছে।

জ্বি বলুন।

প্রতিবার যাই কিছু মনে হয়না। কিন্তু এবার কেন জানি মনে হচ্ছে এটাই তোমার আমার শেষ দেখা।

নেহালের কথা শুনে হৃদয়টা ধক করে উঠলো। ঘৃণার আড়ালের ভালোবাসাটা দেখাতে চাইনা। তবে সে আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাক এটা কখনো চাইনি৷ দুরে থাকি তবুও সে থাকুক আমার জীবনে, কোনো মায়ায়, কোনো পবিত্র বন্ধনে।

পর্ব ৮ (অন্তিম)

প্রতিবার যাই কিছু মনে হয়না। কিন্তু এবার কেন জানি মনে হচ্ছে এটাই তোমার আমার শেষ দেখা।

নেহালের কথা শুনে হৃদয়টা ধক করে উঠলো। ঘৃণার আড়ালের ভালোবাসাটা দেখাতে চাইনা। তবে সে আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাক এটা কখনো চাইনি৷ দুরে থাকি তবুও সে থাকুক আমার জীবনে, কোনো মায়ায়, কোনো পবিত্র বন্ধনে।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে নেহাল বলল,
কিছু বলছো না যে!
,
কি উত্তর দেব আমার জানা নেই। কিন্তু আপনার সাথে এটাই শেষ দেখা এটা আপনি কি ভেবে বলছেন?

যদি আমি মারা যায়?

কথাটা শুনে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। যামে ঘৃণা করি সে আমার স্বামী। আমি তো ঘৃণা করি তাহলে কেন এই ধরনের কথায় আমার বুক ফেটে কান্না আসছে?

আমাকে ঘৃণা করো, তাহলে আমার মরার কথা শুনে কেন কান্না করবা?

কে বলেছে আপনার মরার কথা শুনে কান্না করছি।

বুঝেছি ভাঙ্গবা তবুও মচকাবা না। ঠিক আছে থাকো আমি গেলাম।

মেয়েটার কপালে চুমু খেয়ে বের হয়ে গেল।
আমি মনে প্রাণে চাই নেহালের কিছু না হোক। এ কেমন ঘৃণা আমি নিজেও জানি না।

এক ঘন্টাপর,
মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি মেয়েটা পাশেই ঘুমাচ্ছে। মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,

আমাকে মারার হুমকি দিয়ে নেহাল তোকে বিয়ে করেছে, বল মা?

না মা। এটা তুমি কি বলছ? এমন জঘন্য কাজ ও কোনোদিন করতে পারে না।

কিন্তু সেই কাজটাই যে নেহাল করেছে।

মায়ের কথা শুনে সারা শরীর দরদর করে ঘামতে লাগলো। নেহাল খারাপ এতোদিন শুধু আমি জানতাম। এখন তো মাও জেনে গেলো। অবশ্য আলাদা ঘরে থাকার আলাদা কজ দিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন আমি কি বলবো কিছু বুঝতে পারছিনা। আল্লাহ একই বিপদে ফেললে তুমি?

না মানে মা……

সব কিছুর পিছনে কারণ থাকে মা। নেহাল এমন কে চরিত্র যা চাদরে ঢেকে রাখা। কিন্তু তুই তো চাদর খুলেই দেখিস নি। তাহলে জানবি কি সত্যটা কি আর মিথ্যাটা কি?

তোমার কোনো কথায় আমি বুঝতে পারছিনা মা!

এই ডায়েরি টা পড়।

ডায়েরির উপরে খুব সুন্দর করে লেখা রয়েছে #একজীবনেশুধুতুমি।
আমাদের প্রেম চলাকালীন সময়ে নেহাল বারবার বলতো এই কথাটা আর এটাও বলতো,”তোমার আমার প্রেম কথা ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করে রাখি। ডায়েরির একটা নামও দিয়েছি, একজীবনে শুধু তুমি।”

এটাতো নেহালের ডায়েরি মা? (অবাক চোখে মাকে জিজ্ঞাসা করলাম)

হ্যা নেহালের ডায়েরি। স্টোর রুমে পেলাম। পড়ে দেখ।

আচ্ছা তুমি একটু তোমার নাতনিকে দেখো আমি ঐ রুমে গেলাম।

প্রথম পৃষ্ঠা,
আমার জীবনের আলো আমার ভালবাসা রাত্রিকে পেয়েছি। ও আমাকে ভালোবাসে এটা প্রথম শুনলাম। এতো সুখে যে মরে যেতে ইচ্ছা করছে। আমাকে ডিরেক্ট প্রপোজ করতে বলেছে বান্ধবী দিয়ে।

২য় পৃষ্ঠা,

আজকে থেকে রাত্রি আমার। আমাদের জীবনে ভালোবাসা ময় সাজাতে চাই। আমার একজীবনে শুধু তোমাকেই চাই রাত্রি। তোমার সাথে পথচলা শুরু হলো সারাজীবন চলতে চাই। একসাথে মরতে চাই।

তারপর অনেক পেজএ আমাদের ভালোবাসার কথা লেখা আছে।

হঠাৎ একটা পেইজ পড়ে আকাশ থেকে পড়লাম,

রাত্রির বাবা টাকা দিয়ে আমাকে রাত্রির কাছথেকে সরাতে চায়। কিন্তু আমি বলে দিয়েছি একজীবনে শুধু রাত্রিকে ভালোবেসেছি যদি আমি বেচে থাকি তাহলে রাত্রিক ভালোবাসবোই। কিন্তু উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে,”তোমার ভালোবাসার এতোটাই জোর? ঠিক আছে। আমি তাহলে রাত্রিকেই মেরে ফেলবো। দেখবো কেমনে থাকো একজীবনে এক সাথে তোমরা।”

বাবার মুখে মেয়েকে মেরে ফেলার কথা শুনে বিশ্বাস হচ্ছিলো না। কিন্তু আমাকে আবারো অবাক করে দিয়ে উনি বললেন,”নিজের বাবা আর ভাইকে মেরে বিজনেস টা নিজের করেছি তাহলে মেয়েকে কেন মারতে পারবো না?”

এবার সত্যিই আমি ভয়ে পেয়ে যায়।
যে নিজের বাবা ভাইকে মারতে পারে সে মেয়েকে কেন মারতে পারবে না? অবশ্যই পারবে। তাই আমি বললাম,”আপনার মেয়েকে ভালোবাসি, তার মানে তার ভালো চাই আপনি দয়া করে কিছু করবেন ওকে আমি অনেক দুরে চলে যাবো।”

পরের পৃষ্ঠা,
আজকে রাত্রির সাথে সম্পর্ক শেষ করলাম। রাত্রি একটাই কথা বলেছিলো “আচ্ছা”। কিন্তু একবার ইচ্ছা করছিলো যেওনা রাত্রি তুমি ছাড়া আমি অপূর্ণ একজীবনে তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো। তোমার বাবা এই এতিমের সাথে কোনোদিন বিয়ে দিবে না তাই এই সম্পর্কের ইতি টানতে হলো। কিন্তু নিয়তি আমাকে বেধে রেখেছে।

আমার এখন চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা করছে। আমার বাবার কথা কোনোদিন নেহাল বলেয় নি। কেমন মানুষ তুমি। তার মানে কি কিডন্যাপ,মাকে মেরে ফেলতে চাওয়া কোনো নাটক?

আগ্রহ নিয়ে আরো পড়তে লাগলাম আমাকে সব জানতে হবে।

হ্যা সব নেহালের নাটক ছিলো। নিজেকে খারাপ বানিয়ে আমার বাবাকে আমার চোখে খারাপ করেনি।

জবাই করা মুরগির মত ছটফট করছি। আমার কান্না শুনে সারা,রবি আর মা চলে আসে।

আমার ছটফটানি কেও থামাতে পারছেনা। কি করে থামাবে নিজের অপরাধ বোধ এতো বেশি হয়ে গেছে যে আমাকে আমি কন্ট্রোল করতেই পারছিনা। আমার বাবাকে ভালো বানানোর জন্য এতো নাটক করেছে নেহাল। কিন্তু তুমি যে এতোদিন এতো অবহেলা পেলে, আমি এখন কি করবো? নিজের চুল নিজে ছিড়ে ফেলছি। কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেছি।

যখন জ্ঞান ফেরে নিজেকে বিছানায় আবিস্কার করি। আবার চিল্লিয়ে কেদে উঠি। এই মুহূর্তে আমার মাথায় একটা কথায় আসছে। এটাই হয়তো আমার শেষ দেখা।

না এটা শেষ দেখা হতে পারে না নেহাল। তোমার পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটা না দিয়ে কোথায় যেতে পারো না তুমি।

তুই শান্ত হ রাত্রি।

রবি, কিভাবে শান্ত হবো বলতে পারিস? যাকে এক আকাশ ভালোবাসা উচিত ছিলো তাকে ঘৃণা করে গেছি। কি ভাবে শান্ত হবো? তুই শান্ত হ আমি দেখছি। কেন তোরা বলিসনি এসব? আমার বাবাকে ভালোবানিয়ে রাখার জন্য? হাস্পাতালের সেই মেয়েটাকে কেন বাড়ি এনেনি? যাতে আমি ওকে আরো ঘৃণা করি? বাবাকে নিয়ে না ভাবি? কিন্তু দেখ না! আজকে সত্য গোপন নেয়। ওকে ডাক নাহলে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

তুই ঠান্ডা হ আমি কল দিচ্ছি।

তারপর রবি নেহাল কে কল দিলো। কিন্তু ও রিসিভ করলো না। আমার কল দিলো। কাকে জানিনা।

হোয়াট কি বলছেন এসব? এটা কখনও হতে পারে না? (রবি কল করে কথাগুলো বলল)

কি হয়েছে রবি? আমি জিজ্ঞাসা করলাম কান্না করতে করতে।

নেহালের ফ্লাইটের প্লেনটা ক্র‍্যাস করেছে। একজন ও বেচে নেয়।

আমি পাগলে মত কান্না করতে লাগি। ছটফটিয়ে উঠি আবার। আমাকে কেন মাফ চাওয়া সুযোগ দেওয়া হলো না আল্লাহ।

নেহাল তুমি আমাকে একবার মাফ চাওয়ার সুযোগ না দিয়ে কোথাও যেতে পারো না। আয়ায়ায়া।

কেও কলিং বেল বাজালো। রবি গিয়ে দরজা খুলে দিলো।

সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। দৌড়ে গিয়ে পা জড়িয়ে ধরলাম।

আমাকে মাফ করে দাও নেহাল। যেই তোমাকে মাথায় তুলে রাখা দরকার ছিলো সেই তোমাকে প্রতিনিয়ত অপমান করে গেছি। তুমি কেন আমার বাবাকে ভালো বানানোর জন্য নিজে ভিলেন সাজতে গেছো। কেন কেন কেন। আয়ায়া।

নেহালে আমাকে দাড় করিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো আমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম নেহাল কে। আমার সারা শরীর এখনও থরথর করে কাপছে।

তোর প্লেন তো ক্র‍্যাস করেছে তাহলে কিভাবে কি? উদ্মিগ্ন কন্ঠে রবি জিজ্ঞাসা করলো।

মিটিংটা বাতিল হয়েছে তাই আর যাওয়া হয়নি। ফিরে এলাম সেজন্য।

রাতে নেহালের বুকে মাথা দিয়ে সুয়ে আছি, মেয়েটা আজ মায়ের কাছে আছে।
তোমার কাছে মেয়েকে জেতে দিইনি, কত অপমান করছি মাফ করবে আমাকে?

দোষ আমার রাত্রি। আমি তোমাকে অন্ধকারে রেখেছি। যে কেও এই পরিস্থিতিতে এমন ই করতো। তবে সব শেষে তুমি আমার এটাই সুখ এটাই ভালোবাসা। এখন বলোতো আমার হৃদইস্পন্দন কি বলছে।

একজীবনে শুধু তুমি।

ভালোবাসি।

লেখনীতেঃ রাফিজা আখতার সাথী

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “একজীবনে শুধু তুমি – তোমাকে নিয়ে কিছু কথার” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – অসময়ে (১ম খণ্ড) – valobashar romantic prem er golpo bangla

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *