হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ১৫

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৫ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৫: গত পর্বে নীল ও প্রিয়ন্তী বাইকে করে বাসায় আসার সময় ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজছিল আর গল্প করছিল। দুজনকে বেশ মানিয়েছে। এরপর কি হয় চলুন দেখি।

নীলের বাসায় প্রিয়ন্তী

তুরিন আপু আড্ডায় আড্ডায় বলতে লাগল, ‘এই নীল আমাকে আর তোমার ভাইয়াকে একটু স্পেইস দাও। তোমরা অন্য টেবিলে বসোনা?’
প্রিয়ন্তী লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। ধ্যাত আপুও না!
নীল হাসছে আর প্রিয়ন্তীর দিকে তাকাচ্ছে।
হঠাৎ তুরিন আপুর হাজবেন্ড বলল, “উই শুড গো ফর এ ট্রিপ, অনেক দিন যাইনা।”
তুরিন আপুও সায় জানাল।
নীল বলল, “হ্যা নেক্সট ফ্রাইডে আমি ফ্রী আছি তবে বেশি টাইম নেই।”

তুরিন: “তাহলে চলো মাওয়া যাওয়া যাক, অনেকদিন ইলিশ ভর্তা খাইনা। প্রিয়ন্তী জানো নীল এই ভর্তার পাগল। তুমি খেয়েছো?”
প্রিয়ন্তী: “নাহ আপু খাইনি।”
নীল: “বেশ তো এবার চলো খেয়ে আসবে।”
প্রিয়ন্তীর চোখ কপালে উঠল। নীল নিজে চাচ্ছে সে যাক? কিন্তু বাসায় কি বলবে বুঝতে পারছেনা!
তবু সে রাজী হলো। কিছু একটা ম্যানেজ হবেই।
নীল তখনো রেস্টুরেন্টের এসির বাতাসে কাপছে। তাই হট কফি অর্ডার করল সে। আর প্রিয়ন্তীর ব্যাগটা জড়িয়ে বসে রইল।
প্রিয়ন্তীর খুব হিংসে হলো ব্যাগটা কত লাকি!

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল। তুরিন আপু আবার বাসায় যেতে জোড় করলেও প্রিয়ন্তীর ফিরতে হবে বলে আর যাওয়া হলোনা।
তাই বিদায় জানিয়ে বাইকে উঠল।

হঠাৎই নীল বলল: “মিস প্রিয়ন্তী কয়টা বাজে?’
: সাড়ে চারটা।
: আপনার বাসায় যেতে হবে কয়টার মধ্যে?
: এই সাতটার দিকে গেলেই হবে।
: বেশ একটা জায়গায় যাবে? আমার খুব পছন্দের একটা জায়গা।
প্রিয়ন্তী হয়তো অন্য কেউ এ কথা বললে দুবার ভাবতো কিন্তু নীল যখন বলছে তখন আর দ্বিতীয় বার ভাবার সুযোগ নেই। এক কথায় রাজী হয়ে গেল সে।

মিরপুর পেড়িয়ে বেশ বড় এক হাইওয়ে রোড দিয়ে যাচ্ছে ওরা। প্রিয়ন্তীর মনে হলো ও গ্রামে চলে এসেছে! এতো সুন্দর আশে পাশে। এদিকে বৃষ্টি অনবরত পড়ছেই। খুব ভিজে গেছে দুজনই। আজ প্রথম বার অজান্তেই প্রিয়ন্তী নীলকে হালকা ধরে বাইকে বসল। নীল হেসে বলল,
: ইউ ক্যান হোল্ড মি। ইটস ওকে প্রিয়ন্তী।
প্রিয়ন্তীর খুব লজ্জা লাগছিল।

বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা বেলা

বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা বেলা, চারপাশের গ্রামীন পরিবেশ, মিষ্টি সুগন্ধ ভেসে আসা হাওয়া, হাইওয়ে ধরে হাই স্পিডে বাইক রাইড আর সাথে নীল!
উফফ এর চেয়ে ভালো আর কি ই বা পেতে পারতো প্রিয়ন্তী!
ওর খুব আনন্দ হচ্ছে তুরিন আপুর বার্থডে টা না হলে ও এই মুহুর্ত গুলো পেতোই না!

সন্ধ্যা নেমে আসার প্রথম প্রহরে ওরা পৌঁছে গেল গন্তব্যস্থলে!
আজ নাকি শরৎ এর শেষ বৃষ্টি!
ঠিক এমনই একটা দিনের অপেক্ষায় ছিল প্রিয়ন্তী। এমন এক ঝিরিঝিরি বৃষ্টিমুখর দিনে এমন কেউ একজন পাশে থাকুক যার উপস্থিতি প্রকৃতির সব সৌন্দর্য উপেক্ষা করতে বাধ্য করবে তাকে!

সেই স্বপ্ন আজ নীল নিজেই পূরন করে দেবে কল্পনাও করেনি প্রিয়ন্তী!
নীল আজ তাকে এক বিশাল নদীর ধারে নিয়ে এসেছে। সুবিশাল ব্রিজের উপর দিয়ে যখন ওরা যাচ্ছিল প্রিয়ন্তীর মনে হচ্ছিল অন্য এক রাজ্যে এসেছে সে যেখানে পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য থমকে আছে। তারপর যখন নীল এর সাথে নদীর পাশের বিশাল ঢালুর ঠিক উপরটায় বসল প্রিয়ন্তী, ওর মন যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছিল! নীল এমন কোথাও নিজে থেকে ওকে নিয়ে আসবে স্বপ্নেও ভাবেনি সে!

প্রিয়ন্তী অজান্তেই বলে ফেলল, “আপনার চোখ জোড়া আমার ভীষন প্রিয়। প্রিয় আপনার হাসি, কথা বলা। বলতে গেলে সম্পূর্ণরূপেই প্রিয় আমার আপনি। তা এই প্রিয় মানুষকে কি আমি আমার করে পেতে চাইলে খুব বেশী দোষ হবে আমার?”
নীল চুপ করে আছে। নদীর দিকে তাকিয়ে আছে সে। কোন উত্তর নেই।
নীল : “তুমি খুব সুইট প্রিয়ন্তী। আমারো তোমাকে ভালো লাগে। তোমার সাথে সময়গুলো বেশ কাটে।”
প্রিয়ন্তী: “তাহলে আমার প্রশ্নের কি জবাব আমি বুঝব?”
নীল: “থাক না ওসব কথা। এই মুহূর্তটাকে এঞ্জয় করো।”
প্রিয়ন্তী: “করব তবে শুধু আজ না আগামী প্রতিটি বৃষ্টি মুখর দিনেই উপভোগ করতে চাই আমি আপনার সাথে।”
নীল: “কিন্তু প্রিয়ন্তী আমার পক্ষে সম্ভব না। আই এম সরি। প্লিজ মন খারাপ কইরোনা।”

প্রিয়ন্তীর অবাধ্য ইচ্ছে

প্রিয়ন্তীর বুকের ভেতরটা কেমন জ্বলে উঠলো। এই যন্ত্রণা কিছুতেই আর থামবেনা বোধ হয়। নীল এভাবে বলতে পারল কিভাবে? প্রিয়ন্তীর ইচ্ছে হচ্ছিল নদীর পানিতে মিশে যেতে কিংবা এই বড় হাইওয়ের মাঝে দিয়ে হেঁটে চলতে!!
এমন কেন করছে নীল!
বারবার আল্লাহকে ডাকছিল মনে মনে কি হচ্ছে এসব কেন হচ্ছে!
খুব কষ্টে সে চোখের পানি গাল বেয়ে গড়াতে দিল না। আজকের এতো সুন্দর দিনটা সে এভাবে মাটি করতে চায়না!

তখন ও বৃষ্টির পানি ওদের ভিজিয়ে দিচ্ছিল, আর প্রিয়ন্তীর বারবারই নীলের হাত ধরতে ইচ্ছে করছিল! কিন্তু সে অধিকার যে ওর নেই।
প্রিয়ন্তী যে নীলের কেউ নয়!
একটা অধিকার পাওয়ার লোভ প্রিয়ন্তীকে চারপাশের সুন্দর পরিবেশটা উপভোগ করা থেকেও আটকে দিচ্ছিল। যখন নীল নিজেই ওর হাতটা ধরল ওর মনে হচ্ছিল কেন সারাজীবন এই হাতটা ওর হাত ধরে রাখবেনা? কেন?

আবার যখনই মনে হলো ও নীল এর কেউই তো নয় তখনই ওর চোখ ভিজে যাচ্ছিল।
ওর বারবারই মনে হচ্ছিল সময়টা যদি থমকে যেত ইশশশ!!
প্রকৃতির সব সৌন্দর্য যেন নীলের চোখেই আটকে আছে! আর প্রিয়ন্তী ওই চোখ জোড়াই বারবার দেখছে আর নিজের সর্বনাশ করছে..
ঐ চোখের মায়া কাটানো যে ওর সম্ভব না, কিছুতেই না। তারপর প্রিয়ন্তী নিজ মনেই বলে চলল, “যদি ওই দু’চোখেই আমায় আটকে রাখতে? যদি এই হাতটা আর না ছাড়তে?”
আজকের দিনটি কেন থেমে গেল না! অথবা এই দিনটিই বারবার প্রিয়ন্তীর জীবনে ফিরে আসুক আর নীলকে তার করে রাখুক, (চলবে)

পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *