অভীমানি ভালোবাসার গল্প

তোর আসক্ত – সিজন ১ । অভীমানি ভালোবাসার গল্প

তোর আসক্ত – অভীমানি ভালোবাসার গল্প: ভয়ে রুহির শরীর থেকে ঘাম ঝড়তে শুরু করেছে। একটা ঢোক গিয়ে দ্রুত সেখান থেকে নিজের রুমে চলে আসে। রুমে এসে বেলকনির দরজা টা লাগাতে যাবে তার আগেই কেউ দরজা টা হাত দিয়ে আটকে ধরে। মান অভীমান নিয়ে ভরা এই গল্পটি আপনাকে কিছুটা হলেও ভালোবাসার তিক্ত স্বাদ অনুভব করাবে।

পর্ব ১

রুহি ঘরে আসতেই অন্তর ঘরের দরজা টা ধুম করে লাগিয়ে দেয়।

রুহি একটা শুকনো ঢোক গিলে পিছিয়ে যেতে নিলেই অন্তর রুহির হাত টা চেঁপে ধরে। রুহি এবার আরও ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্তর রুহিকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

রুহিকে অবাক করে দিয়ে অন্তর নিজের ঠোঁট দিয়ে রুহির ঠোঁট জোড়া চেঁপে ধরে।

এবার তো বেচারি কেঁদেই দিলো। কখনো ভাবতেও পারেনি এমন একটা পরিস্থিতি তে পড়তে হবে।

অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও অন্তরকে একচুলও সরাতে পারেনি। প্রায় ২ মিনিট পর অন্তর নিজেই রুহিকে ছেড়ে দেয়।

রুহি এবার হাঁপাতে হাঁপাতে শেষ।

অন্তরঃ এবার বলো বিয়ে করবে আমায়?

এইসব কিছু যেনো রুহির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে!

কিছুই বুঝতে পারছে না সে।

অন্তরঃ কী হলো বলো… এখন নিশ্চয় আমার ক্যারেক্টার সম্পর্কে জেনে গেছো। যে ছেলে পাত্রী দেখতে এসেই তাকে গভীর চুমু দিতে পারে তার ক্যারেক্টার যে কতোটা ভালো হবে তুমি আন্দাজ করতে পারছো তো? (বাঁকা হেসে)

রুহিঃ ম মানে?

অন্তরঃ দেখো মিস…. কী যেনো নাম? যাইহোক, দেখো আমি তোমাকে ভালো করে বুঝিয়ে কিছু কথা বলছি আশা করি তুমি বুঝবে।

এইসব চুমুটুমু আমার প্রতিদিনের রুটিন বুঝছো! তুমি নিশ্চয় চাও না এমন কাউকে তোমার স্বামী বানাতে যার চরিত্র ঠিক নেই।

তাই তোমার ভালোর জন্যই বলছি এখনো সময় আছে সবাই কে সবটা বলে দাও ওকে। এতে তোমারি ভালো হবে।

রুহির মাথা টা কেমন ঝিমঝিম করছে। এইটুকু সময়ের ব্যবধানে এতো কিছু হয়ে গেলো কি করে?

কিছুক্ষন আগের ঘটনা…..

(রুহিকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। এতে রুহির কোনো অভিযোগ বা অমত কিছুই নেই। কারন রুহি কাউকে ভালোবাসে নি। সে মনে করে বিয়ের আগে প্রেম করাটা ঠিক না। এমনকি সে পছন্দ ও করে না এইসব। তার ইচ্ছে বিয়ের পর নিজের বরের সাথে জমিয়ে প্রেম করবে। সবে মাত্র ফাইনাল ইয়ার এ উঠেছে। যদিও বা রুহির এখন বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো না। লেখাপড়া শেষ করতে চেয়েছিলো।

কিন্তু তার বাবা তাকে বুঝিয়েছে ছেলের মা বাবা অনেক ভালো তারা বলেছে বিয়ের পরও রুহিকে পড়ালেখা করাবে। তাছাড়া ছেলেও দেখতে অনেক সুন্দর। রুহির বাবার অনেক পছন্দ হয়েছে ছেলের ফেমেলি। তাই রুহিও আর অমত করেনি।

ছেলেপক্ষের লোক আসলে রুহিকে উনাদের সামনে নিয়ে যায়। ছেলের বাবা মা আরও ২ জন বয়স্ক লোক রুহিকে দেখে অনেক পছন্দ করেছে।

রুহি একপলক ছেলের দিকে তাকায়।

বাবাহহ…. ছেলে তো পুরাই ক্রাশ। ব্লু কালার এর একটা শার্ট হাতা ফোল্ড করা, বুকের ২ টা বোতাম খুলা যার জন্য বুকের উপর পশম গুলো মন কেড়ে নেয়ার মতো!

গায়ের রং ও ফর্সা, চুল গুলো সিল্কি! আহা এই না হলে আমার বর… মনে মনে ভাবছে রুহি।

ছেলের পরিবারের লোকজন ছেলেকে জিগ্যেস করে মেয়ে পছন্দ হয়েছে কিনা। ছেলে কোনো উত্তর না দিয়ে বলে উঠে….

  • আমি কি উনার সাথে আলাদা ভাবে কিছু কথা বলতে পারি?

রুহির বাবাঃ হ্যা যাও বাবা। রুহি অন্তরকে নিয়ে যা তো।

রুহিঃ বাহ নাম বুঝি অন্তর! কিন্তু আমার সাথে আবার কি কথা বলবে? ইশশশ কি লজ্জা লাগছে যে!)

রুহি অন্তরকে নিয়ে নিজের রুমে যেতেই অন্তর দরজা বন্ধ করে দেয়।

অন্তরঃ হ্যালো মিস…. কোথায় হারিয়ে গেলা?

অন্তরের ডাকে রুহি বাস্তবে ফেরে। এতো খন ভাবনায় ডুবে ছিলো সে।

রুহিঃ আচ্ছা আপনি তখন বলেননি কেনো আপনি বিয়ে করবেন না?

অন্তরঃ আমি বলতেই পারতাম কিন্তু আমি চাইনা তোমার বাবা মা আমাকে নিয়ে নেগেটিভ কিছু ভাবুক। তাই আমার কাজটা তুমিই করবে।

রুহিঃ (হুহহ ঢং কতো! নিজের কাজ আমি করে দিবো! উনি বললে আমার বাবা মা উনাকে নিয়ে নেগেটিভ চিন্তা করবে। আর আমি বললে যেনো উনার বাবা মা আমাকে নিয়ে পজেটিভ চিন্তা করবে!… মনে মনে)

অন্তরঃ আরেহ তুমি বার বার কী ভাবনায় হারিয়ে যাও? এখন বলো আমাকে বিয়ে করবে?

রুহিঃ (কিছু একটা ভেবে) হ্যা করবো।

অন্তরঃ হোয়াট….? তুমি রাজি?

রুহিঃ হুম আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।

অন্তরঃ আর ইউ ক্রেজি?

রুহিঃ সেটা আপনার না জানলেও চলবে বুঝলেন। এবার চলুন সবাই কে গিয়ে জানাই।

রুহি চলে যেতে নিলেই অন্তর রুহির হাত টেনে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে….

অন্তরঃ ইউ স্টুপিড গার্ল… কথা কানে যায় না নাকি! বললাম না সবাই কে গিয়ে বলবা বিয়ে করবে না। তার পরও বলছো তুমি রাজি!

বিয়ে করার খুব শখ না? (দাঁতে দাঁত চেপে)

রুহি ভয়ে ভয়ে জবাব দেয়…

রুহিঃ হ্যা শখই বটে… আপনাকে বিয়ে করবো মানে করবোই। আপনি না চাইলেও আমি জোর করে করবো।

অন্তরঃ হোয়াট….? (কিছুটা চেচিয়ে)

রুহি অন্তরের ধমক শুনে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

অন্তরঃ ভালোই ভালোই বলছি তুমি সবাইকে গিয়ে বলবে তুমি রাজি নও।

রুহিঃ প পারবো ন না….

অন্তর কেনো পারবে না? তোমার ভালোর জন্যই বলছি বুঝছো আমার কাছে কোনো দিনও ভালো থাকতে পারবে না তুমি নেভার!

রুহি অন্তরের কথার জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে আসে।

অন্তরঃ ও পিছন পিছন আসে।

রুহি নিচে আসতেই রুহির বাবা মা রুহি আর অন্তর কে বসিয়ে দেয়।

অন্তরের বাবা – কী মা তুমি রাজি তো?

রুহিঃ (মাথা নিচু করে কিছু একটা ভেবে) হ্যা আংকেল আমি রাজি।

রুহির কথা শুনে সবাই খুশি হয় শুধু অন্তর ছাড়া। অন্তরের চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে। হাত দু’টি মুষ্টিবদ্ধ করে রেগে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে।

অন্তরের বাবা – তাহলে আমরা সামনের সামনের সপ্তাহে বিয়ের ডেট ফাইনাল করি। আপনারা কী বলেন?

রুহির বাবাঃ আমরাও রাজি। শুভকাজ যতো তারাতারি হয় ততোই ভালো।
সবার মতামতেই রুহি আর অন্তরের বিয়েটা সামনের সপ্তাহে ঠিক হয়ে যায়। রুহি অন্তরের দিকে তাকাতেই অন্তর রাগি চোখে রুহির দিকে তাকায়।
বেচারি ভয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।

অন্তরের পরিবার আর অন্তর সবাই বাড়ি ফিরে যায়।

রুহি নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে ভাবছে ছেলেটার এমন বিহেভ করার কারন টা কী?

মেয়ে দেখতে এসেই এমন অসভ্যতামি করলো আবার বলছে এই সব নাকি তার প্রতিদিনকার রুটিন!

সত্যিই কি এমন টা? নাকি আমাকে বিয়ে করতে চাইছে না বলে এমন কান্ড করলো! কিন্তু আমাকে বিয়ে না করার কারনটাই বা কী?

তার কি কোনো ভালোবাসার মানুষ আছে? থাকলে তো বলতে পারতো তাই না। বললেই তো হতো। আমি তো চাইনা কারো ভালোবাসা ভাঙতে। সুন্দর করে বললেই হতো আমি না করে দিতাম। চেয়েছিলাম বিয়ের পর নিজের বরের সাথে প্রেম করবো। তা আর হলো না!

ধুরর কেনো যে জেদ করে রাজি হতে গেলাম! (মনে মনে)

রাতে…

খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুহি নিজের রুমে চলে যায়।

ঘুম আসছিলো না বলে বেলকনিতে গিয়ে কফি খাচ্ছিলো। হটাৎ মনে হলো বেলকনিতে টপকে কেউ উপরে আসছে। রুহির রুমটা দোতলায় হওয়ায় গ্রিল বেয়ে আসাটা এতটাও কঠিন না। রুহি ভাবে হয়তো তার মনের ভুল।

রুহি ভালো করে তাকিয়ে দেখে না ঠিকই তো কেউ উপরে আসছে। মনে তো হচ্ছে আমার বেলকনিতেই আসছে। আমার দিকে দৃষ্টি স্থির করা।

ভয়ে রুহির শরীর থেকে ঘাম ঝড়তে শুরু করেছে। একটা ঢোক গিয়ে দ্রুত সেখান থেকে নিজের রুমে চলে আসে। রুমে এসে বেলকনির দরজা টা লাগাতে যাবে তার আগেই কেউ দরজা টা হাত দিয়ে আটকে ধরে।

রুহি অনেক চেষ্টা করেও লাগাতে পারছে না। কারন সেই ব্যাক্তিটা দরজা টা ধরে রেখেছে।

দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা কোনো ছেলে! রুহি ভয়ে চিৎকার করতে নিলেই লোকটা রুমের ভিতরে এসে রুহির মুখ চেঁপে ধরে।

রুহি নিজেকে লোকটার কাছ থেকে ছাড়াতে চাইছে কিন্তু পেরে উঠছে না। ঘরে আলো নেই। বেলকনির লাইট এর কিছুটা আলো ঘরে এসে পরছে। এইটুকু আলোতে লোকটার মুখ চিনতে রুহির বেশি দেরি হয়নি।

লোকটা আর কেউ না তারই হবু স্বামী অন্তর!

রুহি নিজেকে ছাড়াতে মুচরামুচরি করেই যাচ্ছে। আর বার বার ইশারা করে মুখ দেখাচ্ছে। যার অর্থ হলো অন্তর যেনো মুখটা ছেড়ে দেয়।

অন্তরঃ বুঝতে পেরে রুহির মুখটা ছেড়ে দিতেই সে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আর একটু হলেই যেনো দম টা বন্ধ হয়ে যেতো।

কিন্তু এতো রাতে উনি এখানে কেনো এলেন তাও চুপিচুপি আমার রুমে?

উনার কথার অবাধ্য হয়েছি বলে আমাকে মেরে ফেলতে আসেনি তো? ভাবতেই রুহির গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে!

রুহি অন্তরের কাছ থেকে বাঁচতে পালানোর চিন্তা করে।

যেই না সে দৌড় দিবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো অন্তর খপ করে ওর হাতটা ধরে ফেলে।

অন্তরঃ পালাচ্ছো কেনো?

রুহিঃ আ আপনি কেনো এ এসেছেন এখানে?

অন্তরঃ আমার হবু বউকে দেখতে আসলাম আরকি (বাঁকা হেসে)

রুহি অন্তরের কথা শুনে অবাক চোখে অন্তরের দিকে তাকায়….
রুহিঃ বউ….!

অন্তরঃ হ্যা। আমি তো বানাতে চাইছিলাম না তুমি নিজেই তো রাজি হলে। আর রাজি যখন হয়েছো শাস্তি ওত ভোগ করতে হবে, তাইনা।

কারন আমার কথার অবাধ্য হওয়া আমি পছন্দ করি না। তোমাকে বারন করা স্বত্তেও তুমি বিয়ে করতে লাফিয়ে রাজি হয়ে গেছো।

রুহিঃ আচ্ছা কী কারনে আমাকে বিয়ে করতে চান না বলবেন প্লিজ?

আমার দোষ টা কি? যদি বিয়ে করতে না চান তবে আপনার বাবা মাকে আসতে বললেন কেনো? উনাদের না করে দিলেই তো পারতেন, তাইনা।

অন্তরঃ আমার কাজের জবাব আমি তোমাকে দিবো না ইডিয়ট। তোমাকে আমি বারন করেছিলাম কিনা বলো? তুমি যেনে শুনে একটা ক্যারেক্টারলস ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছো! এর শাস্তি তো তোমাকে ভোগ করতেই হবে ডিয়ার!

তবে ভেবো না আমি তোমাকে মারবো না, অন্য রকম শাস্তি দিবো বুঝলে! যা কল্পনা ও করতে পারবে না।

তুমি শুধু সহ্য করে নিবার জন্য প্রস্তুত থেকো। (মুচকি হেসে)

রুহি অন্তরের মুচকি হাসির পিছনে রাগি ফেস টা চিনতে ভুল করেনি! কারন রুহি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অন্তর মারাত্মক রেগে আছে। রাগে অন্তরের মুখটা লাল হয়ে গেছে।

অন্তরের ফেস দেখেই রুহির গলা শুকিয়ে যায়।

রুহিঃ আ…আপনি কি ক কাউকে ভালোবাসেন?

রুহির প্রশ্ন শুনে মূহুর্তেই অন্তরের ফেস টা পালটে যায়। অন্তরের রাগ টা যেনো মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়।

চোখ বন্ধ করে হাত দুটি মুষ্টিবদ্ধ করে মাথা নিচু করে আছে অন্তর আর জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।

রুহি ভালো মতোই বুঝতে পারছে অন্তর হয়তো আজ তাকে মেরেই ফেলবে। কারন এতোখন অন্তর রেগে থাকলেও এখন তার রাগটা চুরান্ত পর্যায়ে চলে গেছে বোধহয়।

রুহি কয়েকটা ঢোক গিলে একটু পিছিয়ে যেতে নিলেই অন্তর রুহির হাতটা চেঁপে ধরে ফেলে।

রুহি কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্তর একটানে রুহিকে নিজের বুকে এনে ফেলে।

অন্তরঃ আমার পার্সোনাল লাইফে নাক গলানোটা আমি মোটেই পছন্দ করি না। ইভেন আমার নিজের মানুষও যদি কিছু বলে আমার রাগ কনট্রোল করতে পারিনা। আর তুমি কে? দুইদিনের পরিচয় মাত্র। তোমার সাথে তো এখনো আমার বিয়েটাও হয়নি তাতেই তুমি আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কথা বলছো! হাউ ডেয়ার ইউ?

রুহিঃ আ আমি তো শ শুধু…

অন্তরঃ জাস্ট সাট আপ ডেম এট…. আমি কাকে ভালোবাসি না বাসি এটা তোমাকে বলতে হবে নাকি? তুমি কে? ওহহহ আই সি! তুমি আমার হবু বউ তাই তো? এই জন্যই বুঝি আমার পার্সোনাল বিষয়ে কথা বলছো। (রুহির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে)

রুহিঃ আ আমার হাত টা ছ ছাড়ুন। লাগছে আমার।

অন্তরঃ রুহির হাতটা আরও শক্ত করে চেঁপে ধরে….

অন্তরঃ লাগুক তাতে আমার কী? বলেছিলাম না বিয়ে করতে রাজি হইও না তোমারই ক্ষতি হবে। শুনলে না কেনো আমার কথা? হোয়াই…. (চেচিয়ে)

রুহিঃ দেখুন আমার বাবা মা আপনাকে অনেক পছন্দ করেছে তাছাড়া উনারা চান আমি এই বিয়ে টা করি যদি আমি নিজেই না করে দিতাম তাহলে উনারা কষ্ট পেতেন আর হয়তো ভাবতেন আমার অন্য কোনো ভালোবাসার মানুষ আছে যার জন্য আমি বিয়েটা করতে চাইছি না। (কান্নাজড়িত কন্ঠে)

অন্তরঃ তো? তাই বলে তুমি নিজের ক্ষতি করে দিলে?

রুহিঃ কি ক্ষতি হয়েছে শুনি? আমার দোষ টা কী বলুন তো যার জন্য আপনি এমন করছেন?

অন্তরঃ তোমার কোনোই দোষ নেই। শুধু একটাই দোষ তুমি রাজি হয়েছো।

রুহিঃ ঠিক আছে। আমি আমার দোষ মেনেই নিলাম। তার জন্য যা শাস্তি ভোগ করতে হয় করবো।

অন্তরঃ ওহহ রিয়েলি! তুমি তো দেখছি খুবই সাহসী মেয়ে! কোনো ভয়ডর নেই দেখছি।

রুহিঃ আপনি বাঘ না ভাল্লুক যে আপনাকে ভয় পাবো।

অন্তরঃ গ্রেট! ভয় পাও না তো? ওয়েট… ভয় পাবা ইভেন আজকের পর আমার নাম শুনলেও তোমার ভয় করবে জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ….. বলেই অন্তর রুহিকে কোলে তুলে নেয়।

মূহুর্তেই রুহির ভিতরটা ভয়ে কেঁপে উঠে। কী করতে চাইছেন উনি?

এটা ঠিক উনি আমার হবু বর কিন্তু বিয়েটা তো এখনো হয়নি। কি করে বিশ্বাস করবো উনাকে? মেয়ে দেখতে এসেই যে ঠোঁটে চুমু খেতে পারে সে সবই পারবে! বিশ্বাস করা যায় না এই ছেলেকে। (মনে মনে)

অন্তরঃ রুহিকে নিয়ে খাটে ফেলে দেয় তারপর নিজেও দু’হাতে ভর দিয়ে রুহির উপর ঝুঁকে পড়ে….

অন্তরঃ ভয় পাও না, তাইনা? খুব সাহস দেখছি তোমার। তোমার সাহস আমি বের করে দিবো।

রুহিঃ প্লিজ সরে যান আপনি। আমার রুম থেকে বের হয়ে যান নয়তো আমি চিৎকার করে বাবা মাকে ডাকবো।

অন্তরঃ সিরিয়াসলি! ডাকো তাতে আমার কী?

রুহি অন্তরের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে অন্তরের দিকে তাকায়।

রুহিঃ আপনার না হয় লজ্জা শরম কিছুই নেই কিন্তু আমার তো আছে। আপনি এক্ষুনি এখান থেকে চলে যান।

অন্তরঃ যাবো তো। তার আগে তোমার মনে ভয় সৃষ্টি করতে হবে না?

রুহিঃ আপনি যাবেন নাকি আমি মা বাবাকে ডাকবো।

অন্তরঃ মুচকি হেসে নিজের নিজের সবটা ভার রুহির উপর ছেড়ে দেয়।

রুহি ভয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে। অন্তর তা দেখে আরও রেগে যায়…

অন্তরঃ এতো বড় বড় কথা বলছিলে আমাকে নাকি ভয় পাও না তাহলে এখন এতো ছুটাছুটি করছো কেনো?

রুহিঃ দেখুন দোহাই আপনার… আপনি এখান থেকে চলে যান। আমার অস্বস্তি হচ্ছে।

অন্তরঃ এখন থেকে তো সব কিছুই মেনে নিতে হবে তাইনা। আগেই বলেছিলাম না করে দাও। তা না, তুমি নিজের কথায় স্থির। এখন তো অস্বস্তি লাগছে বললেও শুনবো না ডিয়ার!

রুহিঃ ভালোই ভালোই বলছি আমার কাছ থেকে দূরে যান। নয়তো…

অন্তরঃ নয়তো কী? (রুহির হাত দু’টো বিছানার সাথে চেঁপে ধরে)

রুহিঃ আপনি কি মানুষ না? (কেঁদে দিয়ে)

অন্তরঃ আমি তো তোমার সাথে অমানুষের মতো আচরণ করতে চাইনি। তুমিই তো বাধ্য করলে। এবার সহ্য করো, বলেই রুহির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।


পর্ব – ২

রুহি অন্তরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু বার বারই ব্যার্থ হয়।

অন্তরঃ একটু দূরে সরে যেতেই রুহি এক ধাক্কায় অন্তরকে দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর বিছানা থেকে তারাতারি নেমে পড়ে।

রুহিঃ অনেক অসভ্যতামি দেখছি আর না। আপনি বের হবেন নাকি আমি মা কে ডাকবো?

রুহির ধাক্কা খেয়ে অন্তর বিছানায় পড়ে যায়। আর এখন শুয়ে শুয়ে কথা শুনে যাচ্ছে।

রুহিঃ কি হলো? কথা কানে যাচ্ছে না নাকি? বের হোন এক্ষুনি।

অন্তরঃ কিছু না বলে বিছানা থেকে নেমে দাড়ায়।

অন্তরঃ ওকে চলে যাচ্ছি। কিন্তু তুমি নিজেই যেহেতু নিজের বিপদ বাড়িয়েছো সো রেডি থেকো…. বলেই আবার বেলকনির কাছে যায়। রুহি দৌড়ে অন্তরের কাছে যায়।

রুহিঃ আপনি কি বেলকনি দিয়েই নামবেন?

অন্তর কেনো? (রাগী কন্ঠে)

রুহিঃ না মানে যদি পড়েটরে ব্যাথা পান তাই বলছিলাম আরকি।

অন্তরঃ আমাকে নিয়ে তোমার এতোটা না ভাবলেও চলবে বুঝছো… যত্তসব।

অন্তরঃ চলে গেলে রুহি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অন্তরকে রাস্থায় নামতে দেখে রুহি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রুমে চলে আসে।

বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষন অন্তরের কথা ভাবে রুহি। তারপর হটাৎ ঘুমের রাজ্য পাড়ি দেয়।

সকলে…

রুহি ঘুমঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৮ টা বাজে। তারাতারি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।

ব্রেকফাস্ট করার জন্য নিচে নামতেই দেখে সবাই খাবার টেবিলে বসা।

রুহিঃ মা আমকে ডাকলে না কেনো?

রুহির মাঃ ডাকলেই বুঝি তুমি শুনো? ৭ টা থেকে ডেকেই চলেছি বুঝেছো এতোখনে উঠার সময় হলো তোমার!

রুহিঃ হুহহ ঘুম ভাঙে না কি করবো বলো।

রুহির মাঃ হয়েছে এবার খেয়ে নাও। আর ভার্সিটির ড্রেস পড়ে আসলি যে? তুই কি আজ ভার্সিটি যাবি নাকি?

রুহিঃ হ্যা। কেনো এতো অবাক হওয়ার কী আছে মা?

রুহির মাঃ ওফফ বাবা! তোকে নিয়ে আর পারলাম না। সামনের সপ্তাহে বিয়ে কতো কাজ বাকি সে খেয়াল আছে তোর? তাছাড়া কেনাকাটা ওত করা হয়নি। তুই যদি এখন আমাদের সাথে না থাকিস তাহলে কিভাবে হবে শুনি? বিয়েটা তো তোরই নাকি?

রুহিঃ ওহো মা। তুমি তোমার পছন্দ মতো সব নিয়ে নিও। তোমার পছন্দের উপর আমার পুরো বিশ্বাস আছে। তোমার চয়েজ বেষ্ট!

রুহির মাঃ দেখ রুহি তোর কোনো বাহানা চলবে বা এখন বুঝছিস? আমি বললাম তুই এ কদিন কোথাও যাবি না মানে যাবি না ব্যাস।

রুহিঃ ওহহ বাবা মাকে একটু বুঝাও না প্লিজ। দেখো এমনিতেও তো অনেক দিন ভার্সিটি বন্ধ পড়বে এখন যদি না যাই তো আমার বেষ্টি গুলোর সাথে দেখা হবে না। তার থেকে ভালো আজ দেখা করে আসি সবার সাথে।

রুহির বাবাঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাও তবে তারাতারি ফেরার চেষ্টা করো কেমন।

রুহিঃ ওকে বাবা।

রুহির মাঃ এই তো দিলে! তারাতারি ফেরার মেয়ে ও? আড্ডা দিয়ে দেখো আজ রাত না করে ফেলে!

রুহিঃ না মা। আজ কোনো গল্প করবো না কারো সাথে আড্ডা ও দিবো না প্রমিস। তারা তারিই চলে আসবো বাসায়।

রুহির মাঃ দেখা যাবে।

রুহি খাবার শেষ ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পরে।

ভার্সিটিতে আসতেই দেখে ওর সব বন্ধবী রা একসাথে বসে কথা বলছে। রুহি ও ওদের সাথে যোগ দেয়।

রুহিঃ হ্যালো গাইস….

টিয়া – কিরে আজ এতো তারাতারি?

রুহিঃ তারাতারি কোথায় রে? আজ তো আরও আগে আসতে চেয়েছিলাম তবে ঘুম থেকে উঠতে পারি নি তাই আসাও হলো না।

হিয়াঃ ওহহ বাবা অনেক উন্নতি হচ্ছে দেখি। তা এতো তারাতারি আসার কারন টা কী জানতে পারি?

রুহিঃ কিসের কারন? তোদের সাথে আড্ডা দিতেই আসতে চাইছিলাম তারাতারি। অন্য কোনো কারন নেই।

হিয়াঃ বললেই হলো? কারন আছে বলেই তো আসতি। কই এতো দিনে তো একবার ও তারাতারি আসিস নি। ক্লাস শুরু হয়ে গেলে তার পর তোর দেখা মিলতো।

এই…. কারো প্রেমে টেমে পড়িস নি তো?

রুহিঃ কিহহহ? তোরা কি পাগল? সব কিছু জেনেও এমন কথা বলছিস? জানিস না আমি এই সব পছন্দ করিনা।

হিয়াঃ ওকে বাবা বাদ দিলাম এইসব। কাল এলি না যে?

পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “অভীমানি ভালোবাসার গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

রুহিঃ সেটাই তো তোদের বলতে এলাম। কিন্তু তোরা তো শুনছিস ই না।

টিয়া – হ্যা বল।

রুহি কালকের সব কিছু ওদের কে বলে। শুধু অন্তরের ব্যাপারে কিছু বলে নি।

হিয়াঃ কিহহহহ! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না! বাবাহহহ আমাদের রুহির বিয়ে ভাবা যায়!

টিয়া – দোস্ত কি একটা খবর দিলি রে! তোর বিয়েতে ফাটিয়ে মজা করবো!

রুহিঃ আচ্ছা বাবা সে সব না হয় হবে। এখন ক্লাসে চল।

তারপর সবাই উঠে ক্লাসের দিকে পা বাড়ায়।

রুহি ক্লাসে ঢুকতেই সোহন (রুহির ক্লাসমেট) রুহিকে টিজ করা শুরু করে….

রুহিঃ ওফফ এই অসভ্য ছেলেটার জ্বালায় আর বাঁচি না। প্রতিটা দিন যা নয় তা বলেই যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঘুষি মেরে নাকটা ফাটিয়ে দিই। বিরক্তিকর!

সোহন – হ্যালো ডার্লিং…. কাল আসো নি কেনো? জানো তোমায় কতোটা মিস করেছিলাম?

সোহন কথা গুলো আস্তে আস্তে বললেও অনেকে শুনতে পায়ে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে। এতে রুহি বেশ অস্বস্তি ভোগ করছে।

হিয়াঃ সোহন তোমকে আর কতো বার বলবো এটা ক্লাস ভদ্র ভাবে কথা বলো। তুমি এই রকম বিহেভ করো কেনো রুহির সাথে?

সোহন – তাতে তোমার সমস্যা টা কী শুনি? আর তুমি চুপ করে থাকো ওকে কারন আমি তোমকে কিছুই বলছি না যা বলার রুহিকে বলছি।

টিয়া – আহ হিয়া ছাড়না। ও যে একটা ফাজিল সবাই জানে। শুধু শুধু ওর সাথে ঝগড়া বাড়িয়ে লাভ নেই চল।

সোহন একের পর এক রুহিকে এই সেই বলেই যাচ্ছে। আর রুহি চুপচাপ বসে আছে। কারন সে জানে সোহন কে কেউ কিছুই বলতে পারে না। এই ভার্সিটির সবাই সোহন কে ভয় পায়। কেউ ওর খারাপ কাজে প্রতিবাদ করতে আসলেও তার অবস্থা খারাপ করে ফেলে। রুহিও এই ভয়ে সোহনের বাজে কথা গুলো হজম করছে।
ক্লাসে টিচার আসলে রুহি আর সোহনের কথায় পাত্তা দেয় না। ক্লাসেই মন দেয়।

এদিকে….

অন্তরঃ বাসায় আসার পর থেকেই রেগে আছে। কিন্তু তার বাবা নাকে বুঝতে দিচ্ছে না। নিজের রুমে এসে দরজা আটকে বসে আছে।

অন্তরঃ ইচ্ছে করছে ঐ ফাজিল মেয়েটাকে গলাটিপে মেরে ফেলি। আমার কথার অবাধ্য হওয়া তাই না! ও তো জানেনা অন্তর চৌধুরী কি জিনিস!

কিছুক্ষন নিজে নিজে কথা বলার পর অন্তর গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে। অফিসের কিছু কজ বাকি আছে সেগুলো করেই বাড়ি ফিরবে ঠিক করেছে।

রুহির ভার্সিটি ছুটি হওয়ার পর বাড়ি ফিরতে নিলেই হিয়া বলে…

হিয়াঃ কিরে চলে যাচ্ছিস?

রুহিঃ হ্যা। মা বললো তারাতারি ফিরতে।

হিয়াঃ আরে একটু তো বসে যা। এমনিতেও তো কয়েক দিন আসতেই পারবি না।

রুহিঃ এখন বসলে মার কাছে বকা খাবো সিরিয়াসলি। কারন তোরা তো জানিস আমি আড্ডা দেয়া শুরু করলে আর থামার নামও নিই না।

টিয়া – আচ্ছা বাবা যা। আর শোন রাস্তায় যদি ঐ সোহন অসভ্য টা বিরক্ত করে তো আজ গিয়েই আংকেল কে সব বলবি বুঝেছিস?

রুহিঃ হ্যা বলতে তো হবেই। ও যা বার বেড়েছে না!

হিয়াঃ হুম যা তুই আর আমাদের কে ভুলে যাস না জেনো!

রুহিঃ নারে তোদের ভুলবো ক্যামনে… তোরা আমায় এতো এতো জ্বালাইছিস এতো সহজে কি ভুলতে পারি বল!

হিয়া আর টিয়া দুজনই হেসে দেয়। রুহি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।

এদিকে ছুটির পরই সোহন রুহিকে পুরো ভার্সিটি খুঁজছে কোথাও পাচ্ছে না।
সোহন ওর কয়েক টা বন্ধু কে নিয়ে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে রুহির বাড়ির দিকে যেতে শুরু করে….

রুহি অনেক খন যাবৎ রিকশার জন্য দাড়িয়ে থেকেও কোনো রিকশা পায় নি। অবশেষে হেঁটেই যাওয়া ধরে।

কিছুদূর যেতেই কেউ এসে রুহির হাত চেঁপে ধরে। রুহি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। অন্তর এখনেও চলে আসে নি তো? ভাবতে ভাবতেই রুহি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে সোহন!

রুহিঃ তুমি! আমার হাত ধরলে কেনো?

হাউ ডেয়ার ইউ!

সোহন – তোমার হাত ধরতে কি আমার পারমিশন লাগবে নাকি সাহস লাগবে?

রুহিঃ দুইটাই লাগবে। আমি অন্য মেয়েদের মতো তোমার অসভ্যতামি মেনে নিবো না বুঝলে?

সোহন – ওহহহ বাবা বলে কী? অসভ্যতামি কই করলাম? আমি তো তোমার কাছে শুধু একটা কথাই জনতে চাইছি। তুমি বলে দাও তাহলেই আমি শান্তি ব্যাস।
রুহিঃ ক কী কথা?

সোহন – ঐ যে আই লাভ ইউ এর উত্তর টা তো এখনো পাইনি!

রুহিঃ দেখো সোহন তোমার সাথে কথা বলার আমার কোনো ইচ্ছেই নেই। আমার হাতটা ছাড়ো বলছি।

সোহন – ছাড়বো না। কী করবে তুমি?

রুহি নিরুপায় হয়ে হাত টা ছাড়াতে চেষ্টা করেই যাচ্ছে।

হটাৎ ওদের সামনে একটা গাড়ি এসে ব্রেক কষে।

সোহন আর তার সাথের বন্ধুরা কিছুটা রেগে যায়। কারন আজ পর্যন্ত ওদের কাজে কেউ বাধা দিতে পারেনি। আর আজ কেউ ওদের কাজে ডিস্টার্ব করলো!

সোহন রেগে গাড়ির দিকে তাকায়। গাড়ি থেকে একজন সুদর্শন পুরুষ কে নামতে দেখে, হোয়াইট কালার শার্ট তার উপর আবার হোয়াইট কালার এর ব্লেজার, ব্ল্যাক জিন্স, হাতে দামী ঘড়ি, চোখে সানগ্লাস, চুল গুলো একটু বড় বড়, চোখে মুখে এসে পড়ছে, চাপ দাড়ি, গায়ের রং ও ফর্সা। দেখতেই বুঝা যাচ্ছে সোহন এর থেকে বয়সে কিছুটা বড় হবে। তাছাড়া দেখতেও সোহনের থেকে অনেক সুন্দর। যাকে বলে রাজপুত্র!

সোহন – আরে ভাই কে আপনি? এভাবে হুট করে এসে কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন কেনো বলুন তো? (বিরক্ত হয়ে)

এবার রুহি ও ছেলের দিকে তাকায়। একপলক ছেলেটা কে দেখতেই রুহি যেনো নিজের প্রাণ ফিরে পায়।

অন্তর! উনি এখানে! ব্যাস আমার আর চিন্তা নেই। উনি নিশ্চয় এই অসভ্য সোহন এর কাছ থেকে আমাকে রক্ষা করবে। অন্তর কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুহি বলে উঠে…..

রুহিঃ উনি আমার বফ…!

রুহির কথা শুনে অন্তর বেশ অবাক হয়। তার চেয়েও বেশি অবাক হয় সোহন। কারন সে ভালো মতোই জানতো রুহি এই সব রিলেশন করা পছন্দ করে না। তাহলে আজ? ও কেনো এই ছেলেকে নিজের বফ বলছে? তাহলে এই জন্যই কি সে সোহন কে এড়িয়ে চলে? এই সব ভাবতেই সোহনের প্রচন্ড রাগ হয়। রেগে গিয়ে অন্তর কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্তর রুহির হাত ধরে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। এবার সোহন আরও অবাক হয়ে যায়!

তার মানে সত্যিই রুহি অন্য কারো সাথে রিলেশন করছে!

অন্তরঃ তোর সাথে পরে দেখা করছি। (সোহন কে উদ্দেশ্য করে) বলেই গাড়ি নিয়ে চলে যায়।

তিয়াস (সোহনের বন্ধু) – দোস্ত এটা কী হলো? ঐ রুহির যে বয়ফ্রেন্ড আছে আমরা তো জানতামই না। ধুররর শুধু শুধু এইটার পিছন পড়ে থেকে সময় নষ্ট করছিস!

সোহন – বয়ফ্রেন্ড থাকুক আর বর থাকুক ওকে তো আমার চাই ই চাই। যেভাবেই হোক ওকে আমার করেই ছাড়বো!

অন্তর রুহিকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও অপর সীটে বসে পড়ে। অন্তর রেগে রুহির দিকে তাকায়…

অন্তরঃ বয়ফ্রেন্ড আছে ভালো কথা। প্রেম করবা তাও ভালো কথা। তাই বলে এই রাস্তায় এতো লোকজনের সামনে এভাবে হাত ধরে….!

অন্তরের কথা শুনে রুহি যেনো জমিনে পড়ে। অন্তর ভালো করেই বুঝতে পেরেছে সোহন ওকে টিজ করছিলো। তার পরও বলছে বয়ফ্রেন্ড!

রুহি বিরক্তিমাখা মুখ করে বলে…

রুহিঃ দেখুন আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড নেই। ঐ সোহন আমাকে ডিস্টার্ব করে আজও তাই করছিলো। আপনার কি মনে হয় ওর সাথে প্রেম করছিলাম।

অন্তরঃ করছিলে না বুঝি?

রুহিঃ ওফফ… আপনার সাথে কথা বলা টাই ভুল। আমি বাড়ি যাবো , বলেই গাড়ি থেকে বের হতে নেয়।

তার আগেই অন্তর রুহির কোমড় চেঁপে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

অন্তরঃ আমি তোমার হবু বর। ভুলে গেলে নাকি?

রুহিঃ ভুলার কি আছে আজিব।

অন্তরঃ তাহলে আমি যা বলবো তাই করবে। গাড়ি থেকে বের হচ্ছিলে কেনো? আমি বলেছি বের হতে?

অন্তরের ধমক শুনে রুহি কিছুটা ভয় পায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে…

রুহিঃ ভয় পাবো কেনো?

অন্তরঃ ওহহহ তুমি তো আবার ভয় পাও না। সাহসী মেয়ে!

রুহিঃ আমি বাড়ি যাবো।

অন্তরঃ তো তোমার কি মনে হই বিয়ের আগেই তোমকে শশুড়বাড়ি নিয়ে যাবো? ইডিয়ট!

রুহি রেগে বাহিরের দিকে মুখ করে বসে থাকে অন্তর রুহিকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।

রুহি গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে চলে যায়। অন্তর ও পিছন পিছন যায়। সিঁড়ি বেয়ে উঠার আগেই অন্তর রুহির হাত টেনে নিজের কাছে আনে।
রুহিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রুহির গলার তিলটায় জোরে চুমু খায় অন্তর।


পর্ব – ৩

সিঁড়ি বেয়ে উঠতে নিলে অন্তর রুহির হাত টেনে নিজের কাছে আনে।
রুহিকে কিছু বলতে না দিয়েই তার গলায় জোরে চুমু খায়।

অন্তরের এমন কাজে রুহি প্রচন্ড রেগে যায়। চোখ গরম করে অন্তরের দিকে তাকিয়ে চর দিতে হাত তুলতেই অন্তর রুহির হাতটা ধরে মোচড় দিয়ে পিঠের সাথে লাগিয়ে নেয়।

অন্তরঃ সাহস তো কম না তোমার! আমার গায়ে হাত তুলতে চাইছিলে? ইচ্ছে করলে হাতটা এখনি ভেঙে দিতে পারতাম বুঝছো।

রুহিঃ সাহসের কী দেখলেন! কী ভেবেছেন কি আপনি? যা ইচ্ছা তাই করবেন? মানলাম আপনি আমার হবু বর কিন্তু বিয়েটা এখনো হয়নি। তাই আমার শরীরে টাচ করার কোনো অধিকার ও নেই আপনার।

অন্তরঃ বললাম না এই সব আমার ডেইলি রুটিন। কোনো অধিকার লাগে না। এখনো বিয়ে হয়নি তুমি চাইলে বিয়েটা ভেঙে দিয়ে মুক্ত হয়ে যেতে পারো। আই প্রমিস…. যদি বিয়েটা ভেঙে দাও তবে তোমার ছায়াও দেখবো না আর।

রুহি এক ঝটকায় অন্তরের কাছ থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে নেয়।

রুহিঃ আমাকে কি খেলার পুতুল পেয়েছেন নাকি? বিয়ে করার ইচ্ছে নেই যখন আসছিলেন কেনো শুনি? আমি কি আপনাকে আপনার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে এসেছি?

অন্তরঃ তা অবশ্য করো নি। কিন্তু আমি তো প্রথম দিনই তোমাকে বলেছিলাম তুমি সবাই কে গিয়ে না করে আসো। আমার ক্যারেক্টার ভালো না। এই সব মানসিকতা খারাপ। আমার সাথে কখনো ভালো থাকতে পারবে না তুমি। তাই বলছি এখনো সময় আছে সবাই কে বলো তুমি এ বিয়েটা করতে পারছো না।

রুহিঃ আমি পারবো না। আর এখন তো না ই।

অন্তরঃ দেখো অন্য একটা ছেলের সাথে যদি তোমার বিয়ে টা ঠিক হতো সে কি বিয়ের আগেই তোমাকে স্পর্শ করতো? না, কোনো ছেলেই করতো না। আর আমাকে দেখো আমি তোমার সাথে প্রতিনিয়ত অসভ্যতামি করেই চলেছি তোমার কি উচিত না আমাকে ইগনোর করা?

রুহিঃ সত্যিই কি আপনার চরিত্র খারাপ? নাকি আমি যেনো বিয়েতে রাজি না হই এই জন্য আপনি আমার সাথে এমন করছেন?

রুহির কথা শুনে অন্তর অন্য দিকে মুখ ঘুরে দাড়িয়ে যায়।

রুহি বুঝতে পারছে অন্তর কিছু একটা লুকাচ্ছে।

রুহিঃ কী হলো? উত্তর দিন। ইচ্ছে করে আমার সাথে অসভ্যতামি করছেন, তাই না। আমাকে বিরক্ত ফিল করাচ্ছেন। আপনার সম্পর্কে খারাপ ধারনা জন্মাচ্ছেন। কেনো বলুন তো?

অন্তরঃ জাস্ট সাট আপ ওকে। আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি। আমার ক্যারেক্টার খারাপ ব্যাস। তুমি সবাইকে বলে দাও তুমি রাজি না। এতে তোমারই ভালো হবে।
নয়তো তোমার কপালে দুঃখ আছে।

রুহি অন্তরের কথায় হালকা হাসে।

রুহিঃ আল্লাহ যদি দুঃখ দিয়ে থাকেন তাহলে থাকবে।

অন্তরঃ তার মানে তুমি না করবে না তাই তো?

রুহিঃ পারবো না। আপনি বাড়ি যান।

অন্তরঃ তোমার মতো ইডিয়ট মেয়ে আর দু’টা হয়না বুঝলে। নিজের ইচ্ছায় নিজের কষ্ট ডেকে আনছো, বলেই হনহন করে চলে যায়।

রুহি কিছুক্ষন অন্তরের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে চলে যায়।

রুহির মাঃ এইযে মহারানির আসার সময় হলো।

রুহিঃ কেনো মা?

রুহির মাঃ কেনো আবার? শপিং করতে হবে না? নাকি এমনি এমনি বিয়ে করবি, কিছু কিনতে হবে না।

রুহিঃ মা তুমি যা করার করো। আমার ভালো লাগছে না। আমি রুমে গেলাম।
রুহির বাবাঃ আচ্ছা যাও ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নাও।

আর বিকেলে রেডি থেকো কেমন?

রুহিঃ কোথায় যাবো বিকেলে?

রুহির বাবাঃ শপিং এ।

রুহিঃ ও আচ্ছা।

রুহির বাবাঃ হ্যা এখন রুমে গিয়ে বিশ্রাম করো।

রুহি কিছু না বলে রুমে চলে আসে। দরজা টা বন্ধ করে খাটে বসে পড়ে।

রুহিঃ কী করবো আমি, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। উনি এমন কেনো? উনি যা বলছে তাই কী সত্যি নাকি আমি যা ভাবছি, তাই?

উনি সত্যিই চান বিয়েটা ভেঙে দিই। কিন্তু মা বাবা যে কষ্ট পাবে অনেক!

কিছুক্ষন বসে থেকে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় রুহি।

এদিকে…

রুহিকে ওর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে অন্তর নিজের বাসায় চলে আসে। অফিসের কিছু কাজ বাকি ছিলো তা আর করা হলো না।

অন্তরের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। এই মেয়ে কি মানুষ নাকি আর কিছু।

এতো কিছু করার পরও বিয়ে বিয়ে করেই যাচ্ছে।

আর কী করলে ও বিয়েটা ভাঙবে? কী করবো আর!

যে করেই হোক বিয়ে তো আমি করবোই না আর সেটাও ঐ মেয়েই ভাঙতে বাধ্য হবে। আমি চাই না ভাইয়ার মতো আমার জীবনেও কোনো ঝড় আসুক। কিছুতেই এ বিয়ে করতে পারবো না আমি।

অন্তরঃ নিজের রুমে বিছানায় আধশোয়া হয়ে ভাবছে কী করা যায়? কীভাবে বিয়েটা ভাঙবে? হাজারো চিন্তা অন্তরের মাথায়।

আজ অন্তর আর রুহির বিয়ে। ৬ দিন পার হয়ে গেলো অন্তর আর রুহির সামনে আসেনি। রুহি অন্তরের কথা বার বার মনে করলেও এই ভেবে শান্তি পেয়েছে যে অন্তর হয়তো শুধরে গেছে। অন্তর হয়তো নিজের ভুল টা বুঝতে পেরেছে।

এই ৬ দিনে অবশ্য রুহি বাড়ির বাহিরে যায়নি৷ কিন্তু তাও আগের মতো অন্তর আর তার বেলকনি টপকে ও আসেনি। রুহি এর জন্যই খুবই খুশি হয়। অন্তর হয়তো সত্যিই সব অসভ্যতামি ছেড়ে দিয়েছে।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অন্তর। সারা রাত অবশ্য ঘুমাতেও পারে নি ভালো করে। তার মনে শুধু একটাই ভয়! যার জন্য আজও সে কোনো মেয়ের আসক্ত হয়নি। আর হতেও চেয়েছিলো না। কিন্তু তার বাবা মা!

তারা তো কিছুতেই বুঝলো না তার কষ্ট টা।

অন্তরঃ হাতে কফি নিয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

আজ কেনো জানি ভাইয়ার কথা মনে পড়ছে। বার বার শুধু ভাইয়ার সাথে ঘটা প্রতিটা মূহুর্ত চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

হটাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে অন্তর। পেছন ফিরে তাকাতেই নিজের মা কে দেখতে পায়।

তার চোখেও স্পষ্ট পানি দেখা যাচ্ছে যা অন্তরের চোখ এড়াতে পারে নি।

অন্তরঃ মা… কাঁদছো কেনো?

অন্তরের মা – এমনি কিছুনা। এখানে দাড়িয়ে আছিস যে। ফ্রেশ হবি না?

অন্তরঃ মা বিয়েটা ভেঙে দিতে পারবে না? তোমরা চাইলে তো সবই হবে।

অন্তরের মা – কোনো মা কি চাইবে তার সন্তান সারাটা জীবন একটা ভুল ধারনা নিয়ে একা কষ্টে কাটাক?

জানিস… পৃথিবীতে সবাই খারাপ না। কিছু কিছু ভালো মানুষ ও আছে যাদের জন্য আমরা জীবনের আনন্দ খুজে পাই, সব কষ্ট ভুলে যেতে পারি।

আল্লাহর উপর ভরসা রাখ দেখবি তিনিই সব ঠিক করে দিবেন।

অন্তরের মার কথা শুনে মাথা নিচু করে আছে। উত্তরে কিছুই বলে নি সে।

চোখ বেঁয়ে দু’ফোটা পানি ঝড়ে। ছেলেরা সহজে কাঁদে না! কিন্তু অন্তরের কাছে তা সম্পূর্ণ বিপরীত। কতো রাত যে সে নিরবে একা একা চোখের পানি ঝড়িয়েছে সে নিজেও জানেনা।

অন্তরের মা অন্তরের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে…

অন্তরের মা – অন্তর…. যা ফ্রেন হয়ে নে। আবার রেডি হতে হবে তো নাকি।

অন্তরঃ এবার ও কোনো উত্তর দেয়নি চুপটি করে উল্টো দিকে ঘুরে আবার আগের মতোই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

হয়তো মার কাছ থেকে নিজের চোখের অশ্রু গুলো লুকাতে চাইছে!

রুহিকে তার রুমে সাজানো হচ্ছে। পার্লারে যেতে বলা হলেও সে রাজি হয়নি। তাই বাড়িতেই আনা হয়েছে।

রুহির মা রুহির গহনা গুলো দিতে এসে অবাক হয়ে যায়! হা করে তাকিয়ে আছে তার মেয়ের দিকে।

অচমকাই মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে…. মাশআল্লাহ!

রুহি কিছুটা লজ্জা পায় তার মায়ের কথায়। পার্লারের মেয়েরাও হাসে। একজন তো বলেই বসে…

  • আন্টি এখনি যদি মাশআল্লাহ বলেন তাহলে পড়ে কী বলবেন শুনি। কারন এখনো তো আমাদের সাজানো শেষ হয়নি।

মিলি (রুহির কাজিন): হুহহ লাগবেই তো। এক বস্তা আটা ময়দা মাখলে এমতিতেই রুপবান হয়ে যাবে বুঝছো মামি! (হেসে)

রুহির মাঃ দেখ মিলি, আজও যদি তুই আমার মেয়েটার পিছনে লাগিস না তোর খবর আছে। পরে দেখবি তোকেও বিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করবো। আমার রুহি এমনিতেই সুন্দরী! না সাজলেও পরীর মতো লাগে আমার মেয়েকে বুঝলে! (হেসে দিয়ে)

মিলিঃ না গো না। আমি বিয়ে টিয়ে করতে চাইনা। আমাদের রুহি সত্যিই রুপবতী। (রুহির কাঁধে হাত রেখে)

রুহিঃ আহহ মিলি থাম না।

মিলিঃ ও মাহ লজ্জা পাচ্ছে দেখো!

রুহির মাঃ আমি গেলাম তোরা থাক। আর গহনা গুলো রেখে গেলাম। যাদি কোনো কিছুর দরকার হয় আমাকে ডাকবি। মিলি তুই থাকিস এখানে। কিছু লাগলে আমায় বলবি বুঝলি?

মিলিঃ ওকে মামি তুমি নিশ্চিন্তে কাজ করো।

রুহির মা চলে যায়। পার্লারের মেয়ে রা আবার রুহিকে সাজাতে ব্যাস্ত হয়ে পরে।

কিছুক্ষণ পরই নিচে হৈচৈ শুনে মিলি বলে।

নিশ্চয় আমাদের জিজু চলে এসেছে বলেই দৌড়ে নিচে নেমে আসে। এতো খনে রুহির সাজানো ও কমপ্লিট হয়ে গেছে।

রুহি চুপটি করে বসে আছে। কপালে তার চিন্তার ভাজ! না জানি কেমন মোড় নিতে চলেছে তার জীবন!

রুহি বসে বসে হাজারো চিন্তা ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর এসে কয়েক জন রুহিকে নিয়ে যায়। অন্তরের পাশাপাশি বসাতেই রুহি আড়চোখে অন্তর কে দেখে।

মুগ্ধ হওয়ার মতো লাগছে অন্তর কে!

অন্তরঃ রুহির দিকে তাকাতেই রুহি চোখ ফিরিয়ে নেয়।

রুহি আর অন্তরের সাথে সবাই ফটো তুলছে। অন্তর ভেতরে ভেতরে বিরক্ত হলেও মুখে তা প্রকাশ করতে পারছে না। চুপচাপ সবার সাথে হেসে ফটো তুলছে।

কিছুক্ষণ পর অন্তর খেয়াল করলো রুহির সাথে কয়েকজন ছেলে খুব হাসিখুশি মুখ নিয়ে ফটো তুলছে, ছেলে বললে ভুল হবে সাথে ২ টা মেয়ে ও আছে। রুহিরও ওদের সাথে বেশ ভাব অন্তর দেখেই বুঝতে পারছে।

অন্তরঃ ওদের কে দেখে তাছিল্যের হাসি দিয়ে বলে…

অন্তরঃ সব মেয়েই একি রকম হয়। আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না তোমার মাঝে কি এমন দেখলো আমার বাবা মা যার জন্যে বিয়েটা আমাকে করতেই হলো! আমার বাবা মাকে ভুল বুঝাতে পারলেও আমাকে তো তুমি ভুল বুঝাতে পারবে না। বিয়ে টা হচ্ছে হোক, কিছুদিন গেলে তুমি নিজেই বাধ্য হবে আমাকে ছেড়ে দিতে দেখে নিও… (মনে মনে)

ছেলে মেয়ে গুলো অন্তরের কাছেও আসে ফটো তুলতে। রুহিকে অন্তরের সাথে দাড় করিয়ে অনেক গুলো ফটো তুলে নেয়। অন্তরের অনিচ্ছা স্বত্তেও ওদের সাথে মিলে।

বিয়ে প্রায় শেষের দিকে। অন্তরকে কবুল বলতে বলা হলে অন্তর চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে যেনো তার কানে কথা পৌঁছে না। কয়েক বার বলার পরও অন্তর চুপ…

কেউ কেউ অন্তরের এমন কান্ড দেখে বলছে… ” ছেলের কি বিয়েতে মত নেই নাকি? নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করলে তো এতো সময় নিতো না। নিশ্চয় বাবা মা জোর করে বিয়ে করাচ্ছে! “

পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “অভীমানি ভালোবাসার গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

আবার কেউ কেউ বলছে….. ” আজকাল ছেলেরাও মেয়েদের মতো লজ্জা পায় কবুল বলতে! “

সবার সমালোচনা বন্ধ করতে অন্তর কবুল বলে দেয়।

তারপর রুহিও বলে। সুন্দর পরিবেশেই অন্তর রুহির বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়।

বিদায়ের সময়… বেচারি রুহির তো বেহাল অবস্থা! কেঁদে কেঁদে কি অবস্থাটাই না করছে। বার বার এসে মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। অনেক কষ্টে রুহিকে নিয়ে গাড়িতে বসায়। কিন্তু তখন ও সেন্সলেস হয়ে যায়।

অন্তরঃ দের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামে। মস্ত বড় বাড়িটা সাজানোতে যেনো সুন্দর্য টা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।

রুহি এখনো সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। অন্তরের অনেক বিরক্তি লাগছে। এই অবস্থায় তো ওকে গাড়িতে ফেলে রেখে নিজে চলে যেতে পারে না। বাড়ি ভর্তি মেহমান।

অন্তরঃ গাড়িতে থাকা পানির বোতল টা হাতে নিয়ে রুহির চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। রুহি একটু চোখ মেলে তাকাতেই অন্তর বলে….

অন্তরঃ এক্টিং অনেক হয়েছে। আর না। তুমি কি বাড়িতে যাবে নাকি আমি একাই চলে যাবো?

রুহি অন্তরের কথা শুনে একটু দুঃখ পায়। লোকটার মুখ দিয়ে কি সুন্দর করে কথা বের হয় না?

রুহি ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নেমে আসে। অন্তর রুহির জন্য না দাড়িয়ে আগে আগে হাটা ধরে আর রুহি অন্তরের পিছনে।

বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই রুহি অবাক! পুরোটা বাড়ি এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বলে বুঝানো মুশকিল!

গাড়ি থেকে নামার সময় বাহির টা অবশ্য একটু দেখা হয়েছিলো। এইটুকু দেখাতেই রুহি বেশ বুঝতে পেরেছে বাড়িটা অনেক সুন্দর ডেকোরেশান করা হয়েছে।

ঘন্টা খানেক পর রুহিকে কয়েক জন মিলে একটা রুমে নিয়ে যায়। রুমটাতে পা রাখতেই ফুলের গন্ধ নাকে এসে পড়েছে। এটাই হয়তো অন্তরের রুম! (মনে মনে)

রুহিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে সবাই চলে যায়।

রুহি একবার ঘুমটা টা তুলে ঘরটাতে চোখ বুলিয়ে নেয়।

এদিকে অন্তর অনেকক্ষন ধরে ছাদে একা একা বসে আছে। হাতে তার জলন্ত সিগারেট।

কারো আসার শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে তার মা এসেছে।

অন্তরের মা – তুই এখন এখানে কী করছিস অন্তর?

অন্তরঃ কিছুনা মা ভালো লাগছিলো না তাই বসে আছি।

অন্তরের মা – রুহি ঘরে একা আছে।

অন্তরঃ রুহি টা আবার কে? (অবাক হয়ে)

অন্তরের মা – কেমন মানুষ তুই! বিয়ে করে নিলি অথচ মেয়ের নামটা ও জানিস না?

অন্তরঃ ওহহ ঐ মেয়েটা।

অন্তরের মা – এসব কী ধরনের কথা অন্তর? ঐ মেয়েটা মানে কী? ও তোর বউ এখন।

অন্তরঃ মা তুমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো যাও।

অন্তরের মাঃ আগে তুই রুমে যা।

অন্তরঃ যাবো। তুমি যাও।

অন্তরের মাঃ এখন যাবি। চল আমার সাথে।

  • অন্তরের মা অন্তর হাত ধরে টেনে নিচে নামায়।

একপ্রকার জোর করেই অন্তরকে তার রুমে পাঠিয়ে দেয়।

অন্তরঃ রুমে ঢুকেই দেখে রুহি খাটে বসে আছে। লম্বা ঘোমটা দেয়া।

রুমে কারো আসার শব্দ পেয়ে রুহি একটু নড়েচড়ে বসে। ভয়ে যেনো তার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। নিশ্বাস টাও যেনো ঘন হয়ে আসছে।


পর্ব – ৪

রুমে কারো আসার শব্দ পেয়ে রুহি একটু নড়েচড়ে বসে। ভয়ে যেনো তার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। নিশ্বাস টাও যেনো ঘন হয়ে আসছে।

অনেকখন পরও কারো কোনো সারা না পেয়ে রুহি মাথাটা একটু উঁচু করে দেখে অন্তর সোফায় বসে আছে। চেহারায় তার স্পট রাগের ছাপ। রুহি অনেক ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে অন্তরকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্তর ঝড়ের গতিতে রুহির কাছে এসে তার হাত টা পিঠের সাথে মোচড়ে ধরে।

রুহি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে।

অন্তরঃ তোর দেখছি রংয়ের শেষ ছিলো না। আমার ভেতরে আগুন ধরিয়ে তুই ঐ ছেলে গুলোর সাথে সেলফি তুলছিলি?

রুহিঃ বিয়ের দিন সবাইতো চায় বর বউ দের সাথো ছবি তুলতে। তাতে ক্ষতি কী?

  • বলার সাথে সাথেই অন্তর রুহির গাল টা খুব জোরে চেঁপে ধরে।

অন্তরঃ ক্ষতি কী তাইনা? তোকে কত বার বারন করেছিলাম বিয়েটা করিস না।

আমাকে মুক্তি দিলে তোরই ভালো হতো বুঝছিস। এবার যে তোকে সারা টা জীবন কষ্টে কাটাতে হবে। তার জন্য শুধুমাত্র তুই দায় বুঝেছিস।

রুহি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সে মনে করেছিলো অন্তর হয়তো শুধরে গেছে। এই ছয় দিনে একবারও রুহির সাথে খারাপ ব্যাবহার করেনি। এমনকি দেখাও করেনি।

কিন্তু আজ অন্তর ঠিকই নিজের আসল রুপটা দেখিয়ে দিয়েছে। রুহির চোখে মূহুর্তেই পানি চলে এলো।

অন্তরঃ রুহির গাল টা ছেড়ে দিয়ে তার পাশে ধুপ করে বসে পড়ে। রাগে যেনো অন্তর সারা শরীর কাঁপছে। অগ্নদৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকাতেই রুহি চোখ নামিয়ে নেয়।

অন্তরঃ রুহির ঘোমটা টা একটানে খুলে ফেলে এগিয়ে যেতেই রুহি পিছিয়ে যায়। ভয়ে যেনো তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

অন্তরঃ রেগে রুহিকে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর নিজের সমস্ত রাগ রুহির ঠোঁটে ঝাড়ছে। রুহি প্রানপনে চেষ্টা করছে অন্তর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে কিন্তু পারছে না। অন্তর তাকে আরও চেঁপে ধরে ঠোঁট কামড়ে ধরে।

এবার রুহি ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে অন্তরকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি দিতেই থাকে। কিন্তু তাতে অন্তর বিন্দু মাত্র পরিবর্তন নেই। সে আগের মতোই রুহির ঠোঁটে কামড় দিয়ে যাচ্ছে। রুহিও একসময় ক্লান্ত হয়ে ছোটাছুটি করা বন্ধ করে দেয়।

বেশ সময় পর অন্তর রুহিকে ছেড়ে দিয়ে খাট থেকে নেমে যায়। রুহির ঠোঁট থেকে রক্ত বের হচ্ছে তা সে ভালো করেই বুঝতে পারছে। রুহি নিজের ঠোঁটে চেঁপে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে তাতে অন্তর বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।

অন্তরঃ ন্যাকা কান্না বন্ধ করে খাট থেকে নেমে আয়।

রুহিঃ ম মানে?

অন্তরঃ তুই কী ভেবেছিস তোকে আমার সাথে বিছানায় শুতে দিবো?
রুহি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অন্তর দিকে। একটা মানুষ এতোটা নির্দয় কিকরে হতে পারে!

রুহিঃ তাহলে আমি কোথায় শুবো?

অন্তরঃ জাহান্নামে যা তাতে আমার কী? কিন্তু আমার বিছানায় শুতে পারবি না এটাই চাই।

রুহির চোখ দুটো আবারও ভিজে আসছে। অন্তর এতোটা কষ্ট দিবে ভাবতে পারেনি। এখনো পর্যন্ত তার ভুল টা কী সেটাই জানতে পারলো না!

অন্তরঃ রুহির হাত ধরে টানতে টানতে বেলকনিতে নিয়ে যায়।

হাতে করে একটা চাদর আরেক টা বালিশ নিয়ে যায়। বেলকনিতে রুহিকে দাড় করিয়ে চাদর আর বালিশটা ছুড়ে মারে রুহির দিকে। তারপর বেলকনির দরজা টা লাগিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।

রুহি বেলকনিতে বসে পড়ে। চোখের পানি জেনো বাঁধ মানছে না আজ!
আয়ন বেলকনির দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে সোজা ছাদে চলে যায়। ইচ্ছে করছে সব কিছুই আবার আগের মতো করে দিতে। হ্যা সেটাই করবে। সব কিছুই আবার আগের মতোই ঠিক করে দিবে।

প্রায় অনেক রাত পর্যন্ত অন্তর ছাদে থাকে। তারপর রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। বেলকনিতে যে তার বিয়ে করা বউ আছে সে খেয়াল নেই।

আর রুহি পুরোটা সময় কাটিয়েছে ভয়ে ভয়ে। বেলকনিতে একা থাকা তো দূরের কথা কোনো দিন কল্পনা ও করেনি এমন কিছু তার সাথে ঘটবে! আজ এই সময়টা হয়তো অন্তর সাথে বেলকনিতে বসে কাটানোর কথা ছিলো! দু’জন একসাথে বসে রাতের আকাশ উপভোগ করতো সাথে কফি হলেও মন্দ লাগতো না! কিন্তু কি ভাগ্য তার!

ভোরে আজানের শব্দে রুহির ঘুম ভাঙে। ভাঙলেও উঠে বের হওয়ার মতো ক্ষমতা তার নেই। কারন বেলকনির দরজা টা ভেতর থেকে লাগানো। আর অন্তর হয়তো এখনো ঘুমাচ্ছে তাই দরজা খুলে নি।

রুহি অনেকখন বসে থাকে বেলকনিতে। কয়টা বাজে তাও বুঝতে পারছে না। হাতের ফোন টাও রুমে। হটাৎ দরজায় কারো নক করার শব্দ পায়। মনে হয় কেউ তাদের ডাকছে। কিন্তু যে এসেছে সে তো আর জানেনা রুহি ঘরে নেই। থাকলে হয়তো কবেই বাহিরে যেতো। অনেক খন ডাকার হটাৎ বেলকনির দরজা টা খুলে অন্তর।

রুহি অন্তর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঘুমঘুম অবস্থায় অন্তরকে কী মায়াবী লাগছে!

অন্তরঃ রুহির দিকে একবারের জন্য ও তাকায় নি। সে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করে না।

অন্তরঃ তুমি উঠে রুমে যাও। কেউ এসেছে বোধহয় তোমাকে এখানে দেখলে সন্দেহ করবে। আমি চাইনা আমাদের মধ্যকার কিছু অন্য কেউ জানতে পারুক।
রুহি উঠতেই অন্তর চট করে বালিশ টা আর চাদর টা হাতে নিয়ে নেয়। যা দেখে রুহি মুচকি হাসে।

রুহিঃ কান্ড দেখো উনার! অন্যদের ভয়ও করে আবার আমাকেও কষ্ট দিবে হুহহহ। রুহি রুমে এসে দরজা খুলে দিতেই দেখে অন্তরের মা।

রুহিঃ মা আসুন।

অন্তরের মাঃ না মা আসবো না তুমি উঠলে কিনা দেখতে আসলাম অনেক বেলা হয়েছে নিচে আসো না তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমার যা ছেলে!

রুহি অন্তরের মার কথা শুনে সাথে সাথেই ঘড়ির দিকে তাকায়। সত্যিই তো অনেক বেলা হয়ে গেলো!

রুহিঃ মা আমি এখনি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসছি।

অন্তরের মা হটাৎ খেয়াল করে রুহির ঠোঁট কেটে ফুলে আছে কিছুটা রক্ত ও দেখা যাচ্ছে।

অন্তরের মাঃ একি তোমার ঠোঁটে কি হলো? (চিন্তিত হয়ে)

অন্তরের মার কথা শুনে রুহি একটু ভয় পেয়ে যায় সাথে লজ্জা ও। কি বলবে উনাকে?

রুহি একবার অন্তর দিকে তাকিয়ে দেখে সে দিব্যি ফোন টিপছে এমন ভান করে আছে যেনো তার মায়ের কথা গুলো তার কানে পৌঁছায় নি।

রুহিঃ মা আসলে আমি কাল রাতে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম। আপনি একদম চিন্তা করবেন না। বেশি লাগে নি।

অন্তরের মাঃ চিন্তা করবেন না বললেই বুঝি চিন্তা হবেনা? ( তুমি লুকালেও আমি ভালো মতোই বুঝতে পেরেছি তুমি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাওনি নিশ্চয় অন্তর কাল তোমাকে মেরেছে)

রুহিঃ মা বললাম তো বেশি একটা লাগেনি। ঠিক হয়ে যাবে দেখবেন।

অন্তরের মাঃ আচ্ছা নিচে আসো ফ্রেশ হয়ে। অন্তর তুই ও আয়।

অন্তরের মা চলে গেলে রুহি একটা নীল রংয়ের জামদানি শাড়ি বের করে। ওর নীল রং টা খুবই প্রিয়। বেশির ভাগ কাপড়ই নীল।

অন্তর ফোন টিপেই যাচ্ছে। তারপর ল্যাপটপ টা হাতে নিয়ে কিছু কাজ করে নেয়। আজ অফিসে যেতে পারবে না কারন তার মার করা বারন! এক সপ্তাহ নাকি বাসায় থাকতে হবে আর রুহিকে নিয়ে ঘুরতে হবে।

যেই মেয়েকে সহ্যই করতে পারে না তাকে নিয়ে কিনা ঘুরতে যাবে! আজ না গেলেও কাল পরশু ঠিকই সে চলে যাবে। তাই আজকের কাজ টা না হয় ল্যাপটপে সেরে নিবে। অনেক খন যাবৎ অন্তর কাজ করে যাচ্ছে।

তারপর রুহি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে।

টাওয়েল দিয়ে লম্বা কালো চুল গুলোর পানি নিচ্ছে।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে আয়নায় অন্তরকে দেখে। হটাৎ তার মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি আসে। টাওয়েল টা ঘাড়ে রেখে চুল গুলো হাতে নিয়ে অন্তর সামনে গিয়ে অন্তর মুখের সামনে নাড়তেই ল্যাপটপ সহ অন্তর মুখেও পানি পড়ে।

অন্তরঃ মারাত্মক রেগে একটা আছাড় মেয়ে ল্যাপটপ টা পাশে রাখে। অন্তর রাগ দেখে রুহি কয়েকটা ঢোক গিলে। কেনো যে মজা করতে গেলো এখন তো মনে হচ্ছে এই লোকটা তাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। ভয়ে রুহির দম যায় যায় অবস্থা!

অন্তরঃ চোখ গরম করে রুহির দিকে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে যায়। একে তো মনে হচ্ছে কোনো রাজ্যের পরী! এতো সুন্দর ও মানুষ হয়? অন্তর জেনো চোখ সরছে না। তার উপর আবার ভেজা চুলের পানি গুলো ফোটা ফোটা পড়ছে।

অন্তরঃ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে। রুহি ভয় পেলেও এখন অন্তর তাকানো দেখে বেচারি লজ্জা ও পাচ্ছে। রুহি লজ্জামাখা মুখ নিয়ে অন্তর সামনে থেকে চলে যায়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ায়।

অন্তরঃ এখনো রুহির দিকে তাকিয়েই আছে। হটাৎ মনে হলো কোনো এক সুন্দরী মেয়ের জন্য তার ভাইকে হারাতে হলো! সব মেয়েরাই এক!

মূহুর্তেই রাগে অন্তর চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।

অন্তরঃ উঠে রুহির কাছে যেতেই রুহি আরও লজ্জা পেয়ে যায়। আয়নায় দিকে তাকাতেই পেছনে অন্তর রাগি লুক টা দেখে লজ্জা যেনো হাওয়া হয়ে গেলো! এবার ভয়ে মনে হচ্ছে বেচারি কেঁদেই দিবে।

রুহিঃ ক কি হয়ে…

কিছু বলার আগেই অন্তর রুহির ঘাড় থেকে টাওয়েল টা নিয়ে গলায় পেচিয়ে ধরে। রুহির চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেছে।

রুহিঃ ক কি করছেন?

অন্তরঃ রুহির গলায় আরও পেচিয়ে ধরে টাওয়েল টা এতে রুহির দম বন্ধ হয়ে আসছে।

অন্তরঃ আমার কাজে জ্বালাতন করার সাহস তোকে কে দিয়েছে শুনি? আমার কাজে বিরক্ত করিস? বউ হতে চাস আমার? তোর বউ হওয়া বের করবো। নিজে যখন যাবি না তোকে একেবারে মেরেই আমি মুক্ত হবো। (দাঁতে দাঁত চেঁপে)

রুহি বার বার অন্তর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে কিন্তু পারছে না এদিকে তার দমও বন্ধ হয়ে আসছে।

কিছু সময় পর অন্তর নিজেই রুহিকে ছেড়ে দেয়। রেগে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে।

রুহি গলায় হাত দিয়ে কাশতে থাকে। অন্তরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় রুহি।

চলবে

তোর আসক্ত
লেখিকাঃ শিফা আফরিন মিম

আরো পড়ুনঃ তোর আসক্ত – সিজন ২ । অভীমানি ভালোবাসা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *