কি মায়ায় জড়ালে (১ম খণ্ড) – Valobashar romantic golpo

কি মায়ায় জড়ালে (১ম খণ্ড) – Valobashar romantic golpo: অভ্রর কথাতে অর্ণি অনেক হার্ট হলো কিন্তু প্রকাশ করলোনা। তবুও অবাধ্য চোখের পানি গুলো চোখের কোণায় এসে জমাট বাঁধলো, তবে গড়িয়ে পড়ার আগেই অর্ণি অভ্রকে ভেংচি মেরে সেখান থেকে চলে আসে।


পর্ব ১

বাড়ি ভর্তি সব লোকের সামনে অর্ণির আম্মু কষে এক থাপ্পর মারলো অর্ণিকে। কেঁদেই দিল বেচারি কারণ খুব জোরেই ছিল। তার থেকে বেশি লজ্জা পেল কারণ নিজের ক্রাশের সামনে এভাবে মার খাওয়া যে ভীষণ লজ্জার ব্যাপার। মাথা নিচু করে কান্না করতে লাগলো অর্ণি। অর্ণিকে এভাবে মারার কারণ হলো এখন রাত 2:45 মিনিট সময় হয়েছে। এই রাতে অর্ণি নুপূর আর মিমের সাথে কোথায় যেন যাচ্ছিল। তখন ওর মামাতো ভাই আলিফ ওদের দেখে ফেলে। আর সবাইকে ডেকে তুমুল কান্ড বাঁধিয়ে ফেলে।

সবাইকে মারেনি শুধু অর্ণিকেই মারা হয়েছে কারণ ওদের টিম লিডার অর্ণি। এতক্ষণ নিজেকে চুপ করে রাখার পরও শান্ত হলো না অর্ণির মা সামিরা বেগম। আরেকটা থাপ্পর দিতে যাবে ওমনি সামিরা বেগমের বড় ভাই অর্ণির বড় মামা এসে ওনার হাত ধরে ফেলে।

এতো গুলো লোকের মাঝে মেয়েকে মেরে কি তুই প্রমাণ করতে চাইছিস যে তুই তোর মেয়েকে অনেক শাষণ করিস।
ভাইজান! ও ভুল করেছে তাই মেরেছি।
কি ভুল করেছে? বোনেরা সব মিলে একটু না হয় বাহিরে যাবে তাতে কি?

আমি কি ওকে যেতে মানা করি নাকি! এতো রাতে ও কোথায় যাচ্ছিল? ওর পাখনা বেশি মেলেছে এবার তা ভাঙ্গতে হবে।
আর একবার যদি তুই আমার মামুনির গায়ে হাত তুলেছিস তো আমিও ভুলে যাবো তুই বড় হয়েছিস। ছোট বেলায় যেমন মারতাম এখন ঠিক তেমনটাই হবে। নিজের গালে থাপ্পর পড়লে তখন বুঝবি মজা। (গম্ভীর মুখ করে)
ভাইজান।
যা নিজের রুমে যা।

অর্ণির মা কান্না করতে করতে চলে যায়। ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। তাছাড়া উনি নিজেও ভুল করেছে এখন সেটা বুঝতে পারছে। যেই মেয়েকে কখনো একটা ফুলের টোকা দেয় নি তাকে কিনা আজ এত্ত গুলো লোকের সামনে চড় মারলো! ভয় হচ্ছে অর্ণির বাবা শুনলে জানিনা কি করবে। তাই রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকলো। বড় মামা সবাইকে নিজের নিজের রুমে যেতে বলল অর্ণি, মিম, নুপূর ছাড়া। তিনি আদুরে গলায় বলল
আম্মুরা! তোমরা এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিলে?

আমরা সবাই মিলে সামনের ঐ নদীতে যাচ্ছিলাম।
কেন?
আমরা আসলে নিতু আপুকে একা একা যেতে দেখেছি।

নিতুকে।
হুম।
অর্ণিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নুপূর গড় গড় করে বলে দিল।
শুধু কি নিতু আপু! সাথে সিনান ভাইয়াও তো ছিল।
সিনান ছিল মানে? ও তো রিসোর্টে আছে।

আরে আমরা তো সেই রহস্যে ভেদ করতেই যাচ্ছিলাম। (মিম বলল)
ওরা এখন কোথায়?
আমাদের যখন সবাই মিলে এসে ঘেরাও করলো তখন সেই সুযোগে নিতু আপু ঘরে ঢুকে সোজা উপরে চলে গেছিল।
আগে বলোনি কেন?

আরে মামা আগে বলার মতো পরিস্থিতিতে কি আমরা ছিলাম।
আসলেও তো! আচ্ছা তোমরা মন খারাপ করো না তোমার আম্মু আর বাকি সবাই না জেনে এমন করলো কারণ ওরা তো তোমাদের চিন্তা করে তাই এমন রিয়েক্ট করে ফেলেছে। আর নিতুর ব্যাপারে কাউকে কিছু বলো না কেমন?
আচ্ছা। (সবাই একসাথে মাথানেড়ে সম্মতি দিয়ে রুমে চলে যায়)

বড় মামা মুচকি হাঁসে এরা ছেলে মানুষ এদের যে বয়স কোনো কিছু খুটিয়ে দেখতে বেশি পছন্দ করে তাই এমন অবুজের মতো কাজ করে ফেলেছে।
(এবার আসি আসল কথায়। নিতু হলো বড় মামার মেয়ে ছোট টা। যার বিয়ে ঠিক হয়েছে সিনানের সাথে। কাল হলুদ অনুষ্ঠান হবে। বিয়ের আগে দুজন একটু প্রেম করছে কারণ কেউই আগে প্রেম করেনাই। এটা সিনানের অদ্ভুত এক শখ যে নিজের হবু বউয়ে সাথে বিয়ের আগে প্রেম করবে। নিতুকে অনেক জোর করায় রাতে নদীর পাড়ে যায়। যাওয়ার সময় অর্ণি আর নুপূর দেখে ফেলে।

কারণ ওরা দুটো নিজেদের ক্রাশ নিয়েই কথা বলছিল। আর বিয়ে বাড়িতে মেয়েরা বা অন্য যে কোউই সমবয়সীরা মিলে রাত জেগে অনেক গল্প করে। আর তা যদি হয় উঠতি বয়সি তাহলে তো কথা নেই। কি পড়বে কেমন সাজ দিবে ক্রাশ কেমন নতুন জামাইয়ের দোষ ত্রুটি থাকলে সেসব নিয়ে পড়ে থাকে। জানালার পাশে বসেই গল্প করাতে নিতুকে বের মতে দেখে ফেলে। ওর মামার বাড়ির দোতালার সেই জানালা থেকে নদীর দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যায়। আর সেইখানে সিনানকেও দেখেছে। ব্যাস এইটা নিয়ে মজা করবে ভেবে সব একসাথে রওনা হয় মিম গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে যায়। তাই মিমকেও তাড়াতাড়ি উঠিয়ে নেয়। তারপর যখন মেইন ডোরের সামনে যায় ওর মামাতো ভাই আলিফ দেখে ফেলে। আর সবাইকে ডেকে এমন হ্যাংগামা করে। তারপর কি হলো সব তো জানেনই।

সিনান হলো একজন ডাক্তার ওর পুরো ফ্যামিলি নিতুদের বাড়ির থেকে দু মাইল দূরের রিসোর্টে উঠেছে। সিনানের বেষ্ট ফ্রেন্ড অভ্র হলো অর্ণির ক্রাশ। আলিফ আজকে জোর করে নিয়ে এসেছে ওদেরকে বাড়িতে আরো অনেক ভাইয়ারা আছে সবাই একসাথে আড্ডা দিবে। সবাই ছাদেই ছিল আড্ডা দিচ্ছিল সিনান মিথ্যা বলে যে ঘুম পাচ্ছে তো ঘুমোতে যাওয়ার নাম করে আগে ভাগে নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। অভ্র তেমন একটা কথা বলেনা চুপ চাপ থাকে। আসলে অভ্র গম্ভীর স্বভাবের।

দেখতে খুব সুন্দর। লম্বা 6’2 হবে আর ফর্সা বডিও আছে। মুখে দাঁড়ি নেই ক্লিন শেভ করা। সিল্কি চুল গুলো সবসময় স্পাইক করা থাকে। অনেক মেয়েরই ক্রাশ অর্ণিরও। অর্ণিও খুব সুন্দর লম্বা হলদে ফর্সা ঘন লম্বা চুল তবে সব গুলো কালো নয় কালার করা আছে। হরিণীর মতো চোখ অনেককেই পাগল করে। আফসোস ও যার জন্য পাগল সে ছাড়া বাকি সবাই ওর প্রেমে হাবুডুবু খায়। অর্ণিকে যখন থাপ্পর মেরেছিল তখন অভ্র একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাঁকিয়ে থাকে। কেন জানি অর্ণির কান্নাটা ওর খুব ভালো লাগে। আর বেশি বিবরণ দিব না আস্তে আস্তে সব জানবেন)

সিনান অভ্রকে ফোন করে বলেছে ও নাকি রিসোর্টে চলে গেছে। বড় মামাকে অভ্র তখন ইনফর্ম করে দেয়। তাই উনি তখন অর্ণিদের কথায় অবাক হয়। অভ্র চাইছিল যেতে কিন্তু কেউ যেতে দেয় না।

সকালে অর্ণি গোসল করে ছাদে এসেছে ভেজা চুল গুলো কোমর পর্যন্ত এসে পড়েছে। তখন নিহাম ভাইয়া আসে (আলিফের বেষ্টফ্রেন্ড)। উনি এসেই অর্ণির দিকে নেশা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অর্ণি হেডফোন গুজে গান শুনতে ব্যস্ত এত কিছু খেয়াল করেনাই। নিহাম এসে অর্ণির কোমরে হাত দিবে ওমন কোথা থেকে অভ্র এসে ওর হাত ধরে ফেলে। ঘটনার আকস্মিকতায় নিহাম অবাক হয়ে বলে ফেলে
মি. অভ্র।
কারো অস্তিত্ব অনুভূব হয় অর্ণির তাই পেছন ফিরে দেখে অভ্র অগ্নি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে অর্ণিকে এখনি গিলে খাবে। পাশে তাঁকিয়ে দেখে নিহাম ব্যাথায় কুকরাচ্ছে কারণ অভ্র ওর হাতটা খুব জোরেই চেপে ধরেছে।


পর্ব ২

অভ্রর এমন অগ্নীমূর্তি দেখে তো অর্ণি রীতিমতো ঘামাতে লাগলো। নিহামকে সাথে দেখে অর্ণির কাছে কেমন একটা বিদঘুটে লাগলো। অর্ণি কিছু বলছেনা শুধু অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ অভ্র তার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে কেন! অর্ণির ভাবনার ছেদ ভেঙ্গে অভ্র বলে উঠল
এই মেয়ে ছাদে কি হ্যাঁ! দেখছো না বড় ভাইরা দাঁড়িয়ে আছে যাও নিচে যাও। (ধমক দিয়ে)
কেন?

তোমাকে যেতে বলছি না। (চিৎকার করে)
অর্ণি আর কিছু না বলে অভ্রকে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে নিচে চলে গেল। আর অভ্র নিহামের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাঁকালো। নিহাম গর্জন করে উঠল।
আমার হাত ছাড়ুন অভ্র চৌধূরী।

সেটা তো ছাড়বোই আপনার মতো লোকের হাত ধরার আমার কোনো ইচ্ছা নেই। যে কিনা এই হাতে কোনো মেয়ের সাথে অসভ্যতামি করতে যায়।
বলেই নিহামের হাত ছেড়ে দিল। হাত ছাড়াতে নিহাম যেন শান্তি খুঁজে পেল। হাতের দিকে তাঁকিয়ে ওর রাগ তো চড়ক গাছে উঠল। অসম্ভব লাল হয়ে আছে ওর হাত। অভ্রকে কিছু বলবে তার আগেই অভ্র ওখান থেকে চলে যায়। নিহাম তো অভ্রর থেকে প্রতিশোধ নিবে সেই চিন্তায় বিভোর হয়ে গেল।

অভ্র সোজা নিচে চলে যায় সবাইকে বলে রিসোর্টে যায়। বড় মামা সহ সবাই অনেক বার বলেছে ব্রেকফাস্ট করে যেতে তখন ও বলে
দরকারি কাজ আছে। এখন যদি না গিয়ে বসে বসে ব্রেকফাস্ট করি তাহলে আমি আজকে রাতে হলুদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবোনা।
বড় মামা তাও একটু জোর করে কিন্তু অভ্র শুনেনা তাতে উনি নিরাশ হোন।

এদিকে অর্ণিতো সেই যে দৌড়ে এসে নুপূর আর মিমের মাঝখানে বসেছে এখনো নড়াচড়া করার কোনো নাম নেই। ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর মিম আর নুপূর অর্ণিকে এক ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। তাতেই হলো অর্ণি ফ্লোরে পড়ে ও মাগো আমার কোমর ভাঙ্গলো গো করে চিৎকার করতে থাকল।
মিম আর নুপূর এবার আরো রেগে গেল ওদের এখন অর্ণির এসব ড্রামা ভালো লাগছেনা। ওরা ভালো করেই জানে অর্ণি এখন ড্রামা করছে যাতে একটু সিমপ্যাথি পায়। আর কেউ না বুঝক মিম নুপূর সব সময় বুঝে যায় ওর ড্রামা।

মিম বলল, দেখ অতিরিক্ত হচ্ছে কিন্তু এসব নাটক ফাটক বন্ধ কর। আর যা হয়েছে ক্লিয়ার করে বল।
কি বললি নাটক! আমি নাটক করি?
তা নয়তো কি তোকে তো আমরা এতো জোরেও ফেলিনি নিচে তার থেকেও বড় কথা নিচে তো ম্যাট্রেস আছে। ব্যাথা পাওয়ার প্রশ্ন আসেনা। (নুপূর বলল)
আচ্ছা নুপূর সেটা আর বলে কি লাভ ঐ নটাংকি এসব কানে দিবেনা। অর্ণি তুই বলতো এভাবে দৌড়ে এসে এতক্ষণ যাবৎ চুপ করে বসে থাকার মানে কি! হয়েছি টা কি সেটা বল।

এবার অর্ণিও সিরিয়াস হয়ে গেল। কারণ মিম যখন শান্ত সুরে কিছু জিজ্ঞেস করে তা খুব সিরিয়াস হয়ে বলে। যদি সেই কথার সঠিক সত্য জবাব না পায় তো ব্যাস সেই মানুষের দিকে ফিরেও তাঁকাতে চায় না। অর্ণি এবার যা যা দেখলো সব বলল আর অভ্র কেমন ভাবে তাকে ধমকালো সেটাও বলল। অভ্র যে তখন বড় ভাইয়া বলেছে তাই অর্ণির মন বেশি খারাপ। ও কি অভ্রকে ভাইয়া ভাবে নাকি! মিম নুপূর কিছুক্ষণ হাঁসা হাঁসি করে চলে যায় রেডি হতে। একটু পর ওরা পার্লারে যাবে আজ নিতুর হলুদ তাই সবাই পার্লারে সাজবে।

(সবার পরিচয়টা একটু দিয়ে দেই। অর্ণির তিন মামা আর ওর আম্মুরা দুই বোন। নুপূর হলো ওর খালাতো বোন, নুপূরের বড় ভাই আছে নাফিস উনি অবিবাহিত আলিফদের দলের একজনহ বড় মামার তিন সন্তান বড় হচ্ছে ছেলে শুভ ভাইয়া। ওনার বউ রাহা ভাবি সকলের প্রিয় একটা ছেলেও আছে। বড় মামার দুই মেয়ে মিতু আর নিতু। মিতুর বিয়ে হয়েছে একটা মেয়েও আছে। এখন নিতুর পালা। মেজো মামার দুই ছেলে মেয়ে মিম আর আলিফ। ছোট মামার ছেলে মেয়ে দুই জন। অরিদ আর হাসান অরিদের বিয়ে হয়েছে তার বউ আশা। আর অর্ণির কোনো ভাই বোন নেই তাই তো আদরে বাদর হয়েছে। মিম অর্ণির দুই মাসের বড় আর নুপূর অর্ণির একমাসের ছোট। সবাই এখন অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। অর্ণিরা ঢাকায় থাকে নিতুর বিয়ে উপলক্ষে আসা হয়েছে এখন। তবে মিম নুপূর সবসময় যায় দেখা করতে। আর ওরা সবাই এখন চট্টগ্রামে অবস্থান করছে)

ভাবিরা সহ সবাই মিলে পার্লারে যায়। সবাই একরকম সাজ দেয় নিতু বাদে। সবাইকে অনেক সুন্দর লাগছে গোল্ডেন আর হলুদ মিশ্রিত লেহেঙ্গাতে। অর্ণি মিম নুপূর সবার আগেই সেজে বসে বসে টিকটক ভিডিও করছিল। ভাবিরা তখন যে কারে করে এসেছে সেটা করে রিসোর্টে চলে যায়। সব অনুষ্ঠান রিসোর্টেই হবে। বাকি থাকে মিম অর্ণি নুপূর। ওরা ভেবেছিল নিতু আছে কিন্তু না নিতুকেও সাথে করে ভাবিরা নিয়ে যায়। যা দেখে প্রচন্ড রেগে যায় ওরা তিনজন এখন ওরা যাবে কি করে! বড় মামাকে ফোন করলে উনি বলে উনি নিজেই ওদের চলে আসতে বলছে কারণ খুব দরকার পড়েছে ওদের নিতে কাউকে পাঠিয়ে দিবে।

তাই ওরা আবারো টিকটক ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বড় মামা তখন মিমকে ফোন দিয়ে বলে ওদের আনতে ছেলেপক্ষ থেকে কেউ গেছে তখন সবাই পার্লার থেকে বের হয়। সামনে থাকা মানুষকে দেখে তো অর্ণি অবাক! কারণ অভ্র গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে হাত বুকের মধ্যে ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। কালো কোর্টে কি যে ভালো লাগছে বলে বুঝানো যাবেনা। সিল্কি স্পাইক করা চুল গুলো বাতাসের সাথে সাথে কপালে এসে বারি খাচ্ছে। অর্ণি এক ধ্যানে অভ্রকে দেখছে। অভ্র অর্ণির দিকে তাঁচাতেই চোখে চোখ পড়ে যায় অর্ণি লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয় আর অভ্র মুচকি হাঁসে। এই হাঁসির কারণ যে ওর কাছেও অজানা।

অভ্র ওরা সামনে এলে গাড়ির দরজা খুলে দেয় মিম নুপূর তাড়াতাড়ি গাড়ির ভেতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। অর্ণি হতবাক হয়ে যায়। তারপর চোখ দিয়ে ইশারা করতেই ওরা বলে
অর্ণি প্লিজ এখন সামনে বসে পড় ভাইয়ার সাথে আমরা আসলে ভারি পোশাক পড়েছি তো তাই খুব গরম লাগছেরে। (গরম লাগছে এমন অভিনয় করে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে নুপূর বলল)

অগত্যা অভ্র সামনে গিয়ে দরজা খুলে দেয় আর অর্ণি বসে পড়ে তা দেখে মিম আর নুপূর মিটমিট করে হাঁসতে থাকে। অভ্র ড্রাইভ করছে কোনো কথা বলছেনা মিম নুপূর বকবক করে ওর ভাথা গরম করে দিচ্ছে অর্ণি চুপ করে বাহিরের দিকে তাঁকিয়ে আছে। অভ্র আড়চোখে ওকে দেখছে এসি গাড়িতেও ওর নাকের ডোগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। তা দেখে অভ্র ইচ্ছা করছে আলতো করে ছুয়ে দিতে। নিজের মনের এসব বেহায়া ইচ্ছা গুলোর জাগরণ হওয়ার কারণে অভ্রর নিজেরই নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। অর্ণি আড়চোখে বারবার অভ্রকে দেখছে সেটা অভ্র বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে তাই ঠোটে বাঁকা একটা হাঁসির রেখা টানলো। মিম নুপূর অভ্রকে বলল মিউজিক অন করতে তাই ও অন করে দেয়।

Tere samne aja ne se
Ye dil mera dhadka hai
Yeh galti nahi hai teri
Kasoor nazar ka hai
Jis baat ka tujhko dar hai

Wo kar ke dikha dunga
Aise na mujhe tum dekho
Seene se laga lunga
Tumko chura lunga tumse
Dil mein chupa lunga

গানটা বাজছে আর অভ্র অর্ণিকে দেখছে অর্ণি এবার ব্যাপারটা বুঝে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। অভ্র এবারো মুচকি হাঁসে। আজ পর্যন্ত ও ফিরেও কোনো মেয়ের দিকে তাঁকায়নি কিন্তু আজ না চাইতেও অর্ণিকে বারবার দেখছে। অর্ণির প্রতি একটা ভালো লাগা কাজ করে কিন্তু মুহূর্তেই নিজেকে গম্ভীর করে আগের মুডে চলে আসে।

রিসোর্টে পৌঁছে অর্ণি এক মুহূর্তের জন্যও অপেক্ষা না করে দৌড়ে ভেতরে চলে যায়। অভ্রকে দেখলে ওর লজ্জা লাগে এখন। ওর সামনে যাবে কি করে সেই চিন্তায় বিভোর। সবাই ড্যান্স করবে সিদ্ধান্ত নেয় যার যার ড্যান্স পার্টনারও পেয়ে যায়। অর্ণি শুধু পেল না তাই ওর মন খারাপ। সিনান অভ্রকে বললে অভ্র একবারেই না করে দেয়। নিহাম শুনে অর্ণির ড্যান্সপার্টনারের প্রয়োজন তাই সে মহাখুশি হয়। ও বলে ও অর্ণির সাথে ড্যান্স করবে অর্ণিও আপত্তি করেনা।

প্র্যাকটিস্ করার সময় অর্ণিকে নিহাম অনেক বাঝে ভাবে টাচ্ করে অর্ণি সেটাতে অনেক অস্বস্তিবোধ করে কিন্তু মুখ ফুটে বলার মতো সাহস পায় না। অভ্র সোফাতে বসে কার সাথে ফোনে কথা বলছিল আর ওদের নাচ দেখছিল তখন অর্ণিকে নিহাম যে ভাবে টাচ্ করে তা ওর দৃষ্টি এড়ায় না। মুহূর্তেই ওর মুখ রাগে লাল হয়ে যায় ও ওঠে গিয়ে অর্ণির পাশে দাঁড়ায় তারপর হেঁচকা টান মেরে নিজের বুকের মাঝে মিশিয়ে নেয়। অভ্রর এমন আচরণে অর্ণির বুক ধুকপুক করে। অভ্র নিহামকে বলে
আমি ওর ড্যান্সপার্টনার এতক্ষণ ব্যস্ত থাকায় আসতে পারিনি আপনি এখন যেতে পারেন।

নিহাম কিছু বলবে তার আগে অভ্র ওকে চোখ রাঙিয়ে বলে
প্লিজ।
নিহাম চলে যায় সেখান থেকে। অভ্র অর্ণিকে নিজের বুকের মধ্যে এভাবে মিশিয়ে নিয়েছে বলে একটু বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে তাই অর্ণিকে ছেড়ে সরি বলে ওঠে। অর্ণি আবারো লজ্জা পেল অভ্রর দিকে তাঁকানোর শক্তি নেই ওর মধ্যে।

পর্ব ৩

অর্ণি আর অভ্র খুব সুন্দর করেই প্র্যাক্টিস করে। অর্ণি একটা গান সিলেক্ট করে অভ্র সেই গানেই ওর সাথে নাঁচে। অর্ণি তো অবাক অভ্র এতো ভালো ড্যান্স করেছে ও ভেবেছিল মুড নিয়ে বসে থাকা ছাড়া হয়তো আর কোনো কাজই ঠিক করে করতে পারেনা। তার ধারণাটা অভ্র ভুল প্রমাণ করে ছাড়লো। অভ্রর কাছে মোটেও ভালো লাগেনি এসব তাও বাধ্য হলো কারণ অর্ণি মন খারাপ করবে তাছাড়া নিহাম যদি সেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে! সবাই অর্ণি আর অভ্র জুটির অনেক প্রশংসা করে তাদের ড্যান্স সবচেয়ে ভালো হয়। এবার হলুদ দেওয়ার পালা।

সিনান আর নিতু অনেক্ষণ যাবৎ খেয়াল করছে অর্ণি মিম নুপূর ওদের দিকে তাঁকিয়ে হাঁসছে। হাঁসার কারণটা নিতু কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও সিনান পারছেনা। ভ্যাবলাকান্তর মতো নিতুর দিকে তাঁকালো এতো মানুষের মধ্যে ওরা একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতে পারছেনা। কারণ গুরুজন আছে। পাশাপাশি বসে আছে দুজন তাই সিনান নিজের হাত দিয়ে নিতুর আঙুল টান দেয়। নিতু বিরক্ত মুখ করে ওর দিকে তাঁকাতেই সিনান চোখের ইশারায় পেছনে তাঁকাতে বলে নিতু তাঁকায় তারপর বুঝে যে সিনান কি বলতে চাইছে। নিতু ইশারা ইঙ্গিতে সিনানকে চুপ থাকতে বলে। সিনান চুপ হয়ে যায় এবার হলুদ লাগাতে এসেছে মেয়ে পক্ষ থেকে অর্ণি ছিলে পক্ষ থেকে অভ্র। ব্যাপারটাকে একটা দূর্ঘটনা বললেই চলে।

সিনানের পাশে অভ্র বসে আর নিতুর পাশে অর্ণি। এতক্ষণ সব ঠিক ছিল অভ্রকে দেখে অর্ণি বরফের মতো জমে যাচ্ছিল। ড্যান্স করার সময়ও এমনটা হয় বলতে গেলে অভ্র সামনে আসলেই এমন হয়। তাহলে এটা কি শুধু ক্রাশ নামক শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ! নাকি এর বাহিরেও কোনো সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছে যা দুজনের অজানা। মিমের ডাকে অর্ণি ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে। তারপর নিতুর দিকে তাঁকিয়ে মুখে জোর পূর্বক হাঁসির রেখা টেনে আলতো করে হলুদ ছোঁয়ায় তারপর সিনানকে। দুজনকে এতো ফলের মধ্যে কোনটা খাওয়াবে বুঝে উঠতে পারছেনা।

নিতু অর্ণির কানে ফিসফিস করে বলে মিষ্টি কম এমন কিছু নে ওরা কেউ মিষ্টি বেশি খায় না। অর্ণি বুঝলো না ওরা কেউ বলতে কাকে বুঝালো এখানে তো শুধু সিনান আছে। তারপর ভাবলো হয়তো ওর ফ্যামিলির সবাইকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে অর্ণি আনমনেই ভেংচি কেটে ভাবতে লাগলো ও কি সবাইকে খাওয়াতে যাবে নাকি! অর্ণির এমন ভাবনার দেশে যাওয়া দেখে মিম নুপূরের রাগ হলো কোথায় ক্রাশের সামনে একটু ঢং করবে তা না এখন সে কি যেন ভাবতে বিভোর। মিম আবারো ডাক দিল অর্ণিকে
অর্ণি তুই তো দেখছি একাই সব টাইম নষ্ট করছিস। আমরা কখন দিব তোর এতসময় লাগছে কেন?

দাঁড়া আসছি একটু অপেক্ষা কর।
অর্ণি এবার আঙুর নিয়ে নিতু সিনানকে খাওয়ালো ওর এই ভাবনার মাঝে অভ্র সিনান আর নিতুকে হলুদ দিল আর কিছু ফল ও মিষ্টি খাওয়ালো। নিতু অর্ণিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল অভ্রকে খাওয়া ছাগল। অর্ণি এবার বুঝতে পারলো নিতু তখন কেন বলেছিল ঐ কথা। অর্ণি ধীরে ধীরে হাতটা অভ্রর সামনে নিয়ে গেল ওকে খাওয়াতে। অভ্র স্বাভাবিক ভাবে খেল তারপর ও নিজেও অর্ণিকে একটু মিষ্টি খাওয়ালো।

অর্ণি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে যা দেখে অভ্র একটা ডেভিল স্মাইল দিল। ছবি তোলার পর ওরা দুজন স্টেজ থেকে নেমে যায়। সেদিনের মতো অর্ণি একবারো অভ্রর সামনে যায় না। হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হলে ওরা ওর নানুর বাড়িতে চলে আসে। অভ্র হলুদে তোলা ছবি গুলো নিজের ফোনে নিল সবগুলো ছবির মধ্যে অর্ণির সাথে ড্যান্স করার ছবি আর হলুদ দেওয়ার ছবিও আসে ওর ফোনে। রাতে যখন ঘুমাতে যাচ্ছিল তার আগে একবার ফোন চেক করে সব গুলো ছবি দেখে তখন অর্ণির সাথে সুপ্ত মুহূর্ত গুলো দেখে ওর হৃদয়ে শীতলতা বয়ে যায়। আবেশে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে।

অর্ণিরা আজ কেউ পার্লারে যায় না পার্লারের মহিলারা আসে। আজ নিতুকে খুব সুন্দর লাগছে বিয়ের সাজে। প্রত্যেকটা মেয়েকেই হয়তো এমন দেখায়। বিয়ের দিন তাদের সৌন্দর্য মনে হয় দ্বিগুণ হয়ে যায়। সবার ড্রেস আলাদা হলেও মিম অর্ণি নুপূরের ড্রেস ম্যাচিং করা। ওরা এমনই ঈদ হোক বা কোনো অনুষ্ঠান সবসময় সেম ড্রেস পড়বে। আজ ওরা কালো রঙের লং ড্রেস পড়েছে যার মধ্যে গোল্ডেন পাথরের কাজ। চুল গুলো কার্ল করা ঠোটে লাল লিপস্টিক এক কথায় অসাধারণ লাগছে ওদের। মিম নুপূর অর্ণি নিতু এক গাড়িতে বসেছে।

ওরা একসাথেই যাবে সবাই অন্য গাড়িতে। রিসোর্টে এসে সবাই সবার মতো ইন্জয় করতে লাগলো। অর্ণি উতলা হয়ে আছে অভ্রকে দেখার জন্য কিন্তু মনে মনে ঠিক করে রেখেছে অভ্রর সামনে যাবেনা। অর্ণি দোতালায় যে কর্ণারে ফুলের সমারহে একটা বৈঠক খানা সাজানো হয়েছে সেখানে গিয়ে বসে। এই মুহূর্তে কেউ নেই ওখানে। অভ্রকে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে খুঁজছে এই সাইড থেকে রিসোর্টের অনেকগুলো জায়গা খুব ভালো ভাবে দেখা যায়। অর্ণির দিকে যে দূর থেকে একজন তার ব্রাউন চোখ গুলো দিয়ে তাঁকিয়ে আছে সেই খেয়াল ওর নেই। একটা ছেলে এসে অর্ণির সামনে দাঁড়ায়।

হেই বিউটিফুল গার্ল! এখানে একা একা কি করছো।
যা-ই করি আপনার কি! আপনি সরেন এখান থেকে। (মুখ ঘুরিয়ে)
সরতে আসছি নাকি।
তাহলে কেন আসছেন?

তোমাকে দেখতে আর আর(কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে)
ছেলেটা খুব অশ্লীল দৃষ্টিতে তাঁকায়ে বলে
আর একটু ছুঁতে।

অর্ণি এবার উঠে গিয়ে ঠাস করে ছেলেটার গালে একটা চড় মারে। ছেলেটা রাগি চোখে ওর দিকে তাঁকায়। ওর দিকে এগিয়ে যাবে ওমনি অভ্র এসে ওকে বেধরম মারতে থাকে। দূর থেকেই অভ্র ছেলেটাকে লক্ষ করে ছেলেটা যে অর্ণির দিকে কুদৃষ্টি দেয়। অভ্রকে এভাবে দেখে সিনানের ভাই সাবিত আর আলিফ দৌড়ে আসে তারপর ছেলেটাকে ওর থেকে ছুটিয়ে নেয়। ছেলেটাকে নিয়ে ওরা কোথায় যেন চলে যায়। অভ্রর কাছে এসব ভালো লাগেনা। এখন আরো অর্ণির উপর রেগে গেছে। মেয়েটা এতোটা অসচেতন হয় কেন! ওর ঐ ছেলের সাথে কেন কথা বলতে গেল। রাগে অভ্রর মাথা ফেটে যাচ্ছে। অর্ণির কাছে গেলে অর্ণি কিছু বলবে তার আগেই অভ্র কষে অর্ণিকে এক থাপ্পর মারে। অর্ণি ছল ছল চোখে অভ্রর দিকে তাঁকায় অভ্র সেদিকে খেয়াল করেনা।

ও অর্ণির হাতের কব্জি শক্ত করে চেপে ধরে বলে
এই মেয়ে এতো কেয়ারলেস কেন তুমি? নিজের ভালো মন্দ তো একটা পাগলও বুঝে তুমি বুঝোনা কেন? আমি কি প্রতিবার তোমাকে এসব নরপশু থেকে বাঁচাতে আসবো! যদি এমন ধারণা পোষণ করে থাকো তাহলে তা এক্ষুণি মাথা থেকে ঝেরে ফেল। কারণ অভ্র চৌধূরী কারো বডিগার্ড নয়। যত্তসব।

অভ্র চলে গেলে অর্ণি সেখানে বসেই কেঁদে দেয়। মিম সেলফি তুলছিল অর্ণিকে এভাবে কান্না করতে দেখে ওর বুক কেঁপে ওঠে। অর্ণি কেন এমন কান্না করছে তাও আবার আজকের এতো খুশির দিনে। মিম অর্ণির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানু তোর কি হয়েছে কাঁদছিস কেন? (মিমের চোখেও পানি এসে গেছে ওরা এমনই একজন কাঁদলে অন্যজন কাঁদে আবার হাসঁলেও হাঁসে)
মিম। (বলে ঝাপিয়ে পড়ে মিমের উপর আর ওকে জড়িয়ে আরো জোরে কাঁদে)

পর্ব ৪

মিমকে অর্ণি তখনকার সব কথা খুলে বলে। সবকিছু শুনে মিম রেগে যায় তবে রাগটা ঐ ছেলেটার উপরেই হয় কারণ অভ্র যা বলেছে এবং করেছে তাতে দোষের কিছু নেই। ওর জায়গা থেকে ও ঠিক আছে। অর্ণির কান্না করার কারণ হলো অর্ণি অভ্রর প্রতি দুর্বল তাই ওর মুখের এমন কথা আর থাপ্পরটা খেয়ে ও এমন করে কাঁদছে। মিম ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সেখান থেকে নিয়ে যায়। সেদিন আর অর্ণি অভ্রর সামনে যায় না। অভ্রও আসেনা ওর সামনে দরকার কি যে যার মতো পড়ে থাকুক। নিতুর বিয়ের কার্য সম্পন্ন হলে সবাই বাড়ি ফিরে যায় আর নিতু রিসোর্টে থাকে সাথে ওর মামাতো বোন ঝর্ণাও থাকে।

সানিনরা কাল সকালে সবাই ঢাকা নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবে। বৌভাত সেখানেই হবে অর্ণির বড় মামারা পরশু যাবে। তাদের ঢাকা ফ্ল্যাট আছে কিন্তু এখন সেখানে সব ঠিকঠাক নেই মানুষও বেশি আর সময়ও অল্প এরপরও বড় মামারা সেখানেই সব ঠিক করে উঠতে চায়। বাঁধ সাজে অর্ণির আব্বু জাফর ইসলাম। তিনি কোনোমতেই অর্ণির বড় মামার সিদ্ধান্ত মানতে রাজি না। তার এতো বড় বাড়ি থাকতে তারা এখন কষ্ট করে ওখানে উঠবে তা উনি চায় না।

অগত্যা তার জোরাজুরিতে বড় মামা রাজি হলো অর্ণিদের বাড়িতে উঠতে। অর্ণিরা সেদিন রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় সাথে করে অর্ণির নানু আর মিম নুপূর যায়। মিম নুপূরকে তো যেতে দিচ্ছিল না কেউ অর্ণির চিল্লানিতে আর কেউ কিছু বলতেও পারেনি তাছাড়া সামিরা বেগম বলেছে পরশু তো এমনিতেও যেতে হবে আজ গেলে তেমন কিছু হবেনা। বড় মামা রাজি হলে ওরা তিনজন ইয়াহু করে ওঠে। তারপর ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হয়ে চলে যায়।

রাতে,
এখন রাতের 3 টা বাজে ভোর রাত হয়ে গেল। অর্ণিরা আরো আগেই ঢাকা এসে পৌঁছায়। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়। অর্ণি, মিম, নুপূর একসাথে ঘুমায় সবসময়। তবে আজ কারো চোখেই ঘুম নেই তার কারণ একটা আর সেই কারণ হলো অভ্র। অর্ণি তখন থেকে অভ্র অভ্র করে মরছে। মিম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বিছানা থেকে উঠে গেল আর ব্যাগের মধ্যে কি খুঁজতে লাগলো তারপর কিছু পেল আর তা হলো একটা কাগজ অর্ণি আর নুপূর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মিমের দিকে তাঁকাতেই ও ভূবন ভোলানো একটা হাঁসি দিল তারপর অর্ণিকে বলল
জানু! চল একটা গেম খেলি।

কি গেম?
এই নে ধর। ( অর্ণির হাতের দিকে কাগজটা এগিয়ে দিয়ে)
কি আছে এটাতে?
খুলে দেখ।

এটাতো কারো নম্বর কিন্তু কার।
অভ্র ভাইয়ার।
কি! ওনার নম্বর তোর কাছে কিভাবে?

আলিফ ভাইয়ার মোবাইলে সেভ করা ছিল আপুর হলুদে যখন ভাইয়ার মোবাইল নিয়েছিলাম সেল্ফি তুলতে তখন ভুল বশত ডায়ালার এ চলে যাই আর প্রথম নম্বর টাতেই বড় করে অভ্র ভাই লেখা ছিল আমিও দেরি না করে নম্বর নিয়ে নিলাম তোর কাজে লাগবে তাই।

আমার জানুটা! (খুশি হয়ে)
অর্ণির মুখটা মুহূর্তেই আবার অন্ধকার হয়ে এলো। তারপর মিনমিনিয়ে বলল
আচ্ছা আমি এখন ওনার নম্বর দিয়ে কি করবো? ঐ লোকটা খুব খারাপ আমাকে কি জোরে থাপ্পর মরলো আর কতো কথা শুনিয়ে গেল বলবোনা আমি ঐ লোকটার সাথে কোনো কথা। (মুখ ভার করে)
দেখ তুই ওনার সাথে মিষ্টি ভাষায় কথা বলিস না।
মানে।

মানে আমি বলতে চাইছি সুন্দর করে কথা বলিস না তুই ওনার সাথে এখন ফোন দিয়ে ঝগড়া করবি।
কি।
হুম। অভ্র ভাইয়ার প্রতি এখন তোর ফিলিংস কেমন! মানে ওনার কথা শুনলে তোর এখন কেমন লাগে আর সবচেয়ে বড় কথা তুই ওনার ঐ ব্যবহারের জন্য ওনাকে শাস্তি দিতে চাস।
হুম খুব করে দিতে চাই। আর ওনার প্রতি ফিলিংস কেমন জিজ্ঞেস করলি না! আমি ঐ শয়তানটার মাথা ঘাড় থেকে আলাদা করে দিব। মেরে ভর্তা বানিয়ে দিব ওর হাড় দিয়ে ডু,
থাক থাক আর বলিস না। সব এখন বলে ফেললে ওনাকে কি বলবি?

হ্যাঁ তাই তো।
আরে এসব ছাড় এবার ভাইয়াকে কল কর তাতেই তো হয়। (নুপূর কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল আসলে বেচারি কোনো জিনিসে দেরি পছন্দ করেনা)
অর্ণি মিম নুপূর খাটে গোল হয়ে বসলো। অভ্রকে কল করলো রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছেনা তাতে যেন অর্ণির রাগটা আরো বেড়ে গেল। তাও চুপচাপ ছিল ধৈর্য নিয়ে বসে রইল। অভ্র ঘুমাচ্ছিল মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজে ঘুম ঘুম চোখে মোবাইল হাতে নেয় তারপর দেখে আননোন নম্বর। ও কখনোই অপিরিচত কোনো নম্বর থেকে কল আসলে তা রিসিভ করেনা কিন্তু এখন করলো। এতো রাতে কে ফোন দিল কোনো সমস্যা হয়নি তো বাড়ির কারো সেই টেনশনে রিসিভ করলো। সঙ্গে সঙ্গে ঐ পাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে কেউ একজন বলে উঠল
এটা কি অভ্র চৌধূরীর নম্বর।
হুম। (ঘুম জোড়ানো কন্ঠে)

অর্ণি মনে মনে বলতে লাগলো শালা আমার ঘুম নষ্ট করে নিজে আরামসে ঘুমাচ্ছিস! দাঁড়া আজ তোর ঘুমের বারোটা বাজাবো।
এভাবে ফোন দিয়ে চুপ করে থাকাতে অভ্র বিরক্ত হয়ে বলল
হেলো কে বলছেন কোথা থেকে বলছেন আর আমাকে কেন ফোন দিয়েছেন?

আমি তোর জম বলছি। জম নগর থেকে বলছি আর তোকে চিবিয়ে খেতে ফোন দিয়েছি। (রেগে গিয়ে)
এমন আজগুবি কথা শুনার পর অভ্রর ঘুম মিনিটেই উধাও হয়ে গেল। গলার স্বর শক্ত করে বলল
এই কে তুমি? আর এসব আবোল তাবোল কি বলছো?

তোর মাথা বলছি শয়তান রাক্ষস কোথাকার।
এই মাথা খারাপ নাকি? (ধমক দিয়ে)
অভ্রর ধমকে অনেক গুণ অর্ণি সবসময়ের মতো এবারো চুপসে গেল তবে এবার শুধুমাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য। কারণ ওর মাথাতেও যে রাগেরা ভর করেছে। ও উল্টো অভ্রকে ধমক দিয়ে বলল

এই গলা নামিয়ে কথা বল। সাহস তো কম না আমাকে ধমকাচ্ছিস! তুই কোন আলালের দুলালরে? বেয়াদব মেয়েদের সম্মান দিতে জানিস না।
আমি মেয়েদের সম্মান দিতে জানিনা মানে কি? আমার সম্মন্ধে না জেনে এসব আলতু ফালতু বকছো কেন? সামনে পেলে তোমাকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিব আমি কি জিনিষ।

তুই সামনে পেলে কি করবি আমার! আমি উল্টো তোকে বুজাবো আমি কি জিনিষ। আর শুন তোকে আমি হাতের কাছে পেলে তোর ঘাড় মটকাবো। তোর মাথা ঘাড় থেকে আলাদা করে দিব তোকে লাথি দিয়ে উগান্ডায় পাঠাবো। আর শুন তোর বিয়ে হতে দিব না আজীবন তুই বিপত্নীক থাকবি। আর তোর চোখে আমি বিষ ঢেলে দিব তোর গায়ে বিচুটি পাতা ঘষে দিব তখন বুঝবি আমি কি এই অর্ণি,

আর কিছু বলার আগেই মিম তাড়াতাড়ি ওর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে কল কেটে দেয়। এদিকে অভ্র বুঝে গেল এতক্ষণ কে তাকে এতো কথা শুনালো, ঝারি দিল তবে মনে মনে খুশিও হলো। মুখে বাঁকা হাঁসির রেখা টেনে বলতে লাগলো
মিস অর্ণি তুমি এবার বুঝবে কার সাথে টক্কর দিতে আসলা তুমি।
মিম অর্ণিকে অনেকক্ষণ যাবৎ ওর নিরবুদ্ধিতার জন্য বকা ঝকা করলো।

পর্ব ৫

আজ খুব দেরী করেই অর্ণিরা ঘুম থেকে ওঠে। রাতে যা গেল তারউপর ঘুমালো 4 টার সময়। দেরী হওয়ারই কথা। এখন 12 টা বাজে ওরা তিনজন বসে ব্রেকফাস্ট করছে টেবিলে তখন ওর নানু এসে বসলো অর্ণির পাশে নানুকে দেখে মুঁচকি হাঁসলো। নানু বলল
মায়ের সাথে কথা বলিস নি এখনো?
না। (অভিমানি সুরে)

তোর মা খুব কষ্ট পাচ্ছে ভেতরে ভেতরে যা না আমার সোনা পাখিটা একটু মায়ের সাথে কথা বলে আয়।
তোমার মেয়ে আমাকে বিনা কারণে মারলো কেন?
আমার মেয়ে তোর কি হয়? মা হয় তো! তো মায়েরা তো নিজের সন্তানকে শাষণ করবেই তাই বলে কি তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবি?
নানু। (করুন দৃষ্টিতে)
যা মায়ের সাথে কথা বলে আয় খেয়ে দেয়ে। তোর মা রুমেই আছে।
আচ্ছা।

অর্ণি খাওয়া কমপ্লিট করে উপরে তার আম্মুর রুমে যায়। তার আম্মু বিছানায় বসে জামা কাপড় বের করে আলমারিতে ঢুকাচ্ছিল। রুমের সামনে মেয়েকে দেখে খুশি হয়ে যায়। অর্ণিকে হাতের ইশারা করে ডাকতেই ও এসে ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে।
আম স্যরি আম্মু।
স্যরি বলছো কেন বাবু! ভুল তো আম্মু করেছে তোমাকে মেরে। আমার উচিত হয়নি তোমাকে থাপ্পর মারা।
ইটস্ ওকে। তুমি তো মারতেই পারো তাই না! আচ্ছা শুনো আমি কিন্তু তোমার উপর রেগে নেই এখন কিন্তু একটু পরে রেগে যাবো। (মুখ ফুলিয়ে)
কেন বাবু?

আম্মু তুমি মালাই আইসক্রিম করো আমাদের সবার জন্য।
এখন খেলে তোর গলা বসে যেতে পারে। তুই ঠান্ডা খেলে ঠিক থাকিস না একটা না একটা অসুখ বাঁধিয়ে ফেলিস। তাও এতো আইসক্রিম পাগলা কেন তুই?
তোমার মেয়ে তোমারই মতো। নানু বলেছে তুমিও এমন আইসক্রিম পাগলা ছিলে।

এই আমাকে পাগলা বলছিস কেন তুই? (রেগে)
আমি কোথায় বললাম নানু বলেছে। আমি বরং যাই আজ বিকেলের মধ্যে আমার আইসক্রিম চাই কিন্তু।
অর্ণি আর দাঁড়ালো না দৌড়ে নিচে চলে গেল। মিম নুপূরের সাথে আড্ডা দিবে এখন। সারাদিনই তো দেয় এটা নতুন কিছুনা। অর্ণির আম্মু ওর যাওয়ার পর হালকা হেঁসে আইসক্রিম বানাতে যায়। বিকেলের দিকে অর্ণিরা আইসক্রিম খায়। এই আইসক্রিম যেন অর্ণির কাল হয়ে দাঁড়ালো ও গুনে গুনে ছয়টা আইসক্রিম খায় যার ফলে ওর গলা ভেঙ্গে যায়।

এখন কথা বললে কেমন যেন শুনা যায় অর্ণির গলা ব্যাথাও মিম নুপূর ওকে নিয়ে হাঁসতে হাঁসতে শেষ। অর্ণি কিছু বললেই মনে হয় দুজন মানুষ একসাথে কথা বলছে। তবে অর্ণির কাছে এটা ভালো লাগে যখন ওর গলার স্বর পরিবর্তন হয়। রাতে অর্ণির আম্মু ওদেরকে জানায় নিতুরা ঢাকা এসে পড়েছে আর বড় মামারা কাল সকালে চলে আসবে। ওদের খুশি দেখে কে এতো কিছুর মধ্যে অভ্রর কথা ওরা সবাই ভুলে যায়। কাল বড় মামারা সকালে আসবে। বৌভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন রাতে করা হয়েছে। সেদিন রাতে ওরা খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে অনেক কাজ আছে তাই।

সকালে,
বড় মামারা সবাই এসে গেছে। ওনারা আসলে অর্ণির বাবার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলে তারপর খাবার খেয়ে রেস্ট নেয়। অর্ণির কাল রাতেও টেনশন ছিল না কিন্তু এখন আবার খুব টেনশন হচ্ছে। কারণ আলিফ সহ যখন বসে গল্প করছিল তখন সিনান কল করে আর বলে কখন আসবে। আলিফ বলে সন্ধ্যায় তারপর কথার মধ্যে হঠাৎ অভ্রর প্রসঙ্গ উঠে আসে। আর তখনিই অর্ণির বুক ধুকপুক করতে থাকে। অভ্র নাকি ওদের বাসায় ও সন্ধ্যার সময় আসবে অর্ণি মনে মনে চাইছে অভ্রকে দেখতে কিন্তু বাহিরে মিমদের সামনে প্রকাশ করছে ও চায় না অভ্র আসুক। আসলে ও সত্যিই চায় অভ্র আসুক কিন্তু ওর সাথে যাতে দেখা না হয়।

অর্ণি আজ নিজেকে পিংক কালার গাউনে সাজিয়েছে। আজ ওদের কারো ড্রেস মিলে নাই মিম পড়েছে গোল্ডেন গাউন আর নুপূর পড়েছে সিল্ভার কালার গাউন। সবাই আজ সিম্পল মেক আপ দেয় আজ ওদের চেহারায় স্নিগ্ধতা ফুটে উঠেছে। আজ অর্ণি নিজের সিল্কি চুল গুলো স্ট্রেইট করেছে। ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক, চোখে কাজল। ওরা সবাই সিনানদের বাড়িতে এসে পৌঁছায় খুব সুন্দর ডেকোরেশন করা হয়েছে। চারিদিকে হোয়াইট আর পিংক কালার দিয়ে ডেকোরেশন করা। অর্ণির ড্রেসের কালারের সাথে ঐ কালারটা একদম ম্যাচ করেছে। যা দেখে অর্ণি খুব খুশি হয়। এর মধ্যে আবারো ওর টেনশন হচ্ছে কি করবে বুঝতে পারছেনা।

গার্ডেনে পাতা চেয়ার গুলোতে গিয়ে বসলো ওরা তিনজন। মিম নুপূর আবারো টিকটকে ব্যস্ত তবে অর্ণি এবার ওদের সঙ্গ দেয় নি। ও তো অভ্রকে নিয়ে ভাবছে আজ অভ্র কি আসবে নাকি আসবেনা। মন খারাপ করে কিছুটা মুখ গোমড়া করে বসে রইল বললেই চলে। তখনিই চারিদিকে মিউজিক অন করা হয় অর্ণির একটা পছন্দের গান মাসাক্বালি 2.0 যেটা নতুন বের হয়েছে। গানটা শুনে ওর মন কিছুটা ভালো হলো তো মাথা উপর করে চারিদিকে সবাইকে দেখতে লাগলো। তখনিই খেয়াল করলো সিনান আর অভ্র আসছে। অভ্র আজ হোয়াইট কোর্ট প্যান্ট পড়েছে। আহ্ কি যে লাগছে তাকে চোখ সরানোই যাচ্ছেনা। অর্ণি এক ধ্যানে অভ্রকে দেখছে এদিকে যে তার খেয়ালই নেই অভ্র ওর সামনে এসে বসেছে সাথে সিনান ও। সিনানের ডাকে অর্ণির হুশ ফেরে
কি শালিকা ওমন হা করে কি দেখছো?

আমি! কোথায় আমি আবার কি দেখছি? (ভাঙ্গা গলায় বলল)
শালিকা তোমার গলায় কি হয়েছে।
আরে ও আইসক্রিম বেশি খেয়ে ফেলেছে তাই গলার স্বর এমন হয়ে গেছে। (নুপূর বলল)
তো শালিকা ওষুধ খাচ্ছো তো।
হুম।

যাক দেখবে ভালো হয়ে যাবে।
জ্বী
তোর শালিকার মন তো মনে হচ্ছে অন্য কোথাও। তোর কথা শুনছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। (অভ্র বলল)
অভ্রর এমন কথায় অর্ণি হকচকিয়ে গেল কিন্তু মুখে কিছু বলল না। সিনান হালকা হেঁসে বলল
না আমার শালিকা আমার কথা মন দিয়েই শুনেছে।

শুনলে তো ভালোই। (অর্ণির দিকে একদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে)
সিনানের ফোনে কল আসায় ও চলে যায়। অভ্রকে বলে বসতে ও কিছুক্ষণের মধ্যে আসছে মিম নুপূর ও উঠে চলে যায় নিতুর কাছে। টেবিলে শুধু অর্ণি আর অভ্র। অর্ণি টেবিল থেকে যে উঠে যাবে সেই শক্তিও নেই। অভ্রর কাছে যেন সব বিলিয়ে গেছে। একরকম কাঁপতে লাগলো তা দেখে অভ্র মুঁচকি হেঁসে বলল
এতো কাঁপাকাঁপি করছো কেন? সামনে পেলে তো অনেক কিছু করবে বলেছিলে তো এখন করে দেখাও।

আমি আসলে মানে ঐ
কি আসলে মানে করছো! সোজ সোজা বললেই তো পারো আমাকে তুমি শায়েস্তা করতে চাও।
কেন?

সেটা আমি জানবো কি করে ফোন করে তো হুমকি তুমিই দিয়েছিলে। কি ঘাড় মটকাবে, চোখে বিষ ঢালবে, বিচুটি পাতা না কি একটা আমার গায়ে লাগাবে কোথায় এখন তো সামনে আছি তো কিছু করছোনা যে।
আমি কখন বললাম।
আহারে তোমার তো দেখি ভুলে যাওয়ার রোগ আছে! ডাক্তার দেখিয়েছো বাবু।
বাবু ডাকটা শুনে অর্ণি অভ্রর দিকে তাঁকিয়ে রইল। এই বাবু সেই বাবু নয় যে বাবু অর্ণির মা অর্ণিকে বলে এই বাবু ঐ বাবু যেটা জিএফ বিএফ বলে একে অপরকে।

পর্ব ৬

এই কিসের বাবু আর কার বাবু? আমি কোনো বাবু টাবু না।
তুমি তো তোমার মায়ের বাবু।
সেটা আমার আম্মুর বাবু। আপনি আমাকে বাবু বলছেন কেন?

তোমার আম্মু বলে তাই ভাবলাম আমিও বলি। সে যাই হোক বাবুর টপিক বাদ দাও। আমাকে শায়েস্তা করার জন্য যে প্ল্যান কষেছো তা এখন সফল কর।
কি বলছেন এসব! আপনাকে আমি শায়েস্তা করতে যাবো কেন?
কেন! আচ্ছা যদি না করতে চাও তাহলে আমাকে ফোনে ওসব বললে কেন?
কখন?

কখন মানে কি ঐ যে পরশু রাতে।
আমি কোনো কল করিনি আপনাকে।
আরে আমি জানি তুমি এখন ইচ্ছা করে স্বীকার করছো না।

মানে।
মানে হলো এই যে তুমি আমাকে কল করেছো আমার সাথে কথা বলতে। আসলে এতো সুন্দর স্মার্ট ছেলে দেখে যেকোনো মেয়েই ফিদা হয়ে যায়। আর প্রেম করতে চায়। তুমিও সেইসব মেয়েদের মধ্যে একজন। (একটু ভাব নিয়েই বলল)
সেইসব মেয়ে বলতে কি বোঝাতে চাইছেন? আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। আমার ব্যাপারে এসব উল্টা পাল্টা ভাববেন না বলে দিলাম।
আমার বয়েই গেছে তোমার ব্যাপারে ভাবতে আমি তোমার ব্যাপারে ভালো কিছু ভাবিনা উল্টা পাল্টা কিছুও ভাবিনা। আমি শুধু যা উপলদ্ধি করতে পেরেছি তাই বললাম।

অভ্রর কথাতে অর্ণি অনেক হার্ট হলো কিন্তু প্রকাশ করলোনা। তবুও অবাধ্য চোখের পানি গুলো চোখের কোণায় এসে জমাট বাঁধলো, তবে গড়িয়ে পড়ার আগেই অর্ণি অভ্রকে ভেংচি মেরে সেখান থেকে চলে আসে। যা অভ্রর অন্তর কাঁপিয়েছে ও অর্ণির যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল তারপর দেখলো অর্ণি তো সত্যিই চলে যাচ্ছে তখন পেঁছন থেকে বারবার ডাকছিল তবে অর্ণি সংকল্প করে পেঁছন ফিরবেনা। অর্ণি সিনানদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল একা একা।

এতক্ষণ অভ্রর সামনে কাঁদতে পারেনি এবার সিনানদের বাড়ির সামনের ফাকা জায়গাটা যেখানে বসার জায়গা আছে সেখানে গিয়ে বসে কাঁদতে লাগলো হাউমাউ করে। অর্ণি তখনিই জোরে কাঁদে যখন খুব বেশি কষ্ট পায়। অভ্রর কথাটা এমনই ছিল যে অর্ণি না কেঁদে পারলোনা। মনে মনে তো ভেবে রেখেছিল আর অভ্রকে নিয়ে ভাববেনা কিন্তু বেহায়া মনটা ওকে ভাবিয়েছে। অভ্রর প্রতি ভালোলাগাটাকে ভালোবাসায় রূপান্তরিত করে ফেলেছে তাও অর্ণির অজান্তে। এতো অসভ্য কেন মনটা! অর্ণি শুধু কাঁদছে আশেপাশে কি হচ্ছে কোনো খেয়াল নেই। অভ্র যে এখন এসে তার পাশে বসেছে সেদিকে খেয়ালই নেই।

এই মেয়ে এতো মেলোড্রামা করছো কেন? আমি কাঁদার মতো কিছু বলেছি।
হঠাৎ অভ্রর গলার আওয়াজ পেয়ে অর্ণির কান্না গলাতেই আটকে গেল। অভ্রর দিকে অবাক চোখে তাঁকিয়ে রইল আর অভ্র অর্ণির কান্নামাখা মুখটা অপলক দৃষ্টিতে দেখছিল। অর্ণিকে বলল
এই মেয়ে তুমি আর কখনো কাঁদবেনা।

অর্ণি এবার কান্নামাখা আর গলাভাঙ্গা কন্ঠের সংমিশ্রণে বলল
কেন? আমার কান্না পেলে আমি কান্না করবো তাতে আপনার পারমিশন নিব নাকি! আপনি যান তো এখান থেকে ফালতু লোক একটা।
আমার কি তাই না! আমার কিছুই না আসলে তুমি কান্না করলে তোমার এই পেত্নী মার্কা চেহারা দেখলে ভানুষ হার্টফেল করবে। (আসলে ও কাঁদলে অভ্রর ইচ্ছা করে ওর ঐ লাল গালটায় একটু চুমো দিতে ওর দিকে চেয়ে থাকতে)

অর্ণি এবার নিরবে কান্না করলো পরপর দুবার এমন অপমান যে তার সহ্য হচ্ছেনা তাও আবার ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে। অর্ণি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেখানে নিহাম এসে উপস্থিত হলো অভ্র আর অর্ণিকে একসাথে দেখে অনেকটা রেগে গেল। নিজের রাগ কন্ট্রোল করে অর্ণির কাছে গেল আর বলল
অর্ণি তোমার আম্মু ডাকছে তোমাকে।

আম্মু ডাকছে।
হুম। এসো এভাবে বাহিরের মানুষের সাথে বসে থেকোনা আজকাল খারাপ মানুষের অভাব নেই চলো।
কথাটা শুনে অভ্রর চোখ লাল হয়ে গেল নিহামের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। নিহাম সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে অর্ণির হাত ধরে নিয়ে যেতে চায় অমনি অভ্রও অর্ণির হাত ধরে ফেলে।

অর্ণি তোমার সাথে যাবেনা। (গম্ভীর গলায়)
সেটা আপনার কাছ থেকে জানতে হবেনা আমার। অর্ণি আমার সাথে এখন যাবে।
না অর্ণি যাবেনা। তুমি ওর হাত ছাড়ো।

নিহাম এবার অভ্রর চোখের দিকে তাঁকিয়ে ভয় পেয়ে গেল তাই অর্ণির হাত ছেড়ে দিল। অভ্র অর্ণিকে নিজের কাছে আনতেই অর্ণি ওর হাত এক ঝটকা দিয়ে ফেলে নিহামের হাত ধরে বলে
চলো তো নিহাম ভাই। আমি তোমার সাথেই যাবো।
এসবের মানে কি অর্ণি! তোমাকে আমি যেতে বলেছি?

আপনি যেতে বলার কে? কে হোন আপনি আমার। (অর্ণি এক দৃষ্টিতে অভ্রর দিকে তাঁকিয়ে আছে এই দৃষ্টি বলে দিচ্ছে অভ্রর প্রতি ওর ধিক্কার কিছুটা ঘৃণা আর অভিমান)
অভ্র অর্ণির চোখের ভাষা পড়ছে। অর্ণি তার প্রতি একরাশি অভিমান জমা করেছে যা স্পষ্ট স্বাক্ষ দিচ্ছে যে ও এখন অভ্রর প্রতি নারাজ। অভ্রর কোনো কথায় সে শুনবেনা অভ্রকে সে এখন এড়িয়ে যেতে চায়।

কি হলো নিহাম ভাই! তুমি ওমন হাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? চলো আম্মু পরে আমায় বকবে।
নিহামের হাত ধরে চলে গেল অভ্র রাগে ফেটে যাচ্ছে। অর্ণি তার কথা অমান্য করলো! যদিও সে এটা বুঝতে পারছে অর্ণি অভিমান করেছে তাই এমন করছে কিন্তু অভ্র এটা মানতে পারছেনা। অর্ণি আর নিহামের যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে বলল
এটা ঠিক করলে না তুমি অর্ণি। তোমাকে এর জন্য ভুগতে হবে। (দাঁতে দাঁত চেপে)
অর্ণি ভেতরে এসে দেখে ওর আম্মু আর নিতু দাঁড়িয়ে আছে। নিতুকে দেখে ও গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

নিতু বলে
কিরে বুড়ি কোথায় ছিলি এতক্ষণ! একবারো তো দেখা করতে আসলিনা আমার সাথে। (রাগ করে)
জানু আমি তো তোমার শ্বশুড় বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম ডেকোরেশনটা সুন্দর হয়েছে অনেক।
হয়েছে আর আবোল তাবোল যুক্তি দেওয়া লাগবেনা এখন আয় আমাদের সাথে খেতে বসবি চল।
মিম নুপূর কোথায়? ওদের ছাড়া খাবোনা। ওরা অলরেডি বসে পড়েছে কিন্তু আপনার অপেক্ষায় এখনো কেউ খাবারে হাত দেয় নি। আপনি গিয়ে ওনাদের উদ্ধার করেন।

হি হি হি। যাচ্ছি গো যাচ্ছি।
অর্ণি তুই যা আমি আর ফুফু একটু পরে আসছি।
আচ্ছা।

অর্ণি ওর আম্মু আর নিতু বলে সেখান থেকে যায়। গিয়ে দেখে মিম নুপূর ঝগরা করছে একে অপরের সাথে ও হেঁসে খাবার টেবিলের দিকে যাবে ওমনি কেউ একজন ওর হাত টেনে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে যায়। রুমে এনে দরজা লাগিয়ে দেয় তা দেখে অর্ণি রেগে বলে
আরে আরে কি করছেন আমাকে এখানে আনলেন কেন? আর আপনিশকে বলুন তো।

এবার ঐ লোকটি অর্ণির দিকে ফিরে। অর্ণি সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখে রীতিমতো কাঁপতে থাকে ভয়ে কিছু বলছেনা। অভ্রকে হিংস্র প্রাণীর মতো লাগছে। অর্ণিকে মনে হয় এখনি চিবিয়ে খাবে ও।
নিহামের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?

কি।
অবাক হয়েছো! নাটক না করে ঠিক করে বলো ওর সাথে তোমার কিসের ঘনিষ্ঠতা?
নিহাম ভাইয়া আমার কি তা আমি আপনাকে বলবো কেন?

বলতে তুমি বাধ্য। বলো কিসের সম্পর্ক। (চিৎকার করে)
এসব কথা অর্ণির মনে আঘাত করে। অর্ণির অভ্রর এমন বাজে ব্যবহারে খুব কষ্ট হয়। তাই রাগ করে বলল
আমার বয়ফ্রেন্ড হয় নিহাম। আমি ভালোবাসি ওনাকে। আর কিছু জানতে চান?
ঠাস্ করে অভ্র অর্ণিকে একটা থাপ্পর মারলো এতোটাই জোরে যে ফ্লোরে গিয়ে পড়লো। তারপর ছলছল নয়নে অভ্রর দিকে তাঁকিয়ে রইল।

পর্ব ৭

দুই মাস হয়ে গেল। অর্ণির সাথে অভ্রর কোনো প্রকার দেখা কথা বার্তা কিছুই হয় না। হবেই বা কি করে অভ্র তো অভ্রর বাড়িতে আর কাজে ব্যস্ত থাকে। অর্ণিও ভার্সিটিতে যায় আর বাসায় আসে। দুজন মানুষের জীবন চলার পথ যে সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের এই জীবন ব্যবস্থা খুব দ্রুতই হয়তো এক হয়ে যাবে যা দুজনের অজানা। অভ্র এখন অর্ণিকে ভুলে সম্পূর্ণভাবে নিজের কাজে মন দিচ্ছে। এখন তো বাবার কোম্পানীতেও তাকে কাজ করতে হচ্ছে। ইন্জিনিয়ারিং ছেড়েছে তা নয় ছোটবেলা থেকেই বুয়েট ইন্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা তার। এখন যখন তার লক্ষ্য পূরণ হলো তখন তো ছেড়ে দেওয়া যায় না! বড় ভাই কাব্যও সিভিল ইন্জিনিয়ার। দু ভাইয়ের ইন্জিনিয়ার হওয়ার শখটা ছোটবেলায় সবাইকে অবাক করতো এখনো করে। তবে ততোটা না কারণ তারা একজন একরকম পদে গেছে।

সেদিন অর্ণির বলা শেষ কথাটা অভ্রর হৃদয় ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল। তারপর ভাবে সে তো অন্য কারো ভালোবাসা অভ্রইতো শুধু শুধু তাদের মধ্যে ঢুকেছে তাহলে দোষ তো ওর। তাই এখন অর্ণির থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। নিহামের সাথে অর্ণি ভালোই আছে থাকুক ভালো। ও তো চায় অর্ণি ভালো থাকুক আর সবাইকে ভালো রাখুক। অভ্রর মনটা আজ খুব ভারী লাগছে। কেউ জোর করে হয়তো তার বুকে সবচেয়ে বড় আর ভারী পাথরটা দিয়ে চেপে রেখেছে। সেই কেউটা কি অর্ণি! হুম অর্ণিই তো। আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে ফিরে তাঁকায়নি ও।

অর্ণিই প্রথম আর অর্ণিই বোধ হয় শেষ। অভ্রর মন যে অর্ণিকে কতোটা জায়গা দিয়ে দিল তা সে নিজেও জানেনা। এই ভালোবাসা নামক বস্তুটি বেহায়া এটাকে বেহায়া না বলে আর কোনো উপায় আছে! শুধু শুধু একটা মেয়ের জীবনে ঢুকে পড়েছে আর তার জীবনটাও হয়তো বিষাদময় করে দিয়েছে। হয়তো কেন হতে যাবে! সত্যিই হয়তো বিষাদময় করে ফেলেছে তবে তা হয়তো নিহামের ভালোবাসায় এতোদিনে মুছে গেছে। সত্যিই কি মুছে গেছে! অভ্র নামক ব্যক্তিকে কি সত্যিই অর্ণি ভুলে গেল ভাবতেই অভ্রর বুকে চিন চিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। না সে আর ভাবতে পারছেনা অর্ণিকে যে আজ তার ভীষণ মনে পড়ছে। অর্ণিকে একবার দেখতে চাইছে। অর্ণিকে বলতে চাইছে নীল জোঁছনায় যাই মিশে যাই তোমার কপোল ছুঁবো বলে, দক্ষিণ হাওয়ায় যায় ভেসে যাই তোমার চুলে উঁড়বো বলে।

আদৌ কি বলা হবে! অর্ণিকে কি একপলক দেখতে পারবে! হয়তো না। অর্ণির কি আজো তাকে মনে আছে!
ছেলেরা কাঁদতে পারেনা ছোটবলা থেকেই মা শিখিয়েছে, তাই আর কখনো সে কাঁদেনি বাবার সাথে বাজারে যাওয়ার জন্য কাঁদেনি, মায়ের কাছে চকলেট খাওয়ার আবদার করেছে তবে কেঁদে করেনি। খেলতে গিয়ে পড়ে অনেক ব্যাথা পেয়েছে সে কাঁদেনি মায়ের সুপারম্যান হয়ে ছিল সে এখনো মা বলে সে মায়ের সুপারম্যান। আজ মায়ের বলা সেই কথার জন্য সে কাঁদেনা এটা বললে ভুল হবে। এখন সে বড় হয়েছে এখন কান্নাকাটি করলে যে তাকে মানাবেনা এটা সে বুঝে গেছে। তাইতো মনে আজ এতো কষ্ট থাকাতেও কাঁদতে পারছেনা। বেলকনিতে হতাশ মুখ করে আকাশের দিকে চেঁয়ে আছে অভ্র। মায়ের হাঁতের ছোয়া পেয়েও চোখ না সরিয়ে বলল
কিছু বলবে?

তোর কি মনে হয়না তুই আমার সাথে অন্যায় করছিস।
মায়ের কথায় অভ্র অবাক হয়ে তার মায়ের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাঁকায়। তারপর জিজ্ঞেস করে
আমি তোমার সাথে কি অন্যায় করেছি মা।
বয়স তো কম হলো না। 28 বছরে পা দিয়েছিস এখন তো একটু বিয়ে কর। আর কতো সহ্য করবো তোর এসব বিশৃঙ্খলা।
মা তোমার এই কথা ছাড়া আর কোনো কথা থাকেনা! সারাক্ষণ বিয়ে বিয়ে বলে আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছো। আমি এখন কোনো প্রকার ঝামেলায় জড়াতে চাই না।

এই তুই কি বুঝাতে চাইছিস আমি তোর ঝামেলা বাড়াই।
আরে মা তুমি এসব কি বলছো! এতো উল্টা পাল্টা ভাবছো কেন?
আমার কথা বার্তা তোর কাছে উল্টা পাল্টায় তো লাগবে। কোনদিন ভালো লেগেছে! যেদিন আমি মরবো সেদিন তুই বুঝবি।
মা! আচ্ছা এখন এসব কথা না বললে হয় না! চলো অন্য টপিক নিয়ে আলোচনা করি।
না। অন্যকোনো টপিক নিয়ে আলোচনা করা হবেনা। যেই টপিক শুরু হয়েছে সেটা শেষ করে তারপর অন্য টপিকে যাবো। তুই আমার কথায় ভালো ভাবে রাজি হয়ে যায়।

কি কথায়।
অভ্র! (চোখ রাঙিয়ে) এতোক্ষণ ধরে তোকে আমি কি বলছি তুই শুনছিস নাকি অন্যকান দিয়ে বেরও করে দিচ্ছিস।
শুনছি বলো।

দেখ বাবা এবার বিয়েটা করে ফেল। আমার খুব শখ তোর বিয়ে দেখবো আমার নাতি নাতনির মুখ দেখবো। তাছাড়া লোকেও কম কথা শুনাচ্ছেনা। আমি তোর জন্য একটা ভালো মেয়ে দেখেছি। কাল পাকা কথা বলতে যাবো খুব তাড়াতাড়ি ঐ মেয়েকে আমি আমার পুত্র বধূ করে আনবো। আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে ওকে। (হাসি মুখ করে)
হোয়াট! পাকা কথা মানে কি মা? আমাকে না জানিয়ে তুমি এতোদূর পর্যন্ত গেলে একবারও আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করলেনা! লাইফ টা
লাইফটা আমার সো ডিসিশেনটাও আমি নিব এটাই বলতে চাইছিস তো! আচ্ছা তাহলে তুই ডিসিশেন নে আমার কাছে আর কখনো আসবিনা মা বলে ডাকবিনা। এই আমি বলে দিলাম।

অভ্রর মা চোখে পানি নিয়ে চলে যায়। মাকে অনেকবার ডাকে মা পেঁছন ফিরে জবাব দেয় না। ও ভেবেছে হয়তো রাগ করে এখন এমন করছে দু তিন ঘন্টা পরে ঠিক হয়ে যাবে। রাতে যখন খেতে বসেছে তখন তার মা খেতে আসেনা ব্যাপারটা ওকে ভাবায়। তাই বাবাকে জিজ্ঞেস করলে উনি বলে
তোমার মা দুপুর থেকে না খেয়ে আছে। সেদিকে তোমার কোনো খেয়াল আছে! মায়ের আবদারটা পূরণ করতে পারোনা। কেমন ছেলে হলে তুমি। (এই বলে বাবাও খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেলেন। তার যে গলা দিয়ে খাবার নামছেনা। অভ্রর মা না খেলে তারও খাওয়া হয় না। প্রেম ভালোবাসার বিয়ে তাই কখনো অভ্রর মাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলেনা খাবার একা খায় না আবার অব্রর মা না খেলে উনিও খায় না। তাদের প্রেমটাকে বলা হয় লাইসেন্স পাওয়া সফল একটা প্রেম। আহ্ অভ্র ব্যাটায়ও যদি পারতো এমন সফল প্রেম করতে তাহলে হয়তো এমন আর্তনাদ করা লাগতোনা)

অভ্র খাবার নিয়ে তার মায়ের রুমের দিকে গেল। তার মা বিছানায় শুয়ে আছে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে তিনি কেঁদেছেন। ছেলেটা যে তার অবাধ্য কোনো কথায় গায়ে মাখেনা। মাকে গিয়ে ডাক দিল সাথে সাথে উনি অভ্রকে ধমক দিয়ে বল
এই তুই এখানে কি করছিস।
মা! এসব কিন্তু ভালো লাগেনা তুমি অযথা এতো রিয়েক্ট করছো কেন? আমি রিয়েক্ট করার মতো কিছু কি বলেছি বা করেছি।
না তুমি কেন করবে সব তো আমিই করি।

মা খাবার খেয়ে নাও।
আমি কিছুই খাবোনা। আমার কথা তুই শুনেছিস! আমি কেন তোর কথা শুনবো?
মা তুমি আবারো ঘুরে ফিরে ঐ একি কথাতেই আসছো।

যেই কথা নিয়ে আমি তোর উপর রাগ করে বসে আছি সেই কথা কি আমি ভুলে যাবো নাকি! কয় দিন পর দেখবো সানিনের বাচ্চা হয়েছে আর সেই বাচ্চা নিয়ে ওর মা মরিয়ম খেলাধুলা করছে। আমারো তো ইচ্ছা করে নাকি।
মা।
তুই এই খাবার নিয়ে চলে যা। আমি খাবোনা। না খেয়ে মরবো তখন তুই খুশি থাকিস।

মা (রেগে গিয়ে)
কিসের মা! যা তুই এখান থেকে আমার সাথে কথা বলবিনা আর।
অভ্র তার মায়ের রাগ অভিমান জানে তাই বাধ্য হয়ে বলল
আচ্ছা আমি তোমার সাথে মেয়ে দেখতে যাবো।

সত্যি? (খোশি হয়ে)
হুম সত্যি। এবার খাবারটা খেয়ে নাও।
আমাকে খাওয়ানোর জন্য মিথ্যা বলছিস না তো।
আমি কখনো তোমাকে মিথ্যে বলেছি?
এবার অভ্রর মা খুশি হয়ে ছেলের কপালে পরম আবেশে চুমো দিল।

সকাল থেকে অর্ণির আব্বু আম্মু ওকে অনেকবার বিরক্ত করছে। সেটা অর্ণির মতে বিরক্ত করা আসলে তারা ওকে বিয়ে করার কথা বলছে। পাত্র দেখেছে খুব ভালো লেগেছে আর তাদের চেনাও তাই তারা অর্ণিকে তার সাথে বিয়ে দিতে চায়। অর্ণি কোনো ভাবেই রাজি হয়নি। যখন বড় মামা ফোনে অনেকবার বুঝিয়ে বলল তখন কিছুই বলেনি। সে শুধু ভাবে এখনি তো আর বিয়ে হচ্ছেনা জাস্ট সামনে গিয়ে বসবে।

তাই প্রথমে সম্মতি দিলেও পরে আবার মানা করে। ওর মন যে শুধুই অভ্র অভ্র করছে। অভ্রকে ছাড়া তো আর কারো কথা মাথায় আসছেনা তার। তাই প্রথমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে পরিবর্তন করে সে যাবেনা। মেয়ের উপর বিরক্ত হয়ে তার বাবা তাকে ধমক দিল যার ফলশ্রুতিতে এখন অর্ণি একটা জামদানি শাড়ি পড়ে মাথায় লম্বা করে ঘোমটা টেনে পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে। পাত্রর মা এসেছে পাত্র নাকি এখনো রাস্তায় জ্যামে আটকা পড়েছে সোজা অফিস থেকেই আসছে। অর্ণিকে পাত্রর মা অনেক কিছু জিজ্ঞেস চরে ও মিষ্টি ভাষায় সবকিছুর জবাব দেয়। তখনিই কেউ একজন ভেতরে ঢুকে আর পাত্রর মা বলে এই যে আমার ছেলে অভ্র।

পর্ব ৮

অভ্র নামটা শুনেই অর্ণি কেঁপে উঠল। অভ্র কোন অভ্রর কথা বলছে এই মহিলা! অর্ণি কেমন আপন আপন ফিল করতে থাকে সামনের লোকটিকে দেখার মতো সাহস হচ্ছেনা ওর। এটা কি ওর অভ্র ভাবতেই অর্ণির মুখে এক চিলতি হাঁসি সাথে একটু ভয় ফুটে উঠল।

অভ্র অর্ণিদের বাসায় ঢুকে অবাক কারণ তার সামনে অর্ণির মা আর বাবা দাঁড়িয়ে আছে। ওনাদের খুব ভালো করেই অভ্র চিনে। তারমানে কি অর্ণির সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে! অভ্রকে দেখে অর্ণির বাবা সামনে এগিয়ে যায়। অভ্রকে জড়িয়ে ধরে সোফায় নিয়ে বসায়। অভ্র তার সামনে শাড়ি পড়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাঁকিয়ে আছে। এটা যে তার অর্ণি সে খুব ভালো করেই বুজতে পারছে। অর্ণির মুখ এখনো দেখতে পারেনি ও যে লম্বা ঘোমটা টানলো এতো সহজে দেখা যাবে নাকি। অভ্রর মা বলল
মা দেখি তো তোমার মুখ খানি।
অর্ণির মা অর্ণির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আর অর্ণিকে আস্তে করে বলল
বাবু! ঘোমটা টা তোলো তো।

অর্ণি চুপ করে বসে আছে। কোনো নড়াচড়া করছেনা আসলে সে ফ্রিজড হয়ে আছে। এখন ও নিশ্চিত অভ্র ওর সামনে আছে। অভ্রর পাগল করা ঘ্রাণ যে অর্ণি কখনো ভুলতে পারবেনা। অভ্রর উপস্থিতি যে ও সবসময় টের পায় না দেখেও বুঝে যায় যে অভ্র তার সামনে। এখনও তার ব্যতিক্রম কিছুই হলোনা। অভ্র অধীর আগ্রহে বসে আছে অর্ণিকে দেখার জন্য কিন্তু ও ঘোমটা তুলছেই না। তারমানে কি অর্ণি চায় না অভ্রকে বিয়ে করতে! আসলেই তো এতক্ষণ তো মনেই ছিল না। ওর তো বয়ফ্রেন্ড আছে বয়ফ্রেন্ড বললেও ভুল হবে। অর্ণির তো ভালোবাসা আছে আর সেই ভালোবাসাটা হলো নিহাম।

অভ্রও তো অর্ণিকে ভালোবাসে ও যদি অর্ণিকে না ভুলতে পারে তাহলে অর্ণি কিভাবে তার প্রেম ভালোবাসাকে ভুলে যাবে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার অভ্র ওদের পথের কাটা হয়ে দাঁড়ালো। না এবার প্রথমবারের মতো ভুলটা করলে হবেনা। এবার নিজে থেকেই সরে যেতে হবে সবার মুখের সামনে এটাও বলতে পারবেনা যে সে অর্ণিকে বিয়ে করতে চায় না। এ কথা যদি বলে তাহলে অর্ণির পরিবারের এবং তার পরিবারের সম্মান ক্ষুন্ন হবে। কারণ দু পরিবার তো অলরেডী বিয়ে ঠিক করেই ফেলেছে। এ ব্যাপারে একান্তই অর্ণির সাথে কথা বলতে হবে। তাহলেই সবকিছুর সমাধান হবে।

অর্ণির ঘোমটা না উঠানোতে ওর মা সামিরা বিরক্ত হয়ে নিজেই ঘোমটা উঠিয়ে দেয়। অর্ণির মায়াবী মুখটা দেখে অভ্র চোখ সরাচ্ছেনা। শাড়ি পড়াতে অর্ণিকে আজ অন্যরকম লাগছে। তার সৌন্দর্য যেন ঢলে পড়ছে। লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে। মুখে তার লেগে আছে অমায়িক এক হাঁসি। এই হাঁসির কারণ অভ্রর অজানা। অভ্র আবাক হচ্ছে অর্ণি তাকে দেখে হাঁসছে কেন এমন তো নয় যে অভ্রকে দেখে ও খুশি হয়েছে।

তাহলে কি ব্যাপারটা অন্যকিছু। ওহ হয়তো অভ্রকে দেখে একটা স্বস্তি পেয়েছে কারণ ও হয়তো উপলদ্ধি করতে পেরেছে অভ্র ওকে বিয়ে করবেনা। অভ্র তো জানেই যে ওর বয়ফ্রেন্ড আছে। অভ্র এসব ভাবছিল তখন অর্ণির বাবা বলেন
বাবা দেখো আমাদের মধ্যে সব ঠিকঠাক আছে। আমরা রাজি আছি গুরুজনেরা এবার তোমরা ছোটরা নিজেদের মধ্যে একবার কথা বলে নাও তাহলেই ভালো হয়।
হ্যাঁ অভ্র যা তোরা একটু পার্সোনালি কথা বলে নে।

(অভ্রর মা হাঁসিমুখ করে বলল)
অভ্র আর অর্ণি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসের সাথে সাথে অর্ণির আচল দোল খেয়ে যাচ্ছে। নিরবতা ভেঙে অভ্র বলল
আমি জানি তুমি এই বিয়েতে রাজি নও।
অভ্রর মুখে এমন কথা শুনে অর্ণি থমকে যায়। এখন এইসময়ে এই কথাটা কতোটা বেমানান তা কি অভ্র অপদার্থটা জানেনা!
আমি আসলে তোমাকে বিয়ে করতে চাইনি।

অর্ণি এবার একটা শক খেল। অভ্র তাকে বিয়ে করতে চায়নি। তারমানে ও সেচ্ছায় এখানে আসেনি! অভ্র কি তাহলে ওকে বিয়ে করবেনা! অর্ণি এসব ভাবছে কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেনা। না পারারই কথা ভালোবাসার মানুষটার সাথে বিয়ে ঠিক হলো এখন সে এসে বলছে যে বিয়ে করতে চায় নি। তাহলে কি তাকে জোর করে বিয়ে

অর্ণি তুমি কেন চুপ করে আছো তা আমি জানি। অবাক হয়েছো তাই না! হয়তো ভাবছো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। যদি ভেবে থাকো তাহলে আমার মতে হুম ঠিক ভাবছো। তোমার যে এই বিয়েতে মত নেই তা আমি জানি। থাকবেই বা কি করে তুমি তো নিহামকে ভালোবাসো তাই না! তাহলে তাকে ফেলে অন্য পুরুষের সাথে কিভাবে সংসার করবে? পারবেনা তুমি আমার সাথে সংসার করতে। চিন্তা করোনা অর্ণি এই বিয়েটা হবেনা। কারণ আমি চাইনা যে তোমার আবার কোনো সমস্যা হোক আমার জন্য। আমি বাড়ি ফিরে তোমার বাবাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিব তুমি একদম নিশ্চিন্ত থাকো।

অভ্র বেরিয়েই যাচ্ছিল আবার ফিরে এসে অর্ণিকে বলল
ভালো থেকো আর ভালোবেসো যাকে তুমি চাও। (মুঁচকি হেঁসে)
অভ্র চলে যায়। আর অর্ণি সেখানেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। অর্ণির ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাঁদতে আর বলতে
আমি তো আপনাকেই ভালোবাসি। আপনি কেন আমায় বুঝেন না! বারবার আমাকে এভাবে একা ফেলে কেন চলে যান! আমার মিথ্যে বিশ্বাস করতে পারেন আমার সত্য বিশ্বাস করতে পারেন না কেন? আমি কি অপরাধ করেছি বলুন না।

পর্ব ৯

অর্ণির মাথা ব্যাথা হয়ে গেছে কান্না করতে করতে তাই রুমে গিয়ে বেডের পাশের বড় সোফাটায় ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে মানুষের চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গে। মনে হয় কোনো অনুষ্ঠান লেগেছে এমন ভাব। অর্ণি কালকের ঘটনা মনে করতেই ওর বুক ফেটে কান্না আসে কিন্তু কান্না করতে পারেনা। অর্ণি খেয়াল করলো ও এখন সোফাতে তারমানে কাল বিকেলে যে ঘুমিয়েছিল এখন সকালে উঠেছে ঘুম থেকে। মাথায় হাত দিয়ে হায় হায় করতে থাকলো।

কাল তো মিম নুপূর আসার কথা ছিল ওর তো ওদের গিয়ে পিক করার কথা ছিল। বাহিরের এমন কোলাহল পূর্ণ পরিবেশটা ভাবিয়ে তুলছে অর্ণিকে। তখনিই দরজা খুলে মিম আর নুপূর আসে ওদের দেখে অর্ণি অবাক কম খুশি বেশি হয়। যেহেতু ওদের আসার কথা ছিল তাই এখন ওতোটা অবাক হচ্ছেনা। একটু অবাক হওয়ার কারণ মিম নুপূর যে আসলো ও জানেই না। ও তো প্রথমে ভেবেই নিয়েছিল ওরা আসেনি। মিম অর্ণিকে একটা টাইট হাগ করে বলল
গুড মর্ণিং দুলহান।

মিমের মুখে এমন কথা শুনে অর্ণি স্তব্ধ হয়ে গেল। দুলহান মানে কি বলতে চাইছে!
কি যা তা বলছিস।
যা তা বলছি মানে! তোর বিয়ে তো তুই দুলহানই হলি।
আমার বিয়ে।
অর্ণির এমন কথাতে নুপূর বিরক্ত হয়ে গেল। তারপর মিমকে বলল
আসলেও প্রবাদ বাক্যটা ঠিক বুঝলি মিম। যার বিয়ে তার হুশ নেই পাড়া পরশির ঘুম নেই।

তা যা বলেছিস।
এই তোরা এসব কি বলছিস! আমার বিয়ে মানে কি?
এই মেয়ে তুই বিয়ে কি জানিস না?
নুপূর ওরে এসব বলে লাভ কি তুই তো জানিস ও আগে থেকেই এমন ড্রামা কুইন।
আচ্ছা তোরা এসব কি শুরু করেছিস! আমাকে ঠিক করে বল তো কিসের বিয়ে আর কার সাথেই?

তোর বিয়ে তাও আবার তোর ক্রাশ অভ্র চৌধূরীর সাথে।
মিম কি বলছিস এসব! ওনার সাথে আমার বিয়ে কি করে হবে? কাল উনি নিজেই তো বলে গেল আমার বাবাকে না করে দিবে।
কি বলিস! আমি তো আরো দেখলাম ভাইয়া নিচে গিয়েই বলল বিয়ের কাজ তাড়াতাড়ি শুরু করতে। তোদের কারো কোনো প্রবলেম নেই।
হোয়াট।

ইয়েস বেবি। এই মিম যা তো খালামণি যে গাউনটা দিয়েছে ওটা নিয়ে আয়।
তোর কি মনে হয় আমি ওটা না এনেই এখানে বসে বকবক করছি। (চোখ রাঙিয়ে)
ওহ স্যরি। আচ্ছা অর্ণি যা আগে ফ্রেশ হয়ে আয় ততক্ষণে আমরা সবকিছু ঠিকঠাক করে নেই।
কি ঠিক করবি?

তোকে এখন এসব বলার সময় নেই। যা তো দেরি হয়ে যাচ্ছে। অভ্র ভাইয়ারা এলো বলে। (তাড়া দিয়ে বলল)
মিম আমার সাথে কি তোরা মজা করছিস?

মিমের চোখ রাঙানি দেখে অর্ণি ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দেয় মিম পেছন ডেকে ওর হাতে গাউনটা দিয়ে বলে ওটা পড়ে নিতে। অর্ণি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। মিম নুপূর বারান্দায় এসে এবার হো হো করে হেঁসে উঠে। ঐদিকে অর্ণি টেনশনে মরছে। এসব কি বলল ওরা! অভ্র নিজেই তো কাল মানা করেছিল তাহলে এখন এসবের মানে কি! এসব কি হচ্ছে ওর সাথে কিছুই যে ও বুঝছেনা।
মিম অভ্রকে ফোন দেয়। প্রথমবার রিং হলেই রিসিভ করে বলে
শালিকা আমার বউয়ের খবর কী?

বাবা! প্রথমেই বউ! একটু শালিদেরও তো জিজ্ঞেস করতে পারেন কি খবর।
আরে রাগ করছো কেন? তোমাদের খবর তো আমি বউয়ের থেকেও বেশি রাখি।
কেমন খবর রাখেন তা ভালো করেই জানা আছে। আচ্ছা শুনুন যে কারণে ফোন দিয়েছি।
সেটা শুনতেই তো আকুল হয়ে আছি। এবার তো বলুন শালি সাহেবা।

হুম বলছি। আমাদের দুলহান তো সেই রকম শক পেয়েছে।
হুম তা তো একটু আধটু পাওয়ারই কথা। একবার বিয়ে হবেনা শুনেছে একবার শুনছে বিয়ে হবে। তাছাড়া ও যা করেছে তার জন্য এটা তো ছোট খাটো শক মাত্র। আমাকে ও যে পরিমাণ কষ্ট দিয়েছে তার প্রতিশোধ না নিয়ে তো আমি শান্তি পাবোনা।
আবার বেশি শাস্তি দিয়েন না আমার বইনরে। বাচ্চা একটা মেয়ে ভুল তো হয়। আমি বলি কি এখন ওতো কিছু না করে আগে বিয়েটা সেড়ে ফেলুন। তাতেই মঙ্গল হবে আপনার জন্য।

সেটা তো ঠিক। বিয়েটা এখন আগে শাস্তিটা পরে হবে। এখন শক দিব একের পর এক তাহলেই হবে।
হুম। আচ্ছা আমি তাহলে রাখছি পরে কথা হবে জিজু।
ওকে শালি সাহেবা।

অর্ণি রুমে এসে মিম নুপূরকে হাঁসতে দেখে বিস্ময় ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। বেচারিরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল তারপর নানান বাহানা দিয়ে সেখান থেকে সরে গেল। অর্ণি ভেজা চুল গুলোকে হেয়ার ড্রাইয়ারে শুকাচ্ছিল মিম সেটা ভিডিও করে অভ্রকে পাঠিয়ে দেয়। অভ্র ভিডিওটি মুগ্ধ নয়নে দেখে। তার ভালোবাসা তার অর্ণি। অর্ণির মধ্যে শুধুই অভ্রর বিচরণ হবে। আর কোনো মিথ্যে ওদের মধ্যে আসবেনা অভ্র আসতেই দিবেনা। একটা মিথ্যে অভ্রকে অর্ণির থেকে পুরোপুরি আলাদা করে দিচ্ছিল। ভাবতেই অভ্রর বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হয়। ভাগ্যিস কাল সময় মতো সত্যিটা জেনে যায়। অভ্র কালকে বিকেলের কথা ভাবে যখন ও অর্ণির রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তখন মিম আর নুপূর ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। দেখেই মনে হচ্ছিল ওরা মাত্র এসেছে কারণ হাতে ব্যাগ ছিল। অভ্রর সামনে এভাবে দাঁড়ানোতে অভ্র কিছুটা অবাক হয়ে বলল
কিছু বলবে?

হুম অনেক কিছুই বলবো। (মিম বলল)
তা কি বলতে চাও বলতে পারো।
আপনি অর্ণিকে ভুল বুঝছেন ভাইয়া।
অভ্র ভ্রু কুঁচকিয়ে মিমের দিকে তাঁকায়। মিম কিছুটা লজ্জিত হয়ে বলে
স্যরি ভাইয়া আমরা আপনাদের মধ্যকার কথা শুনে ফেলেছি। আর আমি মনে করি শুনে ফেলে বেশ করেছি।
কেন মনে হয়?

ভাইয়া অর্ণি কোনো প্রকার রিলেশনে নেই আর আজ পর্যন্ত ছিল না। আপনি যে নিহামের কথা বলছেন অর্ণি তো ঐটাকে সহ্য করতেই পারেনা। না পারতে বাধ্য হয়ে কথা বলে। আর আপনার সাথে ঐদিন যে কথা হয় আমরা সেইসব জানি কারণ আমাদের মধ্যে এমন কিছু নেই যা আমরা একে অপরের সাথে শেয়ার করিনা। অর্ণি আমাদের ঐ দিন ঘটে যাওয়া ঘটনাটা খুলে বলে। আর আপনাকে ও কেন বলেছে যে ও নিহাম ওর বিএফ জানেন। (নুপূর বলল)
কেন বলেছে।

কারণ ও আপনাকে ভালোবাসে ভাইয়া। সেটা ও বুঝতে পারছেনা তবে ও এটা বুঝে যে আপনাকে ছাড়া ও অসহায়। প্রথম দেখা থেকেই আপনার প্রতি ও ক্রাশড। সেটা তারপর একটা ফিলিংসে রূপান্তরিত হয় আর এখন ভালোবাসায়। আপনার ঐ কথা গুলো ওকে কতোটা হার্ট করেছে তা ওর থেকে ভালো কেউ জানেনা তাই তো রাগের বশে নিহামকে ওর ভালোবাসার মানুষ বলে আপনার প্রতি নিজের ভালোবাসাটা মাটি চাপা দিয়ে দেয়। কিন্তু চাইলেই তো সব মাটি চাপা থাকেনা। সত্য কখনো লুকিয়ে থাকেনা একদিন না একদিন তো বেরিয়ে আসেই। আর এখন ঠিক সেটাই হচ্ছে আমাদের মাধ্যমে আপনি আসল সত্য জানতে পেরেছেন। (নুপূর বলল)
অভ্রর মুখে এবার বাঁকা হাঁসি ফুটে ওঠে। সে একা নয় অর্ণিও তার প্রতি দুর্বল ভাবতেই খুশিতে তার মন ভরে যাচ্ছে। মিম নুপূরকে ধন্যবাদ দিয়ে নিচে নেমে যায়। আর তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন করতে বলে। ছেলের সম্মতি দেখে অভ্রর মা খুব খুশি হয়। তাই দেরি না করে আজকেই এংগেজমেন্টের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। এই সপ্তাহে বিয়েটা দিবে।

পর্ব ১০

অভ্রর সামনে বসে আছে অর্ণি। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে এই লোকটাকে বোঝা মুশকিল। বিয়ে করবেনা বলে চলে যায় তারপর বলে বিয়ে করবে! ব্যাপারটার মধ্যে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে। মিম নুপূরকে এমন চিন্তা মুক্ত দেখে অর্ণির কেন জানি অস্বস্তি লাগছে। ওদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু তো লুকাচ্ছে ওরা অর্ণির থেকে। অর্ণির কাছে এখন এসব কিছুই ভালো লাগছেনা। এই মুহূর্তে অভ্রকে ওর একটা এটম বোমের মতো লাগছে। অভ্রর মুখ দেখে অর্ণি আবারো ছোট খাটো একটা শক খেল। কারণ অভ্র তার দিকে তাঁকিয়ে চোখ টিপ মেরেছে। কিছুক্ষণ পর সিনান এসে বলে এখন আংটি বদল শুরু করা যাক। অর্ণি তো তখন একদৃষ্টিতে অভ্রকে দেখছে ওর এবার খুব রাগ হচ্ছে। এতোক্ষণে বোধ হয় ওর ভেতরটা জাগ্রত হয়েছে। অভ্রর দিকে সেই রকম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো যার ফলে অভ্র বিচলিত হয়। অর্ণি মনে মনে বলছে

আমাকে কি মনে হয় তার! আমি কি কোনো খেলনা পুতুল নাকি যে যখন ইচ্ছা খেলা করবে আর প্রয়োজন মিটে গেলে ছুড়ে ফেলে দিবে।
অভ্রর প্রতি একটা অভিমান কাজ করছে। অভ্র কি তাকে মানুষ বলে গণ্য করেনা! যদি তাই হতো তাহলে কেন ওর সাথে এমন খেলা খেলছে। একবার হ্যাঁ তো একবার না। এসবের মানে কি ও কি এখন কোনো বস্তুতে পরিণত হলো নাকি! অভ্রকে এখন ইচ্ছে করছে গিয়ে ঠাটিয়ে চড় মেরে বলতে যা ভাগ। তোকে আমি বিয়ে করবোনা কিন্তু ও বলার মতো সাহস পাচ্ছেনা। এই ভাবান্তরের মধ্যে অভ্র কখন যে তার হাতে রিং পড়িয়ে দিল সেইদিকে কোনো খেয়াল নেই অর্ণির। মিমের ডাকে হুশ ফেরে।
কিরে অর্ণি ভাইয়াকে আর কতো অপেক্ষা করাবি।
মানে।
আরে আংটি পড়া তো।

অর্ণি ইচ্ছার বিরুদ্ধে অভ্রকে আংটি পড়ালো। অভ্রর মুখে দিক বিজয়ের হাঁসি। যা অর্ণির চোখ এড়ায়নি। অর্ণির কাছে এই মুহূর্তে এসব অসহ্যকর লাগছে। আর লাগারই কথা কারণ এভাবে অর্ণির সাথে মজা করার মানে কি! তাছাড়া অভ্র তো কাল একপ্রকার মুখের উপর কথা শুনিয়েই চলে গেছিল। এখন আবার এসে কি প্রমাণ করতে চাইছে! অন্য সময় হলে অর্ণির মুখে হাঁসি থাকতো নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার হাঁসি কিন্তু এখন কোনোভাবেই হাঁসি পাচ্ছেনা। অভ্রকে দেখলে
উল্টো চেখ ফিরিয়ে নেয়। যা অভ্রকে রাগিয়ে তোলে। অর্ণি মাথা ব্যাথা করছে বলে নিজের রুমে চলে আসে। সবাই অনুষ্ঠানে নিজেদের মতো ইন্জয় করছে। লাউডে গান বাজছে অর্ণির কাছে তা আরো বেশি বিরক্ত লাগছে। রুমে এসে যেই না দরজা লক করবে ওমনি একটা হাত বাধা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। হাতটার মালিক হলো অভ্র। অর্ণির দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাঁকাতেই অর্ণির রাগ গায়েব হয়ে ভয় হতে শুরু করে। অভ্র দরজা লক করে অর্ণির দিকে এগোতে লাগে অর্ণি ভয়ে পেছাতে থাকে। দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেলে ও চোখ বন্ধ করে। আর অভ্র দেয়ালে হাত দিয়ে অর্ণিকে রাগী গলায় বলে
আমাকে মিথ্যে কথা বদার আগে একবার ভাবলেনা অর্ণি। (যদিও অভ্র সব জানে তাও এখন অর্ণিকে ইচ্ছা করেই শাসাচ্ছে)
কি মিথ্যা।

ওহ তুমি জানোনা কি মিথ্যা?
আপনি কি বলতে চাইছেন কি ঠিক করে বলুন। (কাঁপতে কাঁপতে বলল)
আমাকে ঐ দিন কেন বললে নিহাম তোমার বিএফ।
অর্ণি এবার অভ্রর চোখের দিকে তাঁকায়। লাল চোখ দুটো মনে হয় ওকে এখন গিলে খাবে। অর্ণির মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করে। অভ্র জানলো কি করে যে নিহামের ব্যাপারে ও মিথ্যে বলেছিল!

পর্ব ১১

অভ্রর কথা শুনে অর্ণি থতমত খেয়ে গেল। অভ্রর তো এসব জানার কথা না তাহলে ও কীভাবে জানলো! এবার অর্ণির মাথায় মিম নুপূরের কথা এলো। এখন বুঝতে পারছে কিছু তো একটা গোলমাল আছে। যেটা মিম নুপূরের থেকেই শুনতে হবে। অভ্র অর্ণির কোমর টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো তাতেই অর্ণির হার্টবিট জোরে জোরে চলতে লাগলো। অর্ণির এমন ভয়ার্ত মুখ দেখে অভ্র বাঁকা হেঁসে ওর কপালে একটু চুমো দিল। অর্ণি এক ঝটকা খেল। এটাও কি সম্ভব অর্ণি কিছুতেই ভেবে পায় না। অভ্র এবার অর্ণিকে ছেড়ে ওর থেকে দু কদম পিঁছিয়ে গিয়ে বলল
এবার বলতে পারো।

কি বববলবো? (কাঁপতে কাঁপতে)
আরে এতো হাইপার হচ্ছো কেন? আমি হাইপার হওয়ার মতো কিছু কি বলেছি জান।
অর্ণি এবার 880 ভোল্টের ঝটকা খেল। এই লোকের মাথার তার কি ছিঁড়ে গেল নাকি! অর্ণি হঠাৎ অভ্রর এমন বিহেভ সহ্য করতে পারছেনা। সেদিন নিতুর বৌভাতের অনুষ্ঠানেও এই লোকটা ওকে বাবু বলে ডেকেছে। যেটা অর্ণির মাথায় বাজ ফেলেছিল। এখন আবার এসব বলছে আসলে কি চায় এ লোকটা! অর্ণি একমনে অভ্রর দিকে তাঁকিয়ে আছে এতে যেন অভ্র সত্যিই রেগে গেল। ধমক দিয়ে বলল
এই মেয়ে তোমাকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তার জবাব দাও।

আমি পারবো না।
কেন পারবেনা।
আপনি কে আপনাকে আমি এতো কথা বলবো কেন?

অর্ণি নিজেই এই কথাটা বলে আহাম্মক হয়ে গেল। অভ্র তো অর্ণির কথা শুনে হাঁসবে নাকি রাগ করবে বুঝতেছে না। অভ্র কে এখনো ওর মাথায় এটা ঢুকলোই না! অভ্র এবার অর্ণিকে কষে থাপ্পর মারলো। যেহেতু হাঁসলে সমস্যা তাই নিজের রাগ জাহির করে দিল এক থাপ্পর। অর্ণি এবার কেঁদেই দিল কারণ এই নিয়ে বিনা দোষে অভ্র অর্ণিকে তিনবার থাপ্পর মারলো। বিয়ের আগেই এমন মারছে বিয়ের পরে কি করবে আল্লাহ্ ভালো জানেন। অভ্রর কাছে অর্ণির কান্না মাখা মুখটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।

এই মুখ দেখেই তো ওর মনে বসন্তের দোলা বয়েছে। অর্ণি কান্না করলে মুখটা লাল হয়ে যায় চোখের ঘন ঘন ভিজা পাপড়ি গুলো যেন আরো সুন্দর লাগে। চেহারায় মায়া ফুটে ওঠে। শুধু তাঁকিয়ে থাকতেই মন চায়। অভ্র এক ধ্যানে অর্ণিকে দেখছে কিছু বলছেনা। এদিকে বেচারি যে কাঁদছে তার তো কোনো খেয়াল নেই এটাতে বড্ড রেগে গেল অর্ণি। সে কি ওর কষ্ট ইন্জয় করছে নাকি! অর্ণি এবার রেগে চলে যেত নিল ওমনি অভ্র ওকে কোলে করে সোজা বারান্দায় চলে গেল। তারপর ওকে পেঁছন থেকে জড়িয়ে বলল
জানো তোমাকে এখানে কেন এনেছি।
কেন?

ফেলে দিব তাই।
অর্ণি ভয় পেয়ে গেল অভ্রর হাত শক্ত করে ধরে বলল
ফেলে দিবেন কেন আমি কি করছি? (কেঁদে দিল আবার)
আহ্ এমন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করছো কেন? আমাকে যদি এখন না বলো যে নিহামের ব্যাপারে মিথ্যা কেন বলেছো তাহলে তোমাকে আমি এখান থেকে ফেলে দিব। ইউ হেভ অনলি টেন সেকেন্ড।

অভ্র এক দুই গুণতে লাগলো আর অর্ণি চুপ করে রইল। কি বলবে ভেলে পাচ্ছেনা। সত্যিটা বলে দিলে তো লজ্জায় মরে যাবে আর মিথ্যে বললে অভ্র সত্যিই ফেলে দিবে। অভ্র দশ পর্যন্ত গুণে অর্ণিকে একটা ঝাকুনি দিল এতেই অর্ণি চিৎকার দিয়ে উঠল। নিচে লাউডে মিউজিক চলছে তাই কেউ অর্ণির চিৎকার শুনলোনা। অভ্র চোখ রাঙিয়ে বলল
তুমি বলবেনা তাই তো। (দাঁতে দাঁত চেপে)
বলছি বলছি।

হুম বলো।
আসলে আপনার মুখে আমি ওসব শুনতে পারিনি। আপনার মুখে এমন কথা আমি আশা করিনি। আমার প্রতি আপনার অবিশ্বাস আমি মানতে পারিনি।
কেন?
কেন সেটাও বলতে হবে নাকি।
অবশ্যই।

আসলে আমি কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিনা তো।
অর্ণি এবার সত্যিই ফেলে দিব।
আরে বলছি তো। (আবার কেঁদে দিল)
না কেঁদে আগে ক্লিয়ার করে বলো তারপর আমি তোমার কান্না করার স্টাইল দেখবো।
আসলে আমি তো ভালোবাসি।

কাকে?
অর্ণি।
অর্ণি আর অভ্র হঠাৎ সামিরা বেগমের কন্ঠ পেয়ে দুজন আলাদা হয়ে গেল। সামিরা মেয়ে আর হবু জামাইকে এভাবে দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল। তারপর ইতস্ত করে বলে গেল নিচে যেতে দুজনকে। অভ্র হাঁসি মুখে সম্মতি জানায়। সামিরা বেগম নিচে চলে গেলে অভ্র অর্ণিকে টেনে বলে পরে শুনবো এখন চলো। অর্ণির হাত ধরে নিচে নেমে গেল।

পর্ব ১২

আজকে মিমের মুডটাই খারাপ তখন থেকে একটা ছেলে ওর পেছনে আঠার মতো লেগে আছে। রাগে ক্ষোভে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু ছেলেটাকে কিছু বলতে পারছেনা। একটু খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো এটা অভ্রর ফুফাতো ভাই আলভী। ছেলেটা দেখতে মাশাআল্লাহ্। দেখতেই ইচ্ছা করে কিন্তু মিম পারছেনা কারণ ও যখনিই তাঁকায় তখনই দেখে আলভী ওর দিকে তাঁকিয়ে একটা ভূবন ভুলানো হাঁসি দেয়। যেই হাঁসিতে পাগল না হয়ে উপায় নেই। ওর রাগ হচ্ছে এই কারণে কারণ ও যখন কারো সাথে কথা বলে ব্যাটা সেখানেই এসে বাম হাত ঢুকায়। কিছু খেতে যাবে সেটাও পারেনা। একটু আগের ঘটনা মনে করতেই মিমের রাগ বেড়ে যাচ্ছে।
☆☆☆কিছুক্ষণ আগে☆☆☆

মিম আর নুপূর গার্ডেনের পাশে যে সুইমিং পুল আছে সেখানে বসে কথা বলছে আর টিকটক ভিডিও করছে। তখন কোথা থেকে আলভী এসে হাজির হলো তার কিছু বন্ধু নিয়ে। মিমদের পাশের টেবিলটাতে বসলো। মিমের মুখোমুখি বসেছে তাতে মিমের অনেক অস্বস্তি হচ্ছে। তাই বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে সেখান থেকে উঠে ভেতরে চলে গেল। আলভীও গেল পেছন পেছন। মিম গিয়ে এক গ্লাস জুস নিয়েছে খাওয়ার জন্য। আলভী পাশ থেকে তার বন্ধুদের শুনিয়ে বলছে
আহ্ কি সুন্দর তার সেই মুখ কি বুন্দর তার সেই রাগী আর বিরক্ত মাখা চেহারা। চোখ গুলোর মধ্যে থাকা আগুনের ফুলকি গুলো তো সেই রকম কোনো কথায় নেই। (এই কথা বলার কারণ হলো মিম রাগী চোখে তাঁকিয়ে আছে আলভীর দিকে)
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল

দেখ দেখ কি সুন্দর করে জুস খাচ্ছে। মনে হয় জুসের ব্যাথা লাগবে তাই তাকে আলতো ছুঁয়ে যাচ্ছে।
এই কথাটা বলে সবাই হো হো করে হেঁসে দিল। মিম তো রেগে জুসটা আলভীর মুখে ছুঁড়ে মারলো। আলভীর রেগে যাওয়ার কথা কিন্তু সে কিছুই করলো না। উল্টো মিমের সামনে গিয়ে ওর ওড়না দিয়ে মুখটা মুছে নিল। মিম তো ক্যাবলা কান্তের মতো চেয়ে রইল। বলার ভাষা যে হারিয়ে গেছে। যাওয়ার আগে আলভী মুঁচকি হাঁসি দেয়। সেই হাঁসিতে লুকিয়ে থাকে অনেক রহস্য।

☆☆☆বর্তমান☆☆☆
অর্ণি আর অভ্র নিচে আসলো। তারপর সবাই মিলে বিয়ের ডেট ঠিক করে। যাওয়ার আগে অভ্র অর্ণির দিকে তাঁকিয়ে একটা ফ্লাইয়িং কিস দেয়। রাতে অর্ণি মিম আর নুপূরকে বসিয়ে রেখে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে কিন্তু তাদের থেকে উত্তর পায় না। তাই রেগে ছাদে চলে যায়। রাতের অন্ধকারে আকাশের তারা গুলো দেখতে খুব ভালো লাগে অর্ণির। ঐ দিকে তাঁকালে সব কিছু ভুলে যায়। একটা অন্য জগৎে চলে যায় সে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল কেউ কল করেছে। আননোন নম্বর তাই আর ধরলোনা। চুপচাপ দোলনায় বসে পড়ে। কখন ঘুমিয়ে গেছে নিজেও জানেনা।

অর্ণি ঘুমের মধ্যে ফিল করছে কেউ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। তারপর আবার ওর মাথায় কেউ হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অর্ণি ভয় পেয়ে যায়। চোখ মেলে অভ্রকে দেখে এক চিৎকার দিবে ওমনি অভ্র মুখ চেপে ধরে।
এই মেয়ে চিৎকার করছো কেন মাথা খারাপ।
আপনি আমার বাসায় তাও এই সময়ে?
এখানে আসতে তোমার পারমিশন নিব নাকি।

হুম অবশ্যই নিবেন।
কি বললে। (রেগে গিয়ে)
এই সমস্যা কি কথার সাথে সাথেই এতো রাগ দেখান কেন? আপনি কি ভেবেছেন আমি আপনাকে ভয় পাই? আপনার মতো হিটলারকে আমি ভয় পাই না।
আমি হিটলার।
হুম।

আচ্ছা তাহলে হিটলারগিরি টা করেই ফেলি।
মানে।
মানে আর কি।
অভ্র অর্ণিইর দিকে এগোতে লাগলো আর অর্ণি ভয়ে পিছিয়ে গেল।

পর্ব ১৩

অর্ণি তখন থেকে কেঁদেই চলেছে। তার কারণ একটা অভ্র তাকে আজ দুই ঘন্টার মতো কান ধরে দাঁড় করে রেখেছিল। অভ্র কানে ধরতে বলে অর্ণি রাজি হয় না অভ্রর ধমকে বাধ্য হয়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। কারণ একটাই অর্ণি তার ফোন ধরেনা যার ফলে অভ্রকে কষ্ট করে পাইপ বেয়ে উপরে উঠতে হয়। ভোরের আলো ফুটার আগে অভ্র চলে যায়। আর অর্ণি ব্যাথা হাত পা নিয়ে নিচে নেমে আসে। আসার সময় স্লিপ কেটে পড়ে যায়। তখন পাশে থাকা বুক সেল্ফের সাথে খুব জোরে বারি খেয়ে নিচে পড়ে যায় আর মাথায় ও অনেক ব্যাথা পায়। যার ফলে সেখানেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দেয়।

অর্ণি তার রুমের পাশেই পড়ে গিয়েছিলো তাই ওর কান্নার শব্দ শুনে মিম আর নুপূর দৌড়ে আসে। অর্ণিকে এই অবস্থায় দেখে ওরা খিলখিল করে হেসে দিল। অর্ণি রাগী চোখে তাঁকাতেই মিম নুপূর চুপ হয়ে যায়। তারপর অর্ণিকে তুলে রুমে নিয়ে যায় অর্ণির মাথা ফুলে গেছে। তাই বরফ এনে লাগিয়ে দেয় যাতে ফুলা কমে। অর্ণি তো চিৎকার করেই যাচ্ছে। এবার মিম নুপূরের খারাপ লাগছে। ওদেরই দোষ ওরা যদি অভ্রকে এখন আসতে মানা করতো তাহলে এমন কিছুই হতো না। অর্ণি কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলতে লাগলো
তোরা অভ্রর সাথে হাত মিলিয়ে আমাকে এভাবে শায়েস্তা করছিস কেন? কি ক্ষতি করেছি আমি তোদের! তোদের কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি? (অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে)

আরে জানু আমার কথা তো শুনো।
কি শুনবো! অভ্র আমাকে সব বলেছে। (ডাহা মিথ্যা। অর্ণি জানে এই কথা বললে ওরা সব বলে দিবে)
আসলে আমরা তো তোর ভালোর জন্যই এসব করেছি।
কিসের ভালো! এখন যদি রংপুরের আক্কাইচ্ছারে আইনা দেই তাহলে কি তোর জন্যে তা ভালো হবে।
এখানে ঐ শালা আক্কাইচ্ছা আসলো কেন? (মিম কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে বলল)
দরকার আছে তাই। দেখিস তোর আক্কাইচ্ছার সাথেই বিয়ে হবে।

না বইন এমন দোয়া করিস না রে।
একশোবার করবো একশো হাজার বার করবো।
কিরে তোর কথাটা এমন পাগলাটে কেন? (নুপূর)
এই তুই চুপ করবি শাকচুন্নি কোথাকার।
যাহ্ বাবা! আমি আবার কি করলাম।
কি করিস নাই সেটা বল।

তোর সাথে এখন কথা বলাই বেকার আমি বরং নিচে যাই। অভ্র ভাইয়া তখন আমাদের জন্য এক বক্স কোন আইসক্রীম আনছে। তুই তো জানিস আমি কোন আইসক্রীম বলতে পাগল।
তা তুই একা না আমরাও খুব ভালোবাসি কোনরে।

হায়রে মনে হচ্ছে কোন তোর জামাই। (মিমরে টিপ্পনি কেটে নুপূর বলল)
আচ্ছা অর্ণি তুই খাবি কিনা বল।
তা আমি কি কখনো আইসক্রীমের উপর রাগ করেছি নাকি।
এবার সবাই শব্দ করে হেসে উঠল। তারপর তিনজনে মিলে ঠোঁটে হাত দিয়ে হুশ করে উঠল। ওরা তিনজন এমনই। রাগ করলে নিমিষেই সব ভুলে যায়। এই যে অর্ণি তার প্রমাণ।

অভ্রর সাথে মিম নুপূরের কি কথা হয়েছে তা জানতে গিয়ে এখন আইসক্রীমের পাল্লায় পড়ে সব ভুলে গেল। আর ঐ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাই হলোনা। মিম আবার অর্ণির কপালে বরফ লাগাতে লাগলো। ইশ একদম কালছে হয়ে গেছে। নুপূর সিড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামছে। এই সময়ে যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে আচ্ছা মতো দিবে। তাছাড়া এখন ওর মা বড় মামারা সবাই এসেছে এখন এই সময়ে ওদের তিনজনকে জেগে থাকতে দেখে ফেললে খুব বকবে। নুপূর মনের সুখে ফ্রিজ থেকে আইসক্রীম তিনটা বের করে আসতে নিল। সিড়ির সামনে আসতেই একটা হাত ওকে টেনে নিয়ে গেল পাশের অন্ধকার রুমটায়। লোকটি কে তা দেখার জন্য মাথাটা একটু উপড়ে তুলল। ড্রয়িং রুম থেকে আসা হালকা আলোয় লোকটার মুখ দেখে নুপূর অবাক না হয়ে পারলো না।

আলিফ ভাইয়া এখানে কি করছো তুমি! আর আমাকে এভাবে টেনে আনলে কেন? (গাল ফুলিয়ে)
হুশ! তোকে কতোবার বলবো আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবিনা। কেন শুনিস না আমার কথা।
তুমি আমার বড় ভাইয়া না বলে কি আলিফ বলবো।
আমি তো সেটাই চাই আমাকে আলিফ বলে ডাকবি। একটু ভালো,
নুপূর কোথায় গেলি।
মিম বরফের ট্রে রাখতে এসে দেখলো নুপূর নেই। তাছাড়া অনেকক্ষণ হয়ে গেল ওর কোনো দেখা নেই আইসক্রীম আনতে এতো সময় লাগে নাকি! নুপূর মিমের ডাকে সাড়া দিয়ে বলল
এই তো আমি।

কোথায় দেখতে পারছিনা যে।
আরে এইতো।
মিম তুই কি এখন লুকোচুরি খেলার মুডে আছিস নাকি! দেখ যদি তুই সেই মুডে থাকিস তাহলে পরিবর্তন করে ফেল। কারণ এখন আমাদের কথা বার্তার শব্দে বড়রা জেগে গেলে সমস্যা হবে। সো প্লিজ বেবী বেরিয়ে আয়।

নুপূর আলিফের থেকে নিজেকে কোনো মতে ছাঁড়িয়ে মিমের কাছে গেল। নুপূরকে অন্ধকার রুমটা থেকে বের হয়ে আসতে দেখে মিম অবাক হলো। এইখানে মিমের যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা তাও আবার একা। মিম তো অন্ধকার ভয় পায়। মিমকে জিজ্ঞেস করলে বলে এমনেই গিয়ে দেখলো। মিমের উত্তরটা মন মতো হলোনা। যখন সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল তখন বুঝলো ঐ রুম থেকে কেউ একজন বের হয়ে গেল। মিম এবার চরম অবাক হলো ঐ রুমে নুপূরের সাথে কে ছিল! ও কি কিছু লুকাচ্ছে! এসব ব্যাপারে নুপূরের সাথে পরে কথা বলবে ঠিক করে রেখেছে ও। এখন কোনো কথা বাড়াতে চায় না মিম।
মিম নুপূর অর্ণি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আইসক্রীম খাচ্ছে। তখন অর্ণির ফোনটা বেজে উঠল অর্ণি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অভ্র বলে উঠল
এই মেয়ে এতো রাতে জেগে আছো কেন?

আপনাকে বলবো কেন? (রাগ দেখিয়ে)
বলতে বাধ্য। কারণ তুমি আমার হবু বউ।
হবু বউ না ছাই। (ব্যাঙ্গ করে বলল)আপনার বউ হওয়ার কোনো শখ আমার নেই। (ভাব নিয়ে)
তাই নাকি বাবু।
এই আপনি আমাকে বাবু বলছেন কেন?

বাবুকে তো বাবু বলবোই।
আমি কি আপনার বাবু নাকি! আমি আমার আম্মু আব্বুর বাবু।
সেটা তো অন্য হিসেবে বাবু। আমার আর তাদের হিসেব আলাদা না।
কিহহহ! বাবু বলাতে আবার হিসাব আছে! এই আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন নাকি?
না এখনো তো হইনি। তবে হতে বেশি সময় লাগবেনা।

কেন?
তোমাকে ছাড়া যে আমি পাগল হয়ে যাবো বাবু।
কেন কেন?
কারণ আমি যে তোমায় খুব
কি খুব।
কিছুনা। ঘুমিয়ে পড় নাহলে শরীর খারাপ করবে।

না আমি ঘুমাবো না।
কেন?
ঘুম আসছেনা তাই।

আমি কোনো ব্যবস্থা করবো নাকি একটা স্পেশাল ঘুম এনে দেওয়ার।
অভ্রর কথাতে দুষ্টমি মাখা ছিল তা অর্ণির বুঝতে বাকি রইল না। অর্ণি তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিল। লোকটা যে এতো বড় অসভ্য তা আগে ও বুঝতেও পারেনি।
সকালে অর্ণির বিয়ের শপিং করতে সবাই বের হবে। তখন অভ্র আর তার কিছু কাজিন আসে। আসলে সবাই আগে থেকেই ঠিক করে রাখে একসাথেই যাবে। অর্ণি তাতে কিছুটা বিরক্ত। অভ্রকে দেখলেই ওর দেয়া শাস্তির কথা মনে পড়ে যায়। অর্ণি ঠিক করে রেখেছে অভ্রকে একটা উচিত শিক্ষা দিবে।

পর্ব ১৪

অর্ণি, অভ্র, মিম, নুপূর আর আলভী এক গাড়িতে আর বাকিরা অন্য গাড়িতে। আলভী তো সেই রকম খুশি হয়েছে মিমের সাথে যাচ্ছে বলে। মিম তো রাগে ফেটে যাচ্ছে একি অবস্থা অর্ণিরও। অভ্র ড্রাইভ করছে আর সামনে থাকা লুকিং গ্লাস থেকে অর্ণিকে দেখছে। যেহেতু অর্ণি পেছনের সিটে মাঝখানে বসেছে তাই সমস্যা হচ্ছেনা। অনেক ভালো করেই অভ্র অর্ণিকে দেখছে। আলভী শুধু একের পর এক অপ্রাসঙ্গিক কথা তুলে মিমের সাথে কথা বলতে চাইছে। মিম তাতে খুব বিরক্ত আলভী তা ঠিকই বুঝেছে তাই তো আরো ক্ষেপাচ্ছে। মাঝ রাস্তায় জ্যামে গাড়ি আটকে যায়। তাই নুপূর আর অর্ণির বায়নাতে আলভী গাড়ি থেকে নেমে যায় আইসক্রীম আনতে। আলভীর মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়। বাঁকা হেঁসে মিমের দিকে তাঁকায় মিম ভ্রু কুঁচকায়। আলভী ভনিতা না করে বলেই দেয়
অভ্র শোন আমি একা যাচ্ছিনা।

একা যাচ্ছিস না মানে।
মানে আইসক্রীম আনতে আমি একা যেতে পারবোনা।
কেন?
আরে ভাই আমি কি করে জানবো ওরা কে কোন টাইপের আইসক্রীম পছন্দ করে! এখন আমি যদি উল্টা পাল্টা কোনো আইসক্রীম নিয়ে আসি তাহলে তো দেখা যাবে বেচারিরা খাবে না।
হুম তাই তো। আচ্ছা তোমরাই বলো কে কোন আইসক্রীম খাবে।

আমি তো চকলেট,
নুপূরকে কিছু বলতে না দিয়ে আলভী বলল
আরে অভ্র তোর মাথা কি খারাপ নাকি? আমি এতো কিছু মনে রাখতে পারবোনা তার থেকে ভালো তুই তোর শালিকে বল।

আমার শালি তো দুইটা আছে তুই কোনটাকে নিতে চাস।
আলভীর চাহনি দেখে মিম বুঝে যায়। তাই নুপূরকে উদ্দেশ্য করে বলে
নুপূর তুই যা তো ভাইয়ার সাথে।
নো ওয়ে। আমি এই গরমে বের হচ্ছিনা।

তো অর্ণি যা।
না না ওর যাওয়া লাগবেনা। নুপূর যেহেতু যেতে চায় না তাহলে তুমিই যাও। (অভ্র বলল)
আমি।
হুম। কোনো সমস্যা আছে! আরে আলভীর সাথে নির্ভয়ে যেতে পারো। আমার ভাইটা খুব ভালো একটা ছেলে।
আহ্ উনি কেমন ভালো তা তো আমি জানিই। (বিরবির করে)
তো মিস যাওয়া যাক।

চলুন না যেয়ে আর উপায় আছে।
অগত্যা মিমকে বাধ্য হয়ে আলভীর সাথে যেতে হলো। আলভী তো সেই খুশি হয়েছে তা ওর মুখ দেখেই বুঝা যায়। মিমকে একটু একা পেয়ে এবার ও মিমকে সরাসরি জ্বালাতন করতে লাগলো। মিম আগে আগে হাঁটছে আর আলভী পিছে। মিমকে পেছন থেকে ডাক দিল।

ডিমপাখি।
নিজের নামের এমন ব্যাঙ্গ করাটা মেনে নিতে পারিনি মিম। তাও রাগ কন্ট্রোল করে বলল
এই ডিমপাখি আবার কি?
ডিমপাখি মানে তুমি।

আমি। (রেগে চিৎকার করে)
আরে আস্তে বলো লোকে তোমাকে পাগল ভেবে আবার পিটুনি দিয়ে দিবে দেখো।
আপনি আমার নামটাকে এভাবে ব্যাঙ্গ করলেন কেন? আপনার এতো সাহস।
আমার সাহস বরাবরের জন্যই বেশি।

আপনি কিন্তু ফাজলামি করছেন। (রেগে)
একদম না। তুমি ভুল বুঝছো আমি তো মজা করছি। আর তাছাড়া তোমার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছায় আমার নেই। আলভী রহমানের জন্য মেয়েরা পাগল। আর সেই আলভী কিনা তোমার মতো পাগলের সাথে অযথা কথা বলে সময় নষ্ট করছে! চলো আমার ভাবী আইসক্রীমের জন্য অপেক্ষা করছে।
আলভী কথাটা নিছক মজার ছলে বলেছিল। তবে মিমের মনে সেটা অনেক বড় দাগ টানে। মিমকে আলভীর পাগল মনে হয়! বেটা নিজে একটা পাগল। ইচ্ছে তো করছে এক্ষুণি শয়তানটাকে মেরে ভর্তা বানিয়ে দিতে কিন্তু কিছু করার নেই। আলভী আর মিম আইসক্রীম নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। দেরী হওয়াতে অভ্র জিজ্ঞেস করে

কিরে এতো লেট হলো যে।
আর বলিস না। তোর শালি যে বাঁচাল শুধু পকপক করে। আমার মাথাটা খেয়ে ফেলেছে একদম। এইসব মেয়ের পরের বাড়িতে গেলে কি হবে আল্লাহ্ ভালো জানে।
আলভীর কথাতে রাগী ঝগরুটে মিমটাও নিরবে কেঁদে দিল। যা চোখ এড়ায়নি অর্ণির। আলভীর কথা শুনে অভ্র রেগে যায়।
এই এসব উল্টা পাল্টা কি বলছিস হ্যাঁ! আমার শালি কোটিতে একটা। তার সম্বন্ধে নেক্সট টাইম এসব বলবিনা।

অভ্র ভাইয়া থাক এখন। আপনি ড্রাইভ করুন আমাদের এমনিতেও অনেক লেট হয়ে গেছে। (মিম শক্ত গলায় বলল)
আলভী এবার বুঝলো যে এইরকম মজা করা ঠিক হয়নি। মিমকে স্যরি বলতেই হবে। অর্ণি আর নুপূর বসে বসে আইসক্রীম খাচ্ছে মিম চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। ওকে খেতে বললে ও বলে এখন ইচ্ছা করছেনা। অর্ণি বুঝতে পারলো যে মিমের মন খারাপ তাই বেশি কিছু বলল না। ও নিজেও একটু খেয়ে বাকিটা ফেলে দিল। ওদের তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আইসক্রীম পাগলা নুপূর তাই ও খেতে থাকলো।

অভ্র আর আলভী নানান টপিক নিয়ে কথা বলছে। অভ্র লুকিং গ্লাসে চোখের ইশারায় অর্ণিকে জিজ্ঞেস করলো মন খারাপ কেন অর্ণি মাথা নেড়ে না বলল। আলভী বারবার আড়চোখে মিমকে দেখছে। মেয়েটার মুখ চুপসে গেছে। হয়তো আলভীর কথাতে অনেক বেশিই কষ্ট পেয়েছে।
শপিংমলের সামনে এসে গাড়ি থামলো। মিম এবার চোখ খুলে তাঁড়াতাড়ি গাড়ি থেকে বের হয়ে সেখান থেকে চলে গেল। হয়তো মলের ভেতরে ঢুকেছে। বড়রা তো সেই কখন চলে এসেছে। আলভী মিমের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। নুপূর এসে বলল
কি হলো ভাইয়া যাবেন না।
হুম চলো।

(মুঁচকি হেঁসে)
আলভী আর নুপূর একসাথে চলে যায়। নুপূরকে আলভীর সাথে হেঁসে কথা বলতে দেখে দূর থেকে দাঁড়িয়ে থাকা আলিফ রেগে গেল। মেয়েটার এসব বিহেভিয়ার ওর একদম পছন্দ না। অপরিচিত একটা ছেলের সাথে এতো কথা কীসের! আজ ওর খবর আছে। আলিফ ও রাগী ভাব নিয়ে মলের ভেতরে ঢুকে পড়লো। নুপূরের জন্যই এতক্ষণ অপেক্ষা করেছে ভেতরে যায়নি। অর্ণি যেতে নিলে অভ্র ওর হাত ধরে ফেলে। অর্ণি অভ্রর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাঁকাতেই অভ্র হেঁসে অর্ণিকে একটান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেই। অর্ণির তো লজ্জা লাগছে কারণ আশেপাশে মানুষ আছে যেহেতু ওরা পার্কিং করার জায়গায় আছে তাই একটু কম মানুষই আছে আশে পাশে। অর্ণি একটু সাহস জোগাড় করে অভ্রকে বলল
কি করছেন! কেউ দেখে ফেললে কিন্তু ভালো হবেনা।

আমি সেটার কেয়ার করিনা। তুমি আমার হবু বউ তোমাকে আমি জড়িয়ে ধরতেই পারি।
এখনো কিন্তু বউ হয়ে যাইনি।
হবে তো।

পাবলিক প্লেসে এসব করতে লজ্জা লাগেনা আপনার।
আরে কিছুই তো করলাম না। তার আগেই এতো বড় অপবাদ।
ছাঁড়ুন বলছি। (নিজেকে ছাঁড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে)
যদি বলি ছাঁড়বোনা?
দেখুন ভালো হচ্ছেনা কিন্তু।

হুম। আসলেই ভালো হচ্ছেনা আমি তো তোমাকে একটু আদর করতেই পারলাম না। ভালো হবে কি করে।
আমি আদরের কথা বলছিনা।

তো কি বলছিলে জান।
অভ্রর মুখে এসব কথা শুনলে অর্ণির অস্বস্তি হয়। অভ্রর হাতে একটা কামড় দিয়ে সেখান থেকে দৌঁড়ে পালায়। আর অভ্র মুঁচকি হেঁসে বলে
আমার অর্ণির দেওয়া প্রথম লাভ বাইট।

সবাই শপিং করছে। যে যার মতো কেনাকাটা করছে শুধু মিমের মনটাই খারাপ করে বসে আছে। অর্ণির জোরা জুরিতে একটা লেহেঙ্গা দেখলো। অর্ণি জোর করে ওকে ট্রায়াল রুমে পাঠায়। মিম লেহেঙ্গা পড়ে বেরিয়ে আসে। মিমকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। খুব মানিয়েছে ওকে। মিমের মা তো বলল আহ আমার মেয়েটাকে তো খুব ভালো লাগছে এবার ওর বিয়ের ব্যবস্থা করে আমি চিন্তা মুক্ত হতে চাই। অর্ণির পরেই ওর বিয়েটাও দিয়ে দিব। মায়ের মুখে এমন কথা শুনে মিম লজ্জা পেল। কালো কালার স্কার্ট আর মিষ্টি কালারের ওড়নার সংমিশ্রণের এই লেহেঙ্গাটা মনে হয় মিমের জন্যই তৈরি হয়েছে। দূর থেকে আলবী দেখে আর এসব ভাবে। চোখ সরাতেই পারছেনা ওর থেকে এর মধ্যে কয়েকটা ফটোও তুলে নেয়। মিম নুপূর দুজনেই সেম লেহেঙ্গা নেয় তবে কালার ভিন্ন। মিমের লেহেঙ্গা টা হচ্ছে সিলভার কালারের স্কার্ট আর পিংক কালারের ওড়না।

অর্ণির জন্য রেড লেহেঙ্গা বিয়ের কোণে তো তাই। অভ্র নিজের হাতেই সিলেক্ট করে দেয়। অর্ণি অবাক চোখে দেখে কারণ লেহেঙ্গাটা আসলেই অনেক সুন্দর। অর্ণির খুব পছন্দ হয়েছে। সবাই এবার অর্ণামেন্টস্ এর দোকানে গিয়ে যে যার ড্রেসের সাথে মিলিয়ে জুয়েলারি নিচ্ছে। অর্ণিকে অভ্র সিলেক্ট করে দিচ্ছে অর্ণির নিজে থেকে কিছু দেখা লাগেনা। অবাক কান্ড এই যে অভ্র যেটাই সিলেক্ট করছে অর্ণির কাছে সেটাই খুব ভালো লাগছে। অভ্রর পছন্দ আছে বলতে হয়। তাহলে কি অভ্রর পছন্দ করা অর্ণিও! ভাবতেই অর্ণির লজ্জা লাগছে। অভ্রর দিকে তাঁকাতেই অভ্র একটা চোখ টিপ দেয়। অর্ণি তো হা করে তাঁকিয়ে আছে। মিম কিছু দেখতে গেলেই আলভী পাশে এসে বলে এটা ভালো না ওটা ভালো এই সেই। মিমের রাগ চরম পর্যায়ে উঠে যায়। তাই কিছু না কিনেই সবার সাথে চলে আসে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে ওর কালেকশন গুলো ভালো লাগছেনা।

সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাতে মিম ঘুমোতে যাবে তার আগে কি মনে করে লেহেঙ্গাটা একবার খুলে দেখে। লেহেঙ্গার প্যাকেটে আরেকটা প্যাকেট আছে। মিম অবাক হয়ে সেটা খুলে দেখে একটা জুয়েলারি বক্স। বক্সটা খুলে অবাক হয়ে যায় কারণ জুয়েলারিটা অনেক সুন্দর আর ওর লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং। মিম অবাক হয়ে ভাবছে কে দিল এই লেহেঙ্গা।

পর্ব ১৫

অর্ণি শপিং থেকে এসেই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের ঘোরে হঠাৎ কারো ফোন বাজার শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। এখন ভালো করে দেখে এটা তারই ফোন। আননোন নম্বর থেকে কল আসে অর্ণি বিরক্ত হয়ে কেটে দেয়। পরপর তিনবার কল আসলে না পারতে রিসিভ করে। ও পাশ থেকে একজন আকুল বেকুল কন্ঠে বলে
ভাবী।
ভাবী ডাকটা শুনে অর্ণি চুপ মেরে যায়। কে ভাবী বলছে ওকে!
আপনি কে?

আমি আলভী।
ওহ আলভী ভাইয়া বলুন।
আচ্ছা ভাবী মিমের নম্বরটা একটু দেওয়া যাবে।
হুম দেওয়া তো যায়। কিন্তু কেন বলুন তো?

আসলে, আমি তখন যে ওকে ওভাবে বলেছিলাম তার জন্য স্যরি বলতে চাই।
হুম ভালো কথা। আপনার প্রতি আমার রাগ হয়েছিল এখন সেই রাগ গায়েব হলো কারণ আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন। আমি নম্বর দিচ্ছি তবে মনে রাখবেন মিমকে মানানো এতো সহজ নয়।

তা আর বলতে! আমি এই দুদিনে ভালোই চিনেছি মিমকে।
তারপর অর্ণি নম্বর দেয় আর অল দ্যা বেস্ট বলে কারণ এইকাজে একটু সাহস দরকার। মিম নুপূরের থেকে বেশি অভিমানি আর অর্ণি হলো রাগী। রাগ ভাঙানো সহজ কিন্তু অভিমান! তা না বললেই হয় সেটা তো সকলেরই জানা।

মিম অবাক হয়ে বসে আছে তখন তার প্রিয় টাইটানিক গানের টিউন টা বেজে ওঠে। মন খারাপ হলে এই গানটা যখন শুনে তখন মনটা ভালো হয়ে যায়। এই টিউনের মধ্যে অদ্ভুত এক মায়া জড়িয়ে আছে। যা বোঝানোর মতো নয়। নিজের রিংটোন টা এই জন্যই টাইটানিক টিউনে সেট করেছে। মিম আবার কখনো কল আসলে এক বারেই রিসিভ করে কারণ ওর ধারণা মানুষ হয়তো খুব দরকারে ফোন করে এখানে ব্যস্ততা দেখিয়ে তাকে অপমান করার মানে নেই। তাও আবার ও নিজেই যদি ব্যস্ত না-ই থাকে তাহলে রিসিভ না করার কি আছে! কল রিসিভ করে ফোনটা কানে দিয়ে হেলো বলার আগে ঐপাশ থেকে কেউ একজন বলল
বাবাহ্ একবারেই রিসিভ করেছো! স্ট্রেন্জ।
আমি একবারে বা দুইবারে রিসিভ করবো কিনা তা আমি ডিসাইড করবো। আপনি কে পরিচয় দিন আর ফোন দেওয়ার কারণ কি তা বলুন।
আমাকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে ‘ডিমপাখিইইইই’।

আপনি।
হুম। অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি?
আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে কল করার।
আমার সাহস বরাবরের মতো বেশি তা তোমাকে আর কয়বার বললে তুমি বুঝবে।
আপনি আমাকে তখন অপমান করেছেন তো মন ভরে নাই যে এখন আবারো অপমন করতে ফোন দিলেন।
এবার আলভীর টনক নড়লো আসলেই তো সে মিমকে স্যরি বলতে ফোন দিয়েছে। আর এখন প্রসঙ্গ ঘুরে দাঁড়িয়েছে অন্য দিকে।
আপনাকে আমার নম্বর কে দিয়েছে?

তোমার নম্বর জোগাড় করা এতো কঠিন কিছুনা। আর শোনো আমি স্যরি বলাতে অভ্যস্ত নই তাও আজ তোমাকে বলছি। I’M SORRY DIMPAKHI.
মিম আলভীর মুখ থেকে স্যরি শুনে যেনো কিছু বলতেই পারছেনা। নিজের কানকে হয়তো অবিশ্বাস করছে কারণ আলভী যে ছেলে সে তো মিমকে স্যরি বলবে না। এটা কি সত্যিই আলভী নাকি অন্যকেউ! মিম কিছু বলছেনা দেখে আলভী বলল
কিছু তো বলো।
আপনি আলভী তো।
মানে কি?

মানে আমাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে অপমান করে আবার স্যরি বলছেন ভাবতেই অবাক লাগছে।
এতো অবাক হয়ে লাভ নেই আমার যা বলার আমি বলেছি। এবার তোমার কাজ স্যরি এক্সেপ্ট করা। তুমি নিশ্চয় শুনেছো আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ব্যক্তি পছন্দ করেন। তাই তুমিও আমাকে ক্ষমা করে আল্লাহ্ তায়ালার প্রিয় বান্দা হও। আল্লাহ্ হাফেজ।

আর কিছু বলার সুযোগ পেল না মিম। তবে আলভীর সুন্দর ব্যাক্ষাতে মিম মন থেকে ওকে ক্ষমা করে দেয়।
অর্ণি আলভীর ফোন আসাতে জেগে যায় তাই আর ঘুমায় না। নিচে গিয়ে কফি করে বারান্দায় এনে খেতে থাকে। রাতের বেলা এই ব্যস্ত নগরীটা কতো সুন্দর লাগছে। মুগ্ধ নয়নে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে আর ভাবছে এখন যদি অভ্রর হাতে হাত রেখে একটা পার্পেল কালারের শাড়ি পড়ে হাটতে পারতো কতোই না ভালো হতো! আসলে অর্ণির পার্পেল কালার খুব পছন্দের তবে অভ্রর নীল আর কালো রং। তাতে কি ভালোবাসার মানুষের পছন্দ সই বস্তু মানে নিজেরও পছন্দের। অর্ণি ভাবতেও পারেনি তার না বলা ইচ্ছা টা পূরণ হবে।

অর্ণি কফি খাচ্ছে আর চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছে তখন দেখে অভ্র তাদের গেটের সামনে একটা কালো রং এর শার্ট আর কালো রংঙের প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহ্ এই কিলার লুকটা অর্ণিকে পাগল করে ছাঁড়বে। লোকটার এতো সাজার কি আছে! ছেলেদের সাজতে হয় নাকি! না অভ্র তো সাজেনি তার স্মার্টনেসটাই তাকে বেশি সুন্দর করে তুলে। অভ্রকে দেখে মনে হচ্ছে অফিস থেকেই এসেছে কারণ হাতের মধ্যে খুলে রাখা ব্লেজারটা। অফিস থেকে সোজা এখানে আসার মানে কি অর্ণি বুঝতে পারছেনা। তখনিই তার হাতে থাকা ফোনটা বেজে ওঠলো স্ক্রিনে অভ্র নামটা দেখে দেরী না করে রিসিভ করলো। অভ্রর দিকে তাঁকিয়েই আছে অভ্রও অর্ণিকে দেখছে
অর্ণি।
হুম।

একটু নিচে আসবে? বড্ড ইচ্ছা করছে তোমার হাত ধরে এই রাস্তাটায় হাটতে। তোমাকে চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় খুব কাছ থেকে দেখার একটা লোভ আমার মধ্যে জেগেছে। তুমি কি আসবে অর্ণি। (অভ্রর মুখের ভাষা বলে দিচ্ছে সে খুব করে অর্ণিকে চায় আর তার জন্য অনুরোধ করছে)

অর্ণি ভাবতেও পারেনি তার ইচ্ছাটা পূরণ হবে। ফোনটা কেটে গম্ভীর মুখ করে ভেতরে চলে গেল। অভ্র করুণ দৃষ্টিতে সেদিকে চেয়ে আছে। ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তাও সেখান থেকে নড়েনা বুকের মধ্যে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে থাকে। এখান থেকে ওর যেতে একটুও ইচ্ছা করছেনা আজ যে অর্ণির ভূত মাথায় খুব ভালো ভাবেই চেপেছে। অভ্রকে অবাক করে দিয়ে অর্ণি বাড়ির গেট খুলে বেরিয়ে আসলো। পার্পেল কালারের সিল্কের শাড়িটাতে অর্ণিকে মায়াবিনী লাগছে। অভ্র অর্ণিকে এভাবে এখন এই মুহূর্তে দেখবে তা হয়তো ভাবতেও পারেনি। অর্ণি এসে অভ্রর সামনে দাঁড়ায়। খোলা চুল গুলো অবাধ্য হয়ে শুধু বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে উঁড়ছে। অর্ণির কপালে আসা চুল গুলো কানের মধ্যে গুজে দেয়।
কি হলো যাবেন না!
তুমি এসেছো?

তো আসবোনা কেন? আমি আসার পেছনে অনেক বড় কারণ আছে আর সেটা হলো এই মুহূর্তে আমার ফুচকা খাওয়ার ইচ্ছা জেগেছে। আর আইসক্রীম তো আছেই হাওয়াই মিঠাই হলেও মন্দ হয় না ব্যাপারটা। অর্ণির কথায় অভ্র মুঁচকি হাঁসে আর অর্ণি তা মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকে। ছেলেটার হাসিটাও মনে হয় সাজ গোজ করেছে মনে মনে এটা ভেবে অর্ণি অনেক জোরেই হেঁসে দেয়। অভ্র বলে
হাঁসছো কেন?

এমনেই। চলুন।
অর্ণি।
হুম বলুন।

তোমার হাতটা ধরতে পারি? (আবেগ মিশ্রিত কন্ঠে)
অর্ণি কিছু না বলে সামনে হাটা দেয়। অভ্র আবারো মুঁচকি হাঁসে আর ভাবে এই পর্যন্ত এসেছে তাও অনেক। এতো আশা করা ঠিক না।
অর্ণি হুট করে এসে এক হাত দিয়ে অভ্রকে জড়িয়ে ধরে। অভ্র তো শক খায় তবে অনেক খুশি হয়। দুজনেই হাটছে আর নানান কথা বলছে। অর্ণি বকবক করছে আর অভ্র ওকে দেখেই চলেছে। এই দেখার কোনো শেষ নেই। অতৃপ্ত চোখ দুটি যেন অর্ণিকেই চায় বেশি করে। অর্ণিকে ছাড়া যে অভ্র অচল।

নুপূর আলিফের সামনে বসে আছে তখন থেকেই। আলিফ কিছু বলছেনা নিরব দৃষ্টিতে নুপূরকে দেখছে। হঠাৎ করে এক হুংকার দিয়ে ওঠে। নুপূরও আতকে ওঠে আলিফের এমন রূপ দেখে।
অভ্র অর্ণির জন্য আইসক্রীম আনতে যায় অর্ণি বায়না ধরে ও যাবে কিন্তু অভ্র শুনেনা একা যায়। অর্ণির ভালো লাগছিল না একা একা থাকতে তো সামনে হাটা ধরে। মাঝ রাস্তায় এসে দাঁড়ালে দেখে দ্রুত গতিতে একটা ট্রাক অর্ণির দিকে আসে অভ্র পেছন ফিরে অর্ণিকে দেখে থমকে যায়।

পর্ব ১৬

অর্ণিকে জড়িয়ে ধরে আছে অভ্র। একটু আগের কথা মনে করতে ওর ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। একটুর জন্য হার্টবিট মিস হচ্ছিল। অর্ণি এখনো মিটিমিটি হাঁসছে। একটু আগের কথা মনে পড়তেই অভ্র অর্ণিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

একটু আগে…

অর্ণি মাঝরাস্তায় এসে ট্রাকটা দেখে থামলো। কারণ ট্রাকটা ওর উপর দিয়ে চলে যেতে পারে যদি অর্ণি পুনরায় হাটে। আর দাঁড়িয়ে থাকলে ট্রাকটাও অন্যদিকে চলে যাবে। অভ্র অর্ণির পেছনে ট্রাক দেখে দৌঁড়ে গেল অর্ণিকে গিয়ে ধরবে তার আগেই ট্রাকটা পাশে থাকা চায়ের দোকানের পাশে দাড় করায়। ঐখান থেকে নেমে ড্রাইভার বসে এক কাপ চা নেয়। সবকিছুই হয়তো আগে থেকে ঠিক করে রাখছে যে ড্রাইভার ওখানেই গাড়ি থামিয়ে বসবে। ট্রাকটা অর্ণির থেকে দশ বা পনেরো হাত দূরে। অভ্র একটা স্বস্তি খুঁজে পেল। দেরী না করে দৌড়ে অর্ণিকে জড়িয়ে ধরে আর পাগলের মতো বলতে থাকে
তোমার কিছু হয়নি তো! ঠিক আছো তুমি?

ঐ ট্রাকটা,
কুল মি. চৌধূরী এতো হাইপার হচ্ছেন কেন।
হাইপার হবোনা! ঐ ট্রাকটা তোমার দিকে ওভাবে আসছিল তুমি জানো আমার যে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
তাই বুঝি! তবে আমার ব্যাপারটা ভালো লাগেনি। কোথায় আপনি এসে আমাকে গাড়ির সামনে থেকে হিরোদের স্টাইলে বাঁচাবেন তা না এই ড্রাইভারটা ঐখানেই ট্রাকটা থামালো।
এই মেয়ে তোমার মাথায় কি সমস্যা! মরার শখ আছে নাকি?

(ধমক দিয়ে)
মরার শখ থাকবে কেন? আমার তো জমিয়ে প্রেম করার শখ আছে। (চোখ টিপ দিয়ে)
অর্ণি তোমার একটুও ভয় লাগছেনা! আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত তাহলে আমি মরেই,
এসব কথা বলছেন কেন? আমি তো ঠিক আছি। আই এম ফাইন। আর ভয়! আপনি আমার পাশে থাকলে আমার ভয় হয়না বরং আমি সাহস পাই। (মুঁচকি হেঁসে)
তোমাকে আমি মানা করেছিলাম না আসতে! এলে কেন? (রাগী চোখে)
ইচ্ছা করেছিল তাই।

সবসময় সব রকমের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া কি খুব বেশি জরুরী?
অভ্র আপনি কান্না করছেন কেন?
অভ্র এবার অবাক হয় কারণ ওর চোখের কোণে পানি জমেছে। অর্ণির সামনে যে এমন অবস্থায় পড়বে ভাবেও পারেনি। নিজের চোখটা মুছে বলল
আরে আমার চোখে সমস্যা আছে মাঝে মাঝে এইরকম পানি বের হয়।
ওহ আমার তো বিশ্বাস হচ্ছেনা।

এতে বিশ্বাস না হওয়ার কি আছে।
আপনি না বড্ড খারাপ মানুষ।
আমি কি করেছি আবার।
আমাকে মিথ্যা বলেন। আপনি হয়তো জানেন না চোখ মনের কথা বলে।
তাই।
হুম।

তো অর্ণি তুমি আমার চোখ দেখে কি বুঝলে?
আমি আপনার চোখ দেখে বুঝলাম যে আমার প্রতি আপনার ভালোবাসাটা কতোখানি পবিত্র। আপনার মতো আপনার মনটাও পবিত্র সাথে আপনার ভালোবাসাও। (মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে অভ্রকে বলছে)
আমি এতো কিছু জানিনা বুঝিনা তবে এটা জানি তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা। আমার তোমাকে চাই। আমার মনের রাণীকে আমার চাই।
আমার তো আপনাকে চাইনা।
কেন?

এমন একটা রাগী জেদী বদমেজাজী মানুষকে আমার ভালো লাগেনা।
না লাগলে করার কিছু নেই সারা জীবন আমাকে তোমার সহ্য করতেই হবে।
বলেই অর্ণিকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে।

☆☆☆বর্তমানে☆☆☆
এই যে এবার ছাঁড়ুন লোকে দেখলে কি বলবে।
যা বলার বলুক আমার তাতে কি?
আপনার কিছু না হলেও আমার অনেক কিছুই। আর তাছাড়া আপনি যে হাড় কিপটা সেটা প্রমাণ হয়ে গেল।
কেন আমি আবার কি করলাম।
আমার আইসক্রীম ফুসকা কোথায়?

ওহ স্যরি। চলো এক্ষুণি নিয়ে দিচ্ছি।
শুনুন শুধু আইসক্রীম আনবেন আজ আর অন্য কিছু খেতে চাইনা।
হুম।

অভ্র আইসক্রীম আনে সাথে এক বক্স চকোলেট। অর্ণি তো সাথে চকোলেট দেখে মহাখুশি। অভ্রর গালে একটা কিস্ করে দিল। অভ্র মুঁচকি হাঁসে তারপর দুজনে আইসক্রীম খেতে থাকে আর হাটে। অভ্য অর্ণিকে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে দেয়। টকটকে লাল গোলাপ অর্ণির খুব প্রিয়। অভ্র গোলাপ কিনে এনে এমনেই দেয় না। নদীর পাশে দাঁড়িয়ে হাটু গেড়ে বসে তারপর বলে
আই লাভ ইউ অর্ণি। আমি তোমাকে আমার করে পেতে চাই। তোমাকে নিজের মায়াবীনি বানাতে চাই। তোমার হাতে হাত ধরে হাটতে চাই। আমি তোমার সুখ দুঃখের ভাগীদার হতে চাই। আরো বেশি করে তোমার মায়াতে জড়াতে চাই। দেবে আমাকে সেই অধিকার। (করুণ দৃষ্টিতে)
অভ্র কথা শুনে অর্ণি খুশি হয়ে যায় চোখের পানি চিকচিক করে। অভ্রকে বলে
আমিও।

কি আমিও।
আপনাকে,
আমাকে কি?
কিছুনা।

অভ্রর হাত থেকে ফুলটা নিয়ে নেয়। হাতের ইশারায় অভ্রকে দাঁড়াতে বলে অভ্রও বাধ্য ছেলের মতো অর্ণির কথা শুনে দাঁড়ায়। অর্ণি এবার অভ্রর খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ায় তারপর অভ্রর শার্টের কলার ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়। তারপর অভ্রর দুচোখের পাতায় ঠোঁট ছোঁয়ায় অর্ণির কাজে অভ্র হতবাক এমনটা হয়তো আশা করেনি। অর্ণি অভ্রকে বলে
কিছু কথা মুখে বলা লাগেনা বুঝে নিতে হয় মি. চৌধূরী।
অভ্র মুঁচকি হেঁসে অর্ণিকে জড়িয়ে ধরে। আজ যে তার প্রেম স্বার্থক হয়েছে।

আজ অভ্র আর অর্ণির মেহেদী আর সঙ্গীতের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। অর্ণি সেই কখন থেকে মেহেদী দিয়ে বসে আছে অভ্রর অপেক্ষায়। অভ্রকে কোথাও দেখতে পাচ্ছেনা। রাগ করে নিজের রুমের দিকে যেতে নেয় ওমনি কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। এই মানুষটা কে অর্ণি বুঝতে পারে তাই চুপ করে থাকে। অভিমানি সুরে বলে
এই আপনার আসার সময় হলো।
হুম।

আপনি আমাকে ছাঁড়ুন বলছি। আমার আশেপাশেও আসার চেষ্টা করবেন না একদম।
আমার বউটা রাগ করেছে বুঝি।
না করে উপায় আছে! আমি সেই কখন থেকে আপনার অপেক্ষায় বসে আছি। আপনাকে আমার হাতের মেহেদী দেখাবো বলে কিন্তু আপনার তো কোনো খবর নাই।

স্যরি। আসলে অফিসের কাজে আটকা পড়েছিলাম তুমি তো জানোই আমি কতোটা ব্যস্ত মানুষ।
তাহলে যান না আপনার কাজে আমার কাছে এসেছেন কেন?
আমি তোমার কাছে এসেছি নাকি? আমি তো আমার ভবিষ্যৎ বাবুর আম্মুর কাছে এসেছি।

অভ্র অর্ণিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয় তারপর বলে
আমি জানি অপেক্ষা নামকে বস্তুটা ভিষণ খারাপ। তাও আমার কাছে কোনো উপায় ছিল না তাই বাধ্য হয়ে লেট করতে হলো।
তাই বলে আজকের দিনে।
আজকে তো আর বিয়ের দিন না। আজ তো শুধুমাত্র সঙ্গীত আর মেহেদীর অনুষ্ঠান।

আমার কাছে এখনকার সব গুলো দিনই স্পেশাল।
আচ্ছা বাবা আর কখনো ভুল হবেনা আমার। এই দেখো কানে ধরছি।
অভ্র কানে ধরে অর্ণি ফিক করে হেঁসে ওকে জড়িয়ে ধরে। দুজনে গিয়ে তাদের জন্য রাখা বৈঠক খানায় বসে চারিদিকে ফুল আর লতাপাতা দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। দেখতে চোখটা জুড়িয়ে যায়।

আলভী তখন থেকেই মিমের পেছনে পাগলের মতো পড়ে আছে। একা ছাঁড়ছেই না ওর মিমকে বিরক্ত করতে দারুন লাগছে। বারবার ডিমপাখি করে করে মিমের মাথা খাচ্ছে। মিম তো একবার এসে আচ্ছা মতো কথা শুনিয়ে দেয়। তারপরও আলভী থামেনা। শেষে আলভী থামে তার বন্ধুদের জন্য কারণ সবাই রিকোয়েস্ট করছে একটা গান গাইতে। কারণ আলভীর গানের গলা খুব ভালো। ওদের মধ্যে রাফিনের গিটার আছে আলভী সেই গিটার টা নিয়ে টুলে বসে পড়ে তারপর গান শুরু করে

Tum mere ho iss pal mere ho
Kal shayad ye alam naa rahe
Kuch aisa ho tum tum naa raho
Kuch aisa ho hum hum naa rahe
Yeh raaste alag ho jaaye

Chalte chalte hum kho jaaye
Main phir bhi tumko chahunga
Main phir bhi tumko chahunga (x2)
Is chahat mein marr jaunga
Main phir bhi tumko chahunga
Meri jaan mein har khamoshi hain

Tere pyaar ke nagme gaunga
Main phir bhi tumko chahunga
Main phir bhi tumko chahunga
Is chahat mein mar jaunga
Main phir bhi tumko chahunga

Aise zaroori ho mujhko tum
Jaise hawa ye saanson ko
Aise talashun main tumko
Jaise ke pair zameeno ko
Hasna yaa rona ho mujhe
Paagal sa dhoondhun main tumhe
Kal mujhse mohabbat ho naa ho
Kal mujhko ijazat ho naa ho
Tutte dil ke tukde lekar
Tere darr pe hi reh jaaunga

Main phir bhi tumko chahunga
Main phir bhi tumko chahunga
Is chahat mein mar jaunga
Main phir bhi tumko chahunga
Tum yoon mile ho jabse mujhe

Aur sunehri mein lagti hoon
Sirf labon se nahi ab toh
Poore badan se hasti hoon
Mere din raat salone se
Sab hai tere hi hone se
Yeh saath hamesha hoga nahi
Tum aur kahi mein aur kahi
Lekin jab yaad karoge tum

Main ban ke hawa aa jaunga oh..
Main phir bhi tumko chahunga
Main phir bhi tumko chahunga

Iss chahat mein mar jaunga
Main phir bhi tumko chahunga
Main phir bhi tumko chahunga
Main phir bhi tumko chahunga
পুরো গানটা আলভী মিমের দিকে তাঁকিয়ে বলে। মিমের কেমন অস্বস্তি লাগছিল তাও সেখান থেকে নড়তে পারেনি কারণ তার সাথে নিতু আর নুপূর ছিল। ওরা মিমকে যেতে দেয় নি। অভ্রও অর্ণির দিকে তাঁকিয়ে গানটা ফিল করছিল আর অর্ণিকে মুগ্ধ নয়নে দেখছিল।

পর্ব ১৭

আলভী গানটা শেষ করে মুঁচকি একটা হাঁসি দেয়। সবাই হাত তালি দেয় ওর বন্ধুরা কেউ কেউ মুখে আঙুল দিয়ে সিটি বাজায়। মিমেরও গানটা খুব ভালো লেগেছে। তবে আলভীর সামনে এমন ভাব করলো মনে হয় একদম সুন্দর ছিল না। আলভীও ওতো পাত্তা দেয়নি। অর্ণির মেহেদী দেওয়ার পর এবার মিম নুপূর একসাথে মেহেদী দিতে বসেছে। নুপূরের হাতে মেহেদী দিচ্ছিল তখন কোথা থেকে আলিফ এসে বলল
কিরে তুই আবার মেহেদীও লাগাস নাকি।

আমাকে মেহেদী লাগাতে কি এই প্রথম দেখছো নাকি?
এই মেয়ে পাল্টা প্রশ্ন করিস কেন? জানিস না যে এটা খারাপ অভ্যাস।
আমি সব জানি কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। তুমি বরং এখান থেকে যাও আমার একদম ভালো লাগছেনা এই মুহুর্তে তোমাকে নিজের চোখের সামনে দেখতে।

ওরে বাবা! মুখে খৈ ফুটছে দেখছি। বেশি পেকে গেছিস বোধ হয়! একটা উচিত শিক্ষা তো তোকে দিতেই হবে।
ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি যাকে তাকে ভয় পাইনা গো।
আমাকে তুই এভাবে অপমান করতে পারলি।

না পারার কি আছে! তুমি পারলে আমি পারবোনা কেন?
একটা অসভ্য মেয়ে হয়েছিস বটে। তোর তেজ বেড়েছে ফুফুকে বলে তোর তেজ কমানোর ব্যবস্থা করছি।
তো কি বলবে ফুফুকে?
তোর বিয়ের কথা বলবো।

আরে আলিফ ভাইয়া তুমি যদি এই কাজটা করতে পারো তাহলে আমি ফ্রিজে রাখা আইসক্রীম তোমাকে দিব। যদিও আমি আইসক্রীম শেয়ার করিনা তবে এবার করবো। কারণ তুমি যে আমার অনেক বড় উপকার করতে চলেছো। (মুখে হাঁসি ফুটিয়ে)
আমি তোর বিয়ের কথা বলতে যাচ্ছি। তুই কি আমার কথা বুঝস নাই?

বারে! বুঝবোনা কেন? বুঝেই তো বললাম। তুমি জানো আমার বিয়ের কতো শখ! আব্বু আম্মু দিচ্ছেইনা। তুমি বললে অবশ্যই দিবে। কারণ আম্মু তো তুমি বলতে অজ্ঞান। আমার বিয়ে হয়ে গেল আমি সংসার করবো বাচ্চা কাচ্চা পালবো। আর বরের সাথে রোমান্স করবো। (চোখ টিপ মেরে)
এই মেয়ে তোর লজ্জা নেই? বড় ভাইয়ের সামনে এসব বলছিস।
ভাইয়ার সামনে তো বলাই যায়। লাভারের সামনে বলা যায়না। তুমি তো আর আমার লাভার না।
এই মিম তুই এই শাকচুন্নিকে কিছু বলবি? তখন থেকে ভাট বকে চলেছে।

আমি কি করবো তোমরা যে হারে ঝগড়া শুরু করেছো তাতে আমার নিজের মাথায় হ্যাং ধরেছে। তার চেয়ে বরং তুমি এক কাজ করো নুপূরের কথা মতো ওর জন্য পাত্র খুঁজে বের করো। অর্ণির পরে নুপূরের বিয়ে অনেক মজা হবে। আমি তো তখন আমার ঐ যে লাল পেড়ে কালো শাড়িটা পড়বো।
এই মিম এখনো ওর বিয়েই ঠিক হলোনা আর তুই কি করবি কি পড়বি সব ভেবে রেখেছিস। দেবো এক গাট্টা।

আলিফ ভাই তুমি একটু যাও তো আমাদের মেয়েদের মধ্যে থেকোনা। যদি থাকো তাহলে আর কি! আসো মেহেদী দিয়েই যাও।
অর্ণির কথায় আলিফ লজ্জা পেয়ে গেল। তাই কাজের বাহানা দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। তবে নুপূরের প্রতি রাগ চেপে গেছে বেশ করে। পরে দেখাবে মজা! এখন জনসম্মুখে কিছু বলতেই পারছেনা।

আলভী এতক্ষণে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বন্ধু গুলোর পাল্লায় পড়লে ওরা সহজে ছাঁড়েনা। মিমকে যে তার না দেখলে পেটের ভাত হজম হয় না। আজ তার ডিমপাখিকে যে অমায়িক লাগছিল। তার বিড়ালের মতো চোখ গুলো দেখলে আলভীর মনে প্রশান্তি আসে। মেয়েটা বড় অদ্ভুত। চোখ দুটো বিড়ালের মতো মুখটা একেবারে দুধে আলতা। কালো কার্ল করা চুল গুলোর নিচের কিছু অংশে হাল্কা ব্রাউন কালারটা ওকে আকৃষ্ট করে। আজ গানটা মিমকে ডেডিকেট করেছিল কিন্তু ঐ ঝগরুটেটা ওর দিকে ফিরেও তাঁকায়নি বরং এমন ভাব করলো যেন আলভীর গান শুনলে কুকুর পানিতে পড়বে।

আলভী মিমের দিকে আসছিল আর মিম রাগী চোখে ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখন বেটাকে চিবিয়ে খাবে।
মিমকে যেই মহিলা মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে উনি মিমকে জিজ্ঞেস করে
ম্যাম! নামটা বলবেন প্লিজ?

মিম ভাবে আলভীর কথা বলছে তাই ও বলল
আলভী।
ধন্যবাদ ম্যাম।
মহিলাটা মিমের কথা মতো আলভীর নামটা হাতের মাঝখানে সুন্দর করে লেখে দেয়, মিমের সেদিকে খেয়াল নেই সে তো শুধু কটমট করে রাগী চোখে আলভীকে দেখছে। মহিলাটা মেহেদী দেওয়া শেষ করে তারপর মিমকে বলে
হয়ে গেছে ম্যাম।

ধন্যবাদ।
মিম মেহেদীর দিকে একবার তাঁকায় ওতো গুরুত্ব দিয়ে দেখেনা কারণ এখন এখান থেকে পালানো হচ্ছে ওর আসল কাজ। কে জানে এই আলভী আবার নতুন কোন প্যারা নিয়ে হাজির হয়েছে! মিম তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে চলে যায়। একপ্রকার দৌঁড়াতেই থাকে মেহেদী হাতে থাকায় অসুবিধা হচ্ছে অনেক বেশি। তার থেকে বড় কথা মেহেদীর জন্য লেহেঙ্গাটা হাত দিয়ে ধরে উপড় করতে পারছেনা।

বারবার পায়ে বাঁধছে তাও কোনোমতে দৌঁড়ানোটাই শ্রেয় মনে করছে মিম। আলভীও কম কীসে! মিমকে ওর থেকে পালাতে দেখে নিজেও মিমের পেছন দৌঁড়াতে লাগলো। মিম এখন সামনে কিছু না পেয়ে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে সোজা গার্ডেনে চলে গেল। আলভীও যায় মিম এবার আর পারছেনা দৌঁড়াতে তাই জোরে জোরে হাটছে আলভীও মিমের পেছন পেছন আসছে।

মিম এবার প্রচন্ড রেগে যায় ও বুঝতে পারে যে পালিয়ে লাভ নেই যা বলার বা করার সব সামনে থেকে করতে হবে। ঐখানেই দাঁড়িয়ে পড়ে আলভীও দাঁড়িয়ে যায় তারপর বাঁকা হেসে মিমের দিকে এগোতে থাকে মিম হাতের ইশারায় ওখানেই থামতে বলে কিন্তু কে শুনে কার কথা! আলভী গিয়ে মিমের কোমর জড়িয়ে ধরে তারপর নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। মিমের রীতিমতো কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়। আলভী বলে
এই এতো কাপাকাপি করছো কেন? আমি তো এখনো কিছুই করলাম না। না করতেই এতো করলে কি করবে ডিমপাখিইইইই। (চোখ টিপ দিয়ে বলে)
এএএএইই বেশি ককরছেন কিন্তু।

হুশ।
মিমের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে থাকে। তারপর ঘোর লাগানো কন্ঠে বলতে থাকে
এই মেয়ে তুমি কি আমাকে খুন করার মতলব আটছো নাকি।
মানে।
এই রূপে আমায় পাগল করে মারছো! কি দোষ করেছি আমি বলোতো! জাস্ট ভাইয়ের বিয়েটা ইন্জয় করতে এসেছি আর তুমি কিনা সব মাটি করে দিলে। উল্টো নিজের নেশায় আমাকে আসক্ত করছো যতো বেশি পারো আকর্ষিত করেই চলেছো নিজের দিকে। এর জন্য তোমাকে তো শাস্তি পেতেই হবে।

শাস্তি।
ইয়েস বেবী। (বাঁকা হেসে)
আপনি,
আর কিছু বলার আগেই আলভী মিমের ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়। মিম পুরো হতবাক। আলভীকে ছাঁড়ানোর শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে তাও ছোটার চেষ্টা করে আলভীর মতো সুঠাম দেহীর সাথে পেরে ওঠে না। পাঁচ মিনিট পর আলভী নিজে থেকে ছেঁড়ে দিয়ে বলে
আজ সিম্পল ডোজ দিলাম নেক্সট টাইম আমাকে আবার আসক্ত করলে তোমাকে হাই ডোজটা দিতে দুবার ভাববো না।
তারপর সেখান থেকে চলে যায় আর মিম সেখানে বসেই কান্না করে দেয়। কালকেই চলে যাবে আর একমুহূর্ত এখানে থাকা চলবেনা এই আলভী তো ওর বাঁচা মুশকিল করে দিয়েছে।

অর্ণির জন্য অভ্র কোল্ড ড্রিংক্স আনতে গেছে। অর্ণি একা বসে আছে তখন কেউ একজন এসে অর্ণির পাশে বসে পড়লো। অর্ণি ভাবলো অভ্র এসেছে তাই চোখ বন্ধ অবস্থায় ঐ ব্যক্তির কাধে মাথা রাখে। একটু আগে যে পানিটা পান করে তারপর থেকেই অর্ণি কেমন যেন ঘুমে ঢোলে পড়ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। ও চোখ খুলে তাঁকাবে যে সেই শক্তিটুকু ওর মধ্যে নেই।

অভ্র কোল্ড ড্রিংক্স নিয়ে হাঁসিমুখে অর্ণির কাছে আসতেই থমকে যায়। এটা ও কি দেখছে! অর্ণি নিহামের সাথে এভাবে ছিহ্।
হ্যাঁ। নিহাম অর্ণির পাশে বসে আছে আর অর্ণি একটা নেশায় থাকার কারণে চোখ খুলার শক্তিটাও হারিয়েছে। কারণ নিহাম ওর পানিতে নেশার ঔষুধ মিশিয়ে দেয়।
অভ্র হাতের কোল্ড ড্রিংক্স ফেলে দৌঁড়ে অর্ণির কাছে যায়। নিহামের কলার টেনে দাঁড় করিয়ে এলোপাথারি মারতে থাকে।

নিহামকে অনেক মারছে হিংস্র প্রাণীর মতো
এই তুই কোন সাহসে আমার অর্ণিকে স্পর্শ করেছিস! বল কে দিয়েছে তোর এতো দুঃসাহস।
নিহাম মার খাওয়ার চোটে কিছু বলতেও পারছেনা এইদিকে হাংগামা হয়ে যাওয়াতে সবাই চলে আসে। আলিফ আলভী মিলে অভ্র আর নিহামকে দূরে সরিয়ে নেয়। সবাই তো চরম অবাক কি এমন হয়েছে যার ফলে অভ্র এমন রেগে আছে! এদিকে অর্ণির আর কোনো সেন্স নেই পড়ে যেতে নেয় ওমনি অভ্র এসে ওকে ঝাপটে ধরে।

পর্ব ১৮

অর্ণি পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় সামনের দিকে। অর্ণির সামনে তার বাবা আর পাশে বসে আছে মা। মিম নুপূরও আছে বিছানার পাশে। সবাইকে এক এক করে দেখে নিল অভ্র বাদে। অভ্র কোথায় গেল! অর্ণির মাথাটা খুব ভারী হয়ে আছে বেশিক্ষণ চোখ মেলে রাখতে পারলোনা আবারো তলিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ অভ্র অর্ণিকে দেখছিল। অর্ণির জ্ঞান ফিরেছে দেখে অভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এতক্ষণ ওর মনের মধ্যে উথাল পাতাল ঝড় বয়েছিল। একটু হলেও এখন শান্তি পাচ্ছে। আলভী এসে অভ্রকে বলে
ভাই নিহাম চলে গেছে ওদের বাড়িতে।

ওহ।
দেখ যা হয়েছে তাতে ভাবীর কোনো দোষ নেই মোট কথা ভাবী এসব গুণাক্ষরেও টের পায়নি। তাই বলছি তুই আবার এসবের জন্য ভাবীর ওপর রাগ করে থাকিস না। ডক্টর আঙ্কেল বলেছে নেশা কেটে গেছে এখন দুর্বলতার জন্য ঘুমিয়ে আছে।
হুম।

শুধু ওহ আর হুম করবি! তোর অর্ণিকে দেখবিনা ওর পাশে গিয়ে বসবিনা।
ভালো লাগছেনা রে একটু একা থাকতে চাই। আমাকে একটু সময় দে নিজেকে এখনো ভেতর থেকে নরমাল করতে পারিনি।
সময় নে তবে বেশি সময় নিয়ে ফেলিস না।

অভ্র কোনো জবাব দেয়নি। ওর এখন ভালো লাগছেনা কারো সাথে কথা বলতে। আলভীকে ক্রস করে চলে আসে নিচে। গাড়িতে বসে মাথায় হাত দিয়ে কিছু ভাবে তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাড়িতে চলে যায়। আলভীকে ফোন করে দেয় যাতে ওরা সবাইও চলে আসে। আলভী যাওয়ার আগে মিমকে একপলক দেখে তারপর মুঁচকি হেসে চলে যায়। মিমের মাথায় এখন অর্ণির চিন্তার সাথে সাথে আরেকটা চিন্তা ভর করেছে তা হলো আলভী।

রাতে যে যার মতো ঘুমাতে চলে যায়। মিম নুপূর অর্ণির পাশেই বসে থাকে। নুপূর নানান কথা বলছে মিম শুধু হু হ্যাঁ করছে তেমন একটা কথা বলছেনা। নুপূর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মিমকে জিজ্ঞেস করে
কিরে তোর কি কিছু হয়েছে?

হু। (আনমনে)
কি হয়েছে।
কি আবার হবে কিছুই হয়নি।
আর ইউ সিউর।
ইয়েস বেব।

ওদের কথার মাঝখানেই অর্ণি জেগে যায়। তারপর বলে
আমাকে ছাড়াই আড্ডা জমিয়ে ফেলেছিস? বিয়ে হওয়ার আগেই এমন বিয়ের পরে জানি কি হবে।
আরে অর্ণি উঠেছিস তুই! সেই কখন থেকে তোর ওঠার অপেক্ষায় আছি। তোর কোনো হেল দোল নেই। তাছাড়া মিমের মুড অফ তাই একটু কথা বলে দেখছিলাম মুড অন করে কিনা।

এই আমার মুড মোটেও অফ নেই। এই দেখ আমি কেমন হাসছি।
দেখানো হাসি সবাই দিতে পারে তুই একা না।
অর্ণি তুই তো সেই যে দুপুরে শুয়েছিলি এখন উঠেছিস ফুফু খাবার রেখেই গেছে। তুই যা ফ্রেশ হয়ে আয় একসাথেই খাবো আমরা।
কি তোরা এখনো কিছু খাস নাই?

তোকে ছাড়া ইচ্ছে করছিল না রে। যা এবার ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেন্জ করে আয় তো আর মেহেদী তো সেই কখন শুকিয়ে গেছে যা ওটাও আবার ধুয়ে নিস। তারপর দেখবো কার মেহেদীর রং সবচেয়ে গাঢ়। (নুপূর)
আচ্ছা আসছি।

অর্ণি নরমাল ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে সবাই একসাথে খাবার খেয়ে নেয়। তারপর অর্ণি মিম নুপূরকে বলে কফি খাওয়াবে নিজের হাতে বানানো। ওরা খুশি হয়ে সম্মতি দেয় অর্ণিও কফি বানিয়ে আনে।

আজ ওরা ছাদে এসেছে। অর্ণি আর কিছু মুহূর্ত নিজের বাড়ির আনাচে কানাচে ফিল করতে চায়। এরপর তো আর খুব একটা আসা হবেনা। নুপূর বলে
অর্ণি দেখি তো তোর মেহেদী।
অর্ণি হাত বাড়ায় নুপূর বলে
খুব সুন্দর হয়েছে আর অনেক গাঢ় তারমানে জিজু তোকে একটু বেশিই আদর করবে।

যাহ পাগল বেশি বকছিস কিন্তু।
হুহ।
দেখা তোরটা দেখা এবার। বয়ফ্রেন্ডের নাম লিখিয়েছিস নাকি।
না কি যা তা বলছিস! এই দেখ একদম ফ্রেশ শুধু ডিজাইন।

তোরটাও তো খুব সুন্দর। মিম এবার তোর হাতের মেহেদী দেখা তো।
মিম বাহিরে তাঁকিয়ে আছে অর্ণির কথায় হাত বাড়িয়ে দেয় আবারো বাহিরে তাঁকিয়ে কিছু ভাবে। হঠাৎ অর্ণি আর নুপূরের চিৎকারে মিম চমকে যায়। তারপর বলে
এই কি ব্যাপার চেচাচ্ছিস কেন?
আর ইউ সিরিয়াস মিম।
মানে?

আলভী ভাইয়ার সাথে কবে থেকে চলে হ্যাঁ।
মিম এবার থতমত খেয়ে যায়। অর্ণি আর নুপূর কোনো ভাবে আলভীর কথা জেনে গেল না তো! ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে তারপর বলে
কি উল্টা পাল্টা বকছিস মাথা ঠিক আছে! আমার আর আলভীর মধ্যে কি থাকবে।
আমরা উল্টা পাল্টা বকছি নাকি তুই উল্টা পাল্টা কাজ করছিস?
অর্ণি কি বলছিস আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।

বুঝতে পারছিস না! এই দেখ তারপরে ভালো করে বুঝে যাবি।
মিম তার হাতে থাকা মেহেদীর দিকে তাঁকিয়ে অবাক কারণ সুন্দর ডিজাইন করে আলভীর নামটা লেখা আর অনেক গাঢ় হয়ে গেছে নামটা। মিমের বুক ধুক করে উঠল। আলভীর নাম ওর হাতের মধ্যে! কীভাবে সম্ভব!
কিরে কিছু বল।
দেখ আমি নিজেও জানিনা বিশ্বাস কর।

কি বলছিস এসব? তুই জানিস না বললেই হলো হাত টা তোর তাহলে তো তোর খুব ভালো করেই জানার কথা।
সত্যি আমি জানিনা। এটা ভূলবশত হয়ে গেছে। (মিমের ঐ মহিলার কথা মনে পড়ে তারপর বুঝতে পারে মহিলা আসলে কী নাম চেয়েছিল আর ও কি বলল! মিমের এবার ঐ মহিলার উপর রাগ উঠছে চরম রাগ হাতের কাছে পেলে মেরে তার ভর্তা করে দেবে)
কিরে কি ভাবছিস! ধরা পড়ে গেছিস এখন কি বলবি সেটাই তো ভাবছিস তাই না।
না। আসল ব্যাপারটা হলো অন্যকিছু।

তারপর মিম সব খুলে বলে অর্ণি আর নুপূরও বিশ্বাস করে কারণ মিমের মিথ্যা বলার অভ্যাস নেই আর ও এই মুহূর্তে সিরিয়াস। তবে মিম ওর আর আলভীর মধ্যে ঘটে যাওয়া সবটা বলেনি আর এটাও বলেনি যে কাল সকালেই মিম চট্টগ্রাম ফিরে যাচ্ছে একা একা।
আচ্ছা মিম এটা বুঝলাম যে নাম লেখা নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছে। তবে তারপরে তুই দেখিস নি যে তোর হাতে আলভী ভাইয়ার নাম লেখা! আর তাছাড়া হাত ধোয়ার সময় তো দেখার কথা আর এতক্ষণে কি একবারো নিজের হাতের দিকে তাঁকাস নি যে দেখতে পারলিনা।
সত্যি আমি তাঁকায়নি আর যদি তাঁকিয়েও থাকি তাহলে ওতো গুরুত্ব দিয়ে দেখি নি।

গুরুত্ব দিবিনা কেন? মিম তোর কি কিছু হয়েছে! আমাদের বলতে অসুবিধা কোথায়! এতো ডিপ্রেসড দেখাচ্ছে কেন তোকে।
না এমনেই।
মিম আর কোনো কথা না বলে সেখান থেকে চলে আসে আর রুমে গিয়ে দরজা লক করে দেয়। অর্ণি আর নুপূর অবাক মিম আজ হঠাৎ পাশের রুমে কেন গেল ওদের সাথে থাকলে কি হতো!

সকালে অভ্রর ফ্যামিলি ফোন দিয়ে অর্ণির শরীরের এখন কি অবস্থা জিজ্ঞেস করে। তারপর বলে সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি কনভেনশনে চলে যেতে। যেখানে বিয়ের বাদ বাকি আয়োজন করা হয়েছে। অর্ণি বসে বসে নিজের ড্রেস দেখছে তখন নুপূর দৌড়ে এসে বলে
অর্ণি মিমকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ইভেন ওর জামা কাপড়ও নেই।
হোয়াট।

হ্যাঁ তুই নিচে আয় সবাই ঐখানেই আছে।
অর্ণিও নুপূরের পেছন পেছন ছুট লাগায়। মিম হঠাৎ কোথায় গেল কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা। ওর ফোন বন্ধ টেনশনে ওর মায়ের প্রেশার বেড়ে গেছে। মেয়েকে না পেয়ে মরার অবস্থা হয়েছে তার। এদিকে আলভী একটা দরকারে এসে দরজার বাহিরে কারো মুখে শুনে ফেলে যে মিমকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাটা শুনে ও সেখানে থমকে দাঁড়ায়।

পর্ব ১৯

অভ্র শুয়ে আছে কোনো কিছুই তার ভালো লাগছেনা। কাল রাতে যে এসেছিল আর রুম থেকে বের হয়নি। সবাই অনেক ডাকাডাকি করে তবে ও একটা বারও রুম থেকে বের হয়নি। খাবার খায়নি অভ্রর মা তো রীতিমতো চিন্তায় পড়ে পাগল প্রায়। অভ্রর বড় ভাই কাব্য তার বউ বাচ্চা নিয়ে কাল রাতে আমেরিকা থেকে এসেছে। অভ্র তাদের সাথেও একটা বার দেখা করলো না। অনেকক্ষণ ভাবনায় ডুবে থাকার পর বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে যায় লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে আসে। আয়নাতে নিজেকে দেখছে আর ভাবছে যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি। কিছু করতে হবে।

আলভী শোনা কথায় কান না দিয়ে ভেতরে চলে গেল। চোখে দেখে তারপর বিশ্বাস করাটায় শ্রেয়। দরজার সামনে এসে কলিংবেল বাজালে নুপূর মিম মনে করে দৌঁড়ে এসে দরজা খুলে দেয়। আলভীকে দেখে হতাশ হয় আলভী নুপূরের চোখে হতাশা স্পষ্ট দেখতে পারছে। নিজেকে সংবরণ করে বলল
বাড়ির সবাই কোথায়?
উপরের হল রুমটায় আছে।

আচ্ছা তাহলে চলো দরকারি কথা আছে বড়দের সাথে।
জ্বী আসুন।
নুপূর আলভীকে নিয়ে উপরে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে সবার মুখে চিন্তার ছায়া। আলভীকে দেখে অর্ণির বাবা আর বড় মামা এগিয়ে আসে। অর্ণির বাবা বলেন
বাবা তুমি হঠাৎ।
আসলে আঙ্কেল আমাকে মামি পাঠিয়েছে।

কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি।
না আঙ্কেল আসলে সবাই কালকের ব্যাপারটার জন্য একটা কাজ ভুলে গেছে। বলতে গেলে একটা নিয়ম পালন করতে পারেনি তাই এখন সেটা পালন করতে হবে।
বুঝলাম না বাবা।
আসলে ছেলেপক্ষ থেকে মেয়ে পক্ষকে বিয়ের কার্ড দেওয়া হয়নি সেটা দিতে এসেছি। আর ভাবীর জন্য মামি এই জুয়েলারি পাঠিয়েছে বলেছে হলুদ অনুষ্ঠানে এটা পড়তে।

ওহ আচ্ছা। তুমি বসো বাবা নাস্তা করে যাও।
না আঙ্কেল আমি খেয়ে এসেছি। আপনাদের চিন্তিত লাগছে কি হয়েছে! আমাকে বলতে পারেন দেখি কোনো উপকার করতে পারি কিনা।
আসলে আমার,
অর্ণির বাবাকে বলতে না দিয়ে বড় মামা বলল
আমার ছোট ভাইয়ের মেয়ে মিমকে সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছেনা। না বলে মেয়েটা কোথায় গেল আমরা কেউ কিছু বুঝতে পারছিনা
কখন থেকে?

এই যে ভোর বেলায় ওর মা ওকে ডাকতে গেল তখন কোথাও দেখলোনা তারপর সাড়া বাড়ি খুঁজলো কিন্তু পেল না। পরে দেখা গেল ওর জামা কাপড় নেই। ফোন দিচ্ছি তবে সুইচড অফ বলছে। এমন না যে আমাদের মেয়ে কোথাও বুঝতেই তো পারছো কি বলতে চাইছি।
মামা মিম ফোন করেছে।

অর্ণির কথায় সবাই খুশি হয়ে যায় তারপর বলে কল রিসিভ করতে। অর্ণি কল ধরে মিমকে জিজ্ঞেস করে কোথায় আছে এখন মিম বলে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। কথাটা শুনে অর্ণি রেগে যায় তারপর বলে
তুই আমার বিয়ে ফেলে ফিরে যাচ্ছিস কেন?

আসলে আমার একটা দরকারি কাজ পড়েছে।
চুপ। একদম চুপ। আমার থেকেও দরকারি কি আছে হ্যাঁ।
অর্ণি তুই বোঝার চেষ্টা কর কাজটা খুব দরকারি আমাকে যেতেই হবে।

না আমি এত কিছু বুঝতে চাইনা। তুই এক্ষুণি ফিরে আয় নাহলে আমি নিজে যাবো।
কি বলছিস এসব।
তুই না এলে আমি বিয়ে করবোনা আর করবোনা মানে সত্যিই করবোনা তুই মজা ভেবে নিস না।

অর্ণি।
তুই আমার বিয়েটা না হোক এটাই তো চাস তাই না।
তোর মাথা। আমি এমন কিছুই চাইনা আর কেন চাইবো।
আমাকে এসব বলবিনা আমি এখন তোর কোনো কথা শুনবোনা। তুই তাড়াতাড়ি আয় নাহলে সত্যিই আমি বিয়ে করবোনা।
দেখ এখন আর যাওয়ার কি দরকার ট্রেন আর কয়েক মিনিটের মধ্যে চলে আসবে।

আসুক ট্রেন। তবে তুই যেতে পারবিনা এই আমি বলে দিলাম।
অর্ণি আমার কথাটা শুন দেখ সত্যিই খুব দরকার।
আচ্ছা কি দরকার বল আমিও যাবো তাহলে।

আছে দরকার। তোর যাওয়া লাগবেনা তুই বিয়ে কর।
ভালো কথা তুই শোনার মেয়ে না তা আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল।
অর্ণি কল কেটে তাড়াতাড়ি সদর দরজা দিয়ে বের হতে নেয় ওমনি পেছন থেকে আলভী বলে
ভাবী সব ঠিক আছে।
না কিছু ঠিক নেই।

আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
ভাইয়া আমি রেলস্টেশন যাচ্ছি।
এভাবে একা যাবেন না কোনো বিপদ আপদ হতে পারে তার থেকে ভালো আমিও যাই।
অর্ণি আমিও যাবো।
নুপূর তুই কেন যাবি তুই এখানেই থাক সবাই চিন্তা করছে ওদের দেখে রাখ আমি আলভী ভাইয়ার সাথে যাচ্ছি।
আচ্ছা।

আলভী আর অর্ণি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। আলভী ড্রাইভ করছে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব যেতে হবে। অর্ণি আন্দাজ করেছে যে মিমের কোনো দরকারি কাজ নেই কিছু লুকানোর জন্য চলে যাচ্ছে। যদি তা না হতো অর্ণির বিয়ে ফেলে মিম কখনো চলে যেতো না।

অভ্র অর্ণিকে অনেকবার ফোন করেছে কিন্তু অর্ণি ফোন উঠাচ্ছে না তাতে চরম রেগে গেল অভ্র। অর্ণি কি এখন অভ্রকে এভোয়েড করছে! এতো তাড়াতাড়ি অভ্রকে এড়িয়ে চলতে শিখে গেল! জাস্ট ওয়াও। অর্ণির থেকে অভ্র এমনটা আশা করেনি কখনোই আশা করেনি। অভ্র এসব ভাবছে আর কপালে বুড়ো আঙুল বুলাচ্ছে রাগে পাশে থাকা ফুলদানিটা ঠাস করে ফেলে দিল। পুরো ঘরে কাচের টুকরো ভরে গেল।

অভ্র শুধু ফুলদানি ভেঙেই শান্ত হয়নি আশেপাশে যা পাচ্ছে তাই ভাঙছে। অভ্রর মা আর ভাই ভাবী দৌড়ে এসে অভ্রকে অনেক কষ্টে থামালো। অভ্র একবার ওদের দিকে তাঁকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেল। আলভীকে একটা ফোন দেয় গাড়িতে বসে আলভী বলে ওরা স্টেশনের দিকে যাচ্ছে অভ্রও দেরি না করে গাড়ি ঘুরিয়ে সেদিকে গেল।

বসে বসে চিপস্ খাচ্ছে মিম। ট্রেন আসতে আর মাত্র দশ মিনিট তারপর মিম চলে যাবে। আর ঐ আলভীর থেকে মুক্তি পাবে। তবে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে অর্ণির বিয়েতে অর্ণির পাশে থাকতে পারলোনা। এতে যে অর্ণি খুব কষ্ট পেয়েছে তা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। কিন্তু করার কিছুই নেই। এসব ভাবতে ভাবতে চিপস্ মুখে দিবে তার আগেই কেউ ওকে থাপ্পর দিয়ে হাতের থেকে চিপস্ এর প্যাকেট নিয়ে খেতে শুরু করে।

ব্যাপারটা খুব তাড়াতাড়ি হওয়াতে মিমের বুঝতে একটু সময় লাগলো। অর্ণিকে দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল। কিছু বলতে যাবে তার আগে আরেকটা থাপ্পর দিল অর্ণি। থাপ্পর দিয়েই আবার খেতে লাগলো কোনো ভাবান্তর নেই ওর মধ্যে। মিম এবার অসহায় দৃষ্টিতে ওকে দেখছিল। তখন পেছন থেকে আলভী বলল
কি ম্যাডাম এভাবে পালিয়ে যাচ্ছেন কেন?

আলভীর গলা শুনে মিমের বুক এবার ধড়পড় করতে লাগলো আর মনে মনে বলল
হায় আল্লাহ্ যার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছি সে আমার সামনে।
কিরে ভাইয়া যে প্রশ্ন টা করলো তার উত্তর দে।
অর্ণি তুই এখানে কেন তাও আবার ওনাকে আনলি কেন?

আমি যাকেই নিয়ে আসি তোর বাপের কি বলদ কোথাকার।
অর্ণি। (কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
তোকে না বলেছি ফিরে যেতে! তুই আমার কথা শুনিস নি! এবার তোকে শাস্তি পেতে হবে। ইউ হেভ টু পে ফর ইট।

কি শাস্তি।
শাস্তি হলো এই যে তোর যে দরকারি কাজটা ছিল তা আর করা লাগবেনা। মানে তোকে যেতে হবেনা তোর কাজটাও এক্কেবারে নষ্ট হয়ে যাবে।
ঐ তো ট্রেন এসে গেছে আমি যাবো।
কথাটা বলতে না বলতেই ওর গালে আরেকটা থাপ্পর পড়লো তবে এটা অর্ণি নয় আলভী দিয়েছে। মিম গালে হাত দিয়ে আলভীর দিকে তাঁকাতেই ভয়ে আত্না শুকিয়ে যায়। লাল চোখ দুটি গিলে খাচ্ছে ওকে। অর্ণি আলভীর এমন রিয়েক্ট দেখে অবাক হয়ে গেল তারপর বলল
ভাইয়া আপনি।

হুম। একে তো দোষ করেছে তার উপর বেয়াদবী করছে এই মেয়ের জন্য সবাই কতো টেনশন করছে আর মেয়েটা এসবের মজা নিচ্ছে! তাছাড়া ওকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ট্রাফিক রুল পর্যন্ত ঠিক মতো না মেনে দ্রুত ড্রাইভ করে এসেছি। আর এখন বলছে ও যাবেনা! এই মেয়ে বেশি কথা বলেছো তো এবার আরেকটা পড়বে তোমার গালে।
অর্ণি। (কেঁদে দিয়ে)
কীসের অর্ণি হ্যাঁ! চলো এখন বেশি বাড়াবাড়ি করলে মেরে মাটিতে পুতে দিব।

আলভীর ভয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিমকে ওদের সাথে যেতে হলো। এদিকে গাড়ি থেকে নেমে অভ্র অর্ণিদের দেখে দ্রুত গতিতে সেখানে যায় তারপর অর্ণির হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে আলভীকে উদ্দেশ্য করে বলে
মিমকে নিয়ে আয়। আমাদের গাড়ি ফলো করবি যেখানে যাবো সেখানেই যাবি বুঝেছিস।
হুম ভাই বুঝেছি।

অভ্র অর্ণিকে নিয়ে চলে যায় আলভীও মিমের হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে বাঁকা হেসে বলে
যা করেছো ঠিক করোনাই। ঐদিনের কথা তুমি ভুললেও আমি ভুলি নাই বেবি। প্লে বয় আমি আর তুমি আমার সাথে টক্কর দিতে আসছো! জানো না প্লে বয়দের চক্করে পড়তে নেই! তুমি যেহেতু পড়ে গেছ আমারও কিছু করার নেই।
আপনি একটা অসভ্য।

সেটা শুধু তোমার কাছে বাকিদের কাছে তো আমি সভ্য ইনোসেন্ট বয়। (চোখ টিপ দিয়ে)
অভ্র ড্রাইভ করছে আর অর্ণিকে রাগী চোখে দেখছে। অর্ণি ভয়ে অভ্রর দিকে তাঁকাচ্ছেনা। অভ্র জোরে ব্রেক কষে অর্ণির দিকে তাঁকায় তারপর বলে
আমাকে ইগনোর করছো।
মানে?

আমার সাথে এমন করছো কেন অর্ণি! তুমি জানোনা যে আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি! তারপরেও কেন এমন করছো?
কি করেছি আমি সেটা তো বলবেন নাকি।
কাল রাত থেকে এই পর্যন্ত কয়বার ফোন দিয়েছি তোমার কোনো ধারণা আছে।
অর্ণি এবার নিজের ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নম্বর থেকে 67 বার কল এসেছিল। এবার অর্ণি দাঁত দিয়ে জিভ কাটে আসলে ও তো অভ্রর নম্বর সেভ করেনি। আর আননোন নম্বর থেকে কল আসলে ও সেটা রিসিভও করেনা। এবার করুণ দৃষ্টিতে অভ্রর দিকে তাঁকায়।

পর্ব ২০

একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে অভ্র অর্ণি আর মিম আলভী। একটা চার সিটের রাউন্ড টেবিলে বসে আছে। অর্ণি মিম পাশাপাশি আর অভ্র আলভী পাশাপাশি। তবে অভ্র অর্ণির মুখ বরাবর বসেছে আর আলভী মিমের। অভ্র সেই কখন থেকে অর্ণিকে রাগী চোখে দেখেই চলেছে কিন্তু মুখে কিছুই বলছেনা। আলভী এই ফাঁকে অনেক কিছু অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। কারণ সত্যি বলতে কারোরই আজকে খাওয়া দাওয়া হয়নি।

সন্ধ্যার সময় আবার হলুদ অনুষ্ঠান এখন যদি এরকম অনিয়ম চলে পরে দেখা যাবে বর বউ সব অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। মিমের মুখটাও শুকিয়ে গেছে। বেচারি যা একটু চিপস্ খাচ্ছিল অর্ণি এসে সেটাও কেড়ে নেয়। মিম মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে আর অর্ণি অভ্রর দিকে একবার তাকাচ্ছে আরেকবার টেবিলে থাকা খাবারের দিকে তাঁকাচ্ছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে এবার জোর গলায় বলল
অনেক হয়েছে আর পারছিনা এবার নাটক বন্ধু করুন। আমার পক্ষে এই মুহূর্তে নিজেকে ধরে রাখা সম্ভব নয়।

কথাটা বলতে দেরি অর্ণির বার্গারে কামড় দিতে দেরি হয়নি। গপাগপ করে খেয়েই চলেছে তা দেখে সবাই অবাক। এই থমথমে পরিবেশে সব ভুলে ও গপাগপ খাচ্ছে! ভাবা যায়! অর্ণিকে দেখে আলভীও আর বসে থাকলোনা তাড়াতাড়ি পাস্তাটা নিয়ে খেতে থাকলো। আলভীকে দেখে অভ্রও আর দেরি করলোনা তাড়াতাড়ি অর্ণির থেকে কেড়ে নিয়ে অর্ণির কামড়ানো বার্গারটা মুখে পুড়ে নিল। সবাইকে খেতে দেখে এবার মিমও পাশে থাকা স্যুপটা হাতে নিয়ে খেতে লাগলো। তারপর সবাই সমান তালে খেতে লাগলো কিছুক্ষণ পর ফিক করে সবাই একসাথে হেঁসে দিল।

খাওয়ার পর্ব শেষ করে সবাই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে গেল। তারপর অভ্র আলভীকে বলল চলে যেতে ও অর্ণি আর মিমকে ড্রপ করে দিবে। আলভীরও অফিসের একটা কাজ থাকায় চলে যায়। অভ্র গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে তারপর মিম পেছনের সিটে বসে মিমের সাথে অর্ণি বসতে গেলে অভ্র চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাঁকায় তাতে মিম হেসে ইশারায় অর্ণিকে বলে অভ্রর সাথে বসতে।

অর্ণি অভ্রর সাথে বসলে অভ্র একটা বক্স ওর হাতে দিয়ে বলে এটা রাখো। অর্ণিও কথা মতো বক্সটা নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। অভ্র গাড়িতে অর্ণির সাথে একটা কথাও বলেনি। তবে চুপও থাকেনি মিমের সাথে সেই রকম গল্প করলো। তাতে অর্ণি যে প্রচুর রেগে গেছে অভ্র বেশ বুঝতে পেরেছিল। এটা তো অর্ণিকে শাস্তি দিচ্ছে আরো দিবে এক্কেবারে ইগনোর করে ওকে মজা বুঝাবে। ইগনোর ব্যাপারটা যে কতোটা অসহ্যকর তা অর্ণিকে হারে হারে টের পেতে হবে।

গাড়ি এসে অর্ণিদের বাড়ির সামনে থামে। অর্ণি গাড়ি থেকে নামলে অভ্রও বের হয়ে আসে। অর্ণি তা দেখে খুশি হয়। তবে খুশিটা বেশিক্ষণ থাকেনা কারণ অভ্র নিজে গাড়ির ডোর খুলে ওর হাত ধরে নামিয়ে দেয়। তারপর ওকে মিষ্টি করে বায় বলে চলে যায়। মিম জানে অভ্র এমন করছে কেন তাই ও অভ্রর সাথে তাল মিলাতে থাকে।
অর্ণি আর মিমকে একসাথে দেখে সবাই খুব খুশি হয়। তবে মিমকে ওর আব্বু বকাঝকা করে তারপর অর্ণির আব্বু আর বড় মামা মিলে ওনাকে শান্ত করে। তিনিও বেশি কিছু বলেনি আজকের দিনটায় এমনেই অনেক ঝামেলা হয়েছে আর করার দরকার নেই।

নুপূর সেই কখন থেকে মিম আর অর্ণিকে বকে চলেছে। ওকে একা ফেলে নিজেরা এতো মজা করলো। ওকে নিলে কি এমন ক্ষতি হতো! অর্ণিকে বেশিই বকছে একদম সেই লেভেলের বকা দিচ্ছে। আসলে আমাদের বন্ধু ও সমবয়সীদের বকা গুলো আজকাল এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যা কোনো সুস্থ মানুষ শুনলে আর ঠিক থাকবেনা। নুপূরকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে চুপ করালো মিম।

সন্ধ্যায় পার্লার থেকে লোক এসে ওদের সাজিয়ে দিয়ে গেল। আজ প্রথম তাদের তিনজনের সাজ আলাদা হয়েছে। একজন একরকম সাজ দিল তবে সবাই আজ একটা গর্জিয়াস সাজ দিল। সবাই হলুদ এবং সাদার সংমিশ্রণের পোশাক পড়েছে। অর্ণি একটা স্কার্ট এবং তার উপর একটা কোটির মতো ড্রেস পড়েছে। মিম একটা গাউন আর নুপূর একটা লং থ্রি পিস পড়েছে। সব আগে থেকেই প্ল্যাণ ছিল কে কি রকম পড়বে।

অর্ণি আয়নায় বসে নিজেকে দেখছে আর স্মিথ হাসছে। আসলেও আজ নিজেকে অন্যরকম লাগছে। আর মনে মনে ভাবছে অভ্রর কাছে সুন্দর লাগবে তো! আচ্ছা অভ্র কি পড়েছে আমার মতো ম্যাচিং কালারই তো পড়েছে তাই না। অর্ণির অভ্রর কথা মনে হতেই অভ্রর দেওয়া বক্সটার কথাও মনে পড়লো। তাড়াতাড়ি ড্রয়ার থেকে বক্সটা বের করলো। তারপর খুলে দেখে কি সুন্দর একটা ডায়মন্ডের লকেট যার মধ্যে ইংরেজী বর্ণ মালায় সুন্দর করে লেখা অর্ণিভ্র।

কি সুন্দর লকেট মনে হয় অর্ণির মধ্যেই অভ্রর অস্তিত্ব। আর অভ্র নিজের অস্তিত্বটা অর্ণি মধ্যে যে আছে তা উপলদ্ধি করানোর জন্যই এতো সুন্দর করে লকেট টা বানালো। ইউনিক ডিজাইনে নিজের আর অভ্রর নামটা দেখে অনেক খুশি হলো। আর একমুহূর্ত দেরি না করে তাড়াতাড়ি লকেট টাকে নিজের গলায় স্থান দিল। লকেটের জন্য ওর সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেল কারণ এইটাতে যে অভ্রর ছোয়া আছে অভ্রর আভাস আছে। অর্ণকে ডাকতে এসে মিম নুপূর ওর এমন লাজুক মুখ দেখে হো হো করে হেসে দিল।

কিরে অর্ণি তুই আবার লজ্জাও পাস নাকি।
মানে কি! আমি কি লজ্জা পেতে পারিনা।
না পারিস। তবে তোকে লজ্জা পেতে তো দেখা যায়না।

বেশি হচ্ছে কিন্তু।
ওয়েট ওয়েট! এই অর্ণি তোর গলায় এটা কি চিকচিক করছে দেখি তো।
মিম আর নুপূর অর্ণির গলার লকেট টা দেখে ওয়াও আমেজিং বলে উঠল। অর্ণিকে ব্লাশিং করতে দেখে বলল
কে দিল? নিশ্চয় অভ্র ভাইয়া।
হুম।

বাহ্ চয়েজ আছে বলতে হয়।
ঠিক বলেছিস মিম। তবে একটা চয়েছ কিন্তু সুন্দর না।
কি?
বউটা।

একদম।
তবেরে দাড়া দেখাচ্ছি মজা।
এইভাবে খুনসুটিতে মেতে ওঠে তিনজন তারপর সবাই একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে। সবার চোখের কোণে পানি জমেছে। অর্ণির বিয়ে হয়ে গেলে ওদের থেকে অনেক দূরে চলে যাবে তাই।
কমিউনিটি সেন্টারে অভ্রদের গাড়ি এসে থামলো। আজ অভ্রকে খুব সুন্দর লাগছে। আলভীকেও খুব সুন্দর লাগছে। ওরা ভেতরে ঢুকতেই সিনান এসে জড়িয়ে ধরলো অভ্রকে।

কিরে ব্যাটা তুইও তো দেখি আমার মতো জমের দুয়ারে পা ফেলতে চলেছিস।
আরে আমি কি তোর মতো অপদার্থ নাকি! আমার বউকে আমি মোটেও ভয় পাই না, আমি ওকে ভালোবাসি। আর শোন আমার বউকে আমি জম বলবোনা ওকে আমি স্ট্রবেরী আইসক্রীম বলবো।
হা হা হা।

আচ্ছা এখনো আসেনি ওরা।
না পথেই আছে। কেনরে তর সইছে না নাকি।
তোর মাথা।

হুহ। এখন তো বলবি বিয়ে হোক হারে হারে টের পাবি ভাই। এই আলভী চল তো আমরা আমাদের কাজে যাই।
হুম চলো।
তোদের আবার কি কাজ।
আরে আমাদের কাজ তুই বুঝবিনা। সিনান ভাই চলো তো।

আলভী আর সিনান দোতালায় চলে গেল। যেখানে হলুদের এরেন্জমেন্ট করা হয়েছে। পাশে একটা বড় খোলা জায়গা যেখানে দাঁড়ালে নিচটা খুব সুন্দর করে দেখা যায়। আলভী সেখানে দাঁড়ালে দেখে একটা গাড়ি এসে থামে আর সেখান থেকে মিমরা নামছে।

মিমকে দেখে আলভীর চোখ সেখানেই স্থির হয়ে গেল। এখানে যে সিনান মই দিয়ে উপরে উঠেছে তা সরে গেছে আর বেচারা ঝুলে আছে। আলভীকে ডাকছে কিন্তু তার কোনো হুশ নেই। আলভীর হুশ ফেরে তখন যখন ময়দার বস্তা পড়ার মতো আওয়াজ হয়। পেছনে তাঁকিয়ে সিনানকে কোমরে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো।

লেখিকা – আফরীন

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “কি মায়ায় জড়ালে – Valobashar romantic golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – কি মায়ায় জড়ালে (শেষ খণ্ড) – Valobashar romantic golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *