এলিয়েন রহস্য ১১

এলিয়েন রহস্য পর্ব ১১ – এলিয়েন মানবের গল্প | Alien Story

এলিয়েন রহস্য পর্ব ১১ – এলিয়েন মানবের গল্প: একদিকে তাইসনকে শেষ করার চিন্তা, অন্যদিকে স্নেহাকে বাঁচানোর চেষ্টা আবার আরেক দিকে এই প্রযুক্তির আক্রমণ শ্রাবণের জীবন কঠিন থেকে কঠিন করে তুলেছে। এত বাঁধা অতিক্রম করে কিভাবে সে দাঁড়াবে?

মহাজাগতিক বার্তা

বর্ণের হাতে থাকা ডিভাইসটির উপরে হঠাৎ করে লিন্ডার হলোগ্রাফিক ত্রিমাত্রিক ছবি ভেসে উঠতেই জহির আংকেল একটা লাফ মেরে বিকট চিৎকার দিয়ে উঠে। বেচারা ভয়ে প্রায় হার্টফেল করার মত অবস্থায় চলে গিয়েছিল।

বর্ণ এসবের সাথে আগে থেকেই পরিচিত।

তুরাণ অবাক হয়ে হলোগ্রামের লিন্ডাকে দেখছে।

বর্ণ লিন্ডাকে দেখে কোন কথা না বাড়িয়েই জিজ্ঞেস করে-
লিন্ডা, হয়্যার ইজ ন্যাশ? আই নিড হিজ হেল্প।

ন্যাশ ছোট খাটো একটা মিশনে বাইরে আছে।

জানায় লিন্ডা।

বহুকাল পরে জহির আংকেল বর্ণ এবং তুরাণকে দেখতে পেয়ে লিন্ডা অনেকটাই আবেগাপ্লুত হয়ে যায়। ভয়ে লাফ মেরে চিৎপটাং হয়ে যাওয়া জহির আংকেল লিন্ডাকে বুঝাতে চেষ্টা করে তার গা থেকে একটা মশা রক্ত খেয়ে ভেগে যাচ্ছিলো। সেটাকে থাবা দিয়ে ধরার জন্য ই সে লাফ দিয়েছে। কিন্তু সবাই তাকে ভুল বুঝলো!

লিন্ডা জহির আংকেলের কথা বিশ্বাস করে নিলে বর্ণ আর তুরাণ অতি শোচনীয় সময়েও হাসি আটকে রাখতে পারে না। কুশলাদি বিনিময়ের পরে বর্ণ তার শহরের ঘোরতরো সমস্যার কথা লিন্ডাকে খুলে বলে। লিন্ডার কাছে সব কিছু কেমন অবিশ্বাস্য মনে হয়। বর্ণ সময় নিয়ে তার মনিটরে রেকর্ড করা সব কিছু লিন্ডার সামনে প্লে করে, ভীষণ দুশ্চিন্তায় পরে যায় সে।

পৃথিবী থেকে কয়েক কোটি আলোকবর্ষ দূরে থাকলেও লিন্ডা বেশ চিন্তিত হয়ে যায়। সে জানায় ন্যাশের সাথে সমস্যাটার ব্যপারে কথা বলবে। পৃথিবীতে যাওয়ার ওয়ার্মহোল ন্যাশ তৈরি করতে পারে। লিন্ডা এটাও জানায় তার ভীষণ ইচ্ছে করছে পৃথিবীতে এসে বর্ণকে সাহায্য করার। কিন্তু লিন্ডা হয়ত সেটা চাইলেও পারবে না। কারণ তার ভিতরে বেড়ে উঠছে আরো ক্ষুদ্র একটা জীবন।

এটা শোনার পর পরই বর্ণ বেশ বড় একটি শক খায়, আবার খুশিও হয়।

মাত্র ২২ বছর বয়সেই ন্যাশ বাবা হয়ে যাবে এটা বর্ণ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

অথচ সে এখনো একটা প্রেম ই করতে পারলো না!

রোবট মানব

লিন্ডার সাথে কথা বলা শেষ করার পরে বর্ণর হঠাৎ সাঞ্জে কে মনে পরে যায়। কেমন আছে ও! নিজেকে নিজের অনেক বোকা মনে হয়। তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি এত বেশি আধুনিক হওয়া সত্ত্বেও সাঞ্জের সাথে কানেক্টেড থাকার কোন রাস্তা ই খোলা রাখেনি বর্ণ।

বর্ণের ঠিকানা যদি আকাশ হত, তবে সাঞ্জে অন্তত একটা চিঠি পাঠাতো এতদিনে। আফসোস কেউই কারো ঠিকানা জানে না।

এদিকে জহির আংকেল ও তুরাণ তর্ক শুরু করে দিয়েছে। লিন্ডা ও ন্যাশের সন্তান ও কি অর্ধেক রোবট অর্ধেক মানুষ হবে কিনা!

যুক্তিবাদী জহির আংকেল কিছুতেই লিন্ডা ও ন্যাশের সন্তানকে মানুষ হিসেবে মেনে নিতে চাইছেন না।

তুরাণ বারবার বুঝাতে চেষ্টা করছে লিন্ডা ও ন্যাশ দুজনেই জন্মগত ভাবে মানুষ। তাদেরকে পরে সাইবর্গে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সুতরাং ওদের পিচ্চুটাও মানুষ হবে।

বর্ণ সাঞ্জের চিন্তাটা খুব তাড়াতাড়ি তার ব্রেইনের রিসাইকেল বিনে ডিলেট করে রাখে। সময় মত রিস্টোর করা যাবে। আপাতত তার সব চিন্তা ভাবনা শ্রাবণকে ঘিরে। এটা অন্তত শিওর হয়ে যায় বর্ণ, শ্রাবণের সাথে অদ্ভুত কালো ধোঁয়ার মেয়েটার নিশ্চিত কোন যোগসূত্র আছে। আর একটা বড় ব্যাপার হলো ওরা দুজনেই দিনে গা ঢাকা দিয়ে থাকে। দিনে ওদের কোন প্রকার এক্টিভিটি লক্ষ্য করা যায় না। এর একটাই কারণ হতে পারে, দিনের বেলাটা ওদের শক্তি অপেক্ষাকৃত দুর্বল থাকে। শ্রাবণের ঠিকানা বের করা কঠিন হবে না। শ্রাবণকে আটক করা গেলে অন্য জনের বেশ কিছু তথ্য উপাত্তও জেনে নেয়া যাবে।

ড্রোণ দিয়ে রাস্তা ঘাট ভালোভাবে চেক করে তুরাণ এবং বর্ণ দুজনেই নেমে পরে ডি সেভেনকে উদ্ধার করার জন্য। দুমড়ে মুচড়ে থাকা ডি সেভেনকে বাসায় এনে কোনো কাজে লাগানো যাবেনা। তাও দায়ভার এড়াতে ডি সেভেনকে সরাতেই হবে। আশেপাশের সিসি ক্যামেরা গুলকে অনেক আগেই ড্রোণ ইউজ করে অকেজো করে দিয়েছিলো বর্ণ। সুতরাং ডি সেভেনকে সরিয়ে ফেললেই আর কোন সমস্যা হবেনা। আড়াল থেকে বর্ণ নিজের মত করে সবকিছু নিয়ে মাথা ঘামাতে পারবে।

তুরাণ এবং বর্ণ তাদের গ্যারেজ থেকে কভার্ড ভ্যান টা বের করে ডি সেভেনের বডি উদ্ধার করতে নেমে পরে।

স্নেহার চেহারা ছাপা হয়েছে পত্রিকায় পত্রিকায়। মিলিটারিদের সাথে ব্যাটল করার সময় স্পাই ক্যাম দিয়ে সব দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। খবরটা দেখার পরে, বর্ণ মিলিটারি প্যানেলে একটা ছোট্ট মেসেজ পাঠায়।

মহাযুদ্ধের বার্তা

“শহরে রাতের আঁধারের সাথে সাথে নামে ভয়। জীবিত মানুষরা অকালেই হয়ে যায় মৃত। দিনে আবার উলটো চিত্র,সব কিছুই স্বাভাবিক। গা ঢাকা দিয়ে কোথায় লুকিয়ে আছে মেয়েটি খুঁজে বের করুন। আরো একটি রাত আসতে দেয়া মানে আরো কিছু নতুন লাশ।”

অজ্ঞাত কারো থেকে এমন একটা মেসেজ পেলেও কতৃপক্ষের কাছে বার্তাটিকে একটুও অবহেলা করার সুযোগ নেই। এই সাধারণ ভাবনা টুকুও এতদিনে তাদের মাথায় আসে নি ভাবতেই লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে বর্ণর।

প্রতিটা ফ্লাটে ফ্লাটে গিয়ে চালানো হচ্ছে চিরুনী তল্লাশি। দেখা মাত্রই ইনকাউন্টারে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে মেয়েটিকে। যদিও বর্ণের ধারণা এভাবে কোন কিছুই সমাধান হবেনা। অতিপ্রাকৃত কোন কিছুর মোকাবেলা করতে হলে সেটার শিকড় কোথায় তা আগে খুঁজে বের করতে হবে।

সকালে বেশ দেড়িতে ঘুম ভাংগে শ্রাবণের। শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে সে। একটু ক্লান্ত ও বটে কাল রাতে কি ঘটেছিল সেটা স্পষ্ট মনে আছে তার। নিজের দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে দেখেছিলো নিজেই। তারপরেও গায়ে কোনো প্রকার আঘাতের চিহ্ন ছাড়াই বেঁচে আছে দেখে অনেকটা অদ্ভুত লাগে তার কাছে। শ্রাবণের মস্তিষ্ক এখন খুব স্বাভাবিক আছে। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে টিভি অন করতেই দেখতে পায় মিলিটারিদের সাথে তাইসনের যুদ্ধের ভিডিও।

এটাকে আসলে যুদ্ধ বলা যায় না, বলা যায় হামলা। তাইসনের পক্ষ থেকে হামলা। তাইসন পা দিয়ে পিঁপড়া পিষে মারার মত জলজ্যান্ত মানুষগুলোকে নিমিশেই লাশ বানিয়ে দিলো! এতগুলো মানুষের পরিবারের উপর শোকের ছায়া নামিয়ে দিলো! হয়ত পরিবার চালানোর মত উপার্জনক্ষম প্রধান মানুষটি ই মারা গিয়েছে। হয়ত বাসায় থাকা ছোট্ট সোনামণিটা জানেই না তার বাবা এখন শুধু একটা লাশ। বৃদ্ধ মায়ের জন্য ঔষধ কেনার টাকা পাঠানো ছেলেটাও হয়ত আজ মৃতদেহের মিছিলে শামিল হয়েছে।

এমনকি শ্রাবণ নিজেও। নিজেও কম মানুষ খুন করেনি। অবশ্য তখন তার মস্তিষ্ক হেলাক্স গ্রহের রেড ডেভিলস এবং পয়জন সৌল দের মিশ্রণে তৈরি পয়জন কিং এর নিয়ন্ত্রনে থাকে। তবে যা ই হচ্ছে, তা মোটেও ভালো হচ্ছে না। সব কিছু থামানোর উপায় খুঁজতে হবে। শ্রাবণ সিদ্ধান্ত নেয় সে প্রথমে তাইসন কে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করবে তারপর নিজেকে শেষ করে দিবে। নিজেকে কিভাবে মারতে হবে সেটা খুব ভালো করেই জানা আছে শ্রাবণের।

তবে তাইসন ও শ্রাবণের যুদ্ধের মাঝে দেশের এবং বহির্বিশ্ব থেকে আগত সেনাবাহিনীরা বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুযোগ নিচ্ছে এমেরিকাও। বাংলাদেশের এই করুণ পরিস্থিতিতে এমেরিকা সাহায্যের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের সেনাবিভাগের ঘাঁটি গড়ে তুলছে। সমস্যার সমাধান হয়ে গেলেও এই ঘাঁটি তারা আর উঠিয়ে নাও নিতে পারে।

বাংলাদেশের অস্তিত্ব তখন সংকটের মুখে পরে যাবে। আর তার থেকেও বড় একটা ব্যাপার হচ্ছে স্নেহা মেয়েটা। তাইসন পজেস্ট করে আছে স্নেহার উপরে তাইসন কে ধ্বংস করতে হলে স্নেহাকেও মেরে ফেলতে হবে। এ কথাটা মনে হতেই শ্রাবণের বুকের কোন এক জায়গায় খারাপ লাগা অনুভূত হয়।

লিন্ডার কাছ থেকে সব কিছু জানার ও দেখার পর পর ই ন্যাশ আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না। ওয়ার্মহোল ঠিক করার কাজে লেগে পরে।

শহর জুড়ে অস্থিরতা ও চাঞ্চল্য

এরকম একটা ঘটনা ন্যাশ দের দুনিয়ায় হলেও তো সব কিছু ওলট পালট হয়ে যেত। সেখনে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পৃথিবী অনেকটাই পিছিয়ে। আর সত্যি কথা বলতে বর্ণকে ন্যাশ নিজের ই একটা অংশ মনে করে। দুজনেই তো একই রকম। পার্থক্যটা শুধু চরিত্রে। একজন খুব সাধারণ কিন্তু বুদ্ধিমান গোয়েন্দা, অন্যজন ইউনিভার্সের সবথেকে শক্তিশালী সাইবর্গ ও হ্যাকার।

বাদ বাকি সব কিছুই এক রকম। বর্ণের অসহায় মুহূর্তে ন্যাশ ছোট একটা স্যাক্রিফাইস করে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। অথচ লিন্ডার প্রেগন্যান্সির সময়টাতে ন্যাশের উচিৎ ছিলো ওর পাশে থাকা। এমনিতেই ওখানের নিয়ন্ত্রক বাইসনের লোকজন চিরুনী তল্লাশী করে ন্যাশ ও লিন্ডাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

ব্লু বেরীর জুসের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে ছাদে পায়চারি করছিলো বর্ণ। সন্ধ্যে প্রায় হয়ে এলো। হঠাৎ দৌড়াতে দৌড়াতে তুরাণের প্রবেশ।

  • “মেয়েটার সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে সেনাবাহিনীরা।
    মেয়েটির নাম স্নেহা।

ওদের বাসায় গিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করার সময়ে সবাই অস্বীকার করলেও ধূর্ত সেনা সদস্যরা ফ্যামিলি ফ্রেমে স্নেহার ছবি দেখে ফেলে। পরিবর্তে জিজ্ঞেস করা হয় স্নেহা কোথায় আছে। ওর পরিবারের কেউ ই তা জানেনা বলে জানিয়েছিলো। সেনাসদস্যদের অমানবিক অত্যাচারের পর ও স্নেহার সম্পর্কে বলাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ওর পরিবারের সবাইকে ক্রস ফায়ারে মেরে ফেলা হয়েছে।

কথাগুলো এক নাগাড়ে বলেই হাঁপাতে থাকে তুরাণ।

বর্ণর কাছে বিষয়টি একটু খারাপ লাগে। একজনের দোষের জন্য অন্যজন শাস্তি পাওয়া কাম্য নয়।

আর এতে হিতে বিপরীত হবে। স্নেহা হয়ত আরো মারাত্মক ভাবে আক্রমণ করে বসবে সবাইকে।

বর্ণ জিম হাউজ থেকে শ্রাবণের ঠিকানার একটা অংশ জোগাড় করেছে মাত্র। শুধু একটা ছোট এলাকার নাম ই উল্লেখ করা আছে মাত্র। স্পষ্ট কোনো বাসার ঠিকানা দেয়া নেই। তবে বর্ণর তাতে আদৌ সমস্যা হবেনা। ড্রোণ দিয়ে ঐ এড়িয়ার প্রতিটা কোণা চেক করে দেখা যাবে।

তুরাণ চলে গিয়েছে। বর্ণ নিরবে দাঁড়িয়ে আছে। ছাদের উপরের হালকা বাতাস তার চুলে দোল দিয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা ভাবতে ভাবতে ঘোর লাগে তার। রোবটের মত স্থির হয়ে যায় বর্ণ।

সম্বিত ফিরে পায় কাঁধে একটা শক্ত হাতের স্পর্শে। পিছনে ঘুরেই চমকে উঠে বর্ণ। তার ই মত দেখতে একজন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

“ন্যাশ!”

ন্যাশ কোন কথা না বলেই বর্ণকে বুকে জড়িয়ে নেয়।

  • আমি এসে গিয়েছি বন্ধু। যতটুকু সাহায্য করা যায় আমি করবো। তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই।

বর্ণ যেন অনেকদিন পরে ভরসা করার মত একটা মানুষ পেলো। যার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলে পৃথিবীর সকল খারাপ শক্তিকে দমন করে দেয়ার সাহস আসে।

শ্রাবণের উপর আক্রমণ

সেদিন রাতে ড্রোণ নিয়ে অনেকক্ষন সার্চ দেয়ার পর ও ভয়াবহ বা উল্লেখযোগ্য কিছু চোখে পরেনি। চারদিকে ছিল শুধু ভারী অস্ত্রসজ্জিত ট্যাংক ও মেশিনগান সম্বলিত মিলিটারি কার। গাড়ির বাইরে একজন লোক ও নামে নি। ন্যাশ বর্ণকে উদ্দেশ্য করে সে রাতে মশকরা করে। আজ আমার ভয়ে সব কেমন পালিয়ে গিয়েছে, দেখেছো!

পরদিন সকা ১১ টা।

গরমের ভিতরেও মোটা একটা হুডি চাপিয়ে বাইরে নামলে সবাই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাবে সেটাই স্বাভবিক। তবে শ্রাবণের তাতে কিছু আসে যায় না। এ শহরে এখন এমনিই মানুষজন খুব কম। সবাই পালিয়েছে। যারা আছে তারা সামনেরর রাত কিভাবে কাটাবে সে চিন্তা করতে করতে ভয়ে সটান হয়ে থাকে। বেশ অনেক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পরে একটা ক্যাফে খোলা পায় শ্রাবণ। ঢুকেই একটা কোল্ড কফির অর্ডার করে।

দীর্ঘ ১৫ মিনিট অপেক্ষ করার পরে কোল্ড কফি দিয়ে যায় ওয়েটার। চুমুক দিয়েছে কি দেয় নি এর মাঝেই হঠাৎ চোখ চলে যায় ক্যাফের ভিতরে লাগানো একটা আয়নায়। বিপরীত পাশের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে।

রাস্তার উপরে এসে থেমেছে একটি সাদা কাভার্ড ভ্যান।

গাড়িটি থেকে দরজা খুলে বের হলো শ্রাবণের সমবয়সী কালো সানগ্লাস, সাদা ইন করা শার্ট, কালো জিন্স ও স্নিকারস পরিহিত একটি ছেলে।

ছেলেটিকে শ্রাবণের খুব ভালোভাবে চেনা। এখানে কেনো এসেছে সেটাও অনেকটা আঁচ করতে পারে শ্রাবণ। কফির মগে দ্রুত একটা চুমুক দিয়ে
ক্যাফের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে।

যতটা সম্ভব অলি গলি ঘুরে একটা সুপারশপ এর পাশে এসে দাঁড়ায় সে। অনেকটা নির্জন এবং আড়ালে জায়গাটা। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরেই সেই সুপারশপ এর সামনের রাস্তায় আবারো এসে থামে বর্ণর সাদা কভার্ড ভ্যান। এবার শ্রাবণ শতভাগ শিওর হয়ে যায় বর্ণ তার পিছনে পরেছে।

পেছনে ঘুরে অন্যদিকে চলে যাবে, হঠাৎ এ সময়ে কেউ একজন শক্ত হাতে ফাহদের গলা চেপে ধরে সুপারশপ এর কাচের দেয়ালে ঠেসে ধরে মাটি থেকে প্রায় এক হাত উপরে তুলে ফেলে।

ঘটনার আকষ্মিকতায় কিছুই বুঝতে পারেনা শ্রাবণ। বর্ণ খুব শক্তভাবে তাকে ধরে ফেলেছে। তবে একটু আগের বর্ণ তো কালো জ্যাকেট পরা ছিলো না! আর মুখমণ্ডল এর একপাশ এরকম কাটা ছেড়া ও জোড়া দেয়া ছিলো না! শ্রাবণের ভাবনার অবকাশ ঘটে যখন সাদা শার্ট পরিহিত বর্ণ গাড়ি থেকে বের হয়ে শ্রাবণের সামনে আসে। শ্রাবণকে যে ধরে রেখেছে তার কাধে হাত চাপড়ে বলে, সাবাশ ন্যাশ!

শ্রাবণকে বধ

এবার ওকে আমাদের হেফাযতে নিয়ে যেতে চলো।

শ্রাবণের গলা থেকে তেমন কথা বের হচ্ছে না। তবুও ফ্যাঁসফেসে গলায় কোনো রকমে উচ্চারণ করে, লিভ মি এলন!

ন্যাশের হাত আরো শক্ত হয়। ফাহদের নিশ্বাস এবার বন্ধ হয়ে আসে। হঠাৎ করে সুপারশপের কাছের দেয়ালে এক হাত দিয়ে সজোরে ঘুষি মারে শ্রাবণ। ঝন ঝন শব্দে কাঁচ ভেংগে পড়ে। ন্যাশের হাত থেকে শ্রাবণ ছুটে ফ্লোরের ভাংগা কাছের উপরে পড়ে যায়। হাত কেটে অঝোরে বের হচ্ছে। টকটকে সবুজ রক্ত। আস্তে আস্তে ন্যাশের দিকে এগিয়ে যায় শ্রাবণ।

সবুজ রক্তমাখা হাত দিয়ে ন্যাশের কাঁধ স্পর্শ করে ন্যাশের চোখের দিকে তাকিয়ে একটা ঠান্ডা হাসি দেয় । সবুজ রক্ত লাগার সাথে সাথেই ন্যাশের গায়ের চামড়া গলে বের হয়ে আসে যান্ত্রিক ধাতব অংশ। ইতিমধ্যেই পুলিশের গাড়ির শব্দ ভেসে আসে। বর্ণ ন্যাশ কে নিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে, এবার যাওয়া যাক। ন্যাশ হুংকার ছাড়ে, আই উইল কিল দিস বাস্টার্ড রাইট হিয়ার।

বর্ণ ন্যাশ কে জোড় গলায় বলে, এখন আমরা পুলিশের হাতে পরলে ঝামেলা হতে পারে। ও আর কোথায় পালাবে! পাওয়া যাবে পরে। চলে আসো।

ন্যাশ রাগন্বিত চোখে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও গাড়িতে উঠে। সর্ব শরীরে সবুজ রক্তে মাখামাখি হয়ে থাকার পরেও ন্যাশ ও বর্ণের প্রস্থানের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে থাকে দ্যা পয়জন কিং। চলবে…

পরের পর্ব- এলিয়েন রহস্য পর্ব ১২ – এলিয়েন মানবের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *