তোমায় আমার প্রয়োজন (১ম খণ্ড) – Bangla Romantic Bhalobashar Golpo

তোমায় আমার প্রয়োজন (১ম খণ্ড) – Bangla Romantic Bhalobashar Golpo: বাসায় এসে মোবাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে তাওহীদ। তাকে বাসায় দেখে রাবেয়া বেগম আর মাইশা দুজনেই অবাক আজ এত তারাতারি আর তাও বিনা নেশায়। একটু ভিমরি খেয়ে উঠে দুজনেই।


পর্ব ১

~ হ্যালো জাহিদ।
~ জ্বি আসসালামু আলাইকুম স্যার।
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, জাহিদ তুমি কি অফিসে?
~ জ্বি স্যার এখনো অফিসেই আছি। কেনো স্যার?

~ তাওহীদ এর কোনো খবর জানো?
~ নাহ তো স্যার। তাওহীদ স্যার তো কাল সন্ধ্যায় বের হয়ে গেলেন।
~ ও এখনো বাসায় আসে নাই। আর এখন শুনলাম অফিসেও নাই।
~ স্যার তাহলে কি তাওহীদ স্যার আবারো?

~ তুমি খোজ নাও তো জাহিদ, আমি একটু পরে অফিসে ঢুকবো।
~ জ্বি স্যার।

এতক্ষন ধরে মাহবুব সাহেব ওনার অফিসের স্টাফ জাহিদ এর সাথে কথা বলছিলো। জাহিদ যেমন অফিসের সমস্ত কার্যক্রমে এক্টিভ তেমনি মাহবুব সাহেবের পরিবারের খুটিনাটি তেও এক্টিভ। পুরো অফিসের মধ্যে মাহবুব সাহেব এই জাহিদকেই একমাত্র বিশ্বাস করেন। আসল ব্যাপার হচ্ছে গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মাহবুব সাহেবের ছেলে তাওহীদ কে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই জন্যেই ওনার এতো টেনশন।

~ হ্যাঁ গো, কোনো খবর পেলে?
~ জাহিদ কে দিয়ে খোজ লাগিয়েছি, আশা করি খুব তারাতারি খবর পেয়ে যাবো।
~ আমি বার বার বলেছিলাম এইবার ছেলেটার একটা বিয়ে দাও বিয়ে দাও। কিন্তু তুমিও ছেলের সাথেই নাচতে বসে গেলে। শোক কাটিয়ে তুলতে গিয়ে আজ আমার ছেলেটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

~ আহ রাবেয়া থামো, এখন এসব বলো না। আগে তাওহীদ বাসায় আসুক, তারপর এইসব নিয়ে কথা হবে।
~ আমি বলে দিচ্ছি এইবার ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করো।

ইনি রাবেয়া মাহবুব। মাহবুব সাহেবের স্ত্রী, তাওহীদ এর মা। বেচারি ইদানীং অনেক টেনশনে আছেন ছেলে কে নিয়ে। ছেলের এইরকম আচরণ মা হয়ে কিভাবে মেনে নিবেন তিনি। কিন্তু যাকে নিয়ে এতো আলোচনা সমালোচনা সেই তাওহীদ কেই তো দেখা যাচ্ছে না।

~ হ্যালো স্যার।
~ হ্যাঁ জাহিদ বলো, কোনো খবর পেলে?
~ জ্বি স্যার, তাওহীদ স্যার কাল রাতেও।

~ আহ আল্লাহ, আর কত, এখন কোথায় সে?
~ ওনার বাঙলো তে, আমি নিয়ে আসতেছি আপনি কোন টেনশন নিবেন না স্যার।
~ সাবধানে এসো, আর অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে জাহিদ।
~ স্যার ধন্যবাদ এর জন্য এইসব করি নাকি আমি? আপনি টেনশন নিয়েন না স্যার, আমি তাওহীদ স্যারকে নিয়ে ফিরছি।
~ আচ্ছা এসো।

প্রায় এক ঘন্টা পর গাড়ি এসে পৌঁছায় ছায়া নিবাস এর সামনে। জাহিদ বহু কষ্টে তাওহীদ কে গাড়ি থেকে নামিয়ে দরজার কাছ অবদি আগায় তারপর দুইজন সার্ভেন্ট এসে তাওহীদ কে ধরে উপরে তার ঘরে নিয়ে যায়। হ্যাঁ এই হচ্ছে তাওহীদ। মাহবুব সাহেবের একমাত্র ছেলে এবং মাহবুব গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির একমাত্র উত্তরাধিকারী। যে সারাক্ষণ মদের নেশায় ডুবে থাকে। ড্রাগস এর অতল গহ্বরে যে ঢুকে গেছে, এই হচ্ছে সেই তাওহীদ মাহবুব।

~ জাহিদ কি বলে যে তোমাকে ধন্যবাদ জানাবো আমি।
~ স্যার কিছুই বলবেন না, এইটা আমার কর্তব্য এইটা আমার দ্বায়িত্ব স্যার।

~ জাহিদ এইভাবে ছেলেটা কে শেষ হয়ে যেতে দিতে পারি না। আমি তো ওর বাবা, বাবা হয়ে কি করে ছেলের এই ধ্বংস দেখবো বলতে পারো বাবা?
~ স্যার, এত টেনশেন নিচ্ছেন কেনো? উপরে যে বসে আছেন তাকে ভাবতে দিন। সে নিজেই এর ব্যবস্থা করে নিবে।
~ সেই অপেক্ষাতেই তো আছি

~ স্যার অফিসে কি একবার আসবেন? আসলে একটা মিটিং ছিলো।
~ হ্যাঁ আসতে তো হবেই, আমার তো সেই কপাল এখনো হয় নি যে ছেলে সব নিজ দ্বায়িত্বে বুঝে নিবে।
~ স্যার তাহলে আমি উঠি আপনি অফিসে আসুন, সেখানেই কথা হবে।

জাহিদ চলে যাবার মাহবুব সাহেব গভীর চিন্তায় ডুবে যান। ছেলের এইভাবে শেষ হয়ে যাওয়া তাকে ঘ্রাস করে ফেলছে। যেই ছেলে তার ভার্সিটিতে টপার ছিলো, দেখতেও মাশা~আল্লাহ অনেক সুন্দর, সব দিক থেকে যে চোখে তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো, আজ সেই ছেলে তার মদ আর ড্রাগস এর নেশায় আহত। এইসব ভাবতে ভাবতে মাহবুব সাহেবের দু~চোখ ভেসে যায় জ্বলে।
এমন সময় রাবেয়া বেগমের উপস্থিতি ঘটে সেখানে। স্বামীর চোখে পানি দেখে, বিচলিত হয়ে পড়েন তিনিও,

~ শুনছো।
~ হ্যাঁ বলো।
~ এইবার ওর একটা বিয়ের ব্যবস্থা করো।

~ বিয়ে বললেই হয় না রাবেয়া, ওর condition দেখছো তুমি, ওর ভেতরের সব টাই ঝাঝড়া হয়ে গেছে ড্রাগে। এমন ছেলেকে কে বিয়ে করবে আর কোন মেয়ের বাবা তার মেয়েকে এই ছেলের হাতে দিবে
~ তাওহীদ তো সব সময় নেশা করে না।

~ তবুও, আমি কিভাবে জেনে শুনে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিবো বলতে পারো?
~ চেষ্টা করতে ক্ষতি কি? এমনো তো হতে পারে বিয়ের পরে আমার ছেলেটা ভালো হয়ে গেলো।
~ আচ্ছা, বলছ যখন আমি খোজ করবো, দেখি কি করতে পারি, আমি অফিসে বের হবো ওকে দেখে রেখো।
~ আচ্ছা

মাহবুব সাহেব অফিসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন আর রাবেয়া বেগম রান্না ঘরের দিকে, এমন সময় ছোট মেয়ে মাইশা এসে মায়ের পাশে দাঁড়ায়। হ্যাঁ মাহবুব~রাবেয়া দম্পতীর মেয়ে সে। তাওহীদ এর ছোট বোন, এইবার সবে মাত্র HSC দিলো সে। কিন্তু সেও মাশা~আল্লাহ অনেক বুদ্ধিমতী। কথা দিয়ে ভূবন ভোলানো এক মেয়ে।

~ আম্মু
~ জ্বি
~ ভাইয়া আজকেও?

~ হ্যাঁ রে মা
~ আম্মু আমি বলি কি, ভাইয়ার একটা বিয়ে দাও, বউ থাকলে কিছুটা পরিবর্তন হবে হয়তো
~ মা রে তোর আব্বুকে বলছিলাম, কিন্তু তোর আব্বু তো?

~ আব্বুর কথাও ঠিক, ও তো নেশার মধ্যে উবে আছে, যে ঠিক মত কথাই বলতে পারে না তাকে কে বিয়ে করবে আম্মু?
~ জানি না আমার ছেলের কপালে কি আছে।

এইদিকে অফিসে এসেও মাহবুব সাহেবের শান্তি লাগছে না। স্ত্রীর কথাও ফেলে দেয়ার মত না। একবার চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কোথায়? এমন সময় মেয়ের ফোন আসে।

~ হ্যালো আব্বু।
~ হ্যাঁ মামুনি, বলো।
~ ব্যস্ত আছো?

~ না মামুনি বলো,
~ আব্বু, ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখো, এইভাবে রেখে দিলে ও আরো নিজেকে শেষ করে দিবে।
~ তোমার আম্মুও তাই বললো, দেখি মামুনি কি কর‍তে পারি।
~ আচ্ছা আব্বু রাখছি আমি।
~ শুনো, তোমার ভাই উঠেছে?

~ নাহ, উঠে নি।
~ আচ্ছা রাখো, রাতে এসে কথা হবে।
~ আচ্ছা।

মেয়ের সাথে কথা শেষ করে আবার ভাবনায় বসেন মাহবুব সাহেব। কি করা যায়? এইবার আর ছেড় দেয়া যাবে না। এইবার যা করার তাকেই করতে হবে।
টেলিফোন হাতে নিয়ে জাহিদ কে চেম্বারে আসতে বলেন মাহবুব সাহেব।

স্যার আসবো?
~ হ্যাঁ এসো জাহিদ, বসো
~ কি ব্যাপার স্যার, এত জরুরী তলব
~ জাহিদ একটা কথা ভেবেছি

~ কি কথা স্যার
~ তাওহীদ এর বিয়ে দিবো
~ স্যার
~ হ্যাঁ জাহিদ, আর উপায় নেই। তোমার আন্টিও চায় এইবার একটা বিয়ে দিয়ে দিতে ছেলেটার।

~ কিন্তু স্যার আপনি যেটা ভাবছেন সেটা কি আদৌ সম্ভব। কে বিয়ে করবে ওনাকে? জেনে শুনে এমন মাতাল ছেলের জীবনে কে আসবে স্যার?
~ খোজ করতে হবে জাহিদ। তবে কোন বড়লোক ঘরের মেয়ে নয়, একদম নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে চাই আমার। যে আমার ছেলেকে বদলে দিতে পারবে।
~ কিন্তু স্যার।

~ যার চেহারা কথা বলবে, যার চোখে থাকবে জ্বলে ওঠার শক্তি, যে হবে অদম্য সাহসে অধিকারীনি, যাকে হয়ে উঠতে হবে আমার ছেলের রক্ষাকবজ।
~ এমন মেয়ে পাবেন কোথায় স্যার?
~ খুজতে হবে জাহিদ, খুজতে হবে।

~ স্যার একটা কথা বলি?
~ বলো
~ স্যার আমাদের ফ্যাক্টরিতে হেড হিসেবে যিনি আছেন না ওই যে আফরোজ ম্যাডাম
~ হ্যাঁ, এখন কি হয়েছে

~ আপনি চাইলে আমি ওনার সাথে কথা বলতে পারি, উনি তো সব ব্যাপারেই ভালো জানেন, উনি হয়তো ভালো কোন না কোন মেয়ের সন্ধান ঠিক দিতে পারবেন
~ হ্যাঁ, ঠিক বলেছো তো, আমার তো ব্রেনেই আসে নাই ওনার নাম টা, ঠিক আছে আমি কাল ওনাকে অফিসে ডাকবো, দেখি কি বলে উনি।
~ ওকে স্যার।

ভালো মেয়ের সন্ধ্যান পেলেই এইবার ছেলের বিয়ে টা সেড়ে ফেলবেন মাহবুব সাহেব। ছেলেকে নেশার কবল থেকে বাচানোর জন্য হয়তো এটাই উত্তম উপায়।


পর্ব ২

পরদিন সকালবেলায়,
খবরের কাগজ হাতে মাহবুব সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন, এমন সময় স্ত্রীর উপস্থিতি টের পেয়ে সামনে তাকান তিনি।

~ কিছু বলবে।
~ হ্যাঁ।
~ বলো।
~ তাওহীদ এর ব্যাপারে কি ভাবলা।

~ টেনশন করো না, দেখি ব্যবস্থা একটা হবেই।
~ হুম
~ আচ্ছা টেবিলে নাস্তা দাও, আমি বের হবো
~ আচ্ছা রেডি হয়ে নিচে আসো

বেলা ১২ টা বেজে ৪৫ মিনিটে মাহবুব সাহেব সুইজারল্যান্ডের ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং শেষ করে অফিসে পৌঁছেছেন। কথা অনুযায়ী আফরোজ কেও আজ অফিসে আসতে বলা হয়েছে। এই দিক টা সব জাহিদই সামলে নিয়েছে। মাহবুব সাহেব চেম্বারে ঢুকেই জাহিদ কে কল দেয় আফরোজ কে নিয়ে কেবিনে আসার জন্য।

~ may i come in sir
~ yes come
~ আসসালামু আলাইকুম স্যার
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম আফরোজ, জাহিদ আফরোজ দুজনেই বসো

~ স্যার কোন সমস্যা হয়েছে কি?
~ আফরোজ তোমার সাথে আমি কিছু কথা শেয়ার করতে চাই, ভেবে নাও আজকে তোমার বস না তোমার সামনে তোমার বাবা বসে আছে
~ স্যার আপনি শুধু আদেশ করুন, আর কিছুই লাগবে না

~ আফরোজ, তাওহীদের ব্যাপার টা তো কিছুটা হলেও জানো। আমার এই বিশাল সম্পত্তিরএকমাত্র উত্তরাধিকারী সে, কিন্তু নিজেকে প্রায় শেষ করে দিচ্ছে সে। আমি বাবা হয়ে এইসব কিভাবে মেনে নিবো বলতে পারো মা?

~ স্যার ক্লিয়ার করে বললে ভালো হয়
~ আফরোজ, আমি তাওহীদের একটা বিয়ে দিতে চাই, তোমার জানা শুনার মধ্যে কি কোন ভালো মেয়ে আছে? দেখো, আমি আমার অফিসের সব স্টাফদের থেকে তোমাকে আর জাহিদ কে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করি। এই ব্যাপার টা একটু তুমি দেখবা প্লিজ

~ কিন্তু স্যার, বিয়ের কথা তো বললেন, এইটা ভেবে দেখেছেন কি তাওহীদ স্যারকে কে বিয়ে করবে? স্যার কিছু কথা খারাপ লাগলেও সত্যি, তেমনি এইটাও সত্যি যে তাওহীদ স্যার একজন বদমেজাজি নেশাগ্রস্থ একজন যাযাবর জীবন যাপন করার মানুষ। তিনি কি সংসার ধর্ম বুঝবেন? নাকি যাকে বউ করে আনবেন তার দ্বায়িত্ব নেবে?
~ তোমার সব কথাই যুক্তিসংগত, কিন্তু আফরোজ এর বিপরীত টাও তো হতে পারে। হয়ত ও বদলে গেলো, বাবা হিসেবে এতটুকু তো ভাবতেই পারি আমি, তাই না?
~ স্যার আমি খোঁজ খবর নিবো, আর আপনি ও আপনার মত চেষ্টা করুন

~ আমি বললে আমার সব বন্ধুরা তাদের মেয়ে নিয়ে হাজির হবে আমার বাসায়, কিন্তু আমি এমন কাউকে চাই যে একমাত্র পারবে আমার ছেলেকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসতে
~ ঠিক আছে স্যার, দ্বায়িত্ব যখন চেষ্টা করবো পালন করার, তাহলে স্যার উঠি আজকে
~ আচ্ছা এসো

~ আসসালামু আলাইকুম
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম

~ স্যার তাহলে আমিও উঠি
~ আচ্ছা, জাহিদ সুইজারল্যান্ডের ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং টা ভালো হয়েছে, পরশু ওরা প্রজেক্ট সাইন করবে, সব রেডি করো
~ জ্বি স্যার

চেম্বার থেকে বেড়িয়ে জাহিদ আফরোজ কে ডাক দিয়ে বসলো

~ আফরোজ
~ জ্বি, কিছু বলবেন?

~ হ্যাঁ
~ বলুন
~ আফরোজ, ওই যে সেইদিন একটা মেয়ে এসেছিল না তোমার কাছে
~ কে, কবে, কোন দিন বলুন তো

~ আরে ওইদিন যে আমি ফ্যাক্টরিতে গেলাম আর সেই মেয়েটাও আসলো, তোমার পাশের বাসায় থাকে
~ ওহ হো, আপনি কি পাগল
~ কেন

~ আমি ওর মত এত শান্ত মেয়েকে এর মত নেশাখোরের সাথে মিলিয়ে দিবো
~ তাওহীদ স্যার কিন্তু এত টাও খারাপ না
~ জানি জানি, কত টা ভালো আমার জানা আছে, আচ্ছা আসি
~ ভেবে দেখতে পারো

সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ২৫ মিনিট। বারে বসা তাওহীদের সব ফ্রেন্ডস রা তার জন্য অপেক্ষা করছে। মূলত তাওহীদকে খারাপ করার পেছনে এদের অনেক বড় অবদান আছে। এরা সব রকম চেষ্টায় থাকে তাওহীদের টাকা এবং তাওহীদের সম্মানের ১২ টা বাজানোর। এমন সময় তাওহীদের গাড়ি এসে বারের সামনে দাঁড়ায়। গাড়ি থামার আগে তাওহীদ সাহেব একটা কান্ড ও ঘটিয়ে ফেলেছে অবশ্য, সেই সময় সেই রাস্তা দিয়ে একজন হেটে যাচ্ছিলো। বেচারি রোড ক্রস করবে আর এমন সময় তাওহীদের গাড়ি ধাক্কা দেয় তাকে।

গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় সে। ৬ ফুট উচ্চতার সুঠাম গঠন লাল সুন্দর গরনের একজন সুদর্শন ছেলে তাওহীদ। যাকে দেখলেই এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে সব মেয়েদের মাঝে। কিন্তু চোখ মুখে নেশার ঘোর টা সর্বক্ষণ লেগেই থাকে।
আর ওইদিকে মেয়েটার হাত থেকে পলিথিন টা পড়ে মাটিতে ফল গুলো ছড়িয়ে যায়। তাওহীদ guilty ফিল করছে খুব। তাই যেচে গিয়ে সরি টাও বলতে যায়।

~ excuse me miss, i am sorry
~ একটু দেখে শুনেও তো চালাতে পারেন, তাই না?
~ ok sorry

~ ফল গুলো আমার বাবার জন্য ছিল
~ ok, no probolem কত টাকা? আমি দিয়ে দিচ্ছি
~ ধন্যবাদ, আমি ভিক্ষা নেই না

~ আজব তো ভিক্ষা কেন হবে, আমার হাত থেকে নষ্ট হয়েছে ক্ষতিপূরণ টা আমিই দিব
~ লাগবে না, ভালো থাকবেন

মেয়েটা ফল গুলো কুড়িয়ে নিয়ে সেইখান থেকে চলে গেলো। তাওহীদ যেমন বিনয়ী তেমন বদমেজাজিও বটে। সেই মুহুর্তে তার চরম রাগ উঠে গিয়েছে। মেয়েটার সাহস দেখে অবাক সে, আজ পর্যন্ত কোন ছেলে তার সাথে উচ্চ গলায় কথা বলে নি আর মেয়েরা তো দূরেই থাক কিন্তু আজকে কোথাকার কোন মেয়ে সে শান্ত গলায় তাকে জ্ঞান দিয়ে যায়, ঘটনা টা বেশ খারাপ লাগে তার কাছে

~ কিরে আজ লেট করে আসলি
~ হ্যাঁ একটু লেট হয়ে গেল
~ তা বল কি অর্ডার করবি আজ

~ কোকিন এনেছিস?
~ তাওহীদ, তুই বলছিস আর আমি আনবো না, তা হয়েছে কখনো, এই নে
~ দে, এক কাজ কর, আজ brandy আর whisky অর্ডার কর
~ ওকে

দামী দামী ড্রিঙ্ক তো অর্ডার করে দিল তাওহীদ। আর বন্ধুরাও সমানে ড্রিঙ্ক এর স্বাধ নিচ্ছে দারুন ভাবে। কিন্তু তাওহীদ অন্য ধ্যানে মগ্ন। বার বার সেই মেয়েটার কথা মনে পড়ছে তার। প্রচন্ড পরিমাণ রেগে আছে সে এই মুহূর্তে। আজ পর্যন্ত কোন ছেলে তার সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলার সাহস পায় নাই আর কোথাকার কোন মেয়ে রাস্তায় শান্ত গলায় তাকে জ্ঞান দিয়ে গেছে, ব্যাপার টা তার কাছে হজম হয় নি। এক প্যাগ ড্রিঙ্ক ও তার গলা দিয়ে নামছে না আজ। এইদিকে বন্ধুরাও জোড় করছে তাকে খাওয়ানোর জন্য।

বসে থেকেই সাকিল কে কল দেয় তাওহীদ,

~ হ্যালো সাকিল
~ হ্যাঁ বল
~ কোথায় তুই
~ এই তো অফিস থেকে বের হবো, কেন?

~ একটু দেখা কর‍তে পারবি?
~ কেন? আজকেও কি মন টা অশান্ত হয়ে আছে নাকি?
~ তুই আমার অশান্ত মন কে শান্ত করার এক প্রকার টনিক, তুই জানিস না?

~ আচ্ছা আয়,
~ কোথায় থাকবি
~ পুরনো জায়গায় চলে আয়

~ ওকে, তুই অফিসের সামনে থাক আমিই তোকে পিক করতে আসতেছি
~ নাহ থাক লাগবে না, আমার সাথে গাড়ি আছে
~ ওকে

সাকিল হচ্ছে তাওহীদের আরেক ফ্রেন্ড। অন্য ফ্রেন্ড রা যেমন তাওহীদকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে মত্ত থাকে আর এই বন্ধু তখন তাকে আলোয় ফেরাতে মত্ত থাকে। যা তাওহীদ ও ভালো মত বুঝে তাই তো মাঝে মাঝেই সে সাকিলের সাথে সময় কাটায়। মাঝে মাঝে বললে ভুল হবে যখন তাওহীদ অশান্ত থাকে তখনই সে সাকিল এর কাছে ছুটে যায়।

~ দোস্ত কেমন আছিস
~ ভালো, তুই
~ ভালো আছি
~ আয় বস

~ হ্যাঁ, চল বসি
~ এখন বল কেন ডেকেছিস
~ আজ বারের সামনে একজন কে দেখলাম
~ কাকে দেখেছিস তুই আবার
~ একটা মেয়েকে

তারপর পুরো ঘটনা খুলে বললো সাকিল কে। আর সাকিল ও মন দিয়ে সব টা শুনলো। সাকিল লক্ষ্য করল তাওহীদ প্রচুর রেগে আছে, মনে হচ্ছে মেয়েটাকে সামনে পেলে এখনি জ্যান্ত কবর দিবে সে।

~ তো কি করতে চাচ্ছিস এখন
~ ওকে আমার চাই সাকিল
~ What
~ yes, i want her at any cost
~ are you mad তাওহীদ, যাকে চিনিসই না তার উপরে এত ক্ষোভ কেন

~ নাহ, ওকে আমার চাই, এক ঘন্টার জন্যে হলেও ওকে আমার চাই সাকিল, আমায় জ্ঞান দেয়, আমি টাকা দিতে চাইলাম আর বলে সে ভিক্ষা নেয় না, ধুর এইসব ধান্দাবাজ মেয়েদের ভালো করে চেনা আছে আমার
~ আন্দাজে ধান্দাবাজ বলিস কেন?

~ আন্দাজে না, যা সত্যি তাই এই মেয়েকে আমার চাই
~ তুই নেশাখোর এইটা জানতাম, কিন্তু তুই যে মেয়েদের নেশাতেও মত্ত থাকিস তা তো জানতাম না?
~ তাহলে বলবো তুই তাওহীদের টেস্ট সম্পর্কে কিছুই জানিস না। তাওহীদ ড্রিঙ্ক আর মেয়ে দুটাই ক্লাস দেখে টেস্ট করে
~ একটা কথা বলি?

~ বল
~ শুন, প্রথমত দোষ টা তোর কেন বলি, তোর গাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়েছে। তোর কথা অনুযায়ী ফল গুলো তার বাবার জন্য ছিল। গিয়ে দেখ হয়তো মেয়েটার বাবা অনেক অসুস্থ কিংবা হয়তো ফল গুলো কেনার টাকা টা সে অনেক কষ্ট করে যোগাড় করেছে তাই খারাপ লেগেছে তার আর তুইও বোকার মত ধুম করেই টাকা দিতে চাইলি। সব কিছুই যদি টাকা দিয়ে পরিমাপ করিস তাহলে কিভাবে হবে?

~ তাই বলে তাওহীদ মাহবুবের টাকা কে সে ভিক্ষা বলবে
~ আচ্ছ হয়তো খারাপ লাগা থেকে বলেছে, বাদ দে
~ বাদ তো কিছুতেই দিব না আমি এর শেষ দেখে তারপর ছাড়ব
~ তোকে বুঝানো আর ৫০০ কিলোমিটার দৌড়ানো এক কথা।

অনেক সময় যেমন দৌড়িয়ে কোন কাজ হয় না ঠিক তেমনি তোকে বুঝিয়েও লাভ হয় না, বুঝতেই চাস না তুই
~ বাদ দে, তোর সাথে দেখা করলে আমার মন টা ভালো হয়ে যায় তাই দেখা করতে আসি
~ ভালোই করিস, আচ্ছা আংকেলের অফিসেও তো বসতে পারিস তাই না
~ বসি মাঝে মাঝে কিন্তু ভালো লাগে না ধুর এইসব আমার জন্য না

~ তাহলে কি তোর জন্য লেট নাইট পার্টি, ড্রিঙ্ক করা, এইসব?
~ সাকিল বাদ দে প্লিজ, আজ আসি রে
~ কোথায় যাবি সে বারে তাই তো?

~ নাহ আজকে বাসায় চলে যাবো
~ আচ্ছা তাহলে বাসাতেই চলে যা আজকে
~ হুম

বাসায় এসে মোবাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে তাওহীদ। তাকে বাসায় দেখে রাবেয়া বেগম আর মাইশা দুজনেই অবাক আজ এত তারাতারি আর তাও বিনা নেশায়। একটু ভিমরি খেয়ে উঠে দুজনেই। ছেলের এই ভালো দিক টা আজ অনেকদিন পড়ে নজরে পড়ল রাবেয়া বেগমের।

~ তাওহীদ
~ হু
~ কিরে আজ এত তারাতারি বাসায় চলে এলি
~ কেন কোন সমস্যা?

~ নাহ সমস্যা হবে কেন
~ তাহলে প্রশ্ন কেন করো, অযথা প্রশ্ন করবা না আমাকে, আমি উপরে যাচ্ছি একদম ডাকা~ডাকি করবা না

এই বলে তাওহীদ সোজা উপরে উঠে যায়। রাবেয়া বেগম বেশ বুঝতে পেরেছেন যে আজ তার ছেলের মেজাজ খুব খারাপ তাই আর কথা বাড়ান নি তিনি। শুধু দিন রাত আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া করে যাচ্ছেন তার ছেলে টা যাতে আগের মত হয়ে যাক। কেউ একজন তার জীবনে আসুক। তার ছেলের জীবন টা পালটে যাক।

~ হ্যালো আফরোজ আপু
~ হ্যাঁ বল
~ তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে

~ হ্যাঁ বল না
~ আপু একটু তোমার বাসায় আসি? তুমি কি বাসায় আছো?
~ হ্যাঁ আধা ঘন্টা হবে আসলাম, আয় তুই
~ আচ্ছা আপু

~ আচ্ছা তনু কিছু হয়েছে কি?
~ এসে বলি?
~ আচ্ছা আয়
~ আচ্ছা

১৫ মিনিট পর বেল এর আওয়াজ পেয়ে আফরোজ দরজা খুলে দেয়। দেখে তনু বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ।
তনু, ভালো নাম মাহজাবিন তনুশা। সবাই তনু বলেই ডাকে। মোটামুটি লম্বা না হলে উচ্চতায় ঠিকঠাক। বেশ ফর্সা বর্ণের মেয়ে সে, চোখ দুটো তে যেন অন্য রকম শান্তি লুকিয়ে আছে। তনুর মুখের দিকে এক দন্ড তাকালেই কলিজা ঠান্ডা।

মাস্টার্সে পড়াশোনা করছে সে। বাবা মা দুই ভাই আর বোন কে নিয়ে তার সংসার। বাবা গত এক বছর হলো স্ট্রক করে প্যারালাইসিস হয়ে পড়ে আছেন ঘরে। সংসার এর পুরো দ্বায়িত্ব তনু আর তনুর এক ভাইয়ের উপরে। সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা অবদি টিউশনি রাখে মেয়েটা মাঝে গোসল খাওয়ার জন্য দুই ঘন্টা। এভাবেই ভাই বোন মিলে সংসার টা সামলায়।

~ কেমন আছিস তনু
~ কেমন আর থাকি জানোই তো?

~ কি হয়েছে
~ আপু রে ভালো একটা চাকরি যোগাড় করে দিবা প্লিজ
এইভাবে আর হচ্ছে না আপু, হাপিয়ে উঠছি অনেক। টিউশনি তে আর পোষাচ্ছে না আপু। এর মধ্যে কয়েকজন তো সেলারিও আটকে রেখেছে। চলি কিভাবে আপু, আব্বার ওষুধের খরচ ছুটকি আর রুবেলের পড়ার খরচ বাসা ভাড়া সব মিলিয়ে আপিরে উঠতেছি, আপু তুমি যেখানে কাজ করো আমাকে সেখানে একটা চাকরি যোগাড় করে দিবা? অন্তত মাস শেষে সেলারির জন্য অপেক্ষা তো করতে হবে না। এই জন্যেই আসা তোমার কাছে

আফরোজ অনেকক্ষণ তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মলিন মুখ টা দেখে ভেতর টা কেপে ওঠে আফরোজের। একটা কত টা কষ্টে থাকলে এমন সংগ্রামী হতে পারে। জীবন যুদ্ধে নিজেকে ঠিক খাপ খাওয়াচ্ছে। চট করেই আফরোজের মাথায় একটা কথা চলে এলো।


পর্ব ৩

~ তনু
~ হুম
~ বিয়ে করবি?
~ কিহহহহহহহহ
~ হ্যাঁ, বিয়ে করবি?

~ আপু কি বলো না বলো, আমি বিয়ে করবো, আমার পরিবার টা ভেসে যাবে
~ ভাসবে না, বরং ভালো চলবে
~ মানে

তারপর আফরোজ এক এক করে সব টা খুলে বললো তনু কে। তনু যত শুনছে ততই অবাক হচ্ছে। বার বার নিঃশ্বাস টা আটকে আসছে তার।

~ আপু
~ হ্যাঁ বল
~ তুমি আমায় এতই লোভী ভাবো?

~ কি বলিস এইসব তনু
~ তা নয়তো কি আপু, নিজের পরিবার কে খুব ভালোবাসি, তাই বলে নিজেকে বিকিয়ে দিব আপু, তাও বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে তাও আবার একজন drug addicted মানুষের সাথে, শুধুমাত্র নিজের প্রয়োজনের জন্য। আপু আমি এইসব পারবো না। ক্ষমা করো আপু আমার চাকরির দরকার নাই

~ দাড়া তনু আগে শুনে যা তারপর চলে যাস। আমাকে এখন তোর খুব খারাপ মনে হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতার দিক থেকে ভেবে দেখ তো, যদি আজ তোকে খারাপ কাজ কর‍তে হতো, যদি তোকে prostitute এর কাজে লাগতে হতো, তখন কি করতি? তখন কি ভাগ্য ভেবে মেনে নিতি?

নাকি এখন যা বললি এইসব লেকচার দিতি। তনু আমি তোকে কাপড় খুলে বিছানায় অন্য পুরুষের সাথে শুতে বলি নি, এতে তোর পরিবার টা বাচবে, শুভ টা একটা চাকরি পাবে, আংকেল এর ভালো চিকিৎসা হবে, রুবেল ছুটকির পড়াশোনা টাও আগাবে, আন্টিও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবে। আর ওই মানুষ গুলো তোকে দেখে বাচতে শিখবে। ছেলেকে স্বাভাবিক করার শক্তি পাবে তোর থেকে। তনু আমি বিবেক দিয়ে ভাবি, আবেগ দিয়ে নয়।

কত টুকু জানিস তুই দুনিয়া সম্পর্কে? বড় জোড় সাত থেকে আট টা টিউশনি করিস তাই দুনিয়া এখনও চিনিস নি। আমি চিনি দুনিয়া। চাকরি করবি তুই? তা কি চাকরি করবি? ইন্টারভিউ দিতে গেলে যখন বস আস্ক করবে তোমার সাইজ কত? উত্তর দিতে পারবি তো? আরেকজন বলবে এক রাত আমার সাথে স্পেন্ট করো প্রমোশন করিয়ে দিব। কি করবি, স্পেন্ট করবি নাকি? আরেকজন বলবে, নিউড পিক দাও না হলে সেলারি বাড়াবো না তখন কি করবি?

~ আপু

~ ঠিক বললাম, যা বললাম একদম ঠিক বললাম। এখন হয়তো বলবি আপু সব অফিস এমন হয় না, হ্যাঁ জানি সব অফিস এমন হয় না, কিছু অফিসে মাহবুব সাহেব এর মতো বাবার বয়সী বস থাকে যারা স্টাফদের নিজের সন্তানের মত দেখে।

এতক্ষণ যা যা বললাম সব গুলা উপলব্ধি করতে পেরেছি আমি, আজ আমি মেয়ে এখানে এই পর্যায়ে এমনি এমনি আসি নি তনু। বহুত ঝড় অতিক্রম করে আসতে হয়েছে আমায়। তারপর জয়েন করলাম মাহবুব ইন্ডাস্ট্রি তে। আর তারপর বুঝলাম দুনিয়াতে হয়তো কিছু ভালো মানুষ ও আছে যারা মাহবুব সাহেবের মত হয়। তাওহীদ স্যার নেশাগ্রস্থ হতে পারে তবে ভালো। বদমেজাজি হতে পারে তবে অনেক বিনয়ী। আর তোকে দেখে মনে হয়েছে তুই হয়তো পারবি।
~ আপু আসি

চলে গেছে?
~ হ্যাঁ, ভেবেছে আমিই হয়তো ওর অসহায়ত্বের সুযোগ টা নিলাম
~ আমার বউটা বুঝি অন্যের অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে জানে?
~ ওয়াসিম আমি কি ভুল ছিলাম?

~ তুমি যেমন তোমার জায়গায় ঠিক ছিলে তেমনি ও ওর জায়গায় ঠিক ছিল
~ শরীর কেমন এখন?
~ একদম ফিটফাট, যার এমন একটা বউ থাকে সে কি কখনো অসুস্থ থাকতে পারে?

~ মজা নিও না তো, সারাদিন অফিসে খাটি তোমার যত্ন ও নিতে পারি না
~ আরে ধুর বাদ দাও তো, চলো ক্ষুধা পেয়েছে
~ আচ্ছা চলো

রাত ১২ টা বেজে ৪০ মিনিট। আফরোজ আর ওয়াসিম ঘুমানোর ব্যবস্থা করছে। তখনই আফরোজ এর ফোনে ফোন আসে।
~ আফরোজ, এই আফরোজ
~ জ্বি আমি ওয়াসরুমে
~ কল আসছে তোমার
~ ওয়েট আসতেছি

~ কে কল দিয়েছে এত রাতে
~ নিজেই দেখে নাও
~ ও কল দিলো তাও এত রাতে,
~ কল ব্যাক করে দেখো
~ হ্যাঁ ঠিক বলেছো

আফরোজ চিন্তিত হয়ে কল করে। আল্লাহ জানে এত রাতে কল দিলো কেন? কোন বিপদ আপদ হয় নি তো আবার?

~ হ্যালো, কিরে তনু এত রাতে কল দিলি, সব ঠিক আছে তো
~ হ্যাঁ আপু সব ঠিক আছে
~ তাহলে কি হয়েছে
~ আপু আমি রাজি

~ মানে
~ মানে আমি বিয়েটা করবো আপু, তুমি ওনাদের নিয়ে বাসায় আসো
~ তুই কি সিরিয়াসলি বলছিস?
~ হ্যাঁ আপু, ভেবেছি অনেক ভেবেছি। ভেবে দেখলাম বিয়ে হলে তো সেফে থাকবো কিন্তু এই ভাবে থাকলে মানুষের ভোগের সামগ্রী হতে হবে। আর তাছাড়া এমনিতেও আশেপাশের মানুষ কত কথা বলে তার ঠিক নেই

~ যাক বুঝলি তাহলে
~ নিজের ভালো থাকার জন্য বিয়ে টা করব না, আমার পরিবার টা ভালো থাকবে আর সাথে আরেক বাবা মায়ের কাছে তাদের সন্তান কে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমার এই বিয়ে করা। জুয়াতে নামলাম আমি। নিজের জীবন টা নিয়ে জুয়া খেলে দেখিই না একবার। জিতি নাকি হারি
~ জুয়াতে নামতেই হয় তনু, আমাদের মত মিডেল~ক্লাস পরিবারের মেয়েরা জুয়াতে না নামলে জীবনের সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না
~ আমার কিছু শর্ত আছে আপু
~ বল

~ আমার ভাই টাকে ভালো টাকা সেলারির একটা জব দিতে হবে, কারন আমার বিয়ের পরে ও থাকবে একমাত্র আমার পরিবারের হাতিয়ার
~ আচ্ছা আমি স্যার কে কাল বলব সব
~ আপু

~ হ্যাঁ বল
~ যদি তারা রাজিই না হলেন তখন
~ স্যার তোর মতই কাউকে খুজতেছেন, কাল অফিসে গিয়ে কথা বলবো আমি স্যারের সাথে

~ কথা শেষ হলো?
~ হ্যাঁ শেষ হলো
~ এখানে আসো
~ কি?

~ আমার বউ টা এত কিছু একা হাতে ম্যানেজ করে কিভাবে বলো তো? অফিস সামলানো, সংসার সামলানো প্রতি ফ্রাইডে তে শ্বশুরবাড়ির সব কাজ করে দিয়ে আসা, নিজের বাসার সব কাজ করা, তারপর এই অধম বান্দার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা। আর এখন অন্য কারো সুখের খোজে ছুটে বেড়াচ্ছে, কিভাবে পারো এত কিছু?
~ ভাবনার বিষয় তো ব্যাপার টা ভাবতে হচ্ছে, আচ্ছা ভেবে জানাবো তোমাকে
~ ফাযিল মেয়ে সব সময় খালি মজা তাই না

~ ওয়াসিম আমার সারাদিনের ক্লান্ত মনের একমাত্র শান্তির ছায়া তো আমি তোমার এই হাসিমুখ টা দেখেই পাই
~ আচ্ছা চলো, কাল আমারও অফিস আছে, ঘুমিয়ে পড়ো
~ কাল অফিসে যাবা নাকি

~ হ্যাঁ, আফরোজ কাল অফিসে যেতেই হবে, এক সসপ্তাহ অফিসে যাই না, বস না জানি এইবার গেলে বরখাস্ত করে
~ ইসসসসসস বললেই হলো, বলবা আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম
~ আচ্ছা দেখা যাবে, ঘুমিয়ে পড়ো

আফরোজ এর অক্লান্ত চেষ্টার পরে দুই পরিবারের মাঝে কথা হয়। মাহবুব সাহেব তো মেয়ে দেখেই খুশি। রাবেয়া বেগম তো পারছে না এক্ষুনি মেয়েকে ঘরে তুলেন। দুই পরিবারের সম্মতি তে বিয়ে ঠিক হয় তাওহীদ~তনুর। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে তাওহীদ এখনো জানে না যে আসছে ১০ ই ফাল্গুন ১৪২৫ বঙ্গাব্দ মানে ২২ ফেব্রুয়ারি তার বিয়ে।

এইদিকে তাওহীদের বাবা মা বোন গিয়ে তনুর বাড়িতে গিয়ে সব ঠিকঠাক করে পাকা কথা দিয়ে আসে। কিন্তু খারাপ লাগে তনুর বাবার জন্যে। লোক টা নিজের মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকদের সাথে ঠিক মত কথাই বলতে পারলো না। শুধু বাকা ঠোঁটে সালাম টাই দিতে পেরেছেন আর দু~চোখ বেয়ে অজস্র পানি ঝড়িয়েছেন।
দুইদিন পর সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই বসে আছেন। এমন সময় তাওহীদ আসে।

~ morning আব্বু
~ morning, কেমন আছো?

~ ভালোই
~ তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার
~ বলতে থাকো কান আছে শুনছি আমি
~ ২২ তারিখ তোমার বিয়ে, নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করো
~ whatttttttttttttt
~ whattttttt এর কিছু নেই, বয়স বেড়েছে দেখছো সেটা, তোমার মত বয়সে আমার বিয়ের দু বছর পার হয়ে গিয়েছিল

~ আহহহহ, তুমিও না
~ তুমি থামো রাবেয়া, ওকে এখন দ্বায়িত্ব বুঝে নিতে হবে
~ মেয়েটা কে?
~ মেয়েটা কে বিয়ের দিনই দেখতে পাবে, দয়া করে মদের নেশা থেকে নিজেকে একটু দূরে রাখো
~ আমার লাইফ আমি যেভাবে ইচ্ছা চালাবো আমার লাইফে বাধা ক্রিয়েট করো না আব্বু

~ shut up তাওহীদ, just shut up অনেক হয়েছে আর না নিজেকে এখন থেকে সংযত করার চেষ্টা করো আর কিছুই বলবো না আমি

বাবার কথা গুলো ঠিক হজম হয় নি তাওহীদের। তাই খাবার সমেত খাবারের প্লেট টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে সোজা বেরিয়ে যায় তাওহীদ।

~ দিলে তো রাগিয়ে
~ চুপ থাকো তুমি
~ এভাবে বলার কি দরকার ছিল
~ এভাবেই বলার দরকার ছিল কিন্তু তাও আরো আগে

~ কি লাভ হলো, রেগে চলে গেলো
~ আরে যাবে না কোথাও, ওর প্রান ভোমরা আমার হাতে
~ মানে

~ মানে আজ রাতে দেখবে, আমি আসছি, মামুনি এডমিশনের খবর কি
~ আব্বু তুমি ফ্রী হও তারপর এডমিশন হওয়া যাবে
~ আচ্ছা

~ আব্বু তোমাকে না আজকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।
~ তাই? ।
~ হ্যাঁ অনেক পুরা আমিতাভ বচ্চনের মত
~ বলে ফেলেন আম্মুজান, কত লাগবে আপনার?
~ ৫ হলেই হবে, আজকে নতুন ভাবি কে নিয়ে শপিং এ যাবো।

~ আমার আম্মুজান শপিং এ যাবে আর মাত্র ৫?
~ হাউ কিউট আব্বু, বলে যখন ফেলেছো তাহলে দিয়েও যাও।
~ হা হা বদমাশ, রাবেয়া আমার আম্মুজান কে ক্রেডিট কার্ড টা দিয়ে দিও। আম্মুজান এখন আমার বড় হয়ে গেছে।
~ তুমিও যেমন।
~ আসছি, আল্লাহ হাফেজ।

রাতে বাসায় এসে তাওহীদ তুমুল অশান্তি শুরু করে দিয়েছে। সব কিছু ভেঙে চুরে একাকার করছে। চিৎকার করে পুরো বাড়ি মাথায় করছে সে
~ মাহবুব সাহেব, মাহবুব সাহেব।
~ আস্তে চিৎকার করো এটা ভদ্রলোকের বাসা, তোমার ক্লাব বা মদের আড্ডাখানা নয় যে চিৎকার করবে।
~ তোমার সাহস হয় কি করে এইসব করার।

~ কিসের সাহস, কি বলতেছিস তুই তাওহীদ।
~ জিজ্ঞেস করো তোমার হাজবেন্ড কে কি করেছে সে।

~ তাওহীদ সাবধানে কথা বল, উনি তোর বাবা।
~ আরে বাবা তো বাবার মত থাকুক না? এত বারাবারি করতেছে কেন।
~ কি হয়েছে কি।

~ কি হয়েছে, জানতে চাও, তাহলে শুনো উনি আমার সব ক্রেডিট কার্ড সিজ করে দিয়েছে, ATM এর সব টাকা ট্রান্সফার করিয়ে নিজের একাউন্টে নিয়ে নিয়েছে, কেন?
~ তো কি করবো, টাকা দিয়েছিলাম সেভ রাখার জন্য, মদের পিছনে আর ড্রাগস এর নেশায় ব্যয় করার জন্য না।
~ তার মানে তুমি ওর সব টাকা নিয়ে নিয়েছো

~ হ্যাঁ
~ দেখলা মা দেখলা
~ কি দেখবো আমি, উনার টাকা উনি নিয়েছে আমার কিছুই বলার নাই
~ মা তুমিও
~ মা মা করছো কেন, মা কি করবে

~ এইসব অফ করো, তোমাকে বলেছিলাম না যে আমার জীবনে নাক না গলাতে
~ এখন তো টাকা অফ করলাম, বিয়ে না করলে ত্যাজ্যপুত্র করে দিব, আমার সম্পত্তির এক কানা কড়িও তুমি পাবা না তাওহীদ, মাথায় রাখো কথা টা
~ মা দেখছ
~ রাবেয়া উপরে আসো, আর তাওহীদ আজ সারা রাত আছে তোমার কাছে, ভাবতে থাকো, যা ডিসিশন নিবে জানাবে আমাকে, শুভ রাত্রি


পর্ব ৪

বাবার কথায় বড় রকমের ধাক্কা খায় তাওহীদ। সারা রাত ভাবছে সে। এক বিয়ের জন্য ব্যাংকের টাকা সিজ করে দিল, আর এখন বলছে বিয়ে না করলে ত্যাজ্যপুত্র করে দিবে। এইসব ভাবতে ভাবতে বেচারা ক্লান্ত। মাহবুব সাহেব হঠাৎ এত কড়া হবেন কেউই ভাবে নি।
একটা না একটা ডিসিশন নিতেই হবে তাকে। এইভাবে বসে থাকলে তো মারা পড়বে সে। তাই যত জলদি সম্ভব হয় একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
পরদিন সকাল বেলা

~ আব্বু
~ হ্যাঁ বলো
~ আমি রাজি
~ কিহ বুঝলাম না

~ বললাম আমি রাজি বিয়েতে
~ যাক লাইনে এসেছো তবে, প্রস্তুত করো নিজেকে বিয়ের জন্য, আর এখন থেকে অফিসেও বসবে। বাপের টাকায় ফূর্তি করতে ভালোই পারো এখন নিজে কামাই করে দেখো টাকা জিনিস টা কত কষ্ট করে উপার্জন করতে হয়। রাবেয়া আসছি আমি

~ আব্বু আমার ক্রেডিট কার্ড টা
~ সময় হলে সব পাবে, আগে বিয়ে টা হোক, তারপর

তাওহীদ কিছু না খেয়েই চলে গেছে বাহিরে। বন্ধুরা ক্রমাগত কল দিচ্ছে। অবশ্য দিবে না~ই বা কেন। এই দুই দিন তো তাওহীদের টাকার মদ তাদের পেটে পড়ে নি। বন্ধুদের সাথে বসে একটা প্ল্যানিং করবে ভাবছে সে। তাই সেখানে যাওয়া তার

~ কিরে আজকেও মাল কড়ি আনিস নি
~ ধুর আব্বু সব রকম ভাবে আটকে দিয়েছে
~ সীট ইয়ার

~ বিয়ে না করলে ত্যাজ্যপুত্র করে দিবে
~ তাই নাকি
~ হ্যাঁ, আমার মত নেশাখোর কে কোন শালি বিয়ে করবে আল্লাহ জানে
~ তা কি করবি ঠিক করছিস কিছু
~ বিয়ে করবো

~এএএএএএ
~ হ্যাঁ, বিয়ে করে ফেলবো, বিয়ে না করে ত্যাজ্যপুত্র হওয়ার থেকে বিয়ে করে টাকা পয়সা হাতে পাবো তাই ভালো
~ হ্যাঁ এটা ভালো ডিসিশন, কিন্তু মেয়েটা কে দেখছিস?
~ নাহ, আল্লাহ জানে কোন গাইয়া ভূত ঠিক করছে আমার জন্য

~ আরে টেনশন নিস না বিয়ে টা কর, তারপর লাথি মেরে বের করে দিস ততদিনে সম্পত্তির ভাগ নিজের নামে করে নিস
~ ঠিক তাই, তাওহীদ রায়হান যা বলছে কাজে লাগা
~ হ্যাঁ তাই ভাবছি, ওই মেয়ের কপালে শনির দুর্দশা আছে, বহুত খারাপি আছে ওই মেয়ের ভাগ্যে

মাহবুব সাহেব অফিসে এসে দারুন মুডে আছে। মন টা তার আজ ফুরফুরা। বদমেজাজি নেশাগ্রস্থ ছেলে টাকে ভালোই জব্দ করেছে সে। এই রকম করলে যে ছেলে তার এত তারাতারি রাজি হবে ভাবে নি সে। এই বুদ্ধি টা তার নিজের মাথায় আসলে খুবই ভালো হতো। যে এই বুদ্ধি টা দিয়েছে তাকে একটা ধন্যবাদ তো জানাতেই হচ্ছে। চট করে মোবাইল টা হাতে নিয়ে কল দিয়ে বসলো তাকে

~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম আংকেল
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, বাবা কেমন আছো
~ এইতো আংকেল একদম ফিটফাট, ওইদিকের কি অবস্থা

~ একদম ঠান্ডা, অনেক ধন্যবাদ সাকিল তোমাকে, তুমি বুদ্ধি টা দিয়েছিলে
~ ধন্যবাদ এর কি আছে আংকেল, আমি ওর বন্ধু শত্রু না, আমার দ্বারা ওকে নরকের দিকে ধাবিত করা পসিবল না। তো এখন কি সে রাজি হয়েছে?
~ হয়েছে মানে, একদম রাজি

~ বাহ ভালো তো
~ হ্যাঁ তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে বিয়েতে
~ ইনশাআল্লাহ আংকেল অবশ্যই আসবো

আজ ১৭ তারিখ, ২২ তারিখ বিয়ে। তার মানে আর মাত্র ৪ দিন বাকি আছে। এত তারাতারি বিয়ের তারিখ পড়ায় মেয়ের পরিবার ও হিম সিম খেয়ে যাচ্ছে। নিম্নমধ্যবিত্ত হয়ে বেচে থাকার অনেক জ্বালা যা তনু হারে হারে টের পাচ্ছে।

অসুস্থ বাবার সব দ্বায়িত্ব ছোট ছোট ভাই বোনের পড়াশোনার খরচ, বাসা ভাড়া, মায়ের দেখা শোনা সব টাই তনু আর তার ভাই মিলে যোগাড় করে। ৪ বছরের একটা মেয়াদী বীমা করেছিল তনু কাউকে অবশ্য বলে নি। ভেবেছে যদি কখনো বড় বিপদ আসে তখন টাকা গুলো কাজে লাগবে। গত নভেম্বরের ২৭ তারিখ কিস্তি শেষ হয়েছে তার। তার মানে এখন টাকা টা তোলা যাবে। মায়ের কাছে চলে যায় তনু।

~ মা কি করো
~ এই তো রান্না করতেছিলাম, বিকেলে তোর ফুপুরা আসবে, আর সন্ধ্যায় তোর খালামনিরা
~ এত তারাতারি আসার কি দরকার ছিল মা, বিয়ের আগের দিন ই না হয় সবাই আসতো
~ মুখ ফুটে বলছে, না করি কেমনে

~ বাজার করছে কে
~ রুমেল বাজার করে আনছে
~ রুমেলের উপর দিয়ে ধকল যাবে এখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে মা
~ কি বলস এইগুলা তনু, আর এমনিতেও বিয়ে তো করতেই হতো, নিজেদের প্রয়োজন এর জন্য তোকে আইবুড়ো করে রাখবো নাকি রে মা

~ আচ্ছা বাদ দাও, মা একটা কথা ছিল
~ হ্যাঁ বল
~ রুমেলের রুমে আসো
~ আচ্ছা যা আমি আসতেছি

ভাই আর মায়ের সাথে ব্যাপার টা নিয়ে বসতে চায় তনু। তাই ভাই আর মা কেই জানাবে সে। রুমেলের রুমে যায় তনু। পিঠা~পিঠি ভাই বোন তনু আর রুমেল তনু মাস্টার্সে আর রুমেল অর্নাস ফাইনাল দিল। দুইজন দুইজন কে নাম ধরেই ডাকে

~ রুমেল আছিস?
~ হ্যাঁ আয়
~ কিরে অফিসে যাস নাই
~ আজকে ছুটি নিলাম

~ অসময়ে ছুটি নিলি
~ আরে বিকেলে লঞ্চ ঘাটে যেতে হবে সেই জন্যে
~ রুবেল কোথায়, ও তো যেতে পারতো আর কোম্পানির চাকরি ছুটি নিলে ছাটাই করে এরা
~ তুই জানিস না তোর ভাই কেমন

~ ও তো তোরও ভাই
~ আচ্ছা বাদ দে বল কিছু বলবি নাকি
~ হ্যাঁ, মা আসুক তারপর বলবো

মায়ের প্রবেশ

~ তনু, বল কি বলবি মা
~ মা, রুমেল, একটা কথা বলার ছিল,
~ তো বল
~ আসলে চার বছর আগে একটা বীমা করেছিলাম, কাউকেই বলি নি, ভেবেছিলাম বাবার বেশি বারাবারি হলে টাকা টা কাজে লাগবে। নভেম্বরের ২৭ তারিখ কিস্তি শেষ হয়ে গেছে। এখন কি টাকা টা তুলবো?

~ এই দেখি দেখি তুইন্না, তুই তো ভালোই চাপা রে
~ মা দেখলা ওয় আমাকে সেই তুইন্না বলেই ডাকে
~ আহহ রুমেল এমন করিস না
~ না মা তুমি ভাবো একবার, তোমার মেয়ে ৪ বছরের বীমা করলো, তার কিস্তিও শেষ করলো অথচ কাক~পক্ষীতেও টের পেলো না
~ মা তুমি ওর কথা শুনো না, এখন বলো

~ তোর টাকা তুই ভালো বুঝিস মা
~ মা তুমি কি খালামনি বা মামাদের কাছে টাকা চেয়েছো?
~ হ্যাঁ তুইন্না কাল বড় মামার কাছে টাকা চাইছে মা
~ মা শুনো, কারো কাছে টাকা খুইজো না আমি কাল রুমেলকে নিয়ে বীমা অফিসে যাবো, দেখি টাকা টা তুলতে পারি কিনা

~ শুন তনু, তোর বড় মামা~মামী বলছে ৩০০০০ দিবে আর জামাইকে রিং দিবে, আর তোর মেজো মামা~মামী টাকা দিবে না তবে জামাই কে রিং দিবে আর তোর ছোট মামা~মামী ২০০০০ দিবে, মারে একটা বিয়েতে কম করে হলেও ৫/৬ লাখ নিয়ে নামতে হয়।
~ তুইন্না তোর জামাইকে মা চেইন দিবে রে সেইটা আমিই দিবো, তুই তো এখন বড়লোক বাড়ির বউ হবি, আমার বউকে তুই কি দিবি
~ ফাইযলামি করিস না রুমেল, মা শুনো আমি বিকেলে একটু বের হবো

~ তনু
~ হ্যাঁ মা বলো
~ আফরোজের উপরে বিশ্বাস করে বিয়ে টাতে নামলান মা, ভালো পরিবার ছেলের ছবি দেখলাম সবই ঠিক আছে তুই খুশি তো মা?
~ খুশি মা, তোমরা খুশি হলেই আমি খুশি
~ তুইন্না আমার থেকে কি চাস বল

~ কিছুই না, শুধু আমার চলে যাওয়ার পর সংসার টার খেয়াল রাখিস, বাবা মা কে দেখে রাখিস, তাহলেই আমি খুশি ভাই
~ সেন্টি হইস না, কিছু বিয়ের দিনের জন্যে রেখে দে
~ যাহ তো সর, মা বাবা কি করে গো
~ আর কি করবে শুয়েই আছে

~ তুইন্না ছোট ফুফু আসবে রে, দেখিস কত বকবক যে এই মহিলা করবে
~ আমার তো দেখলেই গা জ্বালা ধরে, মা একে বললা কেন
~ তনু, রুমেল এইভাবে বলিস না, এই শিক্ষা তো তোদের দেই নাই আমি, ফুফুরা আসলে সুন্দর করে কথা বলবি
~ আচ্ছা

বিকেলে তনু বের হয়ে যায় সাথে ছুটকিকেও নিয়ে যায়। আসলে মাইশা কল দিয়েছে, তনুকে বের গতে বলছে সে তাই তনু বের হলো। শপিং এ যাবে একটু তাই বের হওয়া। বসুন্ধরা তে যাবে না, গাউছিয়া তে তো আরো আগে না, তাই নিউমার্কেট টাই বেছে নেয় তনু। কিন্তু মাইশার জোড়াজুড়ি তে বসুন্ধরা তে যেতে হয় তনুর

~ ভাবি এইটা কেমন?
~ অনেক সুন্দর
~ তাহলে এইটা নেই, কি বলো?
~ নাও আপু

~ এই ছুটকি তুমিও নাও
~ নাহ মাইশা আপু, আমি পরে নিবো তুমিই নাও
~ আচ্ছা, ভাবি তুমি কিছু নিবা না
~ নাহ গো, তুমিই নাও তোমাকে সংগ দিতে আসলাম

~ হি হি
~ দিদি শুন না একটু
~ হ্যাঁ বল
~ দিদি মাইশা আপু এই ড্রেস টা নিল, বিয়েতে পড়বে?
~ জানি না

~ ওহ
~ মাইশা, ছুটকি কে দেখো তো আমি আসছি একটু
~ আচ্ছা ভাবি
~ মাইশা আপু একটা কথা বলি

~ হ্যাঁ বলো
~ এই ড্রেস টা কি তুমি বিয়ে তে পড়বা?
~ হ্যাঁ, সুন্দর না ড্রেস টা?

~ অনেক সুন্দর,
~ রিসিপশনের জন্য আরো ভালো কিছু নিবো
~ ওহ

ছুটকির কাছে ড্রেস টা খুব ভালো লেগেছে, কিন্তু দিদি মানে তনুর জন্য কিছু বলতে পারছে না। ড্রেস টার প্রাইস অনেক, তনুর কাছে অনেক বেশি আর মাইশার কাছে পানি। ড্রেস টার লোভ ছাড়তে পারছে না ছুটকি। বোনের বিয়ে, অনেক মেহমান আসবে ছেলের বাড়ির পক্ষ থেকে তাদের সামনে কম দামী ড্রেস পড়তে কেমন জানি লাগছে তার কাছে।
তবুও চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।

~ মাইশা কেনাকাটা হয়েছে?
~ হ্যাঁ ভাবি
~ তাহলে চলো যাই
~ হ্যাঁ চলো, কিন্তু তুমি তো কিছুই নিলা না আম্মু শুনলে রাগ করবে
~ যখন তোমাদের বাসায় যাবো তখন কিনবো কেমন?

~ ওকে, ভাবি তাহলে চলো তোমাদের ড্রপ করে দেই
~ না আপু, তুমি চলে যাও, আমরা সি এন জি নিয়ে নিবো

~ আচ্ছা তাহলে আসি ভাবি, আল্লাহ হাফেজ
~ আল্লাহ হাফেজ
~ আসি ছুটকি
~ আচ্ছা আপু আল্লাহ হাফেজ

~ দিদি
~ হ্যাঁ বল
~ না কিছু না, চল যাই
~ নিউমার্কেট যাবো, চল

নিউমার্কেট যাওয়ার কারন আছে, সেখান থেকে জিনিসপত্র একটু কম দামে আর দাম কষাকষি করা যায়। তনু কিছু টাকা নিয়ে নিয়েছে আজ কিছু কেনাকেটা করবে বলে। তাই সেখানে যাওয়া

~ দিদি, কি কিনবি
~ মায়ের জন্য শাড়ি, বাবার জন্য পাঞ্জাবি
~ ওহ

দুই বোন মিলে ঘুরে ঘুরে অনেক দামাদামি করে মায়ের জন্য দুইটা শাড়ি, এক জোড়া জুতা, বাবার জন্য ভালো দেখে দুইটা পাঞ্জাবি আর এক জোড়া জুতা কিনেছে। মায়ের জন্য দুই জোড়া সিটি গোল্ডের চুড়ি নিয়েছে। আর ছুটকির পছন্দ অনুযায়ী ওকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছে হলুদে পড়ার জন্য।

~ ছুটকি
~ জ্বি
~ আমার কাছে না এখন টাকা নেই, বাকি জিনিস কাল কিনে দেবো, কেমন?
~ আচ্ছা দিদি

সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরে ওরা। এসে দেখে বাসায় মেহমানে ভর্তি, দুই ফুফু এক চাচি আর খালামনিরা মামিরা সবাই আসছে। সাথে সব কাজিন রাও আছে। সবাইকে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করছে তনু। এমন সময় চাচি বলে

~ কিরে তনু, তোর তো ভাগ্য খুলে গেছে এত বড় ঘরে বিয়ে হচ্ছে তোর
~ দোয়া করবেন চাচি
~ তা তনুর মা, জামাই কি করে
~ পড়াশোনা শেষ করছে এখন বাবার ব্যবসা দেখাশুনো করে

কথা শুনেই তনু মায়ের দিকে তাকায়। আসলে সত্যি টা যে কি তা তো তনু জানে। তনু সবার সাথে কথা বলছিল, এমন সময় ওর ফুফু ওকে বলে

~ তনু জামাই কেমন রে
~ ফুফু আমি দেখি নি গো
~ কি বলিস, এখন কার যুগে এমন হয় নাকি
~ আমার হচ্ছে তো, একেবারে বিয়ের দিনই দেখবো

~ যাক ভালোই তো
~ আমাদের তনু তো লাখে একটা
~ হ্যাঁ খালামনি তোমাদের তনু লাখে একটা বটে তবে সে দুঃখের রানী, সুখের রানী নয়

~ কেন রে তনু এইসব কেন বলিস
~ কিছু না মামি, তোমরা বসো আমি বাবার কাছ থেকে আসতেছি।

সবাই কে এড়িয়ে বাবার ঘরের দিকে পা বাড়ায় তনু। আগুনে পা দিয়ে ফেলছে তনু, পিছন থেকে ফিরে আসার কোন সুযোগ নেই তার। তার থেকে বরং যা হচ্ছে মেনে নেয়াটাই শ্রেয়। যা হবে দেখা যাবে। এখন ভেবে আর লাভ নাই

~ বাবা ও বাবা, আমি আসছি, চোখ টা খুলো।

মেয়ের কথায় আলতাফ হোসেন চোখ মেলে তাকায়। ফ্যাল ফ্যাল নজরে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। ঠোঁট টা বাকিয়ে আছে আগে থেকেই। বাকা ঠোঁটে কথা গুলোও বেযে বেযে আসে।

~ আস,চ, চি, ছি, স
~ থাক বাবা কথা বলতে হবে না, আছি আমি এখানেই। শরীর টা একটু ভালো লাগছে এখন?

~ উউউউউ
~ তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি বাবা
~ ক,ক,ক,ইইই
~ এই দেখো পাঞ্জাবি, আমার হ্যান্ডসাম বাবার জন্য পাঞ্জাবি নিয়া আসছি আমি, আর জুতা এনেছি পছন্দ হয়েছে?

~ হুউউউ
~ এই পাঞ্জাবি টা পড়ে আমার গায়ে হলুদ দিবা, আর এটা পড়বা বিয়েতে, কেমন?
আমি তো চলে যাবো, তোমার তনু টা চলে যাবে, কষ্ট লাগবে না তোমার?

~ হুউউউউউ
~ কেদো না, আমার বাবার চোখের পানি আমার ভালো লাগে না। আমি দূরে গিয়েও তোমার কাছেই থাকবো বাবা। তুমি শুধু দোয়া করো তোমার তনুকে। সে যেন সব রকম পরীক্ষায় পাশ করে

মেয়ের কথায় চোখের পানি ছেড়ে দেয় আলতাফ হোসেন। অক্ষমতা বড্ড বেশি ঘ্রাস করে তাকে। বড় মেয়ের বিয়ে নিয়ে তার কত স্বপ্ন ছিল, কিন্তু এই অক্ষমতা তাকে সব কিছু থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছে
তার কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়েছে৷। হঠাৎ করেই তনু খেয়াল করে ওর বাবা যেন হাত টা দিয়ে বুকের দিক টায় কিছু ইশারায় বুঝাতে চাচ্ছেন। বাবার লক্ষী মেয়েটা বুঝে নেয় সব টা। বাবা তার বুঝাতে চাচ্ছেন যে তুই চলে গেলে বুকটা ফাঁকা হয়ে যাবে রে মা, বড় ফাঁকা হয়ে যাবে। বুক টা ফেটে কান্না আসছে তনুর৷। তবুও সে শক্ত হয়ে আছে, কান্না করা যাবে না একদমই না হয় তার বাবা আরো ভেঙে পড়বেন।

বাবার সাথে সময় কাটানোর পরে সে নিজের রুমে যায়। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফুফুর কথা ভাবছে তনু। ছেলেকে তো সে এখন অবদি দেখে নি। ছেলেটা কেমন হবে? তাকে কি আসলেই দেখতে নেশাখোর, drug addicted এর মত লাগে? তাকে দেখতে কি একদমই বাজে প্রকৃতির?

আবার পরক্ষনেই আফরোজের কথা মাথায় আসে। আর যাই হোক আফরোজ তার জন্য নিশ্চয়ই এমন ছেলে খুজবে না। আফরোজের প্রতি তার ভরসা আছে। আসল কথা আল্লাহ জুড়ি যার সাথে যার মিলিয়েই রেখেছে। আফরোজ তো শুধু মাধ্যম মাত্র। যাকে বিশ্বাস করা যায়, ভরসা যায়, এই মেয়েটাও কম কষ্ট পায় নি জীবনে। জীবন থেকে বার বার ধোকা খেতে খেতে ওয়াসিমের সাথে তার পরিচয়। তারপর বিয়ে আর এখন এক বছরের সংসার, ভালোই চলে যাচ্ছে দুইজনের।
এমন সময় মা সুরিয়া বেগম আসে

~ তনু ঘুমিয়ে গেছিস?
~ নাহ মা, আসো
~ কিরে তখন চোখে ইশারা দিয়েছিলি রুমে আসতে

~ হ্যাঁ বসো
~ কি বলবি, বল
~ মা, তোমার জন্য দুইটা শাড়ি কিনেছি আর জুতা কিনলাম এক জোড়া, তাই দেয়ার জন্য ডেকেছিলাম

~ হায় হায় করছিস কি, তুই এইগুলা কেন কিনলি, আমার তো অনেক কাপড় আছে ওইগুলাই পড়তাম, আমার জন্য না এনে তোর বাবা আর ছুটকির জন্য আনতি
~ এনেছি মা, বাবার জন্য এনেছি এইযে এই গুলা বাবার। আর ছুটকির জন্য রুবেল, রুমেল এর জন্য কাল কিনবো
~ আর তোর জন্য?
~ আমার জন্য কি কিনবো, আমার তো সবই আছে মা, কত গুলা থ্রীপিছ আছে ওই গুলা নিয়ে যাবো

~ নাহ, নতুন কয়েকটা কিনবি আমি টাকা দিবো, ২ হাজার টাকা জমাইছিলাম, সেইগুলা দিব কিনে নিস। তারা কত বড়লোক, তাদের বাড়িতে এইসব পড়বি নাকি তুই?
~ তারা বড়লোক আমি নিম্নমধ্যবিত্ত এটা তারা জানে মা, আর সব জেনে শুনেই নিচ্ছে। ভয় নেই মা, আর টাকা দিতে হবে না, তুমি যখন বলছো তাহলে আমি কিনবো, কেমন?

~ দেখতে দেখতে আমার ছোট্ট তনুটা কত বড় হয়ে গেল, দুইদিন পর শ্বশুরবাড়ি যাবে সে
~ কেদো না মা, তোমার তনু ভালো থাকবে
দেখে নিও মা।

~ আয় খেতে আয়
~ নাহ মা আজ আর খাবো না, প্রচুর ঘুম আসতেছে, ঘুমাবো এখন
~ তাহলে ভাত নিয়ে আসি এইখানে? মা খাবাই দেই
~ নাহ মা তুমি মেহমান সামলাও, আমি একটু ঘুম দেই
~ আচ্ছা

রাত প্রায় ১২ টার মত বাজে। এমন সময় তনুর মোবাইল ক্রিং ক্রিং শব্দে আওয়াজ করতে শুরু করে। তনু মোবাইলের শব্দে লাফিয়ে উঠে। তারপর কল টা রিসিভ করে। এত রাতে কে কল দিল তাকে


পর্ব ৫

~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
~ হেই
~ কে বলছেন?

~ তাওহীদ, তাওহীদ মাহবুব বলছি
~ কোন তাওহীদ?

~ যাকে দুই দিন পরে বিয়ে করবে তাকেই ভুলে গেছো
~ মানে
~ জ্বি i am Tawhid Mahbub, your future husband

কথা শুনে পুরো তব্দা খেয়ে যায় তনু। তার মানে ইনিই তাওহীদ সাহেব। তাওহীদ মাহবুব যার কথা আফরোজ আপু বলছে। এই সেই তাওহীদ যার সাথে তনুর বিয়ে। তনুর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। প্রচন্ড গতীতে হার্টবিট টা ধুকপুক ধুকপুক করতে থাকে তার। মাশা~আল্লাহ ভয়েস তো এমন যে কেউই ক্রাশ খাবে। ইসসস দেখতে জানি কেমন হবে এই লোক? প্রায় ৫ মিনিট ফোন কানে অথচ কথা নেই আর অপরপাশে তাওহীদ হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। পরে রেগে গিয়ে এক ধমক দেয় তাওহীদ

~ hello, excuse me, আছেন নাকি গেছেন?
~ জ্ব,জ্ব,জ্বি বলুন
~ কানে প্রবলেম আছে, আই মিন শুনতে সমস্যা হয় নাকি

~ নাহ তো
~ তাহলে হ্যালো হ্যালো করছি উত্তর নেই কেন নাকি হ্যালতে হ্যালতে একদম শুয়েই গেছেন
~ তেমন কিছু না
~ কি করা হচ্ছে এখন

~ ঘুমাচ্ছিলাম
~ এত তারাতারি কেউ ঘুমায় নাকি
~ আমি ঘুমাই
~ বিয়ের পরে কি করবা

~ মানে
~ মানে মানে করা অফ করো, বিয়ের পরে আমার সাথে রাত ৪/৫ টা অবদি সজাগ থাকতে হবে, বুঝলা
~ ওহ
~ প্রশ্ন করলা না যে
~ ওহ সরি, কেমন আছেন আপনি

~ what
~ আপনি না বললেন প্রশ্ন করি নি যে
~ আরে ধুর, আমি বলতে চেয়েছি আমি নাম্বার কোথায় পেয়েছি? কে দিয়েছে? ব্লা ব্লা ব্লা
~ আপনার পরিবারের তিন জনের কাছে আমার নাম্বার আছে, আন্টি আংকেল আর মাইশা, খুব সম্ভবত মাইশা হয়তো দিয়েছে, জানার পরেও ন্যাকামি করবো কোন দুঃখে

এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে কথা বলে তাওহীদের ভালো লাগছে। একদম সোজাসাপ্টা কথা বলে। আর ভয়েস টাও মিষ্টি। দেখতে না জানি কেমন হবে?

~ দেখা করবা?
~ নাহ
~ কেন না কেন, আর তাওহীদ মাহবুব কে কখনো কোন মেয়ে না করে নাই

~ আমি তো সব মেয়ে নই, আর তাছাড়া দুইদিন পর তো আমি আপনার বাসাতেই যাবো তখন দেখবেন
~ ok, take care, see u soon

বাকি কথা টুকু শেষ করতে না দিয়েই তাওহীদ লাইন টা কেটে দেয়। ওই মুহূর্তে মাথা পুরা হ্যাং তনুর। তবে এর কথা ভেবে লাভ হবে না। সব ব্যবস্থা তাকেই করতে হবে। তাই খারাপ কিছু না ভেবে বাকি কাজে মাথা ঘামানো টাই ব্যাটার মনে করছে তনু।

পরদিন সকাল সকাল তনু রুমেল কে নিয়ে বীমা অফিসে চলে যায়। সেইখানে সব কাজ সাড়তে সাড়তে প্রায় দুপুর দুইটা বেজে যায়। সর্বমোট ৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ৫৭০ টাকা জমা হইছে ওনারা পুড়িয়ে ৪ লক্ষ টাকার চেক ইস্যু করে দিয়েছে।

~ তনু, যাক অবশেষে বের করতে পারলি
~ হ্যাঁ এখন আর আমার মাকে কারো কাছে হাত পাত তে হবে না
~ হুম

~ রুমেল শপিং এ যাবো রে, চল
~ এখন?
~ হ্যাঁ
~ এত গুলা টাকা নিয়ে? রিস্কি হয়ে যাবে না
~ নাহ, কিসের রিস্ক, নরমাল থাকিস তাহলেই হবে
~ ওকে, কি কিনবি? কাল ন মা আর বাবার জন্য কিনলি

~ আমার পৃথিবী টা কি শুধু মা আর বাবার মাঝেই সীমাবদ্ধ?
~ আমার কিছু লাগবে না কিন্তু, আমার আছে, তুই ছুটকির জন্য কিন আমি রুবেল কে কিনে দিবো
~ তোর টাকার পাহাড় আছে নাকি, ওই তো ১২ হাজার টাকার বেতন এর চাকরি করিস, সব দিয়ে নিজের কাছে ৪ আনাও থাকে না তোর
~ বাদ দে, আছে আমার কাছে
~ আছে?

~ হ্যাঁ আছে
~ তাহলে আজকে লাঞ্চ টা তুই করা না প্লিজ, আমার খুব ক্ষুধা লাগছে
~ আচ্ছা চল
~ আচ্ছা শুন না, খেয়ে বসুন্ধরা তে যাবো একটু
~ ওরে বাবা, ওইদিকে কেন

~ কাজ আছে একটু
~ আচ্ছা
~ রুমেল
~ হ্যাঁ বল
~ আফরোজ আপু আর ওয়াসিম ভাইয়ার জন্য কিছু কিনবো?

~ মাথা খারাপ নাকি? আগুন লাগাতে চাস নাকি, এইসব করলে জীবনেও সে আসবে না, প্লিজ তনু এইসব করিস না
~ আফরোজ আপুর আত্নমর্যাদা বোধ বেশি তেমনি ওয়াসিম ভাইয়ার ও
~ আর মূলত এইসব আজ তার জন্যেই পসিবল

~ হ্যাঁ, আমি সব সময় আফরোজ আপু লে ফলো করার চেষ্টা করি জানিস
~ আচ্ছ বাদ দে, নে খাবার খা

দুই ভাইবোন খাওয়া দাওয়া করে বসুন্ধরার দিকে রওনা হয়েছে। সেইখানে তনুর কিছু কাজ আছে। কাজ সেড়ে তারপর বাসায় যাবে। এইদিকে বাসা থেকে ফোন আসে। তনুর দুই মামা আর চাচা ফুফা আর বড় ফুফী তারা সবাই বরের বাড়ি আই মিন তাওহীদের বাসায় যাচ্ছে। বিয়ের ৩ দিন আগে হঠাৎ ছেলের বাড়ি কেন।

~ হঠাৎ ও বাড়ি যাওয়ার ধুম পড়লো যে
~ মামা রা নাকি ছেলে দেখবে তাই তো মা বললো

~ আমাদের মায়ের এই এক দোষ যে যা বলে নাচতে থাকে
~ বাদ দে তনু, চল কাজ সাড়

কাজ সেড়ে দুই ভাই বোন মিলে বাসায় ফিরে। ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ৮ টা বাজে। এত রাত হয়ে যাওয়ায় তনুর মা চিন্তিত ছিলেন।

~ এত দেরি হলো যে
~ আর বলো না মা, তোমার এই মেয়ে যা হাটতে পারে, আমার পায়ে ব্যাথা ধরিয়ে দিয়েছে
~ হ্যাঁ সব আমারই দোষ, তুই তো ভালো মানুষ তাই না

~ যা ভাগ
~ ভাগ না ভাগ না, চলেই যাবো আর দুই দিন অপেক্ষা কর, এই রুবেল এইদিকে আয়
~ জ্বি আপু
~ এই নে এইখানে তোর জন্য পাঞ্জাবি আছে, আর একটা ফরমাল আছে পাঞ্জাবি বিয়েতে পড়িস আর ফরমাল টা রিসিপশনে

~ ওয়াও আপু, অনেক সুন্দর হয়েছে তো
~ হ্যাঁ পাঞ্জাবি টা তোর টা আর আমার টা সেম দেখে কিনেছি

~ ওহ তাই
~ মা ছুটকি কই
~ ও তো ওর রুমে বাকিরাও ওইখানেই আছে
~ আচ্ছা আমি একটু ওর কাছ থেকে আসতেছি

~ এই এই তনু শুন না
~ জ্বি ফুফু
~ তোর জামাই টা না সেই রকম, অনেক সুন্দর, যেমন লম্বা তেমন ফিগার তেমন স্বাস্থ্য তেমন চেহারা, আর কি ভালো ব্যবহার।
~ ওহ

~ তুই সত্যিই অনেক পূন্য করছস যে এমন জামাই পাইছিস, পরিবারের সবাই কত ভালো
~ আচ্ছা ফুফু তোমরা গল্প করো আমি একটু আসতেছি

~ ছুটকি আছিস
~ হ্যাঁ দিদি আয়
~ কিরে সব গুলা আজকে এইদিকে আড্ডা জমাইছিস
~ হ্যাঁ দিদি, আমরা সবাই মিলে তোর বিয়েতে কি কি মজা করবো তার প্ল্যানিং করতেছিলাম

~ ওহ আচ্ছা, ছুটকি তুই একটু রুমে আসিস তো
~ আচ্ছা আসতেছি আমি

রুমে এসে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তনু, হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে। হাতে নিয়ে দেখে আফরোজ ফোন দিচ্ছে

~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম আপু
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, কিরে বিয়ের কনে কেমন আছিস
~ ভালো, তুমি
~ ভালোই আছি

~ আপু তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে
~ ঘটক যখন আমি আসতে তো হবেই
~ হ্যাঁ, ভাইয়া কেমন আছে
~ ভালো, আচ্ছা ভালো থাক
~ আচ্ছা আপু

যেই ঘর টায় এত টা বছর ছিল তুই দিন পর এই ঘর টাই পর হয়ে যাবে। হঠাৎ ছুটকি আসে রুমে। আসলে ছুটকির জন্যে সেম ড্রেস এনেছে, গতকাল বোনের মলিন মুখ টা দেখে বুঝে গেছে ছোট বোন টা কি চেয়েছিল। সব বুঝে গেছে সে তাই আজ সবার আগে বোনের জন্য ড্রেস কিনেছে সে। বোনের একটু হাসিতে তনু সারা দুনিয়া সমান খুশি পায়।

রাত প্রায় ১ টা, সবাই ঘুমাচ্ছে। সারাদিনের ছুটাছুটি তে অনেক ক্লান্তু তনু
তাই সেও ঘুমের রাজ্যে আছে। হঠাৎ vibrate মুডে থাকা ফোন টা ভো ভো শছ করতে থাকে। ঘুমের ঘোরে থাকা তনু আস্তে আস্তে মোবাইল টা নিয়ে রিসিভ করে

~ হ্যালো
~ হ্যালো মিসেস তাওহীদ
~ কেহহহহহ
~ আস্তে, এত জোড়ে আওয়াজ বের হয় কেন
~ আপনি ঘুমান না নাকি

~ উহু আমি এখন মদের বোতল সামনে নিয়ে বসে আছি
~ ওহ
~ আফসোস আমি আমার wife কে এখনও অবদি দেখতে পেলাম না। by the way আজকে তোমার মামা চাচা ফুফু রা আসছে।
~ ওহ
~ তুমি কি সব সময় কম কথা বলো

~ এই কথার উত্তর নেই আমার কাছে
~ শুনেছি তোমার বাবা পঙ্গু, হাটা~চলা করতে পারে না
~ আমার বাবা প্যারালাইসিস, পঙ্গু না
~ ওই একই তো কথা
~ না এক না, ভালো থাকবেন, আসসালামু আলাইকুম

~ এত রাগ, ok, no problem বিয়ে টা হোক তারপর দেখাবো রাগ কাকে বলে? অপেক্ষা করো মিস, নাম টা মনে নাই। কিন্তু কথা গুলো ব্রেনে রেখে দিলাম সুধ সমেত ফেরত পাবে। আমায় বিয়ে করার যে কত জ্বালা প্রত্যেক রাতে তা তোমাকে বুঝতে হবে মিসেস তাওহীদ মাহবুব। আগে বিয়ে টা করি, টাকা গুলো নিজের করি সম্পত্তি গুলো নিজের নামে করি, তারপর দেখবে আমি কে? just wait & watch

অপরদিকে,

~ যার কথার শ্রী এমন, যে আমার বাবা সম্পর্কে এইভাবে বলতে পারেন সে আমায় আদৌ মেনে নিতে পারবেন তো? নাকি সারাজীবন আমাকে একটা বিয়ের দায়~ভার নিয়েই বাচতে হবে। নাকি তাওহীদ নামক ব্যাক্তির লাথি ঝাটা খেয়েই কাটাতে হবে বাকিটা জীবন। এক জোড়া দম্পতীকে তাদের ছেলে ফেরত দিতে গিয়ে আমি নিজেই ভেসে যাবো না তো? নিজের প্রয়োজন গুলো মেটাতে গিয়ে স্বার্থপরের খাতায় নাম টা উঠিয়েই দিলাম।

জানি না, ভবিতব্য কোথায় নিয়ে দাড় করাবে আমাকে। যেই আগুনে পা দিতে যাচ্ছি জানি না নিজের শীতল উষ্ণতায় সেই আগুন কে ঠান্ডা করতে পারবো কিনা? তবে চেষ্টা করে যাবো ওই drug addicted লোক টা কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার। কর্তব্য যখন নিয়েছি তার দ্বায়িত্ব তো পালন করতেই হবে। পিছুপা হলে হবে না আমায়, শক্ত হতে হবে, কঠিন হতে হবে৷, জানি একদিনে সম্ভব হবে না আস্তে আস্তে অনেক দূর আগাতে হবে আমায়।


পর্ব ৬

সে রাতের জন্য তনুর ঘুম হারাম হয়ে যায়। নানান রকম চিন্তা তাকে ঘ্রাস করছে। কোন খেলায় যে সে নামতে যাচ্ছে কে জানে? কখনো ভাবে নি এইভাবে তাকে এমন পরিস্থিতির সামনে দাড়াতে হবে।

দুই দিন পর

আজ তনুর হলুদ সন্ধ্যা

ভাড়া বাসার ছাদে ছোট খাটো করেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকালে মাইশা আর তার কাজিন রা এসে তনুকে হলুদের শাড়ি গহনা আর বিয়ের শাড়ি গহনা দিয়ে গেছে। মানুষ গুলা বড় ভালো। চারিদিকে হৈ হুল্লোড় চলছে। তনুকে পার্লারে নেয়া হয়েছে এই দুই তিন দিন সে পার্লারেই সাজবে। অবশ্য পার্লারে যেতে চায় নি সে। টাকা পয়সার ও তো ব্যাপার থাকে। কিন্তু সবার পিড়াপীড়ি তে যেতেই হয়।

অপরদিকে মাহবুব ভিলা তেও আনন্দের কমতি নেই। একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। কোন কিছুর কমতি রাখে নি মাহবুব ~ রাবেয়া দম্পতী। তাওহীদের সব বন্ধুরাও এসেছে। সাকিল তো সেই সকাল থেকেই আছে। তাওহীদ কে চোখে চোখে রাখছে যাতে আবার ওদের পাল্লায় পড়ে নেশা না করে বসে, তাহলে সেড়েছে কাজ তাই এই দ্বায়িত্ব টা নিজেই নিয়ে নিছে।

তনুকে পার্লার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। ছাদের ডেকোরেশন টা পুরাপুরি ভাবে কমপ্লিট। বধূর সাজে মেয়েকে দেখে সুরিয়া বেগম কিছুক্ষন চেয়ে আছে মেয়ের দিকে। একদম হলুদ পরী লাগছে আজ তনুকে। বাবাকে হুইলচেয়ারে করে বসার ঘরে এনে বসানো হয়েছে।

মেয়েকে এই সাজে দেখে বাবার কলিজা মোচড় দিয়ে ওঠে। বাবার করুন চোখের পানি দেখে তনুর চোখে বার বার পানি আসছে। অনেক কষ্টে পানি আটকাচ্ছে। তনুর ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে বাবার বুকে মাথা রেখে বাবার বুকের কথা গুলো জানতে।

অবশেষে একই লগ্নে একই টাইমে দুই জায়গায় বর কনে কে স্টেজে নিয়ে বসানো হয়। তার শুরু হয় অনুষ্ঠানের কার্যক্রম। এক এক করে সবাই হলুদ ছুইয়ে দিচ্ছে তনুকে। আর অপর দিকে তাওহীদ কে।

দীর্ঘ ৪/৫ ঘন্টার পর অনুষ্ঠান শেষ হয় দুই পরিবারের। তনুও বেশ টায়ার্ড, এতক্ষণ বসে থাকতে থাকতে তনুর ব্যাকসাইডে ব্যাথা হয়ে গেছে। বাড়িতে কত লোকজন অথচ এই সবের মাঝেও নিজেকে বড্ড বেশি একা লাগছে তার। মিষ্টি আর ফল খাওয়ায় রাতের খাবার টাও ঠিক মত খায় নি তনু। তনুর মায়ের কথায় খানা নিয়ে আফরোজ তনুর রুমে আসে।

~ কিরে বিয়ের কনে, কি করিস
~ ওহ আপু তুমি আসো
~ কি করিস তুই

~ ভালো লাগছে না মাথা ধরে আছে তেমনি ব্যাকসাইড ধরে আছে
~ ওহ হো রে বাবু, আচ্ছা একটু খেয়ে নে তারপর আমি পেইন কিলার দিয়ে দিব
~ আপু, খেতে ইচ্ছা করছে না

~ আরে একটু খা বাবু
~ আচ্ছা দাও
~ তাওহীদ স্যার কে দেখবি, আমি আর ওয়াসিম ওইখানেও তো গিয়েছিলাম
~ নাহ, থাক এখন দেখে কি হবে আর বিয়ের পরেই দেখবো
~ রাজকুমারের মত লাগছিলো স্যার কে

~ ভালো
~ তুইও রাজকুমারী, আমার বাবু টা
~ হ্যাঁ, আচ্ছা আপু এইগুলা খুলবো আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে
~ একটু সময় পরে খুলিস এখন থাকুক

আফরোজ তনুকে খাইয়ে ওষুধ দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে যায়। কাল আসবে বলে আশ্বাস দিয়ে যায় তনু কে আর তনুর পরিবার কে। রাতের বেলায় ফ্রেশ হয়ে তনু ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিজেকে দেখছে, সদ্য হলুদ মাখা মুখ টায় অন্যরকম আভা লেগে আছে। দুই হাতের কনুই পর্যন্ত দেয়া মেহেদী গুলো লাল খয়েরী রঙে রঙিন হয়ে আছে। হঠাৎ মোবাইল টা ভো ভো আওয়াজ করতে থাকে। মোবাইল হাতে নিয়ে আৎকে যায় তনু। কিছু একটা ভেবে মোবাইল টা রেখে দেয় তনু।

পরদিন সকাল থেকেই দুই বাসায় হুলস্থুল কান্ড। বিয়ে বলে কথা, হুলস্থুল তো হবেই। তাওহীদ কে সব রকম হ্যাল্প করছে সাকিল। বন্ধু কে নিজের হাতে তৈরী করছে সে। তাওহীদ বড্ড বেশি নাক সিটকানো মানুষ, অনেক কিছু আছে যা সে ডিসলাইক করে।

~ কিরে নাক সিটকাচ্ছিস কেন
~ এইটা ঠিক মানাচ্ছে না
~ দারুন লাগছে জনাব আপনাকে

~ এইটা কি
~ পাগড়ি, ওই তুই এটাও চিনিস না
~ সাকিল অফ যা প্লিজ, এটা পড়ব না অসম্ভব, প্রশ্নই আসে না
~ কিন্তু কেন

~ না না পড়বো না,
~ আচ্ছা এখন পড়িস না তবে সেন্টারে গিয়ে পড়তে হবে
~ আচ্ছা তা দেখা যাবে, আচ্ছা শুন একটা ছবিও যাতে আমার ফেসবুকে আপলোড না হয়
~ কেন, কত রঙ্গ করেই তো ফেসবুকে পিক দেস এখন বিয়ের পিক গেলে কি হবে

~ না কোন পিক যাবে না
~ আচ্ছা যাবে না, এইবার রেডি হ

ওই দিকে তনুও রেডি। কিন্তু সবাই অবাক হয় বিয়ের লেহেঙ্গা টা দেখে। এত সুন্দর আর এত ভারী যে এর ভারে তনুই নুয়ে পড়ে। তবে কালার টার ব্যাপারে সবার খচ খচ। অফ হোয়াইট কালারের মাঝে ব্ল্যাক রেড কালারের স্টোন গুলা গ্লেস মারছে। একদম ইউনিক রকটা ড্রেস~আপ দিয়েছে তনুর শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

সব মিলিয়ে সাদা পরীর মত লাগছে তনুকে আজ। পার্লারের মেয়েদের বার বার করে বলেছে কম মেকাপ করতে। তাই তারাও কম করেই করেছে। কিন্তু তারা বুঝেই নি যে কমের মাঝেও এক অদ্বিতীয়া লুকিয়ে আছে। তনুকে দেখে যে কেউই চোখে তাক দিয়ে চেয়ে থাকবে। বিশেষ করে চোখ জোড়া বড়ই মায়াবী। সব মিলিয়ে মায়াকাননের এক মায়াবীনির মত লাগছে তাকে।

বরপক্ষ কে বরণ করতে সবাই নিচে দাড়ানো। তাওহীদের রুচিশীল মাইন্ডের কথা মাথায় রেখেই সব নিজ দ্বায়িত্বে সেট~আপ দেয় আফরোজ। সেন্টারের নিচ তলা থেকে শুরু করে তিন তলা অবদি ফুলের বর্ষনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তিন তলায় সেন্টারের ভেতরে ঢুকার জায়গায় বড় করে ফুলের মাঝে লিখা আছে tawhid weds tonu সব কিছুই মান সম্পন্ন ভাবে ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে তাওহীদের বাড়ির লোকদের সামনে তনুর বাড়ির লোকদের সম্মান বজায় থাকে। সব কিছু মাথায় রেখে আফরোজা, ওয়াসিম আর রুমেল সব কিছুর ব্যবস্থা করে।

তাওহীদকে বরণ করে তনুর মা। জামাইকে সরাসরি দেখে চক্ষু স্বার্থক হয় তার। ভাবতেও পারেন নি তিনি তার মেয়ের কপালে এত রাজপুত্রের মত বর জুটবে। মিষ্টি খাইয়ে গলায় চেইন দিয়ে বরণ করে গাড়ি থেকে নামানো হয় তাওহীদ কে।

রাত ৮ টায় বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। কাজী সাহেব বিয়ের পড়ানো শুরু করে। প্রথমে ছেলেকে বিয়ে পড়ানো হয়। পরে মেয়ের দিকে যায় সবাই। তাওহীদের ফুফুরা খালারা বউ দেখে তো হা করে থাকে। এত সুন্দর আর এত মায়াবী মেয়ে দেখে পাথরও জলে পরিনত হবে আর এরা তো মানুষ মাত্র।

কাজী সাহেব বিয়ের সব রীতি বলে কবুল বলতে বলে তনুকে। আর তনুর বুক অজানা ভয়ে কাপছে তার উপরে হাতে থাকা পার্সের ভেতরে ফোন টা আবারো ভো ভো করছে। মোবাইলের vaibrate এর শব্দের সাথে তনুর দু চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু পড়ছে। ভো ভো করতে করতে এবার মোবাইল টাও শান্ত হয়ে গেছে। এইদিকে কাজী

সাহেব তাড়া দিচ্ছেন কবুল বলার জন্য অন্যদিকে সবাই চিৎকার করে বলছে কবুল বলতে। আর মাঝে তনু মূর্তির মত বসা। অবশেষে সব কল্পনা যল্পনা জলাঞ্জলি দিয়ে বুক ভাঙা কান্নার সাথে প্রথম কবুল টা মুখ দিয়ে বের করে তনু। তারপর আবার মোবাইলে কল আসে সেই সাথে তনুও কেপে ওঠে। নিজের নিঃশ্বাস টা এক রকম আটকে বাকি দুইবার কবুল কবুল বলে দম নেয় তনু। সবাই এক সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠে।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে তনুকে স্টেজে নেয়া হয়। কিন্তু তখনও কেউ কাউকে দেখে নি। তাওহীদ তার মত ছিল আর তনুর তো হুশই নেই সব কিছু মুহুর্তের মাঝে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেলো। আজ এই মুহুর্ত থেকে সে অন্য কারো। স্টেজে বসে থেকে তনু খেয়াল করছে

তার বাবা হুইলচেয়ার টায় বসে বুক ভাসাচ্ছে। বাবাকে দেখে তনুর নিজেকে সামলাতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তবুও নিজেকে সামলে নিয়েছে মেয়েটা। খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে রাত ১০ টা বেজে ৩০ মিনিটে বিদায়বেলা ঘনিয়ে আসে।

এইবার আর বিলম্ব না করে তারা বউ নিয়ে রওনা করতে চায়। মেয়ের বিদায়ের কথা শুনে শোক নেমে আসে সুরিয়া বেগম আর আলতাফ হোসেন এর মনে। পরিবারের বড় মেয়ে

হিসেবে নিজের দ্বায়িত্ব সর্বদা যে কাধে তুলে নিয়েছিল আজ সেই মেয়েকে অন্যের হাতে তুলে দিতে হবে ভেবেই বুক টা হাহাকার করে উঠছে সুরিয়া বেগমের। কিন্তু এ যে বাস্তবতা, এ যে নিয়তি, এ যে নিয়ম, এর কাছে সব বাবা মা কেই হার মানতে হয় কোন না কোন সময়ে। আজ হয়তো হার মানতে হচ্ছে তনুর মা বাবা কেও।

তনুর বড় মামা তনুর মা কে নিয়ে তনুর সামনে দাঁড়ায়। তনুর মা তনুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দেয়। এতক্ষন নিজেকে শক্ত রাখার পরেও এখন আর পারে নি মা কে ধরে চিৎকার দিয়ে উঠে। অপরদিকে,

তাওহীদের এইসব যাষ্ট অসহ্য লাগছিল। এইসব কান্নাকাটিতে ওর আগে থেকেই এলার্জি আছে। আর এখানে তো অনেক কান্নাকাটি। তারপর তনুকে তাওহীদ এর হাতে তুলে দেয় ওর মা। তারপর শুধু একটা কথাই বলেছেন বাবারে ওর বাবা থেকেও নাই, আজ থেকে তুমিই ওর সব, ওর ভুল গুলো ক্ষমা করে দিও

এই একটা কথা তাওহীদের বুকে গিয়ে খুব লাগে। শুধু লাগে নাই একটু জোরেই লেগেছে। তাওহীদ ভাবে নি তনুর মা এই কথা টা বলে ফেলবে।
বিদায় বেলায় বাবা মেয়ের কান্নায় সবার চোখেই পানি চলে আসছে। আসলেই পৃথিবীতে এই বাবা মেয়ের সম্পর্ক গুলো এমনি হয়।

অন্যদিকে ভাই বোন গুলাও কাদছে। দুঃখ গুলো হয়তো এমনি হয়। যে বোন এক সময় তাদের মাথার উপরে ছাতা হয়ে ছিল আজ সে বোন কে বিদায় জানাতে সবার আত্না কাপছে। অবশেষে সব আচার অনুষ্ঠান শেষ করে মেয়েকে বিদায় জানান সুরিয়া আর আলতাফ দম্পতী।

মাহবুব ভিলায় নতুন বউকে বরণ করার ধুম পড়ে যায়। অনেক যত্নে অনেক ভালোবাসায় একমাত্র ছেলের বউকে বরণ করলেন রাবেয়া বেগম। তাওহীদ কে আর সেখানে দেখা যাচ্ছে না। হয়তো সাকিলের সাথে আছে। আর এদিকে সবাই মিলে নতুন বউকে নিয়ে মেতে ওঠে।

ছাদে একা একা সিগারেটে ফুক দিচ্ছে তাওহীদ। কিছুক্ষন আগেই সে বিয়ে করছে তাও এমন একজন মেয়েকে যার জীবনে অনেক কষ্ট। সে ভাবছে তার নিজের কথা। তার সাথে কিভাবে এই মেয়ে থাকবে যার জীবন টাই নেশার কালো অন্ধকারে মুড়িয়ে থাকা।

~ ভাবি কেমন লাগছে তোমার নতুন রুম

মাইশার কথায় পুরো রুমে এক নজর তাকায় তনু। বেশ বড় আর সাজানো একটা রুম। এক সেট সোফা, অনেক বড় ড্রেসিং টেবিল, খাট টাও বিশাল। আর খাট টাও সাজানো রয়েছে কয়েক রকমের ফুলে। অনেক সুন্দর রুম টা দক্ষিণে বারান্দা টা বেশ সুন্দর লাগছে।

~ মাইশা
~ জ্বি ভাবি
~ চেঞ্জ করবো
~ এখনি করে ফেলবে

~ হ্যাঁ গো, কেমন জানি লাগছে, গা গুলাচ্ছে অনেক
~ আচ্ছা তাহলে করে ফেলো
~ একটু হ্যাল্প করো না গো, ওরা লেহেঙ্গা টায় কয়েকটা পিন আটকে দিয়েছে একটু খুলে দাও না
~ আচ্ছা

তারপর মাইশার সাহায্য নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে তনু। খয়েরী রঙের শাড়ি টায় দারুন লাগছে তনুকে, সাথে সিম্পল একটা নেক~সেট আর কানে দুল। নাকের ডাইমন্ড এর নোজ~পিন টা জ্বলজ্বল করছে। সব মিলিয়ে সদ্য বিবাহিতা এক নব বধূ সে।

রাত প্রায় ১১ টা বেজে ২০,

~ কিরে এইখানে এখনও কি করস
~ ওহ সাকিল তুই, আয়
~ তুই সিগারেট টানছিস

~ জানিসই তো, আমি নেশাখোর, আবার বলস কেন
~ বাদ দে, রুমে যা ভাবি অপেক্ষা করছে

~ ধুর, এইসব অপেক্ষা টপেক্ষার ধার এই তাওহীদ ধারে না,
~ তাওহীদ অফ যা, আংকেল বাসায় আছে, যা রুমে যা
~ ধুর, সর

সাকিলের সাথে জিদ করে সোজা নিচে চলে যায় তাওহীদ। কিন্তু ছাদ থেকে নেমে বাবার সামনে পড়ে তাওহীদ

~দাড়াও
~ বলো
~ বউমার সাথে উলটাপালটা কিছু করস্র চেষ্টা করবা না
~ কি করলাম আবার আমি
~ তোমায় আমার বিশ্বাস হয় না

~ তোমার আমাকে কবেই বিশ্বাস হয়েছিলো
~ যাও রুমে যাও, বউমা অপেক্ষা করছে

বাবার কথার উত্তর না দিয়েই সামনের দিকে হেটে নিজের রুমে দিকে চলে যায় তাওহীদ। তারপর রুমে ঢুকে সে, দেখে তার বিছানা ফুলে সাজানো আর তার মাঝে একজন বসে আছে।

তনু খাট থেকে নেমে তাওহীদ কে সালাম করতে আসে আর ঠিক তখনই অসাবধানতা বশত তনুর মাথা থেকে কাপড় টা পড়ে যায়, আর তাওহীদ নতুন বউয়ের মুখ টাও দেখে ফেলে। আর তনুও তার বরের মুখ টা দেখে। আর তারপর,


পর্ব ৭

~ তুমিইইইইইই
~ আ,আ,আপ,আপনি
~ তুমি আমার বউ
~
~ আমি ভিক্ষা নেই না, তাই না

~
~ কি হলো কথা নেই কেন ভিক্ষা নাও না অথচ তাকেই বিয়ে করে বসলা, সীট ইয়ার কি করে বসলাম একে বিয়ে করলাম ভালোই হলো, খুব ভালো হলো আমার এমনিতেও তোমাকে প্রয়োজন ছিলো, এইবার বুঝবে ভিক্ষা কাকে বলে
~ মা,মানে
~ এইখান থেকে সরে দাড়াও, আর হ্যাঁ আমার সাথে কোন রকম ফাইযলামি করবা না একদম খবর করে ছেড়ে দেব

এইসব বলে তাওহীদ বারান্দায় চলে যায়। তনু রুম থেকেই দেখছে তাওহীদ ধুমছে সিগারেট টানছে। তনুর বুঝতে বাকি ছিল না যে সেইদিন সন্ধ্যার কথায় হয়তো তাওহীদ ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। ব্যাপার টা ক্লিয়ার করা দরকার। হঠাৎ করেই নজর যায় ফুলে সজ্জিত খাট টায়। সব ঠিক থাকলে হয়তো এখন। কিন্তু এ তো তনু, তনুর কপাল কি আর এত ভালো যে সব ভালো হবে। মলিন একটা হাসি দিয়ে শাড়ির আঁচল টা পেছন থেকে সামনে নিয়ে কাধ টা ঢেকে সামনে পা বাড়ায় তনু

বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা তাওহীদ এর পাশে গিয়ে জায়গা করে নেয় তনু। তাওহীদ বুঝতে পারে যে তার পাশে তনু দাঁড়িয়ে আছে।

~ এখানে কি, বলেছিলাম না আমার ধারে কাছে যাতে না দেখি তাহলে
~ খবর করে ছেড়ে দেবেন তাই তো
~ বুঝার পরেও এইদিকে কি, সরে যাও

~ মাসের প্রথম ছিল একটা টিউশনি থেকে সেলারি পেয়েছিলাম, ডক্টর বলেছিল বাবার ভালো মন্দ খাওয়া দরকার। আমি শত কষ্টের মাঝে হলেও বাবার দিক টা অপূর্ণ রাখি নি কখনও যেমন টা তিনি রাখেন নি আমার জন্যে। সেইদিন সেলারি পেয়ে ফল কিনে যাচ্ছিলাম আর আপনার গাড়ি টা আমার টাকার দরকার আছে কিন্তু কেউ আমায় অহেতুক টাকার গরম দেখালে আমার খারাপ লাগে। সেইদিন আপনিও টাকার গরম দেখিয়েছিলেন তাই আমিও ওমন টা বলেছিলাম, মাফ করবেন আমায়

অত্যন্ত শান্ত গলায় নম্র ভাবে কথা গুলো বলা শেষ করলো তনু। তাওহীদ কিছুক্ষণ পর পর তনুর মুখের দিকে তাকাচ্ছে। রাতের আঁধারের মাঝেও চাঁদ টা যেমন আলো দিয়ে জোছনা ছড়ায় তেমনি তনুকেও লাগছিলো। নাকে থাকা নোজ~পিন টা জ্বল জ্বল করছে। সব মিলিয়ে মায়া রাজ্যের মায়াবীনি।

~ চলুন, ঘুমাবেন না
~ আমি লেট করে ঘুমাই, তুমি যাও

~ হু
~ ফুলের স্মেলে আমার ঘুম আসবে না বরং মাথা ধরে আছে
~ ঠিক আছে আপনি এখানে বসেন আমি সব টা পরিষ্কার করে দিচ্ছি
~ পারবা
~ হ্যাঁ

তনু আশা করে নি তাওহীদ এটা বলবে, নিজের ফুল~সজ্জার খাট টা নিজের হাতেই পরিষ্কার করে দিল তনু। ঠিক এই সময়ে মোবাইল টা ভো ভো করা শুরু করে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে হা হয়ে যায় তনু, তারাতারি বারান্দায় তাকিয়ে দেখে তাওহীদ এখনও বারান্দাতেই আছে, মোবাইল টার ফ্লাইট মুড টা অন করে সাইডে রেখে দেয় তনু।

~ পরিষ্কার হয়ে গেছে এখন আর মাথা ধরবে না
~ যাও তুমি গিয়ে ঘুমাও
~ হু

রাতে তেমন একটা ঘুম হয় নি তনুর। রাতে ছটফট করতে করতে শেষ রাতের দিকে চোখ টা লেগে যায়। আবার হঠাৎ করেই লাফ দিয়ে উঠে যায় তনু। বিছানার এক কোনায় ঘুমিয়ে ছিল সে। তড়িঘড়ি করে বারান্দার দিকে তাকায়, কিন্তু দরজা তো বন্ধ তাহলে সে কই। হুশ আসে বিছানাতেই তো থাকতে পারে, তাই পাশে তাকিয়ে দেখে মানুষ টা ঘুমিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ মন দিয়ে তাকিয়ে দেখছে তনু তাওহীদ কে। মানুষ টা দেখতে ততটা খারাপ না। তবে drugs নিতে নিতে কেমন একটা পানসে হয়ে গেছে। ঘুমিয়ে আছে বাচ্চাদের মত। এর সাথেই কাটাতে হবে বাকিটা জীবন। যদি নিয়তি তা না হতে দেয় তাহলে?

নাহ এইসব হওয়ার আগে এনাকে তনুর ঠিক করতে হবে। drugs থেকে সড়াতে হবে। নরমাল মানুষের মত করতে হবে। অনেক কাজ হাতে তনুর। ভেঙে পড়লে হবে না তার।

তনু উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। নিচে অনেকেই আছে। তাওহীদের কাজিন রা সবাই আছে। খালা মামা মামি চাচা চাচি সবাই। সবাই নতুন বউ কে নিচে নামতে দেখে জোড়েই শব্দ করে ওঠে। আসলে কেউ ভাবে নি নতুন বউ এইভাবে নিচে আসবে তাও সকাল সকাল।

তনু বড়দের সালাম দিলেন। তারপর শ্বশুরের কাছে গিয়ে পা ধরে সালাম করতে নিলে শ্বশুর ধরে ফেলে।

~ তোর স্থান পায়ে না রে মা, আমার বুকে
~ ভাইজান একেবারে আমাদের মায়ের মত দেখতে আমাদের বউমা, তাই না?

ফুফু শ্বাশুড়ির কথা শুনে একটু অবাক হয় তনু। সে নাকি অনেকটা তার দাদী~শ্বাশুড়ির মত দেখতে। এখন পাম দিল নাকি সত্যি বললো তাই ভাবছে তনু। এমন সময় তনুর শ্বাশুড়ি তনুর মাথায় হাত রেখে বলে,

~ তোকে তুমি তুমি বলতে পারবো না, তুই আমার ছেলের বউ না আমার মেয়ে। আমি বউ আনি নি আমি মেয়ে এনেছি
~ হ্যাঁ গো নতুন বউ তোমার কপাল আসলেই ভালো এমন শ্বাশুড়ি শ্বশুড় পেয়েছো

এইদিকে চাচি খালার কথা শুনেও অবাক তনু। সবাই এত ভালো হবে আশা করে নি সে। অন্যদিকে মাইশা আর তার কাজিন রা মিলে তনুকে জেকে বসেছে। সবার সাথে কথা বলতে বলতে ১০ টা পার হয়ে গেছে। তনুর শ্বাশুড়ি তনুকে ডেকে নিয়ে গেলেন,

~ একটা সত্যি কথা বলবি মা
~ জ্বি মা বলুন
~ কাল রাতে সব ঠিকঠাক ছিল তো, মানে তাওহীদ কোন রকম খারাপ ব্যবহার করে নি তো?

~ নাহ মা, সব ঠিক ছিল
~ সত্যি?
~ জ্বি মা সত্যি
~ তাহলে এই নে, চা টা নিয়ে গিয়ে তাওহীদ কে জাগিয়ে দে আর বল ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে
~ আচ্ছা

চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে সোজা উপরে চলে যায় তনু। আস্তে করে দরজা খুলে রুমের মধ্যে যায় তনু। তাওহীদ তখনও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তনু গিয়ে তাওহীদ এর বেডের কাছে থাকা ল্যাম্পসেড টেবিলের উপরে চায়ের কাপ টা রাখে। অনেক সংকোচ করে কয়েকবার ডাক দেয়,

~ এই যে শুনছেন
~ এই যে, শুনছেন
~ এই যে, এই যে,

~ কিহহহ, কি হয়েছে টা কি, এত চিল্লাও কেন
~ আমি তো চিল্লাই নাই, আমি তো আস্তেই
~ চুপ একদম চুপ, কি ব্যাপার কি সকাল সকাল কি হয়েছে

~ আসলে মা বলেছিল আপনাকে চা দিতে তাই ডেকেছিলাম, সরি
~ নেক্সট টাইম আমি ঘুমালে খবরদার ডাকবে না
~ জ্বি
~ জ্বি না, মাথায় ঢুকিয়ে নাও, এই এক বিয়ে বিয়ে করে আমার সব শেষ হলো

বিয়ের পরদিন এই ব্যবহার টা তনু আশা করে নি তাওহীদের কাছ থেকে। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে তনুর। এমন সময় দরজায় নক পড়ে
~ কে
~ ভাইয়া আমি মাইশা
~ ওহ ভেতরে আয়
~ ভাবি চলো

~ কোথায়?
~ তোমাকে মা ডাকছে
~ আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি
~ আচ্ছা

~ মা বলেছে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে, সময় মত চলে আসবেন
~ যাও তুমি, আমার সময় মত আসবো
~ জ্বি

আসলে ভাগ্যের কাছে সবাই বাধা থাকে। তনুও তেমন। বিয়ের পরদিন এমন ব্যবহার, এই লোকের সাথে থাকবে কিভাবে তনু। সামান্য ডেকে তোলাকে কেন্দ্র করে এইভাবে কথা বলা তাও সদ্য বিবাহিতা নতুন বউয়ের সাথে। আর তনু তো কষ্টের মাঝেই থাকা এক জীবন্ত লাশ মাত্র। তার সহ্য শক্তির ব্যাপার টা প্রখর, তাই কষ্ট হলেও তাকে দমিয়ে রাখার প্রসেস টা ভালোই রপ্ত আছে তনুর

শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বসে তনু, সেখানে আরো কয়েকজন আছে। সবাই ডাইনিং এ বসা। একটা বক্স হাতে ভেতর থেকে আসে মাইশা

~ আম্মু এই নাও
~ দে, দেখি তো মা আমার দিকে দেখ
~ এইগুলা কি মা
~ দেখতেই পাবি

বক্স টা খুলতেই তনু হা হয়ে আছে। বক্স টাতে অনেক গুলো স্বর্নের জিনিস। তনু এইগুলার দিকে একবার তাকায় আবার শ্বাশুড়ির দিকে একবার তাকায়। আর শ্বাশুড়ি গয়নার দিকে একবার তাকাচ্ছে আর বউয়ের দিকে একবার তাকাচ্ছে,
~ কি গো রাবেয়া, কি দেখছো ওমন করে

~ আপা দেখছি এর মধ্যে কি কি আমার ঘরের লক্ষীর উপরে সুন্দর লাগবে
~ তোমার লক্ষীর এইসব সোনা~দানা লাগবে নাকি সে তো নিজেই খাটি সোনা
~ তা অবশ্য ঠিক বলছেন আপা
~ এখন সুন্দর দেখে কিছু পড়াও বউ রে

~ হ্যাঁ এই তো পেয়েছি, এই গুলাই পড়াবো
~ মা শুনুন
~ বল মা
~ আমি এইগুলি পড়বো না
~ কেন, পছন্দ হয় নাই?

~ অনেক সুন্দর, কিন্তু আমার এইগুলা পড়ার যোগ্যতা নেই মা, আর এইগুলা অনেক দামী গহনা
~ এই মেয়ে খবরদার আর যাতে কখনো এইসব না শুনি তুই এখন এই বাড়ির বউ এই বাড়ির সব কিছুর প্রতি তোর ততটাই অধিকার আছে যতটা আমার তাওহীদ আর মাইশার আছে
~ কিন্তু মা

~ নতুন বউয়ের এত কথা বলতে হয় না চুপ করে থাক

তনুও আর কথা বেশি বাড়ালো না। সবাই খারাপ ভাবতে পারে ভেবে চুপ হয়ে যায়। শ্বাশুড়ি মোটা একটা চেইন, দুইটা রিং এক জোড়া ঝুমকো দুল আর এক জোড়া মোটা চুড়ি পড়িয়ে দিলেন তনুকে। এত কিছুর কিছুই প্রয়োজন ছিল না তনুর। এইসবে ওর অস্বস্তি হয়। তবুও শ্বাশুড়ির মন রাখতে পড়ে নিল।

নাস্তার টেবিলে সবাই নাস্তা খাচ্ছে, তাওহীদ ও আছে সেখানে। তাওহীদের opposite side এ তনু বসা। বার বার
আড় চোখে মানুষ টার দিকে তাকাচ্ছে তনু, মানুষ টা কিন্তু দেখতে খারাপ না। কিন্তু আচরণ টা জানি কেমন। অবশ্য নেশাখোর রা বুঝি এমনি হয়। এদের কখন কি হয় কেউই বুঝে না। এতা ক্ষনে ভালো তো ক্ষনে খারাপ।

রাতে রিসিপশনের পার্টি। তনুর বাড়ি থেকে সবাই আসবে। আর শহরে বড় বড় নামি দামী ব্যবসায়ীরা আসবেন। সেন্টারে বিরাট বড় আয়োজন করা হয়েছে।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে রুমে আসে তনু রুমে এসে দেখে তাওহীদ সাহেন ফোন নিয়ে পড়ে আছেন। তনু ভুল সময়ে চলে এলো না তো? কিন্তু করবেই বা কি, সবাই যে যার মত কাজ করছে, কথা বলছে, আর তাছাড়া শ্বাশুড়ি মা নিজেই বললো রুমে চলে যেতে, বিকালে মাইশার সাথে পার্লারে যেতে হবে। কিন্তু এইখানে তো সিচুয়েশান অন্য রকম। আর সত্যি বলতে তাওহীদ কে এখন ভয় লাগে তনুর। সকালের ধমক টা আবার মনে পড়ে যায় তনুর। তাই আবার বের হয়ে যেতে নিচ্ছিলো আর ঠিক তখনই,

~ কোথায় যাচ্ছো মিসেস তাওহীদ

কথা টা শুনে থমকে যায় তনু। আর এক কদম ও সামনে যাচ্ছে না। আস্তে করে তাওহীদের দিকে ঘুরে দাড়ালো সে।

~ কি হলো, কোথায় যাচ্ছিলে
~ না মানে মানে
~ মানে মানে, আর কি মানে, রুমে এসেছিলে আবার চলেও যাচ্ছো

~ নাহ মানে মা বললো রুমে চলে আসতে বিকালে মাইশার সাথে পার্লারে পাঠাবে
~ ওহ, রাতে তো আবার পার্টি আছে, তা আজকেও আটা ময়দা মাখবে?

~ হেএএএ
~ তা নয়তো কি তোমরা আর কিছু না পারো আটা ময়দা মাখতে পারো দারুন
~ দেখুন আমি এইসব ইউজ করি না, শুধু বিয়ের জন্য পার্লারে যাচ্ছি, নয়তো আমি প্রয়োজন ছাড়া পার্লারে যাই না
~ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, এত হাইপার হতে হবে না

~ হাইপার হলাম কোথায়?
~ এই তোমার ভার্চ্যুয়াল সাইটে একাউন্ট আছে?

~ নাহ, নেই
~ কি বলো, বিশ্বাস হলো না
~ ওহ,
~ সত্যি বলছো নাকি মিথ্যা বলছো
~ যেইটা ধারণা করে নেন আপনি

~ আমি ধারণা করলেই তো আর হবে না আমি এখন ধারণা করবো যে তোমার ১০ টা একাউন্ট আছে, এখন কি আদৌ তোমার ১০ টা একাউন্ট আছে? সো আন্দাজে কথা আমি বলি না
~ যাক ভালো
~ কি ভালো
~ কিছুই না

~ বাড়িতে কল করছিলা?
~ হ্যাঁ কথা হয়েছে দুপুরের দিকে
~ তা এখন কি রাত
~ মানে ১২ টার দিকে কথা হয়েছিল

~ আচ্ছা শুনো, রাতে পার্টিতে আমার ফ্রেন্ডস রা আসবে, সুন্দর করে কথা বলবা, আমার মান সম্মান যাতে ক্ষুন্ন না হয়, বিয়ে যখন করে ফেলছি দায় ভার তো নিতেই হবে
~ আচ্ছা চেষ্টা করবো
~ উহু চেষ্টা না, করতেই হবে

এটা বলে তাওহীদ রুম থেকে বেরিয়ে যায় আর তনু সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ হাতে থাকা মোবাইল টায় আবার কল আসে। তনু মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে, হঠাৎ করেই মাথা ঝিমিয়ে ওঠে তার, আবার কেন ফোন টা আসলো?


পর্ব ৮

রাতে রিসিপশন পার্টি। সবাই এক এক করে সেন্টারে যাচ্ছে। মাহবুব সাহেবের সমস্ত বিজনেস পার্টনার সমস্ত ক্লাইন্ট এবং বন্ধু বান্ধবরা সবাই উপস্থিত হচ্ছেন একে একে। তাওহীদ কে ফরমালে দারুন লাগছে। আস্তে আস্তে তনুর বাড়ির লোকজন আসা শুরু হয়ে গেছে।

তনু তখনও পার্লারে। তবে সাজাচ্ছে তনুর ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী, যাতে তাওহীদ বলতে না পারে আটা ময়দা মেখেছে। হঠাৎ মোবাইলে কল আসে তনুর। তাওহীদ কল দিয়েছে,

~ হ্যালো কই
~ পার্লারেই আছি
~ এখনো মাখা শেষ হয় নাই, মাইশা কোথায়, ওকে ফোন টা দাও
~ মাইশা তোমার ভাইয়া কথা বলো

~ হ্যাঁ হ্যালো ভাইয়া, কিরে
~ কতক্ষণ লাগবে আর?
~ almost complete, একটু পরেই বের হবো
~ আচ্ছা তারাতারি আয় আব্বু বার বার জিজ্ঞাসা করছে
~ আচ্ছা

~ বাহ আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে
~ ধন্যবাদ
~ ওয়াও ভাবি এত কম মেক~আপ কিন্তু দারুন লাগছে তোমাকে

~ তুমিও তো কত কিউট
~ হ্যাঁ হয়েছে হয়েছে, আর পাম দিও না
~ চলো
~ হ্যাঁ চলো

ননদ ভাবি মিলে গাড়ি নিয়ে পার্লারে যায়। গাড়িতে বসে তনুর অনেক কথাই মাথায় আসছে কিন্তু হিসাব মেলাতে পারছে না। কয়েকদিনের মধ্যেই এত কিছু হয়ে গেলো হঠাৎ হাতে থাকা ফোন টা vaibrate হতে শুরু করে। তনু মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাজতে বাজতে কল টাও কেটে যায়। আস্তে করে মোবাইল টা পার্সে রেখে দেয় তনু।

সেন্টারে পৌঁছে তনুর পরিবার অবাক। অনেক বড় করে আয়োজন করেছে মাহবুব সাহেব। অনেক বড় বড় নামি দামী মানুষ আছে সেখানে। কিন্তু আরো অবাক করা কান্ড হচ্ছে কেউই তনুর পরিবারকে কোন অসম্মানজনক কথা বলে নি বরং অনেক সম্মান দিয়েছেন।
তাওহীদ তনুর ভাই তনুর মামার সাথে ভালো ভাবেই কথা বলেছে।

এমতাবস্থায় তনুর প্রবেশ ঘটে সেন্টারে। সবার নজর তনুর দিকে। মেরুন কালারের বেনারসি টায় দারুন মানিয়েছে তনুকে আর তার সাথে হালকা সাজ। একদম পারফেক্ট একটা বউ লাগছে তনুকে। সেন্টারে গিয়ে নিজের পরিবারকে দেখে চোখের পানি ছেড়ে দেয় তনু যা তাওহীদের চোখ আড়াল করে নি। এদিক সেদিক বাবা মা কে খুজছে তানু

~ বড় মামা
~ হ্যাঁ রে মা
~ মা আসলো না
~ তোর বাবা কে রেখে কিভাবে আসবে তাই থেকে গেল

~ বাবা ভালো আছে তো?
~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে, তুই গিয়ে বোস যা

মামার কথায় তনু গিয়ে স্টেজে বসে। তারপর এক এক করে সবাই এসে তনুর সাথে দেখা করে। তনুও সবার সাথে হাসি~মুখে সবার সাথে সাক্ষাৎ করে। এমন সময় তাওহীদ এর বন্ধুরা এসে হাজির হয়। এক এক করে সবাই কথা বলছে। হঠাৎ করেই রাফাতের আবির্ভাব ঘটে।

~ হেই তাওহীদ
~ হ্যালো রাফাত হাউ আর ইউ ব্রো
~ ফাইন, দুই~দিন ছিলাম না আর বিয়ে করে ফেললি
~ ওকে সরি, হুট করেই হয়ে গেল, মিট মাই ওয়াইফ
~ ইয়া সিউর

রাফাত হচ্ছে তাওহীদের আরেক ফ্রেন্ড। যেমন তাওহীদ তেমনি রাফাত। রাফাতেরও টাকা পয়সার অভাব নাই তবে এটাও সত্যি যে এটাও নেশাখোর মাতাল। রাফাতকে নিয়ে যায় তাওহীদ তনুর কাছে। রাফাত তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। তনুও একটু বিব্রত বোধ করে রাফাতকে দেখে।

~ হ্যালো ভাবি
~ আসসালামু আলাইকুম
~ ওহ, ওয়ালাইকুম আসসালাম, ওকে থাকেন কেমন? তাওহীদ ওই পাশে আয়
~ হ্যাঁ চল

অনুষ্ঠান শেষে সবাই আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকে। মাহবুব সাহেব তাওহীদ কে বলে তনুর সাথে তনুর বাড়িতে পাঠান। তাওহীদের প্রচুর মেজাজ গরম হচ্ছে তবুও চুপচাপ সহ্য করে যাচ্ছে সে।

রাত ১২ টার পর বাসায় আসে সবাই। সুরিয়া বেগম সব রেডি করে রেখেছে নতুন জামাইর জন্য। কিন্তু মনে তার অনেক ভয়। ডুপ্লেক্স বাড়িতে থাকা ছেলে এমন ছোট ফ্ল্যাটে থাকবে কিভাবে।
বাসায় ঢুকেই এদিক সেদিক তাকাচ্ছে তাওহীদ।

কেনো জানি বাসায় ঢুকেই এক রকম অজানা শান্তি পেল তাওহীদ। এইদিকে তনু বাসায় এসে মা’কে জড়িয়ে ধরে। মেয়েকে দেখে মা’ও তার কেদে দেয়। মা মেয়ের এই দৃশ্য সবাই দেখলো।

~ মা, বাবা কই
~ শুয়ে আছে, আর কিছুক্ষণ পর পর জিজ্ঞাসা করে তনু আসছে?
~ আমি বাবার সাথে দেখা করে আসি
~ জামাইকেও নিয়ে যা

তাওহীদ সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে তার শ্বাশুড়ি মাকে। তাওহীদের চেহারা দেখে তনু অনেকটাই আন্দাজ করতে পারছে এই পরিবেশ টা তাওহীদ পছন্দ হচ্ছে না। তাই বুদ্ধি করে ছুটকি কে উদ্দেশ্য করে বলে

~ ছুটকি ওনাকে রুমে নিয়ে যা আমি বাবার সাথে দেখা করে আসছি
~ আচ্ছা দিদি, ভাইয়া আসেন

তনু সোজা বাবার ঘরে চলে যায়। আর ছুটকি তাওহীদকে নিয়ে তনুর রুমে আসে রুম টা খুব বেশি বড় না হলেও বেশ গোছালো। এক পাশে খাট পাশেই জানালা, তার অপর প্রান্তে পার্টেক্স এর ওয়ারড্রপ, একটা ড্রেসিং টেবিল আর একটা বুক সেলফ। খাটের পাশে থাকা ছোট টেবিল টায় একটা ছবির ফ্রেম। পূর্ব দিকে বারান্দা টাও বেশ বড় না। রুমে ঢুকেই সব এক পলকে দেখে নেয় তাওহীদ

~ ভাইয়া আপনি ফ্রেশ হোন আপু এক্ষুনি চলে আসবে
~ দাড়াও
~ জ্বি
~ তোমার নাম কি

~ তনয়া, মাহজাবীন তনয়া সবাই ছুটকি বলেই ডাকে
~ ওহ আচ্ছা, তনুশার নাম ও মে বি মাহজাবীন তনুশা, তাই না?
~ জ্বি, আব্বুই রেখেছিল
~ ওহ
~ আপনি ফ্রেশ হোন ভাইয়া
~ আচ্ছা

রুমেলের প্রবেশ,

~ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম
~ ভাইয়া সমস্যা হচ্ছে না তো

~ এখনো অবদি না
~ তাহলে ভাইয়া আপনি ফ্রেশ হোন, যদি সমস্যা হয় আমায় বলবেন
~ আচ্ছা
~ আপনি থাকুন, মা খাবারের ব্যবস্থা করতেছে
~ না না রুমেল, কিছু করো না এখন আমি ক্ষুধা নেই

~ কিন্তু ভাইয়া
~ প্লিজ এখন আর না, কেমন?
~ আচ্ছা ভাইয়া

বাবার সাথে দেখা করে তনু রুমে আসে, কিন্তু রুম তো ফাঁকা, কেউই তো নেই। তনু হয়তো ভেবেছে তাওহীদ বসার ঘরে গেছে রুমেলের কাছে। তাই রিলেক্স মুডে শাড়ি টার প্রত্যেকটা পিন খুলতে শুরু করে তনু। গহনা গুলো এক এক করে খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখছে তনু।

পিন গুলো খুলে শাড়ির আচল টা মাত্রই কাধ থেকে সরালো আর ঠিক তখনই তাওহীদ বারান্দা থেকে রুমে প্রবেশ করে। আয়নায় তাওহীদ কে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় তনু। তাওহীদ বেকুব হয়ে তাকিয়ে থাকে। পরক্ষনেই তনু শাড়ির আচল টা তারাতারি আবার কাধে নিয়ে নেয়।

~ সরি সরি
~ নাহ ঠিক আছে, আপনি বারান্দায় ছিলেন?
~ হ্যাঁ, সিগারেট টানছিলাম আর কি
~ ওহ, আচ্ছা শুয়ে পড়ুন, আমি ফ্যান চালিয়ে দিচ্ছি
~ ফ্যান, এসি নেই?

~ নাহ, নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য এসি হচ্ছে আকাশের চাঁদের মত
~ ওহ
~ শুয়ে পড়ুন
~ হ্যাঁ শুবো, তোমার রুম টা কিন্তু ততটাও খারাপ না
~ আবার ততটা ভালোও না

~ ওয়াশরুম টা কিন্ত সুন্দর করেই সাজানো
~ ওহ
~ তনুশা
~ জ্বি
~ তোমার বাবার সাথে দেখা করা টা উচিত ছিল না কি?
~ বাবাকে বলেছি আপনি টায়ার্ড কাল দেখা করবেন
~ নাহ আমি তো টায়ার্ড নই, মিথ্যা বললা কেন

~ আপনি কি দেখা করতে চাচ্ছেন?
~ অবশ্যই
~ তাহলে অপেক্ষা করুন, আমি চেঞ্জ করে আসি
~ ওকে, এই দাড়াও তো
~ জ্বি বলেন

~ কি পড়বে এখন
~ মানে
~ মানে এটা চেঞ্জ করে কি পড়বে
~ থ্রী~পিছ ই পড়বো
~ ওহ
~ আপনি বসেন আমি চেঞ্জ করে আসি

তনু ওয়াসরুমে চলে যায়, এই সুযোগে তাওহীদ পুরো রুম টা ঘুরে ঘুরে দেখে।
হঠাৎ তনুর ছবি টায় চোখ যায় তাওহীদের

একটা পরীর মত মেয়ে চুপচাপ বসে আছে, চোখে তার হাজারো স্বপ্ন, চোখ জোড়া চিক চিক করছে, মনে হচ্ছে এখনি টুপ টুপ করে পানি পড়ে যাবে।
সত্যিই সে অনন্যা।
এর মাঝেই পিছন থেকে কেউ বলে ওঠে

~ ওটা আমার ছবি, নদীর পাড়ে বসেছিলাম, রুমেল তুলে ছিল
~ ওহ আচ্ছা
ঘুমিয়ে পড়ুন

~ কেন? এই না বললা তোমার বাবার সাথে দেখা করতে যাবা
~ বাবা ঘুমিয়ে গেছে, আপনি ও ঘুমিয়ে যান
~ মানে কি
~ কিছুই না

~ আচ্ছা তোমাদের বাসায় কয়দিন থাকতে হবে
~ পড়শু চলে যাবো
~ আচ্ছা, আমি কি এখানে ড্রিঙ্ক করতে পারি?

~ নাহ, খবরদার নাহ, এখানে একদম না
~ oh god, যত্তসব মিডেল ক্লাস ম্যান্টালিটির লোক
~ হ্যাঁ, ঘুমান এখন good night

দুইজন দুইদিকে মুখ করে শুয়ে আছে। এমন সময় তনুর মোবাইলে কল আসে। ভাগ্যিস মোবাইল টা সাইলেন্ট করা ছিল।
কল টা দেখে তনুর আত্না আবার ভয়ে কেপে ওঠে। আবার কেন কল দিল?


পর্ব ৯

আলিফ~লাম~মিম; জালিকাল কিতাবু লা~রাইবা ফিহি হুদাল~লিল মুত্তাকিন; আললাযীনা ইয়ূ’মিনুনা বিলগায়েবি ওয়া ইয়ূক্বীমুনাস সালাতা ওয়া মিম্মা রাযাক্বনা~হুম ইয়ূনফিক্বুন।

ভোরের দিকে এই সূরার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাওহীদের। এত মিষ্টি কন্ঠে কে যেনো কোরআন পাঠ করছেন। তাওহীদ এর আগে কখনো এইভাবে ঘুম থেকে উঠে নি। সারারাত নেশায় চুবে থেকে দুপুর ১ টা কিংবা ২ টায় তার ঘুম ভাঙতো।

এই প্রথম কারো কোরআন পাঠের শব্দে উঠলো সে। চোখ মুছে সাইডে তাকিয়ে দেখে তনু পশ্চিম মুখী হয়ে কোরআন পড়তেছে। এক অজানা শান্তির বাতাস তাওহীদের বুকে বয়ে যায়। চুপচাপ বসে বসে প্রায় অনেক্ষণ তনুর পড়া শুনছিল সে। তারপর তনু কোরআন রেখে মোনাজাত ধরেছে সেটাই খেয়াল করেছে তাওহীদ। জায়নামাজ টা ভাজ করে কোরআন শরীফ টা বুকে জড়িয়ে পিছনে ঘুরতেই দেখে তাওহীদ খাটের উপরে বসে আছে।

তাওহীদকে দেখে তনু এক ধ্যানে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফর্সা মানুষ টা সাদা পাঞ্জাবিতে বসে আছে, কি যে সুন্দর লাগছিল তনুর কাছে তার বরকে দেখতে। কিন্তু মুহূর্তেই তনুর ঘোর কাটে আর চোখ বন্ধ করে বলে
আল্লাহ আমার নজর যেন না লাগে মানুষ টার উপরে, তুমি রক্ষা করো

চোখ খুলে দেখে এখনো তনুর দিকে তাকিয়ে আছে তাওহীদ। এইবার একটু ইতস্তত হলো তনুর। নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে তার। কোরআন শরীফ পড়তে গিয়ে তার বরের ঘুম টাই ভেঙে গেল। যদি ওইদিনের মত আবার বকা দেয়। এই ভেবে নিজেই কথা বলা শুরু করে,

~ আসসালামু আলাইকুম, উঠে পড়লেন যে
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, এমনি আজ কেন জানি হঠাৎ ঘুম টা ভেঙে গেল
~ আসলে আমারই উচিত হয় নি রুমে এইভাবে কোরআন পড়া

~ নাহ নাহ একদম উচিত হয়েছে, সমস্যা নেই
~ আচ্ছা আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন আবার
~ আর তুমি
~ আমি মায়ের কাছে যাবো একটু, দেখি কি রান্না বসাবে

~ এত ভোরে রান্না?
~ আপনার জন্যে কিছু বানাতে হবে তো তাই না? আফরোজ আপুর কাছে শুনেছি একদম হালকা খাবার খান আপনি সকাল বেলা, অবশ্য আপনার সকাল যখন তখন আমাদের দুপুর আর কি
~ মিস আফরোজ তো দেখছি পুরো বায়োডাটা সাজিয়ে রেখেছে আপনার কাছে

~ হ্যাঁ, আচ্ছা একটা কথা বলার ছিল
~ বলো
~ আমার পরিবারের কেউ জানেন না যে আপনি,আপনি
~ আমি নেশাখোর তাই তো
~ কারো সামনে আসতে দিবেন না প্লিজ

কথা বলতে বলতে ওড়না খুলে নরমাল করে পড়ে নেয় তনু।

~ এইভাবে পড়লা যে
~ মানে
~ ওড়না টা ওই ভাবেই সুন্দর ছিল

~ খিচুড়ি খান?
~ দুই একবার খেয়েছিলাম
~ আজ খাবেন?
~ তুমি রাধবা?

~ খেলে রান্না করবো আর না খেলে বলেন কি খাবেন, ব্যবস্থা করবো
~ ওকে, তাহলে থাই সুপ উইথ চিকেন ফ্রাই, একটা কোল্ড কফি, ব্রেড উইথ বাটার, এগ বোয়েল, ব্যবস্থা করতে পারবে?

তাওহীদের কথায় একটু বিচলিত হয়ে পড়ে তনু। যেইগুলার কথা বললো, প্রায় অনেক গুলাই এক্সপেনসিভ। রুমেল কে এখন বললে কোন একটা ভালো রেষ্টুরেন্ট থেকে আনাতে পারবে। তাও তো টাকা পয়সার ব্যাপার।

~ আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি, এখন একটু ঘুমিয়ে পড়ুন আর ৯ টার দিকে উঠে পড়বেন
~ তনুশা দাড়াও
~ জ্বি

~ খিচুড়িই খাবো আজ, এইসব খেয়ে খেয়ে ভেতরে সব ঝাঝড়া হয়ে গেছে আজ না হয় একটু ডিফারেন্ট কিছু ট্রাই করলাম
~ সমস্যা নেই আমি ব্যবস্থা করছি সব কিছুর
~ বললাম তো কিছু লাগবে না, খিচুড়িই রান্না করো

তনু আর কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। তাওহীদ শুয়ে পড়লেও তার ঘুম আসে নি তাই ফ্রেশ হয়ে তার বন্ধুদের কল দেয়। কিন্তু বন্ধুরা কেউই ফোন ধরে নি। হয়তো সারারাত পার্টি করে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সব। তাই নিজেই সংকোচ ভুলে গিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। দেখে রুমেল রেডি হচ্ছে।

~ কোথায় যাওয়া হচ্ছে শালা বাবু
~ ওহ ভাইয়া আপনি এত সকালে?
~ ঘুম ভেঙে গেল আর কি

এমন সময় তনুর মায়ের প্রবেশ

~ এ কি বাবা উঠে পড়লে যে, রাতে ভালো ঘুম হয় নি?
~ না তা নয়, হঠাৎ করেই ঘুম টা ভেঙে গেল
~ গরমে মনে হয়

~ না না ঠিক আছে, আংকেল কি উঠেছে?
~ হ্যাঁ উঠেছে, ওষুধ আছে তো, তনুই ওষুধ খাওয়ায় ওর বাবাকে, আজকেও খাওয়াচ্ছে
~ আমি কি দেখা করতে পারি?
~ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই৷ যাও বাবা মানুষ টা দেখতে চেয়েছিলেন তোমাকে
~ আসলে কাল কে দেখা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তনু বললো

~ হ্যাঁ ওর বাবা ই বলছে, ক্লান্ত হয়ে আসছো তাই আর কি
~ রুম টা কোন দিকে?
~ ওই যে সামনে গিয়ে বা পাশের রুম টা তনুও আছে সেখানে

তাওহীদ রুমের কাছে গিয়ে বাবা মেয়ের দিকে তাকায়। তনু তার বাবাকে ওষুধ খাওয়াচ্ছে, আর কথা বলছে,

~ ইশারায় এত বুঝাতে হবে না, তোমার তনু ভালো আছে বাবা, অনেক বড় ঘর, অনেক ভালো শ্বশুরবাড়ি তোমার তনুর। তুমি তো তাই চেয়েছিলে তাই না বাবা। এ মা আবার কাদো কেন? এখন আমিও কেদে দিব কিন্তু। পরে তোমার জামাই দেখলে কি বলবে বলো তো, কে তোমাকে কাদিয়েছে, তখন কিন্তু তোমাকে দেখিয়ে দিব আমি, হ্যাঁ

মেয়ের কথায় বাবা হেসে দেয় সাথে তনুও। এইসব দেখে তাওহীদ আর সাহস করে নি ভেতরে যাবার। তাই ফিরে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তনুর বাবা দেখে ফেলে তাই হাত দিয়ে ইশারা করে তনুকে দেখাচ্ছে যে জামাই আসছে। তনুও পিছনে তাকায় তখন তাওহীদ দাঁড়িয়ে ছিল দরজার কাছে।

তাওহীদ কে দেখে চোখে ইশারা করে তনু। তাওহীদ ইশারা বুঝে নিয়ে রুমের ভেতরে ঢোকে। তনু তাওহীদ কে বসতে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর তাওহীদ তখন তার শ্বশুড়ের সাথে কথা বলতে শুরু করে। যদিও তাওহীদ একা একাই সব বলেছে। নেশাখোর হলে কি হবে, মন টা নরম তার

সকাল ৯ টায়, সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে সাথে তাওহীদ ও বসা। তনু সবাই কে সার্ভ করে দিচ্ছে। তাওহীদ লক্ষ্য করছে তনু নিপুন হাতে সবাইকে সার্ভ করছে। সবাই খাচ্ছে আর তাওহীদ খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে। খিচুড়ি সাথে ডিম ভাজা আর ইলিশ মাছ ভাজা।
খিচুড়ির কালার টা বেশ সুন্দর হয়েছে। এখন খাবে কি খাবে না সেইটা ভাবছে তাওহীদ।

~ ভাইয়া খাচ্ছেন না যে
~ হ্যাঁ খাচ্ছি তো

সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া শেষে উঠে যায়। সবাই যার যার মত কাজে চলে যায়। তাওহীদ বেচারা কি করবে আর তাই সে রেডি হচ্ছে।

~ কোথাও যাচ্ছেন নাকি
~ হ্যাঁ, একটু ঘুরে আসি, গাড়ি তো আছেই
~ ওহ, আচ্ছা ঠিক আছে, দুপুরে ফিরে আইসেন মা রান্না করছে

~ ওকে
~ আচ্ছা
~ তনুশা
~ জ্বি
~ বউয়ের হাতের রান্না কি খুব ভালো হয়?

~ মানে
~ খিচুড়ি টা দারুন ছিল
~ ওহ
~ আচ্ছা আসি
~ আল্লাহ হাফেজ

তাওহীদ বেরিয়ে যায় বাসা থেকে। আর তনুও লেগে যায় কাজে। সব নিজের মত গোছগাছ করে নেয়।
সেইদিন দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল, কিন্তু তাওহীদ আর ফিরলো না। কোথায় গেছে, কেন গেছে কিছুই জানে না তনু। বার বার কল দিচ্ছে তাওহীদকে, কল বেজে কেটে যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না।

রাত হয়ে গেছে কিন্তু তাওহীদের খবর নাই। বার বার কল দিতে দিতে মোবাইল টাই বন্ধ হয়ে গেছে তাওহীদের।

রাতে এক ফোটাও ঘুমায় নি তনু। মানুষ টা কোথায় চলে গেল। বাসায় সবাই এক এক করে জিজ্ঞাসা করছে হ্যাঁ রে জামাই কই গেল? হ্যাঁ রে ভাইয়া কই? সবাইকে মিথ্যা বলে বলে তনু ক্লান্ত হয়ে গেছে।

এত প্রশ্নের একটাই উত্তর অফিসের মিটিং এ আটকে গেছে।
আসলে তাওহীদ যে কখনো অফিসের দিকে মুখও দেয় না তা তনু জানে। যেই কয়েকদিনই যায় আধা ঘন্টার বেশি থাকে না। এত টেনশন আর নিতে পারছে না তনু। আপনা আপনি চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তনুর। বাপের বাড়িতেও টেনশনে টেনশনে এত টা বছর কাটিয়েছে সে আর এখন স্বামীর বাড়িতেও সেম। তার সাথেই কেন এমন হচ্ছে? ভাগ্য কেন তার সাথেই বার বার খেলছে? প্রশ্ন গুলো খুব সহজ কিন্তু উত্তর মেলা বড় দায়।

এক দিকে এত টেনশন অন্য দিকে আবার সেই ফোনের আওয়াজ। তাওহীদ ভেবে তারাতারি ফোন টা হাতে নেয় তনু। কিন্তু তাওহীদ না। এ তো
মোবাইল টা উপর করে বিছানায় ফেলে রাখে তনু। আবার ফোন আসে, এখন তনুর মেজাজ চরম গরম হচ্ছে। বার বার এইসবের মানে কি?

কাদতে কাদতে মেয়েটার চোখ জোড়া কখন যে বন্ধ হয়ে গেছে সে নিজেও জানে না। আর ওইদিকে বার বার কল বেজেই যাচ্ছে তো বেজেই যাচ্ছে।


পর্ব ১০

সকাল টা হয়েছে তনুর এক রাশ দীর্ঘশ্বাসের সাথে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে অনেক গুলা কল, কিন্তু একটাও তাওহীদের নাম্বার না। ৯ টার দিকে শ্বশুড়ের কল আসে। কি বলবে না বলবে ভেবে পাচ্ছে তনু। তারপরও কল টা রিসিভ করে সে।

~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম বাবা
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, বউমা কাল দুপুরে তাওহীদ বের হয়েছে আমাকে বলো নাই কেন?

~ আসলে বাবা মানে
~ গাড়ি পাঠিয়ে দিছি চলে আসো
সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে
~ কিন্তু বাবা, উনি তো আসলেন না, কোথায় আছে তাও জানি না

~ তোমার গুনোধর স্বামী এখন আমার বাসায়, মাতাল হয়ে ভোরে ফিরছে, চলে আসো, আজকে এর একটা বিহীত করেই তবে ছাড়বো

এই বলে মাহবুব সাহেব ফোন রেখে দিলেন। অজানা ভয়ে তনুর বুক কেপে ওঠে। আজ ওই বাড়িতে একটা কুরুক্ষেত্র বাধবে। অন্য কিছু চিন্তা না করে তনু সব গুছিয়ে নিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওই বাড়িতে চলে যায়।

পুরো বাড়ি জুড়ে থমথমে ভাব বিরাজ করছে। অবস্থা বুঝে গেছে তনু। তাই নিজেও চুপচাপ আছে

বেলা ২ টায় ঘুম থেকে উঠে তাওহীদ। চিল্লা পাল্লা শুরু করে দেয় পুরো বাসাতে। রুমিকে চিৎকার করে ডাকছে তাকে লেবুপানি দেয়ার জন্য। পুরো বাসা মাথায় তুলছে সে। অবশেষে লেবুপানি হাজির হয়।

~ খালি ঘুমাস নাকি তুই, নাকি তোর মালিক তোকে ঘুমের জন্য রেখে দিছে, কখন চাইছি আর আনছিস কখন, যত্তসব ইডিয়েট পালে বাসার মধ্যে

এইসব বাজে বাজে কথা বলে পিছনে তাকিয়ে দেখে তনু দাঁড়িয়ে আছে। হাতে গ্লাস। তনুও আর কথা বাড়িয়ে চলে যায়।
তনুকে দেখে একটু না বেশ খানিকটাই ভরকে যায় তাওহীদ। তনুকে এইখানে এইভাবে দেখবে আশা করে নি তাওহীদ। কাল কে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়ে আড্ডায় মজে যায় তাওহীদ। আর তনুর কথা ব্রেইন থেকে বেরিয়ে যায় তাওহীদের

দুপুরে খাবার টেবিলে বাবা ছেলেকে এক সাথে দেখে রাবেয়া বেগম, তনু আর মাইশা ভিষণ রকম ভয়ে থাকে। কখন জানি ধুম করে ফাটে। কিন্তু কথায় আছে না, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়

~ কাল কোথায় ছিলে তুমি
~ বন্ধুদের সাথে ছিলাম
~ তুমি জানতে না যে তোমাকে তনুদের বাসায় ফিরতে হবে

~ মাইন্ড থেকে স্লিপ হয়ে গেছে
~ স্লিপ হয়ে গেছে, এত বড় মাইন্ড থেকে এই ছোট কথা টা স্লিপ হয়ে গেল
~ এখন হয়েছে টা কি, তোমার জন্য কি এখন খেতেও পারবো না আমি

~ কি হয়েছে মানে, কি হয়েছে মানে কি তুমি গেছো শ্বশুড়বাড়িতে কিন্তু তুমি সেই বাসা থেকে কেন আরেক জায়গায় গিয়েছিলে আর গেছোই যখন তখন ফিরে গেলে না কেন? রাতভর মদ গিলে ভোরে মাতাল হয়ে এই বাড়িতে ফিরেছো কেন
~ এনাফ বাবা এনাফ

ভাতের প্লেট বাটি সব ফ্লোরে ছুড়ে মারে তাওহীদ। সব ভাঙচুর করা শুরু করে দেয়। তনু সাহস করে থামাতে যায়, কিন্তু তাওহীদ এতটাই রাগের মাঝে ছিল যে কে তনু আর কে বাবা সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তনু কাছে গেলে তনুকে এক ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয় তাওহীদ। তাল সামলাতে না পেরে পড়েই যায় বেচারি।

~ তাওহীদ
~ চিৎকার করবা না খবরদার, এই এক বিয়ে বিয়ে করে আমাকে আজ কয় টা দিন বেধে রাখা হয়েছে। অসহ্যকর লাগে আমার কাছে এসব। এক গাদা দ্বায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছো আমার উপরে। বিয়ে যখন করেই ফেলছি তাও এই মেয়েটাকে, খেসারত তো দিতেই হবে। তাও এই মেয়েটাকেই, যত্তসব থার্ডক্লাস মিডেল ম্যান্টালিটির মেয়ের সাথে আমার মত ছেলেকে বেধে দিছ

~ তাওহীদ, কি সব বলছিস তুই
~ তুমি থামো মা, তুমিও সেম, কেউ আমার দিক টা বুঝলা না

~ এই তোমার কি দিক বুঝবো হ্যাঁ কি দিক বুঝবো। আমাত এত বিশাল সম্পত্তি একমাত্র অংশীদার তুমি আর তুমি কি করো সারাদিন সারারাত মদে উবে থাকো নেশায় মাতাল থাকো drugs নাও। আমি দুচোখ বন্ধ করলে এই তোমার ছেলে সব বেচে বেচে নেশা করে রাস্তার ভিখারী হবে রাবেয়া এই বলে দিলাম আমি

বাবা ছেলের তুমুল ঝগড়ার এক পর্যায়ে মাহবুব সাহেব উপরে চলে যায় আর তাওহীদ বেরিয়ে যায়। কাজের মেয়েকে নিয়ে সব টা পরিষ্কার করছেন রাবেয়া বেগম, সাথে চোখের অবিরাম পানি তো আছেই। মাইশাও না খেয়ে চলে গেছে উপরে।

সেদিন রাত ৪ টায় মাতাল হয়ে বাসায় আসে তাওহীদ। কোন রকমে রুমে ঢোকে সে। দেখে তনু বিছানার এক পাশে গুটিয়ে শুয়ে আছে। তনুকে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তাওহীদের। ঘুমের মাঝে মেয়েটাকে টেনে বিছানা থেকে নামায় তাওহীদ। তাওহীদের এমন আচরণে অনেকটাই অবাক হয়ে যায় তনু। তাওহীদের গায়ের থেকে মদের বিশ্রী স্মেলে তনুর প্রায় বমি আসার মত অবস্থা হয়ে গেছে।

~ এই আজ থেকে নিচে ঘুমাবি তুই, আমার বিছানার ধারে কাছে যাতে তোকে না দেখি। না হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। ভুল করছিলাম আমি তোর মত মেয়েকে বিয়ে করে। যত্তসব ছোটলোক কোথাকার। আজ থেকে নিচেই থাকবি তুই

বলে তনুকে ফ্লোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় তাওহীদ। তনু হতভম্বের মত তাকিয়ে থাকে তাওহীদের দিকে।
এ কে? এ কি আদৌ তাওহীদ? যে মানুষ টা কোরআন শরীফের আওয়াজে ঘুম থেকে উঠে যায় আজ সে এমন মাতাল হয়ে নিজের বউকেই এইসব কথা বলে? এ কি আদৌ তাওহীদ নাকি তাওহীদ রূপি অন্য কেউ।

২ সপ্তাহ পর। তনুর পরিবার এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী। রুমেল কে নতুন চাকরি দিয়েছে তনুর শ্বশুড়। সাথে রুবেল কেও। অভাব জিনিস টা একটু হকেও ঘুচেছে তনুর পরিবারের।

আর এইদিকে তাওহীদ ও অনেকটা দমে গেছে। তনুর চুপচাপ স্বভাব তাকে অনেকটাই দমিয়ে রেখে দিয়েছে। এই ২ সপ্তাহে কম অত্যাচার করে নি তাওহীদ তনুকে। কখনো এসি বাড়িয়ে দিয়ে কখনো গায়ে পানি ঢেলে কখনো চড় থাপ্পড় দিয়ে। কিন্তু তনুর চুপ করে থাকা টা যেন কিছু একটার ইংগিত দিচ্ছিলো তাওহীদ কে। যা তাওহীদ বুঝেছে ঠিক কিন্তু কাজে লাগায় নি।

একদিন শ্বশুড়~শ্বাশুড়ির রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তনুর কানে কিছু কথা আসে,

~ রাবেয়া বড় ভুল করে ফেলছি
~ কি হয়েছে

~ তনুশা কে তাওহীদের সাথে বিয়ে দেয়া ঠিক হয় নি আমাদের, তুমি কি খেয়াল করেছো রাবেয়া তোমার ছেলে বউমাকে মারে
~ আসলে আমিই দোষী, আমি যদি বিয়ে বিয়ে না করতাম, এই ছেলে যে সুধরাবে না তা আমার বুঝা উচিত ছিল, ও জন্মানোর পর যদি বুঝতাম আমার ছেলে এমন হবে ওকে বিষ দিয়ে না হয় মুখে লবন দিয়ে সেইদিনই শেষ করে দিতাম

~ মিষ্টার খান কে তো চিনই, ওনার ছেলে ওনার অবর্তমানে সব সামলায় আর আমার ছেলে আমি থাকা অবস্থাতেই তো নেশায় মাতাল থাকে, আমি যখন থাকবো না তখন কি হবে রাবেয়া, কতদিন আর জাহিদ সব সামলাবে

~ কেদো না আল্লাহ আছে, ও যে কিসের পাল্লায় পড়ছে, ওর বন্ধু গুলো ওকে শেষ করে দিচ্ছে ও তো বুঝতেছে না, এখন বলতে গেলেই আবার ভাঙচুর করবে
~ কিছু বলো না, আমি তো চিন্তায় আছি তনুশা কে নিয়ে, আমার কথা রাখতে গিয়ে মেয়েটা তার পুরো ভবিষ্যত শেষ করে দিল

শ্বশুড় শ্বাশুড়ির চোখের পানি দেখে সেইদিন তনুর ও চোখে পানি চলে আসে।
মানুষ গুলো বড় ভালো। কিন্তু ছেলের চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে আর এখন নিজেদের দোষারোপ করছে তারা। নাহ এইসব বন্ধ করতেই হবে। তাওহীদকে ভালো করতেই হবে তনুর। শুধু নিজের পরিবারকে স্ট্যাবল করলে হবে না সাথে তাওহীদকেও সেফ করতে হবে তার। কৌশলে তাওহীদকে আটকাতে হবে তনুর

একদিন বিকালে তাওহীদ গার্ডেনে বসেছিল। আজ আর বাহিরে যায় নি সে
তনু এই সুযোগ টাই কাজে লাগায়। কফি নিয়ে তাওহীদের কাছে যায়।

~ আজকে এইভাবে এইখানে বসে আছেন যে, বের হবেন না

তনুর কথায় তাওহীদ তনুর দিকে তাকায়, আজ তনুকে বেশ অন্যরকম লাগছে। জর্জেট শাড়ি টায় বেশ অন্যরকম লাগছে তনুকে। হাতে এক জোড়া এক চুড়ি, কানে ছোট এক জোড়া দুল আর গলায় একটা মোটা চেইন।

যা অপূর্ব থেকেও অপূর্ব করে তুলেছে তনুকে। তার উপরে কোমড়ের এক সাইড টা দেখা যাচ্ছে, ফর্সা কোমড়ে সহজেই নজর চলে যায় তাওহীদের। কিন্তু অবাক করা কথা হলো এই কয়েকদিন সে ফিরেও তাকায় নি তনুর দিকে। আর তনুও সেইভাবে তাওহীদের আশেপাশে থাকতো না। আজ এক ভাবে তাকিয়ে আছে তাওহীদ তনুর দিকে।

~ এই যে কি হলো,
~ কিছু না, দেখছি
~ কি?
~ তুমি অনেক সুন্দর

~ এ আর নতুন কি
~ হ্যাঁ
~ কফিটা খেয়ে নিন
~ তনুশা

বলেই শাড়ির আঁচল টা আটকে ধরে তাওহীদ। আর শাড়িতে টান পড়ায় পিছনে ফিরে তাকায় তনু

~ কি হলো
~ এইদিকে আসো

বলে তনুকে ঝাপটে ধরে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় তাওহীদ। এমনটা হবে তনুর আন্দাজও ছিল না। শত হোক স্বামী তো। বিয়ের ২০ দিনের মাঝে এই প্রথম সে এইভাবে স্পর্শ করে তনুকে। আর বাকি স্পর্শ বলতে দুইদিন দুইটা থাপ্পড়। স্বামীর বুকে এইভাবে লেপ্টে থাকা কত জনের ভাগ্যে আছে। তাওহীদ তার বা হাত টা তনুর পেটে আলতো করে ছুইয়ে দেয়। কাধের উপরে থাকা চুল গুলো হালকা ভাবে নিয়ে কানের উপরে গুজে দেয় তাওহীদ, তারপর আস্তে করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে

~ আমি যে এত খারাপ, নেশাখোর, মাতাল, বড্ড উন্মাদ, তবুও কেন পড়ে আছো আমার কাছে
~ কারন আপনি আমার স্বামী
~ সেইদিন থাপ্পড় টা বুঝি জোড়েই লেগেছিল, তাই না?

~ থাক সে সব কথা
~ আজ কাল একদম চুপচাপ থাকো, কেন?
~ আমি বরাবরই চুপচাপ
~ উহু, তনুশা অন্তত এমন না
~ হ্যাঁ, কিন্তু এই ২০ দিনে হয়ে গেছে

~ তা কি আমার জন্যেই?
~ বুঝে নেয়া ভালো
~ মাইশার রুমে কেন চলে যাও
~ নিচে শুতে কষ্ট হয়, শরীর ব্যাথা হয়ে যায়, তাই ওর কাছে চলে যাই
~ একবার বলে তো দেখতে পারতে

~ একবার যা আদেশ হয়ে গেছে তা নিয়ে কথা না বলাই ভালো
~ আচ্ছা আমি কি এতই খারাপ?
~ নিজের মন কে প্রশ্ন করেন
~ তুমিই বলে দাও

~ আমাকে বিয়ে করেছেন কেন?
~ তোমার শ্বশুড়ের কথাতে, এই একটা জিনিসই তো সে তার মনের মত আমার উপরে চাপিয়ে দিয়েছে
~ ওহ

~ অবশ্য জোড় করে চাপিয়ে দেয়া এই জিনিস টা আমার কাছে দিন দিন ভালো লাগতে শুরু করেছে, তার চলা~ফেরা, তার কথা বলা, তার হাসি, তার ঠোঁট, সব কিছুই ভালো লাগতে শুরু করেছে

~ আমার শ্বশুড়ের কথায় যখন আমায় বিয়ে করতে পেরেছেন তখন আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির কথায় অফিসেও তো বসতে পারেন তাই না?
~ টিউশন দিচ্ছো আমায়
~ টিউশন দিচ্ছি না, শুধু বললাম, ভেবে দেখবেন।

এই বলে তনু নিজেকে তাওহীদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর সামনের দিকে হাটা শুরু করে। তাওহীদ তনুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তনু কিছু একটা ভেবে আবার পিছনের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ আর হ্যাঁ ভালো জিনিস গুলো না খুব তারাতারি হারিয়ে যায়। হারিয়ে গেলে খুজে পাওয়া বড় দায় হয়ে দাঁড়ায়। হারিয়ে যাওয়ার আগে অন্তত ভালো লাগা জিনিস গুলোর কথা পারলে একবার শুনবেন

তাওহীদ এইবার তনুর কথার মানে বুঝে গেছে। তনু না চাইতেও অনেক কথা বলে গেল। না বুঝাতে চেয়েও অনেক বুঝিয়ে দিয়ে গেল যা তাওহীদ বুঝে নেয়। তাওহীদ তনুর চলার পথে তাকিয়ে আছে
তনুর হাতে থাকা মোবাইল টা আবার ভো ভো করে উঠে। আৎকে উঠে তনু আর সব থেকে আশ্চর্য হয় তখন যখন ফোনের স্ক্রীনে নাম্বার টি ভেসে ওঠে। আর অন্যদিকে তাওহীদ নাম্বার ডায়াল করে

~ হ্যালো জাহিদ


পর্ব ১১


পরদিন সকালবেলা তনু নিচে নাস্তা রেডি করছে সাথে রাবেয়া বেগমও। তনুর আজ ভার্সিটিতেও যেতে হবে। তারই কথা বলছে দুইজনে। মাহবুব সাহেব রেডি হয়ে নিচে এসেছে নাস্তা করতে মোটামুটি সবাই আছে শুধু তাওহীদ নেই।

প্রায় ১০ মিনিট পরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাওহীদ ডাইনিং এ এসে পৌঁছায়। তাওহীদকে দেখে সবাই অবাক। তার উপর আরো বেশি অবাক হয়ে ফরমালে তাওহীদ কে দেখে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে অফিসের জন্য তৈরি হয়েছে। নাস্তার টেবিলে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। নিরবতা ভেঙে তাওহীদ তার বাবাকে বলে,

~ বাবা, ইউনুস গ্রুপের কেস ফাইল টা আমি হ্যান্ডেল করবো
~ তুমি? ?
~ কেন কোন সমস্যা

~ নাহ, তা আজ হঠাৎ অফিসে যাচ্ছো
~ তা নিয়ে তোমাকে না ভাবলেও চলবে, মিটিং ১২ টায় না?
~ হ্যাঁ
~ ওকে

আজ তনু অনেক খুশি, সে একটু হলেও তাওহীদকে সুধরাতে পেরেছে। বাকিটাও পারবে তার ধারনা। তাওহীদের বাবা মা তো ভিষণ রকম খুশি। এত তারাতারি এত কিছু হবে ভাবেই নি ওনারা। হঠাৎ করেই রাবেয়ার মাথায় একটা কথা চলে আসে। তাওহীদও অফিসের জন্য বের হরে যাচ্ছে। হঠাৎই রাবেয়া বেগম বললেন,

~ তাওহীদ,
~ হ্যাঁ মা, কিছু বলবে?
~ তনুর আজ নাকি ভার্সিটি যাওয়া লাগবে একটু ওকেও ড্রপ করে দে বাবা

~ ওকে,
~ তনু যা মা রেডি হয়ে নে

~ আপনার প্রবলেম হবে না তো
~ জ্বি না, আপনি রেডি হয়ে আসেন
~ হু

তনু তারাতারি উপরে চলে যাই। কোন রকম রেডি হয়ে নেয় তনু। হালকা মিষ্টি কালারের একটা শাড়ি পড়েছে। অনেক সুন্দর লাগছিল তনুকে। অপরদিকে তাওহীদকেও কম হ্যান্ডসাম লাগছে না।
গাড়িতে বসে আছে তনু। বাহিরে তাকিয়ে আছে সে।

~ কি ব্যাপার কাউকে মারার প্ল্যানিং করেছো নাকি
~ মানে
~ যে কেউই আপনাকে দেখে ফিদা হয়ে যাবে
~ ট্যাগ লাগানো আছে নো প্রবলেম
~ ট্যাগ, কিসের ট্যাগ?

~ বিবাহিত মহিলার ট্যাগ
~ হা হা
~ একটা কথা বলবো?
~ হ্যাঁ বলো
~ থ্যাংকস

~ কিসের জন্য
~ আমার কথা টা রাখার জন্য
~ আমি নিজের মতই চলি
~ আমাকে একটা সিম কিনে দিতে পারবেন?
~ মোবাইল লাগবে?

~ পুরানোটাই চলবে একটা সিম লাগবে শুধু
~ আচ্ছা দিব, তোমার ভার্সিটি চলে আসছে
~ আচ্ছা আসি
~ সাবধানে যাও

সেইদিন অফিসে সবাই অবাক তাওহীদকে দেখে। নিজের মত করে সব ফাইল বুঝে নিয়ে মিটিং টাও দারুন ভাবে শেষ করে তাওহীদ। টেন্ডার পায় মাহবুব গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি। মাহবুব সাহেব এইতো চেয়েছিলেন ছেলে তার দ্বায়িত্বশীল হয়ে উঠুক, সব সামলে নিক। আজ একটু হলেও তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন হলো। মনে মনে অনেক দোয়া দিলেন তার বউমাকে যার জন্য তার ছেলে আজ একটু হলেও সোজা পথে আসতে পেরেছে

এইদিকে মিটিং শেষে কেবিনে বসে আছে
হঠাৎ মোবাইলের দিকে নজর যায় তার। মোবাইল টিপলে মন্দ হয় না ভেবে মোবাইল হাতে নেয়। কিন্তু মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে প্রায় ২৫ মিসডকল তাও তনুর এত কল কেন? তনুর প্রতি ভালোবাসা না থাকলেও মায়া টা বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। তারাতারি কল ব্যাক করে তাওহীদ,

~ হ্যালো তনুশা
~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
~ হু, সরি আমি মিটিং রুমে ছিলাম মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিল, কি হয়েছে
~ হয়েছিল, এখন আর লাগবে না আমি বাসায় চলে আসছি, রাখি
~ আরে কিন্তু কি হয়েছে বলবা তো
~ কিছু না

তাওহীদ কিছুই বুঝে নাই। এত গুলো কল আর এখন বলছে কিছু না। তারপর আবার কাজে ব্যস্ত তাওহীদ আর ওইদিকে বন্ধুরা কল দিয়ে দিয়ে ক্লান্ত, যাতে আজও তাওহীদ ক্লাবে যায় তার জন্য। তাওহীদ একটু হলেও বুঝেছে এইভাবে মদের মাঝে ডুবে থাকাকে জীবন বলে না। জীবন টা আরো সুন্দর করে সাজানো যেতে পারে। ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না, অন্যকারো মাধ্যমে নতুন রুপে ধরা দেয়।

অনেকটা ভাগ্যের মত, ভাগ্য একবারই দরজায় কড়া নাড়ে, যারা বুদ্ধিমান তারা খুলে দেয় আর যারা বোকা নির্বোধ তারা দরজার খিলের কাছেও যায় না। তনুর তেমন কোন চাহিদা সে আজ পর্যন্ত দেখে নি। একদম চুপচাপ সহজ সরল মেয়ে বলা যেতে পারে। সখ করে একটা সিম কার্ড চেয়েছে। তাই তাওহীদও না করে নি। দামী একটা ফোন এবং তাতে সিম কার্ড ইন করে নিয়ে যায় তনুর জন্য।

রাতে সবাই খেতে বসে। খাবার টেবিলে তাওহীদ তার বাবাকে বলে

~ রুমেল কবে থেকে জয়েন করেছে বাবা
~ আজকে ৫ দিন হলো
~ কেন
~ নাহ এমনি

নিজের ভাইয়ের কথা শুনে একটু ঘাবড়ে যায় তনু। হঠাৎ করে রুমেল এর কথা বললো তাওহীদ। এটার উত্তর খুজছে তনু, কিন্তু কিভাবে জিজ্ঞাসা করবে তাই চুপ করে আছে।

রাতে তাওহীদকে পানি দিতে আসে তনু। তাওহীদ কাজ করছিল। তনু এসে পানি দিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ায় আর তখনই তাওহীদ তনুকে ডাক দেয়,

~ তনুশা
~ জ্বি কিছু বলবেন
~ কোথায় যাও
~ ঘুমাতে
~ এখানে ঘুমাও

~ ফ্লোরে শুতে পারবো না
~ ফ্লোরে শুতে হবে না, বেডে শুবে
~ প্রয়োজন নেই, আমি মাইশার কাছেই ঠিক আছি
~ যা বললাম তাই করো

তাওহীদ রাগ দেখে তনু আর কথা বাড়ায় নি, চুপচাপ এসে তাওহীদের পাশে শুয়ে পড়ে। তাওহীদ তখন ল্যাপটপে কাজ করছিল। কাজ শেষ করে তনুকে ডাক দেয়

~ তনুশা
~ হ্যাঁ
~ দুপুরে কি হয়েছিল
~ কিছু হয় নি তো
~ এত কল করেছো হঠাৎ
~ নাহ এমনি
~ উঠো

~ বলেন
~ এই নাও
~ মোবাইল
~ হ্যাঁ
~ সিম কার্ড চেয়েছিলাম তো
~ মোবাইল ও দিলাম
~ থ্যাংকস

~ উহু থ্যাংকস এইভাবে না
~ মানে
~ মানে হলো
~ কি মানে
~ এইটা কি করছো

~ নতুন মোবাইল যখন পেয়েছি তখন পুরানো টা রাখবো কেন, তাই এটা অফ
~ তাই?
~ হ্যাঁ, এখন বলেন থ্যাংকস কিভাবে নিবেন
~ দিবে তো?
~ চেষ্টা করবো

তাওহীদ আস্তে আস্তে তনুর দিকে অগ্রসর হয়। তাওহীদের এমন আচরণে তনু একটু ভড়কে যায়। তাওহীদ একদম তনুর কাছে চলে আসে, একদম কাছে। তনুর কপালে আলতো করে একটা চুমু খায়। তারপর তনুকে আস্তে করে শুইয়ে দেয় তাওহীদ।

পাশে থাকা ল্যাম্পশেড তা অফ করে দেয় তাওহীদ। তনু না পারছে কিছু বলতে না পারছে কিছু করতে। শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে ওর। তাওহীদ এইভাবে এত কাছে চলে আসবে তা ভাবেও নি তনু। দুইজনের মাঝে এক ইঞ্চি ফাঁক মাত্র। তনু নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। হোক না আজ তাদের মিলন ক্ষতি কি? স্বামীর ভালোবাসা কে না চায়? তনুও যে হারাতে চায় নিজেকে তাওহীদের মাঝে।

কিন্তু হঠাৎ করেই তাওহীদের ফোন চলে আসে। আর তাওহীদ তনুর দিকে তাকিয়ে থাকে, তনুও তাওহীদের দিকে তাকিয়ে আছে।

~ কাজ টা কি ঠিক হলো
~ দেখুন না কে কল দিয়েছে

তাওহীদ ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
আর তার একটু পরেই তনুর নতুন মোবাইলে একটা ম্যাসেজ টোন বেজে ওঠে। মোবাইল হাতে নিয়ে ম্যাসেজ টা অন করেই তনুর চোখ বেয়ে আপনা আপনি পানি পড়তে থাকে। তারতারি ম্যাসেজ টা ডিলিট করে ফোন টা সাইলেন্ট করে পাশে শুয়ে পড়ে তনু। প্রায় আধা ঘন্টা পর তাওহীদ বারান্দা থেকে এসে চুপচাপ বিপরীতমুখী হয়ে শুয়ে পড়ে। আর তনু অজানা ভয়ে কুকড়ে বালিশ কামড়ে পড়ে রয়। বার বার ম্যাসেজ টা চোখের সামনে ভাসছে তনুর। এরপর কি হবে? কি হবে এরপর?


পর্ব ১২

দিন গুলো ভালোই কাটছিল। তনু সংসারে মন দিয়েছে। তাওহীদ এখন একটু স্বাভাবিক। আর ওইদিকে তনুর পরিবার টাও অনেক টা স্বাবলম্বী হয়েছে।
রুমেল অফিসে মন দিয়ে কাজ করছে, আর জাহিদ তো আছেই সব গুছিয়ে নিচ্ছে। তাওহীদ একের পর এক প্রজেক্ট টেন্ডার হাতে নিয়ে নিচ্ছে। মাহবুব গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি আরো বড় হয়েছে কয়েকদিনের মধ্যেই।

এরই মাঝে একদিন তাওহীদের বাহিরে যাওয়ার। সুইজারল্যান্ডের ক্লাইন্টদের হাত করতে হবে তাদের। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাজ করছে তনিমা ইন্ডাস্ট্রি। তাওহীদের এই টেন্ডার লাগবেই। রাত দিন এক করে দিচ্ছে সে এই টেন্ডার টার জন্য। তাওহীদকে এইভাবে দেখে রাবেয়া বেগম এবং মাহবুব সাহেব অনেক খুশি। তাদের ছেলে এখন সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠেছে।

অপরদিকে তনু, যেই কারনে নাম্বার চেঞ্জ করা কিন্তু সেই দোটানা তার পিছু ছাড়ছে না। ফোন ম্যাসেজ সব আসছে তার কাছে, না সে ফোন রিসিভ করছে আর না সে ম্যাসেজ এর রিপ্লাই দিচ্ছে। সব কিছুর মাঝে একটা প্রশ্ন, নতুন নাম্বার টা পেলো কিভাবে। এটা তো শুধু তাওহীদের জানার কথা কারন মোবাইল এবং সিম কার্ড ও নিজের হাতে কিনেছে। হিসাব মেলাতে পারছে না তনু।

ভাবনার মাঝে ছেদ পড়ে তাওহীদের ফোনে। অফিসে থেকে ফোন করেছে সে। হঠাৎ এই সময় ফোন আসায় একটু নড়ে চড়ে বসে তনু। আজ কাল বড্ড বেশি ভয়ে থাকে মেয়েটা। ইদানিং তাওহীদ তনুর ভালো টেক~কেয়ার করে। ফোন দেয়া, খোজ খবর নেয়া সব টাই করে কিন্তু মাঝে মাঝে এমন বিহেভ করে যাতে তনু তার কেউ নয়।

আর কাছে আসার ব্যাপার টা? যত বারই কাছে আসার চেষ্টা করেছে ততবারই কিছু না কিছু হয়েছে। হয় ফোন চলে আসছে আর না হয় মাইশা ডেকেছে না হয় তনু তার বাবার বাসায় ছিল। ব্যাপার টা বেশ মজার ছিল ওদের জন্য।

~ আসসালামু আলাইকুম
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, কি করেন ম্যাডাম
~ বসে আছি
~ কোথায়?

~ বারান্দায়
~ খেয়েছো
~ হুম, আপনি
~ হ্যাঁ
~ এখন হঠাৎ কল দিলেন
~ এমনি, আচ্ছা রাখি
~ আচ্ছা

সেইদিন রাত ১২ টার উপরে বেজে গেছে কিন্তু তাওহীদ বাসায় ফিরে নি। তনু বুঝে গেছে তাওহীদ কোথায় গেছে। তবুও চুপ করেই ছিল। রাবেয়া বেগম এবং মাহবুব সাহেব ও বুঝে ফেলেছে তাওহীদ কোথায় গেছে।

রাত ৩ টা, বাড়ির দরজার কাছে এসে চিল্লাপাল্লা শুরু করে তাওহীদ। প্রচুর পরিমাণ নেশা করা অবস্থায় ক্লাব থেকে ফিরেছে সে। মাতলামোর শেষ পর্যায়ে চলে গেছে সে। কাজের ছেলে আর ড্রাইভার মিলে ধরাধরি করে উপরে এসে দিয়ে যায় তাকে। তনু বুকে পাথর রেখে দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে। আবল তাবল বকছে নেশার ঘোরে। ড্রাইভার আর কাজের ছেলে সুমন চলে গেলে তনু দরজা লাগিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে করে তাওহীদের পায়ের কাছে যায় তনু। জুতা জোড়া খুলে রাখে তখনই বুক ফেটে কান্না চলে আসে তনুর। তাওহীদের পা জোড়া আঁকড়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয় তনু

~ ভালোই তো ছিলে তাওহীদ, ভালোই তো ছিলে আবার কেন এই সব ছাইপাঁশ গিলেছো, কেন এত কষ্ট দিচ্ছো আমায়, তুমি কি বুঝো না কত টা ভালোবেসে ফেলেছি আমি তোমাকে। কেন আমায় এত কষ্ট দিচ্ছো। আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি তাওহীদ শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি। আমায় কেন কাছে টানো না তুমি, কেন ভালোবাসো না আমায়। কিসের কষ্ট তোমার তাওহীদ? কিসের জন্য এত মদের ভিতরে চুবে আছো তাওহীদ, কেন? এমন না করে আমায় মেরে ফেল তাওহীদ মেরে ফেল আমায়।

কাদতে কাদতে তনু তাওহীদের পায়ের কাছেই ঘুমিয়ে যায়। ভোরের আলো ফুটে উঠার পর তনুর ঘুমের রেষ কাটে। তনুর সকাল টা হয় তাওহীদের পায়ের কাছে। লাফ দিয়ে উঠে নিজেকে ফ্লোরে আধো বসা অবস্থায় পায় তনু। ঘড়িতে তখন ৫ টা ২৭ বাজে। তারাতারি ওযু করে নামাজে দাঁড়ায় তনু।

নামাজ পড়ে তনু মোবাইল টা হাতে নেয়, লক টা খুলে দেখে ম্যাসেজ আসছে। ম্যাসেজ বক্সে ইন করে দেখে একটা ম্যাসেজ। ম্যাসেজ টা পড়ে তনুর চোখ উপরে উঠে যায়। তারাতারি ম্যাসেজ ডিলিট করে চোখে মুখে পানি দেয় তনু। সারারাত কান্নার জন্যে চোখ মুখ ফুলে আছে তনুর।

পরদিন তাওহীদের ঘুম ভাঙে বেলা ৩ টায়। মাথার যন্ত্রণায় ছটফট করছে তাওহীদ। তনুর এতদিনে অভ্যাস হয়ে গেছে এসবের। তাওহীদের বেডের পাশে আগে থেকেই লেবুপানি রেখে গেছে তনু। তাওহীদও বুঝে গেছে এইটা তনুর কাজ।

নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিলো তার। বার বার নিষেধ করার পরেও কাল সে drugs নিয়েছে, ড্রিঙ্ক করেছে। তনু কি ভাববে না ভাববে তা নিয়ে মাথা ব্যাথা আরো বেড়ে যায় তাওহীদের। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে তিনটা বেজে গেছে। নিজের কপাল চাপড়াচ্ছে এখন নিজে আজ মিটিং ছিল অফিসে আর আজকেই সে এইখানে এইভাবে। তারাতারি বাবাকে ফোন দেয়।

~ হ্যালো বাবা
~ বলে ফেল
~ মিটিং এর কি হলো?
~ হয় নি

~ what
~ মিটিং ক্যান্সেল হয়ে গেছে
~ কিন্তু
~ রাখো তুমি ঘুমাও, আবার রাতে ক্লাবে চলে যেও, কেমন?

মাহবুব সাহেব রাগে লাইন কেটে দেয়। তাওহীদ বুঝে যায় আর তাতে সে এপ্রিশিয়েটও করে সে যা করেছে রাগ করা টাই স্বাভাবিক। তবে এই মিটিং টা খুব জরুরী ছিল। সুইজারল্যান্ডের ক্লাইন্টদের জন্য মিটিং টা খুব জরুরী। সিচুয়েশান যখন সে নিজেই নষ্ট করেছে তখন সে নিজেই ঠিক করবে। তাই তারাতারি করে নিজেই সব ব্যবস্থা করে।

শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে তনুকে ডাকে তাওহীদ। সারাদিনেও মেয়েটা দাতে কুটো টিও কাটে নি। তার উপরে চোখ মুখ ফোলা ফোলা। এমতাবস্থায় কিভাবে যাবে সে তাওহীদের রুমে। তাই কাজের মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়েছে তাওহীদের কাছে।

~ ভাইয়া কিছু লাগবো
~ তোকে ডাকছি আমি
~ নাহ মানে
~ তোর ভাবি কই, তাকে ডাক বল আমি ডাকছি, যা এখান থেকে

কাজের মেয়েকে ধমক মেরে তনুর কাছে পাঠিয়ে দেয় তাওহীদ। তাওহীদের ডাকে তনু রুমে আসে। তনুকে দেখে কিছু টা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে তাওহীদ।
ইচ্ছে করেই তনুকে বেশ কাছে নিয়ে আসছে তাওহীদ। তনুও চুপচাপ আছে। তাওহীদ তনুকে এক হাত দিয়ে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। কোমড়ের পিছনে হাত দিয়ে একদম নিজের সাথে পেচিয়ে নেয় তাওহীদ।

~ চোখ মুখ এত ফোলা কেন?
~ কই না তো
~ রেগে আছো
~ নাহ

~ সরি, আসলে কাল ক্লাবে গিয়ে একটু বেশিই করে ফেলেছিলাম
~ এ আর নতুন কি
~ তনুশা টাই টা বেধে দাও তো
~ নিজেই বাধুন

~ নাহ আজ তুমি বাধো, আর তারাতারি করো, ৪৫ মিনিটের মধ্যে আমাকে অফিসে যেতে হবে, ক্লাইন্টদের আসতে বলেছি
~ এখন মিটিং হবে?
~ ইয়েস মিসেস তাওহীদ
~ ওহ, খাবেন না?
~ নাহ, অফিসে কিছু একটা খেয়ে নিব

~ অল্প সময় লাগবে, আমি লাঞ্চ রেডি করতেছি, আপনি খেয়ে যান
~ নাহ, লেট হয়ে যাবে, তোমার শ্বশুড় রেগে ফুলে আছে বুঝোই তো
~ রাগ করার মত কাজ করেন কেন

~ সরি বললাম তো, আর হবে না
~ এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন
~ এমনি, তুমি তোমার কাজ করো

তনু তাওহীদের টাই বেধে দেয় আর আর তাওহীদ তনুর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। কিসের যেন একটা ক্লান্তি ওর সারা মুখে, কিসের যেন ভয়, হাত টাও কাপছে ভিষণ রকম।

~ কি হলো, এমন করছো কেন
~ কই কিছু হয় নি তো
~ সিউর তো?
~ হুম
~ ওকে হাসি

এই বলে আলতো করে তনুর কপালে একটা কিস করে তাওহীদ। তারপর বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। ছোট ছোট স্পর্শ গুলো বেশ ভালো লাগে তনুর। একটু হলেও শান্তি দেয়। কিন্তু বেশি দিন কি আর টিকবে এই শান্তি গুলো। ভালো লাগা গুলো কি আর স্থায়ী থাকবে তো?

তাওহীদ বের হয়ে যায় আর তনু দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে তাওহীদকে দেখতে থাকে। গাড়িটা যত দূর অবদি যাচ্ছে তনু তাকিয়েই আছে।
হঠাৎ করে আবার ফোন তনুর ফোনে। ফোন টা বার বার বেজে যাচ্ছে আর তনু ভয়ে ভয়ে ফোন টার দিকে তাকিয়ে থাকে তনু।


পর্ব ১৩

সেইদিনকার মত সব নিজে হ্যান্ডেল করে নেয় তাওহীদ। ১০ তারিখ সুইজারল্যান্ডে ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং তার। প্রজেক্ট টা তার চাই তাই সব রকম ব্যবস্থা করে ফেলেছে সে। ৮ তারিখ সুইজারল্যান্ড যাবে সে। সব ব্যবস্থা জাহিদ করবে। তাওহীদের সাথে জাহিদ ও যাচ্ছে।

রাতে সবাই খাবার টেবিলে। মাইশা তো খুব পিছনে লাগছে তার ভাইয়ের। ইসসস সেও যদি যেতে পারতো তাহলে ভালোই হতো। তনুর মুখে কথা নেই চুপচাপ সার্ভ করে দিচ্ছে সবাইকে। তাওহীদ বার বার তনুর দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু তনুর সেদিকে কোন হুশ জ্ঞান নেই। মাহবুব সাহেব এদিক সেদিক তাকিয়ে রাবেয়া বেগম কে ইশারায় কি যেনো একটা বুঝিয়ে দিলেন।

~ তাওহীদ
~ হ্যাঁ মা বলো
~ সুইজারল্যান্ড যাচ্ছিস কবে
~ ৮ তারিখ সকাল সাড়ে ১০ টায় ফ্লাইট

~ ফিরবি কবে
~ ১৫ তারিখ, কেন মা
~ তাহলে তনুকেও তো নিয়ে যেতে পারিস

কথা টা শুনে তনু অনেকটাই চমকে যায়। শ্বাশুড়ি এমন একটা কথা বলবে বুঝতে পারে নি সে। তাওহীদও বেশ অবাক একবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছা একবার তনুর দিকে তাকাচ্ছে। তনুও বেশ চিন্তিত হয়ে বলল

~ মা, উনি তো ওইখানে ঘুরতে যাচ্ছেন না, কাজে যাচ্ছেন আর আমি গিয়ে কি করবো সেখানে
~ ও যেমন কাজে যাচ্চে তেমনি সেই ফাঁকে হানিমুন টাও সেড়ে ফেলবে
~ কিন্তু বাবা
~ কোন কিন্তু নয় বউমা, তাওহীদ

~ হ্যাঁ
~ বউমাকেও নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো, আর এতে তোমার আপত্তি নেই তো
~ নাহ, বরং এন্টারটেইনমেন্ট হয়ে যাবে
~ তাহলে তুমি জাহিদ এবং বউমা তিন জন যাচ্ছো, এটাই ফাইনাল
~ আচ্ছা

সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে যায়। তনুও ইদানিং এত পরিমান চিন্তিত থাকে যে সে নিজের করা কাজ টাও ভুলে যায়। ওই একটা ফোন কল সব শেষ করে দিচ্ছে।
তনু নিজের রুমে যায়, তাওহীদ প্রেজেন্টেশন রেডি করছে। প্রজেক্ট টা ওর লাগবে তাই কাজ করছে।
আর তনু ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।

~ এইখানে দাঁড়িয়ে আছো যে
~ এমনি
~ তুমি কি যেতে চাও
~ নাহ

~ কেন
~ আমি গিয়ে কি করবো
~ কখনো গিয়েছো
~ উত্তরার দিয়াবাড়িতেই যাই নি কখনো আর এটা তো সুইজারল্যান্ড
~ প্যাকিং শুরু করো, হানিমুন টাও ওইখানেই সেড়ে ফেলবো

~ এহহহহহহ
~ এহহহ নয় হ্যাঁএএএএ, আর সুইজারল্যান্ড গিয়ে একটা জিনিস চাইবো দিতে হবে কিন্তু
~ কিহ

~ পরে বলবো, আমি এখন ঘুমাবো কাল কিছু কাজ আছে তারপর তোমার পেপারস গুলোও তো রেডি করতে হবে
গুড নাইট
~ গুড নাইট

তাওহীদকে তনুর বড্ড অচেনা লাগে। কখনো একদম কাছে কখনো একদম দূরে। কখনো একটু ভালোবাসার ছোয়া দেয় আবার কখনো স্পর্শ করতেও ভয় পায়। তাওহীদ এক এক সময় এক এক ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করছে। দিক বিক না পেয়ে আফরোজ কে ফোন করে বসে তনু।

~ হ্যালো
~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম আপু
~ ওয়ালাইকুম আসসালামু, কিরে কেমন আছিস
~ কেমন আর থাকবো, আপু তোমাকে আমার কিছু বলার আছে
~ হ্যাঁ বল না, কি বলবি

তারপর তনু সব বলে দেয় আফরোজ কে। তাওহীদের ড্রিঙ্ক করা, ড্রাগস নেয়া, তনুকে থাপ্পড় দেয়া, ফোন কল গুলা, ম্যাসেজ গুলার কথা সব আস্তে আস্তে বলে দেয় তনু। আফরোজ রীতিমত অবাক হয়ে যায় এইসব শুনে।

~ এত কিছু হয়ে গেছে আর তুই আমায় এখন বলছিস তনু
~ কি করতাম আপু সময় কই বলার
~ তাই বলে গায়ে হাত তুলবে, এইসব কি আমি কালকেই স্যারের সাথে কথা বলবো

~ নাহ আপু কিছু বলতে হবে না বাবা বকা দিছে অনেক।
~ এখন আমার নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে, এমন একজন এর সাথে তোকে বেধে দিলাম
~ আপু তুমি মাধ্যম ছিলা আল্লাহ সব ঠিক করছে, তোমার আর কি দোষ, আর আপু আমার পরিবার টা তো সচল আছে তাতেই আমি খুশি
~ আর তোর নতুন সিমের নাম্বার কিভাবে পেল

~ এটাই আমি অবাক আপু, যার জন্য সিম চেঞ্জ করলাম সেই ফোন ম্যাসেজ নতুন সিমেও
~ তাওহীদ স্যার জানে কিছু
~ নাহ আপু
~ আচ্ছা থাক বলার দরকার নাই

~ আপু শুনো, আমি মে বি ৮ তারিখ সুইজারল্যান্ড যাবো
~ তাই, তাওহীদ স্যারের সাথে?
~ হ্যাঁ আপু, বাবা বললো
~ আচ্ছা যা ঘুরে আয়

~ ভাইয়া কেমন আছে
~ ওয়াসিম ভালো আছে, জব টাও আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো চলছে
~ তাই আপু
~ হুম, শুন না তনু, তোকে একটা কথা বলার ছিল
~ বলো আপু

~ আমি কনসিভ করছি রে
~ সত্যি আপু
~ হুম সত্যি
~ ওয়াও congratulation আপু
~ থ্যাংকস, ভাইয়া কি বলে

~ সে তো মহা খুশি, দোয়া করি তুইও ভালো থাক বোন
~ আচ্ছা আপু রাখি
~ আচ্ছা ভালো থাক
~ আসসালামু আলাইকুম
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম

তনুর মন খারাপ টা কিছু টা হলেও কমে গেছে। আফরোজ এর খবর টায় তনু অনেকটাই খুশি। আফরোজ মেয়েটা অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। বাবা মা মারা যাওয়ার পর বোন আর দুলাভাইয়ের কাছে মানুষ। কিন্তু বোন আর দুলাভাইও যে সময় মত সড়ে দাঁড়াবে কে জানতো? তারপর পড়াশোনা শেষ করা, ভালো জব এর চেষ্টা করা, ওয়াসিমের সাথে পরিচয়, তারপর তাদের শুভ পরিনয়, দুই বছরের সংসার জীবন।

এখন আর সুখের কমতি নেই আফরোজ এর জীবনে। অথচ এই মেয়েটাই এক সময়ে দুঃখের সাগরে সাতরে বেড়িয়েছিল। এখন মা হতে চলেছে, খুব খুশি তনু আজ খুব খুশি ওয়াসিম স্বামী হিসেবে একজন লক্ষ্য হাজার গুন ভালো মানুষ। যেমন তার ব্যবহার তেমন তার কথা তেমন তার চলাফেরা। হোক না অল্প টাকা তাতে কি সুখের তো অভাব নেই। এই হলো আফরোজ আর ওয়াসিম এবং তাদের সুখের ভীতে গড়ে তোলা ভালোবাসার ছোট সংসার।

কথা গুলো মনে করে একটুকরো হাসি ঝলকিয়ে উঠে তনুর মুখে। চোখ মুছে রুমে গিয়ে দেখে তাওহীদে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এক ঠায় তাকিয়ে আছে তাওহীদের দিকে। মানুষ টা বড় অদ্ভুত রকমের। চোখ এক সময় এক কথা বলে। খুব কাছ থেকে দেখতে গেলে একদম বাজে মানুষ সে আর দূরে গেলে মনে হয় এই মানুষ টার মত মানুষ হয় না। তনু বিছানার সাইড ঘুরে তাওহীদের পাশে যায় দাঁড়িয়ে দেখছে মানুষ টাকে সে। খুব বেশি করে মায়া লাগছে তনুর।

খুব বেশি আপন করে চাইছে সে তাওহীদকে। কিন্তু কথায় আছে না ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। আস্তে করে তাওহীদের ডান হাতে একটা চুমু দিয়ে সরে যায় তনু। চুপচাপ গিয়ে বিপরীতমুখী হয়ে শুয়ে পড়ে তনু। চোখে তার হাজারো স্বপ্নের দৌড়াদৌড়ি খেলা। একটা সুন্দর সাজানো সংসার, তাতে ছোট ছোট হাত পা নিয়ে ঘুরাঘুরি করার মত ছোট একটা শরীর। অনেক সুখ আর তাওহীদের ভালোবাসা। সেই আশা নিয়ে চোখ বুজে আসে তনুর।

গত চারদিন ধরে তাওহীদ অনেক ব্যস্ত ছিল। সুইজারল্যান্ড যাওয়ার সব ব্যবস্থা করতে করতে সে ক্লান্ত। তার যে নেশার একটা জগত ছিল সেইটা সে ভুলেই গেছে। এটাই তো তনু চেয়েছিল, এটাই তো চেয়েছিল তাওহীদের বাবা~মা।

আজ বিয়ের ২ মাসের মাথায় তাওহীদ অনেকটাই পালটে গেছে। তনুও এই ফাঁকে তার বাবা মা ভাই বোন দের সাথে দেখা করে এসেছে। এত দূরে যাচ্ছে একবার দেখা করা উচিত বলে সবার সাথে দেখা করে নেয় তনু। প্রয়োজনীয় কিছু এইখান থেকেই কিনে নেয় তনু যাতে তাওহীদ কে ডিস্টার্ব করতে না হয়।

অবশেষে ৮ তারিখ চলে আসে। সাড়ে ১০ টায় ফ্লাইট। ৮ টা ৩৫ বাসা থেকে বের হয়ে যাবে ওরা। মাহবুব সাহেব সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন। জাহিদ এয়ারপোর্টেই আছে। বাসায় তনু আর তাওহীদ সবার থেকে দোয়া নিয়ে বের হচ্ছে,

~ মা আসি
~ আয় মা, ভালো মত থাকবি, আর তাওহীদ ওকে দেখে রাখিস, মেয়েটাকে একা রাখিস না
~ হু

~ শুধু হু না এর অন্যথা যেন না হয় তাওহীদ
~ ওকে
~ আর হ্যাঁ কাজে যাচ্ছিস বলে ওকে ভুকে যাস না
~ ওকে আমার মা জননী সব শুনবো কেমন
~ এই ভাইয়া ভাবির কাছে লিষ্ট দিয়ে দিছি সব আমার লাগবে, মনে যাতে থাকে

~ আরে বাব্বাহ, আমি বিজনেস এর কাজে যাচ্ছি শপিং এর জন্য না
~ মাইশা, সব নিয়ে আসবো কেমন?
~ এই তো, এই না হলে আমার ভাবি, তুই কিরে ভাইয়া
~ আমি তো খুব খারাপ

~ হুর
~ আল্লাহর নাম নিয়ে নাম বাসা থেকে শুধু ঝগড়া করে
~ তাওহীদ সব খবরাখবর জানাইও
~ হ্যাঁ বাবা, আমি প্রজেক্ট পেলে সাথে সাথে মেইল করবো

~ হু, আর বউমা, যদি এই অপদার্থ আবার কিছু করে, জাহিদ কে বলে আমায় ফোন করবা
~ তেমন কিছু হবে না বাবা, দোয়া করবেন
~ ফি আমানিল্লাহ, যাও ঘুরে আসো
~ আসি মা, আসি বাবা
~ যাও মা, ভালো থাকো

বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসে ওরা। গন্তব্যস্থল জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। সেখানে জাহিদও আছে। তনু জানালার দিকে মুখ করে বাহিরে চেয়ে আছে। তাওহীদ দুই একবার তাকিয়েছে তনুর দিকে। তনুর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা অনেক চিন্তিত। হাত গুলো প্রচন্ডরকম কাপছে তার। তাওহীদ এই অবস্থায় হাত টা ধরে নেয় তনুর

~ কি হলো, এত কাপাকাপি কেন
~ না মা,মানে, মানে এই প্রথম অনেক দূরে যাচ্ছি তো তাই এমন লাগছে

~ এত ঘামছো কেন, শরীর খারাপ লাগছে?
~ নাহ নাহ ঠিক আছি আমি
~ সিউর তো?
~ হ্যাঁ একদম সিউর

~ আচ্ছা শুনো, রুমে থাকতে হবে কিন্তু, আমি অফিসের কাজে হয়তো ব্যস্ত থাকবো, অবশ্য ১১ তারিখ এর পরে ফ্রী হবো, বাকি তিন দিন ঘুরাবো তোমায়, চলবে?
~ আপত্তি নেই আমার, শুধু মাইশা মা আর বাবার জন্য একটু কেনাকাটা করতে হবে ওইটুকু সময় বের করলেই হবে
~ শুধু মা বাবা আর মাইশা? নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য কিছু নিবে না?
~ এইগুলা তো আপনার টাকা, আমার পরিবারের কারো তো এই টাকায় হক নেই
~ আচ্ছা আমি তোমার কে হই?

~ মানে
~ আমি তোমার কে? মানে আমাদের সম্পর্ক কি
~ সম্পর্কে আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী
~ তাহলে আমি তোমার পরিবারের কে?

~ জামাই
~ ওরে বেক্কল মেয়ে তাহলে আমি যেহেতু সেই পরিবারের জামাই তাহলে আমার টাকায় তাদের হক থাকবে না তো কি আরেকজনের থাকবে, রাবিশ
~ ওহ
~ এই দুই মাসে নিজের কোন চাহিদার কথাই তো ব্যক্ত করো নি তুমি তনুশা
~ এই দুইমাসে আপনি আমায় আপন করে নেন নি তাওহীদ সাহেব
~ মানে

~ কিছু চাহিদা অপূর্ণই থেকে যায়, যেমন আমার
~ চাহিদার কথা ব্যক্ত করতে ক্ষতি কোথায় তনুশা
~ চাহিদার কথা ব্যক্ত করা লাগে না, চোখের দিকে তাকালেই বুঝে নেয়া যায়

তনুর না বলা ভাষা গুলো তাওহীদ বুঝে নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু খুজে পাচ্ছে না, এত নিষ্পাপ একটা মেয়ে যার কোন চাহিদাই নেই। যে এই দুইমাসে কোন দাবী নিয়ে দাঁড়ায় নি তাওহীদের সামনে। তাকে না জেনে বুঝে এত টা কষ্ট দিচ্ছে সে।

নাহ এর সূরাহ করতে হবে। নিজেকে যখন ওই অন্ধকার জগত থেকে টেনে বের করে আনতে পেরেছে তাহলে সে তনুশাকেও আপন করে নিতে পারবে। তাকে পারতেই হবে কারন তনুশা যে তার অর্ধাঙ্গিনী।
আর অপরদিক তনুর কলিজা শুকাচ্ছে অন্য কিছু ভেবে

অবশেষে গাড়ি এয়ারপোর্টের সামনে দাঁড়ায়। গাড়ি থামার সাথে সাথে জাহিদ এগিয়ে আসে। সব লাগেজ নিয়ে সামনে হাটা শুরু করে দেয়।

~ জাহিদ
~ জ্বি স্যার
~ ওইদিকে সব ঠিকঠাক তো
~ জ্বি স্যার সব ঠিকঠাক আছে
~ ওকে

তারপর ভিসা পাসপোর্ট সব চেক দিয়ে ভেতরে যায় ওরা তিন জন। তার কিছুক্ষন পরেই এয়ারপোর্ট কতৃপক্ষ এনাউন্স করে,
To all the passengers of flight No 2209 are requested to pass the immigration, the fight is ready to Fly Switzerland


পর্ব ১৪

সুইজারল্যান্ড পৌঁছে হোটেলে চেক~ইন করে তাওহীদ সাথে তনু। রুমে গিয়ে একটু দম নেয় তনু। চোখ গুলো কেমন আবছা হয়ে আসছে তনুর। একটু ঘুমালে ভালো হতো। লম্বা জার্নি করে তাওহীদও ক্লান্ত। ১০ তারিখ মিটিং, আগামীকাল কাজের উপর কাজ তার। তাই নিজেকে আজ ফুল রেষ্টে রাখতে তাওহীদ। কোন রকম ফ্রেশ হয়ে তনু বেডে শুয়ে পড়ে। সাথে তাওহীদও।

~ তনুশা শুয়ে পড়লা যে, খাবে না?
~ মাথা ধরে গেছে, কেমন যেন লাগছে মনে হয় ঘুমালে ঠিক হবে।
~ তাই বলে না খেয়ে।
~ আমার এখন ঘুমের দরকার, খাওয়ার না, এক কাজ করুন আপনি খেয়ে আসেন নাহলে।

~ আচ্ছা ঘুমাও তাহলে।
~ আচ্ছা।
~ মাথা কি বেশি ব্যাথা করছে।

~ প্রচুর।
~ আমি কি।
~ না না প্লিজ কিছু করতে হবে না ঘুমাই একটু।
~ আচ্ছা ঘুমাও।

প্রায় কয়েক ঘন্টা পর জাহিদ এসে রুমে নক করে। অনেকটা ইতস্তত হয়েই দরজায় নক করে জাহিদ। স্বামী স্ত্রী রুমে আছে, এইভাবে নক করা কি ঠিক এই ভেবে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে তাওহীদ। তারপর নক টা করেই ফেলে জাহিদ। কয়েকবার নক করার পর তাওহীদ এসে দরজা খুলে।

~ good evening sir
~ evening, কি ব্যাপার জাহিদ তুমি এখন।
~ সরি স্যার ডিস্টার্ব করার জন্য, স্যার মিটিং টার ব্যাপারে কিছু কথা ছিল।

~ আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
~ স্যার কিছু খাবেন না?
~ নাহ জাহিদ এখন আর মুড নেই তুমি গিয়ে সব রেডি করো আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে যাচ্ছি, আর আমার জন্য একটা ব্ল্যাক কফি অর্ডার দিও।
~ ওকে স্যার।

তাওহীদ ডোর লক করে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তনু তখনও ঘুমে প্রায় অনেক্ষন ধরে ঘুমাচ্ছে তনু। তাওহীদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে আছে তনুর দিকে। হাতের টাওয়াল টা এক সাইডে রেখে তনুর পাশে গিয়ে বসে তাওহীদ। ঘুমের মাঝে মেয়েটাকে সত্যি অনেক সুন্দর লাগে। একদম ঘুম পরীর মত। মনে হচ্ছে যেন কত রাত ঘুমায় নি মেয়েটা। ওর মুখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ও কত ক্লান্ত। তাকিয়ে দেখতে থাকে তাওহীদ, হঠাৎ রুমের ল্যান্ডলাইনে কল আসে,

~ হ্যালো।
~ স্যার কফি চলে আসছে।
~ এই তো আমি আসছি, দুই মিনিট।
~ জ্বি স্যার।

শান্ত তনুর দিকে তাকিয়ে মুক্ত ঝরা হাসি দেয় তাওহীদ। আস্তে করে তনুর হাতে চাপ দিয়ে বলে তোমায় আমার প্রয়োজন তনু। সত্যিই তোমাকে আমার বড় প্রয়োজন। তনুর মাথায় হাত দিয়ে তনুকে আদর করে তাওহীদ বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

সুইজারল্যান্ডে গিয়েও দুইজন দুইদিকে হয়ে আছে৷। তাওহীদ ব্যস্ত আর তনু একাকী। বাহিরে অনেক ঠান্ডা টেম্পারেচার ~8 এত ঠান্ডা আর তার উপরে বাহিরে snow fall হচ্ছে যে জমে যাওয়ার মত অবস্থা।
তনু রুমে একা, তাওহীদও ব্যস্ত টেন্ডারের কাজ নিয়ে। জানালা দিয়ে snow fall দেখছে তনু। হঠাৎ রুমের ল্যান্ড~লাইনে কল আসে। কিছুক্ষন ভেবে কল টা পিক করে তনু,

~ হ্যালো
~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, ম্যাডাম কি করে এখন।
~ বাহিরে snow পড়ছে, দেখতেছিলাম।
~ রুম হিটার অন করা আছে তো।

~ হু আছে, আপনি কখন আসবেন।
~ miss করছিলে?
~ ভয় লাগতেছে তাই বললাম।
~ ভয় লাগে?

~ হু
~ হুর বোকা মেয়ে, রুম নাম্বার 502 তে তাওহীদ মাহবুব এর wife আছে পুরা হোটেল জানে, কোন ভয় নেই আর ৪৫ মিনিটের মধ্যে আমি রুমে ইন করবো i promise
~ ওকে
~ শুধু ওকে না, কাবার্ডে দেখ কিছু আছে একটা প্যাকেটে, ওইটা পড়ে রেডি হতে থাকো, তোমাকে নিয়ে বের হবো

~ এই ঠান্ডায় আমি কোথাও যাবো না প্লিজ
~ যেতে হবে, চুপচাপ রেডি হও

~ উফফফফফফ।
~ উফফফফফফ না যা বলছি তাই।
~ বাই
~ এসে যাতে রেডি পাই।

তাওহীদ এই বলে লাইন কেটে দেয়। তনু উঠে গিয়ে কাবার্ড খুলে। দেখে বড় একটা প্যাকেট রাখা আছে। বেশ অবাক হয় তনু তাওহীদ তার জন্য gift রেখেছে। আনন্দ নিয়ে প্যাকেট টা খুলে তনু। খুলে চরম লেভেলের ধাক্কা খায় বেচারি। এ কি এনেছে তাওহীদ তার জন্য।

লেডিস জিন্স উইথ হোয়াইট টি~শার্ট সাথে ব্ল্যাক কালারের লেডিস ব্লেজার, ভারি হ্যান্ড গ্লাবস, জুতা সহ সব নিয়ে আসছে। এই গুলা পড়বে তনু? কিন্তু পড়তে তো হবেই কারন এটা তাওহীদ এর নির্দেশ। এসে যদি দেখে রেডি হয় নাই তাহলে কুরুক্ষেত্র বাধাবে তাওহীদ। তনু নিজেকে সংযত করে ড্রেস~আপ ট্রাই করে।

সম্পূর্ণ রেডি হয়ে আয়নায় দেখছে নিজেকে। ব্ল্যাক জিন্স, হোয়াইট শার্ট, ব্ল্যাক ব্লেজার, ব্ল্যাক হ্যান্ড গ্লাবস, ব্ল্যাক জুতা, সব মিলিয়ে পারফ্যাক্ট লাগছে তনুকে। কিন্তু তবুও যেন কিছু নেই। সব পারফ্যাক্ট এর মাঝেও কিছু যেন নেই। বার বার আয়নায় দেখছে নিজেকে। মিসিং মিসিং মিসিং, কিছু একটা তো মিসিং আছেই।
হঠাৎ কেউ একজন পিছন থেকে ব্ল্যাক কালারের একটা টুপি পড়িয়ে দেয়। তনু লাফ দিয়ে উঠে,

~ কেহ
~ এই মেয়ে, আমি

পিছনে তাকিয়ে তাওহীদ কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তনু।

~ এত ভয় পাও কেন বলো তো
~ হঠাৎ করে এলেন তো?
~ এটারই কমতি ছিল, এখন দেখো একদম পারফ্যাক্ট

তনু নিজেকে আয়নায় আবার দেখে। টুপি টা খুলে চুল গুলো ঠিকঠাক করে আবার টুপি টা পড়ে নেয় তনু।

~ এখন পারফ্যাক্ট, থ্যাংকস
~ একটা কথা বলো তো তনুশা
~ কি

~ তুমি দেখতে এত বাচ্চা বাচ্চা কেন
~ কোন দিক থেকে লাগে বাচ্চা
~ সর্ব সাইড থেকে লাগে
~ তাই?
~ আমার বাচ্চা বউ

~ হুর, একটা কথা বলেন তো
~ বলো
~ কাল এত বড় একটা মিটিং, আর আজ তো ব্যস্ত থাকার কথা তাহলে এখন কেন ঘুরতে যাচ্ছেন
~ কাজ আপাতত শেষ, আর এতো রোমান্টিক ওয়েদার সাথে বাচ্চা বউ, তাই ইচ্ছে হলো ঘুরে আসি

~ আমি বলেছিলাম আমি যাবো না, এমনি ঠান্ডা তার উপরে snow fall
~ হুর বের হলেই দেখবা, অনেক ভালো লাগবে, চলো

দুইজন এক সাথে বের হয়ে যায়। তাওহীদ তো গাড়ি তে বলেছিল যে তাওহীদ ১১ তারিখ এর পরে ফ্রী হবে তাহলে কাল মিটিং আর আজ তনু কে নিয়ে বের হচ্ছে, বিষয় টা একটু কেমন যেনো। তবুও ভালো ঘুরতে তো নিয়ে গেছে তনুকে।

ওরা বের হবার পর পর ল্যান্ড~লাইনে ফোন আসে। কিন্তু রুমে কেউ না থাকায় ফোন রিসিভ হয় নি। ফোন টা বার বার বেজে বেজে কেটে যায়।

তাহলে কি সেই ফোন টা?

লেখিক: আফরোজা

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “তোমায় আমার প্রয়োজন – Bangla Romantic Bhalobashar Golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – তোমায় আমার প্রয়োজন (শেষ খণ্ড) – Bangla Romantic Valobashar Golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *