ভালোবাসার কষ্টের গল্প

ভালোবাসার কষ্টের গল্প – টিউশন স্যারকে ভালবাসা শেষ পর্ব

ভালোবাসার কষ্টের গল্প – টিউশন স্যারকে ভালবাসা শেষ পর্ব: গত ২য় পর্বে আমরা দেখেছি মিলা কিভাবে স্যারের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে। দুচোখে দেখতে না পারা স্যারকে একবার দেখার জন্য কিরকম ছটপট করে। এই পর্বে তাহলে দেখা যাক এই সম্পর্ক কোথায় গড়িয়ে যায়?

বাবার সাথে মিলা

মিলাঃ যদি তোমার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে হয় তাহলে সেটা হবে আমার লাশের সাথে। আমি একজনকে ভালোবাসি আর বিয়ে করলে তাকেই করবো।

বাবাঃ ‘কি বললি তুই? সাহস তো কম না।’ এই বলে মিলার গালে চর বসিয়ে দেয় তার বাবা। মেয়ের এতটা অধঃপতন মানতে পারছেন না তিনি।

মিলাঃ হুম মারো, আরো মারো তবুও আমি বিয়ে করবো না। দরকার হলে সুইসাইড করবো।

মিলার বাবা রাগ সহ্য করতে না পেরে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মিলা রুমে এসে বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগল। এভাবে কিছুক্ষণ কাঁদার পর, মিলা অনুভব করলো তার মাথায় কেউ হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

মিলা ঘাড়টা ফিরিয়ে দেখে, তার মা।
মিলাঃ মা তুমি?
মাঃ হ্যাঁ মা, আমি। তুই কাঁদছিস কেন মা?
মিলাঃ কই না, কাঁদছি না তো। (চোখ মুছতে মুছতে বলল)
মাঃ পাগলী মেয়ে আমার চোখ মুছার কি আছে। আমি তোর মুখ দেখেই বুঝতে পারি। আচ্ছা মা তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?

মিলা তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

মাঃ কি হলো কাঁদছিস কেন, মা?
মিলাঃ মা’ আমি স্যারকে ভালোবাসি। স্যারকে ছাড়া বাঁচবো না।
মাঃ কি বলছিস এসব! তোর বাবা জানলে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে তোকে। আচ্ছা, রাহাত কি তোকে ভালোবাসে? আর রাহাতের পরিবার সম্পর্কে জানিস কিছু তুই?
মিলাঃ না মা, রাহাত আমায় ভালোবাসে না। ও বলে এটা নাকি আমার আবেগ।
মাঃ জানিস মা, একতরফা কোন ভালোবাসা হয় না। আর সেদিন তোর শাড়ি পরা দেখেই বুঝতে পারছিলাম। তবে কি জানিস মা, মেয়েদের ভালোবাসার কোন দাম নেই। তুই তোর বাবার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করে নে। তুই তোর বাবাকে তো চিনিস। উঁনি যা বলে তা করেই ছাড়ে। আর শোন তোর বাবাকে তা কষ্ট দিস না। মিলার মা চোখের জল গোপন করে কথাগুলো বলল।

মিলার পাগলামি

মিলা কিছু বলে না। পরের দিন মিলা স্কুলে না গিয়ে সরাসরি রাহাতের বাসায় চলে যায়। মিলা দু’বার দরজা নক করতেই রাহাত দরজা খুলে দেয়। রাহাত দরজা খুলেই মিলাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে-

রাহাতঃ তুমি কেন আসছো?
মিলাঃ রাহাতকে ঠেলে রুমে ঢুকে রাহাতের হাতটা খপ করে ধরে ফেলে।
রাহাতঃ কি হচ্ছে এসব মিলা?
মিলাঃ রাহাতের কথা শুনে মিলা বলে ওঠে ‘ভালোবাসা হচ্ছে।’ স্যার ভণিতা করার সময় নেই এখন। আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে এখন বাবা। আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না। প্লিজ আপনি আমাকে বিয়ে করেন।
রাহাতঃ আশ্চর্য পাগল হয়ে গেছো তুমি?
মিলাঃ হ্যাঁ সত্যিই, পাগল হয়ে গেছি। আপনি পাগল করেছেন। আমি কিছু জানি না। আমি জানি, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন। যদি বিয়ে না করেন তাহলে এই যে দেখছেন ব্লেড সাথে করে নিয়ে এসেছি। এটা গলায় চালিয়ে দিবো। ভয় পাবেন না আপনার গলায় নয় আমার গলায় চালিয়ে দিবো।

রাহাতঃ ভালোবাসো তাই না? আমার জন্য জীবন দিবে। জানো মিলা, ভালোবাসা হাত কাটাকে বুঝায় না। ভালোবাসা তাকে বুঝায় যখন কোন ভাই তার বোনের জন্য অশ্রু ঝরায় চোখ থেকে। যখন একটা ভাই তার বোনকে বাঁচাতে নিজের সুখ-সম্পদ সবকিছু জলাঞ্জলি দেয় তাকে বলে ভালোবাসা। ভালোবাসা থাকে মায়ের আচল তলে। বাবা তার সন্তানের জন্য শরীরের রক্ত পানি করে ঘাম ঝরিয়ে যে বাজার থেকে তেল ও নুনের প্যাকেট কিনে নিয়ে আসে। সেগুলোর মাঝে থাকে ভালোবাসা।

ভালোবাসা হচ্ছে তো সেটা সারাদিন রিক্সা চালিয়ে দু’বেলা খেয়ে ঘরের বউয়ের জন্য শাড়ি কিনে নিয়ে আসে। সে স্বামীর কেনা শাড়ির প্রতিটা ভাঁজে ভাঁজে থাকে ভালোবাসা। বৃষ্টিতে-ভিজে রোদে পুড়ে যে কৃষক মাটে যে কৃষক ধান ফলায় সে ধানের শীষে ভালোবাসা উঁকি দেয়। আর ছাত্র-শিক্ষকের ভালোবাসা তো অনেকটা মা বাবার মতোই। একজন বাবা-মা যেমন তার সন্তানের সুন্দর ভবিষতের জন্য দোআ করে তেমনি প্রায় প্রতিটা শিক্ষকই তার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দো’আ করে। আর তুমি যে ভালোবাসার কথা বলছো এটা সম্পূর্ণ হারাম। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো মিলা। আর মনে রেখো। আমি মরিচীকা আমার পিছনে ছুটো না। ভালোবাসা সবার জন্য না।

রাহাতের ভালবাসার কান্না

কারো জন্য দু’মুঠো খাবারই হলো ভালোবাসা। আর শুনো আমি তোমাকে বিয়ে তো দূরের কথা ভালোবাসতেও পারবো না। আর সবসময় মনে রাখবে পৃথিবীর সব ভালোবাসরই যে পূর্ণতা পেতে হবে তা নয়। ত্যাগের মাঝেও শান্তি পাওয়া যায়। যা ভোগের মাঝেও নেই। শুনেছি তোমার বিয়ে টিক হয়ে গেছে। তাই তোমার প্রতি আমার অনুরোধ সত্যিই যদি আমাকে মন থেকে ভালোবাসো তাহলে তোমার বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে নাও। কারণ কোন বাবা-মা’ই ছেলে -মেয়ের খারাপটা চাই না। তাদের মনে কষ্ট দিয়ো না। পরিশেষে বলতে চাই যে ছেলেকে বিয়ে করছ, তার সামনে তুমি যাবে, নতুন এক মিলা হয়ে। সে যেন এক মুহূর্তের জন্যও না বুঝতে পারে তোমার মাঝে আমার বসবাস ছিল।

রাহাতের কথাগুলো শুনে কথা কিছু বলতে পারছে না। চোখ দিয়ে শ্রাবশের ঝরনা ধারা প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে রাহাতের ফোনটা বেজে ওঠল। রাহাত ফোন ধরতেই, ওপাশ থেকে হসপিটালে যেতে বলল। তার বোনের অবস্থা ভালো না। রাহাত হসপিটালে রওয়ানা দিলে, সাথে মিলাও রওয়ানা দেয়।

রাহাত হসপিটালে গিয়ে দেখে রিত্তের মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। ডাক্তার রাহাতকে দেখেই বলল-

ডাক্তারঃ টাকা ম্যানেজ করেছেন? কাল পরশুর মাঝে অপারেশন করা না গেলে আমাদের কন্টোলের বাহিরে চলে যাবে।
রাহাতঃ স্যার আমার বোনকে বাঁচান। দরকার হলে আমার কিডনি নিয়ে নিন। আমার জীবনের বদলে রিত্তকে বাঁচান। ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।

রাহাতের কান্না দেখে ডাক্তার বলল-

ডাক্তারঃ মিঃরাহাত আমি হাসপাতাল কতৃপক্ষকে অনুরোধ করে খরচ কিছুটা কমিয়ে দিতে পারব। কিন্তু তবুও তো হসপিটালে বাকি টাকাটা জমা দিতে হবে।

মিলার ত্যাগ

রাহাতের পাগলামো দেখে মিলার কষ্টটা আরো বাড়তে লাগে। সে আর হসপিটালে থাকতে পারে না। তাড়াহুড়া করে বাসায় এসে দেখে, মিলার বাবা রুমে বসে আছে।

মিলা তার বাবার কাছে গিয়েই বলল-

মিলাঃ তোমার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করব। তবে শর্ত আছে।
বাবাঃ কি শর্ত বল?
মিলাঃ শর্তটা হচ্ছে আজকেই আমার চার লাখ টাকা লাগবে।
বাবাঃ এতটাকা দিয়ে কি করবি?
মিলাঃ তুমি দিবে কি না বলো?
বাবাঃ হুম দিবো, তবে আমারো একটা শর্ত আছ।
মিলাঃ কি শর্ত? তোমার যেকোন শর্তে আমি রাহাতি।
বাবাঃ তাহলে সামনে যে শুক্রবার আসছে, সে শুক্রবারে তোর আর রফিকের বিয়ে।

মিলা বাবার মুখের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিলার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।

বাবাঃ কি হলো বল, সামনে শুক্রবারে রফিককে বিয়ে করবি?
মিলাঃ হ্যাঁ করবো। এখন টাকা দাও।
বাবাঃ আচ্ছা দাঁড়া টাকা আনছি।

মিলার বাবা আলমারি থেকে চারলক্ষ টাকা এনে মিলার হাতে ধরিয়ে দিল।

মিলা টাকাগুলোর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আজ এই টাকার কাছে ভালোবাসা পরাজিত। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মিলা তার বাবার হাত থেকে টাকাগুলো নিয়ে সোজা হসপিটালে চলে যায়। ডাক্তারের হাতে টাকাগুলো দিয়ে বলে পরশু ছোট্ট বাচ্চাটার অপারেশন করবেন। তবে কাউকে জানাবেন না।

ডাক্তার খানিকটা অবাক হয়েই বলে ‘মা তুমি এতোগুলো টাকা দিচ্ছো?’ আর তাকে জানাবো না কেন?

আঙ্কেল, আমি রাহাতকে ভালোবাসি। আর নিজের ভালোবাসাকে কুরবানি দিলাম রাহাতের মুখের হাসির জন্য। আপনার কাছে অনুরোধ, কখনো কোনদিন রাহাতকে বলবেন না। যদি বলে ‘টাকা ছাড়া অপারেশন কেন করছেন?’

তখন বলবেন, তুমি যখন জব করবে তখন কিস্তির মাধ্যমে আস্তে আস্তে পরিশোধ করে দিয়ো।

ডাক্তার কিছু বলল না। নিরবে একফোঁটা চোখের জল ফেলে দিল। আজও ভালোবাসা জিতে গেল।

মিলা ও রাহাতের ভালবাসার কান্না

এদিকে ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে মিলা দেখে রাহাত রিত্তে মাথার হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছে। মিলা তার ভালোবাসার মানুষটাকে খুব যত্নসহকারে দেখছে। আর হয়তো দেখা হবে না মানুষটার সাথে।

রাহাতঃ মিলা তুমি হসপিটালে কেন?
মিলাঃ কিছু না বলে রাহাতের সামনে এসে দাঁড়ায়।
রাহাতঃ কি হলো মিলা বলছো না কেন?
মিলাঃ স্যার সত্যি বলতে আপনাকে দেখতে আসছি। আমারতো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আর তো কোনদিন বলবো না আপনাকে ভালোবাসি। আর তো কোনদিন বলবো না, ‘আমাকে বুকে নিবেন।’ জানেন স্যার, এ দেহে যতদিন প্রাণ থাকবে হৃদয়ের ছোট্ট ঘরটাতে ততদিন আপনিই থাকবেন। অনেক বিরক্ত করছি। ক্ষমা করে দিয়েন। আচ্ছা স্যার, আজ শেষ বাবের মতো চলে যাওয়ার আগে একটা কথা বলব, রাখবেন?
রাহাতঃ হুম বলো। রাখার মতো হলে, রাখবো।
মিলাঃ স্যার শুধু একবার বলবেন ‘আই লাভ ইউ’ নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারবো। স্যার আর বলবো না তো কোনদিন। শুধু একবার বলেন ভালোবাসি। বুকে নিতে বলবো না। তাহলে বুকেই মরতে ইচ্ছে করবে তবুও ছাড়তে ইচ্ছে করবে না।
রাহাতঃ চোখ বন্ধ করে বলল ‘প্লিজ চলে যাও।’ ভালোবাসা সবার জন্য নয়। আর কখনো সামনে এসো না আমার।

মিলা কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতাল ত্যাগ করে । মিলা চলে গেলে রাহাত আর চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগে। রাহাত মনে মনে ভাবে সে কি মিলাকে ভালোবেসে ফেলল? নাহ্ পৃথিবীর সব ভালোবাসা প্রকাশ করতে নেই। তবে মেয়েটা প্রেমের বাগানে ঠিকই ফুল হয়ে ফুটিল। কিন্তু যে বাগানে ফুটিল সে বাগানের ক্ষমতা নেই ফুলকে নিজের বলে দাবি করার।

হঠাৎ ডাক্তার এসে রাহাতকে বলে রিত্তের অপারেশন শুক্রবারে হবে। স্যার আমি তো টাকা দিতে পারবো না সবগুলো!

মিঃ রাহাত আমরাও মানুষ। তুমি যখন জব করবে তখন না হয় টাকাটা দিবে।

রাহাত খুশিতে ডাক্তারকে জড়িয়ে ধরে।

আজ মিলার বিয়ে

এদিকে দেখতে দেখতে শুক্রবার এসে পড়ে। মিলার বাবা রাহাতকে মোবাইল করে মিলার বিয়েতে যেতে বলে। রাহাত তার বোনকে ছেড়ে যেতে পারবে না। তাই মানা করে দেয়।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। বাড়িটা নানা অপরুপ সাজে সজ্জিত। নীল-লাল বাতি জ্বলছে আর নিভছে। মিলাকে আজ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। মিলার বাবা বারবার বরযাত্রী এসেছে কিনা সেই খুঁজ নিচ্ছে। মিলা বউ সেজে বসে আছে। হঠাৎ সবাই বলে ওঠল বর আসছে! বর আসছে। কথাটা শুনেই মিলা বুকে চিনেচিনে ব্যথা শুরু হতে লাগল। চোখের সামনে বারবার রাহাতের মুখটা ভেসে ওঠছে। কত স্বপ্ন দেখেছিল এ কয়দিনে। কিন্তু খানিক পর সে স্বপ্নদেখা তো দূরের কথা, মনে করাটাও অপরাধ হবে।

মিলা চোখের পানি মুছছে আর মনে মনে বলছে’ সত্যিই পৃথিবীর সকল ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। ‘ কিছু কিছু ভালোবাসা ত্যাগের মাধ্যমে সারা জীবন বেঁচে থাকে। নিজের যৌন চাহিদা মেটানোকে কখনোই ভালোবাসা বলে না। ভালোবাসা তো সেটা যেটা কাউকে স্পর্শ না করেও তার হৃদয় স্পর্শ করা যায়। সারা জীবন তার কাছ থেকে দূরে থেকেও তাকে ভালোবাসা যায়। কিন্তু তার কাছে যাওয়া যায় না। ভালোবাসাটা যে পবিত্র। সত্যিই ভালোবাসা পবিত্র। দেখতে দেখতে মিলার বিয়ে হয়ে যায়।

বিয়ে হওয়ার সপ্তাহ খানেক পরেই মিলাকে নিয়ে রফিক সাহেব, লন্ডন চলে যায়। লন্ডনের প্রতিটা মূর্হুত মিলা রাহাতকে মিস করে।

এদিকে, রিত্ত ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।

একা রাহাত

রাহাত প্রতিনিয়ত একজনকে খুব মিস করে। খুব দেখতে ইচ্ছে করে। রাহাত জানে না কিসের জন্য তাকে দেখতে ইচ্ছে করে।

এদিকে দেখতে দেখতে, প্রায় ২০ বছর কেটে যায়। রিত্তের বিয়ে হয়ে গেছে। রাহাত একা হয়ে গেছে। এখন প্রায় সময় বাসাতেই কাটে। আর এই বয়সেও টুকটাক লেখালিখি। রিত্ত অনেক বলেছে বিয়ে করার কথা। কিন্তু রাহাত আর বিয়ে করেনি। কেন করেনি সে প্রশ্নটা আজও রিত্তের কাছে অজানা।

একদিন বিকেল বেলা রাহাত বাড়ির বাহিরের বেঞ্চটাতে বসে বসে একটা কবিতা লিখতে ছিল । হঠাৎ বাড়ির গেটে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাহাত চমকে যায়। মিলা! না না মিলা হতে পারে না। মেয়েটাকে ঠিক মিলার মতো লাগছে! কিভাবে সম্ভব মেয়েটা ঠিক মিলার মতোই হেঁটে হেঁটে আসছে।

মেয়েটা রাহাতের কাছে এসে সালাম দেয় ‘আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।’

আমি ধারণা মিথ্যা না হলে আপনিই রাহাত আঙ্কেল?

হ্যাঁ মা, তুমি কে?

আমি রাইসা। আমাকে চিনবেন না।

ওহ্ আচ্ছা। কেন এসেছ, মা?

আঙ্কেল আপনার একটা জিনিস আমার কাছে ছিল। লন্ডন থেকে গতবছর এসেছি বাংলাদেশে। প্রায় একটি বছর খুঁজেছি অবশেষে আপনার সন্ধান পেলাম। ‘এই নেন আপনার জিনিস’ এই বলে মেয়েটা একটা রঙিন ডাইরি বের করে দেয়।

ডাইরিটা রাহাতের হাতে দিয়ে বলে, আঙ্কেল আমার মা’ কথাগুলো আপনাকে নিয়েই লিখেছিল।

তোমার মা কে?

আঙ্কেল আমার মা ছিল, আপনার ছাত্রী। নামটা বললে হয়তো চিনবেন। আমার আম্মুর নাম মিলা।

ভালোবাসার কষ্টের গল্প শেষ পরিণতি

মেয়েটার মুখে মিলা নামটা শুনেই রাহাতের বুকটা কেমন যেন কেঁপে ওঠে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে রাহাত জিজ্ঞেস করে, মামনি তোমার মা কেমন আছে?

এবার মেয়েটা কেঁদে দেয়।

কি হলো মা কাঁদছো কেন?

আঙ্কেল আমার মা আমাকে জন্ম দেওয়ার সময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। আর মায়ের রেখা যাওয়া স্মৃতিগুলোর মাঝে আপনার জন্য লেখা ডাইরিটা পাই। আর বুঝতে পারি আমার মা নিজের ভালোবাসার মানুষটার মুখে হাসি ফুটাতে কত বড় ত্যাগ স্বীকার করেছিল। নিজের ভালোবাসা বিক্রি করেছিল আমার নানুর কাছে চার লাখ টাকার বিনিময়ে।

এদিকে রাইসা চেয়ে দেখে, তার রাহাত আঙ্কেল চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছে।

রাইসা অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।

রাহাতের মাথাটা কোলে নিয়ে বলতে লাগে ‘আঙ্কেল আপনার কি হয়েছে’ কথা বলেন? রাহাত কোন কথা বলছে না। রাইসা রাহাতকে নিয়ে হসপিটালে গেলে, ডাক্তার বলে ‘সে আর ফিরবে না।’ রাইসার অজান্তে চোখের কার্ণিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। এখনো রাইসার মায়ের ডাইরিটা রাহাতের হাতেই।

প্রিয় পাঠক, গল্পটা কেমন লেগেছে আপনাদের তা কমেন্টে জানবেন প্লিজ। আপনার লেখা আমাদেরকে পাঠাতে পারেন।

প্রথম পর্ব এখানে: ভালোবাসার কষ্টের গল্প – টিউশন স্যারকে ভালবাসা পর্ব ১

আরো পড়ুন: অভিশপ্ত ফাঁদে প্রেমের ধোঁকা

আমাদের চ্যানেলের ভিডিও দেখুন-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *