হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ১১

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১১ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১১: গত পর্বে আনমনে চিন্তিত প্রিয়ন্তিকে দেখা যায় বান্ধবী মহলে অনেক গুঞ্জন শুনতে। সে এই ব্যাপারটা মনে মনে উপভোগ করলেও মুখে কিন্তু উল্টো ছাপ ফেলে। তো চলুন দেখি এই আনমনে পাগলী টাইপের মেয়েটির কি হয়?

নীলকে নিয়ে প্রিয়ন্তীর স্বপ্ন

খুব ইচ্ছে হয় কোন এক প্রবাল দ্বীপে হারিয়ে যেতে, সারারাত জেগে সমুদ্রের ঢেউ এর শব্দ শুনে শুনে জ্যোৎস্না মাখতে, সবকিছু ভুলে অনেক দূরে হারিয়ে যেতে কিন্তু সঙ্গে একজনকে চাই আমার’
প্রিয়ন্তী এসব ভাবছে আর নীলের চেহারাই তার সামনে ভাসছে।
এই মানুষটা যদি তার হয়, অনেক গুলো অপূরণীয় স্বপ্ন পূরন করবে তাকে নিয়ে!

হয়তো কোন এক ভোরে নীলের হাত ধরে খালি পায়ে রাস্তার পাশে হেঁটে চলবে, তারপর এক কাপ চায়ে দুজনের চায়ের তৃষ্ণা মেটাবে! কিংবা বিষন্ন দুপুরে নীলের বুকে মাথা রেখে অঝোরে কাদবে সব পুরানো কষ্ট ভুলতে। হয়তো এক বিকেলে নীল এক গুচ্ছ দোলনচাপা তুলে দেবে ওর হাতে! আর তার সুবাসে প্রিয়ন্তীর মন নেচে উঠবে!
অথবা এক মধ্যরাতে হঠাৎ নীলকে ঘুম থেকে তুলে ছাদে নিয়ে যাবে ও! তারপর সারারাত গল্প,গানে কাটাবে!

স্বপ্নগুলো প্রিয়ন্তীর মস্তিষ্ক ভেদ করে যায় কিন্তু এগুলো পূরনে যে নীলকে চাই তার পাশে। শুধু তার করে চায় সে নীলকে সারাজীবনের জন্য। এতোটা সময়ের জন্য যতটা সময় সে নি:শ্বাস নিতে সক্ষম থাকবে!
একটা মানুষকে কি এতো তাড়াতাড়িই ভালোবেসে ফেলা সম্ভব? কি করে এতোটা ভালবেসে ফেলল তা প্রিয়ন্তীর জানা নেই। কিন্তু নিজের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পূরণে যাকে সে সাথী হিসেবে পাশে চায়, তাকে সে অবশ্যই অন্যরকম করেই ভালবাসে!
সবার চেয়ে আলাদাভাবে।যাকে চাইলেও দূরে যেতে দেওয়া হবেনা ওর।

আচ্ছা ও কি নীলকে বলবে ওর এসব ইচ্ছেগুলো? বললেই কি নীল বুঝবে ওকে? নাকি কোন এক অনাকাঙ্ক্ষিত কারণ দেখিয়ে দূরে ঠেলে দেবে? তার এই ভালোবাসা! প্রথম ভালোবাসা! এক জীবনের এই এক বুক ভালোবাসা কি সে বুঝবে?

এসব ভাবলেই প্রিয়ন্তীর বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথার উপক্রম হয়। যদি নীল সত্যিই না বোঝে তাকে! সে তখন কি করবে?
কি করেই বা নীলকে বিশ্বাস করাবে যে এতো স্বল্প সময়েই এক জীবনের সবটুকু ভালোবাসা সে শুধু নীলকেই দিতে প্রস্তুত!
নীল বিশ্বাস করবে তো?

কি করে তোকে বলব

প্রিয়ন্তীর মন খারাপ হতে এই চিন্তাগুলোই যথেষ্ট। এছাড়া অন্য এমন কিছু নেই যা নিয়ে তার দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়!
সে জানাতে চায় তার মনের কথা নীলকে। বলতে চায় যে কতোটা ভালোবাসে তাকে!সরাসরি বলাটা কি ঠিক হবে?
নাকি আগে একটু অন্যভাবে বুঝানোর চেষ্টা করবে! তার জীবনে সে অনেক ভালোবাসার গল্পের প্রত্যক্ষদর্শী ছিল,তাতে অনেক সহযোগিতাও করেছে। কিন্তু আজ নিজের বেলায়! কেমন যেন গোলমেলে লাগছে তার!

নাহ নীলকে কিছুটা হলেও জানাতে হবে নইলে নীলের দিক থেকে কি উত্তর আসবে তাও জানা যাচ্ছেনা! আর এভাবে ভেবে ভেবে অপেক্ষা করাও বড্ড কষ্টের। মনে হয় ভালোবাসার নদীতে ডোবার আগেই ডুবছি ডুবছি ভাবনা চলে আসে!

কিন্তু কিভাবে জানাবে সে নীলকে! এই এক মহা সমস্যা! ছ্যাবলাটাকে বোধ হয় কানের কাছে গিয়ে বললেও বুঝবেনা। এমন কেন হুহ!
এজন্যই বোধহয় হুমায়ুন স্যার বলেছেন-
‘‘পৃথিবীর সব মেয়েদের ভেতর অলৌকিক একটা ক্ষমতা থাকে। কোন পুরুষ তার প্রেমে পড়লে মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তা বুঝতে পারে। এই ক্ষমতা পুরুষদের নেই। তাদের কানের কাছে মুখ নিয়ে কোন মেয়ে যদি বলে- ‘শোন আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। আমি মরে যাচ্ছি।’
তারপরেও পুরুষ মানুষ বোঝে না। সে ভাবে মেয়েটা বোধ হয় এপেন্ডিসাইটিসের ব্যাথায় মরে যাচ্ছে!’’

তবু এ মন নাহি মানে কোন মানা,বলতে তো হবেই যাকে এতো ভালোবাসা!
হ্যা প্রিয়ন্তীকেই জানাতে হবে বুঝাতে হবে।

প্রিয়ন্তীর মনে প্রেমের কাটা

নীলকে না বলেই ওর হসপিটালে গেল প্রিয়ন্তী। প্রথমে দেখে নীল তো বেশ অবাক।কাজ সেরে প্রিয়ন্তীর সামনে এসে জিজ্ঞেস করল, “কোন জরুরী কাজে এলে?না বলেই চলে এলে?”
প্রিয়ন্তী: “হ্যা আপনার সাথে একটু কথা বলতাম।ফ্রী হবেন কটা নাগাদ?”
নীল: “কাজ তো শেষই।দশ মিনিটেই বের হবো।তুমি একটু বসো।”
প্রিয়ন্তী বসে অপেক্ষা করতে লাগল।

নীল একটুপর ফিরে এসেই প্রিয়ন্তীকে নিচে নামতে বলল। সে পার্কিং থেকে বাইক নিয়ে আসছে।
বাইকে উঠে নীল জিজ্ঞেস করল: “কোথায় যাব?”
প্রিয়ন্তী: “কোথাও একটা চলুন।কথা বলতে পারলেই চলে।”
নীল সোজা কফি হাউজে নিয়ে গেল।

কফি অর্ডার করেই নীল প্রিয়ন্তীকে বলল: “তো বলুন মিস প্রিয়ন্তী?এই অধম আপনার কি হেল্প করতে পারে?”
প্রিয়ন্তী এতক্ষন বেশ সিরিয়াস মুডে থাকলেও নীলের এই বিহ্যাভিয়ার দেখে আর হাসি কন্ট্রোল করতে পারল না।
প্রিয়ন্তী: “নাহ তেমন কোন ব্যাপার না ডাক্তারবাবু। তবে আপনাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল আর কি।”
(এই যাহ! প্রিয়ন্তী নিজেই ভাবতে লাগল,এটা কি বলে দিল ও!ধ্যাত মুখেও আটকালোনা।)

নীল: ” আরে বাব্বাহ! এতো মহা বদ ইচ্ছে! তোমার ইচ্ছেটাকে আটকাও! এমন সব ইচ্ছে হলে তো ঝামেলা!”
প্রিয়ন্তী চুপ করে রইল।
নীল: “শোন প্রিয়ন্তী! তোমার নামটা খুব ভাল লাগে তাই বারবার ডাকি বুঝেছো?
যাইহোক আমি তোমার চেয়ে বয়সে কিংবা অভিজ্ঞতায় বেশ বড়। যা জিজ্ঞেস করব সত্যি সত্যি উত্তর দেবে কিন্তু!
তুমি কি আমায় পছন্দ করো?”
প্রিয়ন্তীর চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। হঠাৎ এ কথা কেন জিজ্ঞেস করছে নীল!
সে হ্যা বলতে গিয়েও নিজেকে আটকালো আর অন্যদিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, “মোটেই না! বয়েই গেছে আমার আপনার মতো গোমড়ামুখো ডাক্তার কে পছন্দ করতে!”

নীল:”তুমি বেশ ভালোই নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করতে পারো ব্যাপারটা বেশ ভাল লেগেছে আমার। তবে একটু হলেও তো বুঝি। তাই তোমাকে কিছু কথা বলি মন দিয়ে শুনে বুঝবার চেষ্টা করবে আই হোপ?”
প্রিয়ন্তী নীলের দিকে তাকালো! কি এমন বলবে নীল!
নীল মাথা নিচু করে বলতে শুরু করল: “আমার না একটা অসম্ভব বাজে অতীত আছে। তাই আমি এসব কমিটমেন্ট কিংবা রিলেশনে বিশ্বাসী নই। কি দরকার এমন কমিটমেন্টের যেটা আমরা রাখিই না! তোমার কমিটমেন্ট সম্পর্কে কি ধারণা?”
নীলের কথাগুলো যেন প্রিয়ন্তীর বুকে ছুরিকাঘাত করল।
কফি চলে এসেছে, কফির ধোয়ায় প্রিয়ন্তীর চোখ লাল রং ধারণ করেছে আর টলমল করছে! (চলবে)

পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *