এলিয়েন রহস্য পর্ব ৯

এলিয়েন রহস্য পর্ব ৯ – এলিয়েন মানবের গল্প | Alien Story

এলিয়েন রহস্য পর্ব ৯ – এলিয়েন মানবের গল্প: এক অপরাযেয় শক্তির সাথে লড়াই করতে হবে আমাকে, দিনকে দিন তাইসন মানুষ হত্যা করে শক্তি সংগ্রহ করছে, আমার পক্ষে তাইসনকে এখন মেরে ফেলা অনেক সহজ, কিন্তু পারছি না কারণ স্নেহার শরীরে ভর করে আছে এই শয়তানটা। আমাকে মাস্টার প্ল্যান করতে হবে।

রোবটিক পর্যবেক্ষণ

জহির আংকেল এবং তুরাণ বসে বসে স্পাই বাটারফ্লাই গুলোতে ন্যানো ক্যামেরা বসাচ্ছে। এগুলো স্বয়ংক্রিয় ড্রোন। গতিপথ নির্দিষ্ট করে দিলে এরা নিজেরাই যে কোন বাধা বিপত্তি পেরিয়ে উড়ে চলতে পারে। সেই সাথে নাইট ভিশন ক্যামেরাগুলো লাগিয়ে দিলেই অজ্ঞাত হত্যাকারীদের অনেক তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। বর্ণ জিম থেকে ফিরতে ফিরতে জহির আংকেল এবং তুরাণ মিলে ড্রোণের সাথে সবগুলো ক্যামেরা সেট করে ফেলে। বাকি প্রোগ্রামিং বর্ন এসে করবে।

ড্রোণ বাটারফ্লাই ছাড়াও বর্নের সংগ্রহে রয়েছে একটি ফাইটার রোবট, যার উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট, পুরো বডি হেভি মেটাল দিয়ে তৈরি। এড়িয়া ফিফটি ওয়ানের নিরাপত্তারক্ষী সবচেয়ে শক্তিশালী রোবটটিকে বর্ণ উপহার হিসেবে পেয়েছিল। এবার সেটাকে প্রকৃতপক্ষেই কাজে লাগানোর সময় এসেছে। বর্ণ প্রাত্যহিক ব্যায়াম সেরে বাসায় আসতে আসতে ভালোই রাত হয়। এসে দেখতে পায় তুরাণ এবং জহির আংকেল মিলে বেশ অনেক কাজ এগিয়ে রেখেছে। হাতে একটা জুসের বোতল নিয়ে ল্যাপটপের সামনে বসে পরে তিনজনই।

যে সকল এলাকায় সবচেয়ে বেশি মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে সেসকল এড়িয়া ট্রাক করার সিদ্ধান্ত নেয় বর্ণ। এদিকে শহরে ট্যাংক নামানো হয়েছে। দানবাকার ট্যাংক গুলো গর্জন করতে করতে শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আরো বেশি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নিরীহ মানুষগুলোকে ভীষন দুর্ভোগে পরতে হয়েছে। অনেকেই ঢাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন অন্য কোথাও। ব্যাস্ত ঢাকা শহরের একাংশ অনেকটাই খালি হয়ে গিয়েছে।

এখন পর্যন্ত কারো বাসায় ঢুকে হত্যার ঘটনার খবর আসে নি, এ শান্তনাটুকু বুকে আঁকড়ে ধরে অনেকেই ঘর কামড়ে পরে আছেন, কোথাও যান নি। বর্ণ তার রোবটটিকে ঠিক ঠাক করে। আজ এটিকে নামিয়ে দেয়া হবে আরো ভালো পর্যবেক্ষণের জন্য। রোবটটির নাম ডিস্ট্রয়ার সেভেন, সংক্ষেপে ডি-সেভেন। ডি সেভেনের জন্ম হয়েছিলো লিন্ডার বাবার ফেলে যাওয়া ইউ এফ ও থেকে সংগ্রহ করা নথিপত্রের ফর্মূলা অনুযায়ী। ডি সেভেন কে ভয়েস কমান্ড দেয়ার মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যায়। মানুষের সাথে কমিউনিকেশন করতেও সক্ষম এ রোবটটি।

ড্রোণ ও ট্যাংকার

কয়েকটি শক্তিশালী ট্যাংক কে সেকেন্ডের ভিতরে ধ্বংস করে দেয়া, এমনকি আকাশে উড়ন্ত বিমানকে বিধ্বস্ত করে দেয়া ডি সেভেন এর জন্য মামুলি কাজ বলা চলে। ডি -সেভেনকে মানুষের মত পোশাক পরিয়ে বর্ণ বাসা থেকে পাঠিয়ে দেয়। ল্যাপটপের স্ক্রিনে ডি সেভেন তার চোখ দিয়ে যা দেখছে তা ভেসে উঠছে। ড্রোণ বাটারফ্লাইগুলোকে মুক্ত করা হবে আরো অনেক পরে। আপাতত ডি সেভেন কে রাস্তায় নামিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছে বর্ণ।

ডি সেভেন বেশ কিছুদূর যাওয়ার পরে বর্ণ মাইক্রোফোনে জিজ্ঞেস করে,
বর্নঃ ডি সেভেন, ক্যান ইউ হিয়ার মি?
ডি সেভেন রোবোটিক কন্ঠে উত্তর দেয়,
ডি সেভেনঃ “ইয়েস স্যার, আই ক্যান হিয়ার ইউ।”
বর্ণঃ হাউ ফার দ্যা কার ইজ ফ্রম ইউ?
ডি সেভেনঃ সেভেন ফিট নাইন সেন্টিমিটার এওয়ে ফ্রম মি স্যার।
বর্ণঃ গুড জব, লোড ইউর এট্যাকিং আর্মরস,
ডি-সেভেনঃ পাওয়ার লেভেল লো মিডিয়াম অর হাই?
বর্ণঃ মিডিয়াম ফর নাউ।

ডি সেভেন এর শরীর একটা কাঁপুনি দিয়ে স্থির হয়ে যায়। এর পর তার হাত এবং বুকের মাঝ থেকে কিছু আর্মর বের হয়ে আসে।
ডি-সেভেনঃ লোডিং কম্পলিট স্যার, রেডি টু ডিস্ট্রয়, ওয়েটিং ফর ইউর কমান্ড।
বর্ণ তুরাণের দিকে তাকিয়ে বলে, রিলিজ দ্যা ড্রোনস।

তুরাণ রিমোটের একটি বাটনে ক্লিক করা মাত্রই নীল রঙা পাখার প্রজাপতি গুলো উড়ে জানালা থেকে বের হয়ে যায়। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এই ড্রোণগুলো ছড়িয়ে পরবে পুরো শহরজুড়ে।

দিন হলেই রাতে নিজের কর্মকান্ড নিয়ে আফসোস বাড়ে শ্রাবণের। না চাইতেই হাজার হাজার মানুষ লাশ হয়ে যায় তার হাতে, তখন শ্রাবণের নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অথচ সকাল হলেই খুব বাজে একটা অপরাধবোধে নিস্তব্ধ হয়ে যায় সে। শ্রাবণ বুঝতে পারে, তার ভিতরের ডেভিলস পাওয়ারের শক্তি বেড়ে যায় শুধুমাত্র অন্ধকারে। দিনের আলো ফোঁটার সাথে সাথদ ডেভিলস পাওয়ারের তীব্রতা কমে যায়। তখন নিজের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় ফিরে পায় শ্রাবণ।

অপশক্তির তাণ্ডব

অনেক ভাবনা চিন্তার পরে একটা উপায় বের করে সে। সন্ধ্যে হওয়ার পর পর ই নিজের রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে লাইট জ্বেলে চেয়ারে বসে থাকে শ্রাবণ। তার আয়ডিয়াটা কাজে লাগে এবার। লাইটের আলোতে থাকার কারণে তার ভিতরের রেড ডেভিলস এবং পয়জন সৌলের শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে না। একটু অশান্ত হলেও সব কিছুই শ্রাবণের নিয়ন্ত্রণে থাকে। শ্রাবণ নিজেকে আপাতত মানুষ হত্যা থেকে নিজেকে বিরত রাখার উপায় পেয়ে যায়।

এদিকে বর্ণ তার ল্যাপটপ এবং ড্রোণের মনিটর দ্বারা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে চারদিকে। কিন্তু সমস্যা হয় ডি সেভেনকে নিয়ে। ওকে দেখলেই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ফায়ারিং করা শুরু করবে। সুতরাং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সিসি ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দিয়ে ডি সেভেনকে পথ প্রদর্শন করে চলে বর্ণ। এভাবে বেশ কিছুক্ষন চলার পরে চারপাশের পরিবেশ হঠাৎ বদলাতে শুরু করে। ট্যাংক এবং সেনাবাহিনীর গাড়িগুলো একযোগে কোথাও একটা ছুটতে শুরু করে। বর্ণ কিছু ফ্লাইং ড্রোণ নিয়ে তাদের পিছু নেয়। রাস্তাঘাট খালি হয়ে যাওয়ায় ডি সেভেনকেও আড়াল থেকে বের করে আনে। মাথার উপর দিয়ে সার্চলাইট জ্বেলে কয়েকটা হেলিকাপ্টর পটপট শব্দ করে উড়ে চলে যায়, একটুর জন্য বেঁচে যায় ডি সেভেন ভাগ্য ভালো ওদের চোখে পরে নি। তবে এত ব্যাস্ততা নিয়ে কোথায় যাচ্ছে সবাই!

কিছুক্ষন পর একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে আশেপাশে জড়ো হতে থাকে মিলিটারি ট্যাংক, হেলিকাপ্টর এবং গাড়িগুলো। ড্রোণের ক্যামেরায় বর্ণ দেখতে পায় এখানের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু মৃতদেহ পরে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। উড়তে থাকা হেলিকাপ্টর গুলোর ভিতর থেকে হঠাৎ একটি হেলিকাপ্টর চলন্ত অবস্থায় সজোরে নিচের দিকে আছড়ে পরে। সাথে সাথে বিকট শব্দ, আগুন এবং ধোঁয়ায় চারপাশ অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।

বিধ্বস্ত হেলিকাপ্টর এত দিকে নজর রাখছিল বর্ণ, হঠাৎ সে দেখতে পায় আগুন এবং ধোয়ার ভিতর থেকে একটি মেয়ে বের হয়ে আসল এবং মুহূর্তের ভিতরেই আবার ধোঁয়ার মাঝে আড়াল হয়ে গেল। এর মাত্র কয়েক মিনিট পরেই দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য, কোথা থেকে যেন কুচকুচে কালো ধোঁয়া এসে একপাশের মিলিটারি সদস্যদের চারপাশ ঘিরে তাদের অন্ধকারে ঢেকে দিলো। হেলিকাপ্টর এর সার্চ লাইটের আলো এসে পড়াতে যখন আস্তে আস্তে ধোঁয়া কেটে পরিষ্কার হয়ে গেলো, তখন সেখানের কোনো সদস্যই আর জীবিত নেই।

শাস্তি ও সতর্কতা

পুরো ঘটনাটি চোখের সামনে দেখলো সবাই। কি হবে এতো এতো অস্ত্রসজ্জিত বহর নিয়ে, মানুষ কি কখনো ধোঁয়াকে আঘাত করতে পারে! সবকিছু ফেলে রেখে বাকি মিলিটারি সদস্যরা যে যার মত ছুটে পালাতে শুরু করলো। বর্ণের নিজের শরীর ও শিউরে উঠেছে পুরো ঘটনাটি দেখার পরে। হেলিকাপ্টর থেকে সবকিছুরই ভিডিও ফুটেজ ধারণ করা হয়েছে। কাল যখন এটি প্রকাশ পাবে, ঢাকা শহরে হয়ত আর একটি মানুষ ও থাকতে চাইবে না। এ শহরটা একটা মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরিত হবে।

তাইসন ইতিমধ্যেই প্রচন্ড পরিমান শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। শ্রাবণ লাইট জ্বালিয়ে তার বাসায় চুপ করে বসে আছে, এটা বোধ হয় সহ্য হলো না হেলাক্স গ্রহের বর্তমান অধিপতির। শ্রাবণ তার আশেপাশে পুরোনো সেই অদ্ভুত গন্ধ পেতে শুরু করে। সাথে সাথেই শ্রাবণের রুমের সব লাইট অফ হয়ে যায়। প্রচন্ড ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে আবার সেই কর্কশ শব্দ।

  • “তুমি তোমার কাজ সম্পর্কে ভুলে যাচ্ছ শ্রাবণ। তাইসন ক্রমে ক্রমে শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে আরো।”

শ্রাবণ শুধু অনুভব করতে পারে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার ডান হাত টি নব্বই ডিগ্রী ঘুরে সোজা পেছনের দিকে গিয়ে কোনো একজনের গলা টিপে ধরলো, সাথে সাথে সেই কর্কশ আওয়াজ ফ্যাঁসফেসে শব্দতে রূপান্তরিত হয়ে গেল, লাইটের সুইচ অফ করার পরে শ্রাবণ গম্ভীর গলায় নিজের অজান্তেই বলে বলে উঠে,
এই শেষবারের মত আমি তোকে ছেড়ে দিচ্ছি।

এরপর যেদিন আমার সামনে দেখব সেদিন তোর নিশ্চিত মৃত্যু হবে। শ্রাবণের হাত গলাটি ছেড়ে দেয়। সাথে সাথে শ্রাবণ অনুভব করে তার প্রচন্ড পিপাসা লেগেছে, মানুষের জীবনী শক্তি তার চাই ই চাই।

অসহায় ও বাধ্য শ্রাবণ

দরজা খুলে বাইরে চলে আসে শ্রাবণ। পাগলের মত এদিক সেদিক মানুষের খোঁজ করতে থাকে সে। বুকের ডান পাশে জ্বলন্ত সবুজ গোলাকার সিম্বল নিয়ে কোন একটি মানুষ এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে, বর্ণের ড্রোণের ক্যামেরায় ধরা পরে বিষয়টি। সেই রাস্তা দিয়ে জীবন হাতে নিয়ে দৌঁড়ে পালাচ্ছিল দুজন সামরিক বাহিনীর লোক।

দূর থেকে শ্রাবণ তাদের দেখতে পেয়ে বেশ খুশি হয়, কাছাকাছি আসতেই তাদের পথ আগলে দাঁড়ায় সে। কিন্তু শ্রাবণের দিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা সজোরে ছুটছে দুজনই। এক পর্যায়ে তারা কাছাকাছি আসতেই শ্রাবণ খপ করে একজনকে ধরে ফেলে। ভয়ে আর্তনাদ করে ওঠে মানুষটি। সেল্ফ ডিফেন্সের জন্য সাথে রাখা চাকু কোস্নেহাবে খোলসমুক্ত করে শ্রাবণের বুকে বসিয়ে দেয় সে। যখন আবার টান দিয়ে চাকুটি বের করে আবার আঘাত করতে যাবে তখন দেখতে পায় তার স্টিলের তৈরি চাকু মোমের মত গলে গলে পড়ছে।

লোকটি চোখে অবিশ্বাস নিয়ে শ্রাবণের সবুজ চোখে তাকায়। শ্রাবণের চোখে নিজের মৃত্যু দেখে নেয় সে। আর্তনাদ করতে থাকে পাগলের মত, শ্রাবণের বুকের ডানপাশে থাকা সবুজ সিম্বলের মুখের ভেতর থেকে কেঁচোর মত কিলবিল করতে করতে বের হয়ে আসে অনেকগুলো মাথা। আস্তে আস্তে লোকটির বুক চিড়ে ঢুকে যায় ভিতরে। তারপর শুষে নিতে থাকে সবকিছু, কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকটি শুকিয়ে নরকঙ্কাল হয়ে যায় একদম।

হঠাৎ কোথাও হতে একটি ছোট বলের মত বস্তু এসে শ্রাবণের ডান হাতে আটকে যায়। শ্রাবণ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিপ বিপ বিপ শব্দের পর বুমমমম করে একটি ভয়ানক বিষ্ফোরণ ঘটে। সাথে চারদিকটা সবুজ ঘনো তরলে মাখামাখি হয়ে যায়। শ্রাবণের দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে মাটিতে পরে থাকে। আবছা অন্ধকারের ভিতর থেকে বের হয়ে আসে ডিস্ট্রয়ার সেভেন।

বর্ণকে উদ্দেশ্য করে ডিস্ট্রয়ার সেভেন বলে উঠে,
“মিশন কম্পলিট স্যার”। চলবে…

পরের পর্ব- এলিয়েন রহস্য পর্ব ১০ – এলিয়েন মানবের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *