বান্ধবী বউয়ের গল্প

বান্ধবী বউয়ের গল্প – দুষ্টু বান্ধবী মিষ্টি বউ

বান্ধবী বউয়ের গল্প – দুষ্টু বান্ধবী মিষ্টি বউ: আচ্ছা তানিয়া, আমি যদি তোকে আমার একটা কাজ করে দিতে বলি।
দিবি না?
“আরে কি বলস দোস্ত, তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড।তোর যেকোনো কাজই আমি করে দিতে প্রস্তুত”।

শুধু কাজটা কি সেটা বল।

কিছু দিন হলো একটা মেয়েকে দেখি আমি।
ওকে দেখলে কেমন জানি লাগে! ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়। মনে হয় আমার জন্যই ওর জন্ম হয়ছে।
তুই ওকে আমার ভালোবাসার কথা বলবি।
কারণ আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবো না। সেই সাহসটা আমার নেই।

তানিয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর বলল,আচ্ছা তুই কি কোনোদিন মানুষ হবিনা?
আমাকে বুঝবিনা?
আমার মতো এতো হট,সুন্দরী একটা বান্ধবী থাকতে অন্য কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করতে চাস কিভাবে?

মানে কি বলছিস?
মাথা ঠিক আছে তোর?

আমার মাথা ঠিকই আছে।

একটা ছেলে প্রেম করে ভালো কিছু সময় কাটানোর জন্য। সে চায় কেউ একজন প্রতিদিন সকালে ফোন দিয়ে তাঁর ঘুম ভাঙিয়ে দিবে। সবসময় খোঁজ খবর নিবে এমন একজন মানুষের জন্য মানুষ প্রেম করে।

আমি তোর সাথে এসবই করি। প্রতিদিন তোর সাথেই সময় কাটাই,তোকে দেখেই আমার সারাটা দিন কাটে।
প্রতিদিন সকালে তো ফোন দিয়ে তো তোর ঘুম ভাঙিয়ে দেই। সবসময় খোঁজ খবর নেই তোর।

তাহলে কেনো তোর প্রেম করা লাগবে আমাকে বল?

আমি কিছু বলতে পারলাম না। তানিয়া ঠিকই বলেছে।

আমরা ছেলেরা চাই কেউ একজন থাকুক। যে সবসময় খোঁজ খবর নিবে। আর সবচেয়ে বড় কথা আমরা ছেলেরা ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে একটা আবেগময় চুমু পেলেই আমাদের আর কিছু চাওয়ার থাকেনা। মনে হয় পৃথিবীর সব সুখ পেয়ে গেছি।

যদি এই জিনিস টা প্রেম না করেই পেয়ে যাই। তাহলে দোষটা কোথায়?

আমার আর প্রেম করা হলোনা। আর তানিয়ার মতো বান্ধবী থাকলে কারো প্রেম করতে চাওয়াও উচিত না।

তানিয়া আমার সবসময় খেয়াল রাখতো। আমি ঠিকমতো খেয়েছি কিনা,সকালে প্রতিদিন ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দিতো।
আমি কখনো ভালোবাসার মানুষের অভাব অনুভব করতাম না।

একদিন মজা করেই তানিয়া কে বলে ফেললাম।
আমি বুঝিনা এতো ছেলে তোর সাথে প্রেম করার জন্য পাগল কেনো?
তোর মাঝে তেমন কিছু দেখিনাতো। যা দেখে প্রেম করা যায়।

আমার মতো একটা মেয়ে নিজের জীবন সাথী হিসেবে পেয়ে দেখাও। তারপর আমার সম্পর্কে বইলো।
তানিয়া কথাটা সিরিয়াসলিই বলেছিলো।
কিন্তু আমি শুধু মজা করতে চেয়েছিলাম।

এসএসসি পরীক্ষার পর তানিয়া কে দেখলাম একটা ছেলের সাথে বাইক এ চড়ে ঘুরতে। মাঝে মাঝেই দেখি। তখন একটু খারাপ লাগা শুরু করলো।

তানিয়ার পাশে কোনো ছেলেকে আমি সহ্য করতে পারিনা।
আমার ভালো লাগেনা যখন দেখি সে অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলে।

দেরিতে হলেও বুঝতে পারলাম আমি তানিয়াকে ভালোবাসি। তাই তাকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।

তানিয়া, তোর সাথে একটু কথা ছিল।
দেখা করতে পারবি?

ফোনেই বল।
না, দেখা করলে ভালো হয়।
আচ্ছা কাল বিকেলে বাসার এদিকে আছিস। এটা বলেই ফোন রেখে দিল তানিয়া।

তোকে একটা সত্যি কথা বলি।
আমি এই কয়েকদিন এ তোকে অনেক মিস করেছি। তোকে ছাড়া আমার নিজেকে শূণ্য শূণ্য লাগে। তোর সাথে কোনো ছেলেকে সহ্য করতে পারিনা আমি।
আমি তো শুধু তোর জন্যই আজ পর্যন্ত কারো সাথে প্রেম করেনি,কাউকে ভালোবাসিনি।কিন্তু আজ বুঝতে পারছি তোকে আমি অনেক ভালোবাসি।

থাম থাম। কি বললি?
ভালোবাসিস?

বাট আমি তো কখনো ভালোবাসিনি আর ভবিষ্যতেও বাসবো না।

আমি দুুই বছর আগে থেকেই একজন কে ভালোবাসি। তাকেই বিয়ে করবো।

ভালোবাসার মানুষ থাকার পরও কেনো আমার এতো কাছাকাছি এসেছিলি?

নিরাপত্তার জন্য?

মানে?

তুইতো জানোসই,আমার পেছনে কতো ছেলে ঘুরতো,আমাকে বিরক্ত করতো।
কিন্তু যখনি তোর সাথে বন্ধুত্ব করলাম। তখনই এসব কমে গেলো।
তুই ভালো ছাত্র ছিলি,তোকে সবাই চিনতো। তাই আমাকে কেউ বিরক্ত করতো না। সবাই ভাবতো আমি তোর ভালো বন্ধু। তাই কেউ বিরক্ত করার সাহস পেতোনা।
কিন্তু তুুই যখন বললি কারো প্রেমে পড়েছিস। তখন তোকে আমার কাছে রাখার জন্য এসব করেছি। একটু ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়েছি। না হলেতো আমার সেফটি দিতিনা। তুই নিজের অজান্তেই আমার সেফটি দিয়ে এসেছিস এই দুই বছর।

মানে এতোদিন আমাকে ব্যবহার করেছিস?

ওরকমটাই ধরে নিতে পারিস।

আমি কিছু বলতে গিয়েও যেনো থেমে গেলাম।
ও যদি আমার কাছে সাহায্য চাইতো এমনিতেই ওকে আমি সাহায্য করতাম। কিন্তু আমাকে ব্যবহার করলো?

তোকে কিছু বলার নেই। শুধু এতোটুকুই বলবো
যে ছেলেটার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিস ছেলেটা ভালো না। বিয়ে করিস না ওকে। তাহলে সারাজীবন কাঁদতে হবে।
আমার কথা চিন্তা না করলেও হবে।
নিজেকে নিয়ে চিন্তা কর।
যদি কোনোদিন আমার চেয়ে সুন্দরী কাউকে বিয়ে করতে পারিস। সে দিন আমার সামনে আসিস।

তারপর আমি চলে আসি।

দশ বছর তাঁর সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে তাঁর বিবাহিত জীবন সম্পর্কে খোঁজ খবর পেতাম। তাকে দিয়ে নাকি অনেক কাজ করাতো। খুব সুখে ছিলনা তানিয়া।

আজ দশ বছর পর স্কুলের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সবাই সমবেত হয়েছি।

ছেলেটাকে চিনতে পারছি। ওই ছেলেটার সাথেই তো তানিয়ার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু মেয়েটাকে চিনতে পারছিনা।
খুব কাছে গিয়ে যখন দেখলাম তখন যেনো আমার পৃথিবী টা থেমে গেলো।
এটাই কি সেই তানিয়া?
যার রুপে একসময় আগুন জ্বলতো। যাকে দেখে হাজার হাজার ছেলে মুহূর্তেই মধ্যেই প্রেমে পড়ে যেতো।
আজ কি অবস্থা তাঁর?

আমি যখন সবার সাথে দেখা করলাম। তখন আমার বউকে দেখে জ্বলে উঠার মতো অবস্থা সবার।
আর তানিয়া তো হা করে তাকিয়ে ছিল।

আমি আমার কথা রেখেছি। তুমি বলেছিলে তোমার থেকে সুন্দরী কাউকে বিয়ে করতে পারলে যেনো তোমার সামনে দাঁড়াই।
দেখো আমার জীবন সাথী কে আর তাকাও তোমার নিজের দিকে। তুলনা কর তোমার সাথে। তানিয়া চুপ হয়ে গিয়েছে।

তাই আমিও আর কিছু বলিনা।

আমি আর আমার বউ চলে আসছি। পেছন থেকে তানিয়া বলে উঠলো।
সত্যিই কি তোমার বউ? নাকি ভাড়া করে নিয়ে আসছো আমাকে দেখানোর জন্য।

আমি কিছু বলিনা।
শুধু আমার বউটার কোমরে হাত রেখে চলে আসি। আমার বউটাও জানি কেমন?
এসময় কেউ কী এতো রোমান্টিক হয়?

তানিয়া তো জ্বলে পূড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
তবে সেটা মনে হয় আমার প্রিয়তমা বউ জানেনা।

  • বান্ধবী
    আমিনুর রহমান

আরো পড়ুন- নতুন বিয়ের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *