মিষ্টি যন্ত্রনা – Valobasar Romantic Premer Golpo

মিষ্টি যন্ত্রনা – Valobasar Romantic Premer Golpo: একটা মিষ্টির দোকানে গিয়ে টেবিলে বসিয়ে দেয় লাবিবাকে। ওয়েটারকে কয়েকটি মিষ্টি বউ আনতে বলে। লাবিবা চুপচাপ বসে থাকে। ওয়াটার মিষ্টি দিয়ে গেলে বিনা বাক্য তানভির খেতে থাকে।


পর্ব ১

উফফ ডেইলি এই সকাল ছয়টায় শীতের মধ্যে হেটে হেটে প্রাইভেটে যেতে হয়। আর ভাল্লাগেনা। দীর্ঘ সতের বছর থেকে এই কাজটাই করতেছি কবে যে এর অবসান ঘটবে আল্লাহই যানে। মরার স্টাডি লাইফ আর শেষ হয় না। ওমা আমার জুতো ছেড়া কেনো? আম্মুনি…আম্মুনি ….আম্মুনি…আমার পাম্পিং জোড়া কে পড়েছিলো?

আস্তে কথা বলা যায় না? সকাল বেলা তোর চিল্লাচিল্লিতে সবার ঘুম ভেঙে যায়। পাম্প মেশিন কোথায় পেলি?
আহা পাম্প মেশিন কোথায়! এই পাম্প ওয়ালা জুতার কথা বলছি।

খামস বাছা। তোর খালার বাসা থেকে কষ্ট করে দশ মিনিট পায়ে হেটে নিউমার্কেট গিয়ে তোর জন্য উপহার স্বরুপ নয়শত টাকা দিয়ে উচু জুতো কিনে এনেছি আর তুই পাম্প দেয়া জুতো বলছিস?
ফাপর কম দেও আম্মুনি। আমার প্রাইভেটের এক মেয়েও এই জুতা কিনছে নব্বই টাকা দিয়ে। আগে বলো এই উপরের ফুলটা ছিড়ছে কে?

সিদরাতুল ছিড়ছে।
ওহ। গেইট লাগাও। গেলাম আমি।
লাবিবা বেরিয়ে গেলে যেনো ছাবিনা দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে। কোমড়ে শাড়ির আচল গোজে পিছু ফিরতেই দেখে ইসমাইল দাড়িয়ে হাই তুলছে।

মেয়ে বেরিয়ে গেছে? প্রশ্ন করে ইসমাইল।
হুম। একটু যাও না গো সাথে। কুয়াশায় কিছুই চোখে পড়েনা। এতো সকালে একা একা বেড়িয়ে গেলো রাস্তায় কুকুর থাকলে তো দেখবেও না উপর দিয়ে হেটে চলে যাবে।
সুয়েটারটা দাও।

পেছনে ব্যাগ ঝুলিয়ে হুডির টুপিটা আরো টেনে নিয়ে চকলেট খেতে খেতে কাপতে কাপতে হাটছে লাবিবা।
ঠান্ডায় পুরো বরফ জমা হয়ে যাচ্ছে। খুব সাবধানে ভয়ে ভয়ে পা ফেলছে। কেনো জানিনা রাস্তার কুকুর গুলো দেখলেই তেড়ে আসে ঘেউ ঘেউ করে। পেছন থেকে কেউ চাদর চাপিয়ে দিতেই পিছু ঘুরে।
ওহ আব্বু। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

ভয় কেনো পাবে? ছোট থেকেই যাতায়াত করছো এখনো কেনো ভয় পাও? বুক উচিয়ে চলবে। আমার মেয়ে যেনো কোন কিছুতে ভয় না পায়।

প্রাইভেটে পৌছে দিয়ে বাসায় ব্যাক করে ইসমাইল।লাবিবা স্যারের বাসায় ঢুকে যায়। স্টাডি রুমে এসে বেঞ্চিতে বসে পড়ে। স্যার আসতেই স্যারের সাথে সাথে একটা ছেলেও আসে। কাধ থেকে ব্যাগ খুলে লাবিবার পাশে বসে পড়ে। স্যার পড়ানো শুরু করে। পড়ার মাঝখানে লাবিবা হটাৎ করে ছেলেটার দিকে তাকায়। লম্বা ফর্সা গড়নের সুইট একটা ছেলে। লাবিবা জিজ্ঞাসা করে,
কোন ইয়ার?

ফাস্ট ইয়ার। ইউ?
তোমার ওয়ান ইয়ার সিনিয়র।
নাইস টু মিট ইউ।
স্যার কি বলে শোনো।

পর পর দুটো প্রাইভেট শেষ করে বাসায় চলে আসে লাবিবা। বড় ভাই লিটনের দেড় বছরের মেয়ে সিদরাতুলকে নিয়েই সময় কেটে যায়। রাতে পড়তে বসে। মেথ বই খুলে পড়ার পৃষ্টা বের করে সামনে রেখে নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। একটা লাল গোলাপের পাপড়ি বইয়ের ভিতরে। আজকে তো কেউ প্রাইভেটে লাল গোলাপ আনেনি। তাহলে? পাপড়ি টা হাতে নিয়ে চিমটি কাটতে কাটতে পড়ায় মনোযোগ দেয় লাবিবা।

পরদিন প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য বের হয়ে দেখে কুয়াশা কম। হাত ডলতে ডলতে এগিয়ে যায়। স্টাডি রুমে গিয়ে বসার কিছুক্ষন পর স্যার আসে। স্যার এসেই বলে,
সবাই চলে আসছে?

একজন ছাত্র বলে,
স্যার ফাস্ট ইয়ারের নতুন ছেলেটা আসেনি এখনো।
ওহ। ও আসবেনা বলে গেছে আমাকে। আজকে বাসা সিফট করার কথা ওদের। বই খুলো। যোগান রেখা বের করো। শোনো যেহেতু ব্যাষ্টিক অর্থনীতি ফাস্ট এন্ড সেকেন্ড ইয়ার সেইম পড়া তাই তোমাদের ফাস্ট এন্ড সেকেন্ড ইয়ার একসাথে পড়াচ্ছি।
আমরা জানি স্যার। নো প্রবলেম।

প্রাইভেট শেষ করে কলেজে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসে। সাবিনা বলে,
আজকেও ক্লাস করিসনি তাই না?
রোজ রোজ এতো ক্লাস ভালো লাগেনা আম্মুনি। সিদরাতুল কোথায়? টেবিলে খাবার দাও।
ভেতরে গিয়ে দেখে সিদরাতুল ফ্লোরে বসে মোজা কামড়াচ্ছে। হাত থেকে মোজা কেড়ে নিয়ে সিদরাতুলকে কোলে তুলে নিয়ে ভাবীর খোজ করে।

রান্না ঘরে মমতাকে দেখে বলে,
ভাবী তুমার মেয়ে জুতা মোজার মধ্যে কি পায় বলতো? কাল দেখি আমার জুতো ছিড়ে রেখেছে কামড়ে আজ মোজা কামড়াচ্ছে। দুধ না খাইয়ে খাইয়ে ইদুর বানিয়ে ফেলছো মেয়েটাকে।

মমতা বাটিতে সিদ্ধ ডিম আর নরম ভাত লাবিবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
খাইতেই চায়না তো আমি কি করবো বলো। এখন এটা খাওয়াও দেখি খায় নাকি।

লাবিবা একহাতে সিদরাতুল আরেক হাতে বাটি ধরে ছাদে চলে আসে। পাটি বিছিয়ে খেলনা দিয়ে সিদরাতুলকে বসিয়ে দেয়। ভাত মাখিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু খাওয়াতে পারে না। কোলে তুলে নিয়ে হেটে হেটে খাওয়াতে থাকে। সিদরাতুল একটু খায় তো বেশিটুকুই মুখ থেকে ফেলে দেয়। ছাদের কর্ণারে যেতেই নিচের দিকে তাকাতেই দেখে গলির মুখে লড়ি ভর্তি মালপত্র। পাশের বিল্ডিং এর সুখী ছাদে এসেছে। হাত ভর্তি ভেজা কাপড়। দড়িতে কাপড় মেলতে থাকে। সিদরাতুলকে দেখে ডাক দেয়,
সিদরাতুল…..ভাত খাচ্ছ তুমি?

সিদরাতুল সুখীকে দেখে কোলে যাওয়ার জন্য হাত পা নাড়তে থাকে। মুখ ভরা হাসি আর আ আ আওয়াজ বের করে। সুখী ছাদের কিনারায় এসে দাড়ায়। লাবিবাও কিনারা ঘেসে দাড়ায়। দুই ছাদের মাঝে দুই হাত দুরত্ব শুধু। সুখী সিদরাতুলের সাথে কথা বলছে আর সিদরাতুল লাফাচ্ছে। লাবিবা সুখীকে বলে,
সুখী আপু এ গলিতে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে নাকি?

গলিতে না। আমাদের বাসাতেই এসেছে। দুতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। ফ্যমিলি থাকবে। আংকেল আন্টি আর তাদের এক ছেলে। আংকেল কৃষি অফিসার বদলি হয়ে এখানে এসেছে।
ওহ। লড়ি দেখলাম তো তাই। বাসায় এসো আপু।
তুই আসিস। সিদরাতুলকে নিয়ে।

আচ্ছা। নিচে গেলাম। সিদরাতুল ফুপিকে টা টা দেও।
সিদরাতুল সুখীকে হাত নাড়িতে তা তা দেয়।

দুদিন পর লাবিবা ফ্রেন্ডসদের সাথে বের হয়। সরকারি ছুটির দিন হওয়াতে স্যাররা প্রাইভেট ও অফ রেখেছে। পাচঁ বান্ধবী লাবিবা মোহনা সাদিয়া তিথী তনুজা যখন একসাথে বের হয় তখন এক ড্রেস পড়ে। লোকে দেখলে ভাবে এরা পাচ বোন।

কেনাকাটির সময় এক ড্রেস কেনার জন্য সবাই একসাথেই শপিং এ যায়। যে যে শোরুম থেকে ড্রেস কেনা হয় তারা ভালো ড্রেস গুলো অনেকগুলো পিচ করে নিয়ে আসে যেনো এই পাচঁজন কাস্টমার হাত ছাড়া না হয়। গ্রামীন চেকের রেড ব্ল্যাক টপসের সাথে ব্ল্যাক জেগিন্স আর গলায় ব্ল্যাক স্কার্ফ পড়ে বের হয় পাচঁ ফ্রেন্ড একসাথে।

কাধে সেইম রেড কালার ব্যাগ। সাঝঁ ও সেইম। রাস্তা দিয়ে যখন হাটে তখন লোকজন হা করে তাকিয়ে থাকে। অটো ডেকে উঠে পড়ে সবাই। গন্তব্য আলহামদুলিল্লাহ সুইটস এন্ড রেস্টুরেন্টে পৌছেঁ ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে ঢুকে।

একটা বড় টেবিলে গিয়ে বসেই সেল্ফি নেওয়া স্টার্ট হয়। আধঘন্টা নতুন এই মনোরম সুন্দর রেস্টুরেন্টে সেলফি কুলফি নেওয়া শেষ করে ওয়েটারকে ডাকে। মেক্সিকান সাবওয়ে আর কিছু ডেজার্ট অর্ডার করে। ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে গেলে মোহনা বলে,
তোরা কি জানিস আজ আমি তোদের ট্রিট দিচ্ছি।

সেটা তো সবাই জানি। কিন্তু কেনো দিচ্ছিস সেটা বল।
এই মাসের উনত্রিশ তারিখ আমার কাবিন।
সত্যি মামী? আমরা মামা পাইতাছি? হুর্রেএএ …আয় খুশিতে বুকাবুকি করি।

সবাই উঠে একজন আরেক জনকে হাগ দেয়। ওয়েটার এসে ম্যাম বলে ডাকলে একজন আরেকজনকে ছেড়ে চেয়ারে বসে পড়ে। ওয়েটার প্লেটার দিয়ে যায় এক এক করে। হটাৎ চোখ পড়ে যায় পাশের টেবিলে। লাবিবাদের মতো সেইম চেকের শার্ট গায়ে বসে আছে। সামনে একটা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকার সময় যে ডেজার্ট গুলো দেখেছে সব গুলো সাজানো। বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম বলে একটা দিয়ে শুরু করে খাওয়া। পাচঁ বান্ধবী প্রায় অবাক হয়ে দেখছে এর খাওয়া।

একেতো সেইম কালার ড্রেস তার উপর পুরো টেবিল সাজানো ডেজার্ট। সব গুলো শেষ করে ওয়েটার কে আবার ডেকে বলে,
গিভ মি সাম রসগোল্লা সুইটস প্লিজ। যেগুলো এতো সফট আর এট্যাকটিভ যে লোভ সামলানো যায় না দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে।

কয়টা দিবো স্যার?
দিতে থাকুন।

ওয়েটার রসগোল্লার বন্যা বয়িয়ে দিয়েছে। এদিকে ছেলেটা শুধু মুখে পুরছে আর চোখ বন্ধ করে খাচ্ছে।
লাবিবাতো গুনতে শুরু করেছে একচল্লিশ, বিয়াল্লিশ, তেতাল্লিশ …… পুরোপুরি চৌষট্টিটি রসগোল্লা কাভার করে ফেলেছে। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে বিল রেখে চলে যায়। ওয়েটার এসে লাবিবার সামনে বিল রেখে বলে,
ম্যাম বিলটা।

বিলের দিকে তাকিয়ে সবাই অবাক। বিল কম বেশি হয়েছে জন্য নয় এর জন্য যে ওরাতো এখনো খাওয়াই শুরু করেনি তার আগেই বিল চলে এসেছে। প্লেটার গুলোর দিকে তাকিয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় সাদিয়ার। রাগ দেখিয়ে বলে,
আমরাতো এখনো খাওয়াই শুরু করিনি আর আপনি বিল ধরিয়ে দিলেন? আমরা আরো কিছু তো নিতেই পারি।

মেম, আমি জিজ্জাসা করেছিলাম আপনাকে। আপনি কিছু নিবেন না বলেছেন।( মোহনার দিকে তাকিয়ে)
এবার মোহনা নিজের মাথায় নিজেই চাপড় দেয়। এতোটা ধ্যানে পড়েছিলো যে কি বলেছে মনেই নেই তার। এবার সবাই তাকায় লাবিবার দিকে। লাবিবা মাথাটা নিচু করে নেয়। একসাথে সবাই বলে উঠে,
তোর দোষ। তুই নিজেও মানুষের খাওয়ার দিক হা করে তাকিয়ে থাকিস এখন আমাদের কেও তাকিয়ে থাকতে শেখাচ্ছিস।

লাবিবা বলে, ওহ কামন দোস্ত। দেখছিস কিভাবে খেলো? খাওয়া হলো একটা আর্ট। ছেলেটা এত্তো আর্ট করে খেলো যে আমি সহ তোরাও তাকিয়ে ছিলি। বুঝতে পারছিস ব্যপার টা? ডেজার্টে না হলেও ত্রিশটা আইটেম হবে সব একপিস করে খেলো তারপর পুরো চৌষট্টিটা রসগোল্লা খেলো। এই না হলে খাদক! এর থেকে কিছু শিখ বুঝলি। আমার তো দুইটার বেশি রসগোল্লা খেলেই পেটে ঠান্ডা লাগে আর খেতেই পারি না।

তনুজা বলে, কি হেন্ডসাম বয় দোস্ত …ভাল্লাগছে সিরিয়াসলি ভাল্লাগছে। কি সুন্দর করে বললো সফট আর আ্যাটাকটিভ যে লোভ সামলানো যায় না দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।

সবাই একযোগে হেসে উঠে। তনুজার পিঠে চাপড় দিয়ে তিথি বলে, জুনিয়র পোলা মামী। কন্ট্রোল মামী কন্ট্রোল।
তনুজার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। রাগ দেখিয়ে বলে, হাসি থামা। জুনিয়র আগে বলবিতো।
হুম। সেদিন প্রাইভেটে তুই ছিলিনা জন্য জানিসনা।
বেড লাক।

সবাই খাওয়া শেষ করে। লাবিবা মোহনার দিকে বিলটা এগিয়ে দেয়। মোহনা বিল বুক টা ওপেন করতেই গোলাপের পাপড়ি দেখতে পায়। লাল গোলাপের পাচঁটি পাপড়ি। পাচঁজন হাতে পাচঁটি পাপড়ি নিয়ে নেয়। সবাই ভাবে রেস্টুরেন্ট থেকেই দিয়েছে। কিন্তু লাবিবার মনে খচ খচ করতে থাকে কারন সে আগেও একটি পাপড়ি পেয়েছিলো। অতটা মাথা না ঘামিয়ে বাসায় চলে আসে।
মমতা রুমের দরজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে লাবিবা বলে উঠে, কাম ইন।

মমতা দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে দেখে লাবিবা পড়তে বসেছে। সামনে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
নাও কথা বলো।
কে ভাবি?
তোমার ফিওন্সে। মানে আমার হবো ননদাই।

কথা বলবোনা।
ওমা কেনো?
কেনো মানে? উনার কি সময় আছে আমার সাথে কথা বলার?
আহা!কি রাগ! কথা বলে রাগ মেটাও আমি গেলাম।

লাবিবা ফোন কানে নিয়ে বসে আছে। ওপাশে থেকে বার বার সরি শব্দটি প্রতিধ্বনি হচ্ছে। শেষমেষ লাবিবা মুখ খুলে,
সরি আর বলতে হবে না। আই থিংক ওয়ান মানথ এগো ইউ টক ইউথ মি। আমার যদি কোনো ইমপর্টেন্স থাকতো তোমার সাথে তাহলে ওয়ান মানথ টা হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও ওয়ান ডে তে চলে আসতো।

লাবিবা টাস্ট মি। অনেক বিজি থাকতে হয় আমাকে। তোমাকে যখন আমার বিজনেসে ইনভলভ করবো তখন বুঝবে তুমি।
আমি ফোনটা রাখছি।
হে ওয়েট, এতো দিন পর ফোন দিলাম আর তুমি এখনি রেখে দিবে। বাই দ্যা ওয়ে আমি নেক্সট মানথ এ আসছি।

রিয়েলি?
রিয়েলি ডারলিং। হ্যাপি তো?
অনেকমাচ।


পর্ব ২

সকাল হতেই সুয়েটার গায়ে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়লো স্যারের বাসার উদ্দ্যেশ্যে। রাস্তায় এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে হাটছে। কখন না জানি কোন কুকুর সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে আর ঘেউ ঘেউ করে উপরে উঠে পড়ে।

যেখানে কুকুরের ভয় সেখানেই সকাল হয়। সামনে কয়েকটা সাদা কুকুর তাকিয়ে আছে লাবিবার দিকে। আসলে এদের গায়ের রং সাদা কালো বাদামী। কিন্তু কুয়াশায় পুরোটাই সাদা দেখা যাচ্ছে। লাবিবা সাহস করে এগিয়ে যায়। যেইনা সামনে গিয়েছে দেখে এই বড় বড় জিহবা বের করে তাকিয়ে আছে কুকুরের দল লাবিবার দিকে।

লাবিবা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নিকুমতু মিনাজ্জুয়ালিমিন বলে পাশ দিয়ে দৌড়। এই মুহূর্তে কোন দোয়া পড়বে জানা নেই তাই যা মুখথেকে বের হয়েছে সেটা বলেই দৌড়। পিছু পিছু কুকুরের দল ও দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় ধপাস। পেছনে কুকুর সামনে খাম্বার ধাক্কা ভেবেই লাবিবা চিক্কুর। কিন্তু খাম্বা দিয়ে ব্যথা পেলো না কেনো?

যে জোরে ধাক্কা লেগে ধপাস হয়েছে তাতে তো নাক মুখ থেতলে যাওয়ার কথা। কিন্তু একটুও তো রক্ত পড়ছেনা। সামনে তাকিয়ে দেখে কিছুই নেই তাহলে কিসের সাথে ধাক্কা খেলো? পেছনে তাকাতেই দেখে একটা ছেলে হাতের বিভিন্ন ভঙিমা করছে আর কুকুর গুলো পালিয়ে যাচ্ছে। লাবিবা চেচিয়ে বলল,
এই ছেলে, ওমন ক্যাঙ্গারুর মতো কিলবিল করছো কেনো?

ছেলেটি পিছু ঘুরে বলে,
সিরিয়াসলি মিষ্টি? ক্যাঙ্গারু কিলবিল করে?

লাবিবা আস্তে করে উঠতে নিতেই পড়ে যেতে ধরে। আবার নিজেকে সামলিয়ে উঠে দাড়ায়। ছেলেটির দিক তাকিয়ে বলে,
নাহ তুমি তো মানুষ। তাহলে তুমি মানুষ কিলবিল করে। এখানে কি করছো?

পিছু ঘুরে আঙুল দিয়ে পিঠের ব্যাগ দেখিয়ে বলে, প্রাইভেটে যাচ্ছি।
ও হ্যা। আমি তো তোমাকে চিনি। তুমি মিষ্টি খাদক। রেস্টুরেন্টে পুরো চৌষট্টিটা রসগোল্লা খেয়েছো। আরো অনেকগুলো ডেজার্ট আইটেম খেয়েছো।

ছেলেটি মাথা নাড়ায়। বলে, জি মিষ্টি। যতদিন অমৃত মিষ্টি না খাচ্ছি ততোদিন বানানো মিষ্টি খেয়ে যাবো।
লাবিবা ভ্রু কুচকে তাকায়। অমৃত মিষ্টি আর বানানো মিষ্টির মধ্যে তফাত কি? অমৃত মিষ্টি কি প্রাকৃতিক? জিজ্জাসা করবে একটি বার? না থাক করতে হবে না। মুখ স্বাভাবিক করে বলে,
এই ছেলে, নাম কি তোমার?

আমার নাম তানভীর খান মিষ্টি।
এই ছেলে, কথায় কথায় মিষ্টি বলো কেনো? মিষ্টি তো মেয়েদের নাম। নাকি তুমি মিষ্টি খাদক জন্য সবাই তোমার নামের শেষে মিষ্টি টাইটেলটা লাগিয়ে দিয়েছে?

মিটি মিটি হেসে লাবিবার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,
তোমার নাম মিষ্টি। আমি তোমাকে মিষ্টি বলেই ডাকবো।
কেনো কেনো?

তুমি জানো আমি যখন সাত দিনের বেবি তখন কত রিচুয়াল ফলো করে আস্ত একটা খাসি দিয়ে আমার নামে আকিকা দিয়েছে!
তুমি দেখতে খুব মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ে। রসগোল্লার মতো গালজোড়া। মিষ্টি করে হাস। একদম লিচি ফ্লেবার সুইটস। তাই আমি তোমাকে মিষ্টি ছাড়া অন্যকিছু ডাকতে পারবো না।

লাবিবা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কি সুন্দর করে একটা জলজ্যান্ত মানুষকে মিষ্টি বানিয়ে দিলো ফ্লেবার সহ ভাবাগো ভাবা ভাভা যায় এগ্লা? সরাসরি রুপের প্রশংসা। কলিজা আছে বলতে হবে। দুপা এগিয়ে একদম সামনে গিয়ে দাড়ায়। লম্বা মানুষটার দিকে তাকাতেও আকাশ পানে চাইতে হয়।

তানভীরের চোখের দিকে চোখ কুচকে তাকিয়ে বলে,
এই ছেলে তুমি তো দেখতে কিউট আছো। তোমাকে কে কি কিউট পোলা বলে ডাকবো?
আমাকে জন্মের সাতদিনের দিন একটা না দুটো খাসি দিয়ে আকিকা দিয়েছে।
এই ছেলে, সিনিয়রের মুখে মুখে একদম চাপা মারবেনা।

ঝাড়ি দিয়ে সরে দাড়ায় লাবিবা। তানভীর দাত বের করে আছে। রাস্তা থেকে ব্যাগ কুড়িয়ে কাধে ঝুলায় লাবিবা। তানভীর ঘড়িটা সামনের দিকে এনে তাকিয়ে বলে, মিষ্টি আর দুই মিনিট আছে প্রাইভেট স্টার্ট হওয়ার।
ও আমার আল্লাহ। এখান থেকে তো দশ মিনিটের রাস্তা আর আমি তোমার সাথে বকবক করতেছি! আর কিছু না বলেই লাবিবা দেয় দৌড়।

মিষ্টি আমাকে সাথে নিয়ে যাও আমি এই রাস্তায় আগে কখনো যায়নি বলে পিছু পিছু তানভীরও দৌড়।
স্যারের রিডিং রুমে হাপাতে হাপাতে এসে লাবিবা বসে পড়ে পিছু পিছু তানভীরও এসে লাবিবার পাশে বসে পড়ে। স্যার দুজনকে একসাথে হাপাতে দেখে বলে, তোমরা কি এখনো ছোট আছো যে কার আগে কে আসবে প্রতিযোগিতা করে দৌড়াও। অনার্সে পড়ো অথচো এখনো বড় হলে না। লাবিবা তানভীর চুপ। স্যার পড়ানো শুরু করে।

ক্যাম্পাসে ক্লাস শেষে বসে আছে পাচঁ বান্ধুবী। মোহনা বলে, কিরে ম্যারাথন দৌড় দিয়ে হাপাচ্ছিলি কেনো?
হাতে আর দু মিনিট ছিলো যখন আমি দশ মিনিটের রাস্তায় ছিলাম।

তো তোর সাথে জুনিয়র পোলাটা দৌড়েছিলো কেনো?
রাস্তায় একসাথেই আসছিলাম। ঐ ছেলেই বললো আর দু মিনিট টাইম আছে।
তখনি তানভীর এসে ঘাসের উপর বসে পড়ে। পাচ জনের চোখ ও সাথে সাথে তানভীরের উপর।

তানভীর ওদের দিকে তাকিয়ে মুখে একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বলে,
আশপাশটা খালি খালি লাগলো তাই ভিড়েই এসে বসলাম। উঠতে বললে উঠতে পাড়বোনা এই বেয়াদবির জন্য অগ্রিম সরি।
পাচঁজনেই মাইন্ড না করে গল্পে মশগুল হলো। তানভীর বই খাতা বের করে পড়তে লাগলো। একটু পর বলে উঠল, এক্সকিউজ মি, মিক্রো ইকোনোমিকস কে ভালো পারে? মিষ্টি একটু বুঝিয়ে দাও তো এই টেক্সট টুকু।

সাদিয়া বলে,
ও বাবা। এইটাতো সেই জুনিয়র পোলা মামী। কেমনে এতো মিষ্টি খাও ভাই? যা একটু টিচারগিরী করে আয়। হেল্প লাগবে।
জি। আমি মিষ্টির লাভার। দাওয়াত দিবেন খেয়ে আসবো। কার জানি বিয়ে শুনেছিলাম দাওয়াত দিন অবশ্যই যাবো।
মোহনা বলে, আচ্ছা আচ্ছা দাওয়াত দিলাম এসো আমার বাসায়।
অবশ্যই। আপনার জন্য না হলেও মিষ্টির জন্য যাবো।

লাবিবা এসে টেক্সট টুকু বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসে। বান্ধুবীদের সাথে চলে আসার সময় তনুজা মুখে বিরক্তি নিয়ে বলে, তোর তো এটা কাবিন রে মামী। জুনিয়র পোলারে দাওয়াত দিতে শুরু করেছিস।

আরে আমি কি করবো? কেউ যদি সেধে সেধে দাওয়াত নেয় তাহলে তো দিতেই হয়।
সাদিয়া হাতে হাতে ঝালমুড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলে, আরে প্যারা নিস না। একজন ই তো বাইরের মানুষ যাবে। এতো চাপ নেওয়ার দরকার কি? ফেমেলিকে ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেই হবে।
হুম। চল যাওয়া যাক।

ছাবিনা ময়লা ফেলার জন্য পাশের গলিতে ফাকা জায়গায় ময়লা স্তুপে এসেছে ঝুড়ি নিয়ে। ময়লা ফেলে ঝুড়ি নিয়ে ফিরতেই সুখীর মার সাথে দেখা। সাথে একজন মহিলাও এসেছে। ছাবিনা হেসে হেসে বলে, কি ভাবী নতুন ভাড়াটিয়া নাকি?
হা ভাবী। কয়েকদিন হলো উঠেছে। সোহানা ভাবী ইনি ছাবিনা ভাবী। পাশের বিল্ডিং এই থাকে।
ভাবি এখন সময় সংক্ষেপ তাই আলাপ করতে পারছিনা। বাসায় আসবেন ফ্রি টাইমে গল্প করা যাবে।
সোহানা বলে, আচ্ছা ভাবি আপনিও আসবেন।

ছাবিনা চলে আসে। বাসায় এসে লাবিবার কোল থেকে সিদরাতুলকে নিয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়। মমতা কিচেনে রান্না করছে। রাতে খাওয়ার টেবিলে ইসমাইল বলে, কয়েকদিন পর শাহাদ আসার কথা ছিলো কিন্তু কি জানি একটা সমস্যা হয়েছে তাই দুইমাস দেরি হবে আসতে।

লিটন গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলে, আব্বু শাহাদ আসুক বা না আসুক সেটাতে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। আমার শুধু একটাই চিন্তা হয় যে বিয়ের পর না সারাজীবন আমার বোনটাকে একা লীড করতে হয়।
এটা কেমন কথা? বিয়ের পর আমেরিকা নিয়ে চলে যাবে লাবিবাকে। ওর ফেমেলি আছে সেখানে।

আব্বু ফেমেলিই সব কিছু নয়। ইমপর্টেন্ট হলো শাহাদ কতটুকু টাইম দিবে লাবিবাকে। আমি কখনো ওর বাসায় ফোন করে ওকে পাই না। সব সময় অফিস আর বিজনেস এই দুটোতেই বিজি থাকে। সপ্তাহে একবার বাসায় ফিরে কিনা সেটাই সন্দেহ।
ইসমাইল হেসে বলে, এটা কোন ব্যপার নাকি? বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কত ভাগ্য করে আমার মেয়েটার জন্য এমন ছেলে পেয়েছি বলতো। কি নেই ছেলের। রানী হয়ে থাকবে আমার মেয়ে।

তারপর লিটন আর কিছু না বলে খেতে থাকে। লাবিবার দিকে আড় চোখে একবার তাকিয়ে দেখে। লাবিবা না খেয়ে শুধু প্লেটে হাত নাড়ছে। মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে অন্যমনস্ক হয়ে কিছু একটা ভাবছে। খাওয়া শেষে উঠে যাওয়ার সময় শুধু বলে যায়, আব্বু যারা বাহিরের জগত আর টাকার খোজ পেয়ে যায় তাদের কখনো ভিতর বলতে কিছু হয় না।
ইসমাইল ছেলের দিকে একবার তাকিয়ে আবার খাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করে। লাবিবা হাত ধুয়ে উঠে চলে যায়।

কলেজ থেকে ফেরার সময় প্রতিদিন মনে হয় কেউ তার পিছু পিছু আসছে। আজ হাতেনাতে ধরবে জন্য সাদিয়াকে বলেছে লাবিবার কিছুটা পিছু পিছু আসতে। পিছু পিছু তো আসেই তাও আবার তানভীর। হাতে নাতে ধরার পর লাবিবা সাদিয়ার কি রাগ। সাদিয়া তো রাগের চোটে তানভীরকে বলে,
কান ধরো জুনিয়র পোলা। সমস্যাটা কি তোমার? ডেইলি ফলো করো কেনো?

তানভীর প্যান্টের পকেটে দুহাত ডুকিয়ে বলে, আমি কোথায় ফলো করলাম? আমি তো বাসায় যাচ্ছি।
বাসায় যাবে তো বাসায় যাও আমার পিছু পিছু আসো কেনো?

তোমার পিছু পিছু গেলেই তো আমি বাসাটা পাই মিষ্টি। মেইনরোড দিয়ে যেতে অনেক টাইম লাগে। তুমি গলি দিয়ে যাও খুব তাড়াতাড়ি পৌছে যাই। আর এই গলির রাস্তায় আমার একা ভয় লাগে নতুন তো।
এই ছেলে, ভয় পাও তো আমাকে বলবে যে সাথে নিয়ে আসতে। পিছু পিছু আসো কেনো? সকালে প্রাইভেট টাইমে তো সাথেই আসো তাহলে বিকালে পিছু পিছু কেনো?

কেউ যেনো তোমার নামে কীছু বলতে না পারে তাই।
মানে?
সকালে সবাই দেখলে ভাববে স্টুডেন্ট আর বিকালে দেখলে ভাববে বিএফ জিএফ।

লাবিবা এই সময় সিরিয়াস একটা গালি দিতে ইচ্ছা করছে। জুনিয়র ছেলে বলে কিনা তারা জিএফ বিএফ।
এই ছেলে, ছোট ছোটর মতো থাকবে। বড় আপু হই তোমার। এইসব কথা মাথায় আসে কি করে তোমার? পাগল নাকি?
তানভীর মাথা চুলকিয়ে বলে, জি পাগল মিষ্টির জন্য।

সাদিয়া খিলখিল করে হেসে উঠে। লাবিবা রাগ দেখিয়ে বলে, তুই আবার হাসছিস কেনো?
না মানে দোস্ত। সেদিনের মিষ্টি খাওয়ার দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠলো তো তাই।
তানভীর লজ্জা লজ্জা ভাব মুখে ফুটিয়ে বলে, জি দেখবেন। কিন্তু অমৃত মিষ্টি আমি গোপনেই খাবো। কাউকে দেখতে দিবো না শুধু নিজে দেখবো।

কেনো কেনো? আমরা দেখলে কি সমস্যা?
সেদিন মিষ্টি খাওয়া দেখে তো এখনো হাসছেন আর সেই গোপন অমৃত খাওয়া দেখলে অনেকরাত ঘুমোতে পারবেন না।
ওওও।

লাবিবা বলে, এই ছেলে, বক বক কম। চলো সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। আর এখন থেকে সাথে সাথে থাকবে বুঝলে? আসি দোস্ত।
লাবিবা সাদিয়াকে একটা হাগ দিয়েবাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথে তানভীর বলে, মিষ্টি তোমার কাছে মিষ্টি হবে?

এখানে কোন মিষ্টির দোকান নেই।
আমার যে খেতেই হবে। না খেয়ে থাকতেই পারছিনা। হেল্প প্লিজ।
চকলেট আছে। চলবে?
দৌড়বে।

লাবিবা ব্যাগের চেইন খুলতেই তানভীরের চোখে পড়ে চকলেট গুলো। মিষ্টি তোমার ব্যাগে এতো চকলেট বলেই খামচি দিতে নিলে লাবিবা ব্যাগ নিয়ে একটু দৌড়ে সামনে গিয়ে দাড়ায়। তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলে, এই ছেলে একদম হাত দিবে না। তুমি একটাই পাবে।

তানভীর অসহায় মুখ করে বলে, আমার তো একটা মিষ্টিই চাই।
লাবিবা তানভীরের হাতে একটা চকলেট দিয়ে হাটতে থাকে। তানভীরকে বলে,
এই ছেলে শোন। কারো সামনে আবার বলো না যে আমার ব্যাগে এতগুলা চকলেট থাকে কেমন?

কেনো?
আমার বান্ধুবীগুলা জানলে সব খেয়ে নিবে। তখন আমি সারারাত কি চিবুবো বলতো? মুখ ফসকেও বলবেনা।
আচ্ছা।

এবার তুমি যাও। আমার বাসার গলিতে চলে এসেছি বলেই গলিতে ঢুকে পড়ে। বাসার গেইটে গিয়ে পিছনে দাড়িয়ে কলিংবেলে চাপ দিয়ে পেছন ফিরতেই দেখে তানভীর সুখীদের বাসায় ঢুকছে।চার চোখ এক হতেই তানভীর হাসি দিয়ে বলে, এ বাসায় উঠেছি। পরশু সকালে দেখা হবে। অগ্রিম জুম্মা মোবারক।


পর্ব ৩

গোছলের পর গামছাটা চুলে পেচিয়ে ভেজা কাপড়ের বালতি নিয়ে ছাদে চলে আসে লাবিবা। দড়িতে কাপড় গুলো চিপে মেলে দেয়। চুল থেকে গামছা ছাড়িয়ে দড়িতে মেলে দেয়। বালতি হাতে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই মিষ্টি ডাক শুনতে পায়। পেছন ঘুরতেই দেখে ওপাশের বিল্ডিংয়ে তানভীর দাড়িয়ে হাত নাড়ছে।

এগিয়ে গিয়ে ছাদের কিনারায় দাড়ায় লাবিবা। তানভীরকে খেয়াল করে দেখে। সাদা পাজামা পাঞ্জাবী সাথে সাদাটুপিতে সাদা গায়ের রং এ একদম পবিত্র লাগছে। জুম্মা নামায পড়েই মনে হয় ছাদে এসে দাড়িয়েছে। মুখে সেই মিটি মিটি হাসির ছোয়া লেগে আছে। তানভীর আবার ডাকে, মিষ্টি।
বলো।

একহাতে টুপি খুলে আরেকহাতে মাথা চুলকিয়ে বলে, একটা কথা বলবো মাইন্ড করবে নাতো?
না। বলো।
আমি কি তোমার বাসায় যেতে পারি?

লাবিবার হাসি পেয়ে যায়। বাসায় যাবে এতে এতো ফলমালিটির কি আছে? তবুও কঠিন মুখ করে বললো,
কেনো যাবে আমার বাসায়?
ঐতো যেগুলো লেসন স্যারের কাছে না বুঝি সেগুলো একটু বুঝিয়ে দিতে।

আচ্ছা। এসো।
নিচে চলে আসে লাবিবা।
সকালে ইসমাইলের সাথে বের হয়ে গলির মুখে আসতেই দেখে তানভীর দাড়িয়ে আছে। ইসমাইলকে দেখে তানভীর সালাম দেয়,
আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
ওয়ালাইকুম সালাম। তুমি?

লাবিবা বলে, আব্বু ওর নাম তানভীর। আমার ডিপার্টমেন্টেই ফাস্ট ইয়ার। সুখী আপুদের বাসায় ভাড়া থাকে। একসাথেই প্রাইভেট পড়ি।

ও আচ্ছা। তাহলে একসাথেই যাও আমি না যাই।
তানভীর বলে, জি আংকেল। আমরা এখন থেকে এই প্রাইভেটে একসাথেই যাবো।

তানভীর লাবিবা হাটতে থাকে। লাবিবা একটু পর পর তানভীরের দিকে তাকিয়ে দেখে মিটি মিটি হাসছে। এই ছেলেকি সব সময় মিটি মিটি হাসে? নাকি ওর মুখটাই ওমন। হটাৎ তানভীর বলে, মিষ্টি দেখো তোমার নানারা দাড়িয়ে আছে তোমার জন্য।
লাবিবা সামনে তাকিয়ে দেখে দুইটা সাদা কালো কুকুর জিহবা বের করে আছে। মুখটা ভিতু ভিতু হয়ে যায় লাবিবার।

তানভীর দেখে হেসে ফেলে। তানভীরের হাসি দেখে পিত্তি জ্বলে যায়। একটু তো ভয় ই পায় তাতেই এতো মজা নেওয়ার কি আছে? সে কি কোন কিছুই ভয় পায় না নাকি?
এই ছেলে, ওরা সব লেডি। আই মিন নানী। পছন্দ হয়েছে তোমার? বিয়ে করিয়ে দেই? কোনটাকে নিবে?

আর ইউ সিরিয়াস? ওরা তোমার নানী? আই মিন তোমার আম্মু _
এই ছেলে, চুপ থাকো। ওরা কেউ না আমার। সব তোমার।
আমার কি?
ডারলিং।

মিষ্টি! ইউ কল মি ডার্লিং। আই এম ইউর জুনিয়র মিষ্টি।
রেগে আগুন হয়ে যায় লাবিবা। গলায় শান দিয়ে বলে, এই ছেলে, সাহস কি করে হয় তোমার আমার সাথে ফ্ল্যাট করার? ইডিয়ট কথাকার। ছোট ছোটর মতো থাকবে। আই হেট ফ্ল্যাট। আমার সাথে আর কখ্খোনো আসবে না।
জোরে জোরে হেটে রাগে গজ গজ করতে করতে চলে যায় লাবিবা। তানভীর মুখ গোমরা করে দাড়িয়ে থাকে।

আজ বাসায় এসে ব্যাগ খুলে গোলাপের পাপড়ি পায় না লাবিবা। পুরো ব্যাগ বই খুজেও পাপড়ি পায় না। জমানো পাপড়ি গুলো দেখে মুন খারাপ হয়ে যায়। ডেইলি গোলাপের পাপড়ি পেতে পেতে হেবিট হয়ে গেছে যেনো। আজ না পেয়ে কিছুই ভালো লাগছে না। তাই সিদরাতুলের সাথে খেলতে চলে যায়। গিয়ে দেখে সিদরাতুল ঘুমিয়ে পড়েছে। ডিনার সেরে ছাদে এসে বসে লাবিবা। রাতের হাওয়া দারুন লাগছে অন্ধকারে।

পাশের বিল্ডিং এ তাকাতেই দেখে একটা ছায়া। ছেলে মানুষের ছায়া। লাবিবা যে মুখ করে বসে আছে ঠিক সে মুখ করেই বসে আছে। আলো থাকলে মনে হয় চোখাচোখি হয়ে যেতো। অনেকক্ষন কানে ইয়ার ফোন গুজে বসে ছিলো লাবিবা। হটাৎ ই কোলে একটা কাগজ এর বল এসে পড়ে। লাবিবা বলটা নিয়ে খুলে ফোনের আলোয় কিছু লেখা দেখতে পায়। ইংরেজিতে লেখা,
” I am sorry Misty “
সাথে সাথেই লাবিবা পাশের বিল্ডিং এ তাকায়। ছায়াটা যে তানভীর তা আর বুঝতে অসুবিধা হয় না। সাথে সাথেই ডেকে ওঠে, এই ছেলে ….।
তানভীর উঠে চলে যায় না শোনার ভান করে।

কুয়াশার ভেতর দিয়ে একা একা হেটে যাচ্ছে লাবিবা। আজ যেনো বেশী কুয়াশা পড়েছে। অনেকক্ষন তানভীরের অপেক্ষা করলেও তানভীর আসেনি। মাঝ রাস্তা যেতেই কাঙ্খিত কুকুর গুলোর দেখা মিলে। রাক্ষস নজরে তাকিয়ে আছে। জিহবা নাড়িয়ে নাড়িয়ে যেনো বলছে কিরে লিচু তুই আজকে একা কেনো?

বাগে পেয়েছি তোকে বড় গাছের অতীত সহ খাবো। ভয় পেয়ে চুপসে যায় লাবিবা। সূরা পড়তে পড়তে সাইড দিয়ে চেপে যেতে নিলেই কুকুর ঘেউ ঘেউ শুরু করে দেয়। লাবিবা দেয় দৌড়। পিছে পিছে কুকুর ও দৌড়। দৌড়ে একটা বাসার গেইট লাগিয়ে ঢুকে পড়ে। আজকের মতো প্রাইভেট খতম। একঘন্টা পর উকি দিয়ে দেখে কুকুর নেই। তখনি বেড়িয়ে পড়ে।

দুদিন পর বিকালে বাসায় ফেরার সময় গলিতে ঢুকতেই ডাক শুনে, মিষ্টি। পিছু ফিরে দেখে তানভীর স্টাইলিশ ভাবে দাড়িয়ে। তানভীরকে দেখেই রেগে যায় লাবিবা। জোরে হেটে এসে কলার ধরে টেনে মুখের সামনে মুখ নিয়ে বলে,
এই ছেলে সমস্যা কি তোমার? কোথায় ছিলে তুমি? দুইদিন থেকে খুজছি তোমায়।
তানভীর লাবিবার হাতের উপর হাত দিয়ে ধরে মিটি মিটি হাসছে। লাবিবা আরো রেগে যায়।
এই ছেলে, সব সময় মিটি মিটি হাসো কেনো তুমি? কথা বলতে পারো না? আমার কথার উত্তর দাও।
বাসায় কেনো গেলেনা?

আশ্চর্য। হুট হাট বাসায় যাওয়া যায় নাকি? আর তুমি ছাড়া আমি কাউকে চিনি নাকি?
কিন্তু আমি তো দেখি তোমার আম্মু আর আমার আম্মুর বেশ সখ্যতা।
আমি সারাদিন বাসায় থাকি নাকি যে দেখবো? সকালে আসো না কেনো আর? আমাকে কুকুর ধরে নিক সেটাইতো চাও নাকি?
ওহ মিষ্টি, এর জন্য তুমি প্রাইভেটে মিসিং। সরি সরি সরি আর হবে না।
পাশ দিকে এক ভদ্রমহিলা যেতে যেতে যেতে বলে যায়, ঠিক করছেন আপু। আজকালকার প্রেমিক গুলোকে একটু শাসনেই রাখতে হয়। ফেমেলিতো এদের একটুও শাসন করে না।

লাবিবা সাথে সাথেই কলার ছেড়ে দুপা পিছিয়ে দাড়ায়। খেয়াল ই ছিলো না যে সে রাস্তায় আছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে পা বাড়ায়। দু পা এগিয়ে পিছে তাকিয়ে তানভীরকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
এই ছেলে, সাথে এসো।

তানভীর লাবিবার সাথে সাথে হাটতে থাকে। বাসার সামনে এসে বলে,
এই ছেলে, প্রতিদিন আমার জন্য ওয়েট করবে ঠিক আছে? আর যেনো না দেখি আমাকে ছাড়া কখনো প্রাইভেটে গিয়েছো।
লাবিবাকে ডাক পাঠিয়েছে ছাবিনা ড্রয়িংরুমে। কিছুক্ষন পর লাবিবা আসতেই দেখে ড্রয়িংরুমে ছাবিনার সাথে সোহানা আন্টি বসে। সোহানার পেছনে তানভীর দাড়িয়ে। লাবিবা কি হয়েছে জিজ্জাসা করতেই ছাবিনা বলে, তুই তানভীরের শার্ট নষ্ট করেছিস কেনো?

কি আজব! আমি শার্ট নষ্ট করবো কেনো?
করিস নি তাহলে এটা কি? বাবা তোমার শার্ট টা দেখাও তো।

তানভীর এসে শার্ট টা লাবিবার হাতে দেয়। লাবিবা শার্ট মেলতেই দেখে সাদা শার্টে কলার জুড়ে চকলেটের দাগ। কলার চেপে ধরার সময় তো হুস ই ছিলো না যে হাতে চকলেট ছিলো তখন। জিহবায় কামড় দিয়ে বলে, এমা .. আমিতো খেয়াল ই করিনি।
সোহানা বলে, এটা ওর ফেবারিট শার্ট। ওর মামা সুইজারল্যান্ড থেকে এনেছে।

তুমি এই শার্ট নষ্ট করে দিয়েছো জন্য এখন আমার মাথা খাচ্ছে। আর পারি না আমি এই ছেলেকে নিয়ে।
ছাবিনা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, কিরে তুই কি আজকাল মারামারি করছিস নাকি? গুন্ডা গিরি দেখাচ্ছিস?
কি আশ্চর্য! গুন্ডা গিরী করবো কেনো?

তাহলে কলারে কেনো চকলেট লাগবে। তানভীর বাবা সত্যি করে বলতো লাবিবাকি তোমার গায়ে হাত দিয়েছে?
তানভীর ভদ্রমত উত্তর দেয়, না আন্টি। কলার টেনে ধরেছে। মারে নি।
চিন্তায় পড়ে যায় ছাবিনা। লাবিবার দিকে কঠোর দৃষ্টি দিয়ে ধপ করে দাড়িয়ে যায়। কপালে ভাজ ফেলে বলে, অত লম্বা ছেলেটাকে কলার ধরে টেনে নিচু করার মানে টা কি?

লাবিবার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ঘটনা অন্যদিকে ঘুরে যাওয়ার আবাস পেয়ে শার্ট নিয়ে তানভীরের কাছে এসে দাড়িয়ে বলে, এরকম শার্ট আমি তোমাকে আরো কিনে দিবো কেমন? এখন বাসায় যাও কেমন? আমি তো খেয়াল করিনি তাই না? শার্ট নষ্ট হয়েছে আমাকে বললেই হতো তাইনা? এখন বাসায় যাও কেমন?
দাত চিপে চিপে কথা বলছে লাবিবা। ইচ্ছে করছে এখনি তানভীরকে চিবিয়ে খেতে। তানভীর মিটি মিটি হাসছে। গা জ্বলে যায় লাবিবার। থম থম শব্দ করে উপরে চলে যায়।

প্রাইভেটে যাওয়ার সময় একটা কথাও বলেনি লাবিবা। তানভীর দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য মাঝে মাঝে একটু আধটু কথা বলছে। আজ কুকুরের দেখা মেলেনি। মাঝ রাস্তায় যেতেই লাবিবা ধুম ধাম তানভীরের পিঠে কিল ঘুষি লাগিয়ে দেয় কয়েকটা। তানভীর দৌড়ে সামনে এগিয়ে বলে,
আম্মুরে … মেরে ফেললোরে.. মিষ্টি যন্ত্রনা রে।

এই ছেলে একদম দৌড় দিবিনা। বেয়াদব ছেলে। আমি শার্ট নষ্ট করেছি আম্মুনিকে বলা তাই না? আমাকে কেস খাওয়ানোর ধান্ধা তাই না?
উত্তরে তানভীর মিটি মিটি হাসছে।

ধুর.. ভাল্লাগেনা শুধু হাসে। কথাই নাই। দূরে সর। একদম আমার সাথে আসবেনা।
ওকে মিষ্টি। কাল থেকে আর পাবে না আমাকে।
পাবোনা মানে? রুম থেকে তুলে নিয়ে আসবো একেবারে।
ব্যথা লাগলো তো।
লাগুক।

উপশম করে দাও।
কিভাবে?
মিষ্টি দিয়ে।
মিষ্টি নেই।
চকলেট অনেক মিষ্টি।

লাবিবা চকলেট বের করে তানভীরকে একটা দেয় নিজে একটা খায়।
মোহনার বিয়ের শপিং এ গিয়েছে সবাই। সবাই শাড়ি কিনতে ব্যস্ত। লাবিবার জেন্টস শো রুম দেখে তানভীরের কথা মনে পড়ে যায়। গুটি গুটি পায়ে শো রুমে ঢুকে শার্ট দেখতে থাকে। কয়েকটা শার্ট বেশ ভালো লাগে।

কিন্তু তানভীরের সাইজ তো জানা নেই। কি করবে ভেবে ভেবে ছাবিনাকে কল দেয়। তানভীরকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য বলে। কিছুক্ষন পর আননোন নাম্বার থেকে একটা কল আসে। লাবিবা ধরতেই শোনে, মিষ্টি কোথায় তুমি?

লাবিবা শো রুমের নাম বলে। তানভীর শো রুমে এসেই মন ভুলানো একটা হাসি দেয়। লাবিবা তখন ছয়টা শার্ট হাতে ধরে আছে। তানভীরকে বলে, এটা তোমার নাম্বার?
হুম। আন্টির থেকে নিলাম।
শার্ট গুলো ধরো। দেখো কেমন হয়।

তানভীর হাতে নিয়ে ট্রায়াল রুমে চলে যায়। একটু পর লাবিবার ফোনে টেক্সট আসে,
” Misty come to the trail room . “
লাবিবা ট্রায়াল রুমের সামনে গিয়ে দাড়ায়। ভেতর থেকে তানভীর বেরিয়ে এসে হাতে দুটো শার্ট ধরিয়ে দিয়ে বলে, এই দুটো সাইজ দেখো।
এই দুটো পছন্দ হয়েছে তোমার? সাইজ পেলে পেক করতে বলবো?

হা। এই চারটাও পেক করতে বলবে।
বুঝলাম না। কোনটা নিবে তুমি?
সবগুলো।
মানে? এই ছেলে এই আমাকে কি টাকার খনি মনে হয়? যে তোমাকে ছয়টি শার্ট কিনে দিবো?

হুম তাই। চলো।
আরে …..
তানভীর লাবিবার হাত ধরে নিয়ে চলে আসে। শার্টগুলো প্যাক করতে বলে। লাবিবা কাদো কাদো মুখ করে বলে, এই ছেলে আমার এতো টাকা নেই তো।

তুমি একটির টাকা দিবে। বাকি পাচঁটা আমি দিবো।
সত্যি?
হুম। চয়েজ আছে তোমার। সব গুলো নিতে ইচ্ছা করলো।
আল্লাহ বাচলাম।

শো রুম থেকে বেরোতেই মোহনা সাদিয়াকে দেখে তানভীর বলে, বিয়ের শপিং করছেন অথচ আমাকে ডাকা হয়নি। কষ্ট পেলাম। আরে আমিতো একজন ইনভাইটেড গেষ্ট তাইনা?
মোহনা ভ্রু কুচকে প্যাকের দিকে তাকিয়ে বলে, এগুলো কি?
শার্ট নিলাম ছয়টি। বিয়েতে যাবো তো।

আরে আমার তো শুধু কাবিন হবে আর তুমি এতোগুলো শার্ট কিনলে।
ইসস…। আগে তো বলবেন কাবিন। শুধু শুধু এতোগুলো নিলাম। আমি আরো ভেবেছিলাম বিয়ের তিন দিনে ছয়টি শার্ট পড়বো। এখনতো দেখি একদিনেই ছয়টি পড়তে হবে।
এ্যা!


পর্ব ৪

কাপড় চোপড় ব্যাগে নিয়ে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসেতেই দেখে ড্রাইভিং সিটে তানভীর বসা। লাবিবা চমকে গিয়ে বলে, এই ছেলে তুমি এখানে কেনো? ড্রাইভার কাকু কোথায়?

গেইট ঠেলে নেমে ছাবিনাকে বলে, আম্মুনি ও কেনো গাড়িতে? ড্রাইভার কোথায়?
তোর ড্রাইভার কাকু যাবে না। তানভীর বললো সেও নাকি যাবে তাইতো ওকে বললাম একসাথে যেতে। আর তোর খেয়াল রাখতে। বিয়ে বাড়ি কত ছেলে পুলে আশে পাশে ঘুর ঘুর করবে বলাতো যায় না।
আম্মু কিসব বলো এসব? কাবিন হচ্ছে শুধু। এতো চিন্তা করছো কেনো?

কাবিন আর বিয়ে যাই হোকনা কেনো ছেলেপুলে কি কম হবে ভেবেছিস? সুন্দরী মেয়ে থাকলে চিন্তা হবেই। তোর যখন হবে তুইও চিন্তা করবি। এবার গাড়িতে উঠ।
লাবিবা গাড়িতে উঠে বসে। তানভীর সবাইকে বাই দিয়ে গাড়িতে স্টার্ট দেয়। লাবিবা চকলেট বের করে খেতে খেতে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তানভীর সামনের গ্লাসে বার বার লাবিবাকে দেখছে আর মিটি মিটি হাসছে। কিছুক্ষন পর বলে,
মিষ্টির রাগ কি কমেছে?

লাবিবা তানভীরের দিকে তাকায়।
মিষ্টির রাগ কমলে আমি কি একটু মিষ্টি পেতে পারি?
লাবিবা একটু চকলেট ভেঙে তানভীরের দিকে এগিয়ে দেয়। তানভীর মুচকি হেসে হা করে।
এই ছেলে, হাতে নিয়ে খেতে পারো না?

ড্রাইভিং করছি। চকলেট হাতে নিলে তো কেমন আঠাআঠা হয়ে থাকবে। পরে টিস্যু দিয়ে মুছতে নিলেও তোমাকে মুছিয়ে দিতে হবে।
বেশি বক বক করো। হা করো।

তানভীর হা করতেই লাবিবা মুখে চকলেট ডুকিয়ে দেয়। তানভীর যেনো অমৃত খাচ্ছে এমন ভাবে খায়। ড্রাইভিং না করলে মনে হয় চোখ দুটো বন্ধও করে নিতো। খাওয়া শেষে বলে,
আজ জুনিয়র বলে কথায় কথায় এতো ঝারি এতো রাগ সহ্য করতে হয়। ওকে নো প্রবলেম। ঝারি দিবে যতোদিন সহ্য করবো ততোদিন।

লাবিবা ফিক করে হেসে দেয় তানভীরের কথা শুনে। তানভীর ও হেসে ফেলে। তানভীরের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে লাবিবা। তানভীর বলে,
এখনতো তুমি মিটি মিটি হাসছো।

লাবিবা বাইরের দিকে তাকায়। সত্যিতো সেই প্রথম থেকে তো ঝারি আর রাগ ই দেখিয়ে আসছে। তবুও ছেলেটা কিছু বলেনা।
মোহনার বাসায় গাড়ি পৌঁছাতেই লাবিবা গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। ব্যাগ নামাতেই তানভীর বলে, হায়রে একজন মানবী ..তার দেওয়া শার্ট পড়ে আছি অথচ একটিবার খেয়াল ও করলোনা প্রশংসাতো দূরে থাক।
লাবিবা একটু মুচকি হেসে বলে, সুন্দর লাগছে। ভেতরে এসো।

বাসায় ঢুকতেই শুরু হয়ে যায় পাচঁবান্ধুবীর চিল্লাচিল্লি আর জড়াজড়ি। তারপর শুরু হয় গল্প। তানভীর মোহনার হাতে একটা বক্স দিয়ে বলে, আপনার গিফট। তবে আপনার জন্য না। আমাদের নতুন ভাইয়ার জন্য।
মোহনা একটু লজ্জা পায়। মোহনাকে লজ্জা পেতে দেখেই সবাই গাল টেনে দেয়।

বউকে সাজিয়ে বরের পাশে বসানো হয়েছে। লাবিবা লিপিস্টিক আর কাজলটা আরেকটু ঠিক করার জন্য সাইডে এসে দাড়ায়। ব্যাগ থেকে লিপস্টিক বের করতেই ব্যাগের ভিতর একটা গোলাপ চোখে পড়ে। হাতে নিয়ে স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে লাবিবা। এতোদিন একটা করে পাপড়ি পেতো আর আজ পুরো গোলাপ!
ওটা কি মিষ্টি?

লাবিবা তাকিয়ে দেখে তানভীর দাড়িয়ে। তানভীর এগিয়ে এসে বলে, বাহ মিষ্টি যেইনা একটু তোমার থেকে সরেছি সেই গোলাপ পেয়ে গেলে? ছেলেটা কে গো? দেখিয়ে দিও কিন্তু। আরে হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছো কেনো? মাথায় দিয়ে দাও।
মাথায় দিবো মানে?

ঐযে কানের পেছনে চুলে গুজে দেয় না…মেয়েরা…। জোস লাগে কিন্তু।
পারবোনা।
আচ্ছা দাও আমি গুজে দিচ্ছি।

তানভীর ফুলটা হাতে নিয়ে লাবিবার পেছনে চলে আসে। একদম কাছে এসে ক্লিপ দিয়ে চুলে ফুল গুজে আটকিয়ে দেয়। তারপর সামনে এসে বলে, জোস লাগছে। সেলফি হয়ে যাক।
তানভীর লাবিবা অনেকগুলো সেলফি নেয়।

বর বউ কবুল বলার পর আয়না দেখানোর সময় আয়না আনতে লেইট হচ্ছে। অপেক্ষা করার পর একটু পর তানভীর আর সাদিয়া আয়না নিয়ে আসে। বর বউকে আয়না দেখানোর পর তানভীর লাবিবা কাছে ঘেসে দাড়ায়। আস্তে করে বলে, মিষ্টি আমাকে কেমন লাগছে বললেনাতো।

লাবিবা ভ্রু কুচকে তানভীরকে দেখে অবাক। হাত ধরে সাইডে টেনে এনে বলে, চেঞ্জ করেছো তুমি? তুমি কি সত্যিই ছয়টা শার্ট পড়বে?
নাতো। ভেবে দেখলাম এটুকু সময়ে তিনটির বেশি পড়া ঠিক হবে না। দুইটা পড়া ডান। এখন খাবারের সময় আর একটা পড়বো।

আর একটাও পড়বেনা তুমি। এটা পড়েই থাকবে। বার বার চেঞ্জ করে বড়লোক্সগিরি দেখাতে হবে না। আর আমার সাথে সাথে থাকবে বুঝলে?
কেনো গোলাপের মালিক কে দেখাবে নাকি?

এই ছেলে, ঐটা আমার গোলাপ ছিলো বুঝলে? আর শোনো তুমার যেমন আমাকে প্রটেক্ট করা দায়িত্ব তেমনি আমারো তোমাকে প্রটেক্ট করা দ্বায়িত্ব। পাজি মেয়েগুলা কিউট পোলা দেখলেই ঘেষাঘেষি করার চেষ্টা করে।
তানভীর মিটি মিটি হাসছে। লাবিবা ধমক দিয়ে বলে,
এই ছেলে, সবসময় এতো মিটি মিটি হাসবেনা বলে দিলাম। দুষ্টু কথাকার।

খাওয়ার সময় নতুন বর বউ সহ সবাই একসাথে বসে। লাবিবার পাশে তনুজা বসতে নিলেই তানভীর দৌড়ে এসে চেয়ারে বসে পড়ে। তনুজা রাগ চোখে তাকাতেই তানভীর বত্রিশ পাটি খুলে দেয়। সাদিয়া বলে, আহা রাগ করছিস কেনো?

ছোটরা তো দুষ্টুই হয়। তুই আমার পাশে বসে পড়। তনুজা সাদিয়ার পাশে গিয়ে বসে। সব চাইনিজ ফুড খেতে দেওয়া হয়। সবাই দিব্বি মজা করে খাচ্ছে শুধু তানভীর ই লাবিবার দিকে তাকিয়ে আছে। লাবিবার চোখ পড়তেই ইশারায় জিজ্জাসা করে খাচ্ছে না কেনো? তানভীর হাতের কাঠি জোড়া দেখিয়ে বলে ” আমি চপস্টিক দিয়ে খেতে পারিনা। হাত দিয়ে খাই?’

লাবিবার চোখ উপরে উঠে পড়ে। কি বলে এই ছেলে? ড্রাইভিং পর্যন্ত করতে পারে অথচ চপস্টিক দিয়ে খেতে পারে না? নাই পারতে পারে শিখে নিলেই হবে। কিন্তু এখন? লাবিবা একবার সবার দিকে তাকিয়ে নেয়। সবাই কত ভালো করে খাচ্ছে এখন যদি তানভীর হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করে তাহলে আর মান সম্মান কিছু থাকবেনা।

সবাই হাসাহাসি শুরু করবে। অগত্যা লাবিবা ইশারায় তানভীরকে চুপটি করে বসে থাকতে বলে সেও খাওয়া বাদ দিয়ে বর বউয়ের খাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ব্যপারটি সবাই লক্ষ্য করে কিন্তু কেউ কিছু বলে না। যখন তানভীরের দিকে নজর পড়ে তখন আর না বলে থাকতে পারে না। মোহনা বিরক্তি নিয়ে বলে, মামী এটা বিয়ে বাড়ি এখানে অন্তত তোর চোখ দুটো নিচে নামিয়ে রাখ।

তুই ধ্যান করছিস তো করছিস এখন জুনিয়র পোলাটাকেও ট্রেনিং দিচ্ছিস? দিবি তো দিবি বাসায় নিয়ে গিয়ে দে কিন্তু এখানে কেনো?
চুপ থাক তো। খা তুই। কত সুন্দর করে খাচ্ছিলি আর এখন খাওয়া রেখে ভাষন দেওয়া হচ্ছে।
আরে আমি কই ভাষন দিলাম? জুনিয়র পোলাটাকে খেতে দিচ্ছিস না জন্যই তো বললাম।
ও আমার স্টুডেন্ট বুঝলি? এখন খাতো তুই। দেখ ভাইয়া কি সুন্দর করে খাচ্ছে।

মোহনা তার হাজবেন্ডের দিকে তাকিয়ে দেখে মিটি মিটি হাসছে। কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে আবার খাওয়া শুরু করে মোহনা। লাবিবা ভাবনা চোখে তাকিয়ে থাকে। ছেলেরা এতো মিটিমিটি কেনো হাসে সেটাই ভেবে পায় না। সবাই খাওয়া শেষে চলে গেলে লাবিবা বলে, এই ছেলে নাও এখন খাওয়া শুরু করো। তোমার জন্য আমাকে বসে থাকতে হলো। নয়তো মান সম্মান ডুবতো।

ডুবলে আমারটা ডুবতো। তুমি কেনো এতো ভাবছো?
এই ছেলে শোন তুমি আমার সাথে এসেছো আর আমি তোমার বড় সো তোমার প্রবলেম সলভ করা আমার রেসপনন্সিবিলিটি। এখন চুপচাপ খাও।

তানভীর কিছুই হয়নি ভাব নিয়ে চপস্টিক দিয়ে সুন্দর করে খেতে থাকে। লাবিবাতো হা হয়ে যায়। এই হা যেনো আর বন্ধ হবার নয়। তানভীর মিটি মিটি হাসছে আর খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে হাতের তালু দ্বারা থুতনি উপরে তুলে মুখ বন্ধ করে দাত বের করে হাসতে থাকে। লাবিবা রাগ পেয়ে দাড়িয়ে বলে, তুমি?

তানভীর হাত ধরে আবার বসিয়ে দেয়। হাসি থামিয়ে বলে, মিষ্টি এতো ঝাঝ কেনো তোমার? আমি সবার সামনে খেতে পারিনা তাই এমনটা করেছি। বললে তো অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিতে তাই বলিনি। আমার খাওয়া শেষ এখন তুমি খাও আর আমি তোমার স্টুডেন্ট হিসেবে কতটুকু শিখেছি সেটা পরীক্ষা করি।
খাবো না আমি।

উঠে চলে যেতে নেয় লাবিবা। তানভীর পেছন থেকে হাত টেনে জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।লাবিবা রেগে বলছে, ছাড়ো। এই ছেলে ছাড়ো বলছি। তানভীর চোখ মুখ কুজো করে বলে উফফফ কি মিষ্টি যন্ত্রনা. …।
তাড়াতাড়ি সামনে বসে খাবার নিয়ে লাবিবার মুখের সামনে ধরে তানভীর।

মিষ্টি খাবারের সাথে রাগ করেনা প্লিজ। সেই সকালে খেয়েছো আর সারাদিন খাওনি।
খাবো না আমি পাজি ছেলে।
আমি খাইয়ে দিচ্ছি হা করো।
করবোনা।

প্লিজ। প্লিজ মিষ্টি। সরি তো। কান ধরবো?
লাবিবা হা করে। তানভীর শান্তির হাসি হেসে লাবিবাকে খাইয়ে দেয়। খাওয়ার পর ডেজার্ট আনতে গিয়ে দেখে সব শেষ। মিষ্টি না পাওয়ায় খুব মন খারাপ হয় তানভীরের।

বাসার গলির সামনে পৌছানোর পর তানভীর দেখে লাবিবা সিটে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। গলির ভিতরে গাড়ি যাবে না আর। বাইরের লাইট গুলো অফ করে ভিতরের লাইটটা জালিয়ে দেয়। ঘুরে বসে দৃষ্টি ফেলে লাবিবার উপর। লাল লেহেংগায় আর সুন্দর সাজে সারাদিন দেখেও যতটুকু তৃপ্তি না মিটেছে তার থেকে দ্বিগুন তৃপ্তি পাচ্ছে এখন।

ইচ্ছে করছে সব সময় এভাবেই তাকিয়ে থাকতে। কিন্তু তা আর হবে কোথায়? একটু পরেই মিষ্টি চলে যাবে তার বাসায় অজস্র যন্ত্রনা দিয়ে। বাইরে মানুষের হাটার শব্দ শুনতে পায় তানভীর। এখানে আর থাকা যাবে না তাই গাড়ি থেকে নেমে লাবিবাকে ডাকতে গিয়েও থেমে যায়। এতো সুন্দর ঘুমটাকে ভাঙাতে মন সায় দেয় না। গেইট খুলে। আস্তে করে কোলে তুলে নেয় লাবিবাকে।

পা দিয়ে গেইট বন্ধ করে দেয় গাড়ির। পূর্ণ চাদের আলো সরাসরি পড়ছে সারা গায়ে। এই মায়াবী আলোয় মায়াবী মিষ্টিকে আরো মায়াবী লাগছে। আজ প্রথম এতো কাছে নিজের কোলে মিষ্টি। জিহবা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে ঢুক গিলে তানভীর। এই মুহূর্তে তার মনে কি যন্ত্রনা হচ্ছে একমাত্র সেই জানে। উফফ যন্ত্রনা গুলো এতো মিষ্টি কেনো?

বাসায় নিয়ে এসে বেডে শুইয়ে দিয়ে তখনি চলে আসে তানভীর। আর এক মুহুর্ত লাবিবার কাছে থাকা তার পক্ষে সম্ভব না।
শাহাদের ফোন পেয়ে একটু শান্তি লাগে লাবিবার। ফোন রিসিভ করেই বলে,
কি ব্যপার? মনে পড়লো তাহলে?

মনে তো পড়বেই। ফিওন্সে বলে কথা।
আচ্ছা। নাকি হৃদয়েরও টান আছে।
সেটা তো আমি জিজ্জাসা করবো তোমাকে। হদয় ঘটিত কোন ব্যপার আছে নাকি অন্য কারো সাথে?
মানে?

মানে হলো কারো সাথে এফায়ার চলছে নাকি তোমার? সব সময় একসাথে চলা ফেরা করা, শপিং করা, চকলেট খাওয়া, খাইয়ে দেওয়া, এবংকি কোলেও চড়া। আমার লোক তো মিথ্যা বলেনি।

শাহাদ। মুখ সামলে কথা বলো। তুমি আমাকে ফলো করো!ছিহ!
মুখ সামলে কথা কিভাবে বলি বলো? তুমি করতে পারবে আর আমি বলতে পারবো না?
শাহাদ ছেলেটা আমার পাশের বাসার। জুনিয়র ছেলে একি ডিপার্টমেন্টের। তুমি আমাকে বিলিভ করো না শাহাদ?

বিলিভ করার প্রশ্ন কোথা থেকে উঠছে? লাবিবা আমাদের তো লাভ ম্যরেজ নয় যে আমি তোমাকে বিলিভ করবো। আমরা একসাথে থাকবো দুজন দুজনকে চিনবো জানবো তার পর নয় আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে বিলিভ ব্যপারটা আসবে।
শাহাদ আমি আরো এক বছর আগে থেকে তোমার ফিওন্সে আর আজ বলছো তুমি আমাকে চেনো না বিলিভ করো না। তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মতো একটা ছেলেকে নিয়ে সন্দেহ করো।

কিউট ছেলে দেখে খুব মিশতে ইচ্ছে করে তাই না?
তুমি খুব বাজে ভাবে আমার সাথে কথা বলছো শাহাদ। তুমি এটা করতে পারো না।

পর্ব ৫

পথের মাঝ বরাবর হেটে চলছে লাবিবা। মুখে কোন কথা নেই। তানভীর একবার এ পাশে এসে তো তো উকি দিয়ে লাবিবাকে দেখছে তো ওপাশে গিয়ে উকি দিয়ে লাবিবাকে দেখছে। বার বার এমন করায় থমকে দাড়ায় লাবিবা।

তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলে, আমার মুড ভালো না। প্লিজ এমন করো না প্লিজ।
সেটা তো আমিও জানি মিষ্টি। কিন্তু কেনো ভালো নেই সেটাই তো এখন জানতে চাইবো।

তারমানে এখনো চাও নি?
ফিক করে হেসে দেয় তানভীর। লাবিবার সামনে গিয়ে বলে, অনুমতির অপেক্ষা করছিলাম। এখন পেয়ে গেছি। এবার বলো কি সমস্যা?

তোমার ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে।
হা হা হা। আরে এটা কোন ব্যপার? লিটন ভাইয়ের সব থেকে পছন্দের জিনিসটা নিয়ে গিয়ে সামনে দাড়াবে। দেখবে সব কিছু ঠিক।

তুমি বুঝছো না। আমি আমার ভাইয়ার কথা বলছিনা তোমার ভাইয়ার কথা। মানে আমার ফিওন্সের কথা।
ভ্রু কুচকে তাকায় তানভীর। তারপর অট্টোহাসিতে ফেটে পড়ে। নিজেকে সামলিয়ে বলে, মিষ্টি কি হয়েছে এক্সাটলি বলো। এই টুকুন পুচকে মেয়ে তার নাকি আবার ফিওন্সে।

আমি আর পুচকু মেয়ে নেই তানভীর। বিয়ের বয়স হয়ে গেছে আমার। আর এক বছর আগেই আমার এঙ্গেজ হয়ে গেছে। তুমি জানবে কিভাবে! তুমি তো পাড়ায় এলেই মাস খানেক।
মিষ্টি ফাজলামো বন্ধ করো। তোমার হাজবেন্ড আমি চুজ করবো।
সুখীকে জিজ্জাসা করে নিতে পারো।

তানভীরের মুখে আধার নেমে আসে। তবুও অবিশ্বাসের সুরে মুখে প্লাস্টিক হাসি রেখে বলে, কি বলো এসব মিষ্টি। মজা করছো তো আমার সাথে তাইনা?
এই ছেলে, তোমার সাথে কি আমার মজার সম্পর্ক?

অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তানভীর। জোরে জোরে হাটতে থাকে। তা দেখে লাবিবাও আরো জোরে জোরে হাটে। তানভীরকে পেছনে ফেলে এমন ভাব দেখায় যেনো তানভীর ওকে রেখে চলে যাচ্ছিলো আর সে এখন তানভীরকে রেখে চলে যাচ্ছে। স্যারের বাসায় ঢুকার সময় তানভীরকে দেখতে পায়না। এদিক ওদিক খুজেঁও তানভীরকে পায়না।

দুদিন পেরিয়ে যায় অথচ তানভীরের দেখা নাই। অগত্যা লাবিবা তানভীরের বাসায় যায়। দরজা খোলে সোহানা। লাবিবা সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই সোহানা বলে, একটু বসো মা। আমার চুলায় তরকারি বসিয়েছি।

সোহানা কিচেনে চলে গেলে পিছু পিছু লাবিবাও চলে আসে। সোহানা লাবিবাকে দেখে বলে, রান্না পারো মা?
জি আন্টি শিখেছি আম্মুর থেকে।
ইলিশ খিচুড়ি করতে পারো?

না আন্টি। এটা পারিনা।
আমি করছি দেখো কিভাবে করি।
আচ্ছা আন্টি।
আমার বাসায় এটা খুব ফেবারিট। তানভীর তো অনেক পছন্দ করে।

তানভীর কোথায় আন্টি?
ও তো ওর মামার কাছে গিয়েছে।
ওহ। তাই হয়তো আর প্রাইভেটে যাচ্ছে না।
হুম। পরে এসে তোমার থেকে নোট নিয়ে নিবে।

আরো দুদিন পর ক্যাম্পাসে তানভীরকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে পেছন থেকে কলার টেনে ধরে। এই কে রে বলে পেছনে তাকাতেই লাবিবাকে দেখে থমকে যায়। পেছন পেছন সাদিয়া তিথী তনুজাও এসে দাড়ায়। তিথী রাগ দেখিয়ে বলে, এই জুনিয়র কিউট পোলা কোথায় ছিলা তুমি আমার দোস্তকে কুকুরের হাতে রেখে? তনুজা বলে, উধাও হবে তো হবে বলে কয়ে তো উধাও হবে। সাদিয়া বলে, পাশাপাশি বাসা তোমাদের আর আমাদের চিন্তা করতে হয়।

তুমি জানো এয় কয়দিন আমাদের এগিয়ে গিয়ে দোস্তকে আনতে হয়েছে। আংকেল ও বাসায় নেই। এতো সকালে এতোদুর হেটে আবার ওর বাসায় গিয়ে আনা কতটুকু প্যারা বুঝতে পারছো তুমি?
তিথী বলে, একদিন আমি গেছি তো আরেক দিন ও গেছে। আমাকে একদিন কুকুরে ধরেছিলো জানো?

তনুজা বলে, আরে বাবা মানলাম তুমি মামা বাড়ি রসের হাড়ি খেতে গেছো তাই বলে পেছন থেকে উধাও হয়ে যেতে হবে?
এতো এতো অভিযোগে তানভীরের কান ঝালাপালা। ওখান থেকে সরে বকুল তলায় বাধানো বসার জায়গার উপর মাথার নিচে হাত রেখে শুয়ে পড়ে। পেছন পেছন লাবিবারাও আসে।

তানভীর ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, মিষ্টি তোমার ফিওন্সের নাম যেনো কি? উনাকে বললেই তো সকাল করে তোমাকে এগিয়ে দিতো। তিথী পাশে বসতে বসতে বলে, আরে শাহাদ ফাহাদকে নিয়ে আর বলো নাতো। ফাজিল লোক একটা। পরে আছে আমেরিকা শালায় ফোনটাও করে না।
লাবিবা বাধা দিয়ে বলে, আহ তিথী থাম।

তিথী ঠোটে চুক চুক শব্দ করে বলে, আহারে প্রেম। ঐ ফাজিলটার জন্য তোর প্রেম উথলাতে পারে বাট আমার না। কত্ত বড় ফাজিল চিন্তা কর তোর পিছে গোয়ান্দা লাগিয়ে রেখেছে। তাও আবার সন্দেহ করে আমাদের এই কিউট জুনিয়র পোলাকে দিয়ে?

তানভীর ভ্রু কুচকে লাবিবার দিকে তাকায়।
লাইক সিরিয়াসলি মিষ্টি?
লাবিবা লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকায়। তানভীর বলে, শাহাদ নাম তাইতো? আমেরিকা থাকে। তো উনার কেরেক্টার কেমন মিষ্টি? লাবিবা কোন কথা বলে না।

ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার সময় গেইটে তানভীরকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তানভীরের কাছে এসে দাড়ায়। তানভীর মুচকি হেসে পথে হাটা দেয়। লাবিবা নিচ দিক হয়ে হাটছে। সত্যি বলতে লজ্জা লাগছে। তিথী ওভাবে সামনাসামনি না বললেও পারতো। নিজের উড বি হাজবেন্ডের নিচু মনমানসিকতা জানানোর দরকার টা কি তাও আবার অপমানজনক কিছু। হটাৎ তানভীর লাবিবার হাত ধরে ফেলে। লাবিবা চমকে তাকায়।

একটা মিষ্টির দোকানে গিয়ে টেবিলে বসিয়ে দেয় লাবিবাকে। ওয়েটারকে কয়েকটি মিষ্টি বউ আনতে বলে। লাবিবা চুপচাপ বসে থাকে। ওয়াটার মিষ্টি দিয়ে গেলে বিনা বাক্য তানভির খেতে থাকে। লাবিবার মুখয়ব একবার পর্যবেক্ষণ করে মুখের সামনে একটা মিষ্টি এগিয়ে দেয়। লাবিবা তানভীর এর দিকে তাকালে তানভীর ইশারায় মিষ্টি খেতে বলে। লাবিবা মিষ্টি মুখে নিয়ে কোনমতে খেয়ে বলে,
বলে যাও নি কেনো?

ইচ্ছা হয়নি।
তোমার বাসায় গিয়েছিলাম।
শুনেছি।

টেক্সটের রিপ্লাই দাও নি।
দেখিনি।
পাপড়ি গুলো পাইনি।
লাবিবার চোখে চোখ রাখে তানভীর। কিছু সময় কাটে এভাবে তাকিয়ে।

পকেট থেকে একটা তাজা ফুল বের করে লাবিবার হাতে ধরিয়ে দেয়। লাবিবা বলে, তোমার এই ঘায়েব হয়ে যাওয়া আমাকে অনেক কিছু ভাবিয়েছে। আমি অনেক কিছুই জানি তোমার সম্পর্কে। তুমি তোমার মামার বাসায় যাওনি গিয়েছিলে তোমাদের বাংলোতে। আমার ভাবনা গুলো কি সত্যি?
এই ছেলে চুপ করে থাকবেনা। উত্তর দাও। আমি আমি যা ভাবছি তা কি সত্যি? এতোদিন থেকে তোমার আচরনে আমি বাধ্য হয়েছি এসব ভাবতে। প্লিজ আন্সার মি।
তানভির উপর নিচ মাথা ঝাঁকায়।

লাবিবার অস্থিরতায় চোখ বন্ধ হয়ে আসে। দু হাতে মুখ ঢেকে টেবিলে মাথা রেখে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। মাথা উঠিয়ে বলে, এই ছেলে শোন, তুমি আবেগে ভাসছো। দুটোদিন কারো সাথে মিশলে একটা মায়া জম্মায়। তোমারো হয়তো তেমনি ফিলিংস হচ্ছে কিন্তু এটাকে পরিণতি দেওয়ার চেষ্টা করোনা।আমি কখনো তোমাকে ঐ ভাবে ভাবিনী। তোমার মাত্র পড়াশুনা চলছে। তোমার সামনে ব্রাইট ফিউচার পড়ে আছে।

ক্যারিয়ার গঠন করার পর দেখবে কতো ব্রাইট গার্ল তোমার লাইফে আসবে। আমি তোমাকে আমার ছোট ভাইয়ের জায়গাটাই দিয়েছি। তোমারো উচিত আমাকে বড় বোনের জায়গাটা দেওয়া। আমি তোমার বড় তানভীর। আর আমার এঙ্গেজ হয়ে গেছে গেছে। শাহাদ এলেই আমাদের বিয়ে। আমরা দুজন দুজনকে নিয়ে সপ্নের একটা সংসার তৈরী করবো কত কমিটমেন্ট আমাদের ভাবো একটু। আর তুমি এসব কি ভেবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো?

তানভীর তাকাও আমার দিকে। দেখো আমি তোমার মিষ্টি আপু। ঠিকাছে? মিষ্টি আপুর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করোনা প্লিজ। আমি সম্পর্কে খুব যত্ন শীল তানভীর। এমন কিছু করোনা যেনো আমাকে তোমার থেকে দুরে থাকতে হয়। তুমি জাষ্ট ট্রাই করো ভাবো যে আমি তোমার বড় বোন। দেখবে নরমাল হয়ে যাবে সব। বুঝতে পেরেছো আমি কি বলেছি তোমাকে?
তানভীর মাথা নিচু করে বসে আছে। কোন উত্তর নেই মুখে। লাবিবা উঠে ব্যাগ নিয়ে বাসায় চলে যায়। তানভীর সেখানেই আমার বসে থাকে।

লিটনের রুমে নক করে লাবিবা। দরজা খুলে দেয় মমতা। আমি লাবিবা ভেতরে ঢুকে একবার বিছানার দিকে তাকায়। সিদরাতুল ঘুমিয়ে আছে। মমতা ভেবেছে সিদরাতুলের কাছে এসেছে তাই বলে, এই একটু আগে ঘুমালো। বসনা তুই।
ভাইয়া কোথায় ভাবী?
বাথরুমে।

লিটন বাথরুম থেকে বের হতেই লাবিবা হাত ধরে টেনে বারান্দায় নিয়ে আসে।
ভাইয়া তোমার তো আমেরিকায় অনেক ফ্রেন্ড আছে। তুমি একটু ওদের দিয়ে শাহাদের খবর নিতে পারিনা পারবে?
কেনো? শাহাদ কি ফোন দেয় না তোকে আর?

ঐটা না ভাইয়া। ওর আশেপাশে. ..ভাইয়া তুমি কি বুঝতে পারছো আমি কি বলার চেষ্টা করছি?
লিটন মাথা ঝাঁকায়। লাবিবা চলে আসে তখনি নিজের রুমে।

কয়েকদিন পর বিকালে প্রাইভেট থেকে বাসায় এসে দেখে ড্রয়িং রুমে শাহাদ বসে। লাবিবা থ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। হটাৎ করে শাহাদের উপস্থিত আশা করে নি এমন সময়। শাহাদ হাতে ফুলের বুকি হাতে নিয়ে লাবিবার সামনে এসে দাড়ায়। লাবিবার একটি হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বুকিটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, সারপ্রাইজ মাই সানসাইন। আই এম কামিং অনলি ফর ইউ এন্ড ইউ। আই লাভ ইউ। আই লাভ লাভ ইউ সো মাচ। এন্ড আই এম সরি। প্লিজ ফরগিভ মি।

লাবিবা এখনো চুপচাপ দাড়িয়ে। তার যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে তার সামনে শাহাদ দাঁড়িয়ে। লাবিবা শাহাদের দিকে হাত তুলে গালে ছুঁয়ে বলে, শাহাদ তুমি তো?
ইয়েজ ডারলিং। ইউর শাহাদ।

পেছন থেকে মমতা এসে বলে, প্রেমটা একটু ধীরে সয়ে করো ওকে? আগে তো ফ্রেশ হয়ে হয়ে গেছে খেতে আসো। মাত্র বাইরে থেকে দুজনেই এলে। শাহাদ রসিকতা করে বলে, আমি কার বাথরুমে যাবো ভাবি? তোমার নাকি তোমার ননদের?
মমতা খিলখিল করে উঠে। লাবিবাও হাসে। মমতা শাহাদকে চিমটি কেটে বলে, ননদেরটাতেই যান। আমার টা আপনার বড়শালার।

আগে খোঁজ পায়নি আফসোস।
লাবিবা রাগ দেখিয়ে উল্টোপাল্টা কয়েকটা ঘুসি লাগিয়ে দেয় শাহাদকে। শাহাদ লাবিবার হাত ধরে আটকিয়ে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে যায়।

খাওয়ার সময় ইসমাইলকে শাহাদ জানায় আগামী সপ্তাহে ওর ফেমেলিও আসছে। বিয়ের ডেটটা দুপরিবার আলোচনা করে ঠিক করে নিতে। যত তাড়াতাড়ি বিয়েটা হবে ততো তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে পারবে তারা।

কয়েকদিন তানভীর লাবিবা কেউ কারো সাথে কথা বলেনি। কিন্তু পাশাপাশি ঠিকই পথ চলেছে। আজ হটাৎ তানভীর বলে উঠে, মিষ্টি আমাকে তোমার ফিওন্সের সাথে মিট করিয়ে দিবে না?
লাবিবা কিছুক্ষন তানভীরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি চেহারার মিটি মিটি হাসিটার খোজ পাওয়া গেছে। খুব শান্তি লাগে লাবিবার।

আজ বিকালে আমাদের ডেট আছে। তোমাকে মিট করিয়ে দিবো। চলে এসো।
বিকালে রেস্টুরেন্টে লাবিবার সাথে তানভীর কে দেখে বিরক্ত হয় শাহাদ। লাবিবাকে বলে, এই ছেলেটাই তোমার সাথে সব সময় দেখা যায় না?

তানভীর হাত এগিয়ে দিয়ে বলে, হ্যালো ব্রো আই এম তানভীর খান। বাই দ্যা ওয়ে চিনলেন কিভাবে আমাকে?
তোমার পিকচার আছে আমার কাছে।
ও আচ্ছা। ভাইয়া একটু দাঁড়াবেন প্লিজ?
হুয়াট?

লাবিবা ছোট্ট ধমক দিয়ে বলে, এই ছেলে, হচ্ছেটা কি? উঠতে বলছো কেনো?
ওহ মিষ্টি। তোমার হাজবেন্ড কতটা পারফেক্ট আমি দেখে নিবো তো।
শাহাদ বলে, তুমি কি আমাকে জাজ করতে এসেছো?
আহা….. আমার মিষ্টির হাজবেন্ড কেমন হবে আমাকে দেখে নিতে হবেতো।

তানভীর হাত ধরেই শাহাদকে তুলে ধরে নিজের পাশে এনে দাঁড় করায়। সামনের গ্লাসে তাকিয়ে বলে মিষ্টি তোমার ফিওন্সে তো আমার থেকে হাইটে কম। স্মার্ট আছে বাট আমার মতো কিউট না। গায়ের রং ও দেখি এক সেড কম। দেখি ভাইয়া বসেন তো। হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে রেখে দেয় না। পেটের উপর দুটো থাপরা দিতেই শাহাদ রেগে তাকায়। তানভীর ঝাড়ি দিয়ে বলে, আহা ভাইয়া আপনার চোখ ছোট তাই বড় করে তাকালেও বড় হবেনা। পেটটা শেইপ কিনা দেখছিলাম বুঝলেনতো। মাথার চুলে হাত দিতেই শাহাদ সরিয়ে দিয়ে বলে, হুয়াট ইউ ডুয়িং রাবিস?

তানভীর হেসে বলে বলে, একচুয়েলি ভাইয়া আপনি কতটুকু ক্লিন তাই দেখছিলাম আর কি। কেউ কেউ আছে বাইরে চকচকে কিন্তু ভেতরে ময়লা তাই দেখছিলাম খুশকি টুশকি আছে কিনা। শাহাদ রেগে গেলে লাবিবাকে বলে, এই কাকে নিয়ে এসেছো তুমি? আমাদের ডেট ছিলো আজ। ওকে থামতে বলো।

লাবিবা তো অবাক। তানভীর এমন করবে সে জানলে কখনো আনতো না। তানভীরকে বলে, এই ছেলে কি করে করছো এসব? থামো প্লিজ। তানভীর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, শোনো মিষ্টি আমিতো আগেই বলেছিলাম তোমার হাজবেন্ড আমি চুজ করবো। এই ভাইয়া কোন কিছুতেই আমার থেকে বেটার নয়। তুমি নয় আমাকেই বিয়ে করে নিতে। তোমার চয়েজ দেখে আমি সত্যি আশাহত। আচ্ছা তোমাকে যখন দেখতে এসেছিলো তখন কি কি করতে বলেছে?
কেনো?
ইস বলোইনা। হাটিয়েছে নিশ্চয়?
হুম।

শাহাদ ভাইয়া একটু হেটে দেখাত তো দেখি আপনি জেন্টলসদের মতো হাটেন নাকি হাফ লেডিস দের মতো করে হাটেন।
শাহাদের রাগ উঠে যায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই তাদের দেখে হাসছে। পাবলিক প্লেস না হলে তানভীরকে ঠাটিয়ে দুটো থাপ্পড় দিতো। লাবিবার মাথা ঘুরছে এসব দেখে। তানভীরকে বার বার থামতে বলেও কাজ হচ্ছে না।

এবার তানভীর এক ভয়ানক আবদার করে বসে। শাহাদকে বলে, ভাইয়া শার্টটা একটু খুলেন দেখি আপনার বডি আছে নাকি? মাসল কেমন দেখি। মিষ্টি এর সাথে তোমার বিয়ে হবে না বুঝলে। তুমি বরং আমাকেই বিয়েটা করো। আহা রাগেন কেনো? আমি শালা লাগি আপনার। শাহাদ এবার তানভীরের হাত ধরে বলে চল ওয়াশরুমে চল এবার তো প্যান্ট খুলতে বলবে তার আগেই দেখাই আমি।

পর্ব ৬

কলেজে বেড়াতে এসেছিলাম। ক্যাম্পাসে দেখি মিষ্টি একটা মেয়ে বসে আছে। দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতে থাকি। মেয়েটি হটাৎ উঠে দাঁড়িয়ে হেঁটে কয়েকজন মেয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আমিও দেখতে দেখতে ওদের সাইডে গিয়ে দাঁড়াই। মিষ্টি মেয়েটা ঐ মেয়ে গুলোকে বলে, তোরা কি নিয়ে কথা বলছিস?

একটা মেয়ে বলে, হাজবেন্ড কে নিয়ে। কে কেমন করে হাজবেন্ডের সাথে জগড়া করবে সেটা নিয়ে।
ধুর। হাজবেন্ডের সাথে কে ঝগড়া করবে? আমি তো কখনো করবোনা।
কিহ! তাহলে টাইট দিবি কিভাবে?

মেয়েটি অমৃত মিষ্টি একটা হাসি দেয়। সেই হাসিতে আমি পুরো কুপোকাত। মেয়েটি বলে, ঝগড়া করবো নাতো।যন্ত্রনা দিবো। মিষ্টি যন্ত্রনায় ডুবিয়ে রাখবো মাতিয়ে রাখবো।
সেই মুহূর্তে মনে হলো মিষ্টি যন্ত্রনা গুলো আমার জন্যই। এই যন্ত্রনা আমাকে পেতেই হবে। ভর্তি হয়ে গেলাম এই কলেজেই।

আমি আসছি বলেই গেট খুলতে ঘুরে বসে লাবিবা। হাত দিয়ে আটকায় তানভীর। মাথা নিচু করে বলে, আমি ঝগড়া করবোনা মিষ্টি। আমি তোমার মিষ্টি যন্ত্রনা গুলোয় ডুবে থাকতে চাই। আমাকে বঞ্চিত করো না প্লিজ।

লাবিবা আবার গেইটে হাত দেয়। তানভীর দু হাতে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে বলে, এমন কেনো করো মিষ্টি? তুমি কি অস্বীকার করতে পারবে আমার প্রতি কোন উইকনেস নেই তোমার? নাকি তুমি আমাকে লাভ করো না? আমাকে ফিরিয়ে দিও না মিষ্টি। আমি শেষ হয়ে যাবো। খুব ভালোবাসি তোমাকে খুব। ঐ শাহাদ-ফাহাদকে ভুলে প্লিজ আমার কাছে চলে আসো। প্লিজ। আমি তোমাকে অনেক সুখে রাখবো অনেক ভালোবাসবো কখনো ব্যথা দিবো না।

চোখ তুলে দেখে লাবিবার দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।তানভীর লাবিবাকে ছেড়ে লাবিবার চোখ থেকে পানি মুছে দেয়। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে, কেদো না মিষ্টি। আমি সহ্য করতে পারবো না।
কাপা কাপা ঠোট দুটো নেড়ে উঠে। অতি কষ্টে বলে, ইউ আর ট্রু লেট তানভীর খান। আই এম সরি।

পুরো বাড়ি আনন্দ আমেজে ভেসে যাচ্ছে। শাহাদের ফেমেলি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে আসছে আগামীকাল। সবার মনেই উল্লাস শুধু লিটন আর লাবিবাই মন খারাপ করে আছে। ইসমাইল ব্যপারটা খেয়াল করে লিটনকে সাইডে ঢেকে নিয়ে যায়। লাবিবা চা হাতে লিটনকে খুজতে খুজতে বারান্দায় বাবা ভাই কে দেখে এগিয়ে যায়।

কিন্তু বেশী কাছে যেতে পারে না তার আগেই মন খারাপ হয়ে যায় তাদের কথা শুনে। ইসমাইল লিটনকে বোঝাচ্ছে, দেখো আমি জানি শাহাদকে তুমি পছন্দ করো না। কেনো করোনা তার কারন আমি জানি না। জানতে চাইও না। হতে পারে তুমি অন্য কাউকে তোমার বোনের জন্য আশা করো নয়তো তুমি শাহাদকে ঈর্ষা করো।

আমার মাঝে ঈর্ষা ব্যপারটা নেই আব্বু তুমি ভালো করেই জানো। আমি শুধু জানি এখানে লাবিবার বিয়ে সম্ভব না। তুমি বিয়েটা ভেঙে দাও আব্বু।

তোমার সাথে আমার মতের মিল কখনো হয়নি আজো হবেনা। মেয়ে আমার। কষ্ট করে আমি বড় করেছি। বড় ভাই হিসেবে তুমার থাকা উচিত সেটুকু থাকলেই চলবে। নিজের দ্বায়িত্ব টুকু পালন করো।
আমি আমার দায়িত্ব থেকেই বলছি। শাহাদের সাথে বিয়ে হলে কখনোই আমার বোন সুখী হবে না। আমি ওর জন্য ভালো ছেলে দেখবো। তুমি শাহাদের ফেমেলিকে না করে দাও এখানে আসতে আর বিয়েটা ভেঙে দাও।

কখনোই না। এমন সম্বন্ধ আর পাবো না আমি। রানী হয়ে থাকবে আমার মেয়ে। আর সবাই কতো বিনয়ী তা আজ এলেই ওদের সাথে কথা বলে বুঝে নিও।

হাটাৎ লাবিবার দিকে চোখ পড়তেই বলে, শোন লাবিবা, তোমার উত্যক্ত আমার নজর এড়ায় না। তোমার ভাই মরছে বিয়ে ভাঙ্গার জন্য আর তুমি ছোট এক ছেলের সাথে দিব্যি ঘুড়ে বেড়াচ্ছো। ওই ছেলের বাবা আজ আমার অফিসে গিয়েছিলো ওর ছেলের সাথে তোমার বিয়ের আলাপ নিয়ে।

ভাবতে পারছো কতটুকু এগিয়ে গেছে? তোমাকে নাকি তার ছেলের বউ বানাবে। তোমাকে যেনো আর তার সাথে না দেখি। তোমার আম্মুকেও বলে দিয়েছি যেনো ঐ ফেমেলির সাথে আর কথা না বলে।
লাবিবা এটুকু শুনেই চা না দিয়েই চলে যায়।

রাতেও শুনে লিটন আর ইসমাইলের তুমুল ঝগড়া হচ্ছে এই বিয়ে নিয়ে। লাবিবা বেড়িয়ে এলে ইসমাইল আর কথা বাড়ায় না। নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

পরদিন শাহাদের ফেমেলি আসে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে। শাহাদের মম লাবিবাকে পাশে বসিয়ে নানা রকম প্রশ্ন করছে আর লাবিবা উত্তর দিচ্ছে। এ মহিলার সাথে কথা বলতে একদমি ভালো লাগছে না লাবিবার। লিটন থমথমে মুখে শুধু বসে আছে। লাবিবা লিটনের দিকে তাকিয়ে করুন চোখে তাকায়। এ চাহনির অর্থ এখান থেকে উদ্ধার করো আমাকে ভাইয়া।

লিটনের ও এখানে এদের মাঝে লাবিবাকে ভালো লাগছে না। লিটন উঠে গিয়ে কিচেনের দিকে চলে যায়। দুই মিনিট না ঘড়াতেই লাবিবাকে ডেকে বলে, তোকে আম্মু ডাকছে তাড়াতাড়ি আয়। লাবিবাও গেস্ট দের আসি বলে চলে আসে।

শেষ বিদায়টা নিয়েই আসে। কারন সে আর সেখানে যাচ্ছে না। সবাই ইংলিশে কথা বলছে কেউ বাংলার ছিটে ফোটাও বলছে না। লাবিবা কি এতো পারে নাকি ইংলিশ! লিটন বলে, রুমে যা। আর আব্বুকে বলবি তুই এই বিয়েটা করছিস না।

লাবিবা কিছু না বলে সিড়িতে পা রাখে। তখনি শাহাদ হাত ধরে নিয়ে লাবিবার রুমে চলে আসে। রুমের দরজা বন্ধ করে লাবিবার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে, ” জান ডেট ঠিক হয়ে গেছে। আগামী শুক্রবার রাতে তুমি পুরোপুরি আমার হবে।’

লাবিবা নির্লিপ্ত ভঙিতে খাটে গিয়ে বসে। শাহাদ ও পাশে গিয়ে বসে জিজ্ঞাসা করে, কি ব্যাপার তুমি খুশি নোও? কিছু বলছো না কেনো?

হুম খুশি তো। শুক্রবার ই বিয়ে? আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি?
ইয়েস ডিয়ার শুক্রবার বিয়ে আর রবিবার ফ্লাইট।
এতো তাড়াতাড়ি?
হুম।
আচ্ছা আমি কি মাসে মাসে আসতে পারবো এখানে?

আর ইউ মেড ডিয়ার? তুমি তিন চার বছর পর পর আসবে বি ডি তে।
মানে? তাহলে আমি থাকবো কিভাবে আব্বু আম্মু ভাইয়া ভাবী সিদরাতুল তান.. মানে এদেরকে না দেখে?

ভিডিও কলে দেখবে।
ভিডিও কলে দেখে কি মন ভরে নাকি?

অভ্যাস হয়ে যাবে ডিয়ার। এখন একটু কাছে আসোনা সোনা তোমাকে পেতে যে আর কতো অপেক্ষা করতে হবে আমার…
শাহাদ দু হাতে জড়িয়ে ধরে লাবিবাকে। লাবিবা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। বিরক্তি নিয়ে বলে, ভালো লাগছে না আমার। আমি এভাবে বিদেশে থাকতে পারবো না।

দরজায় নক শুনে দরজা খুলে দিতেই মমতা বলে, সিদরাতুলকে একটু ধরো তো আমি ওর খাবার বানিয়ে আনি। শাহাদের দিকে চোখ পড়তেই বলে, ও শাহাদ এখানে। তোমাকে তো তোমার বড় ভাই খুজলো।
ওহ যাচ্ছি বলেই চলে যায় শাহাদ। নিচে এসে ফেমেলিকে নিয়ে চলে যায়।

রাতে ছাদে তানভীরের চোখে চোখ পড়ে লাবিবার। রেলিং টপকে লাবিবার কাছে আসে তানভীর। সামনে দাঁড়িয়ে কোন কথা না বলেই পকেট থেকে একটা গোলাপ বের করে দেয়। গোলাপের দিকে তাকিয়ে অবাক হয় লাবিবা। তানভীর বলে, আজকে তো দেওয়া হয়নি তাই। পুরো দিন চলে গেছে তো তাই ফুলটাই দিয়ে দিলাম।

লাবিবা চুপ হয়ে আছে। তানভীর প্রশ্ন করে, যাওনি কেনো আজ? কতো ওয়েট করেছি জানো?

লাবিবা এবারেও চুপ। তানভীর গোলাপটা লাবিবার বেনুনীতে গুজে দেয়। লাবিবা সিড়ির দিকে পা বাড়ায়। প্রথম সিড়িতে পা দিতেই তানভীর বলে উঠে, একটু কথা বললে কি হয় মিষ্টি? ‌এতো যন্ত্রনা দাও কেনো? ওকে দাও যত ইচ্ছা দাও মিষ্টি যন্ত্রনা সয়ে যেতে চাই আমি সারাজীবন।

লাবিবা পেছন ফিরে তানভীরের সামনে এসে দাড়ায়। চোখে চোখ রেখে বলে, গার্লফ্রেন্ড নেই তোমার? এসব প্রেমবাচ্য তাকে গিয়ে শোনাও। আমাকে কেনো শোনাতে আসো তুমি?

গার্ল ফ্রেন্ড কেই তো শোনাচ্ছি।
আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড লাগি?
নাতো তুমিতো আমার বউ হবে।

আমি বলেছি আমি তোমার বউ হবো? ফাজলামির একটা লিমিট থাকে। তোমার আব্বুকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠাও? এই ছেলে তুমি জানো না আমি অন্য একজনের বউ হবো? কেনো পিছে পড়ে আছো তুমি আমার? দেশে কি মেয়ের অভাব পড়েছে?
তানভীর লাবিবার হাত ধরে ফেলে।

আমার যে তোমাকেই লাগবে মিষ্টি। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।
লাবিবা। এখানে কি করিস এই ছেলে টার সাথে?

ছাবিনার গলা শুনে তাকায় দুজনেই। সাবিনা রক্ত চক্ষু দিয়ে তাকিয়ে আছে।ভয়ে ঢুক গিলে লাবিবা। এখনো তানভীর লাবিবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে নজর পড়ে ছাবিনার। এগিয়ে এসে দুই হাত ছাড়িয়ে কষে চড় মাড়ে লাবিবার গালে। চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিচে এনে ইসমাইলের সামনে নিয়ে যায়। ইসমাইল দেখে বলে, কি হয়েছে? চুল ছাড়ো মেয়ের।ব্যথা পাচ্ছে তো ও।

ছাবিনা গলা ফাটিয়ে বলে, তোমার মেয়ে রাত বিরাতে ছাদে গিয়ে পাশের বাসার ভাড়াটিয়ার ছেলেটির সাথে প্রেম করছে। একে তো আরো মারা উচিত। হেরে শাহাদের মতো একটা ছেলেকে তোর এক বছরেও মনে ধরলোনা? ঐ ছোট ছেলেটা দু মাস হলো এসেছে ওকেই তোর মনে ধরলো? বিয়ে ঠিক আংটি বদলের পর ও তোর পরপুরুষের দিকে নজর যায়।

ইসমাইল বলে, আমি তোমাকে আমি নিষেধ করেছিলাম ওদের সাথে মিশতে তার পর ও তুমি আমার কথা অমান্য করেছো। এখন তো দেখছি আসল দোষী টা তুমি। লায় দিয়ে মাথায় না তুললে সাহস হয় আমার অফিসে যাওয়ার? তাও আবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে?

ছাবিনা বলে, আজ রাতেই একটা ব্যবস্থা করতে হবে। লিটনের আব্বু চলো ঐ বাসায়। সুখীর আব্বুকে বলে কাল ই এদের বাসা ছাড়া করতে হবে।

ইসমাইল ছাবিনা তখনি সুখীদের বাসায় চলে যায়। লাবিবা কাঁদতে থাকে। লিটন এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, পছন্দ করবি একটা এসটাবলিশ ছেলেকে কর। তা না বাচ্চা ছেলেকে করতে হলো তোর। একটা বড় এসটাবলিশ ছেলেকে পছন্দ করলে তো আমি এখনি তোকে নিয়ে ঐ ছেলের হাতে তুলে দিতে পারতাম। এই ছেলে নিজেই তো অন্যের উপর নির্ভরশীল তোর দায়িত্ব কিভাবে নিবে?

অনেক রাত করে ফিরে ইসমাইল ছাবিনা। মুখে বিজয়ের হাসি। লাবিবাকে দেখে বলে, যা গিয়ে ঘুমা। এমন টাইট দিয়েছি না কাল থেকে আর মুখটাও দেখাবে না।
পরদিন সকালে ছাদে সুখীকে ডেকে পাঠায়। সুখী ছাদে আসতেই জিজ্ঞাসা করে, তানভীর রা কি চলে গেছে?
হুম। সকালেই ওর মামার বাসায় চলে গেছে।

কি বলেছে আব্বু আম্মু ওদেরকে শুনেছো তুমি?
আমাদের ড্রয়িং রুমে বসেই আলাপ হয়েছে। চাচা চাচি তানভীরের বাবা মাকে অনেক অপমান করেছে। তারপর বলেছে কাল থেকে তোর বিয়ে অব্দি যেনো না দেখে এখানে। উনারা খুব কষ্ট পেয়েছে চাচা চাচীর ব্যবহারে।
আর তানভীর?

ও তো ছিলো না ওখানে। ওদের বাসায় ছিলো। তানভীরের মামা অসুস্থ বলে ওকে নিয়ে গেছে।
ওহ।
একটা কথা বলবো?
কি?

তানভীর তোকে সত্যিই ভালোবাসে। তোর কাছাকাছি থাকার জন্য আমিই ওকে হেল্প করেছি। আমাদের বাসায় থাকতে বলেছি। আব্বুকে বলে ফ্ল্যাট টা ভাড়া দিয়েছি।
টুপ টুপ করে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে লাবিবার দু চোখ থেকে।

গায়ে হলুদে অজস্র ছবি ফেসবুকে আনাগোনা করে। সেই সুবাদে চোখে পড়ে তানভীরের। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে তানভীর। আম্মু আব্বু বলে চেচাতে থাকে। সোহানা ফিরোজ দৌড়ে এসে ছেলেকে নিয়ে খাটে বসায়। কি হয়েছে কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। তানভীর মুখ থেকে কথা বের করতে পারে না। কাপতে থাকে সে। কোন মতে বলে, আমার মিষ্টিকে কেড়ে নিচ্ছে আম্মু। আমাকে যেতে হবে।
সোহানা বুঝতে পেরে সেদিন রাতের সব অপমানের কথা বলে। সব শুনে থ হয়ে যায় তানভীর।

পর্ব ৭ (অন্তিম)

বেনারসী শাড়ী, ভারী গহনা, মুখে মেকাপে বউ সাজে নিজেকে আয়নায় দেখছে লাবিবা। একটু পর সে একজনের বউ হয়ে যাবে। বর এখনো এসে পৌঁছায় নি। পাল্টে যাবে নিজের জীবনধারা। বান্ধবীরা এটা ওটা নিয়ে ঠাট্টায় মেতে আছে। কিন্তু সেটা লাবিবার কান অব্দি পৌঁছায় না। দুনিয়াটা অন্ধকার মনে হচ্ছে। চোখের কিনায়ার জমেছে জল।

সেই জল গড়াতে মানা। মনের ভিতর সব উথাল পাতাল হয়ে যাচ্ছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে নিজেকে। কিন্তু ভেতরটায় যে অজস্র দাগের ছোয়া। এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে নিজেকে। হটাৎ দরজার শব্দ পেয়ে পিছু তাকায়। ভেজানো দরজা টাস করে খুলে। কিছু বুঝার আগেই ঝড়ের গতিতে লাবিবার দু গাল চেপে ধরে দুহাতে।

পাগলের মতো চাহনিতে বুক কাপায় লাবিবার। মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তা..নভীর। চোখ বন্ধ করে তানভীর। জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে, সুন্দর লাগছে। চল আমার সাথে।
লাবিবা কি বলবে দিশা পায় না। ভেতর থেকে নরম হয়ে আসলেও শক্ত হয়ে থাকতে হবে। হাত দুটো গাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
আমার বিয়েতে এসেছো খাওয়া দাওয়া করে যেও।

তানভীর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। রুমের সবাই তানভীরের দিকে তাকিয়ে। পাগলের মতো লাগছে তানভীরকে। হাতের তালু দিয়ে মুখ টা উপর থেকে নিচ দিক মুছে নেয়। কোমড়ে এক হাত রেখে ড্রেসিং টেবিলে জোরে লাথি দেয়। আসন্ন বিপদে লাবিবা থর থর করে কাপতে থাকে।’ এই ছেলে, প্লিজ চলে যাও আমার সম্মান কেড়ে নিও না, আবেগ কে সব সময় পশ্রয় দিতে নেই।”

বলতেই তানভীর এসে চুলির মুঠি ধরে মুখের সামনে মুখ এনে চিল্লিয়ে বলে, তোর কি মনে হয় আমি চলে যাবার জন্য এসেছি? তোর কাছাকাছি থাকার জন্য নিজের বাড়ি রেখে ছোট্ট একটা ফ্ল্যাটে থেকেছি তোকে না নিয়ে যাবার জন্য? তোর সম্মান কাড়তে এসেছি? তুই যে আমার জানটাই নিয়ে নিচ্ছিস তার বেলা?

আমি তোকে চাই এইটা আমার আবেগ? আটাশ বছর বয়সে কেউ আবেগ দেখাতে আসে তাইনা? কি ভেবেছিস টা কি তুই? আমাকে বাইরে পাঠিয়ে তুই বিয়ে করে আমেরিকা চলে যাবি? আমার আম্মু আব্বুকে অপমান করে অন্যমুখ করে রাখবি? কখনোই না। আমি হতে দিবো না। তুই শুধু আমার মিষ্টি। শুধুই আমার। বিয়ে হচ্ছে তাই না? কিসের বিয়ে? তোর সাথে আমার বিয়ে হবে।

এদিকে আমার লাগছে তানভীর ছাড়ো। ছাড়ো। বলে লাবিবা চিৎকার করছে।
চিল্লানি শুনে বাইরে থেকে সবাই একে একে চলে আসে। তানভীরকে লাবিবার থেকে আলাদা করার জন্য।তানভীর কিছুতেই লাবিবাকে ছাড়ে না। কোন মতে হাত ফসকাতেই লাবিবা সরে দাঁড়ায়। মাথা ঝিম ঝিম করছে।

আবারো তানভীর লাবিবার কাছে গিয়ে কাধ ঝাকিয়ে বলে,
এই তুমি জানতে না আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর ঐ শাহাদ তোমাকে ভালোবাসে না। তাহলে কেনো ওকে বিয়ে করছো তুমি? কেনো আমার কাছে আসছো না? কি নেই আমার যা ওর আছে? টেল মি মিষ্টি। প্লিজ টেল মি।
ইসমাইল আর সহ্য করতে না পেরে সিকিউরিটি কে ডাক দিয়ে বলে, বের করো এই রাসকেল কে। আমার মেয়ের বিয়ে পন্ড করতে এসেছে এ। পুলিশে খবর দাও।

তানভীর লাবিবার পা ধরে বসে পড়ে।
প্লিজ মিষ্টি আমি তোমাকে ছাড়া বাচবোনা মিষ্টি আমাকে ফিরিয়ে দিও না। অঝোরে কাঁদতে থাকে তানভীর। তানভীরের কান্নায় সিকিউরিটি রাও তানভীরকে ছুই না।

বাইরে শোরগোল পাওয়া যায়। বর এসেছে বর এসেছে শোনতে পাওয়া যায়। লিটন সহ আরো অনেকে তানভীরকে সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তানভীর লাবিবার পা ছাড়ছে না। বার বার বলছে মিষ্টি আমাকে ফিরিয়ে দিও না। আমি বাঁচবো না।

লাবিবা কাঁদতে কাঁদতে হিক উঠে গেছে। তার চক্ষু বিদ্ধ হয়েছে ইসমাইলের রাগান্বিত মুখের উপর। লাবিবার চোখের পানি দেখে আরো রেগে যায় ইসমাইল। শাহাদ ও উপস্থিত হয় সেখানে। তানভীরকে দেখে সোজাসুজি পিঠে পা দিয়ে আঘাত করে।লাথি দিয়ে সরিয়ে দেয়। শাহাদের ভাইয়েরা এসে পা দিয়ে আঘাত করতে থাকে তানভীরকে। লাবিবা ছাড়াতে যেতেই ইসমাইল হুকুম দেয়, মমতা ওকে নিয়ে যাও এখান থেকে।

ছাবিনা, মমতা, মোহনা,সাদিয়া জোর করে ঘর থেকে টেনে মমতার ঘরে নিয়ে যায় লাবিবাকে। লাবিবা কাঁদতে কাদতে বলে, ভাবী ছেলেটাকে মেরে ফেলবে তুমি বাঁচাও ওকে। প্লিজ ভাবী যাও। ছাবিনা ঠাটিয়ে একটা চড় দিয়ে বলে, চুপ কর মুখপুরী। মান সম্মান আর কিছু বাকি রেখেছিস তুই? ভরা বাড়িতে মুখ পুড়ালি এই মুখ কাকে দেখাবো আমি?

ছাবিনা মমতা বেরিয়ে আসে। সিদরাতুল কাদছে তাই সুখীর কোল থেকে নেয়। মোহনাও কি হচ্ছে দেখার জন্য বেড়িয়ে আসে। সাদিয়া শান্তনা দিচ্ছে লাবিবাকে। খাটে মাথা রেখে বসে পড়ে লাবিবা। কেউ কাউকে এতোটা কিভাবে ভালোবাসতে পারে জানা নেই তার। গতকাল রাতেই সুখী এসে সবটা বলে গেছে তাকে। রাতে সুখী শাড়ি ঠিক করার বাহানায় লাবিবার কাছে আসে। হাত ধরে ছাদে নিয়ে চলে আসে। লাবিবা জিজ্ঞাসা করে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছো সুখী আপু?
তোর সাথে কথা আছে,চল।

ছাদে এনে বলে, সত্যি করে বলতো তুই কি বিয়েটা তোর ইচ্ছাতে করছিস? তানভীর খানকে তুই ভালোবাসিস না?
লাবিবা চুপ।
কিরে কথা বল আমার সাথে। চুপ করে থাকবি না একদম।
আমাকে দূর্বল করে দিও না সুখীআপু।

দুর্বল তো হয়েই আছিস আর কি দুর্বল হবি তুই? তানভীর ভাই তোকে অনেক ভালোবাসে। তোর জন্য বিজনেস মামার হাতে তুলে দিয়ে এখানে এসে আমার বাসায় ভাড়া থাকছে। এই শহরেই নিজের ডুপ্লেক্স বাড়ি থাকতে তোর কাছাকাছি থাকার জন্য এখানে থাকছে। তোর সাথে ভর্তি হতে পারেনি তাই ফাস্ট ইয়ারেই ভর্তি হয়ে গেছে যার কিনা দু বছর আগেই স্টাডি কমপ্লিট হয়ে গেছে।
তো?
তো মানে?

আমার এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে একবছর আগেই। শাহাদের সাথে আমার রিলেশনশীপের মতো সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। শাহাদ আমাকে ভালোবাসে। সবাই জানে আমি শাহাদের বউ হবো। পাসপোর্ট ভিসা সব রেডি। এতো দিনের শাহাদের ফেমেলি সাথে আমার ফেমেলির বন্ডিং নষ্ট হয়ে যাবে। বিয়ের সব আয়োজন শেষ। কাল আমাদের বিয়ে। এই মুহুর্তে আমি এতোদিনের ঠিক করা সম্পর্ক আছে নষ্ট করে দিলে সব শেষ হয়ে যাবে সুখীআপু।

আমার ফেমেলি কখনো মাথা উচু করে চলতে পারবেনা। সবাই দেখে বলবে ঐ খারাপ মেয়ে যে ফিওন্সে হবার পর ও অন্য ছেলের সাথে রিলেশন করে তার ফেমেলি যাচ্ছে। কলঙ্ক রটে যাবে আমার। আমার ফেমেলি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। শাহাদকে কি বলবো আমি? ও তো আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করে সংসার করার সপ্ন দেখে আসছে। ওর ফেমেলির সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? একবার ভেবে দেখেছো তুমি? আব্বুর হার্টের সমস্যা আপু।

ছেলেটা শেষ হয়ে যাবে।
তানভীর আরো আগে কেনো এলোনা আপু?
নসিবে নেই হয়তো।

লাবিবা চোখ বন্ধ করে আছে দেখে সাদিয়া দরজা ভেজিয়ে চলে যায়। লাবিবা উঠে দাঁড়ায়। চোখ মুছে বাইরে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে আসতেই ফোনের আওয়াজ পায়। লিটনের ফোন হয়তো। ড্রয়ার থেকে বের করতে করতেই কেটে যায়। কে ফোন দিয়েছিলো দেখার জন্য লক স্কিন খুলতেই কতগুলো ভিডিও চলে আসে। একটার পর একটা সিরিয়ালে চলতে থাকে। ধপ করে বসে পড়ে লাবিবা। এর জন্য কি ভাইয়া আব্বু প্রায় ঝগড়া করে?

আমার কাছে লুকিয়েছে সব আব্বু। ভাইয়াকে বলতে দেয়নি। তুমি এতো লোভী আব্বু! বলেই কাঁদতে থাকে। মোহনা সাদিয়া রুমে এসে দেখে লাবিবা কাঁদছে। হাতে ফোনের দিকে চোখ পড়তেই ভিডিওটা চোখে পড়ে। মোহনা হাতে নিয়ে বলে এই বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না।

দৌড়ে বাইরে চলে যায়। পিছে পিছে লাবিবাও আসে।তানভীরকে দেখে বুক কেঁপে উঠে লাবিবার। মুখ হাত পায়ে আঘাতে রক্ত জমা হয়ে আছে গায়ে। শার্টটাও ছিড়ে গেছে। একটা লোক বসিয়ে রেখে টিস্যু দিয়ে রক্ত মুছে দিচ্ছে। তানভীরের বাবা মামা সবাই এসেছে। পুলিশের উপস্থিতিও আছে। তানভীরের বাবা এনেছে। পাশেই তিন ফেমেলিতে হচ্ছে তুমুল ঝগড়া।
সাদিয়া চিৎকার করে বলে, থামেন সবাই।

সবাই সাদিয়ার দিকে তাকায়। মোহনা বলে, কোন্দল বন্ধ করুন। শাহাদ ভাই আপনি আপনার ফেমেলিকে নিয়ে চলে যান। কোন ফাকার বয়ের হাতে আমরা আমাদের মেয়ে তুলে দিবো না। বেরিয়ে যান এখান থেকে।
শাহাদ দু পা এগিয়ে বলে, মুখ সামলে কথা বলো। সাহস কি করে হয় তোমার আমাকে অপমান করার?
নোংরা লোকের কাছে আমাদের মেয়ে বিয়ে দিবো না। লাবিবার বিয়ে তানভীর ভাইয়ের সাথে হবে।

ইসমাইল কিছু বলতে যাবে তার আগেই মোহনা বলে, আমি আপনি একটা কথাও বলবেন না আঙ্কেল। ছেলে কি আপনার অপরিচিত ছিলো যে আপনি কিছু জানতেন না? কেমন ছেলের হাতে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছেন যে তার ব্লু ভিডিও ফোনে ফোনে থাকে। বিশ্বাস না হলে দেখুন। ফোনটা সবার সামনে ধরতেই সবাই মুখ পাশ করে নেয় কেউ কেউ আবার নিচুও করে ফেলে। রাগে অপমানে শাহাদ সেখান থেকে প্রস্থান করে। লিটন বলে, কাজী ডাকো বিয়ে এখনি হবে।

তানভীরকে নিয়ে সোফায় বসায় মোহনা লাবিবাকে এনে পাশে বসায়। ইসমাইল মুখটা বাংলার পাচের মতো করে আছে। মমতা ছাবিনা সমানে ছি ছি করে যাচ্ছে। লিটনের মুখে হাসির খেলা বিদ্যমান। সোহানাকে কল দিয়ে বলা হয় পুত্রবধু ঘরে নেওয়ার আয়োজন করো।

চার বান্ধবী চারপাশে বসে বলে, দুলাভাই এমন কেনো করলেন আপনি? এতোকিছু না করে সরাসরি প্রস্তাব দিলেই তো হয়ে যেতো। আমরাও হেল্প করতাম।

এতো সহজ নাকি? এঙ্গেজমেন্ট না হলেও কথা ছিলো। কিন্তু সবাই যেখানে জানে এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে মিষ্টিকেও তো প্রপোজ করলে রাজী হতো না। তাই সাথে থেকে ওকে আমার প্রতি উইক করার চেষ্টা করেছি যাতে সে নিজে এই বিয়ে ভেঙে দেয় বাট হলো তার উল্টোটা। এখনো
আহারে দুলাভাই ব্যথা লাগছে? আজ আমার বান্ধুবীটার আদর পাওয়ার বদলে সেবা করতে করতে রাত ফুরাবে। হি হি হি হি হি।

নাহ যন্ত্রনা হচ্ছে মিষ্টি যন্ত্রনা।
লিটন কাজী সাহেব কে নিয়ে বসে। পাশে সবাই বসে পড়ে। তনুজা লাবিবার ঘোমটা টা বড় করে দেয়। আল্লাহর কালাম পড়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। মমতা গরম জল আর ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসে। লাবিবাকে বলে, নে স্যাভলন দিয়ে ক্লিন করে একটু গরম ছেক দিয়ে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দে।

ড্রয়িং রুমে আপাদত পাচ বান্ধবী আর এক দুলাভাই ছাড়া কেউ নেই। বাইরে আলোচনায় ব্যস্ত সবাই। তানভীর একটানে শার্ট খুলে ফেলে। খুলতেই ব্যথায় আহ করে উঠে। এখন শুধু একটা সাদা ডলার গেঞ্জি পড়া। সবার সামনে এভাবে গেঞ্জি খুলাতে রেগে যায় লাবিবা। গাল ফুলিয়ে এইড বক্স খুলে।

তানভীর মিটি মিটি হেসে বলে, মোহনা.. তোমাদের বান্ধবী কে বলে দাও রসগোল্লা গাল দুটো আরো ফুলালে আমি কিন্তু সত্যি সত্যি কামড় দিবো তখন তোমরা লজ্জা পেলেও আমার কিছু করার থাকবে না।
মোহনা সহ সবাই হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে। লাবিবা রেগে যায়। এভাবে লজ্জা দেওয়ার মানে টা কি?

ছদ্মবেশি জুনিয়র পোলারা সত্যিই নির্লজ্জ হয়। মুখে কিছু আটকায় না। তুলোতে সেভলন নিয়ে হাতের ক্ষততে লাগাতেই হিসসস করে উঠে হাত সরিয়ে নেয় তানভীর। লাবিবা রেগে বলে, ইচ্ছে করে মার খেয়েছো এবার শেষ হয়েছে তুমার মিষ্টি যন্ত্রনা চাওয়া?

নাতো। মাত্র তো ট্রেইলার শেষ হলো এবার ফুল মুভিতেই চাই। অনেক বেশি চাই সারাজীবন ধরে আমার মিষ্টির যন্ত্রনা।

লেখা – লাবিবা তানহা লিজা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “মিষ্টি যন্ত্রনা – Valobasar Romantic Premer Golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – কুহেলিকা – একটি সুন্দর প্রেম কাহিনী

1 thought on “মিষ্টি যন্ত্রনা – Valobasar Romantic Premer Golpo”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *