ভ্যাম্পায়ার রহস্য

ভ্যাম্পায়ার রহস্য – রক্তচোষা ভূতের গল্প | Vuter Golpo

ভ্যাম্পায়ার রহস্য – রক্তচোষা ভূতের গল্প: ইসসস খুদায় একদম পেট চো চো করছে। রাত থেকে কিছুই পরেনি পেটে। সারারাত রাস্তায় একটা মানুষ তো দুরের কথা একটা কুকুর বিড়ালও চোখে পরে নি মাত্র।

সব মানুষেরা সাবধান হয়ে গেছে শালার সন্ধ্যা হলেই আর বাইরে বের হয়না।

(এমন সময় বাইরে কারও কিছু খাওয়ার আওয়াজ পাচ্ছি)

তাড়াতাড়ি বাইরে গেলাম। দেখি শুভ বেচারা ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে একটা বিড়াল ধরে এনেছে বাইরে থেকে।

অর্ধেক প্রায় খাওয়া শেষ।

ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে আমিও খাওয়া শুরু করলাম। যাক, কিছুটা হলেও শান্তি পাওয়া গেল।

ক্ষুধা যে কত জ্বালা এখন বুঝতে পারছি।

এমন সময় রুমে আমার ফোন বাজছে। ধরতে ইচ্ছা না থাকায় ধরলাম না। এমনিতেই পেটের ক্ষিধা পুরোটা মেটেনি।

কিছু করার নেই যা খাইছি তা দিয়েই আজ থাকতে হবে।

ধুর আবার বাজতে শুরু করেছে ফোনটা। অনেক বিরক্ত ও রাগ নিয়ে ফোনটা ধরলাম।

ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে…

মেয়েলি কণ্ঠঃ হ্যা ভাইয়া কই আপনি? (চমৎকার কন্ঠে)

আমিঃ মানে?

মেয়েলি কণ্ঠঃ মানে আপনি আমাকে আজ সারাদিন সময় দিবেন বলেছিলেন।

আমিঃ ও হ্যা, তুমি বলো।

মেয়েলি কণ্ঠঃ আপনি কখন আসবেন ভাইয়া?

আমিঃ আসলে, মানে আমি…

মেয়েলি কণ্ঠঃ প্লিজ ভাইয়া, না করবেন না। আমার অনেক ইচ্ছা আপনার সাথে কথা বলব দেখা করব। (বলতে না দিয়েই)

আমিঃ ওকে কোথায় আসতে হবে?

মেয়েলি কণ্ঠঃ থ্যাংকস ভাইয়া “ফয়েজউদ্দীন রহমান” পার্কে চলে আসবেন ১১ টায়। (খুবই উত্তেজিত হয়ে)

আমিঃ আচ্ছা, ওকে।

এই মেয়েটার নাম রুমি। অনেকদিন থেকেই খুব জ্বালাচ্ছে। আর আমার সাথে দেখা করার জন্যে মরিয়া হয়ে আছে।

ভাবছি যাবো কিনা? পেটে তো কিচ্ছু নাই।

আহহ চোখটায় আনন্দের ঝিলিক বয়ে গেল। হ্যা, এই মেয়েটাই হবে আমার আজকের শিকার। কিছুটা হলেও মনটা ভরে গেল।

এখন দাড়িয়ে আছি ফয়েজউদ্দীন রহমান পার্কে।

উদ্দ্যেশ্য একটাই নতুন শিকার ।

হঠাৎ পিছন থেকে…

মেয়েঃ ওই হ্যালো, আপনি মিঃ জাহিদ রাইট।

আমিঃ হুম…তুমিই তাহলে আসতে বলেছিলে?

মেয়েঃ হুম। বুঝলেন ভাইয়া, আপনার সাথে দেখা হচ্ছে এটা আমি ভাবতেই পারিনি। কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে সবকিছু। আর বলতে পারেন, আপনার অনেক বড়ো ফ্যান আমি। অনেক ভালো লাগে আপনার সব গল্প পড়তে।

আমিঃ থ্যাংক ইউ। আর তোমার নামটা যেন কি?

মেয়েঃ এই ভাইয়া, কেমন লেখক আপনি, হুহ। একটা নাম মনে রাখতে পারেন নাহ।

আমিঃ না মানে অন্য মনস্ক ছিলাম তো ভুলে গেছি।

মেয়েঃ ওহ আর ভুলবেন না কেমন! রুমি জান্নাত।

আমিঃ হুম।

মেয়েটা কথা বলছে আর আমি দেখছি। কি সুন্দর চোখ, কথা বলার ধরণ! কিন্তু খুব চঞ্চল। অনবরত মুখ দিয়ে খই ফুটছে। যেন সারাজীবনের সব কথা সব আজ বলছে। আর চেহারার কথা কি বলব মনে হয় সব মায়া শুধু ওই নিজের ভিতর নিয়ে নিছে। খুব সহজেই কাউকে আপন করে নিতে পারে। দেখলে যে কেউ মায়ায় জড়িয়ে যাবে। আমিও জড়াচ্ছি নাতো?এই না না এটা কেমন করে হয়?

ভ্যাম্পায়ারদের মানুষের মায়ায় পরতে নেই।

কিন্তু ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে, কত্ত বিশ্বাস ও আশা করে বাসা বের হয়েছে মেয়েটা। কিন্তু আর বাসায় ফিরে যেতে পারবে কিনা জানেনা।

এই না আমার মনে তো কষ্টের কোন যায়গা নেই। আমার শুধু রক্ত চাই, রক্ত।

রুমিঃ এই ভাইয়া কোথায় হারিয়ে গেলেন? আচ্ছা, আপনার চোখ গুলো নীল কেন? একদম অন্য জগতের মানুষের মতো।

(আমি ভরকে গেলাম এমন কথা শুনে। সত্যি কি আমাকে দেখতে অন্য জগতের মানুষের মতো?)

রুমিঃ এই ভাইয়া কিচ্ছু বলছেন না কেন?

আমিঃ হুম শুনছিতো।

রুমিঃ কি ভাবছেন এতো হুহহ..?

আমিঃ কই কিচ্ছু নাতো।

রুমিঃ আপনি জানেন, আপনার এমন চিন্তিত চেহারা দেখে সব মেয়েরাই প্রেম করতে চাইবে?

আমিঃ তাই! (মুচকি হেসে)

রুমিঃ হুম..আর এ রকমভাবে থাকবেন না।

আমিঃ কেন?

রুমিঃ নাহলে আমিও আপনার প্রেমে পরে যাবো।

আমিঃ এই না না প্রেম না। শুধু একটু ভালোবাসতে পারো।

রুমিঃ এহহহ..আমার খেয়েদেয়ে কাজ নাই। বাই দ্যা ওয়ে এইভাবে এখানেই থাকবো না কোথাও যাবো।

আমিঃ কোথায় আবার যাবো?

রুমিঃ চলেন একটু হাটি।

আমিঃ হুম ওকে চলো।

মেয়েটার কথা শুনে ক্যান জানি মায়ায় পরে যাচ্ছি। কিন্তু আমার যে মায়ায় পরলে চলবেনা। রক্ত লাগবে রক্ত।

রুমিঃ আচ্ছা ভাইয়া আপনি এমন কেন? সব কথাই তো আমিই বলে যাচ্ছি আপনিও কিছু বলেন।

আমিঃ কি বলব? আজ যেহেতু দিনটা তোমার তাই আজ তুমিই বলো। আর আমি শুনি।

রুমিঃ হুম..।

মেয়েটা একনাগারে তার কি ভালো লাগে, কি করে, কি খারাপ লাগে, তার ফ্রেন্ড কেমন, আমি কি করি সব খালি বকবক করেই যাচ্ছে। কিন্তু আমারতো একটাই জিনিস দরকার রক্ত। খুব খিদাও লেগেছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে।

মাথা খালি খুজছে একটা ফাঁকা যায়গা। যেখানে কেউ নেই আর সেখানে আমি মেটাতে পারব আমার তৃষ্ণা।

সারাদিন অনেক ঘুরলাম। এখন বেলাও প্রায় শেষের দিকে। আমার কাজ আমাকে করতেই হবে।

আমিঃ আচ্ছা আর কোথাও যাবে? চলেতো যেতে হবে।

রুমিঃ আর কোথায় যাবো?

আমিঃ সামনে একটা নতুন পার্ক আছে যাবে নাকি!

রুমিঃ হুম, চলেন।

যাক বাবা, কাজ হয়ে গেছে। আর একটু তাহলেই শান্তি।

রুমিঃ আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলব রাখবেন?

আমিঃ হুম বলো। রাখার মতো হলে রাখব।

রুমিঃ আপনি কয়েকটা ভুতের গল্প লিখবেন? জানেন আমার ভ্যাম্পায়ারের গল্প খুব ভালো লাগে।

(ওর কথা শুনে একটু মুচকি হাসলাম। কারণ আমি কি লিখব আমিতো নিজেই একটা ভ্যাম্পায়ার)

আমিঃ ওকে লিখবো। ভ্যাম্পায়ার কখনও দেখেছো?

রুমিঃ কি যে বলেন না! ভাম্পায়ার কোথায় পাবো? তবে যখন কোন ভ্যাম্পায়ারের গল্প পরি তখন যেন উপলগ্ধি করতে পারি, কিরকম হবে? জানেন ভাইয়া, অনেক গল্পে পরেছি ভ্যাম্পায়ারদের নাকি চোখ নীল, একদম আপনার মতো। আর দুইটা সুচালো লম্বা দাঁত থাকে।

আমিঃ হাহাহা ও।

রুমিঃ হুম.. যদি একবার দেখতে পারতাম তাহলে নিজের চোখে উপলদ্ধি করতাম। কিন্তু তাকে তো দেখা সহজ না।

আমিঃ আচ্ছা যদি এমন হয় যে তুমি এখন হঠাৎ ভ্যাম্পায়ারের সামনে পরো তখন কি করবে?

রুমিঃ এখানে কোথা থেকে আসবে? তবে যদি আসে তো কি নিজের কৌতুহলটা মিটিয়ে নিব।

(বলতে বলতে চলে এসেছি গন্তব্যে। এখানে এখন কেউ নেই। আর বেলাটাও প্রায় ডুবডুব)

আমিঃ আচ্ছা এখন দেখবে?

রুমিঃ মানে?

হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটা একটু সামনে চলে গেল আর আমি পিছনে। যতক্ষনে পিছনে ঘুরে তাকালো ততক্ষনে আমি নিজের রুপ ধারণ করে ফেলেছি।

নীল চোখগুলো দিয়ে যেন আলো ঠিকরে পরছে। আর সুই এর মতো সরু ছিদ্রযুক্ত দুটি দাঁত ক্রমস লম্বা হয়ে গেল। এখন শুধু রক্ত আহহ। মেয়েটা এখনো ফিরে তাকায়নি।

তাই বললাম,

আমিঃ দেখতো ভ্যাম্পায়ার দেখতে এরকম হয় কিনা?

পেছনে ঘুরা মাত্র চমকে গেল মেয়েটা।

আর কাকুতি মিনুতি করে কান্না শুরু করল। প্লিজ ভাইয়া, আমাকে মারবেন না। প্লিজ ভাইয়া।

কে শোনে কার কথা আমি ক্রমস এগোতে শুরু করলাম। মেয়েটা উল্টো দিকে দৌড়াতে চাইল কিন্তু শুভ এসে সামনে দাড়ালো।

তারপর দুটি দাঁত বসিয়ে দিলাম মেয়েটির গলায় ঠিক কানের নিচ বরাবর।

মেয়েটি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে। অচেতন হয়ে গেল নিমিষেই।

শুভ এর মধ্যেই একটা হাত ছিড়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।

রক্ত খাওয়া শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম।

এটাই হবে হয়তো কালকের একটা গল্প আর আমার সাথে দেখা করতে চাইবে আরো একটা মেয়ে।

আর সে হবে আমার next টার্গেট।

—-সমাপ্ত—-

আরো পড়ুন – ভয়ানক ভৌতিক গল্প – পর্ব ১

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *