কি মায়ায় জড়ালে (শেষ খণ্ড) – Valobashar romantic golpo

কি মায়ায় জড়ালে (১ম খণ্ড) – Valobashar romantic golpo: আমার নাতি নাত বউ একটু রোমান্স করলে আপনার এতো সমস্যা কি! বুড়ো কালে এসে শেষে কিনা নাতিনের প্রেম দেখে হিংসা হচ্ছে! এই আপনি চুপ করুন। আপনি আমার আর আমার নাতনি জামাইয়ের মাঝখানে ঢুকচ্ছেন কেন?


পর্ব ২১

সিনানকে কোনো মতে টেনে টুনে দাঁড় করায় বেচারা সেইরকম ব্যাথা পাইছে কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু বলতেও পারছেনা। তবে সিনান আলভীকে কয়েকটা ঝারি দেয়। আলভী সরি বলে পাশের একটা রুমে নিয়ে সিনানকে শুইয়ে দেয় তারপর নিতুকে ডাকে। সিনান আলভীকে বলে দেয় ব্যাথার একটা ঔষুধ আনতে আলভীও দেরি না করে ঔষুধ আনতে বেরিয়ে পড়ে।

দরজা দিয়ে অর্ণিকে ঢুকতে দেখে অভ্র বড় সড় একটা ক্রাশ খেল। আজ অর্ণিকে খুব সুন্দর লাগছে চোখ ফেরাতে ইচ্ছা করছেনা তাও চোখ ফিরিয়ে নিল। অর্ণিকে যে এখনো কঠিন শাস্তি পেতে হবে। ওর সামনে এমন নরম ফিলিংস নিয়ে থাকলে হবেনা।
অভ্র হাসিমুখ করে অর্ণিদের দিকে এগিয়ে যায়। অর্ণি ভেবেছে অভ্র এখন ওর কাছে এসে বলবে তোমায় খুব সুন্দর লাগছে।

অর্ণির ভাবনায় এক বালতি শরবত ঢেলে অভ্র মিম আর নুপূরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে
আহ্ আমার শালি গুলোকে যা লাগছে না! ইশ রে আগে যদি জানতাম আমার শালি এতো সুন্দর হবে তাহলে হবু বউয়ের দিকে তাঁকিয়ে থাকতাম না। এখন কি বুঝেছি জানো?

কি?
আমার জীবনে এই প্রথম আমি একটা বাজে জিনিস চয়েজ করেছি। তাও আবার এমন জিনিস যা কিনা আমাকে সাড়া জীবন বয়ে বেড়াতে হবে।
আহারে খুব কষ্ট লাগছে আপনার এই দুঃখের কথা শুনে। সে যাই হোক আমার বোনটা না হয় অসুন্দর তাও আমাদের ক্ষাতিরে তাকে আপন করে নিবেন।

জ্বী। তোমাদের জন্যই তো আমার সব কষ্ট দুঃখ বিসর্জন দিতে হয়েছে।
এমন দুলাভাই কয়জন পায়? আমাদের ভাগ্য ভালো তাই নারে নুপূর!
একদম ঠিক বলেছিস।

আচ্ছা শালিরা তোমরা অনেকটা পথ এসেছো এবার কিছু ঠান্ডা খাও।
অনেকটা পথ কোথায় এখানে আসতে তো মাত্র আধা ঘন্টা লাগে। এর মধ্যে আবার ঠান্ডাও খাওয়া লাগে নাকি!(অর্ণি মুখ ফুলিয়ে বলল)
আধা ঘন্টার পথ তবে জ্যামের কারণে তো দুই ঘন্টা লেগেছে তা বলবিনা! তোর থেকেও ভাইয়া আমাদের বেশি কেয়ার করে।

(নুপূর)
কি বললি আমি তোদের কেয়ার করিনা?
কোথায় করিস যতো কেয়ার সব তো ভাইয়া করে। ইভেন ফেসবুকে আমার পিকে তো ভাইয়া এক মাত্র মানুষ যিনি কেয়ার রিয়েক্ট দেয় বাকি গুলো লাভ দেয়। (মিম)
আচ্ছা শালিরা শোনো তোমার বোন খাবেনা তোমরা আমার সাথে এসো তো।
আমি খাবোনা কে বলল?

মিম তোমার বোনকে বলে দাও সে মাত্র বলল বেশি পথ তো না তাই নাকি ঠান্ডা খাওয়া লাগেনা। যেহেতু তিনি বেশি পথ দিয়ে আসেনি তাই তার ঠান্ডা খাওয়ার দরকার নেই।
জ্বী ভাইয়া। আচ্ছা ও শুনতে পেরেছে ওকে আলাদা করে বলা লাগবেনা আপনি চলুন তো ঠান্ডা কিছু খাওয়ান।

কোল্ড ড্রিংক্স নাকি আইসক্রীম! দেখো আমি দুটোই খাওয়াবো তো তোমরা কি বলো!
দুটোই খাওয়াবেন আমরা এমন সুযোগ হাতছাড়া করবো নাকি! চলুন তো।

মিম নুপূর অভ্রর সাথে চলে যায় অর্ণিকে না নিয়েই। অর্ণি অভ্রর ইগনোর করাটা নিতে পারছেনা। তাই রাগ করে পাশের সোফাটায় গিয়ে বসে পড়ল। তখন আলভী এলো অর্ণিকে দেখে মুঁচকি হেসে বলল
কি ভাবী মন খারাপ!
না ভাইয়া।

ভাইয়া বলে যেহেতু সম্বোধন করেছেন সেহেতু মন খারাপের কারণটাও বলতে পারবেন।
আসলে ,,,,
হুম বলুন।

আপনার ভাই আমাকে ইগনোর করছে। (কথা বলতে গলা ধরে আসছে)
আরে ভাবী ভাই আপনাকে ইগনোর করছেনা। আপনি কোথাও ভুল বুঝছেন।
না আমি ভুল বুঝছিনা। সব ঠিক দেখেছি, বুঝেছি, শুনেওছি।

আচ্ছা ভাইয়ার এমন করার কারণ কি! আপনি কি কিছু করেছেন? আই মিন কিছু কি হয়েছে আপনাদের মাঝে!
কই নাতো। আর সকালে তো আপনি ছিলেন তখন তো রেগে ছিল পরে তো আমি সরিও বলেছি। তারপর আবার খুশি মনেই আমাকে এই লকেট টা দিল। লকেট দিয়ে যে মুখ ফেরালো আর আমার দিকে তাঁকাচ্ছেনা। আমাকে কোনো প্রকার পাত্তাই দিচ্ছেনা।

আচ্ছা তাহলে আপনি এক কাজ করুন।
কি কাজ!
ভাইয়া ইগনোর করছে তো আপনিও করুন। দেখবেন নিজে থেকে এসে কথা বলছে।
আপনি সিউর?

100% হ্যাঁ না তবে 100% নাও না। (মুঁচকি হেসে)
হা হা হা।
আচ্ছা ভাবী তাহলে আপনি আপনার কাজে লেগে পড়ুন আমিও আমার কাজটা সেড়ে নেই।
অবশ্যই।

অর্ণি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগলো। তখন কিছু একটা দেখে তার মাথায় দুষ্ট বদ্ধি খেলে গেল।
আলভী সিনানকে ঔষুধ টা দিয়ে মাত্র ঐ রুম বের হয়ে আসলো। তখন একটা দরকারি কল আসে মিউজিকের আওয়াজে কিছু শুনতে পারছিল না। তাই ছাদে গিয়ে দাঁড়ালো কথা বলে পেছন ফিরতেই অবাক।

ঐপাশের কোণায় একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাতাসের সাথে সাথে তার খোলা চুল গুলো উড়ছে। মেয়েটার কাছে যেতেই আলভীর নাকে মন মাতানো একটা ঘ্রাণ ভেসে আসে। আর সাথে বুকের বা পাশটায় চিন চিন ব্যাথাটা। আলভীর মেয়েটাকে মিম মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল বললে ভুল হবে ও বুঝেই গেছে এটা মিম। তবে মিম এখন এখানে একা একা কেন?

এই যে এখানে কি করছো?
মিম হঠাৎ কারো কন্ঠ শনে পেছন ফিরে তাঁকালে আলভীকে দেখে ভয়ে পিছিয়ে গেল আলভী সামনে যেতেই মিম আরো পিছিয়ে যায়। যার ফলে পড়ে যেতে নেয় ওমনি আলভী মিমের হাত শক্ত করে ধরে। তারপর রেগে বলে
আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছো কেন? আমি বাঘ নাকি ভাল্লুক! কোনটা তুমিই বলো!
মিম এখনো ঝুলে আছে আলভীকে ভয়ে ভয়ে বলল

প্লিজ আমার হাতটা ছাড়বেন না। আমাকে মারবেন না প্লিজ!
মিমের কথা শুনে আলভী রেগে গেল। মিমের এটা কীভাবে মনে হলো আলভী ওকে মেরে ফেলবে। মিমের কথাটা আলভীকে চরম রাগিয়ে তুলল তাই দাঁতে দাঁত চেপে বলল
তোমার কি মনে হয় আমি ফেলে দিব তোমাকে!
হুম।

ওকে তাহলে ফেলেই দিচ্ছে।
মিমের হাতটা একটা আলগা করলে মিম আলভীর অন্যহাত ধরে ফেলে। আর বলে
এমন করবেন না প্লিজ। আমার ভয় লাগে।
কাকে? আমাকে নাকি মৃত্যুকে!
দুটোকেই।

আলভী এবার মিমের হাত ধরে টান দেয় সাথে সাথে মিম আলভীর বুকের মধ্যে এসে পড়ে। মিমকে আলভী খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আলভীর হঠাৎ এমন জড়িয়ে ধরাতে মিম জমে ফ্রিজড হয়ে যায়। আলভী বলে
তোমার এটা কীভাবে মনে হলো যে আমি তোমায় ফেলে দিব! নিজের প্রাণ ভোমরাকে যদি না রাখি তাহলে আমি বাঁচবো কীভাবে?

আলভীর কথায় মিম অবাক হয়ে যায়। আলভী মিমের কপালে ভালোবাসার পরশ দেয়। মিম কেঁপে ওঠে। আলভী ওর থুতনি ধরে বলে আমি প্রতিটা নিশ্বাসে তোমায় চাই, বিশ্বাসে তোমায় চাই, তোমার দোয়াতে থাকতে চাই, তোমার ভালোবাসার মানুষ হতে চাই, তোমার সবকিছুই আমার চাই। পারছিনা তোমার থেকে দূরে থাকতে। তোমাকে ভুলে থাকাও যে অসম্ভব বলো। কীভাবে পারি তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত কল্পনা করতে! তুমি আমাকে #কিমায়ায়জড়ালে বলোনা!
মিম অবাকের চরম পর্যায়ে। আলভীর মুখ থেকে এমন কিছু হয়তো কখনোই আশা করেনি। আলভী যে তার এতো কাছে সেই খেয়াল ওর মাথায় নেই।

আলিফ মিমকে খুঁজেতে ছাদে আসে। আলভী আর মিমকে এই অবস্থায় দেখে চিৎকার করে বলে ওঠে মিম। আলভীর ডাকে আলভী মিমকে ছেড়ে দেয় ছাড়া পেয়ে মিমও দূরে সরে দাঁড়ায়। আলিফ রাগী চোখে ওদের দিকে তাঁকায় তারপর মিমের সামনে এসে ওর হাত টেনে নিচে নিয়ে যায়।
সবাই বসে আছে মাঝখানে আলভী আর মিম দাঁড়িয়ে আছে। মিম সেই কখন থেকে কেঁদেই চলেছে আর আলভী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে মিমের বাবা বলল

এই মেয়ে তুই আমাদের মুখে কীভাবে পারলি চুন কালি মাখতে! তোর একবারো লজ্জা করেনাই? আমাদের কথা তোর একবারো মনে পড়ে নাই!
বাবা!
কীসের বাবা! ঐ ছেলের সাথে তোর কীসের সম্পর্ক? এই সময়ে একা একটা ছেলের সাথে ছাদে ছি ছি আমার বলতেও লজ্জা লাগছে।

আহ্ দোষ কি মেয়ের একার নাকি! এই অপদার্থেরও দোষ আছে। (আলভীর বাবা)
এই মেয়ের জন্যে আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না। আমার মুখ দেখানোর মতো সম্মান টুকু রাখলো না। ইচ্ছে করছে গলা টিপে মেরে দেই।
আহ সবুজ তুই থাম। (বড় মামা) আচ্ছা এমন করার মানে কি? ব্যাপার তো আমাদের পরিবারের মানুষ ছাড়া বাহিরের কেউ জানেনা। তাহলে মুখ দেখানো আর অসম্মান কথাটা আসছে কেন?

এখন জানেনা পরে জানবে তো।
জানতে দিব না তাহলেই তো হয়।
তাও ওদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরী তো হয়েছে। সেটা!
তাহলে সেটার সমাধানও আছে।

কী সমাধান!
বিয়ে।
বিয়ের কথা শুনে মিম আর আলভী দুজনেই অবাক হয়। তবে আলভী খুশিও হয়। বড় মামার মুখে এমন কথা শুনে আলভীর বাবা বলে
আমার কিন্তু কোনো আপত্তি নেই। এখন বাকিটা ওদের উপর।
ওদের উপর কেন হবে! ওরা যা করেছে তার জন্য এটা মানতেই হবে।

আলভী মিম তোমরা কি একে অপরকে ভালোবাসো?
আলভী বড় মামার কথা শুনে চট করে বলে ফেলে হ্যাঁ। ব্যাস এতেই হয়ে গেল মিমের উত্তরের অপেক্ষায় ছিল না কেউ। মিমের কান্না কারো চোখেই পড়ে নি। বেচারি সব বলার মতো সুযোগ পায়নি তার আগেই জ্ঞান হারায়। সবাই মিলে ঠিক করে অভ্র আর অর্ণীর সাথে সাথে মিমের বিয়েও দিয়ে দিবে আলভীর সাথে। কারণ এখন আর কোনো কিছু বাড়াতে চায় না।


পর্ব ২২

অর্ণি তুই বিশ্বাস কর আমাদের মধ্যে সত্যি কোনো সম্পর্ক নেই।
সেটা আমাকে আগে বলিস নি কেন! এখন বলে কোনো লাভ নেই। যখন বলার ছিল তখন বলিস নি এখন বলেছিস। যদি কয়েক ঘন্টা আগে বলতি তাহলেও হতো। চল এখন হলুদের জন্য রেডী হও। দেখেছিস কি সুন্দর আমার আর তোর বিয়ে একসাথে হচ্ছে। ছোটবেলায় আমি নুপূর আর তুই কতো প্ল্যান করতাম একসাথে বিয়ে হবে আমাদের আমরা একরকম সাজবো। আহ্ তা যে এতো সুন্দর করে পূরণ হবে ভাবতেও পারিনি। তবে নুপূরের জন্য খারাপ লাগছে ওর বিয়েটা আমাদের সাথে হচ্ছেনা। তবে সমস্যা নেই আমাদের কাপল নিয়ে আমরা ওর বিয়েটা ইন্জয় করবো।

অর্ণি আমি আলভীকে বিয়ে করতে পারবোনা।
কেন? ভাইয়া কতো ভালো আর কতো হ্যান্ডসাম। মানছি একটু ভুল করেছে কিস্ করা উচিত হয়নি। আচ্ছা আমাকে অভ্র কখনো ঐভাবে কিস্ করেনি। আমার তো খুব ইচ্ছা ওর ঐ ডার্ক রেড ঠোঁট গুলো ছোঁয়ার। ইচ্ছে তো করে,,,,
তোর ইচ্ছে তুই তোর কাছেই রাখ। আমি মরছি আমার জ্বালায়। লজ্জায় তো বড়দের ওসব বলতে পারবোনা। এসব কথা বড়দের সামনে বলা তো অসম্ভব। এখন আমি কি করবো! ঐ শয়তানটাকে বিয়ে করবোনা আমি। কিছুতেই না।

দেখ এখন আর কোনো উপায় নেই। বড়রা যখন বলেছে অবশ্যই হবে। তাছাড়া আমাদের আলিফ ভাই নিচে নেমে যেই সিনক্রিয়েট করেছে আমার প্রথমে বিশ্বাস না হলেও পরে একটু মনে হয়েছিল তোদের মধ্যে চলে।
ঐ আলিফরে আজ জুতো পেটা করবো।
আলিফ তোর বড় সাবধানে কথা বল।

আলিফ তো তোরও বড় তুই আলিফ বলছিস কেন?
মিমের পাল্টা প্রশ্নে নুপূর থতমত খেয়ে যায়। তারপর বলে
আরে আমি বলতেই পারি।
কেন তুই পারবি কেন?

আমি পারবো হাজার বার পারবো। তুই চুপ কর আর যা গিয়ে রেডী হয়ে আয়। এমনেও অনেক টাইম নষ্ট করেছিস আর করিস না। আমার মেকআপ নষ্ট হতে চলেছে সো প্লিজ গো। (হাত জোড় করে)
হুম চল তো মিম।

অর্ণি আর নুপূর মিমকে একটা লেহেঙ্গা পড়িয়ে দেয়। গোল্ডেন আর হলুদ সংমিশ্রণের। খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় কারণ আগের সাজ তো কান্না করে নষ্ট করেছে। মিমের যখন জ্ঞান ফিরে তখন পাশে অর্ণি আর নুপূরকে পায়। ওরা জিজ্ঞেস করতে সব সত্যি বলে দেয় ওদেরকে। তারপর শুধু কান্না করে। অনেক কষ্টে অর্ণি ওকে চুপ করায়।

আলভীকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে অভ্র বলে
আরে চুপ করে আছিস কেন? আজ তো তোর গায়ে হলুদ যাকে চাস তাকে পেতে চলেছিস। এমন মুখ গোমড়া করে রেখেছিস কেনরে?
অভ্র মিম কিন্তু আমাকে ভালোবাসেনা।
হোয়াট!
ইয়েস ব্রো।

তারপর আলভীও সবটা অভ্রকে খুলে বলে আর অভ্র মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। আলভী ওর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাঁকায় অভ্র নিজেকে সামলে বলে
এই মুহূর্তে বাবা আর ফুফাকে কিছু বলা যাবেনা। তাছাড়া মিমের চরিত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে। যেহেতু তুই ওকে ভালোবাসিস তাই আমি বলছি ওকে তুই আগলে রাখিস। যা হওয়ার হয়েছে এতে কারো কোনো হাত নেই তুই ওকে সামলে নিস। চল নিচে সবাই ওয়েট করছে।

হুম।
অভ্র আলভীকে নিয়ে নিচে চলে যায়। তারপর সবাই হলুদ দিয়ে দেয় ওদের। মিম আলভীর দিকে একবারো তাঁকায়নি আলভী শুধু মিমের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ছিল। তবে অভ্র আর অর্ণি খুব মজা করেছে। একজন আরেকজনকে হলুদ লাগিয়ে দেয়। অর্ণি যখন সবাই হলুদ দেওয়া শেষ করে তখন হাটতে হাটতে গার্ডেনে যায়। তারপর সেখানে খোলা বাতাস উপভোগ করে। তখন কোথা থেকে অভ্র এসে অর্ণির পুরো মুখে হলুদ লাগিয়ে দেয়। অর্ণি রাগী চোখে অভ্রর দিকে তাঁকাতেই অভ্র ওকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় তারপর নিজের গাল অর্ণির গালে ছোঁয়ায়। তারপর অর্ণির দিকে তাঁকিয়ে বলে
আই লাভ ইউ।

বাট আই হেইট ইউ।
কেন? আমি কি কিছু করেছি বাবু!
হুম করেছেন বৈ কি!
কি করেছি!
এই যে আমার গালে হলুদ দিয়ে ভরিয়ে দিলেন আমার সব সাজ নষ্ট করে দিলেন।

আহ্ বাবু তুমি শুধু তোমার সাজ দেখছো আমার ভালোবাসাটা দেখছো না!
তোর ভালোবাসা তুই তোর কাছে রাখ। আমাকে ইগনোর করেছিস না! এবার দেখাবো তোকে কত ধানে কত চাল।
এই তুই তুকারি করছো কেন?
কারণ তুই এটার যোগ্য।

অর্ণি অভ্রকে ভেঙচি কেটে চলে যায়। অভ্র হাবুল কাকুর মতো সেদিকে তাঁকিয়ে থাকে।
অর্ণি দরজার সামনে এসে দেখে আলিফ নুপূরকে বা হাতে জড়িয়ে ডান হাতে হলুদ ছোঁয়াচ্ছে। আর নুপূর ছোটার চেষ্টা করছে। আলিফ নুপূরকে বলে
এই মেয়ে এমন করছিস কেন? আমাকে দেখলে তোর ছোটা ছোটি শুরু হয় কেন? আমি কি কোনো হিংস্র প্রাণী!
তার থেকেও কম কিছু নাকি!

অর্ণির গলা শুনে আলিফ নুপূরকে ছেড়ে পেছন ফিরে একটা ঝটকা খায়। আলিফকে কিছু বলতে না দিয়ে অর্ণি বলে
সবাইকে বলবো নাকি আলিফ ভাই!
নুপূর এবার অর্ণির সামনে এসে কাঁদতে থাকে আর বলে এসব কিছুই না। আলিফ চুপ করে থাকে তারপর অর্ণি যখন বলে বড় মামাকে বলবে তখন ও দৌড়ে যায় আর বলে এই যাত্রায় মাফ করতে। অর্ণি বলে আজ না হয় কিছু বললাম না পরে কিন্তু আস্ত রাখবোনা।
আজ বিয়ে তবে সকাল থেকে অভ্রর কোনো খোঁজ নেই। শুধু অভ্র না আলভীকেও পাওয়া যাচ্ছেনা।


পর্ব ২৩

এই অভ্র আর কতোক্ষণ বসে থাকবি এবার তো আয়।
না আমি যাবো না তোর যাওয়ার হলে যা।
দেখ এমন করিস না সবাই জানলে সমস্যা হবে।
হুশ। কেউ জানবেনা রে বলদ।

অভ্র অতিরিক্ত করছিস কিন্তু এবার। (বেশ রেগেই বলল আলভী)
আমি বেশি করছি নাকি ও বেশি করছে! কাল রাত থেকে আমাকে ইগনোর করছে। ইভেন একটু আগে মেসেজ দিয়ে বলছে বিয়ে করবেনা। এগুলো কি ছেলে খেলা নাকি!
তো আমার উপর রাগ ঝারছিস কেন? ভাবীকে গিয়ে বল।

হ্যাঁ বলবো বলার জন্যই তো এখন ওদের বাড়ির গেটের সামনে লুকিয়ে আছি। ওর কি আমার সাথে এখন এমন লুকোচুরি খেলতে ইচ্ছা করছে?
সেটা তুই ভাবীকেই জিজ্ঞেস কর। আমার মাথা আর খেয়ে ফেলিস না।
পেয়ে গেছি।
কি?

একটা আইডিয়া পেয়েছি। আচ্ছা শোন তুই মিমকে একটা কল কর।
আমি!
হ্যাঁ তুই। কেন কোনো প্রবলেম আছে?
অভিয়েসলি। তুই ঐ রণচন্ডীকে কল করতে বলছিস! এমনেও আমার উপর রেগে আছে এখন যদি কল দেই জানিনা কি হবে। তাছাড়া ওকে কল দিব কেন?
কাজ আছে।

কি কাজ!
তুই ওকে বল একটু অর্ণিকে নিয়ে গার্ডেনে আসতে।
দেখ তোর প্ল্যানটা বুঝে গেছি কিন্তু মিম আমার কথা শুনবেনা।

তাহলে আর কি আমাকেই ফোন করতে হবে। তবে ওরা যখন আসবে তখন তুই মিমকে অর্ণির থেকে যে করেই হোক দূরে নিয়ে যাবি। বুঝেছিস!
আচ্ছা। তবে এখানে তো অনেক মানুষ আছে।
আরে বেশি কোথায় চার পাঁচ জন তাও আবার ওদের পরিবারের কেউ না। সো টেনশন করার প্রশ্নই আসেনা।
ওকে।

অভ্র কিছুক্ষণ দম নিয়ে মিমকে ফোন করে। দুই বার রিং হওয়ার পর রিসিভ করে বলে
কি হলো ভাইয়া হঠাৎ ফোন?
আসলে,,,,
হুম বলুন।
মিম আই নিড ইউর হেল্প।

বলুন কি সাহায্য করতে হবে।
অর্ণিকে নিয়ে একটু গার্ডেনে আসবে!
হুম আসা তো যায়।
মিম ওকে কিন্তু বলোনা যে আমি বলেছি নিচে আসতে।

কেন ভাইয়া!
আসলে ওর জন্য একটা সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছি।
ওহো!(হেসে) আচ্ছা ভাইয়া দুই মিনিট অপেক্ষা করুন।
হুম আর বাড়ির কেউ যাতে টের না পায়!
হুম সাবধানেই আসছি।

আলভী অলরেডী গার্ডেনে ঢুকে পড়েছে। অর্ণিকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে মিম নিচে নিয়ে আসে। অভ্রও এই ফাকে দেওয়াল টপকে ভেতরে ডুকে পড়ে। মিম অর্ণিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণি বারবার বলছে হঠাৎ এখানে কেন এনেছে মিম জবাবে শুধু বলল ইচ্ছা করছে তাই। অর্ণির এবার অসহ্য লাগছে একে তো অভ্রর কোনো খবর নেই তারওপর অযথা এখানে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্রর উপরেও রাগ হচ্ছে শালা একটু রিপ্লাই দিল না মেসেজের! এই তার ভালোবাসা! ছি ছি এরকম ভালোবাসার দরকার নেই। অর্ণি ভেবেছিল এসব কথা বললে অভ্র একটু রাগ দেখাবে ধমকাবে তা না অভ্রর খোঁজ নেই। মনে হচ্ছে এতে ওর কিছু আসে যায় না। অর্ণি এসব ভাবছে আর হাটছে পেছন ফিরে মিম বলবে ওমনি অভ্রকে দেখে ভয় পেয়ে যায়

কি হলো ভয় পেলে!
ককককই না তো!
আমি তো তোমার চোখে মুখে ভয় দেখছি স্পষ্ট।
কি আবোল তাবোল বকছেন! মাথা গেছে নাকি? তাছাড়া আপনি এখানে কেন? আমি বললাম না আমি আপনাকে বিয়ে করবোনা।
তাই নাকি! আচ্ছা কেন বিয়ে করবেনা কারণটা তো বলুন মিস অর্ণি।
আপনাকে আমার ভালো লাগেনা।
তো কাকে ভালো লাগে?

যাকে খুশি তাকে ভালো লাগবে। আপনি কে তা জিজ্ঞেস করার! কে হোন আপনি আমার!
অর্ণির কথা শুনে অভ্র রেগে যায় তারপর অর্ণিকে একটানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। আর দাঁতে দাঁত চেপে বলে
আমি তোমার সবকিছু। তোমার উপর আমার অধিকার সবচেয়ে বেশি। বিয়ের আর কয়েক ঘন্টা আছে এমন পাগলামি করলে তোমার হাত পা ভেঙে আমার সাভনে বসিয়ে রাখবো। বুঝেছো!

অর্ণি কিছু বলেনা মাথা নাড়ায় যার অর্থ হ্যাঁ সে বুঝেছে। এদিকে আলভী মিমের ভুখ চেপে এনে অভ্রদের থেকে দূরে নিয়ে যায়। মিম আলভীকে দেখে রেগে আগুন। আলভীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে
এই বজ্জাত আমাকে এখানে এনেছেন কেন? লুইচ্চা বেটা।
ছি ডিমপাখি। তোমার কি মুখের ভাষা! এমন ভাষা ব্যবহার করলে লোকে আমায় কি বলবে! আমার বউ কিনা অশিক্ষিত কোনো ম্যানার্স নেই তার মধ্যে। এসব শুনলে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবে।

তোর মাথা কেটে দুভাগ হোক কুচি কুচি করে ফেলুক আমার কি!
তোমার কি মানে! তোমারই তো অনেক কিছু। লোকে বলবে ডিমের বরের মাথা কাটা।
এই কী ডিম ডিম করছেন! আমার নাম মিম। নাম ব্যাঙ্গ করা কবিরা গুনাহ্।
ব্যাঙ্গ কোথায় করলাম! আমি তো আদর করে তোমায় এই নামে ডাকি।

আপনার আদর আপনি আপনার কাছে রাখুন। যাক এতোক্ষণে ভদ্রর ফর্মে ফিরে এলে।
এই আপনি কি বলতে চাইছেন আমি অভদ্র!
ধুরো। আমি আবার কখন বললাভ তুমি অভদ্র! প্রত্যেকটা কথা এমন উল্টা নাও কেন? আচ্ছা বাদ দাও তো। আজকে খুব সুন্দর করে বউ সাজবে। তোমাকে দেখে যেন আমি পাগল হয়ে যাই। ঠিক আছে!
হুম আজ এমন সাজ দিব না যে পাগল হয়ে পাগলের বড়টাও হয়ে যাবেন।

পাগলের বড়টা আবার কি!
সেটা হলেই দেখবেন।
আলভী!
অভ্রর ডাকে আলভী মিমের থেকে সরে এসে অভ্রর সনে দাঁড়ায়। ইশারায় বলে হয়েছে কিনা অভ্র বলে হয়েছে। তারপর আলভী মিমকে চোখ টিপ দিয়ে চলে যায়।
বাড়িতে গেলে সবাই অনেক প্রশ্ন করে তখন ওরা বলে যে ওরা সকালে হাটতে বের হয়েছে। অবশ্য কেউ ওদের কথা বিশ্বাস করেনা। তবুও আর এই নিয়ে চথা উঠায় না।

পর্ব ২৪

অর্ণি বধূবেশে বসে আছে আয়নার সামনে। আজ সেই মানুষটিকে পেতে চলেছে যাকে ও সবসময় চেয়ে এসেছে। একটা মেয়ের জন্য এর থেকে খুশির আর কি আছে! অর্ণির মুখে হাঁসি থাকলেও মিমের মুখে বিষাদের ছায়া স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আলভীকে তো ওর কোনো কালেই ভালো লাগেনি। তবে হ্যাঁ প্রথম দেখায় ক্রাশ ঠিকই খেয়েছে। তবে পরে তার কার্যকলাপের জন্য চোখের সামনে দেখতেই পারেনা। আজ ঐ ছেলের সাথেই বিয়ে হচ্ছে যার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছে ও। এখনো তা-ই চায় তবে এখন যে আর সম্ভব নয়। সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। সংসার জীবনে সুখী হতে পারবে তো! এই সব কিছু ওর মনে কাটার মতো বিঁধছে।

তোদের আমার জন্য একটুও খারাপ লাগছেনা!
পাশ থেকে নুপূরের কথা শুনে ভ্রুঁ কুঁচকায় অর্ণি আর মিম। অর্ণি নুপূরকে উদ্দেশ্য করে বলে
কেন রে?

ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেছি তিনজনের বিয়ে একসাথে হবে। আমাদের জামাইগুলো ভাই ভাই হবে। তোদেরটা ঠিক আছে তবে আমার! আমার তো হলো না।
আহারে এই নিয়ে মন খারাপ! থাক আমি তোর সাথে কাব্য (বলেই জিভ কাটলো এটা ও কি বলে দিল কাব্য ভাইয়ের তো বউ বাচ্চা আছে। )
ছি অর্ণি তুই শেষ মেষ কাব্য ভাইয়াকে টেনে আনলি!
আসলে ভুলে বলে ফেললাম। তুই চিন্তা করিস না ঐ বাড়িতে গেলে অভ্রর অবিবাহিত ভাইয়ের খোঁজ করবো। যদি পাই তো ব্যাস হয়ে গেল। তিনজনের বরেরা ভাই ভাই।

আচ্ছা দেখিস কিন্তু।
হুম দেখবো।
এই মিম এমন চুপ করে আছিস কেন? মন খারাপ নাকি বাসর রাতে কি করবি তার প্ল্যান করছিস!
ছি নুপূর। এমন নিচু মন মানুষিকতার কথা বলছিস কেন? জানিস না আমি এসব পছন্দ করিনা!
এতো ক্ষেপছিস কেন রে? অতিরিক্ত করছিস তুই। এমন দিনে তো কতো মজা করা হয়।

কেমন দিন! আজকের দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন বাজে দিন অশুভ দিন। এই দিনটা কখনো না আসলেও হতো। ঐ আলভীর জন্য আজ আমার এসব হলো ঐ শালা মরুক।
মিম! এসব কোন ধরনের? ভাইয়ার মৃত্যু কামনা করতে তোর একবারো মুখে বাঁধলো না! একটু পর যে মানুষটা তোর জীবন সঙ্গী হবে তুই তার! ছি মিম। (অর্ণি রেগে তাচ্ছিল্য মাখা গলায় বলল)
থাক অর্ণি যে এখনো এসব বুঝে নাই তাকে আর বুঝিয়ে লাভ নেই।
হুহ।

ওদের কথায় মিমেরও মনের মধ্যে অনুতপ্ততা ভর করলো। আসলে ও তো সত্যি চায় না আলভীর খারাপ কিছু হোক। ওর ফসকে বেরিয়ে গেল। নিজেকে ইচ্ছা মতো গালি দিতে থাকলো।
অভ্র আলভী পাশাপাশি বসে আছে। তাদের সামনে পর্দা দিয়ে রেখেছে। পর্দার ওপাশে অর্ণি আর মিম। অভ্রকে কবুল বলতে বললে ও একবার তার মা বাবা আরেকবার ওপাশে থাকা অর্ণির ছায়ার দিকে তাঁকালো। তারপর কবুল বলল। আলভীকে বলতে বললে গড় গড় করে বলে দেয়। তাতে সবাই খুব হাঁসা হাঁসি করে। আলভীও কিছুটা লজ্জা পায়।

অর্ণি আর মিম কবুল বলার সময় খুব কেঁদেছে। ওদের কান্না দেখে বেচারি নুপূর ও ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিল। আলিফ তা দেখে এগিয়ে এসে বলল
ঐ ফইন্নি কাঁদছিস কেন? দেখছিস না তোর মেকআপ নষ্ট হচ্ছে। আর তাতে তোকে আস্ত ডাইনি লাগছে।

কি আমাকে ডাইনি লাগছে! এতো বড় অপমান!(রেগে)
তো বড় অপমানই তো করবো। আমি আবার ছোট খাটো পছন্দ করিনা যেমন তুই। দেখ 5 ফুপের লিলিপুট আর আমি 6 ফুট বডি বিল্ডার।
তোমার মাথা। একটা আস্ত জিরাফ আর দেখতে পুরো হনুমান। দেখো তোমার বিয়ে হবেনা। আর যার সাথে বিয়ে হবে সে ছেড়ে চলে যাবে।
নুপূরের কথাটা শুনে মুহূর্তেই আলিফ রেগে আগুন হয়ে গেল। নুপূরকে টেনে একটা রুমে নিয়ে দরজা লক করে দিল। নুপূর ভয়ে ভয়ে বলল
কি হয়েছে ভাইয়া! এমন করছো কেন?

আলিফ ওর হাতের বাহু চেপে ধরে বলল
আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা তুই ভুলেও ভাববিনা। মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিব।
আমি আবার কখন বললাম আমি ছেড়ে যাবো। আমি তো বলেছি তোমার বউ যাবে। তাছাড়া আমি কি তোমার বউ নাকি!
হতে কতোক্ষণ!

মানে!
তোর এতো মানে বুঝতে হবেনা। আর শোন এখান থেকে বের হয়ে সোজা ফুফির পাশে দাঁড়াবি। কোনো ছেলের সাথে কথা বললে চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলবো। বুঝেছিস!(ধমক দিয়ে)
হুম।
আলিফ ছেড়ে দিতেই নুপূর দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর আলিফকে ইচ্ছা মতো গালি দেয়।
অর্ণি আর মিমের বিদায়ের সময় বেচারিরা খুব কেঁদেছে। তবে ওদের অভ্র আর আলভীও অনেকটা সামলেছে। নুপূর কনে পক্ষে থেকে ওদের সাথে যায়। আলভীরা যেহেতু এখন অভ্রদের বাড়িতে তাই মিমকে ওখানে নিচ্ছে। পরে অনুষ্ঠান করে মিমকে বাড়িতে তুলবে।
রাতে

অর্ণি একটা ফুল দিয়ে সাজানো খাটে বসে আছে। খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। দরজা বন্ধ করার শব্দে অর্ণি কেঁপে উঠল। অভ্রকে দেখে নিজেকে কোনো রকম সামলে পা ধরে সালাম করলে অভ্র ওকে বলে
এবার শুরু করা যাক!
অভ্রর কথায় অর্ণির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। নিজেকে শান্ত রেখে বলল
মানে!

তোমার তো শাস্তিটা এখনো পাওয়া হয় নাই।
কীসের শাস্তি!
ঐ যে মেসেজ দিয়ে বিভ্রান্তিকর অবস্থায় ফেললে তার শাস্তি।
তার জন্য তো বকেছেন।
বকা তো ট্রেইলার ছিল। এখন আসল শাস্তি দিব।
কি?

অভ্র অর্ণিকে কিছু বলে না। অর্ণির দিকে দুষ্টুমির হাঁসি দিয়ে সামনে এগোতে থাকে অর্ণি পেঁছাতে থাকে। অর্ণি একবার দেয়ালের সাথে মিশে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। অনেকক্ষণ অভ্রর সাড়া শব্দ না পেয়ে চোখ খুলে দেখে অভ্র খাটে শুয়ে মিটি মিটি হাঁসছে। অর্ণি তাতে রেগে যায় অভ্রও পাল্টা রাগ দেখিয়ে বলে
এই এদিকে আসো।
কেন?

আসতে বলছি না!(ধমক দিয়ে)
অর্ণি ভয় পেয়ে অভ্রর পাশে দাঁড়ায়। অভ্র আয়েশ করে শুয়ে তারপর বলে
নাও এবার আমার পা টিপতে থাকো। যতক্ষণ না আমি মানা করছি ততক্ষণ টিপবে।

হোয়াট! আমি কেন টিপতে যাবো!
তুমি আমার বউ আমার সেবা করা তোমার কাজ। কথা না বাড়িয়ে কাজ শুরু কর। তা না হলে ভালো হবেনা। (চোখ রাঙিয়ে)
অভ্রর ভয়ে অর্ণি অভ্রর পা টিপতে লাগলো আর মনে মনে বলছে তোর গলাটায় এখন টিপে দিব শয়তান। বাসর রাতে তুই আমার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করলি এর সোধ আমি নিয়েই ছাড়বো। তা না হলে আমার নাম পাল্টে আবুইল্লার মায়ের নাম রাখবো।

আলভী রুমে ঢুকে দেখে মিম চুপচাপ সোফায় বসে আছে। মুখ দিয়ে হাত ডেকে রেখেছে হয়তো কিছু ভাবছে। আলভী মিমকে নাড়া দিয়ে বলল
কি হলো তোমার!
আলভীর স্পর্শে মিম রেগে গেল। আলভীর হাত ঝটকা মেরে ফেলে বলল
ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ্ মি।

তোমাকে টাচ্ করার হক আমার আছে।
না নেই। আপনি একটা লম্পট, দুশ্চরিত্র। আপনি ইচ্ছে করে আমার জীবনটা নষ্ট করলেন তাই না!
মিম আমি বুঝতে পারছি যা হয়েছে তাতে তোমার মন খারাপ। তুমি মন খারাপকে এতো প্রাধান্য দিবেনা নতুন করে সব শুরু করো। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কি ঠিক হবে! আপনার থেকে মুক্তি পাবো!
এসব কি বলছো তুমি? আমার থেকে মুক্তি চাও কেন?

কারণ আপনার মতো অমানুষের সাথে থাকার ইচ্ছা আমার নেই। আমার মুক্তি চাই আপনার কাছ থেকে। (চিৎকার করে। )
মিম!
হ্যাঁ। ঠিক শুনেছেন মক্তিই চাই আপনার থেকে। আপনার মুখ দেখলেও আমার ঘৃণা হয়।
মুক্তি চাও তো!(শক্ত গলায়। )
হ্যাঁ।
ঠিক আছে দেবো তোমায় মুক্তি।

আলভী কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রুম থেকে নয় বাড়ি থেকেই বেরিয়ে যায়। মিম ওতো পাত্তা দেয়না বসে বসে মুক্তির কথা ভাবে। সেদিন রাত আলভী আর ফিরেনা।
সকালে মিমের ঘুম ভাঙলে রুমে আলভীকে দেখে না। তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে ও ফ্রেশ হয়ে আসে। শাড়ি পড়ে চুল ঠিক করছিল তখন ফোনটা বেজে ওঠে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে
হেলো এটা কি মি.আলভীর বাড়ির কেউ!

আলভীর কথা শুনে মিমের কেমন জানি লাগে। তারপর বলে
হুম আমি ওনার ওয়াইফ।

ম্যাম আপনার স্বামীর গুরুতর এক্সিডেন্ট হয়েছে। কাল রাতে হসপিটালে কিছু মানুষ ভর্তি করিয়ে দেয়। ওনার ফোনের গ্লাসটা ফেটে যায় তাই তেমন কিছু না দেখলেও কল লিস্টে প্রথমে আপনার নম্বরটা দেখি আর ওয়ালেট থেকে পরিচয় জানতে পারি। প্রথমেই আপনার নাম্বারটা পেয়েছি তাই কল করেছি। আপনারা সিটি হাসপাতালে চলে আসুন। ওনার অবস্থা বেশি ভালোনা।
লোকটার কথা শুনে মিম থমকে যায়। চিৎকার করে আলভী বলে ওঠে।

পর্ব ২৫

হসপিটালে সবাই চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে। মিমের পাশে বসে অর্ণি আর নুপূর মিমকে শান্তনা দিচ্ছে। মিমের মধ্যে কোনো হুশ নেই। চুপ করে আছে একটুও কাঁদছেনা। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে যে পাগলামিটা করেছিল তাকে শান্ত করা মুশকিল হয়ে গেছিল। মিম বারবার বলছিল যে আলভীর এই অবস্থার জন্য ও দায়ী। মিমকে কে বুঝাবে যে ভাগ্যে যা ছিল তা হয়েছে এতে মহান আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো হাত নেই। তার ইচ্ছাতেই এমনটা হয়েছে।

ডাক্তার বলেছে মাথায় আর পায়ে আঘাত পেয়েছে। মাথার আঘাতটা গুরুতর না তাই এখন চিন্তা করার কোনো দরকার নেই। তবে পায়ের ক্ষতটা সাড়তে দু তিন সপ্তাহ লেগে যাবে। এই কয়দিন টানা বেড রেস্টে থাকলেই বেশি ভালো হবে। আলভীর জ্ঞান ফিরেছে তাই ভেতরে যেকোনো একজনকে যেতে বলেছে। সবাই মিমকে পাঠায়। আলভীকে বেডে শুয়ে থাকে দেখে মিমের বুক ছ্যাত করে উঠল। আলভীর মাথা আর পা ব্যান্ডেজ করা আর তা দেখে অজান্তেই চোখের কোণে জল চলে এসেছে। আলভীর এই রকম কিছু হোক তা মিম চায়নি। আলভীর পাশে গিয়ে টুল টেনে বসে।

আলভী চোখ বন্ধ করে রেখেছে। কারো উপস্থিতি অনুভব করতে পেরে আলভী চোখ মেলে তাঁকায়। তবে মিমকে দেখে মুহূর্তেই আলভীর মুখে কালো মেঘ জমে যায়। মিমের উপর একটা চাপা অভিমান কাজ করছে। তবে মিমের এই উদাস আর দুঃখী মুখটাও যে দেখতে পারছেনা। আচ্ছা মিম কি ওর জন্য এমন উদাস হয়েছে ওর জন্য কষ্ট পেয়েছে! ইশ এটা আবার কী ভাবছে এটা তো সম্ভব নয়। মিম যে তাকে সহ্যই করতে পারেনা আবার ওর এই অবস্থা দেখে কষ্ট পাবে। হয়তো মিম চেয়েছিল এমনটা হোক। থাক অযথা এসব ভেবে লাভ নেই। আলভী নিজের ভাবনা গুলোকে তার মনের গহীনে চেপে রাখলো। তারপরও নিজের দুর্বল শরীর মিমকে উদ্দেশ্য করে শক্ত গলায় বলল
তুমি এখানে কেন!

আমি আপনাকে দেখতে এসেছি।
মরে গেছি কিনা তা দেখতে এসেছো তাই তো! সরি মিম তোমার ইচ্ছায় আমি পানি ঢেলে দিলাম। হয়তো আল্লাহ্ চান তাই আমি এই যাত্রায় বেঁচে আছি। মরতে পারলাম না।
ছি এসব কি বলছেন! আমি এমনটা কেন চাইবো!
আমার থেকে তুমি মুক্তি চেয়েছিলে তাই না! মরে গিয়ে মুক্তি দিতে পারিনি ঠিকই কিন্তু বেঁচে গিয়েও মুক্তি তোমায় ঠিক দিব।
মানে!

ডিভোর্স দিয়ে দিব তোমায়। আমি কাল রাতেই সব কিছুর ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। আসার পথে যে দুর্ঘটনা হবে ভাবিনি। তবে এই দুর্ঘটনায় মরলে কিন্তু ভালোই হতো। বেশি কাঠ খোর পোড়াতে হতো না। এমনিতেই মুক্তি পেতে। (মুঁচকি হেঁসে)
আপনি এভাবে কেন বলছেন?
গায়ে লাগছে! দেখো ডিভোর্স কার্যকর হতে ছয় মাস লাগবে। এই ছয় মাস কষ্ট করে আমার সাথে ম্যানেজ করে নিও।
আলভীর কথা গুলো মিমকে কেন জানি কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু কেন দিচ্ছে মিম তো আলভীকে ভালোবাসেনা তাহলে কেন? মিমের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে একজন নার্স এসে বলল

পেশেন্টের এখন রেস্ট নিতে হবে। কেবিন খালি করুন।
নার্সের কথায় না চাইতেও মিম বের হয়ে আসলো। ডাক্তার বলেছে আগামীকাল ডিসচার্জ করা হবে। আজ হসপিটালে থাকতে হবে। আলভীর সাথে অভ্র আর সিনান থাকে বাকিদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

নুপূর মিম অর্ণির রুমে বসে আছে। আজ রাত তিনজন একসাথেই থাকবে। রাতে অর্ণি জোর করে মিমকে খাবার খাইয়ে দেয়। সকালে আলভীকে নিয়ে অভ্র আর সিনান চলে আসে। মিম গিয়ে আলভীকে ধরলে আলভী হাত সরিয়ে নেয়। মিম তাতে একটু কষ্ট পেল। আলভীকে রুমে দিয়ে সব ঠিকঠাক করে অভ্রও নিজের রুমে চলে আসে। অর্ণি অভ্রকে দেখে এগিয়ে যায়। অভ্র কোনো কথা না বলে কাবার্ড থেকে শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। অর্ণি তাতে রেগে যায়। অভ্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসলে দেখে অর্ণি বিছানায় রাগী ফেস করে বসে আছে। তা দেখে অভ্র ভ্রু কুঁচকায় অর্ণি তেড়ে গিয়ে অভ্রর কলার টেনে ধরে তারপর বলে
এই তোর সমস্যা কি? এমন করছিস কেন?

আমার আবার কি সমস্যা হবে আর আমি কি করলাম! তাছাড়া তুমি এমন হুটহাট আপনি থেকে তুই তে চলে যাও কেন? তুই তে না গিয়ে তুমি তে গেলে কি হয়?
সেটা আমার ব্যাপার আমার যখন ইচ্ছা হবে আমি আপনি বলবো তুই বলবো তুমি বলবো। সেটা নিয়ে আপনার মাথা ঘামাতে হবেনা।
ঐ দেখো আবার তুই থেকে আপনি তে চলে এলে।

এই সমস্যা কি আপনার! এতো কথা প্যাচাচ্ছেন কেন? আপনার মাথায় জিলাপির প্যাচ লেগেই থাকে সবসময় তাই না!
না। এই তুমি এমন উল্টা পাল্টা বিহেভ করছো কেন? (অর্ণিকে জড়িয়ে ধরে)
হঠাৎ অভ্রর এমন জড়িয়ে ধরাতে অর্ণির রাগ চলে গেল। অর্ণিও অভ্রকে জড়িয়ে ধরে বলল

জানেন আলভী ভাইয়ার এমন অবস্থায় মিমের যে হাল হয়েছে তাতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আজ যদি খারাপ কিছু হয়ে যেত তাহলে মেয়েটার কি হতো! এক মুহূর্তের জন্য আমি আপনাকে নিয়ে চিন্তা করতে ব্যস্থ হয়ে উঠলাম। আপনার এখন থেকে সব খবরা খবর আমার চাই। কখন কোথায় যাচ্ছেন কি করছেন সব কিছু আমাকে প্রতি নিয়ত ইনফর্ম করবেন। ওকে!
বাবা! এতো চিন্তা হচ্ছে আমার জন্য!
হুম। আপনি আমার কন্ডিশন গুলোতে রাজি কিনা সেটা বলুন।

আহ্ ভেবে দেখতে হবে।
অর্ণি অভ্রর পেটে চিমটি কেটে বলল
এটা ভেবে দেখতে হয় নাকি! ঠিক ঠাক উত্তর দিন মাথা গরম করবেন না তাহলে কিন্তু ভালো হবেনা।
আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার কন্ডিশনে রাজি আছি।

নিচে চলুন। খাবার খেতে হবে তো! কাল রাত থেকে কিছু খাওয়া হয়নি আপনার তা আমি ভালো করেই জানি।
হুম খুব ক্ষুদা লাগছে চলো।
অর্ণি অভ্র নিচে যায় খাওয়ার জন্য। তার আগে মিম নুপূরকে ডেকে নেয়। আলভীর খাবার রুমে পাঠিয়ে দেয় সার্ভেন্টস্ দিয়ে। মিম বলে ও আলভীকে খাইয়ে দিবে তাই ও না খেয়েই টেবিল ত্যাগ করে উপরে আলভীর রুমটাতে যায়।

পর্ব ২৬

অভ্র অর্ণিকে একদম খেতে দিচ্ছেনা। যেই খাবার মুখে দিতে যায় ওমনি হাত টেনে নিজে খেয়ে নেই। অবশ্য সবার চোখ এড়িয়ে কাজটা এতক্ষণ করছিলো। তবে এখন ওর মা আর ভাবী দেখে ফেলে। অর্ণি তো লজ্জায় চুপসে যায়। কোনো রকম খেয়ে উপরে চলে যায়। আর অভ্র অর্ণির যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে বাঁকা হাঁসে। মিম রুমে গিয়ে দেখে আলভী বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে। কিছু একটা ভাবছে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। মিম ভ্রু কুঁচকিয়ে আলভীর দিকে তাঁকায়। আলভী হঠাৎ মিমকে দেখে বলে
এই তুমি এখানে কি করছো?

আসলে আমি আপনাকে,
আমাকে!
খাবারটা খাইয়ে দিতে এসেছি।
আলভী মিমের কথাটা শুনে অবাক হয়ে যায় তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে
তার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি যাও।

না। (কিছুটা চিৎকার করেই বলল)
কেন?
আমাকে আমার কাজ করতে দেন। আমার কাজ শেষ করে আমি চলে যাবো।
তোমার আবার কি কাজ!
আমার কাজ আপনার খেয়াল রাখা। আপনার দেখ ভাল করা।
তাই নাকি!
হুম।

লাগবেনা তোমার কেয়ার। তুমি যাও। (মুখ ভেংচি কেটে)
আলভীর মুখ ভেংচি কাটা দেখে মিম অবাকের চূড়ায়। এই ছেলে আবার ভেংচিও কাটে! এ তো পুরো মেয়েদের মতো করে ভেংচি কাটতে জানে। আজ পর্যন্ত মিম কোনো ছেলেকে এমন করতে দেখে নাই। এবার মিম হু হা করে হেঁসে উঠল। মিমের ভুবন ভুলানো হাঁসিটা আলভী মুগ্ধ নয়নে দেখছিল। আলভীর ঘোরে থাকা অবস্থায় মিম কখন তার পাশে এসে বসেছে সেই খেয়াল নেই। মিম স্যুপ নিয়ে আলভীর মুখের সামনে ধরে। বরাবরই আলভীর স্যুপটা ভালো লাগেনা। এবারো তাই নাক মুখ ছিটকে বলে
এহ্ আমি এসব খাই না।

কেন? এতে খারাপ কি! তাছাড়া এখন এরকম খাবার খেতে হয়।
কে বলেছে!
সিনান ভাই বলল।
আমি খাবোনা।

না খাবেন।
আমি খাবো না বলছি তো। (একটু নড়ে বসে)
এই আপনি সত্যি অসুস্থ তো!(ভ্রু কুঁচকে)
মানে!
এই যে এমন নড়তে পারছেন তাই বললাম।

আলভী এবার থতমত খেয়ে যায়। কিছুক্ষণ আবার কিছু একটা ভাবে তারপর বলে
আরে তেমন কিছু না। দাও স্যুপ দাও খেয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে তোমার কবল থেকে বাঁচি।
আমার কবল বলতে কি বুঝাচ্ছেন!
মানে তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে আমি শান্তিতে দিন কাটাবো।

কথাটা শুনে মিমের খারাপ লাগলো। বিয়ের পর না চাইতেও দুজন মানুষ একে অপরের সাথে জড়িয়ে যায়। মিমের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আলভীর প্রতি এখন তার একটা চাওয়া পাওয়া আছে। মিম নিজেও জানেনা কেন সে আলভীর থেকে কিছু আশা রাখছে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আলভীকে স্যুপ খাওয়াতে লাগলো। এই মুহূর্তে সিনানের উপর ওঠা রাগটাও উধাও হয়ে গেল।

মিমের দিকে একদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। বেশ ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে আজ মিম গোলাপী রঙের একটা জামদানি শাড়ি পড়েছে। চুল গুলো গিন্নিদের মতো বেঁধে রেখেছে। আলভীর মিমকে বউ বউ লাগছে। ইশ এটা আবার ও কী ভাবলো এটা তো ওর বউ। তবে ওর কী মিমকে বউ হিসেবে মানা ঠিক! মিম তো চায় না। না চাইলে কিছু করার নেই আলভী যা চায় তা পেলেই হবে।

আজ অভ্র অর্ণির বউ ভাতের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। আলভীর এই অবস্থা তাই তারা আলভী সুস্থ হওয়ার পর ওদের বাসাতেই বউ ভাত করবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভ্র ব্লাক স্যুট পড়েছে। ব্ল্যাক কোর্ট ব্ল্যাক প্যান্ট ব্ল্যাক শু আর চুল গুলো স্পাইক করেছে। সেই এক কিলার লুক নিয়েছে। আর অর্ণি পিঙ্ক আর সিলভার কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। চুল গুলো সুন্দর করে খোপা করেছে। ডায়মন্ডের জুয়েলারি আর ভারী মেকআপে আজ অর্ণিকে অনেক গর্জিয়াস লাগছে। অভ্রর দেওয়া লকেট টা তো সবসময় সাথে আছেই।

অভ্র নিচে তার কলিগ ও বন্ধুদের সাথে কথা বলছিল তখন কিছু মেয়ে অর্ণিকে নিয়ে নিচে আসে। অর্ণির দিকে তাঁকিয়ে অভ্র হা হয়ে গেল। চোখ ফেরাতে পারছেনা তবুও কষ্ট করে চোখটা ফিরিয়ে নিল। সিনান ধাক্কা দিয়ে বলল
যা আমার শালির হাত ধরে নিয়ে আয়।

ভাবী বল।
ভাবী বলতে হবেনা আমার শালিকা আগে হইছে সো আমি শালিই বলবো। ভাবী তো এখন হলো এর আগে শালি ছিল হঠাৎ এমন নাম ডাক পরিবর্তন করতে পারবোনা। তুই যা তো নিয়ে আয় আমি তোদের কয়েকটা ছবি তুলছি।

অভ্র গিয়ে অর্ণির সামনে হাত বাড়িয়ে দাঁড়ালে অর্ণি তার হাত ধরে বাকি দুই সিড়ি নেমে আসে। এই ফাকে সিনানও সুশ্দর করে ছবি তুলে নেয়। অভ্রকে দেখে অর্ণি প্রথম বারের মতো আবারো ক্রাশ খেল। সিনানের সাথে প্রথম যেদিন অভ্রকে দেখেছিল সেদিন অর্ণি অতিরিক্ত মাত্রার ক্রাশ খেল। যাকে বলে হাই ভোল্টেজ ক্রাশ। 😜 সবাই ওদের দিকে তাঁকিয়ে আছে অভ্র অর্ণির হাত ধরে স্টেজে গিয়ে বসে। অর্ণির কানের কাছে অভ্র মুখ নিয়ে বলে
তোমায় খুব সুন্দর লাগছে বাবু।

অভ্রর মুখে এই বাবু ডাকটা শুনলেই অর্ণির কেমন জানি লাগে। অভ্র বাঁকা হাঁসছে অর্ণির দিকে তাঁকিয়ে আবারো অর্ণির কানের কাছে মুখ এনে বলে
বিয়ের আগে খুব নাঁচিয়েছো আমাকে। এবার দেখো তোমার কি হাল করি আমি। (চোখ টিপ দিয়ে)
অভ্রর হঠাৎ এমন রূপ দেখে অর্ণির কাশি উঠে গেছে। অভ্র একটা ওয়েটারকে ডেকে জুস নিয়ে অর্ণির হাতে দেয়। অর্ণি গটগট করে খেয়ে নেয়। তা দেখে অভ্র মুঁচকি হাঁসে। অর্ণি ভয় পেলে ওর গলা শুকিয়ে যায়। এখন ঠিক তাই হচ্ছে বার বার গলা শুকাচ্ছে। অভ্র কিছু বলবে তার আগে ফোনে কল আসাতে চলে যায়।
অর্ণির বাড়ির সবাই আসলে অর্ণি গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে তারপর সবার সাথে অর্ণি কথা বলে। নুপূর অর্ণিকে টেনে নিয়ে বলে
এই আমি যে কাল থেকে পড়ে আছি।

তোদের কোনো ভাবান্তর আছে! মানছি মিম একটু ব্যস্ত কারণ আলভী ভাইয়ার অবস্থা ভালো না। তুই তো একটু টাইম দিবি নাকি! ধুর একা একা ভালো লাগেনা। একটা ছেলে পটাবো সেটাও পারছিনা তোরা সাথে না থাকলে কি ভালো লাগে!
এই কি বলছিস! নতুন বউ তোর সাথে ছেলে পটাচ্ছে এটা শুনলে মানুষ আমায় কি বলবে! তাছাড়া অভ্রর কানে গেলে আমাকে আস্ত রাখবেনা। তুই এক কাজ কর আলিফ ভাইয়ের কাছে যা। ভাইয়া তো ভালোই কোম্পানি দেয়।
এই এসব কি বলছিস! শেষে কিনা আলিফ ভাই!
তো আমার ভাই কোন দিক দিয়ে খারাপ হ্যাঁ! অভ্র আলভীদের মতোই স্মার্ট।

মিম তুই!
চিল ইয়ার। অর্ণি ঐ দিন তোকে আর ভাইকে দেখে আমাকে গিয়ে বলে দেয়। তাছাড়া আমিও অনেক কিছুই নোটিস করেছি। সো এখন লুকিয়ে কাজ নেই। ভাই তোকে লাইক করে সেটা আমি আর অর্ণি জানি।
তোদের মাথা ঐ পাগলকে তো আমি চোখের সামনে দেখতেই পারিনা।

কেন? আমার ভাই পাগল কেন!
কেন আবার! সারাক্ষণ শুধু আমায় বকে কারো সাথে কথাও বলতে দেয় না। জীবনটা আমার তেজ পাতা করে দিয়েছে।
তাহলে তো ভাইয়ের সাথে তোর বিয়েটা দিতেই হয় কিরে অর্ণি কি বলিস!
একদম।

বলেই দুজন হাঁসিতে ফেটে পড়লো। তখন ওদের সামনে আলিফ এসে হাজির এসেই নুপূরকে বলে
এই মেয়ে তুই লাল রঙ পড়েছিস কেন?
লাল রঙ কোথায় পড়লাম আলিফ ভাই! আমি তো লাল রঙের জামা পড়লাম।

নুপূরের কথায় অর্ণি আর নুপূর আবারো হেঁসে দেয়। তারপর দুজনে বলে
নে নুপূর তোর হাবির সাথে একা টাইম স্পেন্ড কর।
আলিফ ওদের কথায় থতমত খেয়ে যায়। অর্ণি আর মিম নুপূরকে একটা ধাক্কা মেরে চলে যায়। ইচ্ছা করেই ধাক্কা দেয় যার ফলে নুপূর আলিফের বুকের উপর গিয়ে পড়ে। আলিফও শক্ত করে ধরে ফেলে। তা দেখে অর্ণি মিম হাঁসতে হাঁসতে লুটোপটি খায়। কোনো মতে নিজেদের সামলে চলে যায়। ওদেরকে একা সময় কাটাতে দেয়।
আলভী দৌঁড়ে সিড়ি বেয়ে ছাদে আসে। অভ্র আর সিনান ওকে দেখে হাঁসতে থাকে। অভ্র বলে
কিরে ল্যাঙলা! উপড়ে আসলি কীভাবে?

অভ্র!(রেগে)
কি করলাম আবার!
এসব কি ভাষা আর তাছাড়া আমার এই অবস্থা তো তোর জন্য শালা। শেষে কিনা আমাকে অভিনেতা বানালি। সিনান ভাই তুমি ওর সঙ্গ দিয়েছো তাই না! তোমাদের কথা মতো এক্সিডেন্টের নাটক করলাম তুমি আমারে হসপিটালে নিয়ে খামোখা ব্যান্ডেজ করিয়েছো। তা ঠিক আছে। মানলাম সব আমার ভালোর জন্য। তবে আমারে এসব কি খাওয়াতে বলছো! আর এতো নিয়ম আমি মানবো কেন? আমি কি রোগী নাকি!
আমরা জানলেও তো ওরা আসল কথা জানে না। ওদের কাছে তো তুই রোগী। তাই এখন তোরে নিয়ম পালন করে চলতে হবে। আর এই ভাবে ল্যাঙলার অভিনয় করিস দুই সপ্তাহ।
বলেই অভ্রর সাথে হাত মিলিয়ে হাঁসতে থাকে। আর আলভী রেগে আগুন।

পর্ব ২৭

নুপূরকে নিয়ে আলিফ একটা টেবিলে বসে আছে। আশে পাশে কেউ নেই। এক ঘন্টার মতো এখানে বসিয়ে রাখার কোনো মানেই হয় না। তাও যদি কথা বলতো বা কিছু খাওয়াতো সেটা মানা যেতো। আলিফ সেরকম কিছুই করছেনা একদৃষ্টিতে ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে আছে। এবার আলিফ একটু নড়ে বসলো। আলিফকে নড়ে বসতে দেখে নুপূরের মুখে একটু হাঁসি ফুটলো। এতক্ষণে একটু হলেও কিছু করবে বা এই বুঝি ওকে বলবেতুই এখন যা। নুপূরের ভাবনায় পানি ঢেলে আলিফ বলল
তুই জানিস লাল রং টায় তোকে কতোটা বেমানান লাগে!

আলিফের কথায় নুপূর ইনসাল্ট ফিল করলো। এই রং টাতে ওকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে সবাই এটাই বলে। আর আলিফ কিনা বলছে বেমানান! রেগে গিয়ে বলল
আমাকে বেমানান লাগে তাতে তোমার কি?
আমার অনেক কিছুই। তুই এই রঙের আর কোনো জামা পড়বিনা।
আমি পড়বো কি পড়বোনা সেটা আমার ব্যাপার। তুমি এতো কিছু বলার কে!

আলিফ নুপূরের হাত টেনে নিয়ে নিজের কাছে এনে বলল
আমি অনেক কিছু। তা বোঝার যোগ্যতা বা বয়স কোনো টাই তোর হয়না।
ওহ্ রিয়েলি! তোমার কি আমাকে এখনো সেই ক্লাস টেনে পড়ুয়া নুপূর মনে হয় যাকে যখন খুশি পিচ্চি পিচ্চি করবে আর কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলবে বুঝার বয়স হয় নাই! আমি এখন অনেক বড় হয়েছি। আঠারো পার করে এসেছি অনেক আগেই।

আচ্ছা তাই নাকি! তাহলে তো তুই অনেক বড়। বিয়ে দেওয়া যাবে কি বলিস!
হুম যাবে। ঐ দিন বললে না মাকে বলবে আমার বিয়ের কথা! প্লিজ আলিফ ভাই আজ গিয়ে বলে দাও। আমি বিয়ে করে স্বামীর বাড়ি যাই। তাহলে তোমার এসব উল্টা পাল্টা কাজ থেকে রেহাই পাবো।
কি বললি তুই! আমি উল্টা পাল্টা কাজ করি?

তা নয় তো কি! যখন তখন আমার পেছন আঠার মতো লেগে থাকো। তোমার জন্য আমার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তা কি তুমি জানো!
তোর সাহস দেখে আমি অবাক! বিয়ে করার খুব সখ তাই না! তোর সখ আমি ভালো করে মেটাবো দেখে নিস।
দেখার বস্তু হলে তো দেখবোই তা তোমার বলতে হবেনা। (ভেঙচি কেটে)
আলিফ রেগে কিছু বলবে তার আগে সেখানে মিম আর অর্ণি চার প্লেট বিরিয়ানি নিয়ে হাজির। আলিফ আর নুপূরকে দিয়ে নিজেরাও খেতে লাগলো। আলিফ ধমক দিয়ে বলল

এই শ্বশুড় বাড়িতে আছিস কেউ যদি দেখে নতুন বউরা এমন গিলছে তখন কি বলবে!
যা বলার বলুক। আমার বর তো কিছু বলবেনা। তাছাড়া বিয়ে হলে কি মেয়েদের এমন চোরের মতো চলতে হয়! তাদের নিজেদের কোনো ইচ্ছা আনন্দ থাকেনা! অবশ্যই থাকে আর তাই আমরা আমাদের ইচ্ছা প্রাধান্য দিবো। তাছাড়া আমাদের স্বামীরা তো আমাদের এসবে কোনো নিয়ম নীতি তৈরি করে দেয় নি। তোমার যদি নুপূরের সাথে বিয়ে হয় তাহলে তুমি কি ওকে এমন করে বলবে! ওর নিজস্ব চাওয়া পাওয়া ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা নষ্ট করবে! (অর্ণি খেতে খেতে বলল)
আলিফ নুপূরের দিকে তাঁকিয়ে বলল
কখনোই না।

নুপূর রেগে গিয়ে বলল
এই এসবের মানে কি! আমি ওর বউ হবো কেন?
নুপূরের কথায় আলিফেরও টনক নড়লো বেচারা অর্ণির কথার জালে ফেসে কি না কি বলে ফেললো। অর্ণি নুপূরকে রেগে যেতে দেখে বলল
আরে আমি কি সিরিয়াসলি বলেছি নাকি! ধর যদি আলিফ ভাইয়ের বিয়ে হয় তখন কি ও ওর বউয়ের সাথে কড়াকড়ি করবে কিনা সেটা জানতে চেয়েছি।
অর্ণি আলিফের দিকে তাঁকিয়ে একটু মুঁচকি হাঁসে তারপর বলে
তুমি নিজে যখন এমন কিছু করবেনা তাহলে আমাদের বললে কেন? আমরা তো বোন হই তাই না!

সে জন্যই তো চিন্তা। স্বামীর বাড়িতে কতো জন কতো কিছু বলবে করবে ভাইয়েদের চিন্তা হবেনা!
সবাই তো এক হয় না। আমার শ্বশুড় বাড়ির সবাই ভালো আর ফুফিরাও ভালো মিমও খুব সুখে শান্তিতে থাকবে।
হুম। তোরা ভালো থাকলেই হয়।

আলিফ না খেয়েই উঠে চলে যায়। ওদের সামনে নুপূরের সাথে কথা বলতে কেমন জানি লাগে। অভ্র আলভী সিনান ছাদ থেকে খেয়ে এসেছে। ছাদে খাওয়ার মূল কারণ আলভী। ব্যাটা ঘরে এসব রোস্ট ফ্রাই খেতে পারবেনা। তাই এগুলো এখানে খেয়ে রুমে গিয়ে আবারো নাটক করে শুয়ে রইল। মুখে অসহায় অসহায় ভাব। মিম যাতে দেখলে একটু গলে যায়।
মিম রুমে এসে আলভীকে দেখে বলল
মন খারাপ!
না। (ভেংচি কেটে)
মিম বুঝে পায় না আলভী এমন ভেংচি কাটে কেন! এক্সিডেন্ট হওয়াতে মাথায় সমস্যা হলো না তো! ডাক্তার তো বলেছে সিরিয়াস কিছু না। তাহলে এ এমন অদ্ভুত আচরণ করে কেন! মিম কাবার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আলভী এবার স্বাভাবিক হয়ে বসে মোবাইল খুঁজে দেখে বেডের অন্য পাশে। ও গিয়ে মোবাইল নিয়ে ঐখানেই বসে পড়ে।

অর্ণি আর অভ্র রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটছে। উদ্দেশ্য আইসক্রীম খাবে আর ঢাকা শহরটার কিছু অংশ ঘুরে ঘুরে দেখবে। অভ্রর খারাপ লাগছেনা ও অর্ণির থেকেও বেশি ইন্জয় করছে। অর্ণির হাত ধরে হাটতে এক অন্যরকম তৃপ্তি বোধ করে। অর্ণি কালো সিল্কের শাড়ি পড়েছে চুল খোলা কপালে ছোট্ট কালো টিপ ঠোঁটে হাল্কা গোলাপী লিপস্টিক। অভ্র আর অর্ণি হাটতে হাটতে একটা দোকানের সামনে গেল। দোকানটা চায়ের দোকান এখন 12 টা বাজে লোকটা এই সময়েও তার কাজ করছে। দোকানের মধ্যে চা ওয়ালা এবং একজন পুরুষ ছাড়া আর কেউ নেই। অর্ণি আর অভ্রও বসলো।

পর্ব ২৮

মিম ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে আলভী মিম যে পাশে ঘুমায় ঐ পাশে বসে মোবাইলে গেমস খেলছে। মিম অবাক হয়ে যায়। একটু আগেও তো আলভী এই পাশে বসে ছিল। ওর যে অবস্থা তাতে ও নিজে ওপাশে যেতে পারবেনা। ব্যাপার কি ও যদি নিজে না যায় কে নিবে ওকে এখানে! দরজাও তো লক করা। মিম আর না ভেবে ঝটপট আলভীকে প্রশ্ন করলো
এই যে আপনি এই পাশে কি করছেন?

কোন পাশে!(খেলায় মনযোগ মিমের কথাতে নয়)
আমার পাশে। আপনি তো ঐ পাশে ছিলেন না।
ছিলাম না এসেছি।

হোয়াট! (হাল্কা উচ্চস্বরে)
মিমের হোয়াট বলার ধরণে আলভী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এখন বুঝতে পারছে কি থেকে কি বলে ফেলেছে। ইশ্ এখন এই ওভার রিয়েক্টের দোকান জানি কি থেকে কি করে ফেলে।
আপনি এই খানে কীভাবে এলেন! হাউ! এটা কীভাবে সম্ভব!
এই ডিমপাখি শোনো আমি এখানে অনেক কষ্টে এসেছি। আমার ফোনটার জন্য।

কীভাবে!
আজব এটাও বলতে হবে নাকি! আচ্ছা বলছি। আমি খুব কষ্টে গড়াগড়ি করে এপাশে এসেছি। বেশি কষ্ট হচ্ছিল তাই আর ওপাশে যাই নি। (একটু দুঃখী ভাব নিয়ে)
আহারে বেচারার কতো কষ্টে হচ্ছে। এই সবকিছু আমার জন্য হলো। আল্লাহ্ তুমি আমার ভুলের জন্য আমাকে মাফ করে দিও। (মনে মনে)
কি ভাবছো!

আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না! আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আমি আপনার এই অবস্থার জন্য দায়ী। (কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
মিমকে এভাবে কাঁদতে দেখে আলভীর নিজের উপর রাগ হচ্ছে। মিম শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছে। বেচারির চোখে পানি যে আলভী সহ্য করতেই পারেনা। এই অভ্র আর সিনানকে হাতের কাছে পেলে মজা দেখাবে। শালারা কোন ঝামেলায় ফেললো ধুর। আলভীর ইচ্ছা করছে দৌঁড়ে গিয়ে মিমকে জড়িয়ে ধরে বলতে
তোমার কোনো দোষ নেই ডিমপাখি, তুমি কিছুই করোনি, আমারো কিছুই হয়নি। এভাবে কেঁদো না।

কিন্তু বলতে পারছেনা। কোথাও আটকে যাচ্ছে। আর এই আটকে যাওয়ার পেছনেও যে বড় একটা কারণ আছে। মিমের সাথে ওর একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরী করা। আর এই সম্পর্ক তৈরী করতে আপাতত এর থেকে ভালো উপায় স্বয়ং আল্লাহ্ ছাড়া কারো জানা নেই। আলভী মিমের দিকে একদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ওকে দেখছে। এই পার্পেল কালারের লং নাইট ড্রেসে খুব সুন্দর লাগছে। এই কালারটাতে ওকে খুব ভালোই মানিয়েছে। ওদের বিবাহ বার্ষিকীতে মিমকে এই রঙের শাড়ি গিফ্ট করবে। পরক্ষণেই হেঁসে দিল বিয়ে হয়েছে এখনো এক সপ্তাহ হয় নাই এখনি ও ঠিক করে ফেলছে প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে বউকে কি দিবে! মিম আলভীকে হঠাৎ হাঁসতে দেখে বলল
কি হলো হাঁসছেন যে!
ও কিছু না। তুমি শুয়ে পড়ো। আমি আজ রাতে এই পাশে ঘুমাই তেমন কোনো সমস্যা হবে না তো!
না হবে না।

মিম লাইট বন্ধ করে আলভীর পাশে এসে শুয়ে পড়লো। এখন আর আলভীকে তার অসহ্য লাগেনা। বরং আলভী কাছে থাকলে একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়। একটা সাহস পায় যা ঠিক তার বাবার সাথে থাকলে পেতো। মেয়েরা বিয়ের আগে বাবার ছাঁয়াতে সাহস পায় বিয়ের পর স্বামীর। মিম ওপাশে ফিরে চোখ বন্ধ করে নিল।
আচ্ছা অর্ণি আমরা যে এখানে এসেছি কাউকে বলো নি তো!
না বলিনি। কিন্তু কেন বলুন তো!

আরে গাধী মা বাবা বা অন্য কোনো গুরুজন জানলে কী ভাববে! এতো রাতে তোমায় নিয়ে বের হয়েছি। আজকে তোমাদের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল যেতে পারিনি। আলভীর অবস্থা ভালো না বাবা বলেছে দু সপ্তাহ পড়ে যেতে। সিনান আর আলভী জানলে আমাকে নিয়ে ট্রল করতে ছাঁড়বেনা। ওরা বলবে বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে রোমান্স করতে না পেরে এখন রাতে বেরিয়েছে রোমান্সের উদ্দেশ্যে।
হা হা হা।

হাঁসছো!
হাঁসি পেলে কি কাঁদবো নাকি! আজব!
হুহ। মামা দু কাপ মালাই চা দাও তো!(চা ওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে)
এইতো মামু দিচ্ছি।

অভ্র আর অর্ণি কথা বলতে লাগলো আবার। ওদের কথার মাঝেই চা ওয়ালা দু কাপ মালাই চা দিয়ে যায়। অর্ণি তো মুখে দিয়ে অবাক। এতো মজার চা ও কখনো খায় নি। অভ্রর দিকে তাঁকিয়ে দেখছে অভ্রও তৃপ্তি করে খাচ্ছে। তবে ওর মধ্যে অবাক হওয়ার মতো ভঙ্গি দেখছেনা। মনে হয় আরো অনেকবার এসেছে। জানার আকাঙ্খা বেড়ে গেলো। তাই অভ্রকে বলল
খুব মজার চা তাই না!

হুম। মামার হাতে চা এখানকার সেরা। আমি সিনান আলভী সূর্য আর অদ্রিত একসাথে হলে এখানে এসে চা খেতাম। ইভেন দুই দিন আগেও খেয়েছি।
দুইদিন আগে মানে! ঐ দিন তো আমাদের বিয়ের রাত ছিল। আচ্ছা আপনি আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর কি বের হয়েছিলেন!
অর্ণির কথায় অভ্র থতমত খেয়ে বলে
আরে পাগল নাকি! কি বলছো এসব! বিয়ের রাতে কীভাবে বের হবো!

তাহলে বললেন যে!
ভুল বলেছি কয়েকদিন আগে হবে।
দুদিন আর কয়েকদিনে অনেক পার্থক্য আছে।

এই এতো গোয়েন্দা গিরি করছো কেন? তোমার কি আমাকে আবার কোনো ভাবে সন্দেহ হচ্ছে নাকি!
হুম হচ্ছে।
কেন?

আপনি তো খুব সুন্দর। আপনার জন্য তো কতো মেয়েই পাগল। আপনি হয়তো তাদের মধ্যে কারো জন্যে পাগল হয়েছেন।
অভ্র কিছু বলল না মুঁচকি হাঁসলো। যাতে অর্ণি একটু অবাক হলো। ও তো মজা করে বলেছিল তার মানে সত্যিই অভ্র! অর্ণি মুহূর্তেই রেগে সামনের দিকে হাঁটা দিল। অভ্র তবুও চুপচাপ বসে চা খাচ্ছে। চা শেষ করে টাকা দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকে।

ওর ভাব করছে মনে হয় অর্ণি গেলে তার কিছুই হবে না। সে তার মতো ঠিক আছে। নিজের মতো হাঁটছে। আপনমনে হাঁটছে অর্ণির চিন্তা নেই। এমন ভাব ধরেছে অভ্র। অর্ণি এবার অভ্রর এরকম বিহেভিয়ারে কেঁদেই দেয়। অর্ণি তো জানে না অভ্র অর্ণির এই কান্না মাখা মুখ দেখেই ওর প্রেমে পড়েছিল। ওর মায়ায় জড়িয়ে ছিল। অর্ণি যখন কাঁদে অভ্রর ইচ্ছা করে ওকে বলতে এই মেয়ে কান্না থামাবেনা। আমি তোমার কান্নমাখা মুখটা দেখতে চাই।

চোখের চাজল লেপ্টে গেছে অর্ণির। তাতে যেনো সৌন্দর্য আরো বেশি করে ফুটে উঠেছে। অভ্রর ইচ্ছা করছে ওর কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বলতে
এই মেয়ে কি আছে তোমার মধ্যে যা আমায় এতো টানে! কি আছে তোমার মধ্যে যার কারণে আমি শুধু তোমায় নিয়েই ভাবি! কি আছে তোমার মধ্যে যে আমি তুমি ছাড়া অন্য কারো দিকে তাঁকাতে পারিনা! কি আছে তোমার মধ্যে যে তুমি হাঁসলে কাঁদলে আমি এমনিতেই খুন হয়ে যাই! বলো না আমায় #কিমায়ায়জড়ালে!
অভ্র তা বলতে পারেনা। অর্ণির দিকে তাঁকালেই বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। ইচ্ছা করে দু নয়ন ভরে শুধু ওকেই দেখতে। লেখিকা সুলতানুন আফরীন।

মিম ঘুমের মধ্যে অনুভব করছে কেউ ওর উপর ঝুকে আছে। ওর কপালে ঊষ্ণ কিছুর অনুভব হলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এই আবেশে চোখ দুটো খুলতেই ইচ্ছা করছেনা। থাক না কিছু অজানা পরশ ক্ষতি কি তাতে! চোখটা না খুললে তো আর মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবেনা।

পর্ব ২৯

অর্ণি গাল ফুলিয়ে বিছানায় বসে আছে। তখন অভ্রর ত্যাড়ামিতে রেগে বাড়ি চলে এসেছে। অভ্রও পেছন পেছন এসেছিল। রুমে ঢুকে অর্ণি দরজা লাগিয়ে দেয় আর অভ্র রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে। অর্ণিকে ডাকে তবে খুব ধীরে কেউ শুনলে সমস্যা হবে তাই। অর্ণিকে অনেকবার দরজা খুলতে বললে খুলেনা। তাই নিচে চলে যায়। গার্ডেনে ছাউনির নিচে সোফায় বসে।

চারিদিকে মৃদু বাতাস। অভ্রর কাছে এইরকম মুহূর্ত খুব ভালো লাগে। চাঁদের আলো মৃদু বাতাস হাসনা হেনা ফুলের ঘ্রাণে কি সুন্দর মনোরম পরিবেশ তৈরী হয়েছে। ইশ্ অর্ণি থাকলে আরো ভালো লাগতো। মেয়েটা মজা বুঝেনা কথায় কথায় অভিমান করে। আজকের সুন্দর মুহূর্তে অভিমানটা না হয় মাটি চাপা দিয়ে দিত। তাহলে কি বেশিই ক্ষতি হতো! অভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তারপর সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে নেয়। তখনি পাশ থেকে একটা চেনা পরিচিত কন্ঠে ভেসে ওঠে
কফি!
অর্ণির দিকে তাঁকিয়ে মুঁচকি হাসে অভ্র তারপর কফি হাতে নিয়ে বলে
ধন্যবাদ। তাহলে আপনার অভিমান ভেঙেছে।

তা না হয়ে উপায় আছে! আপনি তো আর গিয়ে আমার অভিমান ভাঙাবেন না তাই নিজে থেকে ভাঙিয়ে নিলাম।
অভ্র মুঁচকি হেসে অর্ণিকে পাশে বসিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলল
আপনি সেই সুযোগ দিলেই তো! মুখের উপর ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। যতোবার ডেকেছি একবারো সাড়া দেন নি। দরজা খোলা তো দূরের কথা।
সরি।

কোনটার জন্য! পার্কে উল্টা পাল্টা বোঝার কারণে নাকি মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেওয়ার কারণে।
দুটোর জন্যই।
বাহ্! দুটোর জন্যই!
হুম।

আচ্ছা তখন তোমার এটা মনে হলো কেন আমি অন্য কারো জন্য পাগল!
আসলে আপনি অনেক বেশি তো সুন্দর। আমি তো আপনার মতো ওতোটা সুন্দর না। তাই হয়তো আপনার অন্য নারীতে
আর বলতে পারলো না তার আগে গালে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো। কারণ অভ্র এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো অর্ণিকে কষে থাপ্পর মারলো। অভ্রর চোখের দিকে তাঁকিয়ে অর্ণি আৎকে উঠলো। লাল হয়ে গেছে অর্ণি কিছু বলবে তার আগে অভ্র ওকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।
অর্ণি জানো আজকে তুমি আমাকে কি পরিমাণ হার্ট করেছো! আমাকে বিশ্বাস করোনা তবে আমার ভালোবাসাকে অসম্মান করতে পারো না তুমি। সেই অধিকার তোমাকে আমি দেই নি।

আপনি ভুল বুঝছেন আমি আপনার ভালোবাসাকে অসম্মান করিনি। আমার মনে হয়েছিল….
এই মনে হওয়াটাই যে সব নষ্ট করে দিতে পারে, তা কি তুমি জানোনা!
অভ্র চলে যেতে নেয় তখন অর্ণি বলে

আ’ম সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ অভ্র আমার উপর রেগে থাকবেন না। আপনি রেগে থাকলে আমি কার কাছে যাবো! এখানে আমাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো যে কেউ নেই। মিমও তো আলভী ভাইকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি যে তাহলে বড্ড একা হয়ে যাবো। (কান্না করে)
অর্ণির কথাতে অভ্রর হৃদয় চুরমার হয়ে গেল। অর্ণির কান্না মাখা মুখ ওর ভালো লাগলেও অর্ণির কষ্ট পাওয়া দেখতে অভ্র নারাজ। অভ্রর বুকে যে ব্যাথা হয়। অভ্র পেছন ফিরে অর্ণিকে জড়িয়ে ধরে। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলতে থাকে
এই পাগলি এখানে কান্নার কি আছে! মেরেছি বলে কাঁদছো!
উহু।

তাহলে! আমি তোমার সাথে কথা বলবো না এটা ভেবে কাঁদছিলে!
হুম। (আবার কান্না করে দেয়)
এই মেয়ে কান্না থামাও। আমি তোমার উপর রাগ করে থাকতে পারি!
না।

জানোই যখন তাহলে বললে কেন?
এবার তো বেশিই রেগে গেছিলেন তাই।
ধুর পাগলি। তুমি এমন উল্টা পাল্টা কথা বলো কেন? এসব কথা শুনলে তো আমার রাগ উঠে।
আর বলবো না।
সত্যি তো!
তিন সত্যি।

আচ্ছা চলো এখন রুমে যাই অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন ঘুমাতে হবে চলো। মশার কামড় খেতে পারছিনা যে আর।
হা হা হা। আপনি মশার কামড় খাচ্ছিলেন বুঝি!
তো আর কি করবো! বউ ঘরে ঢুকতে দেয়নি তাই তো এখানে এসেছি।
আচ্ছা অভ্র একটা কথা বলি!
একটা কেন হাজারটা বলো।

না থাক একটাই বলি। আচ্ছা আপনি সবসময় মুঁচকি হাসেন কেন?
অর্ণির কথা শুনে অভ্র মুঁচকি হাসি দিল। তারপর বলল
মুঁচকি হাসলে সওয়াব আছে, নবিজী কিন্তু মুঁচকি হাসতেন। তবে আমি সবসময় মুঁচকি হাসি তা কিন্তু সত্য নয়। আমি কিন্তু মাঝে মাঝে অনেক জোরেও হাসি।
তা খুব কম দেখা যায়। আচ্ছা আরেকটা কথা বলি!
বলবে! আচ্ছা বলো।

আপনি আমাকে মারলে আমি কখনো হিংস্রতা দেখিনা দেখি ভালোবাসা। কেন?
তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি তাই তোমার সামনে হিংস্র হতে পারিনা।
আপনি জানেন আমি আপনার মারকেও ভালোবাসি!
তাই নাকি! তাহলে তো এখন থেকে আমি বউ পেটাবো।
অভ্রর কথা শুনে অর্ণি হাসে অভ্রও হাসে। অর্ণি যেমন অভ্রর কাছে স্পেশাল অভ্রও তেমন অর্ণির কাছে স্পেশাল। এমন ভালোবাসা টিকে থাকুক আজীবন।
সকালে

মিম ঘুম থেকে উঠে দেখে আলভী সোফায় বসে কফি খাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে শাওয়ার নিয়েছে। আলভী একা একা বাথরুমে গেল কেন ওকে ডাকলে কি হতো! নিজের শরীরের অবস্থা যে ভালো না তা কি জানেনা! আর তাছাড়া একা একা ওয়াশরুমেই গেলো কীভাবে চারদিনে পা ঠিক হওয়ার কথা নয় শুধু পা নয় ব্যথাও তো কমেনি। মিম ঘুম ঘুম চোখে আলভীকে প্রশ্ন করলো
এই আপনি একা একা ওয়াশরুম গেলেন কীভাবে!
একা কোথায় মা এসেছিল তো।

কি! মা এসেছে আর আপনি আমায় বললেন না। এখন উনি কি ভাববে! নুতন বউ এতো বেলা করে ঘুমাচ্ছে।
ও হ্যালো! আমার মা এতো চিপ্ মাইন্ডেড না। বরং তোমার যাতে কষ্ট না হয় তাই নিজে এসেছে আমাকে সাহায্য করতে। তাছাড়া তুমি কম খাটুনি করছো নাকি! চিন্তা করো না ডিভোর্স দেওয়ার সময় তোমায় এর জন্য পারিশ্রমিক দিয়ে দিবো। (আলভী ইচ্ছে করে এই কথা বলেছে কারণ ও জানে এখন মিমও ওর উপর কিছুটা দুর্বল। আরও দুর্বল করার জন্য এখন এগুলো নিনজা টেকনিক। )
মিম ভারী গলায় বলল

আপনার আমাকে কি মনে হয়! আমি পারিশ্রমিকে জন্য আপনার সেবা করছি! আপনি আমার স্বামী।
সো কল্ড স্বামী তাই তো! আমাকে তো তোমার অসহ্য লাগে আমার থেকে মুক্তি চাও এখন সেই আমাকেই স্বামী মানছো। ব্যাপার কি!
আপনার সাথে এখন এসব কথা বলতে চাইনা। তবে যতোদিন আছি নিজের দায়িত্ব পালন করবো।
বলেই মিম শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
এহ্ একটু রোমান্স করতে পারেনা শুধু সেবা করে।

(মনে মনে)
অনেকক্ষণ বসে থাকার পর আলভীর আর ভালো লাগছিল না। মিম এখনো ওয়াশরুম থেকে আসেনি ওর সাথে ঝগড়া করবে সেটাও পারছেনা। তাই আলভীর এখন একটু গান গাইতে ইচ্ছা করছে। গিটারটা সবসময় সাথেই থাকে। যেখানেই যায় গিটার নিয়ে যায়। অভ্রদের বাড়িতে আসলে তো মাস্ট আনতে হবে। অভ্রর কড়া আদেশ। আলভী হাতের পাশে থাকা গিটারটা নিয়ে সুর তুলে তারপর গাইতে লাগলো
রাতেরই আধারে অজানা ছোঁয়া
মায়াবী চোখে কি মায়া যেনো গুধুলীর আবির মাখা
রাতেরই আধারে অজানা ছোঁয়া

মায়াবী চোখে কি মায়া
যেনো গুধুলীর আবির মাখা
কি নেশায় জড়ালে

কি মায়ায় জড়ালে

গানটা গাওয়ার সময় চোখ যায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মিমের দিকে। লাল শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে। একেবারে নেশা ধরানোর মতো। আলভী গানটা মাঝ পথে থামিয়ে দেয়। মিম তাতে অবাক হয়ে বলে
আরে ভালো লাগছিলো তো। আপনি গাওয়া বন্ধ করছেন কেন?
আমার এখন ভালো লাগছেনা।

আলভীর কথাটা শুনেই মিম চিন্তায় পড়ে গেলো। দৌঁড়ে গিয়ে বলল
আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে ব্যাথা করছে! পায়ে ব্যাথা করছে নাকি মাথায়! (ব্যস্ত হয়ে)
আলভী বুকের মধ্যে হাত রেখে বলল
এখানে!
মিম অবাক চোখে ওর দিকে তাঁকায়। আলভী সেদিকে ভ্রুঁক্ষেপ না করে মিমের গালে একটা চুমো দিয়ে বসে। মিম আকস্মিক কান্ডে নিরব হয়ে যায়।

পর্ব ৩০

অভ্র চোখ বন্ধ করে রেখেছে ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে আছে বোঝা যাচ্ছে না। অর্ণি শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে অভ্র এখনো শুয়ে আছে তাই ইচ্ছা করে অভ্রর মুখের সামনে গিয়ে চুল ঝারতে থাকে। পানির ফোটা পড়তেই চোখ খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মায়াবতী অর্ণিকে দেখে মুঁচকি হাসে। অভ্রর থেকেও এই মুহূর্তে অর্ণি বেশি ঘায়েল হলো অভ্রর ঘুম ঘুম চোখের মুঁচকি হাসিটা অসাধারণ। অর্ণির এখন ইচ্ছে করছে এই গানটা গাইতে –
ও ছেলে কথা না কইয়া তুমি যাইও না

ও ছেলে মন না দিয়া তুমি যাইও না
অভ্র অর্ণির পেছনে এসে দাঁড়ায় তারপর ঘাড়ের চুল সরিয়ে একটা চুমো দিয়ে বলে গুড মর্ণিং বাবু। অর্ণিও হেসে গুড মর্ণিং বলে। অভ্র অর্ণিকে ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আর অর্ণি সেইখানে দাঁড়িয়ে আনমনে বলে
কি চিজ্ মাইরি।
ওটা তোমারই চিজ্ এভাবে বলো না দেখো পরে তোমার নিজেরই নজর পড়ে যাবে।

অভ্রর কথায় অর্ণি অবাক হয়ে পেছন ফিরে দেখে ওয়াশরুমের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। অর্ণিকে দেখে একটা চোখ টিপ দেয়। অর্ণির তো এখন এই অবস্থা হায় মে মারজাওয়া। জোরে দরজা লাগানোর আওয়াজে অর্ণি হেসে উঠে।
অর্ণি ভাবে এটা ওর চিজ্। হুম এটা তার অভ্র। তার প্রেম, তার ভালোবাসা,তার ক্রাশ। হাজারো মেয়ের মাঝে তার ক্রাশ তাকেই বেছে নিয়েছে। এর থেকে আর কি বড় পাওয়া আছে! অভ্রই যে তার সবচেয়ে বড় পাওয়া।

আলভীর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাঁকাতেই আলভী মিমকে এক হাত দিয়ে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর মিমের ভেজা চুলের ঘ্রাণ নেয়। আলভীর এমন আকস্মিক কান্ড গুলোতে মিম শুধু একের পর এক ঝটকা খাচ্ছে। আলভী তাকে ডিভোর্স দিবে আবার এখন আদর করছে ব্যাপার কি! এই শয়তানটার ফ্লাটিংয়ের শেষ নেই। তবে মিমের আজ এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।

এই চুলে কোন শ্যাম্পু দাও! এতো সুন্দর স্মেল। (ঘোর লাগানো কন্ঠে)
ছাড়ুন।
না।

মানে কি!
মানে এখন তোমায় আমি……
আমমমমমায় ককককি!(কাঁপতে কাঁপতে)
আলভী মিমকে ছেড়ে দিয়ে বলে
যাও। আমার সামনে থেকে যাও।

মিম নড়ছে না অবাক চোখে আলভীকে দেখছে। আলভী শান্ত গলায় বলল
ডিমপাখি এখান থেকে যাও। না হলে আমি যে আজ তোমায় ভালোবাসবো।
মিম কিছু বলছেনা তবে আলভী যা বুঝাতে চেয়েছে তা ঠিক বুঝেছে তাই সেখান থেকে দৌঁড়ে চলে গেল। আলভী উঠে জানালার সামনে গেল খুব জোরে বাতাস বয়ছে ঝড়ের পূর্বাভাস।

আজ ওর ইচ্ছে করছে মিমকে বলতে
চলো ভাসা যাক
ভালোবাসা যাক
যেনো আর কিছুই পারি না
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তখনিই অভ্র এসে পাশে দাঁড়ায়। অভ্রকে হঠাৎ দেখে ভ্রুঁ কুঁচকায় আলভী অভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে
কিরে ল্যাঙলা! আর কতদিন অভিনয় করবি?

শালা আজ তোর জন্য আমার এই অবস্থা। শুধু শুধু নাটক করে এখন সব নষ্ট করছিস। না পারছি স্বাধীন ভাবে হাটতে না বসতে। তাছাড়া আজ আমার একটা ইমপোর্টেন্ট মিটিং আছে। এই মিটিংটার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। ধুর বাবার কাছে প্রমান করতেই পারলাম না যে আমি যোগ্য।
পারবি।

কিভাবে!
ভিডিও কলে। (টেডি স্মাইল দিয়ে)
আলভী যা বুঝার বুঝে গেছে। অভ্রকে জড়িয়ে ধরে বলল
থ্যাংকস ভাই।
ওয়েলকাম।

নুপূর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো চট্টগ্রাম ফেরেনি ভাইয়া ভাবীর সাথে তাদের ফ্লাটে আছে। সবাই চলে গেছে। ও এখানে কিছুদিন থাকবে তাই যায়নি। তাছাড়া অর্ণি আর মিম তো বাড়িতে যাবে তখন একসাথে যাবে সেই প্ল্যান আছে। আপাতত ভাইয়া ভাবীর সাথে থেকে ইন্জয় করছে। আলিফ গাড়ি এনে নুপূরের সামনে ব্রেক কষে। নুপূর কিছুটা অবাক হয় আলিফের তো এখন অফিস থাকার কথা এখানে কি করছে! (আলিফ বাবা জেঠুদের ঢাকার বিজনেস সামলায় তাই এখানকার ফ্লাটে থাকে। নিতুর বিয়ে উপলক্ষে চট্টগ্রাম যায়। আলিফ জানে নুপূর ঢাকায় আছে।

একটু আগে নুপূরের ভাবীকে ফোন করলে উনি জানায়। ) আলিফকে দেখে মিম ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে আলিফকে না দেখার ভান করে হাঁটতে থাকে। উদ্দেশ্য শপিং মল। মিম অর্ণিকে বলেছে কিন্তু ওদের পক্ষে আসা সম্ভব নয় তাই একা বেরিয়ে পড়েছে। নুপূর ঢাকা শহর ভালো করেই চিনে তাই একা একা বের হতে দেয় ওকে। আলিফ নুপূরের এমন ভাব দেখে গাড়ি থেকে নেমে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নুপূর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আলিফের দিকে তাঁকাতেই আলিফ ওকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দরজা লক করে দেয়।

পর্ব ৩১

শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নুপূর। আলিফ গাড়ি পার্কিং করে আসছে বলে চলে যায়। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানেই হয় না এই ধারণা নুপূরের। তবুও আলিফকে কিছু বলতে পারছেনা। অন্য কেউ হলে ঠাটিয়ে দিতো একটা তবে এখন সেটা সম্ভব নয়। উল্টো দেখা যাবে একটার বদলে দশটা খেয়ে বসে থাকতে হবে। পাব্লিক প্লেসে এমন মার খেয়ে মান সম্মান হারানোর কোনো ইচ্ছা নেই নুপূরের। নুপূর দাঁড়িয়ে আছে আর বার বার কি বিড়বিড় করছে হয়তো আলিফকে গালি দিচ্ছে। সেই সময় একটা ছেলে এসে ওর সামনে দাঁড়ায়। নুপূর ভ্রুঁ কুঁচকায় ছেলেটি হাত বাড়িয়ে বলে
হায় আমি সোহরাব।

সোহরাব নামটা শুনে নুপূর অবাক হয়ে যায়। এটা কোন সোহরাব নিতুর দেবর নয়তো! ভালো করে ছেলেটির দিকে তাঁকিয়ে দেখে হ্যাঁ এটা নিতুর দেবর সোহরাব। সিনানরা তিন ভাই এর মধ্যে সিনান বড় সোহরাব মেজো আর সাবিত ছোট। নুপূরকে লাইন মারার অনেক চেষ্টা করেছে তবে সম্ভব হয় নি। ছেলেটা যখনিই নুপূরের সাথে কথা বলতে যেতো ওমনি আলিফ ব্যাঘাত ঘটাতো। এবারো তার ব্যাতিক্রম হলো না।

আলিফ নুপূর আর সোহরাবকে এক সাথে দেখে রেগে যায়। তারপর দ্রুত গতিতে হেটে নুপূরের সামনেব তবে সোহরাবের পেছনে দাঁড়ায়। নুপূর দেখলেও সোহরাব দেখতে পারছেনা। আলিফকে দেখে নুপূরও বড় সড় একটা ঢোক গিললো। তারপর হাবার মতো সোহরাবের দিকে তাঁকিয়ে রইল। নুপূরকে ইশারায় চুপ থাকতে বলল। সোহরাব ভাবলো নুপূর ক্রাশ খেয়েছে ওর উপর তাই একটু চুল টুল নাড়িয়ে ঢং করছিলো। তারপর নিজে থেকেই বলা শুরু করলো
হেই বিউটিফুল! তুমি জানো তোমাকে আমার কতোটা ভালো লাগে!
কি!

হুম। তোমাকে প্রথম দেখাতেই আমার মনের মধ্যে পিয়ানো বেজেছিল।
পিয়ানো মনের মধ্যে বাজে নাকি!
হুম বাজে তো। খুব জোরে আর সুরেলা ভাবে।
কীভাবে?

কীভাবে! ধরো তোমার প্রেমে পড়াতে।
হোয়াট! আমার প্রেমে পড়াতে পিয়ানো বেজেছে! কি ভাট বকছেন আপনি! (আড়চোখে আলিফের দিকে তাঁকিয়ে বলল তবে আলিফের রাগী ফেস দেখে ওর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। )

হুম। প্রথম দেখাতে প্রেম হয় এই কথা কি বিশ্বাস করো!
হুম। (কাঁপা কন্ঠে)
তাহলে আর কি! তুমি জানো তোমার সাথে একবার কথা বলার জন্য কতোটা ছটফট করেছি!

উহু। (মাথা নাড়িয়ে)
জানবে কি করে! ঐ শালা হারামিটা জানতে দিলেই তো। (বিরক্তি ভাব নিয়ে)
কোন শালা হারামি!
কে আবার! ভাবীর ভাই আর তোমারও ভাই আলিফ।

আলিফের নাম শুনে নুপূরের অটোমেটিক কাশি শুরু হয়ে গেলো। আজ এই সোহরাবের নিস্তার নেই। তা নুপূর ভালো করেই জানে।
নুপূরকে চুপ করে থাকতে দেখে সোহরাব বলল
কি হলো! কোথায় হারিয়ে গেলে! আমারতো মনে হয় নিশ্চয় তুমিও ঐ আলিফের উপর বিরক্ত?
এই কথাটা শুনে নুপূর আপনা আপনি মাথা দুলিয়ে বলে দিল
হুম।

নুপূরের মুখে এমন কথা শুনে এবার মনে হয় আলিফের কান থেকে গরম ধোয়া বের হচ্ছে। আজ নুপূরকে ও কাঁচা চিবিয়ে খাবে। এতো বড় অপমান তো সহ্য করার মতো নয়।

মিটিংটা শেষ করে মাত্র অভ্রর সাথে বসে কফি খাচ্ছিল আলভী। তখন হুট চরে সিনান চলে আসে। সিনানের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে খুব চিন্তিত তাই অভ্র জিজ্ঞেস করলো
কিরে এতো দৌঁড়াচ্ছিস কেন? বউ কি জুতা পেটা করছে নাকি!
জুতা পেটা করবে তবে আমাকে না আলভীকে আর তুইও খেতে পারিস তোর বউয়ের হাতে।

মানে!
মানে হলো আলভীর বাবা আর মিম এক্স রে রিপোর্টটা চাইছে। আজ তিনদিন হলো কোনো না কোনো বাহানা করে কাটিয়ে দিচ্ছি। আজ লাস্ট ডেট এখন কি করবো!
সিনান! তুই এতোটা গাঁধা হবি আমি জাস্ট ভাবতে পারিনি।
হোয়াট!

ইয়েস। তুই সব ফেক করলি আর একটা ফেক রিপোর্ট আনতে পারছিস না!
তোর কি মনে হয় আমার মাথায় এই চিন্তা আসে নাই? আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু যেই রিপোর্ট এরেন্জ করেছি তা একদম অকাজের। উল্টো আমাদের আরো বেশি সমস্যায় ফেলবে।
ক্লিয়ার করে বলো সিনান ভাই।

আরে যে রিপোর্ট আছে ঐটার অবস্থা এক্কেবারে খারাপ। হাড় পুরাই ভেঙ্গে গেছে। ক্রিটিকাল অবস্থা এখন তোর বাবা যদি এই রিপোর্ট কোনো ডক্টরকে দেখায় সে তো বলবে অবস্থা সিরিয়াস অপারেশন করানো লাগবে। তখন দেখবি বিনা রোগে অপারেশন করে তুই সত্যি পঙ্গু হয়ে যাবি।
সিনানের কথা শুনে অভ্র রীতিমতো বিষম খেতে লাগলো। আলভী বেচারা একবার সিনানের দিকে তাঁকাচ্ছে তো একবার অভ্রর দিকে।
অভ্র কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে আলভীকে বলল
দেখ এমনিতেও অনেক হয়েছে। তুই যেহেতু বলছিস মিম তোর প্রতি কিছুটা দুর্বল হয়েছে সো আমি মনে করি সত্যিটা বলে দেওয়া দরকার। কয়দিন একটা মিথ্যে নিয়ে মানুষ বাঁচতে পারে!

মানে কি! তোরা বলেছিস এখন আবার তোরাই আমাকে বলছিস সব বলে দিতে। পেয়েছিস টা কি হ্যাঁ!
দেখ তখনকার পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি এক নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের তখন মেইন টার্গেট ছিলো মিমকে যে করেই হোক আটকে রাখা। তা তো হয়েছে সো এখন আর নয়। তাছাড়া এখন চাইলেও এতো সহজে যাওয়া যাবেনা। আই থিঙ্ক তুই বুঝবি।
অভ্রর কথা শুনে আলভী ভাবনায় পড়ে গেল। ভুল কিছু তো বলেনি যা বলেছে ঠিক বলেছে তবে এখন কি করা যায়! কি করলে সব ঠিক থাকবে!

সোহরাব আর নুপূরের এমন কথা শুনে আলিফ সোহরাবের পেছন থেকেই বলে ওঠে
আমি হারামি! আমি শালা!
পেছন থেকে কারো গলার স্বর পেয়ে সোহরাব পেছনে ফিরে। আলিফকে দেখে 880 ভোল্টের ঝটকা খেয়ে নুপূরের দিকে মিনমিনিয়ে তাঁকায়। দেখে নুপূরও ভয়ে চুপসে আছে। ব্যাপারটা সুবিধার ঠেকছেনা তাই এই মুহূর্তে এখান থেকে কেটে পড়াটাই শ্রেয়। মুখে অনিচ্ছাকৃত হাসি ফুটিয়ে আলিফকে উদ্দেশ্য করে বলে
আরে আলিফ ভাই যে! কেমন আছেন?

আলিফও হেসে বলে
খুব ভালো। অনেক ভালো। (শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে)
ওহ।
(ভয়ে ভয়ে)
তো ভায়া কি বললে তুমি আমি শালা হারামি!(চোখ রাঙিয়ে)
এই না না ভাই। ছিহ্ কি বলছেন এগুলো আপনাকে আমি এসব বলতে পারি!
তো কাকে বলছিলে!
কাউকে না।

কাউকে বলোনি!
না। আসলে ভাই আমার একটা কাজ আছে তো আমি আসি।
বলেই দিল এক দৌঁড়। আলিফ এবার দাঁত কটমট করে নুপূরের দিকে তাঁকালো। নুপূর তা দেখে জোর পূর্বক মুখে হাসি টেনে বলল
তাহলে যাওয়া যাক!

পর্ব ৩২

মিম অর্ণির উপর আজ রান্না করার দায়িত্ব পড়েছে। দুজনেই বেশি রান্না পারেনা,তবে ভাত রাঁধতে পারে। তাই ভাত রেঁধে নিলো। শুধু ভাত কি খাওয়া যায় নাকি! তার জন্য তরকারির প্রয়োজন হয়। আর ওরা কিছুই পারেনা। অভ্র কতক্ষণ পর পর এসেই ঢু মেরে চলে যায়। ব্যাপারটা ওকে খুব মজা দিচ্ছে। আলভীও আসে তবে লুকিয়ে কেউ দেখলে তো সমস্যা। তবে অভ্র আর আলভীরও টেনশন হচ্ছে। কারণ ওদের দাদু/নানু খুব কড়া। পান থেকে চুন খসলে কান্ড বাঁধিয়ে দেয়। ওরা চায় না অভ্রর দাদুর জন্য ওদের দুজনের মনে কষ্ট যাক। তাই দুজনে রুমে বসে প্ল্যান কষছে কি করা যায়। অবশেষে বুদ্ধি বের করে আলভী।
ঐ ব্যটা বুদ্ধি পাইছি!
কি?

আমার বউরে বাঁচানোর একটা সহজ পদ্ধতি পাইছি।
আব্বে শালা তোর বউ একলা ফাঁসছে নাকি! আমার বউও তো ফেঁসে গেছে। আমার বাচ্চা বউরে দিয়ে কতো কষ্ট করায় আমার যে আর সহ্য হচ্ছে নারে।
অভ্রর কথা শুনে আলভী হো হো করে হেসে দেয়। অভ্র রাগী চোখে তাঁকাতেই আলভী চুপ হয়ে যায়।
কি বুদ্ধি বের করছিস সেটা বল।

অভ্র আমি আর তুই তো রান্না পারি। গেট টু গেদারে কতো বিরিয়ানি চিকেন ফ্রাই স্যালাড পাকোড়া করেছি। সো এখন আমরাই রেঁধে নেই!
আরে বেটা ল্যাঙলা! তুই কি ভুলে গেছোস যে তুই এখন হাটতে পারোস না!
এবার অভ্র হো হো করে হাসতে লাগলো আর আলভী চুপ করে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর দুজনে একটা সুন্দর প্ল্যান কষে নেয়।
অর্ণি আর মিম দুজনেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আজ ওদের মান সম্মান সব যে যাবে। দুজনের এখন কান্না করতে ইচ্ছা করছে। কেন মায়েদের কথা শুনে দু তিনটা রেসিপি শিখে নাই! অভ্রর মা বারবার বলছে যে উনি রেঁধে দিবে কিন্তু দাদি বকছে তাই তিনিও সাহায্য করতে পারছেনা। এই মুহূর্তে কিচেনে কেউ নেই তাই অভ্র আর আলভী আসে।

এমন এক ভাব করে আলভীকে আনছে যেনো সত্যি কারের ল্যাঙলা পোলা। ওদের দেখে অর্ণি আর মিম অসহায়ের মতো চেয়ে রইলো। বেচারিদের কষ্ট দেখে ওদের একটু খারাপ লাগলো তবে মুখ টিপে হাসা হাসি করছিলো। তা দেখে ওরা দুজন রেগে যায়। অর্ণি মিমকে বলে
আমরা সব পারি তাই না মিম! আমরা নিজেরাই নিজেদের সব রান্না করে নিবো। কারো উপহাসের দরকার নেই আমাদের।
একদম।

আচ্ছা তাই নাকি! যারা ভাত রেঁধে দু ঘন্টা যাবৎ বসে আছে তারা বাকি সব রান্না করবে ভাবলেও কেমন একটা লাগে তাই না অভ্র!
হুম। আমরা তো এসেছি দুটো অবলা নারীকে সাহায্য করতে। তাদের আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন না হলে দরকার নেই এখানে থাকার চল চল।
আপনারা সাহায্য করবেন মানে!
ভেবেছিলাম আমরা রান্না করবো। আর তোমরা বসে থাকবে ক্রেডিট টাও নিবে তা আর হলো কই?
থাক অভ্র চলে আয়। তাদের আমাদের সাহায্যের দরকার নেই।
আছে আছে।

মিমের কথা শুনে অর্ণি রাগী চোখে তাঁকায় ওর দিকে তারপর মিম বলে
ওরা যদি পারে তাহলে সাহায্য করুক দেখ এটা শুধু আমাদের নয় আমাদের বাবা মায়েরও মান সম্মানের ব্যাপার।
অর্ণি কিছুক্ষণ ভেবে বলে হুম। তারপর সবাই কাজে লেগে পড়ে আলভী ছাড়া। ও শুধু সোফায় বসে পাহাড়া দিচ্ছে কিচেনের দিকে কেউ গেলেই শিষ বাজাবে আর যা শুনে অভ্র লুকাবে। অভ্র প্রথমে মুরগীর মাংস নিয়ে চুলায় বসায় রোষ্ট করবে তাই।

তারপর পোলাও করে তারপর চিংড়ী মাছের মালাইকারি করে। অবশ্য একটু আগে এই সব রেসিপি ইউটিবে দেখে এসেছে। তাই সমস্যা হচ্ছেনা ওর। অর্ণি আর মিম তো রীতি মতো অবাক। অভ্র তা দেখে মুঁচকি হাসে। তখনিই আলভী জোরে শিষ বাজায় অভ্র কিচেনের পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়। আর অর্ণি আর মিম একটা চামোচ নিয়ে নাড়তে থাকে। অভ্রর মা এসে দেখে ওরা দুজন সুন্দর করে রাঁধছে তা দেখে উনি খুশি হয়ে চলে গেলেন। উনি চলে যাওয়ার পর অভ্র আবারো এসে বাকি রান্না করে দেয়।

নুপূরকে ঠাস করে একটা থাপ্পর মারে আলিফ। নুপূর কাঁদো কাঁদো হয়ে তাঁকাতেই আলিফ বলে
আমি অসহ্যকর তাই না! আমাকে নিয়ে তোর এতো সমস্যা হয় কেন? বাকি ছেলেদের সাথে তো খুব ভালো লাগে। কেন রে? আমার মধ্যে কি নেই যা ওদের সবার মধ্যে আছে? টাকা পয়সা গাড়ি বাড়ি সব আছে। এমন তো নয় আমি দেখতে খারাপ! আমার জন্য কতো মেয়ে পাগল হয়ে আছে আর আমি যার জন্য পাগল সে তুই আমায় পাত্তা দেস না।

ওয়াও!
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো বলল
ছেলেদের সাথে তোর কীসের এতো কথা তোর! বল!

এবার নুপূর রেগে গিয়ে বলে
আমি কার সাথে কথা বলবো না বলবো সেটা আমার ব্যাপার। তুমি বলার কে! তুমি যখন একশোটা মেয়ের সাথে কথা বলো আমি কিছু বলি নাকি! আর শোনো টাকা দিয়ে আর সৌন্দর্য দিয়ে সব হয় না আলিফ ভাই। তোমার মধ্যে কি নেই জানতে চাও! তোমার মধ্যে মানুষকে বোঝার ক্ষমতা নেই, তোমার মধ্যে সুন্দর অমায়িক হৃদয় নেই, আমি তোমার সাথে কখনো কমফোর্টেবল ফিল করিনা। কারণ তুমি সবসময় আমাকে কোনো না কোনো ভাবে কষ্ট দাও।

তুমি আমার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করেছো। আমি যা করতে চাই তা করতে পারিনা। সর্বক্ষণ মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে। কিছু করতে গেলেই মাথায় আসে আলিফ ভাই জানলে কি হবে? আমাকে মারবে নাকি বকবে! এমন ভয় নিয়ে আমি চলতে পারিনা। আসল কথা তুমি আমাকে কখনোই বুঝোনি আর না বুঝবে। নেক্সট টাইম আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করার চেষ্টাও করবেনা (আঙুল তুলে বলল)
কথা গুলো বলে নুপূর কাঁদতে কাঁদতে চলে এসেছে। আজ মনের মধ্যে একটা শান্তি লাগছে। আজ আলিফকে উচিত জবাব দিতে পেরেছে ও। আজ ভয়ও লাগছেনা যা হওয়ার হবে আর এসব নিয়ে কোনো মাথা ঘামাবেনা।

আজকের রান্নটা সবার খুব ভালো লেগেছে। অনেক প্রশংসাও করেছে। অভ্র আর আলভী তাতে মিটিমিটি হাসছিলো। তবে অর্ণি আর মিম ভয়ে ভয়ে ছিলো কেউ যদি জেনে যায় তাহলে! অভ্ররা ওদের আস্থা দেয় কিছু হবেনা। ওরাও ভরসা পায়। সবার মুখে রান্নার প্রশংসা শুনে স্বস্তির শ্বাস নেয়।
রাতে মিম নিজের ব্যাগের সব কিছু একবার চেক করে নেয়। তখন ওর হাতে একটা বক্স লাগে খুলে দেখে ভেতরে সেই জুয়েলারি যা ও অর্ণির বিয়েতে চুজ করেছিলো। তবে ওর স্পষ্ট মনে আছে এটা ও কিনে নাই।
কে দিয়েছিলো এটা! কে সেই ব্যক্তি! মিম আয়নাতে তাঁকালে দেখে আলভী ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে, মুখে রহস্যময় হাসি।

পর্ব ৩৩

আলভীর দিকে তাঁকিয়ে মিম কিছুটা অবাক হলো। হঠাৎ এমন হাসির কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা ও। বক্সটা হাতে নিয়েই আলভীর পাশে গিয়ে বসে আলভীকে উদ্দেশ্য করে বলল
ব্যাপার কি এমন হাসছেন কেন?

কোথায় হাসছি তুমি চোখে বেশি দেখো নাকি!
আমি বেশি দেখিনা আবার কমও দেখিনা। আমি এখন স্পষ্ট দেখেছি আপনি হাসছেন তাও আবার আমার দিকে তাঁকিয়ে।
আচ্ছা হেসেছি নাকি! তোমার দিকে তাঁকিয়েই হাসছি নাকি! ওহ ফানি বস্তু দেখলে তো মানুষ হাসেই।
কি বললেন আমি ফানি!

তা নয়তো কি?
দেখুন…
দেখাবে! আচ্ছা দেখাও তো! (একটু সরে বসে তারপর ডেভিল স্মাইল দেয়)
আপনি!
কি আমি?

আপনি আস্ত একটা রাক্ষস।
তোমার বর তো তারমানে তুমি রাক্ষসী।
আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।
আচ্ছা!
হুম।
ওহ্।

কিছুক্ষণ পিনপতন নিরবতা চলে। তারপর আলভী হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়। আলভীকে উঠে দাঁড়াতে দেখে মিমের মুখ আপনা আপনি হা হয়ে যায়। আলভী তার পরয়া না করে মিমকে বলে
যেহেতু নিজের চোখে দেখতেই পারছে তাহলে ওতো ভেঙে বলার দরকার নেই। আর হ্যাঁ তুমি যা দেখছো ঠিক দেখছো আমার কিছু হয়নি।
আপনি!
নাটক ছিলো সব।

কিভাবে পারলেন এমন করতে!
না পারি কিভাবে সেটা বলো! তোমাকে সেই প্রথম দিন থেকে ভালোবাসি আমি। কিন্তু তুমি প্রথম দিন থেকেই আমাকে সহ্য করতে পারোনা। মানলাম আমি কিছু অসহ্যকর কাজ করেছি তাই বলে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার মতো শাস্তি তো তুমি দিতে পারোনা। আমি হয়তো তোমার মায়ায় জড়িয়ে একটা ভুল কাজ করে ফেলেছি। তোমাকে কিস করা আমার উচিত ছিলো না।

কিন্তু কি করবো বলো! মন বলেছে তাই শুনেছি। কারণ সবাই বলে আগে মনের কথা শুনতে। তাহলে তুমিই বলো আমি দোষের কি করেছি! আমি তো কোনো খুন খারাবি করিনি। ভালোবেসেছি আর তার কারণে তোমায় স্পর্শ করেছি। তার জন্য ক্ষমা চেয়েছি তা কি এখন যথেষ্ট নয়। ঐ দিন রাতে তোমার বলা কথা গুলো খুব কষ্ট দিয়েছিলো আমাকে। ভয় পেয়েছিলাম খুব তোমাকে হারানোর ভয়। তাই আমাকে এ পথ টা বেছে নিতে হলো।
মিম কি বলবে বুঝতে পারছেনা। একটা লোক কিভাবে এতোটা ভালোবাসতে পারে! ও কখনো ভাবেনি কেউ ওকে এতোটা ভালোবাসবে। আজ কি আলভীকে ক্ষমা করা যায়! এখন তো ওর ও ইচ্ছে করে আলভীকে ভালোবাসতে।

মিমের নিরবতা দেখে আলভী আবার বলল
চিন্তা করোনা ডিমপাখি। আমাকে জোর করে ভালোবাসতে হবেনা। তোমার এই নিশ্চুপতা আমাকে এটার জানান দিচ্ছে যে তুমি হয়তো আর নিজের মত বদলাবে না। আলমারিতে ডিভোর্স পেপার আছে চাইলে সাইন করে দিতে পারো। দাঁড়াও আমি আনছি।
আলভী পা বাড়ায় ওমনি মিম ওর হাত খপ করে ধরে ফেলে তারপর বলে
এতো স্বার্থপর কেন আপনি?

নিজে ভালোবাসার রং লাগিয়ে নিজেই সেই রং মুছে দিতে চাইছেন!
মানে! (অবাক চোখে)
আপনি বুঝেন না নাকি আবারো নাটক করছেন! আমার মনের অবস্থা না বুঝেই এমন সিদ্ধান্ত কেন নিচ্ছেন! আমি কি চাই একবারো তা জানতে চাইবেন না!
কি চাও তুমি?

ভালোবাসতে চাই আপনাকে। খুব ভালোবাহতে চাই। আপনার সাথে মরণের আগ পর্যন্ত থাকতে চাই। দিবেন আমায় সে সুযোগ! (ছলছল চোখে)
ডিমপাখি!
হুম।

আলভী মিমকে জড়িয়ে ধরলো মিমও আজ স্বেচ্ছায় আলভীকে জড়িয়ে ধরেছে। আলভী বলে
আই লাভ ইউ ডিমপাখি। আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি আমার ভালোবাসায় আমি তোমাকে রাঙিয়ে দিতে চাই। তুমি দিবে আমায় সেই অধিকার!
হুম।
মিমের সম্মতিতে আলভী মুঁচকি হেসে ওকে কোলে তুলে নেয়। আজ যে কোনো বাধা নেই। আজ সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সে তার মিমকে পেয়েছে। জয় হয়েছে ভালোবাসার।

শুয়ে শুয়ে আলিফকে তখনকার বলা কথা গুলো ভাবছে নুপূর। তখন তো রাগের মাথায় সব ক্ষোভ ঝেরে ফেলেছে। এবার যদি আলিফ তাতে এমন কোনো রিয়েকশন দেয় যাতে নুপূরের দফা রফা হয়ে যাবে তাহলে কি হবে! ভাবতেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। থাক যা হওয়ার হবে এখন ঘুমানোই বেটার তাই লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো।
ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কারো নিশ্বাস মুখে পড়ছে। নুপূর পিট পিট করে চোখ মেলে নিজের উপর আলিফকে দেখে ভয়ে চিৎকার করবে তার আগেই আলিফ ওর মুখ চেপে ধরে। তারপর বলে
চুপ কর নাহলে আজ তোকে খুন করেই তবে আমি এখান থেকে যাবো।

নুপূর গোঙানির মতো আওয়াজ করছে তা দেখে আলিফ বলে
আগে বল চুপ থাকবি নাকি!

আলিফের কথাতে নুপূর মাথা নাড়ায়। যার অর্থ সে চুপ থাকবে। আলিফ তা দেখে হাত সরায় আর নুপূর উঠে আলিফকে নিজের থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হন্তদন্ত হয়ে কি খুঁজতে থাকে। তখন আলিফ বলে
এটা খুঁজছিলি!
আলিফের থেকে খপ করে ওড়না নিয়ে নুপূর তাড়াতাড়ি পড়ে নেয়। তা দেখে আলিফ বাঁকা হেসে নুপূরের পাশে শুয়ে পড়ে। নুপূর তা দেখে তাড়াতাড়ি খাট থেকে নেমে যায়। আর আলিফ ঠোঁট কামড়িয়ে হাসে।

অর্ণির সাথে ঝগড়া করে বারান্দায় শুয়ে আছে অভ্র। অর্ণির এক কথা এখান থেকে আজ যাতে না উঠে উঠলেই সমস্যা হবে। কুরক্ষেত্র হয়ে যাবে।

পর্ব ৩৪

আলিফের সামনে কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নুপূর। আলিফ তো সেই কখন এক ঘুম দিয়েছে তার যে কোনো খেয়াল নেই এদিকে মেয়েটা হাত পায়ের ব্যাথায় অস্থির হয়ে গেছে। কান থেকে চাইলে হাত সরাতে পারতো কিন্তু তাও করতে পারছেনা কারণ আলিফ ক্যামেরা অন করে রেখেছে। সব ভিডিও হচ্ছে। পরে যদি ও হাত ছেড়ে দেয় সেটা তো দেখবেই আর যদি নুপূর ভিডিওটা বন্ধ করে দেয় তাহলে তো আরো বেশি শাস্তি পেতে হবে তাকে। এবার প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় চিৎকার করে আলিফকে ডাকলো

আলিফ ভাই! ও আলিফ ভাই! (বলেই ভ্যা করে কান্না করে দিল)
আলিফ এমন বেসুরা কান্নার শব্দে ধড়পড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে গেল। তারপর নুপূরকে একটা ধমক দিয়ে বলতে লাগলো
এই অসভ্য মেয়ে দিব এক থাপ্পর। এমন কান ফাটা চিৎকার দিচ্ছিস কেন?
আমার হাত পা ব্যাথা করছে।

কেন? ওহ্ তোকে তো আমি শাস্তি দিয়েছি। এবার বুঝ ঠেলা।
আলিফ ভাই! আমি আর পারবোনা।
আমাকে কথা শুনানোর আগে মনে ছিলো না! এখন ভুগো।
আমি তো সত্যি বলেছি।

সত্যিই বলিস আর যাই বলিস আমাকে নিয়ে তো খারাপ মন্তব্য করলি।
তুমি যেমন আমি তো শুধু সেটা বিশ্লেষণ করলাম।
আহ্ কথার মধ্যেও কি দেমাগ। বিশ্লেষণ করেছে সে। আমি বলছি তোরে বিশ্লেশণ করতে!(ধমক দিয়ে)
জিজ্ঞেস করেছো তো।

চুপ কর বেয়াদব। আমার যখন যা ইচ্ছা হবে আমি তা করবো। তোকে মারবো কাটবো বকবো কিন্তু তুই কিছু বলতে পারবিনা।
কেন? এটা অন্যায়।
হুম আমিও জানি অন্যায়। তবে তোর ব্যাপারে এ সব কিছু বৈধ।
এটা কি সংবিধানে লেখা আছে?
হুম। আমার সংবিধানে লেখা আছে।

তোমার আবার সংবিধান আছে!(অবাক চোখে)
তো আছে তো। আমার সব আছে। আর শুন তুই যে স্বাধীনতার কথা বলছিস সেটা তুই পাবি তবে তোর বিয়ের পর।
কেন বিয়ের পর কেন? এখন পেলে সমস্যা কোথায়? সবাই তো এখনও পায় বিয়ের পরেও পায়।
সেটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও তোর ক্ষেত্রে নয়।
কেন?

কারণ আমি বেশি রিস্ক নিতে চাইনা।
মানে!
এতো মানে বুঝে তোর কাজ নেই তুই এখন ঘুমা।

আলিফের কথা শুনে নুপূর খুশি হয়ে কান থেকে হাত সরিয়ে নেয়। শুতে যাবে তখন মনে হলো এখানে আলিফ আছে। ব্যাপারটা কেমন খারাপ দেখায় না! আর তাছাড়া অস্বস্তি হচ্ছে ওর। তাই আলিফের দিকে তাঁকায়। আলিফ বলে
চিন্তা করিস না আমি এখন চলে যাবো।
আচ্ছা।
আলিফ দরজা খুলে বের হতে নিলে নুপূর হাত ধরে আটকায়। আলিফকে বলে
আলিফ ভাই তুমি এভাবে যাবে! মাথা ঠিক আছে? ভাইয়া দেখলে সমস্যা হবে তো।
তোর মাথা হবে। আমি পাশের রুমেই যাবো।
মানে?

আমি এসেছি সেটা সবাই জানে। এখন চুপ করে যা
আলিফ চলে যায় আর নুপূর ভাবতে থাকে যে আলিফ একটা পাগল। মাথার তার ছিঁড়া। তাই এসব উল্টা পাল্টা কাজ করে।

—————-সকালে—————-
অভ্র ঘুম থেকে উঠে বারান্দার দরজা ধাক্কাতে থাকে। দেখে অর্ণির কোনো সাড়া শব্দ নেই। আরেক বার দরজা ধাক্কা দিলে খুলে যায় তার মানে অর্ণি লক করেনি। অভ্র ভেতরে ঢুকে যায়। তারপর যা দেখে তার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না। অর্ণি ফ্লোরে শুয়ে আছে। অভ্র দ্রুত অর্ণির কাছে গিয়ে ওকে ডাকতে থাকে। অর্ণির হুশ নেই তাই ও ওকে খাটে শোয়ায়। তারপর আলতো ভাবে ডাকে তখন অর্ণি চোখ মেলে তাঁকায়। অভ্র অর্ণিকে চোখ মেলতে দেখে বলে
এই তুমি নিচে শুয়েছিলে কেন? মাথা খারাপ হইছে!(ধমক দিয়ে)
আপনিও তো ফ্লোরে ঘুমিয়েছেন।

সেটা আমার শাস্তি ছিলো। আর আমি ঘুমায়ছি বলে কি তুমিও ঘুমাবা নাকি?
হ্যাঁ। আপনি কষ্ট করে ঘুমাতে পারলে আমি পারবো না কেন?

অর্ণি!(রাগী চোখে)
আপনার অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না! সরি আর কখনো আমি আপনার সাথে ঝগড়া করবো না।
চুপ! আমার কোনো কষ্ট হয়নি বরং ইন্জয় করেছি।
আপনি মিথ্যা বলছেন। আপনার তো নিচে ঘুমানোর অভ্যাস নেই।

শাস্তিটা তো তুমি দিয়েছিলে। এখন আবার তুমিই সেই শাস্তিটার জন্য কাঁদছো!
হুম। ভালোবাসি খুব তাই আপনার কষ্ট সহ্য হয় না।
আহ কি ভাগ্য আমার। বউ শাস্তি দেয় আবার নিজেই কাঁদে।
মজা নিচ্ছেন?

তুমি মজা নিতে দিচ্ছো তো তাই।
অভ্র!
আচ্ছা সরি এখন তুমি ঘুমাও। তোমারও নিচে ঘুমানোর অভ্যাস নেই। নিশ্চয় মাথা ব্যাথা করছে।
আপনি বুঝলেন কি করে?

আমারো করছে আর তোমার মুখ দেখে বুঝাও যায় যে তোমার শরীর ভালো না।
আপনার মাথা ব্যাথা করছে!(চট করে উঠে যায়) দাঁড়ান বিক্স এনে মাসাজ্ করে দিচ্ছি।
না। ওটার দরকার নেই ঘুমালেই ঠিক লাগবে। তুমি বসো আমি আনছি।
কেন?

তোমারও তো ব্যাথা করছে। আমার তো ঘুমালেই ঠিক হবে তোমার তো এতো তাড়াতাড়ি ঠিক হবে না।
অভ্র বিক্স এনে অর্ণির কপালে লাগিয়ে দেয় তারপর দুজনে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। তবে এবার বিছানাতে ঘুমায়।

আলভী ঘুম থেকে উঠে একবার মিমের দিকে তাঁকায়। ওর কপালে একটা চুমো দিয়ে উঠে ওয়াশরুমে যায়। মিমের ঘুম ভাঙলে পাশে আলভীকে না দেখে আশেপাশে তাঁকায়। তখন আলভীকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে আবার শুয়ে পড়ে। আলভী একটা হাসি দেয় তারপর…

পর্ব ৩৫

আলভী মিমকে কিছু না বলে রেডী হয়ে চলে যায়। মিম ও হাফ ছেঁড়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। সিনানের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে নামে আলভী। সবাই ওর এমন সাধারণভাবে হাঁটা চলা দেখে অবাক। আলভীর মা এসে বলে
বাবা তুই হাঁটতে পারছিস!
হ্যাঁ মা।

না এটা তো সম্ভব না।
কেন সম্ভব নয়?

তোর তো,,,,
আচ্ছা মা তুমি কি আমার হাঁটতে পারা দেখে খুশি নও?

খুশি তো। কিন্তু কীভাবে পারছিস!
কীভাবে মানে? সবাই যেভাবে হাঁটে আমিও সেই ভাবেই হাঁটছি মা।
সিনান যে বলেছে দু সপ্তাহ লাগবে। সবে তো এক সপ্তাহ হলো।

আরে তুমি ভুল বুঝেছো। বলেছে বেশি হলে দু সপ্তাহ লাগবে। আর আমার বেশি সময় লাগেনি। তোমাদের সেবায় তো আমি পুরোপুরি সুস্থ।
ও তো এতোদিন খুঁড়িয়ে হাঁটতো এখন ঠিকমতো হাঁটছে সেটা তো ভালোই। (অভ্রর মা)
যাক আলহামদুলিল্লাহ্। তুই সুস্থ হয়েছিস এটাই অনেক। যা খেতে বস আর বউমা কোথায়?
আসছে।

এই আলভী এদিকে আয় তোর মা যে কথার ঝুলি খুলেছে সহজে বোধ হয় ছাঁড়বেনা। তুই খেয়ে নে বাবা। (অভ্রর মা)
আহা তুই সবসময় আমাকে এমন পঁচাস কেন বলতো?

আমার ইচ্ছা হলে আমি পঁচাবো তোকে। তোর ওতো ভাবতে হবেনা। (মুখ ভেংচি দিয়ে)
[অভ্রর মা আর আলভীর মা মিসেস নিশি বেষ্ট ফ্রেন্ড। কলেজে পড়ার সময় যখন অভ্রর বাবার বাড়িতে আসতো তখন অভ্রর বাবার ওনাকে পছন্দ হয়। তারপর ধীরে ধীরে প্রেম বিয়ে বাচ্চা কাচ্চা। অভ্রর মা ঠিক করেছে অভ্রর সাথে মিসেস নিশির মেয়ের বিয়ে দিবে। তখন মিসেস নিশি প্রেগন্যান্ট ছিলো।

দুই বান্ধবীর ধারণা ছিলো হয়তো মেয়ে হবে তাই আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখেছিলো যে বড় হলে তার মেয়েকে ঘরের বউ করে আনবে। অভ্র তখন এক বছরের ছিলো যখন আলভী হয়। ছেলে হয়েছে দেখে ওনারা খুব হতাশ হয়। ভাবে পরের বার দিবে কিন্তু পরের বার আর বাচ্চা হয়না আলভীর মায়ের। এখনো যখন তারা অভ্র আলভীর সামনে এসব বলে ওদের কেমন বিদঘুটে লাগে ব্যাপারটা। তবে অন্যরা খুব মজা উঁড়ায়। ]

অভ্র শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নিচে নেমে আলভীকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটা ঝটকা খায়। বাড়ির সবাই সব জেনে গেছে এবার ওর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে এই ভেবে উল্টো ঘুরে সিড়ি দিয়ে উঠতে যাবে তখন দেখে মিম নেমে আসছে। অভ্রকে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো
আরে অভ্র ভাইয়া! মাত্রই তো দেখলাম রুম থেকে বের হয়েছেন আর এখন না খেয়ে চলে যাচ্ছেন যে!
মিমের কথা শুনে সবার দৃষ্টি সিড়িতে থাকা অভ্র আর মিমের দিকে পড়ে। অভ্র এবার মুখটা চুপসে নেয়। তারপর বলে
আসলে আমি
অভ্র খেতে আয়।

মায়ের ডাকে নিচে নেমে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে বুক থেকে পাথরটা ফেলে দেয়। স্বস্তির শ্বাস নিয়ে তাড়াতাড়ি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে। আলভীও অভ্রর পাশে বসে অভ্র তখন ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে
ঐ ল্যাঙলা এসব কি?
তেমন কিছুই না। আমার নাটক শেষ এই আর কি।

এতো সহজে!
হুম। সবাই সত্যিটা জানেনা শুধু মিম জানে।
মানে? সত্যিটা জেনে তোরে কিছু করছে!
হুম।
কি করছে?
আদর করছে।

মারের বদলে আদর! কেমন আদর করছে শালা!
অভ্রর কথা শুনে আলভী চোখ রাঙিয়ে বলে
ভাট বকিস না। আর আমি তোর শালা না।
মামা তাহলে প্ল্যান সাক্সেস ফুল?
হুম মামু।
যাক ভালোই হয়েছে।

আচ্ছা সবাইকে আমার একটা কথা বলার ছিলো। (সবাইকে উদ্দেশ্য করে)
কি কথা! (অভ্রর বাবা)
মামা আমি তো এখন সুস্থ হয়ে গেছি। সো আমার মনে হয় এখন আমাদের বাড়ি ফেরা উচিত। বিজনেসের অনেক লস হয়ে যাচ্ছে। এভাবে সব ফেলে বসে থাকা তো যায়

আর কয়দিন থাকলে কি সমস্যা?
না মামা আর নয়। এবার বরং তোমরা আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতে চলো। বাবা অনেক জোর দিচ্ছে বাড়ি ফিরার জন্য।
হ্যাঁ ভাইজান চলো না।

নিশি এখন সঠিক সময় নয়। তোরা বরং যা নতুন বউয়ের রিসিপশনের অনুষ্ঠান কর। সব ঝামেলা মিটলে আমি যাবো।
আচ্ছা। তাহলে কালকেই যাচ্ছি সব ঠিকঠাক করে নাও আম্মু।
আমার সব গুছানোই আছে।

আচ্ছা তাহলে আর কি! অভ্র তুই আর অর্ণি ভাবি যাচ্ছিস তো!
হুম অবশ্যই।
মামি!
তোর মামার সাথে যাবো।

কাব্য ভাই আরো কয়দিন থাকলে ভালো হতো এখন ফিরে যাওয়ার কোনো দরকারই ছিলো না।
হুম। তা যা বলেছিস।
মিম এতক্ষণ দাঁড়িয়ে সব শুনছিলো তখন ওর পাশে অর্ণি এসে দাঁড়ায়। আর মাথায় একটা গাট্টি মেরে বলে
কি শ্বশুড় বাড়ি যাচ্ছিস!(চোখ টিপ দিয়ে)
হুম।

(লজ্জা রাঙা মুখ করে)
ওলে বাবা তুই যে দেখি লজ্জাও পাস! এবার একা হাতে সংসারের সব দায়িত্ব নিতে হবে। হা হা হা কি মজা।
আমার একার নয় তোমারও নিতে হবে।
তোর থেকেও কম কারণ বড় ভাবি আছে। নেক্সট মান্থ আবার ব্যাক করবে। তাও একেবারে চলে আসবে।

হুহ। এখন তো একাই করবি সব কাজ।
করলে করবো। তোর মতো কাজ চোর নাকি আমি!
অর্ণি!(রেগে)
রাগ দেখাস! থাপ্পর চিনস তুই? একটা দিমু নাকি?
না আপা দরকার নাই কোনো থাপ্পর দিস না। মান সম্মান যাবে।

হুম। আপা বলে সম্বোধন করবি। আচ্ছা আমাদের নুপূরের কি খবর! আলিফ ভাইয়ের জ্বালায় হয়তো মূর্ছা গেছে। কি বলিস!
হয়তো। চল আজকে মিট করি ওর সাথে।
হুম। বিকেলেইট করবো। আমি তুই নুপূর মিলে আজ ঘুরতে যাবো।

আচ্ছা ঠিক আছে। তবে আলভী আর অভ্র ভাইয়া!
ওরাও যাবে একজন ড্রাইভার হিসেবে আরেকজন বডিগার্ড হিসেবে। আর এক কাজ কর আলিফ ভাইকেও বল তবে নুপূর যেন না জানে ভাইয়াও যাবে। তাহলে কিন্তু ও আসবেনা।
আচ্ছা আমি বলে দিব।

পর্ব ৩৬

আয়নার সামনে নিজেকে একবার পর্যবেক্ষণ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল নুপূর। আজ সবাই চট্টগ্রাম থেকে আবার আসবে। মিমের রিসেপশনের অনুষ্ঠানের জন্য। আর মিমরা নাকি সে জন্য আজ শপিং করবে ঘুরাঘুরিও করবে। আলিফ জানেনা শপিংয়ে যাওয়ার কথা তাই ও বেশি খুশি। মিম অর্ণিকে আজ কয়দিন পর দেখবে সেই খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে ও। ভাবিকে বিদায় দিয়ে নিচে নেমে আসে।

মারজান ভিলার সামনে দাঁড়াতে বলেছে যা ওদের ফ্লাটের পাশেই অবস্থিত। নুপূর গিয়ে সেখানে দাঁড়ায় তখন অর্ণি আর মিমদের গাড়ি আসে। মিম অর্ণি গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে নুপূরের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে। চোখের পানি চিকচিক করছে। তারা যে প্রাণের বন্ধু। কাজিন কম বন্ধু বেশি। একে অপরের বেষ্ট ফ্রেন্ড। তাদের বেষ্ট ফ্রেন্ডের খাতায় কখনো তৃতীয় ব্যক্তি ঢুকতে পারেনি। আর পারবেও না কারণ এই সম্পর্কের ভীত যে খুব শক্ত। প্রতিটি মানুষ যদি স্বার্থ ত্যাগ করে একে অপরকে ভালো বাসতে পারতো তাহলে আজকে এই পৃথিবী কতোই না সুন্দর হতে পারতো। আজ বন্ধুর অভাব নেই তবে প্রকৃত বন্ধুর খুব অভাব।

কেউ পায় না আর কেউ পেয়েও তার অবহেলা করে। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে একজন সৎ আদর্শবান বন্ধু আপনাকে সাহায্য করবে। আর যে স্বার্থপর সে তার নিজের জন্য ভাববে। বন্ধুর জীবনের পরোয়া সে কখনো করবেনা। সৎ সঙ্গ স্বর্গ বাস, অসৎ সঙ্গ সর্বনাশ। আজীবন এই কথা সত্যিই প্রমানিত হয়ে এসেছে এবং হবেই। মিম অর্ণি নুপূর এরা তিনজন একে অপরকে কতোটা ভালোবাসে তা কখনো মুখে স্বীকার করে নি। তাদের একজনের প্রতি আরেকজনের সহানুভূতি প্রেম দেখলেই তা অনুমান করা যায়। অভ্র যেদিন অর্ণিকে ভুল বুঝে চলে যাচ্ছিলো সেদিন এই মিম নুপূরই তাদের আবার এক করতে সহায়তা করে। শুধু তাই নয় একে অপরের খুশির কথা চিন্তা করে। এই দুনিয়াতে কয়জন মানুষই বা এমন করে!

নুপূরকে নিয়ে গাড়িতে বসলে ও আলভী অভ্রর সাথে সালাম বিনিময় করে মিম অর্ণির সাথে গল্প জুড়ে দেয়। সারাদিন কি করেছে আজ কি কিনবে নানুর বাড়ির আক্কাইচ্ছা, ঘুরতে গিয়ে পাগলের দৌড়ানি খেয়েছে এ ছাড়া নানান কথা বার্তা চলছে ওদের মধ্যে। কি সুখেই না দিন কাটতো তাদের। মাঝখানে একটা কথায় আলভী অভ্র হো হো করে হেসে দেয়। কারণ নুপূর অর্ণি আর মিমকে ইচ্ছে করে ওদের বরদের সামনে পঁচাচ্ছিলো। নুপূর কথার ছলে বলে
আরে আমরা যে নানুর বাড়ির শাকুতে উঠেছিলাম তখন যে মিম তোকে(অর্ণিকে) কিভাবে শাকু পার করতে হয় শিখিয়েছিলো মনে আছে!
আছে তো। আর বেশি দূর যাইস না চুপ যা।

আরে চুপ যাবো কেন? কতো ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিলো বলতো! মিম তো বাহাদুরি ঝেরে সামনে সামনে হাঁটতে নেয়। অর্ণি বলে আমার হাত ধর আর মিম ধরে হাঁটতে নেয় ওমনি পা পিছলে নদীতে পড়ে যায়।
অভ্র আর আলভী তখন একজন আরেকজনেরউখের দিকে তাঁকিয়ে হু হা করে হেসে উঠে। আর মিম অর্ণি খুব লজ্জা পায়। আলভী হাসতে হাসতে বলে
নুপূর নদীতে পড়ে এই দুই গুন্ডী বাঁচলো কিভাবে!

নদীতে তখন মামারা সহ আরো অনেকে গোসল করছিলো ওনারা প্রতি শুক্রবার যায় নদীতে গোসল করতে। আমাদেরও সাথে নিয়ে গেছিলো তখন আমরা সবাই ক্লাস ফোরে ছিলাম। আমি তো কোনোরকম শাকু ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ছোট মামা আর মোজো মামা মিলে সাতরে তাড়াতাড়ি পারে উঠায়। বেশি দূরে ছিলাম না তাই আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছে। মাঝ নদীতে পড়লে তখন এক্কেবারে ,,,,,
নুপূর! তুই এভাবে আমাদের মজা উঁড়াতে পারিস না।

আমি মজা উড়াচ্ছিনা ভাইয়া জানতে চেয়েছে তাই বললাম।
উনি যে উপহাস করছে তুই বুঝিস নাই!
নুপূর ইনোসেন্ট ফেস করে আলভীকে বলে
ভাইয়া আপনারা উপহাস করছেন?
একদম না।

বলেই আবারো হো হো করে হেসে উঠলো। মিম তখন রেগে গিয়ে বলে
হ্যাঁ মরলেই তো খুশি হতেন। আল্লাহ্ ঐদিন কেন যে মরণ দিলো না! দিলে আপনার মতো একজনের সাথে থাকতে হতো না।
মিমের কথাতে যে আলভী খুব রেগে গেছে তা ওর মুখে দেখেই বুঝেছে। এই জন্য আর কথা বাড়ায়নি।
শপিংমলের সামনে গাড়ি থামে। নুপূর খুশি মনে গাড়ি থেকে নেমে একটা ঝটকা খেল। মুহূর্তেই মুখটা চুপসে গেল। তা দেখে অর্ণি আর নুপূর হেসে বলল
টিট ফর ট্যাট বেইবি।

নো গাইস। এটা ঠিক নয়। তোরা যা করছিস তা ঠিক না।
তুই যা করেছিস গাড়িতে তা ঠিক?
তোরা তো আগের থেকেই আমার বাশ রেডী রাখছোস তাহলে তো আমি তোদের পরে দিয়ে ভুল করিনাই।
আচ্ছা তাই নাকি?

হুম। আমি এখনিই চলে যাবো।
বেশি করলে আজ তোর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। আলিফ ভাই কিন্তু ফ্রাই করে খেয়ে ফেলবে তোকে।
ছি তোরা এমনটা করলি!
হ্যাঁ জান। আমার ভাইয়ের বউটাও তুমিই হবা। কি বলিস অর্ণি?

একদম ফাটাফাটি হবে ব্যাপারটা।
না। তোর ঐ বজ্জাত ভাইকে আমি কিছুতেই বিয়ে করবোনা।
করতে তো হবেই।

ওদের কথার মধ্যেই আলিফ সামনে এসে দাঁড়ায়। আলিফ মিম অর্ণির সাথে কথা বলে তবে নুপূরের দিকে ফিরেও তাঁকায়না। তাতে নুপূর কিছুটা অপমান ফিল করে। অভ্র আলভী গাড়ি পার্কিং করে এসে আলিফের সাথে কথা বলতে থাকে। তারপর সবাই মিলে ভেতরে ঢুকে।

মিমের জন্য কিছু লেহেঙ্গা দেখা হচ্ছে। অর্ণিও শাড়ি দেখছে নুপূরকে একটা সিল্কের শাড়ি দিয়ে ওরা বলে ট্রাই করে দেখতে। নুপূর গিয়ে ট্রাই করে। ট্রায়াল রুমের একটু সামনে আসতেই নুপূরের শাড়ির কুঁচি খুলে যায়। আর বেচারি হাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। সেখানে তেমন কেউ ছিলো না ওরা সবাই আর দু তিনজন মহিলা। অভ্র আর আলভী চোখ ফিরিয়ে নেয়। মিম অর্ণি জিভ কাটে আর আলিফ তো দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে শাড়িটা উঠিয়ে ওর হাতে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
গো এন্ড চেন্জ!
নুপূর ও তাড়াড়াড়ি ট্রায়াল রুমে ঢুকে পড়ে।

পর্ব ৩৭

শাড়িটা সুন্দর করে পড়ে ট্রায়াল রুমেই দাঁড়িয়ে আছে নুপূর। বের হবে কি হবেনা সেই দ্বিধাতে ভুগছে। আবার যদি আগের মতো কিছু ঘটে যায় তাহলে! ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। অর্ণি আর মিম কয়েকবার ডেকে গেছে এখন দেরী করলে হয়তো ওকে ফেলে ওরা চলে যাবে।
নুপূর বের হয়ে এসে দেখে আশেপাশে অর্ণিরা কেউ নেই। এবার ও ঘাবড়ে গেল। সত্যিই কি ওরা চলে গেল? চোখে পানি চলে এসেছে এভাবে চলে যাওয়ার তো কোনো মানে হয়না। মিম ট্রায়াল রুমে গিয়ে আবার চেন্জ করবে ওমনি আলিফ পেছন থেক বলে উঠলো
তোকে খুব সুন্দর লাগছে।

নুপূরের বুক ধুক করে উঠল আলিফের কন্ঠ শুনে তাও আবার এমন একটা কথা যা শুনে ওর হার্টফেল করার মতো অবস্থা। এই আলিফ কি বুঝেনা নুপূর কতোটা অস্বস্তিতে পড়ে যায় যখন ও নুপূরের আশেপাশে থাকে। কথা বলতেও দম বন্ধ হয়ে আসে ওর। এমনটা কেন হয় তা ওর অজানা। আলিফ নুপূরের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর বুকের মধ্যে হাত গুজে বলে উঠে
কিরে লজ্জা পেলি নাকি?

মমমমানে!
মানে হলো আমার কমপ্লিমেন্টে তুই লজ্জা পেয়েছিস। (বাঁকা হেসে)
নুপূরের মুখ থেকে আপনা আপনি ইশ কথা বরিয়ে এলো। একটা ঘোরের মধ্যেই বলে উঠলো
হেসো না আলিফ ভাই। তোমার হাসিতে যে বিষ আছে আর সেই বিষে আমার মরণ নিশ্চিত।
নুপূরের কথা শুনে আলিফ অবাক হয়ে যায় তাও নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে
তাই নাকি?

হ্যাঁ আলিফ ভাই। তুমি জানো কত সুন্দর করে তুমি হাসো! গালে টোল পড়ে আর যখন বাঁকা হাসো তখন যে আমি তোমার প্রে…
আমার!
নুপূরের এবার টনক নড়লো কি থেকে কি বলেছে ভেবেই লজ্জা পেয়ে গেল, আর মুখ ঘুরিয়ে নিলো। এক প্রকার ছটপট করতে লাগলো। আলিফ তা বুঝে ওকে শান্ত করার জন্য বলল
এই পেত্নী যা চেন্জ করে আয়। সবাই ফোর্থ ফ্লোরের রেস্টুরেন্টে লান্চ করতে গেছে।
হুম।

নুপূর চেন্জ করে নেয় আবার। তারপর আলিফ শাড়িটা প্যাক করতে বলে যখন বিল পেমেন্ট করবে তখন এক মহিলা বলে
মেয়েটা কি তোমার বউ!
আলিফ তা শুনে মুঁচকি হেসে নুপূরের দিকে তাঁকিয়ে বলে
হতে চলেছে।
বাহ ভালোই। দুজনকে খুব মানিয়েছে।
ধন্যবাদ আন্টি।

বিল পে করে হাঁটতে থাকে আলিফ। নুপূর পেছন থেকে দ্রুত গতিতে এসে বলে
এই এই!
কি এই এই করছিস! মাথা খারাপ নাকি?
মাথা আমার না তোমার খারাপ।
মানে?
ঐ মহিলাকে কি বললে?

কোন মহিলা!
মাত্র যে কথা বলেছো!
ওহ কেন?
কেন মানে! তুমি ওনাকে এটা কি বললা! বিয়ে হতে চলেছে মানে?
আরে মজা করছিলাম।

এসব ব্যাপার নিয়ে মজা করা হয় নাকি!কেউ করে?
আমি করি তোর কোনো সমস্যা!( ধমক দিয়ে)
না। (মাথা নেড়ে)
তাহলে বকবক না করে চল।

রেস্টুরেন্টে আগে থেকে সব অর্ডার দিয়ে বসে আছে সবাই। অর্ণি আর অভ্র কি সুন্দর প্রেমালাপ করছে আর আলভী আর মিম মুখ গোমড়া করে বসে আছে। তখন মিম গাড়িতে যা বলেছে তাতে আলভী খুব রাগ করেছে। মিম সরি বলে কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। আলভী মুখ ফিরেও ওর দিকে তাঁকায়নি। এখন একটা কথাও বলছেনা এতে মিমের চোখে পানি চলে আসে।

আলিফ আর মিম এলে সবাই খাওয়া দাওয়া করে। মিম কফি ছাড়া আর কিছু খায়না। খাওয়ার পর্ব চুকিয়ে ওরা নিচে চলে যায়। উদ্দেশ্য এখন। নদীর পাড়ে যাবে।
অভ্র আলভী আলিফ সবাই কথা বলতে বলতে পার্কিংয়ে যায়। আলিফ যেহেতু গাড়ি নিয়ে এসেছে তাই ও আগেই চলে যায় সেখানে নিজের গাড়ি নিয়ে। আলভী গাড়ি নিয়ে আসে। মিম নুপূর গাড়িতে বসে অর্ণি উঠতে নিলেই একটা বাইক ওকে ক্রস করে যাওয়ার সময় ওর ওড়না টান দিয়ে নিয়ে যায়। আর যাওয়ার সময় খুব খারাপ কমেন্ট করে। আলভী গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে কিন্তু তার আগেই বাইকটা অনেক দূর চলে যায়। আলভী দৌড়ে ওদের পিছু নেই কিন্তু পেরে উঠেনা। পেছন ফিরতেই থতমত খেয়ে যায়।

অভ্র চোখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে। আলভী জানে এর পরিণতি কি। আলভী সামনে গিয়ে ওকে কিছু বলবে তার আগে অভ্র অর্ণির হাত টেনে গাড়িতে বসিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। মিম ব্যাগ থেকে নতুন জামার একটা ওড়না অর্ণিকে এগিয়ে দেয়। অর্ণি ঝটপট পড়ে নেয়। চোখে পানি চলে এসেছে। আর খুব ভয় লাগছে অভ্রর এমন রাগ দেখে। আলভীকে অভ্র ড্রাইভিং সিটে বসতে না দিয়ে নিজে বসে পড়ে আলভী কিছু বলতে নিলে অভ্র বলে
তাড়াতাড়ি উঠে পড়, নাহলে এখানেই থেকে যা।

আলভী কিছু না বলে উঠে বসে। অভ্র ড্রাইভ করছে সর্বোচ্চ স্পিড দিয়ে। রাগে মাথা টগবগ করছে। যেই অর্ণির গায়ে কেউ হাত দিলে তাকে মেরে ঠিক থাকেনা আজ তার ওড়না ছিনিয়ে নিয়ে তার সম্মান নিয়ে খেলা করলো। আজ তো ওদের মজা দেখাচ্ছে।
আলভী বার বার মানা করছে গাড়ি আস্তে চালাতে বলছে অভ্র শুনছেনা। যত দ্রুত পারে গাড়ি চালাচ্ছে। অর্ণি মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেনা।

পর্ব ৩৮

অভ্রকে আলভী বার বার বলছে গাড়ির স্পিড কমাতে কিন্তু ও তা করছেনা। বাইক গুলোর পিছু যে লেগেছে সহজে ছাড়ছেনা। শহরের থেকে হালকা দূরে এসে বাইকের দেখা মিলে অভ্র তখন আরো জোরে গাড়ি চালাতে থাকে। বাইকের সামনে যে বসেছে সে হঠাৎ এমন আক্রমণে অবাক হয়ে যায়। এই মুহূর্তে গাড়ি কোন দিকে ঘুরাবে তা বুঝে পায় না। বাইক পাশ ফিরাতে নিলেই অভ্রর গাড়ি ওদের সামনে জোরে ব্রেক কষে।

বাইক উল্টে পড়ে যায়। অভ্র দ্রুত গতিতে গাড়ি থেকে নেমে যেই ছেলেটা অর্ণির ওড়না ধরে টান দিয়েছিল তার কলার ধরে টেনে দাঁড় করায়। তারপর বেধরম মারতে থাকে আলভীও পাশেরটাকে তুলে মারতে থাকে। আলভী খেয়াল করে অভ্র ঐ ছেলেটাকে মারতে মারতে আধ মরা করে ফেলেছে। ইতিমধ্যে অর্ণি মিম নুপূর গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। অভ্রকে বার বার মানা করছে সবাই কিন্তু ও কথা কানে দিচ্ছেনা। আলভী অভ্রকে ধরে আটকায় অভ্র বার বার হাত ছাড়িয়ে মারতে যায়। প্রচন্ড রাগে ওর মুখ লাল হয়ে আছে। চোখ দুটোতে তাঁকানোর সাহস নেই অর্ণির।

অভ্র ছেলেটাকে আবার মারতে যায় আর চিৎকার করে বলে
রাস্কেল, ব্লাডি বিচ তোর সাহস কি করে হয় আমার অর্ণির গায়ে হাত দেওয়ার! তোকে তো আজ আমি মেরেই ফেলবো। আজ তোকে আমি শেষ করে দিব।
অভ্র তুই পাগল হয়েছিস! আর মারিসনা পড়ে মার্ডার কেসে ফেসে যাবি।
ফাসলে ফাসবো আমার ওতো ভয় নেই। আজ ওকে মারার পর আমি শান্তি পাবো।

আরে কি করছিস মেয়েরা ভয় পাচ্ছে তো!
ছাড় আমাকে ছাড়!
অভ্র আর আলভীর ধস্তাধস্তি লেগে যায় আর ঐ ছেলে দুইটা তো সেই কখন থেকে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। অর্ণি অভ্রর কাছে গিয়ে বলে
হয়েছে আর মারা লাগবেনা। বাড়িতে চলুন এসব আর নিতে পারছিনা আমি প্লিজ অভ্র!
এই কিসের প্লিজ হ্যাঁ! ঐ ছেলেটা তোমাকে টাচ্ করেছে আর আমি ওকে ছেড়ে দিব? এতো সহজে! আমি ছাড়বোনা ওদেরকে।
অভ্র এমন করবেন না আমার কথা শুনুন!
যাও এখান থেকে।

অভ্র অর্ণিকে একটা ধাক্কা দেয় যার ফলে ও রাস্তায় পড়ে যায়। আর এতে মাথায় ও কোমরে খুব ব্যাথা পায়। অভ্র ওদের আবার মারতে যাবে তখন অর্ণির চিৎকারে চুপ হয়ে যায়। পাশ ফিরে অর্ণিকে ব্যাথায় কাতরাতে দেখে দৌঁড়ে ওর পাশে যায়।

বেডে শুয়ে আছে অর্ণি পাশেই অভ্র বসে আছে। আলভী-মিম, নুপূর-আলিফ, সবাই একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তখন মিম আলিফকে ফোন করে আসতে বলে তারপর ও আর আলভী মিলে সব হ্যান্ডেল করে নেয়। অভ্র অর্ণিকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যায়। তেমন কিছু হয়নি তবে ওর শরীর খুব দূর্বল তাই বেড রেস্ট নিতে বলে। আসছে থেকে অভ্র অনেক কথা বলছে কিন্তু অর্ণি তার জবাব দিচ্ছেনা উল্টোমুখ ফিরিয়ে বসে থাকে। বাকি সবার সাথে ঠিকমতো কথা বলেছে তবে অভ্রর সাথেই বলছেনা। এতে অভ্র ভীষণ রেগে আছে।

রাতে নুপূর আলিফ সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। পরশু মিম আলভীর রিসেপশনের অনুষ্ঠান তখন আবার সবাই আসবে। আলভী ডিনার করে বিছানায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কিছু কাজ করছিল। তখন মিম রুমে ঢুকে। আলভীকে কিছু জিজ্ঞেস করলে আলভী তার জবাব দেয়না। বরং মুড ধরে বসে থাকে। মিম এতে অপমান ফিল করে। ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস চেন্জ করে আলভীর পাশে শুয়ে পড়ে। আলভী তা দেখে ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। এবার মিম খুব রেগে যায়। টেবিল ল্যাম্পের পাশ থেকে মোবাইলটা নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। তারপর গলা খাকিয়ে মোবাইল কানে দিয়ে আলভীকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে থাকে
হেলো আক্কাস! কেমন আছো তুমি?

আলভী হঠাৎ মিমকে এমন সুরেলা কন্ঠে কোনো পুরুষের নাম নিয়ে তুমি করে কথা বলছে দেখে খুব অবাক হয়ে যায়। একটু হেলে বারান্দায় তাঁকায়। দেখে মিম হেসে হেসে কথা বলছে। তা দেখে আলভীর গায়ে জ্বলন ধরে গেল। আলভী ল্যাপটপ বন্ধ করে ধীর পাড়ে বারান্দার গ্লাস ধরে দাঁড়ায়। কান পেতে শুনার চেষ্টা করে আর শুনতেও পায় মিম কাকে যেন বলছে
আরে তুমি কি যে বলো না! আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি। ঐ রাগী বডিবিল্ডারেয দিকে তো আমি চোখ তুলেও তাঁকাইনা।

আলভী তো এবার একটা ঝটকা খেল সাথে খুব রেগেও গেল। তাকে এই ভাবে অপমান করলো! আর মিম ওকে ভালোবাসেনা! এতো বড় ধোঁকা! আলভী মিমের থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়। তারপর মিমকে ধমক দিয়ে বলে
কার সাথে এমন মধুর কন্ঠে কথা বলছো তুমি?
আমার বয়ফ্রেন্ড আক্কাসের সাথে। (লজ্জা ভাব নিয়ে)
হোয়াট!

নুপূর সেই কখন থেকে কেঁদে চলেছে। পাশে বসে তার ভাবি তাকে শান্তনা দিচ্ছে। বার বার বলছে কান্না থামাতে কিন্তু নুপূর উল্টো ভ্যা করে কাঁদছ। আসলে নুপূর তখন বাসায় এসে দেখে ওর মা বাবা বসে আছে। ও খুশি হয়ে তাদের জড়িয়ে ধরে তারপর কিছুক্ষণ গল্প গুজক করে ফ্রেশ হতে চলে যায়। নুপূর ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তার মা তার সামনে হাসি মুখ করে বসে আছে। ও কিছু বলতে যাবে তার আগে ওর মা ওকে টেনে তার পাশে বসিয়ে বলে
আমার আম্মুটা খুব বড় হয়ে গেছে তাই না!

নুপূর তার মায়ের এমন কথা শুনে অবাক হয় বলে
আম্মু তুমি হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছো যে!
ওমা করবোনা বুঝি! চোখের পলকে আমার মেয়েটা কতো বড় হয়ে গেল ক’দিন বাদে তার বিয়ে।
বিয়ের কথা শুনে নুপূরের চোখ কপালে উঠে যায়। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে
বিয়ে মানে!
বিয়ে মানে বিয়ে। তোর বিয়ে ঠিক করেছি।

আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললে! একবারো আমার মত নিলেনা!
কেন নিব? তোর মত কি আর ভিন্ন হবে নাকি!
হ্যাঁ হবে। আমি বিয়ে করতে পারবো না।
মানে!
মানে হলো আমি কোনো বিয়ে টিয়ে করছিনা।
এখন বলে কোনো লাভ নেই সব ঠিক করা হয়ে গেছে। তোকে বিয়েটা করতেই হবে।

আম্মু!
কোনো কথা না। আমি যখন বলছি তখন তোকে বিয়েটা করতেই হবে।
না আমি বিয়ে করবোনা।
তোমার থেকে আমি তা জানতে চাইনা। আমি তোমাকে জানাতে এসেছি সো মানসিক ভাবে প্রস্তত থাকো। (ধমক দিয়ে)
নুপূর কিছু বলতে পারেনি আর ওর মাকে ও খুব ভালো করে চিনে উনি যা বলে তা করে। আর এটাতো ওনার মেয়ের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়ের ব্যাপার।

পর্ব ৩৯

অভ্রর সাথে অভিমান করে অসুস্থ শরীরেই অর্ণি সোফায় শুয়েছে। অভ্র অনেকবার মানা করে কিন্তু ও শুনেনা। অভ্র এবার চুপ হয়ে যায় কারণ এখন শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। অর্ণি কিছুই কানে দিবেনা তার থেকে বরং অর্ণি যখন ঘুমিয়ে পড়বে তখন কোলে করে বিছানায় নিয়ে আনবে। এমন প্ল্যান কষে অভ্রও ভং ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।

এদিকে অর্ণি তো রাগে দুঃখে চোখের পানি বিসর্জন দিতে লাগলো। কোথায় ভেবেছিল অভ্র তাকে জোর করে নিয়ে যাবে কিন্তু সে তো মরার ঘুম দিচ্ছে। অর্ণিও এবার নিজেকে শক্ত করে চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে নেয়। তারপর সোফায় শুয়ে পড়ে, এদিক ওদিক করেও যখন ঘুম আসছিল না তখন উঠে বারান্দায় চলে গেল। চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। একটু পরেও হয়তো অজোর ধারায় বৃষ্টি নামবে। এই মৌসুমটা দেখে ওর ইচ্ছে করছে একটা গান গাইতে।

নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে গাওয়াও শুরু করলো
ভেজা সন্ধ্যা, অঝোর বৃষ্টি
দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি
বাদলে ঘিরেছে আকাশ, বইছে বাতাস
আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি
হয়নি বলা কোনো কথা, শুধু হয়েছে অনুভূতি (2)
কেন বলোনি?

মাঝপথে গানটা থামিয়ে পেছন ফিরে অভ্রর দিকে তাঁকালো। সেই চোখে আসক্তি ভরা, মাদকতা ভরা। যা প্রতি পদে পদে অর্ণিকে ঘায়েল করেছে। এই মুহূর্তে অভিমান ভুলে আবারো সেই নেশায় পা দিতে চাইছেনা অর্ণি। একটু অভিমানও থাকুক তাতে তো কোনো সমস্যা নেই। প্রেম ভালোবাসায় রাগ,জেদ,ভালোবাসা,প্রেম,অভিমান থাকেই। আবার কখনো কখনো সেই প্রেম ভালোবাসাতে ঘৃণাও থাকে। তাই বলে সেটা প্রেম নয় এমনটা কিন্তু না। প্রেমের কারণেই ঘৃণা বস্তুটার জন্ম হয়।

অভ্রর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আবার আকাশের পানে চেয়ে রইলো অর্ণি। ব্যাপারটা অভ্রকে হালকা ভাবায়। অর্ণির যে রাগ হয়নি এবার, হয়েছে অভিমান! রাগ সহজে কেটে গেলেও অভিমান যে কাটেনা। অভ্র অর্ণির পাশে এসে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে, বৃষ্টির ফোটা এসে পড়ছে চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ভরা অর্ণির মলিন মুখে। অভ্র অর্ণির হাত নিজের দুহাতে মুষ্টিবদ্ধ করে অনুনয়ের সুরে বলে
যাবে!
অর্ণি চমকে উঠে বলে
কোথায়?

বৃষ্টিতে ভিজতে।
মাথা খারাপ নাকি? এসময় বৃষ্টিতে ভেজার কি কোনো মানে আছে?

আছে। প্রেমের সুভাস মাখবো দুজনে চলো না ভিজি বৃষ্টিতে!
আমি……
হুশ! (অর্ণিকে কিছু বলতে না দিয়ে ওর ঠোঁটে এক আঙুল দিয়ে) কোনো কথা নয় আমার সাথে চলো।
অর্ণিকে নিয়ে একপ্রকার জোর করেই রুম থেকে প্রস্থান করে ছাদে এসে পড়ে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ছেড়ে এখন ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাস বইছে খুব অর্ণির সিল্কের শাড়িটা বাতাসে উঁড়ছে। অভ্র কিছু না বলেই অর্ণির হাত ধরে টেনে দরজার সামনে থেকে সরে এসে সরাসরি বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো। শীত শীত অনুভব হচ্ছে তার সাথে শরীরে এক কম্পন হানা দিচ্ছে। তবে এই কম্পন শীতের নয় এই কম্পন ভালোবাসার মানুষটির সামনে থাকার কারণে। বৃষ্টিতে ভিজে দুজনে চিপচিপে হয়ে যায়।

অভ্র পেছন থেকে অর্ণিকে জড়িয়ে ধরে বলে
ভালোবাসি তো! তাই তোমার কোনো ক্ষতি হলে তা সহ্য করতে পারিনা, কেউ চোখ তুলে তাঁকালে তা উপরে ফেলতে ইচ্ছা করে, তোমার দিকে নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাঁকালো তাকে খন্ড খন্ড করে দিতে ইচ্ছা করে। তুমি যে শুধুই আমার অস্তিত্ব। আমি চাইনা কেউ আমার অস্তিত্বের দিকে চোখ তুলে তাঁকাক তার সর্বনাশ করুক। আমিই হবো তার সুখের কারণ আমিই হবো তার সর্বনাশের কারণ। আমি চাইনা আমার এই অধিকার কেউ ক্ষুণ্ণ করুক। তাই তো আমি পাষাণ হয়ে যাই। আর আমি তা হাজার বার হতে রাজি। আমায় তুমি ভুল বুঝো আমার উপর রাগ কর কিন্তু অভিমান কখনোই করোনা। কেন না অভিমানই পারে একটা সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে।
অর্ণি কিছু বলেনা পেছন ফিরে অভ্রর গলা জড়িয়ে ধরে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে তার অভ্রর দিকে। হ্যাঁ, এ যে শুধু তার অভ্র!

মিমের দিকে প্রশ্নে ভরা চোখ নিয়ে তাঁকিয়ে আছে আলভী। মিম হেসে হেসে বলল
হ্যাঁ তো! আক্কাস হলো আমার একমাত্র বয়ফ্রেন্ড।
মানে? তুমি পরকীয়াতে লিপ্ত ছি ডিমপাখি ছি।

হুম। এতে এতো ছি ছি করার কি আছে? আজকাল তো ট্রেন্ড এটাই পরকীয়া।
কিসব বলছো হ্যাঁ! মাথা ঠিক আছে?
আমার মাথা তো ঠিকই আছে আপনার মাথা হয়তো ঠিক নেই।
মিম!
কি?

কি হ্যাঁ! এখন এতো রাগ দেখাচ্ছেন কেন? এতো রাগ দেখিয়ে কি মজা পাচ্ছেন এখন? খুব তো রাগ দেখিয়ে কথা বলা ছাড়লেন। এখন এসেছেন কেন? আমি অন্য পুরুষের সাথে ভাগছি সেই সন্দেহে তো! বউ ভেগে গেলে তো ভালোই। বিশেষ করে আপনার জন্য খুব ভালো। আরেকটা বিয়ে করবেন তারপর তাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটাবেন। বাহ্ কি এক মজার ব্যাপার!
এটা অতিরিক্ত হচ্ছে কিন্তু!(রেগে)
হ্যাঁ আমার সবকিছুই তো আপনার অতিরিক্ত লাগে। আমি রাগ দেখালে, আমি বকলে, আমি ভালোবাসলে, আমি মজা করলে সবই তো অতিরিক্তই লাগে। কি ভুল বলেছি নাকি?

তুমি আমাকে এরকম ভাবো কেন? বলো না কেন এরকম ভাবো?
কারণ আপনি মানুষটাই এমন। আমি মজার ছলে নাহয় একটা ভুল কথা বলেছি তাতে এতোটা রাগ দেখানোর কি আছে!
ভুলটা যে খুব বড় তা কিন্তু তুমি জানো। তোমার এটা কিভাবে মনে হলো তোমার মৃত্যুতে আমি খুশি হবো!
আমি তো তার জন্য অনুতপ্ত।

সরি বলেছো কি!
আপনি বলার সুযোগ দিয়েছেন কি!
রাগ যে মাথায় ঝেকে বসেছিল পাখি আমার।
আচ্ছা সরি।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিমের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে আলভী শান্ত সুরে বলল
ইটস্ ওকে। তবে এই আক্কাস কে আর ওর সাথে তোমার এতো কিসের কথা!
আরে ধুর আমি তো আপনাকে ভাগে আনতে এই প্ল্যান করেছি। আমি কারো সাথেই কথা বলিনে। আক্কাস হলো আমার নানুর বাড়ির, উনি পাগল। এক তরফা প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে পাগল হয়ে গেছে। তো আমাকে অর্ণি নুপূর এই নাম বলে খুব রাগায়। আক্কাস ভাইয়ের সাথে আমাকে মিলায়। একদিন ওনার সামনে বলে আক্কাস ভাই তোমার গার্লফ্রেন্ডকে এনে দিয়েছি। উনার তো মাথা খারাপ তাই আমাকেই প্রেমিকা মনে করছিল। সেদিন আমাকে পুরো এলাকা দৌঁড়াতে হয়েছে। (মুঁচকি হেসে কিছুটা থেমে) আচ্ছা প্রেম জিনিসটা আসলেই বিষ তাই না!
হুম। প্রেম বিষাক্ত।

আজ মিম আর আলভীর রিসেপশন। আগের দিন অভ্র অর্ণি সহ ওরা সবাই চলে এসেছে আলভীদের বাড়িতে। মিমকে সন্ধ্যার আগে সাজিয়ে যায় পার্লারের মহিলারা। আয়নায় মিম নিজেকে দেখে মুঁচকি হাসে আজ অন্যরকম লাগছে ওকে নিজের কাছে। আজও তেমন বউ সেজেছে বিয়ের দিনের মতো। সেদিন কোনো অনুভূতি ছিল না কিন্তু আজকে অনুভূতিরা সব ঘিরে রেখেছে।

আসছে থেকে নুপূর আলিফকে খুঁজছে। ওর মনে হচ্ছে আলিফ এর কিছু সমাধান দিবে ওর মা তো আলিফ বলতে পাগল। যা বলে তা-ই শুনে। এখন মহান আল্লাহ্ চাইলে একমাত্র আলিফ তাকে এই যন্ত্রনা থেকে বাঁচাতে পারবে।
অনেক খুঁজে আলিফকে একা চেয়ারে বসা অবস্থায় পেল। দৌঁড়ে আলিফের কাছে যায় নুপূর। আলিফ হঠাৎ নুপূরের আগমনে কিছুটা নড়ে বসে বলে
এই পাগল হয়েছিস! এতো বড় মেয়ে এভাবে দৌঁড়াচ্ছিস কেন?
দরকার আছে তাই।

কি দরকার? তাও আবার আমার কাছে! স্ট্রেন্জ!
হ্যাঁ স্ট্রেন্জ তো হবেই। খুব দরকার যে, না হলে তোমার কাছে আমি আসি নাকি!
নুপূরের কথাতে আলিফ কিছুটা রেগে গেল। তাও নিজেকে শান্ত রেখে বলল
আগে বল কি দরকার!
আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আলিফ ভাই।

তো বিয়ে ঠিক হয়েছে বিয়ে করবি। তাঁছাড়া তোর তো বিয়ে করার খুব শখ।
কিন্তু নিজের পছন্দের কাউকে করার অপছন্দের নয়।

তোর পছন্দ দিয়ে কি আসে যায়? ফুফু পছন্দ করেছে ছেলে তো আর খারাপ হবে না। বিয়েটা করে আমাকে উদ্ধার কর।
তুমি এভাবে বলতে পারলে আলিফ ভাই! (অবাক হয়ে)
হ্যাঁ পেরেছি। যা তো মাথা গরম করিস না।

নুপূর রাগে দুঃখে সেখান থেকে চলে গেল। নুপূর যাওয়ার পরেই আলিফ নিজের বুকে হাত দিল। চিনচিন ব্যাথা করছে, ও যা শুনেছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে তো ও মরেই যাবে। আলিফ আর একমুহূর্ত সেখানে বসে না থেকে উঠে চলে গেল। উদ্দেশ্য নুপূরের মায়ের কাছে যাওয়া।
ফুফি তুমি নাকি নুপূরের বিয়ে ঠিক করেছো?

হ্যাঁ বাবা। এই যা তোকে বলতে তো ভুলেই গিয়েছে আর এখন যে-ই বলুক না কেন ভালো করেছে। শোন ছেলে খুব ভালো আমার পছন্দ হয়েছে। নুপূরের সাথেও খুব মানাবে।
তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি!
মেয়ে যখন হয়েছে বিদায় তো দিতেই হবে তা আগে হোক বা পরে।

তোমরা কি ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে নিয়েছো!
হুম। এই তো ক’দিন পরেই ওর বিয়ে হয়ে যাবে।
কথাটা শুনেই আলিফ থমকে গেল। তার মনের রাণী তার না হয়ে অন্য কারো হবে এটা যে মানা সম্ভব নয়।

পর্ব ৪০

কাপল পিক তুলে আলভী আর মিম নিজেদের বসার জায়গাতে গিয়ে বসে। তখন সেখানে ছলছল নয়ন নিয়ে উপস্থিত হয় নুপূর। নুপূরের চোখের কোণে পানি দেখে মিম আৎকে উঠে। নুপূর মিমের কাছে এসে বলে
একটু দরকার ছিল! এদিকে আসবি প্লিজ?

মিম বসা থেকে উঠে নুপূরের সামনে গিয়ে বলল
জানু তুই কাঁদছিস কেন? তোকে কি কেউ কিছু বলেছে!
তুই আগে আমার সাথে আয়। অর্ণি কোথায়?
কি আমাকে খোঁজা হচ্ছে? (পেছন থেকে অর্ণি বলে উঠে)
হ্যাঁ।

নুপূর সেই কখন থেকে কেঁদে চলেছে অর্ণি আর মিম যত বলছে একটু চপ থাকতে, কাঁদতে না কিন্তু ও শুনছেই না। এবার অর্ণি একটু ধমক দিয়ে বলল
এই আমি বলছি না চুপ করতে! খালামণিকে আমি আর মিম বুঝিয়ে বলবো। তুই এত টেনশন করছিস কেন?
যেখানে আলিফ ভাই করতে পারবেনা সেখানে তোরা করেও কিছু হবে না।

আলিফ ভাই করবেনা তোকে কে বলেছে? গিয়ে দেখ এতক্ষণে হয়তো খালামণিকে বুঝিয়ে বলেছে।
আলিফ ভাই নিজে আমাকে বলেছে যা যা বিয়ে করে আমায় উদ্ধার কর। আর তুই বলছিস উনি গিয়ে আম্মুকে বলবে!
না বলার কি আছে? আলিফ ভাই তো তোকে খুব ভালোবাসে তোর সাথে ও কখনো অন্য কারো বিয়ে হতে দিবে?

ভালোবাসে কি না জানিনা তবে এটা জানি আম্মুর নেওয়া কঠিন সিদ্ধান্ত ওনার পক্ষেও বদলানো সম্ভব নয়।
সব সম্ভব। আমার ভাইয়া পারবে। ভালোবাসার মানুষকে সে অন্যের হতে দিবেনা। নুপূর তোর জন্য যে ছেলে ছোট বেলা থেকে পাগল তোকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া সে বুঝি তোকে শেষ বেলায় ছেড়ে যাবে?

তুই এত কিছু জানলি কি করে মিম?
আমাদের আলিফ ভাই নিজে বলেছে। আচ্ছা নুপূর আজ একটা সত্যি কথা বলবি?
কি?

তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস!
জানিনা। (কিছুক্ষণ চুপ থেকে)
দেখ নুপূর এটা ছেলে খেলা নয় আর মজাও নয়। আজ যদি সত্যি না বলিস তাহলে অনেক পস্তাতে হবে তোকে।

কি হলো অর্ণি যা জিজ্ঞেস করছে তার উত্তর দে
হ্যাঁ বাসি ভালো। আমিও নিজের অজান্তে তাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। যখন বিয়ের কথা শুনেছি সর্বপ্রথম আলিফ ভাইয়ের মুখটাই চোখে ভেসেছিল। তার জন্য কষ্টে আমার বুক ফেটে গেছিল মনে হয়েছিল আলিফ ভাইকে ছাড়া থাকবো কি করে! হয়তো মরেই যাবো। (আবারো কেঁদে দেয়)
চল মিম ওর সাথে ভাট বকে লাভ নেই শুধু কান্নায় করবে ও। তার থেকে ভালো আলিফ ভাইয়ের সাথে কথা বলে আসি।
হুম চল।

নুপূরকে ফেলে মিম অর্ণি চলে যায়। যাওয়ার পথে অভ্রকে সামনে পায়। অভ্র ওদের দেখে সামনের দিকে এগিয়ে এসে মিমকে উদ্দেশ্য করে বলে
শালিকা বরকে ছেড়ে বোনের সাথে কি করছো? আর এখন কোথায় যাচ্ছো?
আমরা হাওয়া খেতে যাচ্ছি দুলাভাই।

হাওয়া খেতে! স্ট্রেন্জ!
স্ট্রেন্জ তো লাগবেই। গর্দভ লোক কোথাকার সরেন সামনের থেকে আমাদের যেতে দিন।
ছি অর্ণি স্বামীর সাথে এমন ব্যবহার কেউ করে?
আমি করি।

আমিও করি। (পাশ থেকে মিম বলে উঠলো)
হোয়াট! তুমিও! ওহ্ হ্যাঁ করতেও পারো তোমরা তো সেই ঘুরে ফিরে একই পার্টি।
আপনি কি আমাদের ইনসাল্ট করছেন?
একদম নয়। আমি তোমাদের ব্যাখ্যা করছি।

আজ হাতে সময় নেই তাই আপনি বেঁচে গেলেন নাহলে কিন্তু…..
নাহলে কি! আর কোথায় যাচ্ছো তোমরা আর এত তাড়া কেন?
আলিফ ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি।
কেন?

আছে দরকার। সব সময় এত কৈফিয়ত চান কেন? অসভ্য লোক একটা।
অর্ণি তোমার মনে হচ্ছে না তুমি আমাকে বেশিই অপমান করছো?
হ্যাঁ আর জেনে শুনেই করছি।
অর্ণি!
মিম চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।

হুম চল।
অভ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় আর অভ্র নিরব দর্শকের মতো চেয়ে থাকে। মিম অর্ণি অনেক খুঁজে আলিফকে আলভীদের বাড়ির ছাদে পায়। আলিফ একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাঁকিয়ে আছে। কি দেখছে তা দেখার জন্য মিম অর্ণিও ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আলিফের অন্যদিকে কোনো খেয়াল নেই তাই পাশে কে এসে দাঁড়িয়েছে তা টের পায়নি। অর্ণি আর মিম নিচে তাঁকিয়ে কিছুটা চমকে গেল। নুপূর গার্ডেনে পাতা অনেক চেয়ার টেবিলের মধ্যে একটিতে বসে আছে।

আলিফ স্থির দৃষ্টিতে ওকেই দেখছে। মিম পাশ থেকে বলে উঠলো
নুপূরকে খুব ভালোবাসিস তাই না ভাইয়া!
আলিফ হঠাৎ মিমের গলা শুনে চমকে উঠলো। তারপর বলল
তোরা কখন এলি! আমি তো টেরই পেলাম না!
টের পাবে কি করে?

তোমার মন আর দৃষ্টি দুটোই তো অন্য কোথাও ছিল। আশেপাশে কি হচ্ছে বুঝবে কি করে?
আসলে
থাক। আর কোনো বিশ্লেষণ চাইছিনা। একটা জরুরী কথা বলতে এখানে আসা!
কি কথা অর্ণি? (অবাক চোখে)
নুপূরের বিয়ে ঠিক হয়েছে জানো তো?
হুম। (গম্ভীর মুখে)
তুমি কি চাও এই বিয়েটা হোক?

কিছু বল ভাইয়া!
আমার চাওয়া না চাওয়া দিয়ে তো কিছু আসে যায় না।
এসব কি কথা আলিফ ভাই? তুমি না ওকে ভালোবাসো?

আমার হাতে যে কিছু করার নেই। আমি চাইলে ওকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করতে পারি। কিন্তু আমি তা করবো না। আমি চাইনা আমার জন্য দুপরিবারের সম্পর্ক নষ্ট হোক। আমার জন্য ফুফি অপানিত হবে এটা আমি মানতে পারবো না।
আলিফ ভাই? খালামণিকে বলো!
না আমি পারবোনা। প্লিজ তোরা আমায় একা থাকতে দে।
আচ্ছা।

দুজনের মধ্যে কোনো গতি না দেখে অর্ণি আর মিম নুপূরের মায়ের সাথে কথা বলে কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়না। উনি তার নিজের সিদ্ধান্তে অনঢ়।

সময়ের তালে তালে সব বদলে যায়, বদলে যায় জীবন চলার পথ। ভালোবাসার মানুষও অনেক অনেক সময় হারিয়ে যায়। কখন কার সাথে কি হয় বা হবে ওপরওয়ালা ছাড়া আর কেউ জানেনা।

আজ নুপূরের গায়ে হলুদ। চট্টগ্রামে সব আয়োজন করা হয়েছে। অর্ণি-অভ্র, আলভী-মিম সবাই এসেছে। সাথে ওদের শ্বশুর বাড়ির লোকেরাও। নুপূর কান্না করেই দিনাতি পাত করছে। আর আলিফ নিজেকে চার দেয়ালের মাঝে বন্ধী করে রেখেছে।
নুপূরের হলুদ অনুষ্ঠানটা শেষ হলে মিম অর্ণি কিছু হলুদ নিয়ে আলিফ যেই রুমে আছে সেখানে যায়। কয়েকবার দরজা ধাক্কানোর পর আলিফ দরজা খোলে সাথে সাথে মিম আর অর্ণি সব হলুদ আলিফের গায়ে লাগিয়ে দেয়। আলিফ তাতে খুব রেগে যায়। আচ্ছা মতো অর্ণি আর মিমকে বকে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

এদিকে
রাস্তায় আলভী অভ্র সিনান দাঁড়িয়ে আছে। হাতে হকি স্টিক। এই রোড দিয়ে এখন নুপূরের হবু বর সিয়াম আসবে। অভ্র আলভী মিলে কৌশলে সিয়ামকে ফোন দিয়ে হাইওয়ে তে দেখা করতে বলে। সিয়ামও রাজি হয়ে যায়। রাজি হতো না যদিনা ওরা বলতো তার চোরা কারবারের কাগজ ওদের হাতে আর তা পুলিশ ধরলে ওর জেল হয়ে যাবে। পুলিশ আর জেল খাটার ভয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ী সিয়াম ওদের কথাতে রাজি হয়ে দেখা করতে চলে আসে।
সিয়ামকে দেখে অভ্র আলভী সিনান একটু লুকিয়ে পড়ে তারপর মুখে মাস্ক দিয়ে ওর সামনে যায়। সিয়াম ওদের উদ্দেশ্য করে বলে
হেই তোমরা আমাকে এখানে ডেকেছো?
ইয়েস।

যার জন্য ডেকেছো তা ফিরিয়ে দাও। তার বদলে যা লাগবে যত টাকা লাগবে আমি তোমাদের দিব।
আচ্ছা তাই নাকি! এতো টাকার গরম তোর? ( আলভী বলল)
টাকার তো আমার অভাব নেই। যেই ব্যবসাতে নেমেছি টাকা ছাড়া আর কিছুই চোখে দেখিনা। (বলেই বিশ্রী ভাবে হাসতে লাগলো)
আচ্ছা চল। এখন তোকে অন্য কিছু দেখাবো।

বলেই তিনজন মিলে সিয়ামকে হকি স্টিক দিয়ে বেধরম মারতে লাগলো। তার কিছুক্ষণ পর পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয় অভ্র আলভী সব প্রমাণ অফিসারের হাতে দেয়। মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল গুলোর মধ্যে সিয়াম একজন। তাই অফিসার তৎক্ষণাত ওকে এরেস্ট করে।

আলিফ এখন ঘুমাতে চাইছে। সাময়িক ঘুম দিতে চায় সে কারণ নুপূরের বিয়েটা যে সে নিজের চোখের সামনে দেখতে পারবেনা। ছয়টা টেবলেট খেয়েছে এখন আরো তিনটা খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে সে।

পর্ব ৪১

হাসপাতালে সবাই বসে আছে। কেউ কাঁদছে তো কেউ চিন্তা করে মরছে। নুপূর আলিফের আম্মু মিম সবাই অঝোর ধারায় কাঁদছে। তাদের ছেলেটাকে যে অপারেশন থিয়েটরে নিয়ে গেছে। অর্ণি একবার মিমকে শান্তনা দিচ্ছে তো একবার নুপূরকে। একজন চুপ গেলে আরেকজন কেঁদে উঠে। আলিফের মা ছেলের শোকে অজ্ঞান হয়ে গেছেন। তাকে পাশের একটা কেবিনে রাখা হয়েছে। বাড়ির সবাই হসপিটালে আছে, অভ্র আলভী সিনান বাদে। দুশ্চিন্তার ছাপ সবার মুখে স্পষ্ট। কারণ একটা ছেলে অসুস্থ অন্যদের কোনো খোঁজ নেই। অর্ণির মনের ভিতরটা যে হাহাকার করছে। কাল রাত থেকে অভ্র ফোন ধরছেনা সিনানকে একবার ফোন করেছে তখন বলেছিল হাইওয়ে এরপর আর কারো ফোনে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না।

সবাই যখন চিন্তা আর অপেক্ষায় বিভোর তখন কোথা থেকে অভ্র আলভী সিনান দ্রুত গতিতে ওদের দিকে এগিয়ে আসে। অভ্রকে দেখে অর্ণি অভ্রর উপর ঝাপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগে। মিমকে কাঁদতে দেখে আলভী দৌঁড়ে ওর কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে ওর হাত দুটো নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। তারপর বলে
এই ডিমপাখি! কাঁদছো কেন? কিচ্ছু হবে না আলিফের। আল্লাহ্ সব ঠিক করে দিবে। (সমবয়সী তাই আলিফ বলেই ডাকে)
আমার ভাইয়া!(বলেই আবার কাঁদতে লাগলো)
কিচ্ছু হবে না আমি বলছি তো। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।

মিমকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আলভী। সবাই অভ্র আলভী আর সিনানকে বার বার জিজ্ঞেস করছে ওরা কোথায় ছিল! কি হয়েছে! ওরা বলছে আলিফ আগে সুস্থ হোক তারপর সব বলবে। এদিকে অনেক আগেই খবর চলে এসেছে যে নুপূরের হবু বর এরেস্ট হয়েছে। আর কি কারণে তা কেউ এখনো পরিষ্কার ভাবে জানেনা।
ডাক্তার ওটি থেকে বের হয়ে বলে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। রোগী এখন বিপদ মুক্ত। অতিরিক্ত পাওয়ারের ঘুমের ঔষুধ খাওয়াতে অবস্থা বেশি ভালো ছিল না তাই ওকে হসপিটাল নিয়ে আসে সবাই। ডাক্তার বলেছে দুইদিন বেড রেস্ট নিতে কারণ রোগীর শরীর দুর্বল খাওয়া দাওয়াও হয়তো নিয়মিত করতো না যার ফলে খুব বেশি এফেক্ট পড়েছিল। রোগীর সাথে একজনের দেখা করার পারমিশন দিয়েছে ডাক্তার। আলিফের মা অজ্ঞান ছিল তাই সবাই মিমকে যেতে বলে কিন্তু মিম নুপূরকে জোর করে পাঠিয়ে দেয়।

আলিফের সামনে বসে আছে নুপূর। একদৃষ্টিতে ঘুমন্ত আলিফকে দেখছে। তার আলিফ ভাই আজ শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। যেই আলিফ ভাইয়ের নাকের ডগায় রাগ থাকতো তাকে আজ এমন চুপ করে থাকতে দেখে নুপূরের বুকে মোচড় দিচ্ছে। আলিফের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল
তুমি খুব পঁচা আলিফ ভাই। ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে তুমি আমায় ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছো। তোমাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না। আমি আর তোমাকে ভালোবাসবো না।

কিছুক্ষণ পর আবার কেঁদে উঠে বলল
এসব কিছুই তো করতে পারবো না আমি। তোমার উপর রেগে থাকতে পারবোনা, ক্ষমা না করে থাকতে পারবোনা, ভালো না বেসে বাঁচতে পারবোনা। আমি তোমার সাথে থাকতে চাই আলিফ ভাই। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসতে চাই। আমি তোমার রাগ দেখতে চাই, তোমার ধমক খেতে চাই।
মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলো নুপূর। তখন একটা গলার স্বরে থমকে যায়
কিরে বিয়ে না করে এখানে এসে বসে আছিস কেন?

তুমি! জ্ঞান ফিরেছে তোমার! এখন কেমন লাগছে? (ছটফট শুরু করে দিয়েছে)
এত ব্যস্ত হতে হবে না তোকে। আগে বল একটু আগে যা যা বলেছিস সব সত্যি!
নুপূর মাথা নিচু করে বসে আছে। আলিফ বলল
থাক যদি লজ্জা পেয়ে থাকিস তাহলে বলা লাগবেনা। একটু এদিকে আসবি প্লিজ!
হু!
এদিকে আয় মাথা নিচু কর।

নুপূর মুখ সামনে নিয়ে মাথাটা হালকা নিচু করে আর আলিফ তার ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয় নুপূরের কপালে।

আমায় বিয়ে করবি?

করবিনা!
করবো।
আলিফ মুঁচকি হাসে। নুপূর আলিফের কেবিন থেকে বের হয়ে আসলে দেখে সবাই ওর দিকে কেমন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। নুপূরের মায়ের মুখে বিস্ময় আর নানা রকম প্রশ্ন নিয়ে ভরা।


সবাই হল রুমে বসে আছে। সবার প্রশ্ন একটাই এসব কি হচ্ছে? আলিফের সুইসাইড করতে যাওয়ার কারণ কি? নুপূরের আলিফের সাথে কিসের সম্পর্ক! আর সিয়াম জেলে গেছে কোন কারণে? সিয়াম জেলে যাওয়ার প্রশ্নটা অভ্রদের করার কারণ হলো তারাই রাতে পুলিশের মাধ্যমে ওনাদের ইনফর্ম করেছে। নুপূরের মা একটু বেশি সিরিয়াস হয়ে গেছেন। অভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তারপর বলতে শুরু করে
সিয়ামের জেলে যাওয়ার কারণ কি তাই তো! একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী জেলে গেলে কি কোনো কারণ দেখানো লাগে?

মানে!(নুপূরের মা)
আন্টি আপনি যার সাথে নুপূরের বিয়ে ঠিক করেছেন সে একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী।
এটা কি বলছো অভ্র! সিয়াম ইয়াবা ব্যবসায়ী নয় ও তো….
একজন ইন্জিনিয়ার তাই তো!
হ্যাঁ।

নো আন্টি হি ইজ আ ক্রিমিনাল! আপনারা যেদিন নুপূরের এংগেজমেন্ট করিয়েছিলেন সেদিন যখন আমি ছেলেটিকে দেখি আমার একটা খটকা লাগলো। তারপর যখন তার সাথে পরিচিয় হতে লাগলাম তখন সে বলল পেশা ইন্জিনিয়ার। আর ভাগ্রক্রমে আমি যে ব্যাচে ছিলাম সেই ব্যাচের কথাই বলেছিল। আর ভার্সিটিও এক বলেছে। ও হয়তো ভেবেছে আমি চিনবোনা কিন্তু ও তো জানেই না আমি সেম ভার্সিটি থেকে সেম ইয়ারে পরীক্ষা দিয়েছি। আমি ওকে কখনো দেখিনাই আর ওর প্রত্যেকটা কথা কেমন সন্দেহ জনক ছিল তাই আমি আর আলভী মিলে খোঁজ লাগাই আর এরকম কোনো রেকোর্ডই পাই না যে সে একজন ইন্জিনিয়ার। তারপর আমরা বুঝে যাই এটা নিশ্চয় কোনো ভালো মানুষ নয়। আলভীর ফ্রেন্ড মুহিব যে কিনা সিআইডিতে আছে আমরা তাকে জানাই। আর আমরা যখন সিয়ামের আসল পরিচয় খোঁজার জন্য মুহিবের কাছে ওর ছবি দেখাই।

তখন মুহিব একবারেই চিনে ফেলে। আশ্চর্য জনক ভাবে আমাদের কষ্ট করে খুঁজতেও হয়নাই। তারপর মুহিব আমাদের ওর সমস্ত বায়ো দেয়। এত দিন দেশের বাহিরে লুকিয়ে ছিল আর ফেক পাসপোর্ট দিয়ে চলা ফেরা করে আসল নাম তো জাবেদ। এখানে এসে মিথ্যা বলেছে। মুহিব আমাদের একটা প্ল্যান বলে সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করি। আর সিয়ামকেও ধরা সম্ভব হয়ে যায়।
ছি ছি শেষে কিনা নিজের মেয়ের জীবন নষ্ট করতে গেলাম আমি!
আচ্ছা আন্টি আপনি কি সিয়ামের ব্যাপারে কোনো খোঁজ খবর নিয়েছেন!

আসলে ছেলেটার ব্যবহার দেখে খুব ভালো মনে হয়েছিল তো তার অবস্থা চলাফেরা উন্নতমানের ছিল তাই আমার কোনো প্রকার সন্দেহ হয়নি।
নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎটা না জেনে শুনে নষ্ট করতে চাইছিলেন আপনি!
সরি বাবা আমি কিভাবে যেন এসব ভুলে গেছি আর আমি যে এসব ব্যাপার নিয়ে খুঁজবো তার জন্য তো একটা হেল্পিং হ্যান্ডের প্রয়োজন। অন্য সময় হলে তো আলিফ সাহায্য করে কিন্তু এবার তো ও ব্যস্ত ছিল।
উহু ব্যস্ত ছিল না আন্টি।
ব্যস্ত ছিল না! মানে?

ও ইচ্ছে করেই এমন করেছে কারণ ও আপনার বলা কাজটা করতে পারবেনা। আপনার মেয়েকে ও ভালোবাসে এবং ওকে বিয়ে করতে চায়। তাহলে ও কিভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ের পাত্র দেখতে যাবে! ওর তো এসব কোনো কাজেই মন ছিল না। আর শুধু তাই না আন্টি ও চাইলে আপনার মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারতো কিন্তু করেনাই কারণ ও চায় না ওর জন্য দু পরিবারের সম্পর্ক নষ্ট হোক আপনি অপমানিত হন।

আমাকে ও বলেনি কেন? বললে কি আমি আপত্তি করতাম নাকি!
সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয় ছিল তাই। আর আপনি এখন যে অভয় টা দিচ্ছেন তখন যদি দিতেন তাহলে আজ এমন কিছুই হতো না।
আমি আমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত। আর ভুলটাও সুধরে নিতে চাই আলিফ আর নুপূরের বিয়ে দিয়ে। আয়োজন বন্ধ করার দরকার নেই পরশু নুপূর আর আলিফের বিয়ে দেওয়া হবে। সবাই প্রস্তুত থেকো। ভাইয়া আমার মেয়েকে তোর ঘরের বউ করতে কোনো আপত্তি আছে!
হ্যাঁ আছে।

ভাইয়া!
হা হা হা ঘরের মেয়ে করে রাখবো।
চারিদিকে হাসির রোল পড়ে গেল। থমথমে পরিবেশটা মুহূর্তেই খুব সুন্দর হয়ে গেল। আবার যেন প্রাণ ফিরে পেল। নুপূরের মুখে লজ্জা মাখা হাসি। আর তা দেখে ঘায়েল হলো আলিফ।


আজ নুপূরের বিয়ে। চারিদিকে হই হুল্লোর হচ্ছে সবাই খুশিতে আনন্দে চারিদিক এক অন্য রকম মায়ায় ভরিয়ে তুলেছে। নুপূরকে আজ টকটকে লাল লেহেঙ্গা দিয়ে সাজিয়েছে। আলিফ নিজে লাল লেহেঙ্গা পড়াতে বলেছে। নুপূর আজ বুঝতে পারছে আলিফ তাকে কেন লাল রঙ পড়তে দিতো না। আসলে সে চাইতো তার নুপূর তার সামনেই লাল রঙ পড়বে অন্য কেউ লাল পরীর রুপে যাতে তাকে না দেখতে পারে। মিম আর অর্ণি আজ কালো লেহেঙ্গা পড়েছে।
ওরা দুজন সেই কখন থেকে নুপূরকে নানান কথা বলে লজ্জা দিচ্ছে আর ওরা নুপূরের লজ্জা পাওয়া দেখে খিলখিল করে হাসছে।

অভ্র আলভী কালো পান্জাবী পড়েছে। দুজনেই ড্যাশিং লাগছে। আলভীর অভ্যাস একটা তো আছেই সেটা হয়তো কখনো বদলাবে না। এটা এতদিনে সবাই বুঝে গেছে।
আলভী কিছু মেয়েদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আর মেয়েগুলোই গায়ে পড়ে কথা বলছে। মিম আলভীকে ডাকতে এসে দেখে এই অবস্থা তাই রেগে গিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। আলভী মিমকে দেখে নেয় ও বুঝেও যায় মিম রাগ করেছে তাই মেয়ে গুলোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মিমের পিছু নিল আর ডাকতে থাকলো মিম কোনো জবাব দিচ্ছেনা। তখন আলভী সামনে এসে ওর হাত টেনে ধরে বলল
ডিমপাখি ডাকছি তো!
আমাকে ডাকছেন কেন? যান না যান আপনার ঐ কচি কচি মেয়ে গুলোর কাছে যান। বুইড়া লোকেদের এই এক অভ্যাস কচি মেয়ে দেখলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা।

হোয়াট আমি বুড়ো লোক! আমি কতো ইয়াং আর হ্যান্ডসাম আর তুমি বলছো বুড়ো! আমি তো এখনো বাচ্চার বাপ হতে পারলাম না আর তুমি আমাকে এক্কেবারে ইয়াং থেকে ওল্ড ম্যান বানিয়ে দিলে!
হতে কতোক্ষণ?
কি!
বাচ্চার বাপ।

ওয়াও তুমি প্ল্যানিং করে ফেলেছো! এত ফাস্ট! আমি তো ভেবেছিলাম তোমার দ্বারা এসব কিছু করা সম্ভব না কিন্তু তুমিতো আমার থেকেও বেশি নটি! (বাঁকা হেসে)
ছি অসভ্য লোক কোনো কথাকে ভালো ভাবে নিতে পারেন না নাকি!
না গো ডিমপাখি পারিনা। তবে এখন যেটা বলেছো সেটা পারবো। বাচ্চার বাপ হতে পারবো কিন্তু।
ফুটেন।

মিম বিরক্ত হয়ে চলে যায় আর আলভী হাসতে থাকে। এখন তার একটাই চিন্তা বাচ্চার বাবা হতে হবে।
নুপূর আর আলিফের বিয়েটা হয়ে গেল। কবুল বলার সময় খুব কেঁদেছে মিম অর্ণি শান্তনা দিয়েছিল।
বাসর ঘরে নুপূরকে রাখতে গিয়ে মিম একটু ভাব নিয়ে বলা শুরু করলো
শোনো মেয়ে! বাড়ির বউ করে এনেছি। শুয়ে বসে থাকবেনা কিন্তু আমার সব কাজ করে দিবে। আমার আর অর্ণি পা ধুয়ে দিবে ঘরের যত কাজ আছে সব করবে আর শুনো প্রতিদিন আমার ভাইকে খুব আদর করবে। বেচারা আদরের অভাবে অভাবে আবার যদি মরতে যায় তাহলে আমি তোমাকে কাঁচা গিলে ফেলবো বুঝেজো মেয়ে!
জ্বী ননদিনী। এমন সেবা করবো যে আপনি দু বার ভাববেন আমাকে দিয়ে আপনার সেবা করাতে।
বলেই তিনজন একসাথে হাসতে লাগলো কি সুন্দর তাদের জীবন আরো তিনটা জীবনের সাথে গেঁথে গেছে। সবাই সুখী থাকুক এই কামনা করা আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য ও নৈতিকতার মধ্যে পড়ে।

একবছর পর
হসপিটালের করিডোরে বসে মাথায় হাত দিয়ে আছে অভ্র। তখন সেখানে মিম আর আলভী উপস্থিত হয়। ছয় মাসের অন্তস্বত্তা মিম খুব কষ্টে আলভীর সাহায্য নিয়ে হেঁটে আসছে। আলভী এসে মিমকে একটা চেয়ারে বসিয়ে অভ্রর কাধে হাত দেয়। অভ্র ছলছল চোখে তাঁকাতেই আলভী আশ্বস্ত করে কোনো চিন্তা করতেনা। মিমকে দেখে কর্ণার থেকে নুপূর দৌড়ে এসে ওর হাত ধরে বসেছে। মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে
কেমন আছিস আমার বাবুটা কেমন আছে?

ভালো রে। অর্ণির কি অবস্থা!
ওটিতে নিয়েছে অলরেডী বিশ মিনিট হয়ে গেছে। এখনো কোনো কিছু বলতে পারছিনা।
ওহ। ভাইয়া কোথায়?
এইতো আম্মুদের আনতে গেছে।

আজ আমাদের অর্ণির বাবু হবে তাই না!
হ্যাঁ হবে তো। কয়েক মাস পর তোরও হবে। (মুঁচকি হেসে)
তুই খুশির খবর কবে দিবি!
যখন আল্লাহ্ চাইবে।
হুম আল্লাহ যেন খুব দ্রুত তোর কোল আলো করে দেয়।
নার্স ওটি থেকে বের হয়ে এসেছে বাচ্চা নিয়ে। এসেই প্রশ্ন করে
বাচ্চার বাবা কে?

অভ্র ছুটে আসে তার সন্তানকে দেখে। কোলে নিতে নিলে নার্স বারণ করে যে উনি টাকা ছাড়া দিবেন না। অভ্র পকেট থেকে এক হাজার টাকার দুটো নোট বের করে দেয় নার্সের হাতে। নার্স বাচ্চাকে অভ্রর কোলে দেয়। অভ্র আর অর্ণির ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে। অভ্র আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়। বাচ্চাকে পেয়ে তো সবাই সেই রকম খুশি কিন্তু অভ্র কেন জানি শান্তি পাচ্ছেনা কারণ এখনো অর্ণির কোনো খবর আসেনি।

অভ্র চিন্তাতে বিভোর হয়ে আছে তখন ডাক্তার বের হয়ে এলেন। অভ্র কাছে গিয়ে বলল
ডক্টর মাই ওয়াইফ!
আপনার ওয়াইফ একদম সুস্থ আছেন চিন্তা করবেন না।
আমি কি তাকে দেখতে যেতে পারবো?
কেবিনে শিফ্ট করলে দেখা করা যাবে।
ওকে।

বাচ্চাকে অর্ণির পাশে শুইয়ে অভ্র অর্ণির কপালে একটা চুমো দিল। অর্ণি চোখ মেলে মুঁচকি হাসি দিল।
থ্যাঙ্ক ইউ অর্ণি তোমার জন্য আমি আজ আমার সন্তানকে পেয়েছি।
আমাকে না বলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন।

করেছি আর করবোও। তবে তাকে এই পৃথিবীতে আনতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট তুমি করেছো। তাই একটা ছোট্ট ধন্যবাদ তার পাওয়া।
কি রোমান্স হচ্ছে নাকি?
না নানি রোমান্স হচ্ছে না।

অর্ণির নানিকে অভ্রর দাদি মুখ ভেঙচি দিয়ে বলল
আমার নাতি নাত বউ একটু রোমান্স করলে আপনার এতো সমস্যা কি! বুড়ো কালে এসে শেষে কিনা নাতিনের প্রেম দেখে হিংসা হচ্ছে!
এই আপনি চুপ করুন। আপনি আমার আর আমার নাতনি জামাইয়ের মাঝখানে ঢুকচ্ছেন কেন?
আপনি ঢুকছেন কেন!
বুড়ি কোথাকার।

নিজে একটা বুড়ি সেদিকে খেয়াল নেই আমাকে আসছে বুড়ি বলতে।
এই আমার এখনো দাঁত সব পড়েনাই দুটো দাঁত আছে।
এহ্ দুটো দাঁত নিয়ে কেমন গর্ববোধ করছে আমার তো এখনো তিনটা আছে।

ঐ তো আর একটা পড়তে আর বেশি দিন নাই। তখন আর দেমাগ দেখাতে পারবেন না।
আহ্ নানি চুপ করবা তুমি!
তোর দাদি শ্বাশুড়িকে বল চুপ করতে আমাকে কেন বলছিস!
আচ্ছা আচ্ছা দুজনেই চুপ করো।

এই আলভী যা তো তুই এখানে ঢুকলি কেন?
আহ্ সমস্য কোথায় তোমাদের একটু বলবে! এই দুই বুড়ি সব জায়গায় ঘ্যান ঘ্যান করে। এক্কেবারে তুমল ঝগড়া বেঁধে যায় এরা। বুড়ো হয়েছে বিষ কমেনা।
কি তুই আমাদের অপমান করলি!
হতচ্ছাড়া যা যা বের হো।

তোমরা বের হও। আমি কেন বের হতে যাবো!
থাক আমরাই যাচ্ছি তোর মতো বাঁদরের কাছে থাকার কোনো মানে হয় না। চলুন গো।
অভ্রর দাদি অর্ণির নানির হাত ধরে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। এই দুই মহিলা এই ঝগড়া করে আবার এই মিলে যায়।
আলভী বাচ্চার কয়েকটা ছবি তুলে চলে যায়। অভ্র অর্ণির পাশে টুল টেনে বসে তারপর ওর গালে হাত দিয়ে বলে
আই লাভ ইউ অর্ণি!
আই লাভ ইউ টু বাবুর আব্বু।

অভ্র হো হো করে হেসে দেয় অর্ণি এভাবে বলাতে।
পাঁচ বছর কেটে যায়
সময়ের তালে তালে সবাই বড় হতে লাগে। অভ্র আর অর্ণির মেয়ে ইভা এখন বড় হয়েছে। আজ পাঁচ বছরে পা দিল সে। ইভা কেক কাটছে আর সবাই তাকে বার্থডে উইশ করছে। আলভী আর মিমের ছেলে অয়ন এসে ওর হাত ধরে টেনে বলল
আমাকে খাওয়া ইভু।

না তোকে দিব না। তুই আমাকে মেরেছিস।
পাশ থেকে মিম মিম বলে উঠল
অয়ন তুমি ইভাকে মেরেছো!
ও পুঁচকিকে ধরতে গেছিল তাই।

ও ওর বড় আপু ও ধরতেই পারে তুমি তা বলে ওকে মারবে!
আহ্ মিম ওকে বকছিস কেন? ছোট মানুষ ভুল করেছে। (পাশ থেকে অর্ণি বলল)
হ্যাঁ তাই ও এখন ইভাকে সরি বলবে। অয়ন সে সরি!
সরি ইভু।
নে কেক খা।

ইভা অয়নকে কেক খাইয়ে দেয় তারপর দুজনে মিলে খেলতে চলে যায়। অয়ন ইভার তিন মাসের ছোট আর এতক্ষণ যে পুঁচকোর কথা বলছিলাম সে আর কেউ না নুপূর আর আলিফের মেয়ে অধরা। মাত্র দু মাসের বাচ্চা সে।
অভ্র অর্ণিকে গিয়ে বলে
খুব সুন্দর লাগছে তোমায়।
আপনাকেও।

এই সবসময় আপনি আপনি কর কেন? একটু তুমি করে বলতে পারো তো!
না পারবোনা।
কেন?
আপনি বললে বেশি আপন লাগে।
তাই!
হু।

এক হাত দিয় অভ্র অর্ণিকে জড়িয়ে ধরে। আলভী মিমকে বার বার বলছে চলো না ডিমপাখি অয়নের ছোট ভাই বা বোন আনার ব্যবস্থা করি! মিম চোখ রাঙালে আলভী মাথা চুলকাতে চুলকাতে সেখান থেকে চলে যায়।
অধরাকে নিয়ে বসে আছে আলিফ নুপূরের কোনো খোঁজ নাই। সেই কখন একটা কাজে গেছে এখনো আসেনাই।

নুপূর এসে দেখে আলিফ বসে বসে অধরাকে সামলাচ্ছে। তা দেখে মুঁচকি হেসে আলিফের পাশে গিয়ে বসে আর আলিফ কিছুক্ষণ ওকে ঝেড়ে নেয়।
সবাই আজ পরিপূর্ণ তাদের জড়িয়ে যাওয়া মায়াটা যে আজ স্বার্থক। একজন আরেকজনের হাত কখনো ছাড়েনা সবসময় আগলে রাখে এটাই তো সত্যিকারের ভালোবাসা।

লেখিকা – আফরীন

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “কি মায়ায় জড়ালে – Valobashar romantic golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – কি মায়ায় জড়ালে (১ম খণ্ড) – Valobashar romantic golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *